বছরের প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীর বাজারে চড়া ছিল চালের দাম। কেজিতে বেড়েছে ১২ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছুটা স্বস্তি এসেছে সবজি ও ডিমের বাজারে। সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম রয়েছে নাগালের মধ্যে। আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দামেও ফিরেছে কিছুটা স্বস্তি। শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি সব ধরনের চালের দামই। কেজিতে বেড়েছে ১২ টাকা পর্যন্ত। দু’সপ্তাহ আগে যে মিনিকেট ছিল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা তা গতকাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। ৭০ থেকে ৭৮ টাকার নাজিরশাইলের জন্য এখন গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৬ টাকা। কারণ হিসেবে ধানের বাড়তি দামকে দুষছেন বিক্রেতারা। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ধানের দাম বাড়াতেই চালের দামও বাড়াচ্ছে মিলাররা।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার কারণে সহনীয় মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, গোল বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ব্রুকলি প্রতি পিস ৪০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ১০ টাকা, মুলা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, বিচিওয়ালা শিম ৬০ টাকা, সাধারণ শিম ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মালিবাগ বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রোমেল আহমেদ। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কমেছে। তবে এখনো কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি রয়ে গেছে, যদিও বিক্রেতারা বলছেন- এখন এই সবজিগুলোর মৌসুম নয়। বাকি সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
তিনি আরও বলেন, এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিগত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কমেছে ঠিকই, তবে দু-এক বছর আগে শীতের সময় সবজির দাম আরও কম থাকতো। তারপরেও কিছুদিন আগের চেয়ে সবজির দাম তুলনামূলক অনেকটাই কমে এসেছে। কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আগের তুলনায় সবজির দাম এখন অনেক কম। যে কারণে সবজি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক আইটেমের সবজি যদি পাঁচ কেজি বিক্রি হতো, এখন সেটা ৮-১০ কেজি বিক্রি হয়। দাম কম থাকলে ক্রেতারা কিনে স্বস্তি পায়। বিক্রির পরিমাণ বাড়ায় আমরাও লাভবান হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো শীতজুড়েই সবজির দাম এমন কমই থাকবে। শীত কমার পর সবজির দাম আবার কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এখন যে সবজির দাম চলছে, এমন কম দাম অনেকদিন দেখা যায়নি।’ সার্বিক বিষয় নিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, এখনো সবজির দাম খুব কম, সামনে আরও কমতে পারে। রাজধানীর অন্য খুচরা বাজারগুলোর তুলনায় কারওয়ান বাজারের সবজির দাম আরও কম। কিন্তু যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা এখান থেকে কিনে, পরে পরিবহন, লেবার খরচ, দোকান খরচ সবকিছু ধরে সবজির দাম নির্ধারণ করে। ফলে কারওয়ান বাজারের তুলনায় অন্যান্য সব খুচরা বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। তবে সব দিক থেকে হিসেব করলে গত বছরের পুরো সময়ের চেয়ে নতুন বছরের শুরুতে এই সময় এসে বাজারের সবচেয়ে কম দাম যাচ্ছে সবজিগুলোর।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও মাছের বাজারে কিছুটা অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। নানা জাতের মাছে বাজার ভরপুর থাকলেও দাম কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। তবে বাড়তি দামে হলেও মাংসের তুলনায় মাছের বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। মাছ-মাংসে ক্রেতাদের অসন্তোষ থাকলেও বাড়তি দাম নিয়ে ‘শক্তিশালী’ অজুহাত আছে বিক্রেতাদের। গতকাল রাজধানীর রামপুরা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে বাহারি মাছে ভরপুর থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা বেড়েছে। আজকের বাজারে গোলসা মাছ ৭০০ টাকায়, গরিবের পাঙাস মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি কৈ ৮০০, চাষের কৈ ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০, বাইম ৮০০, রুই মাছ আকৃতি ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০, বড় কাতল মাছ ৪৫০, ছোট কাতল ৩৫০, কার্প মাছ ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০, তেলাপিয়া ২৩০, চিংড়ি ৮০০, মলা মাছ ৩৫০ টাকা এবং শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল অবস্থা দেখা গেছে গরু-মুরগির মাংসের বাজারে। দোকানগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। এছাড়াও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা । দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
মোহাম্মদপুরের টাউন হলে বাজার করতে আসা সোহাগ হোসেন নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাকায় গত ৫ বছর মেসে থেকে পড়াশোনা করছি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দিনদিন শুধু খরচ বেড়েই চলছে। প্রথমদিকে ৫ হাজার টাকায় মাস শেষ করা যেতো, এখন ৮/৯ হাজার টাকাতেও ঠিকমতো চলা যায় না। শুরুর দিকে কিছু না করলেও এখন একটা টিউশনি করিয়ে বাবার ওপর টাকার চাপ কিছুটা কম হচ্ছে । কিন্তু সবাই কি টিউশনি পায়?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে মাছের অভাব নাই, প্রচুর মাছ; কিন্তু দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি দেখলাম ২১০ টাকা, যা ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যে হলেই চলে। মাস-ছয়েক আগেও এই দামে বিক্রি হয়েছে, হঠাৎ করেই আবার দাম বেড়ে গেছে।’ রফিকুল ইসলাম নামক আরেক ক্রেতা বলেন, ‘শীতের সময় সাধারণত শুনি মাছের দাম কম থাকে, এবার দেখছি উলটো বাজারে এখন মাছের দাম অনেক। বাসায় সবচেয়ে বেশি চলে পাঙাস মাছ। গত সপ্তাহেও ১৮০ টাকা কেজি নিয়েছি, কিন্তু আজকে ২০০ টাকার নিচে দিতেই চায় না। ছোট মাছে তো হাত দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।’ বাড়তি দাম প্রসঙ্গে মাছ বিক্রেতা মঞ্জিল মিয়া বলেন, ‘আমাদের যদি বেশি দামে কেনা লাগে, আমরা কি কমে বিক্রি করতে পারবো? আর ১০/২০ টাকা লাভের জায়গায় কি আমরা ১০০ টাকা লাভ করতে পারবো? কমে বিক্রি করতে পারলেই বরং আমাদের বিক্রি বেশি হয়। আর এখন যে দাম আছে, এটাকে খুব বেশি বলার সুযোগ নেই। এই সপ্তাহে যদি কেজি ১০/২০ টাকা বাড়ে, পরের সপ্তাহে আবার কমে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক।’
মুরগির বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবারে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। সে তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। গত সপ্তাহেও ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি করেছি, এই সপ্তাহেও একই দাম। শীতের আগে দামটা ২০০ টাকার নিচে ছিল। সম্ভবত শীতের কারণে বাড়ছে। সাধারণত শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যে কারণে খামারি পর্যায়ে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।’ গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, ‘গরুর মাংস মোটামুটি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যেই আটকে আছে। গত এক বছর ধরে এ দামেই বিক্রি করছি।’