রোববার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সিন্ডিকেটে অস্থির চালের বাজার

দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:২৯
ইকবাল হোসেন 
প্রকাশিত
ইকবাল হোসেন 
প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:২৮

চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। যদিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।

সূত্র মতে, বাজারে চালের অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত এই চক্র জাল বিছিয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চাল উৎপাদন বেশি। বাজারে চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।

ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন- এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্সের গোলাম হাফিজ মানিক বলেন, মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি চালের দামে ফায়দা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে।

বাজারে ধানের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো চাল ও ধান মজুদ করে রেখেছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

গোলাম হাফিজ মানিক আরও বলেন, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়ছে না

চালের সরবরাহ বাড়াতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রিম আয়করও ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চক্রটি মজুদ চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য আমদানি করছে না। আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্যদেরও। তাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ টন। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, যে বছরই হাওরে বন্যা হয় অথবা আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হয়ে যায়, ওই বছরই ধান-চালের সংকট সৃষ্টি হয়। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি ১০ থেকে ১৮ লাখ মেট্ৰিক টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করেনি। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম।

তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনও খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মিয়ানমার বা ফিলিপাইনের চাল আমাদের দেশের মানুষ খেতে অভ্যস্ত নয়। সরকার আজ যদি ভারত থেকে এক লাখ মেট্ৰিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, কাল প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমে যাবে। চালের দাম পুরোপুরি মজুতের ওপর নির্ভর করে। মজুদ থাকলে চালের দাম কমবে, না থাকলে রাতারাতি বেড়ে যাবে।

যেভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়

রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে একটা চেইন অব কমান্ড কাজ করে তৃণমূল থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। চালের দাম প্রোডাক্ট চেইন ও পর্যাপ্ত মজুতের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মিনিকেটের দাম অক্টোবর মাসে প্রতি বস্তা ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। চলতি মাসে সেটার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এটার কারণ মিনিকেট চাল যে ধান থেকে হয় সেটার দাম বেড়ে গেছে। প্রতি মণের দাম ছিল (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ টাকা। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, মিলার ও আড়তদারদের দোষ হচ্ছে আজকে ধানের দাম বাড়লে তারা আজকে থেকেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ১৫ বা ২০ দিন পরে বাড়াতে পারত। তারা মজুতের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া থেকে। মোটা চালের নিয়ন্ত্রণ হয় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও হাওর এলাকা থেকে। চালের বাজার থেকে ধানের বাজারের সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ জন ব্যবসায়ী। সারা দেশে চালের পাইকার আছে এক হাজার ৭০০ জন, যারা সরাসরি মিল থেকে চাল কিনে।

রাহাদুজ্জামান রাজীব আরও বলেন, ধানের সাপ্লাই চেইন হচ্ছে- কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে বিক্রি করে, আর সাপ্লাইয়ররা বিভিন্ন মিলারের কাছে ধান বিক্রি করে। স্থানীয় কিছু ফড়িয়া ও সাপ্লাইয়ার ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে ধান কিনে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখে। দাম বাড়লে ধান বিক্রি করে দেয়। মুজুদদাররা যে দামে ধান বিক্রি করে মিলাররা সে হিসাবে চালের দাম নির্ধারণ করে।

তিনি বলেন, সরকার সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলার ও আড়তদারদের ওপর দোষ চাপায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ায় ধানের ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে মিলারদেরও কিছু যোগসাজশ থাকে। এজন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সরু চালের দাম আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনিকেট ও কাটারি চালের ধানটা পর্যাপ্ত নেই, এগুলো বোরো মৌসুমে হয়। চলতি আমন মৌসুমে মোটা ও মাজারি মানের চালের ধান উৎপাদন হয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কমবে। যদি সরকার আমদানি করতে না পারে, মে মাসের আগে সরু চালের দাম কমবে না।

তিনি বলেন, ঢাকায় চালের বড় আড়তের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চিটাগাং রোড। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চাকতাই ও পাহাড়তলী থেকে চাল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা বদ অভ্যাস হলো, আন্তর্জাতিক বাজার এ পণ্যের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তাদের মজুদ থেকে বাড়তি দাম কার্যকর করে। কিন্তু তা এক মাস পরে কার্যকর করা যেত। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ সবসময় নেই। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এক বস্তা (৫০ বস্তা) চালের দামে পার্থক্য হয়ে যায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

তবে চালের দামের অস্থিরতার পেছনে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সোহেল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে চালের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসার পর দাম অস্থিতিশীল হচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার পর মাঝারি মানের মিলাররা তাদের সঙ্গে পেরে উঠে না। বড় কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। আগে চালের দাম প্রতি বস্তায় বাড়তো ১০ থেকে ২০ পয়সা, এখন বাড়ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এটা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে। এ ছাড়া দামের অস্থিরতার পেছেনে ধান মজুদদারদেরও দায় আছে। তারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। তারা জানে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামেই হোক ধান ক্রয় করবে।

মজুদ কমছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।

সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।

ধান ও চালের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ

মজুদ বাড়াতে সরকার বাজার থেকে প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কিনবে। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনবে সরকার। গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গমের যতটুকু মজুদ আছে ও যতটুকু আমদানি দরকার, তারচেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা ধান ও চাল সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছি। সেটা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যৌক্তিক হয়। আমরা একটা দাম ঠিক করব আর বাজারে এর থেকে বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে- এমন যেন না হয়। এমনটা হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিতে পারে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোরও তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার আসন্ন আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল কিনবে। সেদ্ধ চাল ও ধান কেনা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত।

এদিকে বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি টাকা।

বিশ্ববাজার পরিস্থিতি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে। কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাল খুবই সংবেদনশীল পণ্য। সরকার চাইলেও অনেক সময় হুট করে আমদানি সম্ভব হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ব্যাপকভাবে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এ জন্য টাকার প্রয়োজন হলে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।

চালসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে যাতে ধান আবাদ বেশি হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।


মূল্যস্ফীতি ও নতুন শুল্কের চাপের পরেও মার্কিনিদের কেনাকাটা বেড়েছে ৯ শতাংশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

মূল্যস্ফীতি ও নতুন শুল্কের চাপের পরেও চলতি উৎসব মৌসুমে বিক্রি বেড়েছে আমেরিকায়। অ্যাডোবি অ্যানালাইটিকস বলছে, ক্রেতারা অনলাইনে এবার ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার খরচ করেছেন, যা গত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অবশ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি হিসাব করলে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে কম।

ছুটির মধ্যেও তীব্র চাপ সামলাতে হচ্ছে মার্কিন ডাক পরিষেবা, লস অ্যাঞ্জেলেস সেন্টারের কর্মীদের। প্রতি ঘণ্টায় দশ হাজার পার্সেল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্মীরা। সংস্থাটির ডিস্ট্রিবিউশন অপারেশনের সিনিয়র ম্যানেজার জর্জ ব্যাংকস বলেন, ‘প্রতিটি মেশিন ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার পার্সেল প্রক্রিয়া করতে সক্ষম।’

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি সচেতন। তারা এমন দোকান খুঁজছেন যেখানে তুলনামূলক কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। এতে বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা এবং চাপের মুখে রয়েছে বড় ব্র্যান্ডগুলো।

ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষক ম্যারি এপনার বলেন, ‘এ বছর অন্য যেকোনো ব্ল্যাক ফ্রাইডে উইকএন্ডের চেয়ে আলাদা। শুল্কবৃদ্ধির ফলে ব্র্যান্ডগুলো খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তাই বেশিরভাগ ক্রেতাই এখন অনলাইনে ঝুঁকছে।’

অ্যাডোবি অ্যানালিটিক্সের তথ্য বলছে, ব্ল্যাক ফ্র্যাকাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে কেনাকাটা গত বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। অফারের তথ্য খুঁজতে ও পণ্যের দাম তুলনা করতে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করেছেন অনেক ক্রেতা।

ম্যারি এপনার বলেন, ‘ভোক্তারা এবার সবচেয়ে বেশি খুঁজছিল কীভাবে একটি ফ্রি গিফট পাওয়া যাবে, বা ফাইন্যান্সিং নেওয়া, বা পরে মূল্য পরিশোধ করা। তাই এই সব পয়েন্টই বছরের বাকি সময়ে গ্রাহককে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।’

মার্কিন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের পূর্বাভাস বলছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি বাড়বে ৩ দশমিক ৭ থেকে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এতে মোট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে।


বাংলাদেশে পৌঁছাল ৩ হাজার টন সূর্যমুখী তেল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা জোরদারে ইউক্রেনের মানবিক উদ্যোগ ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া লজিস্টিক হাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, ইউক্রেন ও সুইডেনের দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে এ সহায়তা গ্রহণ করে। ডব্লিউএফপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এই সূর্যমুখী তেল সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনে উৎপাদিত হয়েছে এবং এর ক্রয় ও পরিবহনসহ মোট ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের ব্যয় বহন করেছে সুইডেন সরকার। রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় ডব্লিউএফপি ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার কাজে এই সহায়তা ব্যবহার করা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের পরিচালক এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ওলেক্সান্দ্র পলিশচুক, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে শারলে। ফ্রান্সও ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির সহযোগী।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মোস্তফিজুর রহমান বলেন, সুইডেন ও ইউক্রেনের এই সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি এটিকে মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।

রোহিঙ্গা ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, এই যৌথ উদ্যোগ মানবিকতার ওপর অভিন্ন বিশ্বাসকে তুলে ধরছে, যা বাংলাদেশ, ইউক্রেন, সুইডেন, ফ্রান্স ও ডব্লিউএফপিকে একই প্ল্যাটফর্মে এনেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিউদ্দিন কায়েস বলেন, এই সহায়তা কেবল মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রকাশ।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. পলিশচুক বলেন, সুইডেন ও অন্যান্য অংশীদারদের সমর্থন ছাড়া এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও ডব্লিউএফপির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।

সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন রাখা জরুরি এবং এই সহায়তা দেখায় যে আন্তর্জাতিক সংহতি কথার বাইরে গিয়ে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিতে পারে।

ডব্লিউএফপির সিমোন পার্চমেন্ট বলেন, ইউক্রেন ও সুইডেনের এই সহায়তা বৈশ্বিক একতার শক্তিশালী উদাহরণ এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গারা ই-ভাউচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মাসে ১২ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করেন। ১৯টি ই-ভাউচার আউটলেট থেকে তারা চাল, ডাল, তাজা শাকসবজি, মাছ, মুরগি এবং স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিতে পারেন। এই ব্যবস্থায় স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষক ও উৎপাদকরাও সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন।


চিনি আমদানি বন্ধ, আগে দেশি কলের চিনি বিক্রি হবে: শিল্প উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাটোর প্রতিনিধি

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, টিসিবির মাধ্যমে দেশীয় চিনি বিক্রি শুরু হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে। বিদেশ থেকে চিনি আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশের চিনিকলে জমে থাকা চিনি আগে বিক্রি করা হবে।

তিনি বলেন, শুধু ভর্তুকি দিয়ে চিনিকল চালানো সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শনিবার নাটোরের উত্তরা গণভবন সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর শিল্প উপদেষ্টা নাটোর সুগার মিলস লিমিটেড পরিদর্শন করেন।

শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চিনিকলগুলো দেশের চাহিদার অল্প একটি অংশ পূরণ করতে সক্ষম। তাই চিনিকলের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) রাশিদুল হাসান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, নাটোর সুগার মিলস লিমিটেডের এমডি মো. আখলাছুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।


সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে সরকার

পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়াল
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ৭ ডিসেম্বর থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যে সকল আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই কেবল আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, ঢাকায় খুচরা বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর জন্য সরবরাহ ঘাটতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামের এই ঊর্ধ্বগতি বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, উত্তরার হজ ক্যাম্প বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের বাড়তি দামের খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাবনার ভালো মানের পুরোনো পেঁয়াজ এক পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। খুচরা কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৬০ টাকা। তবে ১৪০ টাকা দরেও পেঁয়াজ মিলছে।

কারওয়ান বাজারে দু-একটি দোকানে আগাম পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজির দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা নীরব মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এ সময়ে প্রতি বছরই পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি।

মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট ও উত্তরার হজ ক্যাম্প বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, তাদের এক কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়ছে ১৪০-১৪৮ টাকা।


সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকায় ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনছে নেটফ্লিক্স

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

হলিউড বিনোদনে সব থেকে পুরোনো ও জনপ্রিয় ‘ওয়ার্নার ব্রাদার্স’-এর মালিকানা কেনার ঘোষণা দিয়েছে নেটফ্লিক্স। ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি ও ফিল্ম স্টুডিয়োর সঙ্গে নেটফ্লিক্সের মালিকানায় থাকবে এইচবিও ম্যাক্স, এইচবিও ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো। গত শুক্রবার জনপ্রিয় অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স আনুষ্ঠানিকভাবে এই খবর জানিয়েছে।

জানা গেছে, নগদ ও স্টক মিলিয়ে ওয়ার্নারের প্রত্যেক শেয়ারের মূল্য ধরা হয়েছে ২৭ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার। এতে প্রতিষ্ঠানটির মোট মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৮২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার যা বিনোদন জগতে সাম্প্রতিক কালের অন্যতম বৃহৎ অধিগ্রহণ। ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে লেনদেন সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বেশকিছু দিন ধরে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে বিনোদন জগতে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটি কিনতে নিলামে এগিয়ে ছিল কমকাস্ট ও প্যারামাউন্ট স্কাইডান্সের মতো সংস্থা। তবে তাদের পেছনে ফেলে এর মালিকানা কিনে নিয়েছে নেটফ্লিক্স। ‘হ্যারি পটার’, ‘গেম অব থ্রোন্স’-এর মতো জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ছিল ওয়ার্নার ব্রাদার্সের হাতে।

নেটফ্লিক্সের মুখপাত্র টেড সারানডোস বলেছেন, আমরা এই পরিবর্তনের হাত ধরে বিনোদুনিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনতে পারব বলেই আশা করব। এবার দেশ-বিদেশের নানা বিনোদনমূলক কনটেন্ট দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারব।


নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে ক্যাব ও বিএসএএফই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোক্তার অধিকার রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও বাংলাদেশ সেফ অ্যাগ্রো ফুড ইফোর্টস (বিএসএএফই)।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে তুলা উন্নয়ন ভবনে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন দুটি।

ক্যাবের সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএএফই এর লিংক পরিচালক মাহমুদ হাসান।

এতে বলা হয়, দেশে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা করা এখন জাতীয় অগ্রাধিকার। কারণ প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বাজারে ভেজাল, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, অনিরাপদ পণ্য ও অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ বাড়ছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন বেড়েছে। কিন্তু বাজারের ৭১ শতাংশ সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক, তেলের নমুনায় বিপজ্জনক ট্রান্সফ্যাট এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, ডিএনসিআরপিতে গত বছর জমা পড়া ৮০ হাজারের বেশি অভিযোগ থেকে জানা যায়, দেশে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন মারাত্মকভাবে বাড়ছে। এ অবস্থায় শক্তিশালী ভোক্তা অধিকার গড়ে তোলা এবং সর্বস্তরে ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের নীতি-কৌশলকে প্রভাবিত করা প্রয়োজন। কারণ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। আরের জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরে প্রযুক্তি ও গবেষণাভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং শক্তিশালী অংশীদারত্ব জোরদার করা।

ক্যাবের সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকার গঠন করবে, তাদের উচিত নাগরিকদের জন্য সেফ ফুড (নিরাপদ খাদ্য) নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা। কারণ এটি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম দায়িত্ব। অথচ এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা দেখা যাচ্ছে না। তাই নতুন সরকার বা বিরোধী দল যাতে সেফ ফুড নিয়ে কাজ করে, সেই বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে এবং এই লক্ষ্যে আমাদের দ্রুত মাঠে নামতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে আপনাদের (বিএসএএফই) সঙ্গে ক্যাব থাকবে। কারণ ক্যাবের লক্ষ্য ভোক্তার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। ক্যাবের আন্দোলনের ফলেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পেয়েছি। অথচ তারা (ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি) এই আলোচনায় নেই, এটা দুঃখজনক। কিন্তু ক্যাব চায় সবাইকে নিয়ে নাগরিকদের ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।


চীনের ইউনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে ইপিবির সমঝোতা স্মারক সই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) চীনের ইউনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।

ইউনান প্রদেশের টোংদে কুনমিং প্লাজায় অনুষ্ঠিত মেকং-লানচাং ফল উৎসবে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের ফল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে। তারা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সামনে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করছে।

থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও মিয়ানমার দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের সহযোগিতা চুক্তির আওতায় এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে।

বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন ইপিবির মহাপরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব বেবি রাণী কর্মকার। চীনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ইউনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের উপমহাপরিচালক মা জুন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ও ফল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুনমিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. খালেদ, বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্য কাউন্সিলর মো. জিয়াউর রহমান এবং কুনমিং কনসুলেটে বাণিজ্য বিভাগের প্রথম সচিব রিদওয়ান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের ৯ জন ফল রপ্তানিকারক ও উৎপাদক প্রথমবারের মতো এ উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লানচাং মেকং ফল উৎসবে বাংলাদেশের উপস্থিতি এবং এই এমওইউ স্বাক্ষর এক সঙ্গে সরকারের রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও বাজার অনুসন্ধানে অবিচল প্রচেষ্টাকে তুলে ধরছে।

চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ইউনান প্রদেশে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য সুবিধা পাবে, যার মধ্যে রয়েছে—

১. ইউনানের নির্দিষ্ট এলাকায় সর্বোচ্চ ২,০০০ বর্গমিটার পর্যন্ত ভাড়ামুক্ত বন্ডেড গুদাম সুবিধা, যা সরবরাহ শৃঙ্খলার খরচ কমাবে এবং চীনা বাজারে প্রবেশ সহজ করবে।

২. সর্বোচ্চ ২,০০০ বর্গমিটার পর্যন্ত ভাড়া-মুক্ত অফলাইন প্রদর্শনী স্থান, যা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পণ্য প্রদর্শন ও আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

৩. ইউনানের নির্দিষ্ট অনলাইন কমোডিটি সিটিতে বিনা খরচে অন্তর্ভুক্তি, যার মাধ্যমে একীভূত ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের পণ্য প্রদর্শন ও বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ মিলবে।

৪. মার্কেট প্রকিউরমেন্ট ট্রেডের ক্ষেত্রে লজিস্টিক খরচ হ্রাস ও মওকুফ, তাজা ও দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য দ্রুত কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, যা সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করবে ও ট্রেড খরচ কমাবে এবং বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়াতে সুবিধাজনক এয়ার ফ্রেইট ও লজিস্টিক নীতি সহায়তা পাবে।

দ্রুত কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স কেবল তখনই সুযোগ হয়ে উঠবে যদি রপ্তানিকারকরা ধারাবাহিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ দিতে পারেন। বাংলাদেশকে অবশ্যই কোল্ড চেইন লজিস্টিকস এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে, যাতে সরবরাহ চেইনে শৃঙ্খলা তৈরি হয়।


ফিজি ও টোঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির যুগান্তকারী প্রকল্প ঘোষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রথমবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দুই দ্বীপরাষ্ট্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও অবকাঠামো উন্নয়নে দু’টি বড় প্রকল্প ঘোষণা করেছে।

মোট ২৩ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পগুলো ‘ফুল মিউচুয়াল রিলায়েন্স ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে উদ্ভাবনী যৌথ অর্থায়ন মডেলের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। লক্ষ্য হলো উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও দ্রুত ও ফলপ্রসূ করা।

এডিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা আজ ফিজি ও টোঙ্গার জন্য এসব প্রকল্প ঘোষণা করেন।

ফিজিতে বিশ্বব্যাংক নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করা হবে। পাশাপাশি একটি অত্যাধুনিক আঞ্চলিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির চিকিৎসা পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আরও সহজলভ্য হবে।

অন্যদিকে, টোঙ্গায় এডিবি নেতৃত্বাধীন ‘সাসটেইনেবল ইকোনমিক করিডোরস অ্যান্ড আরবান রেজিলিয়েন্স (এসইসিইউআরই)’ প্রকল্পের আওতায় পরিবহন, নগর ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের উন্নয়ন করা হবে।

এ প্রকল্পে ৭২০ মিটার দীর্ঘ ফাঙ্গা’উতা লেগুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগের ফলে যানজট কমবে, গ্রামীণ মানুষের বাজারে পৌঁছানো সহজ হবে এবং বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সঙ্গে সংযোগ আরও মজবুত হবে। পাশাপাশি সুনামিসহ বিভিন্ন দুর্যোগকালে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার রুটও নিশ্চিত হবে।

এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন অর্থায়নকে আরও সহজ, দ্রুত ও কার্যকর করা।’

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেন, এই ফ্রেমওয়ার্ক বিশ্বব্যাংক ও এডিবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আর যেসব দেশ ও জনগোষ্ঠী বাস্তব উন্নয়ন ফলাফলের জন্য তাদের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এর তাৎপর্য আরও বেশি।


পাট খাতের ভুলের পুনরাবৃত্তি বস্ত্র খাতে হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেন। ছবি : পিআইডি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পাট শিল্পের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে যেতে চাই। পাট খাতের ভুলের পুনরাবৃত্তি বস্ত্র খাতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘পাট শিল্পে অতীতে অদক্ষতা, অযোগ্যতা, দুর্বৃত্তায়ন ও অব্যবস্থাপনার কারণে শিল্পটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। রঙিন স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। কিছু অর্জন করতে না পেরেই স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল।’

পাট শিল্পে অতীতে যে ভুল হয়েছে, বস্ত্র খাতে সেই ভুল পুনরায় না করার আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমাদের সিদ্ধান্ত হবে বাস্তবতার নিরিখে।’

বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে আয়োজিত ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড রেইনভেনশন: ক্রিয়েটিং স্কিল্ড প্রফেশনালস ফর দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট সচিব বিলকিস জাহান রিমি। এবারের জাতীয় বস্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বস্ত্র শিল্পের প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের বস্ত্র খাত এখন শুধু একটা শিল্প নয়, বরং অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এই শিল্প দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি অর্জন করতে চাই। এই লক্ষ্য পূরণে শিল্প, একাডেমিয়া ও নীতিনির্ধারকদের একত্রে কাজ করতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা জরুরি। মধ্যপ্রাচ্যের আছে ক্রুড অয়েল, আর আমাদের আছে ১৮ কোটি মানুষ। এই মানবসম্পদকে দক্ষ করে তুলতে পারলে বস্ত্রশিল্প আরো সমৃদ্ধ হবে এবং অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।

পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ নিয়ে তিনি বলেন, সরকার একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে। ১ হাজার ৬০০ এর বেশি উদ্যোক্তাকে নিয়ে জলবায়ু ফান্ডের আওতায় একটি রিভলভিং ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এখান থেকে পাটপণ্য কিনে পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা বাজারে সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করছে।

তিনি বলেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় ১০ লাখ পাটের ব্যাগ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশীয় ঐতিহ্যের পাটের ব্যাগকে আবার মূলধারায় ফিরিয়ে আনাই সরকারের লক্ষ্য।


ঢাকায় চামড়া শিল্পের প্রযুক্তি প্রদর্শনী শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চামড়া শিল্প, জুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, জুতার বিভিন্ন উপকরণ, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্যের সমাহার নিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’। রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) এক্সপো ভিলেজে বৃহস্পতিবার এ আয়োজনের ১১তম আসরের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশসহ চীন, ভারত ও পাকিস্তানের শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশে চামড়া শিল্প এখনো তার পূর্ণ সম্ভাবনার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ‘লেদারটেক’ এর মতো প্রদর্শনী শুধু প্রদর্শনীই নয়, বরং সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চমৎকার প্রয়াস। চামড়া শিল্প যে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে প্রস্তুত, এ ধরনের আয়োজন আমাদের সে বার্তাই দেয়।

সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টা সমন্বয় করে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি’।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ এখন রপ্তানি-ভিত্তিক উৎপাদন ত্বরান্বিত করার এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হলে নীতিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সঠিক সংযোগ তৈরি করতে পারলে চামড়াশিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে’।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এবং ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্য আমাদের দেশের একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। ‘লেদারটেক’ এর মতো আয়োজন আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করছে’।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া বলেন, ‘এবারের আসরে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনসহ মোট আটটি দেশ থেকে আসা প্রায় ২০০ টি কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করবেন। আয়োজনে কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস ইন্ডিয়া (সিএলই), পাকিস্তান ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ), ইন্ডিয়া ফুটওয়্যার কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইফকোমা) সহ চীনের গুয়াংডং সু-মেকিং মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) পৃথক পৃথক প্যাভিলিয়ন থাকছে। এছাড়া, প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প সংগঠনগুলো। যার মধ্যে প্রদর্শনীর বিবিধ বিষয়ে সহায়তা প্রদান করছে এলএফএমইএবি।’

‘লেদারটেক বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু হয় ১১ বছর আগে। শুরুতে এটি ছিল একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্ম যার লক্ষ্য ছিলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জুতা, ভ্রমণ আনুষাঙ্গিক এবং সংশিস্নষ্ট পণ্যের উত্পাদন প্রযুক্তিকে দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সময়ের সঙ্গে এই আয়োজনটি বাংলাদেশের চামড়া, জুতা এবং সংশিস্নষ্ট খাতের উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকে ‘লেদারটেক বাংলাদেশ’ চামড়া শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

তৈরি পোশাকের পরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া ও জুতা শিল্পের অবস্থান। বিশ্ববাজারের চামড়াজাত পণ্যের ৩ শতাংশ এবং বৈশ্বিক চামড়ার মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে এই শিল্প। শিল্পনীতি ২০২২ এ রপ্তানি বহুমুখীকরণের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায়, খাতটি এখন বৈশ্বিক উেসর একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর শেষে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে চামড়া ও জুতা শিল্প। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় খাতটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও জুতা শিল্পের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫৯১.৫ মিলিয়ন ডলার, যা ছিল ৫৩৯.৪ মিলিয়ন ডলার। বেশ কয়েক মাসের অস্থিরতা কাটিয়ে এ খাত ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এর মাধ্যমে রপ্তানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি টেকসই ও বৈশ্বিক উত্স হিসেবে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করছে দেশের চামড়া ও জুতা শিল্প।

প্রদর্শনী চলবে ৪ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর, সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ব্যবসায়িক দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন।


টানা চার মাস রপ্তানি আয়ে পতন, নভেম্বরে কমেছে ৫.৫৪ শতাংশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম।

আজ বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে টানা চতুর্থ মাস রপ্তানি আয় কমলো।

জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।


জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে রিহ্যাব নেতাদের সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা। রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে রিহ্যাবের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জি. আব্দুল লতিফ, রিহ্যাব পরিচালক এ.এফ.এম. ওবায়দুল্লাহ, মিঞা সেলিম রাজা পিন্টু, মিরাজ মোক্তাদির এবং শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎকালে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং পিপিপি পদ্ধতিতে ফ্ল্যাট তৈরি করার জন্য রিহ্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

সাক্ষাতে আবাসন খাতের চলমান সংকট নিরসন, সেল পারমিশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দ্রুততর সময়ের কার্যকর করা এবং রিহ্যাব ফেয়ারসহ আবাসন খাতের বিভিন্ন কাজের সার্বিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।

রিহ্যাব নেতারা জানান, আবাসন খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে ঋণের উচ্চসুদ এবং নীতিগত জটিলতার কারণে খাতটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারি সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি বলে তারা মত দেন।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, সরকার আবাসন খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে। সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতেই সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সাক্ষাৎ শেষে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে আরো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্কহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সচিবালয়ের অফিস কক্ষে গত ১ ডিসেম্বর তারিখে বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্কহার কমানোর বিষয়ে এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির মধ্যকার সভায় এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- প্রবাসীরা দেশে ছুটি কাটানোর সময়ে ৬০ দিন পর্যন্ত স্মার্টফোন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন, ৬০ দিনের বেশি থাকলেই মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, প্রবাসীদের মধ্যে যাদের বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা ফ্রিতে মোট তিনটি ফোন সঙ্গে আনতে পারবেন।

অর্থাৎ যেসব প্রবাসীর বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা তাদের নিজের ব্যবহারের হ্যান্ডসেটের অতিরিক্ত দুটি নতুন ফোন সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন ফ্রিতে। চতুর্থ ফোনের ক্ষেত্রে তাদের ট্যাক্স দিতে হবে।

যেসব প্রবাসীর বিএমইটি কার্ড নেই, তারা নিজের ব্যবহারের ফোনের পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি ফোন ফ্রিতে আনতে পারবেন।

এ ক্ষেত্রে মোবাইল ক্রয়ের বৈধ কাগজটি নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। কেননা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চোরাচালানিরা সাধারণ প্রবাসীদের চাপাচাপি করে স্বর্ণ ও দামি মোবাইল ফোন ইত্যাদির শুল্কহীন পাচারে লিপ্ত রয়েছে।

চোরাচালানিদের এই অপচেষ্টা রোধ করার জন্যই ক্রয়কৃত মোবাইলের কাগজ সাথে রাখতে হবে।

স্মার্টফোনের বৈধ আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হবে। এতে করে বৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম কমে আসবে।

বর্তমানে বৈধ পথে মোবাইল আমদানির শুল্ক প্রায় ৬১ শতাংশ। এটা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সরকার কাজ শুরু করেছে। আর আমদানি শুল্ক কমালেই বাংলাদেশের ১৩-১৪টি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনকৃত মোবাইলের শুল্ক ও ভ্যাট কমাতে হবে, অন্যথায় কোম্পানিগুলোর বিদেশি বিনিয়োগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমদানি ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শুল্ক কমানো এবং তা সমন্বয় নিয়ে বিটিআরসি ও এনবিআর যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার বসেছে এবং দ্রুততার সঙ্গে তারা কাজ শুরু করেছে।

এছাড়া কারও অজান্তেই কেউ তার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে কি না, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অপরাধ ও রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা এড়াতে সব সময় নিজের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করতে হবে।

বাংলাদেশে ক্লোন মোবাইল, চুরি বা ছিনতাই করা ফোন বন্ধ করা হবে। এ ছাড়া রিফারবিসড মোবাইল আমদানি বন্ধ করা হবে।

১৬ ডিসেম্বরের আগে বাজারে অবৈধভাবে আমদানি করা স্টক ফোনগুলোর মধ্যে যেগুলোর বৈধ আইএমইআই নম্বর আছে, সেই আইএমইআর লিস্ট বিটিআরসিতে জমা দিয়ে হ্রাসকৃত শুল্কে সেগুলোকে বৈধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তবে ক্লোন ফোন ও রিফারবিশড ফোনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। ১৬ ডিসেম্বরের আগে ব্যবহৃত সচল মোবাইল ফোন কোনোভাবেই বন্ধ হবে না।

এদিন থেকে চালু হচ্ছে এনইআইআর। সুতরাং বৈধ আইএমআইআই নম্বরহীন হ্যান্ডসেট ক্রয় থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অবৈধ আমদানিকৃত, চোরাচালানকৃত ও ক্লোন ফোন বাংলাদেশে বন্ধ করা হবে।

দেশের ও বিদেশের পুরোনো ফোনের ডাম্পিং বন্ধ হবে। কেসিং পরিবর্তন করে এসব ইলেকট্রনিক বর্জ্য দেশে ঢুকিয়ে যে রমরমা চোরাকারবারি ব্যবসা শুরু করা হয়েছে, সেটা বন্ধ করা হবে।

এছাড়া বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুতই এর বিরুদ্ধে কাস্টমস থেকে অভিযান চালানো হবে।

প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ (সংশোধনী), ২০২৫ এ মোবাইল সিমের ইকেওয়াইসি ও আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত ডেটা সুরক্ষার নিশ্চয়তা তৈরি করা হয়েছে।

নতুন একটি ধারা যোগ করে রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত উপাত্ত লঙ্ঘনকারীদের অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে।


banner close