ক্যাম্প- শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় আসে সৈন্য , সামন্ত, যুদ্ধের কথা ! কিন্তু আজকে এমন এক ব্যতিক্রমী ক্যাম্পের গল্প বলবো যেখানে নেই হাতি , ঘোড়া , তরোয়াল কিন্তু তাদের আছে অফুরন্ত সাহস , মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং পরিবেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ।
পরিবেশ নিয়ে নিজের ভাবনা ও প্রকৃত উপলব্ধি নিয়ে আর্থক্যাম্প নামক এ গল্পের শুরু গত ৬ জানুয়ারি এক শুক্রবার ভোরে- সিলেট শুকতারা ন্যাচার রিট্রিটে পাহাড়ের কোলের অনন্য স্থাপনাটিই যেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে যে কাউকে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ এর উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ মার্কিন ও ফ্রান্স দূতাবাস এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে এমনি এক ব্যতিক্রমি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় । এতে অংশ নেয় দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ জন খুদে পরিবেশবিদ । গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ ক্যাম্প চলে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
৬ জানুয়ারি - সন্ধ্যায় সুর্য প্রায় গোধুলীলগ্ন , দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির ছাপ কারো চোখে মুখে - একঝাক অচেনা মানুষদের সাথে পরিচিত হবো কীভাবে সে ভাবনা মাথায় চলার সময়ই ইসিপি হাজির হয় নিজের প্রথম মুগ্ধতা নিয়ে। ২৪টা প্রশ্নের সেট ধরিয়ে দেয় হাতে, ২৪ জনের থেকে না কি উত্তর নিতে হবে! খেলার ছলেই যেন কয়েকজনের সাথে কথা হয়ে গেল! রাতের খাবারের সময় পরিচিত হলাম মেন্টর এবং বাকি টিমমেটদের সাথে। কেমন যেন একটা অচেনা মায়ার জাল বিস্তৃত হতে লাগলো। যে আমি কারোর সাথে রুম ভাগাভাগি করতে পারি না, আজ একদমই অচেনা কয়েকজনের সাথে রুম ভাগাভাগি যেন কোনো বিষয়ই ছিল না! কত আপন, কত পরিচিত যেন সবাই আমার! এভাবেই কেটে গেল প্রথম রাত।
পরদিন ভোরবেলায় সবার ঘুম ভাঙল অদ্ভুত ও বিচিত্র কিছু পাখির ডাক শুনে । শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সবার চোখ যখন ঢুলুঢুলু – ঠিক তখনি সবাই মেতে উঠে নতুন এক খেলায় –প্রকৃতিতে থাকা উপাদানগুলো দিয়েই দলগতভাবে করতে হলো ল্যান্ড আর্ট। আবারও একদল অচেনা মানুষের সাথে কাজ হলো। তারপর সকালের নাস্তা শেষে যখন আরেক সেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই – তখন মাথায় আসছিলো সেশন না আবার কি বিরক্তিকর একটা জিনিষ- কিন্তু শিহাব স্যার যখন যখন প্লানেটারি বাউন্ডারি বোঝাচ্ছিলেন – হল্রুমে তখন পিনপতন নিরবতা – সবাই হা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে – পরিবেশ মানেই যে শুধু প্লাস্টিক আর ডাস্টবিন না -আরো কত কত কিছু জড়িয়ে ।
মধ্যাহ্নভোজের পরের সেশন যেন সবার জন্য ছিলো অন্যরকম। যেখানে আমরা সবাই বিছানায় গা এলানোর চেষ্টা করতাম সেই আমরাই বিস্ফোরক চোখে শুনলাম পলিটিক্যাল ইকোলজি। সবার মাথা যেন ঘুরে গিয়েছিল ঐ এক সেশনেই! সন্ধ্যার পর নদী ও পরিবেশ নিয়ে আয়োজিত সেশনে খালিকুজ্জামান স্যারের (সাথে সরাসরি আলোচনায় মেতেছিলাম আমরা সবাই। এতটা খোলামেলা কথাবার্তা বলাটাও যেন অকল্পনীয় ছিল। শুধু অতিথিরাই নন, আমাদের ফেলোদের অনেকেও এত সুন্দর করে নিজেদের ভাবনা দেখিয়েছেন, একে অপরের কথা যেন মুগ্ধ হয়ে শুনেই যাচ্ছিলাম আমরা।
দ্বিতীয় দিন আর তৃতীয় দিন কেটে গেল নানাধরনের সেশন আর প্রেজেন্টেশনে। এরপর প্রতিদিনই বিভিন্ন সেশনে পালাক্রমে চলতে থাকে – নদী , কৃষি , নগরায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পরিবেশের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা , তর্ক , বিতর্ক , ৪১ জন ফেলো বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তাদের মতামত প্রদর্শন করে এবং এতো জটিল এবং কঠিন বিষয়গুলোর সমাধানও প্রস্তুত করে তারা ।এর মাধ্যমে সবাই সবাইকে জানতে পারছিলাম আমরা। প্রত্যেকটা ফেলোর সাথেই অন্যরকম সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছিলাম। আর সেই সাথে মেন্টরদের স্নেহমাখা শাসনেও যেন পরিবারকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। চতুর্থ দিন আমরা গেলাম ফিল্ড ট্রিপে, চা বাগানে । সত্যি বলতে যতটা আনন্দ নিয়ে আমরা চা বাগানে গিয়েছিলাম – চা শ্রমিকদের দুঃখ , দুর্দশা –আমাদের ঠিক ততটাই কষ্ট দিচ্ছিলো ।
তাদের জীবন ও সেখানকার জীববৈচিত্র্য নিয়ে নিজেদের উপলব্ধি দিয়ে প্রেজেন্টেশন সাজিয়ে অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করে ফেলোরা । এরপরই হয় সমাপনী অনুষ্ঠান – সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পরিবেশ, বিজ্ঞান, এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা সিভানি রসনায়কাম, বিওয়াই ই আই এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ব্যারিষ্টার নাসের আলম, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল, হেড অফ প্রোগ্রাম – মাসুদ আলম খান । তারপরই দেশীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ফেলো এবং মেন্টররা মেতে উঠেন এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ৷ আর সেই সাথে সাথে কোথাও গিয়ে যেন সিক্ত হতে থেকে অনেকের চোখ। শেষ দিন সকালের সেশনে আর আড়ালে নয়, তীব্রভাবে প্রকাশিত হয় ফেলোদের আবেগ। মাত্র ৬ দিনের ভেতর যেন এক অন্যরকম হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল সবাই। চোখ বেয়ে নোনাজলের পরিধি যেন সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছিল। জাগতিক নিয়ম মেনে অবশেষে শেষ হয় ৬ দিনের এই আর্থক্যাম্প। ভেজা নয়নে বিদায়ী ফেলোদের মনে যেন একটানা বেজে চলছিল – বুকের গভীরে আছে প্রত্যয় , আমরা করবো জয় একদিন ।
আয়োজকরা পরিবেশ এবং প্রকৃতি রক্ষায় এমন ক্যাম্পিং নিয়মিত করার কথা জানিয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের যে কেউ এতে অংশ নিতে পারবে । বিস্তারিত জানতে চোখ রাখো - https://www.byei.org/
চলতি বছর এডিস মশার প্রভাবে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মারণঘাতী এই সংক্রামক ব্যাধি ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট এতটা কমতে শুরু করে যে রক্ত দিয়েও তাকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। শুধু রাজধানী শহর ঢাকা নয়, এখন সারা দেশে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমাদের সবার আগে প্রয়োজন সচেতন হওয়া। তাই ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন’- এই স্লোগানে নাটোর জেলায় জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।
বৃষ্টির পানি উপেক্ষা করে মাসব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নাটোরে মশা প্রতিরোধক স্প্রে ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কলেজ পড়ুয়া তরুণরা। স্প্রে মেশিনে পরিমাণমতো পানি ও কীটনাশক মিশিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে পানি জমে থাকা অপরিষ্কার স্থান গুলোতে স্প্রে করছে তারা। দোকানী ও পথচারীদের ডেঙ্গু বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতার বার্তা ও লিফলেট পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে তাদেরকে নিয়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন আশেপাশের সাধারণ মানুষদের ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিতে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেকেই এগিয়ে আসছেন এসব কাজে।
১৩আগস্ট নাটোর পৌর এলাকার ঝাউতলা বস্তিতে ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম চালায় তারা। এ সময় তারা জমে থাকা, আবদ্ধ পাত্রে থাকা (মশার প্রজনন হতে পারে) পানি পরিষ্কার কার্যক্রম ও মশা নিধন কীটনাশক স্প্রে করে। জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে
আবাসস্থলের আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে বস্তাবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের কার্যক্রমকে বস্তিবাসী সাধুবাদ জানান এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সহায়তা করেন।
উক্ত কর্মসূচির উদ্যোক্তা ও এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান শেখ রিফাদ মাহমুদ জানান, নাটোর জেলাজুড়ে প্রায় দশ হাজার মানুষকে ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে মাসব্যাপী কাজ করছেন তারা। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মাঝে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও এডিস মশার প্রজননস্থল নিধনে বাড়ি, বাড়ির আঙিনা এবং আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক বার্তা সাধারণ মানুষের মাঝে পোঁছে দিচ্ছেন।
বিশেষ করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল,আশ্রয়ন প্রকল্প, বস্তি এলাকার মানুষদের মাঝে ডেঙ্গু সচেতনতা তৈরি ও তাদের এই রোগের সংক্রমণ থেকে প্রতিকারের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
এসআরআই ফাউন্ডেশন সদস্য গোলাম রাব্বানী, আকাশ কাইফ, ফারহান রিহাম, নাহিদ আহমেদ সহ অন্যান্য সদস্যরা উক্ত কার্যক্রমসমূহ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর অপরাধ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্করা অদম্য আশা ও জীবন জগৎ সম্পর্কে কৌতুহলী থাকে। জীবন গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণের এই সময়ে কিশোররা কখনো আবেগের বশবর্তী হয়ে আবার কখনো নিজেকে জাহির করার জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ দ্বারা অতিসহজে প্রভাবিত হয়ে অসামাজিক ও নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজ করে ফেলে। এটি যেমন কিশোরদের নিজেদের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি তার পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা চক্রবর্তী।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম
প্রত্যুৎ দেবনাথ
শিক্ষার্থী, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কবিগুরু বলেছিলেন, ‘তেরো চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই।’ একথা প্রযোজ্য ৭ থেকে ১৬ বছরের কিশোরদের ক্ষেত্রে। এ বয়সের যে কেউ মাদকদ্রব্য সেবন ও পাচার, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ কিংবা যৌন নিপীড়নের মতো সমাজ কর্তৃক অস্বীকৃত কাজের যেকোনোটি করলেই সেটি কিশোর অপরাধ বলে গণ্য হয়। ইউনিসেফের তথ্যমতে, দেশে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশি। পিতৃমাতৃহীন কিংবা পরিবারের অবহেলার শিকার কিশোর-কিশোরীরা এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের প্রবক্তা সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতানুসারে, কিশোরদের মধ্যে এমন অপরাধ প্রবণতা বংশগত কারণেও পরিলক্ষিত হয়। ২০১৩ সালের শিশু অধিকার আইনানুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে। কাজেই, আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধের শাস্তি হিসেবে জেলহাজতের পরিবর্তে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র বা প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ জরুরি। কিশোর অপরাধের প্রতিরোধ দুরূহ, তাই প্রতিকার আবশ্যক। এজন্য পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে যেন সন্তান শুধু শিক্ষিত নয়, সদাচরণে দীক্ষিতও হয়।
পারিবারিক সুশিক্ষাই পারে কিশোরদের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল করতে
মোনেম শাহরিয়ার শাওন
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কিশোর অপরাধ বর্তমান সময়ের জন্য একটি মারাত্মক ভয়াবহতার আঙ্গিক। একটি রাষ্ট্রের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় কিশোরদের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যাবলীর ফলে। দিনের পর দিন এই ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। আদর্শ সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের আগামীর যথার্থ পরিবেশকে নষ্ট করছে এরূপ অবস্থা। সচেতনতার নামধারী খারাপ ব্যক্তিবর্গদের কারণে সমাজে এক বিশাল কিশোরশ্রেণি সঠিক পথের খোঁজ পাচ্ছে না। প্রযুক্তির অপব্যবহার ও মাদকদ্রবের ছড়াছড়ির ফলেও কিশোরদের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কিশোরদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অবাধে যুক্ত হওয়ার সুযোগসৃষ্টির পেছনে প্রধান নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে তার পরিবার। কেবলমাত্র পারিবারিক সুশিক্ষাই পারে কিশোরদের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল করতে। আমাদের দেশে গ্রাম ও শহরের অধিকাংশ বস্তির পরিবেশের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, যেখানে পর্যাপ্ত নৈতিক শিক্ষা না থাকার ফলে একটি পরিবারের একাধিক সদস্য কিশোর অপরাধ ও মাদকসেবনের সাথে যুক্ত।
কিশোর অপরাধ দমনে সকলে হোক সোচ্চার
আনোয়ার ইব্রাহিম
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণত, কিশোর বলতে বোঝানো হয়, ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের। কিশোর-কিশোরী কর্তৃক সংগঠিত অপরাধই হলো কিশোর অপরাধ। নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, আইন ও প্রথা বিবর্জিত কর্মকাণ্ডকে অপরাধ বলা হয়। দেশে, কিশোর অপরাধ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানের অভিভাবকদের অসচেতনতা, শিক্ষকমণ্ডলী কর্তৃক পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, সর্বোপরি সঙ্গী-সহপাঠী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাম্প্রতিককালে কিশোর অপরাধের আপডেট ভার্সন হিসেবে ‘কিশোর গ্যাং’-এর উপদ্রব বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। পান থেকে চুন খসার মতো ঠুনকো বিষয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে ঝগড়া-বিবাদে।
আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। শিশু-কিশোরদের ভবিষৎকে নির্বিঘ্ন করতে, এই সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিপথে পরিচালিত হওয়া কিশোরদের সুপথে নিয়ে আসবে।
নৈতিক শিক্ষার সংকট কিশোর অপরাধের অন্যতম কারণ
সোলায়মান সরকার
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান আধুনিকায়নের এই যুগে নীতি-নৈতিকতার বড়ই অভাব লক্ষ্য করা যায়। কিশোর অপরাধের কালচারটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর বখাটেরা আড্ডায় মেতে উঠছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের-অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাংস্টারের উপদ্রব উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কিশোর গ্যাংস্টাররা অপরাধ কর্মকান্ডে বেপরোয়া হয়ে ওঠায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করতে গিয়ে খুন-খারাবির মতো ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কিশোরদের গ্যাং কালচারের উৎপাত নিয়ে বেশ বিব্রত ও উদ্বিগ্ন। তাই আমাদের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সকলকেই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ধর্মীয় শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে এই সকল কিশোরদের ঝরে পড়া আমরা রোধ করতে পারব।
কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
সাজেদা আকতার
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বা এর কম বয়সী শিশু কিশোরের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকে জেলে নেওয়ার পরিবর্তে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠাতে হবে, যাতে তারা সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। প্রতিকারের এই ব্যবস্থাটা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনই অপরাধ করার পূর্বে শিশুর প্রতি পারিবারের বিশেষ যত্ন এবং সামাজিক সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। কেননা পারিবারিক অবহেলা, খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়া, নৈতিক শিক্ষার অপ্রতুলতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব ইত্যাদি কারণে শিশু কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিভাবকদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের এক সত্ত্বার অংশ। তার হাত ধরেই একাত্তরে এসেছিল স্বাধীনতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। অবিসংবাদিত এই নেতা, বাংলাদেশ গড়ার এই কারিগরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের চেতনায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।
আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু
আবু তালহা আকাশ
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
'বঙ্গবন্ধু' এটি শুধু একটি নাম নয়, এটি পুরো জাতির আবেগ ও ভালোবাসার নাম। বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুস্থ, চেতনা সমৃদ্ধ, কোনোরকম ভেদ বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষের উন্নত সমৃদ্ধ এক আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। বর্তমান বিশ্বের নানা সমস্যা, চড়াই-উৎরাইকে পেছনে ফেলে শোকের এই মাসে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে এই আমাদের প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু, এ যেন বাংলাদেশের-ই অপর নাম
শ্যামলী তানজিন অনু
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম ই না, এ যেন বাংলাদেশেরই আরেক নাম। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি এই স্বাধীন বাংলাদেশ। কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো বাঙালি জাতি আজও পরাধীনতার শিকল পায়ে পরে থাকতো। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও সে সময়ের তরুণদের চেষ্টার ফলে আজকের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি আমরা। এই স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। বর্তমান তরুণ সমাজকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে প্রতি পদক্ষেপ এগোতে হবে। মুখে বঙ্গবন্ধু কিন্তু ভেতরে বিপরীত চিন্তা ধারণ করলে আমরা আমাদের সোনার বাংলাদেশ বিনষ্ট হবে। যার দায় আমাদেরই।
তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস
মো: হাবিবুর রহমান
শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক সত্তার দুটি অংশ। পৃথিবীর ইতিহাসে মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য নিজ জাতিকে সামনে রেখে নেতৃত্ব দেওয়া যে কয়েকজন অগ্রপথিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়, বঙ্গবন্ধু তাদের অন্যতম। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর বুকে সদ্য জন্ম নেয়া ছোট্ট যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ও বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি আদায়ে আত্মনিয়োগ তরুণদের আরো উদ্যমী করে তুলবে। শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে তার যে ত্যাগ তিতিক্ষা তা এখনো তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার এক নাম। বর্তমান তরুণ সমাজ তার সাহসিকতা, দেশপ্রেম, পররাষ্ট্রনীতির দক্ষতাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু তরুণদের হৃদয়ে থেকে যাবেন আদর্শ হয়ে
রুখসানা খাতুন ইতি
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
১৫ আগস্ট! একটি ক্ষত। যা কখনো শুকাবার নয়। ক্যালেন্ডারের পাতায় এটি একটি সংখ্যা হলেও এটি বাংলাদেশের স্বপ্নকে হত্যা করার দিন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তখন স্বপ্ন দেখছিলো এগিয়া যাওয়ার আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই অবিসংবাদিত নেতার স্বপ্ন ছিলো বাঙালির স্বাধীনতা ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দূর্ভাগ্য! আজীবন স্বপ্নের সেই স্বাধীন বাংলাদেশের একদল ঘাতক তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন ছিলো বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন।
ঘাতকের বুলেট 'বঙ্গবন্ধু' নামের প্রদীপ নিভিয়ে দিলেও বাঙালির হৃদয় থেকে তাকে সরাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন, আছেন, থাকবেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং বাঙালির জাতির পিতা হিসেবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে।
স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
খায়রুজ্জামান খান সানি
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। গানের চরণ দুটি যদি সত্যি সত্য হয়ে প্রকাশ পেত। তবে ঠিকই বিশ্ব ফিরে পেত এক মহান নেতা। আর তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠত সোনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা তরুণদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁর বিচক্ষণ ও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভঙ্গুর দেশটি তার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলো। হঠাৎ সব স্বপ্ন ভেঙে গেলো, ১৫ই আগস্ট সপরিবারে নিজগৃহে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হল। বাঙালি হারালো সোনার বাংলা গড়ার কারিগর, আমরা হারালাম একজন সেরা দেশপ্রেমিক। তিনি বিশ্বাস করতেন, এদেশের তরুণরাই সে সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। আর তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ঠিকই একদিন গড়ে তুলবে সোনার বাংলাদেশ।
দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুরের জেলা সদরে জন্ম জন্মগ্রহণ করেন আলোকিত নারী নাজমুন নাহার। বিশ্ব ভ্রমনের তীব্র ইচ্ছা, চেষ্টা আর ব্যাপক সংগ্রামের মাধ্যমে নিত্য সব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন। নিজ জনপদের মানুষের কাছে তিনি লক্ষ্মীপুরের ভ্রমণ কন্যা হিসেবে অর্জন করেছেন ব্যাপক পরিচিতি। শুধু তাই নয় লক্ষ্মীপুর ছাপিয়ে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন- বাংলাদেশের ভ্রমণ কন্যা। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে লাল সবুজের পতাকা হাতে নাজমুন নাহার করছেন বিশ্ব ভ্রমণ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৬৭টি দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বাংলাদেশের নাজমুন নাহার। সম্প্রতি তিনি সেন্ট লুসিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে অর্জন করেন এই গৌরব।
আনন্দের বিষয় হলো, সেন্ট লুসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ জোসেফ পিয়ের এক বিশেষ সাক্ষাতে ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহারকে ১৬৭ দেশে বিশ্ব শান্তির বার্তা ও লাল-সবুজের পতাকা বহনের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাকে ‘সুপার ব্রেভ গার্ল’ বলে আখ্যায়িত করেন। দেশটির শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য ভয়েস’ বাংলাদেশের নাজমুন নাহাররের বিশ্ব ভ্রমণ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এক বিশেষ ফিচার। খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্বেলা অ্যান্থনির লেখায় উঠে আসে ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহারের স্বপ্ন, জীবন সংগ্রাম ও বিশ্ব অভিযাত্রার কঠিন থেকে কঠিনতম সব চ্যালেঞ্জের কথা।
লক্ষ্মীপুরের এই ভ্রমণ কন্যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ব দরবারে। চলতি বছরের (২০২৩) মে মাস থেকে নাজমুন নাহার এবারের অভিযাত্রা শুরু করেছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম ও গায়ানা থেকে ক্যারাবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ত্রিনিবাদ টোবাগো, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিন্সেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডা, বার্বাডোস ও ১৬৭তম দেশ হিসেবে সেন্ট লুসিয়া পর্যন্ত। এ বছরের জুলাই মাসের মধ্যভাগ থেকে লক্ষ্মীপুর সহ পুরো দেশ জুড়ো আলোচিত ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহার। তিনি ভ্রমণ করতে চান বিশ্বের প্রতিটি দেশ।
ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে ২০০০ সালে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সূচনা হয় তার প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের। নাজমুন নাহার ২০১৮ সালের ১ জুন শততম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর।
তিনি ১৫০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকা মহাদেশের দেশ সাওতমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে। বলা চলে, বিশ্ব দরবারে তিনি এখন লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভ্রমণ পিপাসু নাজমুন নাহার ভ্রমণ ছাড়াও পরিবেশ রক্ষা ও বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে নিয়মিত সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে সচেতনতার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় ‘নো ওয়ার অনলি পিস, সেভ দ্য প্ল্যানেট’ এই শান্তি ও ঐক্যের বার্তাগুলো পৌঁছান। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোয় শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিতও করেন। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন সড়ক পথে। দীর্ঘ ২২ বছরের বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বহু প্রতিকূলতার। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন বহুবার।
শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে লাল সবুজের পতাকা হাতে একের পর এক দেশ ভ্রমণ করে চলছেন তিনি। দীর্ঘ ২২ বছরে বেশ কয়েকবার বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছেন নাজমুন নাহার। বিশ্বের অসংখ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানসহ বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন বহুবার। নাজমুন নাহার তার এই বিরল কাজের জন্য তিনি পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা ‘পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়াও দেশ-বিদেশে মোট ৫০টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি। সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন ভ্রমণ কন্যা নাজমুন নাহার। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের এই ভ্রমণ কন্যা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারের বর্বর ও নৃশংসতম হত্যা বাঙালি জাতির ইতিহাসকে কলুষিত করেছে। মূলত বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারের হত্যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনার অংশবিশেষ। শোকাবহ আগস্ট মাসে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল মিয়া।
শোক তারুণ্যের শক্তিতে উদ্ভাসিত হোক
তাসনিম নিশাত
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আগস্ট এলেই মনে পড়ে গ্রিক পুরানের ফিনিক্স পাখির মতো বিশ্বখ্যাত মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে। মহান ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের মানুষটি ছিলেন বলেই বাংলাদেশের লাল-সবুজ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শত বছরের ঔপনিবেশিক বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন আর গণতন্ত্রের পদস্খলনের বিপরীতে স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র উপহার দিতে ফাঁসির মঞ্চেও আপোস করেননি। একটি কিংবদন্তি বারুদ প্রতিটি বাঙালিকে কেমন অভিন্ন গাঁথুনি দিতে পারে, তা ইতিহাসে বিরল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বুকে যে ২৯টি গুলি লেগেছিল, তা কাল থেকে কালান্তরে বাঙালি জাতিকে পিছিয়ে দিল কয়েক হাজার বছর। মাত্র সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, পররাষ্ট্রনীতিসহ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের সবখানে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসেন। রক্তগঙ্গার বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার পরিমেয় আশা অশ্রুর প্রগাঢ়তায় ধূলিসাৎ হয়েছে। সর্বোপরি, জাতির পিতাকে হারানোর শোক তারুণ্যের শক্তিতে উদ্ভাসিত হোক, এমনটাই প্রত্যাশিত।
আগস্ট মাস এক মনস্তাপের মাস
আনোয়ারুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে নৃশংস, লোমহর্ষক এবং ঘৃণিত এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম হয়। সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতাকে নিজ বাড়িতে সপরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেয়। আইএমএফ, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত না হলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারত। দেশ থেকে দূর হতো অপরাজনীতির কালো ছায়া, দূর্নীতি, চোরাচালান, মুনাফাখুরি ইত্যাদি। শোকাবহ আগস্ট মাসে মহান জাতির নেতা ও তার পরিবারবর্গের বিদ্রোহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি
সুস্মিতা চক্রবর্তী
শিক্ষার্থী, সমাজত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বঙ্গবন্ধু আজীবন বিনাস্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের সর্বাঙ্গীন মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। বহুবার জেলে বন্দিও হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় সেনাসদস্যের হাতে পয়েট অব পলিটিক্স খ্যাত জাতির জনক সপরিবারে নির্মল হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই হত্যাকাণ্ডে এদেশের মানুষ যেমন হারিয়েছিল তাদের অভিভাবককে তেমনি বিশ্ববাসী বঞ্চিত হয়েছিল একজন মহান নেতার সাহচর্যে, যা এক অপূরণীয় ক্ষতি। নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট ওই সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে এই দেশ ও জাতি উন্নয়নের গতিশীলতা থেকে বঞ্চিত হয়ে সেনাশাসনের আওতাধীন হয়ে পড়েছিল, যা দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে চলমান উন্নয়ন বলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক জীবন গড়ার মূলমন্ত্র
মো. রিয়াদ মিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শুধু একটি শব্দ নয়, তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসে দীপ্যমান উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম, একটি সংগ্রামের নাম, একটি আত্মবিশ্বাসের নাম, একটি ভালোবাসার নাম। বঙ্গবন্ধু চিরকালই সততা, ন্যায়, কল্যাণ ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তার জীবনের প্রত্যেকটি অংশে আমরা খুঁজে পাই শক্তি, সাহস ও বেঁচে থাকার প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদেরকে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হতে, নৈতিকতা, মানবিকতা ও মূল্যবোধ অর্জনে সহায়তা করে। তার সংগ্রামী জীবন আমাদেরকে অসীম সাহসিকতায় পথ চলতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, ন্যায়ের পথে সাহসের সাথে চলতে আর আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখায়।
সেই ভয়াল কালরাত্রিতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হরালেও তাঁর আদর্শকে ধারণ করার মাধ্যমে আমরা খুঁজে পাবো তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আমাদের মাঝে ধারণ করার মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল আমাদের মাঝে।
বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন
মোবাশ্বেরা ছিদ্দীকা
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আগস্ট মাস বাঙালি জাতির শোকের মাস। এ মাসের ১৫ তারিখে বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হয়। কারণ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আর শ্রাবণ মিলে একাকার হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া প্লাবনে। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারকে হত্যা করে ঘাতকের দল বাংলার ইতিহাসে সংযুক্ত করেছে এক কলঙ্কের অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে। এই হত্যাকাণ্ডের ফলস্বরূপ বাঙালি হারায়নি শুধু এক মহান ব্যক্তিত্ব, হারিয়েছে এক মহান আদর্শও। যে আদর্শ শিখিয়েছে শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, জাতীয়তাবোধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হতে। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্থপতি তিনিই। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবেন।
আগস্ট মাসের ইতিহাসে ঝরছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত
প্রত্যুৎ দেবনাথ
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নির্মম হত্যা শুধু একজন বলিষ্ঠ নেতাকেই হারাইনি, আমরা হারিয়েছি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক আব্দুর রবসহ আরও অনেককে। বঙ্গবন্ধু এদেশের উপযোগী সমাজতন্ত্র গঠন করতে চেয়েছিলেন। সাদ্দাম হোসেন বঙ্গবন্ধুকে ‘সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ’ বলে উল্লেখ করেন। বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যাংকসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, বাকশাল গঠন, সংবিধানের চার মূলনীতি নির্ধারণ করে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও শোষণ-বঞ্চনার অবসানই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়াও ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা। কিন্তু আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ সকল কিছুরই অঘোষিত পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু একজন মহান নেতার মৃত্যু ছিল না, বরং বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পরাজয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির এক বিশ্বস্ত বন্ধু। তাঁর মৃত্যু যেন তাই কলঙ্কিত ও রক্তাক্ত করেছে সমস্ত আগস্ট মাসকে।
কৃষ্ণচূড়ার বিদায় পথে কদমের আগমন। এমন চূড়ান্ত লগ্নে আমাদের লেখক ফোরামেও আমাদের কৃষ্ণচূড়ার মতো সিনিয়দের বিদায় এবং কদমের মতো নতুনদের বরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এবং সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই আমরা, ‘বাংলাদেশ তরণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা’ আয়োজন করে একটি লেখক সম্মেলন। যেখানে তরুণ লেখকদের মেলা বসেছিল সেদিন। দিনটি ছিলো ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। ২০২২-২৩ কার্যবর্ষের শেষদিন। মানে এই লেখক সম্মেলেনের আয়োজকদের কার্যবর্ষের শেষদিন।
আয়োজকরা তাদের কষ্ট মিশ্রিত বুক নিয়ে হাসি মিশ্রিত মুখে আমাদের উপহার দিয়েছে সুন্দর একটি দিন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৯টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে, ইতি আপু এবং তুহিন ভাইয়ার সঞ্চালনায়। তাহলা ভাইয়ার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় আমাদের কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠানটি। আমাদের অনুষ্ঠানে একে একে দিকনির্দেশনা দেন আমাদের বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জাহানুর ইসলাম ভাই, ২০২২-২০২৩ কার্যবর্ষের কেন্দ্রীয় সভাপতি নেজাম ভাই, বশেমুরবিপ্রবির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ভিসি স্যার। তাদের এসব দিকনির্দেশনার কথাগুলো শুধুমাত্র কথাই ছিল না, সেগুলো ছিলো বাস্তবধর্মী কথা, যে কথাগুলো আমরা আমাদের জীবনের জন্য ব্যবহার করতে পারব।
চাইলেই সেইদিক নির্দেশনা মেনে সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে পারব। এতো এতো অতিথিদের মাঝে ছিলেন একজন বিশেষ অতিথি, তিনি হলেন সকলের প্রিয় তবীব মাহমুদ ভাইয়া। যিনি আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন। তিনি আসলেন, আমাদের মাঝে বক্তব্য রাখলেন, গান গাইলেন চলে গেলেন। শুধুই কি চলে গেলেন? নাহ তিনি দিয়ে গেলেন আমাদের স্মৃতিময় একটি দিন। তার জ্ঞানভান্ডার থেকে দিয়ে গেলেন কিছু জ্ঞান। তার হাতেই বিদায় নিলেন আমাদের কৃষ্ণচূড়ার মতো সিনিয়ররা। আমাদের সকল সিনিয়রদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হলো, মাসিক সেরা লেখকদেরও দেওয়া হলো সম্মাননা স্মারক। এই এতো এতো সম্মাননা স্মারকের মাঝে একটি ক্যাটগরিতে আমিও পেয়েছিলাম একটি স্মারক। যেটি ছিলো আমার লেখক ফোরামে পাওয়া সব থেকে বড় উপহার। যেটি আমার লেখক ফোরামের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছে ভালোবাসা, আবেগ। লাঞ্চের আগেই শেষ করা হয় বক্তব্যের পর্ব, ক্রেস্ট প্রদানের পর্ব, আমাদের সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ ভাইয়ার বক্তব্য দিয়ে।
দুপুর ২টা নাগাদ দেওয়া হলো দুপুরের খাবার। খাবার শেষে শুরু হলো আরেকটি পর্ব। সেটি হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। সাংস্কৃতিক পর্বে আমাদের তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মেধাবী সদস্যরা একে একে বিভিন্ন পার্ফামেন্স করতে থাকে। কেউ গান, কেউ নাচ কেউ বা কবিতা আবৃত্তি। সদস্যদের নাচ, গান, আবৃত্তি শেষে মঞ্চে আসে আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন IUPA, তারা এসে মঞ্চ মাতিয়ে দিয়ে যায়। এই সাংস্কৃতিক পর্বের মাঝেই আবার আমাদের নবীন সদস্যদের বরণ করে নেওয়া হয়, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার লোগোযুক্ত ব্যাজ এবং প্রিন্ট করা কলম দিয়ে।
অনুষ্ঠানের শেষদিকে আবার আমাদের চমক দিতে মঞ্চে গান করতে আসেন আমাদের তালহা ভাইয়া এবং আশিক ভাইয়া। তারা সবে মাত্র গানে মেতে উঠেছেন, দর্শক-শ্রোতাদের মনে জোয়ার সৃষ্টি করেছেন ঠিক তখনই চলে গেলো বিদ্যুৎ। ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেলো, অন্ধকারও জানান দিলো আমরা আমাদের প্রবীনদের একটু পর থেকে আর কাছে পাব না। তারা চলে যাবে এই লেখক ফোরাম থেকে, চলে যাবে এই ইবির ক্যাম্পাস থেকে, হয়তোবা ভাগ্যের জোরে দেখা হয়ে যাবে কোনো এক সভায়। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো ৪ টা নাগাদ। বিদায় নিলো আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের ভরসা, আমাদের প্রবীন সদস্যরা, নবীনরা আসলো লেখক ফোরামের হাল ধরতে। ন বীন, প্রবীণ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ লেখক এবং বিশেষ অতিথিকে নিয়ে হয়ে গেলো আমাদের তরুণ লেখক সম্মেলন। অনুষ্ঠান একে একে বিদায় নিলো বাহিরে থেকে আসা সকল অতিথি। তারা দিয়ে গেলেন আমাদের বেদনাময়ী সুখের একটি দিন। দিন যাবে, মাস যাবে বছর যাবে, ইবির লেখক ফোরামের অর্জন আরো বাড়বে, বদলে যাবে অনেক কিছুই কিন্তু স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থেকে যাবে এইদিনটি।
কৃষ্ণচূড়ার বিদায় পথে কদমের আগমন। এমন চূড়ান্ত লগ্নে আমাদের লেখক ফোরামেও আমাদের কৃষ্ণচূড়ার মতো সিনিয়দের বিদায় এবং কদমের মতো নতুনদের বরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এবং সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই আমরা, ‘বাংলাদেশ তরণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা’ আয়োজন করে একটি লেখক সম্মেলন। যেখানে তরুণ লেখকদের মেলা বসেছিল সেদিন। দিনটি ছিলো ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। ২০২২-২৩ কার্যবর্ষের শেষদিন। মানে এই লেখক সম্মেলেনের আয়োজকদের কার্যবর্ষের শেষদিন।
আয়োজকরা তাদের কষ্ট মিশ্রিত বুক নিয়ে হাসি মিশ্রিত মুখে আমাদের উপহার দিয়েছে সুন্দর একটি দিন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৯টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে, ইতি আপু এবং তুহিন ভাইয়ার সঞ্চালনায়। তাহলা ভাইয়ার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় আমাদের কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠানটি। আমাদের অনুষ্ঠানে একে একে দিকনির্দেশনা দেন আমাদের বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জাহানুর ইসলাম ভাই, ২০২২-২০২৩ কার্যবর্ষের কেন্দ্রীয় সভাপতি নেজাম ভাই, বশেমুরবিপ্রবির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ভিসি স্যার। তাদের এসব দিকনির্দেশনার কথাগুলো শুধুমাত্র কথাই ছিল না, সেগুলো ছিলো বাস্তবধর্মী কথা, যে কথাগুলো আমরা আমাদের জীবনের জন্য ব্যবহার করতে পারব।
চাইলেই সেইদিক নির্দেশনা মেনে সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে পারবো। আর আমাদের এতো এতো অতিথিদের মাঝে ছিলেন একজন বিশেষ অতিথি, তিনি হলেন সকলের প্রিয় তবীব মাহমুদ ভাইয়া। যিনি আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন। তিনি আসলেন, আমাদের মাঝে বক্তব্য রাখলেন, গান গাইলেন চলে গেলেন। শুধুই কি চলে গেলেন?নাহ তিনি দিয়ে গেলেন আমাদের স্মৃতিময় একটি দিন। তার জ্ঞানভান্ডার থেকে দিয়ে গেলেন কিছু জ্ঞান। তার হাতেই বিদায় নিলেন আমাদের কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় সিনিয়র রা। আমাদের সকল সিনিয়রদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হলো, মাসিক সেরা লেখকদেরও দেওয়া হলো সম্মাননা স্মারক। এই এতো এতো সম্মাননা স্মারকের মাঝে একটি ক্যাটগরিতে আমিও পেয়েছিলাম একটি স্মারক। যেটি ছিলো আমার লেখক ফোরামে পাওয়া সব থেকে বড় উপহার। যেটি আমার লেখক ফোরামের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছে ভালোবাসা, আবেগ। লাঞ্চের আগেই শেষ করা হয় বক্তব্যের পর্ব, ক্রেস্ট প্রদানের পর্ব, আমাদের সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ ভাইয়ার বক্তব্য দিয়ে।
দুপুর ২টা নাগাদ দেওয়া হলো দুপুরের খাবার। খাবার শেষে শুরু হলো আরেকটি পর্ব। সেটি হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। সাংস্কৃতিক পর্বে আমাদের তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মেধাবী সদস্যরা একে একে বিভিন্ন পার্ফামেন্স করতে থাকে। কেউ গান, কেউ নাচ কেউ বা কবিতা আবৃত্তি। সদস্যদের নাচ, গান, আবৃত্তি শেষে মঞ্চে আসে আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিক এসোসিয়েশন IUPA, তারা এসে মঞ্চ মাতিয়ে দিয়ে যায়। এই সাংস্কৃতিক পর্বের মাঝেই আবার আমাদের নবীন সদস্যদের বরণ করে নেওয়া হয়, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার লোগোযুক্ত ব্যাজ এবং প্রিন্ট করা কলম দিয়ে।
অনুষ্ঠানের একদম শেষে আবার আমাদের চমক দিতে মঞ্চে গান করতে আসেন আমাদের তালহা ভাইয়া এবং আশিক ভাইয়া। তারা সবে মাত্র গানে মেতে উঠেছেন, দর্শক-শ্রোতাদের মনে জোয়ার সৃষ্টি করেছেন ঠিক তখনই চলে গেলো বিদ্যুৎ। ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেলো, অন্ধকারও জানান দিলো আমরা আমাদের প্রবীনদের একটু পর থেকে আর কাছে পাব না। তারা চলে যাবে এই লেখক ফোরাম থেকে, চলে যাবে এই ইবির ক্যাম্পাস থেকে, হয়তোবা ভাগ্যের জোরে দেখা হয়ে যাবে কোনো এক সভায়। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো ৪ টা নাগাদ। বিদায় নিলো আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের ভরসা, আমাদের প্রবীন সদস্যরা, নবীনরা আসলো লেখক ফোরামের হাল ধরতে। ন বীন, প্রবীণ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ লেখক এবং বিশেষ অতিথিকে নিয়ে হয়ে গেলো আমাদের তরুণ লেখক সম্মেলন। অনুষ্ঠান একে একে বিদায় নিলো বাহিরে থেকে আসা সকল অতিথি। তারা দিয়ে গেলেন আমাদের বেদনাময়ী সুখের একটি দিন। দিন যাবে, মাস যাবে বছর যাবে, ইবির লেখক ফোরামের অর্জন আরো বাড়বে, বদলে যাবে অনেক কিছুই কিন্তু স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থেকে যাবে এই দিনটি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বিভাগীয় শহরে পুরো দিনব্যাপী এডুকেশন মিটের আয়োজন করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান মেইসেস । অনুষ্ঠানটি আজ ৫ই আগস্ট (শনিবার) সিলেটে, ৭ই আগস্ট (সোমবার) রংপুরে, ৯ই আগস্ট (বুধবার) খুলনাতে, ১১ই আগস্ট (শুক্রবার) ঢাকায় এবং ১২ই আগস্ট (শনিবার) চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং মালয়েশিয়ার ১০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সফরকারী দলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও পরামর্শ করার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরাসরি আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করার সুযোগ প্রদান করা, বিদেশে অধ্যয়নের সম্ভাবনা, বৃত্তি, ছাত্রজীবন এর অভিজ্ঞতা, জীবনযাত্রা, কোনো নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের জানার উদ্দেশ্যে এত বড় পরিসরে এডুকেশন মিটের আয়োজন করছে উদ্যোগতা প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে বিদেশে পড়তে আগ্রহী দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবে বিনামূল্যে। তবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে https://studyabroadwithmaces.com এ গিয়ে আগে থেকেই নিবন্ধন করতে উৎসাহিত করছে মেইসেস।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে
আমি ২০১২ সালে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে স্নাতক শেষ করি। এরপর একটি বায়িং হাউসে চাকরিতে যোগদান করি। তখন আসলে চাকরিতে মন বসছিল না। আমি যে কাজ করছিলাম সেটা উপভোগ করতে পারছিলাম না। তাই এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যাতে স্বাধীনতা থাকবে, এনজয় করা যাবে, থাকবে না সময়ের সীমাবদ্ধতা, নিজে ভিন্ন কিছু করা যাবে এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারব। তখন বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা ও উন্মাদনা লক্ষ করলাম। ওই জায়গা থেকে ২০১৪ সালের শেষে চাকরি ছেড়ে স্পোর্টস এজেন্সি দেয়া হয়। পাশাপাশি একটা ফ্যাশন হাউসও দিই। তবে চাকরি ছাড়ার পর তখন কেউই আমাকে সাপোর্ট দেয়নি। আমি আসলে ঝুঁকি নিতে পছন্দ করি। আর জীবনে বড় হতে হলে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, গোছানো ক্যারিয়ার এবং ভালো ভবিষ্যৎ ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনে ঝাঁপ দেয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। প্রথম কয়েক বছর অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
ক্যারিয়ারে অন্যকে ফলো না করা
যেকোনো কাজের প্রথমে জানতে হবে সেই কাজটা আমার জানাশোনা আছে কি না এবং বিশ্বাস করছি কি না। এটা সঠিক এবং নিজের কাছে উপভোগ্য কি না। কেউ ইউটিউবার হয়ে সফল হয়েছে, তাই আমাকেও ইউটিউবার হতে হবে, এটা ভুল ধারণা। কাউকে ফলো করে সফল হওয়া জরুরি নয়। নিজের দক্ষতা ও কাজের প্রতি ভালো লাগা থেকে লেগে থাকলে একসময় সফলতা আসবে। আজকাল তরুণরা অন্যের কাজকে ফলো করে সফল হতে উঠেপড়ে লেগে যায়। কিন্তু দিন শেষে তারা ব্যর্থ হয়। নিজে যে কাজ ভালো পারবেন ও বুঝবেন, কাজকে উপভোগ করবেন।
চাই বাধাবিপত্তির জয়
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু করলে বাধা আসাটা স্বাভাবিক। মানুষজন অনেক রকমের কমেন্ট করবে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমি ভালো চাকরি ও ক্যারিয়ার ছেড়ে উদ্যোক্তা হতে শূন্য থেকে শুরু করি। তখন আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিবার থেকে কথা শুনতে হয়েছে। আমি মনে করি, যখন কাউকে নিয়ে নেগেটিভ কমেন্ট করা হয়, তার মানে সে ভালো কিছু করছে। এই নেগেটিভ কমেন্টগুলো আমাকে বেশি অনুপ্রেরণা দিত। আমি ভাবতাম, যখন আমি সফল হব, তখন তারাই আমার পটিজিভ কমেন্ট করবে। আর এটাই আমার সফলতা। মানুষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক থাকলে কেউ নেগেটিভ কমেন্ট করে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। প্রয়োজনে এসব ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে হবে। আবার সফল হওয়ার পর এরাই পজিটিভ কমেন্ট করবে।
সফলতার শর্টকাট পথ নেই
সফলতার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। অনেকে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে সফল হয়। আবার অনেকে অল্প টাকা ইনকাম করে সফল হয়। সফলতার পূর্বশতগুলো হলো সৎ থাকা, লেগে থাকার মনমানসিকতা, কমিটমেন্ট ঠিক রাখা, পরিশ্রম করে যাওয়া; যেকোনো ব্যবসা করার আগে এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। শর্টকাট সফল হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সফল হতে ধৈর্য ধরে দীর্ঘ সময় লেগে থাকতে হবে। কাজকে এনজয় করে সামনে এগিয়ে গেলে ইনশাল্লাহ একদিন সফল হবেন।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে
কোনো একটা সার্ভিস বা ব্যবসা করার আগে মাথায় রাখতে, কাস্টমার কেন আমার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট নেবে, এই জিনিসটা ব্যবসা করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের চেয়ে নিজের সার্ভিস বা ব্যবসায় ভিন্নতা আনতে হবে। যাতে সবার এটার প্রতি আকর্ষণ থাকে। আরেকটা বিষয়, ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যকে কপি না করে নিজে এমন কিছু করতে হবে, যা অন্য কেউ করেনি। নতুন কিছু করে নাম্বার ওয়ান হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। একটু পজিটিভ চিন্তা করলে এ রকম অনেক বিষয় পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে এ রকম অনেক নতুন কিছুই আছে, যা সম্পর্কে মানুষ এখনো কাজ করেনি।
বাৎসরিক ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বেতনের কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম বাংলাদেশ। সংস্থাটি কক্সবাজারে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটে কর্মী নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
পদের নাম: প্রোগ্রাম ম্যানেজার-এএইচপি
পদসংখ্যা: ১
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যানিটারিয়ান/ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অথবা বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন/ম্যানেজমেন্ট বা সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ইমার্জেন্সি ও উন্নয়ন কাজে। এর মধ্যে অন্তত চার বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির। দক্ষ হতে হবে বাজেট ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টে। যোগাযোগ ও নেতৃত্বের সক্ষমতা থাকতে হবে। অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা ও ইংরেজি ভাষায় সাবলীল হতে হবে।
চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক
কর্মস্থল: কক্সবাজার
কর্মঘণ্টা: সপ্তাহে ৩৭.৫ ঘণ্টা
বেতন: বছরে (১৩ মাস) ২৩,৩৪,৬০৪ টাকা।
যেভাবে করবেন আবেদন
আগ্রহীরা এই লিংকে নিয়োগসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জেনে Apply For This Role-এ ক্লিক করে আবেদন করতে পারবেন।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণ প্রজন্মের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই তারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে থাকেন। এর কারণে তারা যেমন ঠিকমতো খাবার খাচ্ছেন না, তেমনি পড়াশোনা ও কোনো সৃজনশীল কাজেও সম্পৃক্ত থাকছেন না। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের আসক্তির বিষয়ে তারুণ্যের মতামত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুস্মিতা চক্রবর্তী
মোস্তফা কামাল, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের আধুনিক জীবনের নতুন বাস্তবতার নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে উন্নত সভ্যতা, বাড়িয়েছে জীবনযাত্রার মান, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে জীবনের সব আবেগ। বর্তমানে তরুণদের প্রায় ৯০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে হাজারও তরুণ-তরুণী বিপথগামী হচ্ছেন, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছেন, পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছেন, খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে ইলেকট্রিক ডিভাইস দিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত আসক্তি নানাভাবে সমাজের অবক্ষয় এবং ধ্বংস ডেকে আনে। ফলে পরিবার, সমাজ এবং সরকার- সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তবেই অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার গুরুদায়িত্ব আমাদের সবার।
ফাইরুজ নাহিয়ান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান সময়ের তরুণদের পক্ষে স্মার্টফোন ছাড়া এক মুহূর্ত কাটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর হাতে স্মার্টফোন থাকলে কিছুক্ষণ পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ না বোলালে যেন চোখজোড়াকে প্রসন্ন করা যায় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারে পুরো পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা এ কথা বেমালুম ভুলে যাই, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তিকে অনেক গবেষক মাদকাসক্তির সঙ্গেও তুলনা করেছেন। কেননা, মাদকাসক্তির মতোই এ আসক্তিতে আক্রান্ত মানুষ বুঝতে পারে না তার কোন কাজটি করা প্রয়োজনীয় আর কোনটি অহেতুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আসক্তি কাটাতে আমাদের সময় বেঁধে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরে অ্যালার্মের ফিচারটাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে, আমরা কতটা সময় দিচ্ছি সাইটগুলোতে।
মো. মারুফ মজুমদার, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম! একুশ শতকের তৃতীয় দশকে এসে প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের দুষ্টচক্রের দুর্বিপাকে নিত্য খাবি খাচ্ছে। হ্যামিলনের বাঁশির সুরসদৃশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মায়াজালে আটকা পড়ে অন্তঃসারশূন্য এক মরীচিকাময় অজানা গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। অদূর ভবিষ্যতের একটি দেশ তার অন্যতম চালিকাশক্তি তরুণ প্রজন্মকে কতটুকু দক্ষ, নেতৃত্ববান করতে পেরেছে, তা এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতটুকু দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। মাত্রাতিরিক্ত ভার্চুয়াল জগতে বিচরণের কারণে পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, তা বলাই বাহুল্য। এর থেকে উত্তরণের সময় এসেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপস্বরূপ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে সচেতন থাকতে হবে। কার্যত বইবিমুখ এ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় আমরা একটি অসুস্থ প্রজন্ম তৈরি করার পথে হাঁটব, তা ভবিতব্য। সর্বোপরি তরুণ প্রজন্মের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি চরম আসক্তির প্রভাব তথা অভিশাপের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকে দেশ-কাল-পাত্রভেদে কেউ রেহাই পাবে না। তাই সময় এসেছে সজাগ হোন।
মো. সাইফুল মিয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন হয়েছে তরুণ-তরুণীদের নিত্যসঙ্গী। স্মার্টফোন ছাড়া তরুণ-তরুণী পাওয়া এখনকার সময় দুষ্করও বটে। স্কুলশিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত স্মার্টফোন থাকবেই। এই স্মার্টফোন ছাড়া এখন মানুষের জীবনের একটা মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি- সবকিছুতেই স্মার্টফোন আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সুযোগে তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
বিনোদন মানুষের অবসরের সঙ্গী। মানুষ যখন ক্লান্তবোধ করে, তখন বিনোদনের মাধ্যমে অবসাদ কাটানোর চেষ্টা করে। এ ছাড়া বিনোদনের মাধ্যমে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ সুন্দর ও স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন হয়। অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের এ সমস্যা জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এ সংকট নিরসনে স্মার্টফোনের পরিবর্তে মাঠে খেলাধুলার তথা সুস্থ বিনোদনের বিকল্প হতে পারে না।
নাসরিন সুলতানা হিরা, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রযুক্তি যত উৎকর্ষই অর্জন করুক না কেন, যন্ত্র কখনো মানুষের বিকল্প হতে পারে না। সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তি যতই তৎপর থাকুক না কেন, সামাজিক দায়িত্ব ও সচেতনতার ক্ষেত্রে তার মধ্যে জন্ম নেয় প্রচণ্ড অনীহা ও উদাসীনতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির ফলে তরুণরা দিন দিন অসামাজিক হয়ে যাচ্ছেন। এতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে গিয়ে প্রতিবছর কত বইয়ের পাঠক, গানের শ্রোতা ও মাঠের খেলোয়াড় এ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন, দেশের দিকে তাকালেই উঠে আসে সেই চিত্র। এর ফলে বুদ্ধির বন্ধ্যত্ব তৈরি হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে মেধার বিকাশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী তরুণদের এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন পরিবারের অভিভাবকের সচেতনা, ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন এবং সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। এতেই সম্ভব তরুণসমাজকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আসক্তির কালো থাবা থেকে রক্ষা করা।
আরিফুল ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। তার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে বন্দর নগরীতে। বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় আবাসিক কলোনিতে থাকা হতো। শৈশবে বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট, ঘুরে বেড়ানো, এসব করেই দিন পার হতো। আরিফের ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। তবে তার বড় বোন আমেনা খাতুন (রুমা) নাচ করতেন। বড় বোনকে দেখে তার নাচের প্রতি ঝোঁক আসতে থাকে এবং অনুপ্রেরণা পেতে শুরু করেন। এই ঝোঁক থেকেই একসময় তার বোনের থেকে নাচ শিখতেন। বড় বোন তার আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি চট্টগ্রাম জেলা শাখায় ভর্তি করে দেন। কিছুদিন ভালোই চলছিল আরিফের নাচ শেখার পাঠ। তবে পড়াশোনার ব্যস্ততা ও বাবার চাকরি থেকে অবসর হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার আগেই চাঁদপুরে চলে আসা হয়।
নতুন করে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সৃজনশীল নৃত্যকলা বিভাগে ভর্তি হন। এখানে নৃত্যগুরু সোমা দত্তের কাছে নাচের বিভিন্ন কসরত ও কৌশল শিখতে থাকেন। আরিফ ২০১৮ সালে নৃত্যকলার ওপর চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর আর কোনো বাধা আরিফকে থামাতে পারেনি। নৃত্যই যেন তার জীবনের একমাত্র আশা-ভরসা হয়ে ওঠে। আরিফ অকপটেই বলে যান, ‘আজকে আমার এ-পর্যায়ে আসার জন্য বোন আমেনা খাতুন (রুমা) ও নৃত্যগুরু সোমা দত্ত দুজনের অবদান অনস্বীকার্য। তা ছাড়া খাদিজা আন্টি (রিজভীর আম্মু), মিশন স্কুলের শিক্ষক ফৌজিয়া হোসেন পুতুল আন্টি, হিমানী দাস আন্টি এবং আমার কলেজের অধ্যক্ষ রতন স্যার- এদের আতিথেয়তা ও সহযোগিতায় আজ আমি সবার পরিচিত মুখ।’ বর্তমানে আরিফ চাঁদপুরের পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজে ‘বাংলা সাহিত্যে’ অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে কোনো বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে চাপা কণ্ঠে, ‘আমাদের দেশে ছেলেরা পায়ে ঘুঙুর পরে নাচ করবে, এটা সভ্য সমাজ ছাড়া প্রায় সব জায়গায়ই দৃষ্টিকটুভাবে দেখে। আমার বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সামাজিকভাবে প্রথম প্রথম মারাত্মকভাবে বুলিংয়ের শিকার হতাম। পারিবারিকভাবেও প্রথমে খুব একটা সাপোর্ট পেতাম না। একসময় বোনের দেয়া জমানো টাকা দিয়ে চাঁদপুরে যাওয়া-আসা করতাম। কখনো কখনো যাওয়ার ভাড়া থাকলেও আসার সময় হেঁটে চাঁদপুর থেকে মতলব আসতে হতো। দিনগুলোর কথা মনে করলে আমার গা শিউরে ওঠে।’ তার সফলতার পেছনে অনেক সংগ্রামের গল্পও ছিল। এভাবে আরিফকে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছিল।
একপর্যায়ে তিনি হাসতে হাসতে একটি মজার ঘটনা বলেন, ‘একবার মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে আমাদের দলীয় নৃত্য ছিল শেষের দিকে। অপেক্ষা করতে করতে অনেকের চোখে ঘুম চলে আসে। পরে আমাদের তাড়াহুড়া করে স্টেজে উঠানো হলো। ঘুমের ঘোরে যা আবোলতাবোল নাচলাম, সে কথা আর কী বলব! তবে মজার বিষয় হলো, আমাদের এই আবোলতাবোল নাচ দর্শক মহলে অন্যদের নাচের মতোই ছিল।’
নৃত্যে আরিফের যত অর্জন
নৃত্যে আরিফের অর্জনের শেষ নেই। তার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্রেস্ট, সম্মাননা ও মেডেল। ২০১৬ সালে ‘অষ্টম জাতীয় ইলিশ উৎসবে’ লোক নৃত্যে প্রথম। ২০১৭ সালে ‘নবম জাতীয় ইলিশ উৎসবে’ সৃজনশীল নৃত্যে প্রথম ও লোক নৃত্যে দ্বিতীয়। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’ প্রতিযোগিতায় উপজেলা-জেলা পর্যায়ে প্রথম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চাঁদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো ‘দশম জাতীয় ইলিশ উৎসবে’ সেরা নাচিয়েতে পর পর দুই বার চ্যাম্পিয়ন। ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় চাঁদপুর জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান। তা ছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত ‘রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সেন্ট্রাল গার্ডেন চাঁদপুরের’ সহযোগিতায় সার্ক অভিযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম স্থান অর্জন। ২০২২ সালে ‘বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা’ আয়োজিত জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে সেরা ৫ দলের মধ্যে তার দল দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। ২০২৩ সালে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ কর্তৃক আয়োজিত আন্ত কলেজ প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগ হয়ে জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩’-এ বিভাগীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
আমাদের দেশে নৃত্যশিল্পীদের মূল্যায়ন কেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশে নৃত্যশিল্পীদের তেমন কোনো মূল্যায়ন নেই। একজন সঙ্গীতশিল্পী যেমন একটি গান গেয়ে দর্শক মহলে সমাদৃত হয়ে থাকেন আজীবন ধরে। কিন্তু একজন নৃত্যশিল্পীর অবস্থান ওই মঞ্চ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ এবং এর বাইরে তার আর কোনো জনপ্রিয়তা থাকে না।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আমি এখনো নিজেকে একজন নৃত্যশিল্পী ভাবি না। সব সময় মনে হয় আমি একজন নৃত্য শিক্ষার্থী। আমার অনেক স্টুডেন্ট রয়েছে, যাদের নৃত্য শেখানোটা চালিয়ে যেতে চাই। নৃত্যচর্চার মধ্য দিয়েই সময় পার করতে চাই। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ‘নৃত্যকলা’ বিষয় নিয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করার ইচ্ছে আছে। সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে আগামীর পথ চলতে চাই।
প্রমত্তা পদ্মার বুকে গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। কীভাবে একটি সেতু পাল্টে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন, উন্নয়ন করেছে শিক্ষার গুণগত মান ও সৃষ্টি করছে শিক্ষায় উদ্ভাবনের পরিবেশ, এই বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন সিফাত রাব্বানী ও হাসান মোহাম্মদ সাকিব।
সভা, সেমিনার ও প্রতিযোগিতায় সহজে অংশ নেয়া যাচ্ছে
মোহাম্মাদ জাকারিয়া রায়হান
ইতিহাস বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে ঠিক এক বছর আগে উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল পদ্মা বহুমুখী সেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থাই বদলে দিয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই রাজধানী শহর ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিভিন্ন শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারছে। আমিও ই আর ডি এফ বি (এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ) কর্তৃক আয়োজিত ‘মার্কিন নতুন ভিসানীতি: বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়েছি বরিশাল থেকে। ভোরে যাত্রা করে সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই। বর্তমানে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে খুব সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থার ফলে এসব সভা-সেমিনারে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যেভাবে বাড়ছে তেমনিভাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দেশের ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, চাকরি-বাকরি অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠেছে।
পৌঁছানোর অনিশ্চয়তা কেটেছে
রানা হাওলাদার
ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাড়ি থেকে মা কে বিদায় জানিয়ে যখন ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হতাম ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথের কারণে মা ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চিন্তিত থাকত। একটা সময় ছিল যখন বিশাল পদ্মা পারাপারে ব্যবহার হতো নৌযান, যা মানুষের জীবন-মালকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিত। আবহাওয়া একটু খারাপ হলে সম্ভাবনা থাকত দুর্ঘটনা ঘটার। ঝড় তুফানে নদীর আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে বিশাল বিশাল ঢেউ এবং স্রোত নৌ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করত। ঢাকায় যেতে পারব না, নিশ্চিত হতাম না। আবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসা নিয়েও শঙ্কা ছিল। এমন দুঃখের দিন এখন গত হয়েছে। এখন পদ্মা পারাপারে আর নৌযান ব্যবহার করা হয় না। পদ্মার বুকে আবাক নির্মাণ স্বপ্নের পদ্মা সেতু যা পৃথিবীর বুকে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহস জোগায়। পদ্মা পারাপারে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে স্থলযান, যার ফলে কমেছে যাত্রাপথের অনিশ্চয়তা, কেটে গেছে লঞ্চডুবির ফলে মৃত্যুর ঘটনা। দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের মানুষের সহজ যোগাযোগ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বিনিময় সম্ভব হয়েছে, যার ফলে উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলে গেছে। কেটে গেছে গন্তব্যে পৌঁছানোর অনিশ্চয়তা, গত হয়ে গেছে লঞ্চডুবি, টলারডুবির ঘটনা। সম্ভব হয়েছে কম সময়ে নিশ্চিন্তে গন্তব্যে পৌঁছানো।
ভালো শিক্ষকরা গ্রামে এসেই পড়াচ্ছেন
সামিয়া ইসলাম
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল
পদ্মা সেতু হওয়াতে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অনেক ধরনের সুবিধা পাচ্ছি। এরই মধ্যে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের স্কুলে একসময়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া যেত না, বেতন ভালো হলেও যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তারা চাকরি করতে চাইতেন না। যার ফলে অনেক বাবা মা তার সন্তানদের ঢাকায় হোস্টেলে রেখে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতেন। আমার পরিবারেও তাই হয়েছে। কিন্তু আজ এক বছর ধরে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় স্কুল কলেজে ভালো শিক্ষকদের দ্বারা সপ্তাহে এক দুই দিনের জন্য হলেও স্পেশাল ক্লাস দেখতে পাচ্ছি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এসে কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন। যেই কারণে কোনো ভর্তি কোচিং করতেও ঢাকায় যাওয়া লাগে না। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাদের শিক্ষার মান উন্নত করতে পারবে সে বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। গ্রামের হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেও প্রাকটিস করা শিক্ষার্থীরা ঢাকার মেডিকেল থেকে এসে কাজ করছেন। বলা যায়, এখন আর গ্রামের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে না। বিভিন্ন চাকরিজীবী প্রতিদিন গিয়ে-এসে অফিস করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া।
চাকরি বা ভর্তি পরীক্ষায় যেতে ভোগান্তি নেই
রাহুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াকু বাঙালি জাতির মহা বিজয়ের পর আরেকটি স্মরণীয় বিজয় হলো পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। উদ্বোধনের এক বছরে পাল্টে গেছে পুরো দক্ষিণের ২১ জেলার চিত্র। শিক্ষা ক্ষেত্রে এর প্রভাব আকর্ষণীয়। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কমপক্ষে এক দিন আগে আসতে হতো। ফলে কোথায় থাকবে, কী খাবে, কীভাবে কী করবে এটা নিয়ে অভিভাবকরা অনেক চিন্তা করতেন। যার ফলে অনেকে এই ভোগান্তির কথা ভেবে পরীক্ষা দিতেই আসতেন না। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এই সমস্যা লাঘব হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দিন রওনা দিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে যথাসময়ে পৌঁছে যান। আবার পরীক্ষা শেষ করেই গ্রামের উদ্দেশে রওনা হতে পারেন। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়েও একই সমস্যা পোহাতে হতো। একটা সেতু যে এতটা পরিবর্তন এনে দিবে এটা আসলেই অকল্পনীয়। এখন আর ঘূর্ণিঝড়, বর্ষার কারণে কারও পরীক্ষা দেয়া আটকে থাকবে না। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা জ্ঞানবিজ্ঞান, নীতিনৈতিকতা, শিক্ষার প্রকৃত গুণাবলিসম্পন্ন প্রকৃত মানুষ তৈরি করার লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন ইতিহাসে সৃষ্টির অংশ হয়ে থাকবে।
পদ্মার এপারেও ভার্সিটির বাস আসবে
সিহাব হোসাইন
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ মেগা প্রজেক্টটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার একটি প্রতীক। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাতায়াতব্যবস্থাকে নতুন করে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। পদ্মা সেতু আমার মতো হাজারও শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক ও জীবনমানের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। এখনো সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। যখন প্রমত্তা পদ্মা নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে হেলেদুলে ছোট্ট লঞ্চে করে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত অবস্থায় নদী পার হয়ে ঢাকা শহরে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে হতো। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এখন আর সেই শঙ্কা নেই। বর্তমানে ঢাকার ক্যাম্পাসগুলো থেকে গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা ও মাওয়াতে ভার্সিটির বাস যাতায়াত করে। কিন্তু এখনো নদীর ওপারে যায় না। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে যখন আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসগুলো মসৃণ জনপথ পাড়ি দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে বাড়ির আঙিনায় পৌঁছে দিয়ে আসবে তখন যাতায়াতের নিরাপত্তা নিয়ে আর আশঙ্কিত হতে হবে না। ফলে হাজারও শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রামে থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করে নিয়মিত ও সময়মতো পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে, যা পদ্মা বহুমুখী সেতু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য অলীক কল্পনা ছিল। পরিশেষে, প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে তৈরি হওয়া কংক্রিটের ও স্টিলের দ্বিতল কাঠামোটি আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ যারা নিয়মিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন তাদের কাছে বিশাল গৌরবের একটি অবয়ব।
লঞ্চযাত্রার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি
শাতুল মনি তামান্না
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
এক বছর আগেও রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় যাত্রামানেই ছিল নদী পারাপার আর ফেরিঘাটের সীমাহীন ভোগান্তি। উত্তাল ঢেউ, বৈরী আবহাওয়া, বর্ষায় লঞ্চ দুর্ঘটনার শঙ্কাসহ বিভিন্ন কারণে হাজারও যাত্রীকে বিপাকে পড়তে হতো প্রতিনিয়ত। পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। আগে দক্ষিণ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষাসহ চাকরির পরীক্ষা দেয়ার জন্য লঞ্চে করে রাজধানী ঢাকা শহরে আসতে হতো। যা ছিল অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা ছাড়া শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে লঞ্চে যাতায়াত করা। কুয়াশায় মাঝনদীতে লঞ্চ আটকে থাকা এবং ধীরগতিতে চলাচল করার কারণে ৪-৫ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো লঞ্চগুলোকে। যে কারণে ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হতো। গত বছর লঞ্চে করে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী এসেছিলেন বিসিএস পরীক্ষা দিতে। সদরঘাটে লঞ্চ পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এখন আর সেই ভয় নেই। পদ্মা সেতু লঞ্চ যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে।