হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট থেকে ৫ কোটি টাকার স্বর্ণসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের সহকারী পরিচালক সাবরিনা আমিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে যুগ্ম পরিচালকের নির্দেশনায়, শিফট ইনচার্জের নেতৃত্বে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল এয়ারপোর্ট সি-শিফটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সতর্কতামূলক অবস্থান গ্রহণ করেন।
সকাল ৬ টা ৫০ মিনিটের দিকে বিমানটি ০৭ নং বোর্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইটের ১৪এ এবং ১৩এফ সিটের যাত্রী লু জিহংলিয়েং এবং ছেন জেং-এর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। তল্লাশি করে তাদের ব্যাগে তিনটি চার্জার লাইট জব্দ করা হয়।
চার্জার লাইট গ্রিন চ্যানেলের ইনভেন্ট্রি টেবিলে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে খোলা হয়। চার্জার লাইটের ভেতরে থাকা ব্যাটারির মধ্য থেকে ৪৬ পিস স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মোট ওজন পাঁচ হাজার ৩৩৬ গ্রাম বা ৫.৩৩৬ কেজি। আটক স্বর্ণের আনুমানিক বাজার মূল্য পাঁচ কোটি এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বর্ণবারগুলো কাস্টম হাউসের শুল্ক গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে বিমান বন্দর থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে স্থায়ী ২টিসহ মোট ২০টি পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। পশুর হাটগুলোতে দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী দুই সিটিতে পশুর হাট বসেছে। চলবে ১৭ জুন অর্থাৎ ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত মোট ৫ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক হাট বসলেও হাটগুলোতে মূলত কয়েক দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করে পশুর পিকআপ ও ট্রাক। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।
আগামীকাল রোববার রাত পার হলেই পরের দিন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীজুড়ে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার। উত্তরার দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গায় বসেছে বড় দুটি পশুর হাট। এই পশুর হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল, ভেড়া। শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। গতকাল পর্যন্ত পশুর দাম একটু কম থাকলেও আজ দাম কিছুটা চড়া। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মতে দাম এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
শনিবার উত্তরার গরুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটভর্তি বিভিন্ন জাতের দেশীয় ছোট, মাঝারি ও বড় জাতের অসংখ্য গরু উঠেছে, হাটে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে পশুর হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম কমে যাবে। তখন কোরবানির পশু তারা সস্তায় কিনবেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাই আজকের মধ্যেই পশু কিনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে উত্তরার হাটে এসেছেন মোস্তফা মাতাব্বর, মো. রাসেল ও রফিক নামে তিন গরু ব্যবসায়ী। তারা জানান, এ বছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন। উত্তরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই তাদের পছন্দের গরু কিংবা ছাগল কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বাজারে বড় গরুরও কমতি নেই। তবে ছোট ও মাঝারি জাতের গরুর চাহিদাই বেশি।
হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা সালাম বেপারী বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টাজুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এ ছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, গরুকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শিশির হাটে এসেছেন গরু কিনতে। তিনি বলেন, ‘যতটুক ঘুরে দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে এবার গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কমই আছে।’
গরুর পাশাপাশি হাটে প্রচুর ছাগল, ভেড়াও উঠেছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির একটি ছাগল ক্রয় করা সম্ভব। বগুড়ার নবাব, লাট বাহাদুর, কালো মানিক ও লাল বাদশা নামে ৪টি বড় জাতের বিশাল গরু উত্তরার হাটে আনা হয়েছে। এগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ১২-১৫ লাখ টাকা।
উত্তরার শ্রমিক নেতা রুবেল জানান, ‘গতকাল রাতে আমার বন্ধু উত্তরার গরুর হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বেশ বড় আকৃতির গরু কিনেছেন। আমার কাছে মনে হলো হাটে হঠাৎ গরুর দাম কমে গেছে। এতে আমি বেশ খুশি এ কারণে যে, এ বছর অনেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে পারবেন।’
রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন শুধু ছোট সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া বাজারে প্রচুর পরিমাণ ছাগলও উঠেছে। বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। ছোট খাসির দাম ১০-১৫ হাজার টাকা। মাঝারি খাসি ২০-২৫ হাজার এবং বড় জাতের খাসি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গাবতলী পশুর হাটে ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট তোলা হয়েছে। উট দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও ইউটিউবাররা। মো. মাহফুজুর রহমান অপু দুটি উট এক মাস আগেই কিনেছেন। এরপর সড়কপথে উট দুটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উটের মালিক মো. মাহফুজুর রহমান অপু বলেন, ‘প্রতি উটে ১৪-১৫ মণ মাংস হবে। আমার পরিবার উটের ব্যবসার সঙ্গে ২০-৩০ বছর ধরে জড়িত। আমার বাবাও এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরিচর্যা হিসেবে ঘাস, কুড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে উট দুটিকে। রাজস্থান থেকে দুটি উট নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা। আমরা দুটি উটের দাম চাচ্ছি ৬০ লাখ টাকা। তবে কিছু কমে হলেও বিক্রি করব।’
উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার মো. কফিল উদ্দিন মেম্বার বলেন, ‘হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমাণ গরু উঠেছে। তবে পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। আশা করছি, আজ রোববার আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল থেকে হাটে পশুর বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। এই হাটে শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল নেওয়া হচ্ছে। হাটে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই।’
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসেনি।
ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।
ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে- খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন, কাঁচা চামড়া বহনকারী যানবাহনের নিরাপত্তায় পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। পশুর চামড়া কেনা-বেচায় চাঁদাবাজি বা কেউ প্রভাব বিস্তার করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
এছাড়া, ভারতের কলকাতায় নিহত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলার তদন্তে কোন চাপ নেই বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে শনিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ, কাঁচা চামড়া বহনকারী যানবাহনের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণন, কাঁচা চামড়া বহনকারী যানবাহনের নিরাপত্তায় পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। চামড়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে থাকবে পুলিশের কঠোর নজরদারি।
তিনি বলেন, চামড়া কেনাবেচায় যাতে কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচায় চাঁদাবাজি বা কেউ প্রভাব বিস্তার করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের দিন যাত্রাবাড়ী, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, গাবতলী ও অন্যান্য এলাকার ব্রিজের ওপর বা রাস্তার ওপর চামড়া বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। লবণের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
সমন্বয় সভা শেষে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রতি বছর ঢাকা থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায়। সেই সময়ে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ফাঁকা থাকে। প্রতি বছরই পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়। এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চেকপোস্ট, টহল, ফুট প্যাট্রল ও গোয়েন্দা নজরদারি। সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি বাসাবাড়িতে এক বা দুজন প্রহরী থাকেন, তারাও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন।
কোরবানির চামড়া পাচার বন্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা থেকে বহির্গমন পথগুলোতে চেকপোস্ট ও পুলিশের টহল বসানো হবে। শুধু গাবতলী হয়ে চামড়ার গাড়িগুলো হেমায়েতপুর পর্যন্ত যেতে পারবে। এছাড়াও সব জেলার চামড়া যাতে সীমানা দিয়ে বাইরে যেতে না পারে সে ব্যাপারেও আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া এমপি আনার হত্যা মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা গ্রেপ্তারের পর তদন্তে কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, মামলা তদন্তে কারো হস্তক্ষেপ নেই। স্বাধীনভাবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ভারতের কলকাতায় নিহত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু। একই মামলায় এর আগে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, একই মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তারের পর আট দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তবে এমন একটি চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো চাপবোধ করছে না।
তিনি আরও বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ বিষয়ে করা মামলার তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। মামলা তদন্তে কারও হস্তক্ষেপ নেই। স্বাধীনভাবে আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস্) বিপ্লব কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, চামড়া ব্যবসায়ীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের তরুণ মেধাবী উদ্যোক্তা তাসনিম মঞ্জুর লাবিবা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে আসছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজ উদ্যোগে কিছু করার। এরই মধ্যে সেই স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে মাইক্রো বায়োলোজিত অধ্যয়নরত এই ছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি গত কয়েক বছর আগে নিজ প্রচেষ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নেইল আর্ট ডিজায়ার’ নামের একটি পেইজ চালু করেছেন। সময়ের সঙ্গে ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পিপাসুদের আগ্রহের তালিকায় চলে এসেছে এর রকমারি প্রোডাক্টগুলো। ১৩ জুন ছিল অনলাইন প্রোডাক্ট বেইজড পেইজটির ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
পেইজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের সেলিব্রেটি কনভেনশন সেন্টারে (আই হসপিটালের পাশে) চার দিনব্যাপী রকমারি এক মেলার আয়োজন করে। মেলার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঈদ নেইল আরর্ট এন্ড মেহেদি ফেস্ট’। সোল সিস্টারর্স-এর আয়োজনে ১৩ জুন থেকে এই মেলা চলবে আগামীকাল ১৬ জুন পর্যন্ত। শুরু থেকেই জমে উঠেছে এই মেলা।
এখানে নেইলের উপর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ১৮ ক্যারেট গোল্ডের বিভিন্ন কারুকাজ দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি বাহারি মেহেদির কাজ করা নেইলও শোভা পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ‘নেইল আর্ট ডিজায়ার’ তাসনিম মঞ্জুর লাবিবা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমার বিশ্বাসও হচ্ছে না এতটা জমে যাবে মেলাটি। শেষের দিকে আরও ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবার ভালোবাসা এবং এমন সহযোগিতা পেলে আমি দেশ ও দেশের ফ্যাশন সচেতন মানুষদের আগামীতে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারব।’
লাবিবার কাছ থেকে জানো গেল, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে নেইল বিউটিফিকশনের উপর একটা কোর্স করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, তাসনিম মঞ্জুর লাবিবা বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ইলা খানের ভাগ্নি।
রাজধানীর বনানীতে বিনিময় পরিবহন নামের একটি বাস এক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে কিছুদূর টেনে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ওই মোটরসাইকেলের চালক।
আজ শরিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর বনানী ২৭ নম্বর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
নিহতের নাম আক্কাস আলী। তার বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাজপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী সাহান হক।
তিনি বলেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেল বনানীর ২৭ নম্বর থেকে ইউটার্ন নিয়ে উত্তরার দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিনিময় পরিবহনের বাসটি মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিয়ে কিছুদূর টেনে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।
তিনি আরও বলেন, বিনিময় পরিবহনের বাসটি ট্রাফিক সিগন্যান অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে পেছন থেকে ওই বাইকে ধাক্কা দেয়। এতে বাইকের চালক বাসের নিচে চলে যান।
ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শুরুর প্রথম দিনই রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। পদ্মা সেতু কারণে স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী ভাটা থাকলেও ঈদকে ঘিরে সড়ক ও রেলের পাশাপাশি ফের প্রাণ ফিরেছে নৌপথে। দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের নৌপথে বাড়ি পৌঁছে দিতে বাড়ানো হয়েছে দৈনিক চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যাও। অনেকটা স্বস্তি নিয়েই যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তবে টার্মিনালে প্রবেশের সড়কে তীব্র যানজট ও পন্টুনে হকারদের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার সারাদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো টার্মিনাল ও পল্টন এলাকাজুড়ে যাত্রীদের ভীড়। যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। এদিন সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পল্টুনে দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে ভিড় একটু বেশি। সবথেকে ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। বিকেলে যাত্রীদের মোটামুটি একটি অংশ বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেছেন।
এদিকে আগামীকাল শনিবার ও রোববার যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানান লঞ্চ স্টাফরা। নাড়ির টানে বাড়ির পথে বের হয়ে এই ভীড়ের মুখোমুখি হলেও যাত্রীরা বলছেন এই যাত্রা নির্বিঘ্নের। এদিকে বিভিন্ন পেশার মানুষের ঈদের ছুটি আগে শুরু হলেও সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। কর্মদিবস শেষ করে মোট পাঁচ দিনের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, শুক্রবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কেবিনের অগ্রিম টিকিট প্রায় শতভাগ বিক্রি আগেই শেষ হয়েছে। তবে সব রুটেই কমবেশি লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় এখনও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। যদিও কেবিনের তুলনায় ডেকের যাত্রীর চাপই বেশি বলে জানান তারা। তবে কেবিনের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে নাব্য সংকট ও যাত্রী স্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১৫টি নৌপথ এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২৬টি নৌপথে প্রায় ৭০টি লঞ্চ নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। ঈদ ঘিরে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৮০টি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি লঞ্চ প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসছে ৯০টি।
ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রিও অনেকটা শেষের পথে। কোনো কোনো রুটে ১৬ জুন পর্যন্ত কেবিনের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটে অগ্রিম টিকিট বিক্রির হার কিছুটা কম। তবে যাত্রী চাপ বাড়তে থাকায় লঞ্চের ভাড়া কিছুটা বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের টিকিটে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ও কেবিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন ১৫ এর পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রতিদিনই যাত্রীর চাপ বাড়ছে। অগ্রিম বুকিং করা হয়েছে ১৬ তারিখ পর্যন্ত। ১৫-১৬ তারিখের কোনো কেবিন আমাদের ফাঁকা নেই।’
পটুয়াখালীগামী যাত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘ঘাটে এসেই লঞ্চ পেয়েছি। ঈদে একটু বাড়তি ভাড়া নিবে এটাই স্বাভাবিক। আশা করছি ভালোভাবেই বাড়ি পৌঁছাতে পারব। যাত্রাপথে ঝড়-বৃষ্টি না হলেই ভালো।’
লঞ্চে উঠে ব্যাগ টানছিলেন রামপুরা থেকে আসা আহনাফ খানম আসিফ। এই ব্যাংকার জানান, ‘আমি বরগুনা যাবো। যাওয়ার কথা ছিল গতকাল রাতেই। কিন্তু ওই দিনের জন্য কেবিন বুকিং করতে পারিনি। এজন্য আজ যেতে হচ্ছে। ঘাটে এসে কেবিন পাবো কিনা চিন্তায় ছিলাম, তবে কেবিন পেয়েছি, ভাড়াটা একটু বেশি নিয়েছে।’
ইলিশাগামী যাত্রী শামীম হোসেন বলেন, ‘ঘাটে আগের মতো ভিড় নেই, এসে ডেকেই বসেছি, ডেকেও চাপ কম। ভাড়াও অতিরিক্ত না।’
সার্বিক বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘কিছু রুটে অগ্রিম টিকিট অনেকটাই বিক্রি হয়েছে। বরিশালসহ কয়েকটি রুটে যাত্রী অনেক কম। তবে আমাদের লঞ্চ সংকট নেই। প্রয়োজনে আমরা যেকোনো রুটে স্পেশাল সার্ভিস দিতে পারবো। যাত্রীরা লঞ্চে উঠে ডেক ও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে।’
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কম নিচ্ছি। এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌপুলিশ, র্যাব, আনসার, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কোনও লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করে সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় র্যাবের একটি টিম আলাদাভাবে কাজ করছে। আনসার সদস্যরাও কাজ করছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।’
রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাট দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও জনসমাগমপূর্ণ একটি হাট। কোরবানির ঈদ ছাড়াও এখানে সারা বছরই পাওয়া যায় গরু-ছাগল-মহিষ। বলতে গেলে কোরবানির মৌসুমে রাজধানীর ভেতরে এই হাটের দিকেই বিশেষ নজর থাকে ক্রেতাদের।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হাটে এ বছরের আকর্ষণ পাকিস্তান থেকে আনা উট আর মিরপুরের বিভিন্ন আকৃতির দুম্বা। এসব প্রাণী দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ভিড় করছেন এ হাটে।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে গাবতলীর পশুর হটে গিয়ে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে এখনও সেভাবে পশু কেনাকাটা শুরু হয়নি বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। তবে বাজারের আকর্ষণ হিসেবে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে পাকিস্তান থেকে আনা দুটি উট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল আকৃতির উট দুটি দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সাধারণ মানুষের ভিড়ের কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা কিছুটা বিরক্ত। তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি উটও বিক্রি করা যায়নি।
অন্যদিকে, রাজধানীর মিরপুর থেকে দুটি দুম্বা আনা হয়েছে গাবতলীতে। লোকজন এসে দুম্বা দেখে দাম করে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ দামও বলছে। তবে এখনও সেই দুম্বাগুলো বিক্রি করা যায়নি।
উটের দায়িত্বে থাক পলাশ নামে এক কিশোর জানান, আপাতত উটের দায়িত্বে আমি আছি। উটগুলো পাকিস্তান থেকে আনা হয়েছে। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারব না।
উটের দাম প্রসঙ্গে এই কিশোর জানায়, বড় উটের দাম ২৮ লাখ টাকা আর ছোট উটের দাম ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক ক্রেতা বড় উট নিতে ২১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। কিন্তু আমাদের লাভ না থাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ছোট উটের দাম এখন কেউ বলেনি।
দুইটি দুম্বা নিয়ে গাবতলীতে এসেছেন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, মিরপুর-১ নম্বরে দুম্বার খামার আছে। এই খামার থেকে আমি দুম্বাগুলো কিনে এনেছি। দু’টি দুম্বার দাম দিয়েছি ৭ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাম বলছে।
আসছে কোরবানির ঈদ। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে এখন জমজমাট কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির ঈদ এলেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ। কোথাও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দেরি হলে এবার সরাসরি কল দিয়ে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে জানানো যাবে।
হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণে তাই হটলাইন চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আজ শুক্রবার বিকেলে ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, কোরবানির হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে জনসাধারণকে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে, কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য ডিএনসিসিতে কন্ট্রোল রুম স্থাপনের ওয়ার্ডভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণ করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
গত বছর বর্জ্য অপসারণে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে সফলতার কথা তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, আট ঘণ্টারও কম সময়ে বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এ বছর টার্গেট ৬ ঘণ্টায়। সব কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্নকর্মীর সার্বক্ষণিক মাঠে থাকতে হবে।
দেশের আধুনিকতম যানবাহন মেট্রোরেলে ছিনতাইয়ের অভিযোগে মো. ফরিদ ওরফে পাগলা জসিম (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তেজগাঁওয়ের কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ফরিদ ও তার সহযোগীরা মেট্রোরেলের যাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাই করেন।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ফরিদ একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারি। তার দলে আরও দুইজন রয়েছে। তারা সাধারণত রিকশাযাত্রী নারীদের ব্যাগ, মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে যায়। তবে সম্প্রতি তারা মেট্রোরেলের যাত্রীদের টার্গেট করেন। মেট্রোরেল নতুন হওয়ায় যাত্রীরা তুলনামূলক কম সাবধান থাকেন। তাই তাদের টার্গেট করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন ফরিদ ও তার দল। বৃহস্পতিবার বিকেলে মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার অংশে যাত্রীর মোবাইল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন ফরিদ ও তার সহযোগিরা। এসময় যাত্রী বিষয়টি টের পেলে তারা পালানোর চেষ্টা করেন। পরে ধাওয়া করে ফরিদকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
মেট্রোরেলের মতিঝিল স্টেশনের ছাদ থেকে একটি ড্রোন (উড়ন্ত ক্যামেরা) উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ড্রোনটি উদ্ধার করে সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের কাছে জমা দেন তারা। তবে ড্রোনটি কার বা কীভাবে এসে ছাদে পড়ল তা এখনো অজানা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাজাহান শিকদার দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১০ জুন মতিঝিলের মেট্রোরেল স্টেশনের তিন তলার ছাদে একটি ড্রোন এসে পড়েছিল। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শুক্রবার সকাল সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের টিটিএল দিয়ে ড্রোনটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় মেট্রো রেলের চলাচল বন্ধ ছিল।
তবে ঠিক কত সময় মেট্রোরেল বন্ধ ছিল তা জানাতে পারেনি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোনো কর্মকর্তা।
আর মাত্র দুই দিন বাকি কোরবানির ঈদের। এখনও জমে ওঠেনি রাজধানীর সবচেয়ে বড় গাবতলী পশুর হাট। কিছু ক্রেতা হাটে এলেও তারা মূলত বাজার দর যাচাই করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেপারিরা তাদের পশুগুলো নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
হাটের বিভিন্ন জায়গায় তাঁবু টানানো ও গেটের সাজসজ্জার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। গতকাল বিকেলে ঢাকাজুড়ে বৃষ্টির কারণে ক্রেতা সমাগম কম ছিল।
হাট ঘুরে দেখা যায়, ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-ছাগল আসা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে পশু আর বেপারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েনসহ ওয়াচ টাওয়ারও স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী ছমির মিয়া বলেন, ‘তিন দিন আগে আমি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে আয়চি। এইবার ইদে আমি ৭টি গরু আনছি। এখনও একটাও বিক্রি হয়নি। সবাই দাম শুনে চলে যায়। ঢাকার মানুষ এত তাড়াতাড়ি গরু কেনে না। তাদের তো গরু রাখার জাইগা নেই। আশা করছি শুক্রবার থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।’
রাজশাহীর তানোর থানা থেকে আসা আতাউর রহমান বেপারি বলেন, ‘আমি এবার দুইটা গরু নিয়ে আসছি। একটা অনেক বড় গরু আর একটা মাঝারি। বড় গরুর নাম রাজা বাবু। এর দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। তবে দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো ক্রেতা দাম বলেননি। আশা করছি শুক্রবার থেকে বেশি ক্রেতা আসবে। তখন হয়তো দামাদাম হবে।’
পাবনা থেকে আসা সিরাজ নামের এক বেপারি বলেন, ‘৮টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। একটি গরু ৭০ হাজারে বিক্রি হয়েছে আরও ৭টি বাকি আছে। আমার ছোট গরু, তাই চিন্তা করি না। দুই-এক দিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাবে।’
এবারের গাবতলীর হাটে মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার বেশ উপস্থিতি দেখা গেছে। আতিয়ার নামের এক ছাগল ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আমি সিরাজগঞ্জ থেকে ৬টি ছাগল নিয়ে আসছি। আমার এখানে প্রতিটি তিন থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার ছাগল আছে। দুইটা বিক্রি হয়েছে, আর ৪টা বাকি আছে।’
কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে আসা কাইসার নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূলত গাবতলীতে এলাম গরুর দাম জানতে। আমরা ৬ বন্ধু মিলে কোরবানি দেব। দাম জেনে গেলে আমাদের হিসাব করতে সুবিধা হবে।’
ইকবাল খান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আমাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই। আমরা ঈদের ২-১ দিন আগে কিনব। এমনি দেখতে এলাম। তবে এরা এবার দাম বেশি চাচ্ছে মনে হচ্ছে। গতবার আমরা দেড় লাখ টাকার যে গরু কিনেছিলাম এবার প্রায় ওই রকম গরুর দাম ২ লাখ চাচ্ছে। এখন অপেক্ষা করব দেখি দাম পড়ে কি না।’
হাটে পশুর বাড়তি দামের অভিযোগ থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় পশু সরবরাহের ব্যবস্থা বেশি আছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান। তিনি বলেছেন, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ- সব মিলিয়ে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা এক কোটি সাত লাখ। সেখানে আমাদের প্রস্তুত আছে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ পশু। ২৩ লাখ পশু বাড়তি রয়েছে।
সচিবালয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মিঠা পানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উন্নীত হওয়া উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘হয়তো কেউ নানাভাবে গরুর দাম বাড়াতে পারে। চড়া দাম হাঁকাতে পারে। কিন্তু দিন শেষে ওদের মাথায় হাত পড়বে। কারণ গরুর জোগান তো আমার আছে।’
যেসব জায়গায় বসছে কোরবানির পশুর হাট
গতকাল থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী দুটিসহ ২০টি পশুর হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসবে না।
ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।
তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
অফিসের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেল চলাচলের জন্য নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী (১৯ জুন) বুধবার থেকে এই নতুন সময় অনুযায়ী চলবে মেট্রোরেল।
মূলত, সরকারের নির্ধারিত অফিসের নতুন সময়সূচির কারণেই মেট্রোরেলের আগের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে মেট্রোরেলের পিক ও অফপিক আওয়ারের সময় পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মেট্রোলের কার্যালয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক এসব বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ৬ জুন থেকে অফিসের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়সূচি ঈদের পর ১৯ জুন থেকে কার্যকর হবে। সেজন্য মেট্রোরেলের পিক ও অফ পিক আওয়ারের সময়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সে অনুযায়ী, উত্তরা উত্তর থেকে থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আগের মতো স্পেশাল অফ পিক থাকবে। এই সময় হেডওয়ে হবে ১০ মিনিট। আর সকাল ৭টা ৩১ মিনিট থেকে বেলা ১১টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার। এই সময় হেডওয়ে হবে ৮ মিনিট। আবার বেলা ১১টা ৩৭ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ২৪ মিনিট থেকে অফ পিক আওয়ার। এ সময় ১২ মিনিট হেডওয়ে। আবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার। এ সময় হেডওয়ে ৮ মিনিট। আবার রাত ৮টা ৩৩ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত স্পেশাল অফ পিক। এ সময় হেডওয়ে হবে ১০ মিনিট।
অন্যদিকে মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত স্পেশাল অফ পিক। এই সময় হেডওয়ে ১০ মিনিট। সকাল ৮টা ১ মিনিট থেকে দুপুর ১২া ৮ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার। এ সময় হেডওয়ে ৮ মিনিট। দুপুর ১২টা ৯ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ৪ মিনিট পর্যন্ত স্পেশাল অফ পিক। এই সময় হেডওয়ে ১২ মিনিট। আবার বিকেল ৩টা ৫ মিনিট থেকে রাত ৯টা ১২ মিনিট পর্যন্ত পিক আওয়ার। এই সময় হেডওয়ে ৮ মিনিট। রাত ৯টা ১৩ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট স্পেশাল অফ পিক। এই সময় হেড ওয়ে ১০ মিনিট।’
তিনি আরও বলেন, আগের মতোই সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে শুক্রবার। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর চামড়া ও কাঁচা বা রান্না করা মাংস মেট্রো ট্রেনে বহন করা যাবে না। এর আগে আরোপিত অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আগামী ১৭ জুন মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাটের জন্য ট্রাকে ট্রাকে গরু আসা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী দুটিসহ ২২টি পশুর হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছেন খামারি ও গরু ব্যাপারিরা।
দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসবে না।
উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাসান জানান, রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবে স্থায়ী ১টি ও অস্থায়ী ৮টি হাট। এবার আজ ১৩ জুন থেকে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ৫ দিন হাট বসবে। কোরবানির পশু কেনা-বেচা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে যাতে করা যায় সে জন্য উত্তরের হাটগুলোতে সকল ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।
বাজারে ক্রেতারা কোনো নগদ অর্থ না নিয়ে এসেও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পশু ক্রয় করতে পারবেন জানিয়ে পিয়াল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইনস্ট্যান্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে যে কেউ টাকার লেনদেন করতে পারবে। এজন্য হাট এলাকায় অসংখ্য ব্যাংক বুথ থাকবে।
এ ছাড়া হাটে আসা ক্রেতাদের অজু ও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবার হাট ইজারাদারদের সতর্ক করা হয়েছে। কোনো বিক্রেতা যদি রাস্তায় হাট বসায় তবে ইজারাদারের জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে বলেও জানান এ জনসংযোগ কর্মকর্তা।
ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে-উত্তরা দিয়াবাড়ির ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, সারুলিয়ায় স্থায়ী হাটসহ ডিএসসিসি এলাকার ১১টি স্থানে পশুর হাট বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বসবে।
তিনি জানান, প্রত্যেকটি হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি করে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ ছাড়া ডিএসসিসির নির্ধারিত গাইডলাইনের বাইরে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাশাপাশি প্রত্যেকটি হাটে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নগদ অর্থের লেনদেন ছাড়া ইনস্ট্যান্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতারা অর্থের লেনদেন করতে পারবেন। এজন্য পর্যাপ্ত ব্যাংক বুথের ব্যবস্থাও থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে-খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
এদিকে কোরবানির পশুর বর্জ্য ও অস্থায়ী পশুর হাটের বর্জ্য দ্রুততম সময়ে সরিয়ে নিতে দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা এবং হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার সভা করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। উত্তর সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ ছাড়া গতকাল বুধবার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শনকালে বলেন, ২৪ ঘণ্টায় কোরবানির পশু এবং ৭২ ঘণ্টা হাটের পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে। পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা টানা তিন থেকে চার দিন কাজ করেন। তাই ঢাকাবাসী ঈদের দুই দিনের মধ্যে কোরবানি শেষ করলে ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকাবাসী খুব স্বাচ্ছন্দে কোরবানির পশু হাট থেকে কিনতে পারবেন। পশুর হাটের কারণে নগরে যানজট হবে না, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে ঢাকার দুই মেয়র নিজ নিজ এলাকার বর্জ্য অপসারণের সময়সীমাও ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ঈদের দিন ৬ ঘণ্টার মধ্যে নগরের রাস্তাঘাট থেকে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেন। একইভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
গতকাল বুধবার ঢাকায় পৃথক দুটি প্রোগ্রামে এ ঘোষণা দেন তারা। ১৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএনসিসি এলাকায় ৬টি ও ডিএসসিসি এলাকায় ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এর বাইরে ডিএসসিসির সারুলিয়ায় পশুর হাট ও ডিএনসিসির গাবতলীতে স্থায়ী হাট রয়েছে।
রাজধানীর গাবতলীতে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন ডাম্প এবং কম্প্যাক্টর ট্রাকের সংযোজন অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর সবার চেষ্টায় উত্তর সিটি করপোরেশন ৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এবার আমাদের টার্গেট ছয় ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসরণ করা। ৪০টি ট্রাক যুক্ত হওয়ায় এ বছর বর্জ্য অপসারণে আরও গতি বাড়বে। যে আটটি আধুনিক কম্প্যাক্টর ট্রাক যুক্ত হলো এগুলো সাধারণ ট্রাকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি বর্জ্য অপসারণে সক্ষম। কম্প্যাক্ট করার মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক বর্জ্য বহন করতে পারবে এই ট্রাকগুলো।’
৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, ‘ঈদে বর্জ্য অপসারণের জন্য ১০ হাজারের অধিক কর্মী কাজ করবে। ১০ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন, টুকরি, ফিনাইল দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা ও ডিএনসিসির কর্মীরা মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবেন। আমি নিজে মাঠে থাকব। জনগণকে অনুরোধ করছি যত্রতত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেবেন। গতবারের মতো জনগণের সহযোগিতা পেলে নির্ধারিত ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব।’
অপরদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণায় ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কোরবানি শেষ করার আহ্বান জানান। মেয়র বলেন, পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকাবাসী খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির পশু হাট থেকে কিনতে পারবেন। হাটের কারণে যাতে নগরে যানজট না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।