নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, এই নির্বাচন ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত আশাবাদী সত্যি সত্যি এবার ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সুতরাং সমন্বয়হীনতার কোনো সুযোগ নেই। সমন্বয়হীনতার সামান্যতম কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দৃষ্টিগোচর হয়, সেটি কিন্তু আমরা স্বাভাবিক এবং সহজভাবে নেব না।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটরিয়ামে গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ উপলক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থাপনাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান অতিথি এবং নির্বাচন কমিশনারগণ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আটজন বিভাগীয় কমিশনার, আট জন ডিআইজি, ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, ৬৪ জন এসপি, ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ২২৬ জন অংশগ্রহণ করেন।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, কারো কাছে দায়বদ্ধ না। শুধু দায়বদ্ধ আইনের কাছে।
উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেহেতু নির্বাচন কমিশনেরই একজন। সুতরাং আপনারাও শুধু আইনের কাছে দায়বদ্ধ। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন, আমরা, আপনারা— সবাই মিলে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচনটি হবে, সেটি যদি আমরা সফলভাবে করতে ব্যর্থ হই, আমরা সকলেই ব্যর্থ হব। বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে।
তিনি ৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে— আমরা কোথা থেকে কোথায় এসেছি। আমাদের তফসিল ঘোষণার পর থেকে একটি ঘটনা বাদে বাকি যতগুলোর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে মাঠ পর্যায়ে, প্রতিটি কার্যক্রম আইনসঙ্গতভাবে এবং খুব সাহসিকতার সাথে হয়েছে।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন— নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাঠে নেমে পড়ুন, একসাথে মুভ করুন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার মহোদয়রা, মাঠে নেমে পড়ুন; একসাথে মুভ করুন। ওসি সাহেব, ইউএনও সাহেব, আনসার ভিডিপি অফিসার একসাথে মুভ করুন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) কথা শুনে ‘বুকের জোর’ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আমি এখন অনেক আশ্বস্ত হয়ে ফিরছি। আপনাদের কথাবার্তা শুনে আমার বুকের জোর অনেক বেড়েছে। আপনারা মাঠে যান। আমি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। পেশাগতভাবে কাজ করবেন, কোনোভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করবেন না।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিনব্যাপী মতবিনিময় সভার প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, আমার একমাত্র এজেন্ডা হলো, আমি জাতির জন্য কিছু করতে পেরেছি—এটুকু সন্তুষ্টি নিয়ে মরতে চাই।’ তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ‘ভিভিআইপি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
পুলিশ ও প্রশাসনকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখার নির্দেশ দেন সিইসি। ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ পোড়ানোর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের উসকানি অনেক হতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
সিইসি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা যাতে নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন এবং ভোট দিয়ে শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এখন ‘অভিযোগ কেন্দ্রে’ (কমপ্লেইন লজিং সেন্টার) পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত কমিশনে অভিযোগ আসছে। মানুষ জানে না যে অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করতে হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের সামনে অভিযোগ জানানোর নম্বর টানিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। যাতে কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বা ভয়ভীতি দেখালে মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন।
ঢাকা শহর পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এগুলো সরানোর খবর তিনি পাচ্ছেন না। প্রতিটি কাজের প্রচার করার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনা বিধি পড়ার তাগিদ দিয়ে সিইসি বলেন, তা না হলে প্রাথমিক দায়িত্ব পালনেই তারা ব্যর্থ হবেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১৯টি সংসদীয় আসনে ১৩১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে নবগঠিত রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’। জাতীয় পার্টি (একাংশ) এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপির সমন্বয়ে গঠিত এই জোটটি মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতির এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করে। জোটের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক চুন্নু। নির্বাচনি এই সমঝোতায় জোটের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে।
জোটের এই তালিকায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, যিনি চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পিরোজপুর-২ আসনে লড়বেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এছাড়াও পটুয়াখালী-১ আসনে ফ্রন্টের মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা-১০ আসনে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ এবং কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মুজিবুল হক চুন্নুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম মাদারীপুর-৩ আসন থেকে এবং ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্যদের বড় একটি অংশ জায়গা পেয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বগুড়া-৬ আসনে নুরুল ইসলাম ওমর, সিলেট-২ আসনে ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, পটুয়াখালী-৪ আসনে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা। এছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে শফিকুল ইসলাম সেন্টু, বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান রত্না এবং ফরিদপুর-২ আসনে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামছেন। বিশেষ তালিকায় জহির রায়হানের পুত্র তপু রায়হানকে ঢাকা-১৭ আসনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচনি কৌশলের অংশ হিসেবে জোটটি ১১টি সংসদীয় আসনে একাধিক বা দ্বৈত প্রার্থী রেখেছে। এই আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১০, চট্টগ্রাম-৯, বরিশাল-৬, ঢাকা-১৭ এবং ঝালকাঠি-২ অন্যতম। সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ জোটের শীর্ষ নেতারা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতেই এই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। প্রার্থীরা ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার ঘোষণা গণমাধ্যমে আসার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এর ফলে তিনি ও তাঁর পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি দ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করবেন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য একজন গানম্যান বরাদ্দের অনুরোধ জানাবেন।
হিরো আলম জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যে গণঅধিকার পরিষদ, আমজনতার দল, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি—এই চারটি রাজনৈতিক দল যোগাযোগ করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কোনো দলের ব্যানারে নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন, সে বিষয়ে এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে চাননি। তিনি মূলত ঢাকা ও বগুড়া—এই দুটি আসন থেকে নির্বাচনের বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন এবং দল যেটিই হোক, মানুষের কল্যাণে কাজ করাই তাঁর মূল লক্ষ্য বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নিজের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনেই নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। ঘোষিত তালিকায় দলটির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারীকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সারওয়ার হোসেন শাহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে এই প্রার্থীদের তালিকা নিশ্চিত করেন।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) এবং গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা–ফুলছড়ি) আসনে লড়বেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী। এছাড়া গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ি–সাদুল্লাপুর) আসনে ময়নূর রাব্বি চৌধুরী রুমান এবং গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্ধগঞ্জ) আসনে কাজী মশিউর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনীত এই প্রার্থীরা এর আগেও জাতীয় পার্টির ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাদের এলাকায় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সারওয়ার হোসেন শাহীন জানিয়েছেন, পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের অনুমোদনে এই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা–ফুলছড়ি) আসনের প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেওয়ায় ভবিষ্যতে সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন এবং দলের সব স্তরের নেতাকর্মীকে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গাইবান্ধা-৫ আসনে মহাসচিবের মনোনয়নের পরিবর্তে সাবেক প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছেন সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার একদল নেতাকর্মী। তাঁদের দাবি, ওই আসনে গোলাম শহীদ রঞ্জু একজন পরীক্ষিত নেতা এবং তিনি এর আগে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মাঝেই নির্বাচনি আমেজ তুঙ্গে উঠেছে। মূলত উত্তরবঙ্গের এই জেলাটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় প্রার্থীদের জয়ী করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অপবাদ ঘুচানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি ও এসপিদের নিয়ে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে তিনি এই আহ্বান জানান। সিইসি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা বা অপবাদ চালু রয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া এখন সময়ের দাবি। আর এটি নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগ দেখানোর নির্দেশ দেন তিনি।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আইনের শাসন কাকে বলে, আমরা এবার তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, আইন সবার জন্য সমান এবং অন্ধভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে। কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ক্রান্তিলগ্নে যদি দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা দেখানো হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সবাইকে দায়ী থাকতে হবে। সিইসি আক্ষেপ করে বলেন, বিগত বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশনকে ‘ম্যানেজড ইলেকশন’ করার মতো নানা অপবাদ সইতে হয়েছে; এবার সেই গ্লানি মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ এসেছে।
কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাঠ পর্যায়ে কেউ যদি সাহসী পদক্ষেপ নেয় এবং বিধি-বিধানের আলোকে দায়িত্ব পালন করে, তবে নির্বাচন কমিশন সব সময় তাঁর পাশে থাকবে। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে খুশি করার কোনো প্রয়োজন নেই, বরং আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটি আইনের মাধ্যমে পালন করুন যাতে পুরো সিস্টেমটি সঠিকভাবে কাজ করে।’ কোনো ধরনের বিচ্যুতি যেন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজর রাখার জন্য তিনি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। সভার শুরুতে সিইসি সম্প্রতি নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। মূলত মাঠ প্রশাসনের সাহসিকতা ও অঙ্গীকারই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার মূল শক্তি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশেষ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অডিটরিয়ামে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা দেবেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ। ব্রিফিংয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ব্রিফিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করা। সভায় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, প্রশাসনিক সমন্বয় বৃদ্ধি এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসার পরিবেশ তৈরির জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। তফশিল পরবর্তী সময়ে মাঠ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে কমিশনের এই প্রথম বড় ধরনের সমন্বয় সভা হওয়ায় এটি নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। প্রার্থী ও ভোটাররাতো ভয় পাচ্ছেন, হাদির ঘটনার পরে কীভাবে তাদের আশ্বস্ত করবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘অসুবিধা নেই ভয় কেটে যাবে, ইনশাআল্লাহ। চিন্তা করবেন না, ভয় কেটে যাবে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে, আপনারা দেখবেন যে ইনশাআল্লাহ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। অসুবিধা হবে না। আমরাতো কনফিডেন্ট আছি। আমরাতো হাল ছাড়ি নাই আমরা এগিয়ে যাব।’
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মেইল প্রসেসিং সেন্টারে পোস্টাল ব্যালট বিদেশে পাঠানোর সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আপনি বারবার বলছেন, একটা ভোট উৎসব হবে এখন যে পরিবেশ আছে, সে ক্ষেত্রে কী আপনি আগের মতোই মনে করছেন কি না, জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, একদম... ভোট উৎসব হবে, ইনশাআল্লাহ। এই যে আপনারা কত সাংবাদিকরা এসেছেন, এটা উৎসবের অংশ। ভেতরে দেখেছেন কী পরিমাণ লোক কাজ করছে, মেশিনের মতো কাজ করছে, তারা তো নিজেরাই একটা এনকারেজ ফিল করছে। তারাও আনন্দ পাচ্ছে যে, দেশের জন্য একটা কাজ করতে পারবে।
তাহলে ইসির প্রতি আস্থা ফিরে আসবে কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মানুষ তো আস্থায় আছেই। সময় আসুক দেখবেন। আপনারা, আমরা, দেশবাসী, বড় রাজনৈতিক দলসহ সবাই তো ইলেকশন চায়। সবাই দেশের মঙ্গল চায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব প্রধান, আমরা একসঙ্গে জাতিকে একটা মেসেজ দিয়েছি যে, আমরা সবাই এক ইলেকশনের ব্যাপারে। আমরা সবাই একটা সুন্দর নির্বাচন সবাই চাই।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসী ভাই-বোনদোর ভোটের ব্যবস্থা করছি। আবার ভোটের কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের ভোটের ব্যবস্থা করছি। কয়েদিদেরও ভোটের ব্যবস্থা করেছি। ৫৪ বছরে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পোস্টাল ব্যালট মডেল বিশ্বের মডেল হয়ে থাকবে। কিছু ভুল-ত্রুটি থাকবে। প্রথমবার পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আগামী দিনে আরও বারবে, এতে আমরা আরও সন্তুষ্ট হব।’
পোস্টাল ব্যালটের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘পোস্টাল ব্যালটে বহু ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। যখন যা চ্যালেঞ্জ এসেছে, আমরা তা মোকাবিলা করেছি।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে গণভোটকে সামনে রেখে প্রচারণার উদ্দেশে বিশেষভাবে নকশাকৃত ‘সুপার ক্যারাভ্যান’ নামে ১০টি ‘ভোটার গাড়ি’ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে দেশব্যাপী যাত্রা শুরু করেছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সুপার ক্যারাভ্যান’-এর উদ্বোধন করা হয়।
ফিতা কেটে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এই প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য হলো, ‘দেশের চাবি আপনার হাতে’।
সচেতনতা বাড়াতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সাতটি সংক্ষিপ্ত টিভিসি তৈরি করেছে, যেখানে ফেলানী হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক প্রতিবেশী প্রভাব ও নির্ভরশীলতা ইত্যাদি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এসব টিভিসি দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হবে, যাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি পায়।
কর্মকর্তারা জানান, সরকার আরও অন্তত ৩০টি টিভিসি তৈরির পরিকল্পনা করেছে।
ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বাদ আসর ফেনী জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে এই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরশুরাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তালেব। এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর আবু তালেব সংবাদমাধ্যমকে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে এই ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে নির্বাচনি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো। তিনি বলেন, বেগম জিয়া এ দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতীক এবং ফেনী-১ আসনের জনগণ তাঁর নেতৃত্বে আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। উল্লেখ্য, এই আসনটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এবং এর আগে তিনি এখান থেকে মোট পাঁচবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি এই আসন থেকে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন।
একই দিনে বগুড়া-৭ আসন থেকেও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ফেনী-১ আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ পুরো জেলাজুড়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোটারদের মাঝে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে। বেগম জিয়ার এই নির্বাচনি প্রত্যাবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকায় এখন উৎসবমুখর নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, জনগণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এবারও এই আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয় নিশ্চিত করতে তাঁরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফেরার মাত্র দুদিন পরেই অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর তিনি ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। মূলত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই তিনি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আজ বিকেলে সিইসির কার্যালয়ে এই বৈঠকে মিলিত হন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ডক্টর মোহাম্মদ জকরিয়া। বৈঠক শেষে সালাউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তারেক রহমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং এর অংশ হিসেবেই তিনি ভোটার হতে যাচ্ছেন। যেহেতু বর্তমানে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তাই ভোটার তালিকায় নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হবে, যা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং ভোটার হওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তাঁর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করবে এবং নির্বাচনি মাঠকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলবে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তিনি দেশের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ফিরে আসছেন। বর্তমানে তাঁর আগমণ ও ভোটার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে প্রয়োজনীয় সব আইনি ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বিএনপি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব মো: হাফিজ ইব্রাহিম মনোয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোরঞ্জন বর্মনের কাছ থেকে হাফিজ ইব্রাহিমের পক্ষে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা এ মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এ সময় উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক সরোয়ার আলম খান, সদস্য সচিব এ্যাড. কাজী মো: আজম, বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা আল ইমরান খোকন, যুগ্ন আহ্বায়ক কাজী মঞ্জুরুল আলম ফিরোজ, হাফিজ ইব্রাহিমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী আকবর হাওলাদার, দৌলতখান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইকবাল হোসেন, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী আকবর পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান কবির, সহ সভাপতি আঃ রব হাওলাদার, বশির আহমেদ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান লিটন, শাহাবুদ্দিন বাচ্চু সহ উপজেলা ও পৌর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক সরোয়ার আলম খান বলেন, আমরা ভোলা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের পক্ষে মনোয়নপত্র উত্তোলন করেছি। আমরা লক্ষ্য করছি যে, সারাদেশে এ নির্বাচন বানচাল করার জন্য ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের দ্রুত যে সব সন্ত্রাসী রয়েছে অর্থ দানকারীরা যারা রয়েছে এবং আজ যারা বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন নির্বাচন বানচাল করার জন্য সেগুলো চিহ্নিত করা দরকার। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু সুন্দরভাবে হয়, বাধাগ্রস্ত যেন না হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাই।
প্রার্থীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংকট আছে কি না জানতে চাইলে সরোয়ার আলম খান বলেন, দেখুন হাফিজ ইব্রাহিম এই আসনে খুবই জনপ্রিয় তিনি এই আসন থেকে এমপি ছিলেন। আমরা মনে করি, দৌলতখান বোরহানউদ্দিনের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তবে এ আসনে বিশৃঙ্খলা করার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছেন তারা পরিবেশ কিছুটা হলেও খর্ব করার চেষ্টা করবে। আমরা আশাকরি সামনের নির্বাচন উৎসবমুখর হবে এবং শান্তিপূর্ণ হবে। জনগণ এবং ভোটাররা স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দেবে। এটাই আমাদের বিএনপির আশা এবং আকাঙ্ক্ষা। আমরা মনে করি এ নির্বাচনে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো সমস্যা করতে পারবে না। তারা যদি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে জনগণকে নিয়ে বিএনপি তা প্রতিহত করবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-১০ আসন থেকে আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডি থানা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে গত দেড় বছর কাজ করার যে অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে, তা তিনি জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে চান। তাঁর মতে, প্রশাসনের ভেতরে থেকে কাজ করার এই অভিজ্ঞতা তাঁকে তৃণমূলের মানুষের সমস্যাগুলো আরও সহজে সমাধানে সহায়তা করবে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করা গেলেও তাদের গ্রেফতারে সরকারের ব্যর্থতা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি দাবি করেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের এখন পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাঁকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে সতর্ক করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, যদি প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে জনগণের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে না পারেন, তবে নির্বাচনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ সময় তিনি প্রতিটি প্রার্থীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। ঢাকা-১০ আসনে আসিফ মাহমুদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বর্তমানে রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার। এখন পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই আসনে তাদের কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। আসিফ মাহমুদের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ রাজধানীর এই আসনে এক ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।