জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেছেন, ‘জনশক্তি রপ্তানিতেও দেশে সুবাতাস বইছে। বিদায়ী ২০২২ সালে আমরা সাড়ে ১১ লাখ লোককে কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। কিন্তু অবৈধ হুন্ডির কারণে সে তুলনায় রেমিট্যান্স বাড়ছে না। প্রণোদনার পরিমাণ ৫ শতাংশ করলে হুন্ডি বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি।’
দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আবুল বাশার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
প্রণোদনা ৫ শতাংশ করলে হুন্ডি বন্ধ হবে
জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না কেন?
নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও জনশক্তি রপ্তানিতে কিন্তু এবার আমরা রেকর্ড গড়েছি। বিদায়ী ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আমরা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ লোককে কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। ডিসেম্বর মাসের তথ্য যোগ হলে এই সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এটি একটি বিশাল বড় ঘটনা। কিন্তু দুঃখজনক হলো জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে হুন্ডি। করোনা মহামারির কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী অবৈধ হুন্ডি কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। সে কারণেই ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী দেশে এসেছেন। বাংলাদেশে কখনোই এক অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ফের হুন্ডি কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। ডলারের বাজারের অস্থিরতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও বেড়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমে ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। কমেছে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। এই যে ২০২২ সালে সাড়ে ১১ লাখ লোক বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। বেতন পাচ্ছেন; দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। সে হিসাবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। উল্টো কমছে। এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। এই রেমিট্যান্স কমার কারণেই কিন্তু আমাদের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে আসছে।
এখানে প্রবাসী ভাই-বোনদের কোনো দোষ আমি দেখি না। তারা প্রতি ডলারে দুই-তিন টাকা বেশি পাচ্ছেন বলেই ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডি বন্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। হুন্ডি বন্ধ হচ্ছে না। এখানে সরকারের কাছে আমার একটা প্রস্তাব আছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বা বৈধপথে টাকা পাঠালে সরকার এখন আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কেউ ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা ৫০ পয়সা যোগ হয়ে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। সরকার যদি প্রণোদনার পরিমাণ ৫ শতাংশ করে দেয়, তাহলে তারা ১০০ টাকা পাঠালে ১০৫ পাবেন। এটি করলে সব প্রবাসী বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে বলেন আমি মনে করি। এখানে প্রবাসীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা যেখানে বেশি টাকা পাওয়া যাবে, সেখানে যাবেন। প্রণোদনা ৫ শতাংশ করলে যখন তারা দেখবে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে যে টাকা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালেও সেই একই টাকা পাওয়া যায়, তখন তারা আর ঝুঁকি নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না। বর্তমান কঠিন সময়ে রিজার্ভ বাড়াতে এই কাজটি সরকারের দ্রুত করা উচিত বলে আমি মনে করি।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-বায়রা। গত সেপ্টেম্বরে আপনি এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বায়রার সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এ খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি আনতে কি করবেন?
রেমিট্যান্স যোদ্ধা যারা দেশের বাইরে যান, রেমিট্যান্স পাঠান, এদের কারিগর হলো বায়রার দুই হাজার সদস্য। তারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন বলেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আসছে। তিন মাস আগে যেসব ভাই-বোন বিদেশে গেছেন তাদের রেমিট্যান্স অলরেডি আসা শুরু হয়েছে। কোনো কোম্পানিতে গেলে প্রথমে তার আকামা ও ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটা পেতে তিন মাস সময় লাগে। তিন মাস পর থেকে রেমিটট্যান্স বাংলাদেশে আসা শুরু করে। আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে যান, গ্রামে তাদের স্বচ্ছতা না থাকার কারণে যান। তাই তারা মনে করেন, আমি কিছু টাকা পাঠাতে পারলে বাড়িতে আমার ছেলে, মেয়ে, মা, বাবা ভালো থাকবেন। উনারা গিয়েই টাকাটা পাঠানোর চেষ্টা করেন।
এটি আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া গিয়েছি। দেখেছি যারা বিদেশ যান তাদের মধ্যে আন্তরিকতার কমতি নেই। যে টাকা পান সেটিই বাড়িতে পাঠান। পারলে অন্য কারও কাছ থেকে ধার করে হলেও টাকা পাঠান। এই যে ২০২২ সালে সাড়ে ১১ লাখের বেশি আমাদের লোক বিভিন্ন দেশে গেছেন। এই ভাই-বোনদের রেমিট্যান্স নতুন করে যোগ হবে, প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার নতুন রেমিট্যান্স যোগ হবে। সে হিসাবে বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসার কথা। কিন্তু হুন্ডির কারণে তা হচ্ছে না। সে কারণেই আমি সরকারকে প্রণোদনার পরিমাণ আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করছি।
জনশক্তি রপ্তানি আরও বাড়াতে সরকার ও আপনাদের দিক থেকে কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আমি মনে করি, জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা জনশক্তি রপ্তানির বর্তমান ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে পারব। প্রবাসীরা আরও যেন সুযোগ-সুবিধা পান, রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে বিমানবন্দর, বিদেশি দূতাবাসসহ বিভিন্ন জায়গায় যথাযথ সম্মান পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা তৈরি করে, বায়রার সদস্য ভাইদের প্রতিও একটু সদয় দৃষ্টি যদি না রাখা হয়, অর্থাৎ ফ্যাক্টরি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে প্রোডাকশন হয় না। আমরা যদি ঠিকঠাক মতো কাজ করতে না পারি, তাহলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে না। তাই আমাদের সদস্য ভাইদের সব অসুবিধাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার মাধ্যমে এটিকে চলমান রাখতে হবে।
মালয়েশিয়ার বাজারে আমাদের বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু ওই দেশে এবং আমাদের দেশে একটা সিন্ডিকেট, গোষ্ঠী, অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজ করার কারণে আমাদের দেশ থেকে লোক যাওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্গতি হয়েছে। যদি সিন্ডিকেট না হতো আমরা বিগত দিনে যেভাবে ব্যবসা করেছি, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এমওইউ স্বাক্ষর করেছি, এতদিনে চার থেকে পাঁচ লাখ লোক চলে যেতে পারত। কিন্তু আমি কিছুদিন আগে জানতে পারলাম মাত্র দেড় হাজার লোক বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছেন। কিন্তু আমাদের যাওয়ার কথা ছিল চার থেকে পাঁচ লাখ লোক। ওই সিন্ডিকেটের কারণে এই গতিটা বিভিন্ন জায়গায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। যেতে পারছেন না।
আমি মনে করি, সরকার কেন ১০ জন, ২০ জনকে ব্যবসা করার সুযোগ দেবে? এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত সৌদি আরবের মতো। যেমন-সৌদি আরবে আট বছর বন্ধ ছিল, আমি যখন এর আগে বায়রার সভাপতি ছিলাম, তখন আমি সৌদি আরবের ব্যবসাটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করেছিলাম। সবাইকে ব্যবসা করতে দিয়েছি বলেই সৌদি আরবে প্রতিবছরে এত লোক যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এটিকে সিন্ডিকেট করতাম তাহলে এত লোক যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, আমাদের সবাইকে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। সিন্ডিকেটধারীরা যে জামানত দিয়েছে অন্যরাও তো একই জামানত দিয়েছে। আমাদের জামানতের পরিমাণ যদি একই হয়, তাহলে ব্যবসা করা আমার জন্য বাধাগ্রস্ত কেন হবে?
দীর্ঘদিন বায়রার নির্বাচন হয়নি। প্রশাসক চালিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
তার আগে আমি একটি কথা বলতে চাই, সরকারি পর্যায়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসাধু কর্মকর্তা থাকতে পারেন, বিদেশে অসাধু থাকতে পারেন, সবাইকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব আমাদের মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় যেন এটা ঠিক করে, যাতে করে বেশি বেশি করে বিদেশে কম পয়সায় গ্রামগঞ্জের বিদেশগামী কর্মী যেতে পারেন। সেটির জন্য পদক্ষেপ নেয়া সরকারের দায়িত্ব। আর হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, বিগত দুটি মেয়াদে নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বায়রার কমিটি হয়নি। গণতান্ত্রিকভাবে ভোট হয়ে প্রতিশ্রুতি দিলে যেটি হয়, সেভাবে হয়নি। এর আগে গণতান্ত্রিকভাবে দুবার দুটি কমিটি হয়েছে তাদের কাছে আমরা কোনো জবাবদিহি পাইনি।
বিগত দুই বছর আমাদের প্রশাসক চালিয়েছে। সে কারণে আমাদের বায়রা হযবরল অবস্থায় আছে। এই কয় মাসে আমরা সেটি অনেকটাই দূর করেছি। আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছতার সঙ্গে জবাবদিহিমূলক সংগঠন চালাতে। আমাদের সব সদস্যের মধ্যে যেন স্বচ্ছতা থাকে, কোনো রকম দুর্নীতি আমাদের কেউ যাতে করতে না পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করছি। বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে আমাদের সংগঠনকে স্বচ্ছতার মধ্যে এনে, জবাবদিহির আওতায় এনে স্বচ্ছ বায়রা তৈরি করার চেষ্টা করছি। সরকার আমাদের সব সুবিধা যেন নিশ্চিত করেন।
ইতোমধ্যে আমি আমাদের মন্ত্রী, সচিব, ডিজি ও সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের অসুবিধাগুলো বিভিন্ন জায়গায় তুলে ধরেছি। সেসব অসুবিধার কথা বিবেচনা করে আমাদের কাজ করার সুযোগ দিলে আমরা ইনশাল্লাহ বায়রাকে এগিয়ে নিতে পারব। এটি হলে সুযোগ বাড়বে, দেশ পরিচালনার অর্ধেক টাকায় এই রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আসবে। রেমিট্যান্স যোদ্ধা এবং এর কারিগরদের যেন সরকার বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেয়, কাজ করার সুযোগ দেয়, এটিই আমার আবেদন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা জনশক্তি রপ্তানিতে পড়েছে কি না?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আমাদের জনশক্তি রপ্তানিতে পড়েছে। যুদ্ধ না থাকলে আমরা আরও বেশি লোক বিভিন্ন দেশে পাঠাতে পারতাম। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সেক্টরে আন্তর্জাতিক কিছু কার্যক্রম থাকে, সেসব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে শ্রমিকদের কাজকর্ম কমে গেছে। আমরা চিন্তা করেছিলাম, আমাদের এই ব্যবসাটাকে ইউরোপের দিকে গতিশীল করার জন্য কাজ করব। কিন্তু এই যুদ্ধের কারণে আমরা ইউরোপের মার্কেটটাকে দখলে নিতে পারছি না। আমাদের শ্রমিকরা যেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে বিদেশে যেতে পারতেন, এই যুদ্ধের কারণে টিকিটের দাম এক লাখ টাকার বেশিও লাগছে। যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের বিপথগামী করেছে এই যুদ্ধ, আমাদেরও হতাশ করেছে। যুদ্ধ যদি না থাকত তাহলে আমাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়টা আরও গতিশীল হতো। রেমিট্যান্স আরও বৃদ্ধি হতো। ইউরোপের মার্কেটে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে আরও বেশি সুফল বয়ে আনতে পারতাম বলে আমার বিশ্বাস।
ইউরোপে অনেক দেশে এখন বাচ্চাদের দুধ কিনে খাওয়াতে পারছে না। আমাদের বাংলাদেশে সেই তুলনায় খাদ্যদ্রব্যসহ সবকিছু ভালো আছে। দাম বেশি হতে পারে কিন্তু মানুষ ভালো আছেন এবং সব জিনিস হাতের নাগালে পাচ্ছেন।
আমাদের কিছু কিছু বিদেশগামী কর্মী ইতালি, রোমানিয়া, লিবিয়া ও অন্যান্য দেশে যান। সেখান থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে থাকেন। আমি প্রথমেই বলেছি, যারা যান তারা তাদের মা, বাবা, পরিবারের কথা চিন্তা করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিয়ে যে টাকাটা পান, সেই রেমিট্যান্সটা দেশে পাঠাচ্ছেন। সেখানে অন্যান্য দেশের চেয়ে আয় ভালো হওয়ার সঙ্গে টাকাটা পেয়ে যান দ্রুত।
তবে এটিও তো ঠিক, যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকান মুদ্রা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা উপকৃত হচ্ছেন। তাদের স্বজনরা বেশি টাকা তুলতে পারছেন।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকউ বলেছেন। অতীতে যারা বিদেশে গিয়েছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে তারা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু যারা নতুন করে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের ব্যয় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। আমি আগেই বলেছি, প্রথমদিকে বিমান ভাড়া ছিল ২৩ হাজার টাকা। সেই ভাড়া এখন ৭০, ৮০, ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার কারণে তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যারা নতুন করে যাচ্ছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং যারা পুরোনো গিয়েছেন, ১ কোটি ২০ লাখের মতো লোক বিদেশে কর্মরত রয়েছেন, তারা কিন্তু উপকৃত হচ্ছেন।
সুসংবাদ হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেশ বাড়ছে। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন।
আপনি ঠিকই বলেছেন। গত দুই-তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি বেশি রেমিট্যান্স আসছে দেশে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো। এতদিন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত সৌদি আরব থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। গত দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, সৌদি আরবের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত তথ্যের দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সৌদি আরব থেকে ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের রেমিট্যান্স কম আসার কারণ হলো ওখানে গিয়ে আমাদের প্রবাসীরা নিজেদের জীবনটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে সেখানে থাকেন। প্রথমদিকে কিন্তু তারা দেশে টাকা পাঠাতে পারেন না। যা আয় করেন, নিজেদের প্রয়োজনেই তা খরচ হয়ে যায়। গত পাঁচ বছরে যেসব লোক যুক্তরাষ্ট্র গেছেন, বৈধভাবে যাক আর অবৈধভাবে যাক, তারা সেখানে গিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। ভালো আয় করছেন। নিজের প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পর সঞ্চিত অর্থ দেশে তাদের মা, বাবা, ছেলে, মেয়েদের ভালোভাবে থাকার জন্য সেখান থেকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এ জন্য আমাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা কিন্তু দূর হচ্ছে না। বাংলাদেশ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
আমাদের দক্ষ শ্রমিক তৈরি করার জন্য বিগত দিনে ভালো ব্যবস্থা ছিল না এটি সত্যি কথা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন, দেখেছেন দক্ষ কর্মী বিদেশে কম। সে জন্য তিনি প্রতিটি জেলায় একটি করে কারিগরি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, দক্ষ শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর জন্য। সে ক্ষেত্রে সেখান থেকে এখন দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে। তবে এখানে আমি একটি কথা বলতে চাই, আমাদের দেশের লোকের আন্তরিকতা কম আছে, তারা দক্ষ হয়ে বিদেশ যাবেন- এটি তাদের মনের মধ্যে থাকে না। কিন্তু দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে সুবিধা বেশি, সেটি তারা বুঝতে চান না। ধরা যাক, শ্রমিক হয়ে সৌদি আরবে গেলেন কেউ, তিনি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রিয়াল পেলেন। কিন্তু দক্ষ হয়ে গেলে তিনি দুই হাজার রিয়াল পর্যন্ত পেতে পারেন, যা আমাদের জন্য ভালো হতো, রেমিট্যান্স আরও বাড়ত। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা বায়রার পক্ষ থেকেও চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী বায়রার ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। আমি সভাপতি হয়ে সেটার নির্মাণকাজ শুরু করেছি। এটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন থেকে এখন দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, যা রপ্তানি করে আমরা আরও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারব আমরা। আমরা চাই দক্ষ শ্রমিক বিদেশে যাক। আমাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাক। এটিকে ধারণ করে আমরা চেষ্টা করব, সরকারের পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর জন্য। প্রতিটি জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ সেন্টার তৈরি করা যদিও একবারে সম্ভব নয়। তারপরও করা হলে আমাদের বিদেশগামী ভাই ও বোনেরা নিজেদের দক্ষ করতে আরও বেশি উদ্যোগী হবেন।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা এখন কেমন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন?
সারা বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যসহ জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিক যারা বিদেশে গেছেন তাদের বেতনও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় সব দেশের সরকার দ্রব্যমূল্যের কথা চিন্তা করে শ্রমিকের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশে চাল-ডাল থেকে শুরু করে নিজেদের কিছু প্রোডাকশন হয়। বাকি যেটি বাইরে থেকে আনতে হয়, সেটি সরকার আমদানি করে মজুত করছে। আশা করি, আমাদের দেশের সমস্যা হবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশের নিজেদের প্রোডাকশনের ব্যবস্থা নেই, শুধু আমদানির ওপর নির্ভর করে, তাদের কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আশা করি, আমাদের দেশ ভালো থাকবে এবং আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ভালো থাকবেন।
আমি সৌদি আরবে দেখেছি সেখানে খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখে। সেখানেও খাদ্যদ্রব্যের দাম যদিও বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সেখানে শ্রমিকের মজুরিও বৃদ্ধি হয়েছে। সেখানে অসুবিধা হচ্ছে না, হবে না। সব রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব গতিতে চললে তারা বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিক পরিচালনা করলে সমস্যা হবে না।
আপনি বলছিলেন, চলতি বছরে যে সাড়ে ১১ লাখ লোক বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন, তারা রেমিট্যান্স পাঠালে দেশে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বেশি আসবে। তাহলে কী আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিগত দিনে যে পরিমাণ টাকা বা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, আমি মনে করি, আগামীতে যেহেতু নতুন নতুন করে আমাদের শ্রমিক যাচ্ছেন বিদেশে, সে কারণে রেমিট্যান্সের হার আরও বৃদ্ধি হবে। আমার মনে হয়, দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কারণ, আমাদের বিদেশে লোক পাঠানো চলমান আছে, অব্যাহত রয়েছে। আমরা নতুন নতুন দেশে চেষ্টা করছি লোক পাঠানোর। যদি আমরা রোমানিয়াসহ আরও কয়েকটা দেশের লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে, কমবে না।
আমাদের যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা, এই যোদ্ধাদের যারা তৈরি করেন, সেই কারিগর আমাদের বায়রার দুই হাজার সদস্য, তাদের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোসহ (বিএমইটি) সরকারের সর্বস্তরের প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু ভুলটাকে সংশোধন করে আগামীতে আরও কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি সেই সহযোগিতা লাগবে। ভাত খেতে গেলে প্লেটের নিচে পড়ে। তাই বলে ভাত খাওয়া কিন্তু কেউ ছেড়ে দেয় না। তাই আমাদের ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে, সে ক্ষেত্রে সকল ভুল-ত্রুটিকে কীভাবে সংশোধন করতে পারি, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, বেশি বেশি করে আমাদের দেশে বেকারত্ব দূর করতে পারি, বেশি বেশি করে রেমিট্যান্স এনে দেশ পরিচালনার সহযোগিতা করতে পারি, আমাদের এ বিষয়ে সরকার, মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক দিকগুলো থেকে সবাই সহযোগিতা করলে আমাদের দেশটা আরও এগিয়ে যাবে।
মালয়েশিয়ার ভ্যাভ প্রোডাকশনস এসডিএন বিডি এবং বাংলাদেশের ব্রেভ হর্স ভেঞ্চারস লিমিটেড একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে অ্যানিমেশন, সৃজনশীল কনটেন্ট প্রযোজনা ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে একসাথে কাজ করবে দুই প্রতিষ্ঠান। গত শুক্রবার দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার মোহদ সুহাদা বিন উসমান। দুই দেশের কর্পোরেট, সরকারি ও শিক্ষা খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ভ্যাভ প্রোডাকশনস সঙ্গীত, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও প্রতিভা বিকাশে দক্ষ, আর ব্রেভ হর্স ভেঞ্চারস অ্যানিমেশন, এআই ও ফিনটেক সমাধানে বিশেষজ্ঞ। যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে এবং নতুন বাজার উন্মোচনে কাজ করবে। ভ্যাভ প্রোডাকশনসের পরিচালক আন্দ্রেয়া লাউ লি লিং বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নয়, বরং মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সৃজনশীল শিল্পের মধ্যে একটি সেতু।’
ব্রেভ হর্স ভর্স ভেঞ্চারসের চেয়ারম্যান এমডি জাহাঙ্গীর মিয়া যোগ করেন, ‘আমরা প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতাকে একত্রিত করে বিশ্বমানের কনটেন্ট তৈরি করব।’ এই উদ্যোগ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সৃজনশীল খাতে নতুন যুগের সূচনা করবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশের শিল্প খাতে বৈচিত্র্য আনতে প্রথমবারের মতো এয়ারপ্লেন অ্যামেনিটি ব্যাগ ও কিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠান কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৮.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করবে। এ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ১,২৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি এর উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) জনাব মোঃ আশরাফুল কবীর এবং কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মি. উ ইউজিয়াং গত ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে এয়ারপ্লেন অ্যামেনিটি ব্যাগ তৈরি করবে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের উদ্যোগে মোজা, তৈরি পোশাক ও এক্সেসরিজ, কসমেটিকস এবং হেডফোন ও ইউএসবি কেবলসহ কিছু ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন করবে। এর মাধ্যমে বেপজার শিল্পখাতে নতুন ও অনন্য পণ্যের সংযোজন ঘটবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠানটিকে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং নির্বিঘ্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “এই প্রকল্প বেপজার রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে বৈচিত্র আনার ধারাবাহিক প্রয়াসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহে উৎসাহিত করি, যা শিল্পোন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।”
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মোঃ তানভীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) মোঃ খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ সালাহউদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং কেএমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণের (Authorized Representative) মাধ্যমে সম্মানিত করদাতাগণের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর কর্মকর্তাগণ এবং আইটি প্রোগ্রামারগণ Tax Representative Management System (TRMS) নামক একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ TRMS (https://trms.nbr.gov.bd/) সিস্টেমটি আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাল্টিপারপাস হলে উদ্বোধন করেন।
একটি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং করদাতা-বান্ধব রাজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে TRMS একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। করদাতার প্রতিনিধিত্ব প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে TRMS প্ল্যাটফর্মটি কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
আয়কর আইনে অনুমোদিত কর প্রতিনিধিগণ যেসকল সম্মানিত করদাতাগণের রিটার্ন দাখিল করার জন্য করদাতা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত (authorized) তাঁদের সকলের আয়কর রিটার্ন TRMS সফটওয়্যারটিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন। যেকোন করদাতা কর প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য তাঁর নিজ নামে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত OTP কর প্রতিনিধিকে প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে তাঁর রিটার্ন দাখিলের জন্য ক্ষমতা প্রদান (authorize) করতে পারবেন।
একজন আয়কর প্রতিনিধি যতজন করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করবেন তার সবগুলো রিটার্ন সংশ্লিষ্ট কর প্রতিনিধির নামের বিপরিতে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। কর প্রতিনিধিগন রিটার্নের তথ্যাদি যেকোন সময় সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
TRMS এর মূল বৈশিষ্ট্য:
• আয়কর আইন অনুযায়ী অনুমোদিত সকল কর প্রতিনিধিদের (Authorized Representative) ডিজিটাল নিবন্ধন;
• করদাতা কর্তৃক তাঁর কর প্রতিনিধিকে অনলাইন সিস্টেমে ক্ষমতা (authority) অর্পণ;
• প্রত্যেক কর প্রতিনিধি কর্তৃক দাখিলকৃত সকল আয়কর রিটার্নের তথ্য আলাদাভাবে TRMS সিস্টেমে সংরক্ষণ;
• কর প্রতিনিধিগণ কর্তৃক করাদাতাগণের পক্ষে ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ;
• এটি করদাতা এবং কর প্রতিনিধি উভয়ের জন্যই ব্যবহারকারী-বান্ধব সহজ ইন্টারফেস;
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়্যারস এসোসিয়েশনের (BTLA) সভাপতি এডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইন্সটিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICMAB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব মাহতাব উদ্দিন এফসিএমএ, ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (ICAB) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মোঃ রোকনুজ্জামান এফসিএ এবং ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (ICSB) এর প্রেসিডেন্ট জনাব এম নাসিমূল হাই এফসিএস বক্তব্য রাখেন। তাঁরা এরকম জনমূখী উদ্যোগ নেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান এফসিএমএ সারাদেশ থেকে আগত কর আইনজীবী নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
TRMS সিস্টেমটি করদাতা এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি মসৃণ সেতুবন্ধন তৈরি করবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রবিবার লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসই শরীয়াহ্ সূচক ৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে ১২০১ ও ২১৫৬ পয়েন্টে রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
রবিবার এ সময়ে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০৩টির, কমেছে ৭৪টির এবং অপরির্বতিত রয়েছে ৯৩টি কম্পানির শেয়ার।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কম্পানি হলো-খান ব্রাদার্স, শাইনপুকুর সিরামিক, সালাম স্টিল, রবি, ডোমেনেজ, আইপিডিসি, লাভেলো আইসক্রিম, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
এর আগে আজ লেনদেন শুরুর প্রথম ৫ মিনিটে ডিএসইএক্স সূচক বাড়ে ৮ পয়েন্ট।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সূচক আগের অবস্থান থেকে আরো ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে অবস্থান করে।
অপরদিকে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৫৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করে।
এরপর সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এসময়ের ২০টি কম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৮টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি কম্পানি শেয়ারের দর।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের মোমিনপুর বাজারে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচা মরিচের হাট। সেই হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। যা দুই দিন আগে দাম ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় কৃষকরা। তারা বলছেন, এ রকম দাম থাকলে অনেক লোকসান হবে তাদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ এ অবস্থা।
গত শুক্রবার মহাদেবপুরের মোমিনপুর কাঁচা মরিচের হাটের দৃশ্য এটি। সপ্তাহের প্রতিদিন বসে এখানে কাঁচা মরিচের হাট। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। এখানে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হয়ে থাকে। এখানকার মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মহাদেবপুরের কুঞ্জবন এলাকা থেকে আসা কৃষক সোলেমান আলী ও গুলবর রহমান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু হাটে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠবে না। মরিচ চাষে খরচ হয়েছে অনেক। এখন পর্যন্ত তারা যে পরিমান বিক্রি করেছেন তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশক খরচ মিটিয়ে কিছুই থাকবে না। প্রথমে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৫০ টাকায় আর এখন তা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া থেকে আসা কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, এই হাটের মরিচ ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে ভারত থেকে মরিচ আমদানি হওয়ায় হঠাৎ করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মোমনিপুর হাট কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচের হাট এটি। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস চলে এ হাট। আর প্রতি মাসে কাঁচা মরিচের বেচাকেনা হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে এখন যেভাবে দাম কমে গেছে কৃষকদের লোকসান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া ভালো হওয়ায় কাঁচা মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। প্রথমে বাজার ভালো দাম ছিল কিন্তু এখন কিছুটা কম হলে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন। তাই আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শসহ সকল ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে।
নির্মাণাধীন মহেশখালী-মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নত অবকাঠামো ও লজিস্টিক সুবিধা দেশের মৎস্য ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানান।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগের অংশ সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এবং বড় জাহাজ সরাসরি পরিচলানার সুবিধা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মৎস্য খাতে যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কারণ কোল্ড চেইন রক্ষা করে দ্রুত পরিবহন এই খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মহেশখালীর মাছ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, নতুন বন্দরটি হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্যের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্যের পরিবহন সময় ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনবে। ফলে সতেজতার মান বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা বিশ্ব বাজারেও আমাদের পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে।
মাতারবাড়ির জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আমাদের ধরা মাছ খুব কম সময়ের মধ্যে রপ্তানি হবে। এতে আমরা ন্যায্যমূল্য পাব, যা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
সামুদ্রিক মাছ ধরা ও এর প্রক্রিয়াজাতকরণ বৈশ্বিক বাজারে বহু বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা হলেও বাংলাদেশে এখনো তেমনভাবে বিকশিত হয়নি।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) প্রতিষ্ঠার ফলে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে।
বিশ্বের মোট মাছের প্রায় ৭ শতাংশ আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ৪৫ কোটিরও বেশি মানুষ বঙ্গোপসাগরের ‘ব্লু ইকোনমি’ এর ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ ‘ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশন’ (আইওটিসির)’ সদস্য। যে কারণে যা ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মাছ ধরার অনুমতি রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট দুই প্রজাতির টুনা মাছের জন্য কোটা পায়। আর অন্য দুই প্রজাতির টুনা ইচ্ছেমতো ধরতে পারে। তবে প্রতি বছরই কোটা অপূর্ণ থেকে যায়।
এই সমস্যার সমাধান ও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরাকে উৎসাহিত করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৮টি লংলাইনার ফিশিং ভেসেল (গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জাহাজ) তৈরি বা আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
মাতারবাড়ি বন্দর চাঁকড়িয়া চিংড়ি শিল্পের মতো বিদ্যমান ও নতুন উদ্যোক্তাদের ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশে দ্রুত পণ্য পাঠাতে সহায়তা করবে।
মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর রপ্তানি প্রক্রিয়ার সময় ও ব্যয় কমাবে। ফিলে, স্মোকড মাছ, রেডি-টু-ইট সামুদ্রিক খাদ্য ইত্যাদির মতো মান সংযোজিত পণ্যের রপ্তানির পথ প্রশস্ত করবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্ক্যালপ (এক প্রজাতির শামুক) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মিডার শক্তিশালী লজিস্টিক সুবিধা দেশে নতুন বিনিয়োগের ঢেউ আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদায়ী সপ্তাহে (৭ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন শেষ হয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে।
গত সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ এবং সিএস্টতে ৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শনিবার ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৩ পয়েন্ট বা ২.৭৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, দর কমেছে ২৫০টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টি কোম্পানির। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়নি ১৬টি কোম্পানির।
এদিকে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫১৯ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সুস্বাদু ও বৃহৎ আকৃতির পানের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু পানের দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দাম অত্যন্ত কম ও খরচ অত্যাধিক বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ।
জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যেখানে প্রতি বছরে ৭ হাজার মেট্রিক টন পান উৎপাদন হয়। তা ছাড়াও ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চল পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।
সরেজমিনে গিয়েও উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুরের প্রান্তিক পানচাষিদের দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩-৪ লাখ টাকা। যেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম। পান বরজের সরঞ্জামের দামও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। পূর্বে যে শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সে কারণে অনেকেই পান ররজ মেরামত করছেন না। তা ছাড়া দাম কম হওয়ায় অনেকেই বরজের পান ভাঙছেন না। ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদের চেষ্টা করছেন। পান বরজের ওপর ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে হয়েছেন ভিটে ছাড়া।
পান হাট জগশ্বরে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ৫-৩০ টাকায়। খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া।
পান বিক্রি করতে আসা পান চাষি মো. রফিক জানান, প্রতি বিড়া পান ৭ টাকায় বিক্রি করলাম। যা গত বছর ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। যাতে করে পান ভাঙা আর যাতায়াত খরচই উঠল না। এই ব্যবসা আর করা হবে না। পানচাষি তুষার জানান, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাহাদুরপুরের পানচাষি ৭০ বছর বয়ষি বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ আমার। না পারছি ভাঙতে, না পারছি রাখতে। পান বাজারে নিলে খরচের টাকাও ফিরে পাচ্ছি না।’
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, উৎপাদন বেশি ও রপ্তানি না থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু শ্রমিক ও পান বরজের সরঞ্জামের দাম পূর্বের থেকে ২-৩ গুণ বেশি। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় প্রান্তিক পানচাষিদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি। ঋণের ভারে জর্জরিত চাষিরা এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থকরী এই খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য চাই।
ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, দাম কম হওয়ায় পানচাষিদের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা শুনেছি।
চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান ও পাহাড়ি এলাকায় মসলা জাতীয় ফসল গুলমরিচের চাষাবাদের ব্যাপক উপযোগী পরিবেশ। তবে এলাকাবাসীর দাবি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষের পর্যায়ে পৌঁছায়নি শ্রীমঙ্গল। স্থানীয় চা-বাগান ও কিছু পাহাড়ি জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে গুলমরিচের গাছ দেখা গেলেও সেগুলোর ফলন মূলত নিজেদের প্রয়োজন বা সীমিতভাবে বিক্রয়ের জন্যই ব্যবহার হচ্ছে। অথচ এই অল্প চাষেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকলে শ্রীমঙ্গলে গুলমরিচ হতে পারে লাভজনক একটি মসলা ফসল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পান গাছের মতো অন্যান্য বড় গাছকে আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে গুলমরিচের চাষ। উপজেলার হরিনছড়া চা বাগানের সবচেয়ে বেশি গুলমরিচের গাছ দেখা গেছে। সেখানে চা বাগানের ভিতরে প্রায় ২৫টি গাছের সব কটিতেই ফলন এসেছে। সবুজ পাতার ফাকে ফাকে গুলমরিচগুলো আঙ্গুর ফলের মতো ঝুলে রয়েছে। সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরাও একবার হলেও ঘুরে দেখছেন গাছগুলো। উপজেলার রাধানগর ও মহাজেরাবাদ এলাকায় রয়েছে কয়েকটি গাছ। এই গাছগুলোর গুলমরিচ গাছেই থাকে, সখ করে কেউ সংগ্রহ করে, না হয় গাছেই নষ্ট হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভাবনা থাকলেও গুলমরিচ চাষ এখনো বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার অভাবে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক রূপ পায়নি। কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে উদ্যোগ নিলে শ্রীমঙ্গলের গুলমরিচ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
হরিনছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিংহ জানান, ‘আমাদের চা বাগানের সেকশনের ভেতরে প্রায় ২০ বছর আগে লাগানো বেশ কিছু গুলমরিচ গাছ রয়েছে। শ্রমিকরাই এসব গাছের দেখাশোনা করেন। গাছগুলোতে ফলনও আসে, তবে বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা হয় না। গাছগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে, দেখতেও সুন্দর লাগে।
পাইকারি মসলার দোকান মেসার্স মানিক দেব-এর পরিচালক তাপস দেব জানান, ‘স্থানীয় কিছু চাষি আমাদের কাছে গুলমরিচ বিক্রি করতে আসে, তবে পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দোকানে বিক্রি হওয়া গুলমরিচের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা। দেশে যদি গুলমরিচ চাষ ব্যাপক হতো তাহলে আমরা কম দামে কিনতে পারতাম, বাজারেও দাম কমত।’ বর্তমানে প্রতি কেজি কালো গুলমরিচ ১২০০ টাকা এবং সাদা গুলমরিচ ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গুলমরিচ চাষের জন্য কাটিং (বাইন) সংগ্রহ করে মাটিতে লাগাতে হয়। প্রায় ৬ মাসের মধ্যে ফলন আসে। গাছের বয়স দুই বছর হলে তা থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তখন এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকাগুলোর মাটি গুলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হেক্টর জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে এর চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে মহাজেরাবাদসহ দশটি জায়গায় চারা রোপণ করেছি। এখন কেউ চাষ করতে আগ্রহী হলে আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিমানে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বুধবার থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে।
বিইআরসি ঘোষিত নতুন দামে দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে জেট ফুয়েলের লিটারপ্রতি দাম ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৬ টাকা ৯ পয়সা করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে জেট ফুয়েলের লিটারপ্রতি মূল্য শূন্য দশমিক ৬৫০২ ডলার থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬৩৩৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত আগস্টে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি লিটার ৯৮ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে শূন্য দশমিক ৬৪০১ ডলার থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৬৫০২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী, দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ডিউটি ফ্রি (শুল্ক ও মূসকমুক্ত) এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য শুল্ক, মূসকসহ জেটএ-১-এর (এভিয়েশন ফুয়েল) মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা এখন বিইআরসির হাতে।
এর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এই দাম নির্ধারণ করত। চলতি বছরের শুরু থেকে এ দায়িত্ব চলে যায় বিইআরসির কাছে।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিপিসি গত ২০ জানুয়ারি জেট ফুয়েলের মূল্যহার-সংক্রান্ত প্রস্তাব দেয়। পরে পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিপণন চার্জ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনে জমা দেয়।
বিমান সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি এবং মানও আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়।
এ কারণে এখানকার বিমানভাড়া তুলনামূলক বেশি নির্ধারণ করতে হয়।
কাতারে ইসরায়েলি হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বানের পর বুধবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। তবে দুর্বল চাহিদা ও বাজারের সামগ্রিক মনোভাবের কারণে এই বৃদ্ধির গতি সীমিত ছিল।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬১ সেন্ট বা ০.৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ডলারে। একই সময়ে মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড তেলের দাম ৬১ সেন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩.২৪ ডলারে।
ওএএনডিএ-এর সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক কেলভিন ওং বলেন, কাতারে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের সরবরাহ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদি ওপেকপ্লাস সদস্যদের তেল স্থাপনাগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়, তাহলে স্বল্পমেয়াদে তীব্র সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে।
এই হামলায় ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই হামলাকে শান্তি আলোচনার জন্য বড় হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।
হামলার পর বাজারে প্রথমে তেলের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে যায়, তবে পরে যুক্তরাষ্ট্র দোহাকে আশ্বস্ত করে যে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না এবং সরবরাহে কোনো তাৎক্ষণিক বিঘ্ন না ঘটায় মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
এদিকে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা চীন ও ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো।
চীন ও ভারত রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতা। ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই দুই দেশ রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
এলএসইজি-এর বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন বা ভারতের মতো বড় ক্রেতাদের ওপর যদি শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে তা রুশ তেলের রপ্তানি বিঘ্নিত করতে পারে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ সংকোচনের মাধ্যমে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি আনতে পারে।
উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
০২। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাস্টমস হাউস/স্টেশনে আমদানিকালে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণায় প্রদত্ত পণ্যের বর্ণনা ও HS Code কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের নমুনা কিংবা শুল্কায়ন পরবর্তী সময়ে পণ্যের ঘোষিত বর্ণনা পরিবর্তিত হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স অথবা প্রাপ্যতা শীট বা সংশ্লিষ্ট Utilization Declaration (UD) তে অন্তর্ভূক্ত থাকে না। ফলে শুল্কায়নকালে উহা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে যথাসময়ে কাঁচামাল/পণ্য খালাস না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটছে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবগত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি বিবেচনায় নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করা হলো:
(ক) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন HS Code নিরূপণ করলে এবং নিরূপিত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট এর সাথে মিল থাকলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এই নিরূপিত HS Code বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
(খ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বর্ণনা নিরূপণ করলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উক্তরূপ নিরূপিত পণ্যের বর্ণনা বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
গ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিন্ন HS Code নিরূপণ করা হলে এবং বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে তার প্রাপ্যতায় উক্ত HS Code অন্তর্ভুক্ত করলে কাস্টমস হাউস এর কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করবেন এবং পণ্য চালান খালাসের তথ্য সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
০৩। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে; এবং বর্তমানে উক্তরূপ কারণে শুল্কায়ন নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান পণ্যচালানসমূহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।