চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। যদিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।
সূত্র মতে, বাজারে চালের অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত এই চক্র জাল বিছিয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চাল উৎপাদন বেশি। বাজারে চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।
ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন- এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্সের গোলাম হাফিজ মানিক বলেন, মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি চালের দামে ফায়দা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে।
বাজারে ধানের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো চাল ও ধান মজুদ করে রেখেছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গোলাম হাফিজ মানিক আরও বলেন, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়ছে না
চালের সরবরাহ বাড়াতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রিম আয়করও ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চক্রটি মজুদ চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য আমদানি করছে না। আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্যদেরও। তাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ টন। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, যে বছরই হাওরে বন্যা হয় অথবা আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হয়ে যায়, ওই বছরই ধান-চালের সংকট সৃষ্টি হয়। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি ১০ থেকে ১৮ লাখ মেট্ৰিক টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করেনি। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম।
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনও খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মিয়ানমার বা ফিলিপাইনের চাল আমাদের দেশের মানুষ খেতে অভ্যস্ত নয়। সরকার আজ যদি ভারত থেকে এক লাখ মেট্ৰিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, কাল প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমে যাবে। চালের দাম পুরোপুরি মজুতের ওপর নির্ভর করে। মজুদ থাকলে চালের দাম কমবে, না থাকলে রাতারাতি বেড়ে যাবে।
যেভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়
রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে একটা চেইন অব কমান্ড কাজ করে তৃণমূল থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। চালের দাম প্রোডাক্ট চেইন ও পর্যাপ্ত মজুতের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মিনিকেটের দাম অক্টোবর মাসে প্রতি বস্তা ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। চলতি মাসে সেটার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এটার কারণ মিনিকেট চাল যে ধান থেকে হয় সেটার দাম বেড়ে গেছে। প্রতি মণের দাম ছিল (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ টাকা। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, মিলার ও আড়তদারদের দোষ হচ্ছে আজকে ধানের দাম বাড়লে তারা আজকে থেকেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ১৫ বা ২০ দিন পরে বাড়াতে পারত। তারা মজুতের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া থেকে। মোটা চালের নিয়ন্ত্রণ হয় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও হাওর এলাকা থেকে। চালের বাজার থেকে ধানের বাজারের সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ জন ব্যবসায়ী। সারা দেশে চালের পাইকার আছে এক হাজার ৭০০ জন, যারা সরাসরি মিল থেকে চাল কিনে।
রাহাদুজ্জামান রাজীব আরও বলেন, ধানের সাপ্লাই চেইন হচ্ছে- কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে বিক্রি করে, আর সাপ্লাইয়ররা বিভিন্ন মিলারের কাছে ধান বিক্রি করে। স্থানীয় কিছু ফড়িয়া ও সাপ্লাইয়ার ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে ধান কিনে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখে। দাম বাড়লে ধান বিক্রি করে দেয়। মুজুদদাররা যে দামে ধান বিক্রি করে মিলাররা সে হিসাবে চালের দাম নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, সরকার সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলার ও আড়তদারদের ওপর দোষ চাপায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ায় ধানের ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে মিলারদেরও কিছু যোগসাজশ থাকে। এজন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সরু চালের দাম আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনিকেট ও কাটারি চালের ধানটা পর্যাপ্ত নেই, এগুলো বোরো মৌসুমে হয়। চলতি আমন মৌসুমে মোটা ও মাজারি মানের চালের ধান উৎপাদন হয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কমবে। যদি সরকার আমদানি করতে না পারে, মে মাসের আগে সরু চালের দাম কমবে না।
তিনি বলেন, ঢাকায় চালের বড় আড়তের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চিটাগাং রোড। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চাকতাই ও পাহাড়তলী থেকে চাল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা বদ অভ্যাস হলো, আন্তর্জাতিক বাজার এ পণ্যের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তাদের মজুদ থেকে বাড়তি দাম কার্যকর করে। কিন্তু তা এক মাস পরে কার্যকর করা যেত। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ সবসময় নেই। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এক বস্তা (৫০ বস্তা) চালের দামে পার্থক্য হয়ে যায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে চালের দামের অস্থিরতার পেছনে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সোহেল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে চালের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসার পর দাম অস্থিতিশীল হচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার পর মাঝারি মানের মিলাররা তাদের সঙ্গে পেরে উঠে না। বড় কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। আগে চালের দাম প্রতি বস্তায় বাড়তো ১০ থেকে ২০ পয়সা, এখন বাড়ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এটা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে। এ ছাড়া দামের অস্থিরতার পেছেনে ধান মজুদদারদেরও দায় আছে। তারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। তারা জানে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামেই হোক ধান ক্রয় করবে।
মজুদ কমছে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।
সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।
ধান ও চালের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ
মজুদ বাড়াতে সরকার বাজার থেকে প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কিনবে। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনবে সরকার। গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গমের যতটুকু মজুদ আছে ও যতটুকু আমদানি দরকার, তারচেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা ধান ও চাল সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছি। সেটা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যৌক্তিক হয়। আমরা একটা দাম ঠিক করব আর বাজারে এর থেকে বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে- এমন যেন না হয়। এমনটা হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিতে পারে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোরও তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার আসন্ন আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল কিনবে। সেদ্ধ চাল ও ধান কেনা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
এদিকে বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি টাকা।
বিশ্ববাজার পরিস্থিতি
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে। কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাল খুবই সংবেদনশীল পণ্য। সরকার চাইলেও অনেক সময় হুট করে আমদানি সম্ভব হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ব্যাপকভাবে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এ জন্য টাকার প্রয়োজন হলে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।
চালসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে যাতে ধান আবাদ বেশি হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে বুধবার স্মার্ট ডিজিটাল সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে। এ নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট ও প্রকাশনা দ্রুত, নিরাপদ ও সঠিক সময়ে জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বাজারে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়াবে।
রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে ডিএসইর স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমে ‘রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
সাইফুদ্দিন বলেন, উদ্যোগটি চাইনিজ কনসোর্টিয়ামেরের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে শুরু হয়, যেখানে বিপিএমভিত্তিক কার্যপ্রবাহ অটোমেশন ধারণা গ্রহণ করা হয়। ডিএসইর ২ জন কর্মী ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে এবং সেই অভিজ্ঞতা দেশে এনে ইন–হাউস টিমের সহায়তায় স্থানীয় সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করেন। এর ফলে ডিএসই এখন নিজস্ব সক্ষমতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য একটি কার্যকর ডিজিটাল সাবমিশন ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছে, যা বাজারে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করবে। প্রকল্পে সমন্বিত সহযোগিতা দিয়েছে সিডিবিএল, বিএসইসিসহ অন্যান্য প্রধান অপারেটিং সংস্থাগুলো।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আর্থিক তথ্য–জমা শুধু পিডিএফে সীমাবদ্ধ থাকবে না; ডিএসই অগ্রসর হবে এআই–পাঠযোগ্য ও মেশিন–রিডেবল ডেটা ফরম্যাট, এক্সবিআরএলভিত্তিক সাবমিশনের দিকে। এটি হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়–পাঠযোগ্য আর্থিক তথ্য অবকাঠামোর ভিত্তি, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার–গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ডেটা–ইন্টেলিজেন্স সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি মূলত তথ্য–স্বচ্ছতা, মানসম্মত হিসাব ও প্রযুক্তিনির্ভর বাজার–সংস্কৃতি নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস, যা একটি আধুনিক পুঁজিবাজার গঠনের নতুন সূচনা নির্দেশ করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আজ পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে ডিএসই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে নেতৃত্ব ধরে রাখলেও এতদিন নথি জমা ও রিপোর্টিংয়ের বড় অংশ ম্যানুয়াল ও হার্ড কপিনির্ভর ছিল, যা বিনিয়োগ কার্যচক্রকে ধীর ও জটিল করেছে; অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই অনলাইন রিপোর্টিং চালু করেছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে, গ্রাহককেন্দ্রিক চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিএসই উন্নয়ন করেছে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম। আজ থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, রেগুলেটরি রিপোর্ট, আর্থিক বিবরণী ও প্রয়োজনীয় নথি সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে এবং হার্ড কপি সাবমিশন পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে স্টেকহোল্ডারদের সময়, ব্যয় ও নথি-জট উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা হবে নিরাপদ, দ্রুত ও পরিবেশবান্ধব।
বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাসে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রার দাম কমেছে। গত ছয় মাসে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার মূলধন ১ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ কোটি ডলার কমেছে।
ক্রিপ্টো–জগতের সবচেয়ে পরিচিত নাম হলো বিটকয়েন। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এটি শীর্ষে। কিন্তু অক্টোবর মাসের শুরু থেকে সেই বিটকয়েনের দামও নাটকীয়ভাবে কমছে। অক্টোবর মাসের শুরুতে বিটকয়েনের দাম ছিল রেকর্ড ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার। সেই বিটকয়েনের দাম গত শুক্রবার, অর্থাৎ পশ্চিমা পৃথিবীর শেষ কর্মদিবসে ৮১ হাজার ডলারে নেমে আসে। গত সোমবার বাজার খোলার পর দাম কিছুটা বেড়ে ৮৮ হাজারে ডলারে ওঠে।
গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত এক মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৯০ ডলার বেড়েছে। ছয় মাসে বেড়েছে ৭৫৪ ডলার ৪৫ সেন্ট।
দেখা যাচ্ছে, ক্রিপ্টো মুদ্রার ইতিহাসে নভেম্বর সবচেয়ে খারাপ মাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমনকি বাজারের এ দুর্দশার অবসান হয়েছে কি না, তা–ও পরিস্কার নয়। জার্মানির ডয়েচে ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরের মাসে যে বিটকয়েনের বাজার সংশোধন হবে, তা–ও নিশ্চিত নয়। এতদিন তো ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়েগাকারীরা এ বাজারে অংশ নিতেন। ফলে তাদের ফটকাবাজির কারণে বাজার পড়ে যেত বা উঠত। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেন আরও সহজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে বিনিয়োগ করছেন। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো মুদ্রার জন্য সুবিধাজনক নীতিও নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিটকয়েনের বাজারে এ পতন অব্যাহত আছে।
গত কয়েক বছরের ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার অনেকটা শেয়ারবাজারের মতো আচরণ করেছে ঠিক, কিন্তু বর্তমানে পতনের মূল তার চেয়ে অনেক গভীরে। মূল কারণ হলো ক্রিপ্টোর বাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসছে। ফলে আগে ক্রিপ্টোর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেমন আচরণ করতেন, এখন কিন্তু সে রকম হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে বিটকয়েনের পতন হয়েছে ৩০ শতাংশ। সেখানে মার্কিন শেয়ারবাজারের সূচক এসঅ্যান্ডপির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ। ক্রিপ্টো–জগতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির হোতা স্যাম ব্যাংকম্যান ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, চলতি নভেম্বর ক্রিপ্টোর জগতে এরপর সবচেয়ে খারাপ মাস হতে যাচ্ছে।
স্টক ও ক্রিপ্টো বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুটি কারণে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, ফেডারেল রিজার্ভ আবার কবে নীতি সুদহার কমাবে, তা নিয়ে একধরনের উৎকণ্ঠা। দ্বিতীয়ত, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে যে বুদবুদ সৃষ্টি হয়েছে, তা কতদিন স্থায়ী হবে, নাকি সেই বুদবুদ তাদের মুখের ওপর ফেটে যাবে।
স্টকের মতো ডিজিটাল সম্পদের সঙ্গেও ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহারের সম্পর্ক আছে। সুদহার বেশি থাকলে বিনিয়োগের খরচ বেড়ে যায় এবং তাতে বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা কমে যায়।
গত ১০ অক্টোবর থেকে হঠাৎ বাজার ধসের পর ক্রিপ্টো খাতের বিনিযোগকারীদের সামনে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ উসকে দিলে আতঙ্কে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়। এক দিনেই প্রায় ১৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন কমে যায়। অনেকেই মনে করেন, ক্রিপ্টো বাজার থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার এটা যথেষ্ট বড় কারণ। ফলে বিটকয়েনসহ অন্য মুদ্রাগুলো এখন আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়েছে।
এ ধসের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী দ্রুত সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে একধরনের শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়- বিটকয়েনের দাম যত কমে, বিনিয়োগকারীরা তত সেই চাপ সামলাতে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন।
এবারের ক্রিপ্টোধসের আরেকটি কারণে আলাদা। সেটি হলো গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত স্পট বিটকয়েন তহবিলের মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করা কয়েক বিলিয়ন ডলারের নতুন মূলধন।
বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, পর্যটনশিল্পের বিকাশ, ঢাকা-তাসখন্দ বিমান চলাচল পুনরায় চালু, যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক তথ্য বিনিময় ত্বরান্বিত করার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত উজবেকিস্তানের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত সারদর রুস্তামবায়েভ।
বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উভয়পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে বস্ত্র, চামড়া, কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যাল ও এগ্রো-প্রসেসিং খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা এই সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই।
উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সারদর রুস্তামবায়েভ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়ান ফেডারেশন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯২ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক শুরু হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৩২ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং উজবেকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি ছিল ৪ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে বাড়ছে। দুই দেশই একে-অপরের জন্য সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বৈঠকে বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, ঢাকা-তাসখন্দ বিমান চলাচল, যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক তথ্য বিনিময় ত্বরান্বিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে অডিট নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) সঙ্গে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর প্রতিনিধিদল লন্ডনে এফআরসি কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক মডেল সম্পর্কে গভীরতর ধারণা অর্জন এবং বাংলাদেশে অডিট তদারকি ব্যবস্থা আরও উন্নত করার উপায় খুঁজে বের করা। আইসিএবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
আইসিএবি প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন আইসিএবি সভাপতি নূর-ই খোদা আবদুল মবিন। তার সঙ্গে ছিলেন সহসভাপতি সুরাইয়া জান্নাত ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, আইসিএবি যুক্তরাজ্য চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান একেএম ফজলুর রহমান এবং আইসিএবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক।
এফআরসি যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিচার্ড মোরিয়ার্টি, সুপারভিশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি ব্যারেট এবং প্রফেশনাল বডিজ সুপারভিশনের পরিচালক ধ্রুব শাহ।
এফআরসি যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাদের নীতিনির্ভর পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করেন। এর মধ্যে রয়েছে পাবলিক ইন্টারেস্ট এনটিটি (পিআইই)-এর স্পষ্ট সংজ্ঞা, সুষম মান নির্ধারণ এবং ঝুঁকিভিত্তিক পরিদর্শন ব্যবস্থা। তারা ‘সুপারভিশন অব সুপারভাইজার্স’ মডেলটির ওপরও গুরুত্ব দেন।
আইসিএবি মনে করে, এই অভিজ্ঞতাগুলো এফআরসি বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অগ্রাধিকারভিত্তিক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও লক্ষ্যভিত্তিক পিআইই সংজ্ঞা নির্ধারণ, ঝুঁকিভিত্তিক পরিদর্শন পদ্ধতি গ্রহণ, আইনগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং এমন একটি সহযোগিতামূলক নিয়ন্ত্রক পরিবেশ গড়ে তোলা যা অডিটের গুণগত মান ও পেশাগত বিকাশ- উভয়কেই সমর্থন করবে।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে বৈশ্বিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং আর্থিক প্রতিবেদন ও অডিটে জনআস্থা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আইসিএবির প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের জ্বালানি নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন অনুমোদন করেছে, যা জ্বালানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাংকের অঙ্গীকার জোরদার করবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা বলেছেন, ‘এই পরিবর্তনগুলো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের দ্রুত বর্ধনশীল জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য এডিবির সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য বিকল্প খুঁজছে এমন দেশগুলোর জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত বিকল্প।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এই পরিবর্তনগুলোর ফলে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগসহ পারমাণবিক শক্তি খাতে এডিবির সহায়তা দেয়ার পথ তৈরি হলো। পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে আগ্রহী উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দিতে এডিবি কঠোর মূল্যায়ন ও নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করবে।
পারমাণবিক শক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা অনুসরণ করতে এবং কঠোর মানদণ্ড মেনে চলতে এডিবি উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
এ সংশোধনী ব্যাংকটিকে এমন প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করার সুযোগ দেবে যা মিথেন (যা সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে একটি) নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিদ্যমান তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত গ্যাস ফ্লেয়ারিং রোধ করে।
এই পরিবর্তনগুলো ২০২১ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত বিদ্যমান বিদ্যুৎ নীতির বাধ্যতামূলক নির্ধারিত পর্যালোচনার অংশ, যা এডিবির অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
২০২৪ সালে এডিবি প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া দ্রুত বাড়তে থাকা আঞ্চলিক জ্বালানি চাহিদা পূরণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে এডিবি নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করতেও সহায়তা করছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। গত সোমবার বাজারে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশার ভিত্তিতে এক শতাংশ দাম বেড়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে স্পট স্বর্ণের দাম এক দশমিক দুই শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি চার হাজার ১১১ দশমিক ৮৬ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া ডিসেম্বর মাসের জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার শূন্য দশমিক চার শতাংশ বেড়ে চার হাজার ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রতি আউন্সে স্থির হয়েছে।
টিডি সিকিউরিটিজের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি প্রধান বার্ট মেলেক বলেন, বাজারে দিন দিন আরও বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর পথে রয়েছে।
নিউইয়র্ক ফেডের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস শুক্রবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার ‘নিকট ভবিষ্যতে’ কমানো যেতে পারে, তবে এতে ফেডের মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্য বিঘ্নিত হবে না এবং এটি কর্মসংস্থানের বাজারে পতন রোধ করতে সাহায্য করবে।
সোমবার সিএমই ফেডওয়াচ টুল জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ৭৯ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
মেলেক বলেন, আমরা ডেটার জন্য অপেক্ষা করছি এবং প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, এটি কিছুটা কমতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি খুব বেশি উচ্চ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কিছু স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছে।
স্টোনএক্সের বিশ্লেষক রোনা অকনেল বলেন, ফেডের সুদের হার কমানোর বিতর্ক এবং বিশেষ করে ইউক্রেন সম্পর্কিত ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন, স্বর্ণের দাম আরও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে আমাদের দৃষ্টিতে এটি এখনো চার হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রতিবেদনেব বলা হয়েছে, স্পট রুপা প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৫০ দশমিক ৮৪ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া প্লাটিনাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৫৪৫ দশমিক ৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় সুপারির ব্যাপক ফলন হয়েছে। গত ১০ বছরের মধ্যে এ বছর সুপারির সর্বোচ্চ ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় মোট ৩,৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮,৯৯০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ সুপারি সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সিডর পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে সুপারির ফলন কমতে থাকে। মাটিতে তীব্র লবণাক্ততার কারণে শত শত সুপারি বাগান মালিক যারা এই দিয়েই সংসারের সব ব্যয় মেটাতেন তারা খুব বিপদে পড়ে যান। ১০ বছরের মধ্যে এ বছর সুপারির ফলন খুবই ভালো হওয়ায় বাগান মালিক ও তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজারে সুপারির আশানুরূপ দাম পাওয়ায় সুপারি চাষিরা খুব খুশি।
জেলায় সুপারি আবাদে এ বছর সবচেয়ে বেশি ভূমি ব্যবহৃত হয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলায়, যেখানে ১,২০০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। অন্যদিকে কচুয়ায় ১,১৫৩ হেক্টর, মোরেলগঞ্জে ৭৫০ হেক্টর, শরণখোলায় ৩০০ হেক্টর, ফকিরহাটে ২৫০ হেক্টর, চিতলমারীতে ১২০ হেক্টর, রামপালে ১২২ হেক্টর, মোল্লাহাটে ৬০ হেক্টর এবং মোংলায় ৩ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়েছে।
গত বছর জেলায় সুপারি উৎপাদন হয়েছিল ২৬,৮০০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর বর্ষার শেষে বেশি বৃষ্টিপাত এবং মাটি ও পানির লবণাক্ততা কম থাকায় গত প্রায় ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সুপারি চাষের ক্ষেত্রে সময় একটি বড় বিষয়। চারা রোপণের পর ফলন পেতে গড়ে প্রায় ৫ বছর সময় লাগে। তারপর ধীরে ধীরে ফলন বাড়ে এবং বছরজুড়েই কিছু ফল পাওয়া যায়। বাগেরহাটের উৎপাদিত সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনি ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে।
সুপারি হলো একটি পামজাতীয় অর্থকরী ফসল। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা বাগেরহাট জেলা জুড়েই এ বছর সুপারির ব্যাপক ফলন হয়েছে। এখানকার বাগানের মালিক গাছ থেকে সুপারি পেড়ে বাজারে বিক্রি করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখেই দিন কাটাতো। সুপারি মূলত পান-পাতার সঙ্গে খাওয়া হয় এবং পানের খিলি ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে সুপারির চাহিদা রয়েছে। এ অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং আত্মীয়স্বজন বাগেরহাটের পান সুপারির স্বাদ নিতে পানের দোকানে ভিড় করেন। পাশাপাশি বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময়ও সুপারি নিতে দেখা যায়।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, সুপারি চাষ জেলার অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। কৃষকেরা ভাল মূল্য পেলে ভবিষ্যতে সুপারি বাগেরহাটের অন্যতম লাভজনক অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘বাগেরহাটে সুপারির চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে ৬৫ শতাংশ সুপারি সংগ্রহ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার সুপারির চাহিদা রয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ নারকেল গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সুপারি এখন কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০০৭ সালের সিডরের পর লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং বর্ষা কমে যাওয়া সুপারির উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে বর্তমানে পরিবেশ অনুকূল থাকায় ফলন আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশনাল দক্ষতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জন করেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বন্দরে কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং-সহ সব ক্ষেত্রেই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। একই সঙ্গে জাহাজের ‘ওয়েটিং টাইম’ প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাসস’কে জানান, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কনটেইনার, ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২টি জাহাজ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কনটেইনারে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস, কার্গোতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ টন এবং জাহাজে ৩৫১টির বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার হিসেবে কনটেইনারে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কার্গোতে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ উন্নতি দেখা গেছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই ধারা আরো শক্তিশালী হয়েছে। এ সময়ে বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কনটেইনার, ৪ কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ টন কার্গো এবং ১ হাজার ৪২২টি জাহাজ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কনটেইনারে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৮৮ টিইইউএস, কার্গোতে ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৫ টন এবং জাহাজে ১৪১টি বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) অপারেশনাল সক্ষমতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এনসিটিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউএস কনটেইনার এবং ২৫৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫০ এবং ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের ‘ওয়েটিং টাইম’ কমে আসা এ বছরের বড় সাফল্য উল্লেখ করে বন্দর সচিব বলেন, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৯ দিন, অক্টোবরে ১৮ দিন এবং নভেম্বরে ১৯ দিন জাহাজের অপেক্ষার সময় ছিল শূন্য। অর্থাৎ, বন্দরে আগমনের সঙ্গে-সঙ্গেই জাহাজ ‘অন অ্যারাইভাল’ বার্থ পাচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা দ্রুত পণ্য খালাস করতে পারছেন এবং রপ্তানিকারকরাও সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের পোর্ট লিড টাইম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
বন্দর সচিব জানান, আধুনিক কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই এই অগ্রগতি এসেছে। সম্প্রতি মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের প্রতিনিধি দলও বন্দর ব্যবস্থাপনায় উন্নতি এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের দক্ষতা এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সহযোগিতা এ প্রবৃদ্ধিকে টিকিয়ে রেখেছে।
বন্দরের এ অগ্রগতির পেছনে রয়েছে- আধুনিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষের সমন্বিত সহযোগিতা।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে আগত মায়ের্স্ক শিপিং লাইনের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দরের এই উন্নত অপারেশনাল পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে। তারা বিশেষভাবে জাহাজের অপেক্ষার সময় শূন্যে নামানো এবং এনসিটিসহ বিভিন্ন টার্মিনালের সার্ভিস স্ট্যান্ডার্ড বৃদ্ধিকে ‘উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন’ বলে অভিহিত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের এই সাফল্য দেশবাসীর কাছে বন্দরের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে এমন প্রত্যাশাও করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনায় আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে জ্বালানি তেলের দাম। বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গত সোমবার বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ০.১৭ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৫৭.৯৬ ডলার। যা এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দর। গত এক সপ্তাহে এই তেলের দাম কমেছে ৩.১৯ শতাংশ এবং এক মাসে কমেছে ৫.৪৮ শতাংশ।
একই সঙ্গে কমেছে লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গত সোমবার ব্রেন্ট তেলের দাম ০.১৫ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৬২.৩৯ ডলার। যা এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দর। গত এক সপ্তাহে এই তেলের দাম কমেছে ২.৮২ শতাংশ এবং এক মাসে কমেছে ৩.৮৭ শতাংশ।
ডব্লিউটিআই তেলের দাম টানা চতুর্থ মাস পতনের দিকে এগোচ্ছে, যা ২০২৩ সালের পর থেকে এর দীর্ঘতম পতন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন, সে কারণেই তেলের দাম কমছে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। সিনিয়র মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা গত রোববার বলেছেন যে যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে মার্কিন সমর্থিত প্রস্তাবে অগ্রগতি হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জেনেভায় আলোচনাগুলোকে ‘অত্যন্ত মূল্যবান’ বলে বর্ণনা করেছেন। এটিকে অনেক দিনের মধ্যে সবচেয়ে প্রোডাকটিভ বলেছেন। তবে অনেক ইউরোপীয় মিত্রের আশঙ্কা যে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাটি মস্কোর প্রতি অত্যধিক অনুকূল।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি হলে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এছাড়া এমনিতেই আগামী বছর জ্বালানি তেলের উদ্ধৃত্ত থাকবে বলে ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনায় টানা কমছে জ্বালানি তেলের দাম।
সরকার, বেসরকারি খাত ও কমিউনিটির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান গ্রহণে গতি বাড়াতে পারে, যা শুধু ঝুঁকি হ্রাস করে না, বরং টেকসই উন্নয়নকেও তরান্বিত করে। এই পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতায়িত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স: হেল্পিং পিপল অ্যান্ড ফার্মস অ্যাডাপ্ট ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু অভিযোজনের চাপ মূলত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ সহনশীলতা গড়ে তোলার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছে। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিয়োগ বড় ধরনের ঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে। এটি প্রমাণ করে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অভিযোজনকে সফলভাবে সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ভৌগোলিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি এবং বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকবে এবং প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু সংকট বাংলাদেশে কোটি মানুষের জীবনে কঠোর প্রভাব ফেলছে।
জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। কারণ আগামী ১০ বছরে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি পরিবার ও প্রতিষ্ঠান আবহাওয়াজনিত ধাক্কার আশঙ্কা করছে। ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বেশিরভাগই উন্নত প্রযুক্তি ও সরকারি অবকাঠামো ব্যবহার না করে মৌলিক ও স্বল্পব্যয়ী সমাধানের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সবচেয়ে জরুরি অপূর্ণ চাহিদা।
দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার অপর্যাপ্ত দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অভিযোজনের জন্য সীমিত আর্থিক সম্পদকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর প্রভাব শুধু পরিবেশগত নয়, বরং মানবিকও। কারণ দরিদ্র্য ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর ওপর এর আঘাত সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের ডিরেক্টর জ্যঁ পেম বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার নতুনভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, ফলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দেশের সহনশীলতা গড়ে তুলতে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপও জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি সমন্বিত ও বহুমুখী অভিযোজন কৌশল গ্রহণের তাগিদ দেয়। এতে বলা হয়- আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, বীমা ও আনুষ্ঠানিক ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা গেলে জলবায়ুজনিত ক্ষতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এড়ানো সম্ভব। বেসরকারি খাত যদি প্রয়োজনীয় স্থানে দ্রুত বিনিয়োগ ও সম্পদ স্থানান্তর করতে পারে, তাহলে অভিযোজনের গতি আরও বাড়বে। বাজেট সংকটের মধ্যেও সরকার পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার দিক থেকে যেমন উদাহরণ, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রও।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অভিযোজন করছে। কিন্তু জলবায়ু সংকটের পরিধি ও জটিলতা বিবেচনায় সরকার ও বেসরকারি খাতের এখনই সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সরকার, বেসরকারি খাত ও কমিউনিটির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান গ্রহণে গতি বাড়াতে পারে, যা শুধু ঝুঁকি হ্রাস করে না, বরং টেকসই উন্নয়নকেও তরান্বিত করে। এই পদক্ষেপগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতায়িত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘ফ্রম রিস্ক টু রেজিলিয়েন্স: হেল্পিং পিপল অ্যান্ড ফার্মস অ্যাডাপ্ট ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু অভিযোজনের চাপ মূলত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পড়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ সহনশীলতা গড়ে তোলার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছে। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিনিয়োগ বড় ধরনের ঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে। এটি প্রমাণ করে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অভিযোজনকে সফলভাবে সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ভৌগোলিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি এবং বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকবে এবং প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু সংকট বাংলাদেশে কোটি মানুষের জীবনে কঠোর প্রভাব ফেলছে।
জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। কারণ আগামী ১০ বছরে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি পরিবার ও প্রতিষ্ঠান আবহাওয়াজনিত ধাক্কার আশঙ্কা করছে। ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ৮০ শতাংশ পরিবার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বেশিরভাগই উন্নত প্রযুক্তি ও সরকারি অবকাঠামো ব্যবহার না করে মৌলিক ও স্বল্পব্যয়ী সমাধানের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সবচেয়ে জরুরি অপূর্ণ চাহিদা।
দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার অপর্যাপ্ত দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অভিযোজনের জন্য সীমিত আর্থিক সম্পদকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর প্রভাব শুধু পরিবেশগত নয়, বরং মানবিকও। কারণ দরিদ্র্য ও কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর ওপর এর আঘাত সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের ডিরেক্টর জ্যঁ পেম বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার নতুনভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, ফলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দেশের সহনশীলতা গড়ে তুলতে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপও জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি সমন্বিত ও বহুমুখী অভিযোজন কৌশল গ্রহণের তাগিদ দেয়। এতে বলা হয়- আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, বীমা ও আনুষ্ঠানিক ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা গেলে জলবায়ুজনিত ক্ষতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এড়ানো সম্ভব। বেসরকারি খাত যদি প্রয়োজনীয় স্থানে দ্রুত বিনিয়োগ ও সম্পদ স্থানান্তর করতে পারে, তাহলে অভিযোজনের গতি আরও বাড়বে। বাজেট সংকটের মধ্যেও সরকার পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থায়নে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং নমনীয় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার দিক থেকে যেমন উদাহরণ, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রও।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অভিযোজন করছে। কিন্তু জলবায়ু সংকটের পরিধি ও জটিলতা বিবেচনায় সরকার ও বেসরকারি খাতের এখনই সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তবগে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে আঞ্চলিক যোগাযোগের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশ ও ভুটান, কুড়িগ্রাম–গেলেফু করিডোরের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা গভীর করতে এই করিডরের ভূমিকা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
রোববার ঢাকায় বিডা ও বেজা-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে জিটুজি অংশীদারত্বে নির্মাণাধীন কুড়িগ্রাম স্পেশাল ইকোনমিক জোন ভুটানের আসন্ন বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ‘গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি’-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবাহ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে শিল্প–বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বিডা ও বেজা-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) আশিক চৌধুরী কুড়িগ্রাম ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময়ে তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম ও গেলেফু আমাদের যৌথ অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের পরিপূরক ইঞ্জিন হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের বৃহৎ বাজার, দক্ষ মানবসম্পদ ও বৈশ্বিক সংযোগের শক্তি; আর ভুটানের টেকসই উন্নয়ন, উদ্ভাবনী দৃষ্টি ও মানবিক মূল্যবোধ এই দুই শক্তির সমন্বয় সীমান্ত অতিক্রম করে নতুন প্রজন্মের অর্থনৈতিক সহযোগিতার মডেল গড়ে তুলবে।’
বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থিক, শিল্প ও সেবা খাতে ভুটানি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এসব সম্ভাবনা যাচাই ও বিনিয়োগ সুযোগ অনুসন্ধানে শিগগিরই ভুটানের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়নবান্ধব বিনিয়োগপরিবেশ বিনির্মাণে বিডার সাম্প্রতিক সংস্কার উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয়; যেমন কর কাঠামো উন্নয়ন, মূলধন প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার গতিশীলতা, কার্যকর বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিগত সমর্থন। এ সময়ে দুই পক্ষই ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, সাংস্কৃতিক বন্ধন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদারের গুরুত্ব নিয়ে মতবিনিময় করেন।
ভুটান প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত হে. ই. রিনচেন কুয়েন্তসেল এবং দেশটির স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিডা, বেজা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভুটানে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ রোববার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আইসিসির নিয়মাবলি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসএমই ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে দিনব্যাপী একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে।
কর্মশালায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত বিশেষ করে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিকারক, এসএমই ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিল অংশগ্রহণকারীদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত আইসিসির বিভিন্ন নিয়ম ও নির্দেশিকা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, জটিল বৈশ্বিক ট্রেড ফাইন্যান্স প্রক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করা এবং এল/সি নিষ্পত্তির ঝুঁকি এড়াতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তোলা।
আইসিসি সদর দপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এই কর্মশালায় ইউসিপি ৬০০, ইনকোটার্মস ২০২০, আইএসবিপিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। ২০২৪ সাল থেকে এই প্রকল্পের অধীনে আইসিসি-বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চারটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। যেখানে মোট ৩০০ জন এসএমই ও নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছেন।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি উদ্বোধন করেন আইসিসি বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমান। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ টি এম নেসারুল হক।
ব্যাংকার, নারী উদ্যোক্তা এবং এসএমইসহ মোট ৯৫ জন অংশগ্রহণকারী দিনব্যাপী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।