রাজধানীর সিপাহীবাগ এলাকা। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জ্যামে বসে আছে মানুষ। এমনিতেই রাস্তা সরু, তার মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাস্তার দুই পাশে পার্ক করে যাত্রী ওঠানামা করছে। রাস্তার মাঝখানে যে জায়গা রয়েছে তা দিয়ে কোনোভাবেই দুই দিকের গাড়ি আসা-যাওয়া করতে পারছে না। ফলে সৃষ্ট হচ্ছে জটলা, জ্যামের। এটা এই এলাকার নিত্যদিনের ঘটনা বলে জানান স্থানীয় মোবারক মিয়া। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর একরাশ অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন তিনি। বললেন, ‘এটা দেখার কেউ নেই। এখানে এই চিপা রাস্তার মধ্যে ব্যাটারির অটোরিকশাগুলো দুই পাশে পার্কিং করে রাখে। ফলে রাস্তা দিয়ে কোনোভাবেই গাড়ি চলাচল করতে পারে না। অফিস টাইম আর সন্ধ্যা বেলায় ভয়াবহ জ্যাম লাগে এখানে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় এখানে।’
শুধু সিপাহীবাগ বাজার এলাকার চিত্রই নয়। এ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন নগরের এক অন্যরকম এক আতঙ্কের নাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, বৌদ্ধ মন্দির, মুগদা, সিপাহীবাগ, মানিকনগর, মান্ডা, সায়েদাবাদ, কোনাপাড়া, বসিলাসহ এই এলাকাতেই হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। আর তো রয়েছেই শহরের অন্যান্য এলাকার চিত্র। এটার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন গাড়ি প্রতিনিয়ত নামানো হচ্ছে রাস্তায়। কোনো নিয়মকানুন নেই।
তবে খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর নিম্ন এলাকাগুলোয় এই ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানোর ব্যাপারে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। যেমন- গুলশান-বনানী কিংবা বারিধারায় চাইলেই এসব গাড়ি হুট করে নামানো যায় না; কিন্তু যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা কিংবা সিপাহীবাগের মতো এলাকাগুলোতে যে কেউ যখন-তখন নামিয়ে ফেলতে পারে এসব রিকশা। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় আরও যানজট বাড়ছে, বাড়ছে রাস্তায় বিশৃঙ্খলাও। অথচ, নিয়ম রয়েছে রাস্তার হিসাব করে যেকোনো নামানো বিষয়টি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেন রাস্তায় নামানোই এখন সহজ একটি প্রক্রিয়া।
রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকা, লালবাগ, হাজারীবাগ, আজিমপুরসহ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং উত্তরাতেও ব্যাপক সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের বেপরোয়া চলাচলে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিছু কিছু ঘটনা আলোচনায় আসছে। বাকি অনেক ঘটনা জানতেও পারছে না মানুষ।
সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে রিকশার সংখ্যা কত, এর সঠিক কোনো তথ্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। ডিএসসিসি এলাকায় অবৈধ প্রায় ৪ লাখ রিকশা রয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায়ও অবৈধ রিকশার সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লাখ হবে বলে মনে করছেন ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে ঢাকায় যেসব রিকশা নামানো হচ্ছে, এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যা ব্যাটারিচালিত। শারীরিক কষ্ট লাঘব করতে রিকশাচালকরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এ জন্য রিকশার মালিকরাও রিকশায় ব্যাটারি যুক্ত করছেন।
জানা গেছে, এসব রিকশা থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। যা স্থানীয় থানাসহ রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতা-কর্মীরা ভাগ পেয়ে থাকে।
এদিকে একটা সময় ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো নগরীর প্রধান সড়কে ওঠানোর বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ নিয়মের কোনো বালাই নেই বললেই চলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেদার ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো নগরীর প্রধান সড়কে চলার পাশাপাশি তা বিভিন্ন ফ্লাইওভারেও উঠে যাচ্ছে যেনোতেনোভাবে এসব রিকশা চলার ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
এদিকে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েছেন। তাদের মতে, এসব গাড়ির কারণে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এটা ইতিবাচক দিক। তবে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা একজন চালককে জানাতে হবে- তার কোন রাস্তায় কীভাবে চলাচল করতে হবে। রাস্তায় চলাচলের একটা নিয়ম-নীতি রয়েছে। তাকে সেই শিক্ষাটা দিতে হবে।
ঢাকা শহরের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন রাস্তার বিষফোড়া। এলাকার ভেতরের রাস্তায় এসব রিকশা চলাচলের কথা থাকলেও এগুলো সব সময় মহাসড়কে উঠে আসে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায় না রাজনৈতিক কারণেই। কারণ দিনশেষে এ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। যার ভাগ রাস্তার পাতি নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত পেয়ে থাকে।
দেশের অনেক সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলে থাকে ধীরগতির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা গাড়িগুলো। অন্যদিকে, দূরপাল্লার পরিবহনগুলো দ্রুত গতির হয়ে থাকে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সরু রাস্তা ও ধীরগতির অবৈধ যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগও।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা এই রিকশার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে এটাই এখন বড় প্রশ্ন? শুধু অভিযান চালিয়ে অবৈধ রিকশার দাপট বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য নগর পরিকল্পনাবিদদের। তাই প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ। খবর নিয়ে জানা গেছে, ইজিবাইকগুলো রুট পারমিট ছাড়াই রাস্তায় চলাচল করছে।
চার্জ দিতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাফিক বিভাগের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও পুরো দেশজুড়েই চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ধারণা করা হয় এ সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে চলাচল করছে। সারা দেশে এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে এক লাখ ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ১১০ মেগাওয়াট এবং মাসে ৩৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ গ্যারেজ চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার বিদ্যুতের বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রিকশাগুলোর ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। গ্যারেজের মালিকরা প্রতিটি রিকশা চার্জ দেওয়ার জন্য দৈনিক ৪০ টাকা নিয়ে থাকেন। নিয়মানুযায়ী গ্যারেজগুলোতে বাণিজ্যিক মিটার থাকার কথা। কিন্তু গ্যারেজের মালিকরা বাড়ির পাশে গ্যারেজ গড়ে তুলে বাড়ির মিটারের সংযোগ থেকেই ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছেন। এতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক নিজের বাড়িতে অথবা গরিব কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর বাড়িতে রাতব্যাপী রিকশার ব্যাটারিগুলো চার্জ দিচ্ছেন। যার অধিকাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরোনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও।
মহাসড়কের আতঙ্ক থ্রি হুইলার
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের শহর ও গ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অটো চার্জার ভ্যান, নছিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার জাতীয় ইজিবাইক, টেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন। নানা পদক্ষেপের পরও বিপজ্জনক এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কে বাধাহীনভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার মালিকরা আইন মানতে নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের শহর-বন্দর-গ্রামের সড়ক ছেয়ে গেছে এসব ব্যাটারিচালিত ‘থ্রি হুইলার’ রিকশা ও ইজিবাইক।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করেন বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশনবিহীন যেসব গাড়ি যেমন- ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন সেগুলোর বিষয়ে করণীয় কী এগুলো কেউ ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিদিনই এসব গাড়ির জন্য সড়কে দুর্ঘটনায় ঝরছে প্রাণ। এসব গাড়ির চালকের গাড়ি চালানোর কোনো দক্ষতাই নেই। নেই গাড়ির কোনো নিবন্ধনও। বিআরটিএ এসব গাড়ির বিষয়ে এখনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন বুঝি না। মহাসড়কে ধীরগতির এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন দুর্ঘটনার বড় কারণ। মহাসড়ক সব সময় অবারিত থাকা উচিত। এসব ছোট গাড়ির জন্য আলাদা লেন করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সিঙ্গেল সড়কগুলো যখন সরাসরি মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় আর আইন করা হয় এসব তিন চাকার যান মহাসড়কে ওঠা নিষেধ, তাহলে বিকল্প রাস্তা প্রয়োজনের জন্য। আর বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে আইন করে কখনোই এসব যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব নয়। কেননা ২০০৯ সালে যখন চীন থেকে এসব যানবাহন আমদানি হয়েছে তখনই এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা দরকার ছিল। গত ১৫ বছরে কয়েক লাখ মানুষের কর্মনির্ভর করে এখানে। তিনি বলেন, সব মহাসড়কের দুই পাশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্ভিস রোড চালু করতে হবে। এতে মহাসড়ক একদিকে ঝুঁকিমুক্ত হবে এবং থ্রি-হুইলারসহ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। আনফিট যানবাহন সরিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত কয়েক বছরে লাখ লাখ অটোরিকশা আমদানি করা হয়েছে। এর অর্ধেকও লাইসেন্স পায়নি; কিন্তু স্থানীয়ভাবে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়ে চলছে। ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, ভটভটি একই প্রক্রিয়ায় চলছে। তিনি বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ করতে হলে জাতীয় সড়ক কাউন্সিলের দেওয়া ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। সিটি সার্ভিসের ৯৮ শতাংশ বাস-মিনিবাস চলাচলের অযোগ্য। আন্তঃজেলা দূরপাল্লার ৪৮ শতাংশ বাস ২০ বছরের বেশি পুরোনো। আনফিট, লক্কর-ঝক্কর যানবাহন সরিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা করে মহাসড়কগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি। পুলিশ ও মালিক-শ্রমিকদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা জরুরি।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে নতুন আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। বেপরোয়া গতির এ যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। যেমন খুশি চলাচল, হুটহাট ঘোরানো, উল্টোপথে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
এসব কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১৯ হাজার ৯৬২ টি ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
আজ সোমবার (৩০সেপ্টেম্বর) ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে ১৯ হাজার ৯৬২টি ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অভিযানকালে ৯ হাজার ৩০১টি রিকশার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ৪ হাজার ১৫৯ টি অটোরিকশার সিট জব্দ করা হয়।
এছাড়া, ৬৬০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয় ও ৩টি রিকশার ব্যাটারি জব্দ করা হয় এবং ৫ হাজার ৮৩৯ টি রিকশার বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে র্যাব-২ এবং যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, দুটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজাসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫ জন।
রোববার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শিহাব করিম।
তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে র্যাব ২ এ যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, দুটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া অভিযানে ৩১ জন দুর্বৃত্ত, তিনজন নারী মাদক কারবারি ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে বহু দিন ধরে। গত জুলাই থেকে দেশের অস্থিরতার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় সেখানকার দুটি পক্ষ। সাম্প্রতিক কয়েকটি সংঘাতে বড়সড় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে ও গুলি ছুড়তে দেখা গেছে দুই পক্ষকে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, থানা ও পুলিশের কাছ থেকে লুট করা অস্ত্র জেনেভা ক্যাম্পে ঢুকেছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাদ্দাম হোসেন সনু নামে এক অটোরিকশাচালক নিহত হওয়ারও ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনার পর রোববার ক্যাম্পে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের নির্দেশনায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে এই অভিযান চালানো হয় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজা ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে জানা যায়, যৌথ অভিযানে জেনেভা ক্যাম্প থেকে দুটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, ৬টি চায়নিজ কুড়াল, ৩৯টি ছুরি, ১৬টি রামদা, ৮টি চাপাতি, ১২ প্যাকেট স্প্লিন্টার, ৫৩টি পেট্রোল বোমা ও ৫০টি হেলমেট উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানায় আইএসপিআর।
রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণ হয়ে শিশুসহ তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পরে দগ্ধদের দ্রুত উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।
দগ্ধরা হলেন, মোহাম্মদ টোটন (৩৫), তার স্ত্রী মোছা. নিপা আক্তার (৩০) ও তাদের ছেলে মো. বায়জিদ (৩)
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পানি গরম করতে গিয়ে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে টোটন ৫০ শতাংশ, নিপা ৩২ শতাংশ ও শিশু বায়জিদ ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়। দগ্ধের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে গুলশান-২ রোড নাম্বার ১০৮ এর ২১ নম্বর প্লটের একটি চায়ের দোকানের ভেতর থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ।
তিনি জানান, নিহত রফিকের (৬২) বাড়ি বরিশালের দবদবিয়া গ্রামে এবং সাব্বিরের (১৫) বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার রায়গঞ্জ বাজার বেপারী পাড়া এলাকায়। ধারণা করা হচ্ছে কয়েক দিন আগেই তাদের কুপিয়ে হত্যা করে এখানে ফেলে রেখেছে দুর্বৃত্তরা। দুইজনের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
স্থানীয়দের ধারণা দুইজনকে গত বৃহস্পতিবার কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। আজকে মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ বেরিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ আরও জানান, মরদেহ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারে সকাল থেকে ভারি সৃষ্টিপাত। এতে করে রাজধানীবাসীর যাতায়াতে বিড়ম্বনায় ফেলে তাদের কর্মদিনকে বিঘ্নিত করেছে।
সকালে বৃষ্টির সময় সড়কে যানবাহন সংকট ও ধীরগতির যানবাহনের কারণে অফিস ও স্কুলগামীদের দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট এ বৃষ্টিপাত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
বৃষ্টিতে মালিবাগ, মৌচাক ও মালিবাগ চৌধুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে গেছে গলিগুলো।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম এনজমুল হক জানান, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ছয় ঘণ্টায় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে আগামীকাল শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুমারখালীতে দেশের সর্বোচ্চ ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মৌসুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি খাত উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
পশ্চিম-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি নিষ্ক্রিয় হয়ে মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিশে গেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহযোগী সংগঠন ‘সুজন বন্ধু’ ঢাকা জেলার কমিটি গঠিত হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুজনের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে এক মতবিনিময়সভায় ২৭ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করা হয়।
সভায় উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে আবু সাঈদ জয় সভাপতি, কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক শেখ আব্দুল্লাহ আল নোমান সাধারণ সম্পাদক, ফয়সাল হাসান সহসভাপতি এবং সানজিদা পারভিন সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
‘সুজন বন্ধু’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সজলের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব জারিফ অনন্তের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দীলিপ কুমার সরকার। এ ছাড়াও ছিলেন ‘সুজন বন্ধু’ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অলিউল ইসলামসহ অন্য সদস্যরাও।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুজনের প্রেক্ষাপট ও ‘সুজন বন্ধু’ তৈরির প্রয়োজনীয়তা এবং সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন দীলিপ কুমার সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণতন্ত্র ও সুশাসন সুসংহত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ড. বদিউল আলম মজুমদারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘সুজন বন্ধু’।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানা ও সেনাবাহিনীর একটি দল যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দুটি প্রাইভেটকারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- শাহজাদা খান সাজ্জাদ, মো. তৌজিদুল ইসলাম ও মো. সাইফুল ইসলাম। পুলিশ বলছে, উদ্ধার করা এসব টাকা ও প্রাইভেটকার সাবেক সংসদ মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার পরিবারের সদস্যদের।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ডিসি বলেন, গোপস তথ্যে জানা যায়, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৩ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ অস্ত্র-গুলি রয়েছে। এমন তথ্যে গত রোববার সেনাবাহিনী ও উত্তরা পশ্চিম থানার একটি যৌথ টিম ওই বাসায় স্থানীয় সাক্ষীসহ প্রবেশ করে। সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৬৫টি ১০০ ইউএস ডলারের নোট, ৪টি ২০ ইউএস ডলারের নোট,একটি এক ইউএস ডলার নোট, ৪১টি ১ হাজার থাইবাথের নোট, ২টি ৫০০ থাইবাথের নোট, ২৮ টি ২০ বাথের নোট, তিনটি ৫০ বাথ নোট, বিশটি ৫০০ দিরহামের নোট, একটি ১০০ দিরহামের নোট, একটি ২০ দিরহামের নোট, তিনটি ১০ দিরহামের নোট, দুটি ৫ দিরহামের নোট, পাঁচটি ১০০ কানাডিয়ান ডলারের নোট, দুটি ১০ সিঙ্গাপুর ডলারের নোট, একটি ২ সিঙ্গাপুর ডলারের নোট, একটি ১০০ রিয়ালের নোট, দুটি ৫০ রিয়ালের নোট, দুটি ১০ রিয়ালের নোট, তিনটি ৫ রিয়ালের নোট, একটি ১ রিয়ালের নোট, একটি ২ হাজার রুপির নোট, ৬০টি ৫০০ রুপির নোট, একটি ২০০ রুপির নোট, পাঁচটি ১০০ রুপির নোট, পাঁচটি ৫০ রুপির নোট, চারটি ২০ রুপির নোট, ছয়টি ১০ রুপির নোট এছাড়াও তিনটি নেভি ব্লু রঙের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট যার সামনে ও পেছনে ইংরেজিতে পুলিশ লেখা এবং দুটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটগুলো ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার ছেলে আবির হাসান তামিমসহ (পলাতক) গ্রেপ্তাররা গত ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময় ব্যবহার করতো। যে বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয় সেটি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের ছেলে আবিরের শ্বশুর বাড়ি বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, জব্দ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও গাড়ি দুটি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান ও তার পরিবারের সদস্যদের।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারা দেশে গত ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর কলাবাগান থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল যৌথ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. শুভ, মো. শাকিল হোসেন ও শরীফ মো. আবদুল্লাহ।
গোয়েন্দা তথ্যে গতকাল শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কলাবাগান থানার লাল ফকিরের মাজারের পাশের একটি বাসায় এ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপি জানায়, গোপন সংবাদে জানা যায়, কয়েকজন লোক কলাবাগান থানার লাল ফকিরের মাজারের পাশে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই স্থানে কলাবাগান থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে দুইটি ম্যাগাজিন ও ১৩ রাউন্ড তাজা গুলিসহ দুইটি পিস্তল, ১২ বোর কার্তুজসহ একটি দেশীয় পাইপগান, একটি এয়ারগান, একটি ইলেকট্রিক শক (টিজার), দুইটি চাপাতি, তিনটি ছুরি, একটি চায়নিজ কুড়াল, একটি দেশীয় দা, তিনটি মুঠোফোন ও একটি ওয়েব ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এক বিশেষে পরিস্থিতিতে আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করি। তখন সড়ক ও গণপরিবহনে এক ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে সে পরিস্থিতি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমরা এ অবস্থা ধরে রাখতে চেষ্টা করছি।
আজ শনিবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা কার্যকর করতে বাস মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
মতবিনিময়ের সময় রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বাস মালিকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো, রাস্তার মাঝখানে ও যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং এলোমেলোভাবে রাস্তায় গাড়ি রাখা বন্ধ করতে হবে।
বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ড্রাইভার ও বাস শ্রমিকদের এ বিষয়ে আরও সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের আরও বেশি মনিটরিং করা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে মহানগরীর যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হব। যেকোনো প্রয়োজনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।
সভায় বাস মালিকদের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা ও বাস শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সচেতনতামূলক সভা করার আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোসহ সব সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, যা হয়ে উঠেছে এক আতঙ্কের নাম। এতে সড়কে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। তেমনি যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে অনেক বেশি। অবৈধ এই ৩ চাকার দ্রুত গতির বাহনটির কারণে প্রতিদিনেই বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টায় সড়কেই সময় নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীদের।
সম্প্রতি ঢাকা শহরের মূল সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির মিরপুর বিভাগ তিন শতাধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ৩০০ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে ডাম্পিং ও ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে এ অভিযান শুরু করে ডিএমপির মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক মিরপুর বিভাগ অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মিরপুরের ১৬টি পয়েন্টে চেকপোস্টের মাধ্যমে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে তিন শতাধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ডাম্পিং ও ব্যাটারি জব্দসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ অভিযান মিরপুর ট্রাফিক বিভাগে চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আট শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া হলটির প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুমকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। হলটির নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কার হওয়া ওই ৮ শিক্ষার্থী হলেন- পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া এবং আবদুস সামাদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ। এদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ ছাড়া বাকি ছয় শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসনের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গতকাল অভিযুক্ত এই আট শিক্ষার্থীর আবাসিক সিট বাতিল করে হল কতৃপক্ষ।
তোফাজ্জল হত্যায় হল প্রাধ্যক্ষের অবহেলার অভিযোগ ছিলো। সেদিন এই ঘটনার সময় এবং ঘটনার পরে পুরো রাত পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে আসেননি হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম। ঘটনার সময় বা এর পরে তাকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়েছেও বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারপরও রিচ করা যায়নি প্রাধ্যক্ষকে। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদও একাধিকবার ফোন দিয়ে পাননি এই প্রাধ্যক্ষকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং সহকারি প্রক্টররা আসার খবর পেয়ে ঘটনার পরদিন সকাল সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম। ঘটনার আগে বা পরে হল প্রাধ্যক্ষের হলে না আসা এবং ফোনে পাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন। এরপর আজ পদ থেকে শাহ মাসুমকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকায় কয়েক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হলেই সড়কগুলো যেন পরিণত হয় জলাশয়ে। দীর্ঘ সময়ের জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। কোথাও হাঁটুপানি-কোথাও বা কোমর পানি মাড়িয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে হয়। রাজধানীর বাসিন্দা হলেও অনেকের ঘর-বাড়িতে ঢুকে যায় বৃষ্টির পানি।
প্রায় চারদিকেই নদীবেষ্টিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত ৪-৫ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে হাতে নিয়েছে একাধিক মহাপরিকল্পনা। খাল ও ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কারে ব্যয় করেছে ৭৫০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু যার কোনো ইতিবাচক ফল দেখা যায়নি। বরং জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়ছে দিনকে দিন।
টানা কিছু সময় বৃষ্টি হলে শহরের বুকে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত হয় অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থার বিপর্যয়। যানবাহনের অভাব, জলাবদ্ধ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া, বৃষ্টি ও পানির অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়াসহ নানা দুর্ভোগে নাজেহাল হতে হয় ঢাকাবাসীকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার মূল সমস্যা মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা। বিশেষ করে যথাযথভাবে ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার না করায় এসব আটকে নালা ও ড্রেনেজ সিস্টেমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলোও সুপরিকল্পিতভাবে হয়নি। আর বিভিন্ন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন ও সরকারের অন্য সংস্থার মধ্যে তেমন সমন্বয়ও থাকে না। ফলে জলাবদ্ধতার জন্য একে অন্যকে দায়ী করেই বছরের পর বছর পার করছে সংস্থাগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ করার পর তা মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন কাজ শেষ হওয়ার পর তা আর রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে খাল ও ড্রেনের মুখ আবার ভরাট হয়ে যায়। তাই কাজ বাস্তবায়নের পর রক্ষণাবেক্ষণ ও জবাবদিহি থাকা দরকার।’
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা নিজেরা নদী ও খালগুলো গলা টিপে হত্যা করেছি। প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল খালগুলো। তা আমরা ভরাট করেছি বক্স কালভার্ট বানিয়ে। এখন আবার খাল উদ্ধার নামে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে টাকার অঙ্ক বাড়ালেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানায়, বিভিন্ন সময় খাল ও ড্রেনেজ সংস্কার বাবদ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি বাজেটে ড্রেনেজ সংস্কার ও ময়লা পরিষ্কারে আরও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সমাধান হয়নি জলাবদ্ধতার। সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা দ্রুত সময়ে নিষ্কাশন করার সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এর বেশি বৃষ্টি হলে নিরুপায় সিটি করপোরেশন।
পানি নিরসনে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তারপরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে। খরচের মধ্যে খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর।
ডিএসসিসি কর্মকর্তারা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এমন ১৩৬টি পয়েন্টের মধ্যে ১০৪টি পয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির খালগুলো সংস্কারের মাধ্যমে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা গেলে ঢাকার জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষা মৌসুমের আগেই ড্রেনেজ পরিষ্কার করা হয়। তারপরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হলে জলাববদ্ধতা তৈরি হয়। এর মধ্যে অনেক স্থানে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক পয়েন্টের কাজ শেষ হলে আবার নতুন পয়েন্ট যুক্ত হয়। তাই ঢাকার খালগুলো সচল না হলে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের খাল ও ড্রেনেজ সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু খরচ হয়েছে আরও কিছু বাকি আছে।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চারটি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পায়। ৮৯৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুনে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা দক্ষিণের জলাবদ্ধতা অনেকটাই নিরসন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশেপাশের এলাকা হর্নমুক্ত করতে বেশ কিছু সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দেওয়া শব্দদূষণ রোধ করতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর, এপিবিএন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থা এই সমন্বিত উদ্যোগের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে কাজ করবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় জনসচেতনতামূলক স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন, লিফলেট বিতরণ, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে যথাযথ পার্কিং, বিআরটিএ -এর মাধ্যমে গাড়ি চালক ও গাড়ির মালিকদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া এবং আইন অমান্যকারীদের জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের ব্যবস্থা করা।
অংশীজন হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। শব্দদূষণ রোধে হর্ন বাজানোকে নিরুৎসাহিত করতে তারা বিভিন্ন সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করবে, যাতে চালকরা সহজে দেখতে পায়। রাতের বেলায় সাইনগুলো দৃশ্যমান রাখার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে ডিএনসিসি।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি শব্দ দূষণ রোধে সকল বাস ও ট্রাক ড্রাইভারদের বার্তা প্রদান করবে এবং ট্রাক ও বাস চালকদের মধ্যে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর জনগণকে শব্দদূষণ হ্রাসে সক্রিয় ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর অংশ হিসেবে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, টেলিভিশনে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার এবং নির্ধারিত এলাকায় লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা করবে।
বিআরটিএ ঢাকা শহরের সকল ড্রাইভার এবং মালিকদের কমপক্ষে তিনটি করে ক্ষুদে বার্তা পাঠাবে, যাতে তারা বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় শব্দদূষণ না করার বিষয়ে সচেতন হতে পারে।
এছাড়া, ১ অক্টোবর থেকে আগামী ৭ দিনের জন্য লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর এর ম্যাজিস্ট্রেটগণ লা মেরিডিয়ান, বেবিচকের ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিমানবন্দরের সামনের গোলচক্কর এবং বিআরটিএ- এর ম্যাজিস্ট্রেটগণ স্কলাস্টিকা পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য থাকবে ট্রাফিক পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষার্থী ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা।