বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

নিয়োগপত্রের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা-স্বীকৃতি নিশ্চিতের উদ্যোগ

দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৫ ১৯:১৮

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার ভাসমান বাসিন্দা ৫৩ বছর বয়সী সালেহা বেগম। পেশায় গৃহকর্মী সালেহার নেই পরিবার-পরিজন। কোথাও থাকার বন্দোবস্ত নেই বলে দিনে গৃহশ্রমিকের কাজ শেষে রাতে ঘুমান ফুটপাতে। স্বামী ছেড়ে যাবার পর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন প্রায় ১ যুগ আগে। ১২ বছর ধরে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও কোনো ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য হয়নি সালেহার।

সালেহা বেগম জানান, শুরুতে ঢাকায় এসেই বাসাবাড়ির কাজ পাননি। কয়েক বছর ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করেন। বাসাবাড়িতে গৃহশ্রমিকের কাজ পাওয়ার পর নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হন সালেহা। দেখতে পান এ পেশাতেও আছে প্রতিযোগিতা, তুলনামুলক কম বয়সী তরুণীরাই বেশি কাজ পান। ‍এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সালেহা বেগম খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারছিলেন না। এজন্য দিনে দুই থেকে তিনটি বাড়িতে কাজ করে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

সালেহা বেগম বলেন, ‘যে ট্যাকা কামাই করি, ওইডা দিয়া ঘরভাড়া কইরা থাকন যায় না। একবার একটা বাসায় বান্ধা কামে ধরছিলাম। ওইখানেই থাকতাম। কিন্তু ওই বাসার ম্যাডাম খাবার লইয়া খোঁটা দিত। বাসায় কিছু হারাইলেই আমারে ধরত। লাগে য্যান আমি চোর। তাই এই রাস্তাতেই থাকন ভালা।’

সালেহা বেগমের মতো শুধু আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা নয়, দেশের প্রায় সব গৃহশ্রমিক শারীরিক নির্যাতনসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৫ লাখ গৃহশ্রমিক আছেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এসব গৃহশ্রমিকের প্রায় সবাই প্রতিনিয়ত শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতনে মৃত্যুর খবরও নিয়মিত আসছে সংবাদমাধ্যমে।

২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ৮ তলার বাসা থেকে নিচে পড়ে মারা যায় ১৩ বছর বয়সী গৃহশ্রমিক প্রীতি উরান। সে ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সৈয়দ আশফাক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন জেলে থাকার পর দুজনই জামিনে ছাড়া পান। হত্যা মামলাটি এখন বিচারাধীন।

একই বছরের ২০ অক্টোবর গৃহশ্রমিক নির্যাতনের আরেক ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কল্পনা নামে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে শারিরীক নির্যাতন করে চারটি দাঁত তুলে ফেলেন গৃহকর্ত্রী। কল্পনাকে নির্যাতনের সময় প্রতিনিয়ত গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন তিনি। চিকিৎসা না দেয়ায় কল্পনার শরীরের সেসব জখমে পচনও ধরে। একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কল্পনাকে পরে উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ। আটক করা হয় গৃহকত্রী দিনাত জাহান আদরকে। ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় হওয়া মামলাটিও আদালতে বিচারাধীন।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের জরিপ বলছে, দেশের গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মানসিক, ৬১ শতাংশ মৌখিক, ২১ শতাংশ শারীরিক এবং ৪ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তবে নির্যাতিতদের মধ্যে ৯৫-৯৬ শতাংশই কোনো অভিযোগ বা আইনি ব্যবস্থা নেন না। বরং তারা নির্যাতনকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেন। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার- ওসিসির তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার মধ্যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিককে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে।

ঢাকার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসি সেন্টারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার রিনকি বলেন, ’আমরা গৃহশ্রমিকদের কিছু মামলা পাই ধর্ষণ সংক্রান্ত। আবার এ মামলাগুলো চালিয়ে নেয়াটাও বেশ চ্যালেঞ্জের, কারণ অধিকাংশ সময় ভিকটিমের পরিবার আপস করে ফেলে। এজন্য বিচারের কোনো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা যায় না।’

একই ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছে পুলিশও। ডিএমপির মোহম্মদপুর জোনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গৃহকর্মীদের নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভিকটিম বা তার ফ্যামিলি টাকার বিনিময়ে আপস করে ফেলে। তারা নিজেরা মামলা করতেই চায় না্ আবার আমরা নিজেরাই মামলা করলেও ভিকটিমের সাপোর্ট পাই না। তদন্তে গেলে ভিকটিম প্রথমে এক রকম বর্ণনা দেন, পরে আবার তা পাল্টে ফেলে। আদালতে গিয়েও তাদের বক্তব্য পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। ফলে তদন্ত বেশ জটিল হয়ে পড়ে। উল্টো অভিযোগ উঠে পুলিশ টাকা খেয়ে বিবাদির পক্ষে কাজ করছে।’

অন্যদিকে গৃহশ্রমিক পরিচয়ে বাসাবাড়িতে অপরাধ ঘটানোর অভিযোগও রয়েছে। গৃহশ্রমিকের সম্পৃক্ততায় নিয়োগদাতার বাসায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। এমনকি হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের খবরও এসেছে বেশ কয়েকবার।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গৃহশ্রমিকদের বৈধ নিয়োগপত্র দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আর্থিক সহযোগিতায় নাগরিক সংগঠনের অংশগ্রহণে জনপরিসর সম্প্রসারণ ও সুশাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এক্সপ্যান্ডিং সিভিক স্পেস থ্রু অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেন গভার্নেন্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ- ইসিসেপ) নামে চলছে একটি প্রকল্প। নারী গৃহশ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, তাদের জন্য সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শোষণ ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি বাড়াতে সম্মিলিতভাবে প্রকল্পটি পরিচালনা করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এর আওতায় ‘নারী মৈত্রী’ নামের একটি সংগঠন গৃহশ্রমে নিয়োগপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গৃহশ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের মাঝে প্রচার চালাচ্ছে। এরই মধ্যে পাঁচজন নারী গৃহশ্রমিক নিয়োগপত্র পেয়ে উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। নিয়োগপত্রটি এমনভাবে তৈরি যেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রতি মাসের বেতন যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেটি সম্ভব না হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দিতে নিয়োগদাতাদের উৎসাহিত করছে সংগঠনটি।

আমরাই পারি জোটের এই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মোহম্মদপুর, কল্যাণপুর এবং শের-ই-বাংলা নগর এলাকার সাড়ে তিন হাজার এবং কামরাঙ্গীরচর এলাকায় আড়াই হাজার গৃহশ্রমিককে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করেছে নারী মৈত্রী ও সহায়ক দুটি সংস্থা। অন্তত এক লাখ মানুষের মাঝে গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও নির্যাতনরোধের পদক্ষেপ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চায় সংগঠনগুলো। পাশাপাশি গৃহশ্রমিকদের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেইনও পরিচালনা করা হচ্ছে। এর আওতায় গৃহশ্রমিকদের গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ শেখানোর পাশাপাশি ঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্র যেমন ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ইলেক্ট্রিক চুলা, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য হল গৃহশ্রমিকদের মধ্যে একতা তৈরি করা এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। এই উদ্দেশ্যটিকেই প্রকল্পটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করছেন নারী মৈত্রীর ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় আমরা গৃহশ্রমিকদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছি। ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে তাদের মধ্যে একজনকে লিডার হিসেবে তৈরি করা এবং কোনো গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে কখন কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কীভাবে থানায় অভিযোগ করতে হবে সবকিছুই আমরা ধাপে ধাপে শেখানোর চেষ্টা করছি। এমনকি স্থানীয় থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই লিডারদের আমরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এতে করে সহিংসতার শিকার হলে গৃহশ্রমিকেরা আইনি ব্যবস্থা নিতে উৎসাহী হবেন।’

রাজধানীর একাধিক এলাকার গৃহশ্রমিক এবং নিয়োগদাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের একটি বড় অংশই নিয়োগপত্রের বিধান সম্পর্কে জানেন না, আবার আরেকটি বড় অংশের কাছে বিষয়টি জটিল মনে হয়। রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা লুবনা হোসেন বলেন, ‘বাসার বুয়ার জন্য স্ট্যাম্পে লিখে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার দিতে হবে এটা তো আজকেই প্রথম শুনলাম। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং, তবে এভাবে কতটুকু সুরক্ষা পাওয়া যাবে সেটা এপ্লাই করার আগ পর্যন্ত তো বোঝা যাবে না।

‘আমার মনে হয় এটা জটিল প্রক্রিয়া। অবশ্য সরকার নিয়ম করে দিলে হয়ত আমরা বাধ্য হয়ে অভ্যস্ত হব। কিন্তু আমাকে যদি বলেন, তাহলে আমি নিয়োগপত্রের ঝামেলায় যেতে চাই না। কারণ বুয়াদের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আজকে ইচ্ছা হলে কাল থেকে আর কাজে আসে না। এমন বাস্তবতায় আমাদের কোনো মাসে দুই থেকে তিনজন বুয়াকে কাজে রাখতে হয়। সেক্ষেতে মাসে দুই-তিনটা করে নিয়োগপত্র দিতে হবে।‘

ধানমন্ডি এলাকায় ৯ বছর ধরে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন রিজিয়া পারভীন। তিনি তার কর্মদক্ষতার জন্য নিয়োগদাতাদের কাছে বেশ সুপরিচিত। তবে রিজিয়া পারভীনও নিয়োগপত্রের বিষয়টিকে জটিল মনে করেন। তিনি বলেন, ’আমি ঠিক তো ‍দুনিয়া ঠিক। নিজে ঠিক থাকলে কেউ উল্টাপাল্টা করতে পারবে না। এতদিন ধরে ঢাকা শহরে কাজ করি, আজ পর্যন্ত কোনো কাজে অকারণে কামাই দিই নাই, কোনো বাসায় চুরি করি নাই। আমার সাথেও কেউ খারাপ ব্যবহারও করে নাই। যেই বাসায় কোনো বুয়া টেকে না, মালিকের ব্যবহার খারাপ, সেই মালিকও আমারে কখনো একটা ধমকও দিতে পারে নাই। আমার কাজটা আমি ঠিক মতো করি।’

তবে প্রতিবেদক যেসব গৃহশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অধিকাংশই মনে করেন নিয়োগপত্র বিষয়টি পুরোপুরি স্বাক্ষরতার ওপর নির্ভর করে। নিয়োগপত্রের বিষয়গুলো বুঝতে হলে পড়ালেখা জানতে হবে। সেই সঙ্গে দুই পক্ষের জন্যই বাড়াতে হবে প্রচার কার্যক্রম। তাহলে ধীরে ধীরে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকতা পাবে। নিয়োগপত্রের পাশাপাশি এই পেশায় কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, সাপ্তাহিক ছুটি এবং মজুরির বৈষম্য দূর করার দাবিও জানান অনেকে।

আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, ’বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক মানুষ সবসময় বঞ্চিত থাকছে। তবে বাস্তবতা হল মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে বাদ দিয়ে বা পিছনে ফেলে রেখে একটি দেশ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না।‘

গৃহশ্রমিকদের উন্নয়নে নেয়া প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের অধীনে আমরা গৃহশ্রমিকদের একটি ছোট অংশকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছি। কোনো নির্যাতন হলে আইনি ব্যবস্থা কীভাবে নিতে হয় তা জানাচ্ছি। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো তাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য আমরা গাইড করছি, যেন তারা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকতে পারেন। আশা করছি দুই বছর মেয়াদি এই পাইলট প্রকল্পটির ফলাফল দেখে সরকার এবং অন্য দাতা সংস্থাগুলো আরও বড় পরিসরে আমাদের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’


পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের ভাবনা ও কল্পনা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ছিল। ধর্ম ও পুরানে এর সমর্থনে নানা কাহিনি প্রচারিত থাকলেও ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী বা কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব মানুষ এখনো নিজের চোখে দেখেনি। তবে যুগে যুগে মহাবিশ্বে প্রাণের খোঁজে বিজ্ঞানীদের চলছে নিরলস গবেষণা। বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিন দিন উন্নতি এবং মহাকাশ ও গ্রহ-নক্ষত্র ঘিরে এ গবেষণা আরও জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি গবেষণা এ বিষয়ে জুগিয়েছে আশার আলো। পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রহের নাম ‘কে২-১৮বি’। পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ ভারী ও আকারে ২.৬ গুণ বড় এই গ্রহটি নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জানিয়েছেন, গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে তারা শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছেন। তবে বিষয়টি কেবলই প্রাথমিক ধারণার পর্যায়ে আছে জানিয়ে তারা এ বিষয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবিসি বাংলা জানায়, কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। তারা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন যা পৃথিবীতে কেবল সরল বা এক কোষী (উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ব্যাকটেরিয়া) জীবের মাধ্যমেই তৈরি হয়।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো, একইসঙ্গে আগের চেয়েও বেশি আশাব্যঞ্জকভাবে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছে।

তবে এই ফলাফল নিশ্চিত করতে আরও তথ্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছে গবেষণা দলটি, স্বাধীনভাবে কাজ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও একই মত দিয়েছেন।

শিগগিরই নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিজের ল্যাবরেটরিতে তিনি জানান, ‘এটাই এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। বাস্তবে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা এই সংকেত নিশ্চিত করতে পারব।’

আকারের দিক থেকে কে২-১৮বি পৃথিবীর তুলনায় আড়াই গুণ বড়। এটি আমাদের থেকে ৭০০ ট্রিলিয়ন মাইল, অর্থাৎ ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর মানে দাঁড়ায়- কোনো মানুষের পক্ষে সেখানে এক জীবনে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

কিন্তু জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এতটাই শক্তিশালী যে একটি ছোট লাল সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান ওই গ্রহ অতিক্রম করে আসা আলো বিশ্লেষণ করে ওই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করতে পারে।

কেমব্রিজের গবেষক দলটি দেখেছে যে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের দুটি অণুর মধ্যে অন্তত একটির মধ্যে এমন রাসায়নিক চিহ্ন রয়েছে যেগুলো সাধারণত জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত; এই রাসায়নিকগুলো হলো- ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) এবং ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস)।

পৃথিবীতে এই গ্যাসগুলো সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।

একটি পর্যবেক্ষণেই এই গ্যাসের এতটা উপস্থিতি দেখে নিজের বিস্ময়ের কথা জানান অধ্যাপক মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলটিতে যে পরিমাণ গ্যাস আছে বলে আমরা ধারণা করছি, তা পৃথিবীর চেয়ে হাজার গুণ বেশি। ফলে এই গ্যাস যদি আসলেই জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে গ্রহটিতে জীবনের প্রাচুর্য থাকবে।’

আরও এক ধাপ এগিয়ে অধ্যাপক মধুসূদন বলেন, ‘আমরা যদি কে২-১৮বি গ্রহে জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি তার মানে এটাই দাঁড়াবে যে ছায়াপথে জীবন থাকাটাই স্বাভাবিক।’

গত বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে তিনি বলেন, ‘এটা বিজ্ঞানের জন্য এবং একাধারে প্রাণী হিসেবে আমাদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। এমন যদি একটা উদাহরণ মেলে, তাহলে বুঝতে হবে- এই অসীম মহাবিশ্বে আরও অনেক গ্রহেই জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে।’


যুক্তরাজ্যের জাদুঘরে মানুষের চামড়ায় বাঁধানো বইয়ের সন্ধান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।

‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই-ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।

সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে।

সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন -এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে।

সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।

১৮২৮ সালের ১১ আগস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনি।

১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এত দিন চোখে পড়েনি।

সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।

কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি।

কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে।

মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’-এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি।

তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, ‘দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।’

সূত্র: বিডিনিউজ


চাঁদের আদিতম গর্ত, বয়স ৪৩২ কোটি বছর

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আমাদের আকাশে দেখা যাওয়া সবচেয়ে অকৃত্রিম বন্ধু চাঁদ। শৈশবে শিশুদের কপালে চাঁদমামা এসে টিপ দিয়ে যাওয়ার ছড়াকাটা দিন থেকেই চাঁদের সঙ্গে সখ্যতা শুরু হয় মানুষের। পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহটি রাতের বেলা সূর্যর কাছ থেকে ধার করে এনে আমাদের স্নিগ্ধ আলো দেয়।

সে আলোয় আবছাভাবে সবাই দেখতে পান চাঁদের কিছু কালো দাগ। অনেকটা চরকা কাটা বুড়ি মনে হলেও সেগুলো আসলে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে কিছু অতি পুরোনো গর্ত। তবে এটিই সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম গর্ত নয়, চাঁদের যে পিঠটি আমরা দেখতে পাই না সে পাশটিতেই আছে সবচেয়ে বড় ও পুরোনো গর্তটি। তাকে বিজ্ঞানীরা চেনেন ‘সাউথ পোল-এইটকেন (এসপিএ)’ বেসিন নামে। সম্প্রতি এক গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের সবচেয়ে পুরোনো ওই গর্তটির বয়স ৪৩২ কোটি বছর।

পৃথিবী থেকে আমরা সব সময় চাঁদের যে পাশটি দেখি, বিশাল এই গর্তটি তার উল্টা পাশে অবস্থিত। আর এর ব্যাপ্তি দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি। এটি সম্ভবত বড় কোনো গ্রহাণু আছড়ে পড়ায় তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটিতে চাঁদের প্রাথমিক ইতিহাসের দিকে আলোকপাত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে এর পৃষ্ঠে বিভিন্ন গর্তের আকৃতি কীভাবে তৈরি হলো, সে বিষয়ে নতুন তথ্য মিলেছে।

শত শত কোটি বছর ধরে পৃথিবীর মতো চাঁদেও অসংখ্য গ্রহাণু ও ধূমকেতু আঘাত হেনেছে, যার ফলে এসব ক্রেটার ও বেসিন সৃষ্টি হয়েছে।

তবে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বুঝে উঠতে পারেননি, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাতের ঘটনাগুলো আসলে কখন ঘটেছিল।

চাঁদ থেকে আসা এক উল্কাপিণ্ড নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সম্প্রতি গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা এসপিএ বেসিনের আসল বয়স চিহ্নিত করতে পেরেছেন।

এই গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার’-এর বিজ্ঞানীরা, যেখানে তারা ‘নর্থওয়েস্ট আফ্রিকা ২৯৯৫’ নামের এক উল্কাপিণ্ড বিশ্লেষণ করেছেন। ২০০৫ সালে এর খোঁজ মিলেছিল আলজেরিয়ায়।

এ উল্কাপিণ্ডটি ‘রেগোলিথ ব্রেসিয়া’ নামেও পরিচিত, যা বিভিন্ন এমন ধরনের পাথর থেকে তৈরি, যেগুলো এক সময় চন্দ্রপৃষ্ঠের অংশ ছিল। এসব পাথর আদিম কোনো আঘাত হানার ঘটনায় সৃষ্ট তাপ এবং চাপের প্রভাবে সমন্বিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।

ওই উল্কাপিণ্ডে থাকা ইউরেনিয়াম ও সিসার পরিমাণ পরীক্ষা করে গবেষকরা বলছেন, এসব পাথরের টুকরার বয়স ৪৩২ থেকে ৪৩৩ কোটি বছর।

এর মানে, এসপিএ বেসিন গঠিত হয়েছিল বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়েও প্রায় ১২ কোটি বছর আগে, যখন চাঁদে গ্রহাণু আঘাত হানার তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল।

অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, চাঁদে সবচেয়ে বড় গ্রহাণু বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল ৩৮০ কোটি থেকে ৪২০ কোটি বছর আগে।


বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ডাইনোসরের ডিমের সন্ধ্যান

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২০ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চীনা গবেষকরা পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশে নতুন ধরনের ডাইনোসরের ডিমের ফসিল খুঁজে পেয়েছেন। যার দৈর্ঘ্য মাত্র ২৯ মিলিমিটার। এটি বিশ্বে এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ছোট আকারের ডাইনোসরের ডিম।

তিন বছরের গবেষণার পর, চিয়াংসি জিওলজিক্যাল সার্ভে অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন ইনস্টিটিউট (জেজিএসইআই), চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সেস (উহান) এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ্যা এবং প্যালিওনথ্রোপলজির গবেষকদের নিয়ে গঠিত দলটি ছয়টি ডিমের জীবাশ্মের ডেটিং নিশ্চিত করেছে।

৮০ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষে এই প্রজাতির ডাইনোসর বিচরণ করতো।

অপেক্ষাকৃত সম্পূর্ণ, অনিয়মিতভাবে সাজানো ডিমের জীবাশ্মগুলো ২০২১ সালে কানচোও শহরের কানসিয়ান জেলার মেইলিন টাউনশিপের একটি নির্মাণ সাইটে ভালোভাবে সংরক্ষিত বাসা থেকে পাওয়া গিয়েছিল।

স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ইলেক্ট্রন ব্যাকস্ক্যাটার ডিফ্র্যাকশন ব্যবহার করে, গবেষকদের দল ডিমের খোসাগুলোর মাইক্রোস্ট্রাকচার বিশ্লেষণ করেছেন এবং নির্ধারণ করেছেন যে তাদের আকার এবং মাইক্রোস্ট্রাকচার থেকে বোঝা যায় যে তারা একটি নন-এভিয়ান থেরোপডের অন্তর্গত প্রজাতি। জেজিএসইআই এর প্রধান প্রকৌশলী লোও ফাশেং এ তথ্য জানিয়েছেন।

লোও ফাশেং আরও জানান, সবচেয়ে সম্পূর্ণ ডিমের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য মাত্র ২৯ মিমি, যা ক্ষুদ্রতম ডাইনোসর ডিমের জীবাশ্মের জন্য একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। পূর্বে পরিচিত সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর ডিমের জীবাশ্মটি চীনের চেচিয়াং প্রদেশে পাওয়া গিয়েছিল, যার পরিমাপ প্রায় ৪৫.৫ মিমি X ৪০.৪মিমি X ৩৪.৪মিমি। এই সবশেষ আবিষ্কারটি লেট ক্রিটেসিয়াস থেকে ডাইনোসরের ডিমের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে এবং সে সময়ের মধ্যে থেরোপডগুলোর বিবর্তনের বিষয়ে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

সূত্র: সিএমজি


নোবেলবিজয়ীদের ছবি আঁকেন যিনি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল তার সারা জীবনে করেছিলেন ৩৫৫টি উদ্ভাবন। এর সবচেয়ে আলোচিত উদ্ভাবনটি ছিল ডিনামাইট। অত্যন্ত বিধ্বংসী এ বিস্ফোরকটি যেন সভ্যতার কেবল ক্ষতির কারণ না হয়ে মানব কল্যাণে ব্যবহার তার আঁকুতি ছিল এই বিজ্ঞানীর।

জীবদ্দশায় প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া আলফ্রেড নোবেল ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইলে তার সব সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয়ের নির্দেশনা দিয়ে যান। তার উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে প্রবর্তিত হয় তারই নামে নোবেল পুরস্কার।

প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, সাহিত্য, এবং শান্তি- এই পাঁচটি বিষয়ে অনন্য আবিষ্কার ও সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে এই পাঁচ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতি বিষয়টিও, যদিও এই পুরস্কারের মূল নাম ভেরিজ রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার।

তবে এতদিনে অর্থনীতিও নোবেল পুরস্কার হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।

প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। তবে গত ২০১২ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ীদের চমৎকার প্রতিকৃতিও প্রকাশ করে আসছে নোবেল কমিটি।

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে নোবেলজয়ীদের এত সুন্দর প্রতিকৃতি কে আঁকেন? এসব কি মানুষের আঁকা প্রতিকৃতি নাকি কম্পিউটারের কাজ? নোবেল পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে এই প্রতিকৃতি একজন শিল্পীই ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত আঁকেন।

যিনি এ কাজটি করেন তার নাম নিকলাস এলমেহেদ। তিনি সুইডেনের নাগরিক। দেশটির স্বীকৃত পেশাদার পোট্রেট শিল্পী তিনি।

এলমেহেদ নোবেল কমিটির বিচারকমণ্ডলীর কোনো সদস্য নন। তবে পেশাগত কারণে বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তের পর সবার আগে তিনিই জানতে পারেন নোবেল বিজয়ীদের নাম। পেয়ে যান বিজয়ীদের ছবি।

কিন্তু দীর্ঘ এক যুগের পেশাদার শিল্পী জীবনে কারা বিজয়ী সে বিষয়ে সবসময় মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তিনি। তবে তার গোপন স্টুডিওতে শিল্পীদের ভিজ্যুয়াল পোট্রেট আঁকার কাজ চলে আগে থেকেই। যেদিন আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা হয় বিজয়ীদের, সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা প্রকাশ করে থাকেন তারই আঁকা বিজয়ীদের পোট্রেট।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘পপুলার সায়েন্স’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেলবিজয়ীদের প্রতিকৃতি আঁকার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন নিকলাস এলমেহেদ।

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন থেকে নোবেলবিজয়ীদের ছবির পরিবর্তে চিত্রকর্ম ব্যবহারের আইডিয়া এসেছিল। কারণ বিজয়ীদের অনেকের ছবি তোলা বেশ কঠিন হয়ে যেত। আবার অনেক খুঁজেও তাদের ছবি পাওয়া যেত না। পাওয়া গেলেও সেগুলোর রেজুলেশন থাকত খুবই অল্প।’

নিকলাস এলমেহেদের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাকে নোবেল মিডিয়ার শিল্পনির্দেশক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে নোবেল ঘোষণার সময় সব ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের দায়িত্ব ছিল আমার।’

এখন নোবেল বিজয়ীদের প্রতিকৃতিতে গ্রাফিক্যাল মেকওভার দেখা যায়। এই ধারণা চালু হয় ২০১৭ সালে। সেই সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিকৃতিতে সোনালি রঙ ব্যবহার করা হবে। তাই নিকলাস এলমেহেদ প্রতিকৃতিতে সোনালি রাংতা ব্যবহারের ধারণা আনেন।

গত কয়েক বছর ধরে এলমেহেদের আঁকা ছবি দিয়েই নোবেলবিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তারপর বিশ্বজুড়ে সংবাদ, নিবন্ধ, প্রকাশনা, ম্যাগাজিন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ব্যবহার করা হয়। কারণ এলমেহেদের আঁকা প্রতিকৃতিই নোবেল বিজয়ীদের প্রথম অফিসিয়াল ছবি। তার আঁকা প্রতিকৃতিই আইকনিক হয়ে উঠেছে।

এলমেহেদ বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সোনার রঙ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সোনালি রাংতা নিয়ে গবেষণা করেছি। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, পাতলা ধাতব রাংতা বিশেষ আঠা দিয়ে চিত্রকর্মে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই আইডিয়া সাদা ক্যানভাসে আঁকা কালো রেখার সঙ্গে প্রতিকৃতিকে খুবই সুন্দর করে তোলে।’


সবুজ হয়ে উঠছে অ্যান্টার্কটিকা!

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

তুষারে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকাকে অনেকেই শীতল মরুভূমি আখ্যায়িত করেন। সেখানে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। তবে কয়েক বছর আগে অ্যান্টার্কটিকায় নতুন এক প্রজাতির মসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই মস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ওই অঞ্চলে।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকায় উদ্বেগজনক হারে উদ্ভিদ জন্মে সবুজ হয়ে উঠছে। অঞ্চলটিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে শুকনা মাটিতে মস জন্মাচ্ছে। এসব ঘটনার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে।

অ্যান্টার্কটিকা উপত্যকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকা দ্রুতগতিতে সবুজ হয়ে উঠছে এবং দক্ষিণ আমেরিকা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে।

ইংল্যান্ডের এক্সেটার এবং হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের করা গবেষণা গতকাল শুক্রবার ন্যাচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া উদ্ভিদের বেশির ভাগই মস। গত চার দশকে ১০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানকার সবুজের পরিমাণ।

১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের ০.৪ বর্গমাইলেরও কম জায়গাজুড়ে উদ্ভিদ ছিল। ২০২১ সালে সেখানে পাঁচ স্কয়ার মাইল এলাকায় এটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। গত চার দশকে অ্যান্টার্কটিকা সবুজ হয়েছে দ্রুতগতিতে। তবে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ সবুজ হয়েছে। এখন আরও দ্রুতগতিতে তা সবুজ হয়ে উঠছে।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও পরিবেশবিজ্ঞানী থমাস রোল্যান্ড বলেন, ভূমি থেকে দেখলে এখনো এটিকে বরফে ঢাকা মনে হবে। তবে ১৯৮০ সাল থেকেই সবুজ হওয়া শুরু করেছে এটি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার পরিবর্তন মহাকাশ থেকে ধারণ করা ছবিতে পরিলক্ষিত হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান অ্যান্টার্কটিকা। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্থানটি উষ্ণ হয়ে উঠছে।


শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত হলেন জাতিসংঘের মহাসচিব

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ছবি : সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটির সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ খবর জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি এ বছর নোবেল তালিকায় আরও আছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইউনাইটেড নেশন্স প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজি এজেন্সি (আনরোয়া) এবং জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকে (আইসিজে)।

সূত্র জানায়, এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২৮৬টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সাবেক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিও সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু পরে উভয়কেই বাদ দেওয়া হয়েছে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নরওয়ের নোবেল কমিটির জন্য কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ৫০টির বেশি সশস্ত্র সংঘাত চলছে। গত দুই দশকে এসব সশস্ত্র সংঘাতে প্রাণহানি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।

কেউ কেউ মনে করছিলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হয়ত এ বছর কেউ শান্তি পুরস্কার পাবেন না। তবে সেসব আশঙ্কাকে পেছনে রেখে ২০২৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিজয়ীদের মনোনীত করা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্রটি।

নরওয়ের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে, সুদান গত দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও হামাস একে অপরকে ধ্বংসের লক্ষ্যে প্রায় এক বছর ধরে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছে।

এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহিংসতা এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য যারা বা যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, নোবেল কমিটি এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারবিষয়ক ইতিহাসবিদ অ্যাশলে সেভিনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে যে বৈশ্বিক আইনের শাসন চালু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। সে হিসেবে পুরস্কারের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং আইসিজের মধ্যে।

অ্যাশলে সেভিন রয়টার্সকে বলেন, এই মুহূর্তে আন্তোনিও গুতেরেস হচ্ছেন জাতিসংঘের শীর্ষ প্রতীক। অন্যদিকে, মানবিক ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত সব আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা এবং সেগুলো প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘের আদালত আইসিজে।

আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ঘোষিত হবে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। আর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা শুরু হবে ১১ অক্টোবর। প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি— এই ছয়টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। শান্তি ব্যতীত বাকি ৫টি খাতে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এবং প্রদানের ব্যাপারটি দেখভাল করে সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি; আর শান্তিতে নোবেলের প্রার্থী মনোনয়ন ও পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।


সাংবাদিকতা পেশার অনুপ্রেরণা কী, জানা গেল গবেষণায়

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:০৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কী কারণে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা ছাড়তে পারেন না কিংবা কী কারণে তারা বছরের পর বছর লেগে থাকেন এই পেশাতে তারই উত্তর মিলেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। চিলির পন্টিফিশাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ভালপারাসিসোর অধ্যাপক ড. ক্লডিয়া মেলাডো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডার সাংবাদিকতার শিক্ষক গ্রেগরি পেরাল্টের গবেষণায় উঠে এসেছে এর উত্তর।

গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন বিষয়টি সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে আনন্দ দেয়। সাংবাদিকদের পেশা ছাড়ার কারণ খতিয়ে দেখার চেয়ে গবেষকরা দেখতে চেষ্টা করেছেন, কোন কোন বিষয় সাংবাদিকদের পেশায় টিকে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে সেগুলো। গবেষণার একটি সারাংশ প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম নিম্যানল্যাবের ওয়েবসাইটে।

সেখানে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ম্যানিলাভিত্তিক প্রতিবেদক রেজিন কাবাটোর একটি মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। রেজিন জানিয়েছেন, তার জন্য সাংবাদিকতা আনন্দের। কারণ এই মাধ্যমে তিনি রোজ নতুন নতুন গল্প তার দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। সাংবাদিকতার শক্তি ও এই পেশাকে ভালোবাসার কারণের কথা জানিয়েছেন রেজিন।

কারাগারে বন্দি কয়েদিদের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে একবার তিনি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। রেজিন চেয়েছিলেন, ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষ জানুক পুনর্বাসনমূলক বিচার প্রক্রিয়ার উপকারী দিকের কথা।

পরে সরকারের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছিলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বন্দিদের আঁকা ছবির বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তার মানে কারাগারে থেকেও ছবি বিক্রির অর্থ দিয়ে বন্দিরা তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারছিলেন।

এই যে সাধারণভাবে বলা একটি গল্প কিছু মানুষের জীবনে দারুণ সুযোগ বয়ে আনে, কারো কারো জীবন বদলে দেয়, এটাই রেজিনের মতো হাজারো সাংবাদিককে আনন্দ দেয়। খারাপ দিনেও শক্তি জোগায়।

গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ২০ জন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতার কথা।

জানা গেল, এই সাংবাদিকরা পাঠক ও দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে সত্যিকারের মানসিক সংযোগ গড়ে তোলার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান। দর্শক-পাঠকরা সাংবাদিকদের যে পরিমাণ বিশ্বাস করেন, তার মর্যাদা রাখার ব্যাপারে সবসময় সচেষ্ট থাকেন তারা।

যেমন এক সাংবাদিক বলেছেন, কেউ হয়ত খুব বিশ্বাস করে আমাকে তার জীবনের গল্প বলেছেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে আমি সেটা বুঝতে পেরেছি এবং বাকিদের কাছেও তা সঠিকভাবেই পৌঁছে দেবো। এই যে ভরসার জায়গা সৃষ্টি হয়, এটাই সাংবাদিকের কাজ করার অনুপ্রেরণা।

খবরের জন্য কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই সাংবাদিকরা বেঁচে থাকার নানা কৌশল শেখেন। তারা যেমন ক্ষমতার দ্বন্দ্বের গল্প বলেন, তেমনি বলেন ক্ষমা, কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা কিংবা উদারতার গল্পও।

এক সাংবাদিক যেমন বললেন, কাজ করতে গিয়ে পাওয়া কিছু গল্প অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই পেশায় থাকতে হলে আপনাকে উদারমনা ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হলে আপনাকে জানতে হবে যে কারা আপনাকে দেখছে বা শুনছে। অর্থাৎ যাদের জন্য আপনি লিখছেন, তাদের সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে।

সাংবাদিকের আনন্দ শুধু কাজের মধ্যেই নয়, কর্মক্ষেত্রেও। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের এক ধরনের চমৎকার সম্পর্ক থাকে। এতে যেমন আনন্দ ভাগ নেওয়া যায়, তেমনি কঠিন কোনো প্রতিবেদন তৈরির সময় মানসিক সহায়তাও পাওয়া যায়।

এক ক্রীড়া সাংবাদিক জানালেন সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বন্ধনের কথা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সম্পর্কের এই বন্ধনই আমাদের কাজকে আনন্দময় করে তোলে। আমরা খেলা নিয়ে তর্ক করতে পারি। আমাদের একটা চ্যাট গ্রুপ আছে, যেখানে আমরা সব ধরনের খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করি, তারপর নিজেই হয়ত সেসব নিয়ে ঠাট্টায় মেতে উঠি।

অনেক প্রতিবেদন আছে যেগুলো প্রকাশের পর দীর্ঘদিন তার রেশ ধরে রাখে। কিছু গল্প আছে মজাদার, যার কথা মনে করে বহুদিন পরেও সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন। সব গল্পই যে মজাদার হয়, তা নয়। তবে কাজ ভালো লাগলে ভয়ংকরতম প্রতিবেদনের কাজ করেও আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন সাংবাদিকরা।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকদের ভয়ংকর এক দিনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হলো সেদিন। শুরুতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পুরো তালিকাও পাওয়া যাচ্ছিল না। বলা হচ্ছিল সন্ত্রাসী হামলায় দুই হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সে অবস্থায় সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কাজটি ছিল চ্যালেঞ্জের। এরপর নিহতদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। এই কাজটি ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর। কিন্তু সেটি সাংবাদিকদের করতে হয়েছে পেশাদারিত্বের সঙ্গে।

সেদিনের বার্তাকক্ষের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করলেন সাংবাদিক জেনি স্কট। তিনি বলেন, আমাদের এক সহকর্মী ওই হামলায় তার কাজিনকে হারিয়েছিলেন। তাকেও নিজের ব্যক্তিগত দুঃখকে একপাশে সরিয়ে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি খেয়াল করলেন, এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজের কষ্টের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি অর্জন করেছেন। নিহতদের স্বজনদের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারছেন।

যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো ঘটনায় মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারার কাজে যারা আনন্দ পান, তারাই দীর্ঘদিন থাকেন এই পেশায়। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরাই তাদের কাজের অনুপ্রেরণা।


অযত্নে পড়ে থাকা পাথরের দাম উঠল ১ মিলিয়ন ডলার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:১৬
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রোমানিয়ার একটি ছোট গ্রামে একাই থাকতেন এক বৃদ্ধা। ডোরস্টপ হিসাবে একটা পাথর ব্যবহার করতেন তিনি। অনেকটা বাদামি রঙের। সেটির মূল্য সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। পাথরটির ওজন ৩.৫ কিলোগ্রাম (৭.৭ পাউন্ড)। সেটা আসলে অ্যাম্বার নাগেট। আনুমানিক মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল পাইস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুজাউ-এর আঞ্চলিক জাদুঘরের ডিরেক্টর ড্যানিয়েল কস্তাচে প্রথম পরীক্ষা করে দেখেন অ্যাম্বার নাগেটটি। এটাই এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া সবচেয়ে বৃহত্তম নাগেট। এটি পাঠানো হয় পোল্যান্ডের ক্রকোতে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, নাগেটটি ৭০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো।

নদীর ধার থেকে অ্যাম্বার নাগেটটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বৃদ্ধা। তারপর থেকে ডোরস্টপ হিসাবে ব্যবহার করতেন। ১৯৯১ সালে মৃত্যু হয় তার। পাথরটি অন্যরকমের দেখতে হওয়ায় বৃদ্ধার আত্মীয়দের সন্দেহ হয়েছিল। তারা যত্ন করে রেখে দেন। সম্প্রতি রোমানিয়ান সরকারের কাছে নাগেটটি বিক্রি করার কথা ভেবেছিলেন বৃদ্ধার আত্মীয়। তখনই আসল ঘটনা সামনে আসে।

ড্যানিয়েল কস্তাচে বলেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই, নৃতাত্ত্বিক দিক থেকেও এই আবিষ্কারের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

ওই নারীর আত্মীয়রা জানান, বাড়িতে একবার চোর ঢুকেছিল। তারাও পাথরটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কয়েক গাছা স্বর্ণ নিয়েই চম্পট দেয়। পুরো বিশ্বের মধ্যে রোমানিয়াতেই সবচেয়ে বেশি অ্যাম্বার পাওয়া যায়। বিশেষ করে বুজাউ কাউন্টিতে।

ভূতাত্ত্বিক অস্কার হেলমের নাম দিয়েছেন, ‘বুজাউ অ্যাম্বার’। এই অঞ্চল থেকে এর আগেও বহু মূল্যবান অ্যাম্বার পাওয়া গিয়েছে। এক সময় এখানে স্ট্র্যাম্বা অ্যাম্বারের খনি ছিল। বিপুল দামে বিক্রি হতো। পরবর্তীকালে দাম পড়ে যায়। রোমানিয়ার সরকারও খনি বন্ধ করে দেয়।

সূত্র : সায়েন্স এলার্ট


বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর ২০২৪

প্রতীকী ছীব
আপডেটেড ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৭:১২
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে লেখা রইল ২০২৪ সাল। চলতি বছরই জুন থেকে আগস্ট মাসে রেকর্ড উষ্ণতা দেখেছে বিশ্ব। এসময় বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইতিহাসে এর আগে কখনও তাপমাত্রা এই পর্যায়ে পৌঁছয়নি।

আজ শুক্রবার ইউরোপের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক সামান্থা বার্গেস এক বিবৃতিতে বলেন, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে শীতকাল। এর আগে কখনও উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের জেরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এই পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। মানুষের জানা ইতিহাস অনুসারে ২০২৪ সালটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, প্রাক-শিল্পায়ন যুগে (অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে) বিশ্বের যে গড় তাপমাত্রা ছিল, বর্তমানের গড় তাপমাত্রা তার চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে এবং এটি ঘটেছে এই ২০২৪ সালে।

তবে গত জুন থেকে আগস্ট বিশ্বের সব জায়গায় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটেনি। কোপার্নিকাসের প্রতিবেদন অনুসারে আলাস্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, পাকিস্তান এবং উত্তর আফ্রিকার সাহেল মরুভূমি এলাকায় চলতি বছরের গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ছিল সেসব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম।

অবার অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, চীনের কিছু অংশ, জাপান এবং স্পেন রেকর্ড গরম দেখেছে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ায় শীতকাল চলছিল। ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে গরম বেড়েছে সাগরেও। কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট মাসে সাগরপৃষ্ঠের গড় উষ্ণতা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রেকর্ড উষ্ণতার জেরে খরা, দাবানল, ঝড়, অতিবর্ষণ, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। একদিকে মেক্সিকো ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল গত তিন মাসে খরা এবং দাবানলের মতো দুর্যোগ দেখেছে, অন্যদিকে রাশিয়া, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতের কিছু অংশে দেখা দিয়েছে অতিবর্ষণ, বন্যা, ভূমিধসের মতো দুর্যোগ।

মানবসৃষ্টি কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে বর্তমানের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সামান্থা বার্গেস।


লটারিতে ৪৮ কোটি টাকা জিতলেন প্রবাসী বাংলাদেশি

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) লটারিতে দেড় কোটি দিরহাম জিতেছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। বাংলাদেশের হিসাবে এই অর্থ ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি। আজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ‘বিগ টিকিট আবুধাবি’ নামে ওই লটারির জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশি ওই প্রবাসীর নাম শামশু মিয়া। তিনি ইউএইর আল-আইন শহরের বাসিন্দা। তার কেনা লটারির টিকিটের নম্বর ২০১৯১৮। এই টিকিট পুরস্কার জেতার পর অনুষ্ঠান থেকে শামশু মিয়াকে ফোন দেন উপস্থাপকরা। খুশির এ খবর শুনে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন তিনি। শামশু ছাড়াও আরও ১০ জন এই লটারিতে ১ লাখ দিরহাম করে পুরস্কার জিতেছেন।

এর আগে গত মাসে বিগ টিকিট আবুধাবি লটারিতে প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন তুষার দেশকার নামের এক ব্যক্তি। এ মাসের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিজয়ীকে নির্বাচিত করার সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। তার হাতেই ওঠে শামশু মিয়ার টিকিটের নম্বরটি।

এদিকে এরই মধ্যে আগামী মাসের জন্য লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিগ টিকিট আবুধাবি। এবারের প্রথম পুরস্কার ২ কোটি দিরহাম। এ ছাড়া ১০ জন পাবেন ১ লাখ দিরহাম করে। সঙ্গে থাকবে ৪ লাখ দিরহাম দামের বিলাসবহুল একটি করে গাড়ি। আগামী ৩ অক্টোবর ওই লটারির পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।


স্কাইডাইভ দিয়ে ১০২ বছরের নারীর রেকর্ড

স্কাইডাইভ দেওয়ার আগের মুহূর্তে মেনেত্তে বেইলি। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:১৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

স্কাইডাইভ অর্থাৎ উড়োজাহাজ থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেওয়াটা মোটেই সহজ কাজ নয়। এর জন্য প্রচণ্ড সাহসী হতে হবে। তারপরও অনেক রোমাঞ্চপ্রেমীর খুব পছন্দের কাজ এটি। তাই বলে ১০২ বছরের কোনো নারী এই কাজ করবে তা অনেকটাই অবিশ্বাস্য। সত্যি এমন একটি কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের মেনেত্তে বেইলি।

এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক স্কাইডাইভারের খেতাবটা নিজের দখলে নিয়ে নিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এই নারী। মেনেত্তে থাকেন ইংল্যান্ডের সাফোকের বেনহিলে। আর তিনি উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ার দুঃসাহসী কর্মটি সারেন ইস্ট এংলিয়ার আকাশ থেকে। এটি ছিল তার প্রথম প্যারাসুট জাম্প। ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের জন্য গত রোববার বেকলস এয়ারফিল্ডে স্বাইডাইভিংটি করেন তিনি। অবশ্য তার জন্মদিন আজ বুধবার।

বেইলি লাফ দেওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অবশ্যই নতুন কিছুর খোঁজ করতে হবে।’ তবে সফলভাবে লাফটি সম্পন্ন করার পর তিনি বিবিসি রেডিওকে বলেন, ‘লাফের অভিজ্ঞতাটি বেশ ভীতিকর ছিল। আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমি খুব শক্তভাবে আমার চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। আমি শুধু চাই যারা ৮০ কিংবা ৯০ বছরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা যেন কিছু ছেড়ে না দেয়। সবকিছু চালিয়ে যায়।’

স্কাইডাইভে বেইলির সঙ্গী ছিলেন ইউকে প্যারাশুটিংয়ের সদস্য ক্যালাম কেনেডি। তিনি বলেন, ‘মেনেত্তে পুরো লাফটিতে শসার মতো শীতল ছিলেন। তিনি এতটাই শান্ত ছিলেন যে, আমি নার্ভাস হতে শুরু করি।’

শতবর্ষী এই নারী বিয়ে করেছিলেন একজন প্যারাট্রুপারকে। মেনেত্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উইমেনস রয়্যাল নেভাল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন। তিনি এখন বেনহেল গ্রামের কমিউনিটি সেন্টার, মোটর নিউরন ডিজিজ অ্যাসোসিয়েশন এবং ইস্ট এংলিয়ান এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন। এখন পর্যন্ত টার্গেট ৩০ হাজার পাউন্ডের মধ্যে ১০ হাজারের কিছু বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

অবশ্য মেনেত্তের জন্য এ ধরনের রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। স্কাই নিউজ জানিয়েছে, এখনো নিয়মিত গাড়ি চালানো এই নারী ১০০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন সিলভারস্টোন রেসকোর্সে ১৩০ মাইল বেগে একটি ফেরারি রেসিং কার চালিয়ে।


বতসোয়ানায় মিলল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

একখণ্ড হীরার ওজন ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেট! অবাক হলেও ঘটনাটি সত্যি। আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানা প্রজাতন্ত্রের একটি খনিতে পাওয়া গেছে এমন দুর্লভ হীরক খণ্ড। এটি বিশ্বে এখন পর্যন্ত পাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরার টুকরা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার কানাডিয়ান ফার্ম লুকারা ডায়মন্ডের মালিকানাধীন একটি খনিতে হীরাটির খণ্ডটি পাওয়া যায়।

লুকারা ডায়মন্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বতসোয়ানার উত্তর-পূর্বের কারোওয়ে খনিতে এক্সরে শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হীরাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় অমসৃণ হীরার টুকরোগুলোর একটি বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। তবে হীরাটির আনুমানিক বাজার মূল্য নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি লুকারা ডায়মন্ড।

ক্যারেট বিবেচনায় এটি ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত ৩ হাজার ১০৬ ক্যারেটের কুলিনান ডায়মন্ডের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। লুকারার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ল্যাম্ব বলেন, আমরা এ অসাধারণ ২ হাজার ৪৯২ ক্যারেটের হীরা আবিষ্কারে আনন্দিত।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বতসোয়ানা বিশ্বের বৃহত্তম হীরা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি।

হীরা উৎপাদন দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। দেশটির জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে হীরা থেকে এবং খনি থেকে পাওয়া ৮০ শতাংশ হীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।


banner close