ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজ সংস্কার কমিশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে সেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে। এতে বুধবার প্রায় পুরো দিন তীব্র যানজটে নাকাল ছিল রাজধানীবাসী। এর আগেও কয়েক দিন নানা দাবিতে আন্দোলন করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে একই সময়ে একই দাবিতে রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নামলে নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা তীব্র হয়। এ সময় বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়।
অন্যদিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন ৩৫ প্রত্যাশী যুবকরা। পরে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হলে শিক্ষা ভবনের সামনে জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। ফলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এসব রাস্তায় আন্দোলনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে নগরবাসীকে পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাবের সবকটি রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজে শিক্ষার্থীদের এই শাটডাউন কর্মসূচির কারণে মিরপুর-আজিমপুর সড়ক, শাহবাগ-ধানমন্ডি সড়ক, ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর সড়কে পুরোপুরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে মাত্রাধিক ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রিকশা ও মোটরসাইকেল আরোহী যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা বহনকারী যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করেছে আন্দোলনকারীরা। কিছু যাত্রীকে যানবাহন ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। এ সময় সায়েন্সল্যাব ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।
অবরোধ চলাকালীন শিক্ষার্থীরা ‘অধিভুক্তি নাকি মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, মানি না, মানবো না’, ‘আর নয় দাসত্ব, হতে চাই স্বতন্ত্র’, ‘ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক’, ‘নিপীড়ন নাকি অধিকার, অধিকার, অধিকার’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সরকার মেনে নিচ্ছে না। সরকার যৌক্তিক সমস্যার সমাধান না করে তাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। সড়ক অবরোধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চান না শিক্ষার্থীরা। তারা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চান। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করার দাবি জানান তারা।
যতক্ষণ পর্যন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখা হবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
পরে আগামী রোববার থেকে অনশন এবং ফের ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বেলা পাঁচটায় সড়ক ছেড়ে যান আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অনতিবিলম্বে সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন করতে হবে; এই কমিশন বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করবে; স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কোনো সেশনজট তৈরি করা যাবে না। যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন না হবে ততদিন সেশনজট যেন না হয় সেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।
এ বিষয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া সাত কলেজের সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। গতকালও (মঙ্গলবার) আমরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো নজর দেয়নি। যে কারণে আমরা আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলবে।
শিক্ষা উপদেষ্টার বিবৃতি
এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্যান্য শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট আন্দোলন প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেম যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
অনশন ও ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা
শিক্ষা উপদেষ্টার বিবৃতির পর বুধবার সন্ধ্যায় সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ সংস্কার কমিশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে আগামী রোববার সকাল ১১টা থেকে অনশন করার কথা জানান শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিত রেখে রোববার থেকে ব্লকেড কর্মসূচিও চলমান রাখার কথা জানিয়েছেন তারা। এ সময় প্রতিটি কলেজে বিভাগভিত্তিক অনলাইন আলোচনা সভা করবেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, বৈষম্য দূর করে সাত কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একমাত্র সমাধান। আমরা আমলাতান্ত্রিক কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষা প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।
শিক্ষা উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি একজন শিক্ষাবিদ। আপনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে মূল্যায়ন করবেন। দীর্ঘ সাত বছরের বৈষম্য দূর করবেন এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পূরণ করে দেবেন।
আন্দোলনের সূত্রপাত যেভাবে
গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়।
পরে ২২ অক্টোবর সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। সে দিন ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকেও প্রত্যাখ্যান করে।
জলকামান ও লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ ৩৫ প্রত্যাশীরা
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীদের লাঠিচার্জ ও জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হলে তারা সেখান থেকে সরে গিয়ে শাহবাগ থানার সামনে ফুলের দোকানগুলোর সামনে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে শিক্ষা ভবন অভিমুখে যাত্রা করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের দলটি হাইকোর্ট এলাকার সামনে আসলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করা হয়। সচিবালয়ের আশেপাশে সমাবেশ নিষিদ্ধ এটিও বলা হয়। এরপরও আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর জলকামান দিয়ে পানি ছুড়তে থাকে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে গত ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএসে বসতে পারবেন, এমন ধারা সংযোজিত হবে বলেও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ইনভেস্টমেন্টের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। পরে অভিযোগ পেয়ে চক্রের সক্রিয় সদস্য নাদিমকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীতে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার বিকালে জানিয়েছে সিআইডি।
সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি বার্তা আসে। বার্তা প্রেরণকারী নিজেকে নাজনীন নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম আপ-ওয়ার্কের প্রতিনিধি। বাসায় বসে পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে আয় করার প্রলোভন দেখালে ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।
প্রথমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনসহ কয়েকটি ছোট অনলাইন টাস্ক করিয়ে ভুক্তভোগীর মোবাইল আর্থিকসেবার (বিকাশ) মাধ্যমে সামান্য অর্থ ১৫০ টাকা, পরে ২ হাজার ১০০ টাকা প্রদান করে আস্থা তৈরির চেষ্টা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এরপর তাকে @upworkfrontdesk2013 নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যেখানে ভুয়া সদস্যরা অভিনয় করছিলেন যে, তারা নিয়মিত কাজ করে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন।
ভুক্তভোগীর বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী ধাপে বড় টাস্কের কথা বলে প্রতারকরা ক্রিপট অ্যাকাউন্ট খুলতে ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে বলে। এরপর জানানো হয়, আরও ৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে তার ব্যালেন্স ৭ হাজার টাকা জমা হবে এবং তিনি অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। ভুক্তভোগী টাকা পাঠানোর পর তাকে ভিআইপি টাস্ক গ্রুপে যুক্ত করা হয়। গ্রুপে দেখানো হয় যে— সবার ক্রিপট অ্যাকাউন্টে ৭ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
জসীম উদ্দিন আরও বলেন, ভুক্তভোগী এই টাকা উত্তোলন করতে চাইলে তাকে জানানো হয়, ক্যাশ আউটের জন্য আরও ১৫ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে তিনি এই টাকা দেন। তবে ব্যালেন্সে অসঙ্গতি দেখা দিলে তিনি বিষয়টি জানতে চাইলে নতুন টাস্ক ও নতুন শর্ত আরোপ করা হয়। এভাবে একের পর এক টাস্ক, বড় লাভের লোভ এবং ভুয়া হিসাব দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নেয়।
পরে ভুক্তভোগী গত মে মাসে ডিএমপি লালবাগ থানায় একটি মামলা করলে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। এরপর বৃস্পতিবার নাদিমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, এনআইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে।
রাজধানীর বনানীতে কড়াইল বস্তিতে আগুন লেগেছিল ২৫ নভেম্বর। আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেকের শেষ সম্বল, স্বপ্ন। তবে ঘটনার ১০ দিন পার হলেও এখনো খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইল বস্তিবাসী। অর্থের অভাবে তুলতে পারছেন না ঘর। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, এনজিও এবং ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা ও ত্রাণ দেওয়া হলেও তা বস্তিবাসীর জন্য অপ্রতুল। এদিকে, আগুনে ছাই হয়ে গেছে ‘মায়ের দোয়া বিদ্যানিকেতন ও হাইস্কু।’ ফলে থমকে গেছে ৪০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা।
বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, বৌ-বাজার এলাকার দরিদ্র সন্তানদের এক দশকের বেশি সময় ধরে আলো ছড়ানো স্কুলটির পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্কুল ভবনের নিচতলায় রয়েছে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বসার কক্ষ। সেখানে বসে ছিলেন দুইজন শিক্ষক। তাদের পাশেই বসা ছিলেন প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন।
কথা হলে তিনি বলেন, ‘তিন তলাবিশিষ্ট স্কুল ভবনের তিন তলায় ছিল স্টোর রুম। সেইসঙ্গে ছিল চারটি শ্রেণিকক্ষ। ভয়াবহ আগুনে ওপরের অংশে থাকা চেয়ার-টেবিল ও বই-খাতাসহ সবটাই পুড়ে গেছে। এছাড়া স্কুল ভবনের দেয়ালেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ফলে ভবনটির সংস্কার করা প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চলছে।’
প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুলে অধ্যয়নের জন্য বেতন নেওয়া হচ্ছে শ্রেণিভেদে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। সেইসঙ্গে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে ফ্রিতে পড়ানো হচ্ছে। তাদের বই-খাতাসহ সবকিছুই স্কুল কর্তৃপক্ষ বহন করছে। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বছরের ফাইনাল পরীক্ষাও হচ্ছে না। আগুন লাগার পর থানা শিক্ষা অফিসারকে পুরো বিষয়সহ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।’
এদিকে, কড়াইল বস্তির বৌ-বাজার ইউনিটের আগুন নিভলেও তাপ এখনো স্পষ্ট দুই হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখে। সব হারিয়ে অসহায় তারা। খোলা আকাশের নিচে করছেন বসবাস। কেউ কেউ আবার পরিচিতজনদের বাসায় আবার কেউবা অবস্থান করছেন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে।
যেখানে একসময় ছিল রঙিন টিনের ছাপরা, আধা-পাকা দোতলা ঘর। এখন সেখানে ছাই, পোড়া বাঁশ আর মানুষের আর্তনাদ। ঘরগুলো এখন এক টুকরো স্মৃতিও নেই।
বস্তির ‘খ’ ব্লকের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন জানান, তিনি ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। আগুনে অন্য বস্তিবাসীর মতো তার ঘরটিও পুড়ে গেছে। সেইসঙ্গে পুড়েছে ঘরে থাকা আয়ের একমাত্র সম্বল সেলাই মেশিনসহ অন্য আসবাবপত্রও। সব হারানোর পর এখন তার সম্বল শুধু পরনের কাপড়টুকুই।
বস্তির অপর বাসিন্দা শ্যামলী বেগম জানান, পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই বাঁচাতে পারেননি তিনি। চোখের সামনেই সবকিছু পুড়ে গেছে। তারা অন্যদের পাশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।
পুড়ে যাওয়া বস্তি ঘুরে দেখা গেছে, আগুনে জীবনের ভিত্তিমূল ও সঞ্চয় হারিয়ে মানুষজন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছেন। মাথার ওপরে টাঙিয়েছেন কাপড় বা ত্রিপল। কেউ ফুটপাতের ধার ধরে বিছানা পেতে আছেন, কেউ আবার খালি ভিটায় মাদুর পেতে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছেন। পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর ছাইগুলো শুধু সরেছে। বস্তির পাশের ড্রেনগুলো পোড়া আবর্জনায় ভরে গেছে। পরিষ্কার করা হয়নি এখনো। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বনানী থানার ওসি রাসেল সরওয়ার বলেন, আগুন নির্বাপণের পর খোলা আকাশের নিচে থাকায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে পুলিশ। দিন ও রাতে পালাক্রমে পুলিশ সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছের দুটি মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে অবতরণ-উড্ডয়ন করবে। তাই এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকার তাঁকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করার পর এসএসএফ নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসএসএফ সদস্যরা খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করেন।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসএসএফের নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছের দুটি উন্মুক্ত মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পরীক্ষামূলকভাবে অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এমআরটি লাইন-৬) ব্যয় ৭৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা কমল। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও তিন বছর।
গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘এমআরটি লাইন-৬’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদিত হয়েছে।
এই প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি থেকে ৭৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
২০১২ সালে প্রকল্পের প্রস্তাবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ১২ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত লাইন বাড়ানোর কারণে ২০২২ সালে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। তবে সর্বশেষ সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয়ে সরকারের অংশ কমে ১২ হাজার ৫২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ বেড়ে ২০ হাজার ১৯৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় নির্ধারিত হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধন অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম ইনস্টলেশন, টেস্টিং, ডিফেক্ট নোটিফিকেশন পিরিয়ড ও নতুন ২৪টি ট্রেন সেটের মেজর ওভারহলিং সম্পন্ন করতে মেয়াদ বাড়ানো অপরিহার্য—ডিএমটিসিএল এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ব্যাখ্যা অনুসারে, মেট্রোরেলের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে প্লাজার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে পর্যালোচনায় লাভজনক নয় বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বড় অঙ্কের টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে মেট্রোরেল-৬ (দক্ষিণ)-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল ওহাব বলেন, প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাদ দেওয়া স্টেশন প্লাজাগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন নেই।
গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে সংশোধন অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বিধায় প্রকল্পটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিপিপিতে রোলিং স্টকস ও ইকুইপমেন্টে ৫৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে জেনারেল কনসালটেন্সি সার্ভিসে ২২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ইঅ্যান্ডএম সিস্টেমে ২৮৮ কোটি ৬৭ লাখ, ডিপো ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ ৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মতিঝিল স্টেশন প্লাজা বাদ দেওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় কমেছে ১ হাজার ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, চারটি স্টেশন প্লাজার কাজ বাদ দেওয়ায় আরও ১৬৪ কোটি ৭২ লাখ, মেইন লাইনের সিভিল ও স্টেশন ওয়ার্কে (সিপি-০৬) ব্যয় কমেছে ১১৬ কোটি এবং ইআরএমসি (সিপি-০৯) ব্যয় কমেছে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মতিঝিল-কমলাপুর অংশের অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৮০ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ নভেম্বর ফুসফুস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, তিনি ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছেন এবং চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এএফপি আরও জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সেজন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংস্থাটি তাঁর একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতার কথা উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে রয়েছ—হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের জটিলতা, বাত এবং চোখের অসুস্থতা।
লন্ডন থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান জাতির কাছে মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এমন সঙ্কটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত নয়। স্পর্শকাতর বিষয়টিতে বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এএফপি’কে উদ্ধৃত করে গালফ নিউজ একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে। দ্য ডন নিউজ এবং আরব নিউজ তার অবনতিশীল স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরব নিউজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বেগম জিয়ার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’।
ভারতের এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি’।
এ ছাড়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু এবং হিন্দুস্তান টাইমসও এ খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
এদিকে, শনিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক ব্রিফিংয়ে ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম জিয়ার অবস্থা গত তিন দিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে এবং অনুমোদন পাওয়া মাত্র তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপি নেতারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতার জন্য জাতির কাছে দোয়া চেয়েছেন। সূত্র: বাসস
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বসতবাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা উপর গুরুত্বারোপ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ ডিএসসিসি'র ১৫ নং ওয়ার্ড ধানমন্ডি এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, এনডিসি এ অভিযানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার-সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নয় শতাধিক পরিচ্ছন্নতা ও মশক কর্মী এবং স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণ করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে লেক, ড্রেন, নর্দমা ও ফুটপাতের ময়লা পরিষ্কার ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক সংগঠন ধানমন্ডি সোসাইটি ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা করদাতা সমিতির অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক র্যালি এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের কাজের সাথে নগরবাসীর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব
প্রত্যাশা, চাহিদা ও পরামর্শ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে ফলপ্রসূ কাজ করতে পারি।" সুন্দর, বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, মশা ও দূষনমুক্ত নগর গড়ার প্রত্যাশা করে প্রশাসক বাসাবাড়ি, দোকান, বিপনি-বিতানের ময়লাগুলো যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার ক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধানগণ এবং স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর ডেমরায় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে একটি অবৈধ কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সার ও বিষাক্ত রাসায়নিক জব্দ করেছে।
বুধবার রাতে ডেমরার সানাড়পাড় এলাকায় একটি অবৈধ কারখানায় নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের ইউনিট ১৫ ইবি (মেক) এর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে এক ম্যানেজার ও দুইজন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।
নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের ইউনিট ১৫ ইবি (মেক) এর এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানে মিডল্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সার ও কীটনাশক উদ্ধার করা হয়েছে। কারখানাটিতে এসব নকল পণ্য বিদেশি কোম্পানির নামে মোড়কজাত ও বাজারজাত করা হতো। প্রায় ৮ লাখ টাকার পণ্যসহ কারখানার ম্যানেজার ও দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। পরে জব্দকৃত মালামাল ও আটক ব্যক্তিদের ডেমরা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থীরা।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে আবারও যমুনা অভিমুখে মিছিলের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের যৌক্তিক দাবি না মেনে বরং পুলিশ দিয়ে নিপীড়ন করা হয়েছে। তবুও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের আরও দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানাবেন; তবে কোন দলগুলোর নেতারা থাকবেন, তা নিশ্চিত নয়।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আন্দোলনকারীদের যমুনা অভিমুখী পদযাত্রা শাহবাগে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই দফায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, আহত হন অন্তত ১৫ জন।
শুধু ঢাকাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ করেছেন ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
উল্লেখ্য, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু হবে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সব ক্লাস ও চলমান পর্ব মধ্য পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে লতিফ ছাত্রাবাস, ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছাত্রাবাস, জহির রায়হান ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাসসহ সব আবাসিক হল সাময়িকভাবে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে অধ্যক্ষের (রুটিন দায়িত্ব) সই করা এক অফিস আদেশে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্পোত্তর কম্পন (আফটারশক) পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর সতর্কতার স্বার্থে আবাসিক ছাত্রাবাসগুলোকে যথাক্রমে লতিফ ছাত্রাবাস (পূর্ব ও পশ্চিম শাখা) ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছাত্রাবাস, জহির রায়হান ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস সাময়িকভাবে খালি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ইনস্টিটিউটের ১ম, ২য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ ও ৮ম পর্বের (উভয় শিফট) চলমান পর্ব মধ্য পরীক্ষা ও শ্রেণিকাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রাত ৯টার মধ্যেই হল ত্যাগ করতে হবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ, শিফট, ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়ক, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাকেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
দেশে ভূমিকম্পে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা চালু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। নিহত ব্যক্তির পরিবার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা এবং আহতরা প্রত্যেকে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম এ ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক জানান, ঢাকায় বসবাসরত কিংবা কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় অবস্থানকালে ভূমিকম্পে নিহত-আহত যে কেউ এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সহায়তা পেতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সুপারিশপত্র লাগবে।
নিহতের পরিবার এবং আহত ব্যক্তি নিজে অথবা তার পক্ষে হাসপাতালের পরিচর্যাকারী কিংবা নিকটাত্মীয় যোগাযোগ করতে পারবেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে। যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত নম্বর: ০১৭০০৭১৬৬৭৮।
জেলা প্রশাসন ভূমিকম্পে হতাহতদের স্বজনদের কাছে এ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে কেউ প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।
রাজধানীর ফকিরাপুলে নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীর ওপর অভিমান করে মো. মিজানুর রহমান (২৬) নামে এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ (শনিবার) ভোর সোয়া ৫টার দিকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত মিজানুর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চন্দন পাট গ্রামের এবাদুল্লাহ রহমানের ছেলে। বর্তমানে ফকিরেরপুল ১ নং গলিতে ভাড়া থাকতেন।
মিজানুরের স্ত্রী সাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী আগে ভ্যান গাড়ি চালাতেন। এখন কিছুই করে না, বাসায় বেকার বসে থাকে। এর আগেও নেশা করার জন্য আমাকে মারধর করে টাকা পয়সা নিয়ে যেত। আমি মানুষের বাড়িতে রান্নার কাজ করি। গতকালকেও সে নেশা করার জন্য আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। আমি টাকা দেইনি বলে আমাকে ঘর থেকে মেরে বের করে দিয়েছে। পরে ভোররাতে রুমে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে দেখি আমার স্বামী সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় অচেতন অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান আমার স্বামী আর বেঁচে নেই।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে আজও নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা ট্রাইব্যুনাল এলাকা।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি-সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দিনভর এভাবেই নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরতরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই প্রবেশপথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবির বিশেষ নিরাপত্তা টিম অবস্থান নিয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও রয়েছেন। পথচারী থেকে শুরু করে আইনজীবী-সাংবাদিক সবার পরিচয় যাচাই করে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ভেতর ও বাইরে কড়া নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচলেও রয়েছে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। রায় ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
এর আগে, সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ রায় ঘোষণা করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনার এ মামলার পাঁচটি অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। কিন্তু রায়ে দুটি অভিযোগে ছয়টি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে অভিযোগ-১ এ তিনটি ঘটনা আনা হয়। এর প্রথমটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া।
দ্বিতীয়ত ওই রাতে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে ফাঁসি দেবেন বলে উসকানি ও আদেশ। এছাড়া অপরাধ সংঘটনে আসামিরা নিজেদের অধীনস্তদের কোনো বাধা দেননি। তৃতীয়ত এরই ফলশ্রুতিতে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে পুলিশ। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
দুই নম্বর অভিযোগেও তিনটি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এক নম্বর ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ পাওয়া যায়। এসব কথপোকথনে ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ অপরাধ সংঘটনে অধীনস্তদের কোনো বাধা দেননি আসামিরা।
যার ফলশ্রুতিতে একই বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। যা এ অভিযোগে ঘটনা নম্বর দুই। তিন নম্বর ঘটনা ওই দিন তথা ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব অপরাধে হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় । যা জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করবে সরকার। এছাড়া উভয় অভিযোগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।
দেশে শীতের আবহাওয়া বিরাজ করছে। ভোরের কুয়াশায় শুভ্র শিশির দোল খাচ্ছে ঘাসের ডগায়। আগের থেকে তাপমাত্রা নেমে বাড়ছে শীতের অনুভব। উত্তর হিমালয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিমেল বাতাস আর হালকা কুয়াশায় ভোর থেকেই ঢাকায় শীতের আবহ তৈরি হয়েছে। ফলে শীতের আমেজ উপভোগ করতে শুরু করছে ঢাকা নগরবাসী। ধীরে ধীরে নেমে আসছে তাপমাত্রা। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৬টায় ঢাকা শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য শীতলতা নির্দেশ করে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৫৮ শতাংশ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় ঢাকার আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে এবং দক্ষিণ/দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়া রাজধানীবাসীকে শীতের আগমনী বার্তা দিয়েছে।
এদিকে সারা দেশের জন্য দেওয়া ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।