বছরের পর বছর ধরে গাধাকে অবজ্ঞাস্বরূপ ব্যবহার করে আসছে মানুষ। স্বীকৃতি ছাড়া কোনো কাজ করলেই আমরা বলি, ‘গাধার মতো খাটুনি’। তবে এবার সেসব বলার দিন হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। গাধার দুধ এখন গরু কিংবা ছাগলের চেয়েও দামি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। এতে বলা হচ্ছে, গরু কিংবা ছাগলের দুধের ৭০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে গাধার দুধ। গুজরাটে ধিরেন সোলাঙ্কি নামে এক ব্যক্তি তার খামার থেকে এ দামেই বিক্রি করছেন গাধার দুধ। প্রতি লিটার গাধার দুধের দাম ৫ হাজার রুপি (প্রায় ৭ হাজার টাকা)।
ধিরেন সোলাঙ্কি দীর্ঘদিন সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছেন। শেষমেশ তিনি বেছে নেন গাধা পালন। তার খামারে ৪২টি গাধা রয়েছে। পতন গ্রামের এ খামার থেকে ধিরেন সোলাঙ্কি মাসে আয় করেন ২-৩ কোটি রুপি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তার কাছে দুধের অর্ডার আসে। এ ব্যাপারে ধিরেন সোলাঙ্কি বলেন, ‘বেসরকারি চাকরি পেয়েছিলাম। তাতে পরিবার চালানো কষ্টকর ছিল। পরে গাধা পালন নিয়ে ভাবতে থাকি। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ৮ মাস আগে শুরু করি এই খামার। এতে আমার বিনিয়োগ হয়েছিল ২২ লাখ রুপি।
তবে বাজেভাবে শুরুটা হয়। প্রথম ৫ মাসে কোনো আয়ই হয়নি ধীরেনের। পরে বিভিন্ন রাজ্যে যোগাযোগ করে শুরু করেন দুধ বিক্রি। কর্ণাটক ও কেরালায় তিনি দুধ সরবরাহ করেন। বিভিন্ন কসমেটিকসের প্রতিষ্ঠানও এসব দুধের ক্রেতা। যেখানে দুধের দাম কেজিপ্রতি ৬৫ রুপি, সেখানে গাধার দুধের নাম ৭ হাজার রুপি। ফ্রিজারে রাখলে এই দুধ টাটকা থাকে। ব্যবসায়ীরা পরে এই দুধ থেকে পাউডার বানিয়ে প্রতি কেজি ১ লাখ রুপিতে বিক্রি করেন।
গাধার দুধের উপকারিতা কী
প্রাচীন যুগ থেকেই গাধার দুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রচলিত আছে, মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা এই দুধ দিয়ে গোসল করতেন। নাক দিয়ে রক্ত পড়া, লিভারের অসুখ, বিভিন্ন বিষক্রিয়া, সংক্রামক রোগ ও জ্বরে এই দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতেন গ্রিক চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিস। তবে আজকের যুগে এসব উপকারিতা যেন সবাই ভুলতে বসেছে। সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে গরুর দুধের চেয়ে গাধার দুধ বেশি উপকারী। এ ছাড়া গরুর দুধে এলার্জি থাকলে গাধার দুধ সেরা বিকল্প।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা সারাতে সক্ষম এই গাধার দুধ। এই দুধে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ডায়বেটিসে বেশ উপকারী। অন্যান্য দুধে বিভিন্ন জীবাণু থাকার শঙ্কা রয়েছে; কিন্তু এই দুধে নেই।
গৃহশ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার জন্য সরকার নীতি প্রণয়ন করলেও ১০ বছরে বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ প্রবচনের মতোই নীতিমালা রয়ে গেছে মলাটবন্দি। এমনকি নিয়োগকর্তা থেকে শুরু করে গৃহশ্রমিকদের প্রায় কারও জানা নেই এসব নীতি। ফলে কোনো হেরফের ঘটেনি দেশের সবচেয়ে অবহেলিত এ পেশায়। বেসরকারিভাবে কিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এক বছর ধরে সেখানেও চলছে সংকট।
গৃহশ্রমিকের কাজের পরিবেশ, মজুরি, ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতি’ অনুমোদন দেয় সে সময়কার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা। এরপর ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি জারি হয় গেজেট।
গৃহশ্রমিকের সংজ্ঞা থেকে শুরু করে মজুরি, কর্মঘণ্টা, নিয়োগত্রের ব্যবহার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উপায়, সরকারের দায়িত্ব ও তদারকি সেল গঠন, গৃহকর্মী-নিয়োগকর্তা-সরকারের দায়িত্বসহ অনেকগুলো দিক সুনির্দিষ্ট রয়েছে নীতিমালায়। তবে এক দশকেও এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটেনি। গেজেট পেপারের ছাপার অক্ষরেই আটকে আছে নীতিমালা। আগের মতোই চলছে গৃহ শ্রমিক নির্যাতন। তাদের জন্য নির্ধারণ হয়নি মজুরি কাঠামো এবং কর্মঘণ্টা, এমনকি পেশা হিসেবেও বাস্তব পরিসরে স্বীকৃতি পায়নি গৃহশ্রম।
মানবাধিকার ও গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশ্লেষকেরা এর জন্য দায়ী করছেন সরকারের সদিচ্ছাকে। পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিবন্ধকতাও সামনে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, আইনের বাধ্যতামূলক প্রয়োগ না থাকা, তদারকি ব্যবস্থাপনার অভাব, গৃহশ্রমিকদের সক্রিয় সংগঠনের অপ্রতুলতা, অধিকার নিয়ে প্রচার এবং সচেতনতার অভাব এবং তীব্র শ্রেণিবৈষম্য প্রতিকূল পরিস্থিতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখছে।
সরকারিভাবে প্রচারের অভাবে নিয়োগকর্তা এবং গৃহশ্রমিকদের প্রায় কেউই নীতিমালার বিষয়টি জানেন না। এজন্য সরকারের আন্তরিকতাকেই দায়ী করছেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ’যেকোনো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকার ব্যপক প্রচার চালাবে সেটাই নিয়ম। স্বাস্থ্যসেবা এমনকি সচেতনতামূলক যেকোনো বিষয়েই আমরা নিয়মিত পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিওতে সরকারি ক্যাম্পেইন দেখতে পাই। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো স্যোশাল মিডিয়ার যুগ। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। এখন চাইলে প্রচার চালানো অনেক সহজ। সরকার চাইলেই স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালাতে পারে, কিন্তু সদিচ্ছা নেই বলে তা হচ্ছে না।’
তবে এ অভিযোগ মানতে রাজি নয় শ্রম অধিদপ্তর। এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ্ আবদুল তারিক দাবি করছেন, নীতিমালাটি অনুমোদনের পর থেকেই প্রচার করা হচ্ছে। জনসাধারণকে সচেতন করতে তারা বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছেন। কীভাবে প্রচার চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীতিমালাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে দেশের প্রতিটি বিভাগ এবং জেলায় আলাদা আলদা কমিটি করা হয়েছে। তারা লিফলেট বিতরণসহ যখন যেমন প্রয়োজন তেমন প্রচার চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আলাদা করে নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা তাদের আওতাধীন এলাকার বাসাবাড়ির গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি তদারকি করেছেন।’
তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন নিয়োগকর্তা এবং গৃহশ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে তাদের কেউ নীতিমালা সম্পর্কে জানেন না। স্থানীয় থানাও এ বিষয়ে কোনো তদারকি করছে না। বিষয়টি তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম, স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘স্যোশাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন চালানোর বিষয়টি ভালো উদ্যোগ হতে পারে। আমরা সংবাদমাধ্যম এবং স্যোশাল মিডিয়াকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি তা নিয়ে অবশ্যই পরবর্তী মিটিংয়ে আলোচনা করব।’
ক্ষমতার পালাবদলে সংকটে পাইলট প্রকল্প
গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের অভাবের মধ্যেও কিছু পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় নাগরিক সংগঠনের অংশগ্রহণে জনপরিসর সম্প্রসারণ ও সুশাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এক্সপ্যান্ডিং সিভিক স্পেস থ্রু অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেন গভার্নেন্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ- ইসিসেপ) নামে চলছে এমনই একটি প্রকল্প। নারী গৃহশ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, তাদের জন্য সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শোষণ ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি বাড়াতে সম্মিলিতভাবে প্রকল্পটি পরিচালনা করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর আওতায় ‘নারী মৈত্রী’ নামের একটি সংগঠন গৃহশ্রমে নিয়োগপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গৃহশ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের মাঝে প্রচার চালাচ্ছে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় পাঁচজন নারী গৃহশ্রমিক নিয়োগপত্র পেয়ে উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। নিয়োগপত্রটি এমনভাবে তৈরি যেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতি মাসের বেতন যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেটি সম্ভব না হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিতে নিয়োগদাতাদের উৎসাহিত করা হয়।
আমরাই পারি জোটের এই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পে রাজধানীর মোহম্মদপুর, কল্যাণপুর এবং শের-ই-বাংলা নগর এলাকার সাড়ে তিন হাজার এবং কামরাঙ্গীরচর এলাকায় আড়াই হাজার গৃহশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে নারী মৈত্রী ও সহায়ক দুটি সংস্থা। অন্তত এক লাখ মানুষের মাঝে গৃহশ্রমিকের অধিকার ও নির্যাতন প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সংগঠনগুলো। পাশাপাশি গৃহশ্রমিকের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ শেখানোর পাশাপাশি ঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র যেমন ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ইলেক্ট্রিক চুলা, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গৃহশ্রমিকের মধ্যে একতা তৈরি করা এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটির সামনে তৈরি হয়েছে চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকা এবং নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ নাও করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গৃহশ্রমিকের মাঝে একতার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করাকে প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দিক হিসেবে বিবেচনা করছেন নারী মৈত্রীর ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর নাহিদ সুলতানা। তবে মাঠ পর্যায়ে গত এক বছরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার কথা জানান তিনি।
নাহিদ সুলতানা বলেন, ’আমরা চাইছি গৃহকর্মীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকুক, যাতে তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন। এজন্য আমরা এরিয়াভিত্তিক ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে তাদের একেক জন নেতা নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। তবে সমস্যা হলো এখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে। আগে দেখা গেছে যারা একটি রাজনৈতিক দলের মিটিং মিছিলে যেতেন তারা এখন কোণঠাসা। এখন যারা অন্য দলের মিটিং মিছিলে যাচ্ছেন তারা তাদের কমিউনিটিতে ভালো অবস্থায় আছেন। যার নেতৃত্বগুণ ভালো এমন একজনকে আমরা একটি গ্রুপের লিডার নির্বাচিত করলাম, কিন্তু দেখা গেল তিনি হয়ত আগে একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছিলেন, তাই এখন অন্য দলের অনুসারীরা তার নেতৃত্ব মানছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হচ্ছে, আগের রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের একজন লিডারের তার কমিউনিটিতে খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর কমিউনিটিতে অনুপস্থিতির কারণে তার অনুসারীদের এখন প্রকল্পে যুক্ত করা যাচ্ছে না ’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে বলেও জানান নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর না থাকার কারণে আমাদের মাঠ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রকল্পের ভালো ফল আনতে হলে নিয়োগকর্তা এবং গৃহকর্মীদের সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। আর এ কাজটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়।’
আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক মনে করেন, জনসম্পৃক্ত যেকোনো কাজের জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকলে তাদের অধিকার নিয়ে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যে পাইলট প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্যই হলো- এর ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলো যেন বড় পরিসরে কাজ করতে পারে। কিন্তু প্রকল্প মেয়াদের প্রায় পুরোটা সময় ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। গৃহশ্রমিকের সুরক্ষার জন্য পাইলট প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। রাজনৈতির অস্থিরতার কারণে আমরা সেটি ভালোভাবে করতে পারছি না। তাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে আমাদেরও প্রশ্ন আছে।’
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার ভাসমান বাসিন্দা ৫৩ বছর বয়সী সালেহা বেগম। পেশায় গৃহকর্মী সালেহার নেই পরিবার-পরিজন। কোথাও থাকার বন্দোবস্ত নেই বলে দিনে গৃহশ্রমিকের কাজ শেষে রাতে ঘুমান ফুটপাতে। স্বামী ছেড়ে যাবার পর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন প্রায় ১ যুগ আগে। ১২ বছর ধরে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও কোনো ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য হয়নি সালেহার।
সালেহা বেগম জানান, শুরুতে ঢাকায় এসেই বাসাবাড়ির কাজ পাননি। কয়েক বছর ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করেন। বাসাবাড়িতে গৃহশ্রমিকের কাজ পাওয়ার পর নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হন সালেহা। দেখতে পান এ পেশাতেও আছে প্রতিযোগিতা, তুলনামুলক কম বয়সী তরুণীরাই বেশি কাজ পান। এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সালেহা বেগম খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারছিলেন না। এজন্য দিনে দুই থেকে তিনটি বাড়িতে কাজ করে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।
সালেহা বেগম বলেন, ‘যে ট্যাকা কামাই করি, ওইডা দিয়া ঘরভাড়া কইরা থাকন যায় না। একবার একটা বাসায় বান্ধা কামে ধরছিলাম। ওইখানেই থাকতাম। কিন্তু ওই বাসার ম্যাডাম খাবার লইয়া খোঁটা দিত। বাসায় কিছু হারাইলেই আমারে ধরত। লাগে য্যান আমি চোর। তাই এই রাস্তাতেই থাকন ভালা।’
সালেহা বেগমের মতো শুধু আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা নয়, দেশের প্রায় সব গৃহশ্রমিক শারীরিক নির্যাতনসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।
বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৫ লাখ গৃহশ্রমিক আছেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এসব গৃহশ্রমিকের প্রায় সবাই প্রতিনিয়ত শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতনে মৃত্যুর খবরও নিয়মিত আসছে সংবাদমাধ্যমে।
২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ৮ তলার বাসা থেকে নিচে পড়ে মারা যায় ১৩ বছর বয়সী গৃহশ্রমিক প্রীতি উরান। সে ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সৈয়দ আশফাক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেলে থাকার পর দুজনই জামিনে ছাড়া পান। হত্যা মামলাটি এখন বিচারাধীন।
একই বছরের ২০ অক্টোবর গৃহশ্রমিক নির্যাতনের আরেক ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কল্পনা নামে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে শারিরীক নির্যাতন করে চারটি দাঁত তুলে ফেলেন গৃহকর্ত্রী। কল্পনাকে নির্যাতনের সময় প্রতিনিয়ত গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন তিনি। চিকিৎসা না দেয়ায় কল্পনার শরীরের সেসব জখমে পচনও ধরে। একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কল্পনাকে পরে উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ। আটক করা হয় গৃহকত্রী দিনাত জাহান আদরকে। ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় হওয়া মামলাটিও আদালতে বিচারাধীন।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের জরিপ বলছে, দেশের গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মানসিক, ৬১ শতাংশ মৌখিক, ২১ শতাংশ শারীরিক এবং ৪ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তবে নির্যাতিতদের মধ্যে ৯৫-৯৬ শতাংশই কোনো অভিযোগ বা আইনি ব্যবস্থা নেন না। বরং তারা নির্যাতনকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেন। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার- ওসিসির তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার মধ্যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিককে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে।
ঢাকার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসি সেন্টারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার রিনকি বলেন, ’আমরা গৃহশ্রমিকদের কিছু মামলা পাই ধর্ষণ সংক্রান্ত। আবার এ মামলাগুলো চালিয়ে নেয়াটাও বেশ চ্যালেঞ্জের, কারণ অধিকাংশ সময় ভিকটিমের পরিবার আপস করে ফেলে। এজন্য বিচারের কোনো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা যায় না।’
একই ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছে পুলিশও। ডিএমপির মোহম্মদপুর জোনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গৃহকর্মীদের নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভিকটিম বা তার ফ্যামিলি টাকার বিনিময়ে আপস করে ফেলে। তারা নিজেরা মামলা করতেই চায় না্ আবার আমরা নিজেরাই মামলা করলেও ভিকটিমের সাপোর্ট পাই না। তদন্তে গেলে ভিকটিম প্রথমে এক রকম বর্ণনা দেন, পরে আবার তা পাল্টে ফেলে। আদালতে গিয়েও তাদের বক্তব্য পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। ফলে তদন্ত বেশ জটিল হয়ে পড়ে। উল্টো অভিযোগ উঠে পুলিশ টাকা খেয়ে বিবাদির পক্ষে কাজ করছে।’
অন্যদিকে গৃহশ্রমিক পরিচয়ে বাসাবাড়িতে অপরাধ ঘটানোর অভিযোগও রয়েছে। গৃহশ্রমিকের সম্পৃক্ততায় নিয়োগদাতার বাসায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। এমনকি হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের খবরও এসেছে বেশ কয়েকবার।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গৃহশ্রমিকদের বৈধ নিয়োগপত্র দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আর্থিক সহযোগিতায় নাগরিক সংগঠনের অংশগ্রহণে জনপরিসর সম্প্রসারণ ও সুশাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এক্সপ্যান্ডিং সিভিক স্পেস থ্রু অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেন গভার্নেন্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ- ইসিসেপ) নামে চলছে একটি প্রকল্প। নারী গৃহশ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, তাদের জন্য সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শোষণ ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি বাড়াতে সম্মিলিতভাবে প্রকল্পটি পরিচালনা করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এর আওতায় ‘নারী মৈত্রী’ নামের একটি সংগঠন গৃহশ্রমে নিয়োগপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গৃহশ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের মাঝে প্রচার চালাচ্ছে। এরই মধ্যে পাঁচজন নারী গৃহশ্রমিক নিয়োগপত্র পেয়ে উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। নিয়োগপত্রটি এমনভাবে তৈরি যেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতি মাসের বেতন যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেটি সম্ভব না হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিতে নিয়োগদাতাদের উৎসাহিত করছে সংগঠনটি।
আমরাই পারি জোটের এই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মোহম্মদপুর, কল্যাণপুর এবং শের-ই-বাংলা নগর এলাকার সাড়ে তিন হাজার এবং কামরাঙ্গীরচর এলাকায় আড়াই হাজার গৃহশ্রমিককে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করেছে নারী মৈত্রী ও সহায়ক দুটি সংস্থা। অন্তত এক লাখ মানুষের মাঝে গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও নির্যাতনরোধের পদক্ষেপ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চায় সংগঠনগুলো। পাশাপাশি গৃহশ্রমিকদের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেইনও পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আওতায় গৃহশ্রমিকদের গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ শেখানোর পাশাপাশি ঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র যেমন ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ইলেক্ট্রিক চুলা, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য হল গৃহশ্রমিকদের মধ্যে একতা তৈরি করা এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। এই উদ্দেশ্যটিকেই প্রকল্পটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করছেন নারী মৈত্রীর ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় আমরা গৃহশ্রমিকদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছি। ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে তাদের মধ্যে একজনকে লিডার হিসেবে তৈরি করা এবং কোনো গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে কখন কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কীভাবে থানায় অভিযোগ করতে হবে সবকিছুই আমরা ধাপে ধাপে শেখানোর চেষ্টা করছি। এমনকি স্থানীয় থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই লিডারদের আমরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এতে করে সহিংসতার শিকার হলে গৃহশ্রমিকেরা আইনি ব্যবস্থা নিতে উৎসাহী হবেন।’
রাজধানীর একাধিক এলাকার গৃহশ্রমিক এবং নিয়োগদাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের একটি বড় অংশই নিয়োগপত্রের বিধান সম্পর্কে জানেন না, আবার আরেকটি বড় অংশের কাছে বিষয়টি জটিল মনে হয়। রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা লুবনা হোসেন বলেন, ‘বাসার বুয়ার জন্য স্ট্যাম্পে লিখে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার দিতে হবে এটা তো আজকেই প্রথম শুনলাম। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং, তবে এভাবে কতটুকু সুরক্ষা পাওয়া যাবে সেটা এপ্লাই করার আগ পর্যন্ত তো বোঝা যাবে না।
‘আমার মনে হয় এটা জটিল প্রক্রিয়া। অবশ্য সরকার নিয়ম করে দিলে হয়ত আমরা বাধ্য হয়ে অভ্যস্ত হব। কিন্তু আমাকে যদি বলেন, তাহলে আমি নিয়োগপত্রের ঝামেলায় যেতে চাই না। কারণ বুয়াদের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আজকে ইচ্ছা হলে কাল থেকে আর কাজে আসে না। এমন বাস্তবতায় আমাদের কোনো মাসে দুই থেকে তিনজন বুয়াকে কাজে রাখতে হয়। সেক্ষেতে মাসে দুই-তিনটা করে নিয়োগপত্র দিতে হবে।‘
ধানমন্ডি এলাকায় ৯ বছর ধরে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন রিজিয়া পারভীন। তিনি তার কর্মদক্ষতার জন্য নিয়োগদাতাদের কাছে বেশ সুপরিচিত। তবে রিজিয়া পারভীনও নিয়োগপত্রের বিষয়টিকে জটিল মনে করেন। তিনি বলেন, ’আমি ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। নিজে ঠিক থাকলে কেউ উল্টাপাল্টা করতে পারবে না। এতদিন ধরে ঢাকা শহরে কাজ করি, আজ পর্যন্ত কোনো কাজে অকারণে কামাই দিই নাই, কোনো বাসায় চুরি করি নাই। আমার সাথেও কেউ খারাপ ব্যবহারও করে নাই। যেই বাসায় কোনো বুয়া টেকে না, মালিকের ব্যবহার খারাপ, সেই মালিকও আমারে কখনো একটা ধমকও দিতে পারে নাই। আমার কাজটা আমি ঠিক মতো করি।’
তবে প্রতিবেদক যেসব গৃহশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অধিকাংশই মনে করেন নিয়োগপত্র বিষয়টি পুরোপুরি স্বাক্ষরতার ওপর নির্ভর করে। নিয়োগপত্রের বিষয়গুলো বুঝতে হলে পড়ালেখা জানতে হবে। সেই সঙ্গে দুই পক্ষের জন্যই বাড়াতে হবে প্রচার কার্যক্রম। তাহলে ধীরে ধীরে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকতা পাবে। নিয়োগপত্রের পাশাপাশি এই পেশায় কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, সাপ্তাহিক ছুটি এবং মজুরির বৈষম্য দূর করার দাবিও জানান অনেকে।
আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, ’বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক মানুষ সবসময় বঞ্চিত থাকছে। তবে বাস্তবতা হল মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে বাদ দিয়ে বা পিছনে ফেলে রেখে একটি দেশ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না।‘
গৃহশ্রমিকদের উন্নয়নে নেয়া প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের অধীনে আমরা গৃহশ্রমিকদের একটি ছোট অংশকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছি। কোনো নির্যাতন হলে আইনি ব্যবস্থা কীভাবে নিতে হয় তা জানাচ্ছি। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো তাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য আমরা গাইড করছি, যেন তারা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকতে পারেন। আশা করছি দুই বছর মেয়াদি এই পাইলট প্রকল্পটির ফলাফল দেখে সরকার এবং অন্য দাতা সংস্থাগুলো আরও বড় পরিসরে আমাদের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’
পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল গোটা একটি শহর। রোমান সাম্রাজ্যের ওই শহরের নাম ‘আয়নারিয়া’। সে ১৮০ সালের কথা। প্রায় দুই হাজার বছর পর এসে হারিয়ে যাওয়া শহরটির সন্ধান মিলেছে। বহু পরিশ্রম করে সাগরতলে শহরটি খুঁড়ে বের করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। পর্যটকেরা এখন ডুব দিয়ে দেখে আসতে পারেন শহরটির প্রাচীন সব নিদর্শন।
পানির নিচে খুঁজে পাওয়া শহরটির অবস্থান ইতালির ইসকিয়া দ্বীপের উপকূলে। ডুবসাঁতার ছাড়াও তলদেশে কাচ লাগানো নৌযানে চেপে শহরটির রোমান স্থাপনাগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখা যাবে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে রোমানদের ব্যবহৃত বড় পাত্র, মোজাইক, মুদ্রা, একসময় সাগরের তীরে গড়ে তোলা বাসাবাড়ির অংশ—এমনকি রোম সাম্রাজ্যের বাসিন্দাদের তৈরি কাঠের একটি নৌকাও।
শহরটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় সত্তরের দশকে। ইসকিয়ার উপকূলে মাটির পাত্রের কিছু অংশ পেয়েছিলেন কয়েকজন ডুবসাঁতারু। তখন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কিছু অনুসন্ধানও চালিয়েছিলেন। তবে কাজ এগোয়নি। পরে ২০১১ সালে স্থানীয় কয়েকজন নাবিক ও ইতিহাসপ্রেমী আবার অনুসন্ধান শুরু করেন। তাঁদের হাত ধরেই খোঁজ মেলে সাগরের তলদেশের ২ মিটার নিচে থাকা শহরটির।
খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০ শতকের দিকে ইসকিয়া গ্রিক সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ শতকে দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয় রোমানরা। নাম দেওয়া হয় আয়নারিয়া। ধারণা করা হয়, ১৮০ সালে আগ্নেয়গিরির লাভায় তলিয়ে গিয়েছিল শহরটি। এরপর ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।
এর আগে ৭৯ সালে অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের পম্পেও নগরী। এই শহর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলেও আয়নারিয়ার ধ্বংসের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ভারতের বিহারে ‘ডাইনি বিদ্যা চর্চার’ অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর দেহগুলো পুড়িয়েও দেওয়া হয়। তবে তাদের কাউকে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করছে পুলিশ। গত রোববার রাতে পূর্ণিয়া জেলার তেতগামা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ণিয়া জেলার তেতগামা গ্রামটি মূলত ওরাঁও আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসতি। সদর পূর্ণিয়ার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) পঙ্কজ কুমার শর্মা বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি পাঁচজনকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। তারা জীবিত অবস্থায় পুড়েছিলেন, নাকি মৃত্যুর পর আগুন দেওয়া হয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, নিহত পরিবারের ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর সেদিন বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। সে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। পরে সে পুলিশকে খবর দেয় এবং চারজন প্রধান অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করে। এদের মধ্যে তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসডিপিও শর্মা বলেন, চারজনের নাম এফআইআরে রয়েছে। তিনজনকে ধরা হয়েছে। তবে আমরা মনে করছি, পুরো গ্রামই হয়তো এ ঘটনায় জড়িত। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ‘ঝাড়ফুঁক’ বা লোকজ চিকিৎসা নিয়ে বিরোধ থেকেই এ হামলা হয়েছে। নিহত বাবুলাল ওরাঁও এসব চর্চা করতেন বলে জানা গেছে।
কয়েকদিন আগে একই গ্রামের রামদেব ওরাঁওয়ের পরিবারে একটি শিশুর মৃত্যু হয় এবং আরেকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই বাবুলালের পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
এ ঘটনার বিষয়ে বিরোধীদল আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিহারে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। রাজধানীতে কেউ জবাবদিহির দায়িত্ব নিচ্ছে না। পূর্ণিয়া থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রাজেশ রঞ্জন বলেন, আমরা যখন মঙ্গলে যাচ্ছি, তখন এখানকার মানুষ ডাইনি সন্দেহে গণহত্যা চালাচ্ছে- এটা লজ্জার।
বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার বলেন, বিহারে গরিব, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউই নিরাপদ নয়। এটি স্পষ্টত জঙ্গলরাজ।
পাকিস্তানের লাহোরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে দেওয়াল টপকে এক নারী ও দুটি শিশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটি পোষা সিংহ। পরে সেটির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচ ও সাত বছর বয়সী শিশু দুটিসহ আক্রান্ত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জোহান শহরের একটি গ্রামের খামারবাড়ি থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। এরপর একটি গলির মোড়ে ওই নারী ও শিশুদের আক্রমণ করে।
শহরের নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, লাফ দিয়ে একটি কংক্রিটের দেওয়াল পার হচ্ছে সিংহটি। এরপর পেছন থেকে এক নারীর ওপর আক্রমণ করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে সেটি। তখন ওই খামারবাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে লাঠি হাতে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
তিনি সিংহটির কবল থেকে ওই নারীকে রক্ষা করেন। লোকটির তাড়া খেয়ে ছুটে সামনের সড়কে গিয়ে শিশুদুটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি।
সিংহের আক্রমণে শিশুরা মুখমণ্ডল ও বাহুতে আঘাত পেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)। তারা বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, খামারবাড়িতে একটি উন্মুক্ত খাঁচা থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। পরে এটিকে ধরে নিয়ে আসেন এর মালিক। বন্য প্রাণীটিকে একটি গাড়িতে তুলে অন্য একটি জেলায় পালিয়ে যান তিনি।
লাহোর পুলিশ অপারেশনসের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ফয়সাল কামরান বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সিংহটিকেও ধরে এনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিংহ পোষার বৈধ অনুমোদন ছিল না ওই ব্যক্তির। পাকিস্তানের বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে তার বিচার করা হবে। এতে তার সাত বছরের কারাদণ্ড কিংবা সাড়ে সতেরো হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
পাঞ্জাবের বন্যপ্রাণী ও পার্ক বিভাগের প্রধান রেঞ্জার সৈয়দ কামরান বুখারি বলেন, ‘আটক তিনজনকেই কঠিন সাজার মুখোমুখি হতে হবে। এভাবে বন্যপ্রাণী আটকে রাখা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।’
পাকিস্তানে বন্যপ্রাণী পোষা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটিতে বন্যপ্রাণী পোষা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, তবে তার জন্য অনুমোদন নিতে হয়। আর সিংহের মতো বড় কোনো বন্যপ্রাণী পুষতে হলে তা শহরের বাইরে করতে হবে বলে নিয়ম রয়েছে।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের ভাবনা ও কল্পনা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ছিল। ধর্ম ও পুরানে এর সমর্থনে নানা কাহিনি প্রচারিত থাকলেও ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী বা কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব মানুষ এখনো নিজের চোখে দেখেনি। তবে যুগে যুগে মহাবিশ্বে প্রাণের খোঁজে বিজ্ঞানীদের চলছে নিরলস গবেষণা। বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিন দিন উন্নতি এবং মহাকাশ ও গ্রহ-নক্ষত্র ঘিরে এ গবেষণা আরও জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা এ বিষয়ে জুগিয়েছে আশার আলো। পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রহের নাম ‘কে২-১৮বি’। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ ভারী ও আকারে ২.৬ গুণ বড় এই গ্রহটি নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জানিয়েছেন, গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে তারা শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছেন। তবে বিষয়টি কেবলই প্রাথমিক ধারণার পর্যায়ে আছে জানিয়ে তারা এ বিষয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসি বাংলা জানায়, কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। তারা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন যা পৃথিবীতে কেবল সরল বা এক কোষী (উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ব্যাকটেরিয়া) জীবের মাধ্যমেই তৈরি হয়।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো, একইসঙ্গে আগের চেয়েও বেশি আশাব্যঞ্জকভাবে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছে।
তবে এই ফলাফল নিশ্চিত করতে আরও তথ্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছে গবেষণা দলটি, স্বাধীনভাবে কাজ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও একই মত দিয়েছেন।
শিগগিরই নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিজের ল্যাবরেটরিতে তিনি জানান, ‘এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। বাস্তবে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা এই সংকেত নিশ্চিত করতে পারব।’
আকারের দিক থেকে কে২-১৮বি পৃথিবীর তুলনায় আড়াই গুণ বড়। এটি আমাদের থেকে ৭০০ ট্রিলিয়ন মাইল, অর্থাৎ ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর মানে দাঁড়ায়- কোনো মানুষের পক্ষে সেখানে এক জীবনে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এতটাই শক্তিশালী যে একটি ছোট লাল সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান ওই গ্রহ অতিক্রম করে আসা আলো বিশ্লেষণ করে ওই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করতে পারে।
কেমব্রিজের গবেষক দলটি দেখেছে যে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের দুটি অণুর মধ্যে অন্তত একটির মধ্যে এমন রাসায়নিক চিহ্ন রয়েছে যেগুলো সাধারণত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত; এই রাসায়নিকগুলো হলো- ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস)।
পৃথিবীতে এই গ্যাসগুলো সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
একটি পর্যবেক্ষণেই এই গ্যাসের এতটা উপস্থিতি দেখে নিজের বিস্ময়ের কথা জানান অধ্যাপক মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলটিতে যে পরিমাণ গ্যাস আছে বলে আমরা ধারণা করছি, তা পৃথিবীর চেয়ে হাজার গুণ বেশি। ফলে এই গ্যাস যদি আসলেই জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে গ্রহটিতে জীবনের প্রাচুর্য থাকবে।’
আরও এক ধাপ এগিয়ে অধ্যাপক মধুসূদন বলেন, ‘আমরা যদি কে২-১৮বি গ্রহে জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি তার মানে এটাই দাঁড়াবে যে ছায়াপথে জীবন থাকাটাই স্বাভাবিক।’
গত বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে তিনি বলেন, ‘এটা বিজ্ঞানের জন্য এবং একাধারে প্রাণী হিসেবে আমাদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। এমন যদি একটা উদাহরণ মেলে, তাহলে বুঝতে হবে- এই অসীম মহাবিশ্বে আরও অনেক গ্রহেই জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।
‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই-ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।
সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন -এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে।
সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।
১৮২৮ সালের ১১ আগস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনি।
১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এত দিন চোখে পড়েনি।
সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি।
কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে।
মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’-এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি।
তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, ‘দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।’
সূত্র: বিডিনিউজ
আমাদের আকাশে দেখা যাওয়া সবচেয়ে অকৃত্রিম বন্ধু চাঁদ। শৈশবে শিশুদের কপালে চাঁদমামা এসে টিপ দিয়ে যাওয়ার ছড়াকাটা দিন থেকেই চাঁদের সঙ্গে সখ্যতা শুরু হয় মানুষের। পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহটি রাতের বেলা সূর্যর কাছ থেকে ধার করে এনে আমাদের স্নিগ্ধ আলো দেয়।
সে আলোয় আবছাভাবে সবাই দেখতে পান চাঁদের কিছু কালো দাগ। অনেকটা চরকা কাটা বুড়ি মনে হলেও সেগুলো আসলে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে কিছু অতি পুরোনো গর্ত। তবে এটিই সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম গর্ত নয়, চাঁদের যে পিঠটি আমরা দেখতে পাই না সে পাশটিতেই আছে সবচেয়ে বড় ও পুরোনো গর্তটি। তাকে বিজ্ঞানীরা চেনেন ‘সাউথ পোল-এইটকেন (এসপিএ)’ বেসিন নামে। সম্প্রতি এক গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের সবচেয়ে পুরোনো ওই গর্তটির বয়স ৪৩২ কোটি বছর।
পৃথিবী থেকে আমরা সব সময় চাঁদের যে পাশটি দেখি, বিশাল এই গর্তটি তার উল্টা পাশে অবস্থিত। আর এর ব্যাপ্তি দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি। এটি সম্ভবত বড় কোনো গ্রহাণু আছড়ে পড়ায় তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
সাম্প্রতিক এই গবেষণাটিতে চাঁদের প্রাথমিক ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে এর পৃষ্ঠে বিভিন্ন গর্তের আকৃতি কীভাবে তৈরি হলো, সে বিষয়ে নতুন তথ্য মিলেছে।
শত শত কোটি বছর ধরে পৃথিবীর মতো চাঁদেও অসংখ্য গ্রহাণু ও ধূমকেতু আঘাত হেনেছে, যার ফলে এসব ক্রেটার ও বেসিন সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বুঝে উঠতে পারেননি, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাতের ঘটনাগুলো আসলে কখন ঘটেছিল।
চাঁদ থেকে আসা এক উল্কাপিণ্ড নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সম্প্রতি গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা এসপিএ বেসিনের আসল বয়স চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
এই গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার’-এর বিজ্ঞানীরা, যেখানে তারা ‘নর্থওয়েস্ট আফ্রিকা ২৯৯৫’ নামের এক উল্কাপিণ্ড বিশ্লেষণ করেছেন। ২০০৫ সালে এর খোঁজ মিলেছিল আলজেরিয়ায়।
এ উল্কাপিণ্ডটি ‘রেগোলিথ ব্রেসিয়া’ নামেও পরিচিত, যা বিভিন্ন এমন ধরনের পাথর থেকে তৈরি, যেগুলো এক সময় চন্দ্রপৃষ্ঠের অংশ ছিল। এসব পাথর আদিম কোনো আঘাত হানার ঘটনায় সৃষ্ট তাপ এবং চাপের প্রভাবে সমন্বিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
ওই উল্কাপিণ্ডে থাকা ইউরেনিয়াম ও সিসার পরিমাণ পরীক্ষা করে গবেষকরা বলছেন, এসব পাথরের টুকরার বয়স ৪৩২ থেকে ৪৩৩ কোটি বছর।
এর মানে, এসপিএ বেসিন গঠিত হয়েছিল বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়েও প্রায় ১২ কোটি বছর আগে, যখন চাঁদে গ্রহাণু আঘাত হানার তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল।
অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, চাঁদে সবচেয়ে বড় গ্রহাণু বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল ৩৮০ কোটি থেকে ৪২০ কোটি বছর আগে।
চীনা গবেষকরা পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশে নতুন ধরনের ডাইনোসরের ডিমের ফসিল খুঁজে পেয়েছেন। যার দৈর্ঘ্য মাত্র ২৯ মিলিমিটার। এটি বিশ্বে এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ছোট আকারের ডাইনোসরের ডিম।
তিন বছরের গবেষণার পর, চিয়াংসি জিওলজিক্যাল সার্ভে অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন ইনস্টিটিউট (জেজিএসইআই), চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সেস (উহান) এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ্যা এবং প্যালিওনথ্রোপলজির গবেষকদের নিয়ে গঠিত দলটি ছয়টি ডিমের জীবাশ্মের ডেটিং নিশ্চিত করেছে।
৮০ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষে এই প্রজাতির ডাইনোসর বিচরণ করতো।
অপেক্ষাকৃত সম্পূর্ণ, অনিয়মিতভাবে সাজানো ডিমের জীবাশ্মগুলো ২০২১ সালে কানচোও শহরের কানসিয়ান জেলার মেইলিন টাউনশিপের একটি নির্মাণ সাইটে ভালোভাবে সংরক্ষিত বাসা থেকে পাওয়া গিয়েছিল।
স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ইলেক্ট্রন ব্যাকস্ক্যাটার ডিফ্র্যাকশন ব্যবহার করে, গবেষকদের দল ডিমের খোসাগুলোর মাইক্রোস্ট্রাকচার বিশ্লেষণ করেছেন এবং নির্ধারণ করেছেন যে তাদের আকার এবং মাইক্রোস্ট্রাকচার থেকে বোঝা যায় যে তারা একটি নন-এভিয়ান থেরোপডের অন্তর্গত প্রজাতি। জেজিএসইআই এর প্রধান প্রকৌশলী লোও ফাশেং এ তথ্য জানিয়েছেন।
লোও ফাশেং আরও জানান, সবচেয়ে সম্পূর্ণ ডিমের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য মাত্র ২৯ মিমি, যা ক্ষুদ্রতম ডাইনোসর ডিমের জীবাশ্মের জন্য একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। পূর্বে পরিচিত সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর ডিমের জীবাশ্মটি চীনের চেচিয়াং প্রদেশে পাওয়া গিয়েছিল, যার পরিমাপ প্রায় ৪৫.৫ মিমি X ৪০.৪মিমি X ৩৪.৪মিমি। এই সবশেষ আবিষ্কারটি লেট ক্রিটেসিয়াস থেকে ডাইনোসরের ডিমের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে এবং সে সময়ের মধ্যে থেরোপডগুলোর বিবর্তনের বিষয়ে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।
সূত্র: সিএমজি
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল তার সারা জীবনে করেছিলেন ৩৫৫টি উদ্ভাবন। এর সবচেয়ে আলোচিত উদ্ভাবনটি ছিল ডিনামাইট। অত্যন্ত বিধ্বংসী এ বিস্ফোরকটি যেন সভ্যতার কেবল ক্ষতির কারণ না হয়ে মানব কল্যাণে ব্যবহার তার আঁকুতি ছিল এই বিজ্ঞানীর।
জীবদ্দশায় প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইলে তার সব সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয়ের নির্দেশনা দিয়ে যান। তার উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে প্রবর্তিত হয় তারই নামে নোবেল পুরস্কার।
প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, সাহিত্য, এবং শান্তি- এই পাঁচটি বিষয়ে অনন্য আবিষ্কার ও সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে এই পাঁচ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতি বিষয়টিও, যদিও এই পুরস্কারের মূল নাম ভেরিজ রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার।
তবে এতদিনে অর্থনীতিও নোবেল পুরস্কার হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।
প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। তবে গত ২০১২ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ীদের চমৎকার প্রতিকৃতিও প্রকাশ করে আসছে নোবেল কমিটি।
স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে নোবেলজয়ীদের এত সুন্দর প্রতিকৃতি কে আঁকেন? এসব কি মানুষের আঁকা প্রতিকৃতি নাকি কম্পিউটারের কাজ? নোবেল পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে এই প্রতিকৃতি একজন শিল্পীই ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত আঁকেন।
যিনি এ কাজটি করেন তার নাম নিকলাস এলমেহেদ। তিনি সুইডেনের নাগরিক। দেশটির স্বীকৃত পেশাদার পোট্রেট শিল্পী তিনি।
এলমেহেদ নোবেল কমিটির বিচারকমণ্ডলীর কোনো সদস্য নন। তবে পেশাগত কারণে বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তের পর সবার আগে তিনিই জানতে পারেন নোবেল বিজয়ীদের নাম। পেয়ে যান বিজয়ীদের ছবি।
কিন্তু দীর্ঘ এক যুগের পেশাদার শিল্পী জীবনে কারা বিজয়ী সে বিষয়ে সবসময় মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তিনি। তবে তার গোপন স্টুডিওতে শিল্পীদের ভিজ্যুয়াল পোট্রেট আঁকার কাজ চলে আগে থেকেই। যেদিন আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা হয় বিজয়ীদের, সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা প্রকাশ করে থাকেন তারই আঁকা বিজয়ীদের পোট্রেট।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘পপুলার সায়েন্স’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেলবিজয়ীদের প্রতিকৃতি আঁকার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন নিকলাস এলমেহেদ।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন থেকে নোবেলবিজয়ীদের ছবির পরিবর্তে চিত্রকর্ম ব্যবহারের আইডিয়া এসেছিল। কারণ বিজয়ীদের অনেকের ছবি তোলা বেশ কঠিন হয়ে যেত। আবার অনেক খুঁজেও তাদের ছবি পাওয়া যেত না। পাওয়া গেলেও সেগুলোর রেজুলেশন থাকত খুবই অল্প।’
নিকলাস এলমেহেদের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাকে নোবেল মিডিয়ার শিল্পনির্দেশক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে নোবেল ঘোষণার সময় সব ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের দায়িত্ব ছিল আমার।’
এখন নোবেল বিজয়ীদের প্রতিকৃতিতে গ্রাফিক্যাল মেকওভার দেখা যায়। এই ধারণা চালু হয় ২০১৭ সালে। সেই সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিকৃতিতে সোনালি রঙ ব্যবহার করা হবে। তাই নিকলাস এলমেহেদ প্রতিকৃতিতে সোনালি রাংতা ব্যবহারের ধারণা আনেন।
গত কয়েক বছর ধরে এলমেহেদের আঁকা ছবি দিয়েই নোবেলবিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তারপর বিশ্বজুড়ে সংবাদ, নিবন্ধ, প্রকাশনা, ম্যাগাজিন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ব্যবহার করা হয়। কারণ এলমেহেদের আঁকা প্রতিকৃতিই নোবেল বিজয়ীদের প্রথম অফিসিয়াল ছবি। তার আঁকা প্রতিকৃতিই আইকনিক হয়ে উঠেছে।
এলমেহেদ বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সোনার রঙ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সোনালি রাংতা নিয়ে গবেষণা করেছি। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, পাতলা ধাতব রাংতা বিশেষ আঠা দিয়ে চিত্রকর্মে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই আইডিয়া সাদা ক্যানভাসে আঁকা কালো রেখার সঙ্গে প্রতিকৃতিকে খুবই সুন্দর করে তোলে।’
তুষারে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকাকে অনেকেই শীতল মরুভূমি আখ্যায়িত করেন। সেখানে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। তবে কয়েক বছর আগে অ্যান্টার্কটিকায় নতুন এক প্রজাতির মসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই মস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ওই অঞ্চলে।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকায় উদ্বেগজনক হারে উদ্ভিদ জন্মে সবুজ হয়ে উঠছে। অঞ্চলটিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে শুকনা মাটিতে মস জন্মাচ্ছে। এসব ঘটনার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকা উপত্যকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকা দ্রুতগতিতে সবুজ হয়ে উঠছে এবং দক্ষিণ আমেরিকা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের এক্সেটার এবং হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের করা গবেষণা গতকাল শুক্রবার ন্যাচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া উদ্ভিদের বেশির ভাগই মস। গত চার দশকে ১০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানকার সবুজের পরিমাণ।
১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের ০.৪ বর্গমাইলেরও কম জায়গাজুড়ে উদ্ভিদ ছিল। ২০২১ সালে সেখানে পাঁচ স্কয়ার মাইল এলাকায় এটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। গত চার দশকে অ্যান্টার্কটিকা সবুজ হয়েছে দ্রুতগতিতে। তবে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সবুজ হয়েছে। এখন আরও দ্রুতগতিতে তা সবুজ হয়ে উঠছে।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও পরিবেশবিজ্ঞানী থমাস রোল্যান্ড বলেন, ভূমি থেকে দেখলে এখনো এটিকে বরফে ঢাকা মনে হবে। তবে ১৯৮০ সাল থেকেই সবুজ হওয়া শুরু করেছে এটি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার পরিবর্তন মহাকাশ থেকে ধারণ করা ছবিতে পরিলক্ষিত হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান অ্যান্টার্কটিকা। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্থানটি উষ্ণ হয়ে উঠছে।
২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটির সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ খবর জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি এ বছর নোবেল তালিকায় আরও আছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইউনাইটেড নেশন্স প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজি এজেন্সি (আনরোয়া) এবং জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকে (আইসিজে)।
সূত্র জানায়, এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সাবেক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পরে উভয়কেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নরওয়ের নোবেল কমিটির জন্য কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ৫০টির বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলছে। গত দুই দশকে এসব সশস্ত্র সংঘাতে প্রাণহানি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
কেউ কেউ মনে করছিলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হয়ত এ বছর কেউ শান্তি পুরস্কার পাবেন না। তবে সেসব আশঙ্কাকে পেছনে রেখে ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিজয়ীদের মনোনীত করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্রটি।
নরওয়ের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে, সুদান গত দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও হামাস একে অপরকে ধ্বংসের লক্ষ্যে প্রায় এক বছর ধরে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছে।
এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহিংসতা এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য যারা বা যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, নোবেল কমিটি এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারবিষয়ক ইতিহাসবিদ অ্যাশলে সেভিনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে যে বৈশ্বিক আইনের শাসন চালু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। সে হিসেবে পুরস্কারের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং আইসিজের মধ্যে।
অ্যাশলে সেভিন রয়টার্সকে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তোনিও গুতেরেস হচ্ছেন জাতিসংঘের শীর্ষ প্রতীক। অন্যদিকে, মানবিক ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত সব আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা এবং সেগুলো প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘের আদালত আইসিজে।
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ঘোষিত হবে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। আর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা শুরু হবে ১১ অক্টোবর। প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি— এই ছয়টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। শান্তি ব্যতীত বাকি ৫টি খাতে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এবং প্রদানের ব্যাপারটি দেখভাল করে সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি; আর শান্তিতে নোবেলের প্রার্থী মনোনয়ন ও পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
কী কারণে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা ছাড়তে পারেন না কিংবা কী কারণে তারা বছরের পর বছর লেগে থাকেন এই পেশাতে তারই উত্তর মিলেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। চিলির পন্টিফিশাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ভালপারাসিসোর অধ্যাপক ড. ক্লডিয়া মেলাডো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার সাংবাদিকতার শিক্ষক গ্রেগরি পেরাল্টের গবেষণায় উঠে এসেছে এর উত্তর।
গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন বিষয়টি সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে আনন্দ দেয়। সাংবাদিকদের পেশা ছাড়ার কারণ খতিয়ে দেখার চেয়ে গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন কোন বিষয় সাংবাদিকদের পেশায় টিকে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে সেগুলো। গবেষণার একটি সারাংশ প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম নিম্যানল্যাবের ওয়েবসাইটে।
সেখানে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ম্যানিলাভিত্তিক প্রতিবেদক রেজিন কাবাটোর একটি মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। রেজিন জানিয়েছেন, তার জন্য সাংবাদিকতা আনন্দের। কারণ এই মাধ্যমে তিনি রোজ নতুন নতুন গল্প তার দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। সাংবাদিকতার শক্তি ও এই পেশাকে ভালোবাসার কারণের কথা জানিয়েছেন রেজিন।
কারাগারে বন্দি কয়েদিদের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে একবার তিনি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। রেজিন চেয়েছিলেন, ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষ জানুক পুনর্বাসনমূলক বিচার প্রক্রিয়ার উপকারী দিকের কথা।
পরে সরকারের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছিলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বন্দিদের আঁকা ছবির বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তার মানে কারাগারে থেকেও ছবি বিক্রির অর্থ দিয়ে বন্দিরা তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারছিলেন।
এই যে সাধারণভাবে বলা একটি গল্প কিছু মানুষের জীবনে দারুণ সুযোগ বয়ে আনে, কারো কারো জীবন বদলে দেয়, এটাই রেজিনের মতো হাজারো সাংবাদিককে আনন্দ দেয়। খারাপ দিনেও শক্তি জোগায়।
গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ২০ জন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতার কথা।
জানা গেল, এই সাংবাদিকরা পাঠক ও দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে সত্যিকারের মানসিক সংযোগ গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান। দর্শক-পাঠকরা সাংবাদিকদের যে পরিমাণ বিশ্বাস করেন, তার মর্যাদা রাখার ব্যাপারে সবসময় সচেষ্ট থাকেন তারা।
যেমন এক সাংবাদিক বলেছেন, কেউ হয়ত খুব বিশ্বাস করে আমাকে তার জীবনের গল্প বলেছেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে আমি সেটা বুঝতে পেরেছি এবং বাকিদের কাছেও তা সঠিকভাবেই পৌঁছে দেবো। এই যে ভরসার জায়গা সৃষ্টি হয়, এটাই সাংবাদিকের কাজ করার অনুপ্রেরণা।
খবরের জন্য কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই সাংবাদিকরা বেঁচে থাকার নানা কৌশল শেখেন। তারা যেমন ক্ষমতার দ্বন্দ্বের গল্প বলেন, তেমনি বলেন ক্ষমা, কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা কিংবা উদারতার গল্পও।
এক সাংবাদিক যেমন বললেন, কাজ করতে গিয়ে পাওয়া কিছু গল্প অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই পেশায় থাকতে হলে আপনাকে উদারমনা ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হলে আপনাকে জানতে হবে যে কারা আপনাকে দেখছে বা শুনছে। অর্থাৎ যাদের জন্য আপনি লিখছেন, তাদের সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে।
সাংবাদিকের আনন্দ শুধু কাজের মধ্যেই নয়, কর্মক্ষেত্রেও। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের এক ধরনের চমৎকার সম্পর্ক থাকে। এতে যেমন আনন্দ ভাগ নেওয়া যায়, তেমনি কঠিন কোনো প্রতিবেদন তৈরির সময় মানসিক সহায়তাও পাওয়া যায়।
এক ক্রীড়া সাংবাদিক জানালেন সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বন্ধনের কথা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সম্পর্কের এই বন্ধনই আমাদের কাজকে আনন্দময় করে তোলে। আমরা খেলা নিয়ে তর্ক করতে পারি। আমাদের একটা চ্যাট গ্রুপ আছে, যেখানে আমরা সব ধরনের খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করি, তারপর নিজেই হয়ত সেসব নিয়ে ঠাট্টায় মেতে উঠি।
অনেক প্রতিবেদন আছে যেগুলো প্রকাশের পর দীর্ঘদিন তার রেশ ধরে রাখে। কিছু গল্প আছে মজাদার, যার কথা মনে করে বহুদিন পরেও সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন। সব গল্পই যে মজাদার হয়, তা নয়। তবে কাজ ভালো লাগলে ভয়ংকরতম প্রতিবেদনের কাজ করেও আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন সাংবাদিকরা।
নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকদের ভয়ংকর এক দিনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হলো সেদিন। শুরুতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পুরো তালিকাও পাওয়া যাচ্ছিল না। বলা হচ্ছিল সন্ত্রাসী হামলায় দুই হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সে অবস্থায় সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কাজটি ছিল চ্যালেঞ্জের। এরপর নিহতদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। এই কাজটি ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর। কিন্তু সেটি সাংবাদিকদের করতে হয়েছে পেশাদারিত্বের সঙ্গে।
সেদিনের বার্তাকক্ষের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করলেন সাংবাদিক জেনি স্কট। তিনি বলেন, আমাদের এক সহকর্মী ওই হামলায় তার কাজিনকে হারিয়েছিলেন। তাকেও নিজের ব্যক্তিগত দুঃখকে একপাশে সরিয়ে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি খেয়াল করলেন, এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজের কষ্টের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি অর্জন করেছেন। নিহতদের স্বজনদের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারছেন।
যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো ঘটনায় মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারার কাজে যারা আনন্দ পান, তারাই দীর্ঘদিন থাকেন এই পেশায়। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরাই তাদের কাজের অনুপ্রেরণা।