আগামী সোমবার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে অর্থাৎ সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যাবে চাঁদের ছায়ায়। তবে এই দৃশ্য দেখা যাবে না বাংলাদেশ থেকে। এমনটিই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী।
এই বিশেষ মুহূর্তেটি দেখা যাবে পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকেটি দেশ থেকে। পলিনেশিয়া, উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ম্যাকারোনেশিয়া অঞ্চলে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার গ্রহণটি ফ্রান্স পলিনেশিয়ার তুয়ামোতু দ্বীপপুঞ্জের উত্তরপূর্ব অংশ হতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে শুরু হবে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে মেক্সিকোর নাজাস পৌরসভার উত্তর-পশ্চিমাংশে। আয়ারল্যান্ডের ক্যাসলটাউন হতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৩৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে কেন্দ্রীয় গ্রহণ শেষ হবে।
২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটির সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ খবর জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি এ বছর নোবেল তালিকায় আরও আছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইউনাইটেড নেশন্স প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজি এজেন্সি (আনরোয়া) এবং জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকে (আইসিজে)।
সূত্র জানায়, এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সাবেক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পরে উভয়কেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নরওয়ের নোবেল কমিটির জন্য কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ৫০টির বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলছে। গত দুই দশকে এসব সশস্ত্র সংঘাতে প্রাণহানি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
কেউ কেউ মনে করছিলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হয়ত এ বছর কেউ শান্তি পুরস্কার পাবেন না। তবে সেসব আশঙ্কাকে পেছনে রেখে ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিজয়ীদের মনোনীত করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্রটি।
নরওয়ের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে, সুদান গত দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও হামাস একে অপরকে ধ্বংসের লক্ষ্যে প্রায় এক বছর ধরে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছে।
এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহিংসতা এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য যারা বা যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, নোবেল কমিটি এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারবিষয়ক ইতিহাসবিদ অ্যাশলে সেভিনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে যে বৈশ্বিক আইনের শাসন চালু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। সে হিসেবে পুরস্কারের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং আইসিজের মধ্যে।
অ্যাশলে সেভিন রয়টার্সকে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তোনিও গুতেরেস হচ্ছেন জাতিসংঘের শীর্ষ প্রতীক। অন্যদিকে, মানবিক ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত সব আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা এবং সেগুলো প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘের আদালত আইসিজে।
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ঘোষিত হবে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। আর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা শুরু হবে ১১ অক্টোবর। প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি— এই ছয়টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। শান্তি ব্যতীত বাকি ৫টি খাতে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এবং প্রদানের ব্যাপারটি দেখভাল করে সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি; আর শান্তিতে নোবেলের প্রার্থী মনোনয়ন ও পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
কী কারণে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা ছাড়তে পারেন না কিংবা কী কারণে তারা বছরের পর বছর লেগে থাকেন এই পেশাতে তারই উত্তর মিলেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। চিলির পন্টিফিশাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ভালপারাসিসোর অধ্যাপক ড. ক্লডিয়া মেলাডো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার সাংবাদিকতার শিক্ষক গ্রেগরি পেরাল্টের গবেষণায় উঠে এসেছে এর উত্তর।
গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন বিষয়টি সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে আনন্দ দেয়। সাংবাদিকদের পেশা ছাড়ার কারণ খতিয়ে দেখার চেয়ে গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন কোন বিষয় সাংবাদিকদের পেশায় টিকে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে সেগুলো। গবেষণার একটি সারাংশ প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম নিম্যানল্যাবের ওয়েবসাইটে।
সেখানে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ম্যানিলাভিত্তিক প্রতিবেদক রেজিন কাবাটোর একটি মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। রেজিন জানিয়েছেন, তার জন্য সাংবাদিকতা আনন্দের। কারণ এই মাধ্যমে তিনি রোজ নতুন নতুন গল্প তার দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। সাংবাদিকতার শক্তি ও এই পেশাকে ভালোবাসার কারণের কথা জানিয়েছেন রেজিন।
কারাগারে বন্দি কয়েদিদের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে একবার তিনি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। রেজিন চেয়েছিলেন, ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষ জানুক পুনর্বাসনমূলক বিচার প্রক্রিয়ার উপকারী দিকের কথা।
পরে সরকারের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছিলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বন্দিদের আঁকা ছবির বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তার মানে কারাগারে থেকেও ছবি বিক্রির অর্থ দিয়ে বন্দিরা তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারছিলেন।
এই যে সাধারণভাবে বলা একটি গল্প কিছু মানুষের জীবনে দারুণ সুযোগ বয়ে আনে, কারো কারো জীবন বদলে দেয়, এটাই রেজিনের মতো হাজারো সাংবাদিককে আনন্দ দেয়। খারাপ দিনেও শক্তি জোগায়।
গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ২০ জন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতার কথা।
জানা গেল, এই সাংবাদিকরা পাঠক ও দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে সত্যিকারের মানসিক সংযোগ গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান। দর্শক-পাঠকরা সাংবাদিকদের যে পরিমাণ বিশ্বাস করেন, তার মর্যাদা রাখার ব্যাপারে সবসময় সচেষ্ট থাকেন তারা।
যেমন এক সাংবাদিক বলেছেন, কেউ হয়ত খুব বিশ্বাস করে আমাকে তার জীবনের গল্প বলেছেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে আমি সেটা বুঝতে পেরেছি এবং বাকিদের কাছেও তা সঠিকভাবেই পৌঁছে দেবো। এই যে ভরসার জায়গা সৃষ্টি হয়, এটাই সাংবাদিকের কাজ করার অনুপ্রেরণা।
খবরের জন্য কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই সাংবাদিকরা বেঁচে থাকার নানা কৌশল শেখেন। তারা যেমন ক্ষমতার দ্বন্দ্বের গল্প বলেন, তেমনি বলেন ক্ষমা, কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা কিংবা উদারতার গল্পও।
এক সাংবাদিক যেমন বললেন, কাজ করতে গিয়ে পাওয়া কিছু গল্প অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই পেশায় থাকতে হলে আপনাকে উদারমনা ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হলে আপনাকে জানতে হবে যে কারা আপনাকে দেখছে বা শুনছে। অর্থাৎ যাদের জন্য আপনি লিখছেন, তাদের সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে।
সাংবাদিকের আনন্দ শুধু কাজের মধ্যেই নয়, কর্মক্ষেত্রেও। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের এক ধরনের চমৎকার সম্পর্ক থাকে। এতে যেমন আনন্দ ভাগ নেওয়া যায়, তেমনি কঠিন কোনো প্রতিবেদন তৈরির সময় মানসিক সহায়তাও পাওয়া যায়।
এক ক্রীড়া সাংবাদিক জানালেন সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বন্ধনের কথা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সম্পর্কের এই বন্ধনই আমাদের কাজকে আনন্দময় করে তোলে। আমরা খেলা নিয়ে তর্ক করতে পারি। আমাদের একটা চ্যাট গ্রুপ আছে, যেখানে আমরা সব ধরনের খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করি, তারপর নিজেই হয়ত সেসব নিয়ে ঠাট্টায় মেতে উঠি।
অনেক প্রতিবেদন আছে যেগুলো প্রকাশের পর দীর্ঘদিন তার রেশ ধরে রাখে। কিছু গল্প আছে মজাদার, যার কথা মনে করে বহুদিন পরেও সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন। সব গল্পই যে মজাদার হয়, তা নয়। তবে কাজ ভালো লাগলে ভয়ংকরতম প্রতিবেদনের কাজ করেও আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন সাংবাদিকরা।
নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকদের ভয়ংকর এক দিনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হলো সেদিন। শুরুতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পুরো তালিকাও পাওয়া যাচ্ছিল না। বলা হচ্ছিল সন্ত্রাসী হামলায় দুই হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সে অবস্থায় সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কাজটি ছিল চ্যালেঞ্জের। এরপর নিহতদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। এই কাজটি ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর। কিন্তু সেটি সাংবাদিকদের করতে হয়েছে পেশাদারিত্বের সঙ্গে।
সেদিনের বার্তাকক্ষের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করলেন সাংবাদিক জেনি স্কট। তিনি বলেন, আমাদের এক সহকর্মী ওই হামলায় তার কাজিনকে হারিয়েছিলেন। তাকেও নিজের ব্যক্তিগত দুঃখকে একপাশে সরিয়ে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি খেয়াল করলেন, এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজের কষ্টের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি অর্জন করেছেন। নিহতদের স্বজনদের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারছেন।
যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো ঘটনায় মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারার কাজে যারা আনন্দ পান, তারাই দীর্ঘদিন থাকেন এই পেশায়। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরাই তাদের কাজের অনুপ্রেরণা।
রোমানিয়ার একটি ছোট গ্রামে একাই থাকতেন এক বৃদ্ধা। ডোরস্টপ হিসাবে একটা পাথর ব্যবহার করতেন তিনি। অনেকটা বাদামি রঙের। সেটির মূল্য সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। পাথরটির ওজন ৩.৫ কিলোগ্রাম (৭.৭ পাউন্ড)। সেটা আসলে অ্যাম্বার নাগেট। আনুমানিক মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল পাইস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুজাউ-এর আঞ্চলিক জাদুঘরের ডিরেক্টর ড্যানিয়েল কস্তাচে প্রথম পরীক্ষা করে দেখেন অ্যাম্বার নাগেটটি। এটাই এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া সবচেয়ে বৃহত্তম নাগেট। এটি পাঠানো হয় পোল্যান্ডের ক্রকোতে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, নাগেটটি ৭০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো।
নদীর ধার থেকে অ্যাম্বার নাগেটটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বৃদ্ধা। তারপর থেকে ডোরস্টপ হিসাবে ব্যবহার করতেন। ১৯৯১ সালে মৃত্যু হয় তার। পাথরটি অন্যরকমের দেখতে হওয়ায় বৃদ্ধার আত্মীয়দের সন্দেহ হয়েছিল। তারা যত্ন করে রেখে দেন। সম্প্রতি রোমানিয়ান সরকারের কাছে নাগেটটি বিক্রি করার কথা ভেবেছিলেন বৃদ্ধার আত্মীয়। তখনই আসল ঘটনা সামনে আসে।
ড্যানিয়েল কস্তাচে বলেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই, নৃতাত্ত্বিক দিক থেকেও এই আবিষ্কারের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
ওই নারীর আত্মীয়রা জানান, বাড়িতে একবার চোর ঢুকেছিল। তারাও পাথরটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কয়েক গাছা স্বর্ণ নিয়েই চম্পট দেয়। পুরো বিশ্বের মধ্যে রোমানিয়াতেই সবচেয়ে বেশি অ্যাম্বার পাওয়া যায়। বিশেষ করে বুজাউ কাউন্টিতে।
ভূতাত্ত্বিক অস্কার হেলমের নাম দিয়েছেন, ‘বুজাউ অ্যাম্বার’। এই অঞ্চল থেকে এর আগেও বহু মূল্যবান অ্যাম্বার পাওয়া গিয়েছে। এক সময় এখানে স্ট্র্যাম্বা অ্যাম্বারের খনি ছিল। বিপুল দামে বিক্রি হতো। পরবর্তীকালে দাম পড়ে যায়। রোমানিয়ার সরকারও খনি বন্ধ করে দেয়।
সূত্র : সায়েন্স এলার্ট
বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে লেখা রইল ২০২৪ সাল। চলতি বছরই জুন থেকে আগস্ট মাসে রেকর্ড উষ্ণতা দেখেছে বিশ্ব। এসময় বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইতিহাসে এর আগে কখনও তাপমাত্রা এই পর্যায়ে পৌঁছয়নি।
আজ শুক্রবার ইউরোপের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক সামান্থা বার্গেস এক বিবৃতিতে বলেন, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে শীতকাল। এর আগে কখনও উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের জেরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এই পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। মানুষের জানা ইতিহাস অনুসারে ২০২৪ সালটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, প্রাক-শিল্পায়ন যুগে (অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে) বিশ্বের যে গড় তাপমাত্রা ছিল, বর্তমানের গড় তাপমাত্রা তার চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে এবং এটি ঘটেছে এই ২০২৪ সালে।
তবে গত জুন থেকে আগস্ট বিশ্বের সব জায়গায় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটেনি। কোপার্নিকাসের প্রতিবেদন অনুসারে আলাস্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, পাকিস্তান এবং উত্তর আফ্রিকার সাহেল মরুভূমি এলাকায় চলতি বছরের গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ছিল সেসব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম।
অবার অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, চীনের কিছু অংশ, জাপান এবং স্পেন রেকর্ড গরম দেখেছে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ায় শীতকাল চলছিল। ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে গরম বেড়েছে সাগরেও। কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট মাসে সাগরপৃষ্ঠের গড় উষ্ণতা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রেকর্ড উষ্ণতার জেরে খরা, দাবানল, ঝড়, অতিবর্ষণ, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। একদিকে মেক্সিকো ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল গত তিন মাসে খরা এবং দাবানলের মতো দুর্যোগ দেখেছে, অন্যদিকে রাশিয়া, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতের কিছু অংশে দেখা দিয়েছে অতিবর্ষণ, বন্যা, ভূমিধসের মতো দুর্যোগ।
মানবসৃষ্টি কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে বর্তমানের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সামান্থা বার্গেস।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) লটারিতে দেড় কোটি দিরহাম জিতেছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। বাংলাদেশের হিসাবে এই অর্থ ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি। আজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ‘বিগ টিকিট আবুধাবি’ নামে ওই লটারির জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশি ওই প্রবাসীর নাম শামশু মিয়া। তিনি ইউএইর আল-আইন শহরের বাসিন্দা। তার কেনা লটারির টিকিটের নম্বর ২০১৯১৮। এই টিকিট পুরস্কার জেতার পর অনুষ্ঠান থেকে শামশু মিয়াকে ফোন দেন উপস্থাপকরা। খুশির এ খবর শুনে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন তিনি। শামশু ছাড়াও আরও ১০ জন এই লটারিতে ১ লাখ দিরহাম করে পুরস্কার জিতেছেন।
এর আগে গত মাসে বিগ টিকিট আবুধাবি লটারিতে প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন তুষার দেশকার নামের এক ব্যক্তি। এ মাসের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিজয়ীকে নির্বাচিত করার সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। তার হাতেই ওঠে শামশু মিয়ার টিকিটের নম্বরটি।
এদিকে এরই মধ্যে আগামী মাসের জন্য লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিগ টিকিট আবুধাবি। এবারের প্রথম পুরস্কার ২ কোটি দিরহাম। এ ছাড়া ১০ জন পাবেন ১ লাখ দিরহাম করে। সঙ্গে থাকবে ৪ লাখ দিরহাম দামের বিলাসবহুল একটি করে গাড়ি। আগামী ৩ অক্টোবর ওই লটারির পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
স্কাইডাইভ অর্থাৎ উড়োজাহাজ থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেওয়াটা মোটেই সহজ কাজ নয়। এর জন্য প্রচণ্ড সাহসী হতে হবে। তারপরও অনেক রোমাঞ্চপ্রেমীর খুব পছন্দের কাজ এটি। তাই বলে ১০২ বছরের কোনো নারী এই কাজ করবে তা অনেকটাই অবিশ্বাস্য। সত্যি এমন একটি কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের মেনেত্তে বেইলি।
এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক স্কাইডাইভারের খেতাবটা নিজের দখলে নিয়ে নিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এই নারী। মেনেত্তে থাকেন ইংল্যান্ডের সাফোকের বেনহিলে। আর তিনি উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ার দুঃসাহসী কর্মটি সারেন ইস্ট এংলিয়ার আকাশ থেকে। এটি ছিল তার প্রথম প্যারাসুট জাম্প। ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের জন্য গত রোববার বেকলস এয়ারফিল্ডে স্বাইডাইভিংটি করেন তিনি। অবশ্য তার জন্মদিন আজ বুধবার।
বেইলি লাফ দেওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অবশ্যই নতুন কিছুর খোঁজ করতে হবে।’ তবে সফলভাবে লাফটি সম্পন্ন করার পর তিনি বিবিসি রেডিওকে বলেন, ‘লাফের অভিজ্ঞতাটি বেশ ভীতিকর ছিল। আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমি খুব শক্তভাবে আমার চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। আমি শুধু চাই যারা ৮০ কিংবা ৯০ বছরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা যেন কিছু ছেড়ে না দেয়। সবকিছু চালিয়ে যায়।’
স্কাইডাইভে বেইলির সঙ্গী ছিলেন ইউকে প্যারাশুটিংয়ের সদস্য ক্যালাম কেনেডি। তিনি বলেন, ‘মেনেত্তে পুরো লাফটিতে শসার মতো শীতল ছিলেন। তিনি এতটাই শান্ত ছিলেন যে, আমি নার্ভাস হতে শুরু করি।’
শতবর্ষী এই নারী বিয়ে করেছিলেন একজন প্যারাট্রুপারকে। মেনেত্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উইমেনস রয়্যাল নেভাল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন। তিনি এখন বেনহেল গ্রামের কমিউনিটি সেন্টার, মোটর নিউরন ডিজিজ অ্যাসোসিয়েশন এবং ইস্ট এংলিয়ান এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন। এখন পর্যন্ত টার্গেট ৩০ হাজার পাউন্ডের মধ্যে ১০ হাজারের কিছু বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
অবশ্য মেনেত্তের জন্য এ ধরনের রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। স্কাই নিউজ জানিয়েছে, এখনো নিয়মিত গাড়ি চালানো এই নারী ১০০তম জন্মদিন উদ্যাপন করেন সিলভারস্টোন রেসকোর্সে ১৩০ মাইল বেগে একটি ফেরারি রেসিং কার চালিয়ে।
একখণ্ড হীরার ওজন ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেট! অবাক হলেও ঘটনাটি সত্যি। আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানা প্রজাতন্ত্রের একটি খনিতে পাওয়া গেছে এমন দুর্লভ হীরক খণ্ড। এটি বিশ্বে এখন পর্যন্ত পাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরার টুকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার কানাডিয়ান ফার্ম লুকারা ডায়মন্ডের মালিকানাধীন একটি খনিতে হীরাটির খণ্ডটি পাওয়া যায়।
লুকারা ডায়মন্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বতসোয়ানার উত্তর-পূর্বের কারোওয়ে খনিতে এক্সরে শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হীরাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় অমসৃণ হীরার টুকরোগুলোর একটি বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। তবে হীরাটির আনুমানিক বাজার মূল্য নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি লুকারা ডায়মন্ড।
ক্যারেট বিবেচনায় এটি ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত ৩ হাজার ১০৬ ক্যারেটের কুলিনান ডায়মন্ডের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। লুকারার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ল্যাম্ব বলেন, আমরা এ অসাধারণ ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেটের হীরা আবিষ্কারে আনন্দিত।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বতসোয়ানা বিশ্বের বৃহত্তম হীরা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি।
হীরা উৎপাদন দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। দেশটির জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে হীরা থেকে এবং খনি থেকে পাওয়া ৮০ শতাংশ হীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টক শোতে কথা বলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিএনপি নেতা সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওই অনুষ্ঠানের একটি ছোট ক্লিপ।
ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নেটিজেনদের ভুয়সী প্রশংসায় ভাসছেন উপস্থাপিকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন নেটিজেনরা প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, কে এই উপস্থাপিকা?
জানা গেছে, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক করছেন। ২০১৬ সালে চ্যানেল আইয়ের ‘স্বর্ণ কিশোরী’ নামের একটি অনুষ্ঠান দিয়ে উপস্থাপনা শুরু তার। এরপর চ্যানেলটির তারকা কথনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের টক শো নিয়ে কথা বলেছেন এই উপস্থাপিকা।
দীপ্তি বলেন, সেদিন আমি আলাদা কিছু করিনি। যখন আমি ওই চেয়ারে বসি, তখন আমার অতিথিকে সম্মান করে জনগণ ও দর্শক যে প্রশ্নটি করতে চায় সেই কাজটিই করেছি। এটাই হয়তো মানুষ ভালোভাবে নিয়েছে। তারা প্রশংসা করছে। তবে আমার মনে হয়, আমি খুব মহান কিছু করিনি।
ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে দীপ্তি বলেন, পর্বটি প্রচার হওয়ার পর আমি অনেক ফোনকল পেয়েছি, মেসেজ পেয়েছি। সবার উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সকলের প্রতি ভালোবাসা জানাতে চাই।
৭৫ হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষদের চেহারা কেমন ছিল? সে চেহারা কি আমাদেরই মতো নাকি আরও ভিন্ন ধরনের? এসব প্রশ্ন সবসময়েই অতীত নিয়ে ভাবতে বসা মানুষদের ভাবায়। নৃতত্ত্বের গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে সুদূর অতীতের এই মানবগোষ্ঠী রীতিমতো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সব সময়। তবে চাইলেই কি আর অতীতে ফেরা সম্ভব? ক্যামেরাও আবিষ্কার হয়েছে দুইশ বছর আগে, ফলে আগের মানুষের চেহারা ছবি একেবারেই অচেনা। তবে গবেষণাগারে নিরন্তর চেষ্টায় নিয়ানডারথাল যুগের এক প্রাগৈতিহাসিক নারীর মুখাবয়ব তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর তা সম্ভব হওয়ার কারণ ওই নারীর মাথার খুলিটি খুঁজে পেয়েছিলেন একদল গবেষক। এই নারীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শানিদার জেড’।
এরপর প্রাগৈতিহাসিককালের সেই নারী জীবিত থাকতে দেখতে কেমন ছিলেন, সেই চেহারার একটি দারুণ পুনর্নির্মাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। খবর বিবিসির।
গবেষকরা জানান, এ মুখমণ্ডলটা তৈরি করা হয়েছে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া ভাঙাচোরা একটি নিয়ানডারথাল খুলি থেকে। খুলিটি এত প্রাচীন যে উদ্ধার করার সময় এর হাড় এতই নরম হয়ে গিয়েছিল যাকে ‘চায়ে ডোবানে বিস্কুটের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
বিবিসি জানায়, খুলির ভাঙা অংশগুলোকে পুনরায় জোড়া দেওয়ার আগে সেগুলোকে কঠিন রূপ দিতে হয়েছিল গবেষকদের। তারপর বিশেষজ্ঞ প্যালিওআর্টিস্টরা সেই খুলির ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেন। যেসব শিল্পী প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর বৈজ্ঞানিক প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন, তাদের প্যালিওআর্টিস্ট বলা হয়।
নেটফ্লিক্সের জন্য বিবিসি স্টুডিওর তৈরি করা ডকুমেন্টারি ‘সিক্রেটস অব দ্য নিয়ানডারথাল’-এ মুখাবয়বটি দেখানো হয়েছে। ডকুমেন্টারিটিতে ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষের বিবর্তনীয় সঙ্গী নিয়ানডারথাল নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
নতুন এ ভাস্কর্যসদৃশ মুখাবয়বের ফলে নিয়ানডারথালের মুখ দেখতে কেমন ছিল তা বাস্তবেই প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হলো।
প্রকল্পটির একজন প্যালিঅ্যানথ্রোপলিজস্ট ও ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের শিক্ষক ড. এমা পমরয় বলেন, ‘আমি মনে করি, তার [নিয়ানডারথাল নারী] মাধ্যমে আমরা তাদেরকে বোঝার এক নতুন সংযোগ পেলাম।’
ইরাকি কুর্দিস্তানের শানিদার গুহায় এ নিয়ানডারথালের খুলিটি পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকে ওই গুহা থেকে অন্তত ১০টি নিয়ানডারথাল নারী, পুরুষ ও শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
২০১৫ সালে কুর্দিশ কর্তৃপক্ষ একটি ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানায়। তখনই ওই নারীর কঙ্কালটি খুঁজে পান তারা। সেটির নাম দেওয়া হয় শানিদার জেড।
গবেষকরা জানান, কঙ্কালটির মেরুদণ্ড, কাঁধ, বাহু ও হাতসহ ঊর্ধ্বাঙ্গের বেশিরভাগ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। মাথার খুলিটির বেশিরভাগ অংশও পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেটা খুলির আকৃতিতে নয়। খুলিটি চ্যাপ্টা হয়ে দুই সেন্টিমিটার পুরু একটি পরতে রূপান্তরিত হয়েছিল।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, দূর অতীতের কোনো এক সময় গুহার কোনো পাথর মাথায় পড়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন ওই নারী। সে জন্য তার খুলির এমন পরিণতি।
শানিদারের নতুন অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেওয়া ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রিম বার্কারের ভাষায়, ‘ওই খুলিটা মূলত একটা পিজ্জার মতো চ্যাপ্টা ছিল।’
বিবিসির ওই ডক্যুমেন্টারিতে বলা হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে খুলিটির অংশগুলো যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়। তারপর সেগুলোকে মাটি-পাথরের মিশ্রণ থেকে আলাদা করা হয়। এরপরের কাজ ছিল ওই টুকরোগুলোকে একত্রিত করা। অনেকটা ধাঁধা সমাধান করার মতো করেই একজন প্রত্নতত্ত্ববিদকে কাজটি করতে হয়েছিল। তাতে সময় লেগ যায় প্রায় বছরখানেক। পুনরায় রূপ দেওয়া খুলিটি তারপর স্ক্যান করেন বিশেষজ্ঞরা। সেটাকে ত্রিমাত্রিকভাবে ছাপিয়ে তা দেওয়া হয় ডাচ শিল্পী আদ্রি ও আলফঁস কেনিসকে। এই দুই শিল্পী প্রাচীন মানুষের হাড় ও ফসিলের অবশিষ্টাংশ থেকে তাদের শরীরের বৈজ্ঞানিক প্রতিকৃতি আঁকার দক্ষতার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তবে তাদের তৈরি এ মুখাবয়বটি যতই কৌতূহল জাগানিয়া হোক না কেন, প্রকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য কেবল মূল কঙ্কালটারই রয়েছে।
গবেষকরা একদম নিশ্চিত যে, ‘কঙ্কালটা নারীরই’।
তারা জানান, পেলভিক হাড়গুলো থাকলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া আরও সহজ হতো, কিন্তু কঙ্কালটির সঙ্গে সেগুলো পাওয়া যায়নি। তার বদলে গবেষকেরা নিয়ানডারথাল কঙ্কালটির দাঁতের এনামেলে অধিক পরিমাণে পাওয়া এক ধরনের প্রোটিনের মাধ্যমে এটির লিঙ্গ নির্ধারণ করেছেন। এ প্রোটিন নারী জেনেটিক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষকদের ধারণা, মধ্য চল্লিশেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই নিয়ানডারথাল নারী। আর এটাও বোঝা গেছে তার দাঁতের ক্ষয় দেখে। ড. পমরয় বলেন, ‘আমরা তার দুর্বল দাঁতের আরও কিছু ইঙ্গিতও খুঁজে পেয়েছি। কিছু ক্ষত, মাড়ির কিছু রোগও ছিল। তাই জীবনের ওই পর্যায়ে তার স্বাভাবিক আয়ুও শেষের দিকে ছিল বলে মনে হয়।’
জন্ম থেকেই হাঁটতে পারেন না মীম। হাতে সমস্যা থাকার কারণে ধীরে ধীরে লিখতে হয়। মায়ের কোলে চড়েই শিক্ষাজীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফলের আশা।
মীমের পুরো নাম মাহফুজা আক্তার মীম। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। দুই ভাই-বোনের সংসারে বড় মেয়ে মীম। বাবা মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রি। মায়ের নাম সাহেরা বেগম। গতকাল শুক্রবার গুচ্ছভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় মায়ের কোলে উঠে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেন মীম। বাহাদুরপুর পণ্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
মায়ের অক্লান্ত শ্রম আর মেয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে হার মেনেছে হাজারও প্রতিবন্ধকতা। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শিকার হতে হয়েছে নানা বাধার। এর পরও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে স্কুল-কলেজ জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার অপেক্ষা।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্মগতভাবে আমার শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমার লেখাপড়ার পুরো যাত্রাতেই আম্মু পাশে আছেন। আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন আম্মুর কোলে বসেই। ছোটবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই, সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেন। পরবর্তী সময় বার্ষিক পরীক্ষায় যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি।’
নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে মীম বলেন, ‘মার স্বপ্নই আমার স্বপ্ন।’
মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি, আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয়, আমি মারা গেলে মেয়ে তার বাবার বোঝা হবে না। সেজন্য আমি শত কষ্টেও তাকে এতদূর এনেছি।’
সাহেরা বেগম আরও বলেন, ‘মেয়ের জন্মের পর থেকেই ওর বাবা আমাকে সহায়তা করেছে। আমার আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে। তবে আমার স্বপ্ন আমার বড় মেয়ে মীমকে ঘিরেই। আমি চাই আমার মেয়ে একটা সরকারি চাকরি করুক, সমাজের বোঝা না হোক।’
প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে নড়াইলে সুলতান মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার শহরের কুড়ির ডোব মাঠে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ প্রতিযোগিতা। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৯তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সুলতান মেলায় কিউট গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসবের অংশ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী এ ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসন ও এস. এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২৬টি ষাঁড় অংশ নেয়। লড়াইয়ে অংশ নেওয়া প্রতিটি ষাঁড়ই ছিল সুঠাম দেহের ও বাহারি রঙের। লড়াই দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সি হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মাঠটি।
যশোরের অভয়নগর থেকে আসা সূর্য কুমার বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে প্রতি বছর সুলতান মেলায় ষাঁড়ের লড়াই দেখতে আসি। ষাঁড়ের লড়াই দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে এসেছি।’ সমীরণ বিশ্বাস বলেন, ‘ষাঁড়ের লড়াই আগে অনেক জায়গায় হতো, এখন হয় না। এই সুলতান মেলায় প্রতি বছর হয়। তাই অনেক মানুষ এসেছি, ষাঁড়ের লড়াই দেখছি, খুব ভালো লাগছে।’ এদিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া উৎসবের নবজাগরণের উদ্দেশ্য সুলতান মেলায় এসব খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। সুলতান মেলার ‘কিউট গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসব’ উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মন্নু বলেন, এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির হারিয়ে যাওয়া যে ক্রীড়া উৎসব রয়েছে সেগুলোর নবজাগরণ সৃষ্টি করা। নতুন প্রজন্মকে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করা। তারা মাদক থেকে সরে এসে খেলাধুলা এবং লেখাপড়ার ভেতরে আসুক এবং নিজেরা আলোকিত মানুষ হিসেবে তৈরি হোক সেই প্রত্যাশায়ই এই প্রচেষ্টা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল নড়াইলের সুলতান মঞ্চে ১৫ দিনব্যাপী সুলতান মেলা মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী। মেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কুড়ির ডোব মাঠে কিউট গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসব শিরোনামে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী ২৯ এপ্রিল এ মেলা শেষ হবে।
প্রতি বছর এপ্রিলে তাপমাত্রা বেশিই থাকে। তবে এবারের গরম ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি তাপমাত্রার স্কেল ছাড়িয়েছে সৌদি আরবকেও।
গরমের এমন পরিবর্তন কিন্তু এক দিনের ফল নয়। এর পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা বিষয়। এমনিতে জলবায়ুর পরিবর্তনে কোনো দেশ এককভাবে দায়ী নয়। পৃথিবীর সব দেশেই প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ্যভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী। যার ফলস্বরূপ দেখা দিয়েছে আবাহাওয়ার পরিবর্তন।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদের বলেন, গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীর ঘামছে, অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। এবার বৃষ্টিপাত কম। কালবৈশাখী ও বৃষ্টি না থাকায় এবার গরমের তীব্রতা বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, গরমের সঙ্গে এপ্রিলে সাধারণত বজ্রঝড়ও হয়ে থাকে। এ বছর বজ্রঝড় না হওয়ায় বৃষ্টি হচ্ছে না। পশ্চিমা ঝঞ্ঝার কারণে যে বজ্রঝড় হয়, সেটা ভূমধ্যসাগর থেকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের ওপর দিয়ে এসে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে বজ্রঝড় সৃষ্টি করে। জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটি পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই গরম বেশি পড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ফাতিমা আক্তারের পর্যবেক্ষণ, সারা বছরের বৃষ্টিপাতের ১০ শতাংশ বৃষ্টি হয় গ্রীষ্মে। এবার এখনও সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই। মনুষ্যসৃষ্ট কারণ যেমন- গাছপালা কেটে ফেলা, গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাশয় ভরাটের কারণেই দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গরম বৃদ্ধিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অংশ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এতটা নগরায়ন হয়নি, যার প্রভাবে পরিবেশ এত গরম হয়ে উঠবে। বরং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ছে, অন্যদিকে গ্রীষ্মের দাবদাহও অনুভূত হচ্ছে। সারা বিশ্বেই কার্বন নিঃসরণের জন্য এখন তাপমাত্রা বাড়ছে। নগরায়ন, শিল্পায়ন, ইটভাটা, যানবাহনের ব্যবহার বেশি- এগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি গরমের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। গত বছর অবশ্য পুরো পৃথিবীরই সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল। এ বছরও আরও বেশি গরমের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হতে পারে বলে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বছরের পর বছর ধরে গাধাকে অবজ্ঞাস্বরূপ ব্যবহার করে আসছে মানুষ। স্বীকৃতি ছাড়া কোনো কাজ করলেই আমরা বলি, ‘গাধার মতো খাটুনি’। তবে এবার সেসব বলার দিন হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। গাধার দুধ এখন গরু কিংবা ছাগলের চেয়েও দামি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। এতে বলা হচ্ছে, গরু কিংবা ছাগলের দুধের ৭০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে গাধার দুধ। গুজরাটে ধিরেন সোলাঙ্কি নামে এক ব্যক্তি তার খামার থেকে এ দামেই বিক্রি করছেন গাধার দুধ। প্রতি লিটার গাধার দুধের দাম ৫ হাজার রুপি (প্রায় ৭ হাজার টাকা)।
ধিরেন সোলাঙ্কি দীর্ঘদিন সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন। শেষমেশ তিনি বেছে নেন গাধা পালন। তার খামারে ৪২টি গাধা রয়েছে। পতন গ্রামের এ খামার থেকে ধিরেন সোলাঙ্কি মাসে আয় করেন ২-৩ কোটি রুপি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তার কাছে দুধের অর্ডার আসে। এ ব্যাপারে ধিরেন সোলাঙ্কি বলেন, ‘বেসরকারি চাকরি পেয়েছিলাম। তাতে পরিবার চালানো কষ্টকর ছিল। পরে গাধা পালন নিয়ে ভাবতে থাকি। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ৮ মাস আগে শুরু করি এই খামার। এতে আমার বিনিয়োগ হয়েছিল ২২ লাখ রুপি।
তবে বাজেভাবে শুরুটা হয়। প্রথম ৫ মাসে কোনো আয়ই হয়নি ধীরেনের। পরে বিভিন্ন রাজ্যে যোগাযোগ করে শুরু করেন দুধ বিক্রি। কর্ণাটক ও কেরালায় তিনি দুধ সরবরাহ করেন। বিভিন্ন কসমেটিকসের প্রতিষ্ঠানও এসব দুধের ক্রেতা। যেখানে দুধের দাম কেজিপ্রতি ৬৫ রুপি, সেখানে গাধার দুধের নাম ৭ হাজার রুপি। ফ্রিজারে রাখলে এই দুধ টাটকা থাকে। ব্যবসায়ীরা পরে এই দুধ থেকে পাউডার বানিয়ে প্রতি কেজি ১ লাখ রুপিতে বিক্রি করেন।
গাধার দুধের উপকারিতা কী
প্রাচীন যুগ থেকেই গাধার দুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রচলিত আছে, মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা এই দুধ দিয়ে গোসল করতেন। নাক দিয়ে রক্ত পড়া, লিভারের অসুখ, বিভিন্ন বিষক্রিয়া, সংক্রামক রোগ ও জ্বরে এই দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতেন গ্রিক চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিস। তবে আজকের যুগে এসব উপকারিতা যেন সবাই ভুলতে বসেছে। সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে গরুর দুধের চেয়ে গাধার দুধ বেশি উপকারী। এ ছাড়া গরুর দুধে এলার্জি থাকলে গাধার দুধ সেরা বিকল্প।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা সারাতে সক্ষম এই গাধার দুধ। এই দুধে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ডায়বেটিসে বেশ উপকারী। অন্যান্য দুধে বিভিন্ন জীবাণু থাকার শঙ্কা রয়েছে; কিন্তু এই দুধে নেই।