প্রতি বছর ঈদ উৎসবে দেশের বিভিন্ন টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলসহ প্রায় তিন শ থেকে চার শ নাটক নির্মিত হয়ে থাকে। কখনও কখনও এই সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে। এখনকার সময়ে টিভি চ্যানেল থেকে ইউটিউবেই নাটক নির্মাণের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে কিছু ইউটিউব চ্যানেলের নাটক টিভিতে প্রচার হওয়ার পর সেগুলো আবার ইউটিউবেও প্রচার হচ্ছে। আবার বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা শুধু নিজস্ব ইউটিউবের জন্যই নাটক নির্মাণ করে থাকে। অন্যদিকে বর্তমানে প্রায় সব টিভি চ্যানেলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকায় তাদের নিজেদের নির্মিত নাটক টিভিতে প্রচারের পর আবার সেগুলো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। ফলে এখন একটি নাটক বানানোর লগ্নিকৃত টাকা দুই মাধ্যম থেকেই প্রযোজক বা লগ্নিকারক ফেরত পাচ্ছেন। যার কারণে নাটকের বাজেট এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একটা সময় বলা হতো বাজেট নেই, নাটকে বাজেট কম- এটা এখনকার সময়ে নাটকের বাজেটের দিকে তাকালে বলা যাবে না।
বিশেষ করে ইউটিউবের আধিপত্য হওয়ার পর থেকেই গত কয়েক বছর ধরে একেকটি নাটক অনেক টাকায় বানানো হচ্ছে। একটা সময় নাটকের বাজেট নিয়ে নানান ধরনের কথা শোনা যেত। পরিচালক-অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে নাটকের কলাকুশলীরা সব সময় বলত- নাটকের বাজেট কমে গেছে, এত কম বাজেটে নাটক বানানো সম্ভব নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউটিউবের কল্যাণে এখন নাটকের সেই বাজেট কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ ইউটিউবের আগে নাটকের বাজেট অনেক কমে গিয়েছিল। ২০১৬-২০১৭ সালেও নাটক এখনকার মতো এত বাজেটে নির্মিত হতো না। ২০১৮ সাল থেকে আস্তে আস্তে নাটকের বাজেট বাড়তে থাকে। নরমালি এখন একটি নাটক বানাতে চার-পাঁচ-ছয় লাখ টাকা নির্মাতারা হরহামেশাই পাচ্ছেন। এর থেকেও কম বাজেটে ছোট কিছু কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। ওইদিকের হিসেবে না গিয়ে যেগুলো আমাদের মেইনস্ট্রিমের নাটক বলে চিহ্নিত তা নিয়েই কথা হচ্ছে।
আর্টিস্ট ভেদে এখন একেকটি নাটকের বাজেট দশ-বারো-পনেরো লাখ পর্যন্ত পাচ্ছেন নির্মাতারা। এবার ঈদে তো আঠারো-বিশ লাখ এমনকি পঁচিশ লাখে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই যে এত এত বাজেট পাচ্ছেন নির্মাতারা, নাটকের গল্পে কতটা ভেরিয়েশন পাচ্ছেন দর্শক? সেই একই অভিনয়শিল্পীদের একই প্রেম কাহিনি, কমেডি গল্প, চিল্লাচিল্লি কিংবা প্রেম হওয়ার শুরুতে ঝগড়া, তারপর প্রেম, পরিবার মানে না- টাইপের গল্প অথবা প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, প্রেমিক চাকরি পায় না, পরিবার মানে না ইত্যাদি ইত্যাদি গল্প। অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো গল্প। আর এখন যোগ হয়েছে নাটকে গানের ব্যবহারসহ ঢাকার বাইরে শুটিং- দামি ক্যামেরা এবং বিজ্ঞাপনের মতো ইউনিট-ক্রু নিয়ে মুভ করা। বাজেট বাড়ছে, খরচ করতে সমস্যা নেই। কিন্তু যেই গল্পের জন্য নাটক- সেই গল্পের জন্য কতটা খরচ করে নাটক নির্মিত হচ্ছে? মানে ভালো গল্পের এবং ‘খরচওয়ালা’ গল্পের পেছনে কি সেই বাজেটটা যাচ্ছে?
বিশিষ্ট সাংবাদিক, নাট্যকার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেজানুর রহমান বলেন, ‘নাটকে ভালো গল্পের সংকট রয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি অনেকের কাছে ভালো গল্প থাকার পরও সে বাজেটের জন্য তা বানাতে পারছেন না- এটাও সত্যি। আসলে এখন কোনো লেভেল কোম্পানি (ইউটিউব), টিভি কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রথমেই নির্মাতার কাছে জিজ্ঞাসা করেন- ‘যে গল্প নিয়ে কাজ করবেন সেটির ভিউ হবে নাকি’- এই কথায় নির্মাতা নতুন কোনো কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করতে চান না। সেই একই ফরম্যাটে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। এখন দেখা গেছে কেউ একজন একটি গল্প নিয়ে কাজ করায় সেটির ভিউ হয়েছে- সবাই সেটা বানাতে ছুটে। মানে হলো ভিউয়ের পেছনে দৌঁড়াচ্ছি। ভিউ-ই যখন এখন একমাত্র বাণিজ্য তখন তো গল্প ফ্যাক্ট না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাতাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। নির্মাতারা স্বাধীনতা না পেলে কাজ করা মুশকিল। অমুকটার মতো, তমুককে নিয়ে জুটি করে নাটক বানানোর জন্য প্রেসার না দিয়ে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন গল্পসহ ‘পাঁচজন- পাঁচজন’ জুটিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে দেয়া হচ্ছে নাটক বানানোর জন্য। সেই ‘পাঁচজন-পাঁচজন’ জুটির দশজন এতো ব্যস্ত যে, তাদেরকে মেনটেইন করতে গেলে নাটকের দিকে নজর দেয়া যাচ্ছে না। তারা ব্যস্ত থাকতেই পারেন। কিন্তু জুটি বেঁধে দিলেই বিপদ। নির্মাতাকে বলতে হবে- স্বাধীনভাবে গল্পে যে ধরনের আর্টিস্ট যায়, তাদেরকে নিয়েই বানান। তাহলে নতুন গল্প এবং নতুন আর্টিস্টও ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হবে। বর্তমানে যারা কম্প্রমাইজ করে কাজ করছেন যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ফলে মনে রাখার মতো নাটক হচ্ছে না। এখন আমাদের লাখ লাখ টাকা বাজেট যাচ্ছে, শত শত নাটকও হচ্ছে। কিন্তু অর্জনের জায়গাটা ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ নাটকে লোকেশন (প্রয়োজন না হলেও), লাইট-ক্যামেরাসহ এগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বাজেট ব্যবহার, মেইন আর্টিস্টদের বেশি রেম্যুনারেশন (আর্টিস্টরা নিজেরাই নিজেদের পারিশ্রমিক ঠিক করছেন), শুটিং ইউনিটে বিলাসবহুল খরচ করায় বেশির ভাগ নাটকের মূল বাজেট সেখানেই চলে যাচ্ছে। ফলে নাটকে এত এত বাজেট পাওয়ার পরও যেই ভিন্নধর্মী গল্পটির পেছনে বাজেটটা খরচ করার কথা- সেখানে কি খরচ হচ্ছে না। সেই একই গল্প, একই মেকিং এবং কমেডি টাইপ নাটকগুলোই নির্মিত হচ্ছে। এখন তো একটি নাটকের গল্পের সঙ্গে আরেকটি নাটকের নামেরও বেশ মিল পাওয়া যায়। যেমন- ‘তুই আমারই’, ‘তোর জন্য’, ‘আজকাল তুমি আমি’, ‘তোমাতে হারাই’, ‘তোমায় ভালোবেসে’- এবারের ঈদের এই নাটকগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। এরকম ইউটিউবে খুঁজলে আরও অনেক নাটক পাওয়া যাবে যেগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। আরও রয়েছে ইউটিউবে ‘কাটতি টাইপ’ নাটকের নাম। যা আসলে শিল্পমানের নাটকের নাম নয়। ফলে দর্শক আসলে একটি নাটক দেখে তার মনের মধ্যে সেটি ‘দাগ’ কাটাতে পারছেন না। আর এখনকার নাটকগুলোতে প্রায় একই অভিনয়শিল্পী (অমুকের সঙ্গে তমুক, তমুকের সঙ্গে অমুক- ধরাবান্দা জুটি) হওয়ায় দর্শক আরও বিভ্রান্ত হচ্ছেন যে সে আসলে কোন নাটকটা দেখেছেন। ফলে মনের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং খুব ভাবনায় ভাবানোর মতো নাটক এখন খুব একটা দেখা যায় না।
নাটকে বাজেট বাড়লেও গল্পের অভাব কিংবা শিল্পমান সম্পন্ন নাটক কম নির্মিত হওয়ার পেছনে কারণ কি? এই বিষয়ে কথা বলেন নির্মাতা রাকেশ বসু। তিনি বলেন, ‘বাংলা নাটকের এখন সব থেকে বড় সমস্যা হলো- গল্প সংকট। একটা সময় বাজেট নিয়ে সবাই কম-বেশি কথা বলতেন। কিন্তু এখন বাজেট সমস্যা থেকে গল্প সংকটটাই অনেক বড় ইস্যু একটা ভালো কাজের জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা যে ধরনের কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং ভিউ কাউন্ট হয় সেই একই ধরনের গল্প নিয়েই কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হলো ভিউ হওয়া একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। ফলে অভিনয়শিল্পীরা জনপ্রিয়তার দিকে নজর দিতে গিয়ে ভালো গল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারবার।’
আগে একটি নাটকের স্ক্রিপ্ট ফাইনাল হতো। টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রধানসহ ক্রিয়েটিভ টিম মিলে গল্পটি ফাইনাল হওয়ার পর কোন অভিনয়শিল্পী কোন চরিত্রে অভিনয় করবে সেটা ভেবেচিন্তে কাস্টিং ফাইনাল করা হতো। এরমধ্যে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কয়েকদফায় রাইটার ও পরিচালকসহ মিটিং হতো। তারপর ফাইনালি নাটকটি নির্মাণে যাওয়া হতো। নাটক নির্মাণের পর তা দেখে প্রিভিউ কমিটির মতামত থাকত এবং সেখানে পাস হলেই তা ফাইনালি সম্প্রচারে যেত।
আর এখন অনেকটা ঝালমুড়ি বানানোর মতোই নাটক বানানো হয়। মানে অমুক-তমুকের ভিউ আছে- আগে তাদের ডেট ‘লক’ করা হোক। তারপর তারা যেই গল্প পছন্দ করবেন কিংবা অনেক সময় অভিনয়শিল্পীও গল্প দিচ্ছেন সেটা নিয়ে- ডে নাইটের কিছু সিক্যুয়েন্স বানিয়ে (শুটিংয়ের সুবিধার্থে) শুটিংয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। স্লো-মো শট, গানের কিছু শট, নায়ক-নায়িকার দেখাদেখি-চোখাচোখি আর বিয়ে দিবে না বাবা-মা, ছেলে বেকার, চাকরি হয় না, পরিবার মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয় আর চিল্লাচিল্লি ভরা কমেডি গল্প। বেশির ভাগ নাটকই এখন এভাবে নির্মিত হচ্ছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি এখন সেট বানানোতেও ভালো খরচ করে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে।
ইউটিউবের সঠিক নিয়মনীতি না থাকা, নাটকে প্রিভিউ সিস্টেম না থাকায় এবং ‘ভিউই’ একমাত্র বাণিজ্য হওয়ায় দিনকে দিন মানহীন নাটক বানানোর প্রতিযোগিতা হচ্ছে এবং তা নিম্নমানের তলানিতে যাচ্ছে বলে অনেকে অভিমত দেন। এর পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথাও তারা উল্লেখ করেন তা হলো- একটা সময় যারা নাটক নির্মাণ ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা টেলিভিশন ও থিয়েটারে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। আর এখন শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যেই (বেশির ভাগ) ইউটিউব চ্যানেল করে নাটকের নামে ‘কনটেন্ট’ বানানো হয়।
অথচ গল্পনির্ভর, জীবনবোধের নাটক, সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের গল্প, আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কত কত গল্প। প্রতিদিন সংবাদের পাতায় কত গল্প প্রকাশ পায়, অথচ আমাদের দেশের নাটক নির্মাতারা এসব গল্প দেখেন না। কারণ এসব গল্পে ভিউ পাওয়া যায় না। তাই ইউটিউব মালিক তথা প্রযোজকরা ওই ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করতে বা নির্মাণে আগ্রহ পান না।
ইউটিউবে ভিউ হচ্ছে সস্তা-চটুল, কমেডি তথা সুরসুরি প্রেম মার্কা গল্পের। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা বাজেট দিয়ে যেসব ‘নাটক’ বানানো হচ্ছে তা আসলে কতটা সমাজে প্রভাব ফেলছে? কি শিখছেন তরুণ প্রজন্ম? অবশ্য তরুণ প্রজন্ম নাকি যা বানানো হচ্ছে- তাই দেখতে চায় বলে তাদের অভিমত। এত এত বাজেটের টাকা আদতে ‘শ্রাদ্ধ’ করাই হচ্ছে বলে প্রকৃত নাট্যপ্রেমী তথা সত্যিকারের সংস্কৃতপ্রেমীরা অভিমত দেন। তাদের মতে, বেশি বাজেট এলে বেশির ভাগ নাটককে ঝকঝকে তকতকে বানানো আর ‘ফুটেজ’ ছাড়া আর কিছুই না বলেও অনেকে অভিমত দেন। তাই ভালো বাজেট দিয়ে ভালো গল্প এবং ভিন্নধর্মী চরিত্রসহ জীবনবোধের নাটক বানানোর তাগিদ দেন তারা।
বর্তমানে নাটক নির্মাণের একটা চিত্র তুলে ধরলে এখনকার পরিস্থিতিটা আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে। এখন নাটকের কয়েকজন মেইন নায়ক তারা তাদের নিজেদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক বানিয়ে তা নিজেই বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এবং টিভি চ্যানেলে তাদের চাহিদামতো সরবরাহ করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নাট্য নির্মাতা বলেন, ‘এভাবে আসলে কাজ করে অভ্যস্ত না। এই ভিউ বাণিজ্য এসে একজন নির্মাতার হাত-পা বন্দি হয়ে গেছে। আমরা আসলে বিক্রি হয়ে গেছি। এখন তো চাহিদাসম্পন্ন নায়করা তাদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক তৈরি করেন। তারা নিজেদের বানানো ডিরেক্টর টিম, প্রোডাকশন টিমসহ ডিওপি এবং কো-আর্টিস্ট- সবই তারা ঠিক করেন। ডিরেক্টরকে দিয়ে শুধু ডিরেকশন (আসলে নামে ডিরেকশন) দেওয়ান। কোথায় এডিটিং হবে, কোথায় মিউজিক হবে এবং কীভাবে কাজটা কোথায় কত টাকায় বিক্রি হবে- সবই তিনি (নায়করা) ঠিক করেন। এভাবে চললে তো আসলে নাটকের ‘মান’ বলে কিছু থাকবেই না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’
ভালো নাটক বানানোর কিছু ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। কিছু যে ভালো গল্পের নাটক নির্মিত হচ্ছে না তা বলা যাবে না। যারা সত্যিকারের ভালো গল্পের খোঁজ করেন এবং জীবনবোধের গল্পসহ ভিন্নরকম কিছু বা আইডলজির জায়গা থেকে কাজ করছেন তারা ঠিকই শত প্রতিকূলতায় কিছু নাটক বানাচ্ছেন। আমাদের দেশে ওটিটিতে ওয়েবসিরিজ ও ওয়েবফিল্মে ভিন্নধর্মী গল্পের কাজ হওয়ায় সেগুলো দর্শকদের কাছে সাড়া ফেলেছে। ফলে তার কিছুটা ছোঁয়া নাটকেও লেগেছে বলা যায়। এবারের ঈদে ভিন্নধর্মী গল্পের তেমনকিছু নাটক হচ্ছে- ‘স্মৃতিসারক’, ‘বিদায় বসন্তে মধ্যাহ্ন রোদে’, ‘নিখোঁজ’, ‘বোঝা’, ‘শেষমেষ’, ‘সম্ভবত প্রেম’, ‘কিছু কথা বাকি’, ‘দুনিয়া’, ‘অভাব’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘অভিশাপ’, ‘অভাব, ‘জাদুর শহর’, ‘গর্ভ’, ‘কলিজার টুকরা’, ‘স্বপ্নটা সামান্যই’সহ আরও কিছু নাটক।
এখন প্রায় একই মুখ ঘুরেফিরে সব নাটকেই দেখতে হচ্ছে বলে সব নাটক একইরকম লাগার কথা দর্শকরা অভিমত দিয়েছেন। এক সময় নাটকে নিশো, মেহজাবীন, অপূর্ব, তানজিন তিশাকে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যেত। এখনকার সময়ে অপূর্ব ও তানজিন তিশাকে নাটকে দেখা গেলেও নিশো-মেহজাবীনকে দেখা যায় না। নিশো চলচ্চিত্র ও ওটিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গত কয়েক ঈদ উৎসবে তাকে নাটকে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে মেহজাবীনও বর্তমানে ওটিটির কাজের সঙ্গে সম্প্রতি সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। তারপরও নাটকে মেহজাবীনের কাজের আগ্রহ রয়েছে; কিন্তু ভালো গল্পের অভাবে কাজ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ‘সাবা’ ও ‘প্রিয় মালতী’ শিরোনামের দুটি ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছেন ভক্তদের মেহু। তার জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমা ঘোষণার অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি নাটকে একেবারেই কাজ করতে চাই না, বিষয়টা তেমন না। আমি আসলে ভালো গল্প পাই না। ভালো গল্প পেলে অভিনয় অবশ্যই করব। আমার কাছে যে স্ক্রিপ্টগুলো আসে সেগুলো পছন্দ হয় না। দর্শক আসলে ভিন্নতা চায়। আমি অনেক দিন পর সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলের ‘অনন্যা’ করেছি। কারণ এটার গল্পটা ভিন্ন। এটার জন্য আমি সাড়াও পেয়েছি বেশ। তাই আমি এরকম ভিন্ন ভিন্ন গল্পের কাজ করতে চাই। তেমন স্ক্রিপ্ট পেলে কাজ করব।’
ঈদে রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ‘রূপান্তর’ নাটকটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার এবং তৃতীয় লিঙ্গের ইস্যুতে নাটকটিকে শেষমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা শ্রেণি ধর্মের বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করে। ফলে কর্তৃপক্ষ নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে নাটক বানাতে গেলেও নানান সমস্যার কথা উল্লেখ করেন নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে ভিন্ন ধরনের গল্পের নাটক বানানো হচ্ছে। তবে সেটা সংখ্যায় কম। এখন আলাদা টাইপের গল্পের নাটক বানাতে গেলেও নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমি নিজেও ‘রূপান্তর’ নিয়ে একপ্রকার জটিলতায় রয়েছি। তাই যারা ইউটিউবের মালিক এবং প্রযোজক তারা ভিন্ন টাইপের গল্পের নাটক বানাতে রিস্ক নেয় না। বাধ্য হয়েই গদবাঁধা গল্পের নাটক বানায়। নাচ-গান আর বিউটি লোকেশনসহ কাজগুলো হচ্ছে।’
নাট্যপ্রেমী-বিনোদনপ্রেমী তথা সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রত্যাশা, নাটকের গল্পে সমাজের বাস্তবচিত্র থাকবে। কারণ ‘সমাজের দর্পণই হচ্ছে নাটক’। একটা সময় বিটিভিতে নাটক প্রচারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমের সাজটা কেমন হবে- তা সেই নাটক থেকে শিখত মধ্যবিত্ত সমাজ। সময় বদলেছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের আমূল পরিবর্তনে নিজেদের ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ যেন নাটকের মাধ্যমে প্রচার হয়ে তা আবার সমাজে প্রভাব ফেলুক- তা কারোরই কাম্য নয়। কারণ আজকে পর্দায় যা দেখানো হবে তাই দেখবেন দর্শক। সংস্কৃতিকর্মী তথা ক্রিয়েটিভরাই প্রকৃত ‘দর্শক’ তৈরি করেন। সারা পৃথিবীতেই রুচিহীন-সস্তা কনটেন্টেরই ‘ভিউ’ বেশি, এটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যেও নিজেদের দর্শক নিজস্ব গল্প দিয়ে নিজেদেরই তৈরি করতে হবে- এমনটাই মনে করেন প্রকৃত সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় কাটাচ্ছেন জয়া আহসান। কারণ, চলতি বছর দুই বাংলা মিলে মুক্তি পেয়েছে হাফ ডজন সিনেমা। ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’-এর পর জুলাই ও আগস্টে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত দুই সিনেমা ‘ডিয়ার মা’ ও ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। এসব সিনেমা অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি আরআরকে পটকাস্টে উপস্থিত হয়ে ওপার বাংলায় কাজের সুযোগ ও দেশের সিনেমাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
কলকাতায় কাজ শুরুর বিষয়ে জয়া আহসান বলেন, ‘আমি শিল্পী, আমাকে তো কাজ করতে হবে। অভিনয় ছাড়া তো আমি কিছু করিনি বা পারি না। তখন বাংলাদেশে আমি করতে পারি, সে রকম কাজ পাচ্ছিলাম না। সেই কষ্টের জায়গা থেকে এবং শিল্পের প্রতি আমার প্যাশনের কারণেই কলকাতায় যাওয়া।’
দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে কাজ করতে হলে পরিচালকের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকতে হয়। সেটি তার পক্ষে সম্ভব না বলেও উল্লেখ করে জয়া। তিনি বলেন, ‘যে পরিচালকদের জন্য আমি সবসময় হাজির ছিলাম, তারা আমাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেননি বা করতে পারেননি। বাংলাদেশে একটা সমস্যা, পরিচালকের বান্ধবী, না হয় স্ত্রী থাকে। এটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না; এসবে আমি যাইনি, যাবও না। এসব কারণে আমি কর্নারড হয়েছি, এতটা নিবেদিত থাকার পরও। যা কলকাতায় হয়নি। বাইরের আর্টিস্ট হওয়ার পরও ওরা আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আমাকে ভালো চরিত্র দিয়েছে। আমাকে নিয়ে ভেবেছে এবং আমাকে কেন্দ্র করে গল্প বানিয়েছে।’
জয়া আরও বলেন, ‘এখনও বাংলাদেশে নারীকে কেন্দ্র করে কাজ করতে ভয় পান অনেক পরিচালক। করলেও এমন কাজে হয় তার বান্ধবীকে নেবেন, না হয় স্ত্রীকে নেবেন। অথবা মেগাস্টার, সুপারস্টার কাউকে নেবেন। একজন পিওর আর্টিস্টকে নিয়ে বাজি ধরতে রাজি নন তারা। তবে এর বাইরেও অনেক নির্মাতা কাজ করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, অনেক ডায়নামিক পরিচালক আছেন, যারা আমার কাছ থেকে বা আরও গুণী অভিনেতাদের থেকে ভালো কাজ বের করতে পারতেন। কিন্তু তারা করেননি।’
গেল বছর বলিউডে অভিষেক হয়েছে জয়ার। এরপর বলিউডের প্রযোজক করণ জোহরের ‘ধর্মা প্রোডাকশন’ থেকে মুক্তি পাওয়া ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলেন জয়া। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা ছাড়তে হয়েছে তার।
জায়া বলেন, ‘এটা অন্যরকম প্রজেক্ট ছিল। বিভিন্ন কারণে তখন সিনেমাটা করা হয়নি। যেটা ভাগ্যে থাকবে সেটা হবেই। এটা নিয়ে আফসোসের কিছু নেই।’
সবশেষ জয়াকে দেখা গেছে ‘ফেরেশতে’ সিনেমায়। বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি। পরিচালনা করেছেন ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ। জয়া ছাড়াও দেখা গেছে শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ আলী, রিকিতা নন্দিনী শিমু ও সুমন ফারুককে।
দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু এবার নিজের জীবনের লড়াইয়ের গল্প বললেন। সাফল্যের ঝলমলে আলোয় থেকেও তার জীবন যে সংগ্রাম আর আত্মঅনুসন্ধানে ভরা, তা উঠে এসেছে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিটের মঞ্চে। সেখানেই নিজের জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন অভিনেত্রী।
জীবনের প্রতিটি উত্থান-পতন এসেছে ‘বাস্তব থাকার’ সিদ্ধান্ত থেকেই বলে জানিয়েছেন সামান্থা রুথ প্রভু। তিনি বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করেছি নিজের প্রতি সৎ থাকতে। আমার মায়োসাইটিস রোগের খবর আমি নিজেই প্রথম জানিয়েছিলাম। কারণ আমি চেয়েছিলাম মানুষ সত্যিটা জানুক। কিন্তু বাস্তব থাকা যে সবসময় সহজ নয়, সে কথাও স্পষ্ট করেন অভিনেত্রী।
স্বামী নাগা চৈতন্যের সঙ্গে চার বছরের দাম্পত্যজীবনের আকস্মিক বিচ্ছেদ একসময় পুরো দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
এ নিয়ে সামান্থা রুথ প্রভু বলেন, আমার জীবনের যারা অনুসারী, তারা জানেন-আমার বিচ্ছেদ, আমার অসুস্থতা- সবই প্রকাশ্যে এসেছে। আর সেই খোলামেলা আলোচনাই আমার জীবনে এনেছে প্রচুর ট্রলিং ও সমালোচনা। আমি হয়তো দুর্বল হয়েছিলাম, কিন্তু কখনো ভেঙে পড়িনি বলে জানান অভিনেত্রী।
সামান্থা বলেন, আমি নিখুঁত নই। আমি ভুল করি, হোঁচট খাই; কিন্তু আমি চেষ্টা করছি আরও ভালো মানুষ হতে। এখন তিনি শুধু অভিনয় নয়, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করে নিতে চান অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে। যদি আমার গল্প শুনে কেউ সাহস পায়, তবে সেটাই আমার সাফল্য বলে জানান অভিনেত্রী।
দীর্ঘ বিরতির পর ছোট পর্দায় ফিরলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় নির্মিত নাটক ‘দ্বিতীয় বিয়ের পর’-এ দেখা যাবে তাকে। নাটকটিতে তার সহশিল্পী হিসেবে আছেন ইরফান সাজ্জাদ ও আইশা খান।
ফিরলেন কত বছর পর- এই প্রশ্নের জবাবে নির্দিষ্ট সময় জানাতে না পারলেও নওশাবা বলেন, ‘অনেকদিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। চয়নিকা দিদির আন্তরিক আমন্ত্রণ আর গল্পের টানই আমাকে রাজি করিয়েছে।’
নাটকের কাজ থেকে দূরে থাকলেও থিয়েটার, ছবি আঁকা, বইপড়া এবং মেয়েকে সময় দেওয়ায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে ‘ফিরে আসা’ বলতে চাই না। আমি চাই, এমন চরিত্রে কাজ করতে যা আমাকে ভাবায়, নাড়ায়। না হলে থিয়েটার আর নিজের জগতে থাকাটাই শান্তির।’
অভিনয়ে অনিয়মিত থাকার কারণ জানিয়ে খানিকটা অভিমান করে নওশাবা বলেন, ‘অনেকেই কাজের প্রস্তাব দেন, কিন্তু সেখানে আমার জন্য অভিনয়ের জায়গা থাকে না। শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোই তো অভিনয় নয়। তাই আমি অল্প কাজ করি, কিন্তু নিজের মতো করে করি।’
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘সাত ভাই চম্পা’, এটি সাত বছর আগে টেলিভিশনে মেগা সিরিজ হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল। এবার এটি রূপ নিয়েছে সিনেমায়, মুক্তি পেয়েছে প্রেক্ষাগৃহে। শুটিংয়ের সময় ঘোড়া ও তলোয়ার চালানোর প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন নওশাবা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা আরো জোরালো হলে ছবিটি আরও দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারত।’
এরই মধ্যে টালিউডে অভিষেক হয়েছে তার। অনীক দত্ত পরিচালিত ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। নওশাবা জানান, ছবিটি বাংলাদেশেও মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে আরিফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তী অভিনীত সিনেমা ‘নীলচক্র’। গত কোরবানির ঈদে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল মিঠু খান পরিচালিত এই ছবি। দেশে মুক্তির পর প্রত্যাশিত সাড়া না পেলেও এবার ছবিটির গন্তব্য উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাগৃহ।
শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন শহরে দেখা যাচ্ছে ‘নীলচক্র’। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪টি শহরে মুক্তি দিচ্ছে পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান বায়স্কোপ ফিল্মস, যাদের মাধ্যমে এর আগে অর্ধশতাধিক বাংলা চলচ্চিত্র উত্তর আমেরিকায় প্রদর্শিত হয়েছে। এর বাইরে কানাডার একাধিক শহরেও মুক্তি পাবে ছবিটি।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার রাজ হামিদ বলেন, ‘আমরা প্রথম লাস ভেগাসে ছবিটির প্রিভিউ করি। এরপরই সিদ্ধান্ত নিই আমরা এটি বিপণন করব। মন্দিরা চক্রবর্তী নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পরবর্তী সুপারস্টার হতে পারেন। আর ছবিটির প্লটও একেবারেই ভিন্নধর্মী-দর্শকদের মুগ্ধ করবেই।’
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অজানা জগত ও তার ভেতর লুকিয়ে থাকা বিপদ–ফাঁদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘নীলচক্র’। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন মিঠু খান ও নাজিম উদ দৌলা, প্রযোজনা করেছেন এনায়েত আকবর।
ওভারসিজ মুক্তি প্রসঙ্গে নায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী বলেন, ‘নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার দর্শকেরা অনেকদিন ধরেই জানতে চাইছিলেন ছবিটি কবে আসছে। অবশেষে বায়স্কোপের উদ্যোগে আমরা ছবিটি নিয়ে যাচ্ছি তাদের কাছে। গল্পে যেমন বিনোদন আছে, তেমনি আছে এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তাও।’
‘নীলচক্র’-এর অফিসিয়াল প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কের কিউ গার্ডেন সিনেমা হলে। ছবিটিতে শুভ ও মন্দিরা ছাড়াও অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শিরীন আলম, খালেদা আক্তার কল্পনা, শাহেদ আলী, মনির আহমেদ শাকিল, প্রিয়ন্তী ঊর্বী, মাসুম রেজওয়ান প্রমুখ।
গানে গানে অগণিত শ্রোতার হৃদয় জয় করে পথচলার ছয় দশক পূর্ণ করেছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। ১৯৬৪ সালের ২৪ জুন মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘জুগনু’ সিনেমার গান ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কি পেয়ারি’ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার। গানের কথা লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি, সুর করেছিলেন মানজুর। সেই প্রথম গানের অনিন্দ্য কণ্ঠ ও অনবদ্য গায়কিতে শ্রোতারা মুগ্ধ হন, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার দুর্বার সংগীতযাত্রা; যা আজও থেমে যায়নি।
এই ছয় দশকের দীর্ঘ সফরে রুনা লায়লা গেয়েছেন ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান। অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় পদক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি। কিংবদন্তিদের কাতারে তার অবস্থান আজ অবিসংবাদিত।
রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি ভীষণ ভাগ্যবতী যে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এখনো গান গাইতে পারছি, সুর করছি। এটাই অনেক বড় আশীর্বাদ। আজীবন সংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই।’
মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাক শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ‘স্বরলিপি’ সিনেমায় তার গাওয়া ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে। এর আগেই পাকিস্তান রেডিও ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে দেবু ভট্টাচার্যের সুরে দুটি বাংলা গান ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’ এবং ‘আমি নদীর মতো পথ ঘুরে’ গেয়ে নজর কাড়েন তিনি।
পাকিস্তানের সিনেমা ও টেলিভিশনে নিয়মিত প্লেব্যাক করে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, স্বাধীনতার পর দেশপ্রেমের টানে কোনো দ্বিধা ছাড়াই ফিরে আসেন নবজাগ্রত বাংলাদেশে। সংগীতজীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় এখান থেকেই। ১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা হন প্রথম বাংলাদেশি শিল্পী, যিনি বলিউডে প্লেব্যাক করেন।
কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে ‘এক সে বড়কর এক’ সিনেমায় তার গাওয়া ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ গানটি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ‘জান-এ বাহার’, ‘ইয়াদগার’, ‘অগ্নিপথ’, ‘স্বপ্ন কা মন্দির’-সহ অসংখ্য সিনেমায় কণ্ঠ দেন তিনি। এ ছাড়া ‘দ্য গ্রেট বিগ ইন্ডিয়ান ওয়েডিং’ শিরোনামের সংগীত আয়োজনে পাঞ্জাবি বিয়ের আটটি গান রেকর্ড করেন দিল্লিতে। কনকর্ড প্রযোজনা সংস্থার চারটি অ্যালবামের জন্য মুম্বাই গিয়ে মাত্র এক দিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে ‘গিনেস বুক অব রেকর্ডসে’ নাম লেখান রুনা লায়লা।
ভাইনাল রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি থেকে শুরু করে অনলাইন মাধ্যম– সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে তার কণ্ঠের মাদকতা। তিনি শুধু সিনেমা বা স্টেজেই নন, টিভি ও নাটকের গানেও সমান পারদর্শী। ছয় দশক ধরে সংগীতের প্রতিটি মাধ্যমেই তার সুরেলা কণ্ঠ ছুঁয়ে গেছে শ্রোতার হৃদয়। নন্দিত অভিনেতা-পরিচালক আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রথম সিনেমাতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। তার সুরে তৈরি এক মিশ্র অ্যালবামে গেয়েছেন ভারতীয় কিংবদন্তি আশা ভোঁসলে, হরিহরণ, পাকিস্তানের আদনান সামি ও রাহাত ফতেহ আলি খান।
বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর ষাট বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে মাছরাঙা টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘স্টার নাইট’-এর একটি বিশেষ পর্ব সাজানো হয়েছে রুনা লায়লাকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার রাত ৯টায় মাছরাঙা টিভিতে বিশেষ এই পর্বটি প্রচার হয়।
জানা গেছে, এই আয়োজনে ৬০টি গোলাপে বরণ, ৬০ সংখ্যাকে উপজীব্য করে কেক কাটা, ৬০টি প্রশ্নে আলাপচারিতা। বিশেষ এই পর্বে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় ১০ সংগীত তারকা। তারা হলেন– কনা, লিজা, লুইপা, কোনাল, ঝিলিক, সুকন্যা, সাব্বির, কিশোর, অপু ও ইউসুফ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শিল্পীরাও পাঠিয়েছেন শুভেচ্ছা বার্তা।
রুনা লায়লা বলেন, ‘দেশে ফিরে মাছরাঙার এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত। ষাট বছরের পথচলার এ উদযাপনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।’
‘স্টার নাইট’-এর গ্রন্থনা করেছেন রুম্মান রশীদ খান, প্রযোজনা করেছেন অজয় পোদ্দার, সহযোগিতায় ছিলেন নিয়াজ মোরশেদ রাজীব। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন মৌসুমী মৌ।
ছোট পর্দার নতুন এক গল্পে দেখা মিলল আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের। ‘খুঁজি তোকে’ শিরোনামে একক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন নতুন এক চরিত্রে। এতে সাদিয়া আরও একবার জুটি বেঁধেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ইয়াস রোহানের সঙ্গে।
ভালোবাসার নতুন এক গল্প নিয়ে নির্মিত এ নাটকটি পরিচালনা করেছেন ইমরাউল রাফাত। একই সঙ্গে চিত্রনাট্য লিখেছেন এই নির্মাতা নিজে। সাদিয়া আয়মান ও ইয়ান রোহানের পাশাপাশি নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, সাবেরী আলম, আরেফিন জিলানী, শওকাত হোসেন মামুন, শামীম আহমেদ, ইমেল হক, মামুন খান, মেহেদি হাসান তরু, দীঘি, সায়মা, প্রসেনজিৎ, আরিয়ান প্রমুখ। সম্প্রতি ক্যাপিটাল ড্রামার ইউটিউব চ্যানেলে নাটকটি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
সাদিয়া আয়মানের কথায়, অভিনয়ের জন্য সবসময় ভালো এবং ব্যতিক্রমী গল্প বাছাই করে কাজ করেন। ‘খুঁজি তোকে’ তেমনই এক নাটক, যার গল্প ও চরিত্র আগের অভিনীত নাটকগুলো থেকে কিছুটা আলাদা। অন্যদিকে ইমরাউল রাফাত একজন পরীক্ষিত নির্মাতা, যার কাজ নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। কাজ পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। যে কারণে গল্প, চরিত্র, শিল্পীদের অভিনয়, নির্মাণ সব মিলিয়ে নাটকটি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করবে বলেও আশা করা হয়। সাদিয়া আয়মান ছাড়াও নাটকটি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন ইয়াশ রোহানসহ অন্য অভিনেতা অভিনেত্রীরা। নির্মাতা ইমরাউল রাফাতও মনে করেন, নাটকটি এ সময়ের দর্শকের মনে ছাপ ফেলবে।
এদিকে ‘খুঁজি তোকে’ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন সাদিয়া আয়মান। যেগুলো চলতি বছরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকাশ পাবে।
সিনেমার ট্রেলার নয়, কোনো গানও নয়-একটি মাত্র ছবিই তুমুল চর্চা হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। ইউটিউব তারকা মিস্টারবিস্ট (জিমি ডোনাল্ডসন) করে দেখালেন এমন কিছু, যা বহু বছরেও কোনো বলিউড পরিচালক পারেননি-বলিউডের তিন খান, শাহরুখ, সালমান ও আমিরকে একসঙ্গে একই ফ্রেমে আনলেন তিনি। খবর স্টেটেমেনের।
ছবিটি তোলা হয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত জয় ফোরাম ২০২৫-এ। মিস্টারবিস্ট গত ১৬ অক্টোবর নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ছবিটি শেয়ার করেন। ফ্রেমে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ভারতের তিন কিংবদন্তি তারকা-শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খান।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়! ছবির সঙ্গে মিস্টারবিস্টের এক লাইন ক্যাপশন যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল—হে ভারত, আমরা সবাই মিলে কিছু করি নাকি?
এই এক লাইনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন আগুন লেগে যায়। হাজার হাজার ভক্ত তৎক্ষণাৎ কমেন্টে ঝাঁপিয়ে পড়েন—কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করেন কোনো বিশাল যৌথ প্রজেক্টের, কেউ আবার মজা করে বলেন, মিস্টারবিস্ট হয়তো এবার ইউটিউব ভার্সনে বানাবেন ‘করন অর্জুন’!
ছবিতে শাহরুখ খানকে দেখা যায় ডার্ক রঙের দারুণ মানানসই স্যুটে, তার স্বভাবসুলভ ক্যারিশমা ছড়াতে। সালমান খানও সমান আত্মবিশ্বাসী, ফরমাল পোশাকে দারুণ লাগছে তাকে। আমির খান নিজের স্বকীয়তায় ভর করে হাজির হয়েছেন কালো পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামায়। আর মিস্টারবিস্ট, যথারীতি সাধারণ অথচ স্টাইলিশ ব্ল্যাক আউটফিটে।
তিন খানকে একসঙ্গে দেখা বলিউডে এক বিরল ঘটনা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা শাসন করে চলেছেন ভারতের বিনোদন দুনিয়া। একসময় পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও এখন তাদের মধ্যে রয়েছে পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব। শাহরুখ ও সালমানের বহু পুরোনো ভুল বোঝাবুঝি এখন অতীত, আর আমির সব সময়ই ছিলেন দুজনের কাছের মানুষ।
শেষবার তিনজনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল আমিরের ছবি সিতারে জমিন পার–এর বিশেষ প্রদর্শনীতে। চলতি বছরও তারা একসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন আনন্দ আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের অনুষ্ঠানে, যেখানে তিনজন একসঙ্গে পারফর্ম করে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
ভক্তদের মনে এখনো টাটকা সেই স্মৃতি, যখন তিন খান অতিথি চরিত্রে দেখা দিয়েছিলেন আরিয়ান খানের ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ব্যডস অব বলিউড’-এ, যদিও একই দৃশ্যে একত্রে ছিলেন না তারা। তবু সেই উপস্থিতিই শিরোনাম দখল করেছিল।
সংগীত, চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২৪তম সিজেএফবি পারর্ফমেন্স অ্যাওয়ার্ড-এ ‘বিশেষ সম্মানানা’ পাচ্ছেন বেবী নাজনীন (সংঙ্গীত), পূর্ণিমা (চলচ্চিত্র) এবং কাজী জেসিন (সাংবাদিকতা)।
কাল শুক্রবার বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারের হল অফ ফেমে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই তিন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, সিজেএফবির সভাপতি এনাম সরকার।
এছাড়া ২০২৪ সালে সংঙ্গীত, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন বিভাগে বছর সেরা পারর্ফমেন্সের জন্য পুরস্কৃত হবেন এই তিন বিভাগের সেরা তারকারা। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান জুড়ে থাকছে জনপ্রিয় তারকাদের পারর্ফমেন্স।
দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন মিডিয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অফ বাংলাদেশ-সিজেএফবি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকেই সংগঠনটি বাংলাদেশের মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের দিয়ে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুন বর্তমানে তেলেগু ও বলিউডে সমানভাবে আলোচনায়। এবার তাকে দেখা যাবে জনপ্রিয় পরিচালক অ্যাটলি কুমারের পরবর্তী বিগ বাজেট সাই-ফাই প্রোজেক্টে। ছবিতে আল্লুর বিপরীতে থাকছেন বলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। তবে চমকের এখানেই শেষ নয়, এই ছবির জন্য আল্লুকে দেওয়া হচ্ছে ১৭৫ কোটি টাকার পারিশ্রমিক। যা বর্তমানে ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ!
‘পুষ্পা’ ফ্র্যাঞ্চাইজির অভাবনীয় সাফল্যের পর আল্লুর জনপ্রিয়তা এখন জাতীয় স্তরে। সেই জনপ্রিয়তা মাথায় রেখেই অ্যাটলির এই নতুন প্রজেক্টের বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ভিএফএক্স–এর পিছনেই খরচ করা হবে ২৬০ কোটি এবং অভিনেতা-পরিচালক ও অন্যান্য টেকনিক্যাল টিমের জন্য বরাদ্দ ২৫০ কোটি টাকা।
সূত্রের দাবি, এই সিনেমায় বিভিন্ন লুক ও চরিত্রে দেখা যাবে আল্লু অর্জুনকে। যার জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক টেকনিশিয়ান কাজ করছেন। ইতোমধ্যে আল্লু অ্যাটলির সঙ্গে হলিউডের কয়েকটি প্রখ্যাত স্টুডিওতে ভিজিটও সেরেছেন।
পরিচালক অ্যাটলি , ‘এটা একেবারেই লার্জার দ্যান লাইফ প্রজেক্ট। আমরা এক ধাপ এক ধাপ এগোচ্ছি। অডিয়েন্সের জন্য এমন কিছু আনতে চাই, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ছবিতে দীপিকার পাশাপাশি আরও দেখা যেতে পারে রাশ্মিকা মন্দানা, জাহ্নবী কাপুর, ম্রুণাল ঠাকুর ও আর মাধবনকে। অ্যাটলি আরও জানান, হলিউডের যেসব টেকনিশিয়ানরা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন, তারাও বলেছেন এটা তাদের জন্যও দারুণ চ্যালেঞ্জিং। তবে কাজটা তারা ভীষণ উপভোগ করছেন। আর কয়েক মাসের মধ্যেই সবকিছু সামনে আসবে।’
দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা। ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে গান করে যাচ্ছেন তিনি। মধ্যে খানিক বিরতি নিলেও পরবর্তীতে ফের ব্যস্ত হন দেশ-বিদেশের স্টেজ শো এবং নতুন গানে। গত এক দশকে নারী কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে নতুন গান দিয়ে যে কজন আলোচনায় রয়েছেন, সালমা তাদের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে সংগীতের দুরবস্থাতেও সালমার বিভিন্ন গানে শ্রোতারা প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন। সালমাও নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন সময়ের সঙ্গে। সিডি থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে গান প্রকাশ শুরু হলে অনেকেই সেই মাধ্যমে হারিয়ে যান। কিন্তু সালমা একে একে নতুন সব গান প্রকাশ করে নিজেকে এই মাধ্যমেও প্রমাণ করেছেন। বিভিন্ন কোম্পানির বাইরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও নিয়মিত গান প্রকাশ করছেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে সালমা , ক্যাসেট থেকে সিডি, সিডি থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে গান প্রকাশ হচ্ছে। একজন শিল্পীকে কিন্তু সময়ের সঙ্গে থাকতে হয়। সেই চেষ্টাটা আমিও করেছি। হয়তো সামনে মাধ্যমে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। তাই বলে তো থেমে গেলে চলবে না। প্রতিটি মাধ্যমের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারাটাও কিন্তু বড় ব্যাপার। সেদিক থেকে আমি আমার শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তাদের চাওয়ার কারণেই আমি এখন অবধি গান করে যেতে পারছি। বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে এ গায়িকা , স্টেজ শো ভালো চলছে আলহামদুলিল্লাহ্। সবশেষ শো করলাম ঢাকার নন্দন পার্কে। তার আগে করলাম কক্সবাজারে। কার কী অবস্থা, বলতে পারি না। তবে, স্টেজ শোর ব্যস্ততা আমার ভালোই যাচ্ছে। এদিকে, নতুন গান নিয়েও চলছে এ গায়িকার ব্যস্ততা। সালমা , মঙ্গলবার একটি গানের রেকর্ডিং আছে। নতুন গান নিয়মিতই করছি। সামনেই একে একে এগুলো প্রকাশ হবে। এদিকে সালমা জানালেন, সম্প্রতি একটি গান রেকর্ডিং করেছেন তিনি। যেটি বেশ বিশেষ। সেটি সম্পর্কে অবশ্য এখনই জানাতে চান না তিনি। দ্রুতই আসবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
এই প্রথম সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন অভিষেক বচ্চন (বাঁয়ে), ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।
বলিউডে অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের বিচ্ছেদের গুঞ্জন নিয়ে গত কিছুদিন ধরে নানা আলোচনা চলছিল। তবে সব গুজব সরিয়ে রেখে, এক আবেগঘন মুহূর্তে স্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে আবারও সম্পর্কের দৃঢ়তা প্রকাশ করলেন অভিষেক।
সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে অভিষেক বচ্চন তার অভিনয় ক্যারিয়ারের প্রথম ‘সেরা অভিনেতা’ পুরস্কার অর্জন করেছেন। আর সেই পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করেছেন স্ত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও মেয়ে আরাধ্যাকে।
পুরস্কার হাতে নিয়ে অভিষেক , ‘গত ২৫ বছর ধরে এই পুরস্কারের স্বপ্ন দেখেছি। আজ তা বাস্তবে পরিণত হলো। আমার চেয়েও বেশি খুশি আমার পরিবার। এই সম্মান আমি উৎসর্গ করছি ঐশ্বরিয়া ও আরাধ্যাকে। তোমাদের ত্যাগ, ভালোবাসা আর সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আশা করি, এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে তোমরা নিজেদের আত্মত্যাগের সার্থকতা খুঁজে পাবে। তোমরা না থাকলে আমি আজ এখানে দাঁড়াতে পারতাম না।’
পরিচালক সুজিত সরকারের পরিচালনায় ‘আই ওয়ান্ট টু টক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্যই অভিষেক পেয়েছেন এই পুরস্কার। ছবিটিতে এক অসুস্থ বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের গল্পকে দারুণভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তার সংবেদনশীল অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
অভিষেক , ‘যারা আমাকে ২৫ বছর ধরে সুযোগ দিয়েছেন, আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন সব পরিচালক ও প্রযোজকদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা। এই সন্মান তাদেরও।’
তিনি আরো , ‘এই অর্জন সহজ ছিল না। তবে আজ মনে হচ্ছে, আমি এই পুরস্কারের যোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছি।’
৩৫ তম এনভায়রনমেন্টাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো পুরস্কার জিতল গোলাম রাব্বানীর সিনেমা ‘নিশি’। এমা অ্যাওয়ার্ডের স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে ছবিটি পুরস্কার পায়।
এমা অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পুরস্কার পেয়েছে এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য গোলাম রাব্বানীর।
ছবির সহপরিচালক হিসেবে আছেন জহিরুল ইসলাম। ১১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় রেডফোর্ড স্টুডিও সেন্টার, লস অ্যাঞ্জেলেসে ছবিটির পুরস্কার ঘোষণা করে। ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা ইন্টরন্যাশনাল একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানায়, এই নমিনেশন পাওয়ার মাধ্যমে ‘নিশি’ এখন বিশ্বের সেরা তিনটি স্টুডেন্ট ফিল্মের একটি। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক বিশাল অর্জন।
গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সত্যিই খবরটা আনন্দের। এমা অ্যাওয়ার্ডের ৩৫তম আসরে পুরস্কার জিতেছে আমাদের নিশি। এই অ্যাওয়ার্ডে প্রথমবার কোনো বাংলাদেশি ছবি এই পুরস্কার অর্জন করল। এটা বাংলা ছবির ইতিহাসে এক গৌরবময় অর্জন।
এই প্রাপ্তি আমার সিনেমা জার্নিকে আরো বেগবান করবে। সিনেমায় আমি প্রাণ-প্রকৃতির গল্প বলে যেতে চাই সবসময়।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ, গ্রিন ফিল্ম স্কুল অ্যালায়েন্স ও ইউনোস্ক ঢাকার সহযোগিতায় ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
ছবিটির গল্পে দেখা যাবে একজন চা-শ্রমিকের কন্যা সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় পানির সংকটের কারণে। বাড়িতে একটা টিউবওয়েল দেওয়ার নাম করে নাবালিকা নিশিকে বিয়ে করতে চায় কাঠ ব্যবসায়ী লালচাঁন।
ছবিটিতে অভিনয় করেছেন, নিশি, বিশ্বজিৎ, গণেষ, ভারতী।
পোল্যান্ডের বিখ্যাত ফিল্ম স্কুল লজ ফিল্ম স্কুলে এই ছবিটির চূড়ান্ত সম্পাদনা, কালার ও সাউন্ডের কাজ হয়েছে। ‘নিশি’ই বাংলাদেশের প্রথম কোনো ছবি যার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ হয়েছে লজ ফিল্ম স্কুলে। ছবিটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন এই ফিল্ম স্কুলের প্রাক্তনী নাতালিয়া পুসনিক।
সিলেটের একটি চা-বাগানের বিভিন্ন লোকেশনে ছবিটির শুটিং হয়েছে। গোলাম রাব্বানী জানান, ছবিটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। শিগগিরই বাংলাদেশেও ছবিটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে গোলাম রাব্বানীর ‘ছুরত’ ও ‘আনটাং’ ভেনিস ইন্টারকালচার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুদাপেস্ট চলচ্চিত্র উৎসব ও ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অনারেবল মেনশন পেয়েছে।
আগামী ১৯ অক্টোবর লন্ডনের রমফোর্ডের মেফেয়ার ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘লন্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। উদীচী যুক্তরাজ্য শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে মঞ্চ মাতাবেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। গত রোববার যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন ‘গানের পাখি’ খ্যাত এই শিল্পী।
অনুষ্ঠানে সাবিনা ইয়াসমিন গেয়ে শোনাবেন তার জনপ্রিয় বেশ কিছু গান। তার সঙ্গে মিউজিশিয়ান হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত শিল্পীরা। বাংলাদেশ থেকে তার সঙ্গে থাকবেন চন্দন দত্ত ও মনোয়ার হোসেন টুটুল। একই অনুষ্ঠানে গাইবেন সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকও।
এ প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে প্রবাসী ভাইবোনরাও কাজ করে যাচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের খবর। বিদেশের মঞ্চে যখন গাইতে উঠি, সামনে যেন একখণ্ড বাংলাদেশ দেখতে পাই। চেষ্টা করব, গান গেয়ে বরাবরের মতোই প্রবাসী ভাইবোনদের মন জয় করে আসতে।’
‘লন্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’ এর ১৬তম আসরে দিনব্যাপী বইমেলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে দুটি পর্বে। প্রথম পর্ব দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলবে, যেখানে থাকবে কবিতা পাঠ, শিশু-কিশোরদের আবৃত্তি ও নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, যেখানে থাকবে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান।
অনুষ্ঠান শেষে ২৫ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।