দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবগুলো সূচক বিদায়ী সপ্তাহে বেড়েছে। এর ফলে টাকার অঙ্কে লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সব সূচকের উত্থানেও টাকার অঙ্কে লেনদেন কমেছে।
সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২.৬১ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৬.৫৩ পয়েন্টে।
অন্য সূচকগুলোর মধ্যে- ডিএসই-৩০ সূচক ১৮.৭৭ পয়েন্ট বা ০.৯৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯১৩.০৪ পয়েন্টে।
ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১.২১ পয়েন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৬১.৮৫ পয়েন্টে।
এ ছাড়া ডিএসএমইএক্স সূচক ৩০.১৩ পয়েন্ট বা ২.৮৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪.৩২ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে।
এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টি, কমেছে ১৫০টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭১ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৪৬ বার হাতবদল হয়।
টাকার অঙ্কে যার বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার।
অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ৯.১৫ শতাংশ।
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা বা ০.৫৬ শতাংশ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৭.১৪ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪৯.০৫ পয়েন্টে।
সিএসইর অন্য সূচক সিএসসিএক্স ৬৯.০৫ পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯৭.৩৯ পয়েন্টে।
অন্য দুটি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১১.২৯ পয়েন্ট বা ১.০৩ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৫.০১ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- ১ হাজার ১০৭.৬৫ পয়েন্টে এবং ৯৩৯.৬০ পয়েন্টে।
এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ১১৮.২০ পয়েন্ট বা ১.০০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৭৭.৭১ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে।
এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টি, কমেছে ১১৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির।
সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮ টাকার।
আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৪ টাকার।
অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৫ টাকা বা ৭৪.৩০ শতাংশ।
১৫ খাতে মুনাফায় বিনিয়োগকারীরা
বিদায়ী সপ্তাহে (১৯-২৩ জানুয়ারি’২৫) শেয়ারবাজারের ১৫ খাত থেকে মুনাফা পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা। কারণ আলোচ্য সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক রিটার্নে দর বেড়েছে ১৫ খাতে। এর ফলে এই ১৯ খাতের মুনাফা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। একই সময়ে সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ৫ খাতে। এর ফলে এই ৫ খাতে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এই খাতে বিদায়ী সপ্তাহে দর বেড়েছে ৫.০০ শতাংশ। ৩.৬০ শতাংশ দর বেড়ে সাপ্তাহিক রিটার্ন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। একই সময়ে ৩.৪০ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান সিরামিকস খাত।
সাপ্তাহিক রিটার্নে অন্য ১৪ খাতের মধ্যে- সেবা ও আবাসন খাতে ২.৯০ শতাংশ, কাগজ ও প্রকাশনা খাতে ২.৮০ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২.৮০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ০.৮০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ০.৮০ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ০.৮০ শতাংশ, প্রকৌশল প্রযুক্তি কাতে ০.৬০ শতাংশ, বিবিধ খাতে ০.৪০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ০.৩০ শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে ০.৩০ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ০.২০ শতাংশ এবং পাট খাতে ০.১০ শতাংশ দর বেড়েছে।
ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) পিই রেশিও (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত) কমেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশেও কমেছে ০.০১ পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ৯.৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৩৭ পয়েন্ট।
খাতভিত্তিক হিসাবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে ৬.৬ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১৩.৫ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৩৩৩.২ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৯.২ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ২৭.৭ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৩.৯ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.৭ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৯ পয়েন্ট, আইটি খাতে ২০.৭ পয়েন্ট, পাট খাতে ৪৬.২ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩৩.১ পয়েন্ট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৫.১ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩৬.৬ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১১.৬ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১০.৩ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২৮.৩ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৬৭.৭ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১৩.৪ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৪.৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আগের সপ্তাহে খাতভিত্তিক পিই রেশিও ছিল- ব্যাংক খাতে ৬.৬ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১৩.৫ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৩২৩.৩ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৯.০ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ২৭.৪ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৪.১ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.৫ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৫ পয়েন্ট, আইটি খাতে ১৯.৬ পয়েন্ট, পাট খাতে ৪৬.৪ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩৩ পয়েন্ট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৫.২ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩৫.৫ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১১.৫ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১০.০ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২৮.১ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৬৫.২ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১৩.২ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৪.৩ পয়েন্ট।
ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ৯১ কোটি টাকার বেশি লেনদেন
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির।
কোম্পানিগুলো হলো- এডিএন টেলিকম, এসিআই, কহিনুর কেমিক্যাল, লাভেলো আইস্ক্রিম, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি, এক্সপ্রেস ইন্স্যরেন্স, স্কয়ার ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ওয়ান।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এই ১০ কোম্পানির মোট ৯১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে এডিএন টেলিকমের সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১০৪ টাকা ৪০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসিআই লিমিটেডের ১৮ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৪৯ টাকা ৪০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ কোহিনুর কেমিক্যালের ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৫৬১ টাকা ২০ পয়সা।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য ৭টি কোম্পানির মধ্যে- লাভেলো আইস্ক্রিমের ৭ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৪ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, স্কয়ার ফার্মার ৩ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রিলায়েন্স ওয়ানের ২ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা চলতি বছর রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) ‘কোল ২০২৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কয়লার ব্যবহার কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো এটি সবচেয়ে বড় জ্বালানির উৎস। তাই চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বেড়ে রেকর্ড ৮৮৫ কোটি টনে পৌঁছেছে বলে প্রাথমিকভাবে হিসাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
অন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লা ব্যবহারে ভিন্নধর্মী প্রবণতা দেখা গেছে। এ সময় ভারতে টানা ভারি মৌসুমি বৃষ্টির কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। ফলে এ সময় দেশটিতে পাঁচ দশকের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো কয়লা ব্যবহার কমেছে।
বিশ্বে শীর্ষ কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন। দেশটিতে চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। আইইএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে কয়লার ব্যবহার কিছুটা কমতে পারে। তবে চীনে বিদ্যুতের চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বাড়লে অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে ধীরগতি দেখা দিলে কয়লার চাহিদা পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি হতে পারে।
আইইএ আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা চলতি বছর রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছালেও ২০৩০ সালের মধ্যে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরমাণু ও প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমার পেছনে ভূমিকা রাখবে।
আইইএর ডিরেক্টর অব এনার্জি মার্কেটস অ্যান্ড সিকিউরিটি কেইসুকে সাদামোরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা স্থিতিশীল হয়ে আসছে। চলতি দশকের শেষ পর্যন্ত তা খুব ধীরে ও ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করবে।’
আইইএ আরও জানায়, অন্যান্য দেশে কমলেও ২০৩০ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কয়লার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বাড়বে ভারতে। দেশটিতে চাহিদা গড়ে প্রতি বছর ৩ শতাংশ বাড়তে পারে। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির মোট ব্যবহার পৌঁছতে পারে ২০ কোটি টনে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় চাহিদা ৪ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রধান উত্তোলনকারী দেশগুলোয় কয়লা উত্তোলন কমতে পারে। তবে এ সময় আমদানি নির্ভরতা কমাতে কয়লা উত্তোলন বাড়াতে পারে ভারত সরকার। এর আগে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদে ভারতে কয়লার ব্যবহারও উর্ধ্বমুখী থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার ব্যবহার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকবে। বিদ্যুচ্চালিত যানবাহন (ইভি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও ডাটা সেন্টারের বিস্তারের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের কারণে কয়লার ওপর নির্ভরতা কমতে থাকবে।
পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় গরু-মহিষেই ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে গবাদিপশু পালন এখন আর শুধু পারিবারিক আয়ের বিকল্প নয়; এটি দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু ও মহিষ লালন-পালনের মাধ্যমে উপজেলার হাজারও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই খাতের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ খামারিই কোনো প্রকার ব্যাংক ঋণ ছাড়াই নিজস্ব শ্রম ও সীমিত পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দশমিনা উপজেলায় বর্তমানে ৫ হাজার ৬২০টিরও বেশি গরু ও মহিষ পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রনগোপালদী ও চর বোরহান ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার ৫০০টি, আলীপুরা ইউনিয়নে এক হাজার ৩০০টি, বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়নে এক হাজার ১০০টি, বহরমপুর ইউনিয়নে এক হাজার ১৫০টি, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে এক হাজার ৯০০টি এবং সদর ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৯৫০টি গবাদি পশু রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট গবাদিপশুর প্রায় ৬৫ শতাংশই মহিষ, যা দেশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ব্যতিক্রমী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, চরাঞ্চলের পরিবেশ মহিষ পালনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হওয়ায় এখানে মহিষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। একটি মহিষ সাধারণ গৃহপালিত গরুর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দুধ এবং দেড় গুণ বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম। হিসাব অনুযায়ী, দশমিনা উপজেলায় বিদ্যমান মহিষ থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ এবং প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার কেজি মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার চর হাদি এলাকার খামারি আবদুস সালামের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আগে শুধু ধান চাষ করতাম, তাতে পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতাম। এখন আমার তিনটি গরু ও একটি মহিষ আছে। দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। এতে সংসারের অভাব অনেকটাই কমেছে।’
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দশমিনা উপজেলার মোট জমির প্রায় ২৫ শতাংশ চরাঞ্চল। এসব এলাকার প্রায় ১০ শতাংশ জমি অনাবাদি এবং ফসলি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ এক ফসলি। বছরের অন্তত ছয় মাস এসব জমিতে কোনো ফসল উৎপাদন কার্যক্রম থাকে না। ফলে কৃষিনির্ভর আয় সীমিত হয়ে পড়ে। এই শূন্যস্থান পূরণে চরাঞ্চলে গবাদিপশু পালন কার্যক্রম বিকল্প ভূমিকা রেখেছে কৃষকের জীবনে।
তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। চর সামাদ এলাকার খামারি করিম মোল্লা বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়। এতে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হয়। অনেক সময় দেরি হওয়ায় পশু মারা ও যায়।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরাঞ্চলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে চারণভূমি হিসেবে ঘোষণা করে উন্নত ঘাস চাষ, নিয়মিত টিকাদান, স্বল্প সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে একদিকে যেমন হাজারও পরিবার স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে জেলার দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।
দশমিনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শুভেন্দু সরকার বাসসকে বলেন, ‘দশমিনার চরাঞ্চলে গরু ও মহিষ পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে মহিষের জন্য প্রাকৃতিক বাথান ও বিস্তীর্ণ চরভূমি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহিষ দ্বিচারী প্রাণী হওয়ায় চরাঞ্চলের ঘাস ও জলাভূমি তাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষ করে শীতকালে পানির সংস্পর্শে থাকলে মহিষের প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়। এই অঞ্চলে হাঁস পালনও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।’
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দশমিনার অবহেলিত চরাঞ্চলগুলো অদূর ভবিষ্যতে গবাদিপশু উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে। এতে দারিদ্র্য হ্রাসের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
সূত্র: বাসস
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের দুইটি শূন্যপদে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মো. হানিফ ভুঁইয়া ও মো. সাজেদুল ইসলাম শেয়ারহোল্ডার পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের দুইটি শূন্যপদে নির্বাচন পরিচালনার জন্য পরিচালনা পর্ষদ ১৪ অক্টোবর ১১০১তম বোর্ড সভায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন) মো. আব্দুস সামাদকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে৷ নির্বাচন কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং ড. মো. জহিরুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন দুজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নির্বাচনের জন্য ২৮ অক্টোবর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করেন। নির্বাচনি তফসিল অনুসারে ১৩ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন (অফিস চলাকালীন সময় বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত)।
নির্ধারিত সময়ে রেপিড সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর শেয়ারহোল্ডার প্রতিনিধি মো. হানিফ ভুঁইয়া এবং শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এর শেয়ারহোল্ডার প্রতিনিধি মো. সাজেদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় দুজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান এবং মো. শাকিল রিজভী অবসর নেবেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই)’র তথ্য সেবা আরও সহজ ও কার্যকর করতে ‘ডিএসই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক’ উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তথ্য সেবার মান বাড়াতেই এই বিশেষ হেল্প ডেস্কটি বসানো হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এই ডেস্কের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসাদুর রহমান বলেন, এই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালুর ফলে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পাওয়া এখন অনেক সহজ হবে। বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করবে এই উদ্যোগ। এর ফলে ডিএসইর সেবার মান আরও স্বচ্ছ ও গ্রাহকবান্ধব হবে।
আসাদুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, এই হেল্প ডেস্ক ডিএসইর বাজার অংশগ্রহণকারীদের আস্থা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম এবং প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ এবং খালি ট্রাকের ফেরত সংক্রান্ত তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘আসিকুডা ওয়ার্ল্ড’ সিস্টেমে ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ নামক একটি নতুন সাব-মডিউল চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এনবিআর জানায়, ভারতীয় প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাকের দেশে প্রবেশ এবং খালি ট্রাকের ফেরত সংক্রান্ত তথ্য এখন থেকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে এই সাব-মডিউলটির পাইলট কার্যক্রম গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে এ ধরনের কার্যক্রম ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো।
নতুন মডিউল চালুর ফলে ভারতীয় ট্রাকের আগমন ও বহির্গমনের প্রকৃত তথ্য নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ করা যাবে। পাশাপাশি ট্রাকের অবস্থানকাল নির্ণয়, রিয়েল-টাইম মনিটরিং এবং তাৎক্ষণিক রিপোর্ট প্রণয়ন সহজ হবে। এতে তথ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব হানি রোধেও উল্লেখযোগ্য সহায়তা মিলবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর-এর মতে, এই ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে কাস্টমস কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে, একইসঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, খুব শিগগিরই দেশের সব স্থল বন্দরে ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ সাব-মডিউলের লাইভ অপারেশন শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত একটি কঠিন সময় পার করে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আস্থা ধরে রাখতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ়ভাবে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহসান এইচ মনসুর এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে জনআস্থা ধরে রাখা, সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং খাতটির কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলেও তা অনেকাংশে ধরে রাখা গেছে। এই কঠিন সময়ে আস্থা ধরে রাখতে পারাটাই একটি বড় অর্জন।
ড. মনসুর বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই-এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের ব্যালান্স অব পেমেন্ট অবস্থান শক্তিশালী, বৈদেশিক লেনদেন হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং রিজার্ভ গত এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে ডলার ক্রয় করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য হলো নিজস্ব অর্থনৈতিক সক্ষমতা দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো, ঋণ নিয়ে নয়।
গভর্নর জানান, বছরের শেষ নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে আইএমএফের অর্থ ছাড় হোক বা না হোক, তা বিবেচ্য নয়। তিনি বলেন, ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট স্থিতিশীল রাখতে আইএমএফের অর্থ অপরিহার্য নয়।’
ব্যাংকিং খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে গভর্নর তিনটি স্থায়ী চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন- কিছু ব্যাংকে দুর্বল গভর্ন্যান্স, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি এবং উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ (এনপিএল)। প্রকৃত এনপিএল হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য গোপন না করে বাস্তব চিত্র প্রকাশ করাই সংস্কারের প্রথম ধাপ।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর হস্তক্ষেপ করবে। তবে যেসব ব্যাংক নিজেদের কর্মদক্ষতা ও আমানত সংগ্রহে সক্ষমতা দেখাতে পারছে, সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে। পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, সব আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই নতুন কাঠামোতে ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।
আমানতকারীদের সুরক্ষায় ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে লভ্যাংশ ও বোনাস প্রদানে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে এবং বড় অঙ্কের ঋণ তৃতীয় পক্ষ দিয়ে যাচাই করা হবে। অপব্যবহার প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
ভবিষ্যৎ সংস্কার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংক রেজুলেশন আইন, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স, ইনসলভেন্সি আইন এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) গঠনের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে ড. মনসুর বলেন, কার্যকর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য আইনি সুরক্ষা ও নেতৃত্বের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি। ‘চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই প্রকৃত সংস্কার সম্ভব।’
বন্ড মার্কেট উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, কেবল ব্যাংকনির্ভর অর্থায়ন টেকসই নয়। করপোরেট বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিকল্প পথ তৈরি করতে হবে।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা এখনো পুরোপুরি সংকটমুক্ত নই। তবে সঠিক সংস্কার ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন একটি সন্ধিক্ষণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।’
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের পরিষ্কার করতে হবে যে তারা কী আগের মতো ক্ষমতাশালী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করতে দেবেন, নাকি জনগণের কল্যাণে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি জোগানের জন্য এই খাতকে ব্যবহার করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ জন্য এখন খেলাপি ঋণ ৩৬ শতাংশ পৌঁছে গেছে। এখন যে সংস্কার হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকার কতটা এগিয়ে নেবে-তা গুরুত্বপূর্ণ।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
ছেঁড়া, পোড়া বা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হওয়া টাকার বিনিময় মূল্য ফেরত দেওয়ার বিষয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে এ নীতিমালার আওতায় গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে নষ্ট হওয়া নোটের বিনিময় মূল্য ফেরত পাবেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী কোনো নোটের ৯০ শতাংশের বেশি বিদ্যমান থাকলে ঐ নোটের বিপরীতে গ্রাহক মূল্যমানের পুরো অর্থ ফেরত পাবেন। এই সার্কুলারের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান ২০২৫ বিধিমালা’ কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নোট রিফান্ড রেগুলেশনস ২০১২’ বাতিল করা হলো। আগে ছেঁড়া ও পোড়া নোট বদলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিধান ছিল না। এখন তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। নোটের কত অংশ থাকলে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা এবারের বিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রচলিত নোট ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হওয়া কিংবা পুড়ে যাওয়া নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা অফিসসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বদল করে নেওয়া যায়। প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় ছেঁড়া নোট বদল করা যায়। তবে সব নোটের পুরো মূল্য পাওয়া যায় না। কেবল কোনো ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু নোটের ৯০ শতাংশের বেশি রয়েছে, এমন নোটের বিনিময় মূল্য পুরোটাই পাওয়া যাবে। এসব ক্ষেত্রে নোট তাৎক্ষণিক ভাবে বদল করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য সব ছেঁড়াফাটা নোটও তাৎক্ষণিকভাবে বদল করে দেওয়া হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, কোনো নোট দুই খণ্ডে খণ্ডিত হলে খণ্ড দুইটি সন্দেহাতীত ভাবে একই নোটের অংশ হতে হবে। এক্ষেত্রে, জমা গ্রহণের সময় নোটের বিচ্ছিন্ন খণ্ড দুইটির উলটো পিঠে সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ জোড়া লাগাতে হবে, যাতে আসল নোট হিসেবে শনাক্তকরণের জন্য নোটটির পরীক্ষা করতে অসুবিধা না হয়। দুই খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কিন্তু পরীক্ষার সময় নাড়াচাড়ায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে-এমন জীর্ণ নোটেরও উলটো পিঠে সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ লাগাতে হবে, যাতে নোটটি শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত নোটের বিনিময় মূল্য ব্যাংকগুলো থেকে সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গ্রাহক আবেদন করতে পারবে। গ্রাহকের আবেদন ব্যাংক নিষ্পত্তি করতে না পারলে এটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকেও বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদনপত্র প্রাপ্তির আট সপ্তাহের মধ্যে নোটটির মূল্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে এবং মূল্য প্রদানযোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে মূল্য আকলন করা হবে।
অর্থাৎ সুষ্ঠু নগদ লেনদেন অব্যাহত রাখার স্বার্থে ব্যাংকের বিধি মোতাবেক ছেঁড়া-ফাটা/ত্রুটিপূর্ণ ও ময়লাযুক্ত নোটের বিনিময় মূল্য প্রদান ও দাবিযোগ্য নোটসংক্রান্ত সেবা নিয়মিতভাবে প্রদান করতে হবে। এ ধরনের সেবা প্রদানে কোনো ব্যাংক শাখার অনীহা দেখালে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনতে ৪ থেকে ৫ বছর লাগবে। এর নিচে হয় না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পাচার হওয়া টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এ বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক।
কতগুলো কেইস চিহ্নিত করতে পেরেছেন জানতে চাইলে ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, ‘সংখ্যাটা এ মুহূর্তে মনে নেই। অনেকগুলো মামলা হয়েছে।’
মামলা থেকে অর্থ আসবে কিনা এ ধরনের কোনো আশা পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে হবে। বিদেশ থেকে অর্থ আনতে ৪ থেকে ৫ বছর লাগে। এর নিচে হয় না। আমরা খুবই ভাগ্যবান লন্ডন থেকে যদি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মামলার সমাধান হয়ে যায়, কারণ মামলাটা তারা লড়েনি, ফলে এমনিতেই মামলাটা তারা হেরে গেছে। সেখানে একটা সুযোগ আছে। সে টাকাটা কবে আসবে সেটাতো আমি বলতে পারব না। সেটা ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন মাস লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাকিগুলো আবেদনের ওপর নির্ভর করে। সেটা দীর্ঘ প্রসেস। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ধারণা সাইফুজ্জামান তো মামলা লড়েই নি। তিনি তো এমনিতেই হেরে গেছেন।’
এস আলম এর বিষয়ে কি হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে এস আলম আরবিট্রেশন ফাইল মিউটেশন করেছে। চোরের মায়ের বড় গলা। মামলাটা আমরা লড়ব।’
শীতে সরগরম হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের কৃষিপ্রধান সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা। শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপির ফলন ভালো হলেও বাজারে আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না কৃষকেরা।
জেলার অন্যান্য এলাকার মতো আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর এলাকা থেকেও প্রতিদিন ট্রাকভর্তি ফুলকপি রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকের মাঠ থেকে প্রতি পিস ফুলকপি ১২ থেকে ১৪ টাকা এবং পাতাকপি ১২ টাকায় কেনা হচ্ছে। এসব কপির ওজন সাধারণত ১ থেকে আড়াই কেজি। সে হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সবজির দাম পরিবহন খরচ ও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।
অন্যদিকে জেলার খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। জেলা শহরের গোশালা বাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার হাড়িভাঙ্গা, সদর উপজেলার বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে খুচরা দোকানে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায়। ফলে কৃষকের মাঠ থেকে বাজার পর্যন্ত দামে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
দামের পার্থক্য প্রসঙ্গে জেলা সদরের বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী মজিদুল মিয়া বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহের সময় দাম একরকম থাকলেও আড়তে আসার পর তা পরিবর্তিত হয়।
এদিকে সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বিক্রি করছেন। কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় লোকসান দিয়েই সবজি ছাড়তে হচ্ছে। জেলা সদরের বড়বাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
এদিকে জেলা শহরের গোশালা বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামের ব্যবধান নিয়ে ভোক্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা আফজাল আলী ও নুরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এটি কোনো বড় শহর নয়, এটি একটি সবজি উৎপাদনকারী জেলা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ করা হয়। সাধারণত এই সময়ে ১০ থেকে ২০ টাকায় বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যেত। এখানে যদি এমন দাম হয়, তাহলে বড় শহরগুলোর পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আলু বাদে প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ আবাদ আরও বাড়বে। পাশাপাশি নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মাঠ ও বাজারের দামের ব্যবধান কমাতে সরকারি তদারকি জোরদার, মধ্যস্বত্বভোগী নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে সরাসরি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সংরক্ষণাগার ও পরিবহন সুবিধা বাড়ালে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং ভোক্তারাও উপকৃত হবেন।
সূত্র: বাসস
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্ল্যাটফর্মে রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় প্রথমবারের মতো এই প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ এস কায়সার কবির।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমি, নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেনাটা পিএলসির মধ্যে তালিকাভুক্তিকরণ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় রেনাটা পিএলসির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোস্তফা আলিম আওলাদ, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. জুবায়ের আলম এবং ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. সোহেল হক উপস্থিত ছিলেন।
ওটিসি মার্কেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ‘রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ডিএসইতে একটি নতুন প্রোডাক্টে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি জানান, এই প্রথম প্রেফারেন্স শেয়ারকে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে ডিএসইর অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা দেশের পুঁজিবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেফারেন্স শেয়ার ইক্যুইটি ও ডেট- উভয় সিকিউরিটিজের বৈশিষ্ট্য ধারণ করায় এটি একটি হাইব্রিড ইন্সট্রুমেন্ট। এটিবি প্ল্যাটফর্ম চালুর ফলে এ ধরনের বিকল্প আর্থিক উপকরণ তালিকাভুক্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা পুঁজি উত্তোলনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রেনাটার এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য কোম্পানিকেও প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুতে উৎসাহিত করবে’ বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, ‘প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রক্রিয়া। হঠাৎ বড় পরিসরে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে রেনাটার পরিকল্পিত বিনিয়োগ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যা মোকাবিলায় বিকল্প অর্থায়ন কাঠামো হিসেবে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেফারেন্স শেয়ার ভোটাধিকারবিহীন হওয়ায় মালিকানায় বড় ধরনের ডাইলিউশন ছাড়াই মূলধন সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, প্রেফারেন্স শেয়ারের লভ্যাংশ হার ট্রেজারি বন্ডের রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কার্যকর রিটার্ন প্রায় ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে রেনাটার আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেটে ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে বাজারভিত্তিক অর্থায়ন জোরদার করা সময়ের দাবি। রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু ও তালিকাভুক্তি একটি ইতিবাচক উদাহরণ, যা অন্যান্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে বিকল্প আর্থিক উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।’
তিনি জানান, ভবিষ্যতে রেগুলেশন সংস্কার, প্রক্রিয়াগত সরলীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এ ধরনের তালিকাভুক্তি আরও দ্রুত ও কার্যকর করা হবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফাস্ট-ট্র্যাক লিস্টিং সুবিধা ও বিশেষায়িত বিনিয়োগ কাঠামো রয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করতে ডিএসই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।’
উল্লেখ্য, রেনাটা পিএলসি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নন-কিউমুলেটিভ, নন-পার্টিসিপেটিভ এবং সম্পূর্ণরূপে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরযোগ্য প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করে মোট ৩২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। প্রতিটি প্রেফারেন্স শেয়ারের মূল্য ১ হাজার ৯০০ টাকা। এসব শেয়ারের মেয়াদ ১৯ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ছয় বছর। তৃতীয় বছরের শেষ থেকে প্রতি বছর ধাপে ধাপে প্রেফারেন্স শেয়ারগুলো সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে।
বর্তমানে রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স শেয়ারসহ ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে মোট ২টি ইক্যুইটি ও ৭টি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও আনভীর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীর। পাশাপাশি দ্বিতীয়বারের মতো বাজুসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভাসের কর্ণধার এনামুল হক খান দোলন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে বাজুস কার্যালয়ে সংগঠনের নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়। দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভায় সবার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে সায়েম সোবহান আনভীরকে প্রধান উপদেষ্টা ও সংগঠনের সব সাবেক সভাপতিদের উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভায় বক্তব্য দেন, বাজুসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রনজিত ঘোষ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল, আজাদ আহমেদ, অভি রায় প্রমুখ।
মোবাইলের দাম কমিয়ে আনতে দেশে উৎপাদন ও আমদানির উভয়ক্ষেত্রেই কর ছাড় দিতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, ব্যবসা সহজ করতে আমদানি করের পরিবর্তে ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ আমদানি বন্ধে মোবাইল ফোন আমদানি শুল্ক কমানো হবে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর কোন দেশেই ট্রেড থেকে এত ট্যাক্স নেয় না- আমাদের যত পরিমাণ আমরা ট্যাক্স ইম্পোজ করি। এটা যে ট্যাক্সের জন্য করা হয় তা কিন্তু না। মোস্ট অব দ্য কেইসে আমাদের লোকাল ইন্ডাস্ট্রি (সুরক্ষা দিতে)। যেমন আজকেও সকালবেলা আমাদের মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারাররা দলবেঁধে এসছেন যে, আপনারা যে ট্যাক্স কমাবেন (মোবাইল) ইম্পোর্টের, আমাদের ইনভেস্টমেন্টের কী হবে? কারণ আপনারা জানেন যে, আগামীকাল থেকে এনইআইআর চালু হবে এবং সে কারণে আমরা, সরকার চিন্তাভাবনা করছে যে- এটাকে কীভাবে অ্যাডজাস্ট করা যায়।
আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা এনবিআর থেকে যেটা বুঝি, সেটা হলো যে- উভয় গ্রুপের স্বার্থরক্ষা করে এবং কনজিউমার ইন্টারেস্ট প্রোটেক্ট করার জন্য আমরা চাই মোবাইল ফোন, স্মার্টফোনের দাম বাংলাদেশে কমুক। এবং এটা করতে গেলে আমরা দুই জায়গাতেই ছাড় দিতে রাজি আছি।
বিজয় দিবস থেকে দেশে কার্যকর হচ্ছে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন বা এনইআইআর। তবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে আনা ফোনগুলো আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি করা যাবে; এই সময়ের পরে আর কোন অবৈধ ফোনকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে দেওয়া হবে না। উচ্চ শুল্কের কারণে বৈধপথে খুব কমই মোবাইল আমদানি হয়ে থাকে বলে ভাষ্য ব্যবসায়ীদের।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যেহেতু এখন গ্রে মার্কেটে বেশিরভাগ হাই অ্যান্ড ফোন আসে, ফলে আসলে আমরা সত্যিকার্র অর্থে কোন রেভিনিউ পাই না। এটা যদি আমরা ফরমাল করতে পারি- এনইআইআর ইমপ্লিমেন্টেশনের মাধ্যমে, ইভেন রেভিনিউ যদি আমরা ছেড়েও দেই; তার পরেও কিন্তু ফরমাল চ্যানেলে আসার কারণে আমাদের রেভিনিউ বাড়বে।
স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে অনেক সময় যে সংশ্লিষ্ট পণ্যে উচ্চ আমদানি শুল্ক বসানো হয়, সেই প্রসঙ্গ টেনে আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা লোকাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে প্রোটেক্ট করার জন্যই কিন্তু অনেক সময় বেশি বেশি রেট ধরি। তারপরও আমরা এটা (আমদানি শুল্ক) কমাব।
বর্তমানে স্মার্টফোনে আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ কর রয়েছে। উৎপাদন ও সংযোজনের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট রয়েছে।
‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার’ বা এনইআইআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে সম্প্রতি বিক্ষোভ করছিলেন মোবাইল ব্যবসায়ীরা।
এনইআইআর চালু হলে দেশে অবৈধ পথে আসা ফোনগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাবে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা পুরনো ফোনের ব্যবসাও। এ পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বর বহুপক্ষীয় বৈঠক করে ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যেখানে অবৈধ ফোন তিন মাসের জন্য ছাড় পেয়েছে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই–নভেম্বর) সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। তবে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বাজারে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬.১১ বিলিয়ন ডলার।
একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে আলোচ্য সময়ে পোশাক রপ্তানি ৩ শতাংশ বেড়েছে। জুলাই–নভেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩.২২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩.১৩ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে কানাডায় ৬.৫১ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের মধ্যে স্পেন, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি বাড়লেও একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে। পাশাপাশি ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও ইতালিতেও রপ্তানিতে পতন লক্ষ্য করা গেছে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়াসহ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এসব বাজারে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি কমেছে ৩.৩৯ শতাংশ।
নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে বড় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক ও মেক্সিকোতে রপ্তানি কমেছে বেশি হারে। এর মধ্যে ভারতে রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশের বেশি; পাঁচ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ মিলিয়ন ডলার কম। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২ শতাংশ, মেক্সিকোতে ১৬ শতাংশ, তুরস্কে ২৫ শতাংশ এবং রাশিয়ায় ২৩ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বব্যাপী ভোক্তা ব্যয়ে শ্লথগতি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর বিপণন উদ্যোগের ঘাটতি, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে না পারা এবং নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে সরকারি প্রণোদনা কমে যাওয়াই রপ্তানি হ্রাসের প্রধান কারণ।
বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৬ শতাংশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে যায়, যেখানে উল্লেখযোগ্য গন্তব্য দেশের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর বাইরে থাকা বাজারগুলোকে সাধারণত নন-ট্র্যাডিশনাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের মধ্যেও কিছু দেশে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। ব্রাজিল, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।