শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলো

নগদ টাকা উত্তোলনে গ্রাহকদের ভোগান্তি

বেশ কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে চেক নিয়ে ঘোরাঘুরি করেও চাহিদামতো টাকা তোলা যাচ্ছে না
ফাইল ছবি
আপডেটেড
৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০৫

অ্যাপ ও অনলাইনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সীমিত করে রাখা এসব ব্যাংকে লেনদেন করতে না পেরে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেও গ্রাহকরা কোনো সমাধান পাননি। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক-এফএসআইবিতে টাকা তুলতে গেলে তাদের বলা হয়েছে, যার যে শাখায় অ্যাকাউন্ট, তাকে সেই শাখায় গিয়ে টাকা তুলতে হবে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছেন।

মূলত এসব ব্যাংকের কাছে নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে, যা স্বীকার করেছেন ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারাও। সাধারণ আমানত, মেয়াদি আমানত, বেতনের টাকা, সঞ্চয়- কোনো ধরনের হিসাব থেকেই চাহিদামতো টাকা তুলতে অথবা অনলাইনে অন্য ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়েও স্থানান্তর করতে পারেননি গ্রাহকরা। গত সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকগুলোর এমন কার্যকলাপে হতাশা ও আস্থাহীনতায় ভুগছেন গ্রাহকরা, যারা তাদের জমানো টাকার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।

এমন একজন ভুক্তভোগী বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। গত সপ্তাহে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশায় এফএসআইবির শাখায় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক দিয়ে এক লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ক্যাশ কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয়, ২০ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবে না।

কেন দিতে পারবে না, সাইদুরের সেই প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে বলেন, নগদ টাকার সংকট চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও তারা টাকা পাচ্ছেন না। তাই শাখার হাতে যে পরিমাণ টাকা আছে, তা-ই সবাইকে একটু একটু করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। হতাশ সাইদুর বাধ্য হয়েই ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার টাকা আমিই তুলতে পারছি না, এর চেয়ে হতাশার আর কিছু হয়! ব্যাংকের যে এ অবস্থা, অথবা কোনো সমস্যা, তা তো আগে থেকে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়নি। পুরো অবস্থাটা অদ্ভুত লেগেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘আমি ২০ হাজার টাকার কিছু বেশি টাকার চেক ক্যাশ কাউন্টারে দিই। তারা চেকটি ধরে কাজ করতে করতেই আমার দিকে না তাকিয়েই বলেন, হবে না। এখান থেকে আপনাকে টাকা দেওয়া যাবে না।

‘কেন, কী হইছে? আমি জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা যেখানে, সেখান থেকে টাকা তুলতে হবে, আমরা দিতে পারব না।’

তারপর কী হলো- জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, ‘আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আমার অ্যাকাউন্ট যদি দিনাজপুর হয়, তাহলে আমাকে সেখানেই যেতে হবে? উত্তর এল- আমাদের কিছু করার নেই, আপনারটা আপনাকেই একটু ব্যবস্থা করে নিতে হবে।’

ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখে আগে কখনও পড়েছেন কি না, জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, ‘মনে পড়ে না।’

তারল্য সংকট রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও। গ্রাহকরা গিয়ে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে মুখ কালো করে ফিরছেন।

ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘দুর্বল’ ব্যাংকগুলোর মালিকানায় ব্যাপক অনিয়ম, পরিচালনায় সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে, যা নিয়ে দীর্ঘদিন করে কথা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের পছন্দের গভর্নরকে অপসারণ করে সেখানে বসানো হয় অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে। তিনি ব্যাংক খাতে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে এর জন্য সময়ও চেয়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আস্থাহীনতা বা শঙ্কা থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে ব্যাংকগুলো যেন খালি করে না ফেলে এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু ‘কৌশলগত’ কারণে গ্রাহকের দিনপ্রতি সর্বোচ্চ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ দেশের ব্যাংকিং খাত সচল রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নগদ তুলতে পেরেছেন বলে তথ্য রয়েছে। ব্যাংকটির দিলকুশা প্রিন্সিপাল শাখা থেকে কিছু কিছু গ্রাহক তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা পেয়েছেন, যদিও তা ৪ লাখ টাকার নিচে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুজন সেনা কর্মকর্তা এক লাখ টাকার চেক নিয়ে এলে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।

ব্যাংকটির দিলকুশার প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার মো. মোতাল্লেবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘তারল্য সংকট রয়েছে। তাই আমরা গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে পারছি না। আগামী সপ্তাহে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।’

ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ করমার্শিয়াল ব্যাংকেও একই অবস্থা। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি নগদ দিতে পারছে না তারা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার শফিকুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন ২০ হাজার টাকার বেশি টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। এটা আগামী সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে।’

বিষয়:

ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩০ বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়িক অংশীদার ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মাহির আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাংলাদেশের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠান ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড বা ‘এমবিএল’। দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রুপ অ্যাপেক্স হোল্ডিংস গ্রুপের এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে টেক্সটাইল শিল্পে শীর্ষস্থানীয় কেমিক্যাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে প্রতিষ্ঠানটির ৩০ বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন এবং ব্লু সাইন সিস্টেম পার্টনার অ্যানাউন্সমেন্ট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন টেক্সটাইলস ও কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী এ টি এম মইনুদ্দীন মজুমদার, উপ–মহাব্যবস্থাপক (টেক্সটাইল) শাহিনুর আলম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (লেদার) প্রকৌশলী মাজহার মোহাম্মদ বাদলসহ অন্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নিত্যনতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনে ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ম্যাটেক্স পরিবেশবান্ধব কেমিক্যালস উৎপাদন অব্যাহত রাখবে বলে আশা করি। ৩০ বর্ষপূর্তিতে ম্যাটেক্স পরিবারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

স্বাগত বক্তব্যে ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ইফাজ আহমেদ বলেন, ‘ব্লু–সাইন সার্টিফিকেশন আমাদের ভবিষ্যতের পথচলাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। আমরা সামনের দিনগুলোতে কেমিক্যাল উদ্ভাবন ও উৎপাদনে আরও মনোযোগী হব।’

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্লু–সাইন টেকনোলজি, এজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল রুফেনাখ্ট্, সিআরএম ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের ডিরেক্টর ক্যাথরিন ভি. মেয়ার এবং এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ।

ড্যানিয়েল রুফেনাখ্‌ট্ বলেন, ‘ব্লু–সাইন হলো কেমিক্যালস উৎপাদন ও দায়বদ্ধতার সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। ইতিমধ্যে ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ৭০–এর বেশি কেমিক্যালস ব্লু–সাইনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কেমিক্যালস অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। ম্যাটেক্স বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

ক্যাথরিন ভি. মেয়ার বলেন, ‘ব্লু–সাইন সার্টিকিফেশন প্রাপ্তির মাধ্যমে ম্যাটেক্স শুধু বাংলাদেশেই নয়, বৈশ্বিক বাজারেও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এ ছাড়া অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা–বক্তব্য দেন এশিয়াটিক গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহেল হোসেন বাবলু, টাওয়েল টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন সোহেল এবং হ্যামস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা–স্মারক তুলে দেন ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ইফাজ আহমেদ ও মাহির আহমেদ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়িক অংশীদার ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মাহির আহমেদ বলেন, ‘অ্যাপেক্স হোল্ডিং গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ম্যাটেক্স বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে আপনাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও আমরা আপনাদেরকে পাশে চাই।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিশেষায়িত টেক্সটাইল কেমিক্যালস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৯৪ সালে উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। ম্যাটেক্স উৎপাদিত তিন শতাধিক কেমিক্যালস প্রায় দুই শতাধিক টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে গাজীপুরে পরিবেশবান্ধব কারখানা এবং ঢাকা গুলশান অ্যাভিনিউর কর্পোরেট অফিস থেকে ম্যাটেক্সের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ম্যাটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী এ টি এম মইনুদ্দীন মজুমদার বলেন, ‘যাত্রার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে, ইউরোপিয়ান গাইডলাইন অনুসরণ করে দুই শতাধিক কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিকে মানসম্মত কেমিক্যালস সরবরাহ করে আসছে ম্যাটেক্স।’

এ টি এম মইনুদ্দীন মজুমদার আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে ম্যাটেক্স আন্তর্জাতিক প্রায় সবগুলো মানদণ্ড নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানকর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে। যেমন আইএসও, জেডিএইচসি, জিওটিএস ইত্যাদি। সর্বশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি ব্লুসাইন (Bluesign®)–এর প্রথম বাংলাদেশি সিস্টেম পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ম্যাটেক্স। এই অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা এবং সাব্বির জামানের সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন উপস্থাপক, মডেল ও অভিনেত্রী মৌসুমী মৌ।


শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১১ নভেম্বর, ২০২৪ ০০:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শেয়ার বিক্রির অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমানোর প্রেক্ষিতে দুদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও ফের টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে শেয়ারবাজার।

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ নভেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দিলে গত ৪ নভেম্বর দুপুরে মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন এবং পর দিন শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু এরপর আবার পতনের ধারা শুরু হয় শেয়ারবাজারে।

গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৬৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী আঁশের ১৯ কোটি ৭১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং আফতাব অটোমোবাইল।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪০টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা।


অক্টোবরে রপ্তানি আয় ২০.৬৫% বেড়েছে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি ছিল ৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১.৩৮ শতাংশ

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে।

অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন আয় করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।

পোশাক খাত আয়ের তীক্ষ্ণ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এ খাতটি জাতীয় রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখে।

গ্রীষ্মের জন্য পণ্য পাঠানোর শেষ মাস ছিল অক্টোবর। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে জুলাই-আগস্টে কম চালান হয়েছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অক্টোবরে আটকে থাকা পণ্য পাঠানো হয়েছিল, যা রপ্তানি আয়কে তীব্রভাবে বাড়িয়েছে।

‘তবে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য আমাদের আগামী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেক্টরে অস্থিরতা ছিল এবং ক্রেতারা কাজের অর্ডার দিতে ধীরগতিতে চলেছিলেন’, যোগ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা এত শক্তিশালী বৃদ্ধির জন্য কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি এবং এটি টিকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এখনই মন্তব্য করার সময় নয় বরং অপেক্ষা করতে হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক খাত অভূতপূর্ব অস্থিরতা দেখেছে এবং ক্রেতারা কাজের আদেশ স্থানান্তর করেছে।’

রপ্তানিকারকরা বলছেন, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী হওয়া উচিত। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান।

অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয়

অক্টোবর মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১১৩ মিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৫৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে ৭৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ৩৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং আয় করেছে ৬৪ মিলিয়ন ডলার।

হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় অক্টোবরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। আয় হয়েছে ৫২ মিলিয়ন ডলার, যা গত অক্টোবরের একই সময়ে ছিল ৩৯ মিলিয়ন।

অক্টোবরে ওষুধ পণ্য রপ্তানি ৪৯ শতাংশ বেড়ে ২১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।


সিন্ডিকেটে অস্থির চালের বাজার

দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:২৯
ইকবাল হোসেন 

চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। যদিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।

সূত্র মতে, বাজারে চালের অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত এই চক্র জাল বিছিয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চাল উৎপাদন বেশি। বাজারে চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।

ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন- এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্সের গোলাম হাফিজ মানিক বলেন, মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি চালের দামে ফায়দা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে।

বাজারে ধানের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো চাল ও ধান মজুদ করে রেখেছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

গোলাম হাফিজ মানিক আরও বলেন, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়ছে না

চালের সরবরাহ বাড়াতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রিম আয়করও ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চক্রটি মজুদ চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য আমদানি করছে না। আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্যদেরও। তাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ টন। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, যে বছরই হাওরে বন্যা হয় অথবা আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হয়ে যায়, ওই বছরই ধান-চালের সংকট সৃষ্টি হয়। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি ১০ থেকে ১৮ লাখ মেট্ৰিক টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করেনি। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম।

তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনও খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মিয়ানমার বা ফিলিপাইনের চাল আমাদের দেশের মানুষ খেতে অভ্যস্ত নয়। সরকার আজ যদি ভারত থেকে এক লাখ মেট্ৰিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, কাল প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমে যাবে। চালের দাম পুরোপুরি মজুতের ওপর নির্ভর করে। মজুদ থাকলে চালের দাম কমবে, না থাকলে রাতারাতি বেড়ে যাবে।

যেভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়

রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে একটা চেইন অব কমান্ড কাজ করে তৃণমূল থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। চালের দাম প্রোডাক্ট চেইন ও পর্যাপ্ত মজুতের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মিনিকেটের দাম অক্টোবর মাসে প্রতি বস্তা ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। চলতি মাসে সেটার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এটার কারণ মিনিকেট চাল যে ধান থেকে হয় সেটার দাম বেড়ে গেছে। প্রতি মণের দাম ছিল (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ টাকা। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, মিলার ও আড়তদারদের দোষ হচ্ছে আজকে ধানের দাম বাড়লে তারা আজকে থেকেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ১৫ বা ২০ দিন পরে বাড়াতে পারত। তারা মজুতের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া থেকে। মোটা চালের নিয়ন্ত্রণ হয় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও হাওর এলাকা থেকে। চালের বাজার থেকে ধানের বাজারের সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ জন ব্যবসায়ী। সারা দেশে চালের পাইকার আছে এক হাজার ৭০০ জন, যারা সরাসরি মিল থেকে চাল কিনে।

রাহাদুজ্জামান রাজীব আরও বলেন, ধানের সাপ্লাই চেইন হচ্ছে- কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে বিক্রি করে, আর সাপ্লাইয়ররা বিভিন্ন মিলারের কাছে ধান বিক্রি করে। স্থানীয় কিছু ফড়িয়া ও সাপ্লাইয়ার ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে ধান কিনে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখে। দাম বাড়লে ধান বিক্রি করে দেয়। মুজুদদাররা যে দামে ধান বিক্রি করে মিলাররা সে হিসাবে চালের দাম নির্ধারণ করে।

তিনি বলেন, সরকার সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলার ও আড়তদারদের ওপর দোষ চাপায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ায় ধানের ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে মিলারদেরও কিছু যোগসাজশ থাকে। এজন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সরু চালের দাম আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনিকেট ও কাটারি চালের ধানটা পর্যাপ্ত নেই, এগুলো বোরো মৌসুমে হয়। চলতি আমন মৌসুমে মোটা ও মাজারি মানের চালের ধান উৎপাদন হয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কমবে। যদি সরকার আমদানি করতে না পারে, মে মাসের আগে সরু চালের দাম কমবে না।

তিনি বলেন, ঢাকায় চালের বড় আড়তের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চিটাগাং রোড। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চাকতাই ও পাহাড়তলী থেকে চাল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা বদ অভ্যাস হলো, আন্তর্জাতিক বাজার এ পণ্যের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তাদের মজুদ থেকে বাড়তি দাম কার্যকর করে। কিন্তু তা এক মাস পরে কার্যকর করা যেত। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ সবসময় নেই। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এক বস্তা (৫০ বস্তা) চালের দামে পার্থক্য হয়ে যায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

তবে চালের দামের অস্থিরতার পেছনে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সোহেল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে চালের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসার পর দাম অস্থিতিশীল হচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার পর মাঝারি মানের মিলাররা তাদের সঙ্গে পেরে উঠে না। বড় কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। আগে চালের দাম প্রতি বস্তায় বাড়তো ১০ থেকে ২০ পয়সা, এখন বাড়ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এটা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে। এ ছাড়া দামের অস্থিরতার পেছেনে ধান মজুদদারদেরও দায় আছে। তারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। তারা জানে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামেই হোক ধান ক্রয় করবে।

মজুদ কমছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।

সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।

ধান ও চালের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ

মজুদ বাড়াতে সরকার বাজার থেকে প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কিনবে। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনবে সরকার। গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গমের যতটুকু মজুদ আছে ও যতটুকু আমদানি দরকার, তারচেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা ধান ও চাল সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছি। সেটা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যৌক্তিক হয়। আমরা একটা দাম ঠিক করব আর বাজারে এর থেকে বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে- এমন যেন না হয়। এমনটা হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিতে পারে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোরও তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার আসন্ন আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল কিনবে। সেদ্ধ চাল ও ধান কেনা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত।

এদিকে বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি টাকা।

বিশ্ববাজার পরিস্থিতি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে। কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাল খুবই সংবেদনশীল পণ্য। সরকার চাইলেও অনেক সময় হুট করে আমদানি সম্ভব হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ব্যাপকভাবে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এ জন্য টাকার প্রয়োজন হলে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।

চালসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে যাতে ধান আবাদ বেশি হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।


ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত সপ্তাহে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বিদায়ী সপ্তাহে শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।

সমাপ্ত সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর সবকটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে।

এ ছাড়া, ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

সূচকের উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এদিকে, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৪টি কোম্পানির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ফার্মা

বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৯৪ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সমাপ্ত সপ্তাহে কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ওরিয়ন ফার্মার অবদান ২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সপ্তাহজুড়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে আসা ইসলামী ব্যাংকের বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট নিটিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, বেক্সিমকো ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক এবং লাভেলো আইসক্রিম।

ওরিয়ন ফার্মার ৮৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন

ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ওরিয়ন ফার্মার সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৪৪ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ২১ পয়সায় (উদ্বৃত্ত পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া)।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩ টাকা ৬২ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা ১৫ পয়সায়।

২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মার অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩৪ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৯৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ১৩ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

এনভয় টেক্সটাইলসের দর বেড়েছে ২২%

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের গত সপ্তাহে শেয়ারদর বেড়েছে ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির সমাপনী শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৫১ টাকা ৯৩ পয়সায়।

এর আগে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৫৭ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৮ টাকা ২১ পয়সা।

এনভয় টেক্সটাইলসের পর্ষদ ২০২১-২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা করেছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৯৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৫৬ পয়সা। ৩০ জুন ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ২১ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৭ টাকা ৭৯ পয়সা।

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এনভয় টেক্সটাইলসের অনুমোদিত মূলধন ৪৭৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪০৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা ও ৫০ টাকা ১০ পয়সা।

গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের শেয়ারদর বেড়েছে ৪২ শতাংশ

সমাপ্ত সপ্তাহে (৩ নভেম্বর-৭ নভেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানির মধ্যে ২৫৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী সপ্তাহে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সা।

দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারদর বেড়েছে ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান করেছে আফতাব অটো।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, আরামিট সিমেন্ট, এনভয় টেক্সটাইল, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ওরিয়ন ফার্মা, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস এবং ফু-ওয়াং ফুডস।


ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের ৬ দাবি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি। আজ বুধবার ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক প্রতিবাদলিপিতে এসব দাবি জানানো হয়।

সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা ও মাফিয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে আসছে ভারত সরকার। ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে ভিত্তিহীন নেতিবাচক অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত আক্রমণের কাল্পনিক কাহিনী প্রচার করছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।

বুধবার বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক প্রতিবাদ মিছিল রাজারবাগ থেকে শান্তিনগর, কাকরাইল ও সেগুনবাগিচা হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে এক সংক্ষিপ্ত সাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এর আগে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক প্রতিবাদলিপিতে ৬টি দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির ৬ দাবি হলো-

অবিলম্বে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা ও অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে; ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশন, উপ-হাই কমিশনসহ সব বাংলাদেশি স্থাপনার সুষ্ঠু নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে; শেখ হাসিনার সব অপ-তৎপরতা বন্ধ করা এবং তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে; সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে; হাসিনা-মোদির গোপন চুক্তি থাকলে তা প্রকাশ করা ও ট্রানজিট, বিদ্যুৎসহ সব বৈষম্যমূলক চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করে দেশেই বিশ্বমানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবাদ মিছিলে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক কাজ করার ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন। সেই দেশে বসে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আপত্তিকর ও দেশদ্রোহিতামূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যাতে এ ধরনের বক্তব্য রাখতে না পারেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ ভারত সরকার অগ্রাহ্য করছে।

বক্তারা আরও বলেন, কলকাতা এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের উপ- ও সহকারী হাই কমিশনের নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে আমাদের প্রিয় জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলি দাহ করা হয়েছে, যাতে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশিরা মর্মাহত হয়েছি।

তারা বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা এমন এক বাহিনীর উত্তরসূরি, যারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে সর্বপ্রথম পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আবারও প্রয়োজন হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক ডিআইজি এম আকবর আলি খান, সংগঠনের মহাসচিব সাবেক এসপি মিয়া লুৎফর রহমান, সংগঠনের সদস্য সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক এসপি আব্দুর রহমানসহ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।


শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। প্রায় প্রতিদিনই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস আজ বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লেনদেন খরা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার টানা দুই কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয় ডিএসইতে। তবে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার বিমা ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর কল্যাণে লেনদেন কিছুটা বাড়বে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকা কিছুটা বড় হয়। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মূল্যসূচক।

এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে মূল্যসূচকও পজিটিভ হয়। লেনদেনের প্রথম আধাঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে।

কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে আবার পতন প্রবণতা দেখা দেয়। লেনদেনের সময় যত গড়াতে থাকে, দাম কমার তালিকাও তত বড় হতে থাকে। লেনদেনের শেষদিকে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে ঢালাও দরপতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় পতন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৫০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯১টির এবং ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় প্রায় ছয়গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১২৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ড্রাগন সোয়েটার।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, সায়হাম কটন, ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন এবং লাভেলো আইসক্রিম।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৯টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।


৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে এডিবি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাজেট সহায়তা হিসেবে ৬০ কোটি ডলার পলিসি-বেজড এই ঋণ দিচ্ছে এডিবি। প্রতি ডলার ১১৯ টাকা ৪৬ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। আজ বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের আবাসিক মিশনের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স টিম লিডার গোবিন্দ বর জানিয়েছেন- বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অবকাঠামো উন্নয়নে এ ঋণ ব্যবহার করা হবে। এডিবি জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের দক্ষতা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, রাষ্ট্র-সংস্কারের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের একটি প্যাকেজ রয়েছে, যা এ ঋণে বাস্তবায়ন হবে। দেশের মালিকানাধীন উদ্যোগ এবং স্বচ্ছতা এবং সুশাসনের প্রচারে এ ঋণ ভূমিকা রাখবে। এডিবি আরও জানায়, বাংলাদেশ রাজস্ব সংগ্রহের জন্য লড়াই করছে। কারণ এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন কর থেকে প্রবৃদ্ধি অর্জন। এ ঋণ বাংলাদেশকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি উন্নত করার পাশাপাশি দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ করার সক্ষমতা বাড়াবে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা উন্নত করা এই ঋণের আরেকটি উদ্দেশ্য। এ ঋণ দেশের নিয়ন্ত্রক পরিবেশকে সহজ করবে। পাশাপাশি সবার জন্য সমান সুবিধা দিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। ব্যবসায়ের পরিবেশ সৃষ্টি এবং অপারেশন সহজতর করার জন্য, একটি অনলাইন সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। এই ঋণের আওতায় ১৩০টিরও বেশি পরিষেবা থাকবে বলে জানিয়েছে এডিবি।


সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যেও ভারতে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে

আপডেটেড ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকেই ভারতের সঙ্গে কূটনতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশের; পঞ্চম মাসে এসে তা আরও তীব্র হয়েছে; তবে রাজনৈতিক এই সংকটের প্রভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না অর্থনীতিতে। গত পাঁচ মাসে ভারতে পণ্য রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে বেশিই দেখা যাচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ভারতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।

রাজনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের মিল এখনও ধরা না পড়লেও চলমান সংকটের আশু সমাধান না হলে আগামী দিনগুলোতে রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ যত পণ্য আমদানি করে তার অনেক কমই রপ্তানি করে থাকে।

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ভারতে রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় বাংলাদেশের সেটাই প্রথম।

তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১৯৯ কোটি ১৪ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার। যা ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই রপ্তানিতে ভাটা পড়ে; আয় নেমে আসে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলারে।

গত জুলাই মাসে অর্থ বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তা আগস্টের শুরুতেই জনবিস্ফোরণে রূপ নিলে পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। তিনি পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। এরপর থেকে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক টানাপড়েন চললেও নভেম্বরে এসে তা তীব্রতা পায় হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তারের পর। তার জেরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন।

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৈরিতার দিকে চলার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই উত্তেজনার মধ্যেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে গত পাঁচ মাসে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।

গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। তবে সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিল না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।

ওই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছিল।

এরপর ভারতে রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশটিতে পণ্য রপ্তানি আয় ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পাঁচ বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে তার আগে মাত্র চারটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি (১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১২৫ কোটি (১.২৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬২ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলারে নেমে আসে।

বাংলাদেশ ভারতে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। এছাড়া কাঁচা পাট ও পাটজাতপণ্য, সুতা, প্লাস্টিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

গত অর্থ বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ৫৫ কোটি ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২২ কোটি ডলার এবং চামড়া থেকে ১১ কোটি ডলার আয় এসেছিল।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ মনে করেন, সম্পর্ক ভালো থাকলে ভারতে রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব।

তিনি বলেন, “ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। দেড়শ’ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার চেয়ে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি করে পোশাক কিনবে।”

ভারতের বাজারে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে তা যেন নষ্ট হয়ে না যায়, তা চাইছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমাদের তৈরি পোশাকের খুবই সম্ভাবনা এবং ভালো বাজার হয়ে উঠছিল ভারত। সার্বিক রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাঝে হোঁচট খেয়েছিল।

“এখন আবার বাড়ছে। এটা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে যে সম্পর্ক দেখা দিয়েছে, তার সম্মানজনক সমাধান করতে হবে।”

“মনে রাখতে হবে, পাশের দেশ হওয়ায় ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক কম হয়। স্থলবন্দর দিয়েই সব পণ্য রপ্তানি হয়। সে কারণে ভারতে আমাদের রপ্তানি যত বাড়বে, ততই ভালো,” বলেন হাতেম।


বড় দরপতন ঠেকাল বস্ত্র-বিমা খাত

বিমা খাতের ৪৪টি ও বস্ত্র খাতের ৩৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে * ডিএসইএক্স দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমেছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক  

পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। তবে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশির ভাগ বস্ত্র ও বিমা কোম্পানি। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়েছে। ফলে বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

এর আগের সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লেনদেন খরা দেখা দেয়। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গত রোববার ডিএসইতে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। পরের কার্যদিবস সোমবার তা আরও কমে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার চার মাস পর প্রথমবার টানা দুই কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়।

আওয়ামী লীগ তথা হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছিল। এরপর চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস গতকাল লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠান।

শেয়ারবাজারের এই দাম বাড়ার তালিকা বড় করতে ও লেনদেন খরা কাটাতে বড় ভূমিকা রেখেছে বিমা ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো। সব খাত মিলে এদিন ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৭টির এবং ৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

অন্যদিকে বিমা খাতের ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯টির। আর বস্ত্র খাতের ৩৫টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১৪টির। এই দুটি খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ালেও মূল্যসূচকে বড় ভূমিকা রাখা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্য খাতের বেশির ভাগের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১০৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান সায়হাম কটনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৩ কোটি ২১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ১০ কোটি ৩৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাভেলো আইসক্রিম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ড্রাগোন সোয়েটার, নিউ লাইফ ক্লোথিং, এনআরবি ব্যাংক, আইসিবি এবং ব্র্যাক ব্যাংক।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।


লিটারে ৮ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে সরবরাহ সংকটের মধ্যে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে পরিশোধনকারীরা।

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিভোরভএমএ) সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম হবে ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১৫৭ টাকা দরে। আগে বোতলজাত এ তেলের দাম ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল।

মোস্তফা হায়দার বলেন, এক্স বন্ড, ইন বন্ড ভ্যালু এবং গত এক মাসে যে এলসি খোলা হয়েছে, তার ভ্যালু- এই তিনটা ভেল্যু যোগ ও গড় করে একটা দাম ঠিক করতে হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ খরচ, বোতলজাতকরণ খরচ যোগ করতে হয়। ২০১১ সাল থেকে এই পদ্ধতি চর্চা হয়ে আসছে।

এখন থেকে প্রতি মাসে মাসে সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম ঠিক করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোজ্য তেলের দাম প্রতি টন ১২০০ ডলারের কাছাকাছি চলে গিয়েছে, যোগ করেন তিনি।

এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাজারে এই মুহূর্তে সয়াবিন তেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে বলেই গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হিসেবে ট্যারিফ কমিশনের সহযোগিতায় মূল্য পরিস্থিতি পুনর্বিন্যাস করেছি।

তিনি বলেন, গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই থেকে এই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে ২০ শতাংশের বেশি মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। এ কারণে স্থানীয় মজুদদারি বেড়েছে, কারণ সবার মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছিল যে দেশের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘সব রকম তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি দেশে যে মজুদ রয়েছে- তা সন্তোষজনক; মজুদে কোনো ঘাটতি নেই। অন্যদিকে ছোট ছোট জায়গা থেকে শুরু করে সব জায়গায় এক ধরনের মজুদদারি তৎপরতা আমরা দেখতে পেয়েছি।’

উল্লেখ্য, রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ বাজারে দুই-তিন মাস ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে, যা সম্প্রতি আরও তীব্র হয়েছে।


শেয়ারবাজারে লেনদেনে খরা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা * ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমেছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দরপতনের সঙ্গে বড় ধরনের লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সর্বনিম্ন লেনদেন হওয়ার পর আজ সোমবার লেনদেন আরও তলানিতে নেমেছে।

আওয়ামী লীগ তথা হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন, অর্থাৎ ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে এর থেকে কম লেনদেন হয়েছিল। লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। তবে বাজারটিতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। তবে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে আবার দরপতন দেখা দেয়। সেই পতনের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেনদেন খরা। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো। এই লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় লেনদেনের শেষ দিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশি প্রতিষ্ঠান। সে সঙ্গে মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৯০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনে খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১১ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, জেনেক্স ইনফোসিস, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সাইফ পাওয়ার টেক, ফাইন ফুডস, স্যালভো কেমিক্যাল এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯০টির এবং ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।


চার মাসে সর্বনিম্ন লেনদেন

 অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন * গত ৪ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দরপতনের সঙ্গে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একক কোনো কার্যদিবসে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। এমনকি গত চার মাসের মধ্যেও যা সবচেয়ে কম।

আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন, অর্থাৎ গত ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে এরচেয়েও কম লেনদেন হয়েছিল। এদিকে, লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে পতন হয়েছে মূল্যসূচকেরও। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সিএসইতেও কমেছে মূল্যসূচক। তবে এ বাজারটিতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

তবে সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে নেওয়ার পর ফের শুরু হয় দরপতন। পতনের সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেনদেন খরা। রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে গত চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সবচেয়ে কম লেনদেন হলো। এই লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া দরপতনের ধারা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে লেনদেনের শেষ দিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের পতন কিছুটা কম হয়েছে। অবশ্য এরপরও দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় রয়েছে প্রায় তিনগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮১ পয়েন্টে নেমেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেনেক্স ইনফোসিস, আইসিবি, গোল্ডেন সন, ফাইন ফুড, লাভেলো আইসক্রিম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং ড্রাগন সোয়েটার। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৩টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।


banner close