বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করতে পারে।
ম্যানিলাভিত্তিক বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অর্থায়নকারী এ প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ২০২৬ সালের জন্য তাদের কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন (সিপিএম) এ অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এছাড়া যেকোনো জরুরি অবস্থা বা অগ্রাধিকার প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত তহবিল হিসেবে ‘স্ট্যান্ডবাই ফান্ড’ রাখা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসসকে বলেন, এডিবি সিপিএম গত সপ্তাহে তাদের মিশন সম্পন্ন করেছে। তারা ইআরডির সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেছিল। তারা ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে অন্তত প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তহবিল প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।
এডিবির সিপিএম একটি বার্ষিক প্রতিবেদন, যা বাংলাদেশে এক বা একাধিক বছরের জন্য পরিকল্পিত ঋণ এবং অনুদানগুলোর বিস্তারিত উপস্থাপন করে। যেমন- ২০২৩-২৫ সালের ঋণ পাইপলাইন।
ম্যানিলাভিত্তিক ঋণদাতা এ প্রতিষ্ঠান পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। খাতগুলো হলো- জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন, জ্বালানি দক্ষতা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), সামাজিক সুরক্ষা এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার ।
ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, দেশের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে এডিবি চলমান প্রকল্পে আঞ্চলিক সংযোগ এবং করিডোর উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামো, জ্বালানি, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি জানান, এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভবিষ্যতের কার্যক্রমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যবিমোচন, আঞ্চলিক সংযোগ, স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নদী পুনরুদ্ধারের ওপরও জোর দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনা করে এডিবি দেশের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও সহায়তা প্রদান করবে, যাতে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করা যায়।
ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, সিপিএম ছাড়াও সম্প্রতি একটি ত্রিপক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভা (টিপিআরএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে এডিবি-অর্থায়নে চলমান ১৫টি প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
টিপিআরএম-এ জানানো হয়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় সময়সীমা কমেছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আরও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রকল্প প্রস্তুতিতে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। যেসব ক্ষেত্রগুলোতে বেশি সময় লাগে, সেগুলো চিহ্নিত করছি এবং এর ফলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে এবং প্রকল্প পরিচালনা কমিটি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলোকেও আরও সুবিন্যস্ত করা হচ্ছে।
ইআরডি কর্মকর্তা জানান, সরকারের অনুরোধে এডিবি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া করিডোর নিয়ে একটি গবেষণা করছে, যাতে এই করিডোরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন বিবেচনা করে বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা যায়।
তিনি বলেন, ঋণদানকারী সংস্থাটি সরকারকে টাকা মূল্যের বন্ড চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত জানতে চাচ্ছি।
চলতি বছর সরকার এ পর্যন্ত এডিবির সঙ্গে ১.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৮টি প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে এসেছে।
ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে, তাই এডিবি বাংলাদেশের জন্য ট্রানজিশন সহায়তার ওপর জোর দিচ্ছে।
এডিবির তহবিল আঞ্চলিক সংযোগ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে সুবিধা দেবে।
২০২৬ সালের ১০টি প্রকল্পের প্রস্তাবিত তহবিল পরিকল্পনা অনুসারে, দক্ষিণ এশীয় উপআঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেকের) উদ্যোগের আওতায় চলমান ঢাকা-সিলেট ৪-লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য এডিবি ৩০ কোটি ডলার, নারায়ণগঞ্জ সবুজ ও স্থিতিশীল নগর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১১৫.৮ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এডিবির এক কর্মকর্তা সর্বশেষ টিপিআরএমকে জানান, বাংলাদেশের জন্য ২০২৬ সালের প্রস্তাবিত পোর্টফোলিও একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা হিসেবে রাখা হয়েছে। কারণ বর্তমানে দেশে পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনার মতো কোনো মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই। যেমন পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা।
এডিবি সাধারণত তার সিপিএসের আওতায় বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। বর্তমান সিপিএস (২০২১-২৫) চলতি বছর শেষ হতে চলেছে। পরবর্তী সিপিএস প্রণয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তী সিপিএসে অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য তারা এডিবির সাথে আলোচনা করবেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে আগামী বছরগুলোতে বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
ইআরডির তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার এডিবি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২.৫২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশে এডিবির বর্তমান পোর্টফোলিও প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ৫১টি চলমান প্রকল্প রয়েছে।
১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, সুশাসন ইত্যাদি খাতে সহায়তা প্রদান করেছে যা। এতে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বাসস
সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা করছে সরকার। কিন্তু আসন্ন বোরো মৌসুমে এ নীতিমালার বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্ত ডিলারদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে দেশে সারের সংকট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ নীতিমালার বাস্তবায়ন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ)।
একইসঙ্গে সার ডিলারদের কমিশন বাড়িয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সার ডিলার ও আমদানিকারকদের এই সংগঠন।
বুধবার ধানমণ্ডির সীমা ব্লোসম টাওয়ারের একটি কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে সারাদেশের ডিলারদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আহমেদ।
কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারের ডিলার নিয়োগের নতুন নীতিমালা করে ইউনিয়ন ভিত্তিক নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে, যা এই সময়ের জন্য বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী একজন ডিলারকে একটি গুদাম ও একটি বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী একজন ডিলারকে ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র এবং একটি গুদাম পরিচালনা করতে হবে। এতে করে ডিলারদের পরিচালনা ব্যয় তিন গুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু কমিশন আগের মতো প্রতি কেজিতে ২ টাকা থাকবে। এতে করে সার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, এখন হুট করে এ নীতিমালা হলে সারের সরকারি দামে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পরিবহন খরচ এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কোনোভাবেই ডিলারশিপ ব্যবসাটি আর কার্যকর থাকবে না। আর এখন নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময় নয়। কারণ, বর্তমানে মিনি পিকসিজন এবং সামনে বোরোর ভরা মৌসুম আসন্ন। এই মৌসুমে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গেলে মাঠে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ডিলারশীপ প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি উপজেলায় এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে জারিকৃত ডিলার নিয়োগ ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নের ডিলাররা সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ করে আসছে। সারাদেশে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৮০০ জন ডিলার এবং প্রায় ৪৫ হাজার খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নাম ও লোগো ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ভুয়া প্রলোভন দেখাচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত মঙ্গলবার (এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সতর্কতা জারি করে)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ও ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’-এর নাম ও লোগো ব্যবহার করে https://dbbloan.com, https://bblloan.com ও https://www.bdloan71.com নামের কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চালানো হচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আইএমএফ–এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এই সব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ নানা সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন বা আইনি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া বা দেওয়ার উদ্দেশে অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয়।
পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪-এর ১৫(২) ধারা অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতারণার জন্য কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সাধারণ জনগণকে এ ধরনের ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান বা আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। এবার ভরিতে ৬ হাজার ৯০৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যা দেশের ইতিহাসে মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম।
বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫ টাকা ও ৯৪ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকা।
এদিকে, বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এদিকে, বুধবার বিশ্ববাজারে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছেন। ফলে এর দাম এই পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনিশ্চিত সময়ে ঐতিহ্যগতভাবে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণ বুধবার আউন্স প্রতি ৪,০০৬.৬৮ ডলারে পৌঁছায়। যদিও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ডলার অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে। রূপার দামও নিজস্ব রেকর্ডের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে। কারণ, এরফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য-বিশেষ করে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত-প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, যা ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ব্যাংকের বিশ্লেষক টেলর নাগেন্ট লিখেছেন, ‘স্বর্ণের দামের দ্রুত উত্থানকে সমর্থন করছে এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়, বিশেষ করে চীনের শক্তিশালী চাহিদা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মুদ্রাস্ফীতি অনিশ্চয়তা স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।’
অন্যদিকে, স্বর্ণবাজারে ব্যস্ততার মধ্যেও এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলো তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যদিও এআই-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অনেক সূচক ও কোম্পানিকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সরকার দেশের কর ব্যবস্থাকে আরো স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যবসাবান্ধব করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, রাজস্ব প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও দক্ষতা আনার লক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশন এবং কর আইন সংস্কার শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিট দ্যা বিজনেস শীর্ষক অংশীজন সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আয়কর আইন ২০২৩-এর ইংরেজি সংস্করণ মুদ্রণের জন্য সরকারি প্রেসে পাঠানো হয়েছে, কাস্টমস আইন প্রযুক্তিগত পর্যালোচনায় রয়েছে এবং ভ্যাট আইনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। ‘খুব শিগগিরই তিনটি প্রধান কর আইন- আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট- ইংরেজিতে অফিসিয়ালভাবে প্রকাশিত হবে,’ তিনি বলেন।
রহমান বলেন, কর ফেরত প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘গত বছর আমরা করদাতাদের নগদ ফেরত দিতে পারিনি, এবার তা বাস্তবায়নের পথে আছি,’ তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছর থেকে করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন সম্পূর্ণ অনলাইনে জমা দিতে হবে, যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। ‘তথ্য বিকৃতি বা পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না- এতে দেশে একটি স্বচ্ছ কর সংস্কৃতি গড়ে উঠবে,’ এনবিআর চেয়ারম্যান মন্তব্য করেন।
রহমান জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় ২০ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
এনবিআর শিগগিরই ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (NSW) সিস্টেমে দ্বৈত কর চুক্তি (DTA) সম্পর্কিত সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল করবে বলে তিনি জানান। ‘এখন পর্যন্ত সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে ৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও পারমিট ইস্যু হয়েছে, যার ৮০ শতাংশ জমার এক ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয়,’ তিনি যোগ করেন।
অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করে রহমান বলেন, ‘অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি করদাতাদের হয়রানির বিরুদ্ধেও শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ন্যায্য শুল্ক মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই লেনদেনের প্রকৃত মূল্যের ভিত্তিতে হতে হবে। স্ফীত লক্ষ্যমাত্রা বা অতিরিক্ত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।’
তিনি উপসংহারে বলেন, ‘একটি আধুনিক, ন্যায্য ও প্রযুক্তিনির্ভর কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সরকারের আস্থা, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ও করদাতাদের সন্তুষ্টি একসঙ্গে নিশ্চিত করতে চাই।’
আকাশযানে ব্যবহৃত জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বাংলাদেশি ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ৯৬ দশমিক ৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ দশমিক ২৯ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশি ও বিদেশি ক্রেতার থেকে প্রতি লিটার শূন্য দশমিক ৬৩৩৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৬৫৪৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া কিছুটা বেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নতুন এই দর বুধবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আগে বুধবার নতুন এই দাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। দাম বাড়ানোর আগে বিইআরসির কার্যালয়ে একটি গণশুনানি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, বিপিসি প্রতিব ছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল আমদানি করে থাকে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনডেনসেট পরিশোধনের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে জেট ফুয়েল উৎপাদন করে বিপিসিকে সরবরাহ করেন।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। মোট ৩৯৯টি কোম্পানির ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৪টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট হাতবদল হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১১ কোটি ৮৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৫০ টাকা।
ডিএসইতে মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার ১,২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯১৩ টাকা। যা গত মঙ্গলবারের চেয়ে এক হাজার ৯৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩২ হাজার ৩০৫ টাকা কম। গত মঙ্গলবার বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২২ হাজার ৮২ কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ২১৮ টাকা।
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৯.১৪ পয়েন্ট কমে ৫,৩৩৭.৮৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ডিএস-৩০ সূচক ১৩.৪২ পয়েন্ট কমে ২,০৫১.৫৪ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ১২.৩৭ পয়েন্ট কমে ১,১৪৯.১৮ পয়েন্টে নেমে আসে।
লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ২২১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের পরিমাণে শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো- সিভিও পেট্রোলিয়াম, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালি পেপার, কে অ্যান্ড কিউ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স এবং সিম টেক্স।
দরবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, গ্রীণ ডেল্টা, সিম টেক্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সিভিও পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইন্ট্র্যাকো রি-ফুয়েলিং এবং তাক্কাফুল ইন্স্যুরেন্স।
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক, এসআইবিএল, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এনবিএল, পিপলস লিজিং, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ফিন্যান্স, কে অ্যান্ড কিউ এবং প্রিমিয়ার লিজিং।
রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল এক্সপো-২০২৫’ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের সর্বশেষ উদ্ভাবনগুলো প্রদর্শনের লক্ষ্যে ইকো এক্সপো এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই প্রদর্শনীটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্প স্থিতিশীল ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
এই এক্সপোর মাধ্যমে শিল্প বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ তৈরি হবে।
এক্সপোতে চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারকরা তাদের উদ্ভাবনী পণ্য প্রদর্শন করবেন। এতে অত্যাধুনিক ফাইবার, সুতা, টেকসই ফেব্রিক, ট্রিমস, অ্যাকসেসরিজ, ডাইস্টাফ এবং পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল ও পোশাকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদর্শিত হবে।
২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ধাক্কা কাটিয়ে বছরের শেষার্ধে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক গতি এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রকাশনা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট–এর সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৪.০ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এর অংশ। প্রতিবছর দুবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সম্ভাবনা এবং দেশগুলোর নীতিগত চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নীতির কারণে বৈদেশিক চাপ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি কমেছে। এছাড়া, রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
কঠোর মুদ্রানীতি, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের কম আমদানি কর এবং ভালো ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কম রাজস্ব আদায়, বেশি ভর্তুকি এবং ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বাজেট ঘাটতি সম্প্রসারিত হয়েছে।
তবে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত সত্ত্বেও দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরেছে প্রতিবেদনটি।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোট শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যেখানে নারীরা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা ৩০ লাখ অতিরিক্ত কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখ নারী।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, ‘অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এবং আরও ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণের পরিকল্পনা করা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা।’
গত দুই দশকে শিল্পখাতের চাকরি ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি আঞ্চলিকভাবে সমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে। এতে দেশব্যাপী সার্বজনীন চাকরি সৃষ্টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একই দিনে সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনের সহ-প্রকাশনা হিসেবে ‘চাকরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় দেশগুলোকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সর্বাধিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য বাণিজ্য বাধা কমানোর মাধ্যমে দেশগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখনো বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি উন্মুক্ত নয়। অনেক খাতে উচ্চ শুল্ক থাকায় সেগুলোতে চাকরি কমছে। অন্যদিকে, কম শুল্কযুক্ত খাত, যেমন: সেবা খাত, গত দশকে নতুন চাকরির বড় অংশ তৈরি করেছে।
এছাড়া, উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমশক্তির বড় অংশ নিম্নদক্ষ, কৃষিভিত্তিক ও শ্রমনির্ভর খাতে নিয়োজিত; তবে এআই মানবশ্রমের পরিপূরক হিসেবে নতুন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্গ বলেন, ‘বাণিজ্য উন্মুক্ততা ও এআই গ্রহণের গতি বাড়ানো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য রূপান্তরমূলক হতে পারে। কর্মীদের প্রতিষ্ঠান, খাত ও অঞ্চলভিত্তিক স্থানান্তর সহজ করতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি—যা উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ প্রবাহ বাড়াবে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ত্বরান্বিত করবে।’
স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পাদুকা শিল্প খাতের সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক প্রচারণাবিষয়ক সেমিনার এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ভৈরব পৌরসভা। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মাঠে এ প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের অংশ হিসেবে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে ভৈরব ও আশপাশের আটটি পৌরসভার (কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর, নবীনগর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ) ৭০ জন পৌর কর্মকর্তা এবং ব্যাবসায়ীরা অংশ নেন।
এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প- প্রবৃদ্ধি, যা অর্থায়ন করছে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার, বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের রিজিওনাল এডভাইজর ড্যানিয়েল ভ্যালেঙ্গি, এবং সুইসকন্ট্যাক্ট প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের টিম লিডার পারভেজ মোহাম্মদ আশিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ ৩০০-এরও বেশি ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৭১৩ টিইইউস (২০ ফুট দীর্ঘ) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ১৮৫ টিইইউস বেশি। প্রবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৬ টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ হাজার ৩১টি।
বিগত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
অপরদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড (সিডিডিএল) তিন মাসে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৯ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ হাজার ৭৫৪ টিইইউস বেশি। এই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ম তিন মাসে এনসিটিতে মোট জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৭৮টি। বিগত অর্থবছরের চেয়ে ২৬টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এনসিটিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ম তিন মাসে কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ এবং প্রবৃদ্ধি এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে ২০২৫-২৬ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৬২৫ টিইইউস বেশি বা প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
একইভাবে বিগত নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়েও সাফল্য রয়েছে। এ সময় মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার ২৫৯ টন এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ১৬১টি। কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭০ এবং ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ইত্যাদি বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করেছে। পাশাপাশি পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসে কলম বিরতি এবং শাটডাউনের মতো ঘটনায় বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তারপরও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের একান্ত সহযোগিতায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে তেমন প্রভাব ফেলেনি, বরং কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বা অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে কাজ করে। জাতীয় রাজস্বের সিংহভাগ জোগান হয় এ বন্দর থেকেই। বন্দরের আধুনিকায়ন, দক্ষতার সাথে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জাহাজের গড় অবস্থানকাল হ্রাস এবং জেটি ও ইয়ার্ড সুবিধাদি সম্প্রসারণসহ নিরাপদ ও দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং জাতীয় আমদানি-রপ্তানিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করাই হলো বন্দরের লক্ষ্য। সূত্র: বাসস
সৌদি আরবের অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিপূরক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মঙ্গলবার রাজধানীর এক পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই)।
ড. আহসান এইচ. মনসুর আজ সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)-কে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যে, পিআইএফ দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এখনো তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেনি। আমার বিনীত প্রস্তাব হলো- সৌদি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাংলাদেশেও আসা উচিত।
আহসান এইচ. মনসুর উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ দুটির অর্থনীতি শ্রম, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি স্থিতিস্থাপক এবং গতিশীল অর্থনীতির দেশ। যা বহু বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিন দশক ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে।
জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের জ্বালানি ও মূলধনের প্রয়োজন। অন্যদিকে সৌদি আরবের উভয়ই বিপুল পরিমাণে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করতে পারি। এর জন্য সৌদি আরব বড় ধরনের বাজার হতে পারে।
তিনি সৌদি আরব থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের রেমিট্যান্স প্রেরণকে আরো সহজ ও সাশ্রয়ী করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ড. মনসুর আশা প্রকাশ করে বলেন, নবগঠিত এসএবিসিসিআই বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) এবং বিনিয়োগকারী-থেকে-বিনিয়োগকারী (ইনভেস্টর টু ইনভেস্টর) সংযোগ জোরদারের একটি সেতু হিসেবে কাজ করবে।
মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দেশের অর্থনীতি স্বস্তিতে রয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। সেই জন্য আমরা মোটামুটি একটু কনফিডেন্ট।
মূল্যস্ফীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ- কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভিত্তিই (মুদ্রাস্ফীতি) তো খারাপ ছিল। এটাকে নামিয়ে আনা খুব ডিফিকাল্ট ছিল, তবুও আমরা নামিয়ে এনেছি। এটা ১১-১৪ শতাংশে ছিল, তারপরে নামিয়ে ৮ শতাংশে এনেছি। ওটা যদি ৭ শতাংশে থাকত, ওখানে যদি ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারতাম... সবাই মহানন্দ হতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখনো অনবরত ফুড ও নন-ফুড মূল্যস্ফীতি কমাতে চাচ্ছি। নন-ফুডটা একটু ডিফিকাল্ট। নন-ফুড বাস ভাড়া... ট্রান্সপোর্ট, এনার্জির সঙ্গে রিলেটেড। এছাড়া অন্যান্য জিনিস ও ইলেকট্রিসিটির বিষয়ও আছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি তাত্ত্বিক দিকে এখন যাব না। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, দারিদ্র্য আছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো বলতে হলে অনেক বক্তব্য দিতে হবে। আমি তো জানি, কীভাবে ওরা দারিদ্র্য পরিমাপ করে, বেজ আছে, ক্লায়েন্ট আছে...।
তিনি বলেন, আপনি পাঁচ হাজার লোককে টেলিফোন করে ইন্টারভিউ নিয়ে বললেন যে, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে- এগুলো তো আমি জানি। আমাকে একজন বলেছে যে, স্যার আপনি একটা পেপার লেখেন, আমি বলে দিলে একটা ফার্ম ২০ হাজার রিপ্লাই দিয়ে দেবে আপনাকে কালকের মধ্যে। এগুলো রিলাবিলিটির ব্যাপার।
প্রসঙ্গক্রমে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অমর্ত্য সেন একবার বলেছিলেন যে, খুব কঠিন দারিদ্র্য আমার মেজার করতে হবে না। দারিদ্র্য লোক দেখলেই চিনতে পারবেন, তার চেহারা, তার ভাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুল্ক অলরেডি ইফেক্টিভ। যে সিলিং দিয়েছে, সেটি তেমন ইফেক্ট করে না। অলরেডি ৪০০ কোটি ডলার আমরা সার্বিকভাবে শো দিয়ে দিয়েছি।
এবার নির্বাচনের জন্য ৪২০ কোটি টাকা দিয়ে বডি ক্যামেরা কেনা হচ্ছে, এটাকে অপচয় বলা যায় কি না? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা পরে বোঝা যাবে।
সরকার ২২০ কোটি ডলার খরচ করে চীন থেকে ২০টা ফাইটার জাহাজ কিনছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।
কিন্তু বিষয়টা তো আপনার জানার কথা। সাংবাদিকদের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, জানলেই কী সবকিছু বলে দিতে হবে?
কিন্তু আমাদের কেন ফাইটার জাহাজের দরকার হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওটা ওদের ব্যাপার। ওরা অ্যাসেস করে কী করছে, আমরা ওর ভেতরে নেই। আমার দায়িত্ব অর্থ সংস্থানের।
এ বিষয়ে কী অনুমতি দিচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন আমি এটার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আসন্ন বৈঠকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের কী প্ল্যান আছে, এবার খুব ওপেনলি অনেক কিছু আলোচনা হবে না। নতুন সরকার আসার পর তারা মেজর ডিসিশন নেবে, এটা হলো আমাদের অবস্থান। মানে মেজর ইস্যুগুলো পরবর্তী সরকার করবে। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আইএমএফের পাইপলাইনে আরও কিছু...। আর বাকি এডিবি, এআইডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এগুলো আছে। মোটামুটি অনগোইং যেগুলোতে কমিটমেন্ট আছে, দুইটি অ্যাগ্রিমেন্ট সই হবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে। আর বাকিগুলো আমরা এবার একটু অ্যাজ ইউজুয়াল আমাদের ফলোআপ... এবার নেগোশিয়েশনের ব্যাপার না।
এ সময় নতুন পে-স্কেলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে এড়িয়ে যান উপদেষ্টা।