প্রতি বছর ঈদ উৎসবে দেশের বিভিন্ন টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলসহ প্রায় তিন শ থেকে চার শ নাটক নির্মিত হয়ে থাকে। কখনও কখনও এই সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে। এখনকার সময়ে টিভি চ্যানেল থেকে ইউটিউবেই নাটক নির্মাণের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে কিছু ইউটিউব চ্যানেলের নাটক টিভিতে প্রচার হওয়ার পর সেগুলো আবার ইউটিউবেও প্রচার হচ্ছে। আবার বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা শুধু নিজস্ব ইউটিউবের জন্যই নাটক নির্মাণ করে থাকে। অন্যদিকে বর্তমানে প্রায় সব টিভি চ্যানেলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকায় তাদের নিজেদের নির্মিত নাটক টিভিতে প্রচারের পর আবার সেগুলো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। ফলে এখন একটি নাটক বানানোর লগ্নিকৃত টাকা দুই মাধ্যম থেকেই প্রযোজক বা লগ্নিকারক ফেরত পাচ্ছেন। যার কারণে নাটকের বাজেট এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একটা সময় বলা হতো বাজেট নেই, নাটকে বাজেট কম- এটা এখনকার সময়ে নাটকের বাজেটের দিকে তাকালে বলা যাবে না।
বিশেষ করে ইউটিউবের আধিপত্য হওয়ার পর থেকেই গত কয়েক বছর ধরে একেকটি নাটক অনেক টাকায় বানানো হচ্ছে। একটা সময় নাটকের বাজেট নিয়ে নানান ধরনের কথা শোনা যেত। পরিচালক-অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে নাটকের কলাকুশলীরা সব সময় বলত- নাটকের বাজেট কমে গেছে, এত কম বাজেটে নাটক বানানো সম্ভব নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউটিউবের কল্যাণে এখন নাটকের সেই বাজেট কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ ইউটিউবের আগে নাটকের বাজেট অনেক কমে গিয়েছিল। ২০১৬-২০১৭ সালেও নাটক এখনকার মতো এত বাজেটে নির্মিত হতো না। ২০১৮ সাল থেকে আস্তে আস্তে নাটকের বাজেট বাড়তে থাকে। নরমালি এখন একটি নাটক বানাতে চার-পাঁচ-ছয় লাখ টাকা নির্মাতারা হরহামেশাই পাচ্ছেন। এর থেকেও কম বাজেটে ছোট কিছু কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। ওইদিকের হিসেবে না গিয়ে যেগুলো আমাদের মেইনস্ট্রিমের নাটক বলে চিহ্নিত তা নিয়েই কথা হচ্ছে।
আর্টিস্ট ভেদে এখন একেকটি নাটকের বাজেট দশ-বারো-পনেরো লাখ পর্যন্ত পাচ্ছেন নির্মাতারা। এবার ঈদে তো আঠারো-বিশ লাখ এমনকি পঁচিশ লাখে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই যে এত এত বাজেট পাচ্ছেন নির্মাতারা, নাটকের গল্পে কতটা ভেরিয়েশন পাচ্ছেন দর্শক? সেই একই অভিনয়শিল্পীদের একই প্রেম কাহিনি, কমেডি গল্প, চিল্লাচিল্লি কিংবা প্রেম হওয়ার শুরুতে ঝগড়া, তারপর প্রেম, পরিবার মানে না- টাইপের গল্প অথবা প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, প্রেমিক চাকরি পায় না, পরিবার মানে না ইত্যাদি ইত্যাদি গল্প। অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো গল্প। আর এখন যোগ হয়েছে নাটকে গানের ব্যবহারসহ ঢাকার বাইরে শুটিং- দামি ক্যামেরা এবং বিজ্ঞাপনের মতো ইউনিট-ক্রু নিয়ে মুভ করা। বাজেট বাড়ছে, খরচ করতে সমস্যা নেই। কিন্তু যেই গল্পের জন্য নাটক- সেই গল্পের জন্য কতটা খরচ করে নাটক নির্মিত হচ্ছে? মানে ভালো গল্পের এবং ‘খরচওয়ালা’ গল্পের পেছনে কি সেই বাজেটটা যাচ্ছে?
বিশিষ্ট সাংবাদিক, নাট্যকার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেজানুর রহমান বলেন, ‘নাটকে ভালো গল্পের সংকট রয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি অনেকের কাছে ভালো গল্প থাকার পরও সে বাজেটের জন্য তা বানাতে পারছেন না- এটাও সত্যি। আসলে এখন কোনো লেভেল কোম্পানি (ইউটিউব), টিভি কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রথমেই নির্মাতার কাছে জিজ্ঞাসা করেন- ‘যে গল্প নিয়ে কাজ করবেন সেটির ভিউ হবে নাকি’- এই কথায় নির্মাতা নতুন কোনো কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করতে চান না। সেই একই ফরম্যাটে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। এখন দেখা গেছে কেউ একজন একটি গল্প নিয়ে কাজ করায় সেটির ভিউ হয়েছে- সবাই সেটা বানাতে ছুটে। মানে হলো ভিউয়ের পেছনে দৌঁড়াচ্ছি। ভিউ-ই যখন এখন একমাত্র বাণিজ্য তখন তো গল্প ফ্যাক্ট না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাতাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। নির্মাতারা স্বাধীনতা না পেলে কাজ করা মুশকিল। অমুকটার মতো, তমুককে নিয়ে জুটি করে নাটক বানানোর জন্য প্রেসার না দিয়ে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন গল্পসহ ‘পাঁচজন- পাঁচজন’ জুটিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে দেয়া হচ্ছে নাটক বানানোর জন্য। সেই ‘পাঁচজন-পাঁচজন’ জুটির দশজন এতো ব্যস্ত যে, তাদেরকে মেনটেইন করতে গেলে নাটকের দিকে নজর দেয়া যাচ্ছে না। তারা ব্যস্ত থাকতেই পারেন। কিন্তু জুটি বেঁধে দিলেই বিপদ। নির্মাতাকে বলতে হবে- স্বাধীনভাবে গল্পে যে ধরনের আর্টিস্ট যায়, তাদেরকে নিয়েই বানান। তাহলে নতুন গল্প এবং নতুন আর্টিস্টও ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হবে। বর্তমানে যারা কম্প্রমাইজ করে কাজ করছেন যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ফলে মনে রাখার মতো নাটক হচ্ছে না। এখন আমাদের লাখ লাখ টাকা বাজেট যাচ্ছে, শত শত নাটকও হচ্ছে। কিন্তু অর্জনের জায়গাটা ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ নাটকে লোকেশন (প্রয়োজন না হলেও), লাইট-ক্যামেরাসহ এগুলোতে অপ্রয়োজনীয় বাজেট ব্যবহার, মেইন আর্টিস্টদের বেশি রেম্যুনারেশন (আর্টিস্টরা নিজেরাই নিজেদের পারিশ্রমিক ঠিক করছেন), শুটিং ইউনিটে বিলাসবহুল খরচ করায় বেশির ভাগ নাটকের মূল বাজেট সেখানেই চলে যাচ্ছে। ফলে নাটকে এত এত বাজেট পাওয়ার পরও যেই ভিন্নধর্মী গল্পটির পেছনে বাজেটটা খরচ করার কথা- সেখানে কি খরচ হচ্ছে না। সেই একই গল্প, একই মেকিং এবং কমেডি টাইপ নাটকগুলোই নির্মিত হচ্ছে। এখন তো একটি নাটকের গল্পের সঙ্গে আরেকটি নাটকের নামেরও বেশ মিল পাওয়া যায়। যেমন- ‘তুই আমারই’, ‘তোর জন্য’, ‘আজকাল তুমি আমি’, ‘তোমাতে হারাই’, ‘তোমায় ভালোবেসে’- এবারের ঈদের এই নাটকগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। এরকম ইউটিউবে খুঁজলে আরও অনেক নাটক পাওয়া যাবে যেগুলোর নাম প্রায় কাছাকাছি। আরও রয়েছে ইউটিউবে ‘কাটতি টাইপ’ নাটকের নাম। যা আসলে শিল্পমানের নাটকের নাম নয়। ফলে দর্শক আসলে একটি নাটক দেখে তার মনের মধ্যে সেটি ‘দাগ’ কাটাতে পারছেন না। আর এখনকার নাটকগুলোতে প্রায় একই অভিনয়শিল্পী (অমুকের সঙ্গে তমুক, তমুকের সঙ্গে অমুক- ধরাবান্দা জুটি) হওয়ায় দর্শক আরও বিভ্রান্ত হচ্ছেন যে সে আসলে কোন নাটকটা দেখেছেন। ফলে মনের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং খুব ভাবনায় ভাবানোর মতো নাটক এখন খুব একটা দেখা যায় না।
নাটকে বাজেট বাড়লেও গল্পের অভাব কিংবা শিল্পমান সম্পন্ন নাটক কম নির্মিত হওয়ার পেছনে কারণ কি? এই বিষয়ে কথা বলেন নির্মাতা রাকেশ বসু। তিনি বলেন, ‘বাংলা নাটকের এখন সব থেকে বড় সমস্যা হলো- গল্প সংকট। একটা সময় বাজেট নিয়ে সবাই কম-বেশি কথা বলতেন। কিন্তু এখন বাজেট সমস্যা থেকে গল্প সংকটটাই অনেক বড় ইস্যু একটা ভালো কাজের জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা যে ধরনের কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এবং ভিউ কাউন্ট হয় সেই একই ধরনের গল্প নিয়েই কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হলো ভিউ হওয়া একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। ফলে অভিনয়শিল্পীরা জনপ্রিয়তার দিকে নজর দিতে গিয়ে ভালো গল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারবার।’
আগে একটি নাটকের স্ক্রিপ্ট ফাইনাল হতো। টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রধানসহ ক্রিয়েটিভ টিম মিলে গল্পটি ফাইনাল হওয়ার পর কোন অভিনয়শিল্পী কোন চরিত্রে অভিনয় করবে সেটা ভেবেচিন্তে কাস্টিং ফাইনাল করা হতো। এরমধ্যে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কয়েকদফায় রাইটার ও পরিচালকসহ মিটিং হতো। তারপর ফাইনালি নাটকটি নির্মাণে যাওয়া হতো। নাটক নির্মাণের পর তা দেখে প্রিভিউ কমিটির মতামত থাকত এবং সেখানে পাস হলেই তা ফাইনালি সম্প্রচারে যেত।
আর এখন অনেকটা ঝালমুড়ি বানানোর মতোই নাটক বানানো হয়। মানে অমুক-তমুকের ভিউ আছে- আগে তাদের ডেট ‘লক’ করা হোক। তারপর তারা যেই গল্প পছন্দ করবেন কিংবা অনেক সময় অভিনয়শিল্পীও গল্প দিচ্ছেন সেটা নিয়ে- ডে নাইটের কিছু সিক্যুয়েন্স বানিয়ে (শুটিংয়ের সুবিধার্থে) শুটিংয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। স্লো-মো শট, গানের কিছু শট, নায়ক-নায়িকার দেখাদেখি-চোখাচোখি আর বিয়ে দিবে না বাবা-মা, ছেলে বেকার, চাকরি হয় না, পরিবার মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয় আর চিল্লাচিল্লি ভরা কমেডি গল্প। বেশির ভাগ নাটকই এখন এভাবে নির্মিত হচ্ছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি এখন সেট বানানোতেও ভালো খরচ করে নাটক নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে।
ইউটিউবের সঠিক নিয়মনীতি না থাকা, নাটকে প্রিভিউ সিস্টেম না থাকায় এবং ‘ভিউই’ একমাত্র বাণিজ্য হওয়ায় দিনকে দিন মানহীন নাটক বানানোর প্রতিযোগিতা হচ্ছে এবং তা নিম্নমানের তলানিতে যাচ্ছে বলে অনেকে অভিমত দেন। এর পাশাপাশি একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথাও তারা উল্লেখ করেন তা হলো- একটা সময় যারা নাটক নির্মাণ ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা টেলিভিশন ও থিয়েটারে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। আর এখন শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যেই (বেশির ভাগ) ইউটিউব চ্যানেল করে নাটকের নামে ‘কনটেন্ট’ বানানো হয়।
অথচ গল্পনির্ভর, জীবনবোধের নাটক, সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের গল্প, আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কত কত গল্প। প্রতিদিন সংবাদের পাতায় কত গল্প প্রকাশ পায়, অথচ আমাদের দেশের নাটক নির্মাতারা এসব গল্প দেখেন না। কারণ এসব গল্পে ভিউ পাওয়া যায় না। তাই ইউটিউব মালিক তথা প্রযোজকরা ওই ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করতে বা নির্মাণে আগ্রহ পান না।
ইউটিউবে ভিউ হচ্ছে সস্তা-চটুল, কমেডি তথা সুরসুরি প্রেম মার্কা গল্পের। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা বাজেট দিয়ে যেসব ‘নাটক’ বানানো হচ্ছে তা আসলে কতটা সমাজে প্রভাব ফেলছে? কি শিখছেন তরুণ প্রজন্ম? অবশ্য তরুণ প্রজন্ম নাকি যা বানানো হচ্ছে- তাই দেখতে চায় বলে তাদের অভিমত। এত এত বাজেটের টাকা আদতে ‘শ্রাদ্ধ’ করাই হচ্ছে বলে প্রকৃত নাট্যপ্রেমী তথা সত্যিকারের সংস্কৃতপ্রেমীরা অভিমত দেন। তাদের মতে, বেশি বাজেট এলে বেশির ভাগ নাটককে ঝকঝকে তকতকে বানানো আর ‘ফুটেজ’ ছাড়া আর কিছুই না বলেও অনেকে অভিমত দেন। তাই ভালো বাজেট দিয়ে ভালো গল্প এবং ভিন্নধর্মী চরিত্রসহ জীবনবোধের নাটক বানানোর তাগিদ দেন তারা।
বর্তমানে নাটক নির্মাণের একটা চিত্র তুলে ধরলে এখনকার পরিস্থিতিটা আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে। এখন নাটকের কয়েকজন মেইন নায়ক তারা তাদের নিজেদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক বানিয়ে তা নিজেই বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এবং টিভি চ্যানেলে তাদের চাহিদামতো সরবরাহ করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নাট্য নির্মাতা বলেন, ‘এভাবে আসলে কাজ করে অভ্যস্ত না। এই ভিউ বাণিজ্য এসে একজন নির্মাতার হাত-পা বন্দি হয়ে গেছে। আমরা আসলে বিক্রি হয়ে গেছি। এখন তো চাহিদাসম্পন্ন নায়করা তাদের প্রযোজনা হাউস থেকে নাটক তৈরি করেন। তারা নিজেদের বানানো ডিরেক্টর টিম, প্রোডাকশন টিমসহ ডিওপি এবং কো-আর্টিস্ট- সবই তারা ঠিক করেন। ডিরেক্টরকে দিয়ে শুধু ডিরেকশন (আসলে নামে ডিরেকশন) দেওয়ান। কোথায় এডিটিং হবে, কোথায় মিউজিক হবে এবং কীভাবে কাজটা কোথায় কত টাকায় বিক্রি হবে- সবই তিনি (নায়করা) ঠিক করেন। এভাবে চললে তো আসলে নাটকের ‘মান’ বলে কিছু থাকবেই না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’
ভালো নাটক বানানোর কিছু ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। কিছু যে ভালো গল্পের নাটক নির্মিত হচ্ছে না তা বলা যাবে না। যারা সত্যিকারের ভালো গল্পের খোঁজ করেন এবং জীবনবোধের গল্পসহ ভিন্নরকম কিছু বা আইডলজির জায়গা থেকে কাজ করছেন তারা ঠিকই শত প্রতিকূলতায় কিছু নাটক বানাচ্ছেন। আমাদের দেশে ওটিটিতে ওয়েবসিরিজ ও ওয়েবফিল্মে ভিন্নধর্মী গল্পের কাজ হওয়ায় সেগুলো দর্শকদের কাছে সাড়া ফেলেছে। ফলে তার কিছুটা ছোঁয়া নাটকেও লেগেছে বলা যায়। এবারের ঈদে ভিন্নধর্মী গল্পের তেমনকিছু নাটক হচ্ছে- ‘স্মৃতিসারক’, ‘বিদায় বসন্তে মধ্যাহ্ন রোদে’, ‘নিখোঁজ’, ‘বোঝা’, ‘শেষমেষ’, ‘সম্ভবত প্রেম’, ‘কিছু কথা বাকি’, ‘দুনিয়া’, ‘অভাব’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘অভিশাপ’, ‘অভাব, ‘জাদুর শহর’, ‘গর্ভ’, ‘কলিজার টুকরা’, ‘স্বপ্নটা সামান্যই’সহ আরও কিছু নাটক।
এখন প্রায় একই মুখ ঘুরেফিরে সব নাটকেই দেখতে হচ্ছে বলে সব নাটক একইরকম লাগার কথা দর্শকরা অভিমত দিয়েছেন। এক সময় নাটকে নিশো, মেহজাবীন, অপূর্ব, তানজিন তিশাকে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যেত। এখনকার সময়ে অপূর্ব ও তানজিন তিশাকে নাটকে দেখা গেলেও নিশো-মেহজাবীনকে দেখা যায় না। নিশো চলচ্চিত্র ও ওটিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গত কয়েক ঈদ উৎসবে তাকে নাটকে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে মেহজাবীনও বর্তমানে ওটিটির কাজের সঙ্গে সম্প্রতি সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। তারপরও নাটকে মেহজাবীনের কাজের আগ্রহ রয়েছে; কিন্তু ভালো গল্পের অভাবে কাজ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ‘সাবা’ ও ‘প্রিয় মালতী’ শিরোনামের দুটি ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছেন ভক্তদের মেহু। তার জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমা ঘোষণার অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি নাটকে একেবারেই কাজ করতে চাই না, বিষয়টা তেমন না। আমি আসলে ভালো গল্প পাই না। ভালো গল্প পেলে অভিনয় অবশ্যই করব। আমার কাছে যে স্ক্রিপ্টগুলো আসে সেগুলো পছন্দ হয় না। দর্শক আসলে ভিন্নতা চায়। আমি অনেক দিন পর সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলের ‘অনন্যা’ করেছি। কারণ এটার গল্পটা ভিন্ন। এটার জন্য আমি সাড়াও পেয়েছি বেশ। তাই আমি এরকম ভিন্ন ভিন্ন গল্পের কাজ করতে চাই। তেমন স্ক্রিপ্ট পেলে কাজ করব।’
ঈদে রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ‘রূপান্তর’ নাটকটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার এবং তৃতীয় লিঙ্গের ইস্যুতে নাটকটিকে শেষমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা শ্রেণি ধর্মের বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করে। ফলে কর্তৃপক্ষ নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে নাটক বানাতে গেলেও নানান সমস্যার কথা উল্লেখ করেন নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে ভিন্ন ধরনের গল্পের নাটক বানানো হচ্ছে। তবে সেটা সংখ্যায় কম। এখন আলাদা টাইপের গল্পের নাটক বানাতে গেলেও নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আমি নিজেও ‘রূপান্তর’ নিয়ে একপ্রকার জটিলতায় রয়েছি। তাই যারা ইউটিউবের মালিক এবং প্রযোজক তারা ভিন্ন টাইপের গল্পের নাটক বানাতে রিস্ক নেয় না। বাধ্য হয়েই গদবাঁধা গল্পের নাটক বানায়। নাচ-গান আর বিউটি লোকেশনসহ কাজগুলো হচ্ছে।’
নাট্যপ্রেমী-বিনোদনপ্রেমী তথা সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রত্যাশা, নাটকের গল্পে সমাজের বাস্তবচিত্র থাকবে। কারণ ‘সমাজের দর্পণই হচ্ছে নাটক’। একটা সময় বিটিভিতে নাটক প্রচারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুমের সাজটা কেমন হবে- তা সেই নাটক থেকে শিখত মধ্যবিত্ত সমাজ। সময় বদলেছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের আমূল পরিবর্তনে নিজেদের ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ যেন নাটকের মাধ্যমে প্রচার হয়ে তা আবার সমাজে প্রভাব ফেলুক- তা কারোরই কাম্য নয়। কারণ আজকে পর্দায় যা দেখানো হবে তাই দেখবেন দর্শক। সংস্কৃতিকর্মী তথা ক্রিয়েটিভরাই প্রকৃত ‘দর্শক’ তৈরি করেন। সারা পৃথিবীতেই রুচিহীন-সস্তা কনটেন্টেরই ‘ভিউ’ বেশি, এটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যেও নিজেদের দর্শক নিজস্ব গল্প দিয়ে নিজেদেরই তৈরি করতে হবে- এমনটাই মনে করেন প্রকৃত সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
মিষ্টি গায়কীর শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী মৌমিতা তাশরিন নদী শ্রোতাদের জন্য নিয়ে এলেন নতুন উপহার। আর তা হলো তার নতুন একক গান ‘তুমিহীনা’। ১০ ডিসেম্বর নদীর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্ত করা হয়েছে গানটি। গানটির কথা লিখেছেন নদী নিজেই। নদীর সাথে লেখায় সহযোগিতা করেছেন হৃদয় হাসিন ও হেমা। গানটির সুর করেছেন নদী ও হৃদয় হাসিন। আর মিউজিক এরেঞ্জমেন্টে ছিলেন হৃদয় হাসিন। এছাড়া রিদম প্রোগ্রামিং করেছেন সায়েম রহমান। ‘তুমিহীনা’ গানটির মিউজিক ভিডিও পরিচালনায় ছিলেন সোহেল রাজ। মিউজিক ভিডিওতে মডেল হিসেবে রয়েছেন নদী নিজেই।
নিজের এই নতুন গানটি নিয়ে নদী বললেন, ‘এই গানটি আমার কাছে নানা কারণে একটু বিশেষ। একটু ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে গেলে নানা কারণে আমাদের শিল্পীদের সবসময় নিজের পছন্দমতো কাজ করা হয়না। যে কারণে এবার একেবারেই আমার নিজের ভালো লাগাগুলোকে প্রাধান্য দিয়েই গানটি করেছি। গান লেখা বা সুর করার কাজগুলো আমি বেশকিছু সময় ধরেই করে আসছি। কিন্তু নিজের ভেতরের যে চাওয়াটা সেভাবে কোন গান আমার করা হয়ে উঠছিল না। সে কারণে এবার কথা, সুর, মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টে থেকে শুরু করে ভিডিও নির্মাণ পর্যন্ত- আমার ভালোলাগার ব্যাপারটাই ছিল মূল। আমি ব্যাক্তিগতভাবে আনন্দিত নিজের ভালোলাগার একটি কাজ করতে পেরে।’
কথা প্রসঙ্গে নদী আরও বললেন, ‘গানটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকের হবার কারণে হয়তো সবার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমি এমন ধরনের গান করতে চেয়েছিলাম সবসময়ই। যেকোন গান আমার সাথে বা আমার ব্যক্তিত্ব বা আমি মানুষটার সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে আমি গাইতে পছন্দ করি না। সেদিক থেকে ‘তুমিহীনা’ সম্পূর্ণ আমার মতো একটি গান, আমি মানুষটা যেমন ঠিক তেমন। ভালো লাগছে নিজের ভালো লাগার মতো একটা গান আমি করতে পেরেছি এটা ভেবে। শ্রোতাদের জন্য বলতে চাই আপনারাই একজন শিল্পীর কাজকে বাঁচিয়ে রাখেন আপনাদের ভালোবাসা, উৎসাহ দিয়ে। আমার খুব পছন্দের একটা কাজ এটি। আপনার শুনবেন, আপনাদের মতামত জানাবেন।’
নদী জানালেন, ‘তুমিহীনা গানটি নির্মিত হয়েছে তার নিজস্ব ব্যানার ‘নদীমাতৃক প্রোডাকশন’ থেকে। আর ইউটিউব ছাড়াও স্পটিফাই, অ্যাপেল মিউজিকসহ দেশি ও আর্ন্তজাতিক বেশকিছু মিউজিক প্ল্যাটফর্মে শুনতে পাওয়া যাবে গানটি।
প্রসঙ্গত, নদীর গাওয়া ‘জলছায়া’, ‘নিঃশ্বাস’, ‘রঙিলা আকাশ’, ‘অচিনপুর’, ‘মুগ্ধতা’, ‘আমারতো কেউ নেই তুমি ছাড়া’, ‘দেশি গার্ল’, ‘হারানো যাবে না’, ‘কথা দিলাম’, ‘তোমাকে দেব না হারাতে’, ‘পোড়ামন ২’ সিনেমায় গাওয়া ‘সুতো কাটা ঘুড়ি’ সহ বেশ কিছু গান শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।
আদিত্য ধরের অ্যাকশন থ্রিলার ছবি ‘ধুরন্ধর’ বক্স অফিসে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। মুক্তির মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই ছবিটি ভারতে ২০০ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটি টাকার মাইলফলক পার করে ফেলেছে। রণবীর সিং অভিনীত এই ছবির প্রচারণা সে রকম জোরদার করেননি নির্মাতারা। তবে ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে প্রচারণার জোরে দর্শক টানছে। আর তাতেই এই ছবির আয় দিন দিন বাড়ছে। শুধু আয়ই নয়, নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে ‘ধুরন্ধর’।
প্রায় ২৮০ কোটি রুপির বাজেটে নির্মিত ‘ধুরন্ধর’ ইতোমধ্যেই নির্মাণ ব্যয় তুলে ফেলেছে। এখন নিশ্চিত মুনাফার পথে হাঁটছে আদিত্যর এই ছবি। ট্রেড অ্যানালিস্টদের ধারণার তুলনায় ছবির সংগ্রহ অনেক বেশি।
সপ্তম দিনের আয়
ট্রেড পোর্টাল স্যাকনিল্কের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তির সপ্তম দিনে ‘ধুরন্ধর’ আয় করেছে ২৭ কোটি রুপি। এর ফলে ভারতে ছবিটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ২০৭ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে। ৩ দিন ধরে ছবির আয়ের অঙ্ক একই ছিল। পরপর তিন দিন ‘ধুরন্ধর’ ২৭ কোটি রুপি করে ব্যবসা করেছে। গত সোমবারে যদিও আয় ৪৫ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল, কিন্তু পরদিনই আবার তা বেড়ে ১৬ শতাংশের বেশি লাফ দেয়। কর্মদিবস হওয়ায় সারা দিনে দর্শক কম থাকলেও রাতের শোগুলোতে দারুণ ভিড় দেখা যাচ্ছে। সকালের শোগুলোতে ১৮ শতাংশের বেশি দর্শক আসন পূর্ণ। রাতের শোগুলোতে তা বেড়ে প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছে গেছে।
বিশ্বব্যাপী সংগ্রহ
বিদেশি বাজার থেকেও সমান সাড়া পাচ্ছে ‘ধুরন্ধর’। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি বিদেশে আয় করেছে প্রায় ৫৭ কোটি ৫ লাখ রুপি। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩০৬ কোটি ২৫ লাখ রুপি। বিশ্বব্যাপী সংগ্রহের দিক থেকে ছবিটি ইতিমধ্যেই ‘সিতারে জমিন পর’, ‘থামা’, ‘সিকন্দর’ এবং ‘হাউসফুল ৫’-এর মতো ছবিকে পেছনে ফেলেছে।
অভিনয় ও কাস্ট
‘ধুরন্ধর’ ছবিতে রণবীর সিং ছাড়া আছেন অক্ষয় খান্না, অর্জুন রামপাল, সঞ্জয় দত্ত, সারা অর্জুন, আর মাধবন, সৌম্যা টন্ডন ও রাকেশ বেদি। বিশেষ করে দুষ্কৃতী রহমান ডাকাতের চরিত্রে অক্ষয় খান্নার অভিনয় এখন তুমুল আলোচনায়। ভারতীয় গুপ্তচর হামজা আলী মাজারির ভূমিকায় রণবীর সিংও দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
প্রথম সপ্তাহের এমন সাফল্যের পর বাণিজ্যিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দ্বিতীয় সপ্তাহেও বক্স অফিসে ‘ধুরন্ধর’―এর দাপট অব্যাহত থাকবে।
টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয়। তবে ব্যক্তিগত জীবন ও একাধিক বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে প্রায়ই তাকে নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি আবেদনময়ী ছবি পোস্ট করে আবারও ট্রলের শিকার হয়েছেন এই অভিনেত্রী।
মঙ্গলবার রাতে শ্রাবন্তী তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে তাকে সাবানের ফেনাভর্তি বাথটাবে সোনালি রঙের বিকিনিতে দেখা যায়। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘নিজেকে সিক্ত করতে থাকুন’। ছবিতে তার চোখেমুখে আবেশের ছাপ ও চেনা হাসি থাকলেও নেটিজেনদের একাংশ বিষয়টি সহজভাবে নেননি। ছবিটি প্রকাশের পরপরই কমেন্ট বক্সে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভক্তদের অনেকেই শ্রাবন্তীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন। কেউ তার চোখের চাহনির তারিফ করেছেন, আবার কেউ লিখেছেন ‘দারুণ’। তবে প্রশংসার পাশাপাশি তীব্র কটাক্ষও জুটেছে অভিনেত্রীর কপালে। এক নেটিজেন তার বয়স নিয়ে খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, ‘বুড়ি হয়ে আর কত রঙ দেখাবে।’ অন্য একজন ঠাট্টা করে মন্তব্য করেছেন, এই ঠান্ডায় তিনি গোসল করা দেখাচ্ছেন কি না। ব্যক্তিগত জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শ্রাবন্তী পেশাদার জগতে সক্রিয় থাকলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ঘিরে বিতর্ক যেন থামছেই না।
২০২৩ সালে ‘পাঠান’ যে ঝড় তুলেছিল, তার রেশ এখনো কাটেনি। দীর্ঘ বিরতির পর এক বছরের মধ্যে তিনটি ব্লকবাস্টার উপহার দিয়ে শাহরুখ খান যেন আবার নিজের সেরা ফর্মে ফিরেছেন। সেই ধারাবাহিক প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই নতুন করে উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে ‘পাঠান ২’-এর সম্ভাব্য ঘোষণায়। ভক্তদের বহুদিনের প্রত্যাশা এবার বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি দুবাইয়ের এক জমকালো রিয়েল এস্টেট অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল—এক উচ্চ অট্টালিকার নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। সেই মুহূর্তে উপস্থিত সবার চোখ ছিল কিং খানের দিকে। ঠিক তখনই মঞ্চের সঞ্চালক বলেন, ‘পাঠান’ ছিল ব্লকবাস্টার, তাই তার সিক্যুয়াল আসা স্বাভাবিক। এরপরই তিনি ঘোষণা করেন—‘পাঠান ২’ তৈরি হচ্ছে। এই ঘোষণার পর মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা শাহরুখ খান হাসিমুখে ধন্যবাদ জানান। তিনি কোনো সংশোধন বা আপত্তি জানাননি, যা দর্শকদের কাছে একরকম নীরব সম্মতিতেই পরিণত হয়।
এখনো যশরাজ ফিল্মস বা পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে দুবাইয়ের এই প্রকাশ্য মন্তব্য এবং শাহরুখের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে প্রকল্পটি সত্যিই শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুষ্ঠানটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তদের উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়। অনেকেই মনে করছেন, স্পাই ইউনিভার্সকে আরও বিস্তৃত করতে ‘পাঠান’-এর সিক্যুয়াল প্রয়োজন ছিল, আর সেই দিকেই এগোচ্ছে বলিউড।
এই সময়ে শাহরুখ তার নতুন ছবি ‘কিং’-এর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এর মাঝেই ‘পাঠান ২’-এর আগাম ইঙ্গিত যেন বলিউডে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে, দুবাইয়ের মঞ্চে শাহরুখ খানের সেই হাসি যেন নিশ্চিত করে দিল—গুপ্তচর পাঠান আবারও ফিরছেন বড়পর্দায়।
কৃত্রিম উপায়ে সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নেওয়ার বর্তমান প্রবণাতার তীব্র সমালোচনা করেছেন হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। ৫০ বছর বয়সী এই তারকা অভিনয়শিল্পীদের প্লাস্টিক সার্জারি ও কৃত্রিম পদ্ধতির ওপর অতি নির্ভরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যম পেইজ সিক্স-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কোনো নির্দিষ্ট অভিনেত্রীর নাম উল্লেখ না করলেও কেট উইন্সলেট বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেউ কেউ নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন, আবার অনেকেই যেন নিজেকে বদলে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিশেষ করে ওজন কমানোর ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, অনেকেই না বুঝে স্বাস্থ্যের প্রতি চরম অবহেলা করছেন, যা একটি ভয়াবহ বিষয়। প্লাস্টিক সার্জারির এই পুরো ব্যাপারটিকে তিনি ‘মহা বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
‘টাইটানিক’ খ্যাত এই অভিনেত্রী আরও বলেন, প্লাস্টিক সার্জারির এই প্রবণতা এখন আর কেবল তারকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সাধারণ নারীরাও এখন বোটক্স বা ঠোঁটে ফিলার নেওয়ার জন্য টাকা জমাচ্ছেন, যা তাকে মানসিকভাবে ভীষণ বিচলিত করছে। বিষয়টি তাকে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি ভাবাচ্ছে এবং বিরক্ত করছে।
প্রকৃত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উইন্সলেট বলেন, নিজের বয়স বোঝা যাওয়াটাকেই তিনি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। তার মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা আরও সুন্দর হয়ে ওঠেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তার পরিচিত অনেক সুন্দরী নারী আছেন যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি। তিনি আক্ষেপ করে জানান, বর্তমান প্রজন্মের তরুণীদের কাছে সৌন্দর্যের ধারণাটি অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক।
দক্ষিণী সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম আইকনিক খলনায়িকা ‘নীলাম্বরি’। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পডিয়াপ্পা’ সিনেমার এই চরিত্রে রম্যা কৃষ্ণানের দাপুটে অভিনয় আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। তবে দীর্ঘ ২৬ বছর পর সিনেমাটি পুনরায় মুক্তির ঠিক আগ মুহূর্তে এক চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করলেন সুপারস্টার রজনীকান্ত। তিনি জানালেন, কালজয়ী এই চরিত্রের জন্য নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ রম্যা ছিলেন না, বরং তারা চেয়েছিলেন বলিউড সুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে।
আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পুনরায় মুক্তি পাচ্ছে কে. এস. রবিকুমার নির্মিত ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘পডিয়াপ্পা’। এ উপলক্ষে ‘দ্য রিটার্ন অব পডিয়াপ্পা’ শিরোনামে একটি ভিডিও বার্তায় রজনীকান্ত পুরনো সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেন। তিনি জানান, ‘নীলাম্বরি’ চরিত্রটি যখন কল্পনা করা হয়েছিল, তখন তার মনে কেবল ঐশ্বরিয়া রাইয়ের ছবিই ভেসে উঠেছিল। তামিল সিনেমার অন্যতম শক্তিশালী এই নারী চরিত্রটির জন্য ঐশ্বরিয়াকে কাস্ট করতে তাদের টিম প্রায় তিন মাস চেষ্টা চালিয়েছিল। এমনকি ঐশ্বরিয়ার আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান থালাইভা।
রজনীকান্ত আরও জানান, ঐশ্বরিয়া যদি রাজি হতেন, তবে তারা সিনেমাটির জন্য এক বছর অপেক্ষা করতেও প্রস্তুত ছিলেন। কারণ, চরিত্রটি সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা না গেলে সিনেমাটি ভালো চলত না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐশ্বরিয়া এই চরিত্রে আগ্রহ না দেখানোয় তারা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হন। রজনীকান্ত তখন পরিচালককে বলেছিলেন এমন কাউকে নিতে যার চোখে শক্তি আছে এবং যার উপস্থিতি দাপুটে। উপযুক্ত অভিনেত্রী না পাওয়া গেলে প্রজেক্টটি স্থগিত রাখার কথাও ভাবা হয়েছিল। অবশেষে পরিচালকের প্রস্তাবে রম্যা কৃষ্ণানকে নেওয়া হয় এবং বাকিটা ইতিহাস হয়ে আছে।
এদিকে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি ভক্তদের জন্য নতুন আশার আলোও দেখিয়েছেন রজনীকান্ত। ভিডিও বার্তায় তিনি কালজয়ী এই সিনেমাটির সিক্যুয়েল নির্মাণের প্রস্তাব দেন এবং নামও প্রস্তাব করেন—‘নীলাম্বরি: পডিয়াপ্পা টু’। তবে নির্মাতারা এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি।
সুন্দরবন ছেড়ে খোদ কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ! ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এর এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ঝড় তুলেছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এটি আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি একটি প্রচারমূলক ভিডিও। আসন্ন ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি: দ্য রয়েল বেঙ্গল রহস্য’-এর প্রচারের লক্ষ্যেই এই অভিনব কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছে। ভিডিওটির শেষে দেখা যায়, সেই বাঘের রহস্য সমাধানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফেলুদা। আগামী ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত এই সিরিজটি।
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী গল্প ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ অবলম্বনে তৈরি এই সিরিজে ফেলুদা হিসেবে আবারও ফিরছেন টোটা রায়চৌধুরী। তার বিশ্বস্ত সঙ্গী লালমোহন বাবু বা জটায়ুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং তোপসে হিসেবে থাকছেন কল্পন মিত্র। এছাড়া গল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মহীতোষ সিংহ রায়ের ভূমিকায় দেখা যাবে বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীকে। উত্তরবঙ্গের চালসা জঙ্গলের মনোরম ও রোমাঞ্চকর পরিবেশে সিরিজটির দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। এর আগে একই গল্প নিয়ে সন্দীপ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে ফেলুদা ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। এবার ওটিটির পর্দায় গল্পটি নতুনভাবে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে।
‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ মুক্তির পর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেলুদা ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে ভক্তদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবে প্রযোজনা সংস্থা জানিয়েছিল সিরিজ থামবে না, কেবল পরিচালকের পরিবর্তন হবে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার পরিচালকের আসনে বসেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সৃজিতের জুতোয় পা গলিয়ে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ফেলুদা হিসেবে টোটা রায়চৌধুরীকে কীভাবে উপস্থাপন করেন এবং নতুন এই ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ কতটা জমজমাট হয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন দর্শকরা।
প্রখ্যাত নির্মাতা মনি রত্নমের আগামী সিনেমায় প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধতে চলেছেন দক্ষিণী তারকা বিজয় সেতুপতি ও সাই পল্লবী। ২০২৬ সালের অন্যতম প্রতীক্ষিত এই প্রজেক্টটি ঘিরে ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আবেগঘন গল্প, দুর্দান্ত অভিনয় এবং দৃষ্টিনন্দন সিনেমাটোগ্রাফির সংমিশ্রণে তৈরি হতে যাওয়া এই সিনেমাটি ভক্তদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুরুতে সিনেমাটি অভিনেতা শিম্বুর সঙ্গে ‘ঠাগ লাইফ’ হিসেবে পরিকল্পনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মূল চরিত্রে যুক্ত হয়েছেন বিজয় সেতুপতি। এর আগে মনি রত্নমের ‘চেক্কা চিভান্তা ভানামে’ সিনেমায় কাজ করে সফলতা পেয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, পরিচালকের পছন্দের তালিকায় থাকা অভিনেত্রী সাই পল্লবী গত ৫ ডিসেম্বর একটি বিশেষ ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন, যা সিনেমায় তার গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
সিনেমাটির বিশালত্ব বাড়াতে সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন অস্কারজয়ী সুরকার এ.আর. রহমান এবং চিত্রগ্রহণে থাকছেন রবি ভার্মান। জানা গেছে, পঙ্গল উৎসবের পর সিনেমাটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে এবং ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হবে শুটিং। মনি রত্নমের নিজস্ব স্বাক্ষর বহনকারী এই সিনেমাটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে দেখতে হঠাৎ করেই কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে উপস্থিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি প্রায় পনেরো মিনিট অবস্থান করেন এবং গায়কের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
নচিকেতাকে নিজের ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাক্ষাতের সময় তিনি গায়ককে শরীরের প্রতি যত্নশীল না হওয়ার কারণে স্নেহের সুরে মৃদু ভর্ৎসনাও করেন। ভবিষ্যতে যাতে তিনি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে যথাযথ নজর দেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন মমতা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নচিকেতার হৃদযন্ত্রে দুটি স্টেন্ট বসানোর পর তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁকে সিসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করছেন, সবার সঙ্গে কথা বলছেন এবং নিজের পছন্দের বই পড়ছেন। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় তিনি দ্রুত মঞ্চে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনই তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। আপাতত তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে হঠাৎ বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন নচিকেতা। শরীর ঘামতে থাকায় কালবিলম্ব না করে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁর হার্টে ব্লকেজ ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং দ্রুত অস্ত্রোপচার করে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আসন্ন ২৪তম আসরের ‘এশিয়ান ফিল্মস কম্পিটিশন’ বিভাগের জুরিবোর্ড ঘোষণা করেছে আয়োজক কমিটি। এবারের আসরে এই মর্যাদাপূর্ণ বিভাগের বিচারকের আসনে থাকছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও স্থপতি সৈয়দা তুহিন আরা করিম (অপি করিম)। তাঁর সঙ্গে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আরও চারজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল জুরিবোর্ডের সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছেন। অপি করিম ছাড়াও এই বোর্ডে রয়েছেন নরওয়ের প্রযোজক ইনগ্রিড লিল হগটুন, ইতালির প্রযোজক ও পরিবেশক লিডিয়া জেনচি, মালয়েশিয়ার মিডিয়া নির্বাহী ও কনটেন্ট কৌশলবিদ টেং লি ইয়িন এবং তুরস্কের পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা রেইস চেলিক। উৎসব পরিচালক জানান, এবারের আসরে এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেকর্ডসংখ্যক চলচ্চিত্র জমা পড়েছে, যা উৎসবের ইতিহাসে অন্যতম বড় সাড়া। এই বিপুল অংশগ্রহণ উৎসবটিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব শুরু হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি, যা চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশের মোট ২৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬৭টি চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীগুলো অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে।
বরাবরের মতো এবারও উৎসবে এশিয়ান সিনেমা সেকশন, রেট্রোস্পেক্টিভ, ট্রিবিউট, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস, উইমেন ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মস ও স্পিরিচুয়াল ফিল্মস—এই ১০টি বিভাগে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে। উৎসবের ২৪তম আসরের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘চাইনিজ ফিল্ম উইক’, যেখানে চীনা চলচ্চিত্রের ১২০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দেশটির ১৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এ ছাড়া ভিন্ন দেশের তিনজন খ্যাতনামা নির্মাতার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হবে মাস্টারক্লাস। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দীর্ঘ দিন ধরেই স্টুডিওর চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ জনপদে গিয়ে ধারণ করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বটি ধারণ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহাসিক নাটুদাহ হাইস্কুল মাঠে। হানিফ সংকেতের রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় নির্মিত এই বিশেষ পর্বটি আগামী ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে।
এবারের পর্বের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে চুয়াডাঙ্গা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষ্টি-ঐতিহ্য নিয়ে রচিত একটি বিশেষ লোকগান। গানটি লিখেছেন চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ আলম সনি এবং সুর করেছেন হানিফ সংকেত। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আরেকটি লোকগীতি পরিবেশন করেছেন চুয়াডাঙ্গারই কৃতী সন্তান, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা বাউলকন্যা বিউটি এবং পান্থ কানাই।
অনুষ্ঠানটিতে চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে একটি বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, সামাজিক অসঙ্গতি ও সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক নাটিকা এবং নিয়মিত অন্যান্য আয়োজন থাকছে। তবে দর্শকদের জন্য একটি মন খারাপ করা খবর হলো, নাতি অসুস্থ থাকার কারণে এবারের পর্বে জনপ্রিয় ‘নানা-নানি’র কথোপকথন পর্বটি থাকছে না।
শুটিংয়ের ভেন্যু হিসেবে নির্বাচিত নাটুদাহ হাইস্কুল ভবনটি স্থানীয়ভাবে ‘হাজার দুয়ারি’ নামে পরিচিত। ১৯০৬ সালে জমিদার নফল চন্দ্র পাল চৌধুরী তাঁর স্ত্রী রাধা রানির উৎসাহে নিজস্ব জমিতে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ভবনটিতে প্রায় আড়াইশ দরজা রয়েছে এবং প্রতিটি ইটে জমিদারের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করা। যদিও মূল পরিকল্পনায় ৭৫০টি দরজা থাকার কথা ছিল, তবুও বিদ্যমান স্থাপত্যশৈলী এটিকে ইতিহাসের এক অনন্য সাক্ষীতে পরিণত করেছে।
‘ফাগুন অডিও ভিশন’ প্রযোজিত এই পর্বটি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শুটিং দেখতে আসা দর্শকরা জানান, চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে দেশজুড়ে তুলে ধরার এই উদ্যোগ তাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন নানামুখী প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই সংগীত ও সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের শিল্পীরা। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতি ও সংগীতচর্চা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ‘সাংস্কৃতিক ইশতেহার’ দাবি করেছেন তারা।
এই আলোচনার সূত্রপাত করেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’-এর সদস্য হামিন আহমেদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা খাতের পরিকল্পনা তুলে ধরলেও সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে কখনোই প্রকাশ্যে কোনো ইশতেহার দেয়নি। অথচ জাতির মানসিক বিকাশ, মানবিকতা ও নতুন প্রজন্ম গঠনে সংস্কৃতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই আসন্ন নির্বাচনে দলগুলো ক্ষমতায় এলে সংগীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী, তা স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন তিনি।
হামিন আহমেদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংগীতাঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শিরোনামহীন ব্যান্ডের জিয়াউর রহমান, জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা জন কবিরসহ শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরা এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পোস্টটি শেয়ার করেছেন। জিয়াউর রহমান লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে সংগীতের পথচলায় তাদের পরিকল্পিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা। মিউজিসিয়ান, ইন্ডাস্ট্রি কর্মী, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রোতা—সবাই জানতে চায় আগামীতে এই শিল্পের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
শিল্পীদের মতে, বাংলাদেশের সংগীতশিল্প আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা মূলত শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, ত্যাগ এবং শ্রোতাদের ভালোবাসার ফসল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতিগত সহযোগিতা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে এই শিল্প কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারছে না। এ অবস্থায় আধুনিক কপিরাইট আইন বাস্তবায়ন, শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও বীমা সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশ্ববাজারে বাংলা গানকে তুলে ধরার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চাইছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। নির্বাচনের আগে শিল্পীদের এই ঐক্যবদ্ধ দাবি দলগুলোর ইশতেহারে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
হলিউডের অন্যতম বৃহত্তম স্টুডিও ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির মালিকানা নিয়ে লড়াই এখন চরম নাটকীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। নেটফ্লিক্সের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথেই ছিল, কিন্তু সোমবার (৮ ডিসেম্বর) হঠাৎ করেই নগদ অর্থের বড় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে প্যারামাউন্ট। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রতি শেয়ারের জন্য প্যারামাউন্ট ৩০ ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে, যা নেটফ্লিক্সের দেওয়া প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে বেশি।
প্যারামাউন্টের এই নতুন প্রস্তাবের ফলে ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনা নিয়ে দুই বিশাল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহেই নেটফ্লিক্স ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা ওয়ার্নার ব্রাদার্স কেনার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। নেটফ্লিক্সের ওই ঘোষণার পর চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাদের আশঙ্কা, এত বড় একটি স্টুডিও স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের নিয়ন্ত্রণে গেলে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হবে, যা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এই বাণিজ্যিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণও। প্যারামাউন্টের মালিক ল্যারি এলিসন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রোববার ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, নেটফ্লিক্স যদি ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে নেয়, তবে বাজারে তাদের আধিপত্য ‘বড় ধরনের সমস্যা’ তৈরি করতে পারে।
এদিকে প্যারামাউন্টের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ডেভিড এলিসন নিজেদের অবস্থানে অনড়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা যা শুরু করেছিলাম, তা শেষ করতে চলেছি।’ বিডিং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে কেনার জন্য এটি প্যারামাউন্টের ষষ্ঠ প্রস্তাব। ফলে হলিউডের এই ঐতিহ্যবাহী স্টুডিও শেষ পর্যন্ত কার হাতে যাচ্ছে—নেটফ্লিক্স নাকি প্যারামাউন্ট—তা দেখার অপেক্ষায় এখন পুরো বিনোদন বিশ্ব।