সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

কৃষিতে ভর দিয়ে স্বস্তি ফিরছে অর্থনীতিতে

ড. আতিউর রহমান
আপডেটেড
২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৪৫
প্রকাশিত
প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:২৫

কৃষি খাতের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আগামী দুটি মাস যদি আমরা সাবধানে পা ফেলি, তাহলে এরই মধ্যে আমাদের আইএমএফের টাকা যখন আসতে শুরু করবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির টাকা আসতে শুরু করবে। তখন আমরা একটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে যেতে শুরু করব। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলে, বিভিন্ন দেশে সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশের খুব একটি সমস্যা হবে না।’

গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আশার কথা শুনিয়েছেন আতিউর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি এখনো মজবুত ভিত্তির ওপর আছে; খাদ্যসংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?

আমাদের সার্বিক খাদ্য উৎপাদন, আমাদের যে খাদ্য পরিস্থিতি, আমাদের যে নীতি সমর্থন, আমাদের কৃষিতে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে ও আগামীতে যে আরও বিনিয়োগ হবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খাদ্যসংকট নিয়ে দুর্ভাবনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। এ কথা ঠিক, সবাই ২০২৩ সালকে মন্দার বছর বলছেন। আর সেই সময় খাদ্য পরিস্থিতি খারাপ হবে বলছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। এর বড় কারণ বাংলাদেশের কৃষির জন্য আমরা অনেক দিন ধরে কাজ করছি। শুধু সরকার নয়, আমাদের ব্যক্তি খাত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই কাজ করছে। সবাই এক দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ওপর জোর দিচ্ছে।

যদিও আমরা এক্সপোর্ট নিয়ে অনেক কথা বলি। রেমিট্যান্স নিয়ে অনেক কথা বলি। কিন্তু আমাদের দেশীয় অর্থনীতি সেটি কিন্তু ভোগনির্ভর। সেটি আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদানির্ভর। সেখানেই আমরা অনেক বেশি জোর দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কৃষিতে গুরুত্ব দিতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। মন্দা যদি চলে আসে। তখন হয়তো আমদানি করা খাদ্য আমাদের জন্য আনতে হবে। সেগুলোর তো দাম অনেক বেশি হবে। সেটি আনতে গিয়ে হয়তো চাপ পড়বে। নিজেরা যদি আমরা আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে পারি। আমাদের ভোগটা যদি আমরা সামলাতে পারি। তাহলে আমাদের বেশি ডলার খরচ করতে হবে না। সেই অর্থে কৃষি একটি ফুড সাবস্টিটিউট ইন্ডাস্ট্রি। যদি আমাদের অনেক আমদানি করতে হতো। সেই আমদানির যে মূল্য সেটি কিন্তু বর্তমান রিজার্ভের ওপর আরও চাপ তৈরি করত।

বাংলাদেশ কৃষির উন্নয়নের জন্য যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে সেটি যথার্থ। এ জন্যই বলছি, আমি দুই-তিন দিন আগেই উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করে এলাম। তেঁতুলিয়ায় গিয়েছিলাম, ঠাকুরগাঁও গিয়েছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখলাম যে এবার আমন উৎপাদন বাম্পার হয়েছে। কৃষকের মুখে হাসি। কারণ তারা অনেক বেশি উৎপাদন করতে পেরেছে। এখন আমাদের জন্য যেটি চ্যালেঞ্জ, সেটি হচ্ছে বোরো। আমাদের বোরো উৎপাদন ঠিকমতো করতে হবে। সে জন্য সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করছি, বিদ্যুৎ সব সময় থাকবে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। ডিসেম্বরে আরও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। সব মিলিয়ে মনে হয় কৃষকরা সেচের বিদ্যুৎ পাবেন। আমাদের জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ সেটি হচ্ছে ফার্টিলাইজার। আমরা যেন কৃষককে সময়মতো সার দিতে পারি। আমাদের খেয়ার রাখতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের যে সার বিতরণব্যবস্থা তার ওপর নজর রাখতে হবে। যাতে আমাদের ডিলাররা কৃষকদের সার সময়মতো দিতে পারে। এটি নিয়ে যেন কোনো রকমের সমস্য না তৈরি হয়; সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আরেকটি জিনিস করতে হবে আমন উৎপাদনের পর। আমাদের প্রকিউরমেন্ট শুরু হবে। আমরা যেন কৃষকদের যথার্থ মূল্য দিই।

আমি যদি ৫৫ টাকা করে চাল আমদানি করি। আমার কৃষককে যদি আমি ৫০ টাকাও না দিতে পারি, তাহলে কিন্তু কৃষকের প্রতি সুবিচার হচ্ছে না। এই জায়গাটিতে আমাদের খেয়াল করতে হবে। আমাদের যে মজুত সেটি বাড়িয়ে যেতে হবে। মজুত যদি আমাদের বেশি থাকে, তাহলে আমাদের বিশ্ব সংকট হলেও আমরা সামাল দিতে পারব। গ্রাম নিয়ে আমি চিন্তিত না। খাদ্য নিয়ে যদি কিছু টানাপোড়েন থেকে থাকে সেটি শহরে। শহরের যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তাদের আয়-রোজগার কিছুটা কমেছে। খাদ্য কিনতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। গ্রামে যে রকম সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে, শহরে কিন্তু ততটা নেই। সুতরাং আমাদের শহরের খাদ্য নিয়ে আরও ভাবতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিরও উদ্বেগজনক সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগস্টে এই সূচক ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে সরকারের কী করা উচিত?

সরকারের জন্য খুব অসুবিধা এই কারণে যে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো নেই। আমাদের আছে টিসিবি। টিসিবির গলিতে গলিতে দোকানপাট নেই। সুতরাং মধ্যবিত্ত চাইলেও কিনতে পারে না। এখন ডিজিটাল যুগ। এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটালভাবে সব রকম ব্যবস্থা করা যেত। মধ্যবিত্ত যদি একটি জায়গায় অনলাইনে ঢুকতে পারে। আমার পাঁচ কেজি চাল লাগবে, সেটি সরকার সহনীয় মূল্যে সরবরাহ করবে। এটি কিন্তু করা যায়। মধ্যবিত্ত সহজেই এনআইডি ব্যবহার করবে। একজন একবারের বেশি ব্যবহার করবে না। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকাটি দিয়ে দেবে। যাদের দরকার তাদের এভাবে দেয়া যেতে পারে। এ রকম কিছু ইনোভেটিভ মেজার নেয়া যেতে পারে।

সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় গরিব মানুষ নানাভাবে সহায়তা পাচ্ছে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে কম দামে খাদ্য দেয়া হচ্ছে। এগুলো খুবই ভালো উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। অসহায় গরিব মানুষের খুব উপকার হচ্ছে। কিন্তু এখন আমাদের মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিয়ে ভাবতে হবে। আড়াই বছরের করোনা মহামারি এবং যুদ্ধের কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কারও বেতনই কিন্তু বাড়েনি। বরং অনেকে চাকরি হারিয়েছেন; কম বেতন পাচ্ছেন। এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমি মনে করি, সরকারকে এখন মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এতে যদি সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যায়, সেটি মেনে নিয়েই এই কাজটি করতে হবে।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় অনেক কমেছে। গত মার্চে পণ্য আমদানির জন্য যেখানে সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছিল, সেটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে শিল্প উৎপাদন বা সামগ্রিক অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?

এখনই এতটা অস্বস্তির কথাটা না ভাবাই ভালো। আমরা কৃষিতে যেহেতু ভালো করছি। আমাদের দেখতে হবে আমাদের আমদানি যেন বন্ধ না হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমদানিতে আছে খাদ্য, কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি- এগুলোই মোট আমদানির ৮৫ শতাংশ। আমাদের রপ্তানি বাড়বে না যদি আমদানি না বাড়ে। সুতরাং আমদানিটা কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বাঁচানোর জন্য আমদানি বন্ধ করেছে। সেটির একটি সুফল আমরা পাচ্ছি। যাতে করে ছোট ছোট আমদানি যেমন গরুর জন্য ওষুধ, মুরগির জন্য খাদ্য- এগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ব্যাংকগুলো যেন এসব ছোটখাটো আমদানিতে ডলার জোগান দিতে পারে; এলসি খুলতে পারে- সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জন্য এখন খুবই ক্রিটিক্যাল সময়। এই সময় যাতে আমাদের জরুরি আমদানি বন্ধ না হয়, আমাদের যাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স কিন্তু আবার বাড়ছে। আরও বাড়বে আমরা আশা করি। একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল এক্সচেঞ্জ রেট। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা চেষ্টা করছে। এক্সচেঞ্জ রেট একাধিক হওয়ার কারণে কিছু সংকট দেখা দিয়েছিল, ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যেমন ওয়ার ট্রান্সফার এবং রেমিট্যান্সে জন্য একটি ডলার রেট হয়েছে।

কিন্তু এক্সপোর্ট এবং রেমিট্যান্সের মধ্যে পার্থক্য এখনো রয়ে গেছে। আমাদের ইন্টার ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট এখন খুবই স্যালো। এটির একটি রেটেই থাকা উচিত। সেই রেট দেখে দেশের মানুষ এবং বিদেশি যারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করছেন তারা বুঝতে পারবেন যে টাকা এবং ডলারের রেশিওটি কত। এটি অনেক সময় বোঝা যায় না। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম থাকায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

প্রাইভেট (বেসরকারি খাত) অনেক ফরেন ঋণ যারা নিয়েছেন, তারা একটু চাপের মধ্যে পড়ছেন। সেটির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং যারা এই ঋণগুলো নিয়েছে তাদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া হওয়া উচিত। এগুলোর জন্য সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কি না বা এগুলোর জন্য বিদেশি অন্যান্য ব্যাংক থেকে রিফাইন্যান্স করা যায় কি না- এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।

ছোট ব্যাংকগুলো যারা এক্সপোর্ট বেশি করে না, রেমিট্যান্স বেশি আনে না, তারা যাতে এসেনসিয়াল পণ্য আমদানি করতে ইন্টার ব্যাংক থেকে তাদের যেটি প্রাপ্য এক টাকা বেশি দিয়ে ডলার পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসে ৫০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখতে পারে। এটি কিন্তু ছোট ইম্পোর্টের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাতে কী হবে? হয়তো দেড় বিলিয়ন ডলার বাড়তি ড্র-ডাউন হবে। তাতে কিচ্ছু আসে যায় না, মার্কেট যদি আমাদের সুস্থির থাকে, এর চার গুণ আমাদের ফিরে আসবে। ইম্পোর্ট যদি চালু থাকে আমাদের যেই পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত একটি শক্তিশালী অবস্থানের ওপর আছে। আমার সবার কাছে অনুরোধ থাকবে অযথা গুজব ছড়াবেন না। বরং আমরা সবাই মিলে কিছু শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণ করে এই যে টানাপোড়েন ফরেন এক্সচেঞ্জের, সেটি হয়তো পূরণ করতে পারব। আর আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি যে সেটি তো অনেক শক্তিশালী। গ্রাম ভালো আছে। শহরে কিছু সামাজিক নিরাপত্তা দরকার। সরকার এরই মধ্যে এক কোটি কার্ড করেছে। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে। মধ্যবিত্তের জন্য যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করতে হবে।

এখানে আরেকটি বিষয় আমি বলতে চাই, আমাদের কথাবার্তায় আমরা যাতে খুব সাবধানে কথা বলি। যাতে কোনো রকম গুজব না তৈরি হয়। এ বিষয়গুলোর ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আগামী দুটি মাস যদি আমরা সাবধানে পা ফেলি, তাহলে আমাদের আইএমএফের টাকা যখন আসতে শুরু করবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির টাকা আসতে শুরু করবে। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। একটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির দিকে কিন্তু আমরা যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলে, বিভিন্ন দেশে সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশের খুব একটি সমস্যা হবে না। কেননা আমাদের সরকারি গুদামগুলোতে ২০ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর‌্যায়েও প্রচুর খাদ্য আছে। আমনটা ভালো হয়েছে। বেরোটা যদি আমরা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারি, তাহলে খাদ্য নিয়ে আর আমাদের কোনো চিন্তা থাকবে না। আর পেটে ভাত থাকলে অন্য সব বাধাবিপত্তি মোবাবিলা করা খুব একটা কঠিন হবে না বলে আমি মনে করি।

আপনি বলছিলেন যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে যারা বিপদে পড়েছে। এদের কীভাবে সহায়তা করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি, সেটি হলো জরুরি আমদানি বন্ধ করা যাবে না। নতুন পদ্ধতি আমাদের তৈরি করতে হবে। বাইরে থেকে বেশি ডলার আনার উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। যারা বাইরে থেকে ডলারে ঋণ নিয়েছে। আর এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সংকটে পড়েছে। তাদের কিন্তু সাহায্য করার কথা সরকারকে চিন্তা করতে হবে। যারা সঠিক উদ্যোক্তা। তাদের উতরে নেয়ার জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা এরা যদি বিপদে পড়ে, উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু অর্থনীতিতে আরেক ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে; যারা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বা কাজ করছেন, তারা বেকার হয়ে যাবেন। তাই এ বিষয়টি এখন সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

হুন্ডি তখনই বাড়ে, যখনই কার্ব মার্কেটে ডলার রেটের সঙ্গে অফিশিয়াল রেটের পার্থক্য অনেক বেশি হয়। মার্কেট রেটে আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটটি হওয়া উচিত। এক্সচেঞ্জ রেট আমরা এত দিন ফ্লোটিং ম্যানেজেমেন্ট করতাম। অর্থাৎ মার্কেট রেটের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। কিন্তু রেটের অ্যাভারেজ (গড়) করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এটিকে ছেড়ে দেয়া উচিত। কার্ব মার্কেট ও অফিশিয়াল রেটের পার্থক্য যদি ১ বা ২ টাকার হয়, তাহলে কিন্তু মানুষ অফিশিয়াল চ্যানেলেই টাকা পাঠাবে।

যারা অফিশিয়ালি টাকা পাঠাবে তাদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আসা যায় কি না তা ভাবা দরকার। যেমন- এনআইডি ফিক্স করে তাদের ইনভার্সাল পেনশন স্কিমে যুক্ত করা, তাদের সন্তানদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। এ রকম লং টার্ম ইনসেনটিভ প্যাকেজের সঙ্গে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের যুক্ত করে দিলে দেশের স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে তারা অফিশিয়াল চ্যানেলে টাকা পাঠাবেন।

আরেকটি কাজ করতে হবে, আর সেটি হলো ক্যাম্পেইন করতে হবে। প্রবাসী ভাইবোনদের বলতে হবে, আপনারা যে আন-অফিশিয়াল চ্যানেলে (হুন্ডি) টাকা পাঠাচ্ছেন, এটি দিয়ে কী হয়? এই টাকা দিয়ে কেউ জঙ্গিপনা করে, অস্ত্র কেনে, সন্ত্রাস করে। তার চেয়ে টাকা অফিশিয়াল চ্যানেলে পাঠান, যেটি দিয়ে আমরা মেশিন কিনতে পারব রপ্তানির জন্য, শিশুখাদ্য কিনতে পারব। তখন তারা বুঝবেন, দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বৈধ পথে টাকা পাঠাবেন।

আমরা এই পারে (দেশে) যেমন ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এজেন্ট ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স যেমন আমরা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছি, ওই পারেও অর্থাৎ উৎসেও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকগুলোকে অ্যাপস খুলতে বলতে পারি। ধরুন, ওইখানে একটি ফেইক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস আছে, যেটি তারা বলে, সেটি কিন্তু সত্যি না, ফেইক।

কিন্তু একটি রিয়েল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস যদি করতে পারে এবং তারা যদি একটি অ্যাপস তৈরি করে, যেমন অগ্রণী ব্যাংক করেছে মালয়েশিয়ায়। তাহলে মরুভূমিতে বসেই আমাদের ভাইগুলো টাকা পাঠাবেন, যেটি আমাদের ব্যাংক হয়ে আবার তার বাড়িতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই চলে যাবে। এই রকম একটি ব্যবস্থা আমরা করতেই পারি। আমাদের রেগুলেটর ও তাদের রেগুলেটররা আলাপ করতে পারেন।

আমি যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলাম, তখন আমরা এই ধরনের একটি এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম মালয়েশিয়ায়, একটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও বিকাশের সঙ্গে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট আরও বেশি করা উচিত। তাতে মানুষ কনফিডেন্স পাবে। আনুষ্ঠানিকভাবেই আমরা টাকাগুলো আনতে সক্রিয় আছি।

মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

রেট অব ইন্টারেস্ট (সুদের হার) নিয়ে উভয় দিকের কনসার্নেই সত্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়ালে দেশের জন্য ভালোই হয়, তাতে অনুৎপাদনশীল খাতে খরচটা কম হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে, যেমন উৎপাদনশীল খাতে রেট অব ইন্টারেস্ট কম থাকলে উৎপাদন বাড়ে, বিনিয়োগ বাড়ে। সুতরাং এটি একটি ব্যালান্সিং অ্যাক্ট, এই কাজটি করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হারে যদি ডিপোজিট রেট দিই, তাহলে তো একজন মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, সে তো টাকা দিন দিন হারিয়ে ফেলবে।

ব্যাংক যদি সেই হারের বেশি হারে ডিপোজিট দেয়, কম হারে যদি লোন দেয়, তার ওপরে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে তো ব্যাংকের ব্যবসা হবে না। এই রকম জিনিসগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট কম দেব, সে ক্ষেত্রে তাকে ফিসক্যাল সাপোর্টে দেয়া যেতে পারে। যেমন আমি গভর্নর থাকার সময় কৃষিতে ইন্টারেস্ট রেট কম রেখেছি, খুবই কম হারে পিঁয়াজের জন্য লোন দিয়েছিলাম, সেটি কেমন করে, কারণ আমরা ৬ শতাংশ ভর্তুকি ফিসক্যাল পলিসিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছিলাম।

সুতরাং কোনো কোনো জায়গায় এ রকম ইনোভেটিভ আইডিয়া করাই যেতে পারে। তবে বাকিটা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত, ট্রাস্ট করা উচিত। বাজার যেভাবে আমাদের গাইড করবে, কিছুটা সামাজিক দায়বোধ থাকতে হবে, কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিলেও সার্বিক ক্ষেত্রে বাজারের ধর্মমতে চলতে হবে। অনুৎপাদনশীল খাত যদি খানিকটা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাতে ক্ষতি নেই।

কোরিয়ায় একসময় ২০ শতাংশ হারেও লোন দেয়া হতো। সেখানে প্রবৃদ্ধি কিন্তু কমেনি। সুতরাং আমি মনে করি, টাকাটা ঠিক জায়গামতো যাচ্ছে কি না, আমার রিয়েল ইকোনমি উপকৃত হচ্ছে কি না, এটি যদি হয় এবং সময়মতো মানুষ যাতে টাকা পায় সেটির ব্যবস্থা করতে হবে। ধরা যাক, কম রেটে কৃষিঋণ দেয়া হলো। কৃষক গেলেন ব্যাংকে, টাকা নেয়ার সময় তার কাছ থেকে কিছু টাকা ব্যাংকাররা রেখে দিলেন। কৃষক কিন্তু হিসাব করবেন তার রেট অব ইন্টারেস্ট বা খরচ বেশি হিসাব করবেন। সুতরাং স্বচ্ছতার খাতিরে রেট অব ইন্টারেস্ট নিয়ে বাস্তববাদী ভাবনার সুযোগ রয়েছে।

ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। আসলে বাস্তব অবস্থা কী। সাবেক গভর্নর হিসেবে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখনো পুরোপুরি নিরাপদ। কয়েক দিন আগে যে গুজব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু মানুষ ছড়িয়েছিল, তা কিন্তু নেই। তাহলে তো এখনো থাকত তাই না? এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল সেটি বোঝা যায়। আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেমে টাকা রাখা, বালিশের নিচে টাকা রাখার চেয়েও বেশি নিরাপদ। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। কোনো ব্যাংকের সত্যিই যদি লিকুইডিটি ক্রাইসিস থাকে, তাহলে সে তার রেপো ব্যবহার করতে পারে, সরকারের কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট বা সিকিউরিটি থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ওই ব্যাংকটিকে লং টার্ম লিকুইডিটি সাপোর্ট দিতে পারে। এখন ফরেন এক্সচেঞ্জেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সময় এসেছে সাপোর্ট দেয়ার। দরকার হলে ওডি দেবে, সোয়াপ করবে। নানা রকম ইনস্ট্রুমেন্ট আছে, যাতে মার্কেটটিকে লিকুইড এবং স্বস্তিকর করে দেয়া যায়। এটি ফরেন এক্সচেঞ্জের জন্য ও লোকাল মার্কেটের জন্যও দরকার। আমাদের কাছে সেই ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি কথা বলেছেন, ‘টাকার অভাবটা আসল অভাব না, আসল অভাব ভরসা।’ সুতরাং আমরা ভরসার পরিবেশ করি।

অর্থনীতিতে চাপ সামাল দিতে সরকার ব্যয় সংকোচনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আর কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

সরকার এখন পর্যন্ত যথার্থ পথেই এগোচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিতে তারা যে গুরুত্বটা দিয়েছে, সেটা অত্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক হয়েছে। এখন যেটি করতে হবে। আমাদের দরকার হলে আগামী দুই মাসের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দিয়ে হলেও এই জায়গাটায় স্টেবলাইজড করব। বিশেষ করে এসেনসিয়াল ইমপোর্টে যেন কোনো ব্যাংকই কোনো সমস্যা তৈরি না করে। সে জন্য দরকার হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হটলাইন খুলতে হবে, কোন ব্যাংক কী সমস্যা করছে, তা জানবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সমর্থন দিতে হবে।

পাইপলাইনে যেসব ফরেন এক্সচেঞ্জ আসার কথা সেটি ত্বরান্বিত করতে হবে। আইএমএফ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে নেগোসিয়েশন করেছি, সেগুলোর প্রথম কিস্তি তাড়াতাড়ি চলে আসবে সেই কাজটি করতে হবে। আরেকটি কথা হলো, ফরেন এক্সচেঞ্জ বা রিজার্ভের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সবাই কথা বললে হবে না। কথা বলবেন সেন্ট্রাল ব্যাংক, গভর্নর বা মুখপাত্র এবং তথ্য দিয়ে ক্রেডিবল মেসেজ দেবেন, এটি সম্ভব, তাহলে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।


সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে ব্যাংকে কেউ টাকা রাখবে না

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জামাল হোসেন পান্না, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে মানুষ সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, ব্যাংকে টাকা রাখবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়িয়ে দিলে মানুষ সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, ব্যাংকে টাকা রাখবে না। ব্যাংকেও তো তারল্যের ব্যাপার আছে। ব্যালেন্স করে দেখতে হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিলে ব্যাংক কোথায় থেকে টাকা পাবে?’

শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

ব্যাংক পুনর্বাসনের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘খারাপ ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ইসলামী ব্যাংকের একটি উদাহরণ। এ ব্যাংকে আস্থা ফিরে আসছে। অন্য ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট করা হয়েছে। এটার প্রথম শর্ত হলো যারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও টাকা মার যাবে না। একটু সময় লাগতে পারে। কারণ টাকা নিয়ে চলে গেছে অনেকে। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম ঘটনা ঘটেনি।’ এনবিআরে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যা যা করা লাগবে আমরা করব। পাঁচ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী আনতে আমরা নিশ্চিত করছি ব্যবসার জন্য ১০-১২ জায়গায় যেতে না হয়। যত ধরনের ছাড়পত্র আছে, সেগুলো আমরা কেন্দ্রীয়করণের চেষ্টা করছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যতগুলো টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে দেশের ইতিহাসে তা আর হয়নি। তিনি আরও বলেন বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন দিক দিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিয়াস বসাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালাউদ্দিন আহমেদ উপদেষ্টা হওয়ার পর এটাই ছিল তার নিজ জন্ম স্থান নবীনগরে প্রথম সফর।

সেখানে ডাকবাংলাতে আসার পর সালাউদ্দিন আহমেদকে ফুলের শুভেচ্ছা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক দিদারুল আলমের সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব চৌধুরী সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন ।


দুই মাস পর ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন ছাড়াল ৫০০ কোটি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

টানা উত্থান-পতনের অস্থিরতায় ধস নেমেছিল দেশের পুঁজিবাজারে। বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে প্রায় টানা দুই মাস পর ঢাকার বাজারে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকেরও উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।

সবশেষ, ৭ মে ঢাকার বাজারে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হলেও এ কয়দিনে লেনদেন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে বহুবার। অবশেষে টানা পাঁচ দিন ৪০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়ে শেষ কার্যদিবসে তা বেড়ে ৫০৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট।

বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস নেতিবাচক হলেও বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।

সূচক বাড়লেও দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ১৫৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৮১ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২১৭ কোম্পানির মধ্যে ৯৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১০৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ২১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসই ব্লক মার্কেটে ৩৩ কোম্পানির ১৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। মিডল্যান্ড ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।

৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে রূপালি ব্যাংক এবং ৯ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।

চট্টগ্রামেও উত্থান

ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ৯৯ পয়েন্ট।

লেনদেন হওয়া ২০৫ কোম্পানির মধ্যে ১১৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৫৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

সিএসইতে মোট ২১ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৫ কোটি টাকা।

১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে মালেক স্পিনিং মিলস এবং ৯ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক।


পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টায় সূচকের উত্থান, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের উত্থানে লেনদেন শুরু হয়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির।

লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১০ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত ব্লুচিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।

দিনের শুরুতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৮৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

প্রথম ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে ১৩০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।

প্রথম ঘণ্টায় লেনদেনে অংশ নেয়া ৭৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২০ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

দিনের শুরুতে চট্টগ্রামে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।


২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৮.৫৮ শতাংশ

আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৫ ২৩:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তরা। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

বুধবার (০২ জুলাই) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, পোশাক খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্ল্যাস্টিক পণ্যে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, কাচজাত পণ্যে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

কারখানাগুলোতে ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি এবং মাসের শেষে এনবিআরের শাটডাউনে দুইদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে জুন মাসে রপ্তানি আয় সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

মে মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।


১২ কেজি এলপিজির দাম কমল ৩৯ টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কেজিতে কমল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। চলতি জুলাইয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা। গত মাসে দাম ছিল ১ হাজার ৪০৩ টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ে ১২ কেজিতে দাম কমেছে ৩৯ টাকা।

বুধবার (০২ জুলাই) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ নতুন দাম ঘোষণা করেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে।

সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে বাজারে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ আছে। এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।

বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৩ টাকা ৬৪ পয়সা। গত মাসে তা ছিল ১১৬ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ এ মাসে দাম কেজিতে কমেছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।

সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দাম প্রতি লিটার ৬২ টাকা ৪৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মাসে তা ছিল ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা।

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।


ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে নিউমুরিং টার্মিনাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

বৈঠক শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরই সিদ্ধান্ত নেবে, কারা এটি পরিচালনা করবে। তবে দরপত্র ডাকা হবে না। এটা হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে এবং ছয় মাসের জন্য। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এনসিটি পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ জুলাই।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীকে এই টার্মিনাল পরিচালনার ভার দেওয়া হতে পারে। বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনী আগামী ছয় মাস টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।

এই টার্মিনালে জেটি আছে পাঁচটি। এই পাঁচ জেটিতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, স্থানান্তরসহ নানা কাজ হয় এই টার্মিনালে।

নৌবাহিনীকে পরিচালনার ভার দেওয়ার আগে গত ১৮ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় টার্মিনালটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য মাসে ৭ কোটি করে ৬ মাসের জন্য ৪২ কোটি টাকা খরচের সরকারি অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিল বন্দর। তবে বন্দর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

গত শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বন্দর কর্মকর্তাদের বৈঠকে বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনীর মাধ্যমে টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বন্দর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সেই বৈঠক হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী নভেম্বর মাসে চুক্তি হবে।

বিশ্বব্যাংকের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এই টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। সেই চুক্তির আগপর্যন্ত টার্মিনালের পরিচালনার ভার থাকতে পারে নৌবাহিনীর হাতে।


প্রসাধনীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার চায় ব্যবসায়ীরা

প্রসাধনী সামগ্রীর উপর স্বাভাবিক শুল্কায়ন মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।

মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।

বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’

সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।

এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’

চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।


বিশ্ববাজারে আরও কমেছে তেলের দাম, উৎপাদন বাড়াচ্ছে ওপেক

আপডেটেড ৩০ জুন, ২০২৫ ২২:৩০
বাণিজ্য ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।

গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’

এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।


প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, চলতি অর্থবছরে এলো ৩০ বিলিয়ন ডলার

জুনের প্রথম ২৮ দিনে এলো আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।

মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।

২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।


পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার দুই কোটি যানবাহন, আয় আড়াই হাজার কোটি টাকা

আপডেটেড ২৬ জুন, ২০২৫ ১৯:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।

পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।

সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।

এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।

পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।

স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।

গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।

নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।


পুঁজিবাজার: ঢাকা-চট্টগ্রামে সূচকের বড় উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে সবকটি সূচকের উত্থান হয়েছে, বেড়েছে লেনদেন এবং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৫ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০০ কোম্পানির মধ্যে ২৯৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৪৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২২০ কোম্পানির মধ্যে ১৫৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানির ২৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।

সারাদিনে ডিএসইতে ৪১৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩৭২ কোটি টাকা।

১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস এবং ৫ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড।

এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- লাভেলো আইসক্রিম, স্কয়ার ফার্মা, ব্রাক ব্যাংক, সী পার্ল, বিচ হ্যাচারি, ইন্দো বাংলা ফার্মা, বিএটিবিসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফাইন ফুডস ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।

চট্টগ্রামেও উত্থান

ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট।

লেনদেন হওয়া ২৩৩ কোম্পানির মধ্যে ১২১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২৯ কোটি টাকা।

১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রি এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।


টানা চার দফা বাড়ার পর কমল সোনার দাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দেশের বাজারে ১৪ জুন স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছিল ২ হাজার ১৯২ টাকা। তবে আবার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নতুন করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ ১৪ জুন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল দেশে স্বর্ণের দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বেড়েছিল। তখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। দেশের বাজারে সেটিই ছিল এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।

বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকায় বিক্রি হয় এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা।

দেশের বাজারে গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ২ হাজার ১৯২ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ১০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৮০৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ হাজার ৫২৮ টাকা দাম বেড়েছে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।


গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট কেন ও কিভাবে ব্যবহার করবেন

আপডেটেড ২৫ জুন, ২০২৫ ১৪:২৬
ইউএনবি

সমূহ সম্ভাবনার প্রত্যাশা নিয়ে দেশে চালু হলো গুগল পে। ২৪ জুন মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে প্রযুক্তিগত সেবাটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর। ভিসা ও মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় প্রথমবারের মত গুগলের সেবাটি পরিচালনা করবে সিটি ব্যাংক পিএলসি। চলুন, গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাটির সুবিধাব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গুগল পে কি

বিশ্ব নন্দিত টেক জায়ান্ট গুগলের স্পর্শবিহীন লেনদেন ব্যবস্থার নাম গুগল পে। লেনদেনে ব্যবহারযোগ্য কার্ডের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণের জন্য গুগলের রয়েছে একটি ডিজিটাল মানিব্যাগ। এটি গুগল ওয়ালেট নামে পরিচিত। এই ওয়ালেটে কার্ড সংযুক্ত করে গুগল পে-এর মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ে লেনদেন করা যায়। এর জন্য সাথে প্লাস্টিক কার্ড বহনের প্রয়োজন পড়ে না; একটি স্মার্টফোন আর নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। এভাবে ঘরে বসে কিংবা বাইরে চলাচলে সর্বাবস্থানে যে কোনও সময় সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব।

গুগল পে’র সুবিধাসমূহ

- গুগলের এই পেমেন্ট সিস্টেমে রয়েছে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি। এটি গ্রাহকের তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কোনও রকম ডাটা হ্যাক বা তথ্য চুরির আশঙ্কা নেই।
- নগদ অর্থ বা কার্ড বহনের ক্ষেত্রে প্রায় সময় তা ছিনতাইয়ের ভয় থাকে। এছাড়া অসাবধানতায় হারিয়ে যাওয়ারও ভয় থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও কাগুজে টাকা বা প্লাস্টিক কার্ড বহনের প্রয়োজন নেই বিধায় সেগুলো হারানোরও ভয় নেই।
- দেশে ও বিদেশে পস বা পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) টার্মিনালে অর্থ পরিশোধের জন্য শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ফোন স্পর্শ করলেই হবে। তবে পস টার্মিনালটি অবশ্যই এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সমর্থিত হতে হবে।
এই সেবা গ্রহণের জন্য গুগলকে কোনও ফি দিতে হবে না।
- লেনদেনের মাধ্যম যেহেতু সম্পূর্ণ ডিজিটাল, তাই এর জন্য ব্যাংকে যাওয়ার দরকার নেই।
- চিরাচরিত ব্যাংকিং ট্রান্সফার সিস্টেমগুলোর তুলনায় গুগল পে’তে ফান্ড ট্রান্সফার অধিক দ্রুত গতির।
- গুগল পে’র আওতার মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের মত যাবতীয় ইউটিলিটি বিল এবং মোবাইল রিচার্জ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
- এতে আছে বিভিন্ন উপলক্ষে ক্যাশব্যাক এবং ব্যবহারের উপর রিওয়ার্ড পয়েন্টের সুবিধা। এই পয়েন্টগুলো সেবার ব্যবহারকে আরও লাভজনক করে তোলে।
- গুগল পে’র কিউআর কোড ফিচারটি ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীদের লেনদেনকে আরও সুবিধাজনক করে তুলবে। একদিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে সহজে ও দ্রুত পেমেন্ট নেওয়া যাবে, অন্যদিকে হিসাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমবে।

গুগল পে-এর ব্যবহার পদ্ধতি

- প্রথমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল প্লে থেকে গুগল পে অ্যাপটি ইন্স্টল করে নিতে হবে।
- এরপর অ্যাপ ওপেন করে গুগল অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে হবে।
- অতঃপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যাদি নির্ভুলভাবে সংযুক্ত করতে হবে।
- সবশেষে কাজ হচ্ছে একটি গোপন পিন এবং বায়োমেট্রিক সুরক্ষা সেট করা।
- এভাবে সেটাপ সংক্রান্ত ধাপগুলো সম্পন্ন হলে সিস্টেমটি লেনদেনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কম সময়ে লেনদেনের জন্য কিউআর কোড সেট করে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া এর জন্য ফোন নাম্বারও ব্যবহার করা যায়।

শেষাংশ

বাংলাদেশে গুগল পে-এর এই যাত্রা দেশের ভবিষ্যতমুখী আর্থিক পরিমণ্ডল গঠনে এক বিশাল পদক্ষেপ। প্রযুক্তির এই সূচনালগ্নে প্রথম দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সাথে রয়েছে সিটি ব্যাংক। পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যাংক যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আরও প্রসারিত ও সহজলভ্য হবে গুগল পে। সর্বসাকূল্যে, এই নিরাপদ, দ্রুত গতি, ও ঝামেলাবিহীন লেনদেন ব্যবস্থায় রচিত হলো উন্নত জীবনধারায় মাইলফলক।


banner close