উন্নততর সেবা প্রদানের প্রত্যয় নিয়ে নতুনভাবে সজ্জিত শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সাতমসজিদ রোড শাখা গতকাল রোববার থেকে নতুন ঠিকানায় (গ্রিন সিটি সেন্টার, ৫৮ সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা) ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওই স্থানান্তরিত শাখার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ। একই দিনে ব্যাংকের শাখা প্রাঙ্গণে একটি এটিএম বুথের উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার ব্যবস্থাপক এফ এম নেওয়াজ আলী, ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগ ও ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রধান মো. সামছুদ্দোহা, ব্যাংকের সাধারণ সেবা বিভাগের প্রধান মাহমুদুল শামীম তালুকদার, সাতমসজিদ রোড শাখার মোহাম্মদ হাসিব উদ্দিন, কলেজ কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইফতেখার শহীদ, কলেজ গেইট শাখার ব্যবস্থাপক এ এইচ এম শাহরিয়ারসহ ব্যাংকের গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্থানান্তরিত শাখার কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে ব্যাংকের সমৃদ্ধি কামনা করে ব্যাংকের শাখা প্রাঙ্গণে পবিত্র কোরআন খতম, দরুদ এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধান অতিথি ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গ্রাহকদের আন্তরিকভাবে সেবা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১৪০টি শাখা, ৪টি উপশাখা, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এটিএম বুথ ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের নিরলসভাবে সেবা প্রদান করে আসছে। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের সেবার মানের কারণে এই ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ব্যাংকটির সুনাম ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি, আর্থিক ভিত মজবুত হচ্ছে, শাখা সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকটি সাধ্যমতো অবদান রাখছে। বর্তমানে এই ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ৯ লক্ষাধিক। গ্রাহকদের চাহিদা ও তাদের সুবিধার্থে এই সাতমসজিদ রোড শাখাটিকে সু-পরিসর স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে একটি আস্থার নাম। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদান করে আসছে। আধুনিক প্রযুক্তির সকল সুবিধা এই ব্যাংকে রয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে কোনো তারল্য সংকট নেই, আমাদের তারল্য অনেক উদ্বৃত্ত রয়েছে। উন্নয়নমূলক ও সম্ভাবনাময় খাতে আমরা অধিক বিনিয়োগে আগ্রহী।’ বিজ্ঞপ্তি
সংকটে পড়া ছয় ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ঋণপত্র খোলার সময় এসব ব্যাংককে আর শতভাগ মার্জিন বজায় রাখতে হবে না। এর আগে চলতি বছরের আগস্টে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক চিঠির মাধ্যমে এসব ব্যাংককে এখন থেকে শতভাগ মার্জিন শর্ত না মেনে আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।
এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আগে সমালোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল।
জুলাই মাসে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে স্থবিরতা এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। টানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত কমেছে ১২ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৪) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। আর তিন মাস পর অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ১০৯টি। সেই হিসাবে তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫১টি।
২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৫৪৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ-মূল্যস্ফীতির একটা বড় প্রভাব প্রান্তিক মানুষের ওপর পড়েছে। যার ফলে আমানত কমতে পারে। এ ছাড়াও গত বছরের জুন থেকে ব্যাংকিং খাতে প্রতি মাসেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। যার কারণে গ্রাহকরাও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করছেন। প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণের স্থিতি বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৫ জন। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ৮৪৬ জন।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সহজ করতেই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। সাময়িকভাবে কোনো মাসে লেনদেন কমতে পারে। তবে বাস্তবিক অর্থে এটা এখন সারা দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাধারণ মানুষ হাতের কাছে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ এখন এসব এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণও নিতে পারছেন।
আগামী বছরের শুরুতে পাঁচ দিন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময়ে ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ থেকে কোনো সেবা পাবেন না ব্যাংকটির গ্রাহকরা। তবে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের লেনদেন চালু থাকবে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করার জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মূল ব্যাংকিং সেবা আগামী ১ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির কোনো গ্রাহক শাখায় যেমন লেনদেন করতে পারবেন না, তেমনি ব্যাংকটির এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সাত দিন বন্ধ থাকবে। তবে এই বন্ধের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি ও বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যাংক হলিডে রয়েছে। সেই হিসাবে মূলত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন বন্ধ থাকবে দুই দিন।
বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি বুধবার ব্যাংক হলিডে। ৩ ও ৪ জানুয়ারি শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ও ৫ জানুয়ারি রোববার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে ব্যাংক বন্ধ রাখার বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘বছরের শুরুর সময়টাতে ব্যাংকিং লেনদেনের চাপ কম থাকে। তাই গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত করতে সফটওয়্যার হালনাগাদের জন্য আমরা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছি।’
সমস্যা থাকলেও কোনো ব্যাংক বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকও উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে কিছু ব্যাংকে এখনও সমস্যা আছে। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করব না।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তবে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা এতে প্রভাবিত হবে না’বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক ব্যাংকের মুনাফায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে অনিবার্য কারণবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। বাকি ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ১৮টির। বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১৪টির। আর লোকসান করেছে ৩টি ব্যাংক। এর মধ্যে একটি নতুন করে লোকসানি তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
আলোচিত সময়ে শতকরা হিসাবে মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে ওয়ান ব্যাংকে। এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফায় ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তালিকায় ৩য় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। অন্যদিকে আলোচিত সময়ে মুনাফা সবচেয়ে বেশি কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। এই হার ছিল ৯০ শতাংশ। ৮৩ শতাংশ মুনাফা কমে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। আর এবি ব্যাংক ৬৫ শতাংশ মুনাফা হারিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬৩ পয়সা। আগের বছরের প্রথম ৯ মাসে ২৮ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরের আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা মুনাফা লুফে নিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক আলোচিত সময়ে ৪ টাকা ৯২ পয়সা ইপিএস করলেও আগের বছরের একই সময়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছিল। আগের বছরের জানুয়ারি-সেপেম্বর সময়ে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা। চলতি বছরের একই সময়ে এ মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৮২ পয়সা হয়েছে। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৫ পয়সা ইপিএস করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে এই ইপিএস হয়েছিল ৬০ পয়সা।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৩৮ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭ টাকা ৫৮ পয়সা, ইউসিবির ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৫১ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ২৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৬৯ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২২ শতাংশ বেড়ে ২৮ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৩৫ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ শতাংশ বেড়ে ৪৩ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৬৫ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২ টাকা ১১ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৩ টাকা ৫ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৫ টাকা ৩০ পয়সা, ইউসিবির ১ টাকা ১৪ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ৩ টাকা ৭৮ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২৩ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ২ টাকা ২৮ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ৩৭ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ৩ টাকা ৩১ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৩ টাকা ১৪ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৮ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৪৮ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা। আর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৭ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৭ পয়সা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৩ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৮৬ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক দুটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল যথাক্রমে ১ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ২ টাকা ৭৮ পয়সা।
অন্যদিকে মুনাফা কমে যাওয়া ১৪টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে কমে মাত্র ১৪ পয়সা হয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এই মুনাফা ৯০ পয়সা থেকে কমে ১৫ পয়সা হয়েছে। আর এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আলোচিত সময়ের ব্যবধানে ৫৪ পয়সা থেকে কমে ১৯ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আলোচিত ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৬৩ শতাংশ কমে ৪৮ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ৪৯ শতাংশ কমে ৫৭ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ কমে ১ টাকা ১৭ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৬ শতাংশ কমে ৩৬ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ কমে ২ টাকা ৭০ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়া ব্যাংকের ৪২ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১ টাকা ৩০ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ১ টাকা ১২ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ২ টাকা ২৫ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৬৭ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ৪ টাকা ৭১ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়ায় ৩ টাকা পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা চলতি বছরের ৯ মাসে ৩৯ শতাংশ কমে ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকে ২৪ শতাংশ কমে ৮৭ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ২০ শতাংশ কমে ২ টাকা ৩ পয়সা, মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৭ শতাংশ কমে ৫৪ পয়সা এবং ঢাকা ব্যাংকে ৬ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যথাক্রমে ব্যাংকগুলোর ২ টাকা ৭২ পয়সা, ১ টাকা ১৪ পয়সা, ২ টাকা ৫৩ পয়সা, ৮৫ পয়সা এবং ১ টাকা ৮৮ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি লোকসান করেছে। এর মধ্যে দুটি আগের বছরের ধারাবাহিকতায় লোকসান করলে নতুন করে লোকসানের তালিকায় এসেছে এক্সিম ব্যাংক। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৭৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১ টাকা ৫৮ পয়সা। গতানুগতি অন্য দুই লোকসানি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের আলোচিত সময়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫৭ শতাংশ বেড়ে ৫ টাকা ৪৯ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এই লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। আর আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৭ শতাংশ বেড়ে ৭১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এ লোকসান ৫৬ পয়সা হয়েছিল।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সাভার শাখা থেকে রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন ৭৩ বছর বয়সি সাদেকুর রহমান। গত ২৪ অক্টোবর বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ সংসারের খরচের এক লাখ টাকা পাঠান সাদেকুরের ছেলে রইসউদ্দিন। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাদেকুর তিন কিস্তিতে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হন।
মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাদেকুর বলেন, সংসারের খরচ মেটাতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা তুলতে হবে। কিন্তু এসআইবিএল নগদ অর্থের তীব্র সংকটে থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সাদেকুরের নয়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সংকটাপন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপিঋণের কারণে তাদের অনেক গ্রাহক জমা অর্থে পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণগ্রহীতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং তহবিলের অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের ব্যবসা ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে। এসআইবিএলের সাভার শাখার কর্মকর্তা আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, অনেক আমানতকারী তাদের পুরো ব্যালেন্স তুলে নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এ ব্যাংক।
তিনি বলেন, এই শাখায় ৮৭ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যদি এক-তৃতীয়াংশ আমানতকারীও স্বল্প সময়ের নোটিশে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেন, তবে তা যেকোনো ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী জমা করা অর্থ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ঋণে বিনিয়োগ করা হয়। হোসেন আরও জানান, তারা আমানতকারীদের অল্প পরিমাণে নগদ অর্থ সরবরাহ করছেন এবং তাদের অর্থ কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি নগদ অর্থের প্রচলন কমলেও ঋণের কিস্তি নিয়মিত করে তা পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে। তা সত্ত্বেও আমানতকারীরা এসব ব্যাংকের শাখা, প্রধান কার্যালয় ও এটিএম বুথে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারেন না।
ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়াও তারল্য সংকটে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারত্ব রয়েছে। ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এস আলম গ্রুপের নিয়েছে এবং এসব অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে ঋণগুলো খেলাপি হয়ে যায়। এতে করে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ নগদ ঘাটতি রয়েছে।
এসআইবিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ বলেন, নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে তাৎক্ষণিক তারল্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা নিচ্ছে। ব্যাংকটি গত দুই মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণের কিস্তি ও আমানত সংগ্রহ করেছে। এটি এসআইবিএলের নগদ প্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআইবিএল বর্তমানে আমানতকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু একাধিক গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তোলার চেষ্টা করায় কিছু শাখায় সমস্যা হচ্ছে।
ফরানউল্লাহ আরও বলেন, 'এ সমস্যা সম্পর্কে সবাই সচেতন, তবে গ্রাহকরা যদি তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বাইরে নগদ উত্তোলন অব্যাহত রাখেন তবে এটি দীর্ঘায়িত হবে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরলে আমানতকারীরা তাদের টাকা পাবেন ব্যাংক।’
এফএসআইবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তার পর স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।
বোর্ড পুনর্গঠনের পর থেকে ব্যাংকটি সফলভাবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট তহবিল পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি।
এফএসআইবির চেয়ারম্যান বলেন, এফএসআইবি গ্রাহকদের মৌলিক চাহিদা, জরুরি চিকিৎসা, জরুরি পরিস্থিতি এবং রেমিট্যান্স এনক্যাশমেন্ট পূরণের জন্য ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বড় আমানতকারীদের ঋণ পরিশোধেও কাজ করছে ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গ্রাহকদের অর্থ দিচ্ছে ব্যাংক, যদিও বড় অংকের উত্তোলন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, এসব সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি, বেশ কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে। আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মিন্টু বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হবে।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহে কেবল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রেপোতে টাকা ধার করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এক প্রজ্ঞাপনে গতকাল সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ মেইনটেন্যান্স পিরিয়ড (আরএমপি)-র দিন ব্যাংকগুলো তাদের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বজায় রাখতে ওভারনাইট রেপোতে টাকা নিতে পারবে বলে এতে জানানো হয়েছে।
দেশের মুদ্রাবাজারকে শক্তিশালী করতে এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৈনিক রেপোতে টাকা ধার দেওয়া বন্ধ রাখে। এর পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন- সোম ও বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে রেপোতে টাকা ধার দেওয়া হতো।
রেপো বা রিপারচেজ এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদে অর্থ ধার করে। উন্মুক্ত এই বাজার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় বা বিক্রয় করে টাকার সরবরাহ ও ঋণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
রেপোর জন্য নির্ধারিত দিনে ব্যাংক হলিডে থাকলে পরের কার্যদিবসে রেপোতে অর্থ ধার দেওয়া হয় বলে আজকে জারিকৃত সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বিদ্যমান হারে প্রতিদিন অব্যাহত থাকবে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও চারটি বিশেষায়িত ব্যাংক মিলিয়ে মোট ১০টি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব ব্যক্তির নিয়োগ অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত সুপারিশের ভিত্তিতে এই ১০ ব্যাংকের শীর্ষ পদে নতুন নিয়োগের জন্য ১৭ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়ার পরই এসব নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য যথাক্রমে মো. শওকত আলী খান, মো. মজিবর রহমান, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, মো. আবদুর রহিম, মো. জসীম উদ্দিন ও মো. কামরুজ্জামান খানের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক এমডি শওকত আলী খানের নাম। জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে চূড়ান্ত হওয়া মজিবর রহমান ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সাবেক এমডি।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ব্যাংকটির সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম। রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম নিয়োগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএলের এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন। আর বেসিক ব্যাংকের এমডি হয়েছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান খান।
এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি হিসেবে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোফাজ্জল হোসেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এমডি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা বানু, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডি হিসেবে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক চানু গোপাল ঘোষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংক- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকে শেখ হাসিনা সরকারের সময় তিন বছরের চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি ও সিইওদের চুক্তির অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে সরকার।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর এসব ব্যাংকের এমডিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করতে চেয়ারম্যানদের চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তারপর থেকে এসব ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ শূন্য ছিলো।
তারল্য সংকটে জর্জরিত আর্থিকভাবে দুর্বল ছয়টি ব্যাংককে ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তিনটি সবল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দূর করে তাদের কার্যক্রমে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সহায়তা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩৭৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৯৫ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি ৩২০ কোটি ও এক্সিম ব্যাংক পিএলসি ৪০০ কোটি টাকা পেয়েছে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণের বিধান নিয়ে আলোচনার জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১০টি শক্তিশালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চাহিদা সাপেক্ষে তিন দিনের মধ্যে শক্তিশালী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের অর্থ ফেরত দাবি করতে পারবে। বিদ্যমান বাজার দরের ওপর ভিত্তি করে এসব ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। এসব পদক্ষেপ আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের ওপর ১৩ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে, যা সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার আগের ৬ থেকে ৮ শতাংশ গড়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
এনআরবি ব্যাংক আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মেঘনা ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এ ছাড়া এনআরবিসি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক আমানতের ওপর ১১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও ইসলামী ব্যাংক ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু ব্যাংক বর্তমানে বাধ্যতামূলক তারল্য অনুপাত ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি গুরুতর সংকটে পড়া অনেক ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। তারা আরও বলেন, এ কারণে কিছু ব্যাংক এখন আমানতের বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়া কিছু ব্যাংক বাধ্যতামূলক ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) পূরণ করতে সমস্যায় পড়েছে। তাই তারা উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত টানতে বাধ্য হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব ঘাটতিতে পড়েছে। তারা সিআরআর ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত ৯ শতাংশ জরিমানা দিচ্ছে।
এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করার পর আমানত, ঋণ ও বন্ডের সুদ বেড়েছে। তা ছাড়া, ঋণের হারের ঊর্ধ্বসীমা ও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করায় ব্যাংকগুলো তাদের ইচ্ছামতো সুদহার নির্ধারণ করার সুযোগ পাচ্ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, খেলাপি ঋণের চাপে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা নিলেও তা চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ‘বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে আমি মনে করি,’ বলেন তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে কোনো ব্যাংক সহায়তা নিলে তাদের উচ্চ হারে সুদ দিতে হবে এবং তিন মাসের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’
‘কিন্তু ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিলে পরিশোধে দীর্ঘ সময় পাবে, যা তাদের বর্তমান নগদ অর্থের সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে,’ বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, হঠাৎ করে আমানতের সুদহার ১৩ শতাংশ বাড়ানোকে খুব বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ওপরে ঘোরাফেরা করছে। যদি মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে আমানতকারীদের দিক থেতে এটি স্বাভাবিক। কারণ মূল্যস্ফীতির হার আমানতের হারের চেয়ে বেশি হলে মানুষ ব্যাংকে অর্থ রেখে খুব বেশি লাভবান হবে না।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, আমানতের উচ্চ সুদের কারণে ঋণের সুদও বাড়বে। এতে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়বে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, আমানতের উচ্চ সুদহার আমানতকারীদের আরও সমস্যায় ফেলতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে ওই ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদহার বহাল রাখতে না পারলে ইতোমধ্যে টাকা তুলতে সমস্যায় পড়া আমানতকারীদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। তাছাড়া আমানতের উচ্চ সুদহারে ব্যাংকগুলোর আয় কমবে।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিছু ব্যাংক বড় ধরনের সংকটে থাকায় উচ্চ সুদের সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমানতকারীদের সতর্ক হতে হবে। তার ভাষ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ও ব্যাংকগুলোর পক্ষে আমানতের জন্য এত উচ্চ হারের প্রস্তাব দেওয়া কার্যকর কিনা তা বিশ্লেষণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, আকাশচুম্বী সুদের প্রস্তাব দিয়ে আমানত সংগ্রহ না করে খেলাপি ঋণ আদায় করে আমানত বাড়ানোই ব্যাংকগুলোর জন্য ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি মুখপাত্র মেজবাউল হকের স্থলাভিষিক্ত হলেন। মেজবাউল হকের আগে মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন জি এম আবুল কালাম আজাদ।
নতুন মুখপাত্র হুসনে আরা শিখাকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য দুজন সহকারী মুখপাত্র নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা হলেন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি-১) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী ও ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক সাঈদা খানম।
গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান হুসনে আরা শিখা। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। আইবিএ থেকে এমবিএ (ফাইন্যান্স) ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য রূপালী ব্যাংক পুরস্কার ও পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড (গোল্ড মেডেল) পান হুসনে আরা শিখা। তিনি আইপিএফএফ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে পিপিপির আওতায় অর্থায়ন, বাংলাদেশে পিপিপি অফিস প্রতিষ্ঠা ও ধারণা বাস্তবায়ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি ব্যাংকিং খাতে ঋণমান নিয়ন্ত্রণে বহুল ব্যবহৃত আইসিআরআরএস প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের পরিচালক হিসেবে করোনা-পরবর্তী শতভাগ ঋণ বিতরণে নেতৃত্ব দেন হুসনে আরা শিখা।
নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে দুজনকে সহকারী মুখপাত্র করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
দুই সহকারী মুখপাত্র হলেন ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিকেশনসের পরিচালক সাঈদা খানম।
মেজবাউল হকের স্থলাভিষিক্ত হওয়া হুসনে আরা শিখা ১৯৯৬ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ দিয়ে শুরু করা শিখা বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে অর্থনীতির ওপর স্নাতকোত্তর করেছেন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজার শাখা অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যাংকটির ওই শাখার ব্যবস্থাপক ইউসুফ মিয়া সোমবার বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেছেন।
অভিযুক্ত দীপংকর ঘোষ ছেংগারচর বাজার শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত। তিনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামের বলাই ঘোষের ছেলে। তিনি ২০১৯ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মতলব উত্তর থানার ছেংগারচর বাজার শাখায় যোগদান করেন। তিনি উপজেলার ছেংগারচর এলাকায় ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাশে একটি ভাড়া বাসায় একাকি থাকতেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দীপংকর ঘোষ কর্মস্থলে না এলে তার মোবাইল ফোনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কল করেন। ফোনে দীপংকর ঘোষ বলেন, ‘বাবা অসুস্থ, আসতে দেরি হবে।’
এরপরও সেদিন তিনি না এলে ব্যাংক থেকে আবারও দীপংকর ঘোষের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে তার প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য দীপংকরের স্ত্রী আঁখি সাহার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী দুপুর ১২টার সময় অফিসের উদ্দেশে ঢাকার বাসা ত্যাগ করেছেন।’
তবে বিকেল হয়ে গেলেও দীপংকর ব্যাংকে না যাওয়ায় ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব হয়নি। পরে তার কার্যকলাপে সন্দেহ মনে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক।
দীপংকর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকের ভল্টে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ যথাযথ আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ৩০ আগস্ট মতলব উত্তর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
১ সেপ্টেম্বর জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দিয়ে ভল্ট খোলা হয়। পরে গণনা করে ভল্টে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা পাওয়া যায়। তবে ক্যাশে ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা ছিল। অর্থাৎ গণনার সময় ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা কম পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা করেছি। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে অডিট করে গেছেন। থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সানোয়ার হোসেন জানান, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ইউসুফ মিয়া ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার হোসেন আরও জানান, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্যোগে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। বর্তমানে থানা ও ব্যাংকের উদ্যোগে ঘটনাটির তদন্ত চলছে।