বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতাধীন নগর পরিবহনের রুটে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিন বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির পদাধিকার বলে সভাপতি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. মুহ. শের আলী। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নগরভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৮তম সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আজকের সভায় গত ২৭তম সভার সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা, বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রশাসক ড. মুহ. শের আলী বলেন, ‘বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতাধীন নগর পরিবহনের রুটে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তবে তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ রোডগুলো বিশেষ কারও জন্য বা বিশেষ কোনো পরিবহনের জন্য আমরা বরাদ্দ রাখতে চাই না। আমরা চাই যেকোনো উপায়ে এই রুটগুলোতে শৃঙ্খলিতভাবে গণপরিবহনগুলো চলাচল করুক। আর এর জন্য যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, আমরা সব পদক্ষেপ নেব।’
‘জনসংখ্যা অনুযায়ী কোনো রুটে কতক্ষণ পর পর কয়টি বাস চলাচল করবে সেসব বিষয়ে আমরা আরও বিস্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি নগর পরিবহন সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য আরও কতটা আধুনিক এবং যাত্রীবান্ধব করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ ছাড়া আগের যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে আমরা ওভারকাম করতে পারব’- বললেন প্রশাসক ড. মুহ. শের আলী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক ড. মুহ. শের আলী বলেন, ‘ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে আজকে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়টি যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে, অথবা পরামর্শ থাকে সেক্ষেত্রে পরবর্তী সভায় আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসসিসি প্রশাসক ড. মুহ. শের আলী। এ ছাড়া বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য-সচিব এবং ডিটিসিএ এর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সব শেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৭ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহনের বহরে ১০০টি ইলেকট্রিক বাস সংযোজন করা হবে। এ ছাড়া নগর পরিবহনে যাত্রী সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে এক স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। পুলিশ বলছে, তাকে ৫ জনে মিলে গণধর্ষণের পর মারা গেলে বস্তাবন্দী করে লাশ গুমের উদ্দেশে হাতিরঝিলে রাস্তার ঢালে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় রবিন হোসেন (৩২) ও রাব্বী মৃধা (২৬) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৩০ জানুয়ারী গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আদের গ্রেপ্তার করা হয়।
দক্ষিণখান থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি কেনাকাটার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর ১৩ বছর বয়সী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই কিশোরী নিখোঁজ হয়। পরে তাকে অনেক খোঁজা খুঁজি করে না পেয়ে গত ১৯ জানুয়ারি কিশোরীর বাবা এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় জানতে পারেন, ১৬ জানুয়ারি বিকেলে দক্ষিণখানের জয়নাল মার্কেটের সামনে থেকে কয়েকজন মিলে কিশোরীকে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে অপহরণ করা হয়েছে। পরে ২৭ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন তিনি।
জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে কিশোরীর মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩০ জানুয়ারি রবিন হোসেন ও রাব্বী মৃধাকে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। পরে গত ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারদের ওই ঘটনার বিষয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে গত রোববার সকালে হাতিরঝিল এলাকার রাস্তার ঢাল থেকে ওই কিশোরীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সে বিষয়ে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিএমপির উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. নাসিম-এ-গুলশান বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। ফাঁদে ফেলে তাকে মহাখালীর একটা বাসায় নিয়ে ৫ জনে মিলে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় কিশোরীটির হাত-পা বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। ধর্ষণের ফলে কিশোরীটি মারা গেলে ঘটনার দিন মধ্যরাতে মহাখালী থেকে রিকশায় করে হাতিরঝিলের রাস্তার ঢালে ফেলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, মুলত মুঠোফোনের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। গ্রেপ্তার রবিনের মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিশোরীটির সঙ্গে ঘটনার দিনই তার কথা হয়। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাব্বিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রথমে কিশোরীকে হত্যার বিষয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন না তারা। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
এসি মো. নাসিম এ-গুলশান জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিন পেশায় একজন গাড়িচালক। রাব্বি মৃধারও নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অভিযুক্ত অন্য তিনজনও রবিনের পূর্বপরিচিত। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই মহাখালীর সরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। কখনো কলেজের সামনের রাস্তা, কখনো গুলশানের মোড়ের সড়ক অবরোধ করেছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিংয়ে রেললাইন অবরোধ করেছেন তারা।
আজ সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ করেছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বিকেলে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন দুটি মহাখালী পর্যন্ত গিয়ে আটকা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে মহাখালীর আমতলী মোড়ের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় তিনজন অনশনকারী শিক্ষার্থীকেও হুইলচেয়ারে করে নেওয়া হয়। মিছিলে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল।
অবরোধের পর শিক্ষার্থী আলী আহাম্মেদ মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বা শিক্ষা উপদেষ্টাকে এখানে এসে তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে। না হলে আমরা রেললাইন ছাড়ব না। আমাদের এইটাই দাবি।’
আলী আহাম্মেদ আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। রাষ্ট্র আমাদের এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।’
মিছিলটি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। মিছিলকারীদের সঙ্গে থাকা অনশনকারী শিক্ষার্থীরা প্রথমে রেললাইনে শুয়ে পড়েন। পরে আন্দোলনকারীরা রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় কমলাপুরের দিক থেকে একটি ট্রেন আসতে দেখলে শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি লাল নিশানা দেখিয়ে থামান।
এর আগে আজ ১১টার পর টানা পঞ্চম দিনের মতো কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সড়কের উভয় পাশে বাঁশ দিয়ে অবরোধ তৈরি করে অবস্থান নেন।
মহাখালী রেলক্রসিংয়ে ডিএমপি পুলিশের পাশাপাশি রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরাও রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের মুখে গতকাল রোববার বিকেলে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সময় বেঁধে দিয়ে দাবির মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি যৌক্তিক নয়।’
শিক্ষা উপদেষ্টার এ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রাতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে সোমবার বেলা ১১ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে মহাখালী, আমতলী, রেলগেট ও গুলশান লিংক রোড। পাশাপাশি ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’-এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ তিন দফা দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গত বৃহস্পতিবার তিতুমীর কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর শুক্রবারও তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। শনিবারের পর গতকাল চতুর্থ দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সাত দফা থেকে একদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন ও ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধ) কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কলেজটির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মুক্তার।
তিনি বলেন, আজ থেকে আমরা আর সাত দফা চাই না। এখন থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির একদফা দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
আজ শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মুক্তার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমাদের সাত দফা দাবি থেকে একদফা দাবি ঘোষণা করছি। সেটা হলো- মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনও কর্মকর্তা এখানে (কলেজ) এসে আমাদের বলবেন, আপনাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
তাহলেই আমরা রাজপথ ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো।
তিনি আরও বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আমাদের চারজন শিক্ষার্থী অনশন থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরপরও রাষ্ট্রের কোনও মাথাব্যথা নেই।
সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। এতে করে যদি আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হয়, তাতেও আমরা প্রস্তুত আছি।
এর আগে, এদিন সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিবৃতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে কলেজের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার বিকাল চারটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে প্রথমে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং ঘুরে আবারও কলেজের সামনে হয়ে গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করেন। পরে প্রায় পৌনে একঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর রাত আটটার দিকে কলেজের সামনে ফিরে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এরআগে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত থেকে কলেজের সামনে অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে শুক্রবার রাতে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় দুইজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শনিবার বিকালে অনশনরত অবস্থায় আরও দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরও ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোববারের কর্মসূচি
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যরিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত তাদের একদফা কর্মসূচি চলবে। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) কলেজের সামনে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর মহাখালী থেকে গুলশান সড়ক অবরোধ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরো এলাকা অবরোধ করা হবে বলেও জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মুক্তার।
গত কয়েকদিন ধরেই মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করেছেন তারা। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। তৈরি হয়েছে যানজটের।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিকেল ৪টা পর্যন্ত আমাদের আল্টিমেটাম ছিল। কিন্তু দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। সেজন্য পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। কাল আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
এসময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে শোনা গেছে। তারা বলছেন, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তিতুমীর আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘টিসি না টিউই, টিউই টিউই’, ‘আমার ভাই অনশনে, প্রশাসন কি করে’, ‘প্রশাসনের সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, চলবে না চলবে না’, ‘অধ্যক্ষের সিন্ডিকেট, মানি না মানব না’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
এদিকে, বিকেলে শিক্ষার্থীদের চলমান এই আন্দোলনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত’ উল্লেখ করে এতে জানানো হয়, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরইমধ্যে এই কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এই কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় সব বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে। এ অবস্থায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। সেজন্য আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করা হলো। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার সব সময় সচেতন ও সহানুভূতিশীল রয়েছে বলেও জানানো হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতি প্রত্যাখান করে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় আটক করে পাঁচ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ঢাবির মল চত্বর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুরোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর।
তিনি বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুরোনো একটি মামলায় তারা সম্পৃক্ত থাকায় সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতে আটক পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রদলের এক নেতা অভিযুক্ত পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে অভিযুক্তদের মধ্যে একজন স্লোগান দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে এক প্রকৌশলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের নাম- মিনহাজুর রহমান (২৫)। তিনি একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে করে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আজ বুধবার এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসীন হোসাইন জানান, কে বা কারা এবং তাকে কেন হত্যা করেছে এ বিষয়ে জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, গত তিনদিন আগে নিহত মিনহাজুরের সঙ্গে তার কয়েকজন বন্ধুর ঝগড়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, নিহত মিনহাজ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ও ছাত্রলীগের মাহফুজসহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহতের ভগ্নিপতি খালিদ মাহফুজ বলেন, মিনহাজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর গ্রামের হাফেজ কারী মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। তার বাবা রফিকুল ওলামা দলের নেতা। মিনহাজ বিএনপি করতো। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট।
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ছিনতাই করার সময় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দিনগত রাত সোয়া তিনটার দিকে পশিচ্ম রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলো- মো. জীবন (২৫) ২। মো. সোহাগ আকন্দ (২৬)। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার দু’জন পেশাদার ছিনতাইকারী। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার হাতিরঝিল থানা সূত্রে জানা যায়, জানা যায়, গ্রেপ্তার আসামিরা গত রোববার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে মতিঝিল থেকে মগবাজার যাওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাটারি চালিত রিকশা ভাড়া করেন। পরে চলার পথে তারা রিকশা চালককে রামপুরায় যেতে বলেন। রাত ৩টার দিকে পশ্চিম রামপুরার বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসলে তারা রিকশা থামাতে বলেন। রিকশা থামালে তাদের একজন রিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলমের পেটে ছুরি ধরে সঙ্গে থাকা একটি মোবাইল, নগদ টাকা ও রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন রিকশাচালক চিৎকার করলে টহল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যায়ূ। পুলিশ দেখে রিকশা ফেলে পালানোর চেষ্টা করার সময় ধাওয়া করে জীবন ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে একটি চাকু এবং ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৫২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার আসামিরা পেশাদার ছিনতাইকারী। তারা ব্যাটারি চালিত রিকশা ভাড়া করে মগবাজার যাওয়ার নাম করে রামপুরায় নিয়ে রিকশা ও রিকশা চালকের মোবাইল, নগদ টাকা ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আগামী চার ঘন্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ছয় দাবি জানিয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময়ের মধ্যে অধ্যাপক মামুনকে অব্যাহতি না দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার বেলা বারোটায় ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী।
দাবিসমূহ হলো-
#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের যে সংঘাত সেই সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে হবে। এবং প্রো ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
#ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের উপর নিউমার্কেট পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট জোনের এসি, থানার ওসি এবং জড়িতদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
#সংঘর্ষ চলাকালীন ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল শিক্ষার্থী কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গি করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
#ঢাকা কলেজের সাথে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
#উদ্ভুত সমস্যা নিরসনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সমন্বয়ে ঢাকা কলেজের প্রতিনিধিদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
#ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এরিয়ায় সিটি কর্পোরশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য খুলে দিতে হবে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের মধ্যকার এই সংকট নিয়ে আমরা বারবার রাস্তায় নেমেছি। আমরা বারবার বলেছি আমাদেরকে একটা সমাধান দেন। কিন্তু কোন সমাধান দেওয়া হয়নি। এই সংকটের যতদিন না একটি সৃজনশীল সমাধান না হয় ততদিন ততদিন শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষার্থীর মুখোমুখি অবস্থান চলতে থাকবে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।
এর আগে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা কলেজের সংঘর্ষ শেষে মধ্যরাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের সাত পয়েন্টে ব্লক কর্মসূচী ঘোষণা করেন। যদিও আজ সেটি তারা পালন করেননি।
এই বিষয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ মোহাম্মদ সজিব উদ্দীন বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে আমরা গতকালকের ঘোষিত ব্লকেড কর্মসূচিটি উইথড্র করেছি। এখন আমরা চার ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এই চার ঘন্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমদকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি দিবো।
গতকালের সংঘর্ষে আপনাদের কতজন আহত হয়েছে জানতে চাইলে সজিব উদ্দীন বলেন, আমাদের দৃশ্যমান ১০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আর নরমালি ৫০ এরও অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ঢাবি প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করতে আসা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়েছেন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা পিছু হটে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষের মধ্যেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ ইট পাটকেল নিক্ষেপে ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ৫জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
রোববার রাত পৌনে ১২টা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা সাইন্সল্যাব, টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। এরপর রাজধানীর তাঁতীবাজারেও অবরোধ করার খবর পাওয়া যায়।
এদিকে নীলক্ষেত মোড়ে ঢাবি শিক্ষার্থী ও অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সহায়তায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজের সমস্যা ও ভর্তির আসন সংখ্যা কমানোর বিষয়ে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) কাছে গেলে তিনি অশোভন আচরণ করে রুম থেকে বের করে দেন। তিনি বলেন, সাত কলেজের বিষয়ে কিছু জানেন না।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, এবিষয়ে ২১ দিন আগে তাকে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও সেটি পড়েননি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চিনেন না বলেই তিনি আক্রমণমূলক ব্যবহার করেছেন। তাই তার অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার উত্তেজনা থামাতে সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। পুলিশ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিউমার্কেট সরিয়ে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় থেকে শুরু করে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ পর্যন্ত অবস্থান করার খবর পাওয়া গেছে।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের কাছে সাত কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী কয়েকটি দাবি নিয়ে যান। এসময় উপ-উপাচার্য তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রহমান বলেন, উপ-উপাচার্য ঘটনাস্থলে এসে ক্ষমা না চাইলে৷ তারা স্থান ছাড়বেন না।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে-
১. ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
২. সাত কলেজের শ্রেণীকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না।
৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে।
৪. সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়-
নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে।
৫. সাত কলেজের ভর্তিফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে, মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন একটি একাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।
এমআরটি-৫ (নর্দার্ন রুট) লাইনের কাজের জন্য আগামী তিন মাস রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রান্সজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
রোববার ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দার্ন রুটের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল, আন্ডারগ্রাউন্ড) ড. মো. মশিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রজেক্টের খোঁড়াখুঁড়ির কাজের জন্য গুলশান-২ এলাকায় যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য আমরা এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়েছি, যেন তারা গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলেন। আগামী তিন মাসের মতো এই এলাকায় কাজ চলবে। ফলে এই সময়টুকু এই জায়গা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। আজকে থেকেই এটি শুরু হলো।’
এর আগে ২৩ জানুয়ারি ডিএমটিসিএল প্রকল্পের পরিচালক মো. আফতাব হোসেন খান সই করা বিজ্ঞপ্তিতেও একই অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের প্রস্তাবিত রুট গুলশান-২ (গোল চত্বর) মেট্রো স্টেশন এলাকায় আগামী ২৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরিষেবা লাইন স্থানান্তরের কাজ চলছে।
এ সময় গুলশান-২ মোড় অভিমুখী লেনে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে জনসাধারণকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার এবং সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
সাময়িক অসুবিধার কারণে বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক নারীসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত ব্যক্তিরা হলেন আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), বিন্দু ঘোষ ও মারুফা আক্তার (২৫)। তারা সবাই ইবতেদায়ি শিক্ষক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশের আলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা ও স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
এরপর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশ্যে তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেওয়া পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চাইলে তাদের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং জলকামান থেকে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং পরবর্তী অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ছয় দফা দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- ১) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা, ২) রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ, ৩) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আলাদা নীতিমালা, ৪) পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন, ৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া ও ৬) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেওয়া।
চিকিৎসাবিদ্যার সনদ না থাকলেও দিব্বি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন সাহাদাত হোসেন (৫২) নামের এক ব্যক্তি। তার অপচিকিৎসায় আল আমিন হোসেন খোকন (৪২) নামে এক মুদি দোকানির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৃত আল আমিন হোসেন খোকনের মা মণি জেনারেল স্টোর নামে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণ আজমপুরের মুন্সি মার্কেটে একটি মুদি দোকান রয়েছে। তার জান্নাতুল খুসবু (১৪) এবং মহিবুল্লা তাসিন (১২) নামে দুটি ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, আল আমিন গত ১৪ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে দোকানে যাওয়ার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাশের মারিয়া ফার্মেসিতে যান। তখন ফার্মিসিটির মালিক এবং এলাকায় চিকিৎসক বলে পরিচয় দেওয়া সাহাদাত হোসেন আল আমিনকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখেন। পরে বুকের ব্যথায় খুব অসুস্থ বোধ করার কথা জানালে অভিযুক্ত চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন রোগী আল আমিনের হাতের শিরায় ২টি ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বমি করে ফার্মেসির মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ফার্মেসির মালিক সাহাদাত হোসেন মার্কেটের কয়েকজনের সহায়তায় মৃতপ্রায় আল আমিনকে উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল থেকে আল আমিনের মৃত্যুর যে সনদ দেওয়া হয়, তাতে হাসপাতালের চিকিৎসক ব্রড ডেড এবং পুলিশ কেস হিসেবে মৃত আলামিনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু বিষয়টি অতি কৌশলে আড়াল করেন ভুয়া চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন। মৃতের পরিবারের সদস্যরা তখন খেয়াল করেননি মৃত্যু সনদে কী লেখা রয়েছে।
একজন সুস্থ মানুষ দোকানে বসা ছিল, বুকে ব্যথা নিয়ে ফার্মেসিতে গেল আর কিছুক্ষণ পর তিনি মারা গেলেন! এসব নিয়ে মুন্সি মার্কেটে কানাঘুষা ও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে মৃত আলামিনের পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয় এবং তারা যোগাযোগ করেন চিকিৎসক নামধারী ফার্মেসির মালিক সাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। আল আমিনকে কী ধরনের চিকিৎসা দিয়েছিলেন জিজ্ঞাসা করা হলে তখন সাহাদাত হোসেন স্বীকার করেননি যে রোগীর হাতের শিরায় পরপর দুটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন।
মৃতের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ আরও বেড়ে গেলে কয়েক দিন পর তারা আবার ফার্মেসিতে যান এবং ঘটনার দিনের ফার্মিসিতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান। আর তখনই মূল ঘটনা বের হয়ে আসে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, আলামিনের হাতের শিরায় পরপর দুটি ইনজেকশন দেওয়ার দৃশ্য। ফুটেজে আরও দেখা যায়, ইনজেকশনগুলো দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আল আমিনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। তখন সাহাদাত ইনজেকশন দেওয়ার করার কথা স্বীকার করেন।
এ ঘটনার ২ মাস পর গত ১৯ ডিসেম্বর মৃত আল আমিন হোসেন খোকনের স্ত্রী আসমা হোসেন বাদী হয়ে ভুয়া চিকিৎসক সাহাদাত হোসেনকে প্রধান আসামি করে ঢাকার মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে বাদী আসমা হোসেন উল্লেখ করেন, ‘আসামির শুধুমাত্র ওষুধ বিক্রির ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। তিনি ডাক্তার না হয়েও ডাক্তার পরিচয়ে রোগীর (আল আমিনের) হাতের শিরায় ইনজেকশন দিয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীর উপযুক্ত বিচার চাই।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। উপযুক্ত সাক্ষীপ্রমাণ সাপেক্ষে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে।’
মাদক ও ইয়াবার হটস্পট হিসেবে পরিচিত রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেলওয়ে এলাকা। এখানে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাস্তায় অপরাধীদের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা কৌশল প্রয়োগ করে চালাচ্ছেন মাদকের ব্যবসা। এর একটি হলো- ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে তারা বলে থাকেন ‘'তামাক-বাবা' লাগবে কি?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) শিথিল মনোভাবের কারণে এলাকাটিতে প্রকাশ্যে ও অবাধে চলছে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি।
সম্প্রতি কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাদক বিক্রির জন্য ক্রেতাদের অপেক্ষা করছেন মাদককারবারীরা। আরও ক্রেতারাও প্রকাশ্যে তাদের কাছে কিনছেন মাদক। যেন জমে ওঠা একটি হাট-বাজার!
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মাদক ব্যবসায়ী ঝর্ণা পরিচয় দিয়ে একটি ইউএনবির সংবাদদাতার কাছে গিয়ে জানতে চান, ‘তামাক-বাবা’ লাগবে কি না।
ওই সংবাদদাতা কী বোঝাতে চেয়েছেন- তা বুঝতে পারছেন না বলে জবাব দিলে ঝর্ণা ব্যাখ্যা করেন, তামাক মানে গাঁজা। যা গাঁজা বা হেম নামেও পরিচিত এবং বাবা অর্থ নিষিদ্ধ ইয়াবা বড়ি।
সাংবাদিক দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ছোট প্যাকেট গাঁজা ১০০ টাকা এবং একটি ইয়াবা বড়ির দাম ৩০০ টাকা।
এরই মধ্যে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে তার (প্রতিবেদকের) কাছে জানতে চান, তার হেরোইন লাগবে কি না? যার দাম পড়বে ৩০০ টাকা।
তাদের কাছ থেকে এলাকায় অবৈধ মাদক ব্যবসার বিষয়ে কিছু তথ্য পেতে ওই প্রতিবেদক ওই নারীর কাছ থেকে এক পুরিয়া গাঁজা কেনেন। তার সঙ্গে আলাপকালে ঝর্ণা বলেন, এই অঞ্চলে বেশ কিছু নারী ও যুবক অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী বেশ কয়েকজন লাইনম্যানও আছেন।
সেখানে পুলিশ, র্যাব বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ততটা সক্রিয় নয়। কিন্তু যখন তারা তা করে, বেশির ভাগ সময় তারা কোনো না কোনোভাবে আগাম সতর্কতা পায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য অভিযান সত্ত্বেও ঢাকা মহানগরীর কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকা অবৈধ মাদক বিক্রির প্রধান হটস্পট হিসেবেই রয়ে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা দায়মুক্তি নিয়ে কাজ করায় তারা ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, রেললাইনের ধারে, বিশেষ করে পাইকারি মাছের বাজার এলাকায় শিশু ও নারী মাদক ব্যবসায়ীরা গোপনে অবৈধ মাদক বিক্রি করেন।
এ ছাড়া তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত রেললাইনের বিভিন্ন অংশ একাধিক অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েকটি স্থানীয় ডিএনসি কর্মকর্তাসহ কিছু আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সুরক্ষা বা মৌন সম্মতি পান, যা এই অবৈধ ব্যবসাকে বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে তুলেছে।
সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে বড় আকারের অভিযানসহ নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এলাকায় মাদক ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে মাসে এলাকায় মাদক ব্যবসা গুঁড়িয়ে দিতে প্রায় এক হাজার সদস্যের একটি বড় দল নিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে গোপনীয়তার অভাবের জন্য এই অভিযানটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। কারণ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে আগাম অভিযানের ঘোষণা দেওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের পালানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল।
যদিও ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে, তবে অনেকে দিনমজুর বা রাস্তার বিক্রেতা বলে জানা গেছে। যাদের অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনো স্পষ্ট সংযোগ নেই। এতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের অকারণে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পরে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আরেকটি অভিযান চালালেও তাতেও সীমিত ফল পাওয়া যায়। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইয়াবা এবং গাঁজা জব্দ করেছে। তবে সমালোচকদের দাবি, এই অভিযানগুলোতে মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে ফেলার জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ বা দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ঘাটতি রয়েছে। মাঝেমধ্যে শীর্ষ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং জব্দ হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে মাদক ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
চলমান মাদক ব্যবসার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রয় এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতায় বাড়াচ্ছে। এর ফলে কিছু ব্যবসা তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায় বা স্থানান্তরিত হয়। আশপাশের পিতা-মাতারাও শিশু এবং তরুণদের ওপর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যারা প্রায়ই এই ব্যবসার সংস্পর্শে আসে।
কারওয়ান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ বলেন, অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে অবৈধ বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধে এবং কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে আরও ভালো সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততাসহ ব্যাপক সংস্কার আবশ্যক।
এ বিষয়ে র্যাব-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খলিদুল হক হাওলাদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকায় প্রকাশ্যে অবৈধ মাদক বিক্রির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএনসির মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসা রোধে ডিএনসির অপারেশনাল টিম ওই এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, বরং চাহিদা কমানো প্রয়োজন। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়বে। চাহিদা কমাতে তারা সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা মোটিভেশনাল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে।
ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, অভিভাবকদের পারিবারিক পর্যায়ে তাদের সন্তানদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, যাতে তারা (শিশুরা) মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ে।
কারওয়ান বাজারের অবৈধ মাদকের হটস্পট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন ইউএনবিকে বলেন, গত ৩ থেকে ৪ মাসে তারা অন্তত ৫০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এ ছাড়া ডিএমপির গোয়েন্দা শাখাও (ডিবি)মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। এত কিছুর পরও অবৈধ মাদকের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
ওসি বলেন, মাদকের অবৈধ ব্যবসা রোধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ দল প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সূত্র: ইউএনবি