প্রতি বছর ঈদ উৎসবে দেশের বিভিন্ন টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলসহ প্রায় তিন শ থেকে চার শ নাটক নির্মিত হয়ে থাকে। কখনও কখনও এই সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে। এখনকার সময়ে টিভি চ্যানেল থেকে ইউটিউবেই নাটক নির্মাণের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে কিছু ইউটিউব চ্যানেলের নাটক টিভিতে প্রচার হওয়ার পর সেগুলো আবার ইউটিউবেও প্রচার হচ্ছে। আবার বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা শুধু নিজস্ব ইউটিউবের জন্যই নাটক নির্মাণ করে থাকে। অন্যদিকে বর্তমানে প্রায় সব টিভি চ্যানেলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকায় তাদের নিজেদের নির্মিত নাটক টিভিতে প্রচারের পর আবার সেগুলো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। ফলে এখন একটি নাটক বানানোর লগ্নিকৃত টাকা দুই মাধ্যম থেকেই প্রযোজক বা লগ্নিকারক ফেরত পাচ্ছেন। যার কারণে নাটকের বাজেট এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একটা সময় বলা হতো বাজেট নেই, নাটকে বাজেট কম- এটা এখনকার সময়ে নাটকের বাজেটের দিকে তাকালে বলা যাবে না।
বিশেষ করে ইউটিউবের আধিপত্য হওয়ার পর থেকেই গত কয়েক বছর ধরে একেকটি নাটক অনেক টাকায় বানানো হচ্ছে। একটা সময় নাটকের বাজেট নিয়ে নানান ধরনের কথা শোনা যেত। পরিচালক-অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে নাটকের কলাকুশলীরা সব সময় বলত- নাটকের বাজেট কমে গেছে, এত কম বাজেটে নাটক বানানো সম্ভব নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউটিউবের কল্যাণে এখন নাটকের সেই বাজেট কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ ইউটিউবের আগে নাটকের বাজেট অনেক কমে গিয়েছিল। ২০১৬-২০১৭ সালেও নাটক এখনকার মতো এত বাজেটে নির্মিত হতো না। ২০১৮ সাল থেকে আস্তে আস্তে নাটকের বাজেট বাড়তে থাকে। নরমালি এখন একটি নাটক বানাতে চার-পাঁচ-ছয় লাখ টাকা নির্মাতারা হরহামেশাই পাচ্ছেন। এর থেকেও কম বাজেটে ছোট কিছু কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। ওইদিকের হিসেবে না গিয়ে যেগুলো আমাদের মেইনস্ট্রিমের নাটক বলে চিহ্নিত তা নিয়েই কথা হচ্ছে।
আর্টিস্ট ভেদে এখন একেকটি নাটকের বাজেট দশ-বারো-পনেরো লাখ পর্যন্ত পাচ্ছেন নির্মাতারা। এবার ঈদে তো আঠারো-বিশ লাখ এমনকি পঁচিশ লাখে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই যে এত এত বাজেট পাচ্ছেন নির্মাতারা, নাটকের গল্পে কতটা ভেরিয়েশন পাচ্ছেন দর্শক? সেই একই অভিনয়শিল্পীদের একই প্রেম কাহিনি, কমেডি গল্প, চিল্লাচিল্লি কিংবা প্রেম হওয়ার শুরুতে ঝগড়া, তারপর প্রেম, পরিবার মানে না- টাইপের গল্প অথবা প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, প্রেমিক চাকরি পায় না, পরিবার মানে না ইত্যাদি ইত্যাদি গল্প। অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো গল্প। আর এখন যোগ হয়েছে নাটকে গানের ব্যবহারসহ ঢাকার বাইরে শুটিং- দামি ক্যামেরা এবং বিজ্ঞাপনের মতো ইউনিট-ক্রু নিয়ে মুভ করা। বাজেট বাড়ছে, খরচ করতে সমস্যা নেই। কিন্তু যেই গল্পের জন্য নাটক- সেই গল্পের জন্য কতটা খরচ করে নাটক নির্মিত হচ্ছে? মানে ভালো গল্পের এবং ‘খরচওয়ালা’ গল্পের পেছনে কি সেই বাজেটটা যাচ্ছে?
বিশিষ্ট সাংবাদিক, নাট্যকার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেজানুর রহমান বলেন, ‘নাটকে ভালো গল্পের সংকট রয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি অনেকের কাছে ভালো গল্প থাকার পরও সে বাজেটের জন্য তা বানাতে পারছেন না- এটাও সত্যি। আসলে এখন কোনো লেভেল কোম্পানি (ইউটিউব), টিভি কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রথমেই নির্মাতার কাছে জিজ্ঞাসা করেন- ‘যে গল্প নিয়ে কাজ করবেন সেটির ভিউ হবে নাকি’- এই কথায় নির্মাতা নতুন কোনো কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করতে চান না। সেই একই ফরম্যাটে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। এখন দেখা গেছে কেউ একজন একটি গল্প নিয়ে কাজ করায় সেটির ভিউ হয়েছে- সবাই সেটা বানাতে ছুটে। মানে হলো ভিউয়ের পেছনে দৌঁড়াচ্ছি। ভিউ-ই যখন এখন একমাত্র বাণিজ্য তখন তো গল্প ফ্যাক্ট না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাতাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। নির্মাতারা স্বাধীনতা না পেলে কাজ করা মুশকিল। অমুকটার মতো, তমুককে নিয়ে জুটি করে নাটক বানানোর জন্য প্রেসার না দিয়ে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন গল্পসহ ‘পাঁচজন- পাঁচজন’ জুটিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে দেয়া হচ্ছে নাটক বানানোর জন্য। সেই ‘পাঁচজন-পাঁচজন’ জুটির দশজন এতো ব্যস্ত যে, তাদেরকে মেনটেইন করতে গেলে নাটকের দিকে নজর দেয়া যাচ্ছে না। তারা ব্যস্ত থাকতেই পারেন। কিন্তু জুটি বেঁধে দিলেই বিপদ। নির্মাতাকে বলতে হবে- স্বাধীনভাবে গল্পে যে ধরনের আর্টিস্ট যায়, তাদেরকে নিয়েই বানান। তাহলে নতুন গল্প এবং নতুন আর্টিস্টও ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হবে। বর্তমানে যারা কম্প্রমাইজ করে কাজ করছেন যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ফলে মনে রাখার মতো নাটক হচ্ছে না। এখন আমাদের লাখ লাখ টাকা বাজেট যাচ্ছে, শত শত নাটকও হচ্ছে। কিন্তু অর্জনের জায়গাটা ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ নাটকে লোকেশন (প্রয়োজন না হলেও), লাইট-ক্যামেরাসহ এগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বাজেট ব্যবহার, মেইন আর্টিস্টদের বেশি রেম্যুনারেশন (আর্টিস্টরা নিজেরাই নিজেদের পারিশ্রমিক ঠিক করছেন), শুটিং ইউনিটে বিলাসবহুল খরচ করায় বেশির ভাগ নাটকের মূল বাজেট সেখানেই চলে যাচ্ছে। ফলে নাটকে এত এত বাজেট পাওয়ার পরও যেই ভিন্নধর্মী গল্পটির পেছনে বাজেটটা খরচ করার কথা- সেখানে কি খরচ হচ্ছে না। সেই একই গল্প, একই মেকিং এবং কমেডি টাইপ নাটকগুলোই নির্মিত হচ্ছে। এখন তো একটি নাটকের গল্পের সঙ্গে আরেকটি নাটকের নামেরও বেশ মিল পাওয়া যায়। যেমন- ‘তুই আমারই’, ‘তোর জন্য’, ‘আজকাল তুমি আমি’, ‘তোমাতে হারাই’, ‘তোমায় ভালোবেসে’- এবারের ঈদের এই নাটকগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। এরকম ইউটিউবে খুঁজলে আরও অনেক নাটক পাওয়া যাবে যেগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। আরও রয়েছে ইউটিউবে ‘কাটতি টাইপ’ নাটকের নাম। যা আসলে শিল্পমানের নাটকের নাম নয়। ফলে দর্শক আসলে একটি নাটক দেখে তার মনের মধ্যে সেটি ‘দাগ’ কাটাতে পারছেন না। আর এখনকার নাটকগুলোতে প্রায় একই অভিনয়শিল্পী (অমুকের সঙ্গে তমুক, তমুকের সঙ্গে অমুক- ধরাবান্দা জুটি) হওয়ায় দর্শক আরও বিভ্রান্ত হচ্ছেন যে সে আসলে কোন নাটকটা দেখেছেন। ফলে মনের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং খুব ভাবনায় ভাবানোর মতো নাটক এখন খুব একটা দেখা যায় না।
নাটকে বাজেট বাড়লেও গল্পের অভাব কিংবা শিল্পমান সম্পন্ন নাটক কম নির্মিত হওয়ার পেছনে কারণ কি? এই বিষয়ে কথা বলেন নির্মাতা রাকেশ বসু। তিনি বলেন, ‘বাংলা নাটকের এখন সব থেকে বড় সমস্যা হলো- গল্প সংকট। একটা সময় বাজেট নিয়ে সবাই কম-বেশি কথা বলতেন। কিন্তু এখন বাজেট সমস্যা থেকে গল্প সংকটটাই অনেক বড় ইস্যু একটা ভালো কাজের জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা যে ধরনের কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং ভিউ কাউন্ট হয় সেই একই ধরনের গল্প নিয়েই কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হলো ভিউ হওয়া একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। ফলে অভিনয়শিল্পীরা জনপ্রিয়তার দিকে নজর দিতে গিয়ে ভালো গল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারবার।’
আগে একটি নাটকের স্ক্রিপ্ট ফাইনাল হতো। টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রধানসহ ক্রিয়েটিভ টিম মিলে গল্পটি ফাইনাল হওয়ার পর কোন অভিনয়শিল্পী কোন চরিত্রে অভিনয় করবে সেটা ভেবেচিন্তে কাস্টিং ফাইনাল করা হতো। এরমধ্যে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কয়েকদফায় রাইটার ও পরিচালকসহ মিটিং হতো। তারপর ফাইনালি নাটকটি নির্মাণে যাওয়া হতো। নাটক নির্মাণের পর তা দেখে প্রিভিউ কমিটির মতামত থাকত এবং সেখানে পাস হলেই তা ফাইনালি সম্প্রচারে যেত।
আর এখন অনেকটা ঝালমুড়ি বানানোর মতোই নাটক বানানো হয়। মানে অমুক-তমুকের ভিউ আছে- আগে তাদের ডেট ‘লক’ করা হোক। তারপর তারা যেই গল্প পছন্দ করবেন কিংবা অনেক সময় অভিনয়শিল্পীও গল্প দিচ্ছেন সেটা নিয়ে- ডে নাইটের কিছু সিক্যুয়েন্স বানিয়ে (শুটিংয়ের সুবিধার্থে) শুটিংয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। স্লো-মো শট, গানের কিছু শট, নায়ক-নায়িকার দেখাদেখি-চোখাচোখি আর বিয়ে দিবে না বাবা-মা, ছেলে বেকার, চাকরি হয় না, পরিবার মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয় আর চিল্লাচিল্লি ভরা কমেডি গল্প। বেশির ভাগ নাটকই এখন এভাবে নির্মিত হচ্ছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি এখন সেট বানানোতেও ভালো খরচ করে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে।
ইউটিউবের সঠিক নিয়মনীতি না থাকা, নাটকে প্রিভিউ সিস্টেম না থাকায় এবং ‘ভিউই’ একমাত্র বাণিজ্য হওয়ায় দিনকে দিন মানহীন নাটক বানানোর প্রতিযোগিতা হচ্ছে এবং তা নিম্নমানের তলানিতে যাচ্ছে বলে অনেকে অভিমত দেন। এর পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথাও তারা উল্লেখ করেন তা হলো- একটা সময় যারা নাটক নির্মাণ ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা টেলিভিশন ও থিয়েটারে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। আর এখন শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যেই (বেশির ভাগ) ইউটিউব চ্যানেল করে নাটকের নামে ‘কনটেন্ট’ বানানো হয়।
অথচ গল্পনির্ভর, জীবনবোধের নাটক, সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের গল্প, আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কত কত গল্প। প্রতিদিন সংবাদের পাতায় কত গল্প প্রকাশ পায়, অথচ আমাদের দেশের নাটক নির্মাতারা এসব গল্প দেখেন না। কারণ এসব গল্পে ভিউ পাওয়া যায় না। তাই ইউটিউব মালিক তথা প্রযোজকরা ওই ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করতে বা নির্মাণে আগ্রহ পান না।
ইউটিউবে ভিউ হচ্ছে সস্তা-চটুল, কমেডি তথা সুরসুরি প্রেম মার্কা গল্পের। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা বাজেট দিয়ে যেসব ‘নাটক’ বানানো হচ্ছে তা আসলে কতটা সমাজে প্রভাব ফেলছে? কি শিখছেন তরুণ প্রজন্ম? অবশ্য তরুণ প্রজন্ম নাকি যা বানানো হচ্ছে- তাই দেখতে চায় বলে তাদের অভিমত। এত এত বাজেটের টাকা আদতে ‘শ্রাদ্ধ’ করাই হচ্ছে বলে প্রকৃত নাট্যপ্রেমী তথা সত্যিকারের সংস্কৃতপ্রেমীরা অভিমত দেন। তাদের মতে, বেশি বাজেট এলে বেশির ভাগ নাটককে ঝকঝকে তকতকে বানানো আর ‘ফুটেজ’ ছাড়া আর কিছুই না বলেও অনেকে অভিমত দেন। তাই ভালো বাজেট দিয়ে ভালো গল্প এবং ভিন্নধর্মী চরিত্রসহ জীবনবোধের নাটক বানানোর তাগিদ দেন তারা।
বর্তমানে নাটক নির্মাণের একটা চিত্র তুলে ধরলে এখনকার পরিস্থিতিটা আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে। এখন নাটকের কয়েকজন মেইন নায়ক তারা তাদের নিজেদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক বানিয়ে তা নিজেই বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এবং টিভি চ্যানেলে তাদের চাহিদামতো সরবরাহ করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নাট্য নির্মাতা বলেন, ‘এভাবে আসলে কাজ করে অভ্যস্ত না। এই ভিউ বাণিজ্য এসে একজন নির্মাতার হাত-পা বন্দি হয়ে গেছে। আমরা আসলে বিক্রি হয়ে গেছি। এখন তো চাহিদাসম্পন্ন নায়করা তাদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক তৈরি করেন। তারা নিজেদের বানানো ডিরেক্টর টিম, প্রোডাকশন টিমসহ ডিওপি এবং কো-আর্টিস্ট- সবই তারা ঠিক করেন। ডিরেক্টরকে দিয়ে শুধু ডিরেকশন (আসলে নামে ডিরেকশন) দেওয়ান। কোথায় এডিটিং হবে, কোথায় মিউজিক হবে এবং কীভাবে কাজটা কোথায় কত টাকায় বিক্রি হবে- সবই তিনি (নায়করা) ঠিক করেন। এভাবে চললে তো আসলে নাটকের ‘মান’ বলে কিছু থাকবেই না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’
ভালো নাটক বানানোর কিছু ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। কিছু যে ভালো গল্পের নাটক নির্মিত হচ্ছে না তা বলা যাবে না। যারা সত্যিকারের ভালো গল্পের খোঁজ করেন এবং জীবনবোধের গল্পসহ ভিন্নরকম কিছু বা আইডলজির জায়গা থেকে কাজ করছেন তারা ঠিকই শত প্রতিকূলতায় কিছু নাটক বানাচ্ছেন। আমাদের দেশে ওটিটিতে ওয়েবসিরিজ ও ওয়েবফিল্মে ভিন্নধর্মী গল্পের কাজ হওয়ায় সেগুলো দর্শকদের কাছে সাড়া ফেলেছে। ফলে তার কিছুটা ছোঁয়া নাটকেও লেগেছে বলা যায়। এবারের ঈদে ভিন্নধর্মী গল্পের তেমনকিছু নাটক হচ্ছে- ‘স্মৃতিসারক’, ‘বিদায় বসন্তে মধ্যাহ্ন রোদে’, ‘নিখোঁজ’, ‘বোঝা’, ‘শেষমেষ’, ‘সম্ভবত প্রেম’, ‘কিছু কথা বাকি’, ‘দুনিয়া’, ‘অভাব’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘অভিশাপ’, ‘অভাব, ‘জাদুর শহর’, ‘গর্ভ’, ‘কলিজার টুকরা’, ‘স্বপ্নটা সামান্যই’সহ আরও কিছু নাটক।
এখন প্রায় একই মুখ ঘুরেফিরে সব নাটকেই দেখতে হচ্ছে বলে সব নাটক একইরকম লাগার কথা দর্শকরা অভিমত দিয়েছেন। এক সময় নাটকে নিশো, মেহজাবীন, অপূর্ব, তানজিন তিশাকে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যেত। এখনকার সময়ে অপূর্ব ও তানজিন তিশাকে নাটকে দেখা গেলেও নিশো-মেহজাবীনকে দেখা যায় না। নিশো চলচ্চিত্র ও ওটিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গত কয়েক ঈদ উৎসবে তাকে নাটকে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে মেহজাবীনও বর্তমানে ওটিটির কাজের সঙ্গে সম্প্রতি সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। তারপরও নাটকে মেহজাবীনের কাজের আগ্রহ রয়েছে; কিন্তু ভালো গল্পের অভাবে কাজ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ‘সাবা’ ও ‘প্রিয় মালতী’ শিরোনামের দুটি ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছেন ভক্তদের মেহু। তার জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমা ঘোষণার অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি নাটকে একেবারেই কাজ করতে চাই না, বিষয়টা তেমন না। আমি আসলে ভালো গল্প পাই না। ভালো গল্প পেলে অভিনয় অবশ্যই করব। আমার কাছে যে স্ক্রিপ্টগুলো আসে সেগুলো পছন্দ হয় না। দর্শক আসলে ভিন্নতা চায়। আমি অনেক দিন পর সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলের ‘অনন্যা’ করেছি। কারণ এটার গল্পটা ভিন্ন। এটার জন্য আমি সাড়াও পেয়েছি বেশ। তাই আমি এরকম ভিন্ন ভিন্ন গল্পের কাজ করতে চাই। তেমন স্ক্রিপ্ট পেলে কাজ করব।’
ঈদে রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ‘রূপান্তর’ নাটকটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার এবং তৃতীয় লিঙ্গের ইস্যুতে নাটকটিকে শেষমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা শ্রেণি ধর্মের বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করে। ফলে কর্তৃপক্ষ নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে নাটক বানাতে গেলেও নানান সমস্যার কথা উল্লেখ করেন নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে ভিন্ন ধরনের গল্পের নাটক বানানো হচ্ছে। তবে সেটা সংখ্যায় কম। এখন আলাদা টাইপের গল্পের নাটক বানাতে গেলেও নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমি নিজেও ‘রূপান্তর’ নিয়ে একপ্রকার জটিলতায় রয়েছি। তাই যারা ইউটিউবের মালিক এবং প্রযোজক তারা ভিন্ন টাইপের গল্পের নাটক বানাতে রিস্ক নেয় না। বাধ্য হয়েই গদবাঁধা গল্পের নাটক বানায়। নাচ-গান আর বিউটি লোকেশনসহ কাজগুলো হচ্ছে।’
নাট্যপ্রেমী-বিনোদনপ্রেমী তথা সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রত্যাশা, নাটকের গল্পে সমাজের বাস্তবচিত্র থাকবে। কারণ ‘সমাজের দর্পণই হচ্ছে নাটক’। একটা সময় বিটিভিতে নাটক প্রচারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমের সাজটা কেমন হবে- তা সেই নাটক থেকে শিখত মধ্যবিত্ত সমাজ। সময় বদলেছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের আমূল পরিবর্তনে নিজেদের ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ যেন নাটকের মাধ্যমে প্রচার হয়ে তা আবার সমাজে প্রভাব ফেলুক- তা কারোরই কাম্য নয়। কারণ আজকে পর্দায় যা দেখানো হবে তাই দেখবেন দর্শক। সংস্কৃতিকর্মী তথা ক্রিয়েটিভরাই প্রকৃত ‘দর্শক’ তৈরি করেন। সারা পৃথিবীতেই রুচিহীন-সস্তা কনটেন্টেরই ‘ভিউ’ বেশি, এটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যেও নিজেদের দর্শক নিজস্ব গল্প দিয়ে নিজেদেরই তৈরি করতে হবে- এমনটাই মনে করেন প্রকৃত সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
প্রখ্যাত নির্মাতা মনি রত্নমের আগামী সিনেমায় প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধতে চলেছেন দক্ষিণী তারকা বিজয় সেতুপতি ও সাই পল্লবী। ২০২৬ সালের অন্যতম প্রতীক্ষিত এই প্রজেক্টটি ঘিরে ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আবেগঘন গল্প, দুর্দান্ত অভিনয় এবং দৃষ্টিনন্দন সিনেমাটোগ্রাফির সংমিশ্রণে তৈরি হতে যাওয়া এই সিনেমাটি ভক্তদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুরুতে সিনেমাটি অভিনেতা শিম্বুর সঙ্গে ‘ঠাগ লাইফ’ হিসেবে পরিকল্পনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মূল চরিত্রে যুক্ত হয়েছেন বিজয় সেতুপতি। এর আগে মনি রত্নমের ‘চেক্কা চিভান্তা ভানামে’ সিনেমায় কাজ করে সফলতা পেয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, পরিচালকের পছন্দের তালিকায় থাকা অভিনেত্রী সাই পল্লবী গত ৫ ডিসেম্বর একটি বিশেষ ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন, যা সিনেমায় তার গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
সিনেমাটির বিশালত্ব বাড়াতে সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন অস্কারজয়ী সুরকার এ.আর. রহমান এবং চিত্রগ্রহণে থাকছেন রবি ভার্মান। জানা গেছে, পঙ্গল উৎসবের পর সিনেমাটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে এবং ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হবে শুটিং। মনি রত্নমের নিজস্ব স্বাক্ষর বহনকারী এই সিনেমাটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে দেখতে হঠাৎ করেই কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে উপস্থিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি প্রায় পনেরো মিনিট অবস্থান করেন এবং গায়কের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
নচিকেতাকে নিজের ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাক্ষাতের সময় তিনি গায়ককে শরীরের প্রতি যত্নশীল না হওয়ার কারণে স্নেহের সুরে মৃদু ভর্ৎসনাও করেন। ভবিষ্যতে যাতে তিনি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে যথাযথ নজর দেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন মমতা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নচিকেতার হৃদযন্ত্রে দুটি স্টেন্ট বসানোর পর তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁকে সিসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করছেন, সবার সঙ্গে কথা বলছেন এবং নিজের পছন্দের বই পড়ছেন। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় তিনি দ্রুত মঞ্চে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনই তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। আপাতত তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে হঠাৎ বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন নচিকেতা। শরীর ঘামতে থাকায় কালবিলম্ব না করে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁর হার্টে ব্লকেজ ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং দ্রুত অস্ত্রোপচার করে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আসন্ন ২৪তম আসরের ‘এশিয়ান ফিল্মস কম্পিটিশন’ বিভাগের জুরিবোর্ড ঘোষণা করেছে আয়োজক কমিটি। এবারের আসরে এই মর্যাদাপূর্ণ বিভাগের বিচারকের আসনে থাকছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও স্থপতি সৈয়দা তুহিন আরা করিম (অপি করিম)। তাঁর সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আরও চারজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল জুরিবোর্ডের সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছেন। অপি করিম ছাড়াও এই বোর্ডে রয়েছেন নরওয়ের প্রযোজক ইনগ্রিড লিল হগটুন, ইতালির প্রযোজক ও পরিবেশক লিডিয়া জেনচি, মালয়েশিয়ার মিডিয়া নির্বাহী ও কনটেন্ট কৌশলবিদ টেং লি ইয়িন এবং তুরস্কের পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেইস চেলিক। উৎসব পরিচালক জানান, এবারের আসরে এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেকর্ডসংখ্যক চলচ্চিত্র জমা পড়েছে, যা উৎসবের ইতিহাসে অন্যতম বড় সাড়া। এই বিপুল অংশগ্রহণ উৎসবটিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব শুরু হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি, যা চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশের মোট ২৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬৭টি চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীগুলো অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে।
বরাবরের মতো এবারও উৎসবে এশিয়ান সিনেমা সেকশন, রেট্রোস্পেক্টিভ, ট্রিবিউট, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস, উইমেন ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মস ও স্পিরিচুয়াল ফিল্মস—এই ১০টি বিভাগে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে। উৎসবের ২৪তম আসরের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘চাইনিজ ফিল্ম উইক’, যেখানে চীনা চলচ্চিত্রের ১২০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দেশটির ১৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এ ছাড়া ভিন্ন দেশের তিনজন খ্যাতনামা নির্মাতার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হবে মাস্টারক্লাস। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দীর্ঘ দিন ধরেই স্টুডিওর চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ জনপদে গিয়ে ধারণ করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বটি ধারণ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহাসিক নাটুদাহ হাইস্কুল মাঠে। হানিফ সংকেতের রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় নির্মিত এই বিশেষ পর্বটি আগামী ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে।
এবারের পর্বের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে চুয়াডাঙ্গা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষ্টি-ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি বিশেষ লোকগান। গানটি লিখেছেন চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ আলম সনি এবং সুর করেছেন হানিফ সংকেত। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আরেকটি লোকগীতি পরিবেশন করেছেন চুয়াডাঙ্গারই কৃতী সন্তান, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা বাউলকন্যা বিউটি এবং পান্থ কানাই।
অনুষ্ঠানটিতে চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে একটি বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, সামাজিক অসঙ্গতি ও সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক নাটিকা এবং নিয়মিত অন্যান্য আয়োজন থাকছে। তবে দর্শকদের জন্য একটি মন খারাপ করা খবর হলো, নাতি অসুস্থ থাকার কারণে এবারের পর্বে জনপ্রিয় ‘নানা-নানি’র কথোপকথন পর্বটি থাকছে না।
শুটিংয়ের ভেন্যু হিসেবে নির্বাচিত নাটুদাহ হাইস্কুল ভবনটি স্থানীয়ভাবে ‘হাজার দুয়ারি’ নামে পরিচিত। ১৯০৬ সালে জমিদার নফল চন্দ্র পাল চৌধুরী তাঁর স্ত্রী রাধা রানির উৎসাহে নিজস্ব জমিতে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ভবনটিতে প্রায় আড়াইশ দরজা রয়েছে এবং প্রতিটি ইটে জমিদারের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করা। যদিও মূল পরিকল্পনায় ৭৫০টি দরজা থাকার কথা ছিল, তবুও বিদ্যমান স্থাপত্যশৈলী এটিকে ইতিহাসের এক অনন্য সাক্ষীতে পরিণত করেছে।
‘ফাগুন অডিও ভিশন’ প্রযোজিত এই পর্বটি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শুটিং দেখতে আসা দর্শকরা জানান, চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে দেশজুড়ে তুলে ধরার এই উদ্যোগ তাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন নানামুখী প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই সংগীত ও সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের শিল্পীরা। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতি ও সংগীতচর্চা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ‘সাংস্কৃতিক ইশতেহার’ দাবি করেছেন তারা।
এই আলোচনার সূত্রপাত করেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’-এর সদস্য হামিন আহমেদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা খাতের পরিকল্পনা তুলে ধরলেও সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে কখনোই প্রকাশ্যে কোনো ইশতেহার দেয়নি। অথচ জাতির মানসিক বিকাশ, মানবিকতা ও নতুন প্রজন্ম গঠনে সংস্কৃতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই আসন্ন নির্বাচনে দলগুলো ক্ষমতায় এলে সংগীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী, তা স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন তিনি।
হামিন আহমেদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংগীতাঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শিরোনামহীন ব্যান্ডের জিয়াউর রহমান, জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা জন কবিরসহ শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরা এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পোস্টটি শেয়ার করেছেন। জিয়াউর রহমান লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে সংগীতের পথচলায় তাদের পরিকল্পিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা। মিউজিসিয়ান, ইন্ডাস্ট্রি কর্মী, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রোতা—সবাই জানতে চায় আগামীতে এই শিল্পের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
শিল্পীদের মতে, বাংলাদেশের সংগীতশিল্প আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা মূলত শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, ত্যাগ এবং শ্রোতাদের ভালোবাসার ফসল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতিগত সহযোগিতা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে এই শিল্প কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারছে না। এ অবস্থায় আধুনিক কপিরাইট আইন বাস্তবায়ন, শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও বীমা সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশ্ববাজারে বাংলা গানকে তুলে ধরার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চাইছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। নির্বাচনের আগে শিল্পীদের এই ঐক্যবদ্ধ দাবি দলগুলোর ইশতেহারে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
হলিউডের অন্যতম বৃহত্তম স্টুডিও ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির মালিকানা নিয়ে লড়াই এখন চরম নাটকীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। নেটফ্লিক্সের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথেই ছিল, কিন্তু সোমবার (৮ ডিসেম্বর) হঠাৎ করেই নগদ অর্থের বড় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে প্যারামাউন্ট। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রতি শেয়ারের জন্য প্যারামাউন্ট ৩০ ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে, যা নেটফ্লিক্সের দেওয়া প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে বেশি।
প্যারামাউন্টের এই নতুন প্রস্তাবের ফলে ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনা নিয়ে দুই বিশাল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহেই নেটফ্লিক্স ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। নেটফ্লিক্সের ওই ঘোষণার পর চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাদের আশঙ্কা, এত বড় একটি স্টুডিও স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের নিয়ন্ত্রণে গেলে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হবে, যা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এই বাণিজ্যিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণও। প্যারামাউন্টের মালিক ল্যারি এলিসন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রোববার ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, নেটফ্লিক্স যদি ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে নেয়, তবে বাজারে তাদের আধিপত্য ‘বড় ধরনের সমস্যা’ তৈরি করতে পারে।
এদিকে প্যারামাউন্টের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ডেভিড এলিসন নিজেদের অবস্থানে অনড়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা যা শুরু করেছিলাম, তা শেষ করতে চলেছি।’ বিডিং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে কেনার জন্য এটি প্যারামাউন্টের ষষ্ঠ প্রস্তাব। ফলে হলিউডের এই ঐতিহ্যবাহী স্টুডিও শেষ পর্যন্ত কার হাতে যাচ্ছে—নেটফ্লিক্স নাকি প্যারামাউন্ট—তা দেখার অপেক্ষায় এখন পুরো বিনোদন বিশ্ব।
মা হওয়ার পর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে আবারও শুটিং ফ্লোরে ফিরলেন বলিউড অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি। চলতি বছরের জুলাইয়ে কন্যাসন্তান সারায়াহর জন্মের পর নিজেকে কিছুটা আড়ালে রেখেছিলেন তিনি। তবে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সেই বিরতি ভেঙে একটি বিজ্ঞাপনী ভিডিওর শুটিংয়ের মাধ্যমে কাজে যোগ দিলেন এই তারকা।
দীর্ঘদিন নিজেকে একপ্রকার গৃহবন্দি রাখার পর কিয়ারার এই ফেরা ভক্তদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। এতদিন কেবল প্রয়োজনে ক্লিনিকে যাওয়া ছাড়া তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে কাজে ফেরার আগে ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের উদ্দেশ্যে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘এরপরের ধাপ আরও বেশি তপ্ত হবে।’ সেই কথা রেখেই সোমবার দুপুরে গ্ল্যামারাস অবতারে ধরা দেন তিনি।
মা হওয়ার পর বাড়তি ওজন ঝরিয়ে আবারও আগের মতোই ছিপছিপে গড়নে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন কিয়ারা। কাঁধখোলা ডেনিম শার্ট আর শর্টস পরিহিত অবস্থায় তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি মা হয়েছেন। তার এই নতুন লুক এবং কাজে ফেরার বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ভক্তরাও প্রিয় তারকাকে পুরোনো ছন্দে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
বিখ্যাত মেক্সিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়ের্মো দেল তোরোর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের প্রকল্প মেরি শেলির কালজয়ী উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ অবশেষে পর্দায় এসেছে। গত ৭ নভেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে গথিক হরর ঘরানার এই সিনেমাটি। দেল তোরোর সিনেমায় দানবরা বরাবরই প্রথাগত ভীতিকর সত্তার চেয়ে অনেক বেশি মানবিক হয়ে ধরা দেয়। এই সিনেমাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুইশ বছরের বেশি পুরোনো এই ধ্রুপদী কাহিনী নিয়ে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সিনেমা ও সিরিজ নির্মিত হলেও, দেল তোরো তার নিজস্ব দর্শন ও শৈলীতে এই গল্পটিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সিনেমাটি তিনটি অংশে বিভক্ত—শুরুর বয়ান, ভিক্টরের গল্প এবং দানবের (মনস্টার) গল্প। মেরি শেলির মূল উপন্যাস ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হলেও সিনেমার সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৫৭ সাল অর্থাৎ ভিক্টোরিয়ান যুগে। কাহিনীর শুরু হয় আর্কটিক অঞ্চলে, যেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টি একে অপরের শিকারে পরিণত হয়। সিনেমার গল্পে ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের (অস্কার আইজ্যাক) ট্র্যাজিক শৈশব ও বাবার কঠোর শাসন তাকে বিদ্রোহী করে তোলে, যা তাকে মৃতদেহ জীবিত করার উন্মাদনায় ধাবিত করে। অন্যদিকে, ভিক্টরের সৃষ্টি করা দানব (জ্যাকব এলর্ডি) শুরুতে নতুন পৃথিবীকে বিস্ময়ের চোখে দেখলেও সমাজের নিষ্ঠুরতা ও নিজের শেকলবন্দী নিয়তি তাকে ভিন্ন পথে চালিত করে।
অভিনয়ের দিক থেকে সিনেমাটি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। উন্মাদ বিজ্ঞানী চরিত্রে অস্কার আইজ্যাক তার জেদ, ক্ষোভ ও হতাশা ফুটিয়ে তুলতে শতভাগ সফল হয়েছেন। অন্যদিকে দানবের চরিত্রে জ্যাকব এলর্ডি সংবেদনশীলতা ও ভয়ংকর রূপের এক অদ্ভুত মিশ্রণ উপস্থাপন করেছেন। তার নীলচে ত্বক আর অভিব্যক্তি—বিশেষ করে একটি দৃশ্যে ইঁদুরকে আদর করার মুহূর্তটি—দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এলিজাবেথ চরিত্রে মিয়া গথ এবং ভিক্টরের মেন্টর হিসেবে ক্রিস্টফ ওয়াল্টজও তাদের নিজস্বতা বজায় রেখেছেন।
দৃশ্যসজ্জা বা ভিজ্যুয়ালের দিক থেকে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ এক কথায় অনবদ্য। তামারা ডেভেরেলের সেট ডিজাইন, কেট হাওলির কস্টিউম এবং ড্যান লাউস্টসেনের ক্যামেরার কাজ ভিক্টোরিয়ান যুগের আবহাওয়াকে জীবন্ত করে তুলেছে। সিনেমার ফ্রেমে দেল তোরোর প্রিয় লাল ও কালো রঙের ব্যবহার এবং আলেকজান্ডার ডেসপ্লাটের আবহ সংগীত কাহিনীর মেজাজকে আরও গম্ভীর ও রহস্যময় করে তোলে। তবে সিনেমার মধ্যভাগে গল্পের গতি কিছুটা মন্থর এবং কিছু দৃশ্যে সিজিআই (CGI)-এর দুর্বলতা, বিশেষ করে নেকড়ের দৃশ্যটি কিছুটা কৃত্রিম মনে হতে পারে।
ছোটখাটো কিছু দুর্বলতা বাদ দিলে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ চলতি বছরের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এখানে মেরি শেলির উপন্যাসের কাঠামো থাকলেও তাতে রক্ত-মাংস যোজনা করেছেন দেল তোরো। তিনি মানবিকতা ও নৃশংসতাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছেন, যা সিনেমাটিকে কেবল হরর নয়, বরং রোমান্স ও ট্র্যাজেডির মিশেলে এক দার্শনিক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সিনেমার শেষে দর্শকের মনে সেই চিরন্তন প্রশ্নটিই রেখে যান নির্মাতা—ভিক্টর নাকি তার সৃষ্টি, আসলে কে প্রকৃত দানব?
বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় তিনি এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। তারকা পরিবারের সন্তান হয়েও স্বজনপোষণ বিতর্কের ঊর্ধ্বে তাঁর অবস্থান। শাহরুখ বা সালমানের মতো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা না থাকলেও অভিনয়ের জাদুতে নিজস্ব এক অনুগত ভক্তশ্রেণি তৈরি করেছেন তিনি। বলছি অভিনেতা অক্ষয় খান্নার কথা, যিনি কাজ থেকে লম্বা বিরতি নেন, আবার যখন ফেরেন তখন পর্দায় ঝড় তোলেন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে আবারও তিনি প্রমাণ করলেন, কেন তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা।
প্রখ্যাত অভিনেতা বিনোদ খান্নার পুত্র অক্ষয় খান্নার জন্ম ১৯৭৫ সালে। ১৯৯৭ সালে ‘হিমালয় পুত্র’ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তিনি আলোচনায় আসেন ‘বর্ডার’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ‘তাল’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘হামরাজ’-এর মতো সিনেমা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০১০ সালের পর ক্যারিয়ারে কিছুটা ভাটা পড়লেও ‘ইত্তেফাক’, ‘মম’, ‘দৃশ্যম ২’ এবং ‘সেকশন ৩৭৫’-এর মতো সিনেমায় শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন।
২০২৫ সালকে অনেকেই অক্ষয় খান্নার বছর হিসেবে অভিহিত করছেন। বছরের শুরুতে ‘ছাবা’ সিনেমায় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া আদিত্য ধরের সিনেমা ‘ধুরন্ধর’-এ তাকে দেখা গেছে রেহমান ডাকাতের চরিত্রে, যা পাকিস্তানের কুখ্যাত এক গ্যাংস্টারের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। সমালোচক অনুপমা চোপড়া তাঁর প্রশংসায় বলেছেন, সিনেমায় অন্য নায়কদের পেশিশক্তি দেখাতে হলেও অক্ষয় কেবল চোখের অভিব্যক্তি দিয়েই সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভক্তরা তার অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
পর্দার বাইরে অক্ষয় খান্নার ব্যক্তিজীবনও বেশ কৌতূহলজাগানিয়া। ৫০ বছর বয়সেও তিনি অবিবাহিত, নেই কোনো প্রেমের গুঞ্জনও। এই ডিজিটাল যুগেও তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখেন এবং সচরাচর সাক্ষাৎকার দেন না। ব্যক্তিজীবনে একা থাকা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি জীবনে বাড়তি দায়িত্ব নিতে পছন্দ করেন না। স্ত্রী বা সন্তানের দায়িত্ব পালন করার চেয়ে নিজের মতো করে অবাধ ও স্বাধীন জীবনযাপনই তাঁর কাছে বেশি প্রিয়। তিনি একাই সুখী এবং নিজের এই জীবন নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট।
ক্যারিয়ারের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অক্ষয় খান্না আজও প্রাসঙ্গিক। নায়ক কিংবা খলনায়ক—যেকোনো চরিত্রেই তিনি মিশে যেতে পারেন অবলীলায়। নীরবতা ভেঙে যখনই তিনি পর্দায় আসেন, তখনই দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেন, যা তাকে সমসাময়িক অভিনেতাদের ভিড়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর টানটান উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে পর্দা নামল ভারতের জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস’ সিজন ১৯-এর। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবারের আসরের শিরোপা জিতে নিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা গৌরব খান্না। রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন শো-এর সঞ্চালক বলিউড ভাইজান সালমান খান। পুরস্কার হিসেবে গৌরব খান্না পেলেন বিজয়ের ট্রফি এবং নগদ ৫০ লাখ রুপি।
জমকালো এই ফিনালেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে সেরা পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে। গৌরব ছাড়া বাকি ফাইনালিস্টরা ছিলেন আমাল মালিক, তানিয়া মিত্তাল, প্রণীত মোরে এবং ফারহানা ভাট। দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ঘরের ভেতরের কঠিন সব টাস্ক মোকাবিলা করে এবং দর্শকদের ভোটে শেষ হাসি হাসেন গৌরব খান্নাই। অন্যদিকে, দর্শকদের রায়ে এই সিজনের প্রথম রানার-আপ নির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা ভাট।
তারকাবহুল এই ফিনালের রাতে গ্ল্যামারের কোনো কমতি ছিল না। নিজেদের নতুন সিনেমা ‘তু মেরি ম্যায় তেরা ম্যায় তেরা তু মেরি’-র প্রচারণায় মঞ্চ মাতান কার্তিক আরিয়ান ও অনন্যা পাণ্ডে। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সানি লিওন, করণ কুন্দ্রা এবং ভোজপুরি সুপারস্টার পবন সিং। তাদের পারফরম্যান্স আর নানা আবেগঘন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে আসরটি পূর্ণতা পায়।
ভারতের অন্যতম বিতর্কিত ও জনপ্রিয় এই রিয়্যালিটি শো-তে প্রতিযোগীদের একটি আবদ্ধ ঘরে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে টিকে থাকতে হয়। এর আগের সিজনগুলোতে মুনাওয়ার ফারুকি, তেজস্বী প্রকাশ, দীপিকা কক্কর এবং সিদ্ধার্থ শুক্লার মতো তারকারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন, এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো গৌরব খান্নার নাম।
আজ ৮ ডিসেম্বর। বেঁচে থাকলে জীবনের ৯০টি বসন্ত পার করতেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে আজকের দিনটি শুধুই বিষাদের। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলিউডের এই ‘হি-ম্যান’। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিনে তাকে ছাড়া একাকীত্বের যন্ত্রণায় কাতর ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনী। প্রয়াত স্বামীকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক হৃদয়স্পর্শী বার্তা দিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী ধর্মেন্দ্রকে হারিয়ে হেমা মালিনী লিখেছেন, ‘তুমি নেই তাও সপ্তাহখানেক হলো। আমাকে একা ছেড়ে চলে গেলে। নিজের ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো জোড়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমি জানি তোমার আত্মা সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। তুমি আমাকে সুন্দর দুই সন্তান দিয়েছ, আমরাও দারুণ সময় কাটিয়েছি। তোমার দেওয়া সেই সুখস্মৃতিগুলো আঁকড়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। শুভ জন্মদিন আমার ভালোবাসা।’
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অগণিত নারীর হৃদয়ে ঝড় তোলা ধর্মেন্দ্র ভালোবেসেছিলেন হেমা মালিনীকে। প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে ত্যাগ না করেই ধর্ম পরিবর্তন করে হেমাকে বিয়ে করার সেই সিদ্ধান্ত এবং পারিবারিক টানাপড়েন ছিল তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। সব ঝড় সামলে তারা ছিলেন একে অপরের ছায়া হয়ে।
বাবার জন্মদিনে কেবল হেমা মালিনীই নন, আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তার সন্তানরাও। প্রথম সংসারের দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওল বাবাকে স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধার সঙ্গে। অন্যদিকে, হেমা-ধর্মেন্দ্র দম্পতির দুই কন্যা ঈশা দেওল এবং অহনা দেওলও বাবাকে হারানোর শূন্যতা ও তাকে মিস করার কথা জানিয়েছেন।
বলিউড বক্স অফিসে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে রণবীর সিং অভিনীত নতুন অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘ধুরন্ধর’। গত ৫ ডিসেম্বর মুক্তির পর মাত্র তিন দিনের মধ্যেই ১০০ কোটি রুপির ক্লাবে প্রবেশ করে সিনেমাটি এক নতুন নজির স্থাপন করেছে। সমালোচকদের প্রাথমিক পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে সিনেমাটি এখন দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে।
বক্স অফিস বিশ্লেষণকারী সংস্থা স্যাকনিল্ক-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবারে ২৮ কোটি রুপির ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ‘ধুরন্ধর’। এরপর শনিবার আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ কোটি রুপিতে। তবে সবচেয়ে বড় চমক আসে রোববার; এদিন সিনেমাটি এক লাফে ৪৩ কোটি রুপি আয় করে। ফলে মাত্র তিন দিনে ভারতে সিনেমাটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১০৩ কোটি রুপি। বাণিজ্য বিশ্লেষকরা শুরুতে সিনেমাটির অগ্রিম বুকিং নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও, বর্তমান সাফল্যে তারা উচ্ছ্বসিত। তাদের মতে, শনিবার থেকেই সিনেমাটি অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে এবং রোববার এটি সাম্প্রতিক সময়ের যেকোনো সিনেমার তুলনায় একদিনে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড গড়েছে।
বড় শহরগুলোর মাল্টিপ্লেক্স থেকে শুরু করে মফস্বলের হলগুলোতেও দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় রণবীর সিংকে একজন নির্ভীক সেনা কর্মকর্তার ভূমিকায় দেখা গেছে, যিনি চারজন ভয়ংকর সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অদম্য লড়াই চালিয়ে যান। মুক্তির আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রণবীরের চরিত্রটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হলেও, সেন্সর বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি চরিত্র।
বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানকে কি এবার দেখা যাবে হলিউডের আইকনিক গোয়েন্দা জেমস বন্ডের চরিত্রে? সম্প্রতি এমন গুঞ্জনে তোলপাড় শুরু হয়েছিল ভক্তমহলে। ‘পাঠান’ ও ‘জাওয়ান’-এর মতো ব্লকবাস্টার অ্যাকশন সিনেমার পর শাহরুখকে নিয়ে এমন জল্পনা ডালপালা মেলতে শুরু করে। তবে এবার লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেই জল্পনার অবসান ঘটালেন স্বয়ং শাহরুখ খান। আসন্ন ‘কিং’ সিনেমাতেও তাকে অ্যাকশন মুডে দেখা যাবে— এমন প্রেক্ষাপটে তাকে প্রশ্ন করা হয়, এরপর কি তিনি জেমস বন্ডের জুতোয় পা গলাবেন?
জবাবে শাহরুখ স্বভাবসুলভ রসবোধ দিয়ে সম্ভাবনাটি সরাসরি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘না, আমার উচ্চারণ জেমস বন্ডের মতো নয়। এমনকি বন্ডের পছন্দের পানীয়র সঙ্গেও আমার পছন্দের কোনো মিল নেই। আর সত্যি বলতে, আমি খুব বেশি লড়াকু বা অ্যাকশনধর্মী ছবিতে কাজ করিনি।’ জেমস বন্ড চরিত্রে শন কনারি, রজার মুর, পিয়ার্স ব্রসনান, টিমোথি ডালটন ও ড্যানিয়েল ক্রেগের মতো তারকাদের অভিনয়ের প্রসঙ্গও উঠে আসে আলোচনায়, যেখানে শাহরুখ জানান তিনি শন কনারির কাজের সঙ্গে বেশ পরিচিত।
ওই অনুষ্ঠানে শাহরুখের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু অভিনেত্রী কাজল। শাহরুখ মজা করে বলেন, ‘কাজল আমার জীবনে থাকায় আমি প্রেমের ছবিই বেশি করেছি। বিপরীতে কাজল থাকলে আসলে লড়াইয়ের ছবি করা সম্ভব হয় না।’ কাজলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বোঝাতে চান, রোমান্টিক হিরো হিসেবে তার ইমেজের পেছনে কাজলের সঙ্গে তার জুটির বড় ভূমিকা রয়েছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে কাজল যখন মনে করিয়ে দেন যে শাহরুখ শুধু তার সঙ্গেই নয়, আরও অনেক অভিনেত্রীর সঙ্গেই কাজ করেছেন; তখন শাহরুখ চটজলদি উত্তর দেন, ‘তা ঠিক, তবে যেসব ছবিতে আমরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছি, সেগুলোর নায়ক-নায়িকা আমরা দুজনই।’ শাহরুখের এমন সোজাসাপ্টা ও বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে আবারও মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থিত দর্শকরা।