বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত। সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোর টাউন হল মাঠে স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা জনগণ মেনে নেবে না। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি ফ্যাসিস্টের হাত থেকে। একটা সুযোগ পেয়েছি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার। কোনো মহলের চক্রান্তে আমরা এই সুযোগ বিনষ্ট হতে দিতে পারি না।
এসময় উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেগুলোতে ঐকমত্য হবে সেটা থাকবে, আর যেটা হবে না, সেটা আগামী পার্লামেন্টে চলে যাবে, সেখানে নির্ধারিত হবে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, হঠাৎ করে দেখা গেল যে, এই উপদেষ্টা কমিটি একটা উপদেষ্টা মণ্ডলী সভা করলেন, সভা করার পরে আসিফ নজরুল সাহেব জাতিকে জানালেন, যে বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি, সেগুলো সমাধান করার জন্য আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময় দিচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা তো প্রত্যেকটা সভায় গেছি। প্রত্যেকটা সভায় আমাদের মতামত দিয়েছি। আজকে কেন আবার এই প্রসঙ্গ উঠছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোকে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে! তাহলে আপনারা কী করলেন এত দিন ধরে?
ফখরুল বলেন, আমি আজ পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যে দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ঘেরাও করছে, অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, আবার একটা চক্রান্ত করছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য—এটা এই দেশের জনগণ মেনে নেবে না। আমরা অনেক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে রাস্তায় নামিনি কিন্তু মনে রাখবেন, বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল নয়! বিএনপি এই দেশের জনগণের গড়া একটি দল। শহীদ জিয়াউর রহমানের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল। এই দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করা নেত্রীর দল। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজার মানুষকে হত্যা, এক হাজার ৭০০ মানুষকে গুম করে দেওয়া—সেই অবস্থা থেকে উঠে আসা একটি দল। সুতরাং আমাদেরকে খাটো করে দেখবেন না, অবজ্ঞা করে দেখবেন না। আমরা যদি রাস্তায় নামি, তাহলে কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্নভাবেই আসবে।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দয়া করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। দয়া করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবেন না। দয়া করে দেশের মানুষকে অশান্তিতে ফেলার কোনো ব্যবস্থা করবেন না। আমরা বহু সংগ্রাম-লড়াই করেছি। আপনারা আজকে নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছেন আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য, সেটা এই দেশের মানুষ কিন্তু কোনো মতেই মেনে নেবে না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক, যশোর-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, যশোর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী সাবিরা সুলতানা মুন্নী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি যশোর-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা কমিটির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট মুহম্মদ ইসহক, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নার্গিস বেগম, তরিকুলের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনকি সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৬৬ দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া ১৬টি সংস্থার বিষয়ে দাবি-আপত্তি জানতে চেয়ে ১৫ কার্যদিবস সময় দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে ইসি। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ৭৩টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রাথমিক তালিকা নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৬৬ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ইসি।
ইসি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নিবন্ধিত ৯৬টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫- এর ধারা ১৬ মোতাবেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়েছে।
এর আগে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল ও তৎকালীন ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে নতুন নীতিমালা জারি করে নাসির উদ্দিন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। কিন্তু ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন বিষয়ে বিদ্যমান নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামীতে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধিত করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রথা শুরু করে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিল এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৪ সালে ৩৫টি সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখেছেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৮টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮১টি দেশি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।
সবশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯৬টি নিবন্ধিত সংস্থার মধ্যে ৮০টির মতো সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ পর্যবেক্ষক ভোট দেখেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিনির্মাণ করতে হবে।
আজ ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে তারেক রহমান দেশবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং দেশবাসীর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুধু মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা নয়, এদেশে আধিপত্যবাদ বিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অভ্যুদয়ের সূচনা। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজ স্বার্থে দেশকে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে ঠেলে দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাকে চিরদিনের জন্য ধরে রাখা। সেজন্য একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ৭৫ এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে। জাতির এই গভীর সংকটকালে ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফূরণ ঘটে এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্ত হন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয় এবং গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু আধিপত্যবাদী শক্তির এ দেশীয় এজেন্টরা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনো ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, আবারও চক্রান্তের গোপন পথে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা প্রায় ১৬ বছর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে রাখে। এদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতা-কর্মীদের বিভৎস নির্মমতায় দমন করেছে, আয়নাঘর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দুর্নীতি ও অপশাসনের এক ভয়াল রাজত্ব কায়েম করেছিল। ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বহু বছর মুক্তি দেওয়া হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে সুযোগ দিয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন, আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিনির্মাণ করতে হবে। আর সেজন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরী। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।