বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

২০২৪: পুঁজিবাজারে ১,৪৮,৬৩৯ কোটির সিকিউরিটিজ লেনদেন

বেড়েছে মূল মার্কেটসহ এসএমই ও মোবাইল অ্যাপে লেনদেন, কমেছে ব্লক লেনদেন * বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা * আইপিও এবং বন্ড তালিকাভুক্তিতে ধস
ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ২১:০০

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এই লেনদেন তার আগের বছরের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম ছিল। ২০২৪ সালে একদিনে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১০ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালে এক দিনে সর্বোচ্চ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। ডিএসইর বার্ষিক বাজার পর্যালোচনা প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩৫ কার্যদিবস। আগের বছরে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ২৪৪ কার্যদিবস। অথাৎ সর্বশেষ বছরে ডিএসইতে লেনদেন কম হয়েছে ৯ কার্যদিবস। কার্যদিবস কমা সত্বেও টাকার অংকে ২০২৪ সালে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭ হাজার ৫৮০ কোটি। তবে আলোচ্য বছরে ডিএসইর ব্লোক মার্কেটে লেনদেন কমেছে। এ বছরে মাত্র ৯ হাজার ২১৬ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। আগের বছরে ব্লক মার্কেটে লেনদন হয়েছিল ১৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ। ওই লেনদেন তার আগের বছরের লেনদেনের তুলনায় দশমিক ৫৩ শতাংশ কম ছিল।

এসএমই মার্কেটে লেনদেন বেড়েছে ৮৮%

ডিএসইর এসএমই মার্কেটে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। আগের বছরে এ মার্কেটে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ। এই লেনদেন তার আগের বছরের চেয়ে ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম ছিলো।

বেড়েছে মোবাইল অ্যাপে লেনদেনও

এদিকে ডিএসইতে সর্বশেষ বছরে মোবাইল অ্যাপে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কমেছে অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনকারীর সংখ্যা। এক্সচেঞ্জটিতে আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ডিএসইতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, যা মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১৬ হাজার ৮৪৮ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকার, যা সেই বছরের মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। সেই হিসাবে বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৪ হাজার ৪৫১ কোটি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা বা ২৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।

২০২৪ সাল শেষে মোবাইল ফোনে লেনদেনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৪৩৩ জনে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৩২ হাজার ৬৮৮ জন। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে মোবাইল ফোনে লেনদেনকারীর সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ২৫৫ জন বা ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২৪ সালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার জন্য মোট ১ কোটি ৬ লাখ আদেশ পাঠানো হয়৷ এর মধ্যে ১ কোটি ৪ হাজার আদেশ কার্যকর হয়েছে ৷

বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি

২০২৪ সালে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতন হওয়া বাজার মূলধনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আলোচ্য বছর শেষে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে যা ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ২০২৪ সালে বাজার মূলধন কমেছে ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। আলোচ্য বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকায় উন্নিত হয়েছিল। আর বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ কোটিতে নেমেছিল এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন।

আইপিও তালিকাভুক্তিতে ধস

দেশের পুঁজিবাজারে টানা দুই বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বড় খরা দেখা গেছে। ২০২৪ সালে মাত্র চারটি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আগের বছরও চারটি কোম্পানি আইপিওতে অর্থ উত্তোলন করেছিল। পরপর দুই বছরে এত কম আইপিও স্মরণকালের মধ্যে আর দেখা যায়নি। মূলত ২০২৩ সালে আইপিওতে রীতিমতো ধস নামে, যা অব্যাহত থাকে ২০২৪ সালেও। ২০২৪ সালে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করা চার কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং টেকনো ড্রাগস। এ চার কোম্পানির মধ্যে এনআরবি ব্যাংক স্থির-মূল্য পদ্ধতিতে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করে। বাকি তিনটি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে এসেছে। এনআরবি ব্যাংক আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। বাকি তিন কোম্পানির মধ্যে বেস্ট হোল্ডিং ৩৫০ কোটি টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৯৫ কোটি এবং টেকনো ড্রাগস ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। অর্থাৎ চারটি কোম্পানি আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে মোট ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

এর আগে ২০২৩ সালে মিডল্যান্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, শিকদার ইন্স্যুরেন্স এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড আইপিওতে আসে। অর্থাৎ ২০২৩ সালে তিনটি কোম্পানি এবং একটি মিউচুয়াল ফান্ড আইপিওতে আসে। এর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা, শিকদার ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। অর্থাৎ চারটি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ছিল ২০২ কোটি টাকা।

বন্ড তালিকাভুক্তিও নিম্নমুখী

২০২৪ সালে মাত্র দুটি পার্পিচুয়াল বন্ড ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক ফাস্ট পার্পিচুয়াল বন্ড ৫০০ কোটি এবং ইউসিবি ব্যাংক সেকেন্ড পার্পিচুয়াল বন্ড ইস্যু করে ৫৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে ৪টি পার্পিচুয়াল বন্ড ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়ে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। এর মধ্যে এবি ব্যাংক পার্পিচুয়াল বন্ড ৬০০ কোটি, ঢাকা ব্যাংক পার্পিচুয়াল বন্ড ২০০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পার্পিচুয়াল বন্ড ৫০০ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়া ফার্স্ট পার্পিচুয়াল বন্ড ইস্যু করে ৯৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।


পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফেরাল ১২ লাখ বিনিয়োগকারী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গেল আট বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে পুঁজিবাজারে অর্থ লগ্নিকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট কমতে কমতে চলতি বছরে এসে অবস্থান করছে সর্বনিম্নে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২। এতে করে আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার।

২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারেও বেশি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় তারা বাজারে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছেন। অনেকে মার্জিন ঋণের খপ্পরে ফোর্স সেলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে ছেড়েছেন বাজার।

পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারী তারেক মাহমুদ বলেন, প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আসার মূল আগ্রহ আর্থিক লাভের জন্য। কিন্তু লাগাতার লোকসান হওয়ায় এখন আর কেউ ভরসা পাচ্ছেন না।

মার্জিন ঋণ প্রসঙ্গে আরেক বিনিয়োগকারী আলতাফ হোসেন বলেন, বাজারে আগ্রহ ছিল বলেই অনেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু দেদারসে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় মার্জিন ঋণের খপ্পরে পড়েন তারা। একদিকে মাঝারি বা খারাপ মানের শেয়ারের দাম কমায় টান পড়ছে ঋণের টাকায়, অন্যদিকে ফোর্স সেল হওয়ায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভালো শেয়ারও। এতে করে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

ব্রোকারেজ হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, নেই সেই চিরচেনা কর্মচাঞ্চল্য। শাখা পরিচালকরা বলেন, আগে শেয়ার বেচাকেনায় গমগম করতো হাউসগুলো। শুধু হাউসে না, অনেক প্রবাসী বিনিয়োগকারীও মুঠোফোনে যুক্ত থাকতেন, বেচাকেনা করতেন শেয়ারের।

ব্রোকারেজ হাউসের করুণ দশা প্রসঙ্গে গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ লিটন বলেন, নতুন করে আর কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। সবাই চাচ্ছেন বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে। অনেকে লোকসান দিয়ে হলেও বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। যারা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাজার ছাড়ছেন, তাদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পুরো বাজার স্থায়ী ধসের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা করেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের বাজার বিমুখতা প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত বিএসইসির টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীরা বাজারে লেনদেনে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেক বিও অ্যাকাউন্ট বহুদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। অনেকে আবার অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে বাজার থেকে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভরসা কমে গেছে।

বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিযোগ কমিশন কারসাজিকারীদের গণহারে জরিমানা করায় বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত বছর আগস্টে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২০ কোটি টাকার ওপর জরিমানা করেছে। এরমধ্যে শুধু বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

বাজারে বিএসইসির করা জরিমানার প্রভাব প্রসঙ্গে হেলাল বলেন, 'এখন যা জরিমানা হচ্ছে তার বেশিরভাগই আগের কমিশনের। কারসাজির ৯৮ শতাংশ বিচার তারা করেননি, যা বর্তমান কমিশনকে এসে করতে হচ্ছে। অপরাধীদের সাজা না দিলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে না।'

ডিএসইসির লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু বিও অ্যাকাউন্ট না গত এক বছরে ডিএসইসির প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। এর বাইরে ঢাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।


দরপতনের বৃত্তে শেয়ারবাজার

চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ দিনই দরপতন হয়েছে
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।

এমন দরপতনের পর নতুন বছর ২০২৫ সালে শেয়ারবাজারে সুদিন দেখা যাবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট নেমে যায়। পিই ১০-এর নিচে নেমে গেলে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নতুন বছরেও শেয়ারবাজারে সুদিন ফেরেনি। বরং আগের মতোই দরপতনের বৃত্তেই আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন যত যাচ্ছে তত ভারী হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে মারাত্মক আস্থাসংকট দেখা দিয়েছে। বাজার ভালো করতে হলে সবার আগে এই আস্থাসংকট দূর করতে হবে। কিন্তু বাজারে আস্থা ফেরাতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্টদের নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজার ততো তলানিতে নামছে।

এদিকে সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়নি। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

তবে অল্প সময়ের ব্যবধানে দাম কমার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। এতে কিছু সময়ের জন্য মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার দাম কমার তালিকায় চলে যায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ দিকে বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের বড় পতন হয়নি।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় মাত্র ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৫১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ২১ কোটি ৭১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফাইন ফুডস।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আফতাব অটোমোবাইল, অগ্নি সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।


পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

বাজারের অস্থিতিশীলতার কারণে আস্থা হারিয়েছেন তারা
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজার থেকে গত আট বছরে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে মোট বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২টিতে। এর মানে, আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে গেছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিও অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। এক বছরে ৯০ হাজারেরও বেশি বিনিয়োগকারী তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছেন। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজারের অস্থিতিশীলতার কারণে তারা আস্থা হারিয়েছেন।

বিনিয়োগকারী তারেক মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য আর্থিক লাভ। কিন্তু লাগাতার লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন আর ভরসা পাচ্ছেন না।’

অনেক বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আকতার হোসেন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ারের দাম কমায় ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না অনেকে। ফোর্স সেলের কারণে ভালো শেয়ারও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।’

ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেও কর্মচাঞ্চল্য কমে গেছে। গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ লিটন জানান, নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন না, বরং অনেকেই লোকসান দিয়ে হলেও টাকা তুলে নিচ্ছেন। বাজার স্থিতিশীল না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) টাস্কফোর্স সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা লেনদেনে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেক অ্যাকাউন্ট বহুদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। ২০২৩ সালের আগস্টে বিএসইসি ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে। হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আগের কমিশন কারসাজির ৯৮ শতাংশ বিচার করেনি। বর্তমান কমিশন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে।’

ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক বছরে প্রধান সূচক ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমেছে এবং বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, শেয়ারবাজারে প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে।

যারা ব্যাংক খাতের অপরাধী, তারা শেয়ারবাজারে আস্থা নষ্ট করার পেছনেও ছিল বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

গত ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।


ডিএসইতে সূচক কিছুটা বাড়ল

ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫,১৯৪ পয়েন্টে উঠেছে
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। সূচকের পতন হলেও এই বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।

এর আগে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইতে দরপতন হয়। পরের কার্যদিবস সোমবার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। কিন্তু পরের দুই কার্যদিবস মঙ্গলবার ও বুধবার আবার দরপতন হয়।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। অবশ্য লেনদেন চলাকালে শেয়ারবাজারে বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। কয়েকবার সূচকের উত্থান-পতনের ঘটনা। তবে শেষ পর্যন্ত ডিএসইতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির এবং ৮৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩০৭ কোটি ১ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৭ কোটি ২ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৩ কোটি ২৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ১২ কোটি ৩৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফাইন ফুডস।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্নি সিস্টেম, ওরিয়ন ইনফিউশন, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি, যমুনা ব্যাংক, আফতাব অটোমোবাইল এবং ফারইস্ট নিটিং।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৯টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।


শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে চায় সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে কিছু সংস্কার হচ্ছে। সব সংস্কারেরই কিছু যন্ত্রণা থাকে। তাই শেয়ারবাজারের সংস্কার কার্যক্রমেরও কিছু যন্ত্রণা সাময়িকভাবে সইতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান হচ্ছে শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করা। ব্যাংকের ঋণনির্ভর অর্থনীতি টেকসই কোনো অর্থনীতি নয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্প গড়লে অনেক সময় টাকা ফেরত না দিলেও চলে। এ কারণে আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেশি।

শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে মঙ্গলবার সকালে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ হবে চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তারা বাজারে আসতে আগ্রহী নন। কিন্তু সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এ জন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। আর তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি-সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও বড় সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে দলগতভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগেরও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় বা যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।’

শেয়ারবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডিএসইসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভারতের শেয়ারবাজারে দেশটির প্রবাসীদের বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও অনেকের বিনিয়োগের সামর্থ্য রয়েছে। তাদের বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। আর এ জন্য বাজারকে আকর্ষণীয় করতে হবে।’

এ সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেই সবাই খুশি হন। কিন্তু বাজার যখন বেশি ওপরের দিকে যায়, তখন একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল নীতির কারণেও শেয়ারবাজারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ব্যাংকগুলো বাজারে বেশি বিনিয়োগ করায় বাজার অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এ সময় বিএসইসির কমিশনার, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডিএসইর পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


নিট পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ে চমক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৩:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ে যে উল্লম্ফন হয়েছে তাতে নিট পোশাক তথা কম দামি পোশাকের বড় অবদান ছিল। এ সময় মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের ৪৪ শতাংশের বেশি এসেছে নিট পোশাক থেকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ (২৪.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এ সময় তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট যে আয় করেছে, তার ৪৪ দশমিক ১৭ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে। অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৯ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

ইপিবির হিসাব বলছে, এই ছয় মাসে তৈরি পোশাক থেকে যে আয় হয়েছে, তার ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে; ওভেনের চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় দেশে এসেছে।

সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি উপখাত হচ্ছে ওভেন ও নিট। পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ার পর থেকেই ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। বেশ কয়েক বছর রপ্তানি বাণিজ্যে এই দুই খাতের অবদান ছিল কাছাকাছি। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ওভেনকে পেছনে ফেলে ওপরে উঠে আসে নিট খাত। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, রপ্তানি আয়ে ওভেনের চেয়ে কম দামি নিট পোশাকের অবদান ততই বাড়ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকই আসলে নিট পোশাক। যেমন টি-শার্ট, পলো শার্ট, সোয়েটার, ট্রাউজার, জগার, শর্টস প্রভৃতি। ঘরোয়া পরিবেশে সাধারণত টি-শার্ট, পলো শার্ট, শ্যান্ডো গেঞ্জি, ট্রাউজার জাতীয় পোশাক বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। আরামদায়ক হওয়ায় সারা বিশ্বেই রয়েছে এ ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে শার্ট, প্যান্ট, স্যুট-ব্লেজার জাতীয় ফরমাল পোশাক হচ্ছে ওভেন ক্যাটারির পণ্য।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাক থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে পাল্টে যায় চিত্র; নিট থেকে আসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছরে ওভেন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; নিট থেকে আসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আসে মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে নিট থেকে আসে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার কম, ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আসে মোট ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে নিট থেকে আসে ১৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার; ওভেন থেকে আসে ১৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এই মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে এই ডিসেম্বরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাক থেকে ডিসেম্বর মাসে আয় হয়েছে ১ দমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছে ১৮ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত তিন-চার বছর ধরেই ওভেনের চেয়ে নিট থেকে বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসছে। নানা সমস্যার মধ্যেও প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রেখেছি। দুই বছরের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ের যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা পণ্য রপ্তানি পড়েছিল। কিন্তু নিট পোশাকের রপ্তানি কমেনি; উল্টো বেড়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। তারা তখন খাদ্য ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল।

তার মতে, নিট পোশাক যেহেতু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, তাই তারা বাধ্য হয়ে এগুলো কিনেছে। সে কারণে এই খাত থেকে আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। সুসংবাদ হচ্ছে, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ আগের মতোই পোশাকসহ অন্য পণ্য কিনছে। তার প্রভাব পড়েছে নিট পণ্য রপ্তানিতে।


রাজধানীতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যমেলা শুরু বুধবার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ০০:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক

তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি বা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য পোশাক প্রস্তুতকারকদের কাছে তুলে ধরতে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে গার্মেন্টস টেকনোলজি প্রদর্শনী বাংলাদেশের (জিটিবি-২০২৫) ২২তম এবং গ্যাপএক্সপো ২০২৫-এর ১৪তম সংস্করণ।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সঙ্গে এএসকে ট্রেডশো অ্যান্ড এক্সিউবিশন প্রাইভেট লিমিটেড যৌথভাবে একই ছাদের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চার দিনব্যাপী এ আয়োজন শুরু হবে আগামী বুধবার (৮ জানুয়ারি)। চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আইসিসিবির আটটি হলজুড়ে এই প্রদর্শনীতে অংশ নেবে ২৫টি দেশের ৫০০ জন প্রদর্শক।

৮ জানুয়ারি সকাল ১১টায় আইসিসিবির ৪ নম্বর হলের মেজানাইন ফ্লোরে অনুষ্ঠিত হবে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয়ং-সিক এবং অন্য শিল্প নেতারা।

২১ বছর ধরে তৈরি পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রযুক্তিগুলোকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসছে জিটিবি। এই প্রদর্শনীগুলোয় আরএমজি সেক্টরের কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং, এমব্রয়ডারি মেশিনারি, খুচরা জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের আনুষঙ্গিক পণ্য একসঙ্গে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে প্রদর্শনীতে বিজিএপিএমইএর নেতৃস্থানীয় সদস্যরাও তাদের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিংয়ে সর্বশেষ উদ্ভাবন প্রদর্শন করবেন।

২০২৪ সালে কঠিন সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত ২০২৫ সাল নিয়ে আশাবাদী। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো মূল বাজারগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি কমে যাওয়ায় পশ্চিমা ক্রেতারা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ সত্ত্বেও ২০২৪ সালে আরএমজি খাত রপ্তানি আয়ে ছয় দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই উন্নতি সামগ্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও খাতটির দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতাকে প্রতিফলন করে।

প্রদর্শনীর আয়োজক প্রতিষ্ঠান আঙ্ক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অর্ডারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হলো নন-কটন পোশাক, বিশেষত খেলাধুলার পোশাকের বৈচিত্র্য ও সম্প্রসারণ।

এই পরিবর্তন বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির চাহিদা বৃদ্ধি করেছে যা জিটিবি প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হবে। জিটিবি সেলাই, লন্ড্রি, ফিনিশিং, সিএডি/সিএএম এবং এমব্রয়ডারি ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদ্ভাবন উপস্থাপন করছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রদর্শনীটি একটি অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।

জিটিবি-গার্মেন্ট টেকনোলজি বাংলাদেশের বড় এই প্রদর্শনী মেলাটি সমগ্র গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু চেইনকে কভার করে। বিশেষ করে প্রোডাক্ট জোন ও ফোকাসড সেগমেন্টের মাধ্যমে, স্টেকহোল্ডারদের এক জায়গায় তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো খুঁজে বের করার সুযোগ দেয়। জিটিবি এবং জিএপি প্রদর্শনী মেলায় পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন কোম্পানির সিদ্ধান্তগ্রহীতা, প্রযুক্তি প্রধান ও সোসিং টিম। দেশজুড়ে ট্রেড সোর্স টেকনোলজি, মেশিনারি, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, প্যাকেজিং, অ্যালাইড প্রোডাক্টস এবং স্পেয়ার।

প্রদর্শনী সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবসায়িক দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।


বাণিজ্যমেলা: এখনো চলছে স্টল নির্মাণের কাজ, ক্রেতার সমাগম কম

বাণিজ্যমেলায় এখনো চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ২০:৫৪
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ

যত্রতত্র পড়ে আছে স্টল নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঠ বাঁশসহ নির্মাণসামগ্রি। কেউ এখনও মালপত্র গোচ্ছাছেন। কার্টুন, পলিথিন, কাগজ ফেলে রাখছেন। এতে দর্শণার্থীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কেউ এসব ফেলে রাখা সামগ্রির খোচায় আহতও হচ্ছেন। মেলা জুড়ে এখনো এমন অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা গেছে।

রূপগঞ্জের পূর্বাচলে গত ১ জানুয়ারি ২৯তম আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলার আসর বসেছে। কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে স্টল নির্মাণে ধীর গতি ছিল। তার উপর মেলার স্টল নির্মাণ শেষ হয়নি পুরোপুরি। সব মিলিয়ে মেলায় ক্রেতা সমাগম কম, ফলে জমে উঠেনি কেনা-বেচাও।

কাঠমিস্ত্রি সুমন সরকার বলেন, ‘দোকানের মালিক বলছে কাজ করতেছি। আগে পরে তো আমি জানি না।’ এক স্টল মালিক বলেন, ‘মেলা হবে কি হবে না, কবে হবে তা নিয়েই তো সংশয় ছিল। তাই স্টল নির্মাণে দেরি হচ্ছে।’

নাফিসা ইসলাম নামে এক দর্শণার্থী বলেন, ‘জীবনের প্রথম বাণিজ্য মেলায় আসলাম। দর্শণার্থী অনেক কম। মনে হয় শীত কমলে ধীরে ধীরে দর্শণার্থী বাড়বে।’

মুনসিফ নামে এক দর্শণার্থী বলেন, ‘শীত-ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে এলাম, ভালোই লাগল। তবে লোকজন কম।’

দোকানিরা বলছেন, বেচাবিক্রি একেবারেই নেই। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ক্রেতা-দর্শণার্থী বাড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ মেলার যৌথ আয়োজক। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি ৭ দেশের ১১ প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।

মেলায় এসব দেশের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে।

মেলায় ক্রেতা-দর্শণার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩৫ টাকা ও ভুলতা- গাউছিয়া থেকে ২০ টাকা বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়। দর্শণার্থীদের সব ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য রয়েছে তথ্যকেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য রয়েছে ডাচ্-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সার্ভিস বুথও রয়েছে। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

সচিব বিবেক সরকার বলেন, ‘সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে মেলা আযোজন করেছি। নিয়মিত পানি ছিটাচ্ছি যাতে ধুলাবালি না উড়ে। অনলাইনে স্টল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে, আগেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিছু ব্যবসায়ী দেরিতে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তবে খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।’

আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কর্মরত রয়েছেন। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মেলায় সক্রিয় রয়েছেন।


বাণিজ্যমেলা: কুয়াশা কমায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে

শনিবার বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৮:৪১
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ

টানা তিন দিন পর সূর্যের দেখা মিলেছে। রৌদ মেঘের লুকচুরি খেলা চলছে। তাপও কিছুটা বেড়েছে। শীতও কমেছে। বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার শনিবার চতুর্থ দিন।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও চতুর্থ দিন সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছেন। ঘুরে দেখছেন মেলা প্রাঙ্গণ।
১ জানুয়ারি ঢাকার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিসিএফসি) শুরু হয়েছে বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টায় গেট খোলার পরপরই মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তারা জানান, প্রথম দিকে শুধু স্টল ঘুরে দেখার জন্য আসা, কেনাকাটা শুরু হবে মাঝামাঝি সময় থেকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণা। তবে মেলা জমে উঠতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন। এখনও অনেক স্টলে সাজসজ্জার কাজ চলতে দেখা যায়।
মেলায় প্রবেশ টিকিট ইজারাদার 'ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের, হেড অফ অপারেশন এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারনে ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় না আসলেও শনিবার থেকে লোকসমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কারণে এবার ক্রেতা দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মেলার আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় মেলাকে প্রানবন্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্ব্বোচ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান বলেন, মেলা এলাকায় ধুলো বালির সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়ত পানি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। গত বছরের তুলনায় এবারে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় কেনা-বেচার ধুম পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাত শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গেইট ইজারাদারের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছে।
ঢাকার উপকন্ঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরের স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ -চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে চতুর্থ বারের মতো বসেছে বাণিজ্যমেলা। এবার মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার 'জুলাই’য়ের স্মৃতির আদলে তৈরি করা হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, এবার বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ থাকছে মোট ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। মেলায় ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশপথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩৫ টাকা ও ভুলতা-গাউছিয়া থেকে ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে রয়েছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় রয়েছে শিশু পার্কও। ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য থাকছে ইসলামি ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ও সোনালী ব্যাংকের একাধিক বুথ। মেলার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ২৩৪টি সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি রয়েছে ৫ টি ওয়াচ টাওয়ার।
মেলার দায়িত্বরত সচিব বিবেক সরকার বলেন, সবে তো শুরু হল। আস্তে আস্তে লোক সমাগম বৃদ্ধি পাবে, বেচাকিনিও বাড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে গেলে মেলায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে আশা করছি। মেলা মাসব্যাপী সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে রাত ১০ টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের (১২ বছরের নিচে) ক্ষেত্রে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


কেএফসি এখন রাজশাহী ও কুমিল্লায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাংলাদেশে গ্লোবাল ব্র্যান্ড কেএফসির একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেড’ ২০০৬ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এবার কেএফসির ৪৩ ও ৪৪তম আউটলেট চালু হলো রাজশাহীর আলুপট্টি মোড় এবং কুমিল্লার কান্দিরপাড়, নজরুল এভিনিউতে।

কেএফসি স্বপ্নের পাঠশালার পথশিশুদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আরও স্মরণীয় ও আনন্দময় হয়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে শিশুদের জন্য পরিবেশিত হয় সুস্বাদু ও মজাদার কেএফসির খাবার।

কাস্টমারেরা উভয় স্টোরে ডাইন- ইন, টেক এওয়ে, কল ফর ডেলিভারি, kfcbd.com ও KFC APP অর্ডারের মাধ্যমে কেএফসির ফিঙ্গার লিকিং গুড ফুড উপভোগ করতে পারবেন।

ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেএফসি ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লাইসেন্সের অধীনে পরিচালিত।


হোটেল-রেস্তোরাঁ-পোশাকসহ ৪৩ পণ্য-সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কম ভ্যাটের অন্তত ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। মূল্যস্ফীতির এ সময়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ ভোক্তার ওপর নতুন করে ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে পারে।

এনবিআর জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পোশাকের ওপর ভ্যাটের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। বর্তমানে সাধারণ মানের এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) রেস্তোরাঁয় খাওয়ার জন্য ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া নন-এসি হোটেলের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর স্থানীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর বর্তমানে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটিও দ্বিগুণ হতে পারে।

শুধু ব্র্যান্ডেড নয়, সাধারণ মানের যেকোনো পোশাক কিনলেই ক্রেতাদের এ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতে পারে। মেডিসিন ব্যবসায়ও ভ্যাট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট কার্যকর আছে, সেটি ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, সুপারি ও আরও ৭টি পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসতে পারে এনবিআর-এর কাছ থেকে।

এর বাইরে বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে এক্সাইজ ডিউটি এবং তামাক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যালু বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে রাজস্ব বোর্ডের। এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন লক্ষ্য পূরণে বছরের মাঝামাঝি এসে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে আগামী শনিবার (৪ জানুয়ারি) অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা।

আগামী অর্থবছর থেকেই প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপর একক ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে পাশ করা একটি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেও তা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এনবিআর-এর ভ্যাট নীতির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) টিবিএসকে বলেন, ‘চলতি মাস থেকেই বড় আমরা ১৫ শতাংশ ইউনিফায়েড রেটের পরিকল্পনা করছি।’


২০২৫ সালে বৈশ্বিক পণ্যবাজার অস্থিতিশীল হতে পারে: রয়টার্স

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৪:২৯
বাণিজ্য ডেস্ক

২০২৫ সালে বৈশ্বিক পণ্যবাজার অস্থিতিশীল থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নীতি বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক পণ্যবাজারের গতি ব্যাহত হতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন, ক্ষমতায় বসার পর চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। এসব কারণে ২০২৫ সালে অস্থিতিশীল থাকতে পারে বৈশ্বিক পণ্যবাজার।

গত সোমবার এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যপ্রবাহ ব্যাহত করতে পারেন। তবে শুল্ক আরোপ করা হলে সাধারণত বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ও কোম্পানিগুলো পণ্য বেচাকেনায় যথেষ্ট ছাড় দেয়। এ সময় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নেতৃত্ব বজায় রাখে যুক্তরাষ্ট্র; এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়াসহ আর্থিক নীতি প্রণয়ন সহজ হয়।

এদিকে চীন সরকার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। নতুন বছরেও বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এসব প্রণোদনা কার্যকর হলে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যবাজারে তার প্রভাব পড়তে পারে। তা সত্ত্বেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে; কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেকটি অঙ্গীকার হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানা। সেটা হলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকতে পারে। লাভবান হবে তামার মতো ধাতব পণ্যের বাজার, যদিও রাশিয়া থেকে সরবরাহ বাড়লে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার আবার চাপের মুখে পড়তে পারে।

এই ইতিবাচক বাস্তবতার বিপরীতমুখী পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার মতো অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করলে বাণিজ্যপ্রবাহ ব্যাহত হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। ফলে আর্থিক নীতির রাশ টানতে পারে অনেক দেশ। এ কারণে তামা ও লোহার মতো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্যের দাম আরও নিম্নমুখী হয়। এ ছাড়া জ্বালানি তেল ও এলএনজির চাহিদায়ও প্রভাব পড়ে।

বিশ্লেষকরা বলেন, সরকারি প্রণোদনার কারণে চলতি বছরের শেষের দিকে চীনের অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। নির্মাণ খাতের কার্যক্রমও বেড়েছে। ২০২৫ সালে এ ধারা বজায় থাকলে ভোক্তা ব্যয় বাড়তে পারে। এর মধ্যে ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে সফলভাবে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইউরোপ ও গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলে চীনের তামা, আকরিক লোহা ও এলএনজির মতো পণ্যগুলোর চাহিদা বাড়তে পারে। তবে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যবহার বাড়লে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমতে পারে।

এদিকে ওপেক প্লাস (ওপেক ও অন্যান্য সহযোগী দেশ নিয়ে গঠিত) জ্বালানি তেল উৎপাদন কমিয়ে দাম হ্রাসের ধারায় থামাতে পেরেছে। দুই বছর ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৫ ডলার। তবে চাহিদার দুর্বলতা ও অন্যান্য দেশে উত্তোলন বৃদ্ধির কারণে এই সংস্থার ঐক্যে চিড় ধরার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ তেলের উৎপাদন বাড়তে পারে; সেটা হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমতে পারে।

বাজার-বিশ্লেষকরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ মোকাবিলায় চীন জ্বালানি রূপান্তরের দিকে মনোযোগ দিলে ২০২৫ সালে তামা, লিথিয়াম ও রুপার মতো ধাতুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।


banner close