কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সরব ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মা প্রকাশ করে নেমেছেন রাজপথেও। সকল বাঁধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে গেছেন নিজের মতো করে। বাংলাদেশের এ গণআন্দোলনের ওপর সজাগ দৃষ্টি ছিল ভারতের। ইতোমধ্যেই তারা কথা রটিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে! এসব বিষয় নিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বাঁধন। জবাব দিয়েছেন তাদের নানা প্রশ্নের।
বাঁধনের কাছে জানতে চাওয়া হয়; সরকার পতনের পর সহিংসতার বিষয়ে। জবাবে রেহানা মারিয়াম নূরখ্যাত এ অভিনেত্রী বলেন, ‘যে সহিংসতা হচ্ছে তা ঘৃণিত অপরাধ। বাংলাদেশে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আছে। তারা যেকোনো পরিস্থিতি নিজেদের লাভের জন্য ব্যবহার করে। যেসব ঘটনার কথা আপনি বলছেন, এ নৈরাজ্য তো গত ১৫ বছর ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে চলছিল। মানুষের ওপর নিপীড়ন চলছিল। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে, সবাইকে ফেলে চলে গেছেন। এ কারণে গত দুই দিন ধরে পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি না। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছি না। এখন আমি অভিনন্দন জানাতে চাই ছাত্র-জনতাকে যারা আন্দোলনটা সফল করেছেন। তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, যারা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কিন্তু আমাদের সবার। বঙ্গবন্ধু কিন্তু কোনো দলের নয়। কারও একার বাবা নন, ওনি আমাদের জাতির পিতা। ওনি আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছেন, ওনাকে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। কিন্তু আজকে ওনাকে যারা অপমান করেছেন, তাদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই। সঙ্গে এও বলতে চাই, আজকে ওনার অপমানিত হওয়ার পেছনে কিন্তু ওনার দুই সন্তানই দায়ী। তাকে এ অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন তার দুই মেয়ে, যে কারণে মানুষের এত ক্রোধ ও এত ক্ষোভ।’
উপস্থাপক যখন জানতে চান, এরা কারা? জবাবে বাঁধন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা যেভাবে মানুষকে জুলুম করেছে। যেভাবে মানুষের মুখ চেপে ধরা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। তিনি যেভাবে আমাদের ফেলে চলে গেলেন, তার মতো লিডারের কাছে আমরা আশা করিনি। তিনি দেশে থাকতেন, ফেস করতেন, তার বিচার হতো!’
কবে মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খানের দরদ সিনেমাটি- এমন প্রশ্ন অনেকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল শাকিবিয়ানদের মনে। যদিও ছবি নির্মাণের শুরুতেই পরিচালক অনন্য মামুন ঘোষণা দিয়েছিলেন, চলতি বছরের ভালোবাসা দিবসেই মুক্তি পাবে সিনেমাটি। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ে অনন্য মামুন যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে দরদ ছবিটির মুক্তি। ভালোবাসা দিবসের পর গত দুই ঈদে শাকিব খানের দুই ছবি মুক্তির কারণে আরেক দফা পিছিয়ে যায় সিনেমাটি।
তবে কোরবানি ঈদে শাকিব খান অভিনীত প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান এই সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও শেষ পর্যন্ত প্রকাশ পায় এর টিজার। সেখানে শাকিবের দেখা মেলে দুই রূপে। দেড় মিনিটের ওই টিজারে শাকিব কখনো একজন নিরিবিলি স্বভাবের তরুণ। কখনো আবার খুনি রূপে হাজির হয়েছেন। কিছুদিন আগে নির্মাতার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৬ সেপ্টেম্বরেই আসছে বহুল আলোচিত সিনেমাটি। দরদের প্রচারণাতেও নেমেছিলেন পুরো টিম।
কিন্তু দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের এক রদবদল ঘটায় সব পরিকল্পনায় ভেস্তে যায় পরিচালকের। তবে নির্মাতা অনন্য মামুন জানালেন এরই মধ্যে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার কথা আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই বলিনি কিংবা তারিখও জানাযইনি। তবে সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের কথা বলেছিলাম। তখন শুধু ফার্স্টলুক পোস্টার প্রকাশ সঙ্গে দুবাই থেকে প্রচারণাও শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে ‘দরদ’ সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছি। সেন্সর পেলেই আমরা মুক্তি দেব।’
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে গত দুই মাসে মুক্তি পেয়েছে মাত্র একটি সিনেমা। এমন পরিস্থিতিতে সিনেমা মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছেন প্রযোজক ও পরিচালকরা। এ বিষয়ে অনন্য মামুন বলেন, ‘সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। অনেক জায়গায় প্রশাসনিক পরিবর্তনও এসেছে। তবে আশার দিক হল- ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। দর্শকের হলে আসার বিষয়টি নিয়েও আমরা ভাবছি। তবে ভালো সিনেমা হলে দর্শক এমনিতেই হলে চলে আসবে। এ ছাড়া সুপারস্টার শাকিব খানের একটি বিষয় থেকেই যায়। শাকিব মানেই ভিন্ন কিছু। এটুকু বলতে পারি ‘দরদ’ ইতিহাস গড়তে আসছে।’
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, তামিল, তেলেগুসহ ৬টি ভাষায় ২৪টি দেশে একযোগে মুক্তি পাবে বলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে। সাইকো-থ্রিলারধর্মী এই ছবিতে শাকিব খান ও সোনাল চৌহান ছাড়াও অভিনয় করেছেন টালিউডের পায়েল সরকারকে। খলনায়কের ভূমিকায় আছেন রাহুল দেব। আরও অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের শহীদুজ্জামান সেলিম, এলিনা শাম্মী, জেসিয়া ইসলাম প্রমুখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। শোবিজে আগমন ঘটে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা ও এবং চলমান বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওয়েব সিরিজেও আলো ছড়িয়েছেন তিনি। পাশাপাশি গানের প্রতিও রয়েছে মম’র ভালোবাসা ও আবেগ। এবার প্রকাশ পাচ্ছে তার কণ্ঠে গাওয়া একটি রবীন্দ্র সংগীত। গান এবং অভিনয়ের নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে-
কেমন চলছে চলমান সময়
দেশের চলমান যে অবস্থা তাতে কোরোরই চলমান সময় খুব একটা ভালো চলছে না মনে হয়। বিশেষ করে আমাদের শোবিজ অঙ্গনের অবস্থা আরও নাজুক। স্থবির হয়ে পড়েছে নাটক, সিনেমারে শুটিং।এতকিছুর মধ্যেই চলছে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।
অভিনয়ের বাইরে গান
গান মূলত একান্তই শখের একটা বিষয় আমার। আমার এই শখের কথা গণমাধ্যমেই একাধিকবার বলেছি। ভালোবাসার জায়গা থেকে সময় পেলেই গুনগুন করে গান গাই। অনেক দিন আগে শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘রূপকথা এখন আর হয় না’ নাটকে গল্পের প্রয়োজনে একটি গান গেয়েছিলাম। তবে সেটা ছিল বাংলা সিনেমার কালজয়ী গান ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’। গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছিলাম। আমজাদ হোসেনের লেখা ও আলাউদ্দিন আলীর সুরে গানটি নতুন সংগীতায়োজনে মমর কণ্ঠে প্রশংসাও পেয়েছিল সেসময়।
এবার রবীন্দ্রসংগীত প্রসঙ্গ
এটাও শখের বসেই গাওয়া। কবি গুরুর বহুল জনপ্রিয় ‘তোমার খোলা হাওয়া’ শিরোনামের গানটি গেয়েছি কিছুদিন আগে। গানটি গত মাসেই প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল, কিন্ত দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বড় একটা রদ বদল হওয়ায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন আহমেদ রাজীব। এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে গানটির স্টুডিও ভার্সন ভিডিও। রবীন্দ্রসংগীতটি চলতি মাসেই এনএইচটি মিউজিক বক্স ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন সংগীত পরিচালক আহমেদ রাজীব।
চলচ্চিত্রে নারীদের অবস্থান
আমাদের দেশে তো নারীপ্রধান সিনেমা হচ্ছে। আসলে আমরা একটা ফরমেটের দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন গল্প বলার অনেক ভিন্নতা তৈরি হয়েছে। গল্প লেখক ও পরিচালকরা নারীপ্রধান সিনেমা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। আমি মনে করি, আমাদের দেশে নারী গল্প যেদিন অনেক বেশি বলা হবে সেদিন নারীদের অবস্থান আরও বেশি পাকাপোক্ত হবে। তো, আমরা সে পথে এগোচ্ছি। দর্শক নারীদের গল্প দেখতে চাচ্ছেন। পরিচালকরা নারীর গল্প বানাচ্ছেন। আমি নিজেও নারীপ্রধান গল্পে বেশ কয়েকটি চরিত্রে কাজ করেছি। সেই জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, আমরা একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, সব ভালো হবে।
ওপার বাংলার সিনেমায়
আমাদের এখান থেকে যারা কলকাতায় কাজ করছেন তাদের জন্য শুভ কামনা। তবে এখানকার কাজকে হেলাফেলা করা যাবে না। কলকাতার অভিনেত্রীরা কিন্তু এখন বাংলাদেশেই ফোকাস করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন, ওখানকার বেশির ভাগ অভিনেত্রীই বাংলাদেশে কাজের ব্যাপারে দারুণ আগ্রহী। আমার সঙ্গে অনেকের যোগাযোগও আছে। তারা জানিয়েছেন, দুই বাংলার মধ্যে এখন আমরাই এগিয়ে। সেটা তো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাজ দেখলে বোঝা যায়।
আজ বাংলাদেশের সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর ৫৩তম জন্মদিন। সবার প্রিয় এ নায়ক ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। সালমানের মৃত্যুবার্ষিকী এবং জন্মদিন এলেই যে তাকে নিয়ে আলোচনা হয় এমনটি নয়, বছরজুড়ে নানা কারণে তিনি আলোচনায় থাকেন। সালমান শাহর জন্মদিন উপলক্ষে দেশের নানা অঞ্চলে সালমানভক্তদের গঠিত ‘সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব’র সদস্যরা তার জন্মদিন উদযাপন করবে। তবে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতি’ সালমান শাহর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ কিছু করছে না।
সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। তার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা। স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিতি ছিলেন।। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লিগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। যদিও বা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয় করেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান সালমান শাহ; কিন্তু তার আগেই তিনি নাটকে অভিনয় করেন।
মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ’র অভিনয় জীবন শুরু হয়। ওই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তৌকীর আহমেদ অভিনয় করলেও সালমান শাহর চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে আরো বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন সালমান। সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও তার উপস্থিতি দর্শকের মধ্যে ভীষণ সাড়া ফেলেছিলো। যদিও বা মৌসুমীর সঙ্গে সিনেমাতে সালমানের অভিষেক হয়। পরবর্তীতে মৌসুমীর সঙ্গে আরও দুটি সিনেমা ‘স্নেহ’, ‘অন্তরে অন্তরে’তে অভিনয় করলেও আর কোন সিনেমাতে তাদের দেখা যায়নি। শাবনূরের সঙ্গেই বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ যে জুটিকে এখনো সিনেমার অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সালমান শাহের সঙ্গে জুটি হয়ে আরও অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।
সালমান শাহ যেদিন মারা যান সেদিন রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘আখেরি মোকাবেলা’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। আর এর পরের সপ্তাহ অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৯৬) মুক্তি পেয়েছিল ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমাটি। মৃত্যুর পর তার সিনেমাগুলো একের পর এক দর্শকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত এবং ব্যবসাসফল হয়।
এক সময়ের ব্যস্ত গায়ক এসডি রুবেল। গানের পাশাপাশি সিনেমারই নায়কও তিনি। সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালনার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই তারকার আজ জন্মদিন। আর বিশেষ দিনেই নতুন সিনেমার ঘোষণা দিলেন তিনি। তার নতুন সিনেমার নাম ‘নীল আকাশে পাখি ওড়ে’। সিনেমার গল্প রচনা করেছেন এসডি রুবেল নিজেই। পরিচালনাও করবেন তিনি। এসডি রুবেল জানান, গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। তবে তিনি ছাড়া সিনেমাটিতে আর কে কে অভিনয় করবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এসডি রুবেল বলেন, ‘সিনেমাতে আমার নায়ক বা অভিনেতা হিসেবে অভিষেক হয় শ্রদ্ধেয় মনতাজুর রহমান আকবর ভাই পরিচালিত এভাবেই ভালোবাসা হয়-সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এতে আমার বিপরীতে ছিলেন শাবনূর। সিনেমাটিতে অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলাম আমি। পরবর্তীতে আমি নিজেই নির্মাণ করি সরকারি অনুদানে বৃদ্ধাশ্রম-সিনেমাটি। এখন আমার সিনেমার গল্পের মূল বিষয় হলো- মানুষ চাইলেই নিজেকে ভালো রাখতে পারে। সৎ থেকে নিজের অবস্থানকে মূল্যবান করতে পারাটাই প্রকৃত জীবন। বর্তমানে গানের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী মাসের শুরুতে সিনেমার শুটিং-এ যেতে পারব।’
এদিকে আজ জন্মদিন উপলক্ষে এসডি রুবেল ঢাকার মধ্যেই শিশুদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটাবেন। বহুবছর ধরে তিনি প্রতি জন্মদিনে এই কাজটি করে আসছেন। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কেক কাটেন, খাওয়া-দাওয়া করেন এসডি রুবেল। এসডি রুবেল গায়ক হিসেবে মৌলিক গানের একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন ৩৭টি।
এ ছাড়া প্রায় ৪০০ মিক্সড অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯-এ টানা তিনবার সেরা করদাতা হিসেবে তিনি হ্যাট্রিক করেছিলেন। এসডি রুবেল গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ পরিচালকও বটে। তিনি ১৪০০ নতুন বাংলা গানে এবং শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘অনেক বেদনা ভরা আমার জীবন’, ‘লাল বেনারসি জড়িয়ে তুমি যে’, ‘তোমার নীল নীল নীল চোখে’, ‘আমার একটা সাথী ছিল দেশের বাড়িতে’, ‘মন যেন মায়াবী পাখি’, ‘রূপ কারিগর’, ‘বুকেতে পাথর বেঁধেছি’, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন তুমি’, ‘এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছি আমি (সিনেমার গান)’, ‘আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি রইল (সিনেমার গান)’, ‘এভাবেই ভালোবাসা হয় (সিনেমার গান)’, ‘আজ থেকে আমি তোমার হলাম (সিনেমার গান)’, ‘আমি পারব না তোমাকে ভুলে যেতে’, ‘পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে’ ইত্যাদি।
ভারতের সমান্তরাল চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রীর নাম শাবানা আজমি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সমাজকল্যানমূলক কাজে অগ্রণী। যারা গ্ল্যামারান নায়িকা, তাদের বরাবরই স্বপ্ন থাকে মেগা বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হওয়ার। কিন্তু শাবানা আজমির ভরপুর গ্ল্যামার থাকা সত্ত্বেও নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক অনন্য উচ্চতায়, সে কাজগুলো মেগা বাণিজ্যিক না হতে পারে কিন্তু তিনি তার কাজের মধ্য দিয়েই আলোচনায় থাকবেন মৃত্যুর পরও যুগ যুগ। যেসব গ্ল্যামারাস নায়িকা জীবদ্দশাতেই এক সময় আলোচনার বাইরে চলে যান সেখানে শাবানা আজমি জীবদ্দশাতেই ঠাঁই পেয়ে গেছে কিংবদন্তির তালিকাতে। তাই তো বলিউডে এত সুন্দরীর ভিড়েও এই অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রীর শাবানা আজ বরাবরই নিজস্ব দীপ্তিতে উজ্জ্বল। ‘আর্থ’ ছবির পূজা ইন্দর কিংবা ‘পার’-এর রামা, কোনো চরিত্রেই শাবানা আজমির বিকল্প কাউকে ভাবা যায় না। বাণিজ্যিক ও শিল্প- দুই ধারার ছবিতেই তিনি সফল।
নন্দিত এই অভিনেত্রী আজ স্পর্শ করলেন জীবনের নতুন এক মাইলফলক। পঁচাত্তরে পা রাখলেন তিনি। এই অভিনেত্রী শতবর্ষের বলিউডের আকাশে অরুন্ধতীর মতোই স্থির। শাবানা আজমির জন্ম ১৯৫০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। শাবানা আজমি পাঁচবার জয় করেছেন সেরা অভিনেত্রীর ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চারবার সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার। ২০০৬ সালে ফিল্মফেয়ার আসরে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন আটবার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন অনেকবার। ১৯৮৮ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার ও রাজীব গান্ধী পুরস্কার। শাবানা আজমি বর্তমান ৭৫ বছর বয়সেও তার অভিনয় ক্যারিয়ারে যেমন ব্যস্ত তেমনি সমাজসেবামূলক কাজেও নিবেদিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার কাজের সঙ্গে যুক্ত। শিশু অধিকার রক্ষারও একজন কর্মী তিনি। এইচআইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজে তিনি যুক্ত। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস তাকে রাজ্যসভার সদস্য পদ দেয়।
প্রসঙ্গত, শাবানা আজমি বলিউডের বর্ষীয়ান চিত্রনাট্যকার, গীতিকার এবং কবি জাভেদ আখতারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। স্ত্রী হানি ইরানি ও দুই সন্তান ফারহান আখতার ও জোয়া আখতার জীবনে থাকাকালীনই সাবানা আজমিকে ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন জাভেদ। সম্প্রতি ‘দ্য ইনভিন্সিবলস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাবানা জানান, হানি ইরানি তাদের বিষয়ে জানা সত্ত্বেও কখনো সন্তানদের বাবার থেকে দূরে রাখেননি। বরং পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন। সেই সময় হানির মনে শাবানার জন্য তিক্ততা থাকলেও বর্তমানে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে।
সন্তানদের মনে কখনো জাভেদ আখতার বা শাবানা আজমির বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভাইব তৈরি করেননি। বরং একজন মা হিসেবে প্রকৃত দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘The Invincibles’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেন, ‘ওর থেকে যে উদারতা পেয়েছি, তার জন্য আমি হানিকে স্যালুট করি। আজ হানির সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক।
আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল ফিল্ম ক্রু অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ বা ফিল্ম ক্যাব। গত ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় এর কমিটি গঠন করা হয়।
সিনেমা, বিজ্ঞাপন চিত্র ও ওটিটি কনটেন্টের ক্রুদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এই ফিল্ম ক্যাবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদরে মতে- ফিল্ম ক্যাব শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি প্ল্যাটফরম। যা ১০টি বিশিষ্ট সংগঠনকে একত্র করেছে।
ফিল্ম ক্যাব গড়ার পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে, বিনোদন মাধ্যমে যুক্ত সব ক্রু মেম্বারের জন্য একটি টেকসই এবং পেশাদার কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা; কর্মপরিস্থিতি উন্নত করার পাশাপাশি এমন একটি মানদণ্ড স্থাপন করা যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
এই ক্যাবের সঙ্গে যুক্ত থাকা সংগঠনগুলো হলো, আর্ট ডিরেক্টরস অ্যান্ড কস্টিউম ডিজাইনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ অ্যাডভার্টাইজিং মেকআপ আর্টিস্ট কমিউনিটি; বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স অব সিনেমাটোগ্রাফারস; বাংলাদেশ প্রডাকশন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট অ্যাসোসিয়েশন; কাস্টিং ডিরেকটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; ফোকাস পুলার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; পোস্ট প্রডাকশন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; প্রডাকশন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; ক্যামেরা ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ লাইটম্যান কল্যাণ সংস্থা।
প্রতিষ্ঠার দিন সংগঠনটি সাতটি লক্ষ্য উপস্থাপন করে। যার মধ্যে রয়েছে- লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা, ন্যায়সংগত ও সংগঠিত কাজের পদ্ধতি নির্ধারণ, পেশাগত উন্নয়ন, আইনি সহায়তা ও অধিকার সুরক্ষা করা, সহযোগিতা ও যোগাযোগের উন্নতি নিশ্চিত করা, কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং পরিবেশবান্ধব কাজের পদ্ধতি তৈরি করা।
প্রতিষ্ঠার দিনই সংগঠনটির নির্বাহী কমিটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিটিতে আছেন, আতিয়া রহমান, বরকত হোসেন পলাশ, ইদিলা ফরিদ তুরিন, ফারজানা সান, ইফরীত জীনা মিতি, কামরুন নাহার কলি, মো. গোলাম সরোয়ার (রুবেল), মো. মহিউদ্দিন খান (রনি), মো. তারেক বাবলু, মোর্শেদ বিপুল, মজিবুল মোহন, নাহিদ মাসুদ, নাজমুল হাসান, রোদ্রী রিপ, রিপন নাথ, শৈব তালুকদার, এস আর জিতু, শিহাব নুরুন নবী ও তারেক আহমেদ।
সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আতিয়া রহমান বলেন, ‘সদস্যদের ক্ষমতায়নের জন্য এবং শিল্পের ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। আমরা সব আগ্রহী পক্ষকে এই উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত থাকার এবং আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাই, যাতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পের মান উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।’
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে সম্প্রতি। ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অগ্নিকন্যাখ্যাত এ মডেল-অভিনেত্রীর। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাহি নানা বিতর্ক জড়িয়েছেন। মডেলিং ও অভিনয়ের বাইরেও মাহিয়া মাহি যুক্ত আছেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের এক সক্রিয় কর্মী হিসেবে ছিলেন মাঠে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন এ চিত্রনায়িকা। নৌকার মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আতঙ্কে আছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দেশের শোবিজ তারকারা। অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে কয়েকজন তারকার বিরুদ্ধে। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহিও এমন মামলার আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠরা। তবে বিষয়টি নিয়ে মাহি বলেন, ‘আমি কেন ভয়ে থাকব? আমি এমন কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, যার কারণে আমাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আমি সব সময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আপনারা খোঁজ নিলেই তা জানতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আপনারা জেনেছেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীরা- ডিজিএফআই, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমার রিপোর্ট ভালোভাবে চেক করেছেন। এরপরই তারা আমাকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এখন আমার নামে যদি কোনো বাজে রিপোর্ট থাকত, তাহলে কি তারা আমাকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিত। অবশ্যই না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি একটি দলকে সাপোর্ট করতেই পারি। তবে সেই দলের হয়ে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত আছি কিনা এটা দেখার বিষয়। আমি এটুকু বলতে পারি, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না ও এখনও নেই।’
মাহিয়া মাহি বলেন, ‘মামলা, অভিযোগ যে কেউই করতে পারে। এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ করে- সেখানে আমি কি বলব। যত অভিযোগই আসুক না কেন নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমাকে কেউ অভিযুক্ত করতে পারবে না। কারণ আমি এমন কোনো অন্যায় করিনি।’
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে দ্বিতীয় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাহি আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নৌকার টিকিটের আশায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু দল তার ওপর ভরসা করতে পারেনি। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই রাজশাহী-১ আসন থেকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে রাস্তায় নামেন। সেখানে নৌকার প্রার্থীর কাছে ভরাডুবি হয়ে নির্বাচনে হেরে জামানত হারান এ অভিনেত্রী। তবুও আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করেন মাঠে। এদিকে নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় প্রভাব পড়ে সংসার জীবনে। বিচ্ছেদ ঘটে দ্বিতীয় সংসারেও। ব্যক্তি জীবনে তিনি এখন একা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই পরীমনির সন্তানকে নিয়ে নানা ধরনের ছবি দেখা যায়। সেখানে বোঝা যায় সন্তানের সঙ্গে কাটানো সময় বেশ উপভোগ্য করেন এই গ্ল্যামার কন্যা।
অনেকের মতে, পরীমনি আর যা–ই হোক, মা হিসেবে দুর্দান্ত, আপনি কী বলেন? এ ব্যাপারে ঢাকাই ছবির এই নায়িকার বক্তব্য, ‘এমনি এমনি তো আর মানুষ বলেন না এটি। সন্তানের প্রতি আমার আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা মানুষ দেখেন। হয়তো এ কারণে বলেন। এতে একজন মায়ের যে শান্তি, পৃথিবীর কেউ তার ভাগ নিতে পারেন না। আমি সন্তানদের নিয়ে সেই শান্তির মধ্যে সময় পার করছি।’
এদিকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশি কোনো সিনেমা হাতে নেই পরীমনির। ‘আমি দুটি সন্তান লালনপালন করছি। আগে আমার সন্তানরা, পরে কাজ। তাদের যত্ন নেওয়ার পর যতটুকু সময় পাই, কাজ হাতে নিই। কারণ, এখন আমি সন্তানদের সময় দিতে চাই’- বললেন পরীমনি।
গত ৮ আগস্ট পরীমনি অভিনীত অনম বিশ্বাসের ওয়েব সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’ মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু দেশের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মুক্তি পিছিয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তির কথা আছে। এই সিরিজে সুপ্তি চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি।
এ ব্যাপারে পরীমনি বলেন, ‘সিরিজটির মুক্তির অপেক্ষায় আছি। কারণ, এ কাজটি আমার কাছে অনেক স্পেশাল। দেশের পরিস্থিতির কারণে মুক্তি পিছিয়েছে। এর মধ্যে পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। চলতি মাসের শেষে মুক্তির সম্ভাবনা আছে।’
দেবরাজ সিনহার পরিচালনায় ‘ফেলুবকশি’ নামে কলকাতার একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন পরীমনি। এখন শুধু ছবির ডাবিং বাকি।
পরীমনি জানান, ভিসা জটিলতার কারণে ডাবিংয়ের জন্য কলকাতা যেতে পারছেন না তিনি। বলেন, ‘আমার আগের ভিসা নেই। নতুন ভিসা পেতেও সমস্যা হচ্ছে। এখন কবে ভিসা পাব, কবে যেতে পারব, বুঝতে পারছি না। এটি আমার কলকাতার প্রথম ছবি। আমি চাই দ্রুতই শেষ করে মুক্তি পাক ছবিটি।’ ‘ফেলুবকশি’-তে কাজ করতে গিয়ে কলকাতার আরও একটি ছবিতে কাজের সুযোগ হয়েছে পরীমনির। তবে ছবিটির বিস্তারিত এখনই জানাতে চাননি তিনি।
ক্যারিয়ারে এত বেশি প্রেমের নাটকে অভিনয় করেছেন; যার দরুণ রোমান্টিক নাটকের রাজপুত্র হিসেবে উপাধি পেয়েছেন জিয়াউল ফারুক। টিভি নাটকে অনেক বছর ধরে কাজ করলেও বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই বেশি দেখা যাচ্ছে এই তারকাকে। তবে এখন তার বেশিরভাগ কাজ দেখা যায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। তবে রোমান্টিক ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে এবার একটু অন্যরকম চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হচ্ছেন তিনি। অভিনয়ের প্রতি একজন শিল্পীর কতটা একাগ্রতা, ভালোবাসা, অধ্যবসায় থাকলে তার জনপ্রিয়তা টানা দেড় যুগ ৮ বছর প্রায় সমানই থাকে তারই প্রমাণ যেন অপূর্ব।
২০০৬ সালে গাজী রাকায়েতের নির্দেশনায় ধারাবাহিক নাটক ‘বিয়ের গল্প’তে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে অভিনেতা অপূর্ব’র যাত্রা শুরু হয়েছিলো। সেই থেকে যেন দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। নাটকে এখনো এই সময়ের শীর্ষ অভিনেতা বা জনপ্রিয় অভিনেতা তিনি। শুধু দেশেই যে তার এই জনপ্রিয়তা বিদ্যমান দেশের বাইরেও সমান জনপ্রিয় অপূর্ব। যেখানে কলকাতার দর্শক তাদের চ্যানেলে সিরিয়াল দেখে বিরক্ত, সেখানে অপূর্ব অভিনীত নাটক তারা ইউটিউবে আগ্রহ নিয়ে দেখেন। অপূর্ব অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়ে মনে প্রাণে কাজ করে গেছেন। যার ফলশ্রুতিতে অভিনয়ের দুনিয়ায় তার আজকের এ অবস্থান।
বলা যায় টিভি নাটকে শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে অপূর্ব বিগত দেড় যুগ ধরে রাজত্বই করেছেন। পরবর্তীতে ওটিটি প্ল্যাটফরমেও অপূর্ব অভিনীথ কন্টেন্ট দর্শককে মুগ্ধ করেছে। অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে নিজেকে প্রয়োজনানুযায়ী যেভাবে বদলানো দরকার অপূর্ব ঠিক সেভাবেই নিজেকে বদলে নিয়ে কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে শ্রম ও মেধা দিয়ে।
নিজের অভিনয় পেশার এমন সাফল্যে এবং পথচলার দেড় যুগ প্রসঙ্গে অপূর্ব বলেন,‘ মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি কারণ তিনি আমাকে সুন্দর একটি জীবন দিয়েছেন, আমার বাবা মায়ের কারণে এই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখতে পেরেছি। আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমার প্রথম বিজ্ঞাপনের নির্মাতা অমিতাভ ভাই, প্রথম নাটকের নির্মাতা রাকায়েত ভাইসহ নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, শিহাব শাহীনসহ বিভিন্ন সময়ে আরও যারা আমাকে নিয়ে নাটক নির্মাণ করেছেন তাদের প্রতি। একটা সময় তরুণ অনেক নির্মাতাই আমাকে নিয়ে একের পর এক নাটক নির্মাণ করেছেন, তারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছেন, আমি তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থেকেছি, আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।’
দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মন্দানার ক্যরিয়ার শুরু দক্ষিণী সিনেমা দিয়েই। দক্ষিণী অভিনেত্রী হলেও নিজেকে এই পরিচয় দিতে মোটেও রাজি নন লাস্যময়ী এই অভিনেত্রী। নিজেকে কেবল ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করেন তিনি। বলিউডে তাকে বলা হয় ‘জাতীয় ক্রাশ’। অভিনয়, হাসি ও সৌন্দর্য দিয়ে জয় করে আসছেন কোটি তরুণের মন। গত বছর মুক্তি পাওয়া বলিউড সিনেমা অ্যানিমেল-এর নায়িকা ছিলেন তিনি। বহুল আলোচিত এই ছবিতে রণবীর কাপুরের বিপরীতে ছিলেন রাশমিকা।
অ্যানিমেল ছবির সাফল্যে যখন উড়তে থাকেন রাশমিকা ঠিক তখনই আরেকটা বড় একটা প্রস্তাব পান তিনি। চলতি বছরের শুরুতেই পরিচালক এ আর মুরুগাদোস ঘোষণা করেন ‘সিকান্দার’ সিনেমাটির। এই ছবিরে মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সালমানের নায়িকা হিসেবে পর্দায় আসছেন রাশমিকা। ছবিটির ঘোষণা দিয়েছিলেন চলতি বছরের শুরুতেই। এরই মধ্যে অনেকখানি শুটিং সম্পন্ন হয়েছে ছবিটির। মাঝখানে সালমান খানের কোমরে তীব্র ব্যথা পাওয়ার কারণে শুটিংয়ে কিছুটা বিলম্ব হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের কোনো একটা ঈদে মুক্তি পাবে সালমান-রাশমিকার প্রথম সিনেমা ‘সিকান্দার’।
এভাবে ক্রমেই বলিউডেও নিজের একটা শক্ত জায়গা তৈরি করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তবে কোনো এক রহস্যজনক কারণে আড়ালে ছিলেন রাশমিকা মন্দানা। অনেক দিন ধরেই তাকে সোশ্যাল মিডিয়া এমনকি শোবিজের কোনো অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি। এতে কিছুটা বিচলিত ছিলেন তার ভক্তরা। এবার সে কারণ জানালেন অভিনেত্রী নিজেই।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি রাশমিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালেন, দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় তিনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানান। এ সময় চশমা পরা অবস্থায় মাথা ধরে ক্যাজুয়াল লুক নিয়ে নিজের একটি ছবিও শেয়ার করেছেন রাশমিকা। ক্যাপশনে লেখেন, হ্যালো বন্ধুরা। কেমন আছেন আপনারা? আমি এখানে আসার পর থেকে বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে বা আমাকে জনসমক্ষে দেখা গেছে।
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘গত মাসে আমি খুব বেশি সক্রিয় ছিলাম না কারণ আমার একটি ছোট দুর্ঘটনা হয়েছিল (একটি ছোটখাটো) এবং আমি সুস্থ হয়ে উঠছিলাম। ডাক্তাররা আমাকে যেমন বলেছিলেন তেমন বাড়িতেই থাকছিলাম। আমি এখন আরও ভালো আছি।’
চিত্রনায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলী চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন ঢালিউডের শীর্ষ তারকা শাকিব খানের নায়িকা হয়ে। এরপর বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদসহ নানা কারণে শাকিব-বুবলী জুটি। একপর্যায়ে শাকিব ছাড়া নিরব, শরিফুল রাজ, সাইমন, রোশানসহ অনেকে নায়কের সঙ্গে অভিনয় করলেও কোনো সিনেমাই খুব একটা সাফল্যের দেখা পায়নি। এর মধ্যেই জানা গেল, এবার শোনা যাচ্ছে, বুবলীর বিপরীতে নায়কের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন টিভি অভিনেতা শ্যামল মাওলা। ছবির নাম ‘নীল টিপ’। যদিও ছবিটি নিয়ে কেবল কথাবার্তা হয়েছে, চূড়ান্তভাবে শ্যামলকে সেখানে নায়ক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে কি না তা এখনও নিশ্চিত করে বলেননি ছবিটির পরিচালক। মেহেদি হাসান।
এর মাধ্যমে প্রায় আট মাস পর নতুন সিনেমা হাতে পেলেন বুবলী। ছবির নির্মাতা মেহেদি হাসান জানান, শিগগিরই এ সিনেমার শুটিং শুরু হবে। নির্মাতা বলেন, বুবলীর সঙ্গে আমরা ছোটপর্দার একজন অভিনেতাকে নিতে চাই। তবে এ সিনেমার গল্প বুবলীকে ঘিরেই। তিনিও গল্পটা বেশ পছন্দ করেছেন। আসলে আমাদের দেশে নারীপ্রধান গল্পে সিনেমা হয় কম। একটা সময় শাবানা ম্যাডামের গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ হতো। আমিও এ সময়ে এসে বুবলীকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।
শাকিব খানকে ছাড়া বুবলী অভিনীত কোনো সিনেমা ব্যবসাসফল হয়নি। সিনেমা মুক্তি পেলেও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। এ রকম এক অভিনেত্রীর সঙ্গে শ্যামল মাওলার জুটি বাঁধার ফলাফল আগাম অনুমান করা যায়। অন্যদিকে অনেক দিন ধরে নতুন কোনো ছবি পাচ্ছিলেন না বুবলী। হাতে থাকা এম ডি ইকবালের ‘বিট্রে’ ও জসিম উদ্দীন জাকিরের ‘মায়া: দ্য লাভ-২’ ছবিদুটি থেকে বাদ পড়েন তিনি।
এম ডি ইকবাল ‘বিট্রে’ সিনেমা থেকে তাকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গ বলেন, ‘রিভেঞ্জ’ দারুণ একটি গল্পের সিনেমা ছিল। অ্যাকশন থেকে শুরু করে একটি পরিপূর্ণ সিনেমা বলতে যা বোঝায়, তার সবকিছু এতে ছিল। রোশান-বুবলীকে জুটি করে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম দর্শকদের নতুন একটি জুটি উপহার দিতে। কিন্তু দর্শক জুটিটি পছন্দ করেনি। দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই প্রতিটি সিনেমার নির্মাতা যত্নের সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু সেই দর্শকই যদি রোশান-বুবলী জুটি পছন্দ না করে, তাহলে সিনেমা আমি কাদের জন্য বানাব! আমার পরিচালনায় রোশানের পরপর দুটি এবং বুবলীর একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু তারা দর্শক টানতে পারছেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পূর্বঘোষিত ‘বিট্রে’ তাদের নিয়ে বানাব না।’
বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। দেশের চলচ্চিত্রানুরাগীরা তাকে ভালোবেসে ‘বাংলার শেষ নবাব’ বলেন। দেশের চলচ্চিত্র দর্শকের মধ্যে তিনি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও ‘মুকুটহীন নবাব’ হিসেবেও খ্যাত। আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০১৩ সালে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিকে অঝোরে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি দেন আনোয়ার হোসেন। অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ১৯৬৭ সালের ২৪ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ ওই একটি চলচ্চিত্রে নবাব সিরাজের চরিত্রে অভিনয় করেই চিরকালের কিংবদন্তি হয়ে আছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, নাট্যধর্মী, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, পারিবারিক মেলোড্রামা, নাট্যধর্মী, বক্তব্যধর্মীসহ বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ হিসেবে তার ওই একটি ‘সিগনিফিকেন্ট’ চরিত্রে অভিনয়ের কোনো তুলনাই হয় না। মানুষ তাকে কখনোই ভুলবে না ওই একটি চরিত্রের কারণেই। তার ওই নিখুঁত অনবদ্য অভিনয়ের মধ্যেই বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার গোটা আদলটিই বাংলার মানুষের মানসপটে বারবার ভেসে ওঠে।
অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ১৯৩১ সালে ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনে তিনি প্রখ্যাত নাট্যকার আসকার ইবনে সাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালে অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেই ঢাকাই ফিল্মে পদার্পণ করেন। ১৯৫৮ সালে মহিউদ্দেনের ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার ঢাকাই ফিল্মে অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটি ১৯৬১ সালের ১০ নভেম্বর মুক্তি পায়। সেই থেকে শুরু করে তার দীর্ঘ ৫২ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানস্বরূপ একুশে পদক লাভ করেন। অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ওই পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তিনি পাকিস্তানের নিগারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে দীর্ঘ ৫২ বছরের অধিকাংশ সময় সহ-অভিনেতার কাজ করলেও অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে তিনি সহঅভিনেতার পাশাপাশি নায়ক চরিত্রেও অভিনয় করতেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- ‘সূর্যস্নান’, ‘কাচের দেয়াল’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘রাজা এলো শহরে’, ‘বন্ধন’, ‘পালঙ্ক’, ‘গোধূলীর প্রেম’, ‘রাজা সন্ন্যাসী’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘পরশমণি’, ‘যাহা বাজে শেহনাই’ (উর্দু ছবি), ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ধাঁকাবাঁকা’, ‘কোথায় যেন দেখেছি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘শেষ রাতের তারা’, ‘লালন ফকির’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘রংবাজ’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাল সালু’, ‘ভাত দে’ প্রভৃতি।
গুলশান আরা আক্তার চম্পা- চলচ্চিত্রের সিনিয়র অভিনেত্রী। গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে চম্পা যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ‘মালা’ হয়েই বসে আছেন রুচিশীল দর্শকের মনে। তার সঙ্গে রয়েছে ‘উত্তরের খেপ’, ‘অন্যজীবন’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’ ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় অভিনয়ের দরুন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাণিজ্যিক সিনেমাতেও তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। এ নন্দিত তারকার বর্তমান ব্যস্ততাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর বিপ্লব
চলমান ব্যস্ততা
সত্যি কথা বললে এখন আমার একদমই কোনো ব্যস্ততা নেই। বলতে গেলে কোনো খবরেই নেই আমি। সেই করোনাকাল থেকেই আমি নতুন কোনো কাজ হাতে নিইনি। অবশ্য এ সময়ে অনেকই প্রস্তাব এসেছে- সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ এখন আমি আর অনুরোধের ঢেঁকি গিলে কারও সিনেমায় যুক্ত হতে চাই না। তবে ভালো গল্পের হলে নতুন কাজ করার ইচ্ছে আছে।
যে কারণে অভিনয়ে নেই
এখন সিনিয়র আর্টিস্টদের জন্য সে রকম গল্পই তৈরি হচ্ছে না। সেরকম গল্প হয় না বলেই সিনিয়র আর্টিস্টদের অভিনয় কমে গেছে। সিনিয়র আর্টিস্টদের নিয়ে গল্প হলেও গুরুত্ববিহীনভাবে ক্যারেক্টার তৈরি হচ্ছে। এরকম গুরুত্ববিহীন চরিত্রে কেন সিনিয়র আর্টিস্টরা কাজ করবেন? এ কারণেই আমি অভিনয় করছি না। ভালো কাজ ছাড়া করবও না। আগের আর্টিস্টদের ক্ষেত্রে দেখেন, তখন কিন্তু ভারী ভারী ক্যারেক্টার তৈরি হতো। রাজ্জাক-শাবানার কথাই ধরা যাক। তাদের সেসব চরিত্রের দিকে একবার তলিয়ে দেখেন তো- কীরকম মারাত্মক-ভারী চরিত্রের ছিল! আর এখনকার সিনেমাগুলোতে দেখেন। খুঁজেই পাবেন না।
এখনকার নির্মাতারা
এখনকার নির্মাতাদের মাঝে আমি আশার আলো দেখি। তারা অনেক ভালো ভালো গল্প চুজ করছেন। তারা পার্টিকুলার একটা নায়ক/নায়িকা বেইজ থেকে বেরিয়ে এমনসব ভালো সিনেমা বানাচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সেই ছবিটিইবা গল্পটিই নায়ক বা একটা নায়িকা হয়ে যাচ্ছে। একটা নতুন ডাইমেনশন নিয়ে আসছেন নতুনরা। আমরা অবশ্যই তাদের কাজে আরও ভালো কিছু আশা করতে পারি।
দুই রকম অনুভূতি
যখন নায়িকা ছিলাম আলাদা একটা ফিলিং ছিল। যখন ক্যারেক্টার আর্টিস্ট সেটা আরেক রকম। তবে ক্যারেক্টার আর্টিস্টে গভীরতা বেশি। নায়িকা চরিত্রে যেমন খালি লাইট, লাইট- বা ফান না থাকলেও ক্যারেক্টার আর্টিস্টে গভীরতা বেশি। আবার যখন নায়িকা ছিলাম অনেক সুন্দর-সুন্দর লোকেশনে যেতে হতো। তার অনুভূতি কিন্তু আলাদা। তা এখন মিস করি। সেটাই দারুণ উপভোগের ছিল।
চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যতের বিষয়টা বলা মুশকিল। তবে আমি ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছি। জুনিয়রদের সঙ্গে সিনিয়রদের একটা গ্যাপ আছে কিন্তু। আগের যারা শিল্পী তাদের মধ্যে আছে অভিজ্ঞতা আর নতুনদের মধ্যে আছে নতুন নতুন আইডিয়া- এই দুইয়ের কম্বিনেশনেই কিন্তু ভালো ভালো সিনেমা সৃষ্টি হতে পারে। আমি নিজেও কিন্তু নতুনদের একটা ছবিতে কাজ করেছি ‘বিশ্বসুন্দরী’। ওটাও কিন্তু ভালো ছবি।