আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জোরালো আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানো বা এগিয়ে আনার মতো কোনো পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবনে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়তো তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো বাধা অনুভব করছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ মানুষের পালস বা মনোভাব থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি দেশে ফিরলে তার জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টির সুযোগ নেই।
বক্তব্যে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেন সারজিস আলম। তিনি মন্তব্য করেন, জাতীয় পার্টিকে সুযোগ দেওয়া মানে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা করা। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের মতোই অভিহিত করে তিনি বলেন, দলটি ভারতে গিয়ে দাসত্ব করেছে এবং তাদের পরামর্শে দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে এমপি হওয়া ও সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এই দলটিকেও আওয়ামী লীগের মতোই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক কৃষিবিদ গোলাম মর্তুজা সেলিমসহ ঠাকুরগাঁও জেলার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিচারিক দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির খাসকামরায় অনুষ্ঠিত এক একান্ত বৈঠকে তিনি এই সহায়তা চান। বৈঠকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নির্বাচনী কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে যান সিইসি। এ সময় তার সঙ্গে কেবল নির্বাচন কমিশনের সচিব উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচনকালীন বিচারকদের ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালনের বিষয়টি ছাড়াও সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার পর রিট আবেদনের কারণে যেন নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে বিচার বিভাগের সহায়তা চাওয়া হয়।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সিইসির জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তা রেকর্ড ও প্রচারের জন্য বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অথবা বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অথবা পরদিন বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের সবকিছু ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ওই সাক্ষাতের পরই বুধবার সন্ধ্যায় কিংবা বৃহস্পতিবার সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হবে।
ইসি মাছউদ আরও উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার বিষয়টিকে কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সহায়তার আহ্বান থাকবে তফসিল ঘোষণার ভাষণে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে নির্বাচন ভবন থেকে সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত রিট এবং প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া নিয়ে প্রার্থীরা প্রায়ই আদালতের দ্বারস্থ হন। নির্বাচনের আগে এসব আইনি জটিলতা নিরসন ও বিচার বিভাগের সহায়তার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সিইসির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সিইসির এই সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করার পাশাপাশি সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছে পুরো কমিশন। এছাড়া আগামীকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ১৫ জন নারী প্রার্থী রাখার কথা থাকলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত প্রাথমিক তালিকায় নারীদের উপস্থিতি অত্যন্ত নগণ্য। বিএনপি তাদের প্রাথমিক তালিকায় ২৭২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও সেখানে নারী রয়েছেন মাত্র ১১ জন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল এখন পর্যন্ত কোনো নারী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে দলগুলোর সম্মতিতে ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী দেওয়ার একটি ‘ভদ্রোচিত বোঝাপড়া’ বা অলিখিত চুক্তি হয়। জুলাই সনদে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিটি দল ন্যূনতম ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। কিন্তু প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষায় দলগুলোর মধ্যে চরম অনীহা কাজ করছে।
বিএনপির ঘোষিত তালিকায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানিয়েছেন, এখনো বেশ কিছু আসন ফাঁকা রয়েছে এবং চূড়ান্ত তালিকায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পরামর্শ সভায় ৪২ শতাংশ নারী সদস্য থাকলেও সংসদ নির্বাচনে এখনো কোনো নারী প্রার্থী দেওয়া হয়নি। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, সময় এখনো শেষ হয়নি এবং মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতার পর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সূত্রমতে, ঢাকা-১৮ আসনে একজন নারী প্রার্থীকে বিবেচনা করছে দলটি।
জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ড. বদিউল আলম মজুমদার আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার রক্ষার নজির খুব একটা নেই। দলগুলো নিজেরাই ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু এখন তা রক্ষা না করলে অঙ্গীকার ভঙ্গের সংস্কৃতিতেই দেশ আটকে থাকবে। এনসিপি, এবি পার্টি ও জেএসডির মতো দলগুলোর তালিকায় কিছু নারী প্রার্থীর নাম থাকলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তালিকায় কোনো নারী নেই।
নারী নেত্রী ও বিশ্লেষকরা রাজনৈতিক দলগুলোর এই আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দলগুলো উদাসীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামী উল্লেখ করেন, গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান থাকলেও রাষ্ট্রপরিচালনার কাঠামোতে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার ১২ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার নিবন্ধন করেছেন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এই তথ্য অনুযায়ী, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫০ হাজার ১২ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। এই নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৮১ জন পুরুষ ভোটার ও ২১ হাজার ২৩১ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
দেশভিত্তিক নিবন্ধনের মধ্যে রয়েছে— সৌদি আরবে ৬৩ হাজার ৩৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ হাজার ৪৯ জন, কাতারে ১৬ হাজার ৩২৬ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ৮৬৩ জন, মালয়েশিয়ায় ১৩ হাজার ৭৪১ জন, সিঙ্গাপুরে ১৩ হাজার ১৬৫ জন, যুক্তরাজ্যে ১২ হাজার ১৪ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯ হাজার ৫৪৯ জন, কানাডায় ৯ হাজার ৫০১ জন, ওমানে ৯ হাজার ৪৫৩ জন, ইতালিতে ৮ হাজার ৩৯০ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৮ হাজার ৩৭ জন।
৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিকানা সংশোধনের সময় বৃদ্ধি: প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে ঠিকানা সংশোধন করার জন্য ৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত রোববার ইসি থেকে গণমাধ্যমে দেওয়া এ সংক্রান্ত এক বার্তায় তথ্যটি জানানো হয়েছে।
আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের ‘টিম লিডার’ সালীম আহমাদ খান বাসসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইসি থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রবাসীদের বিশেষ অনুরোধে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে ভুল কিংবা অসম্পূর্ন ঠিকানা সংশোধন করার সুযোগ বাংলাদেশ সময় ৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই তারিখের পর ঠিকানা সংশোধনের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
সরকারি চাকরিজীবীরা ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীরা তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে নিবন্ধন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে ইসি বার্তায় বলা হয়েছে, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটার, নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটারগণ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ-এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।
এই বার্তায় আরও বলা হয়, বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট (www.ecs.gov.bd)-তে ভিজিট করুন।’
প্রবাসীদের সঠিক ঠিকানা প্রদান করার আহ্বান: পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের সময় সঠিক ঠিকানা দেওয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে ইসি থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘পোস্টাল ব্যালট পেতে হলে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধনের সময় আপনার অবস্থানকালীন দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সঠিক ঠিকানা প্রদান করুন। প্রয়োজনে কর্মস্থল অথবা পরিচিত জনের ঠিকানা প্রদান করুন। সঠিক ও পূর্নাঙ্গ ঠিকানা প্রদান ব্যতিরেকে পোস্টাল ব্যালট পেপার ভোটারগণের নিকট প্রেরণ করা সম্ভব হবে না।’
আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এর আগে, ১৮ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিশ্বের সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, যা রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ইসির জনসংযোগ শাখা ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর সিইসিসহ পূর্ণ কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পরপরই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। তবে এবার সরাসরি সম্প্রচারের পরিবর্তে ভাষণটি রেকর্ড করে প্রচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে তা সম্প্রচার করা যায়। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সরাসরি সম্প্রচারে তফসিল ঘোষণা করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ভাষণ রেকর্ড করা হলেও তফসিল ঘোষণা হতে পারে পরদিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর কাঙ্ক্ষিত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। আসন্ন ভাষণে সিইসি জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানাবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে, পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই সঙ্গে গণভোট আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিনই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এবার সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে এবং গোপন কক্ষ বা সিক্রেট বুথের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, এবারের ভোটগ্রহণ সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। অতীতে মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা ও মাঠ পর্যায়ের মতামত বিশ্লেষণ করে বুথ সংকট এড়াতে প্রতিটি কক্ষে একাধিক গোপন কক্ষ স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে বারান্দা বা অন্য কোনো স্থানে অস্থায়ী বুথ তৈরি করে ভোটারদের নির্বিঘ্ন ভোটদান নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া গণভোটের বিষয়টি ভোটারদের কাছে সহজবোধ্য করতে প্রতিটি কেন্দ্রে বড় আকারে গণভোটের প্রশ্ন ঝুলিয়ে রাখা হবে। পঙ্গু, প্রবীণ ও গর্ভবতী ভোটারদের জন্য বিশেষ সুবিধার নির্দেশনাও থাকবে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যালট পেপার পাঠানো নিয়ে এবার আগের নিয়মে ফিরছে কমিশন। ‘রাতের ভোট’ বিতর্ক এড়াতে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর নিয়ম চালু করলেও, বর্তমান কমিশন ভোটের আগের রাতেই কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, কমিশন আত্মবিশ্বাসী যে অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। যথাযথ নজরদারি ও কঠোর সুপারভিশনের মাধ্যমে কোনো ব্যত্যয় ঘটতে দেওয়া হবে না বলেই তিনি আশ্বস্ত করেন।
এদিকে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) থেকেই প্রবাসী ভোটারদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে, যা আগামী পরশুর মধ্যে বিদেশে পাঠানো শুরু হবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত দেশের ভেতর থেকে পোস্টাল ব্যালটের জন্য আবেদন করা যাবে। ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকলেও ইসির প্রয়োজনে ব্যাংক ও ডাকঘর খোলা রাখা হবে। ভোটগ্রহণে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত রিজার্ভে রাখা হবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা কোনো দলের বিশেষ অবস্থার চেয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা ও সরকারের ঘোষিত সময়সূচিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী ১১ ডিসেম্বর নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হলে, হাতে ৬০ দিন সময় রেখে ১১ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন- সপ্তাহের যেকোনো একদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল-পূর্ব কার্যক্রমের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দশম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিবাচন কমিশনার এসব তথ্য জানান। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে রীতি অনুযায়ী কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এর অংশ হিসেবে পুরো কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণা বিষয়ক বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে সোমবার পত্র পাঠানো হবে।
তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার আগে প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ কাজই সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এর ফলে ভোটাররা সকালে আধা ঘণ্টা এবং বিকেলেও আধা ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পাবেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে আরেকটি তালিকা পাঠানো হবে, যেখানে পোস্টাল ভোট প্রদানকারীদের (ওসিবি এবং আইসিপিভি) ইমপ্রিন্ট যুক্ত থাকবে। এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে যে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং অফিসারের তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভোটকর্মী হিসেবে যুক্ত করা হবে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত নিয়োগ না দিয়ে রিজার্ভে রাখা হবে; একান্ত প্রয়োজন হলে তাদের বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সানাউল্লাহ বলেন, দুটি নির্বাচন-জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করতে সময় ও ব্যবস্থাপনায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী সামগ্রী পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের মতোই নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারসহ সব সামগ্রী ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া ভোটের দিন যাতে কোনো জটিলতা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় লজিস্টিকসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ভোটকক্ষে ভোটারদের সুবিধার জন্য একাধিক সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে। যেখানে বুথ বাড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে না, সেখানে আলাদা করে অতিরিক্ত বুথ তৈরি করা হবে। পূর্বে অনুষ্ঠিত মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং মাঠপর্যায়ে ভোট পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের মতামত বিবেচনায় এনে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
গণভোট সংক্রান্ত প্রচারণার বিষয়ে তিনি জানান, সরকার বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করছে এবং নির্বাচন কমিশন এই প্রচারণায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই গণভোটের প্রশ্ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান, সে জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে বড় আকারে ছাপানো গণভোট ব্যালট লাইনের সামনে টানিয়ে রাখা হবে। পঙ্গু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারীসহ বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন এমন ভোটারদের জন্য কেন্দ্রগুলোতে আলাদা নির্দেশনা থাকবে, যাতে তারা সহজে ভোট দিতে পারেন।
সূত্র : বাসস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো প্রায় সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ভোট আয়োজনের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে তা নির্ধারণে বৈঠকে বসেছে ইসি।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ১০-তম কমিশন সভায় অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মো. মঈন উদ্দীন খান জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল কবে হবে তা নির্ধারণে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাও রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে তফসিল কবে ঘোষণা হবে ও ভোটের সম্ভাব্য তারিখ কবে হতে পারে জানতে চাইলে আব্দুর রহমানেল মাউসদ গনমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ভোটের কয়েকটি তারিখ আলোচনা করেছি। আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) এ নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বলছি আগামী সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার, এর মধ্যে যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করে দেব এবং তা (তফসিল) হঠাৎ করেই হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ কথা জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তা ধরে প্রস্তুতি নিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল ইসির।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও হবে। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতীয় বৈঠক করে কমিশন। ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টা থেকে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আয়োজিত মিটিংয়ে ছিলাম।’
তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করতে পারেনি।’ তবে নির্বাচন আয়োজনে ইসি পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করি, সঠিক তথ্যটা দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জনান, এটাই জেনে রাখুন যে, নিশ্চয়ই নির্বাচনের ব্যাপারে জোর প্রস্তুতি চলছে।
সাংবাদিকদের নিয়ে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ); সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ) এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর পরিচিতি’ শিরোনামের কর্মশালায় বক্তব্য দেন আখতার আহমেদ। এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করে ইউএনডিপি ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোও জোরেশোরে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো কোনো দল তফশিল ঘোষণার আগেভাগেই প্রাথমিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করে রেখেছে। এখন অপেক্ষা শুধু তফসিল ঘোষণার।
এদিকে, তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে রোববার (৭ ডিসেম্বর) কমিশন সভা আহ্বান করেছে এ এম এম নাছিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই দিন তফশিল এবং ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি। ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, রোববার (৭ ডিসেম্বর) তফশিল ঘোষণার উদ্দেশে কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি ওই দিনের বৈঠকে আমরা সবকিছুই চূড়ান্ত করতে পারব।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পুরো জাতি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। ভোট বঞ্চিত জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত। আশা করছি ইসির ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করবে। উৎসবের আনন্দে দেশে ভোট হবে।
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণার অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে চায় ইসি। সে লক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছে ইসি। প্রকাশ হয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জনের ভোটার তালিকা।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে লাল বা অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৮ হাজার ৭৪৬টি, হলুদ বা ঝুঁকিপূর্ণ ১৬ হাজার ৩৫৯টি, সবুজ বা সাধারণ ১৭ হাজার ৬৫৬টি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে দুই থেকে তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য। আর সাধারণ কেন্দ্রে থাকবে একজন সদস্য। ৮ বিভাগের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ২ হাজার ৬৭৫টি। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪৪০টি। বিভাগের মতো মেট্রোপলিটনেও অতি ঝুঁকিপূর্ণ সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৬৯৫টি। দ্বিতীয় স্থানে চট্টগ্রামে ৩১২টি। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ছাড়াও সেনা, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৮ লাখ সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে ফোর্স মোতায়েন করা হবে। যেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে ফোর্স বেশি থাকবে আর যেখানে কম ঝুঁকি সেখানে কম ফোর্স থাকবে। এ লক্ষ্যে আমরা নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন আমাদের সবার দায়িত্ব। শুধু পুলিশ নয়, অন্যান্য সরকারি সংস্থা, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল এবং জনসাধরণ একসঙ্গে একটা টিম হয়ে কাজ করতে পারি, তাহলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
তবে সারা দেশে হত্যা-ছিনতাইসহ অপরাধ বেড়ে যাওয়া এবং থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার না হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধার করা যাচ্ছে না, এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যদি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় এবং আইনের ভেতরে থেকে যদি তারা দায়িত্ব পালন করে- আমার মনে হয় না কোনো ধরনের শঙ্কা তৈরি হবে।’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথচলার রূপরেখার সূত্রপাত হতে যাচ্ছে।’
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সাংবাদিকদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষত কাটিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি একটি সমন্বিত ও জাতীয় উদ্যোগ। দেশের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য প্রচারে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের কাজের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচনের বড় নিয়ামক শক্তি সাংবাদিকরা। আশা করছি, এই প্রশিক্ষণে সাংবাদিকরা উপকৃত হবেন।’
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, ইসি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)-এর সভাপতি কাজী জেবেল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকে।