শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২

অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নিম্নমুখী

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড
৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৩৪
ইকবাল হোসেন
প্রকাশিত
ইকবাল হোসেন
প্রকাশিত : ৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৩৪

দুটি বাদে অর্থনীতির প্রায় সব সূচক এখন নিম্নমুখী। উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে বজায় রয়েছে, এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রপ্তানি আয়ে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও, আমদানিতেও ভাটা চলছে। একমাত্র স্বস্তির সূচক প্রবাসী আয়। এ ছাড়া অর্থনীতির আর কোনো সূচকেই ভালো নেই দেশের অর্থনীতি।

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমে এসেছে। নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। ফলে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে। টানা দরপতনে ডুবতে বসেছে শেয়ারবাজার।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে অবস্থান করছে। আগের মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে

গত অর্থবছরের শেষ বা চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অথচ তার আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে- ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে আসার কারণেই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল দেশে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি

২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছে চার মাস আগে ৩০ জুন। পরিসংখ্যান ব্যুরো গত সোমবার ওই অর্থবছরের চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন সময়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

২০২২-২৩ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। মূলত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধিতে ধসের কারণেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প খাতে ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে তা কমে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কয়েক দিন আগে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে। আইএমএফ বলেছে, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এডিবি বলেছে, ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল ‍বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকার।

এফডিআই কমেছে ৮.৮ শতাংশ

আয় ফেরত আনার ভোগান্তি, অস্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের নেট ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ৮.৮ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১.৬১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেট এফডিআই প্রবাহ ১.৪৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে এফডিআই প্রবাহ ১৪২ মিলিয়ন ডলার কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৬১ কোটি (১.৬১ বিলিয়ন) নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে দেশে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কম।

দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, এই তিন মাসে সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর।

এনবিআরের হিসাব অনুসারে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। শতাংশ হিসাবে এই তিন মাসে রাজস্ব আদায় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবর মাসেও বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাস ২৬ দিনে এসেছে ৮৪৪ কোটি ২০ লাখ (প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন) ডলার।

রপ্তানি আয়

রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর পর চার মাস কোনো রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি ব্যুরো। এর পর গত ৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে চার মাসের তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ১৩৭ কোটি (১১.৩৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয়ের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি (১০.৮২ বিলিয়ন) ডলার। তবে চলমান অস্থিরতার মধ্যে আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন রপ্তানিকারকরা।

রিজার্ভের পতন থামছে না

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এক সপ্তাহ আগে ১৬ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৩ কোটি ডলার।

গত ৯ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্স বাড়ায় এবং আমদানি ব্যয় কমায় গত দেড় মাসে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ কমে ফের নিম্মমুখী হয়েছে।

সবশেষ গত আগস্ট মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন কাঁটায় কাঁটায় আছে।

আমদানি কমছেই

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ১১ লাখ (১৫.৫৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। নিস্পত্তি কমেছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১৬ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারি (মূলধনি যন্ত্রপাতি) আমদানির এলসি কমেছে ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ; নিস্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য (ইন্টারমেডিয়েট গুডস) আমদানির এলসি কমেছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ; নিস্পত্তি কমেছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ২৬ শতাংশ; নিষ্পত্তি কমেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই তিন মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। কিন্তু সেই ঋণের এক ডলারও এখনো দেশে আসেনি। এরই মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাস (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার হয়ে গছে। এই তিন মাসে বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির অবস্থা খুবই খারাপ; যে ঋণ পাওয়া গেছে, তার চেয়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ অনেক বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, এই তিন মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মাত্র ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে আগে পাওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যতো ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে তার চেয়ে ২৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০ আগস্ট বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করা। কারণ, অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন। আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ হতে দিতে চাই না।’

তবে গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছেন, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।’

সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভায় অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই কথা বলেছেন।

তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভালো নেই দেশের অর্থনীতি; দিন যতো যাচ্ছে সংকট ততোই বাড়ছে। অনিশিচত গন্তব্যে দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি।

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেছেন, বিনিয়োগ নেই; কর্মসংস্থান হচ্ছে না। সর্বত্র অনিশ্চয়তা-অস্থিরতা; কোথাও স্বস্তি নেই।। দিন যতো যাচ্ছে- পরিস্থিতি ততোই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

অর্থনীতির গকেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে যে করেই হোক মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। আর এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন- সবই করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ৭৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

আপডেটেড ২৮ আগস্ট, ২০২৫ ২৩:২৫
এম এস ডালিম, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৭৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৮ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ বাজেট উপস্থাপন করেন প্রশাসক এএইচএম কামরুজ্জামান।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে সমপরিমাণ আয় দেখানো হলেও ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৮ কোটি ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ টাকা। এতে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ ২১ হাজার ১৯ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক কামরুজ্জামান বলেন, ‘নগরবাসীর মানসম্মত নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে, বাস্তবতার নিরিক্ষে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৭৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৫৮ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলো।

উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের আওতায় ২০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন, ৩০০ কিলোমিটার বিতরণ পাইপলাইন, ৩৫ হাজার হোল্ডিংয়ে স্মার্ট মিটারসহ পানি সরবরাহ সংযোগ, ৩৫ কিলোমিটার ড্রেন, এবং পাঁচ হেক্টর জমিতে পার্ক, খেলার মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি খাল, পুকুর পুনরুদ্ধারে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জালকুড়িতে স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ইতিমধ্যে ২৩৪ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য ঋষিপাড়া ও ইসদাইরে ৩৬৯টি ফ্ল্যাটও নির্মিত হয়েছে।’

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালালেও বাসা-বাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার রাখা নাগরিকদের দায়িত্ব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ৩৪টি স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপন, চারটি কবর সংরক্ষণসহ নানা উন্নয়ন কাজ চলছে। একইসঙ্গে সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভাতা, ক্ষুদ্রঋণ ও টিসিবি স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন এবং পরিকল্পিত শহর গঠনের লক্ষ্যে এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ–পুনঃনির্মাণ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা–সংস্কৃতি, ক্রীড়া, জলাবদ্ধতা নিরসন, মশক নিধন, পরিবেশ সংরক্ষণ, যানজট নিরসন, সড়কবাতির উন্নয়ন ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের সচিব নূর কুতুবুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ। এছাড়া বাজেট অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকগণ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


রিজার্ভ আবার ৩১ বিলিয়ন ছাড়াল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল বুধবার দিন শেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ৩৩ লাখ ডলার। একসঙ্গে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ৩১ লাখ ডলার। গত রোববার গ্রস রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন এবং বিপিএম৬ অনুযায়ী, ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার ছিল।

গত জুলাইর প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২০২ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এর পর গ্রস রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। আর বিপিএম৬ অনুযায়ী নেমে আসে ২৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে।

রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের কারণে গত জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ।

এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। গত জুন শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ উঠে ২৬ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালের জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে বিপিএম৬ অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

দেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচারে কঠোর নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কারণে ডলার প্রবাহ বেড়েছে। হুন্ডি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছে। চলতি অর্থবছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৪১২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় যা ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।


তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশ

পিপিআরসির প্রতিবেদন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন বছরের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। দেশে এখন দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। এর বাইরে ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্য সীমায় নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় দারিদ্র্য সীমায় নেমে যেতে পারে তারা।

গতকাল সোমবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার–পিপিআরসির এক গবেষণায় দারিদ্র্য বৃদ্ধির এই চিত্র ওঠে এসেছে।

‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শিরোনামের এই গবেষণা ফলাফল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়। সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

গত ৮ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে সারা দেশের ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়।

পিপিআরসি বলেছে, দেশের এখন তিন ধরনের সংকটের প্রভাব চলমান আছে। এগুলো হলো- কোভিড (২০২০-২০২২), মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

গত বছরের ৫ আগষ্টের পর থেকে আর্থ–সামাজিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে পিপিআরসি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের আগস্টের পর ঘুষ কমেছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া উত্তর দাতাদের মধ্যে গত বছরের আগস্ট মাসের আগে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিয়েছেন। আগস্ট মাসের পর এই হার ৩ দশমিক ৬৯–এ নেমে এসেছে। এখনো সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে সরকারি অফিসে। এর পরে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বেশি ঘুষ দিয়েছে মানুষ। এছাড়া পরিবারেরর আয়ের ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাদ্য পণ্য কেনার পেছনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণির মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তারা সংসার চালাচ্ছেন ধার-দেনা করে। তবে উচ্চবৃত্তের আয়ের চেয়ে ব্যয় কম। এছাড়া বেড়েছে বৈষম্য, হয়রানি। গত সরকারের আমলেও ঘুষ দিতে হতো, এখনো দিতে হয়। তবে সার্বিকভাবে ঘুষ দেওয়া কিছুটা কমলেও বর্তমানে কোনো কাজ করতে গিয়ে ঝামেলা এড়াতে বেশি ঘুষ দিচ্ছে মানুষ। আওয়ামী লীগের সময়ে যেটি ছিল ২১.৫১ শতাংশ, সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৩০.৭৯ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গড়তে মানুষের জীবন যাত্রার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সে বিবেচনা থেকেই নীতি পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। প্রায়ই বিভিন্ন আলোচনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বলা হয়। তবে জনগণের হয়রানির কথা বলা হয় না। অথচ হয়রানরির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতির পরিকল্পনায় জনমুখী দৃষ্টি থাকা খুবই জরুরি।

তিনি আরও বলেন, শুধু জিডিপির ওপর আলোচনাটা সীমাবদ্ধ না রেখে সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিকের কল্যাণ নিয়ে আলোচনা বাড়াতে হবে। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও বেস্টিক অর্থনীতির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।


বাংলাদেশ–চীন কৃষি পণ্য বাণিজ্যিকীকরণ সহযোগিতা বিষয়ক  দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সচিবালয় প্রতিবেদক

কৃষি মন্ত্রণালয় ও চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস (GACC)-এর মধ্যে কৃষি পণ্য বাণিজ্যিকীকরণ সহযোগিতা বিষয়ক একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস (GACC)-এর ভাইস মিনিস্টার ওয়াং লিং জুন।

বৈঠকে কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। রপ্তানি ও আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, অগ্রাধিকারভিত্তিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, কাস্টমস ও কোয়ারেন্টাইন সহযোগিতা জোরদার করে উদ্ভিদ স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রশিক্ষণ, জ্ঞান বিনিময় ও যৌথ গবেষণার মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতধর্মী সহযোগিতার কাঠামো গড়ে তোলার ওপর আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশের আমের জন্য চীনের বাজার উন্মুক্ত করার সাম্প্রতিক অনুমোদনকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এই সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশ দ্রুত নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত সহজীকরণ, স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি সহযোগিতা জোরদার, পরিদর্শন ও পরীক্ষাগারের ফলাফলের পারস্পরিক স্বীকৃতি বিবেচনা, ডিজিটাল অনুসন্ধান ও ঝুঁকিভিত্তিক ছাড়পত্র ব্যবস্থার প্রচলন এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। পাশাপাশি কাঁঠাল, পেয়ারা, আলু এবং সুগন্ধি চালের পরীক্ষামূলক চালান পাঠানোর সম্ভাবনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই পক্ষ বাংলাদেশ-চীনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব পুনর্ব্যক্ত করে এবং কৃষি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।


রপ্তানি ও আয় বেড়েছে হিলি বন্দরে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন থেকে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে।

শনিবার হিলি স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার এএসএম আকরম সম্রাট বলেন, চলতি অর্থবছরে জুন থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এ বন্দর দিয়ে দুই হাজার ৯১ টন পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে। ভারতে রপ্তানি করা পণ্য থেকে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৫০০ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ সরকার যা বাংলা টাকায় প্রায় ২০ কোটি। খবর বাসস।

তিনি বলেন, এই স্থলবন্দর দিয়ে বিগত কয়েক বছর তেমন কোনো পণ্য ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে দেশীয় পণ্যের চাহিদা থাকায় ভারতে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি নির্ভর হলেও, এখানে দিন দিন বাড়ছে রপ্তানির পরিমাণ। এই বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে তার বিপরিতে প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।

ভারতের আমদানিকারকরা হিলি বন্দর দিয়ে রাইস ব্রান (তুষের তেল), টোস্ট বিস্কুট, ম্যাংগো জুস, ঝুট কাপড়, নুডুলসসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন।

হিলি স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রপ্তানি খাতে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। সরকারের আয়ের পাশাপাশি এই বন্দরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক শ্রমিক।

তবে ভারতের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা সমাধান করা গেলে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, এ বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কাস্টমস বিভাগের পক্ষ থেকে দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে আমদানিকারকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।


বেপজায় ১ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

কর্মসংস্থান হবে ১৯৩৯ জনের
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ডুনিয়ন তাইয়াং শেং সুজ (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড ১ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি ফুটওয়্যার কারখানা স্থাপন করবে।

এ লক্ষ্যে রোববার ঢাকাস্থ বেপজা নির্বাহী দপ্তরে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং ডুনিয়ন তাইয়াং শেং স্যুজ (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইয়ে ইয়ারি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চীনা কোম্পানিটি স্পোর্টস স্যুজসহ বিভিন্ন ধরনের বার্ষিক ২১ লাখ জোড়া জুতা, স্যান্ডেল, হাই হিল, বুট তৈরি করবে। যার ফলে ১ হাজার ৯৩৯ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বেছে নেওয়ায় বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ডুনিয়ন তাইয়াং শেং স্যুজকে ধন্যবাদ জানান এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ প্রদানে বেপজার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এমনভাবে কারখানার ডিজাইন করতে হবে যেন ভবিষ্যতে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও তিনি কারখানা প্রাঙ্গণে পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যেমন ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা প্রভৃতি।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, এবং নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজসহ ডুনিয়ন তাইয়াং শেং স্যুজ (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে: ড. মঞ্জুর হোসেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে এবং স্বস্তির বিষয় হচ্ছে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে, তবে চালের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে, তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্যস্ফীতি আরও কমতে পারে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ যেন হ্রাস না হয়ে সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে, এমতাবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সরকার এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, তবে আমাদেরকে সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে, এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির টেকসই রূপান্তরের উপর বেশ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং বিশেষ করে ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ঋণের সুদ হার বেশি থাকা, নাকি বাণিজ্যিক সহায়ক পরিবেশ অনুপস্থিতির কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না, সেটি খতিয়ে দেখার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারস্পরিক শুল্কারোপসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস, শিল্প খাতে জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চয়তা, নানাবিধ দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে বেসরকারি খাতের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয় এবং এ অবস্থার আলোকে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্নের লক্ষ্যে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়কালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২.৩ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর কারণে গত বছরের তুলনায় বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্থর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে, ডিসিসিআই কমপক্ষে ৩ বছর এলডিসি উত্তরণ স্থগিত করার প্রয়োজন বলে মনে করে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, একটি শক্তিশালী ট্রানজিশন কৌশল বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো হালনাগাদ সম্ভব হয়।

বিদ্যমান অবস্থার আলোকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন তিনি।

তাসকীন আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তরণে আমরা ভীত নই, তবে বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং আভ্যন্তরীণ আন্দোলন বিক্ষোভ এবং সর্বশেষ ট্রাম্প কর্তৃক পারস্পরিক শুল্ক আরোপের উদ্যোগ এ পরিস্থিতি আরো অসহনীয় করে তুলেছে। তাই আরো কিছুটা সময় পেলে আমরা নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব এবং এ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা), মুদ্রানীতি বিভাগ মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসি সুবিধার কারণে তৈরি পোষাক খাত আজকে এ পর্যায়ে এসেছে, তাই রপ্তানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতগুলোকে এ ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়ানোর উপর বেশি মনোনিবেশ করতে হবে।

ড. মোস্তাফিজ আরো বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও যোগাযোগ সংযোগসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছি, এটার উন্নয়ন জরুরি। তিনি আরো বলেন, এলডিসি পিছিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করা যেতে পারে, তবে আমাদেরকে প্রস্তুতি ঘাটতি রাখা যাবে না, যেন ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে ঘাটতি না পড়ে। উন্নত দেশগুলোতে এসএমইরাই হলো মূল চালিকাশক্তি, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমশক্তির তৈরিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা মন্দের ভালো। দুর্নীতি যে খুব একটা কমেছে তা বলা যাবে না, অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দুর্নীতির কারণে শুধু বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভিতরকার পরিবর্তন প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি এখন বেশ কঠোর বলে বেসরকারি খাতের অভিযোগ রয়েছে, তবে আমরা বেসরকারি খাতের সহনীয় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।

তিনি বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে ব্যবসা পরিচালনা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেই ঋণের সুদ হার হ্রাসের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও জ্বালানি স্বল্পতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেও বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসছে না, শুধু উচ্চ সুদহার এককভাবে দায়ী নয়। এছাড়াও দেশের উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই উপায়ে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি অভিহিত করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা বলেন, বর্তমান অবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু হলে ঋণ বিতরণের খরচ হ্রাস পাবে। ক্লাস্টার উন্নয়নের জন্য ঢাকা চেম্বারসহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠন এবং দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার, তবে অনেক সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কঠোর নীতিমালা এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সেই সাথে এসএমইদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রেড কানেক্টিভিটি বাড়ানো এবং রপ্তানি বাজারের সাথে এসএমইদের সংযোগ বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন খরচ হ্রাসে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি তৈরি পোশাক খাতে ম্যান মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়ানো এবং চামড়া শিল্পে স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলাসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।


বাণিজ্য উপদেষ্টা ও পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি ও অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

গত শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বাণিজ্য উপিদেষ্টা ও পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে বন্দরের সার্বিক অবস্থা, কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং, শ্রম ব্যবস্থাপনা, বিদেশি বিনিয়োগ ও অটোমেশনসহ নানা বিষয়ে অবহিত করেন।

বন্দর চেয়ারম্যান তাদের সাম্প্রতিক অগ্রগতি তুলে ধরে জানান, গত বছর রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্য থেকে দুই দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি জাহাজের গড় অবস্থানকাল (টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম) কমে এসেছে এবং অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি ও অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, করাচি পোর্ট ট্রাস্টে হাচিসন পোর্ট গ্রুপ একটি কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করছে, আবুধাবি পোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি বাল্ক টার্মিনাল চালাচ্ছে এবং পোর্ট কাশিমে ডিপি ওয়ার্ল্ড দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ-পাকিস্তান আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি, সরাসরি জাহাজ চলাচলসহ পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের আশ্বাস দেন।

এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

পরিদর্শনকালে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান দূতাবাসের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দূত জেইন আজিজ, বাণিজ্যিক সহযোগী ওয়াকাস ইয়াসিন, বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব (ডব্লিউটিও অনুবিভাগ) ড. নাজনিন কাউসার চৌধুরী, বে টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক কমডোর মো. মাহফুজুর রহমানসহ বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ শতাংশ শেয়ার দিতে ট্রাম্প-ইন্টেল চুক্তির ঘোষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ব্যবসায় ১০ শতাংশ শেয়ার দিতে সম্মত হয়েছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেল। গত শুক্রবার ইন্টেল ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তির ঘোষণা দেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি। বাইডেন প্রশাসনের সময় ঘোষিত বিশাল অঙ্কের অনুদানের বিনিময়ে ওয়াশিংটনের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের পর এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইনটেলের ৪৩৩.৩ মিলিয়ন সাধারণ শেয়ার পাবে, যা কোম্পানির ৯.৯ শতাংশ অংশীদারিত্বের সমান।

ইনটেল জানায়, এ বিনিয়োগের মোট অঙ্ক দাঁড়াবে ৮.৯ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার আসবে বাইডেন আমলে পাস হওয়া ‘চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট’ থেকে ঘোষিত অনুদান থেকে। যা এখনো প্রদান করা হয়নি। বাকি ৩.২ বিলিয়ন ডলার আসবে ‘সিকিউর এনক্লেভ প্রোগ্রামের আওতায় প্রদত্ত পুরস্কার থেকে।

ইনটেল আরও জানায়, এই ৮.৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের সঙ্গে কোম্পানি পূর্বে পাওয়া ২.২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান যোগ হলে মোট অঙ্ক দাঁড়াবে ১১.১ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইন্টেলের ১০ শতাংশের পূর্ণ মালিক ও নিয়ন্ত্রণকারী। তিনি দাবি করেছেন যে ইন্টেলের সিইও লিপ-বু ট্যানের সঙ্গে আলোচনার পর দেশটি এই শেয়ারের জন্য কিছুই পরিশোধ করেনি।

ইন্টেল অবশ্য জানিয়েছে, সরকারের মালিকানা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হবে, তাদের কোনো বোর্ড প্রতিনিধি বা শাসন সংক্রান্ত অধিকার থাকবে না।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার হিসেবে পাওয়া তাদের জন্যও ভালো। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার মনে হয় কোম্পানির ১০ শতাংশ আমাদের দেওয়া উচিত।

বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এক্সে বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাকটর খাতের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।’

ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ: সিলিকন ভ্যালির অন্যতম কোম্পানি ইনটেল এশীয় জায়ান্ট টিএসএমসি ও স্যামসাংয়ের কাছে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। বাইডেন আমলে পাস হওয়া ‘চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্টের লক্ষ্য ছিল মার্কিন সেমিকন্ডাকটর শিল্পকে শক্তিশালী করা, যার আওতায় বিলিয়ন ডলারের অনুদান দেওয়া হয়।

তবে স্বাধীন প্রযুক্তি বিশ্লেষক রব এন্ডারলে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইন্টেলের শেয়ার নেওয়া এক ধরনের বিপজ্জনক পদক্ষেপ, যা বেসরকারি ব্যবসাকে জাতীয়করণের পথে নিয়ে যেতে পারে।’

ওয়াশিংটনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেটো ইনস্টিটিউটের স্কট লিনসিকোমও বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘প্রায় সবার জন্য খারাপ’। ইন্টেলের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ, এখানে বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তের চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি পড়বে।

ইন্টেল সিইও লিপ-বু ট্যান এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সাইট সম্প্রসারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ট্যানের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন।

সম্প্রতি জাপানভিত্তিক সফটব্যাংক গ্রুপও ইন্টেলে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।


পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কমিশন করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

আপডেটেড ২২ আগস্ট, ২০২৫ ০০:০৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে যাতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে পারি সেজন্য এ কমিশন করা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আনারস রপ্তানির কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এন্টি-ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাহিরেও আমাদের পাকিস্তান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আমদানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করেছিল আমরা সেটা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। তারা এটা রাখবে আশা করি। আমরা পাকিস্তান বাজারে ডিউটি ফ্রি ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির কথা জানিয়েছি। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো তিনদিন থাকবেন, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি। এই ট্রেড কমিশন বন্ধ ছিল না। সেখানে কিছু আলোচনা হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন করতে চাই। আমাদের দুই দেশে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে ভারতের সঙ্গে আরো বৈরিতা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করুন। এটা আমার কনসার্ন নয়। আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের স্বার্থে অন্য যে যে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। দেশের স্বার্থে আমাদের যা যা করণীয় সেটা আমরা করব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে পাওনা-দেনা ছিল সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাণিজ্যের কোনো বিষয় না। আর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও বাণিজ্য বাড়াতে অসুবিধা দেখি না। আমাদের উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে এ বাণিজ্য বাড়ানো যায়। আমাদের উপদেষ্টা ধারণা দিয়েছেন পাকিস্থানে কি কি বিষয় রপ্তানি করতে পারে। আমরা পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি করি কিন্তু রপ্তানি করি কম। আমরা চাই এটা পরিবর্তন হোক। আমরাও যাতে বেশি রপ্তানি করতে পারি। এতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’

বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’

বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে সমস্যা নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।’

বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্থানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে পাকিস্থানের হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর কামরান ধাংগাল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিনিধি জাইন আজিজ এবং বাণিজ্য সহকারী ওয়াকাস ইয়াসিন।


বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী পাকিস্তান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান আজ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক দিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও বিশেষ করে জুয়েলারি পণ্য এদেশের মানুষের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য এদেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই সরকারকে প্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোষাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। দুদেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পোশাকের নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে দুদেশের পোষাক খাতের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা আবশ্যক। যার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে দুদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া প্রভৃতি খাতে পাকিস্তান বেশ ভালো করছে এবং বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তান থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি ঔষধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, দুদেশের কৃষি কাজ এবং পণ্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করা গেলে এখাতে বৈশ্বিক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।

জাম কামাল খান জানান, পাকিস্তানের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে শিগগিরই বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন’-এর আয়োজন করা হবে। যার মাধ্যমে দুদেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক আরও জোরাদারের সুযোগ তৈরি হবে।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


নতুন ডিজিটাল ব্যাংক দেওয়ার উদ্যোগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১৩ আগস্টের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাংকখাতের বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকজন পরিচালক নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন।

২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।

সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একই সময়ে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।

তবে পরিকল্পনা থেমে নেই। আগ্রহীদের কাছ থেকে নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হতে পারে শিগগির। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন আহ্বান করে। তখন ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।

এর মধ্যে নগদ ও কড়ি ছাড়াও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওএল) দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে পৃথক লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগেরবার রাজনৈতিক বিবেচনায় যে প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও কঠোর মানদণ্ডে নতুন আবেদনগুলো যাচাই করা হবে।


সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ

আপডেটেড ২২ আগস্ট, ২০২৫ ০০:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ১ বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।

প্রতিবেদনে আরও ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামী ব্যাংক।

মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।

তবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।


banner close