আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দাম কমে গিয়েছিল শাক-সবজির। তবে এই অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আগের চেয়েও বেড়ে যায় বিভিন্ন সবজির দাম। এখন কোনো কারণ ছাড়াই ঊর্ধ্বমুখী দাম কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। ফলে ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢুকে হিমশিম খেতে দেখা যায় সীমিত আয়ের ক্রেতাদের। বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে বা আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণে আছে কি না এই প্রশ্ন রেখে কেনাকাটায় কাটছাঁট করে চলে যাচ্ছেন তারা।
শুধু সবজিই নয়, প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ডিম, মুরগি, মাছের দামও। আর আগে থেকেই উচ্চমূল্যে অবস্থান করছে গরু ও খাসির মাংস। এখন নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পণ্যও। আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় নিত্যপণ্যের এই চিত্র।
আকাশচুম্বী সবজির বাজার
আজকের বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে বড় অঙ্কে। ভারতীয় টমেটো ১৭০ টাকা, দেশি গাজর ১৪০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০-১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৬০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে দেখা যায় আজ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ৮০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে এই বাজারে কাঁচা মরিচের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে ভারতীয় টমেটো, দেশি গাজর, করলা, পেঁপে, মুলা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের। ২০ টাকা করে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, শসা, উচ্ছে, কাঁকরোল, পটল, ধুন্দল, কচুর লতি ও কচুরমুখীর।
ঝিঙার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আর কেজিতে ৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন ও বরবটির। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে আগের মতোই।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাজারে বন্যার পরের প্রভাব পড়েছে, তাই দাম বেশি। আমরা মোকামে গিয়ে আগের মতো দাম পাই না। আগে যদি পাঁচ জায়গায় মাল বিক্রি হতো, এখন হয় দুই জায়গায়। ওই দুই জায়গায়ই সব ব্যবসায়ী যায়। এতে তখন মাল নেওয়ার জন্য একেক ব্যবসায়ী একেক দাম বলে। তখনই দামটা বেড়ে যায়। আমরাও বুঝি যে ক্রেতাদের সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের আর কী করার আছে? যেরকম কেনা সেভাবেই আমাদের বিক্রি করতে হয়।’
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। এই দায় আসলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও। তারা ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা যদি ঠিকভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করত, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়।’
বেসরকারি চাকরিজীবী এস এম মুহিদ বলেন, আগের সরকারও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই, এই সরকারও পারছে না। তবে এই সরকার এসেছে বেশি দিন হয়নি। তাদের সময় দিলে হয়তো অবস্থা ঠিক হবে। এদিকে নজর দিতে হবে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন সায়রা খানম। তিনি বলেন, ‘বাজারের যে অবস্থা তাতে ঢাকা শহরে থাকতে পারব কি না চিন্তায় আছি। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণই নাই। অনেকের কাছে থেকে অনেক আশ্বাস পেয়েছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিন্তু এখনো সবকিছুর অত্যধিক দাম। জানি না এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে কি না।’
বাজারে উচ্চমূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও চায়না আদার। আর নতুন আসা ভারতীয় আদা পাওয়া যাচ্ছে কম দামেই। গতকাল আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১৫-১২০ টাকা করে। লাল ও সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০-১৬০ দরে বিক্রি হয়।
ডিম, ব্রয়লার ও কক মুরগির দাম বাড়ছেই
বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৬০ টাকা দরে ডজন বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৭ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৭ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ৭ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫-১০ টাকা।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে ডিমের সংকট, এ কারণে দাম বেড়ে গিয়েছে।
এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়া আজ বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-২২০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের দাম অত্যধিক। দাম আর কমছে না।
স্থিতিশীল মুদিপণ্যের দাম
এদিকে মুদি দোকানে প্রায় অপরিবর্তিত আছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় ছোট মুগ ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, খেসারির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা।
গ্রাহকের সব সেবা অনলাইনে দেওয়ার লক্ষ্যে ই-সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করল বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এখন থেকে বিএসটিআইয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেওয়ার সহজীকরণের জন্য এ সফটওয়্যারের উদ্বোধন করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব (অ. দা.) নুরুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সফটওয়্যারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ফেরদৌস আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিএফ প্রকল্পের ডেপুটি চিফ ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, অরেঞ্জ বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল কবির, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্পের আর্থিক ও অরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এ ই-সার্ভিস সিস্টেমের মাধ্যমে একজন সেবাগ্রহীতা পণ্যের মানসনদ (সিএম লাইসেন্স), ছাড়পত্র, হালাল সার্টিফিকেট, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস সার্টিফিকেট, মেট্রোলজি লাইসেন্স, পণ্যের মোড়কজাত সনদ, পণ্য পরীক্ষণ প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মান (বিডিএস) নিতে পারবেন।
এই সিস্টেম ব্যবহার করে একজন সেবাগ্রহীতা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে আবেদন দাখিল, পরিদর্শন নোটিশ, টেস্ট ফি দেওয়া, অ্যাপ্লিকেশন ট্যাকিং করতে পারবেন একই সঙ্গে বিএসটিআই কর্মকর্তারা আবেদনপত্র যাচাই, পরিদর্শন প্রতিবেদন স্যাম্পল কালেকশন নোটিফিকেশন, টেস্ট রিপোর্ট, লাইসেন্সের প্রস্তাব ও সর্বোপরি লাইসেন্স ফি গ্রহণ সাপেক্ষে লাইসেন্স দিতে পারবেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান সম্প্রতি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার সিএসই’র বর্তমান ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত তুলে ধরেন। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে কমোডিটি প্ল্যাটফর্ম চালুকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কমোডিটি ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে ক্রুড পাম অয়েল (অপরিশোধিত পাম তেল) আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সিএসই কমোডিটি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যতে ক্রুড পাম অয়েলের ফিউচারস চালু করার আশা করছে।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট বিশেষ করে কমোডিটি মার্কেটের ডেভেলপমেন্টের জন্য সহযোগিতা প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যের আদান প্রদান, ব্যবসায়িক উন্নয়নে কাজ করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় মালয়েশিয়া হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হাজওয়ান বিন হাসনল, সিএসই পরিচালক মোহাম্মদ আখতার পারভেজ, মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম, চিফ রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, সিএফএ, জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুল হক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশগামী সব রুটের এয়ার টিকিট এখন থেকে আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহার করে কেনা যাবে। বুধবার এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করা এবং যাত্রীদের সহজ, ঝামেলাহীন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক কার্ড শুধু বিদেশে ব্যয়ের জন্য ব্যবহার করা যেত। ফলে অনেক যাত্রী দেশে বসে সাশ্রয়ী দামে টিকিট কিনতে সমস্যায় পড়তেন।
নতুন নীতিমালার ফলে বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি নাগরিকরা ঢাকা-সিঙ্গাপুর, ঢাকা-দুবাইসহ সব আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট অনায়াসে আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। টিকিট বিক্রির অর্থ অবশ্যই অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাহিত হয়।
এছাড়া ভ্রমণ বরাদ্দের আওতায় ইস্যুকৃত আন্তর্জাতিক কার্ডে টিকিট কেনায় ব্যবহৃত অর্থ পুনরায় রিফিল করা যাবে—তবে সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন এডি ব্যাংক নিশ্চিত করবে যে টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ দেশে জমা হয়েছে।
দেশে কার্যরত বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও তাদের টিকিট বিক্রির বিপরীতে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা এডি ব্যাংকে পরিচালিত হিসেবেই জমা করবে। ব্যয় বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ তারা বৈধভাবে প্যারেন্ট অফিসে পাঠাতে পারবে।
শিল্প-সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। একই সঙ্গে দেশি ও বিদেশি টিকিট মূল্যের বৈষম্য কমাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকে আরও স্বচ্ছ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করবে।
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। সংগঠনের দাবি, দেশের মোট ব্যবসায়ীর ৬০–৭০ শতাংশকে কার্যত প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না তারা। এক বছর নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান, শাহ আলম বোখারীসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে প্রেস কনফারেন্স ভণ্ডুল করতে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বলেন, মঙ্গলবার রাত ৩টায় শুধু এ সংবাদ সম্মেলন ঠেকানোর উদ্দেশ্যে তাকে আটক করা হয়। তাদের দাবি, কিছু ব্র্যান্ড ও বাজারনিয়ন্ত্রক স্বার্থগোষ্ঠী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় সেই সিন্ডিকেটই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে টার্গেট করেছে। মোবাইল ব্যবসায়ীরা এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না, বরং এক বছরের সময় নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার দাবি জানান।
আরিফুর রহমান বলেন, ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বৈধভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রির সুযোগ সীমিত হলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এনইআইআর সিস্টেম চালুর ফলে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দিনমজুর, রিকশাচালক, দর্জি, নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, গ্রে মার্কেটে কম দামে ভালো কনফিগারেশনের ফোন পাওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এআইনির্ভর ভবিষ্যতের যুগে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। মাত্র ১৮ জনের লাইসেন্সের মাধ্যমে পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংগঠনের অভিযোগ, দেশের মোবাইল বাজার বর্তমানে মাত্র ১৮ জন লাইসেন্সধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। তাদের দাবি, ২০ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ব্যবসার লাইসেন্স এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির হাতে থাকা অযৌক্তিক। বাজারের ভারসাম্য ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে লাইসেন্স সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
এসময় হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সিন্ডিকেটের প্রভাবে এনইআইআর বাস্তবায়নের এ সিদ্ধান্ত সরাসরি কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের দাবি, জনগণ ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। নেতারা সতর্ক করে বলেন, জনগণকে উত্তেজিত করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, প্রয়োজন হলে তারা গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
রুলস হওয়ার আগেই দেশের পুঁজিবাজারের সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ শীর্ষক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক সমস্যা আছে, যে কারণে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে রুলস হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে ক্যাপিটাল মার্কেট জানালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি এস এস গোলাম সামদানী ভূইয়া, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধি ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের মার্কেটের পরিধি বাড়াতে ভালো ও নতুন নতুন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের সমস্যাকালীন দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের হাতেও রুলসের জন্য অনেক সময় কিছু করার থাকে না। তাই দরজা-জানালা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য রুলস করার আগেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত।
তিনি বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়াতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এই জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার মতো করেই রুলস তৈরি করতে হবে।
দেশের স্পিনিং বা সুতা উৎপাদন খাত রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।
গাটপ গত মঙ্গলবার এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বস্ত্র ও পোশাকশিল্প খাতে চলমান বিভিন্ন সংকট, বিশেষ করে স্পিনিং খাতে চরম দুরবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
দেশের স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৈঠকে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, অবিলম্বে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে দেশের স্পিনিং খাত যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পড়তে পারে। এতে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বস্ত্র ও পোশাকশিল্প বিদেশি বাজার ও কাঁচামালের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যা খাতটির জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে খাতটিকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া সরকারের সদ্য জারি করা ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদের (টিসিসি) যৌথ সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে সংগঠনগুলো অধ্যাদেশটি প্রত্যাখ্যান করে এবং সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো টিসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবিলম্বে সংশোধনের আহ্বান জানায়।
বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত বড় ধরনের সংকটে না পড়ে।
চীন, সৌদি আরব, মরক্কো ও কাফকো থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৭০ হাজার টন ইউরিয়া, ১ লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি এবং ৩০ হাজার টন টিএনপি সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি ৫২ হাজার ২৮০ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জন্য সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো নিউট্রিয়েন্টস কম্পানি থেকে ৯ম লটের ৪০ হাজার টন বাঙ্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ২৮০ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৯৬.৪১ মার্কিন ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জন্য কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ থেকে ৯ম লটের ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার কিনতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৮৯.০০ মার্কিন ডলার।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চীনের ব্যানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৭ম লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৭১৩.৭৫ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১১তম ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার কিনতে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৭১৩.০০ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১২তম (ঐচ্ছিক-১ম) লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারে দাম পড়বে ৭১৩.০০ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১৩তম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৯০ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৫১৬.০০ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত)-শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-৫, লট-১ (সাতক্ষীরা (১০০০০ মেট্রিক টন))-এর অধীন ১টি সাইটে গোডাউন নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮১২ টাকা। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক (উপসচিব) জিনাত আরা আহমেদ বলেছেন, সরকারি সহায়তা ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ করা গেলে দেশের চিংড়ি খাত আগামী বছরগুলোতে ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
মঙ্গলবার খুলনা শহরের ফিশারিজ ট্রেনিং শ্রিম্প টাওয়ারে আয়োজিত ‘বাগদা ও ভেনামি চিংড়ি থেকে বৈচিত্র্যময় মূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদনবিষয়ক’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কর্মশালায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং চিংড়ি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
জিনাত আরা আহমেদ জানান, সরকার সম্প্রতি ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাগদা চিংড়ির প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হার গড়ে ৫০০ কেজি হলেও ভান্নামেই চাষে প্রতি হেক্টরে ১৫,০০০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব।
বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএফএফইএ-এর সহসভাপতি শেখ কামরুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপিসির সহকারী পরিচালক পলাশ কুমার ঘোষ।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি আরও বলেন, চিংড়ি ও মৎস্য খাত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিমুখী শিল্প এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশ্বাস দেন, ইপিবি চিংড়ি খাতের উন্নয়ন ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে বলা হয়, চিংড়ি শিল্পে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ যুক্ত, যার অধিকাংশই নারী। একসময় চিংড়ি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং উচ্চফলনশীল ভেনামি চাষের অনুমোদন দীর্ঘদিন বিলম্বিত হওয়ায় উৎপাদন পিছিয়ে পড়ে- যদিও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চলের হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার কর্মকর্তা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, হ্যাচারি কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজন এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
মৌলভীবাজারে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করেছে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম।
গত সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ সড়কের স্থানীয় একটি পার্টি সেন্টারে এ প্যানেল ঘোষণা করা হয়।
মৌলভীবাজার এমসিএসের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক হাসান আহমেদ জাবেদের প্যানেলের পরিচিতিসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুর রহিম রিপন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী, জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও সহসভাপতি নিয়ামুল হক তরফদার, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নারী উদ্যোক্তা, শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর একে একে প্যানেলের সব সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে জেলার ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের পরিচিতি অনুষ্ঠানে প্যানেলের প্রধান হাসান আহমেদ জাবেদ বলেন, দেশের মধ্যে প্রবাসী ও চা শিল্পাঞ্চলখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিগত সরকারের আমলে প্রায় এক যুগ নির্বাচন হয়নি। অবশেষে নির্বাচনকে ঘিরে দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স, ভ্যাট, ব্যাংকিং, ভোক্তা অধিকারসহ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করা হবে। তা ছাড়া নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্য মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক এই নির্বাচন। নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ৪৪৩ জন এবং অ্যাসোসিয়েট ভোটার ২২৩ জন।
দ্রুত সময়ে ৩ লাখ টন চাল এবং ৩ লাখ টন গম আমদানি করবে সরকার। এজন্য দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নামিয়ে আনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিকবিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠক এসংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে যথাসময়ে ঝুঁকিবিহীনভাবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে।
এ লক্ষ্যে পিপিআর ২০২৫-এর বিধি ১০২(১) (ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে খাদ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ টন গম আমদানির কথা বলা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ‘হোস্ট অ্যান্ড এফডিএমএন এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস থ্রু ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (হেল্প)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় হেল্প/ইউএন-১ প্যাকেজের কাজ ইউএন এজেন্সি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা যায়, প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজার জেলার দুর্যোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এফডিএমএন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তা উন্নত করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৬৩ কোটি টাকা।
টেকসই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল সাপ্লাই চেইন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে। যৌথভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
মঙ্গলবার বিডার জনসংযোগ দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য ও বিনিয়োগব্যবস্থা আরও শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করতে এই প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এলডিসি উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা গড়ে তোলার সুযোগ। দক্ষতা, মূল্যসংযোজন, গুণগত মান ও ন্যায়সংগত প্রবৃদ্ধিকে সামনে রেখে এই প্ল্যাটফর্ম সরকার, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন অংশীদারদের একত্র করবে, যা আমাদের অর্থনীতির নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা যেন স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করি এবং নিজেদের জবাবদিহির আওতায় রাখি। ২০২৬ সালের শেষে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি তা পরিষ্কারভাবে যেন সবাই জানতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পথে আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন নীতিগত সংস্কার ও বৈশ্বিক মানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগনীতির সামঞ্জস্য সাধনে কাজ করছি। এ প্রচেষ্টা দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স তুনিয়ন বলেন, সাপ্লাই চেইনের মূলেই থাকে মানুষ, শ্রমিক ও উদ্যোক্তারা। এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের যৌথ সমাধান তৈরির সুযোগ দেবে, যা মর্যাদা, সুযোগ ও অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে। এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে যা মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনবে।
অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে আরও সবুজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এক প্ল্যাটফর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলো। এই উদ্যোগ জ্ঞানবিনিময়, নীতি-সমন্বয় ও দায়িত্বশীল বিনিয়োগকে আরও এগিয়ে নেবে।
এ সময়ে আইএলও এবং ইউএনডিপি উভয় সংস্থার কর্মকর্তারা বিডা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক কাজের প্রশংসা করেন। তারা জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাসহ আরও অংশীজনকে প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। এ সময়ে তারা টিম ইউরোপ, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডাসহ উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এই প্ল্যাটফর্ম নীতি-সংলাপ, সক্ষমতা উন্নয়ন ও জ্ঞানবিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি সাপ্লাই চেইন উন্নয়ন, নীতিসম্মত বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক শ্রমমান, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণকে সুসংহত করবে।
টানা দুই বছর রপ্তানি কমে যাওয়ার পর ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ২২ শতাংশ। যদিও চার মাস অর্থাৎ অক্টোবর শেষে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিকারক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে বাগদা চিংড়ির চাহিদা হ্রাস পায়। তখন বিশ্ববাজারে কম দামের ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি ছিল। বাংলাদেশে তখনো বাণিজ্যিকভাবে উচ্চফলনশীল জাতের চাষ শুরু হয়নি। ফলে হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমে যায়। তবে গত বছর আবার বাগদার চাহিদা ও রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, করোনার পর ২০২১-২২ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি আয় প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়ে ৪১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তবে পরের বছরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যটির রপ্তানিতে ধস নামে। রপ্তানি দাঁড়ায় ৩০ কোটি ডলারে। তার পরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও রপ্তানি কমে হয় প্রায় ২৫ কোটি ডলার। তবে বাড়তি ক্রয়াদেশের কারণে বিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি ১৯ শতাংশ বেড়ে হয় ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১২ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১১ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানির শীর্ষ পাঁচ গন্তব্য ছিল নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিদায়ী অর্থবছরে শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে উঠে এসেছে চীন। দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে পৌনে ৫ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্যে সাড়ে ৪ কোটি ডলার, বেলজিয়ামে ৪ কোটি ডলার, জার্মানিতে ২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি হয়েছে।
হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা পেতে জাহাজীকরণের সময় আচ্ছাদনে পরিমিত বরফসহ হিসাব দেখানো যাবে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির বিপরীতে সরকারি প্রণোদনার নগদ সহায়তার জন্য বিদেশি রপ্তানির সময় প্রয়োজনীয় বরফ সরকার নির্ধারিত হারে হিসাব করা যাবে। মূলত সরকারি হিসাবে প্রথমে বরফসহ মোট পরিমাণ থেকে চিংড়ি বা মাছের ওজন বাদ দিতে হবে। সেই ফলাফলকে বরফসহ মোট পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে সেটাকে ১০০ দ্বারা গুণ করলে সরকারি নির্ধারিত পরিমিত হিসাব পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, যে দেশে পণ্য রপ্তানি করা হবে, কেবল সে দেশ থেকেই মূল্য প্রত্যাবাসন হতে হবে। এছাড়া ভিন্ন দেশ থেকে রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হলে রপ্তানি আদেশ প্রদানকারী থেকে বা রপ্তানি আদেশ প্রদানকারীর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এমন উৎস থেকে (এক্সচেঞ্জ হাউস ব্যতীত) রপ্তানি মূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। আর জাহাজীকৃত পণ্যের বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
পূর্বের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্তক্রমে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বা গভীর সমুদ্র থেকে জলযানে আহরিত ও প্রক্রিয়াজাত করা হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠান হতে হবে। এছাড়া এখন থেকে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মৎস্য অধিদপ্তরের যথাযথ লাইসেন্সপ্রাপ্ত মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
চলমান অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক খাতের সার্বিক বিশ্লেষণ শেষে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রমজান মাসে ভোক্তা চাহিদা বাড়তে পারে- এ বিবেচনায় সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ফাটকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেন এমপিসির সদস্য ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, চিফ ইকোনমিস্ট ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম এবং সদস্য-সচিব মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের।
সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি প্রবণতা, ব্যাংকিং খাতের তারল্য, নীতি সুদহার, বিনিময় হার ও বৈদেশিক খাতের চাপসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। কমিটি জানায়, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে- সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে কিছু এলাকায় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাঘাতের কারণে দাম বাড়ার আশঙ্কাও রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, আন্তঃব্যাংক কলমানি ও রেপো হার সামান্য কমেছে। সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাড়ায় সুদের চাপে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণচাহিদা কম, যার পেছনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তার প্রভাব রয়েছে।
বৈদেশিক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাঝারি থাকলেও আমদানি বেড়েছে। রমজানকে সামনে রেখে জরুরি পণ্যের এলসি মার্জিন শিথিল করায় আমদানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে কমিটি মনে করে। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহও শক্তিশালী ছিল। এছাড়া আবহাওয়াজনিত কারণে আমন ধানের ক্ষতি, নির্বাচন, রমজান এবং সম্ভাব্য নতুন বেতন কাঠামোর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ আসতে পারে বলে সতর্ক করা হয়।
সবকিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) সিদ্ধান্ত নেয় নীতি সুদহার ১০ শতাংশই থাকবে। এসডিএফ হার ৮ শতাংশ এবং এসএলএফ হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ রাখা হবে। কমিটি জানায়, প্রকৃত নীতিগত সুদহার ৩ শতাংশে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে, যাতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।