ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এবার মে মাস থেকেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্কে ড. কাজী বশির মিলনায়তনের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
মেয়র তাপস বলেন, ‘আসন্ন এডিস মশার মৌসুমকে সামনে রেখে আমাদের যে কর্মপরিকল্পনা ও সূচি রয়েছে, সে অনুযায়ী মে মাসে আমরা পুলিশ প্রশাসন, রাজউক, রেলওয়ে, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করব।’
তিনি বলেন, আমাদের এসব কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব স্থাপনা ও আবাসন রয়েছে, সেগুলো যেন তারা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে। কোথাও যেন পানি জমতে না দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সর্বাত্মকভাবে একে অন্যকে সহযোগিতা করব।’
‘জুন মাসে যেহেতু বর্ষা মৌসুম শুরু হবে, তাই মৌসুমের আগেই আমরা যেন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারি সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে মে মাস থেকে অগ্রিম কিছু অভিযান আমরা পরিচালনা করব’- যোগ করে বললেন মেয়র তাপস।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস গতকাল গুলিস্তান মোড়ে বঙ্গবন্ধু ফোয়ারার সংস্কার-পরবর্তী কাজ পরিদর্শন, ২০ নম্বর ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যমান পাইপ লাইন ও খোলা নর্দমা পরিষ্কার কার্যক্রম উদ্বোধন এবং শ্যামপুর খালে চলমান বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে অঞ্চল-১ এর মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অঞ্চল-২ এর সুয়ে মেন জো, অঞ্চল-৫ এর মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কায়জার মোহাম্মদ ফারাবী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের ও রাজীব খাদেম প্রমুখ।
রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেপরোয়া গতির পিকআপ ভ্যানের চাপায় পিষ্ট হয়ে র্যাব সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় পিকআপের চালক মো. সোহেলকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১। আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর ফুট ওভার ব্রিজের নিচ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি মোঃ মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৮ এপ্রিল কাজ শেষে র্যাব সদস্য ল্যান্স কর্পোরাল সুজন শেখ র্যাব সদর দপ্তরের এমআই রুম থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে র্যাব-১ এ যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি পিকআপ ভ্যান (ঢাকা-মেট্রো-ন-২০-১৩২০) জসিমউদ্দিন মোড়ের কাছে জিনজিয়ান রেষ্টুরেন্টের সামনে সুজন শেখকে চাপা দেয়। তাৎক্ষনিক গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তরিত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ মে সুজন শেখ মারা যান।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সুজন শেখের শ্যালক মো. ফরহাদ আলী উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের আসামীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে গোয়েন্দা তথ্যে পিকআপ ভ্যানের চালক সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান এ র্যাব কর্মকর্তা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘন্টার মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এসব অভিযান চালায় ডিএমপির বিভিন্ন অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিএমপি গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ডিএমপির নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫৭ পিস ইয়াবা, ১৮৬ গ্রাম ৪৮ পুরিয়া হেরোইন ও ১ কেজি ৩৩০ গ্রাম ১১০ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
এসব ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৮ টি মামলা করা হয়েছে।
তীব্র তাপদাহে রিকশা ও ভ্যান চালকদের মাঝে ক্যাপ, বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। আজ বুধবার পহেলা মে-এর দুপুরে তেজগাঁও থানার পক্ষ থেকে ফার্মগেট ও লোকাস মোড়ের দুটি স্পটে এসব বিতরণ করা হয়।
প্রচণ্ড তাপদাহে পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘব করতে গত ২১ এপ্রিল তারিখ হতে তেজগাঁও থানার চারটি স্পটে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বুথ বসানো হয়। প্রতিটি বুথেই প্রতিদিন ১০০ লিটার পানি ও ১০০ স্যালাইন দেওয়া হয়। আজ মহান মে দিবস উপলক্ষে উক্ত চার বুথের পাশাপাশি ফার্মগেট ও লোকাস মোড় এলাকার দুটি স্পটে ক্যাপ, মিনারেল ওয়াটার ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়। মূলত রিকশা ও ভ্যান চালকদের মাঝেই এগুলো বিতরণ করা হয়। প্রায় ৫০০ রিকশা ও ভ্যান চালকের মাঝে এগুলো বিতরণ করা হয়। এসময় ঢাকা সিটি করপোরেশন ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মনজুর এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক আবু সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১। গোয়েন্দা তথ্যে মতে, আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিমানবন্দর ও টঙ্গীর পশ্চিম এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদরে কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ৩টি ছুরি, ১টি লোহার চেইন, ৩টি খুর ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আকাশ (২০), সাব্বির মোল্লা (২৪), মো. বাবুল মিয়া (৩২), মো. মিন্টু (৩৫), মো. জসিম (২৭), মো. মোশারফ করিম (২০) ও মো. রাব্বি (১৯)।
র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি মো. মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসা যাত্রীরা যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বস্তির সঙ্গে চলাচল করতে পারে এ লক্ষ্য নিয়ে ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি এবং কিশোরগ্যাং চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-১ এর সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেপ্তার আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও এসময় জানান এ কর্মকর্তা।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী হৃদয় মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পরলে গ্রেপ্তার এড়াতে ব্লেড দিয়ে নিজের বুক ও পেট কাটতে থাকেন হৃদয়।
আজ মঙ্গলবার তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, হৃদয় তেজগাঁও থানার তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী। তিনি দূরপাল্লার বাসের জানালার পাশে বসা যাত্রীদের ব্যাগ, মোবাইল ছিনিয়ে পালিয়ে যান। যেহেতু মোবাইল, ব্যাগ ছিনিয়ে নিলেও দূরপাল্লার বাসগুলো থামেনা কিংবা যাত্রীরাও আর নামে না, তাই এসব যাত্রীদের টার্গেট করেন হৃদয়। ছিনতাই করতে গিয়ে যদি ধরা পরেন তখন নিজের বুকে, পেটে ব্লেড মারতে (কাটতে) থাকেন। তবুও কেউ ধরতে চাইলে তার গায়ে মলমুত্র ছুড়ে মারেন। থানা হাজতে আনলে সেখানেও মল ত্যাগ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে সোমবার রাতে সোঁনারগাও ক্রসিং এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও রয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৪ সালের ২য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে সংসদে অধিবেশন চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবন ও এর পাশ্ববর্তী এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
আদেশে বলা হয়, আগামীকাল বুধবার রাত ১২টা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ধরণের অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও যে কোন প্রকার সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষেধ করা হয়েছে।
যেসব এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে–
ময়মনসিংহ রোডের মহাখালী ক্রসিং থেকে পুরাতন বিমান বন্দর হয়ে বাংলামোটর ক্রসিং পর্যন্ত, বাংলামোটর লিংক রোডের পশ্চিম প্রান্ত থেকে হোটেল সোনারগাঁও রোডের সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত, পান্থপথের পূর্বপ্রান্ত থেকে গ্রীন রোডের সংযোগস্থল হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত, মিরপুর রোডের শ্যামলী মোড় থেকে ধানমন্ডি-১৬ (পুরাতন-২৭) নম্বর সড়কের সংযোগস্থল, রোকেয়া সরণির সংযোগস্থল থেকে পুরাতন ৯ম ডিভিশন (উড়োজাহাজ) ক্রসিং হয়ে বিজয় সরণির পর্যটন ক্রসিং, ইন্দিরা রোডের পূর্ব প্রান্ত থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ এর পশ্চিম প্রান্ত, জাতীয় সংসদ ভবনের সংরক্ষিত এলাকা এবং এই সীমানার মধ্যে অবস্থিত সবগুলো রাস্তা ও গলিপথ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২য় অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
রাস্তার পাশের বিড়ি, পান ও চায়ের দোকান রাত ১১টার পর বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
আজ রোববার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে গত মার্চ মাসের অপরাধ পর্যালোচনা বিষয়ক এক সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছিনতাই ও অপরাধ প্রতিরোধে রাতে রাস্তার মোড়ের দোকানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় এসব অস্থায়ী দোকানে অপরাধীরা সারা রাত আড্ডা দেয়, আর সুযোগ পেলেই ছিনতাই করে।
তিনি বলেন, রাস্তায় পুলিশের স্টিকার লাগানো কোন গাড়ি দেখলে ডিউটিরত পুলিশ অবশ্যই যাচাই করবেন যে, সেটা আসলেই কোন পুলিশ অফিসারের গাড়ি কি না। কারণ গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে বা ডিএমপির লোগো লাগিয়ে সন্ত্রাসীদের চলাফেরার তথ্য পাওয়া গেছে। যদি যাচাই করে দেখা যায় সেটা পুলিশের গাড়ি নয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডিএমপির ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ এই বিষয়টি নজর রাখবেন।
কমিশনার বলেন, অন্যান্য রমজানের চেয়ে এবার রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে ক্রাইম বিভাগও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ট্রাফিক বিভাগের একার কাজ, এমনটা ভাবা যাবে না। ক্রাইম বিভাগের যাদের সামনে রাস্তায় যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা যাবে তিনি সেখানে কাজ করবেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, কোন সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী যেন কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্ক সৃষ্টিকারী কোন কাজ যেনো ঢাকা মহানগর এলাকায় না হয় সেদিকেও সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এই ধরনের অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর থাকতে হবে।
এর আগে ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গত মার্চ মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করেছেন ডিএমপি কমিশনার।
অনুষ্ঠানে সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহার সঞ্চালনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মুহা. আশরাফুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ; যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড় এলাকায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এক রিকশা চালক রিকশা চালানো অবস্থায় অসুস্থ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়েন। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত ওয়ারী বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে রক্ষা পায় ওই রিকশাচালকের প্রাণ।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, যাত্রীসহ ফলমূল নিয়ে ওই রিকশাচালক রিকশা চালিয়ে যাচ্চিলেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে চলন্ত রিকশা থেকে ঢলে পড়েন। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) পবিত্র বিশ্বাস তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
এ সময় যাত্রাবাড়ী মোড়ে দায়িত্বরত অন্যান্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় অসুস্থ রিকশা চলককে উদ্ধার করে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে আসা হয়। তারপর ওই রিকশাচালকের মাথায়, চোখে ও মুখে পানির ছিটিা দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ বক্স থেকে সাধারণ পথচারিদেরদের জন্য বিলি করা পানি ও স্যালাইন অসুস্থ রিকশাচালককে খাওয়ালে তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হন।
সুস্থ হওয়ার পর রিকশাচালক জানান, তিনি রিকশা চালাচ্ছিলেন। প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি চলন্ত রিকশা থেকে পড়ে যান। পুলিশের দ্রুত সহযোগিতার জন্য তিনি তার প্রাণ ফিরে পেয়েছেন বললেও জানান তিনি। তা না হলে হয়তো হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যুও হতে পারতো। এজন্য তিনি ট্রাফিক পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ওয়ারী বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক পবিত্র বিশ্বাস জানান, ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের আয়োজনে যাত্রাবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে গত ছয়দিন ধরে পথচারী এবং অসহায় মানুষদের জন্য পানীয় ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এর সুফল হিসেবে আজ অসুস্থ রিকশাচালককে সুস্থ করতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শুরু থেকেই ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান মহানগরবাসীর পাশে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার নির্দেশে রাজধানী জুড়ে সাধারণ জনগণ, পথচারী ও রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রবিউল মোল্লা (২৩), জাবেদ হাওলাদার (২৩), মো. তাছিন (১৮) ও মো. রবিউল মীর (১৮)। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি এম. জে. সোহেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যে অভিযান চালিয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ১টি সুইচ গিয়ার চাকু ও ৩টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের দেয়া তথ্যের বরাতে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তারা বেশ কিছুদিন যাবৎ ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চাকু/ছুরির ভয় দেখিয়ে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পাড়া মহল্লায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. মাহফুজুর রহমান সন্ধ্যায় এক খুদে বার্তায় জানান, রাজধানীর উত্তরা থেকে কিশোর গ্যাং 'বুলেট গ্রুপ'- এর ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি।
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা- এই ৪ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। এছাড়া ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর অপরাধ দেখা যায়। এছাড়া যারা কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা তাদেরও তালিকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে 'কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের কিশোর আগামীদিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সী কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি কিশোর গ্যাং।
কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে ওসিরা কিশোর গ্যাং বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে আসল কাজ হবে পরিবার থেকে। মা, বাবা বড় ভাই-বোন এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।
মোবাইলের দুটি দিক উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। একটি মোবাইল একটি লাইব্রেরি, একটি জ্ঞান ভাণ্ডারও। মোবাইলের পজিটিভ দিক শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবহার করে সেই শিক্ষাটা অভিভাবকদের দিতে হবে। ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।
কিশোর গ্যাংয়ের গড ফাদারদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা যারা রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অদ্ভুত-অদ্ভুত নাম রয়েছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা মদদদাতা, গড ফাদার তারা ওইভাবে গড ফাদার নয়। তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছে বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
টিকটকে অশালীন কন্টেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই নেতিবাচক। ইতোমধ্যে এমন টিকটকারদের আমাদের সাইবার টিম আইনের আওতায় এনেছে। পুলিশের সাইবার টিম থেকে নিয়মিত বিটিআরসি'র কাছে বিভিন্ন কনটেন্টের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা গ্রহণ করা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাজ নয়, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনসাধারণের কাজ। জনগণ সোচ্চার হলে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে।
কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কাউন্সিলদের নাম এসেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলদের কিছু অনুসারী রয়েছেন যাদের ১৮ বছরের উপরে বয়স। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিলর কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি। কাউন্সিলদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন তারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল। বেশিরভাগ কিশোরদের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আইনের আওতায় পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানো হচ্ছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, সমাজের ভদ্রলোকরা মনে করেন থানায় অভিযোগ দিতে গেলে বিপদে পড়বেন এজন্য সেই ভয়ে থানায় যান না। এটি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিক। যারা সমাজের ভালো মানুষ, শান্তি প্রিয় মানুষ, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন তবে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যায়। আমি সেটির আহ্বান জানাই। সমাজে ভালো মানুষ যারা তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ত্রুটিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক বন্ধনের ঘাটতি, মাদকের সহজলভ্যতা, দারিদ্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব, সুশাসনের ঘাটতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবসহ নানা কারণে শিশু কিশোররা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতাকে আরও বেশি উস্কে দিচ্ছে।
প্রতিযোগিতায় শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে ঢাকা কমার্স কলেজ। বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, জিয়া খান, অনিমেষ কর ও কাওসার সোহেলী।
রাজধানীর ডেমরার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ডে থামিয়ে রাখা অছিম পরিবহনের বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপির তিন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
তারা হলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি (৩৭), নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাহেদ আহমেদ (৩৮), বিএনপি কর্মী এবং মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়িচালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩)।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ডেমরার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম (২২) ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর ডেমরা থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে মামলাটি গত ১১ নভেম্বর সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অ্যান্টি ইলিগাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের প্রথমেই দুইজন ভুক্তভোগীর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত মো. নাইমের (২২) বাড়ি বরিশালের কোতোয়ালি থানা এলাকায়। নাইমের বাবার নাম আলম চৌকিদার এবং মায়ের নাম পারভীন বেগম। তারা ডেমরা এলাকাতেই থাকতেন। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে অল্প বয়সেই কাজে নেমে পড়েন নাইম। অবশেষে দায়িত্ব পলন করতে গিয়ে বাসের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি মারা যান। অপর ভুক্তভোগী মো. রবিউল (২৫) একই বাসে নাইমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনের তাপে ঘুম ভেঙে যায় তার। কিন্তু ততক্ষণে তার শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনোমতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনি গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। পরে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ওই গাড়িটি ঘটনার দিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এ গাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের দেয়া তথ্যের বরাতে আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের ধারাবাহিকতা এবং নাশকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সি তার নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন। নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটানো যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে তিনি (মনির মুন্সি) বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেন। তিনি নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তার অপর সহযোগী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই দিন রাত ২টার পর বেশ কয়েকবার ডেমরার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকা গাড়ি নিয়ে রেকি করেন। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্সড (নির্দিষ্ট) করে বড়ভাঙা মার্কেটে চলে যান। সেখান থেকে তারা ২ লিটারের একটি পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করেন রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগ গাড়িতে অবস্থান করেন এবং মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করা অছিম পরিবহনের গাড়ির কাছে যান। ড্রাইভারের সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দেন এবং বোতলটি সেখানে ফেলে দেন। তারপর দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে আগুন ধরিয়ে পেট্রোলের উপর ছুড়ে মারেন। আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য সড়কের রং সাইড দিয়ে ডেমরা এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন মুন্সি পেট্রোল পাম্পে রাত্রি যাপন করে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে তারা পেট্রোল পাম্প থেকে বাসায় চলে যান।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ ক্লু-লেস ছিল। আমরা বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে ও তদন্ত করে একটি গাড়ি শনাক্ত করি। পরে সেই গাড়ির সূত্র ধরে একে একে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আগুন দেওয়ার জন্য দুই লিটারের একটি পানির বোতলে মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল সংগ্রহ করে, সেটিও জব্দ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি কর্মকর্তা বলেন, মনির মুন্সি নির্দেশদাতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে এ কাজ করেন। তিনি আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। দলের আরও বড় পোস্ট পাওয়ার আশায় এ কাজ করেন তিনি।
এই ঘটনায় নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের নাম পেয়েছি ৷ তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা তাদেরও গ্রেপ্তার করব। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য আমরা বলব না।
রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগে। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নির্বাপনে কাজ করে। জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। তবে প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কে বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
চলমান দাবদাহে নগরে কিছুটা স্বস্তি আনতে সড়কে সড়কে পানি ছেটানোর কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গত সপ্তাহে শহরের বেশ কিছু জায়গায় এই কার্যক্রম শুরু হলেও আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
উদ্বোধন শেষে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এখন থেকে প্রতিদিন ডিএনসিসির ১২টি গাড়ি দিয়ে নগরের বিভিন্ন সড়কে পানি ছেটানো হবে। প্রধান সড়কগুলোতে দুটি ওয়াটার ক্যানন দিয়ে আর ছোট সড়কে ১০টি ওয়াটার বাউজার দিয়ে পানি দেবে ডিএনসিসি।
তিনি আরও জানান, ডিএনসিসির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের পরামর্শে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এভাবে পানি ছেটানো হবে। এই কার্যক্রম চলবে উত্তরা, মিরপুর, ফার্মগেট, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীর পার্কগুলোতেও এভাবে পানি ছেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি কোনো কাজ করবেন না। তিনি পরামর্শ দেবেন সে অনুযায়ী ডিএনসিসি কাজ করবে। অনেকেই দেখছি তাকে নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। তিনি নাকি আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে বেতন নেন। চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন আর্শট রকফেলার ফাউন্ডেশন। সারা বিশ্বে তারা সাতজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি সিটি করপোরেশন থেকে এক টাকাও পান না, তার কোনো চেয়ারও নেই।’
এসময় রাজধানীর পথচারীদের পানি পানের সুবিধার জন্য প্রতিটি দোকানের সামনে একটি পানির ড্রাম এবং একটি গ্লাস রাখতে দোকানদারদের অনুরোধ করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।