বিদায়ের লগ্নে দাঁড়িয়ে ২০২৫ সালকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এ বছর বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। চলচ্চিত্র, নাটক, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং কোক স্টুডিও বাংলার মতো বড় আয়োজনগুলো শ্রোতাদের উপহার দিয়েছে অসংখ্য মন মাতানো গান। বছরজুড়ে নতুন গানের ব্যাপক জয়জয়কার থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব এবং বিভিন্ন মিউজিক অ্যাপের পরিসংখ্যানে দশটি গান বিশেষত শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেড়ে নিয়েছে।
এ বছরের অন্যতম বড় চমক ছিল ‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’। প্রীতম হাসানের অনবদ্য সুর ও সংগীতায়োজনে গানটিতে তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন জেফার রহমান, মঙ্গল মিয়া ও আলেয়া বেগম। ভিন্নধর্মী গায়কী ও রিদমের কারণে গানটি মুক্তির পরপরই আলোচনার তুঙ্গে চলে আসে। একইভাবে ‘বরবাদ’ সিনেমার ‘চাঁদ মামা’ গানটিও প্রীতম হাসানের জাদুকরী স্পর্শে তরুণ প্রজন্মের প্লে-লিস্টে শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়, যেখানে তাঁর সাথে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন অদিতি রহমান দোলা। চলচ্চিত্রের বাইরে সংগীতশিল্পী ঈশান মজুমদারের নিজস্ব সৃজনে তৈরি ‘গুলবাহার’ গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ঈশান ও শুভেন্দু দাস শুভর কণ্ঠে গাওয়া এই গানটির ভিউ ইতোমধ্যে ৩ কোটির মাইলফলক ছাড়িয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
রোমান্টিক ঘরানার গানে বরাবরের মতো ইমরান ও কনা জুটি তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। রবিউল ইসলাম জীবনের কথায় ও ইমরানের সংগীতায়োজনে ‘জ্বীন-৩’ সিনেমার ‘কন্যা’ গানটি সিনেমা মুক্তির আগেই দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অন্যদিকে, চলচ্চিত্র ‘দাগি’-র শিরোনাম সংগীত ‘একটুখানি মন’ গানটি জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান ও মাশা ইসলামের কণ্ঠে এক ভিন্ন মাত্রা পায়। কবি সাদাত হোসাইনের কথা ও সাজিদ সরকারের মেলোডিয়াস সুর গানটিকে বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক সংগীতে পরিণত করেছে।
কোক স্টুডিও বাংলার এবারের আসরও ছিল শ্রোতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হাবিব ওয়াহিদ ও মেহেরনিগরি রুস্তমের কণ্ঠে আধুনিক ও ক্লাসিক্যাল সুরের মিশেলে তৈরি ‘মহাজাদু’ গানটি সব শ্রেণির শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। একই আয়োজনের ‘বাজি’ গানটি ইমন চৌধুরী ও লোকজ সুরের জাদুকর হাশিম মাহমুদের কণ্ঠে এক অপূর্ব লোকসংগীতের আধুনিক রূপ হিসেবে ধরা দিয়েছে। এ ছাড়াও কোক স্টুডিওর ‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’ গানটি এর গভীর কথামালার জন্য জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল, যেখানে শুভেন্দু দাসের গিটার ও সায়ান চৌধুরী অর্ণবের পিয়ানোর কাজ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ব্যতিক্রমী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তসনিয়া ফারিণও। তাঁর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি পাওয়া ‘মন গলবে না’ গানটি এ বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়, যেখানে তাঁর সাথে দ্বৈত কণ্ঠে ছিলেন ইমরান। ব্যান্ড সংগীতের ভক্তদের জন্য এ বছরের বড় প্রাপ্তি ছিল দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীনের কালজয়ী গান ‘এই অবেলায়’-এর দ্বিতীয় কিস্তি বা ‘এই অবেলায়-২’। প্রায় ১০ মিনিটের দীর্ঘ এই গানটি ব্যান্ডের বর্তমান ভোকাল শেখ ইশতিয়াকের কণ্ঠে পুরনো আবেগ ও নতুনত্বের এক অসাধারণ সমন্বয় হিসেবে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। সব মিলিয়ে মেলোডি, ফোক, রক এবং পপ—সব ঘরানার গানের এই মেলবন্ধন ২০২৫ সালকে বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসের এক স্মরণীয় বছর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন দেখার বিষয়, আগামী বছর দেশের গানের জগত শ্রোতাদের জন্য আর কী নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়।