আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’অ্যাপের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার নিবন্ধন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট তথ্যানুযায়ী, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে ৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬১ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন বলে জানা যায়।
নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯১ জন পুরুষ ভোটার এবং ১৭ হাজার ৫৭০ জন নারী ভোটার।
দেশভিত্তিক নিবন্ধনের মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরবে ২১ হাজার ৫১৬ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ৬৭৩ জন, সিঙ্গাপুরে ৯ হাজার ৮৩৯ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯ হাজার ৪২০ জন, যুক্তরাজ্যে ৮ হাজার ৯৬৭ জন, কানাডায় ৮ হাজার ৮৯৪ জন, মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ৭৪২ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৭ হাজার ৬৩৮ জন, জাপানে ৬ হাজার ৮৫১ জন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ হাজার ৩৯৪ জন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিশ্বের সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, ‘আউট অফ কান্ট্রি ভোটিং এর ব্যাপারে আমরা বলেছিলাম ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা। ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী আমরা ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। কারণ, অনেকে প্রবাসীরা বলেছেন সময় বাড়ালে ভালো হতো। আমরাও দেখলাম সময় বাড়ানোর সুযোগ আছে, তাই সময় বাড়ানো হল। এখন সারা বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকেই আমাদের এই অ্যাপ ডাউনলোড করে যে কেউ ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন ।’
ইসি সচিব আরও জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার এবং নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং (আইসিপিভি) প্রক্রিয়া চালু করা হবে। আইসিপিভি ইনকান্ট্রি পোস্টাল ভোটের বিষয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিন মেয়াদে আমরা নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা চালু করব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত ১৮ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৪৮টি নির্দিষ্ট দেশে ভোটার নিবন্ধনের সময়সূচি ঘোষণা করেন।
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের জন্য প্রবাসী ভোটারকে অবশ্যই যেখান থেকে ভোট দেবেন সে দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে।
নিবন্ধনের জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে।
ব্যবহারকারী বাংলা বা ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করে অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্দেশনাবলী দেখতে পারবেন। বিদেশে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক ঠিকানা প্রদান অপরিহার্য।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে এখন পুরো ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এই নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। সে ক্ষেত্রে আগামী ৭ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সামনে রেখেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমন্বিত নিরাপত্তাসহ নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার বিষয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ফলে রাজনীতির মাঠেও নির্বাচনী পরিবেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০ অক্টোবর ইসিতে প্রথম বৈঠক হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এমএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। চলতি মাসে আরেকবার এ ধরনের বৈঠক হওয়ার কথা আছে।
এদিকে, ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ রোববার এবং ১২ তারিখ বৃহস্পতিবার। সে হিসেবে মঙ্গলবারের (১০ ফেব্রুয়ারি) দিকে সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট কবে নাগাদ হবে—এ প্রশ্নের জবাবে ইসি আনোয়ারুল বলেন, ফেব্রুয়ারির সেকেন্ড উইক। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলেও অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন পরে কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুদিন আগেও হতে পারে। অর্থাৎ মাঝামাঝি কোনো সময় হতে পারে।
এদিকে, তফসিল ঘোষণা ও ভোটের তারিখ নিয়ে আগামী রোববার কমিশন সভা হবে। সেখানেই সব তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে দু-তিন দিন সময় রেখে বা বৃহস্পতিবারের দিকে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
ভোটগ্রহণের সময়ও বাড়ানোর কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যেহেতু সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একদিনে হবে, তাই গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভোটের সময়ও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হতে পারে। এজন্য সকাল-বিকেলে দুদিকেই সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
ইসি আনোয়ারুল আরও বলেন, এখন সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, সেটা এগিয়ে সাড়ে ৭টা হতে পারে। আবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে, সেটা বাড়িয়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এর আগে কমিশনের প্রথম বৈঠকে ২২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নাশকতা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকা, জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট করতে গেলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা এবং বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকা।
এছাড়া নির্বাচনপূর্ব কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সে ক্ষেত্রে বাহিনীগুলোকে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া, নির্বাচন কার্যালয় ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা।
এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের সুযোগ পাবেন। তফসিলের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হবে। ফলে নির্বাচন নিয়ে সব শঙ্কাও কেটে যাচ্ছে।
এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতিতে ‘সন্তোষ প্রকাশ করেছেন’ ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে এ নির্বাচন একটি বড় সুযোগ। সংসদ ও গণভোট পরিচালনার লক্ষ্যে ইসির একটি মহড়াও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির দেখে আমি অভিভূত। সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে তা করা হয়েছে।
এবারের ভোটে ইইউয়ের বড় একটি প্রতিনিধি দল পর্যবেক্ষণে থাকছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন মিলার। বৈঠকে সিইসি জানিয়েছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এবং ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইসির সক্ষমতা ও অঙ্গীকারের বিষয়টি তুলে ধরেন মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার ও পেশাদারত্ব এবং ভোট পরিচালনার সক্ষমতা দেখতে পেয়েছি। ২০২৬ সালে বিশ্বের বড় একটি নির্বাচন হচ্ছে বাংলাদেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবারের নির্বাচনে একটি খুব বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন নিয়োজিত রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সুষ্ঠু ভোটে ইইউর সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে মিলার বলেন, এবারের ভোটে নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে ইইউ। এ ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ইইউয়ের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান থাকায় নিজ নামসহ সাতটি বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন আপাতত বিবেচনা করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থগিত থাকা সাতটি বিষয় হলো নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, পেশা, জন্মতারিখ, ভোটারের ঠিকানা ও ছবি।
সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিংকালে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এনআইডি সংশোধনের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কারণে এই সাতটি বিষয়ে এখন কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ এগুলো পরিবর্তন হলে ভোটার তালিকায় প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়গুলো পুনরায় উন্মুক্ত করা হবে এবং তখন সংশোধনের আবেদন বিবেচনা করা হবে।
সচিব জানান, স্বামী বা স্ত্রীর নাম, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতার ধরণ, ভোটার ঠিকানা ছাড়া অন্যান্য ঠিকানা, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে স্থগিত থাকা সাতটি বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো সংশোধন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে এবং এতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নতুন ভোটার নিবন্ধনও চলমান থাকবে।
এর আগে, গত ২৪ নভেম্বর ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এস এম হুমায়ুন কবীর বাসসকে জানিয়েছিলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রিন্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ভোটার এলাকা স্থানান্তর বা মাইগ্রেশন কার্যক্রমও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে সংশোধনের যেসব আবেদন আসবে, সেগুলো প্রসেস করা হবে, তবে ফল বা অনুমোদন এখন দেওয়া হবে না। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ফল প্রকাশ করা হবে। ২৪ নভেম্বর বিকেল ৪টার আগে যেগুলোর ফল প্রস্তুত হয়েছে, সেগুলোই আবেদনকারীরা পেয়ে যাবেন।
এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব এই সিগন্যাল পাবে যে দেশ আসলে স্থিতিশীল হবে কি না; দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রানজিশনটা ‘পিসফুল ওয়ে’তে হচ্ছে কি না। আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে পিসফুলি এই ট্রানজিশনটা ঘটানো। যদি আমরা এটা পিসফুলি করতে না পারি অস্থীতিশীলতা কিন্তু থেকে যাবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনীতি সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অনেকে শিক্ষা খাতের সংস্কারের কথা বলছেন এবং আমি এটার সাথে একমত। আমি মনে করি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের গত ১৬ বছর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অর্থনৈতিক খাতে আমরা রাতারাতি সেটা পরিবর্তন করতে পারব না। সেটা করার চেষ্টাও করা উচিত না। আমার কাছে মনে হয় না সেটা এক বছর, দেড় বছর বা ১৮ মাসে সম্ভব। এটার জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পেছনে জনগণ এবং বিশেষত তরুণরা যে রাজপথে নেমে এসেছিল... কোন অর্থনৈতিক অনুপ্রেরণা এবং আকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্যের ভিত্তিতে তারা নেমে এসেছিল, আমরা যদি এর অনুসন্ধান করতে পারি এবং সেই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি তাহলে পরবর্তী ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আমাদের যে অর্থনৈতিক সংস্কার, সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পারব।
নাহিদ বলেন, তরুণরা প্রথম বিদ্রোহ করল ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয়ত ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং’ ২৪-এর আন্দোলনটা প্রথমে শুরু হয়েছিল ’১৮ সালের আন্দোলনের স্পৃহায়। সেখানেও মূলত চাকরির আন্দোলন, কর্মসংস্থানের আন্দোলন এবং সেই সময় কোটার একটা সুরাহা করা হয়েছিল এবং ওই বছরই আরেকটি বড় আন্দোলন হয়, যেটাকে আমরা কিশোর বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করি, সেটা হচ্ছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।
তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনটা মূলত হচ্ছে নগর পরিকল্পনার প্রশ্ন। অর্থাৎ আমরা ঢাকা শহরে এবং পুরো দেশে আমাদের মেট্রোপলিটন সিটিগুলোতে যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই মানুষের জীবন-জীবিকাটা কী রকম? আমাদের শহরে বায়ুদূষণ, পরিবেশদূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি এবং কর্মসংস্থানহীনতা, বাসাভাড়া অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই পুরো ইকোনমিক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে কিন্তু ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তকে নিম্নবিত্তকে জীবনযাপন করতে হয়। ফলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনটা ছিল সেই একদম নগর পরিকল্পনার গোড়ার প্রশ্নটা, যেই নগরকে আমরা আমাদের মতো সজ্জিত করতে পারিনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের মধ্যে ভোট দেওয়ার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আসন্ন এই নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী নিবন্ধন ছাড়াল ৮৬ হাজার। নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল শনিবার ইসির ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
এবারই প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে প্রবাসী, আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা এ ব্যবস্থায় ভোট দিতে পারবেন। এজন্য অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। গত ১৯ নভেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে, চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
যেসব দেশে নিবন্ধন চলছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিসর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ইত্যাদি। এসব দেশ থেকে মোট নিবন্ধন করেছেন (সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত) ৮৬ হাজার ১৩২ প্রবাসী।
ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধনকারীদের ঠিকানায় পোস্টাল ব্যালট ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভোটার ভোট দিয়ে ফিরতি খামে তা আবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এক্ষেত্রে ৫০ লাখ প্রবাসী ভোট টানার টার্গেট নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে সংস্থাটি।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মক ভোটিং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হবে। তখন আপনারা তারিখগুলো জানতে পারবেন।’
এসময় মক ভোটিংটার মতো করে একটা ইলেকশন উপহার দিতে এবং এমন স্বচ্ছভাবে ভোট করতে চান বলে জানান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। একইসঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল থাকবে বলেও জানান তিনি।
কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল দেওয়া হবে জানতে চাইলে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘তফসিল হলে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জানতে পারবেন।’
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জাতির কাছে একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়ার ওয়াদা দিয়েছি। মক ভোটিংয়ের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হল, একটা আদর্শ পরিবেশে নির্বাচন দেওয়ার যে ওয়াদা দিয়েছি তা পরীক্ষা করে দেখা যে ভোট কেন্দ্রে কি ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার। ভোটার কি রকম হবে, প্রিসাইডিং অফিসাররা, পোলিং অফিসাররা কেমন করে বসবে, সাংবাদিকদের ভূমিকা কি হতে পারে। এসব যাবতীয় বিষয়াদি আমরা আজকে প্র্যাক্টিক্যালি দেখতে চেয়েছি মক ভোটিং অনুশীলনের মাধ্যমে। এখানে আপনারা দেখেছেন ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করছে। তারপরে স্লিপটা নিয়ে দেখাচ্ছে। পলিং অফিসার ডাক দিচ্ছে। তারপরে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার দিচ্ছে। এরপর প্রাইভেট রুমে ঢুকে ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলছে। এই বিষয়গুলো অনেকেই জানে না।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের যারা নতুন ভোটার, প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন। তারা জীবনে এই ভোট দেখেনি। গত ১৫ বছরের মধ্যে যারা ভোটার হয়েছে, তারা দেখেনি। প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা নাই। এইটার মাধ্যমে একদিকে একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চার হচ্ছে। আর অন্যদিকে বাস্তবসম্মত ভোটের পরিবেশের একটা অভিজ্ঞতা নেওয়া যাচ্ছে। কারণ আমরা সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ভোট শুরু করি এবং চারটায় শেষ করি।’
গণভোট প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও যুক্ত হয়েছে। আমাদেরকে এই গণভোট একসঙ্গে করতে হবে। এটার সঙ্গে আমাদের টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা বিষয় আছে। ৪২ হাজার ৫০০-এর বেশি ভোট কেন্দ্র করেছি। এই আজকের এই মূল্যয়নের ভিত্তিতে আমরা ঠিক করব এই ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা পর্যাপ্ত কি-না। কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ালে হবে, নাকি ভোট কক্ষ বাড়ালে চলবে। একটা ভোট কক্ষ বাড়ানো মানে তিনজন লোক বাড়ে। ভোটের বাক্স বাড়ে, অনেক ধরনের ব্যবস্থাপনা অতিরিক্ত করতে হয়। অতিরিক্ত আয়োজন করতে হলে তা কেমন ধরনের আয়োজন হতে পারে এটার বাস্তব পরীক্ষা আজকে আমরা করছি। আমরা অনুমানের ভিত্তিতে নয় বাস্তবতার ভিত্তিতে অগ্রসর চাই।’
সিইসি বলেন, ‘মোটামুটিভাবে আমাদের প্রস্তুতি আছে। কোন অসুবিধা হবে না। জাতিকে যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা আমরা রক্ষা করব। আমরা সব কিছু এভাবে উন্মুক্তভাবে করতে চাই। আজকের মক ভোটিংয়ের মতো করে আমরা একটা নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
গণভোটের প্রচারের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা গণভোট নিয়ে প্রচারণা এখনো সেভাবে শুরু করিনি। সরকার এবং ইসি মিলে গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। গণভোটের বিষয়গুলো আমাদের প্রচারণার বিশাল অংশজুড়ে থাকবে। প্রচারণাটা যখন শুরু হবে, তখন আপনারা বুঝতে পারবেন যে মানুষ জানল কি জানল না। মাত্র গণভোটের অধ্যাদেশটা হল। আইনটা হল। আইন হওয়া মানে গণভোট করতে ইসিকে অথরাইজ করা।’
তিনি বলেন, ‘গণভোটে অপশন থাকবে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’। রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছে। সরকার আইন করেছে আর আমরা সে আইন অনুযায়ী হ্যাঁ বা না ভোট করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, ‘আপনাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। আপনারাও এই দেশের নাগরিক। আমরা আপনাদেরকেও মূল্যায়ন করি। গণভোটে যেসব বিষয়গুলো থাকবে তা প্রচার করা আপনাদের দায়িত্ব।’
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করছি। সবাই ট্রেনিং করছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করব।’ এছাড়া ধীরে ধীরে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে কমিশনের পক্ষ থেকে আজ একটি বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে গণভোটে উপস্থাপিত প্রশ্ন, সংশ্লিষ্ট সনদ ও সংস্কারের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হবে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-সংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন। ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-এই দু’টি বিকল্পের মধ্যে একটিকে বেছে নেবেন।
গণভোটের প্রশ্নে বলা হবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?” (হ্যাঁ/না)।
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধন করিতে হইলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের অনুমোদন দরকার হইবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পীকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হইয়াছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকিবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে। সূত্র: বাসস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মক ভোটিং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হবে। তখন আপনারা তারিখগুলো জানতে পারবেন।’
মক ভোটিংটার মতো করে একটা ইলেকশন উপহার দিতে এবং এমন স্বচ্ছভাবে ভোট করতে চান বলে জানান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। একইসঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল থাকবে বলেও জানান তিনি।
কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল দেওয়া হবে জানতে চাইলে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘তফসিল হলে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জানতে পারবেন।’
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জাতির কাছে একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়ার ওয়াদা দিয়েছি। মক ভোটিংয়ের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হল, একটা আদর্শ পরিবেশে নির্বাচন দেওয়ার যে ওয়াদা দিয়েছি তা পরীক্ষা করে দেখা যে ভোট কেন্দ্রে কি ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার। ভোটার কি রকম হবে, প্রিজাইডিং অফিসাররা, পোলিং অফিসাররা কেমন করে বসবে, সাংবাদিকদের ভূমিকা কি হতে পারে। এসব যাবতীয় বিষয়াদি আমরা আজকে প্র্যাক্টিক্যালি দেখতে চেয়েছি মক ভোটিং অনুশীলনের মাধ্যমে। এখানে আপনারা দেখেছেন ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করছে। তারপরে স্লিপটা নিয়ে দেখাচ্ছে। পলিং অফিসার ডাক দিচ্ছে। তারপরে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার দিচ্ছে। এরপর প্রাইভেট রুমে ঢুকে ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলছে। এই বিষয়গুলো অনেকেই জানে না।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের যারা নতুন ভোটার, প্রথমবারের মত ভোট দিবেন। তারা জীবনে এই ভোট দেখেনি। গত ১৫ বছরের মধ্যে যারা ভোটার হয়েছে, তারা দেখেনি। প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা নাই। এইটার মাধ্যমে একদিকে একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চার হচ্ছে। আর অন্যদিকে বাস্তবসম্মত ভোটের পরিবেশের একটা অভিজ্ঞতা নেওয়া যাচ্ছে। কারণ আমরা সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ভোট শুরু করি এবং চারটায় শেষ করি।’
গণভোট প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও যুক্ত হয়েছে। আমাদেরকে এই গণভোট একসঙ্গে করতে হবে। এটার সঙ্গে আমাদের টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা বিষয় আছে। ৪২ হাজার ৫০০-এর বেশি ভোট কেন্দ্র করেছি। এই আজকের এই মূল্যয়নের ভিত্তিতে আমরা ঠিক করব এই ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা পর্যাপ্ত কি-না। কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ালে হবে, নাকি ভোট কক্ষ বাড়ালে চলবে। একটা ভোট কক্ষ বাড়ানো মানে তিনজন লোক বাড়ে। ভোটের বাক্স বাড়ে, অনেক ধরনের ব্যবস্থাপনা অতিরিক্ত করতে হয়। অতিরিক্ত আয়োজন করতে হলে তা কেমন ধরনের আয়োজন হতে পারে এটার বাস্তব পরীক্ষা আজকে আমরা করছি। আমরা অনুমানের ভিত্তিতে নয় বাস্তবতার ভিত্তিতে অগ্রসর চাই। প্র্যাক্টিক্যালি দেখে এবং আজকে রিয়েল টাইম অ্যাসেসমেন্ট করে তারপর আমরা পরবর্তী প্ল্যানিংটা করব। তা হলে আমরা একটা হিসাব করতে পারব যে, কতটি ভোট কেন্দ্র বাড়াতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘মোটামুটিভাবে আমাদের প্রস্তুতি আছে। কোন অসুবিধা হবে না। জাতিকে যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা আমরা রক্ষা করব। আমরা সব কিছু এভাবে উন্মুক্তভাবে করতে চাই। আজকের মক ভোটিংয়ের মতো করে আমরা একটা নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
গণভোটের প্রচারের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা গণভোট নিয়ে প্রচারণা এখনো সেভাবে শুরু করিনি। সরকার এবং ইসি মিলে গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। গণভোটের বিষয়গুলো আমাদের প্রচারণার বিশাল অংশজুড়ে থাকবে। প্রচারণাটা যখন শুরু হবে, তখন আপনারা বুঝতে পারবেন যে মানুষ জানল কি জানল না। মাত্র গণভোটের অধ্যাদেশটা হল। আইনটা হল। আইন হওয়া মানে গণভোট করতে ইসিকে অথরাইজ করা। আমরা সিরিয়াসলি কাজ শুরু করেছি। এখন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য। সঙ্গে আমরাও ব্যাপকভাবে প্রচারণা করব।’
তিনি বলেন, ‘গণভোটে অপশন থাকবে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’। রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছে। সরকার আইন করেছে আর আমরা সে আইন অনুযায়ী হ্যাঁ বা না ভোট করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, ‘আপনাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। আপনারাও এই দেশের নাগরিক। আমরা আপনাদেরকেও মূল্যায়ন করি। গণভোটে যেসব বিষয়গুলো থাকবে তা প্রচার করা আপনাদের দায়িত্ব।’
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করছি। সবাই ট্রেনিং করছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করব।’ এছাড়া ধীরে ধীরে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
মক ভোটিং অনুশীলনে দেখা যায় শনিবার সকাল থেকে শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে পোলিং সেন্টারে প্রবেশে করেছে। তারপরে ভোটার স্লিপটা নিয়ে দেখাচ্ছে, পোলিং অফিসার ডাক দিচ্ছে, অ্যাসিস্টেন্ট প্রিজাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার দিচ্ছে। আবার মার্কিং সিল নিয়ে গোপন কক্ষে ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না দেওয়ায় সৌদিআরবসহ সাত দেশে প্রবাসীদের নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এসব ঠিকানা নিশ্চিত করে সামনের সপ্তাহের শেষ দিকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে পোস্টাল প্যাকেজ পাঠানো শুরু করবে নির্বাচন কমিশন বলে জানানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের টিম লিডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালীম আহমাদ খান।
সালীম আহমাদ খান বলেন, আমরা স্ট্যান্ডার্ড ওয়েতে যে রেজিস্ট্রেশন প্রসেসটা করেছিলাম, সেটাকেও ওপেন করে দিয়েছি। তার মানে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের যেকোনও জায়গা থেকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে যেকেউ মানে— বাংলাদেশের নাগরিক যারা আছেন, ১৮ বছরের মধ্যে এনআইডি কার্ডধারী, তারা নিবন্ধন করে পোস্টাল অ্যাপের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে যখন আমরা শুরু করেছি। শুরু করার পরে রেসপন্স খুব হাই ছিল। তারপর আমাদের আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে দেখলাম যে, সাতটা দেশে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, মালয়েশিয়া আর ইউনাইটেড আরব আমিরাত দেশের প্রবাসী ভোটাররা তাদের অ্যাড্রেসে ভুল করছেন। ঠিকানা ভুল হলে তো ব্যালট পৌঁছবে না জায়গা মতো। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম— সাতটা দেশে বন্ধ রাখাটাই ভালো হবে সাময়িকভাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। সকাল থেকে আমরা কয়েক ঘণ্টা ওখানের সাতটা দেশের দূতাবাসের সঙ্গে বসেছিলাম। বসে আমরা লাইন বের করেছি, কীভাবে স্টেপ নিতে হবে। শুক্রবার সকালের মধ্যে এটা সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করবো। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে ছুটির দিন আমাদের প্রবাসী ভোটাররা যেন কাজে লাগাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করছি অ্যাপের ভেতরে একটা অ্যাড্রেস কারেকশনের এডিট চালু করার। যাতে অ্যাড্রেসটা সবাই আবার রিচেক করতে পারেন। রিচেক করলে অ্যাড্রেসটা যখন কনফার্ম হবে, আমরা সামনের সপ্তাহ শেষের থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে আমাদের পোস্টাল প্যাকেজ পাঠানো শুরু করে দেব।
এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, প্রবাসী ভোটারদেরকে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে এক্সপেক্টেশন যেটা হাই ছিল, এখনো আমাদের হাই আছে।
নিবন্ধন সংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতা শিগগিরই কেটে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্তই থাকছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ভোটের মাঠে তিন স্তরে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আইন শৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।
ইসি সচিব বলেন, এখন থেকে প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে বসা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্বে থাকবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যান্য বারের মতো তারাই নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা (কীভাবে কাজ করবেন, কী করবেন না) প্রদান করবে। সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, অপতথ্য মোকাবিলায় ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং অন্যান্য তথ্যযাচাই সক্ষম সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। যোগাযোগ কৌশলে দ্বিমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। ওপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে ওপরে। অর্থাৎ তৃণমূল থেকেও তথ্য উপরে যাবে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে; শুধু নির্দেশনা ওপর থেকে নিচে নয়।
আখতার আহমেদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে— স্থায়ী মোতায়েন, কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মী এবং বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বা অস্থায়ী চেকপোস্ট (মোবাইল চেকপোস্টসহ)। মোবাইল ইউনিটগুলো ঘুরে ঘুরে নজরদারি করবে। একটি ইউনিট কতটি কেন্দ্র দেখবে, তা সংশ্লিষ্ট বাহিনী ভৌগোলিক অবস্থান, সড়কসংযোগ ইত্যাদি বিবেচনায় নির্ধারণ করবে। কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্স প্রধান রিজার্ভ শক্তি হিসেবে প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স দ্রুত চলাচল ও প্রতিরোধমূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুত থাকবে। এনটিএমসি এবং পূজার সময় ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কাজে লাগানো হবে।
ইসি সচিব বলেন, সবসময় একটি বিকল্প পরিকল্পনা (‘এ’ কার্যকর না হলে) প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে একই সঙ্গে দুই-তিনটি স্থানে সমস্যা হলে তা মোকাবিলা করা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সীমিত নেটওয়ার্কের স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা সেবাদাতাদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসীদের নজরদারি করে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনতে হবে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং তারা তা প্রয়োগ করবে। বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের জন্য এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও ডাক বাছাই কেন্দ্রে দ্বিগুণ নিরাপত্তা দিতে হবে। বাছাই থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো, সংরক্ষণ ও গণনা—সব পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে যেন কোনো আপ্যায়ন গ্রহণ না করেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের সংকট মোকাবিলায় দপ্তরের যানবাহন অধিগ্রহণ বা ভাড়ায় সংগ্রহের বিষয়ে বাহিনী বাস্তবসম্মত সমাধান দেবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে, তাদের বিষয়সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে ‘বিজিবির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ও মহড়া’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিজিবির ১,২১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে বলে বাহিনীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়েই চলে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ও মহড়া।
সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের কী রকম প্রস্তুতি, সেটির একটি নমুনা আপনারা দেখেছেন। আমাদের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা নির্বাচনে যুক্ত করব। এটি আমার তৃতীয় মহড়া পরিদর্শন। এর আগে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির মহড়া পরিদর্শন করেছি। তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা যাতে তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য তারা এসব মহড়ার মাধ্যমে তাদের সদস্যদের তৈরি করছে।’
মহড়া আয়োজনের জন্য বিজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণ নির্বাচনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশাল প্রভাব রাখবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা আমাদের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও আমাদের প্রায় ১৩ কোটি ভোটার মিলে, আমরা জাতিকে যে ওয়াদা দিয়েছি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচনের, সেটি আমরা অর্জন করতে পারব।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন আসতে আসতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিজিবির ১,২১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। তিনটি দ্বীপ উপজেলা- সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া ছাড়া বাকি সব উপজেলায় বিজিবি থাকবে। সীমান্তবর্তী ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ৬০টিতে বিজিবি সদস্য এককভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
মহড়া পরিদর্শনের সময় সিইসির সঙ্গে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সিইসি বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ শাকিল আহমেদ হলে সব পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আগামী ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখের মধ্যে ভোটার তালিকা কমপ্লিট হয়ে যাবে। ৫ তারিখের আগেই যে ভোটার তালিকা পাবো, সেই তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একদিনে অনুষ্ঠিত হলেও গণভোটের ব্যালট পেপার ‘রঙিন’ হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উভয় ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা কাগজের ওপর কালো প্রতীক। আর গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন কাগজের ওপর দৃশ্যমান যেকোনও কালি।’
তিনি বলেন, ‘আর অন্যান্য যে দ্রব্যাদি, যেমন— আমাদের লোগো, ব্যালট বক্স, আঙুলের অমোচনীয় কালি, স্টাম্পপ্যাড এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। শেষ যে স্টক আমরা পেয়েছি, সেটাও এখন আমাদের দখলে আছে। আমরা এটা ক্রমাগতভাবে আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেব, যাতে শেষের দিকে চাপ না পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথাগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাদা পৃষ্ঠার ওপরে কালো প্রিন্টের ব্যালট পেপার হয়। এক্ষেত্রে আমরা একটা রঙিন কাগজ ব্যবহার করবা গণভোটের জন্য। রঙিন কাগজের ওপরে যেটা দৃশ্যমান হয়— কালো যদি দৃশ্যমান হয়, সেই দৃশ্যমানতা অনুযায়ী আমরা ব্যালট পেপারটা করবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এবার সাংবাদিকদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র নির্বাচনী প্রস্তুতি পরিদর্শন ও সকল পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দীন।
আজ (বুধবার) সকালে তিনি রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে ঢাকা ব্যাটালিয়ন (৫ বিজিবি)-এর প্রশিক্ষণ মাঠে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী মহড়া ও প্রশিক্ষণ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহড়া পরিদর্শন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন পরিচালনায় বিজিবির পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও প্রস্তুতির প্রশংসা করেন।
এ সময় তিনি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী বিজিবি সদস্যদের দক্ষতা ও নিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ শাকিল আহমেদ হলে সকল পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে বিজিবি মহাপরিচালক, সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ, জুনিয়র কর্মকর্তা, সৈনিক এবং অসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিজিবির সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও অন্যান্য ইউনিট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য মাঠে দায়িত্ব পালনকারী বিজিবি সদস্যদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন এবং তাদের প্রস্তুতি ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, আসন্ন নির্বাচনে সারাদেশে বিজিবির ১ হাজার ২১০ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্তবর্তী ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ৬০টিতে বিজিবি এককভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সন্দীপ, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া ব্যতীত সকল উপজেলায় বিজিবি নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবে। সূত্র: বাসস