প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন জমা না পড়ায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এখন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করদাতারা তাদের রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। যৌক্তিক কারণ ছাড়া এই সময় বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতি ভালো থাকলে কর বাড়ে। আর অর্থনীতি ভালো না থাকলে কর আহরণ বাড়বে না।’
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
অর্থনীতি ভালো না থাকলে কর বাড়বে না
এবারও আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে। প্রায় প্রতিবারই এই সময় বাড়ানো হয়। এই সময় বাড়ানোকে আপনি কতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন।
দিন দিন কর দেয়া সহজ করা হচ্ছে। নিয়ম পরিবর্তন হচ্ছে। সারা বিশ্বে যেটা হয়ে থাকে। সারা বছর সবাই কর দেয়। আমাদের দেশেও কিন্তু তা-ই হয়। যে যখন বেতন পাচ্ছে তখন কর কেটে নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক থেকে বেতন কেটে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে এখন এ রকম হচ্ছে। বছর শেষে সেগুলো সব একত্র করা হয়। আমি কত দিয়েছি সেটার প্রমাণ দিতে হবে। কতটা দিতে হবে সেটার কাগজ দিব। এসব কারণে একটি রিটার্ন দেয়ার প্রভিশনটা আছে।
অতীতে নিয়ম ছিল হিসাব বছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে এই রিটার্ন দিতে হবে। কাগজপত্র জোগাড় করতে যতটা সময় লাগে। এখন যে করটা দেয়া হচ্ছে সেটা গত বছর জুন মাস পর্যন্ত। সময় যতই বাড়ুক এটা কিন্তু জুন মাস পর্যন্তই থাকবে। এই বাড়তি সময়টা সবসময় তিন মাস ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকেই তাই। সরকার ২০১০ বা ২০১১ সালের দিকে এটাকে পরিবর্তন করে এটাকে নভেম্বরে নিয়ে গেলেন। অর্থাৎ পাঁচ মাস। কেউ কেউ পারে না এই জন্য। আমি না পারার বিষয়টিকে এভাবে দেখি। এখন যেখানে অনলাইন করা হচ্ছে, ফরম যেখানে সহজ করা হচ্ছে। আমার হিসাব যেহেতু গত জুন মাসের হিসাব। আমি যখন এত সহজ করছি, সেখানে কেন আমাকে পাঁচ মাস সময় দিতে হবে। এর থেকে আসলে বের হয়ে আসা উচিত।
একটি কারণ থাকতে পারে। একটি পরিপত্র জারি করে এনবিআর সেটার জন্য মনে হয় দেরি করতে হয়। সেখানে লেখা থাকে ব্যাখ্যাটা কীভাবে দিচ্ছেন। সেটা আর কিছু না। ব্যাখ্যাটা জারি করতে যদি বিলম্ব হয়। সম্ভবত এটার বিলম্ব হয় বলে তারা পিছিয়ে। তাদের কাজের একটি গতির জন্য পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখানে একটি সমন্বয়ের দরকার ছিল। এই ব্যাখ্যাগুলো জুলাই বা আগস্ট মাসের মধ্যে দিতে হবে। তাহলে অর্থবিলে কী লিখেছি। সেটা না করে আমরা মুসাবেদি করতে থাকব। এখন থেকে সবাই আবার বাস্তবায়ন করবে। ব্যাখ্যা কিন্তু বারবার পরিবর্তন করা উচিত না। আর যেহেতু ব্যবসা বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে।
গত বছর করোনা মহামারির কারণে সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার তেমনটি নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলেছে, ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
এ বছর এমন কিছু ঘটে নাই যে, আরও এক মাস বাড়িয়ে দিতে হবে। বারবার সময় বাড়ানোয় কিন্তু এটা দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের ম্যাক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টে একটি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। যে টাকা আমি যত তাড়াতাড়ি পেতাম প্রত্যক্ষ করে। প্রত্যক্ষ কর হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস। এটা সরাসরি পায় সরকার। এই আয়টা দিতে যদি বিলম্ব হয়, আমি যেই টাকা সেপ্টেম্বরে পেতাম, সেই টাকা নভেম্বরে আসে বা ডিসেম্বর মাসে আসে। তাতে কী হলো অর্থবছরের ছয় মাস আমি পিছিয়ে গেলাম। তাহলে এই ছয় মাস আমার চলবে কী করে।
কথা ছিল সেপ্টেম্বরে আমি যেই টাকা পাব সেই টাকা দিয়ে আমি ব্যয় করব। কিন্তু আমার টাকা পেতে যদি বিলম্ব হয় তাহলে ব্যাংকে আমার ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসটা ওই ভাবে দেখতে হবে। আমি তো এখন সমস্যা খুব বেশি দেখি না। কারণ আমরা তো সব বিষয় সহজ করছি। সারা বছর আপনি কর দিচ্ছেন। সামনে এমন হবে যদি সব অনলাইন হয়ে যায়। এরপর আমাদের রিটার্ন দিতে সময় লাগার কথা না। ব্যাংক থেকে যেটা কেটে নিচ্ছে সেটা নিয়ে যাব। আমার সিস্টেম বলে দেবে ৫৪৫ টাকা ওনার জমা হয়েছে। এখন যে কাগজ টাকা জমা দিতে হয় তখন সেটা থাকবে না। যেখানে আমরা সহজীকরণের দিকে যাচ্ছি। সময় বাড়ানোটা যুক্তিযুক্ত না বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অর্থনীতির আকার বাড়ছে। কিন্তু ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম; ৯ শতাংশ। এই অনুপাত নেপালের চেয়েও কম। সরকারও ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কথা বলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বাড়ছে না কেনো?
ট্যাক্স (কর)-জিডিপি রেশিও বা অনুপাত দেশের অর্থনীতি বোঝার একটি বড় মাধ্যম। কর-জিডিপি রেশিও দেখে বোঝা যায়, একটি দেশের জিডিপি গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) ভালো হয়েছে কি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রেশিও বিভিন্ন রকম। এই রেশিও সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ হতে পারে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় হলে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কর হবে। ১৬-১৭ টাকা হলে বলা যায় অর্থনীতিতে সব লোক কর দিচ্ছে। এডিপি (সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাস্তবায়নের সঙ্গে করের একটি বাস্তবতা বোঝা যায়।
কিন্তু আমাদের দেশে সেটা ব্যতিক্রম, এটা ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে পাক খাচ্ছে। আমাদের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ কর সরকার পাচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ঘাটতি? এই ঘাটতি দূর করার উপায়টা কী? আমার বিবেচনায় তিনটি কারণে এই ঘাটতি হচ্ছে। একটি হচ্ছে, সব লোক কর দেয় না। সবই করছে, কিন্তু কর দিচ্ছে না। গাড়ি ২৫ টার যায়গায় ৫০টা কিনছে, কর দিচ্ছে না। তার চালচলন দেখলে মনে হয় না তিনি গরিব। কিন্তু কর দেয়ার বেলায় তিনি গরিব। তার কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতি বাড়ছে; ৩ হাজার ডলার হয়েছে আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম (মাথাপিছু আয়)। ৩ হাজার ডলার যদি পার ক্যাপিটা ইনকাম হয়, তাহলে আপনি কর দেন না কেন? কিন্তু আসলে তা না; বাস্তব সত্যটা হচ্ছে, সব লোকের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার বাড়েনি। আসলে কিছু লোকের এত বেশি বেড়েছে যে, এভারেজ করতে গিয়ে ৩ হাজার হয়েছে। যার বেশি বেড়েছে তার বেশি কর দেয়ার কথা। যেহেতু আমার করের বেজ বাড়ে নাই লোকেরা কর দেয় না। আমাদের সমাজকে সেইভাবে তৈরি করতে হবে মানুষ যেন কর না দিয়ে থাকতে না পারে। আর করদাতার প্রত্যাশা থাকবে, যে কর আমি দিচ্ছি সেটা স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচ্ছে, দেশের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে না দেশের মানুষ কর দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। কর না দিতে পারার মধ্যে এখানে অনেকগুলো লুপহোলস (ফাঁক) রয়ে গেছে। এখানে একটি সাইকোলজিক্যাল ডিফারেন্স রয়ে গেছে।
ট্যাক্স-জিপিডি অনুপাত না বাড়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে; জিডিপির সেই বড় খরচের ওপরে আপনি কর অব্যাহতি দিয়ে দিচ্ছেন, রেয়াত দিয়ে দিচ্ছেন। বড় আমদানি করছেন, আপনি কর মুক্তি দিয়ে দিচ্ছেন। কর মুক্তির ক্ষেত্রে আপনার একটি হিসাব থাকবে। যে মাল আনবে তাকে তো একটি হিসাব দেখাতে হবে। কর নেয়া হয় সবকিছু হিসাব-নিকাশের মধ্যে রাখার জন্য। যদি আমি বলি যে, কর দিতে হবে না। তাহলে তো হিসাব থাকবে না। ৫টি জিনিস আনার কথা ছিল ৩টি জিনিস আনবে আর দুটো বিদেশে বিক্রি করে দেবে। যদি নিয়ম থাকত আপনি পাঁচটি জিনিস আনবেন একটি হিসাব হবে। টাকাটা তো সরকারকেই দিতে হবে। সরকারের এই পকেটের টাকা এই পকেটে যাবে। এখানে কর থাকা দরকার স্বচ্ছতার কারণে, প্রতিযোগিতার কারণে। আমি বলতি পারি যে, তুমি এই জিনিসটা আনো তোমার কর বেশি হবে না জাতীয় স্বার্থে। আরেকজন লোক ঠিকই কর দিয়ে সেই জিনিসটা আনছে। যে কর দিচ্ছে তার উৎপাদন ব্যায় কত হচ্ছে। আর যে কর দিচ্ছে না তার উৎপাদন ব্যয় কত হচ্ছে। তখন কী হয়। তখন অর্থনীতিতে একটি বৈষম্য তৈরি হয়। আমরা এখন দেখছি সরকার বিশেষভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল বানাচ্ছে। বানিয়ে সেখানে জমির মূল্যসহ অন্য সবকিছুর দাম এক রকম রাখছে। আর অন্যদিকে প্রাইভেট সেক্টর ইউটিলিটি বিলটিল সব কিছু দিয়ে একটি জিনিস বানাচ্ছে। এখানকার খরচ বেশি হবে। বিদেশিরা কার কাছে আসবে। আপনি প্রতিযোগী তৈরি করছেন। একদিকে আপনি কর না দিতে বলছেন। অন্যদিকে কর দিতে বলছেন। এসব কারণে রেয়াত দেয়ার বিষয়টি অবশ্যই পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। কারণ, এতে হিসাবটা মিলছে না। বিনিয়োগ হচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে। কিন্তু কর আসছে না। স্বচ্ছতার জন্য করের হিসাব রাখা উচিত। আপনি যখন একটি সেতু করমুক্তভাবে বানাবেন। তখন আপনি যে টোল আদায় করবেন, সেখানে যদি করটা না ধরেন তাহলে তো সামঞ্জস্যপূর্ণ হলো না। আপনি যদি মনে করেন, এখানে করের টাকা রাখব না। সেটা তো হলো না। আপনি মূল্যকে ছাপিয়ে রাখলেন। অথচ টাকা আপনার খরচ হয়েছে।
আরকর কম হওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে, যে কর আহরণ করে আর যে কর দেয় এদের মধ্যে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নয়। আইনগুলোকে আরও জনবান্ধব করা দরকার। যারা কর আহরণ করে তাদের দক্ষতা ও স্বক্ষমতা বাড়াতে হবে। কর কর্মকর্তারা সব জায়গায় যেতে পারছে না। সব জায়গায় যাওয়া দরকার। উপজেলা অফিস থাকা দরকার। তার দক্ষ জনবল থাকা দরকার। করদাতা যদি লোক রাখে এফসিএ পাস। তার সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য সেই রকম দক্ষ জনবল লাগবে। কর আহরণকারীকে দক্ষতা-স্বক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে করদাতাকেও কর দিতে আন্তরিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, তার দেয়া করেই দেশ চলবে; রাস্তাঘাট হবে, সেতু হবে, হাসপাতাল হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে সরকার। যে সবের সুবিধা দেশের সকল মানুষ পাবে; দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ হিসাবে দেশে টিআইএনধারী (কর শণাক্তকরণ নম্বর) করদাতার সংখ্যা ৮২ লাখের বেশি। কিন্তু কর দেন ২৫ লাখের মতো। টিআইএনধারী সবাই যাতে কর দিতে বাধ্য হয়, সেজন্য কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত?
এখানেই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সব করদাতা কর দিতে আসছেন না বা কর দিচ্ছেন না। ৮২ লাখ করদাতার মধ্যে একটি বড় অংশ হচ্ছে সরকারি আর বেসরকারি কর্মজীবী। এই করদাতারা তো নামেই শুধু করদাতা। এদের বেতন থেকে খুব বেশি টাকা আসে না। যারা ভালো কর দেয়ার কথা, গাড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়ান। তিনি কিন্তু আসছেন না; কর দিচ্ছেন না। যারা দিচ্ছেন, যে পরিমাণ কর দেয়ার কথা তা দিচ্ছেন না। অর্থাৎ কর ফাঁকি দিচ্ছেন। সুতরাং এখানে দুপক্ষেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে। যিনি টিআইএন খুলেছেন, তাকে অবশ্যই রিটার্ন সাবমিট (জমা) করতে হবে। অন্যদিকে এনবিআর যার টিআইএন খুলে দিয়েছে, তিনি কেন রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না সেটাও ভালোভাবে খোঁজখবর রাখতে হবে। সব টিআইএনধারী যাতে রিটার্ন সাবমিট করে সেটা বাধ্য করতে হবে।
এখন টিআইএন খুলেছেন কিন্তু রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। এখন রিটার্ন জমা না দিলে উনি প্রমাণ করবেন কী করে যে, ওনার কর হয় কি হয় না। আমি রিটার্ন দিলাম না। আমি বুঝতে পারব না আমার সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় না কি। আমার কত শতাংশ কর হবে, এখন না দিলে কী হবে- এ বিষয়গুলো দুই পক্ষকেই অনুধাবন করতে হবে। একজন টিআইএন খুলেছেন, রিটার্ন দিচ্ছেন না, অথচ তিনি করের আওতায় পড়েন। তার বিরুদ্ধে সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেন- এ বিষয়গুলো মানুষকে পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে।
আমি আবার বলছি, করদাতা আর কর আরোহণকারীর (কর কর্মকর্তা) সংস্কৃতি যদি উন্নতি না হয়, তাহলে কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব না। করদাতা তিনি নিজের দায়িত্বে টিআইএন খুলবেন, রিটার্ন সাবমিট করবেন; তার দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। আর কর আহরণকারীর কাজ হচ্ছে দেখা যে, করদাতা সঠিকভাবে এটা দিচ্ছেন কি না। তার বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। সেটা ফেসিলিটেট করা। প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে ডেকে এনে করদাতা বানানো এটা সমীচীন নয়। কাউকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য বাধ্য করা, এই এনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব এনবিআরের একার না। এটা হচ্ছে সমাজের, এনফোর্সমেন্ট।
করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গতবার ৩৮ থেকে ৩৯টা খাতে বলা হয়েছিল যে, আপকি কর দিচ্ছেন কি না? এটার প্রমাণ দিতে হবে। আমার মনে হয়, এটার একটি ফল আসবে। সেদিন দেখলাম, এক জায়গায় একজন পরিচালক হতে গিয়েছেন। সেখান থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তার টিআইএন আছে কি না। এ রকম ভাবে সব জায়গা থেকে যদি চাওয়া হয় তাহলে এটার পরিবর্তন হবে। একটি চাপ সৃষ্টি হবে। যেমন- ব্যাংকে যত লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তাদের উচিত রিটর্ন সাবমিট করা। ব্যাংক জানে গ্রাহকের রিটার্ন নাই কিন্তু তারা ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন ব্যাংককে বাধ্য করা হচ্ছে। এর আগে ব্যাংকের মাধ্যমে একটি চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, শুধু টিআইএন থাকলে হবে না। রিটার্ন দিয়েছে কি না সেটা দেখাতে হবে। এর একটি ফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।
তাহলে কি আমরা আশা করতে পারি আগামীতে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়বে, ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়বে?
করের অঙ্ক কিন্তু প্রতিবছরই কমবেশি বাড়ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, একটি সভ্য নাগরিক সমাজকে এ রকমভাবে কর দেয়াতে হচ্ছে। এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। আমরা একটি ট্রানজিশনে আছি। এটা বুঝতে হবে। সবকিছু এক দিনে হয়ে যাবে এটা ঠিক না। সবগুলো পদ্ধতিকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে করদাতা বাড়াতে হবে। এসব প্রচেষ্টা কন্টিনিউয়াসলি করে যেতে হবে। এ বছর করলাম, দ্বিতীয় বছর আর খেয়াল করলাম না- এটা হবে না। আমাদের মজ্জাগত সংস্কৃতির মধ্যে এটা আনতে হবে। এটা ঠিক যে, সব লোক টিআইএন খোলে না, এটাও ঠিক যারা টিন খুলেছেন তারা রিটার্ন দিচ্ছেন না। যারা দিচ্ছেন তা সঠিক পরিমাণে দিচ্ছেন না। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ তিনটা- সবাই যাতে টিআইএন খুলে সেটা একটি চ্যালেঞ্জ। যারা টিন খুলেছেন তারা যাতে রিটার্ন দেন সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। আর যারা রিটার্ন দেন, তারা সঠিক দেন কি না সেটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের দায়িত্ব তো আছে। তবে বেশি দায়িত্ব এই পক্ষের, মানে করদাতার। যিনি টিআইএন খুলেছেন তিনি যাতে রিটার্ন দেন।
সামাজিকভাবে আসতে হবে। জনগণকে বুঝতে হবে আমি যদি রাষ্ট্রকে কর না দিই তাহলে সরকার কোথা থেকে টাকাটা পাবে। না হলে তো সরকারকে ধারকর্জ (ঋণ) করতে হবে। ধারকর্জ করলে আমার সন্তানকে এটা শোধ করতে হবে। এই বোধ সবার মধ্যে এলে এই সমস্যা আর থাকবে না। সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে। সব পক্ষকে সহমত পোষণ করে, সহযোগিতার দৃষ্টিতে সবাইকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সহযোগিতা করতে হবে। এই যে নিজস্ব অর্থে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে, আপনি গর্ব করে বলতে পারছেন যে, আমার টাকা সেখানে আছে। যদি কেউ এমন মনে করে যে, আমার টাকা না আমি সেই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছি; করছি তো করছি। কিন্তু এটা তো ঠিক হলো না।
করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে সেই ইতিবাচক ধারা অব্যহত আছে। কিন্তু চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব রাজস্ব আদায়ে পড়বে কী?
অবশ্যই পড়বে। কারণ আমদানি-রপ্তানি রাজস্বের একটি বড় খাত। গত বছর কিন্তু আমদানি-রপ্তানি ভলিউম বাড়েনি। দাম বেড়ে গিয়েছিল, সেই কারণে আমদানি বেড়েছিল। রপ্তানিও কিন্তু পরিমাণের দিক দিয়ে বাড়েনি। বেড়েছিল দামের জন্য। যেহেতু আমদানিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়েছিল, তার থেকে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর মিলিয়ে সরকারও বেশি ট্যাক্স পেয়েছিল। একইভাবে রপ্তানি আয়েও টাকার অঙ্কে বড় উল্লম্ফন হয়েছিল, সে কারণে এ খাত থেকেও বেশি কর পেয়েছিল সরকার। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এবার সরকার ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছে। যার ফলে আমদানি অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে রপ্তানিতেও মন্থর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার এই দুই খাত থেকে কর আদায় খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না।
এগুলোর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের অর্থনীতিতে একটি বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যে রেভিনিউ আয় করি এর একটি বড় উদ্দেশ্য আয়বৈষম্য কমানো। যার বেশি আয় হচ্ছে, সেখান থেকে নিয়ে যার আয় কম তাকে দেয়া। এটা হচ্ছে রেভিনিউ বাড়ানোর একটি বড় উদ্দেশ্য। আমরা আয়বৈষম্য কমাতে পারছি না। এখানে গলদ দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। সেই টাকার ওপরে আমি কোন কর নিতে পারছি না। ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে; সবশেষ হিসাবে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তার মানে এই বিশাল অঙ্কের টাকা থেকে আমি কোনো কর পাচ্ছি না। এই টাকা বিনিয়োগ হলে, ব্যবহার হলে আমি ভ্যাট পেতাম, আমি সেটা পাচ্ছি না। এই টাকা যিনি নিচ্ছেন তিনি কর দিচ্ছেন না। সুতরাং অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা-অস্পষ্টতা এই একটা পরিস্থিতি। এটা কর আহরণের ওপরে বড় প্রভাব ফেলছে। আমরা বলি অর্থনীতি ভালো থাকলে কর বাড়বে। অর্থনীতি ভারো না থাকলে কর আহরণ বাড়বে না। যে টাকাগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে, সে টাকাগুলো বিনিয়োগ হলে আমরা অনেক কর পেতাম, ভ্যাট পেতাম। কেনাকাটা হতো আমি ভ্যাট পেতাম। এই টাকা দিয়ে কারখানা হতো। ব্যবসা বাণিজ্য হতো। দেশে কর্মসংস্থান হতো। অর্থনীতিতে আরও গতিসঞ্চার হতো।
সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় বেশ আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
এই যে আমি এতক্ষণ বললাম, যাদের অনেক কর দেয়ার কথা তারা কর দিচ্ছেন না। অর্থাৎ ফাঁকি দিচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না। ইচ্ছে করে খেলাপি হচ্ছেন। এই টাকাগুলোই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা দুর্নীতি করে নেয়া, সেখানেই একটি বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্য কমাতে এনবিআরের যে লক্ষ্য সেটা তো কাজ করছে না। সেই ফিলোসফি যখন কাজ করবে তখন এটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা একটি চ্যালেঞ্জ।
তবে এটাও ঠিক যে, সব সময় এনবিআরকে দোষারোপ করলে হবে না। দেখতে হবে অর্থনীতি সুস্থ আছে কি না? মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কমে গেছে বলেই সে আগের মতো পণ্য কিনছে না। চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে উৎপাদনও কম করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। একটার সঙ্গে একটি সম্পর্কিত কিন্তু। প্রান্তিক মানুষের কাছে টাকা নেই। আপেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে, ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যাদের কাছে টাকা আছে তারা কিনছেন। এর কারণে চাহিদা কমে যাচ্ছে।
তবে আমি মনে করি, শুধু করোনাভাইরাস বা বৈদেশিক বিনিয়োগ এসব কথা বললে হবে না। আমাদের যা সক্ষমতা আছে, সেটার যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। মানুষ যে ব্যাংকে টাকা জমা দেয় নিজের টাকা বাঁচানোর জন্য। এমনভাবে জমা দেয় যাতে টাকা মূল্যস্ফীতি থেকে বেঁচে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে, বাইরে ইনফ্লেশন ৯ শতাংশ, ব্যাংক আমাকে দেয় ৬ শতাংশ। আমার টাকা কমে যাচ্ছে। আমি যখন দেখি যে টাকার নিরাপত্তা নাই। এই টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। তখন আমার অবস্থাটা কী হয়। এই বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধাকদের অনুধাবন করতে হবে।
মালয়েশিয়ার ভ্যাভ প্রোডাকশনস এসডিএন বিডি এবং বাংলাদেশের ব্রেভ হর্স ভেঞ্চারস লিমিটেড একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে অ্যানিমেশন, সৃজনশীল কনটেন্ট প্রযোজনা ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে একসাথে কাজ করবে দুই প্রতিষ্ঠান। গত শুক্রবার দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার মোহদ সুহাদা বিন উসমান। দুই দেশের কর্পোরেট, সরকারি ও শিক্ষা খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ভ্যাভ প্রোডাকশনস সঙ্গীত, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও প্রতিভা বিকাশে দক্ষ, আর ব্রেভ হর্স ভেঞ্চারস অ্যানিমেশন, এআই ও ফিনটেক সমাধানে বিশেষজ্ঞ। যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে এবং নতুন বাজার উন্মোচনে কাজ করবে। ভ্যাভ প্রোডাকশনসের পরিচালক আন্দ্রেয়া লাউ লি লিং বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নয়, বরং মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সৃজনশীল শিল্পের মধ্যে একটি সেতু।’
ব্রেভ হর্স ভর্স ভেঞ্চারসের চেয়ারম্যান এমডি জাহাঙ্গীর মিয়া যোগ করেন, ‘আমরা প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতাকে একত্রিত করে বিশ্বমানের কনটেন্ট তৈরি করব।’ এই উদ্যোগ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সৃজনশীল খাতে নতুন যুগের সূচনা করবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশের শিল্প খাতে বৈচিত্র্য আনতে প্রথমবারের মতো এয়ারপ্লেন অ্যামেনিটি ব্যাগ ও কিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠান কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৮.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করবে। এ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ১,২৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি এর উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) জনাব মোঃ আশরাফুল কবীর এবং কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মি. উ ইউজিয়াং গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে এয়ারপ্লেন অ্যামেনিটি ব্যাগ তৈরি করবে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের উদ্যোগে মোজা, তৈরি পোশাক ও এক্সেসরিজ, কসমেটিকস এবং হেডফোন ও ইউএসবি কেবলসহ কিছু ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন করবে। এর মাধ্যমে বেপজার শিল্পখাতে নতুন ও অনন্য পণ্যের সংযোজন ঘটবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠানটিকে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং নির্বিঘ্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “এই প্রকল্প বেপজার রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে বৈচিত্র আনার ধারাবাহিক প্রয়াসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহে উৎসাহিত করি, যা শিল্পোন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।”
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মোঃ তানভীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) মোঃ খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ সালাহউদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণের (Authorized Representative) মাধ্যমে সম্মানিত করদাতাগণের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর কর্মকর্তাগণ এবং আইটি প্রোগ্রামারগণ Tax Representative Management System (TRMS) নামক একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ TRMS (https://trms.nbr.gov.bd/) সিস্টেমটি আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাল্টিপারপাস হলে উদ্বোধন করেন।
একটি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং করদাতা-বান্ধব রাজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে TRMS একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। করদাতার প্রতিনিধিত্ব প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে TRMS প্ল্যাটফর্মটি কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
আয়কর আইনে অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণ যেসকল সম্মানিত করদাতাগণের রিটার্ন দাখিল করার জন্য করদাতা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত (authorized) তাঁদের সকলের আয়কর রিটার্ন TRMS সফটওয়্যারটিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন। যেকোন করদাতা কর প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য তাঁর নিজ নামে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত OTP কর প্রতিনিধিকে প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে তাঁর রিটার্ন দাখিলের জন্য ক্ষমতা প্রদান (authorize) করতে পারবেন।
একজন আয়কর প্রতিনিধি যতজন করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করবেন তার সবগুলো রিটার্ন সংশ্লিষ্ট কর প্রতিনিধির নামের বিপরিতে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। কর প্রতিনিধিগন রিটার্নের তথ্যাদি যেকোন সময় সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
TRMS এর মূল বৈশিষ্ট্য:
• আয়কর আইন অনুযায়ী অনুমোদিত সকল কর প্রতিনিধিদের (Authorized Representative) ডিজিটাল নিবন্ধন;
• করদাতা কর্তৃক তাঁর কর প্রতিনিধিকে অনলাইন সিস্টেমে ক্ষমতা (authority) অর্পণ;
• প্রত্যেক কর প্রতিনিধি কর্তৃক দাখিলকৃত সকল আয়কর রিটার্নের তথ্য আলাদাভাবে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষণ;
• কর প্রতিনিধিগণ কর্তৃক করাদাতাগণের পক্ষে ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ;
• এটি করদাতা এবং কর প্রতিনিধি উভয়ের জন্যই ব্যবহারকারী-বান্ধব সহজ ইন্টারফেস;
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়্যারস এসোসিয়েশনের (BTLA) সভাপতি এডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইন্সটিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICMAB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব মাহতাব উদ্দিন এফসিএমএ, ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICAB) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মোঃ রোকনুজ্জামান এফসিএ এবং ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (ICSB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব এম নাসিমূল হাই এফসিএস বক্তব্য রাখেন। তাঁরা এরকম জনমূখী উদ্যোগ নেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ সারাদেশ থেকে আগত কর আইনজীবী নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
TRMS সিস্টেমটি করদাতা এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি মসৃণ সেতুবন্ধন তৈরি করবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রবিবার লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২০১ ও ২১৫৬ পয়েন্টে রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
রবিবার এ সময়ে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৩টির, কমেছে ৭৪টির এবং অপরির্বতিত রয়েছে ৯৩টি কম্পানির শেয়ার।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কম্পানি হলো-খান ব্রাদার্স, শাইনপুকুর সিরামিক, সালাম স্টিল, রবি, ডোমেনেজ, আইপিডিসি, লাভেলো আইসক্রিম, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
এর আগে আজ লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক বাড়ে ৮ পয়েন্ট।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সূচক আগের অবস্থান থেকে আরো ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে অবস্থান করে।
অপরদিকে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৫৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করে।
এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এসময়ের ২০টি কম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৮টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি কম্পানি শেয়ারের দর।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের মোমিনপুর বাজারে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা মরিচের হাট। সেই হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। যা দুই দিন আগে দাম ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় কৃষকরা। তারা বলছেন, এ রকম দাম থাকলে অনেক লোকসান হবে তাদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ এ অবস্থা।
গত শুক্রবার মহাদেবপুরের মোমিনপুর কাঁচা মরিচের হাটের দৃশ্য এটি। সপ্তাহের প্রতিদিন বসে এখানে কাঁচা মরিচের হাট। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। এখানে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হয়ে থাকে। এখানকার মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মহাদেবপুরের কুঞ্জবন এলাকা থেকে আসা কৃষক সোলেমান আলী ও গুলবর রহমান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু হাটে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠবে না। মরিচ চাষে খরচ হয়েছে অনেক। এখন পর্যন্ত তারা যে পরিমান বিক্রি করেছেন তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশক খরচ মিটিয়ে কিছুই থাকবে না। প্রথমে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৫০ টাকায় আর এখন তা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া থেকে আসা কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, এই হাটের মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে ভারত থেকে মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মোমনিপুর হাট কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচের হাট এটি। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। আর প্রতি মাসে কাঁচা মরিচের বেচাকেনা হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে এখন যেভাবে দাম কমে গেছে কৃষকদের লোকসান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া ভালো হওয়ায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। প্রথমে বাজার ভালো দাম ছিল কিন্তু এখন কিছুটা কম হলে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন। তাই আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শসহ সকল ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে।
নির্মাণাধীন মহেশখালী-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নত অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা দেশের মৎস্য ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানান।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগের অংশ সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বড় জাহাজ সরাসরি পরিচলানার সুবিধা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মৎস্য খাতে যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কারণ কোল্ড চেইন রক্ষা করে দ্রুত পরিবহন এই খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহেশখালীর মাছ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন বন্দরটি হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্যের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্যের পরিবহন সময় ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনবে। ফলে সতেজতার মান বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা বিশ্ব বাজারেও আমাদের পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে।
মাতারবাড়ির জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আমাদের ধরা মাছ খুব কম সময়ের মধ্যে রপ্তানি হবে। এতে আমরা ন্যায্যমূল্য পাব, যা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
সামুদ্রিক মাছ ধরা ও এর প্রক্রিয়াজাতকরণ বৈশ্বিক বাজারে বহু বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হলেও বাংলাদেশে এখনো তেমনভাবে বিকশিত হয়নি।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) প্রতিষ্ঠার ফলে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে।
বিশ্বের মোট মাছের প্রায় ৭ শতাংশ আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ৪৫ কোটিরও বেশি মানুষ বঙ্গোপসাগরের ‘ব্লু ইকোনমি’ এর ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ ‘ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশন’ (আইওটিসির)’ সদস্য। যে কারণে যা ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মাছ ধরার অনুমতি রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট দুই প্রজাতির টুনা মাছের জন্য কোটা পায়। আর অন্য দুই প্রজাতির টুনা ইচ্ছেমতো ধরতে পারে। তবে প্রতি বছরই কোটা অপূর্ণ থেকে যায়।
এই সমস্যার সমাধান ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরাকে উৎসাহিত করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৮টি লংলাইনার ফিশিং ভেসেল (গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জাহাজ) তৈরি বা আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
মাতারবাড়ি বন্দর চাঁকড়িয়া চিংড়ি শিল্পের মতো বিদ্যমান ও নতুন উদ্যোক্তাদের ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশে দ্রুত পণ্য পাঠাতে সহায়তা করবে।
মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর রপ্তানি প্রক্রিয়ার সময় ও ব্যয় কমাবে। ফিলে, স্মোকড মাছ, রেডি-টু-ইট সামুদ্রিক খাদ্য ইত্যাদির মতো মান সংযোজিত পণ্যের রপ্তানির পথ প্রশস্ত করবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্ক্যালপ (এক প্রজাতির শামুক) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মিডার শক্তিশালী লজিস্টিক সুবিধা দেশে নতুন বিনিয়োগের ঢেউ আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদায়ী সপ্তাহে (৭ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন শেষ হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে।
গত সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ এবং সিএস্টতে ৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শনিবার ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৩ পয়েন্ট বা ২.৭৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, দর কমেছে ২৫০টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টি কোম্পানির। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়নি ১৬টি কোম্পানির।
এদিকে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সুস্বাদু ও বৃহৎ আকৃতির পানের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু পানের দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দাম অত্যন্ত কম ও খরচ অত্যাধিক বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ।
জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যেখানে প্রতি বছরে ৭ হাজার মেট্রিক টন পান উৎপাদন হয়। তা ছাড়াও ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চল পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।
সরেজমিনে গিয়েও উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুরের প্রান্তিক পানচাষিদের দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩-৪ লাখ টাকা। যেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম। পান বরজের সরঞ্জামের দামও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। পূর্বে যে শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সে কারণে অনেকেই পান ররজ মেরামত করছেন না। তা ছাড়া দাম কম হওয়ায় অনেকেই বরজের পান ভাঙছেন না। ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদের চেষ্টা করছেন। পান বরজের ওপর ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে হয়েছেন ভিটে ছাড়া।
পান হাট জগশ্বরে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ৫-৩০ টাকায়। খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া।
পান বিক্রি করতে আসা পান চাষি মো. রফিক জানান, প্রতি বিড়া পান ৭ টাকায় বিক্রি করলাম। যা গত বছর ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। যাতে করে পান ভাঙা আর যাতায়াত খরচই উঠল না। এই ব্যবসা আর করা হবে না। পানচাষি তুষার জানান, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাহাদুরপুরের পানচাষি ৭০ বছর বয়ষি বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ আমার। না পারছি ভাঙতে, না পারছি রাখতে। পান বাজারে নিলে খরচের টাকাও ফিরে পাচ্ছি না।’
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, উৎপাদন বেশি ও রপ্তানি না থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু শ্রমিক ও পান বরজের সরঞ্জামের দাম পূর্বের থেকে ২-৩ গুণ বেশি। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় প্রান্তিক পানচাষিদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি। ঋণের ভারে জর্জরিত চাষিরা এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থকরী এই খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য চাই।
ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা শুনেছি।
চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান ও পাহাড়ি এলাকায় মসলা জাতীয় ফসল গুলমরিচের চাষাবাদের ব্যাপক উপযোগী পরিবেশ। তবে এলাকাবাসীর দাবি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষের পর্যায়ে পৌঁছায়নি শ্রীমঙ্গল। স্থানীয় চা-বাগান ও কিছু পাহাড়ি জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে গুলমরিচের গাছ দেখা গেলেও সেগুলোর ফলন মূলত নিজেদের প্রয়োজন বা সীমিতভাবে বিক্রয়ের জন্যই ব্যবহার হচ্ছে। অথচ এই অল্প চাষেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকলে শ্রীমঙ্গলে গুলমরিচ হতে পারে লাভজনক একটি মসলা ফসল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পান গাছের মতো অন্যান্য বড় গাছকে আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে গুলমরিচের চাষ। উপজেলার হরিনছড়া চা বাগানের সবচেয়ে বেশি গুলমরিচের গাছ দেখা গেছে। সেখানে চা বাগানের ভিতরে প্রায় ২৫টি গাছের সব কটিতেই ফলন এসেছে। সবুজ পাতার ফাকে ফাকে গুলমরিচগুলো আঙ্গুর ফলের মতো ঝুলে রয়েছে। সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরাও একবার হলেও ঘুরে দেখছেন গাছগুলো। উপজেলার রাধানগর ও মহাজেরাবাদ এলাকায় রয়েছে কয়েকটি গাছ। এই গাছগুলোর গুলমরিচ গাছেই থাকে, সখ করে কেউ সংগ্রহ করে, না হয় গাছেই নষ্ট হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভাবনা থাকলেও গুলমরিচ চাষ এখনো বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার অভাবে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক রূপ পায়নি। কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিলে শ্রীমঙ্গলের গুলমরিচ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
হরিনছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিংহ জানান, ‘আমাদের চা বাগানের সেকশনের ভেতরে প্রায় ২০ বছর আগে লাগানো বেশ কিছু গুলমরিচ গাছ রয়েছে। শ্রমিকরাই এসব গাছের দেখাশোনা করেন। গাছগুলোতে ফলনও আসে, তবে বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা হয় না। গাছগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে, দেখতেও সুন্দর লাগে।
পাইকারি মসলার দোকান মেসার্স মানিক দেব-এর পরিচালক তাপস দেব জানান, ‘স্থানীয় কিছু চাষি আমাদের কাছে গুলমরিচ বিক্রি করতে আসে, তবে পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দোকানে বিক্রি হওয়া গুলমরিচের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা। দেশে যদি গুলমরিচ চাষ ব্যাপক হতো তাহলে আমরা কম দামে কিনতে পারতাম, বাজারেও দাম কমত।’ বর্তমানে প্রতি কেজি কালো গুলমরিচ ১২০০ টাকা এবং সাদা গুলমরিচ ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গুলমরিচ চাষের জন্য কাটিং (বাইন) সংগ্রহ করে মাটিতে লাগাতে হয়। প্রায় ৬ মাসের মধ্যে ফলন আসে। গাছের বয়স দুই বছর হলে তা থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তখন এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকাগুলোর মাটি গুলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হেক্টর জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে এর চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে মহাজেরাবাদসহ দশটি জায়গায় চারা রোপণ করেছি। এখন কেউ চাষ করতে আগ্রহী হলে আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিমানে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বুধবার থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে।
বিইআরসি ঘোষিত নতুন দামে দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে জেট ফুয়েলের লিটারপ্রতি দাম ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৬ টাকা ৯ পয়সা করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে জেট ফুয়েলের লিটারপ্রতি মূল্য শূন্য দশমিক ৬৫০২ ডলার থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬৩৩৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত আগস্টে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি লিটার ৯৮ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে শূন্য দশমিক ৬৪০১ ডলার থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৬৫০২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী, দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ডিউটি ফ্রি (শুল্ক ও মূসকমুক্ত) এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য শুল্ক, মূসকসহ জেটএ-১-এর (এভিয়েশন ফুয়েল) মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা এখন বিইআরসির হাতে।
এর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এই দাম নির্ধারণ করত। চলতি বছরের শুরু থেকে এ দায়িত্ব চলে যায় বিইআরসির কাছে।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিপিসি গত ২০ জানুয়ারি জেট ফুয়েলের মূল্যহার-সংক্রান্ত প্রস্তাব দেয়। পরে পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিপণন চার্জ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনে জমা দেয়।
বিমান সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি এবং মানও আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়।
এ কারণে এখানকার বিমানভাড়া তুলনামূলক বেশি নির্ধারণ করতে হয়।
কাতারে ইসরায়েলি হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বানের পর বুধবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। তবে দুর্বল চাহিদা ও বাজারের সামগ্রিক মনোভাবের কারণে এই বৃদ্ধির গতি সীমিত ছিল।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬১ সেন্ট বা ০.৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ডলারে। একই সময়ে মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড তেলের দাম ৬১ সেন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩.২৪ ডলারে।
ওএএনডিএ-এর সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক কেলভিন ওং বলেন, কাতারে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের সরবরাহ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদি ওপেকপ্লাস সদস্যদের তেল স্থাপনাগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়, তাহলে স্বল্পমেয়াদে তীব্র সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে।
এই হামলায় ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই হামলাকে শান্তি আলোচনার জন্য বড় হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।
হামলার পর বাজারে প্রথমে তেলের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে যায়, তবে পরে যুক্তরাষ্ট্র দোহাকে আশ্বস্ত করে যে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না এবং সরবরাহে কোনো তাৎক্ষণিক বিঘ্ন না ঘটায় মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
এদিকে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা চীন ও ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো।
চীন ও ভারত রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতা। ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই দুই দেশ রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
এলএসইজি-এর বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন বা ভারতের মতো বড় ক্রেতাদের ওপর যদি শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে তা রুশ তেলের রপ্তানি বিঘ্নিত করতে পারে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ সংকোচনের মাধ্যমে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি আনতে পারে।
উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
০২। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাস্টমস হাউস/স্টেশনে আমদানিকালে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণায় প্রদত্ত পণ্যের বর্ণনা ও HS Code কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের নমুনা কিংবা শুল্কায়ন পরবর্তী সময়ে পণ্যের ঘোষিত বর্ণনা পরিবর্তিত হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স অথবা প্রাপ্যতা শীট বা সংশ্লিষ্ট Utilization Declaration (UD) তে অন্তর্ভূক্ত থাকে না। ফলে শুল্কায়নকালে উহা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে যথাসময়ে কাঁচামাল/পণ্য খালাস না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটছে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবগত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি বিবেচনায় নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করা হলো:
(ক) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন HS Code নিরূপণ করলে এবং নিরূপিত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট এর সাথে মিল থাকলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এই নিরূপিত HS Code বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
(খ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বর্ণনা নিরূপণ করলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উক্তরূপ নিরূপিত পণ্যের বর্ণনা বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
গ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিন্ন HS Code নিরূপণ করা হলে এবং বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে তার প্রাপ্যতায় উক্ত HS Code অন্তর্ভুক্ত করলে কাস্টমস হাউস এর কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করবেন এবং পণ্য চালান খালাসের তথ্য সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
০৩। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে; এবং বর্তমানে উক্তরূপ কারণে শুল্কায়ন নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান পণ্যচালানসমূহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।