সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানিব্যয় কমেছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার পরও বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বস্তি আসছে না। উল্টো দিন যত যাচ্ছে, অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন (৫৬৭ কোটি ডলার) ডলার। গত বছরের একই সময়ে অবশ্য এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল এর চেয়ে বেশি, ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে এত ঘাটতি দেখা যায়নি। তার আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচকে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল।
অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ঠিক। কিন্তু সামগ্রিক হিসাবে নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি ব্যয় এখনো বেশি। সে কারণে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি বাড়ছে। মনে হচ্ছে, গত অর্থবছরের মতো এবারও বড় ঘাটতি নিয়েই অর্থবছর শেষ হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। পুরো অর্থবছরে সেই উল্লম্ফন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়েও উল্লম্ফন হয়েছিল; ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। সে কারণেই ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি চূড়ায় উঠেছিল।
এবার আমদানি ব্যয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবৃদ্ধি আমদানির চেয়ে রপ্তানিতে বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক কম, ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৫ শতাংশের মতো। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে এই পাঁচ মাসে ২১ শতাংশের মতো নেগেটিভ (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি হলেও এবার ২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে লেনদেন ভারসাম্যে ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
গত অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্যে পাহাড়সম ঘাটতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল মন্তব্য করে অর্থনীতির বিশ্লেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমদানিতে এখনো যে গতি রয়েছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে যদি ভালো প্রবৃদ্ধি না হয়, তাহলে এবারও ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে।’
বেশ কয়েক বছর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই বছর। তার আগে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতি ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার
নানা পদক্ষেপের পরও আমদানি ব্যয় খুব একটা কমছে না। এখনো প্রতি মাসে পণ্য আমদানিতে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আর এ কারণে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে বাংলাদেশ রপ্তানির চেয়ে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ অবশ্য এর চেয়ে বেশি ছিল, ১২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৩২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে ৩১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
এ হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম পাঁচ পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। তবে এবার এই সূচকে উল্লম্ফন নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। ৫ মাসে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার কিন্তু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওই দুই মাসেই দেড় বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অথচ প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি করে পাঠিয়েছিলেন। তবে, নভেম্বর মাস থেকে রেমিট্যান্স ফের বাড়তে শুরু করেছে। নভেম্বর মাসে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ডিসেম্বর মাসে আরও বেড়েছে, ১৭০ কোটি ডলার এসেছে। সব মিলিয়ে অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৮ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
সেবা বাণিজ্যেও ঘাটতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে সূচকে ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থবছর শেষ হয়েছিল গত ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওভারঅল ব্যালেন্সে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি
আর্থিক হিসাবেও ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত ছিল। ১৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় গত আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত ছিল বলে জানান আহসান মনসুর।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কারের ফলে ঢালাওভাবে অর্থপাচার কিছুটা বন্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
টিআইর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি। তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর।
অর্থপাচার কমেছে কি না জানতে চাইলে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কিছুটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাত ছিল অর্থপাচারের অন্যতম খাত। সেখানে কিছু সংস্কার হয়েছে, যে কারণে আগে ঢালাওভাবে এখানে জালায়াতির সুযোগ ছিল, সেটা বন্ধ হয়েছে। যে অ্যাক্টররা জড়িত ছিল, তাদের অনেকেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছে কিংবা দেশের বাইরে আছে। তাদের সেই ভূমিকা নেই বললেই চলে। যদিও নতুন অ্যাক্টরের জন্ম হয়নি বা হচ্ছে না, এটা আমরা বলতে পারবো না।
ব্যাংক খাতে আরও অনেক বেশি সংস্কারের প্রয়োজন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ খাতে উল্লেখযোগ্য সংস্কার হয়েছে-পরিবর্তন হয়েছে। যে পদ্ধতি মোটা দাগে বিশাল অর্থপাচার হতো সেটা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যত অর্থ ও প্রচেষ্টা ব্যবহার করা হচ্ছে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য, তার চেয়ে বেশি অর্থ ও প্রচেষ্টা ব্যবহার করা প্রয়োজন অর্থপাচার প্রতিরোধ করার জন্য।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকেও অর্থপাচার হতো জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আসত। এর মাধ্যমে টাকা পাচার হতো। সেটাও মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। মিস ইনভয়েসিং বা আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের চালান জালিয়াতির মাধ্যমে যে অর্থপাচার হয়; সেটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে, সেটা বলতে পারব না।
দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থপাচার যেন না হয় সেটিতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
এ সময় ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর বলেন, সাংবাদিকরা না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না, আর গণতন্ত্র ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াইও সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমি গত বছর থেকেই ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি, যেখানে তরুণ, নারী, শ্রমজীবীসহ সাধারণ মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, যখন আমরা সারাবিশ্বে স্বৈরতন্ত্রের উত্থানের কথা শুনছি, তখন বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টোটা। এজন্যই আমাদের বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ বাংলাদেশকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখছে। এখানে সংস্কার কার্যক্রম চলছে—সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন ও অন্যান্য পদক্ষেপ যেগুলোর অনেকগুলো টিআই বাংলাদেশের সুপারিশে হয়েছে। এই সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ক্ষমতার প্রয়োগে গভীর পরিবর্তন দরকার। আমি বিশ্বাস করি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা সফল হবে।
স্বৈরশাসনের পতনের পর মানুষ আশা করছে সরকার দুর্নীতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনবে। এই পরিস্থিতিতে কি টিআই-এর কাজ বা প্রাসঙ্গিকতা বাংলাদেশে কমে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, একেবারেই না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হয় যে দুর্নীতির সমস্যা এখনো বাংলাদেশে আছে—যেমনটা পৃথিবীর সব দেশেই থাকে। যেখানে ক্ষমতা থাকবে, সেখানেই ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রলোভন থাকবে। তাই টিআই-এর কাজ কখনো শেষ হয় না।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য থেকে ৯৭৮ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৯ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওই অর্থবছরে এই বন্দরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৯৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
বাণিজ্য পরিচালনায় প্রতিকূলতার মাঝেও এই বন্দর সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৩২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৯ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করেছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্র জানায়, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ, কম খরচে পণ্য পরিবহন এবং দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থার কারণে বড় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ীরা এই বন্দরের ব্যবহার বাড়িয়েছে। এছাড়া এই পথে চাঁদাবাজির প্রবণতা না থাকায় ব্যবসায়ীরা আরো উৎসাহিত হচ্ছেন।
ভোমরা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন হলে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরো গতিশীল হবে। এর ফলে রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভোমরা বন্দরের অর্থনৈতিক ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভোমরা বন্দরে এনবিআর ১,৪৮৯.৩৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য স্বচ্ছ এবং সুবিধাজনক পরিবেশ বজায় রাখলে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ‘মিট দ্য বিজনেস’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রতি মাসের দ্বিতীয় বুধবার এ সভার আয়োজন করা হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এতে ব্যবসায়ীরা কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট সম্পর্কিত মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যা সরাসরি এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন।
এর ফলে এনবিআর মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে এবং সেসব সমস্যার কার্যকর সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সেপ্টেম্বর মাসের সভাটি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল ৩টায় এনবিআর-এর মাল্টিপারপাস হলরুম (কক্ষ নং-৩০১)-এ অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিচের গুগল ফর্মটি পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে এনবিআর।
ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলাামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এএমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. এম কামাল উদ্দীন জসীম। তিনি ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে ব্যাংকের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার, ক্যামেলকো, অপারেশন্স ও ডেভেলপমেন্ট উইং-এর প্রধান হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন।
কামাল উদ্দীন জসীম ১৯৯২ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের ঢাকা ইস্ট জোনপ্রধান ও বিজনেস প্রমোশন এন্ড মার্কেটিং ডিভিশন-এর প্রধানসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও শাখাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক আজকের কাগজ-সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক সম্মান এবং স্নাকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএস (আইবিএস) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ এবং ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্যসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন।
বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করায় মঙ্গলবার স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। অন্যদিকে জাপানের নিক্কেই এবং হ্যাং সেং শ্রমিক দিবসের ছুটির পরে ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে।
টোকিও থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
এশিয়ার বাজারের প্রাথমিক লেনদেনে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৫০১.৫৯ ডলার, যা চলতি বছরের এপ্রিলের আগের রেকর্ড ৩,৫০০.১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদহার কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে আশাবাদই সোনার ঊর্ধ্বগতিকে ত্বরান্বিত করেছে।
সোমবার চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা চমকপ্রদ আয় এবং এআই রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মঙ্গলবার এর শেয়ারের দাম আরো ০.৫ শতাংশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে গতকাল সোমবার হ্যাং সেং ২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মঙ্গলবার সূচক ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে সাংহাইও উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে।
চীনের শিল্প উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক পারচেইসিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সোমবার ইতিবাচক অবস্থান ছিল, যা শেয়ারবাজারকে বাড়তি সমর্থন দেয়।
স্যাক্সো মার্কেটসের চারু চানানা বলেন, যেখানে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা এআই থেকে আয় বাড়ানো এবং শেয়ারমূল্যের টেকসইতা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ও ক্লাউড থেকে বাস্তব আয়ের প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে।
সোমবার নিক্কেই সূচক ১.২ শতাংশ পড়ে গেলেও মঙ্গলবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সিউল বাজারও উত্থান দেখায়, বিশেষ করে এসকে হাইনিক্স ও স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স তাদের চীনা কারখানা নিয়ে শঙ্কা কাটিয়ে উন্নতি করেছে।
সোমবার শ্রমিক দিবসের জন্য ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, যখন ডলার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় মিশ্র লেনদেন করেছে।
শুক্রবার মার্কিন অর্থনীতির ওয়াল স্ট্রিট শেয়ারবাজার রেকর্ড উচ্চতা থেকে পিছিয়ে যায়, কারণ মুদ্রাস্ফীতির মূল তথ্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তথ্য ফেডারেল রিজার্ভকে (ফেড) কৌশলগত ব্যবস্থা নিতে কম সুযোগ দিয়েছে, যার ফলে তাদের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন মেলা ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ), ২০২৫’ শুরু হচ্ছে আগামী ৩০ অক্টোবর। এতে বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের আড়াই শতাধিক এক্সিবিউটর অংশ নেবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টোয়াব জানায়, মেলার ১৩তম আসরে চারটি প্যাভিলিয়নে ২২০টি স্টল থাকবে। এতে ২ হাজার ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে টোয়াব সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, এবারের মেলায় একটি বিশেষ মেডিকেল ট্যুরিজম জোন থাকবে।
তিনি জানান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় পর্যটন সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং তুরস্কের ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্টরা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইন এবং দেশীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলোও অংশ নেবে।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) সেশন, সেমিনার এবং গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশের পর্যটন গন্তব্য নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হবে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় পুরস্কারসহ র্যাফেল ড্র থাকবে।
টোয়াব পরিচালক (বাণিজ্য ও মেলা) মো. তসলিম আমিন শোভন বলেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের মেলা হবে বৃহৎ পরিসরে, আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ। এবার উন্নত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রদর্শকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ভেন্যুর মানচিত্র ও স্টলের তথ্য জানতে পারবেন।
মেলায় টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা তুলে ধরে আয়োজকরা প্লাস্টিক ফ্রি ইভেন্ট, গাছ লাগানো এবং দেশের আট বিভাগেই পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রচারণার অঙ্গীকার করেছেন।
মেলা ভ্রমণ ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি এবং স্টোরি টেলিং প্রতিযোগিতাও থাকবে। বিজয়ীদের কাজগুলো মেলায় প্রদর্শিত হবে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা পর্যটন খাতের উন্নয়নে এ মেলার গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন।
টোয়াব পরিচালক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মো. ইউনুছের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)-এর সভাপতি মো. তানজিম আনোয়ারও বক্তব্য দেন।
চলতি বছরের আগাস্টে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪২ কোটি (২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।
গত বছরের আগাস্টে রেমিটেন্স এসেছিল ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ পরিমাণ রেমিটেন্স আসার কথা বলেছেন।
এ নিয়ে টানা ১৩ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠালেন বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা। ২০২৪ সালের আগাস্ট থেকে রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারার মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে দুই বিলিয়ন ডলার আসা শুরু হয়েছিল।
আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্টে) মোট ৪৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসেছিল ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে ৭৬ কোটি ২০ ডলার বেশি এসেছে। যা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তবে মাসটিতে ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরের রেকর্ড পরিমাণ। আর পুরো অর্থবছর (২০২৪-২৫) জুড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা যায়, জুলাই: ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্ট: ২২২.১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বর: ২৪০.৪১ কোটি ডলার, অক্টোবর: ২৩৯.৫০ কোটি ডলার, নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার, মে: ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুন: ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
বিগত সরকারের সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমেছিল। তবে রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে উচ্চ প্রবাহের কারণে এখন বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। সরকার পতনের সময় যা ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে।
রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকার বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা আরও বাড়বে। তাতে ডলার বাজারের অবস্থাও আগের চেয়ে ভাল হবে। ডলারের যোগান বাড়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিলামে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নতুন বিনিয়োগ কম। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন না বলে মূলধন যন্ত্রপাতির আমদানি কম। তাতে ডলার চাহিদা কম রয়েছে। তবে নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে আমদানি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন ডলার দর কত থাকবে এবং আগের মত আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙ্গা হয় কিনা সে দিকটা দেখার বিষয় রয়েছে।
চলতি বছরেই ডলারের দর বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলার দর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।