প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত আলোকিতে ‘জেনভোট ফেস্টিভ্যাল’ উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এবং সবার সহযোগিতায়। গতকালই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। তারাও পুরোপুরি প্রস্তুত।’
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল এফেয়ার্স) ফিলিপ বার্নিয়ার আর্ক্যান্ড, ব্রিটিশ হাইকমিশনের হেড অব পলিটিক্যাল টিমোথি ডাকেট, সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ইভা স্মেডবার্গ, আইএফইএস কান্ট্রি ডিরেক্টর পল গেরিন ও ইসি সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতির কথা গতকালই আমাদেরকে জানিয়েছে। আপনারা সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে একটা সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আমরা দেখতে পাব।’
সিইসি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। কারণ, প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, যা গত ৫৪ বছরেও হয়নি। এছাড়া, প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি কারাবন্দি এবং সরকারি কর্মচারী, যারা নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রের বাইরে পোস্টিংয়ে আছেন, তাদের জন্যও ভোটের ব্যবস্থা করেছি আমরা। এবার একসঙ্গে একদিনে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। তাই এই সব কারণে এটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরাও সাহস করে নেমে পড়েছি। আমাদের এই সাহসের সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে তরুণরা এতে অংশ নিলে সফল হব। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা সবাই মিলেই করব।’
সিইসি দেশের তরুণদের ভোটে অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সবসময় তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাসী। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা তারুণ্যের শক্তির ওপর ভর করে দেখি। ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালে, এবং চব্বিশের জুলাই-অগাস্টে তরুণদের ভূমিকা দেখিয়েছে যে তারা দেশের জন্য কতদূর যেতে পারে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তরুণদের সাহস, শক্তি ও সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘তোমাদের যে সৃজনশীলতা ও চিন্তাধারা, এটা ছাড়া দেশ গড়া সম্ভব নয়। যখন আমি ভাবি আমাদের বিশাল একটি তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, এটা আমাকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে।’
এ সময় তিনি দেশের তরুণ সমাজকে ভোটে অংশ নিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ সম্পন্ন বাংলাদেশ গঠনের আহ্বানও জানান।
গতকাল ‘জেনভোট ফেস্টিভ্যাল’-এ তরুণদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে মক ভোটিং, কমিকস, ক্যারিকেচার, আর্ট ফেস্টিভ্যালসহ নানা আয়োজন রয়েছে। ভোট সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য বসেছে স্টল এবং তরুণ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ভোটারদের জন্য আকর্ষণীয় সেশনও আয়োজন করা হয়।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনাটিকে তিনি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছেন, এতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, অতীতেও আহসানউল্লাহ মাস্টার বা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মতো নেতাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হাদির ঘটনাটিও তেমনই একটি বিচ্ছিন্ন বিষয়, যা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ের অকার্যকর থানা ও পুলিশের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে তিনি দাবি করেন, বর্তমান পরিস্থিতি অনেক উন্নত এবং মানুষ এখন শান্তিতে চলাচল ও ঘুমাতে পারছে। তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তারা নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে সিইসি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যা হয়নি, এবার তা করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের জন্য ডাকযোগে (পোস্টাল ব্যালট) ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণে নিয়োজিত প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, কারাবন্দি এবং নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে একটি গণভোট আয়োজনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচন নিয়ে জনমনে থাকা সব ধরনের দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, কমিশন জাতিকে দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তরুণ প্রজন্মের ওপর ভর করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়; তাই একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য তিনি দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই, ভোট সময়মতোই হবে। নির্বাচনের পথে যে বাধাগুলো তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, এগুলো সম্বন্ধে নির্বাচন কমিশন অবহিত, সরকার অবহিত।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর পরদিনই রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে শরিফ ওসমান হাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ইসির মাঠপর্যায়ের দুটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা ইসি উড়িয়ে দিচ্ছে না। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে এ ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয়। যদি সে ধরনের ঘটনা ঘটে, তারা যেন ধরা পড়ে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একটা মেসেজ সকল বাহিনীর পক্ষ থেকে সমস্বরে এসেছে। যারাই এই নির্বাচনকে বানচাল করার, প্রতিহত করার বা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা করবেন, তারা ব্যর্থ হবেন। যেখানে যতটুক দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন, সব বাহিনী ততটুকু দৃঢ় হবে।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব কার্যক্রম এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ইসি সন্তুষ্ট। তবে যেসব জায়গায় আরও কাজ করার সুযোগ আছে, সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এই চোরাগোপ্তা হামলা কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ নাকি এটা কোনো একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বড় পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকলে এ ঘটনার পরিকল্পনা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর কিছু করার অবকাশ ছিল কি না বা ঘটনা ঘটিয়ে যে পালিয়ে গেল, সেখানে কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কোনো ফেইলিউর আছে কি না? তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। চোরাগোপ্তা হামলার যে ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে ঘটেছে, সেগুলোর স্বরূপ নিরূপণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, অধিক সংখ্যায় চেক পয়েন্ট বসানো, যেসব সন্ত্রাসী এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা, অবৈধ অস্ত্র ও হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র–গোলাবারুদ উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের কয়েকটি স্থানে নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পরপরই দুর্বৃত্তরা লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, মাঠপর্যায়ের এসব অফিসে নির্বাচন সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, মালামাল ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত থাকে। সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে এসব রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব নির্বাচন অফিসে অনতিবিলম্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আইজিপিকে অনুরোধ জানিয়েছে ইসি।
আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত গণভোট। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক পরিপত্রে জানিয়েছে, এই গণভোটের ব্যালট পেপারের রঙ হবে গোলাপি এবং ভোটারদের জাতীয় সংসদ ও গণভোটের ব্যালট একই বাক্সে ফেলতে হবে। ইসি ইতোমধ্যে গণভোটের প্রশ্ন, সময়সূচি, কর্মকর্তা নিয়োগ ও ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করেছে।
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের যেসব প্রস্তাবনা এসেছে, তাতে জনগণের সম্মতি যাচাই করতেই এই গণভোটের আয়োজন। সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ প্রায় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, ভোটকেন্দ্র এবং ভোটার তালিকা গণভোটের জন্যও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ একই কর্মকর্তারা একই সময়ে দুটি নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে, ভোটারদের সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সঙ্গে একটি গোলাপি রঙের গণভোটের ব্যালট (ফরম-১) সরবরাহ করা হবে। ভোটাররা গোপন কক্ষে গিয়ে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর পক্ষে বা বিপক্ষে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ সূচক ঘরে সিল দেবেন। এরপর ব্যালটটি ভাঁজ করে সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সঙ্গে একই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ফেলবেন। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমেও তাদের মতামত জানাতে পারবেন। ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসাররা ব্যালট বাক্স খুলে প্রথমে দুই ধরনের ব্যালট আলাদা করবেন এবং এরপর পৃথকভাবে গণনা সম্পন্ন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ১৫৫৩৭/২০২৫ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর ৪৬৭৬/২০২৫-এ প্রদত্ত রায় ও আদেশ অনুসরণে পূর্বে প্রকাশিত সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন আংশিক সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে বাগেরহাট জেলায় একটি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং গাজীপুর জেলা থেকে একটি আসন কমানো হয়েছে। সংশোধনের পর মোট ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হলো।’
ইসি সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনা ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আসনসীমা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে আসন বিন্যাস আরো যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট হয়।সূত্র- বাসস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব এসব কথা বলেন। তিনি জানান, নির্বাচনের মাঠ সবার জন্য সমান রাখতে প্রয়োজনীয় পরিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলগুলো নিশ্চয়ই সহায়তা করবে, তবে কেউ নিয়ম না মানলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান প্রসঙ্গে সচিব তথ্য দেন যে, ইতিমধ্যে তিন লাখ ১০ হাজার ৪১৪ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন এবং গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তপশিল ঘোষণার পর ১৬ বা ১৭ ডিসেম্বর থেকে, কারাবন্দিরা ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের মোতায়েনের পর নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সীমানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা ও প্রশাসনের রদবদল নিয়েও কথা বলেন ইসি সচিব। গাজীপুর ও বাগেরহাটের আসন সংক্রান্ত ইসির গেজেট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করায়, আদালতের আদেশ মেনেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া নির্বাচনের সময় প্রশাসনের রদবদল একটি চলমান প্রক্রিয়া হলেও, তা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি, সম্মতি বা পরামর্শের ভিত্তিতেই করা হবে বলে তিনি স্পষ্ট করেন।
মাগুরায় জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় ঐতিহাসিক নোমানী ময়দান থেকে বিশাল এক বর্ণাঢ্য নির্বাচনী প্রচারণা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মিছিলে অংশ নেওয়া বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী একই পোশাকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অংশ নেন, যা পুরো কর্মসূচিতে আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে।
শুরুতে নোমানী ময়দানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সাঈদ আহমেদ বাচ্চু। জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা মারুফ কারখীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক জেলা আমির আলহাজ্ব আব্দুল মতিন, মাগুরা–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী সহকারী অধ্যাপক মাওলানা এমবি বাকের, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, ইসলামী ছাত্র শিবিরে জেলা সভাপতি মোঃ আমিনউদ্দীন আশিকসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল নির্বাচনী মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভায়না মোড় হয়ে ঢাকা রোড প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী মোড়ে এসে জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা সাইদ আহমেদ বাচ্চু আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেন। হাজার হাজার নেতা–কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শহরব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
নেতারা বলেন, জনগণের অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তাদের এই কর্মসূচি। তারা শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণের দুদিন পর পর্যন্ত দেশের প্রতিটি উপজেলা ও থানায় ন্যূনতম দুইজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর আওতায় আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো তদারকি করতে এবং নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। গতকাল বুধবার তার ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছে, যা আজ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হবে। সিইসি তার ভাষণে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করবেন বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঘোষণা করা হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে গণভোটের তফসিল। আজ সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই তফসিল ঘোষণা করবেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিইসির এই ভাষণটি একযোগে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচার করা হবে। জানা গেছে, ভাষণটি ইতোমধ্যে রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। তফসিল ঘোষণার দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার। এর আগে গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এবং তারও আগে বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবারের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩৪ জন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করেই এই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় পৌর শহরের নিজ বাসভবন প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তার সমর্থক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমার প্রতি জনপদের মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আছে, সে জন্য আমি মানুষের পাশের থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি উল্লেখ করে মতবিনিময় সভায় দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, আমার জীবনের বাকি দিনগুলো আমি জনগণের সাথে থাকতে চাই, জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। সে জন্য আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় (সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর) কাঙ্ক্ষিত যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়য়নের দিক দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ। আমরা এর পরিবর্তন চাই, বৈষম্যের নিরসন চাই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক বিষয়ে আমি সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে চাই। সুনামগঞ্জের মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সে জন্য সন্ত্রাস- চাঁদাবাজমুক্ত ও সম্প্রীতির সুনামগঞ্জ চাই, আর এ জন্যই আমি নির্বাচন করতে চাই।
দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চারবারের চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুলের নাম ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন।
অবশেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আজ বুধবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সিইসি তার ভাষণটি রেকর্ড করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের কারিগরি দল এই ভাষণ রেকর্ড করে। রেকর্ড সম্পন্ন হওয়ার পর সিইসি তার কক্ষে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষেই ইসি সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তফসিল ঘোষণার চূড়ান্ত সময়টি জানান।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের ভাষণ আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় রেকর্ড করা হবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিব আখতার হোসেন। তিনি জানান, ভাষণ রেকর্ডের পর নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে তফসিল ঘোষণার চূড়ান্ত সময় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে আজ দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি, চার কমিশনার ও ইসি সচিব। সেখানে নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবহিত করা হয়। ইসি সচিব জানান, কমিশনের কার্যক্রমে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজনে তাঁর এখতিয়ার অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সাক্ষাতে গত জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।
একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে কারিগরি ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বিস্তারিত জানতে চান। বিশেষ করে ব্যালট পেপারের রং, বিতরণ পদ্ধতি, মক ভোটিং এবং ভোট গণনার প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া ভোটগ্রহণের নতুন সময়সীমা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত করার বিষয়টিকেও রাষ্ট্রপতি যৌক্তিক বলে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ এবং ‘ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’-এর প্রযুক্তিগত কাঠামো স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তৈরি করার বিষয়টি জেনে তিনি প্রশংসা করেন।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জোরালো আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানো বা এগিয়ে আনার মতো কোনো পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবনে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়তো তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো বাধা অনুভব করছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ মানুষের পালস বা মনোভাব থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি দেশে ফিরলে তার জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টির সুযোগ নেই।
বক্তব্যে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেন সারজিস আলম। তিনি মন্তব্য করেন, জাতীয় পার্টিকে সুযোগ দেওয়া মানে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা করা। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের মতোই অভিহিত করে তিনি বলেন, দলটি ভারতে গিয়ে দাসত্ব করেছে এবং তাদের পরামর্শে দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে এমপি হওয়া ও সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এই দলটিকেও আওয়ামী লীগের মতোই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক কৃষিবিদ গোলাম মর্তুজা সেলিমসহ ঠাকুরগাঁও জেলার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।