প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে বাংলাদেশে। কৃষকরা ধীরে ধীরে দেশীয় জাত থেকে সরে এসে উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। সরকারি তথ্যে বিষয়টি জানা গেছে। উৎপাদন বাড়ায় চাল আমদানি গত অর্থবছরে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকরা চার কোটি ছয় লাখ টন চাল পেয়েছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেশি। শুষ্ক মৌসুমে বোরোর ফলন বেশি হওয়ায় গত মে থেকে জুনে বোরো আবাদ থেকে কৃষকরা পেয়েছেন প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টন ধান।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ওয়ায়েস কবিরের মতে, ‘এর অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা আধুনিক জাতের ধান চাষে ঝুঁকছেন। তারা উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমিও বেড়েছে।’ কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উৎপাদন বাড়ায় চাল আমদানির দরকার পড়েনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মজুত থাকায় চালের দাম তেমন বাড়েনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, চাল আমদানি না হওয়ার অন্যতম কারণ গম আমদানি বেড়েছে। ফলে চালের চাহিদা কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি। গমের আমদানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১ শতাংশ বেড়ে ৬৬ লাখ টন হয়। চালের উৎপাদন প্রাক্কলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ফেলো এম আসাদুজ্জামান। তার প্রশ্ন- সরবরাহ যদি সত্যিই পর্যাপ্ত থাকে তাহলে চালের দাম বেড়েছে কেন?
তিনি আরও বলেন, যতটা উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে আসলে ততটা বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির অর্থ সরবরাহে ঘাটতি। গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির বড় অংশ ছিল চাল। বিবিএস বলছে, গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের বছর ছিল আট দশমিক ৭১ শতাংশ। এম আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর বারবার বন্যার কারণে আমান চাষ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাল আমদানি করতে হবে। নভেম্বরের শুরুতেই তা বোঝা যাবে। তাই সরকারকে আগামী মাসে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানিয়েছে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে আউশ ও আমন আবাদ ও উৎপাদন কমে যেতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, চলতি মৌসুমে আমন চাষের জমির পরিমাণ কমে ৫৭ দশমিক ৩৫ লাখ হেক্টর হয়েছে। তা আগে ছিল ৫৭ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর সামগ্রিকভাবে আমন চাল উৎপাদন হতে পারে এক কোটি ৫৫ লাখ টন থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টন। বন্যার কারণে কৃষকদের দেরিতে চারা রোপণ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বোরো ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের হাতে উৎপাদন উপকরণ, বিশেষ করে সার নিশ্চিত করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে না।
‘শেরপুর-নেত্রকোনায় চলমান বন্যায় আমনের ক্ষতি হবে। তা পুষিয়ে উঠা সম্ভব না’, উল্লেখ করে ওয়ায়েস কবির বলেন, ‘চাল আমদানি করতে হবে কি হবে না তা নির্ভর করবে আমন ফসলের ওপর। আসন্ন বোরোর উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করবে সরকারের সার ব্যবস্থাপনার ওপর।’ বোরোর ভালো ফলন নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি ছিল ৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১.৩৮ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে।
অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন আয় করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
পোশাক খাত আয়ের তীক্ষ্ণ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এ খাতটি জাতীয় রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখে।
গ্রীষ্মের জন্য পণ্য পাঠানোর শেষ মাস ছিল অক্টোবর। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে জুলাই-আগস্টে কম চালান হয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অক্টোবরে আটকে থাকা পণ্য পাঠানো হয়েছিল, যা রপ্তানি আয়কে তীব্রভাবে বাড়িয়েছে।
‘তবে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য আমাদের আগামী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেক্টরে অস্থিরতা ছিল এবং ক্রেতারা কাজের অর্ডার দিতে ধীরগতিতে চলেছিলেন’, যোগ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা এত শক্তিশালী বৃদ্ধির জন্য কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি এবং এটি টিকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এখনই মন্তব্য করার সময় নয় বরং অপেক্ষা করতে হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক খাত অভূতপূর্ব অস্থিরতা দেখেছে এবং ক্রেতারা কাজের আদেশ স্থানান্তর করেছে।’
রপ্তানিকারকরা বলছেন, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী হওয়া উচিত। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান।
অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয়
অক্টোবর মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১১৩ মিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৫৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে ৭৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ৩৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং আয় করেছে ৬৪ মিলিয়ন ডলার।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় অক্টোবরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। আয় হয়েছে ৫২ মিলিয়ন ডলার, যা গত অক্টোবরের একই সময়ে ছিল ৩৯ মিলিয়ন।
অক্টোবরে ওষুধ পণ্য রপ্তানি ৪৯ শতাংশ বেড়ে ২১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শেয়ার বিক্রির অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমানোর প্রেক্ষিতে দুদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও ফের টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে শেয়ারবাজার।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ নভেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দিলে গত ৪ নভেম্বর দুপুরে মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন এবং পর দিন শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু এরপর আবার পতনের ধারা শুরু হয় শেয়ারবাজারে।
গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৬৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী আঁশের ১৯ কোটি ৭১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং আফতাব অটোমোবাইল।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪০টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা।
চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। যদিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।
সূত্র মতে, বাজারে চালের অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত এই চক্র জাল বিছিয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চাল উৎপাদন বেশি। বাজারে চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।
ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন- এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্সের গোলাম হাফিজ মানিক বলেন, মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি চালের দামে ফায়দা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে।
বাজারে ধানের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো চাল ও ধান মজুদ করে রেখেছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গোলাম হাফিজ মানিক আরও বলেন, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়ছে না
চালের সরবরাহ বাড়াতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রিম আয়করও ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চক্রটি মজুদ চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য আমদানি করছে না। আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্যদেরও। তাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ টন। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, যে বছরই হাওরে বন্যা হয় অথবা আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হয়ে যায়, ওই বছরই ধান-চালের সংকট সৃষ্টি হয়। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি ১০ থেকে ১৮ লাখ মেট্ৰিক টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করেনি। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম।
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনও খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মিয়ানমার বা ফিলিপাইনের চাল আমাদের দেশের মানুষ খেতে অভ্যস্ত নয়। সরকার আজ যদি ভারত থেকে এক লাখ মেট্ৰিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, কাল প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমে যাবে। চালের দাম পুরোপুরি মজুতের ওপর নির্ভর করে। মজুদ থাকলে চালের দাম কমবে, না থাকলে রাতারাতি বেড়ে যাবে।
যেভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়
রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে একটা চেইন অব কমান্ড কাজ করে তৃণমূল থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। চালের দাম প্রোডাক্ট চেইন ও পর্যাপ্ত মজুতের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মিনিকেটের দাম অক্টোবর মাসে প্রতি বস্তা ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। চলতি মাসে সেটার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এটার কারণ মিনিকেট চাল যে ধান থেকে হয় সেটার দাম বেড়ে গেছে। প্রতি মণের দাম ছিল (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ টাকা। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, মিলার ও আড়তদারদের দোষ হচ্ছে আজকে ধানের দাম বাড়লে তারা আজকে থেকেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ১৫ বা ২০ দিন পরে বাড়াতে পারত। তারা মজুতের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া থেকে। মোটা চালের নিয়ন্ত্রণ হয় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও হাওর এলাকা থেকে। চালের বাজার থেকে ধানের বাজারের সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ জন ব্যবসায়ী। সারা দেশে চালের পাইকার আছে এক হাজার ৭০০ জন, যারা সরাসরি মিল থেকে চাল কিনে।
রাহাদুজ্জামান রাজীব আরও বলেন, ধানের সাপ্লাই চেইন হচ্ছে- কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে বিক্রি করে, আর সাপ্লাইয়ররা বিভিন্ন মিলারের কাছে ধান বিক্রি করে। স্থানীয় কিছু ফড়িয়া ও সাপ্লাইয়ার ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে ধান কিনে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখে। দাম বাড়লে ধান বিক্রি করে দেয়। মুজুদদাররা যে দামে ধান বিক্রি করে মিলাররা সে হিসাবে চালের দাম নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, সরকার সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলার ও আড়তদারদের ওপর দোষ চাপায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ায় ধানের ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে মিলারদেরও কিছু যোগসাজশ থাকে। এজন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সরু চালের দাম আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনিকেট ও কাটারি চালের ধানটা পর্যাপ্ত নেই, এগুলো বোরো মৌসুমে হয়। চলতি আমন মৌসুমে মোটা ও মাজারি মানের চালের ধান উৎপাদন হয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কমবে। যদি সরকার আমদানি করতে না পারে, মে মাসের আগে সরু চালের দাম কমবে না।
তিনি বলেন, ঢাকায় চালের বড় আড়তের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চিটাগাং রোড। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চাকতাই ও পাহাড়তলী থেকে চাল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা বদ অভ্যাস হলো, আন্তর্জাতিক বাজার এ পণ্যের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তাদের মজুদ থেকে বাড়তি দাম কার্যকর করে। কিন্তু তা এক মাস পরে কার্যকর করা যেত। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ সবসময় নেই। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এক বস্তা (৫০ বস্তা) চালের দামে পার্থক্য হয়ে যায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে চালের দামের অস্থিরতার পেছনে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সোহেল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে চালের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসার পর দাম অস্থিতিশীল হচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার পর মাঝারি মানের মিলাররা তাদের সঙ্গে পেরে উঠে না। বড় কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। আগে চালের দাম প্রতি বস্তায় বাড়তো ১০ থেকে ২০ পয়সা, এখন বাড়ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এটা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে। এ ছাড়া দামের অস্থিরতার পেছেনে ধান মজুদদারদেরও দায় আছে। তারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। তারা জানে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামেই হোক ধান ক্রয় করবে।
মজুদ কমছে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।
সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।
ধান ও চালের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ
মজুদ বাড়াতে সরকার বাজার থেকে প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কিনবে। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনবে সরকার। গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গমের যতটুকু মজুদ আছে ও যতটুকু আমদানি দরকার, তারচেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা ধান ও চাল সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছি। সেটা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যৌক্তিক হয়। আমরা একটা দাম ঠিক করব আর বাজারে এর থেকে বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে- এমন যেন না হয়। এমনটা হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিতে পারে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোরও তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার আসন্ন আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল কিনবে। সেদ্ধ চাল ও ধান কেনা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
এদিকে বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি টাকা।
বিশ্ববাজার পরিস্থিতি
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে। কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাল খুবই সংবেদনশীল পণ্য। সরকার চাইলেও অনেক সময় হুট করে আমদানি সম্ভব হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ব্যাপকভাবে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এ জন্য টাকার প্রয়োজন হলে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।
চালসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে যাতে ধান আবাদ বেশি হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
গত সপ্তাহে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিদায়ী সপ্তাহে শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
সমাপ্ত সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর সবকটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে।
এ ছাড়া, ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সূচকের উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এদিকে, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৪টি কোম্পানির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ফার্মা
বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৯৪ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সমাপ্ত সপ্তাহে কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ওরিয়ন ফার্মার অবদান ২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সপ্তাহজুড়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে আসা ইসলামী ব্যাংকের বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট নিটিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, বেক্সিমকো ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক এবং লাভেলো আইসক্রিম।
ওরিয়ন ফার্মার ৮৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন
ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ওরিয়ন ফার্মার সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৪৪ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ২১ পয়সায় (উদ্বৃত্ত পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া)।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩ টাকা ৬২ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা ১৫ পয়সায়।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মার অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩৪ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৯৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ১৩ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলসের দর বেড়েছে ২২%
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের গত সপ্তাহে শেয়ারদর বেড়েছে ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির সমাপনী শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৫১ টাকা ৯৩ পয়সায়।
এর আগে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৫৭ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৮ টাকা ২১ পয়সা।
এনভয় টেক্সটাইলসের পর্ষদ ২০২১-২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা করেছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৯৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৫৬ পয়সা। ৩০ জুন ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ২১ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৭ টাকা ৭৯ পয়সা।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এনভয় টেক্সটাইলসের অনুমোদিত মূলধন ৪৭৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪০৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা ও ৫০ টাকা ১০ পয়সা।
গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের শেয়ারদর বেড়েছে ৪২ শতাংশ
সমাপ্ত সপ্তাহে (৩ নভেম্বর-৭ নভেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানির মধ্যে ২৫৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী সপ্তাহে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সা।
দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারদর বেড়েছে ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান করেছে আফতাব অটো।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, আরামিট সিমেন্ট, এনভয় টেক্সটাইল, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ওরিয়ন ফার্মা, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস এবং ফু-ওয়াং ফুডস।
দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না। বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও অক্টোবরে তা আবার বেড়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ আর গত আগস্টে মাসে ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অক্টোবরের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্যে ১২ টাকা ৬৬ পয়সা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে ভোক্তাদের। অক্টোবরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে এক অঙ্কে নেমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ আর তার আগের মাস আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
তবে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে সাধারণ বা গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অক্টোবরে বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম কিছুটা কমেছে। মাসটিতে এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্থবিরতা নামে পণ্য সরবরাহ। এরই প্রভাবে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। দেশের ইতিহাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির এ হার অতীতে আর দেখা যায়নি।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছিল, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায় ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ফলে অক্টোবর মাসে সাধারণ খাত ও খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী অনুষ্ঠেয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) বিভিন্ন ধরনের স্টল, প্যাভিলিয়ন ও রেস্তোরাঁ বরাদ্দ এবার অনলাইনে হবে। মেলা আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ বিষয়ে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছে।
সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্পেস বরাদ্দের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। গত বুধবার ইপিবি এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেলার স্পেস বরাদ্দ গ্রহণের জন্য উদ্ধৃত দর, মূল্য, মাশুল ইত্যাদি সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জমা করতে হবে।
এ উপলক্ষে ইপিবি ও সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মধ্যে বুধবার চুক্তি হয়েছে। ইপিবির পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সংস্থাটির সচিব বিবেক সরকার, যিনি ডিআইটিএফেরও পরিচালক। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে ইপিবির ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভাষ চন্দ্র দাশ উপস্থিত ছিলেন।
ইপিবি বলেছে, সফটওয়্যারটি চালু হওয়ার ফলে মেলায় অংশগ্রহণপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ঘরে বসেই আবেদন করতে পারবেন। সফটওয়্যারটি ওয়েব লিংক : ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসুবিধা দেখা দিলে হেল্পলাইনে (০১৯৬৬২৪৯২২৫, ০১৬৮৬১৭৭২৮২, ০১৭১১৩৭৮১৮১) ফোন করে সাহায্য নেওয়া যাবে।
পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ২৯তম ডিআইটিএফ। দেশি-বিদেশি উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩৫০টি বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। দেশীয় পণ্যের প্রচার–প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে ডিআইটিএফ আয়োজন করে আসছে ইপিবি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের কনফিডেন্স বাড়ছে। পাশাপাশি আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে এবং দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এক বিশেষ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ৩ মাসের মধ্যে সবকিছু করা সম্ভব না। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ হোক, কাল হোক, রাষ্ট্রক্ষমতায় রাজনৈতিক সরকার আসবে। আমরা যতটুকু সময় আছি দেশের জন্য কাজ করে যাব। তিনি বলেন, খাদ্য, জ্বালানি, সার ও কীটনাশক খাতকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এসব খাতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য সরকারের সহযোগিতা থাকবে। আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের দেশীয় শিল্পের বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা প্রাইভেট সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু, ওষুধ, চামড়া, গার্মেন্ট ও অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য আমদানিতে ডিউটি ট্যাক্স কমানোসহ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের চেয়ারম্যান আব্দুল মোক্তাদির, এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যাচ্ছেন। এমন খবরে গতকাল বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি। এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিন ৬ আগস্ট মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক বেড়েছিল ১৯২ পয়েন্ট। এরপর ৭ আগস্ট বুধবার বেড়েছে ১৯৭ পয়েন্ট এবং ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট এবং ১১ আগস্ট রোববার বেড়েছে ৯১ পয়েন্ট। ওই চার দিনে সূচকের উত্থান হয়েছে ৭৮৬ পয়েন্ট।
এরপর ১২ আগস্ট সোমবার থেকেই শুরু হয় ধারাবাহিক পতন। ১২ আগস্ট থেকে ২৮ অক্টোবর (সোমবার) পর্যন্ত আড়াই মাসে সূচকের পতন হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। গত ২৮ অক্টোবর সেটি আরও ৩৩১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে নেমে যায়।
অবশেষ গতকাল বুধবার থেকে বাজার বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ায়। গতকাল ডিএসইর সূচকে বেড়েছে ১১৮ পয়েন্টের বেশি এবং আজ বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি। বুধবার ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের সূচক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সূচক এখনো ৬৫ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই বিএসইসিতে যাচ্ছেন। যেখানে এর আগে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যাননি। শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি ভিন্ন ম্যাসেজ। শেয়ারবাজারের প্রতি অর্থ উপদেষ্টার এমন আগ্রহের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
বুধবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৭ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে দাঁডিয়েছে। এ ছাড়া ডিএসইর অপর সূচক ডিএসইএস ২২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ১১৩৬ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৫৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫১৯ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
ডিএসইতে বুধবার মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ১৫ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৪৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১২ কোটি ৯৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, টেকনো ড্রাগস ও ইসলামী ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৩০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯টির এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানান, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার করহার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয়ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা, সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।
আয় ফেরত আনার ভোগান্তি, অস্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের নেট ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ৮.৮ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১.৬১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেট এফডিআই প্রবাহ ১.৪৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে এফডিআই প্রবাহ ১৪২ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় এফডিআই কমার জন্য তিনটি প্রধান কারণকে দায়ী করেছেন।
এজাজ বলেন, প্রথমত, নির্বাচনী বছরের প্রভাব। নির্বাচনী বছরগুলোতে সাধারণত এফডিআই প্রবাহে ধীরগতি দেখা দেয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে এ প্রবণতা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ডলার সংকট কিছুটা কমলেও মুদ্রার অবমূল্যায়নসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা ‘অপেক্ষা করে দেখি’ কৌশল অনুসরণ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ, দেশের ক্রেডিট রেটিং কমে আসা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্রেডিট রেটিংয়ে অবনতি বাংলাদেশের বিনিয়োগ আকাঙ্ক্ষাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। কারণ এর ফলে বিনিয়োগের ঝুঁকি আছে, এমন মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, সাম্প্রতিক ক্রেডিট রেটিং কমে আসার ফলে বাংলাদেশের এফডিআই আরও কমতে পারে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রেটিং স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক পর্যায়ে নামিয়ে আনে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের দুর্বল তারল্য এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট নীতিগত ঝুঁকি।
মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস-ও এই বছরের মে মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রেটিং ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১1’-এ নামিয়ে এনেছে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রেখেছে, যা অর্থনীতির ঋণ সক্ষমতায় কোনো তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নেই বলে ইঙ্গিত করে।
এফডিআই প্রবাহে এই ধীরগতি ডলার বিনিময় হারেও প্রভাব ফেলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাইয মাসে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০৮.৪০ টাকা। এটি ২০২৪ সালের জুন মাসে বেড়ে ১২১ টাকায় পৌঁছেছে, অর্থাৎ ১০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার রেটিং কমে এলে সেটি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি জানান, বিনিয়োগকারীরা এসব রেটিংকে গুরুত্বের সেঙ্গে বিবেচনা করেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এসব রেটিংয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরনের রেটিং অর্থনীতির আপেক্ষিক শক্তিমত্তাকে প্রতিফলিত করে এবং নিম্নমানের রেটিং বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মোট নেট এফডিআই-এর মধ্যে ৬১৫ মিলিয়ন ডলার ছিল পুনঃবিনিয়োগিত মুনাফা। আরও জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের নেট এফডিআই-এর ৪২ শতাংশ পুনঃবিনিয়োগিত মুনাফা থেকে এসেছে। অর্থাৎ দেশের এফডিআই প্রবাহের একটি বড় অংশ বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগের মুনাফা পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে এসেছে।
কেন পুনঃবিনিয়োগিত মুনাফা এফডিআই-এর একটি বড় অংশ- এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ওপর রিটার্ন বা লাভ খুবই আকর্ষণীয়। এটি অনেক বিনিয়োগকারীকে তাদের মুনাফা পুনঃবিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে।
তিনি বলেন, তবে ডলার সংকটসহ আয় ফেরত আনতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় তাদের আয় না তুলে পুনঃবিনিয়োগে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বাধিক ৪৩৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে। তারপর, ব্যাংকিং খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
অন্যান্য খাতের মধ্যে ওষুধ ও রাসায়নিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম এবং খাদ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ দেখা গেছে।
অনাস্থার পুঁজিবাজারে দরপতনের মিছিল আরও লম্বা হচ্ছে। কিছুতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা মিলছে না। নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কোনো বার্তাও। আগের দিন ৩ শতাংশ পতনের পর গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে আরও দেড় শতাংশের কাছাকাছি। একদিনেই এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে আরও সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। লেনদেন সামান্য বাড়লেও দিনভর বিক্রয়চাপে যতগুলো সিকিউরিটিজের দর বেড়েছে, তার দ্বিগুণ দর হারিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের পতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শেয়ার কেনার ক্রেতা একদমই কম। অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিও হিসাব বন্ধ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আবার সাইডলাইনে থেকে মূলধন হাতে নিয়ে বাজার পর্যাবেক্ষণ করছে। তাছাড়া ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে অনেককে। এতে প্রতিনিয়ত বিক্রয় চাপে দরপতনের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান বলেন, ‘অবশ্যই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ আগের সমস্যাগুলো আছে। তবে এখন প্যানিক সেল এবং যারা ঋণ নিয়ে শেয়ার ক্রয় করেছিলেন, তাদেরকে ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বাজারে ট্রাস্ট (আস্থা) বড় ইস্যু। গত কয়েক দিন ধরে ভালো শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা আস্থা থেকে অনেকখানি দূরে চলে গেছেন। এখন তারা সব শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স গতকাল একদিনেই আরও ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ৬৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের দিন সূচকটি ১৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে নেমেছিল। সূচকটির গতকালের অবস্থান ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন। ওইদিন ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ৮৬৭ পয়েন্টে নেমেছিল। এক্সচেঞ্জটির অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন লেনদেন শেষে যা ১ হাজার ১০৮ পয়েন্টে নেমেছিল। আর বাছাইকৃত ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস৩০ দিনের ব্যবধানে ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন যা ছিল ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে।
ঢাকার এ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে গতকাল সবগুলোর লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০৫টির দর বেড়েছে। বিপরীতে ২৪৬টিই দর হারিয়েছে। আর ৪৬টির দর এদিন অপরিবর্তিত ছিল। এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের পরিমান এদিন সামান্য বেড়ে ৩৫৭ কোটি ২৫ লাখ হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন ডিএসইর বাজার মূলধন একদিনেই পৌনে ১০ হাজার কোটি টাকা কমার পর গতকাল আরও ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সবগুলো সূচক কমেছে। এর মধ্যে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৮২১ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে এদিন ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৪টির।
এদিকে ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীরা আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও মতিঝিলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে জড়ো হন একদল বিনিয়োগকারী। আর দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে মানববন্ধন করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরেকটি গ্রুপ। উভয় মানববন্ধন থেকেই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অভ্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। তবে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ তথ্য জানায়।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই একই সময়ে এডিপি বাস্তাবায়নের হার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুধু সেপ্টেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
আইএমইডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন হার কম থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাস জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাবও এডিপি বাস্তবায়নের ওপর পড়েছে।
বিশ্ববাজারে চালের দাম কমছে। শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত রপ্তানিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম কমছে; কিন্তু দেশের বাজারে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে দেশে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা, মাঝারি ও সরু- প্রায় সব ধরনের চালের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দেশে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে
রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি মোট দানার চাল খুচরা পর্যায়ে পড়েছে ৬৪-৬৫ টাকা। মাঝারি ব্রি-২৮ এর দাম ছিল ৬৬-৬৮ টাকা কেজি এবং সরু দানার (মিনিকেট ও নজিরশাইল) চাল পড়ে ৮৪-৮৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল তিন হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার ৭৫০ টাকায় এবং নাজিরশাইল তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ধানের দাম বৃদ্ধি ও রাইস মিল থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের; আর পাইকাররা দাবি করছেন, মিল পর্যায়ে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে শনিবার মেসার্স রহিম এন্টারপ্রাইজের কর্মী কামাল হোসেন বলেন, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের চালের দাম গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এই চালগুলোর দাম প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ আগেও এই চাল বিক্রি করেছি দুই হাজার ৮৫০ থেকে দুই হাজার ৯৫০ টাকায়।
গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে চালের দাম প্রতি কেজিতে এক থেকে তিন টাকা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বাড়ছে ভোক্তাদের ওপর। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার শ্রমিক আবুল হোসেন জানান, তিনি সাধারণত পাইজাম চাল কেনেন। আগে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। এখন কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকায়। জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে চালের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছ, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ঢাকায় যেসব আড়ৎদারদের চাল শেষ হয়েছে বা কমে আসছে, তারা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত কেজিতে চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে।
পাইকাররা জানান, মিল মালিকরা দাবি করছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত মজুদ নেই। কিন্তু আসলে আছে। তারা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে।
রামপুরা উলন বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ আগেও বিআর-২৮ চাল কিনেছি ৬২ টাকা কেজিতে। আর আজ দোকান মালিক এই চালের দাম চাইছেন ৬৫ টাকা। এ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বলেন, কেজিতে আমরা পাঁচ থেকে ছয় টাকা লাভ করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে বলে দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
বিশ্ববাজারে দাম নিম্নমুখী
ভারত সম্প্রতি আধাসেদ্ধ চাল রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিশ্ববাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় চালের দাম কমছে। থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানির গড় মূল্য গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৫২৯ ডলারে নেমে এসেছে। এই দাম আগের মাসের চেয়ে ৮ শতাংশ কম। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে থাই চালের রপ্তানিমূল্য ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। সেই তুলনায় এখন দাম কমেছে ২১ শতাংশ। সে সঙ্গে ভারতেও ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের দাম গত সপ্তাহে ছিল টনপ্রতি ৪৫০ থেকে ৪৮৪ ডলার, গত বছরের আগস্টের পর যা সর্বনিম্ন। ভারতের ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সাদা চালের দাম আগের সপ্তাহে ছিল টনপ্রতি ৪৬০ থেকে ৪৯০ ডলার।
ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে দেশটিতে চালের দাম গত বছরের জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ভিয়েতনামে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৫৩২ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫৩৭ ডলার। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে যত চাল রপ্তানি হয়েছিল, তার ৪০ শতাংশই করেছে ভারত। সেই হিসাবে ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ। ওই বছর বিশ্ব রপ্তানি বাজারে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টন চাল বেচাকেনা হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু ভারতের চালই ছিল ২ কোটি ২২ লাখ টন।
চালের আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পরের চারটি অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে এ চার দেশ সম্মিলিতভাবে যত চাল রপ্তানি করে, ভারত একাই তার চেয়ে বেশি করে। ভারত সব মিলিয়ে ১৪০টি দেশে চাল রপ্তানি করে। সে জন্য ভারতের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে চালের দামে প্রভাব ফেলে। ২০২৩ সালে ভারত চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। ভারত চাল রপ্তানিতে নানা রকম বিধিনিষেধ দেওয়ার কারণে এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতারা এই শস্য কিনতে ছোটেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে। চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব দেশে চালের রপ্তানির মূল্য গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
রপ্তানিকারক দেশের প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভিয়েতনামে চালের দাম কমেছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার বুলোগ চাল ক্রয়ের টেন্ডার বাতিল করেছে। চালের দামে তার প্রভাবও পড়েছে। এদিকে থাইল্যান্ডে গত সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৫১০ ডলার, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫২৫ ডলার। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ শিথিল করছে। ফলে গত মাসের শেষ দিক থেকেই বিশ্ববাজারে চালের দাম কমছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
পতনের ধারায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই দরপতন হয়েছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি কমেছে বাজার মূলধন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
চলতি সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৩টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। এ ছাড়া ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ২৯৮ কোটি।
দাম কমার তালিকায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স চলতি সপ্তাহে কমেছে ১৪৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৬৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট। তার আগের আট সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫০২ পয়েন্ট। আন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ১১ সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৭৯৯ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। চলতি সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫১ দশমিক ২২ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকটি চলতি সপ্তাহে কমেছে ৩০ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে কমেছে ৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৬ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমলেও চলতি সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা এবং ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ।
বৃহস্পতিবারের লেনদেনের চিত্র
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৫৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে সূচকটি ৫ হাজার ১১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ১৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট কমে ১১৪৪ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে ১৮৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩০৬ কোটি ০১ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হজার টাকা। এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ২৭২ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।