ব্যাংকে টাকা নেই বলে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশের শত্রু বলে মনে করেন বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ব্যাংকে টাকা নেই এ রকম কোনো ঘটনা দেশের একটি ব্যাংক কিংবা শাখাতেও ঘটেনি। এটি স্রেফ একটি গুজব। যারা এমন গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশের শত্রু। এদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ গত বুধবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ, ডলার সংকট, সুদের হারসহ দেশের ব্যাংকিং খাতের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদক এ এস এম সাদ।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই- এমন একটি গুজব ছড়িয়েছে। আসলেই কি ব্যাংকে টাকার সংকট হয়েছে?
এ বিষয়ে আমি পরিষ্কার করে জোর দিয়ে দায়িত্ব নিয়ে একটি কথা বলতে চাই, ব্যাংকে টাকা নেই এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো ব্যাংক কিংবা এর শাখায় গ্রাহকরা কিন্তু যেকোনো সময় গিয়ে টাকা উঠাতে পারছেন। কেউ ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এমন কোনো ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেনি। এর অর্থ দাঁড়াল ব্যাংকে তারল্য ঘাটতি নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে ব্যাংকে টাকা নেই। এ রকম বক্তব্য কোনো বিশেষ মহল কোনো বিশেষ কারণে ছড়াচ্ছে। আমি নিজেও বুঝতে পারছি না এ রকম গুজব কেন ছড়াচ্ছে। ফলে এ রকম গুজবের কারণে জনগণের মধ্যে এক রকমের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত আমাদের অডিট করছে। প্রতি মাসে আমাদের রিপোর্ট পাঠাতে হয়। সেই প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করে দিই আমাদের কত তারল্য আছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং হই। অক্টোবর মাসে কারেন্ট টাকার পরিস্থিতি পজিটিভ ছিল। আগামী ফিসক্যালের শেষের দিকে আমরা একটা পজিটিভ অবস্থানে যাব বলে আশা করছি। ডলারের বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজারে ছাড়ার বিপরীতে কিছু টাকা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ব্যাংকে টাকা নেই ফলে টাকা উঠিয়ে নিতে হবে- এটি স্রেফ একটি গুজব। যারা এমন গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশের শত্রু। এদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন ব্যাংকিং খাতে দুর্বৃত্ত বেড়ে গেছে। তারা এই দুর্বৃত্ত বলতে বোঝাচ্ছেন খেলাপিদের। এর সমাধান দেখছেন কীভাবে?
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সবশেষ হিসাবের এই অঙ্ক ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এটা এখন ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১৯৮২ সাল থেকে দেশে বেসরকারি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। তখন খেলাপিরা শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ছিল। ধীরে ধীরে এই খেলাপিদের সংখ্যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে দেখা যায়। যখন অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেটা ফেরত না দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে তখন এই খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে সমাজে। তখনই যদি খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত, তাহলে আজকে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হত না। কোন কোন ক্ষেত্রে খেলাপি হতে পারে- সেটা ব্যবসায় মন্দার কারণে। তবে ইচ্ছা করে খেলাপি হওয়ার বিষয়টি ভিন্ন।
অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদেরই দুর্বৃত্ত বলছেন। তারা ঠিকই বলছেন, এদের কারণেই ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সামগ্রিক ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাচ্ছে না। ব্যাংক খাতে যখন প্রথম এই রকম খেলাপি হওয়া শুরু হয়েছিল, ঠিক তখনই এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। আইনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেও চার-পাঁচ বছর লেগে যায়। আইনের মধ্যেও কিছু ফাঁক থাকে। খেলাপিরা সেই সুযোগ কাজে লাগান। ফলে এই প্রক্রিয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে ১০ থেকে ১২ বছর লেগে যায়।
বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার ছেড়েও দেয়া হয়েছে। দুই-চারজন মারাত্মক বা বড় খেলাপি যারা অনেক দিন ধরে খেলাপি করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে জুডিশিয়াল কমিশনে অনুরোধ করেছিলাম সেই মোতাবেক আসন্ন নতুন ব্যাংকিং অ্যাক্টে প্রতিফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। কোনো একজন ব্যক্তি ব্যবসার জন্য ঋণ নিলেন। এরপর কারখানায় সঠিকভাবে গ্যাস না আসায় সে ব্যক্তির ব্যবসায় ক্ষতি হতে পারে। ফলে তিনি খেলাপিও হতে পারেন। নির্দিষ্ট কারণের জন্য তিনি খেলাপি হয়েছেন। এটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু অনেকে ঋণ নেন টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য, ইচ্ছা করে খেলাপি হন- তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত। আর দেরি না করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার এখন প্রায় ১০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পরামর্শ দিয়েছে, ১ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায়?
খেলাপি ঋণ কমাতে সংস্কৃতি পরিবর্তন করা জরুরি বলে আমি মনে করি। আইএমএফ বলছে, এই খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনতে হবে। এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার একটা পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। হঠাৎ করেই এই হার ১ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব না। একটা নির্দিষ্ট সময়রেখা তৈরি করে ব্যাংকগুলো খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি। ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এবং সরকার এ কাজে আমাদের নিরাপত্তা দেবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে। তাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, আমানতকারীদের একটি টাকাও যেন কেউ মেরে দিতে না পারে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের সব বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে জরুরিভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সরকারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা বিভাগকে তাদের কাজ করতে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। প্রত্যেকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে হবে।
দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির নিচে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন ৯-৬ -এর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উঠিয়ে দেয়া উচিত। আপনি কী মনে করছেন?
২০২০ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়, ব্যাংক ঋণ দিলে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে দিতে পারবে। আর ক্রেডিট কার্ডের জন্য ২০ শতাংশ করা হয়। ওই সময় ক্রেডিট (ঋণ) প্রবৃদ্ধি কম ছিল। ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্যও ছিল। সে সময় সরকার ভেবেছিল এ হারের মধ্যে ঋণের সুদের হার রাখতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। তবে ব্যাংকগুলোতে একটা সময় আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিয়ে ২ থেকে ৩ শতাংশ করা হচ্ছিল। তখন এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যারা অবসরে গেছেন এবং মাস শেষে এই টাকার ওপর নির্ভর করে চলতে হয়, তারা কীভাবে চলবেন। তখনই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্যাংকগুলো যেন আমানতের সুদের হার কমপক্ষে মূল্যস্ফীতির সমান দেয়। আবার বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তখন কমে গিয়েছিল। ফলে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য।
২০২১ সালে ব্যাংকের ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ ক্যাপ দিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে গেছে। আবার মূল্যস্ফীতিও বেশি। ফলে সবাই এখন টিকে থাকার চেষ্টা করছে। ফলে ৯ শতাংশে ঋণ দিয়ে আমরা যে ব্যবসা করছি, সেটা আসলে ক্ষতি হচ্ছে। কারণ সব কিছুর খরচ এত বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ৯ শতাংশে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, তারা যেভাবে চলতে বলবে, আমরা সেভাবেই ব্যবসা করব।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন কোনো নির্দেশনা আপনারা পেয়েছেন কি না?
এ রকম কোনো মৌখিক বা লিখিত কোনো নির্দেশনাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা পাইনি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমরা এ বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ হতে দেখেছি। সেটা শোনা যাচ্ছে ঋণের ক্ষেত্রে, ৯ থেকে ১২ করতে বলা হয়েছে, ধাপে ধাপে। আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকেই আমরা শুনছি বা পড়ছি। আপনাদের রিপোর্টে দেখছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাকি বলেছেন ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১২ শতাংশ করতে পারে। তবে আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো মেসেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনোটাই আমাদের কাছে আসেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে আমাদের ঋণ বিতরণ এবং আমানতের ক্ষেত্রে যে ৯-৬ সীমা বেঁধে দিয়েছিল, সে মোতাবেকই আমরা কাজ করছি।
ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে ডলার না থাকায় তারা পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না। তাদের এ অভিযোগ কি সত্যি? ব্যাংকে কি আসলেই ডলার সংকট আছে?
গার্মেন্টসে ব্যাক টু ব্যাক পেমেন্ট করা হচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, এই মুহূর্তে আমাদের ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের প্রভাব রয়েছে। তবে এটি অন্যান্য দেশেও পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা মোতাবেক ডলার জোগান দিচ্ছে ব্যাংকগুলোতে। ফলে ব্যাংকগুলোর এখন উচিত প্রয়োজন ছাড়া ঋণপত্র না খোলা। কারণ খেয়াল রাখতে হবে ইমপোর্ট লায়বেলিটি শেষ করে সময়মতো ডলার পরিশোধ করতে হবে। এটি শুধু আমার ইমেজ বহন করছে না, বরং সমগ্র দেশের ইমেজ এটার ওপর নির্ভর করে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে আদায় করা ডলার থেকেই সব ব্যাংক চেষ্টা করছে ঋণপত্র খোলার। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো খাদ্য, সার, চিনির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এলসি খুলছে। একসময় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছিল। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি খরচ কমে এসেছে। ছয় মাস আগে যেখানে প্রতি মাসে ৯ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হতো, সেটা এখন পাঁচ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের কারণেই এটা হয়েছে; এটা একটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় ছিল না। আমি মনে করি ডলার সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক কাজটিই করেছে; এখনো করছে। সে কারণেই মাননীয় গভর্নর বলছেন, ‘আগামী জানুয়ারি থেকে আর ডলার সংকট থাকবে না; রিজার্ভ বাড়বে।’ ব্যক্তিগতভাবে আমিও সেটা মনে করি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে আমরা সঠিক পথেই আছি বলে আমি মনে করি। আমরা যেভাবে সাহসের সঙ্গে করোনা মহামারি মোকাবিলা করেছিলাম, যুদ্ধের ধাক্কাও ঠিক সেভাবে মোকাবিলা করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াব বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ৯৭ টাকা দরে সরকারি কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ডলার দিচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে কোনো ডলার দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই কারণেই কি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট বেশি?
এখানে একটি বিষয় কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ওলট-পালট হয়ে গেছে; তছনছ হয়ে গেছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশ কিন্তু সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণেই আমি বলব, আমাদের এখানে ডলারের সংকট নয়, বরং চাপ আছে। এটা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। করোনার সময়ের ডেফার করা এলসিগুলো পেমেন্ট করতে হচ্ছে। ফলে সে কারণে একটা চাপ বেসরকারি ব্যাংকে আছে। আশা করছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে অনেকটাই এই ডলার চাপ কমে আসবে। বাফেদার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল বেসরকারি ব্যাংকে তারা সব রকমের সাহায্য করবে। ফলে আশা করছি ব্যাংকে ডলার সংকট আর হবে না।
আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও কমছে। এতে এ বছর ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমবে কি না?
এই বছরের প্রথম পাঁচ-ছয় মাস (জানুয়ারি-মে) যেহেতু ট্রেজারির এক ধরনের আয় ছিল। ফলে মুনাফা না কমলেও নেট ইন্টারেস্ট ইনকাম কমতে পারে। কারণ ডলার মার্কেটে একধরনের অস্থিরতা ছিল। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচা করে মুনাফা করেছে। ব্যাংকগুলো সেই মুনাফা কীভাবে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সেখান থেকে কিছু মুনাফা আসতে পারবে। তবে সার্বিকভাবে এ বছর ব্যাংকগুলোর নিট আয় বা প্রফিটটা কম হবে বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ব্যাংকিং খাতে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে?
একসময় সবাই আমদানি-রপ্তানি করত ডলারকেন্দ্রিক। তবে এ দুই দেশের যুদ্ধে এখন অনেকে চিন্তা করছে ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনো মুদ্রা দিয়ে লেনদেন করা যায় কি না। বাংলাদেশ ব্যাংকও কিন্তু ইতিমধ্যে বলেছে, আমরা ইচ্ছা করলে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারব। তবে এই প্রভাব বিশ্বব্যাপী। ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা হয়ে গেছে। শিপমেন্ট দেরি হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে আসছে। আবার ইউক্রেন রপ্তানি করছে। তবে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের রপ্তানির যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা কমে আসবে বলে মনে করি। ফলে সার্বিকভাবে বলা যায়, আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধের কারণে ব্যাংক খাতে সৃষ্ট সমস্যা কমে আসবে বলে আমি মনে করি।
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত শুল্কহার নির্ধারিত হবে ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। এ কারণেই আমাদের তাদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। এখনও শুল্কহার চূড়ান্ত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী ৮ জুলাই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা দুর্বল হতে পারে—এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৫ বিলিয়ন ডলার, আর আমাদের মাত্র ৫ বিলিয়ন। এজন্য ভিয়েতনাম বেশি ছাড় পেয়েছে শুল্ক হারে।”
তিনি জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এবং তিন দিন আগে যাওয়ার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে কাজ করছেন। ৮ জুলাইয়ের বৈঠকের পর বিষয়টি বোঝা যাবে, যা বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৯ জুলাই ভোরে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ফলাফল যাই হোক, সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এ পর্যন্ত আমাদের যেসব বৈঠক হয়েছে, সবই ইতিবাচক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন—যা তিন মাস আগে প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ কম।
তবে এটি এখনো ভিয়েতনামের নতুন ২০ শতাংশ শুল্কহারের তুলনায় অনেক বেশি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম তাদের দেশে আমদানি হওয়া সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিগুলোতে ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও নতুন শুল্কহার আরোপ হয়েছে—মিয়ানমার ও লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের জন্য ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২ শতাংশ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার জন্য ২৫ শতাংশ।
চিঠিগুলোতে ট্রাম্প সতর্ক করেন, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের আমদানি শুল্ক বাড়ালে, তার প্রশাসন আরও বেশি হারে শুল্ক আরোপ করবে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।
জুলাই মাসের প্রথম ৬ দিনে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৫.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সোমবার (০৭ জুলাই) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ।
এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের (অর্থবছর ২০২৩-২৪) প্রাপ্ত ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে জুন মাসের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সম্প্রসারণের হার ৫৩.১ রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) আজ যৌথভাবে চলতি বছরের জুন মাসের বাংলাদেশ পিএমআই রিপোর্ট প্রকাশ করে।
পিএমআই হলো একটি অগ্রণী উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য ধারণা দিতে সহায়তা করে। যাতে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকরা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এমসিসিআই ও পিইবির যৌথ প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা এবং সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)-এর কারিগরি সহায়তায় এ পিএমআই তৈরি করা হয়েছে।
জুন মাসে বাংলাদেশের সামগ্রিক পিএমআই সূচক মে মাসের তুলনায় ৫.৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩.১।
সর্বশেষ পিএমআই রিডিং-এ দেখা যায়, নির্মাণ খাত প্রথমবারের মতো সংকোচনের দিকে গেছে এবং কৃষি, উৎপাদন এবং সেবা খাতগুলোও ধীরগতির সম্প্রসারণ হার দেখিয়েছে।
কৃষি খাত টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে রয়েছে, তবে এই সম্প্রসারণের গতি কমেছে। এই খাতে প্রথমবারের মতো চাকরির সূচকে সংকোচন দেখা গেছে, তবে নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং অর্ডার ব্যাকলগের সূচকে দ্রুত সম্প্রসারণ দেখা গেছে। এমসিসিআই’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদন খাত টানা ১০ মাস সম্প্রসারণের মধ্যে থাকলেও সম্প্রসারণের গতি হ্রাস পেয়েছে।
এই খাতে ইনপুট ক্রয়, প্রস্তুত পণ্য, আমদানি এবং চাকরির সূচকে সংকোচন দেখা গেছে। নতুন অর্ডার, নতুন রপ্তানি, কারখানা উৎপাদন, ইনপুট মূল্য এবং সরবরাহকারীদের ডেলিভারির সূচকগুলো ধীর সম্প্রসারণ দেখিয়েছে। তবে অর্ডার ব্যাকলগ সূচক টানা ১০ মাসের সংকোচনের পর আবার সম্প্রসারণে ফিরেছে।
নির্মাণ খাত ৬ মাসের সম্প্রসারণের পর আবার সংকোচনে ফিরে গেছে। নতুন ব্যবসা, নির্মাণ কার্যক্রম, কর্মসংস্থান এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকগুলো সংকোচনের দিক দেখিয়েছে। ইনপুট খরচ সূচকে ধীরগতির সম্প্রসারণ দেখা গেছে।
সেবা খাত টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে আছে, কিন্তু সম্প্রসারণের গতি কমেছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং অর্ডার ব্যাকলগ সূচকগুলোতে সংকোচন দেখা গেছে, তবে কর্মসংস্থান এবং ইনপুট খরচ সূচকগুলোতে দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে।
ভবিষ্যৎ ব্যবসা সূচক-এর ক্ষেত্রে, উৎপাদন এবং নির্মাণ খাতে ধীর সম্প্রসারণ, কিন্তু কৃষি ও সেবা খাতে দ্রুত সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা গেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘সর্বশেষ পিএমআই রিডিং দেখাচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি টানা ৯ মাস ধরে সম্প্রসারণে রয়েছে। তবে জুন মাসে সম্প্রসারণের গতি কিছুটা কমে এসেছে এবং নির্মাণ খাত গত ৮ মাসে প্রথমবারের মতো সংকোচনের মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ ঈদ ছুটি, বর্ষা মৌসুমের সূচনা এবং বাজেটে প্রত্যাশিত অথবা বাস্তবায়িত কর পরিবর্তনগুলো জুন মাসে অর্থনৈতিক গতিশীলতায় প্রভাব ফেলেছে।’
তিন দিন ছুটি শেষে পুঁজিবাজারের প্রথম কার্যদিবসের প্রথম ঘণ্টায় সূচকের বড় উত্থান হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লুচিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২০ পয়েন্ট।
প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এ সময় ২৫৯টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দাম কমেছে ৪৮টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৭০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকার মতোই উত্থানের মধ্য দিয়ে চলছে চট্টগ্রামের লেনদেন, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৭২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১২টি কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে মানুষ সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, ব্যাংকে টাকা রাখবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়িয়ে দিলে মানুষ সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, ব্যাংকে টাকা রাখবে না। ব্যাংকেও তো তারল্যের ব্যাপার আছে। ব্যালেন্স করে দেখতে হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিলে ব্যাংক কোথায় থেকে টাকা পাবে?’
শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্যাংক পুনর্বাসনের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘খারাপ ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ইসলামী ব্যাংকের একটি উদাহরণ। এ ব্যাংকে আস্থা ফিরে আসছে। অন্য ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট করা হয়েছে। এটার প্রথম শর্ত হলো যারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও টাকা মার যাবে না। একটু সময় লাগতে পারে। কারণ টাকা নিয়ে চলে গেছে অনেকে। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম ঘটনা ঘটেনি।’ এনবিআরে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যা যা করা লাগবে আমরা করব। পাঁচ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী আনতে আমরা নিশ্চিত করছি ব্যবসার জন্য ১০-১২ জায়গায় যেতে না হয়। যত ধরনের ছাড়পত্র আছে, সেগুলো আমরা কেন্দ্রীয়করণের চেষ্টা করছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যতগুলো টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে দেশের ইতিহাসে তা আর হয়নি। তিনি আরও বলেন বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন দিক দিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিয়াস বসাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালাউদ্দিন আহমেদ উপদেষ্টা হওয়ার পর এটাই ছিল তার নিজ জন্ম স্থান নবীনগরে প্রথম সফর।
সেখানে ডাকবাংলাতে আসার পর সালাউদ্দিন আহমেদকে ফুলের শুভেচ্ছা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক দিদারুল আলমের সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব চৌধুরী সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন ।
টানা উত্থান-পতনের অস্থিরতায় ধস নেমেছিল দেশের পুঁজিবাজারে। বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে প্রায় টানা দুই মাস পর ঢাকার বাজারে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকেরও উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।
সবশেষ, ৭ মে ঢাকার বাজারে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হলেও এ কয়দিনে লেনদেন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে বহুবার। অবশেষে টানা পাঁচ দিন ৪০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়ে শেষ কার্যদিবসে তা বেড়ে ৫০৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস নেতিবাচক হলেও বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
সূচক বাড়লেও দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ১৫৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৮১ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২১৭ কোম্পানির মধ্যে ৯৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১০৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ২১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ৩৩ কোম্পানির ১৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে রূপালি ব্যাংক এবং ৯ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২০৫ কোম্পানির মধ্যে ১১৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৫৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ২১ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৫ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে মালেক স্পিনিং মিলস এবং ৯ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের উত্থানে লেনদেন শুরু হয়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির।
লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১০ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত ব্লুচিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।
দিনের শুরুতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৮৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে ১৩০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
প্রথম ঘণ্টায় লেনদেনে অংশ নেয়া ৭৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২০ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
দিনের শুরুতে চট্টগ্রামে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তরা। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
বুধবার (০২ জুলাই) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, পোশাক খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্ল্যাস্টিক পণ্যে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, কাচজাত পণ্যে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কারখানাগুলোতে ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি এবং মাসের শেষে এনবিআরের শাটডাউনে দুইদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে জুন মাসে রপ্তানি আয় সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
মে মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।
ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কেজিতে কমল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। চলতি জুলাইয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা। গত মাসে দাম ছিল ১ হাজার ৪০৩ টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ে ১২ কেজিতে দাম কমেছে ৩৯ টাকা।
বুধবার (০২ জুলাই) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ নতুন দাম ঘোষণা করেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে।
সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে বাজারে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ আছে। এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৩ টাকা ৬৪ পয়সা। গত মাসে তা ছিল ১১৬ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ এ মাসে দাম কেজিতে কমেছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দাম প্রতি লিটার ৬২ টাকা ৪৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মাসে তা ছিল ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।