গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট, যা ধারণ করেছে তীব্র আকার। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আবদুল্লাহপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল এবং পল্টন এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন অপেক্ষমান শত শত যাত্রী, অথচ দেখা নেই বাসের। যে দু-চারটি বাস যাচ্ছে তারও গেট লাগানো এবং যাত্রীতে ঠাসা, ওঠার নেই কোনো উপায়।
সরেজমিনে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায়, সড়কে বাস না চললেও রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা ব্রিজের শেষ প্রান্তে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কেন তারা রাস্তায় নামেনি জানতে চাইলে ভিক্টর বাসের হেলপার সুমন বলেন, নতুন নিয়মানুযায়ী বাস গোলাপি রঙ করতে অনেক বাসই নামেনি রাস্তায়। আর ই-টিকেটিং চালু হলে ড্রাইভার-হেলপার ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই বাকিরাও বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি।
গত সপ্তাহে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে রাজধানীতে চলাচল করা বাস গোলাপি রঙ করে ই-টিকেটিং এর আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির ২ হাজার ৬১০ বাস গোলাপি রঙের ই-টিকেটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হলেও আগামীতে এ সংখ্যা এবং রুটের পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
রঙ করার এ কার্যক্রমে দুই দিন ধরে আব্দুল্লাহপুরের এই রুটে রীতিমতো বাস সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ট্রাফিক কার্যক্রম জোরদার করায় অনেকেই মামলার ভয়ে বাস নিয়ে বের হচ্ছেন না। অনেক ড্রাইভার-হেলপার দাবি করছেন ই-টিকেটিং ব্যবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
অনাবিল বাসের চালক আলমগীর বলেন, ‘জায়গায় জায়গায় সার্জেন্ট আর চেকপোস্ট। রাস্তায় নামলেই শিওর মামলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস নিয়ে নামা যাবে তখন।’
এদিকে বাসের সংখ্যা কম থাকায় রাস্তায় বেড়েছে রিকশা আর বাইকের চলাচল। একদিকে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে বেপরোয়া বাইক- সব মিলিয়ে এই রুটে একটু পর পর সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে বের হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, প্রায় আধাঘণ্টার ওপর দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি তিনি। রিকশা ভাড়া আকাশচুম্বী। সব মিলিয়ে হঠাৎ করেই রাস্তায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে পুরানা পল্টন যাবেন ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান। রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত হেঁটে এসে ভিড় ঠেলে কোনো রকমে রমজান বসে উঠেছেন। ভেবেছেন, কাকরাইল নেমে সেখান থেকে আবার হেঁটে পুরানা পল্টন যাবেন। কিন্তু ভয়াবহ যানজটের কারণে বাসটিকে চলতে হচ্ছে ঢিমেতালে। পরে মালিবাগ-মৌচাক নেমে আবার হাঁটা শুরু করেন তিনি।
সড়কে দুর্দশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় নেমে জানতে পারি ভিক্টর পরিবহনসহ কয়েকটি বাস চলছে না। যে কারণে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কিন্তু গাড়ি উঠেও দেখা যাচ্ছে সেটা চলছে না। এতে উভয়সংকটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
এদিকে বাস সংকটের মধ্যেই রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুনর্বাসন এবং আর্থিক সাহায্যের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন দুবাই ফেরত প্রবাসীরা। এতে করে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর, কাকরাইল এবং কাওরানবাজার এলাকাতেও বড় রকমের যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সড়কে যানজট এবং বাসের সংখ্যা কেন কম সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেনি ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) ফজলুল করিম বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরাও বাসের সংখ্যা কম পেয়েছে। কিন্তু কী কারণে রাস্তায় বাস কম সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেক বাস গোলাপি রঙের ই-টিকেটিং এর আওতায় আসতে চাওয়ায় রঙ করতে দেয়া হয়েছে। এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বাস নেমেছে রাস্তায়।
বাড্ডা ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার শারমিন আক্তার বলেন, গোলাপি রঙের পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে অনেক বাসের হেলপার এবং ড্রাইভার ধর্মঘট করেছে। তাই তারা বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি। এতে করেও গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে শুরু কাউন্টার থেকে যাত্রী তোলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার দাবিতে রাজধানীর সায়দাবাদ এবং যাত্রাবাড়ি এলাকায় দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছে বাস ড্রাইভার-হেলপাররা। এতে করে এসব এলাকার যান চলাচল এক রকমের বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, 'আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাজধানীর সড়কে কোনো ভাঙাচূড়া আনফিট গাড়ি চলবে না। ধীরে ধীরে সব গাড়ি ই-টিকেটিং এর আওতায় আনা হবে। এর প্রতিবাদে তুরাগ এবং বলাকা বাসের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিল। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।'
ই-টিকেটিং এর ডিভাইস সংক্রান্ত কাজের কারণে অনেক বাস সড়কে নামেনি। এছাড়া অনেকে বুঝে না বুঝে এ ব্যবস্থার বিরোধীতা করছে। যারা সড়কে বাস না নামিয়ে উল্টা রাস্তা অবরোধ করছে তাদেরকে কেউ খারাপ উদ্দেশ্য হাসিলে ইন্ধন দিচ্ছে বলে দাবি করেন সাইফুল।
ক্ষোভ জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এটা নতুন কিছু না। কোনো সিদ্ধান্ত বাস মালিকদের মন মতো না হলে তারা যাত্রী জিম্মির হাতিয়ার ব্যবহার করে। অন্যদিকে সরকার সিদ্ধান্ত দেয় ঠিকই কিন্তু মনিটরিং করে না। এতে করে সড়কে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সরকারের উচিত মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
দ্রুত সমস্যা সমাধান করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আনফিট গাড়ি, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বাড়তি ভাড়া রাখা বন্ধ করতে সরকারের শক্তিশালী মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এমআরটি লাইন-৬) ব্যয় ৭৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা কমল। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও তিন বছর।
গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘এমআরটি লাইন-৬’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদিত হয়েছে।
এই প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি থেকে ৭৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
২০১২ সালে প্রকল্পের প্রস্তাবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ১২ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত লাইন বাড়ানোর কারণে ২০২২ সালে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। তবে সর্বশেষ সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয়ে সরকারের অংশ কমে ১২ হাজার ৫২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ বেড়ে ২০ হাজার ১৯৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় নির্ধারিত হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধন অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম ইনস্টলেশন, টেস্টিং, ডিফেক্ট নোটিফিকেশন পিরিয়ড ও নতুন ২৪টি ট্রেন সেটের মেজর ওভারহলিং সম্পন্ন করতে মেয়াদ বাড়ানো অপরিহার্য—ডিএমটিসিএল এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ব্যাখ্যা অনুসারে, মেট্রোরেলের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে প্লাজার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে পর্যালোচনায় লাভজনক নয় বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বড় অঙ্কের টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে মেট্রোরেল-৬ (দক্ষিণ)-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল ওহাব বলেন, প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাদ দেওয়া স্টেশন প্লাজাগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন নেই।
গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে সংশোধন অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বিধায় প্রকল্পটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিপিপিতে রোলিং স্টকস ও ইকুইপমেন্টে ৫৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে জেনারেল কনসালটেন্সি সার্ভিসে ২২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ইঅ্যান্ডএম সিস্টেমে ২৮৮ কোটি ৬৭ লাখ, ডিপো ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাবদ ৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মতিঝিল স্টেশন প্লাজা বাদ দেওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় কমেছে ১ হাজার ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, চারটি স্টেশন প্লাজার কাজ বাদ দেওয়ায় আরও ১৬৪ কোটি ৭২ লাখ, মেইন লাইনের সিভিল ও স্টেশন ওয়ার্কে (সিপি-০৬) ব্যয় কমেছে ১১৬ কোটি এবং ইআরএমসি (সিপি-০৯) ব্যয় কমেছে ৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মতিঝিল-কমলাপুর অংশের অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৮০ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ নভেম্বর ফুসফুস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, তিনি ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছেন এবং চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এএফপি আরও জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সেজন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংস্থাটি তাঁর একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতার কথা উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে রয়েছ—হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের জটিলতা, বাত এবং চোখের অসুস্থতা।
লন্ডন থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান জাতির কাছে মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এমন সঙ্কটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত নয়। স্পর্শকাতর বিষয়টিতে বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এএফপি’কে উদ্ধৃত করে গালফ নিউজ একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে। দ্য ডন নিউজ এবং আরব নিউজ তার অবনতিশীল স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরব নিউজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বেগম জিয়ার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’।
ভারতের এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি’।
এ ছাড়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু এবং হিন্দুস্তান টাইমসও এ খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
এদিকে, শনিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক ব্রিফিংয়ে ডা. এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম জিয়ার অবস্থা গত তিন দিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে এবং অনুমোদন পাওয়া মাত্র তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপি নেতারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতার জন্য জাতির কাছে দোয়া চেয়েছেন। সূত্র: বাসস
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বসতবাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা উপর গুরুত্বারোপ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ ডিএসসিসি'র ১৫ নং ওয়ার্ড ধানমন্ডি এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, এনডিসি এ অভিযানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার-সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নয় শতাধিক পরিচ্ছন্নতা ও মশক কর্মী এবং স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণ করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে লেক, ড্রেন, নর্দমা ও ফুটপাতের ময়লা পরিষ্কার ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক সংগঠন ধানমন্ডি সোসাইটি ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা করদাতা সমিতির অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক র্যালি এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "সিটি কর্পোরেশনের কাজের সাথে নগরবাসীর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব
প্রত্যাশা, চাহিদা ও পরামর্শ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে ফলপ্রসূ কাজ করতে পারি।" সুন্দর, বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, মশা ও দূষনমুক্ত নগর গড়ার প্রত্যাশা করে প্রশাসক বাসাবাড়ি, দোকান, বিপনি-বিতানের ময়লাগুলো যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার ক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধানগণ এবং স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর ডেমরায় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে একটি অবৈধ কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সার ও বিষাক্ত রাসায়নিক জব্দ করেছে।
বুধবার রাতে ডেমরার সানাড়পাড় এলাকায় একটি অবৈধ কারখানায় নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের ইউনিট ১৫ ইবি (মেক) এর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে এক ম্যানেজার ও দুইজন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।
নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের ইউনিট ১৫ ইবি (মেক) এর এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানে মিডল্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সার ও কীটনাশক উদ্ধার করা হয়েছে। কারখানাটিতে এসব নকল পণ্য বিদেশি কোম্পানির নামে মোড়কজাত ও বাজারজাত করা হতো। প্রায় ৮ লাখ টাকার পণ্যসহ কারখানার ম্যানেজার ও দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। পরে জব্দকৃত মালামাল ও আটক ব্যক্তিদের ডেমরা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরুর মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থীরা।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে আবারও যমুনা অভিমুখে মিছিলের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের যৌক্তিক দাবি না মেনে বরং পুলিশ দিয়ে নিপীড়ন করা হয়েছে। তবুও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের আরও দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানাবেন; তবে কোন দলগুলোর নেতারা থাকবেন, তা নিশ্চিত নয়।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আন্দোলনকারীদের যমুনা অভিমুখী পদযাত্রা শাহবাগে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই দফায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, আহত হন অন্তত ১৫ জন।
শুধু ঢাকাই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ করেছেন ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
উল্লেখ্য, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু হবে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সব ক্লাস ও চলমান পর্ব মধ্য পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে লতিফ ছাত্রাবাস, ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছাত্রাবাস, জহির রায়হান ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাসসহ সব আবাসিক হল সাময়িকভাবে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে অধ্যক্ষের (রুটিন দায়িত্ব) সই করা এক অফিস আদেশে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্পোত্তর কম্পন (আফটারশক) পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর সতর্কতার স্বার্থে আবাসিক ছাত্রাবাসগুলোকে যথাক্রমে লতিফ ছাত্রাবাস (পূর্ব ও পশ্চিম শাখা) ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছাত্রাবাস, জহির রায়হান ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস সাময়িকভাবে খালি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ইনস্টিটিউটের ১ম, ২য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ ও ৮ম পর্বের (উভয় শিফট) চলমান পর্ব মধ্য পরীক্ষা ও শ্রেণিকাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রাত ৯টার মধ্যেই হল ত্যাগ করতে হবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ, শিফট, ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়ক, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাকেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
দেশে ভূমিকম্পে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা চালু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। নিহত ব্যক্তির পরিবার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা এবং আহতরা প্রত্যেকে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম এ ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক জানান, ঢাকায় বসবাসরত কিংবা কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় অবস্থানকালে ভূমিকম্পে নিহত-আহত যে কেউ এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সহায়তা পেতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সুপারিশপত্র লাগবে।
নিহতের পরিবার এবং আহত ব্যক্তি নিজে অথবা তার পক্ষে হাসপাতালের পরিচর্যাকারী কিংবা নিকটাত্মীয় যোগাযোগ করতে পারবেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে। যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত নম্বর: ০১৭০০৭১৬৬৭৮।
জেলা প্রশাসন ভূমিকম্পে হতাহতদের স্বজনদের কাছে এ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে কেউ প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।
রাজধানীর ফকিরাপুলে নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীর ওপর অভিমান করে মো. মিজানুর রহমান (২৬) নামে এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ (শনিবার) ভোর সোয়া ৫টার দিকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত মিজানুর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চন্দন পাট গ্রামের এবাদুল্লাহ রহমানের ছেলে। বর্তমানে ফকিরেরপুল ১ নং গলিতে ভাড়া থাকতেন।
মিজানুরের স্ত্রী সাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী আগে ভ্যান গাড়ি চালাতেন। এখন কিছুই করে না, বাসায় বেকার বসে থাকে। এর আগেও নেশা করার জন্য আমাকে মারধর করে টাকা পয়সা নিয়ে যেত। আমি মানুষের বাড়িতে রান্নার কাজ করি। গতকালকেও সে নেশা করার জন্য আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। আমি টাকা দেইনি বলে আমাকে ঘর থেকে মেরে বের করে দিয়েছে। পরে ভোররাতে রুমে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে দেখি আমার স্বামী সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় অচেতন অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান আমার স্বামী আর বেঁচে নেই।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে আজও নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা ট্রাইব্যুনাল এলাকা।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি-সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দিনভর এভাবেই নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরতরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই প্রবেশপথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবির বিশেষ নিরাপত্তা টিম অবস্থান নিয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও রয়েছেন। পথচারী থেকে শুরু করে আইনজীবী-সাংবাদিক সবার পরিচয় যাচাই করে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ভেতর ও বাইরে কড়া নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচলেও রয়েছে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। রায় ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
এর আগে, সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ রায় ঘোষণা করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনার এ মামলার পাঁচটি অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। কিন্তু রায়ে দুটি অভিযোগে ছয়টি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে অভিযোগ-১ এ তিনটি ঘটনা আনা হয়। এর প্রথমটি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া।
দ্বিতীয়ত ওই রাতে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে ফাঁসি দেবেন বলে উসকানি ও আদেশ। এছাড়া অপরাধ সংঘটনে আসামিরা নিজেদের অধীনস্তদের কোনো বাধা দেননি। তৃতীয়ত এরই ফলশ্রুতিতে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে পুলিশ। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
দুই নম্বর অভিযোগেও তিনটি ঘটনা আনেন ট্রাইব্যুনাল। এক নম্বর ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ পাওয়া যায়। এসব কথপোকথনে ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ অপরাধ সংঘটনে অধীনস্তদের কোনো বাধা দেননি আসামিরা।
যার ফলশ্রুতিতে একই বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। যা এ অভিযোগে ঘটনা নম্বর দুই। তিন নম্বর ঘটনা ওই দিন তথা ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব অপরাধে হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় । যা জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করবে সরকার। এছাড়া উভয় অভিযোগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।
দেশে শীতের আবহাওয়া বিরাজ করছে। ভোরের কুয়াশায় শুভ্র শিশির দোল খাচ্ছে ঘাসের ডগায়। আগের থেকে তাপমাত্রা নেমে বাড়ছে শীতের অনুভব। উত্তর হিমালয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিমেল বাতাস আর হালকা কুয়াশায় ভোর থেকেই ঢাকায় শীতের আবহ তৈরি হয়েছে। ফলে শীতের আমেজ উপভোগ করতে শুরু করছে ঢাকা নগরবাসী। ধীরে ধীরে নেমে আসছে তাপমাত্রা। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৬টায় ঢাকা শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য শীতলতা নির্দেশ করে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৫৮ শতাংশ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় ঢাকার আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে এবং দক্ষিণ/দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়া রাজধানীবাসীকে শীতের আগমনী বার্তা দিয়েছে।
এদিকে সারা দেশের জন্য দেওয়া ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর ১২ নম্বরের সি-ব্লক মোড়ে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটক ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজুর রহমান গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনি পল্লবী থানা যুবদলের নেতা ছিলেন। তবে কে বা কারা গুলি করেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক জানান, গুলিবিদ্ধ কিবরিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নেয়া হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য থেকে জানা যায়, কিবরিয়াকে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করা হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বিএনপি নেতাকে গুলি করার খবর এসেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা কি নিয়ে এই গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পল্লবী সেকশন-১২ এ অবস্থিত বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারিতে বসে থাকা অবস্থায় পল্লবী থানা যুবদল সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে মোটরসাইকেলযোগে এসে তিনজন দুর্বৃত্ত ভেতরে ঢুকে তার মাথা, বুকে ও পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে ৭ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৭ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনা, ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তালেবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার ২৫ জন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী নাশকতার পরিকল্পনা, ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত।
তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি চেকপোস্টের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের চারদিক কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো হয়েছে। গেটের সামনে সেনাবাহিনীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ও ভেতরে পুলিশ–র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দুটি বুলডোজার আনা হয়েছে। এ সময় উৎসুক জনতাকে সেখানে ভিড় করতে দেখা গেছে।
সোমবার একদল তরুণ বুলডোজার দুটির সঙ্গে হেঁটে যান। তাদের মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানান, তারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কর্মী।
এ সময় ‘লীগ ধর জেলে ভর’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘৩২-এর আস্তানা এই বাংলায় হবে না’—এমন নানা স্লোগানে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। উত্তেজনাকর পরিবেশের কারণে ধানমন্ডি এলাকায় জনসাধারণের চলাচল সীমিত হয়ে গেছে।
এর আগে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে একটি বুলডোজার এসে গুঁড়িয়ে দেয় ৩২ নম্বরের বাড়ি। সেদিন একটি এক্সকাভেটরও আসে সেখানে। তারও আগে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা।