ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজ সংস্কার কমিশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে সেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে। এতে বুধবার প্রায় পুরো দিন তীব্র যানজটে নাকাল ছিল রাজধানীবাসী। এর আগেও কয়েক দিন নানা দাবিতে আন্দোলন করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে একই সময়ে একই দাবিতে রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নামলে নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা তীব্র হয়। এ সময় বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়।
অন্যদিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন ৩৫ প্রত্যাশী যুবকরা। পরে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হলে শিক্ষা ভবনের সামনে জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এসব রাস্তায় আন্দোলনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে নগরবাসীকে পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাবের সবকটি রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজে শিক্ষার্থীদের এই শাটডাউন কর্মসূচির কারণে মিরপুর-আজিমপুর সড়ক, শাহবাগ-ধানমন্ডি সড়ক, ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর সড়কে পুরোপুরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে মাত্রাধিক ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রিকশা ও মোটরসাইকেল আরোহী যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা বহনকারী যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করেছে আন্দোলনকারীরা। কিছু যাত্রীকে যানবাহন ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। এ সময় সায়েন্সল্যাব ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।
অবরোধ চলাকালীন শিক্ষার্থীরা ‘অধিভুক্তি নাকি মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, মানি না, মানবো না’, ‘আর নয় দাসত্ব, হতে চাই স্বতন্ত্র’, ‘ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক’, ‘নিপীড়ন নাকি অধিকার, অধিকার, অধিকার’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সরকার মেনে নিচ্ছে না। সরকার যৌক্তিক সমস্যার সমাধান না করে তাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। সড়ক অবরোধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চান না শিক্ষার্থীরা। তারা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চান। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করার দাবি জানান তারা।
যতক্ষণ পর্যন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখা হবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
পরে আগামী রোববার থেকে অনশন এবং ফের ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বেলা পাঁচটায় সড়ক ছেড়ে যান আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অনতিবিলম্বে সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন করতে হবে; এই কমিশন বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করবে; স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কোনো সেশনজট তৈরি করা যাবে না। যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন না হবে ততদিন সেশনজট যেন না হয় সেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।
এ বিষয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া সাত কলেজের সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। গতকালও (মঙ্গলবার) আমরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দেয়নি। যে কারণে আমরা আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলবে।
শিক্ষা উপদেষ্টার বিবৃতি
এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্যান্য শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট আন্দোলন প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেম যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
অনশন ও ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা
শিক্ষা উপদেষ্টার বিবৃতির পর বুধবার সন্ধ্যায় সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ সংস্কার কমিশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে আগামী রোববার সকাল ১১টা থেকে অনশন করার কথা জানান শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিত রেখে রোববার থেকে ব্লকেড কর্মসূচিও চলমান রাখার কথা জানিয়েছেন তারা। এ সময় প্রতিটি কলেজে বিভাগভিত্তিক অনলাইন আলোচনা সভা করবেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, বৈষম্য দূর করে সাত কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একমাত্র সমাধান। আমরা আমলাতান্ত্রিক কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষা প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।
শিক্ষা উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি একজন শিক্ষাবিদ। আপনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে মূল্যায়ন করবেন। দীর্ঘ সাত বছরের বৈষম্য দূর করবেন এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পূরণ করে দেবেন।
আন্দোলনের সূত্রপাত যেভাবে
গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়।
পরে ২২ অক্টোবর সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। সে দিন ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকেও প্রত্যাখ্যান করে।
জলকামান ও লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ ৩৫ প্রত্যাশীরা
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীদের লাঠিচার্জ ও জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হলে তারা সেখান থেকে সরে গিয়ে শাহবাগ থানার সামনে ফুলের দোকানগুলোর সামনে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শিক্ষা ভবন অভিমুখে যাত্রা করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের দলটি হাইকোর্ট এলাকার সামনে আসলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করা হয়। সচিবালয়ের আশেপাশে সমাবেশ নিষিদ্ধ এটিও বলা হয়। এরপরও আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর জলকামান দিয়ে পানি ছুড়তে থাকে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে গত ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএসে বসতে পারবেন, এমন ধারা সংযোজিত হবে বলেও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী বিভিন্ন প্রকার মোটরযানে উচ্চমাত্রার হর্ন (ভেঁপু) ব্যবহার না করতে নির্দেশনা প্রদান করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী বিভিন্ন প্রকার মোটরযানে উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। উচ্চমাত্রার হর্ন বাবহার করার কারণে পথচারী, যাত্রীসাধারণ, অন্যান্য গাড়ির চালক, নগরবাসী এবং বিশেষ করে অসুস্থ জনসাধারণের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে।
এ সমস্যা রোধে মোটরযান চালকদের সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ৪৫ এর বিধান অনুসরণ করে উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করার জন্য এবং মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোন যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন বা পুনঃস্থাপন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। তাছাড়া সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ এর বিধি ৮১ অনুযায়ী পরপর বিভিন্ন সুর প্রদানকারী কোন বহুমুখী হর্ন অথবা তীব্র, কর্কশ, আকস্মিক, বিকট বা ভীতিকর শব্দের হর্ন বা যন্ত্র মোটরযানে সংযোজন বা ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে কোন মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মোটরযান সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে।
রাজধানীর মতিঝিলের ফকিরাপুলে একটি আবাসিক হোটেল থেকে হাসানুজ্জামান চৌধুরী (৫২) নামে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে খবর পেয়ে আবাসিক হোটেল পারাবতের ৯০৫ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আমিরুজ্জামান চৌধুরী। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা এসে ওই হোটেলের ৯০৫ নম্বর কক্ষে উঠেন তিনি। রাতে হোটেলের কর্মচারীরা তাঁর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে থানায় খবর দেন। মতিঝিল থানার পুলিশ হোটেলে গিয়ে কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পায়। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ভেতরে অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ওসি জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর (শনিবার) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কিছু কিছু সড়কের বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ কারণে ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিকল্প সড়ক যানবাহনের চলাচলের জন্য পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, বিদেশি কূটনীতিক এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়া-আসা করবেন।
এ কারণে ওই এলাকায় যানবাহনের সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করতে ওইদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন মিরপুর মাজার রোড (মাজার রোড ক্রসিং থেকে মিরপুর ১ নম্বর ক্রসিং পর্যন্ত) পরিহার করে বিকল্প সড়কে চলাচল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
বিকল্প সড়কগুলো হলো-
১. যেসব যানবাহন আশুলিয়া থেকে বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে মিরপুরে আসবে, সেসব যানবাহন নবাবেরবাগ ক্রসিং থেকে গুদারাঘাট হয়ে রাইনখোলা ক্রসিং (চিড়িয়াখানা সড়ক) ব্যবহার করবে।
২. যেসব যানবাহন মাজার রোড ক্রসিং দিয়ে শাহআলী মাজার সংলগ্ন এলাকা অতিক্রম করবে, সেসব যানবাহন টেকনিক্যাল মোড়-আনসার ক্যাম্প-বাঙলা কলেজ-মিরপুর ১নম্বর সড়ক ব্যবহার করবে।
৩. যেসব যানবাহন মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বর থেকে মিরপুর-১নম্বর ও মাজার রোড হয়ে গাবতলীর দিকে যাবে, সেসব যানবাহন মিরপুর-১ নম্বর থেকে ডানে তানিন গ্যাপে ইউটার্ন করে নবাবেরবাগ ক্রসিং বা দিয়াবাড়ি ক্রসিং হয়ে ব্রাদার্স গ্যাপ দিয়ে গাবতলী চলাচল করবে।
৪. গাবতলী থেকে ঢাকা মুখী যানবাহন ব্রাদার্স গ্যাপ থেকে বামে টার্ন করে বেড়িবাঁধ দিয়াবাড়ি ক্রসিং হয়ে নবাবেরবাগ ক্রসিং দিয়ে গুদারাঘাট ও রাইনখোলা ক্রসিং (চিড়িয়াখানা সড়ক) ব্যবহার করবে।
৫. দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন ১০ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারের রাস্তা ব্যবহার না করে গোলারটেক হয়ে পালপাড়া ঘাট দিয়ে গাবতলী বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে দিয়াবাড়ি ও নবাবেরবাগ ক্রসিং দিয়ে চলাচল করবে।
দিবসটিতে অনুষ্ঠান চলাকালে নগরবাসীকে পুলিশের নির্দেশিত বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতাও চেয়েছে ডিএমপি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেছেন, ‘বর্তমান সময়ে মিথ্যা ও গুজব নির্ভর সংবাদ বেশি হচ্ছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইনের এই যুগে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে সংবাদের ‘ফ্যাক্ট চেক’ তথা সত্যতা যাচাই করাটা খুব জরুরি। গণমাধ্যমগুলোকে এজন্য সত্য-মিথ্যা যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ করার বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) উদ্যোগে ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) আয়োজনে সংবাদ সম্পাদনাবিষয়ক তিনদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসইসির সভাপতি মুক্তাদির অনিক, সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল, পিআইবির অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিভাগের পারভীন সুলতানা রাব্বীসহ প্রশিক্ষণ নেওয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাব-এডিটর ও ডিএসইসির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাব-এডিটরদের গুরুত্ব তুলে ধরে তথ্য সচিব বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদের গুরুত্ব ও সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন সাব এডিটররা (সহ-সম্পাদক)।
তিনি নিজেকে সাব এডিটরদের সঙ্গে এক কাতারের মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি আপনাদের সাইডের মানুষ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়ার পর পরই সাংবাদিকতা করেছিলাম। এই মাধ্যমেই আমার ক্যারিয়ার শুরু করি। তাই আমি সবসময় আপনাদের দুঃখ-কষ্টটা বুঝি।’
এসময় তিনি গত ১৫ বছরের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দীর্ঘ বছর আমরা বঞ্চনার শিকার হয়েছি। দেশের সবকিছুতেই বিভাজন ছিল। নিপীড়িত-নির্যাতিত ছিলো। এখন একটা পরিবর্তিত সময় এসেছে। আমরা এখন সুন্দর আলোর প্রত্যাশায় ছুটছি, সবাই সেই আলোর অপেক্ষায়।’
পিআইবি’র মাধ্যমে সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের আরও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘পিআইবি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান। তবে যেরকম হওয়ার কথা ছিল, সেরকম হয়নি। এটা নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। তারপরও একটা পরিবর্তিত সময়ের পর সবকিছু নতুন করেই করতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি নতুন কিছু করার।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা পেশাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। আপনি যেই মতবাদেরই হোন না কেন, সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব থাকাটা অনেক জরুরি। কেননা একটি জাতির ধারণা, কল্পনা, জীবনধারাসহ সম্প্রদায়ের সকল বিষয় নির্মাণ কিন্তু সাংবাদিকরাই করে থাকেন। তাই জাতির জন্য যোগ্য সাংবাদিক হওয়াটা প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে সাব-এডিটরদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন ডিএসইসির সভাপতি মুক্তাদির অনিক, সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল। এসময় তারা সাব-এডিটরদের জন্য এরকম আরও প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
পরে অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া ডিএসইসির সদস্যদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার বায়ুমান বর্তমানে মাঝে মাঝে অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে।
এ অবস্থায় সবাইকে বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যক্তিকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বায়ুমানের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। জনগণকে এ তথ্য দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিকদের এবং সাধারণ মানুষকে
কিছু পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুইবার পানি ছিটানো, পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করা।
বিজ্ঞপ্তিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদী থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জের পাংগাও বুড়িগংঙ্গা নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে এই অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ঢাকা জোন অধীনস্থ বিসিজি স্টেশন পাগলা কর্তৃক ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের পাংগাও বুড়িগংঙ্গা নদী সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলার সময় মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ১ টি স্টিল বডি তল্লাশি করে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে মঙ্গলবার জব্দকৃত জাল উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোহাম্মদ কাজী মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাত দেড়টার দিকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
উত্তরা পূর্ব থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের হওয়া স্বর্ণ চোরাচালান মামলার তদন্ত শেষে মোহাম্মদ কাজী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
বিচারকাজ শেষে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৬ মে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালত-৬ তাকে ১৪ বছরের সাজা প্রদান করেন। মামলা চলমান অবস্থায় তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের হয়রানিসহ মামলা বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে আদাবর থানার এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযুক্ত এসআইয়ের নাম- শাহিন পারভেজ। এর আগে তিনি সিলেট রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল রোববার রাতে তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলে আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
জুলাই অভ্যুত্থানের মামলা বাণিজ্যে পুলিশও জড়িত জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমার সব লোকও যে সব ভালো তা বলব না। আমার কাছে যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট এসেছে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি গতকাল (রোববার) অলরেডি একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, যিনি আমার লোক, এই কাজে লিপ্ত ছিল।
জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে আদাবর থানার এসআই শাহিন পারভেজকে রোববার প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূইয়া
তিনি বলেন, রোববার রাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এসআই শাহিন পারভেজকে প্রত্যাহার করা হয়। তাকে তেজগাঁও বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট রেঞ্জ থেকে ডিএমপিতে বদলি হয়ে আসা শাহিন পারভেজকে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পেয়ে মামলার এক আসামির কাছে তিনি টাকা দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি বিষয়টি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তার বিরুদ্ধে এই শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল এবং প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনসহ চারদিন মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে চারদিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে সেই দিনগুলো হলো, ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি।
আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে এই তথ্য জানান।
প্রক্টর বলেন, বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ৬টি পয়েন্ট চাইলেই বন্ধ করতে পারি। কিন্তু ঠিকই মেট্রো স্টেশন দিয়ে লোকজন চলে আসবে। তাই আমরা মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন বন্ধের সুপারিশ করেছি।
তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এক সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমি ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশন ৪ দিন বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছি।
প্রক্টর বলেছেন, সুপারিশের পর যোগাযোগ সচিব মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে তাৎক্ষণিকভাবে এই ৪দিন স্টেশনটি বন্ধ রাখতে বলেছেন। আশা করি, এ বিষয়ে শিগগিরই মেট্রোরেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে।
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং গঠনতন্ত্র বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শুরু করেছেন। উনারা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করা যায়, আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে।
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সদস্যদের জন্য প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) সংগঠনটির উদ্যোগে সংবাদ সম্পাদনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
আজ রোববার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি চলবে আগামী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সহ-সম্পাদকগণ এতে অংশগ্রহণ করেছেন।
এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সহ-সম্পাদকদের (সাব-এডিটর) সম্পাদনার মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে চর্চা বাড়াতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ।
উদ্বোধনের দিনে সংবাদ মূল্য ও সংবাদ চেতনা, সংবাদ সম্পাদনার কলা কৌশল ও শিরোনাম লেখাসহ গণমাধ্যমে শব্দ এবং ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী, প্রথম আলোর ডেপুটি নিউজ এডিটর কাজী আলিম-উজ-জামান এবং পিআইবির সহকারী প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দিন নিপুন। প্রশিক্ষণ কর্মশালাটির উদ্বোধনের দিনে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মুক্তাদির অনিক ও সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবালসহ কমিটির অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতি মুক্তাদির অনিক বলেন, ‘আমাদের নতুন কমিটি যাত্রার পর পিআইবির সঙ্গে একটি ভালো কাজ শুরু করতে পারায় ভালো লাগছে। আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ২ হাজার। আমাদের প্রত্যাশা, পিআইবি জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে কর্মরত এসব সাব এডিটরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখবে। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অজস্র বিষয়ের তথ্যের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। তাই গণমাধ্যমের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফ্যাক্ট চেকিং। অন্তর্বর্তী সরকারও বিষয়টিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। গণমাধ্যমে সহ-সম্পাদকরাই প্রতিটি সংবাদের খুঁটিনাটি পরখ করে থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যাশা পিআইবি এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে একাধিক কর্মশালার আয়োজন করবে যাতে সহ-সম্পাদকরা বিষয়টির নিবিড় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।’
ডিএসইসির সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটি যখন দায়িত্ব নেই, তার পরপরই দেশে একটা নতুন পরিস্থিতি এসেছে। সহ-সম্পাদকরা মাঠের সংবাদ সংগ্রহে না যাওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের সদস্যদের জন্য নতুন কর্মসূচি নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। এ অবস্থায় পিআইবির সহায়তায় বরাবরের মতো সহ-সম্পাদকদের উৎকর্ষ বাড়াতে এই কর্মশালা আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এজন্য পিআইবিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশাবাদী নিয়মিতভাবে আমরা সংগঠনের সদস্যদের জন্য এমন প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারবো।’
আগামীকাল সোমবার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিনে থাকছে সাংবাদিকতায় বিভিন্ন পক্ষপাত, সাংবাদিকতার নৈতিকতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে আলোকপাত করবেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি নাজিয়া আফরিন মনামী।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপতথ্য প্রচার ও ফ্যাক্ট চেকিংসহ সম্পাদনায় জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ, পিআইবির অধ্যয়ণ ও প্রশিক্ষণ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিভাগের পারভীন সুলতানা রাব্বী প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কর্মশালা শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সনদবিতরণ করা হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রায় সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় জমি দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজির ঘটনার খবরও পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় স্থানীয় পতিত স্বৈরাচার সরকারের রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে মিডিয়াকর্মী তথা কথিত সাংবাদিকদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটনের পর ধীরে ধীরে দেশে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা উন্নতি হতে থাকে।
তবে নানা জায়গায় এখনো চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ভুইঁফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা-বানোয়াট সংবাদ প্রচারের কথা বলে অনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মিথ্যা সংবাদ করার কথা বলে মোটা অংকের চাঁদার দাবী করেন বলে জানায় ভুক্তভোগীরা।
তেমনিভাবে রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানী-গুলশানে গত ৫ আগস্টের পর একশ্রেণীর ‘সাংবাদিক নামধারী’ পরিচয়কারীরা হরহামেশাই এসব কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, বেশকিছু রেস্টুরেন্টসহ নামিদামি হোটেল ও বারে গিয়ে এসব সাংবাদিকরা চাঁদা দাবী করছেন।
ক’দিন আগে বনানীর ১১ নং রোডে অবস্থিত ‘সিগনেচার রেস্টুরেন্টে’ তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা একজন জানান, প্রতিদিনই কোনো না কোনো সাংবাদিক পরিচয়ে রেস্টুরেন্টে আসছে এবং তাদেরকে টাকা (চাঁদা) দিতে বলেন। না হয় রিপোর্ট করার ভয় দেখান। এমন এমন পত্রিকার নাম পরিচয়ে তারা আসে, সেসব গণমাধ্যমের কোনোদিন নামও তারা শুনেও নাই। মেইনস্ট্রিমের কোনো পত্রিকা বা মিডিয়ার সাংবাদিক এমন করে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
তাদের দাবি নামকরা কোনো সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা এমনটি করে না। আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কথিত পত্রিকাগুলো টাকা নেওয়ার জন্যই এমনটি করেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় ভুঁইফোড় ও হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কিছু সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তির দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা। তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), নিউজ পোর্টাল, যত্রতত্র ফেসবুক লাইভ, প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছেন কিছু ভুঁইফোড় সাংবাদিক। অথচ তাদের এসব চ্যানেলের কোনো অনুমোদন নেই, নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাও। শুধুমাত্র পেশা পরিবর্তন করেই বনে যাচ্ছেন সাংবাদিক।
এদিকে কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশান-বনানীর রেস্টুরেন্টসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা এসব ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম বেশিদিন সহ্য করবেন না। তারা শিগগিরই এসব কথিত সাংবাদিকদের বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তারা। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গেলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে তাদেরকে তুলে দিবেন।
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের কাছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিএনপির এই ৩টি সহযোগী সংগঠনের মিছিল রামপুরা ব্রিজে পৌঁছালে তাতে বাধা দেয় পুলিশ।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। নয়াপল্টন থেকে বেরিয়ে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে মিছিলটি রামপুরা ব্রিজে পৌঁছালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে। এ সময় তিন সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা করার আহ্বানও জানায় পুলিশ।
পরে আন্দোলনকারীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে স্মারকলিপি দিতে ভারতীয় হাইকমিশনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন-জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।
এর আগে আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে রবিবার সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই কর্মসূচি আয়োজন করে। বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
পদযাত্রা শুরুর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও গণমাধ্যম মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে অভিযোগে করে তার নিন্দা জানান তারা।
রিজভী অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বর্তমানে যা করছে তা সরাসরি আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রতিবাদ মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা (ভারত সরকার) বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করেন না। আপনারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন।’
রিজভী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আকাশ থেকে সমুদ্র থেকে স্থল পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে কীভাবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। আমাদের স্মার্ট সামরিক বাহিনীতে যোগ্য সদস্য রয়েছে।’
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে দেখা গেছে। তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানও দেন।
বাংলাদেশবিরোধী ঘটনা এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের মন্তব্যের প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে শনিবার বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন এই বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজধানী ঢাকার এক সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল যেন ঐতিহ্য হারিয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে। ফাঁকা অফিস ফ্লোরগুলো যেন সেই সংকটেরই প্রতিচ্ছবি।
মতিঝিলের পূর্বপ্রান্তে টিকাটুলি এলাকার ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া দিলকুশা সড়ক ও সোজা পশ্চিমপ্রান্তের আরামবাগ-ফকিরেরপুল ও নয়া পল্টন এলাকার কথা ধরা যেতে পারে। এখানে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার একপাশে অন্তত ৪০টি বাণিজ্যিক ভবন। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২২টিতে এখন ‘টু-লেট’ ঝুলছে। অথচ এমন সময় ছিল যখন মতিঝিলে জায়গা পাওয়া ছিল ‘অনেক টাকার’ বিষয়।
ভাড়াটিয়াদের জন্য ভবনগুলোর বছরের পর বছর অপেক্ষা এই বাণিজ্যিককেন্দ্রের ক্ষয়িষ্ণু চিত্রই তুলে ধরে। এক সময় রাজধানীর সবচেয়ে প্রাণবন্ত ব্যবসাকেন্দ্র এখন যেন প্রাণহীন।
অনেক বাণিজ্যিক ভবন গত পাঁচ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। নতুন ভাড়াটিয়া পায়নি। এ ছাড়া এখনো সেখানে যেসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক আছে সেগুলো নতুন ঢাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী ও বারিধারার দিকে চলে যাচ্ছে।
নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মতিঝিলে শাখা রাখতেও নারাজ।
উদাহরণ হিসেবে মতিঝিলের আদমজী কোর্ট এনেক্স বিল্ডিং-২ এর কথা ধরা যায়। এক সময় ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া এই ১২ তলা ভবনটি ছিল কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর।
২০২০ সালে করোনা মহামারির পর ব্যাংকটি পর্যায়ক্রমে এর প্রধান কার্যালয় গুলশানে সরিয়ে নেয়। এখন ভবনটির অধিকাংশই ফাঁকা। দিনের আলোতেও অন্ধকারাচ্ছন্ন।
আদমজী কোর্ট থেকে প্রায় ১৫ মিনিটের হাঁটা পথে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এনেক্স ভবনেও একই দৃশ্য। সম্প্রতি সেখানে দেখা যায়, ১১ তলা ভবনটি দুপুর ১টায় নিস্তব্ধ। লিফটে দু-তিনজনের দেখা মেলে। কয়েক বছর আগেও তা ছিল কল্পনার বাইরে।
২০১০-এর দশকে যখন ভবনটিতে স্টক ব্রোকারেজ অফিস অনেক ছিল, তখন লিফটে উঠতে লাইনে দাঁড়াতে হতো। ১৯৫৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএসইর সব কাজ এখানে হতো।
শেয়ার লেনদেনের সময় ওই ভবনটির সামনে এত জনসমাগম হতো যে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকত না। এখন দিনের মাঝামাঝি সময়েও তা প্রায় জনশূন্য।
ঢাকার উত্তরাঞ্চল নিকুঞ্জে নিজস্ব ভবনে অফিস সরিয়ে নেওয়ার পর ডিএসইর পুরোনো ভবনটিতে হাজার হাজার বর্গফুট জায়গা খালি পড়ে আছে।
দুটি ব্রোকারেজ হাউস ও একটি বিমা প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে সরিয়ে নতুন জায়গায় নেওয়ার ঘোষণা গ্রাহকদের দিয়ে রেখেছে। দিলকুশার সুদৃশ্য জীবন বীমা টাওয়ারেও একই চিত্র। ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখানে ছিল।
২০১৭ সালে বিএসইসি মধ্য ঢাকার শেরেবাংলা নগরে নিজস্ব ভবনে চলে আসার পর প্রায় ছয় হাজার ২০০ বর্গফুটের দুটি তলা এখন খালি।
এক সময় ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় ছিল মতিঝিলে। সে সময় এই বাণিজ্যকেন্দ্রের আধিপত্য ছিল দেশজুড়ে। এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে অভিজাত গুলশান এলাকায়। মতিঝিলের একাধিক ভবন মালিক জানান, কম ভাড়াতেও ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মতিঝিলের গা-ঘেঁষে গড়ে ওঠা দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার এক ভবন মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, একতলা খালি। চার বছর ধরে ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।
নব্বইয়ের দশকে মতিঝিল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ভাড়া ছিল এখানকার বাণিজ্যিক ভবনগুলোয়। এখন খুব কম মানুষই তাকে ফোন দিয়ে ভাড়ার খবর নেন।
তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে বড় বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও নতুন প্রজন্মের অফিসগুলো এ এলাকায় আসছে না। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি সচিবালয় কাছাকাছি হওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান মতিঝিলে অফিস নিত।
মতিঝিলে সাধারণ বিমা করপোরেশনের একাধিক ভবন আছে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এখন তাদের ভবনগুলোর হাজার হাজার বর্গফুট ফাঁকা।
তাদের মতে, বছরের পর বছর ধরে মতিঝিলে ফ্লোর ফাঁকা থাকলেও ভাড়া কমেনি। তবে অন্যান্য এলাকার তুলনায় ভাড়া বেড়েছে ধীরগতিতে।
অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধা ভেদে এই এলাকায় প্রতি বর্গফুটের গড় ভাড়া ৬০ থেকে ৯০ টাকা। গুলশান-বনানীর মতো এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনগুলোর তুলনায় মতিঝিলে ভাড়া এখনো কম।
ভবন ভাড়া ও বিক্রির ওয়েবসাইট বিডিপ্রোপার্টি ডট কম থেকে জানা যায়, গুলশানে প্রতি বর্গফুটের গড় ভাড়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। বনানীতে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরে যাওয়ায় মতিঝিলের সিনেমা হলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মতিঝিলের টয়েনবি রোডে মধুমিতা সিনেমা হল এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। এখন দর্শকের অভাবে তা মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে। মহামারির পর থেকে বন্ধ থাকা অভিসার সিনেমা হলের অবস্থা আরও খারাপ।
সিনেমা হলের পাশে অভিসার স্টোরের মালিক মো. লিটন জানান, নব্বইয়ের দশকে তিনি দোকান শুরু করেন। তখন তিনি ও তার তিন ভাই স্ন্যাকস বিক্রি করতেন।
এক সময় হলের আশপাশে সিনেমা দেখার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ভিড় ছিল। সিনেমা ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে তার তিন ভাই অন্য কাজের খোঁজে দোকান ছেড়ে চলে যান।
মো. লিটন বলেন, এক সময় মানুষ সরকারি রেটের তুলনায় কালোবাজার থেকে তিনগুণ বেশি দামে সিনেমার টিকিট কিনত। বছরের পর বছর বন্ধ থাকায় হলটি এখন ভুতুড়ে ভবনে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন সিনেমা দেখতে মাল্টিপ্লেক্সে যান।
পুরান ঢাকার কাছে বেড়ে ওঠা ও প্রায়ই মতিঝিলে যাতায়াত করা মোতাহার হোসেন মাসুম বলেন, যদিও ব্যাংকগুলো চলে যাচ্ছে তবুও অনেক জনপ্রিয় খাবারের হোটেল এখানে এখনো থেকে গেছে। অনেকে এখনো সেসব হোটেলে আসেন।
১৯৫৮ সালে মতিঝিলে প্রতিষ্ঠিত দেশবন্ধু হোটেল অনেকের কাছে স্মৃতিজাগানিয়া হয়ে আছে। এই এলাকার অন্যান্য জনপ্রিয় হোটেলের মধ্যে ঘরোয়া ও হিরাঝিলে প্রতিদিন অনেকে খেতে আসেন।
মোতাহার হোসেন মাসুম আরও বলেন, আশির দশকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ভবন তৈরির সময় এর ক্যাফেটোরিয়ায় অন্যান্য অফিসের বড় কর্মকর্তারা খেতে আসতেন।
পূর্বাণী হোটেল থেকে এখনো শীর্ষ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা খাবার নিয়ে যান বলে জানান তিনি।
রাতে মতিঝিল নেয় এক বিস্ময়কর রূপ। কাজ শেষে সবাই বাড়ি ফেরেন যখন-তখন পুরো এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও সরকারি ছুটির দিনগুলোয় এর সুপ্রশস্ত রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে শিশুদের খেলার মাঠ!