পতনের ধারায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই দরপতন হয়েছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি কমেছে বাজার মূলধন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
চলতি সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৩টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। এ ছাড়া ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ২৯৮ কোটি।
দাম কমার তালিকায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স চলতি সপ্তাহে কমেছে ১৪৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৬৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট। তার আগের আট সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫০২ পয়েন্ট। আন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ১১ সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৭৯৯ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। চলতি সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫১ দশমিক ২২ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকটি চলতি সপ্তাহে কমেছে ৩০ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে কমেছে ৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৬ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমলেও চলতি সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা এবং ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ।
বৃহস্পতিবারের লেনদেনের চিত্র
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মূল্যসূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৫৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে সূচকটি ৫ হাজার ১১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ১৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট কমে ১১৪৪ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে ১৮৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩০৬ কোটি ০১ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হজার টাকা। এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ২৭২ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার দপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, নেপালে ১১টি জুট মিল রয়েছে। নেপালের জুট মিলগুলো তাদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করায় মিলগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানির অনুমতি শিথিল করার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানান।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের পাটপণ্য ও কাঁচাপাটের চাহিদা রয়েছে। কাঁচাপাট রপ্তানি না করে বাংলাদেশ সেমি-ফিনিশড (আধা-প্রক্রিয়াজাত) পাটপণ্য রপ্তানি করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ উচ্চমানের ও পরিবেশবান্ধব সেমি-ফিনিশড পাটপণ্য উৎপাদন করছে। নেপাল এই পণ্যগুলো আমদানি করলে দুই দেশের বাণিজ্য ভলিউম বাড়বে এবং উভয় দেশই লাভবান হবে।
চীনা কোম্পানি অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্চ মানসম্পন্ন গার্মেন্ট উৎপাদনকারী একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ১৯.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেপজা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল আহসান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ৩০ লাখ পিস স্কি, স্নো স্পোর্টস, হান্টিং ও মোটর রাইডার গিয়ার, ইনসুলেটেড শীতকালীন কোট, ডাউন জ্যাকেট ও প্যান্ট, রেইন গিয়ার, ওয়ার্কওয়্যার, রানিংওয়্যার, ইয়োগাওয়্যার, এবং ওয়াটার স্পোর্টসওয়্যার তৈরি করবে।
প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজার ৭৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানান এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডসহ এ পর্যন্ত মোট ৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যাদের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ১.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। ক্রমাগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কারণে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও বিনিয়োগে ধীরগতির প্রবণতার মধ্যেও বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির মতে, এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আস্থা বাংলাদেশের বাজারে বাড়ছে এবং তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত লাভজনক বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ পুনরায় বিনিয়োগ করছে। পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু মুনাফা স্থানান্তর করছে না, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।
বিশ্বব্যাপী নতুন মূলধনের (গ্রিনফিল্ড এফডিআই) প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশে এ খাতে রেকর্ড হয়েছে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। পাশাপাশি বিদেশি মূল কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন বা ইন্টার-কোম্পানি ঋণের হার এক বছরে বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।
শুধু ছয় মাস নয়, পুরো অর্থবছরের চিত্রও আশাব্যঞ্জক। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৯ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা- বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) ও বিসিকের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোম্পানির মোট ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ। এর মধ্যে ৬৫ কোটি ডলারেরও বেশি এসেছে সরাসরি বিদেশি কোম্পানির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থার প্রতিফলন। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ। আর গত চার মাসে এই পতনের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন শুল্ক কাঠামোর পুরোপুরি প্রভাব পড়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এই শুল্কের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধে ভারতের অস্বীকৃতির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে পরিণত হয়েছে।
জিটিআরআইয়ের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শ্রমনির্ভর খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, প্রকৌশলজাত পণ্য এবং রাসায়নিক খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এসব খাতে রফতানি আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর নাগাদ তা নেমে আসে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। পর পর চার মাস ধরে রপ্তানি কমতে থাকায় ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দীর্ঘ বিরতির পর গত মাসে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা আবার শুরু হয়। চলমান আলোচনার লক্ষ্য আগামী মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে।
বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। ওয়াশিংটন মনে করছে, এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনা চলছে। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এই সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
অবশ্য কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখছে। কিন্তু নয়াদিল্লি খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষকের জীবিকা ও অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষার কারণ দেখিয়ে এই খাতকে রক্ষা করে আসছে।
কিছু দিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্প ও মোদি দুজনই এই অঙ্ক ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধ সেই লক্ষ্যকে এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইসকন্টাক্ট-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো শক্তিশালী করা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা সম্মেলন কক্ষে ওই সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, চুক্তির আওতায় তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রমাণনির্ভর বিনিয়োগ পরিবেশ বিশ্লেষণ ও সমন্বয় জোরদার, বিডাকে একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা হিসেবে শক্তিশালী করা ও খাতভিত্তিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ উন্নয়ন।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, বিডা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ নীতিমালা সংস্কার, সেবার ডিজিটালাইজেশন এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ করছে। সুইসকন্টাক্ট ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের আওতায় বিডার সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পৌরসভায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
বিডার জনসংযোগ দপ্তর জানায়, আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিডা ও সুইসকন্টাক্ট এখন নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে, যা বিডার ‘হিট ম্যাপ’ অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বিডা চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকার নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুইসকন্টাক্টের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আমাদের ‘ইনভেস্টর-ফার্স্ট’ মডেল বাস্তবায়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশকে দক্ষ, সেবাবান্ধব ও সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে অনুভব করেন।
বিডা জানায়, সুইসকন্টাক্ট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়ন, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বিশ্বাস করে, এই সহযোগিতা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য।
বিডা ও সুইসকন্টাক্ট উভয় প্রতিষ্ঠানই আশা প্রকাশ করেছে, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত হবে, মানসম্পন্ন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ১৮তম নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন এবং মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হন।
বেপজায় যোগদানের আগে মোয়াজ্জেম হোসেন সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) এবং বরিশালে এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনি ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন। তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন কমান্ড, স্টাফ এবং নির্দেশনামূলক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন দুইটি আর্টিলারি ব্রিগেড ও দুইটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ড করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে একটি ডিভিশনের কর্নেল স্টাফ এবং পরিচালক (বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি রাজধানীর মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) থেকে স্নাতক এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি) সম্পন্ন করেছেন।
এছাড়া তিনি বিদেশে উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চীনের নানজিং আর্টিলারি একাডেমি ও পাকিস্তানের স্কুল অব আর্টিলারি রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমফিল সম্পন্ন করেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে পিএইচডি করছেন।
বাংলাদেশ টেকসই পোশাক উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করেছে, কারণ নতুন করে পাঁচটি কারখানা লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
সর্বশেষ এই সংযোজনের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বাধিক ২৬৮টি লিড-সার্টিফায়েড কারখানার অধিকারী। এর মধ্যে ১১৪টি পেয়েছে প্লাটিনাম ও ১৩৫টি পেয়েছে গোল্ড সার্টিফিকেশন।
এই পাঁচটি নতুন কারখানাসহ বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬৮টি বাংলাদেশে অবস্থিত, যা দেশের পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও জ্বালানি দক্ষতার ধারাবাহিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
নতুন সার্টিফিকেশন পাওয়া পাঁচটি কারখানা হলো- পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সাভার, ঢাকা ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ৪.১ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ফ্যাশন পালস লিমিটেড, বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ঢাকা বিডি+সি: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৮ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন পেয়েছে; গাভা প্রাইভেট লিমিটেড, প্লট ১১৪১২০, ঢাকা ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ভিজুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেড, চট্টগ্রাম ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ভি৪.১ ক্যাটাগরিতে ৭৬ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে; এবং ট্যালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৬২ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
এই নতুন সংযোজনগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টেকসই উৎপাদন এবং বৈশ্বিক সবুজ রূপান্তরের ধারাবাহিক অগ্রগতিকে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। গত এক দশকে দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড গ্রহণের মাধ্যমে এক ধরনের সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে।
লিড-সার্টিফায়েড কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইইউজিবিসি)-এর কঠোর টেকসই মানদণ্ড অনুসরণ করে, যেখানে জ্বালানি ও পানির দক্ষ ব্যবহার, কার্বন নির্গমন হ্রাস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর ভূমিকা এবং সবুজ শিল্পায়নে সরকারের সহায়ক নীতিমালাকে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সবুজ কারখানার সংখ্যা শুধু দেশকে একটি দায়িত্বশীল উৎপাদন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে না, বরং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প ভবিষ্যতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বস্ত্র ও পাট, বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফান্ড দিয়ে জেডিপিসির মাধ্যমে প্রায় ১০০৬ জন উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করছি বাজারে পাটের একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যাতে আনতে পারি।
অতীতের মতো আমরা কী করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। পাটের স্কোয়ার মিটার, মাইলেজ, এর পরিধি বাড়াতে গবেষণার দরকার। র্যাপিং (মোড়ক) উপকরণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পাটের বিশাল বাজার আছে।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে টেকসই উন্নয়নে পাটের ভূমিকাবিষয়ক সেমিনার ‘হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফাতেমা আহমেদ ট্রাস্ট লেকচার-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘ফিউচার ক্যাপ্টেন’ উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আপনারা অনেক জায়গায় রিফাইন্ড ক্যারেক্টার দেখিয়েছেন। বলেছেন মানি না। পাটব্যাগের জন্য কালচারাল চেঞ্জ (সাংস্কৃতিক পরিবর্তন) দরকার আমাদের, কাউকে বাধ্য করে নয়। পাটপণ্য ইনোভেশন ও খরচ কমিয়ে এর বাণিজ্যিক সফলতা তৈরি করতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে যা প্লাস্টিককে হারাতে পারে। এজন্য নীতি, পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টার সমন্বিত উদ্যোগ রাখতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ে। আপনারা যেখানে কাজ করবেন সে প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ করতে কাজ করতে হবে। শ্রেষ্ঠত্ব তৈরি করতে হবে।
বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের (বুটেক্স) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন প্রধান অতিথি উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন-এর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করতে পাট চাষ ও এর রপ্তানি এবং এর ভবিষ্যতের নানা দিক উপস্থাপন করেন। সেইসাথে আগামী বাণিজ্য মেলায় একমাত্র পাটব্যাগ প্রচলনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাশিদা আখতার খানম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. নারগিস আখতার, আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, আইটিইটির আহ্বায়ক ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, সরকার ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড এবং সামগ্রিক ভিসা নীতিমালা সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করার কাজ চলছে। পরিকল্পিত এই সংস্কারের ফলে আবেদনকারীরা ঘরে বসেই অনলাইনে ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে ফি প্রদানের জন্য শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।’
বুধবার রাজধানীতে বিডার মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে ‘ওয়ার্ক পারমিট ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রসেস’ বিষয়ক এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সামগ্রিক ভিসা নীতিমালার ক্ষেত্রেও বড় পরিসরে সংস্কারের কাজ করছে।
এই বিস্তৃত নীতি সংস্কারের লক্ষ্য হলো বর্তমান ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান করা।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে যেখানে ৩৪টি নথি জমা দিতে হতো, সেখানে এখন তা কমিয়ে ১১টিতে আনা হয়েছে। এটি একটি বড় অর্জন, কারণ অতীতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনার কারণে নানা দপ্তর থেকে একাধিক নথি চাওয়া হতো।’
বিডা চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, ‘বিডাসহ সরকারের সব কার্যক্রমে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কিছু করতে চাই না যা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বা আপসের সম্ভাবনা তৈরি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বিডা- সকলের লক্ষ্য এক এবং আমরা একই উদ্দেশে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই- সব সংস্থা যেন সমন্বিতভাবে কাজ করে সমস্যা সমাধান করে এবং জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।’
কর্মশালায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিডা তাদের নিজ নিজ উপস্থাপনা তুলে ধরেছে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বক্তৃতা দেন।
আরিফুল হক জানান, কর্মশালায় এসবি, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর নির্দিষ্ট তথ্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সব সংস্থা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে একই উদ্দেশে কাজ করছে।’
আরিফুল হক মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা নিয়মিতভাবে জানান। কারণ এসব তথ্যই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করবে।
টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের অবমূল্যায়ন রোধ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার চলমান কৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ একাধিক নিলামে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রয় করেছে।
প্রতি ডলার ১২১ দশমিক ৮০ টাকা দরে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে মোট ২ হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
চলতি বছরের ১৩ জুলাই থেকে নিলামে ডলার কিনতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, এরপর থেকে ১৫টি নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনেছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে এর অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
চলতি মাসের শুরুতে ৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০৭ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল। তারও আগে ৬ অক্টোবর কেনে ১০৪ মিলিয়ন ডলার।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে মার্কিন ডলার কিনেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই ধরনের নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে মার্কিন ডলার বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা যখনই প্রয়োজন হবে তখন বাজারে ঠিক রাখার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারি।
এক মাসের স্থগিতাদেশ শেষে চট্টগ্রাম বন্দরে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর করা হয়েছে নতুনভাবে বর্ধিত ট্যারিফ।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে বন্দরে আগত সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন হারে আদায় করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়েছে, ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর হবে। বন্দরের তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে নতুন হারে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রেখে আসা জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের মোট ৫২টি সেবা খাতের মধ্যে ২৩টিতে সরাসরি নতুন ট্যারিফ প্রযোজ্য হচ্ছে। গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এই ট্যারিফ।
বিশেষ করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে সবচেয়ে বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ২০ ফুটি কন্টেনারের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা অর্থাৎ গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। আমদানি কন্টেনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বেশি দিতে হবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে আদায় করা হবে। প্রতি ডলারের হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা, ফলে ডলারের মান বাড়লে ট্যারিফও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আপত্তি থাকায় নৌপরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে তা এক মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
একমাস মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৩ অক্টোবর রাত থেকেই নতুন হারে ট্যারিফ কার্যকর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। ৩৯ বছর পর মাশুলের হার বাড়ানো হয়েছে; যা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অপারেশনাল ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের ব্যয় সামাল দিতে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।’
আগামী পাঁচ বছরে ভারতে দেড় হাজার কোটি (১৫ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করবে গুগল। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি এই ঘোষণা দিয়েছে।
এর অংশ হিসেবে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশাল ডেটা সেন্টার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
নয়াদিল্লি থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুগল ক্লাউডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) থমাস কুরিয়ান নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমরা যতগুলো এআই হাব-এ বিনিয়োগ করছি, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।’
কুরিয়ান বলেন, আগামী পাঁচ বছরে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনমে ‘১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূলধন বিনিয়োগ’ করে ‘গিগাওয়াট-স্কেলে একটি এআই হাব’ তৈরি করা হবে।
কুরিয়ান আরও বলেন, গুগলের পরিকল্পনা হলো, ভবিষ্যতে কেন্দ্রটিকে ‘একাধিক গিগাওয়াটে উন্নীত’ করা।
চলতি বছরের শেষে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যবসা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর ব্যবহার বাড়তে থাকায় দেশটিতে এআই টুলস ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই বিনিয়োগের জন্য গুগলকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এই ডিজিটাল অবকাঠামো আমাদের ‘ইন্ডিয়া এআই ভিশন’-এর লক্ষ্য পূরণে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, এই দিনটি ‘খুবই আনন্দের দিন’।
রাজ্যের প্রযুক্তি মন্ত্রী নারা লোকেশ এক্স-এ লেখেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী বিনিয়োগ। এক বছর ধরে নিবিড় আলোচনা ও নিরলস প্রচেষ্টার পর এই চুক্তি হয়েছে।’
লোকেশ আরও লেখেন, ‘এটি আমাদের রাজ্যের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ, উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক মর্যাদার জন্য বিশাল অগ্রগতি। এটি মাত্র শুরু।’
এদিকে, এই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্ট-আপ ‘অ্যানথ্রপিক’, আগামী বছর ভারতে একটি অফিস খোলার ঘোষণা করেছে।
অ্যানথ্রপিকের প্রধান নির্বাহী দারিও আমোদেই এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে আমোদিকে জানান, ‘ভারতের প্রাণবন্ত প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম ও প্রতিভাবান যুবসমাজ এআই উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
এছাড়া মোদি ‘উন্নয়নের জন্য এআই-এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার’ করতে চাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
অ্যানথ্রপিকের এই পদক্ষেপের আগে ভারতের বাজারে আগ্রহ দেখিয়েছে আরও কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এআই প্রতিষ্ঠান।
ওপেনএআই জানায়, তারা এ বছরের শেষের দিকে ভারতে একটি অফিস খুলবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান স্যাম অল্টম্যান জানান, গত এক বছরে ভারতে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার চারগুণ বেড়েছে।
এদিকে, এআই প্রতিষ্ঠান পারপ্লেক্সিটি জুলাইয়ে ভারতীয় টেলিকম জায়ান্ট এয়ারটেলের সঙ্গে একটি বড় অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেয়।
এর আওতায় এয়ারটেলের ৩৬ কোটি গ্রাহক এক বছরের জন্য ফ্রিতে পারপ্লেক্সিটি প্রো সাবস্ক্রিপশন পাবেন।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা, মরক্কো এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সৌদি আরব ও কাফকো থেকে এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার এবং সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে ১১৫.৫৮ টাকা কেজি দরে ১৫ হাজার টন আখের সাদা চিনি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
এই সার কিনতে মোট ব্যয় হবে ৭২২ কোটি ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা। এর মধ্যে ৭০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি এবং ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন (সিসিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। কানাডা থেকে এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৫৬.২৫ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। মরক্কো থেকে এই সার আনতে ব্যয় হবে ২০৮ কোটি ৮১ লাখ ৫৬ হাজার ২৪০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৫৬৮.৬৭ মার্কিন ডলার।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরব থেকে এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৪২২.৬৬ মার্কিন ডলার।
এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ-এর কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। কাফকো থেকে এই সার কিনতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৯০.৭৫ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে ১১৫.৫৮ টাকা কেজি দরে ১৫ হাজার টন আখের সাদা চিনি কিনতে ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১৫ হাজার টন আখের সাদা চিনি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে এই চিনি সংগ্রহে ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ১১৫.৫৮ টাকা।
এদিকে বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় খাদ্য অধিপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের ডব্লিউ-২৩ প্যাকেজের আওতায় নবনির্মিত নারায়ণগঞ্জ রাইস সাইলোর নির্মাণ কাজের প্রথম ও চূড়ান্ত ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
প্রকল্পের মূল চুক্তিমূল্য ছিল ৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৮ টাকা। ভেরিয়েশনে প্রকল্পটির ৪ কোটি ২৩ লাখ ৬৮০ টাকা কমানোর ফলে সংশোধিত চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৯৩০ টাকা।