জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে বসবাস করলেও তার কপাল খোলে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ ২০০৮ আসরের প্রথম রানার আপ নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে। ওই বছর ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’ সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে দ্বৈত গানে কণ্ঠ দেন ইমরান। এরপর আরফিন রুমির হাত ধরে প্রথম একক অ্যালবাম রিলিজ করেন ২০১১ সালে। অ্যালবামের নাম ‘স্বপ্নলোক’। অল্প সময়ে সমসাময়িক অনেকের চেয়ে এগিয়ে যান ইমরান। সংগীতশিল্পী থেকে সংগীত পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি পান দ্রুত।
কয়েক বছর ধরেই দেশ ও বিদেশের মাটিতে স্টেজ শো করার পাশাপাশি নতুন নতুন গানও উপহার দিচ্ছেন ইমরান। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন তিনটি গান নিয়ে আসছেন তিনি। এরই মধ্যে গান তিনটির সংগীত আয়োজন ও ভয়েস রেকর্ডিং শেষ হয়েছে। মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের পরিকল্পনাও গুছিয়ে এনেছেন তিনি। গান তিনটি হলো ‘মন বুঝলি না’, ‘শুধু তোমাকে ছাড়া’ ও ‘কথা একটাই’।
ইমরানের কাছ থেকে জানা গেল, মন বুঝলি না গানটির কম্পোজিশন করেছেন ফুয়াদ আল মুক্তাদির। কথা লিখেছেন আবদার রহমান। ফুয়াদের সঙ্গে যৌথভাবে গানটি প্রযোজনা করছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি প্রযোজক সঞ্জয়। তিনি ভারতীয় অনেক গানেরও প্রযোজক।
শুধু তোমাকে ছাড়া শিরোনামের গানটি লিখেছেন আসিফ ইকবাল। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন ইমরান। গানটিতে ইমরানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাবেন আরও এক নারী শিল্পী। তবে কে গাইবেন, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গানের ভিডিওতে ইমরানের সঙ্গে মডেল হবেন নাজনীন নিহা। কথা একটাই গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন ইমরান। গানটিতে ইমরানের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন পড়শী।
তিনটি গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিং হবে থাইল্যান্ডে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পুরো টিম নিয়ে থাইল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ইমরান। এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘সামনে তিনটি উপলক্ষ আছে। ইংরেজি নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস এবং ঈদ। উপলক্ষ তিনটিকে টার্গেট করেই বড় আয়োজনে তৈরি করা হচ্ছে গানগুলো। নতুন বছর উপলক্ষে ফুয়াদ ভাইয়ের গানটি রিলিজ করার পরিকল্পনা করছি। এবার ভালোবাসা দিবস ও ঈদ একই সময় হবে, তাই ডুয়েট গান দুটি তখন মুক্তি দেব।’
ইমরান আরও বলেন, ইতোমধ্যে সব গানের রেকর্ডিং শেষ হয়েছে। কেবল একটি গানের নারীকণ্ঠ বাকি আছে। মিউজিক ভিডিও শুটিংয়ের আগে সেই কাজ করতে চান তিনি।
বড়দিনের উৎসবের আমেজে ওপার বাংলার দর্শকদের জন্য হাজির হলো এক বিশাল চমক। জল্পনা ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নির্মাতা চন্দ্রশীষ রায় প্রকাশ করলেন ‘কাকাবাবু’ ফ্র্যাঞ্চাইজির চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘বিজয়নগরের হীরে’র প্রথম ঝলক। আবারও ক্রাচ হাতে রহস্যের সন্ধানে অদম্য রাজা রায়চৌধুরী ওরফে কাকাবাবুর ভূমিকায় পর্দায় ফিরছেন টলিউড মহাতারকা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বড়দিনে প্রকাশিত এই টিজারটি কাকাবাবু ভক্তদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কালজয়ী কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে কাকাবাবুকে এবার দেখা যাবে বিজয়নগরের হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন হীরার রহস্য উন্মোচন করতে। চলচ্চিত্রের প্রথম ঝলকে দেখা গেছে, ঐতিহাসিক হাম্পির পটভূমিতে নিজের তীক্ষ্ণ মগজাস্ত্র আর অসীম সাহস নিয়ে অভিযানে নেমেছেন কাকাবাবু। তাঁর ছায়াসঙ্গী সন্তুর চরিত্রে বরাবরের মতোই আরিয়ান ভৌমিককে দেখা গেছে, যিনি এবারও কাকাবাবুর প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থাকবেন। টিজারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সেই চিরচেনা দৃঢ়তা ও মগজাস্ত্রের ব্যবহার দর্শকদের প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই রোমাঞ্চকর অভিযানে প্রসেনজিৎ ও আরিয়ান ভৌমিকের পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সত্যম ভট্টাচার্য ও শ্রেয়া ভট্টাচার্যসহ একঝাঁক প্রতিভাবান শিল্পী। অ্যাডভেঞ্চার ও রহস্যে ঘেরা এই ছবিটি আগামী ২০২৬ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। বড়দিনের এই বিশেষ উপহারের মাধ্যমে নির্মাতা চন্দ্রশীষ রায় বুঝিয়ে দিলেন, কাকাবাবুর সাহসিকতার আগুন আবারও বড়পর্দায় জ্বলে উঠতে প্রস্তুত।
ভারতীয় সিনেমার দুই মেরুর দুই মহাতারকা শাহরুখ খান ও রজনীকান্তকে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গভাবে একই সিনেমায় দেখার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। এতকাল যা ছিল কেবল ভক্তদের জল্পনা আর গুঞ্জন, এবার যেন তা বাস্তবের রূপ নিতে যাচ্ছে। এই বিস্ফোরক তথ্যটি সম্প্রতি ফাঁস করেছেন ভারতীয় সিনেমার আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। এক সাক্ষাৎকারে নিজের আসন্ন ছবি ‘জেলার ২’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, এই মেগা প্রজেক্টে শাহরুখ খান ও রজনীকান্ত প্রথমবারের মতো পর্দা ভাগ করবেন।
মিঠুন চক্রবর্তী জানান, নেলসন দিলীপ কুমার পরিচালিত ‘জেলার ২’ ছবিটি হতে চলেছে এক বিশাল তারকাসমেত মহাযজ্ঞ। এই ছবিতে রজনীকান্ত ও শাহরুখ খানের পাশাপাশি আরও অভিনয় করছেন মালয়ালম সুপারস্টার মোহনলাল, কন্নড় তারকা শিবা রাজকুমার এবং গুণী অভিনেত্রী রম্যা কৃষ্ণাণ। ছবির রোমাঞ্চকর দিকটি হলো এর অভিনয় সমীকরণ। মিঠুন চক্রবর্তীর ভাষ্যমতে, তিনি নিজে এই ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করছেন এবং বাকি সব মহাতারকারা মিলে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। অর্থাৎ, পর্দা কাঁপাতে একাধিক সুপারস্টারের মুখোমুখি সংঘর্ষের এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখতে পাবেন দর্শকরা।
এর আগে ২০১১ সালে শাহরুখ খানের ‘রা ওয়ান’ ছবিতে রজনীকান্তের একটি বিশেষ উপস্থিতির খবর প্রচার হলেও অসুস্থতার কারণে তিনি সশরীরে শুটিংয়ে অংশ নিতে পারেননি। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমার একটি গানে রজনীকান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন শাহরুখ। তবে একই গল্পের ফ্রেমে দাঁড়িয়ে দুই কিংবদন্তিকে অভিনয় করতে দেখার সুযোগ এবারই প্রথম তৈরি হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং বড় কোনো পরিবর্তন না এলে, ২০২৬ সালের ১২ জুন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল এবং প্রতীক্ষিত এই সিনেমাটি।
বাংলা সংগীত ও সংস্কৃতির জগতে এক ব্যতিক্রমী ও কালজয়ী নাম সঞ্জীব চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ছিলো এই ক্ষণজন্মা শিল্পীর জন্মদিন। যিনি গানকে নিছক বিনোদনের গণ্ডি থেকে বের করে এনেছিলেন এবং তাকে রূপ দিয়েছিলেন প্রতিবাদ, প্রেম ও মানবিক বিবেকের এক শক্তিশালী ভাষায়। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি আজও তাঁর কথা, সুর এবং জীবনদর্শনের মধ্য দিয়ে কোটি শ্রোতার হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছেন।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাকালকান্দিতে জন্ম নেওয়া সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক, গায়ক, গীতিকার ও রাজনৈতিক কর্মী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল প্রখর। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়া এই শিল্পী তাঁর গানে সবসময়ই সাধারণ মানুষের কথা ও সমাজের অসংগতির চিত্র তুলে ধরেছেন। ঢাকার পথে পথে গিটার কাঁধে ঘুরে বেড়ানো এই মানুষটি কখনোই অর্থ-বিত্ত বা বাণিজ্যিক খ্যাতির মোহে পড়েননি; বরং তাঁর সুর ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
মাত্র ৪৩ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে সঞ্জীব চৌধুরী বাংলা সংগীতকে দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী সৃষ্টি। ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘কিংবদন্তি’, ‘বায়োস্কোপ’, ‘নৌকাভ্রমণ’, ‘কালা পাখি’ কিংবা ‘জোছনাবিহার’-এর মতো গানগুলো আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শ্রোতাদের আন্দোলিত করে। তাঁর গানে যেমন ফুটে উঠেছে গভীর প্রেম, তেমনি ‘ইয়াসমিন’ বা ‘চল বুবাইজান’-এর মতো গানে উঠে এসেছে তীব্র সামাজিক প্রতিবাদ।
একজন মানুষের গান যেখানে সময়ের সাথে ফিকে হয়ে যায়, সেখানে সঞ্জীব চৌধুরীর প্রতিটি সৃষ্টি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও শক্তিশালী। তিনি কেবল একজন শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি সময়ের সাক্ষী এবং একটি প্রজন্মের অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। তাঁর জন্মদিনে সংগীতানুরাগীরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে এই মহান শিল্পীকে স্মরণ করছেন, যিনি তাঁর গানের ভেতরেই অমর হয়ে আছেন।
মুক্তির তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ভারতীয় বক্স অফিসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে আদিত্য ধর পরিচালিত স্পাই-অ্যাকশন থ্রিলার ‘ধুরন্ধর’। রণবীর সিং অভিনীত এই ছবিটি ইতিমধ্যেই চলতি বছরের অন্যতম সফল সিনেমায় পরিণত হয়েছে। ভারতের বক্স অফিসে মাত্র ২১ দিনের মাথায় ছবিটির আয় ৬০০ কোটি রুপির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বড়দিনের ছুটির মৌসুমে ছবির ব্যবসায় নতুন করে জোয়ার আসায় ২১তম দিন শেষে এর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৬৩৩.৫ কোটি রুপি। বাণিজ্যে বিশ্লেষকদের মতে, চলতি সপ্তাহান্তেই এটি ৬৫০ কোটি রুপির গণ্ডি স্পর্শ করবে। আয়ের দৌড়ে ‘ধুরন্ধর’ ইতিমধ্যেই ‘স্ত্রী ২’ ও ‘ছাবা’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিগুলোকে পেছনে ফেলে দিয়েছে এবং বর্তমানে এটি কেবল শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’-এর রেকর্ডের পেছনে অবস্থান করছে। ছবিতে করাচিভিত্তিক অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার এক রোমাঞ্চকর মিশনে গোয়েন্দা চরিত্রে রণবীর সিংয়ের অভিনয় দর্শকদের দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবিতে রণবীর ছাড়াও অক্ষয় খান্না, সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল ও আর মাধবনের মতো তারকাদের উপস্থিতি ছবিটিকে বিশ্বব্যাপী ১০০০ কোটি রুপি আয়ের ক্লাবের দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন পপতারকা কেটি পেরির সাবেক স্বামী এবং বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ কৌতুকশিল্পী ও অভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ডের আইনি জটিলতা যেন কাটছেই না। তাঁর বিরুদ্ধে এবার নতুন করে আরও দুটি ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের মহানগর পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, আরও দুইজন নারী এই গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর ফলে এখন পর্যন্ত মোট ছয়জন নারীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে ৫০ বছর বয়সী এই তারকাকে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে চার নারীর করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল একটি ধর্ষণ, দুটি যৌন নিপীড়ন এবং একটি শালীনতাবিরোধী আচরণের মামলা। পুলিশ জানিয়েছে, এসব অভিযোগ ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। প্রাপ্ত নতুন তথ্য এবং প্রমাণাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করার পরই বর্তমান অতিরিক্ত অভিযোগগুলো যুক্ত করা হয়েছে, যা মামলার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করেছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আগামী ২০ জানুয়ারি রাসেল ব্র্যান্ডকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে।
তবে রাসেল ব্র্যান্ড শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। গত মে মাসে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন যে, অতীতে তাঁর সকল শারীরিক সম্পর্কই ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। এদিকে, ইতিপূর্বে দায়ের হওয়া পাঁচটি অভিযোগের বিচারিক কার্যক্রম আগামী বছরের ১৬ জুন সাউথওয়ার্ক ক্রাউন আদালতে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিনোদন জগতের প্রভাবশালী এই ব্যক্তিত্বের ক্যারিয়ার এবং ভাবমূর্তি বর্তমানে এই ধারাবাহিক গুরুতর অভিযোগের মুখে বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর এই বিচার প্রক্রিয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বলিউডের বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী ও প্রথম সারির অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন আজ সাফল্যের শিখরে থাকলেও ক্যারিয়ারের শুরুর পথটা তাঁর জন্য মোটেও সহজ ছিল না। সাধারণ অভিনেত্রীরা যেখানে নিজেদের আরও সুন্দর করে উপস্থাপনের নিরন্তর চেষ্টা করেন, সেখানে কৃতিকে একসময় অদ্ভুত এক কারণে কাজ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অপরাধ ছিল তিনি ‘অতিরিক্ত সুন্দর’! স্ট্রাগল পিরিয়ডের সেই দিনগুলোতে অনেক নির্মাতা তাঁকে মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন যে, পর্দায় কোনো চরিত্রকে বাস্তবসম্মত দেখাতে হলে চেহারায় কিছুটা অসম্পূর্ণতা থাকা প্রয়োজন, যা কৃতির মাঝে নেই। এমন নেতিবাচক মন্তব্য শুনে অনেক সময় হতাশায় ভুগেছেন এবং চোখের জল ফেলেছেন এই অভিনেত্রী। তবে সেই কঠিন সময়েও কিছু মানুষ তাঁর ওপর ভরসা রেখেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
দিল্লিতে জন্ম নেওয়া কৃতি আদতে ছিলেন প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী। কিন্তু মনের গহীনে বড় পর্দায় নিজেকে দেখার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণে তিনি ছিলেন অটল। অবশেষে ২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমার মাধ্যমে টাইগার শ্রফের বিপরীতে বলিউডে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ছবিতেই আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি আর সাবলীল অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ‘বেরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’ এবং ‘হাউসফুল ৪’-এর মতো বৈচিত্র্যময় সব সিনেমায় অভিনয় করে কৃতি প্রমাণ করেছেন যে তিনি কেবল গ্ল্যামারাস বাণিজ্যিক নায়িকা নন, বরং যেকোনো চরিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।
কৃতির ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় মাইলফলক হিসেবে ধরা হয় ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিমি’ সিনেমাটিকে। এতে একজন সারোগেট মায়ের চরিত্রে তাঁর সংবেদনশীল ও শক্তিশালী অভিনয় দর্শক এবং সমালোচক উভয়েরই হৃদয় জয় করে নেয়। এই অসামান্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারতের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, যা তাঁকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের কাতারে নিয়ে যায়। এর আগে ২০১৫ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে অভিনয় করেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। বর্তমানে প্রায় ৮২ কোটি রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক এই অভিনেত্রী, যাঁর আয়ের একটি বড় অংশ আসে নামী সব ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনী চুক্তি থেকে।
সাফল্যের এই ধারাবাহিকতায় কৃতি বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন দক্ষিণী সুপারস্টার ধানুশের বিপরীতে ‘তেরে ইশ্ক মে’ সিনেমার কাজ নিয়ে। একসময় যাকে ‘বেশি সুন্দর’ তকমা দিয়ে বাতিলের খাতায় ফেলা হয়েছিল, সেই কৃতি শ্যানন আজ নিজের মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর ধৈর্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে সৌন্দর্য নয়, বরং একজন শিল্পীর আসল শক্তি হলো তাঁর অভিনয় প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাস। বলিউডের অন্যতম বহুমুখী অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর এই রূপান্তরের গল্প নতুন প্রজন্মের হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বলিউডের অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘দৃশ্যম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি নিয়ে যখন দর্শকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই এক হতাশাজনক খবর এলো বি-টাউনের অন্দরমহল থেকে। ছবিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী চরিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন শক্তিমান অভিনেতা অক্ষয় খান্না। ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর ছবিটির মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর যখন সবকিছু ঠিকঠাক এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই এই প্রজেক্ট থেকে তাঁর প্রস্থান ভক্তদের মাঝে বিষাদের ছায়া ফেলেছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ধুরন্ধর’ সিনেমার বিশাল সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই অক্ষয়ের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে চলচ্চিত্র পাড়ায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই বড় প্রজেক্ট থেকে সরে আসার পেছনে পারিশ্রমিক কোনো কারণ ছিল না, বরং চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে তাঁর সৃজনশীল মতপার্থক্যই মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্ষয় খান্না তাঁর অনস্ক্রিন উপস্থিতি এবং চরিত্রের গভীরতা বাড়ানোর জন্য নির্মাতাদের কাছে কিছু বিশেষ পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিচালক ও প্রযোজক সেই পরিবর্তনের সঙ্গে একমত হতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তিনি এই সিনেমাটি না করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অক্ষয় খান্না বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কাকতালীয়ভাবে, এর ঠিক কিছুদিন আগেই রণবীর সিং ‘ডন ৩’ সিনেমা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার খবরটি প্রকাশ্যে এসেছিল। মজার বিষয় হলো, রণবীর সিং এবং অক্ষয় খান্না দুজনেই সম্প্রতি আদিত্য ধর পরিচালিত ‘ধুরন্ধর’ সিনেমায় একসঙ্গে পর্দা শেয়ার করেছেন। ওই ছবিতে তাঁদের সাথে আরও অভিনয় করেছিলেন আর মাধবন এবং সঞ্জয় দত্তের মতো তারকারা। একের পর এক বড় প্রজেক্ট থেকে শীর্ষ তারকাদের সরে যাওয়ার এই ঘটনা বলিউডে এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। ‘দৃশ্যম ৩’-এর মতো বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমায় অক্ষয় খান্নার অনুপস্থিতি গল্পের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কেয়া পায়েল তাঁর নিপুণ অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। বর্তমানে একটি নাটকে ‘মেহরিন’ চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে ভক্তরা আপাতত কেয়া পায়েলকে অন্য কোনো রূপে কল্পনা করতেও নারাজ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই অভূতপূর্ব সাফল্যের অনুভূতি ও পর্দার পেছনের নানা গল্প ভাগ করে নিয়েছেন এই তারকা।
কেয়া পায়েল জানান, নাটকটির পরিচালক তাঁকে বিশেষ এক বার্তার মাধ্যমে দর্শকদের এই প্রবল আগ্রহের কথা অবহিত করেছেন। পরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, দর্শক মেহরিন হিসেবে কেয়া পায়েলকে এত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে যে তাঁরা এই মুহূর্তে অন্য কোনো চরিত্রে তাঁকে দেখতেই চাচ্ছেন না। একজন শিল্পীর জন্য এর চেয়ে বড় সার্থকতা আর কিছু হতে পারে না বলে মনে করেন অভিনেত্রী। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে অনেক সফল কাজ উপহার দিলেও কেয়া পায়েলের মতে, এই নাটকটি তাঁর আগের অনেক সাফল্যকেই ছাড়িয়ে গেছে।
এই বিশেষ জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে তিনি নাটকটির শক্তিশালী পারিবারিক আবহকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। পায়েলের মতে, ড্রয়িংরুমে বসে পুরো পরিবারের সাথে দেখার মতো গল্পের চাহিদা সবসময়ই থাকে এবং এই নাটকটি ঠিক সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে পেরেছে। এ ছাড়াও অভিনেতা মুকিত জাকারিয়া এই নাটকের টিমে নতুন করে যুক্ত হওয়ায় কাজের মান আরও বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পর্দার ‘মেহরিন’ চরিত্রটির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন যে, মেহরিন নামটি তাঁর নিজেরও অত্যন্ত প্রিয় এবং কেউ এই নামে ডাকলে তিনি বেশ আনন্দিত হন। তবে চরিত্রটি জনপ্রিয় হলেও নিজের আসল সত্তাকে সবসময় গুরুত্ব দেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য হলো, দিনশেষে তিনি পর্দার মেহরিন হলেও বাস্তবে তিনি শুধুই কেয়া পায়েল এবং এই পরিচয়টিই তাঁর কাছে সবচেয়ে আপন। সৌন্দর্যের সংজ্ঞায়ও তিনি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন। তাঁর মতে, বাহ্যিক রূপ দেখে কাউকে বিচার করার চেয়ে তাঁর ব্যবহার ও আচরণ দেখা বেশি জরুরি, কারণ মানুষের আসল পরিচয় ফুটে ওঠে তাঁর ব্যবহারের মাধ্যমেই। সঠিক আচরণের মাধ্যমেই একজন মানুষ প্রকৃত সুন্দর হয়ে উঠতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন এই প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী।
জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’-এর পর্দা নামার পর থেকেই ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন টমি শেলবিকে আবারও বড় পর্দায় দেখার জন্য। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বড়দিনের আগের রাতে মুক্তি পেয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স: দ্য ইমর্টাল ম্যান’-এর প্রথম রোমাঞ্চকর ট্রেলার। ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই রহস্যে ঘেরা ট্রেলারটি প্রকাশের পরপরই বিশ্বজুড়ে ঝড় তুলেছে, যেখানে অস্কারজয়ী অভিনেতা কিলিয়ান মারফিকে আবারও তাঁর সেই কালজয়ী ‘টমি শেলবি’ চরিত্রে বিধ্বংসী রূপে দেখা গেছে। ট্রেলারের প্রতিটি দৃশ্যেই টানটান উত্তেজনা আর অ্যাকশনের আভাস পাওয়া গেছে, যা দর্শকদের মনে করিয়ে দিচ্ছে বার্মিংহামের সেই নির্মম অথচ প্রভাবশালী গ্যাং লিডারের দাপট।
ট্রেলারে টমি শেলবিকে বনভূমি, কবরস্থান এবং নিজের বাড়িতে রহস্যময় ভঙ্গিতে একা হাঁটতে দেখা যায়, যেখানে নেপথ্য থেকে একটি গম্ভীর কণ্ঠস্বর প্রশ্ন তোলে—‘টমি শেলবির আসলে কী হয়েছিল?’ এক পর্যায়ে শেলবিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আর সেই আগের মানুষটি নেই,’ যার বিপরীতে উত্তর আসে—‘তোমাকে ফিরতেই হবে।’ ১৯৪০ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল সময়ের বার্মিংহামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই সিনেমার মূল কাহিনী। সিরিজের ষষ্ঠ মৌসুমের শেষে টমি যে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়েছিলেন, এবার তাকে সেখান থেকে নিজের পরিবার আর দেশের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ফিরে আসতে হচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই আর উত্তরাধিকার রক্ষার এই দ্বন্দ্বে টমি শেলবি কতটা সফল হন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
চরিত্রটিতে ফেরা প্রসঙ্গে কিলিয়ান মারফি আবেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, টমি শেলবি চরিত্রটি যেন তাঁকে এখনো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে এবং এই সিনেমাটি তিনি মূলত ভক্তদের জন্যই নির্মাণ করেছেন। পরিচালক টম হার্পারের এই ছবিতে কিলিয়ান মারফির পাশাপাশি দেখা যাবে ব্যারি কিওঘান, রেবেকা ফার্গুসন, টিম রথ এবং সোফি রান্ডেলের মতো শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীদের। নেটফ্লিক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স: দ্য ইমর্টাল ম্যান’ প্রথমে আগামী ২০২৬ সালের ৬ মার্চ দুই সপ্তাহের জন্য সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। এরপর ২০ মার্চ থেকে দর্শকরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিশ্বজুড়ে সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবেন। সব মিলিয়ে টমি শেলবির এই শেষ যুদ্ধ বড় পর্দায় এক নতুন ইতিহাস গড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৫ সাল শেষ হতে চলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রে এখন চলছে বছরজুড়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ। চলতি বছর ঢালিউডে প্রায় ৪৫টির মতো চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও দর্শকপ্রিয়তা ও আলোচনার তুঙ্গে ছিল মাত্র কয়েকটি সিনেমা। বিশেষ করে দুই ঈদ মিলিয়ে মুক্তি পাওয়া এক ডজন সিনেমার মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বছর শেষে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শাকিব খান, সিয়াম আহমেদ এবং একঝাঁক তারকা অভিনীত চারটি সিনেমা দর্শক হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এবং বক্স অফিসেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।
বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমাগুলোর মধ্যে প্রথমেই নাম আসে মেগাস্টার শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’-এর। মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত এই সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার ইধিকা পাল এবং খল চরিত্রে ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। সিনেমার গান ও সংলাপ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে এটি বছরের অন্যতম সফল বাণিজ্যিক সিনেমায় পরিণত হয়। অন্যদিকে, ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটিও ব্যাপক সাড়া ফেলে। শাকিব খানের সঙ্গে রাফীর দ্বিতীয় এই প্রোজেক্টে জয়া আহসান, আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদের মতো তারকাদের উপস্থিতি সিনেমাটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং এটি দ্রুততম সময়ে ৬ কোটির ক্লাবে প্রবেশ করে।
তালিকায় থাকা অন্যতম দর্শকপ্রিয় সিনেমা হলো এম রহিম পরিচালিত ‘জংলি’। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি সব বয়সী দর্শকদের টানতে সক্ষম হয়। সিয়াম আহমেদ, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি ও শবনম বুবলী অভিনীত এই চলচ্চিত্রে সামাজিক অবক্ষয় ও শিশুদের সুরক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো অত্যন্ত সাবলীলভাবে উঠে আসায় এটি চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। পারিবারিক গল্পের আবহে নির্মিত তানিম নূরের ‘উৎসব’ সিনেমাটিও ছিল বছরের অন্যতম চমক। একঝাঁক শক্তিমান অভিনয়শিল্পী যেমন—আফসানা মিমি, জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী এবং অপি করিমের রসায়ন দর্শকদের হলে ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করে।
সামগ্রিকভাবে ২০২৫ সাল ছিল ঢালিউডের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। বড় বাজেটের নির্মাণ, ওপার বাংলার শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বয় এবং সামাজিক বার্তা নির্ভর গল্পের আধিক্য দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী করেছে। যদিও বছরজুড়ে কয়েক ডজন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, তবে ‘বরবাদ’, ‘তাণ্ডব’, ‘জংলি’ এবং ‘উৎসব’ সিনেমাগুলোই মূলত ঢাকাই সিনেমার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের পথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। নতুন বছরেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এমন উন্নত মানের কাজের ধারা বজায় রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্বসংগীতের জনপ্রিয় তারকা টেইলর সুইফট আবারও তাঁর উদারতার পরিচয় দিয়ে মানবিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকটে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই গায়িকা এবার ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘ফিডিং আমেরিকা’-কে ১০ লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত বড়দিন ও ছুটির মৌসুমকে সামনে রেখে অভাবী পরিবারগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতেই তাঁর এই মহতী উদ্যোগ।
এই বড় অঙ্কের অনুদান পাওয়ায় সুইফটের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ফিডিং আমেরিকা কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্লেয়ার বাবিনো ফন্তেনো এক বিবৃতিতে জানান যে, টেইলর সুইফটের এই নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন ক্ষুধা নির্মূলের সংগ্রামে তাঁদের বড় সাহস যোগাবে। তিনি মনে করেন, এই ছুটির সময়ে এবং বছরের বাকি দিনগুলোতে যেন কোনো পরিবার অভুক্ত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে এই অর্থ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
দাতব্য কাজে টেইলর সুইফটের এমন বিশাল অবদান এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে হারিকেন হেলেন ও মিল্টনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় তিনি ৫০ লাখ ডলার দান করেছিলেন। এ ছাড়াও ২০২৩ সালে টেনেসিতে শক্তিশালী ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ লাখ ডলার এবং গত বছর কানসাস সিটির সুপার বোল প্যারেডে গুলিতে নিহত এক নারীর পরিবারের সহায়তায় ১ লাখ ডলার প্রদান করেছিলেন।
কেবল সুইফট নিজেই নন, তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তকুল বা ‘সুইফটিজ’রাও নিয়মিত মানবিক তহবিলে অর্থ সংগ্রহ করে অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমে যাওয়ার আশঙ্কার মুখে ‘সুইফটিজ ফর হোপ’ নামক প্রচারণার মাধ্যমে ভক্তরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। মানবিক এই আলোচনার মাঝেই ভক্তদের জন্য আরেকটি সুখবর নিয়ে এসেছেন এই গায়িকা। গতকাল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাসে মুক্তি পেয়েছে তাঁর বহুল আলোচিত ‘দ্য ইরাস ট্যুর’ নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্য এন্ড অব অ্যান এরা’-র শেষ দুটি পর্ব। সংগীতের মঞ্চ মাতানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ঢাল হয়ে দাঁড়ানো টেইলর সুইফট আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
‘ওপেনহাইমার’-এর আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান এবার হাত দিয়েছেন হোমারের অমর সৃষ্টি গ্রিক মহাকাব্য ‘দ্য ওডিসি’র ওপর। সম্প্রতি ছবিটির প্রথম ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে এক অভাবনীয় সাড়া পড়ে গেছে। প্রায় দুই মিনিটের এই রোমহর্ষক ট্রেলারে নোলান দর্শকদের এক মহাকাব্যিক অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে বিস্ময় আর রহস্যের মিশেলে ফুটে উঠেছে প্রাচীন ইতিহাসের এক দুর্ধর্ষ আখ্যান।
ছবির মূল প্রেক্ষাপট আবর্তিত হয়েছে গ্রিক বীর ওডিসিয়াসের এক দীর্ঘ ও বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রাকে ঘিরে। ট্রোজান যুদ্ধে এক দশক কাটানোর পর যখন ওডিসিয়াস নিজ রাজ্য ইথাকায় ফেরার প্রস্তুতি নেন, তখন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি তাঁর সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ভয়াল সমুদ্রের ঢেউ, রহস্যময় দ্বীপপুঞ্জ, অচেনা সব দানবীয় প্রাণী এবং অলৌকিক দেব-দেবীর রোষ সামলে দীর্ঘ ২০ বছর পর ঘরে ফেরার সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামই এই সিনেমার প্রাণ। ট্রেলারের শুরুতেই ট্রয় যুদ্ধের পরবর্তী জনশূন্য প্রান্তর আর সারি সারি সমাধির দৃশ্য দর্শকদের মনে এক বিষণ্ণ অথচ রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। প্রতিটি ফ্রেমেই নোলানের চিরাচরিত নিখুঁত নির্মাণশৈলী আর দৃশ্যায়নের মুন্সিয়ানা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সিনেমাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এর তারকাবহুল কাস্টিং। ওডিসিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউড সুপারস্টার ম্যাট ডেমন, যাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি ট্রেলার জুড়েই লক্ষ্য করা গেছে। ওডিসিয়াসের পুত্র টেলিমাকাসের ভূমিকায় দেখা যাবে ‘স্পাইডারম্যান’ খ্যাত টম হল্যান্ডকে এবং স্ত্রী পেনেলোপের চরিত্রে হাজির হবেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথাওয়ে। এছাড়া রবার্ট প্যাটিনসন, জেন্ডায়া, শার্লিজ থেরন এবং জন বার্নথালের মতো নামী শিল্পীদের এই বড় প্রজেক্টে এক সুতোয় বেঁধেছেন নোলান।
কারিগরি দিক থেকেও সিনেমাটি এক বিস্ময়। নোলান এই মহাকাব্যিক গল্পকে বড় পর্দায় জীবন্ত করে তুলতে অত্যাধুনিক আইম্যাক্স ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন। জানা গেছে, পুরো সিনেমাটি ধারণ করতে প্রায় ২০ লাখ ফুট ফিল্ম ব্যবহার করা হয়েছে, যা বর্তমান ডিজিটাল যুগে এক বিরল দৃষ্টান্ত। চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, নোলানের জাদুকরী স্পর্শে ‘দ্য ওডিসি’ কেবল একটি সিনেমাই নয়, বরং এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতায় পরিণত হতে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের ১৭ জুলাই বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেতে চলা এই সিনেমাটি নিয়ে সিনেমাপ্রেমীদের প্রতীক্ষার পারদ এখন তুঙ্গে। ট্রেলার দেখে দর্শকদের ধারণা, নোলান আবারও বড় পর্দায় এমন এক জগত সৃষ্টি করতে চলেছেন যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী পর্দায় সাধারণত শান্ত ও লাবণ্যময়ী চরিত্রে অভিনয় করলেও তাঁর স্কুল জীবনের এক লড়াকু ও চমকপ্রদ স্মৃতি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছেন। দেশ টিভির একটি টক-শোতে অংশ নিয়ে তিনি জানান, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় এক তরুণকে তিনি ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছিলেন। ঐশীর এই অভাবনীয় অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও দর্শকরা বেশ অবাক হয়েছেন।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঐশী জানান, সেই সময়ে বিষয়টি বোঝার মতো পর্যাপ্ত পরিপক্কতা তাঁর ছিল না। পরিস্থিতির চাপে এবং বয়সের অপরিপক্কতার কারণে তিনি এমন মারমুখী আচরণ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তবে এখন সেই ঘটনার কথা মনে করে তিনি বেশ লজ্জিত। অনুষ্ঠানের ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে তিনি সেই তরুণের উদ্দেশ্যে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, "সরি, আমি তখন অনেক ইমম্যাচিউর ছিলাম। আমি এখন তাকে উদ্দেশ্য করেই দুঃখ প্রকাশ করছি।"
বর্তমানে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম ব্যস্ত এই অভিনেত্রী নিজের কাজ নিয়ে নিয়মিত ছোট ও বড় পর্দায় সরব রয়েছেন। স্কুল জীবনের এই মজার এবং কিছুটা তেতো অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সময় ঐশীকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। তাঁর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি ভক্তদের মাঝে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মূলত নিজের অতীতের ভুল অকপটে স্বীকার করে ঐশী আবারও তাঁর সহজ-সরল ও স্পষ্টভাষী ব্যক্তিত্বের প্রমাণ দিলেন।