মানুষের মনের সঙ্গে শরীরের সংযোগ অবিচ্ছেদ্য। মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। তাই মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখা অনেক জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। নানা কারণে মানুষের মনের ওপর বিভিন্ন রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর এর থেকেই সৃষ্টি হয় হতাশার। যেটা নিতে পারে ভয়ংকর রূপ। মানসিক স্বাস্থ্য কেন খারাপ হয় আর তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এইচ এম মাহমুদ হারুন বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য এই টার্মটার গভীরতা অনেক। কিন্তু আমরা অনেকেই তা বুঝতে পারি না। মনের অসুখ হলে আমরা হেলাফেলা করি, যতটা গুরুত্ব দিই শরীর খারাপ হলে। বিভিন্ন কারণে মন খারাপ এবং তার থেকে হতাশা বিশ্বের একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের অবহেলা, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা এ রকম অনেক কারণেই মানুষ হতাশায় চলে যেতে পারে। কিন্তু বিষয়গুলোকে চাইলেই সহজে সমাধান করা যায়।
একটি পরিবারে মা-বাবার সেপারেশন বা ডিভোর্স হয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। দেখা যায়, মা-বাবা সন্তানকে সঠিকভাবে তাদের সময়, ভালোবাসা দুটোই দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে প্রভাবটা পড়ে না। প্রভাব তখনই পড়ে যখন বাবা অথবা মা আরেকটি বিয়ে করেন এবং সেখানে তাদের সৎ মা-বাবা সেই সন্তানকে মানসিক বা শারীরিকভাবে অত্যাচার করেন। একটা বাচ্চার বিকাশের জন্য মা এবং বাবা দুজনেরই ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রোকেন ফ্যামিলিও’ অনেক টিনএজারদের মানসিক সমস্যা এবং হতাশার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের মেডিকেল টার্মে আছে, কোনো দম্পতির কেউ একজন ডিভোর্স চাইলে সেখানে ‘কাপল থেরাপি’ কাজ করে না। সেই পরিবারও মনের বিরুদ্ধে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সন্তানকে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারেন না। এতেও কিন্তু সন্তান ভালো থাকছে না। সে ক্ষেত্রে সন্তানকে এমন একটা পারিবারিক পরিবেশ দিতে হবে, যেন মা-বাবার সেপারেশনকে সে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে জীবনেরই একটা স্বাভাবিক অংশ মনে করে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিবারের এই ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ডিপ্রেশন অতিরিক্ত মানসিক সমস্যায় পরিণত হলে কাউন্সেলিং, সুনির্দিষ্ট সময় নিয়ে চিকিৎসা করালে অল্পতেই ঠিক হয়ে যায়।
তা ছাড়া এই ধরনের রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। তবে পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তা আরও তীব্র হয়। পারিবারিক অশান্তি তার একটি বড় কারণ। আবার এই রোগ জন্মগতভাবে হয় এটা না। আশপাশের পরিবেশ এই হতাশার কারণ হতে পারে। যেহেতু সানজানার পারিবারিক অশান্তি তীব্র ছিল এবং বাবাই তাকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে তার এই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে।
তবে এর জন্য সময়মতো বোঝাটাও জরুরি। তাদের সময় দিতে হবে, মনের অবস্থা পরিবর্তন হলো কি না, আচরণে পরিবর্তন হলো কি না বুঝতে হবে। তাই বারবারই পরিবারের ভূমিকার কথাই উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘কেউ ডিপ্রেশনে চলে গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য প্রথমে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। শেয়ার করার সুযোগ দিতে হবে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে তাদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
প্রতিটি দেশেই মানুষ যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত সেটাতে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। এখানে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটো দিকই দেখা যায়। ইতিবাচক দিকের কথা বলতে গেলে মানুষ যেহেতু ঘরে থাকছে, এতে পরিবারের সদস্যদের বেশি সময় দিতে পারছে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য বাড়ছে। অনেকেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ অনেক বেশি করে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে এবং সেটা মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের মনের নানা দিক পরিবর্তন হচ্ছে। কঠোরতা, অমানবিকতা, হিংসাত্মক মনোভাব, অসততা এসব থেকে বেড়িয়ে আসার প্রয়াস তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকবে।
আরেকটি বিষয় হলো- সঠিক পরিচর্যা ও অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের উদাসীনতার জন্য শিশুরা সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। তাই তাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য বাবা-মায়ের যত্ন ও সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জনাব তৌহিদুল হক বলেন, ‘শিশুর শৈশবকালীন পরিচর্যা অর্থাৎ তাকে যেভাবে বড় করা হয় তার ওপর তার ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে তার সামাজিক পরিপক্বতা ও মানসিক সুস্থতার বিষয়ে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখা খুব জরুরি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবিব বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিবার হলো প্রথম মাধ্যম। আমাদের জীবনে দীর্ঘ একটি প্রভাব ফেলে আমাদের পরিবার এবং সমাজ। আর চারপাশের এই পরিবেশের ওপরই মনের ওপর প্রভাব কেমন হবে সেটি নির্ভর করে।
তিনি বলেন, আমরা হয়তো অর্থনৈতিক দায়িত্বটা পালন করি। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের মানসিক বিকাশ, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুন্দর একটি সামাজিক পরিবেশ দেয়া। সেই জায়গাগুলোতে আমরা খুব বেশি নজর দিই না। যার ফলে তারা একাকীত্ব অনুভব করে এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়।
অনেক মা-বাবাই টেকনোলজির ওপর সন্তানকে নির্ভরশীল করে ফেলেন। তারা ভাবেন মোবাইল, ল্যাপটপ এসব পেলে হয়তো তারা ভালো থাকবে। কিন্তু এতে তাদের মানসিক বিকাশ কখনোই সঠিকভাবে হয় না। যেসব রিলেশনশিপ মা-বাবা চেষ্টা করেও ঠিক করতে পারেন না, তার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হয় ডিভোর্স। কিন্তু এই প্রভাব যেন সন্তানের ওপর না পড়ে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এটা আরও দশটা স্বাভাবিক ঘটনার মতোই, এভাবে যদি একটা সন্তান বুঝতে শেখে, তাহলে তার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবগুলো পড়বে না।
কারণ তা থেকে এ রকম আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসতে পারে। তাই এর থেকে বের হওয়ার বড় উপায় সচেতনতা এবং পারিবারিক বন্ধন।
ছবি : প্রতীকী ছবিটি তুলেছেন সুদীপ্ত সালাম।
বিজয়ের এই মাসে ফ্যাশন হাউসগুলোর আয়োজনে থাকে ভিন্নতা। বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইন আর লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্য দিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলো বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশীয় কাপড় দিয়ে তৈরি করেছে শাড়ি, থ্রি-পিস, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের পোশাক।
পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে নিজস্ব উইভিংয়ে করা ডিজাইন, টাই অ্যান্ড ডাই, স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, অ্যাপলিক, অ্যামব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন মাধ্যম। কারও পোশাকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মানচিত্র, কারোর নকশায় প্রাধান্য পেয়েছে জাতীয় পতাকা, কোনোটায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নানা ছবি, লেখা, কবিতার লাইন ও জাতীয় ফুল। অর্থাৎ বিজয় উৎসবের বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়েছে বিজয় দিবসের পোশাকগুলোতে। সাতকাহনের আজকের মূল প্রতিবেদনে রইল তারই খোঁজখবর।
বিশ্বরঙ
দেশের স্বাধীনতার গৌরব এবং সৃজনশীল শিল্পের স্বাধীনতা এ দুইয়ের প্রতি রয়েছে বিশ্বরঙ-এর বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ। দেশীয় সব উৎসব-পার্বণে ফ্যাশন হাউস ‘বিশ্বরঙ’-এর থাকে বিশেষ বিশেষ আয়োজন। ‘বিশ্বরঙ’-এর ফ্যাশনের মূল ভাবনা গড়ে উঠেছে দেশীয় আত্মপরিচয়কে ঘিরে। বিজয় দিবসের পোশাকগুলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্বরঙ-এর রয়েছে লাল-সবুজের বিশেষ আয়োজন, দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে পোশাকের নকশায়। টি-শার্টে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকার গ্রাফিক্যাল ফর্মের নান্দনিক উপস্থাপনায় টাইফোগ্রাফি, ক্যালিওগ্রাফির সমন্বয়। শাড়ির আঁচল যেন একটি সবুজ জমিনের মাঝে টকটকে লাল সূর্যে থাকছে দেশাত্ববোধক গানের টাইফোগ্রাফি। দেশীয় রং, দেশীয় কাপড় এ আয়োজনের মূল উপাদান।
এ ছাড়া প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার পরিকল্পনায় ‘যাপিত জীবনে লাল-সবুজের প্রভাব’ শিরোনামে নির্মিত হয়েছে ফ্যাশন ভিডিও। ভিডিওতে প্রকাশ পেয়েছে লাল-সবুজ রঙ কীভাবে আমাদের যাপিত জীবনে প্রভাব ফেলে। আমাদের নাগরিক সময়ের যাপিত জীবনের প্রেমময়তায়, সুখে-দুঃখে, ভালোবাসায়, দেশমাতৃকার আরাধনায় লাল-সবুজের প্রভাব আমাদের মননে, সময়ে... ।
শীতের আগমনে পোশাকগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি ও খাদি কাপড়। ‘বিশ্বরঙ’-এর শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, উত্তরীয়, মগ ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ সংবলিত লেখা ও লাল-সবুজ রঙের মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশীয় ভাবনা। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুসঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, এপ্লিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদি।
‘বিশ্বরঙ’-এর বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজনে বিশেষভাবে থাকছে ‘বাংলাদেশ’ লেখা সংবলিত টি-শার্ট। শুধু বিজয়ের মাসেই নয়, বরং সারা বছরই লাল-সবুজ হতে পারে ফ্যাশন সচেতনদের ফ্যাশন ভাবনা, দেশপ্রেমী মনের পরিচয়।
বিজয়ের এই ডিসেম্বর মাসজুড়ে ‘লাল-সবুজের উৎসব’ চলছে মাসব্যাপী বিশ্বরঙ-এর সব শোরুম এবং অনলাইনে। পোশাক সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে পারেন ‘বিশ্বরঙ’-এর ই-কমার্স সাইট এবং ফেসবুক পেইজে।
অঞ্জন’স
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত মহান বিজয় দিবস আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। প্রত্যেক বাংলাদেশি এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকে। এই উদযাপনকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করতে অঞ্জন’স প্রতি বছর পোশাকের বিশেষ আয়োজন করে থাকে। এবারের বিজয় দিবসের পোশাকগুলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙ লাল ও সবুজ রং দিয়ে সাজানো হয়েছে। মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা ও বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক নকশা। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না, ফতুয়া, টি-শার্ট থাকছে এবারের আয়োজনে। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের পোশাকও থাকছে এবারের এই বিজয় দিবস আয়োজনে। নতুন এই ডিজাইনের পোশাকগুলো অঞ্জন’সের সব শোরুম ও অনলাইন স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।
রঙ বাংলাদেশ
দেশের স্বনামধন্য ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর এবারের বিজয় উৎসব আয়োজন পোশাকে বিজয়ের ঐতিহ্য। পোশাকের ডিজাইনে রয়েছে দেশের প্রথম জাতীয় পতাকার ছাপ, বাংলাদেশের মুদ্রা ও জিওমেট্রিক থিম। লাল-সবুজ কালার কম্বিনেশনে পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে বিজয় উল্লাসের ছাপ। বিজয় উৎসবের পোশাক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, কামিজ, টিউনিক, উত্তরীও এবং ব্যান্ডেনা, যা ছোট-বড় সবার জন্য সমানভাবে মানানসই।
দেশে এবং দেশের বাইরে পজিটিভ বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাওয়ার প্রত্যাশায় গড়া ‘আমার বাংলাদেশ’ সাব-ব্র্যান্ডের অধীনে তৈরি হয়েছে সব সামগ্রী। শুধু বড়দেরই নয়, প্রতিটি উপলক্ষে ছোটদের পোশাককে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে বলেই বাচ্চাদের সংগ্রহও হয় বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
রয়েছে পরিবারের সবার জন্য একই ধরনের ম্যাচিং পোশাক। বাবা-মা, মা-মেয়ে, বাবা-ছেলে, এমনকি পরিবারের সবাই একই থিমের পোশাক পরে উদযাপন করতে পারবে এবারের বিজয় উৎসব।
রঙ বাংলাদেশের ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব আউটলেটেই পাওয়া যাচ্ছে বিজয় উৎসবের আয়োজন। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও অর্ডার করা যাবে পোশাকগুলো।
কে-ক্র্যাফট
বিজয়ের আবেগ ছড়িয়ে দিতে প্রতি বিজয়েই থাকে কে ক্র্যাফটের বিশেষ আয়োজন, যা লাল-সবুজে উজ্জীবিত। বিজয় দিবসের এ দিনটি কাটুক না লাল-সবুজের পোশাকে।
সময়, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক ভাবনায় এই দিনে মেয়েদের প্রধান সঙ্গী হতে পারে লাল-সবুজের শাড়ি। এ ছাড়া বেছে নিতে পারেন আরামদায়ক সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি কিংবা ভিন্ন কোনো প্যাটার্নের টপ বা টিউনিক। শীতে উষ্ণতার প্রয়োজনে অন্য কোনো রঙের পোশাকে জড়িয়ে নিতে পারেন লাল-সবুজের শাল।
প্রতি বছরের মতোই ছেলেদের পোশাকে থাকছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, শাল, কটি, মাফলার। বিজয়ের ফ্যাশনে লাল অথবা সবুজ রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে কটি বেছে নিতে পারেন চমৎকার সব সংগ্রহ থেকে। শিশুদের জন্য রয়েছে নানা পোশাকের আয়োজন এবং বরাবরের মতোই থাকছে যুগল ও পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য উপযোগী পোশাক।
কে-ক্র্যাফটের এবারের বিজয়-২৩ আয়োজন করা হয়েছে প্রধানত রাগ, ডুডলিং, জিওমেট্রিক, জামদানি, ট্যাডিশনালসহ নানা মোটিফের অনুপ্রেরণায়। এ ছাড়া থাকছে বাংলাদেশের পতাকা এবং মানচিত্র নিয়ে করা নানা পোশাক। কটন, ডিজাইন্ড কটন, কোটা কটন, লিনেন, নিট ও তাঁতের মতো আরামদায়ক ফ্যাব্রিকে তৈরি পোশাকগুলোতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ ও অ্যামব্রয়ডারি করা হয়েছে। রঙ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে গ্রিন, বোটল গ্রিন, ফরেস্ট গ্রিন, পেইল গ্রিন, রেড, অরেঞ্জ, অফ-হোয়াইট । তবে অন্যান্য রঙের সমন্বয়ও থাকছে। বিজয়ের ভাবনায় লাল-সবুজের পোশাক ছাড়াও নানা রকম স্যুভেনির ও উপহার সামগ্রীও থাকবে। কে-ক্র্যাফটের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনাসহ সব আউটলেট ছাড়াও অনলাইন শপ থেকে বিজয়ের পোশাক কেনা যাবে।
সাদাকালো
বিজয়ের ৫২ বছরে সাদাকালো’র এবারের থিম ‘অপরাজেয় বাংলা’। মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদের নির্মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যটির নামকরণ করেছিলেন মুক্তিযাদ্ধা ও সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আক্রমণে পাক বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের এই অংশগ্রহণের প্রতীকী চিহ্নই ‘অপরাজেয় বাংলা’। সাদাকালো অপরাজেয় সব স্তরের মানুষের এই আত্মদানকে সম্মান জানাতে এবারের বিজয় দিবসের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘অপরাজেয় বাংলা’।
এ ছাড়া শাড়ি, পাঞ্জাবি ও কামিজের বিভিন্ন নকশায় ফুটে উঠেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে রচিত গান ‘গোবিন্দ হালদার’-এর রচয়িত ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’-এর বিভিন্ন লাইন। সাদাকালো-এর ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব আউটলেটেই পাওয়া যাবে চমৎকার এই বিজয় সমারোহ। আউটলেট ছাড়াও কেনাকাটার সহজ উপায় প্রতিষ্ঠানটির ই-কমার্স সাইট ও ফেসবুক পেজে পাওয়া যাবে বিজয় আয়োজনের সব সংগ্রহ, সঙ্গে এবার অনলাইন অর্ডারে থাকছে বিশেষ অফার।
বাংলাদেশের ৫ম বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল ঢাকা শহরের ‘রিকশা ও রিকশাচিত্র’। গতকাল (৬ ডিসেম্বর) বতসোয়ানার উত্তর-পূর্ব চোবে ডিস্ট্রিক এর কাসান শহরে ১৮তম ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর আন্তঃসরকারী কমিটির অধিবেশনে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২:৫৪ মিনিটে এই ঘোষণা করা হয়। ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগ কর্তৃক সর্বশেষ ২০১৭ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি বুনন কৌশল-এর স্বীকৃতির পর দীর্ঘ ৫ বছর পর এ অর্জন।
মূলত বিশ্বের বিভিন্ন অধরা বা স্পর্শতীত আর্ট (intangible art) বা কৌশলকে সুরক্ষার জন্য এ শিল্পকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সারা বিশ্বের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কোর ২০০৩ সালে কনভেনশন উপর ভিত্তি করে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের বিশ্ব তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিবছর ৪-৯ ডিসেম্বর ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর আন্তঃসরকারী কমিটির চূডান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সভাটিতে বাংলদেশের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা ও প্রথম সচিব ওয়ালিদ বিন কাশেম।
গত বছর নভেম্বর মাসের শেষদিকে ‘Rickshaws and Rickshaw Painting in Dhaka’ ঢাকা শহরের রিকশা ও রিকশাচিত্র উপর একটি চূড়ান্ত মনোনয়ন ফাইল ইউনেস্কোর ইনটেনজিবল কালচারার হেরিটেজ বিভাগে প্রেরণ করা হয়। ইউনেস্কোর নিয়মানুযায়ী রাষ্টীয় পক্ষ হিসেবে সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হয়ে বাংলা একাডেমি এ ফাইল অগ্রায়িত করা হয়েছিল। যদিও এর শুরুটা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১৮ সালের ইউনেস্কোর আন্তঃসরকারী কমিটির ১৩তম অধিবেশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রিকশা ও রিকশাচিত্রের ফাইলটি সংশোধন ও তথ্য হালনাগাদ করার উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে আনা হয় এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েক দফা সংশোধনের পর চলতি বছরের প্রথমে এ উপাদানটি ইউনেস্কোর ২০০৩ কনভেনশন-এর আর্টিকেল ১২-এর অত্যাবশকীয় শর্তানুযায়ী বাংলাদেশের বিমূর্ত সংস্কৃতির অনলাইনভিত্তিক জাতীয় ইনভেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধিত সংস্করণ চূড়ান্তভাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির জন্য প্রেরণ করা হয়। এ স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে রিকশা চিত্রের দেশ হিসেবে আরেকবার বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল হলো বাংলাদেশের নাম। ঢাকা শহরের রিকশা ও রিকশাচিত্র ঐতিহ্যগত কারুশিল্প উৎপাদনে জ্ঞানও দক্ষতা বা Traditional craftsmanship ক্যাটাগরিতে চলমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর হিসেবে এই স্বীকৃতি মিলেছে। ইউনেস্কো থেকে প্রতিবছর ৫টি ক্যাটাগরিতে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর উপরবিশ্বের ঐতিহ্যরঅংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে— মৌখিক ঐতিহ্য বা ওরাল ট্রেডিশনাল অ্যান্ড এক্সপ্রেশনস (oral tradition and expressions), পরিবেশনা শিল্প বা পারফরমিং আর্টস (performing arts), সামাজিক অনুশীলন, আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব অনুষ্ঠান বা সোসাল প্র্যাকট্রিস (social practice), রিচুয়ালস অ্যান্ড ফেসটিভস ইভেন্ট (ritual and festive event), প্রকৃতি এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞান ও অনুশীলন বা নলেজ অ্যান্ড প্র্যাকটিস কনর্সানিং ন্যাচার অ্যান্ড ইউনির্ভাস (knowledge and practice concerning nature and universe) এবং ঐতিহ্যগত কারুশিল্প উৎপাদন করার জ্ঞান ও দক্ষতা বা ট্র্যাডিশনাল ক্রাফটম্যানশিপ (traditional craftsmanship)। এগুলো সাধারণত আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত।
বাংলাদেশে রয়েছে এ সকল বিমূর্ত সাংস্কৃতিক উপাদানের হাজারো ভান্ডার। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, তাই বাংলাদেশ বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (আইসিএইচ)-এর সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কোর ২০০৩ কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে। ইতিমধ্যে আমাদের বাউল গান (২০০৮), ঐতিহ্যবাহী জামদানি বুনন শিল্প (২০১৩), পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), সিলেট অঞ্চলের শীতলপাটি বুনন শিল্প (২০১৭) এবং সর্বশেষ যুক্ত হলো ঢাকা শহরের রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর প্রতিনিধিত্বমূলক (Representative List of the Intangible Cultural Heritage of Humanity) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
এ রিকশাচিত্র বাংলার শহুরে লোকচিত্রকলার অন্যতম শৌখিন শিল্পকলা। রিকশাকে সুসজ্জিত করে তোলার উদ্দেশ্যে রিকশাচিত্র বা পেইন্টিং করা হয়ে থাকে। রিকশার প্রায় প্রতিটি অংশই আর্কষণীয় ও রঙিন করে তোলার জন্য চিত্রায়িত করে তোলা হয়। এর মধ্যে ব্যাক প্লেট বা পেছনের আয়তাকার টিনেরপাত/বোর্ড থেকে শুরু করে গদি বা সিট, সিটের পাশের অংশ, পেছনের অংশ, পট্টি, হুড, হুডের উপরের অংশ, চালকের বসার সিট, স্টিংয়ারিং-এর সামনের অংশ ইত্যাদি সব অংশ জুড়ে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ও ঝালর, ঘন্টা, ফুলদানি নানাবিধ সামগ্রী দিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। তাই ইউনেস্কোর ঐতিহ্যর তালিকায় রিকশাসহ রিকশাচিত্র শিল্প স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরকে বলা হয় রিকশার শহর। বর্তমানে রিকশা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সহজলভ্য যাত্রী প্রিয় বাহন। শহরময় রিকশাগুলো চলমান জীবন্ত চিত্রপ্রদর্শনীর মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিকশা পেইন্টাররা তাদের নিজস্ব শিল্পশৈলী, উপস্থাপন রীতি ও স্বকীয় স্টাইলে একটি সম্পূর্ণ রিকশাকে রঙিন করে তোলে। এই শিল্প অপ্রতিষ্ঠানিক শিল্পীদের মাধ্যমে বিকাশিত হয়েছে। রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে চিত্রকররা তাদের ভালো লাগা বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরেন। রিকশা পেইন্টিং-এর বহুল ব্যবহৃত চিত্র গুলো হচ্ছে বোরাক, স্বাস্থ্যবান গাভী, মোনাজাতরত শিশু, পশু-পাখি, ফুল-লতাপাতা, বিভিন্ন নায়ক-নায়িকা, সিনেমার দৃশ্য, এছাড়াও বিভিন্ন বিখ্যাত স্থাপত্য যেমন তাজমহল, সংসদভবনসহ নানা সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়বার্তা ও রিকশাআর্টের অংশ। এ শিল্পকর্মটি তার নিজম্ব শিল্পশৈলী, স্বকীয়তা ও বিষয়বস্তুর কারণে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশী শিল্প প্রেমীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। সাধারণত গুরু-শিষ্যের মাধ্যমে রিকশাচিত্রায়ন বিদ্যা প্রসারিত হয়ে থাকে। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে লিভিং হেরিটেজ (living heritage) বা চলমান ঐতিহ্য। এসব চলমান ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যর তালিকায় সুযোগ রয়েছে যা যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে রাষ্ট্রপক্ষ হয়ে। তবে এ মনোনয়ন ফাইলটি বা প্রস্তাবটি ৩১ মার্চের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রেরণ করতে হবে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ মনোনয়ন ফাইল প্রেরণ করা হয়ে থাকে। ইউনেস্কো কর্তৃক নির্ধারিত বিমূর্ত সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ফর্মে যেকোনো চলমান ঐতিহ্যর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্মতিক্রমে প্রয়োজনীয় তথ্য সহকারে আবেদন করতে পারে। এছাড়াও আর্জেন্ট সেইফগার্ডিং (urgent safeguarding) বা জরুরী সুরক্ষার জন্য পৃথক ফর্ম রয়েছে যা বিলুপ্তপ্রায় বিমূর্ত সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যর জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পাঁচটি বিমূর্ত সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যই চলমান ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইউনেস্কোর ২০০৩-এর কনভেনশনের আর্টিকেল ১১ ও ১২ অনুযায়ী বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত উপাদগুলোর সুরক্ষা করা ও এর তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই এদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলো চিহ্নিত করে সুরক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে ‘heritagehub.gov.bd’ নামে একটি অনলাইনভিত্তিক জাতীয় ইনভেন্টরি ও একটি মোবাইল এ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে ঘরে বসেই নিজ জেলার বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জাতীয় ইরভেন্টরির অর্ন্তভুক্ত করে তা সুরক্ষার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতির জন্য অত্যাবশকীয় শর্তসমূহের একটি। বিগত অনেক মনোনয়ন ফাইল শুধুমাত্র একটি হালনাগাদকরণ জাতীয় ইনভেন্টরির অনুপস্থিতির কারণে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছিল।
ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগ থেকে স্বীকৃতির ফলে নতুন করে রিকশা ও রিকশাচিত্র শিল্প সুরক্ষার পথ প্রসারিত হলো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ স্বীকৃতির ফলে রিকশাচিত্রকররা উৎসাহের সাথে কাজ করে যাবে এবং এ শিল্পকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে কাছে ছড়িয়ে দিবে। সারাবিশ্বে রিকশাচিত্র বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি সরকারী ও বেসরকারী স্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নীতিমালা গ্রহণের উদ্যোগী হলে এ শিল্পসহ বাংলাদেশের অন্যান্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর সঠিকভাবে সুরক্ষার পথ সুগম হবে।
লেখক: কীপার (জনশিক্ষা বিভাগ), বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর
অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এমন একটি রোগ, যা হাড়ের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে রক্ত সরবরাহ বন্ধের ফলে হয়। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে হাড়ের টিস্যু মারা যায় এবং হাড় ভেঙে যায়। যখন কোনো জয়েন্ট যেমন হিপ জয়েন্টের কাছাকাছি রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়, তখন জয়েন্টের পৃষ্ঠটি ভেঙে যেতে পারে। এই অবস্থা যেকোনো হাড়ে হতে পারে, এটি সাধারণত লম্বা হাড়ের শেষ মাথায় হয়। সাধারণত ১টি হাড়, একই সময়ে অনেক হাড় অথবা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাড়কে ক্ষয়গ্রস্ত করে।
কোথায় কোথায় নেক্রোসিস হতে পারে:
অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের কারণ:
রোগের লক্ষণ:
রোগ নির্ণয়:
চিকিৎসা:
এই রোগের চিকিৎসা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেম: বয়স, রোগের পর্যায়, হাড়ের ক্ষতির পরিমাণ।
নন সার্জিক্যাল চিকিৎসা:
আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক, কিছু ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ওষুধ, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন ও বিশ্রাম কার্যকর।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা:
জটিলতা:
চিকিৎসা করা না হলে এই রোগ ধীরে ধীরে খারাপ রূপ ধারণ করে, অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ফলে হাড়ের মসৃণ আকৃতি নষ্ট হয়। ফলে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। ব্যথা বা অন্য কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালট্যান্ট
ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।
এসে গেছে শীত। চারদিকে শীতের আমেজ ছড়িয়ে যাচ্ছে জোর কদমে। এখনো পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডা না লাগলেও গরম পোশাক পরার মতো শীতল বাতাস লেগে যাচ্ছে শরীরে। যারা স্টাইলিশ পোশাক পরতে চান, তাদের জন্য এ সময় থেকে শুরু করে পুরো শীত জুড়েই উপযোগী সময়। চমত্কার সব স্টাইলিশ পোশাক হতে পারে আপনার এ সময়ের সঙ্গী। শুধু পোশাক নয় এসময় পোশাকের সাথে মিল রেখে বদল করতে পারেন অন্যান্য সাজসজ্জাও।
শীতকালে চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার বা যত ধরনের ভারী পোশাক সবই পরা যায়। সব ধরনের পোশাক পরা গেলেও মেয়েরা শীতে মেরুন অথবা কালো রঙের পোশাক পরতে পারেন। তরুণীরা এখন বেশি জ্যাকেট পছন্দ করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে ডেনিম, ফ্লানেল, কর্ড, উল, মোটা ক্যানভাসের কাপড়, প্যারাসুটের কাপড় এবং চামড়ার তৈরি জ্যাকেট। ভারী কাপড়ের লম্বা পোশাকও আরামদায়ক শীতে। ভেলভেটের কোটি জড়িয়ে নিলে শীত এবং ফ্যাশন দুইদিকই বজায় থাকবে। অন্যদিকে পার্টি কিংবা দাওয়াতে গেলে ভেলভেটের ফুলহাতা বা হাতাকাটা হলে ওপরে আড়াআড়ি কিংবা লম্বা করে নরম বা পশমি চাদর জড়িয়ে নিতে পারেন।
আঁটসাঁট জিনস থেকে শুরু করে ঢোলা জিনস, সবই চলছে মেয়েদের হাল ফ্যাশনে। ব্যাগি, স্ট্রেট কাট, বুটকাট লেগ, ফ্লেয়ার জিনস হাল ফ্যাশনে পছন্দ করছেন প্রায় সব বয়সী নারীরা। মোটা কাপড়ের থ্রি পিসের সঙ্গে পরতে পারেন জেগিংস। এর সঙ্গে গায়ে জড়িয়ে নেওয়া যায় পাতলা চাদর।
শীতে অফিসে ফর্মাল ভাবে বেনী, পনিটেইল বা চুল হালকা ফুলিয়ে বাধা যেতে পারে। পার্টি হলে চুল খোলা রাখতে পারেন বা হালকা ফুলিয়ে স্টাইল করতে পারেন। বিয়ের অনুষ্ঠান হলে মানানসই খোপা করতে পারেন।
শীতকালে যথাসম্ভব পা ঢাকা জুতা পরুন। এতে করে পা ফাটার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং পায়ে ঠাণ্ডাও লাগবে না। মেয়েরা কেডস, পার্টি স্যু, অফিসে নর্মাল স্যু বা পোশাক বুঝে বুট বা উঁচু হিলের সু পরতে পারেন।
শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কেরানীগঞ্জের সারি ঘাটের সারি সারি সাদা কাশফুল, যতদুর চোখ যায় শুধু সাদা আর সাদা। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে মাটিতে লুটে পড়েছে সাদা মেঘের ভেলা। বিকেলের নীল আকাশে সাদা মেঘ আর সারি ঘাটের সাদা কাশফুল যেন এখানে মিলে মিশে একাকার।
ব্যাস্ত নগরী ঢাকার সব চেয়ে কাছের উপজেলা কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের সারিঘট সারা বছর ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এখানে বর্ষা আর শরতে ভিন্ন মাত্র যোগ করে প্রকৃতি। বর্ষাকালে স্বচ্ছ থৈ থৈ পানিতে সারি সারি নৌকা আর শরতে সাদা কাশফুলের দোলা যে কারো মন ছুয়ে যাবে। সারি ঘাট প্রথম দেখায় যে কাউকে প্রেমে ফেলবে, ঢাকার ভেতর এত কাশফুল হয়তো দেখেওনি কেউ আগে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কাশফুলের সাদার শুভ্রতায় যে কারো মন হারিয়ে যাবে অজানায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আইনতা এলাকার রাস্তার পাশে কৃত্রিম লেক, লেকের শোভা বাড়াচ্ছে নানা রঙের অর্ধশতাধিক ছোট নৌকা, আর লেকের উপর ঝুলন্ত সেতু আপনাকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু না দেখার কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। তবে লেকের সৌন্দর্য আপনাকে ততটা মুহিত করবে না, যতটা করবে সাদা কাশফুল।
সারি ঘাটে পৌঁছা মাত্রই বাতাসে উড়ে আসা কাশফুলের পাপড়ি আপনাকে স্বাগত জানাবে, আর ফুলের সাদা আবাহ আপনাকে এতটাই আকর্ষণ করবে যে, গাড়ি থেকে নেমে কাশবনে প্রবেশের ২ মিনিটের ঘুরা পথ অনেক লম্বা মনে হবে!
শরৎকালে কাশ ফুলকে কেন্দ্র করে সারি ঘাটে বসে গ্রাম্য মেলা। কাশফুল, মেলায় বসা অস্থায়ী নাগর দোলা আর বাহারি সাজে সজ্জিত সুন্দরী রমণীর হাত ধরে চলা যুবকের মুক্ত বাকে সারি ঘাট হয়ে উঠে এক আনন্দপুরী।
তাই শহুরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে একটু প্রাকৃতির ছোঁয়া ও সবুজঘেরা পরিবেশের পাশাপাশি নৌকাভ্রমণে প্রতিদিন এখানে আসছেন শত শত মনুষ।
তবে চিন্তারও শেষ নেই ঘুরতে আসা পর্যটকদের, তাদের চিন্তা সেদিন আর হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন হারিয়ে যাবে সারি ঘাটের সারি সারি সাদা ফুল। সারি ঘাটের স্বচ্ছ পানিতে মাছের পরিবর্তে ভেসে বেড়াবে ময়লার স্তুপ।
যাত্রাবাড়ী থেকে ঘুরতে আসা মিম জানায়, মা বোন আর বান্ধবী মিলে সারি ঘাটের কাশফুল দেখতে এসেছেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার সুবাদে এ ব্যাপারে তাদের জানা শুনা ছিল, তবে তাদের মা আসতে চাচ্ছিলেন না এখানে। তবে এখানে আসার পর সে মা’ই যেন সবচেয়ে বেশি খুশি।
পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে সজল এসেছেন সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি জানান, সারি ঘাটের সুনাম সুনেছি অনেক। তবে এখানে এসে দেখি সারি ঘাট কল্পনার চেয়ে সুন্দর।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মৌসুমি এসেছেন ফটোগ্রাফার নিয়ে ফটোসেশন করতে। কাশবনে নানা ভঙ্গিতে নিচ্ছিলেন ছবি। তাকে সারি ঘাট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, জায়গাটির কথা বহু শুনেছি, টিভিতে, সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি। তবে এখন এসে দেখি এটা আরও সুন্দর।
স্থানীয় যুবক সায়মন চৌধুরী জানান, রাজধানীর আশেপাশে অনেক কাশবন আছে তবে এত বড় কাশবন কোথাও নেই। তা ছাড়া এই এলাকাটি শহরের খুব কাছে এবং নিরাপদ হওয়ায় লোক সমাগম বেশি হয়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার চিরায়ত রুপ। কেরানীগঞ্জেও দিনদিন বাড়ছে মানুষ, কমছে আবাদি অনাবাদি জমি, তাই যেখানেই মানুষ প্রাকৃতিক পরিবাশ পাচ্ছে তাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তা ছাড়া এলাকাটি শহরের কাছে এবং নিরাপদ জোন হওয়ায় দিনদিন লোকসমাগম বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এলাকাটিতে বাড়তি নজরদারির কথাও জানান এ কর্মকর্তা।
চিকিৎসা সেবার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বড় শহরগুলোতে ভিড় করার পাশাপাশি এখন বিদেশেও যাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। ভিনদেশে সেবা নিতে গিয়ে তাদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। তা থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে যাচ্ছে ডক্টরস লিংক।
এই মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম চঞ্চল। ১ অক্টোবর ছিল ডক্টরস লিংকের (www.doctorlink.in) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এইদিনে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়।
আরিফুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে যাচ্ছেন। এই সেবা নিতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। যেমন পাসপোর্ট করা, চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ভিসা, বিমানের টিকিট, বিমানবন্দরে যাতায়াত, হোটেল বুকিং, দোভাষী বা গাইড, অ্যাম্বুলেন্সসেবা, চিকিৎসা নিয়ে ফেরত আসার পর বা আগে চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কনসালটেশন করাসহ অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যার সমাধান করে সব সেবাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে ডক্টরস লিংক।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা, দেশে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য খাতে পরিসেবা প্রদান করেন তারা। এতে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ডিজিটাল হেলথ কেয়ার উন্নয়নে ভূমিকা, দেশের সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ডিজিটালাইজেশনেও কাজ করছি আমরা। নতুন সেবা হিসেবে হোম কেয়ার, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, হোম স্যাম্পল কালেকশন ও অনলাইন ফার্মেসির কাজও শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি রোগীকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা পেতে সহায়তা, ৩৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক হাসপাতালের ৮ হাজারের বেশি চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ভিডিও কন্সাল্টেশনে ডাক্তার দেখানোর সেবা দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বিদেশি হাসপাতালে ভিসা ইনভাইটেশন লেটার ও ভিসা সহায়তাও দিয়ে থাকে ডক্টরস লিংক।
আমাদের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। মুখের ভেতরে যদি নিয়মিত যত্ন না নেয়া হয় তা হলে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন- মাড়িতে ব্যথা, দাঁত ক্ষয়, দাঁতে পাথর জমা, মুখের ক্যানসার, দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। তাই দাঁতের সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্রাশ করা এবং ডেন্টিস্টের কাছে দাঁত চেকআপ করানোর পাশাপাশি ঠিক করতে হবে খাদ্যের তালিকাও। কারণ সব ধরনের খাবার দাঁতের জন্য উপকারী নয়। কিছু খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে, আবার কিছু খাবারে চিনি বেশি থাকে যার কারণে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। তাই এই খাবারগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি।
দাঁত ভালো রাখে যে খাবারগুলো
দাঁত ভালো রাখতে বেশকিছু খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন-
ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস যুক্ত লো-ফ্যাট চিজ, দুধ, দই, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি।
প্রোটিনযুক্ত খাবার ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারগুলো দাঁতের এনামেলের সুরক্ষা করে।
ফলমূল ও শাক-সবজিতে আছে পানি ও ফাইবার, যা মুখের লালা বা স্যালাইভা উৎপাদনে সাহায্য করে।
এনামেলের ক্ষয় হওয়া, দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা ধুয়ে যাওয়া এবং মুখে স্যালাইভা প্রোডাকশন প্রমোট করতে হেল্প করে পানি। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
দাঁতের ক্ষতি যে সব খাবারে
দাঁত সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব খাবারই দাঁতের জন্য ভালো নয়।
# কোমল পানীয়: কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এই চিনি শুধু শরীরের জন্যই নয়, দাঁতের জন্যও সমানভাবে ক্ষতিকর। বাজারে ডায়েট কোক নামে কিছু ড্রিংকস আছে। অনেকেই চিনি নেই ভেবে সেগুলো পান করেন। কিন্তু এই ড্রিংকসগুলোতে চিনির পরিবর্তে এর সাবস্টিটিউট ফসফোরিক ও সাইট্রিক এসিড থাকে। এই উপাদানগুলো দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। তাই দাঁতের সুস্থতায় যে কোনো ধরনের কোমল পানীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
# স্টার্চি ফুড : অনেকের বাড়িতেই সকালে নাশতার টেবিলে পাউরুটি থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে পাউরুটি খাওয়া দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। শুধু পাউরুটিই নয়- স্টার্চ আছে এমন যে কোনো খাবার, পাস্তা, আলু, ভাত সবই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই এই খাবারগুলো মিষ্টি না ভেবে রেগুলার ডায়েটে অ্যাড করেন। এই ভুলটাই আমরা করি। স্টার্চি ফুড দাঁতে স্টিকি হয়ে থাকে এবং এগুলো ব্যাকটেরিয়ার খুব ভালো সোর্স। ধীরে ধীরে এই ব্যাকটেরিয়াই দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। তাই স্টার্চি ফুড যখনই খাবেন, অবশ্যই পরিমাণমতো খাবেন এবং খাওয়া শেষে দাঁত ব্রাশ করবেন। আর দাঁত সুস্থ রাখতে হলে এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমাতে হবে।
# চকলেট ও স্টিকি ফুড : বাচ্চাদের কাছে ক্যান্ডি ও চকলেট মানেই পছন্দের একটি খাবার। শুধু বাচ্চারাই নয়, বড়দের অনেকের কাছেও চকলেট বেশ প্রিয়। এই চকলেট ও ক্যান্ডিতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে দাঁতে দেখা দিতে পারে ক্যাভিটি। ফলাফল, দিনে দিনে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া। চকলেট খাওয়া শেষে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ বা কুলি করে ফেললে এই রিস্ক কিছুটা কমে যায়। কিন্তু ক্যান্ডি দাঁতের সঙ্গে স্টিকি হয়ে থাকে বলে সেটাই ক্ষতি করে বেশি। এ ছাড়া আরও কিছু স্টিকি ফুড যেমন- পিনাট বাটার, পটেটো চিপস দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে।
# অ্যালকোহল : অ্যালকোহল পান করার কারণে মুখ শুকিয়ে যায়। মুখ শুষ্ক থাকা মানে লালার পরিমাণ কমে যাওয়া। অথচ দাঁত ভালো রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লালা দাঁতে খাবার লেগে থাকতে দেয় না এবং খাবারের কণাকে ধুয়ে ফেলে। এমনকি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অন্যান্য প্রাথমিক লক্ষণগুলোকেও সারিয়ে তুলতে হেল্প করে লালা। তাই মুখ সব সময় হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ওরাল হাইড্রেশন সলিউশনও ব্যবহার করা জরুরি।
# কফি : মুখের ভেতরের স্যালাইভা প্রোডাকশনকে কমিয়ে দেয় কফি। আর স্যালাইভার অভাবে মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া কফি ব্যাকটেরিয়া গ্রো করতে হেল্প করে, সেই সঙ্গে কমে যায় দাঁতের এনামেল। ধীরে ধীরে দাঁতে তৈরি হয় ক্যাভিটি, সেনসিভিটি এবং শুরু হয় দাঁতের ক্ষয়।
সচেতনতা এবং কিছু কথা
সুন্দর দাঁত ও সুন্দর হাসি আমরা সবাই চাই। আর তাই দাঁতের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি এড়িয়ে চলুন ক্ষতিকর খাবার। মুখ বা দাঁতের কোনো সমস্যাই অবহেলা করবেন না। সমস্যা যতই ছোট হোক না কেন সেটা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : দন্ত বিশেষজ্ঞ,ম্যান্ডি ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল
উপহার দেওয়ার আনন্দকে দ্বিগুণ করতে নতুন কনসেপ্ট নিয়ে হাজির হয়েছে অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম কিউরেটো। পারসোনালাইজড গিফট বক্সের মাধ্যমে কিউরেটো সাধারণ মুহূর্তগুলোকে অসাধারণ স্মৃতিতে পরিণত করবে। কিউরেটেড উপহারের শিল্পকে চমৎকারভাবে চিন্তাশীল জীবনধারার সাথে মিলিয়েছে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ও আধুনিক গিফটিং প্ল্যাটফর্ম কিউরেটো। শুধু অনুষ্ঠানের সময়কালের বাইরেও এই উপহারের রেশ রয়ে যাবে দীর্ঘদিন।
বিভিন্ন উৎসব কিংবা বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে কিউরেটো’র পারসোনালাইজড গিফট বক্স তৈরি করে নেয়া যাবে। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বিশেষ কোনো দিবস, বিয়ে, কর্পোরেট কোনো অনুষ্ঠানে কিউরেটোর এসব গিফট বক্স তৈরি করে নেয়া যাবে। এমনকি প্রিয়জনের বিভিন্ন পছন্দের ভিত্তিতেও তৈরি করে নেয়া যাবে এই গিফট বক্স। যেমন কেউ যদি চা পছন্দ করেন, তার জন্য বিভিন্ন ধরনের চায়ের সংগ্রহ। কফি পছন্দ করলে কফি এমনকি কেউ যদি পাস্তা পছন্দ করেন তার জন্য পাস্তা ও পাস্তার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজানো যাবে গিফট বক্সটি।
কিউরেটো প্ল্যাটফর্মটিতে সব সময়ের জন্য রয়েছে, পার্টির জন্য ‘হাউজ ওয়ার্মিং’ কালেকশন, ‘পিংক আওয়ার’ সেট। ভালো কফি পছন্দ করেন এমন মানুষের জন্য আছে ‘কফি কনোইজার’ ও ‘কফি লাভার’স ডিলাইট’ নামে দুটি কালেকশন। চা-প্রেমীদের জন্য আছে ‘চা অ্যান্ড টা’ ও ‘টি টাইম ব্লিস’ কালেকশন দুটি। ‘টেস্ট অফ ইতালি’ ও ‘পাস্তা নাইট’ সিলেকশন দিচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ। ‘চকলেট ফন্ডি ফান’ কালেকশনে পাবেন বিভিন্ন ধরনের চকোলেট। যারা হাতে-কলমে কিছু করতে চান, তাদের জন্য থাকছে ‘ডিওয়াইআই পপসিকল কিট।’
এছাড়া করপোরেট ক্ষেত্রে কাস্টমাইজড উপহার দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে কিউরেটোতে। এতে সহকর্মীদের পছন্দ জেনে আপনার অনুভূতি কিউরেটেড উপহারের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবেন।
যেভাবে পাবেন কিউরেটোর কাস্টমাইজড গিফট বক্স
এই গিফট বক্স তৈরি করে নিতে আপনাকে যেতে কিউরেটোর www.curato.com.bd ওয়েবসাইটে। সেখানে গিয়ে আপনার পছন্দ কিংবা দিবস অনুযায়ী কী কী দিয়ে বক্স সাজাতে চান সেগুলো সিলেক্ট করবেন। এমনকি সেখানে আগে থেকে তৈরি করা কিছু গিফট বক্সও থাকে। চাইলে সেগুলোও নিতে পারবেন।
দাম
গিফট বক্সে কী কী নিতে চান সেগুলোর দাম ওয়েবসাইট থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। এমনকি আপনি কত টাকা থেকে কত টাকার মধ্যে বক্স তৈরি করে নিতে চান সেটিও সেখান থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন।
কোনো সাহিত্যের সম্ভাবনা অন্তর্নিহিত থাকে তার ভাষার মধ্যে। আর ভাষার প্রাণ সজীব থাকে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে। কিন্তু কোনো ভাষাকে বিস্তার লাভের জন্য বেশি প্রয়োজন সেই ভাষার অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রসঙ্গত বাংলা সাহিত্যের অর্থনৈতিক বাজার খুব ছোট কিন্তু এই ভাষার জনগোষ্ঠী বিশাল। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে এর অবস্থান সপ্তম। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বাংলায় কথা বলেন ২২ কোটির বেশি মানুষ। এই ছোট অর্থনৈতিক বাজারে লেখক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সহযোগীরা খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ জীবনযাপন করতে পারেন না। এই বিষয়টি বাংলা সাহিত্য সম্ভাবনার অন্যতম অন্তরায়। তবে বিশ্বাস করি, এই অন্তরায় আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাটিয়ে উঠবে।
বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছরের পুরোনো। চর্যাপদ আমাদের ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলা সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপে বিবর্তিত হয়। বাংলা ভাষালিপি ও ভাষার ব্যবহার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের ভাষা আন্দোলন বাংলাকে নতুন জীবন দান করেছে। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাও ভাষা বিস্তারে বড় সাফল্য এসেছে। সেই সঙ্গে ভাষাশহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করাও আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র কি সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষায় প্রচলিত হয় কিংবা সমাজের উচ্চবিত্তরা তাদের সন্তানদের কোন ভাষা শিক্ষায় বড় করেন। আমাদের উচ্চ আদালত কোন ভাষা দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের নাগরিক তৈরি না করে শুধু বিশ্বনাগরিক তৈরি করা করা কি ঠিক? এটিই এখন বড় প্রশ্ন?
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকের (গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স) তালিকায় বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ। আমরা জানি জ্ঞানই জীবনপ্রদীপ। জ্ঞান দ্বারাই লিখিত ও পঠিত হয় সাহিত্য। এ কারণে আমাদের জনসংখ্যা বেশি হলেও পাঠক সংখ্য কম। কিন্তু পাঠক সংখ্যা কম হলেও অন্যান্য ভাষার তুলানায় লেখক সংখ্যা কম নয়। বেশি বেশি লেখক সংখ্যার যেমন ভালো দিকও আছে তেমন মন্দ দিকও আছে। মন্দ দিক হলো প্রচুর পরিমাণ মানহীন বই প্রকাশিত হলে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে সাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই এই দিকটি এখন নতুন প্রজন্মকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ কী? এ প্রশ্ন কেবল সাহিত্যিক কিংবা পাঠকদের নয়, অধিকাংশ বাংলাভাষীর। কারণ, স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি শ্রেণি, বড় পরিসরে ইংরেজিতেই কথা বলে। তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি কিংবা সাহিত্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাতে করে দেশীয় সংস্কৃতির সংকট তৈরি হচ্ছে। একজন মানুষ একাধিক ভাষা শিখতে পারে এটা দোষের নয় বরং বিরাট গুণ বলা যেতে পারে, কিন্তু অন্য শিখতে গিয়ে যেন মাতৃভাষার অবজ্ঞা না হয় সেদিকেও খেয়াল করতে হবে। খেয়াল করতে হবে যেমন ব্যক্তিকে সেই সঙ্গে রাষ্ট্রকেও।
অনেক বাঙালি আছেন যারা ইংরেজিতে লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন বাঙালি তরুণী মেঘা মজুমদার। তার ‘আ বার্নিং’ নামের ৩২০ পাতার প্রথম উপন্যাসের প্রশংসা ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বা ‘দ্য নিউ ইয়র্কার-এর পাতায় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। বলা যেতে পারে দুই দশক আগে এমনই এক বাঙালি মেয়ে ঝুম্পা লাহিড়ীর গল্প সংকলন ‘ইন্টারপ্রেটর অব ম্যালাডিজ’-এর কথা। সেটাও ছিল লেখকের প্রথম বই। আর প্রকাশ মাত্রই সেই বই নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল পশ্চিমা দুনিয়ায়।
তাহমিমা আনামের অ্যা গোল্ডেন এজ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। এ ছাড়া তাহমিমা আনাম ‘দ্য গুড মুসলিম’ গ্রন্থের রচয়িতা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান ২০১৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো’ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে গ্রন্থটি সাহিত্যে জেমস ট্যাইট ব্ল্যাক প্রাইজ অর্জন করে। প্রথম বইয়ের জন্যই জিয়া হায়দার সমুজ্জ্বল প্রশংসা এবং অভিনন্দন লাভ করে, ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এর ভাষায় যা ‘আশ্চর্যজনকভাবে অর্জিত’। ২০০৩ সালে মনিকা আলীর ব্রিক লেন ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য ছোট তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ফায়েজা হাসানাতের প্রথম ছোটগল্প সংকলন দ্য বার্ড ক্যাচার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ-এ লিঙ্গ আকাঙ্ক্ষা, পারিবারিক ভালোবাসা এবং পরিচয় ও পরিবার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। শাজিয়া ওমরের ‘লাইক অ্যা ডায়মন্ড ইন দ্য স্কাই’ গ্রন্থে ঢাকার মাদকাসক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নেশাচ্ছন্ন ও ধোঁয়াশাময় জীবন পরিস্ফূটিত হয়েছে। রাশিদ আসকারী ইংরেজি ভাষায় গল্প লেখার মতো যথেষ্ট শৈল্পিক মেধার প্রদর্শন দেখিয়েছেন। তার ছোটগল্পের সংকলন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান অ্যান্ড আদার স্টোরিস (২০১১) ফরাসি ও হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কাজী আনিস আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’ বইটিও ইতোমধ্যে দারুণ সারা ফেলেছে। এভাবে অনেকের নাম বলা যেতে পারে যেমন, সাজিয়া ওমর, ফারাহ গজনবি, মাহমুদ রহমান, মারিয়া চৌধুরী, মুনিজ মজনুর, সাদ হোসেন, শর্বরী আহমেদ, শ্রাবন্তী নার্মিন আলি, জাভেদ জাহাঙ্গীর, আইমদী হোসেন, নুজহাত মান্নান, রুমানা সিদ্দিক, রুবানা হক, লীমান সোবহান, আজফার হোসেন, আদিব খান, নিয়াজ জামানসহ অনেক সাহিত্যিকের। এই বিষয়টি দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের লেখার বিষয়বস্তু জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে, শুধু ভাষার মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত দুঃখবোধে মাতৃভাষা ছেড়ে আবার ফিরে এসেছেন। অথচ তার অমর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ এখন পেঙ্গুইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত হয়েছে। কবিগুরু তার গীতাঞ্জলির অনুবাদ তো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এনে দিয়েছেন বিরল সম্মান। নীরদ সি চৌধুরী ইংরেজিতে আত্মজীবনী লিখেছেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা ও চর্চা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
সবচেয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ থেকে শুরু করে লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সোভিয়েত আমলে রুশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের ব্যাপক অংশের অনুবাদ হয়েছে।
সাম্প্রতিক এ ধারা অব্যাহত থাকায় গবেষকরা মনে করছেন, ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষার পর বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বের আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি এ ভাষার প্রসার ও চর্চা বেড়ে চলেছে।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বারের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য পৃথিবীর সব দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার নাম বাংলাদেশ। তাই নতুন প্রজন্মকে আশা হারালে চলবে না, বরং সমস্যা চিহ্নিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য-সংস্কৃতির জাগরণমূলক আন্দোলনে সেলিম আল দীনের ভূমিকা অপরিসীম। যেহেতু বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র, অতএব জাতিগত আত্মপরিচয় জরুরি। আর আত্মপরিচয় সৃষ্টিতে সেলিম আল দীনের কর্মগুলো পথের দিশারি। সেলিম আল দীন নাট্যকার হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও সাহিত্যের নানা শাখাতেই তার ছিল স্বচ্ছন্দ বিচরণ। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস রচনা করলেও নাটককেই তিনি বেশি আঁকড়ে ছিলেন। তার নাট্য-সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা মূলত এগিয়েছে উপনিবেশের জ্ঞানতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে বাঙালির হাজার বছরের জারিত রসের পরম্পরার আদর্শে।
কবিতায় রেঁবো-বোদলেয়ার দ্বারা বুদ্ধদেব, নাটকে প্রসিনিয়াম ধারা, উপন্যাসে ওয়াল্টার স্কট প্রভাবে বঙ্কিমের আদর্শ যে আধুনিকতার সূচনা করেছিল তা ছদ্মবেশে অনেকাংশেই গ্রাস করেছিল আমাদের অতীত। ইউরোপীয় জ্ঞানতত্ত্বের প্রভাব মাথার ওপর দোর্দণ্ড মার্তণ্ডের মতো হয়ে উঠছিল। ধীরে ধীরে দুশ বছরে বাংলা সাহিত্য হয়ে উঠেছিল ইউরোপীয় সাহিত্যের অনুকৃতি বা অন্ধ অনুকরণ। আধুনিকতার ধুয়া তুলে অনেকে ইউরোপীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুশাসন পালনেই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। বাঙালির সহস্র বছরের ধারাবাহিকতায় উৎপন্ন আমাদের নিজস্ব শিল্পরীতির সঙ্গে তা চিরবিচ্ছেদের পালা রচনা করল। সেলিম আল দীন বলতেন, ‘আধুনিকতার অর্থ আমার কাছে সর্বগ্রাহিতা ও সৃষ্টিশীল নির্বাচন।’ বোধের বিচরণ, মানবিক প্রকাশ ও উঁচুতর কল্পনা। ইউরোপীয় আঙ্গিকের অন্ধ অনুকরণ নয়। সে প্রেক্ষিতে সেলিম আল ঐতিহ্যের পথ বেয়ে পাঁচালি, কথকতা, মঙ্গলপালাকে ধরে আধুনিকতার পথে হেঁটেছেন।
সেলিম আল দীনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে একদিকে গবেষণা, শিক্ষকতা ও নাট্য, সাহিত্য রচনা নিয়ে সারাক্ষণ নিমগ্ন থাকতেন। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজীর সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা- মফিজ উদ্দিন আহমেদ। মাতা- ফিরোজা খাতুন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। সেলিম আল দীন তার শিল্পীনাম; সার্টিফিকেটের নাম মু. মঈনুদ্দিন। স্ত্রী বেগমজাদী মেহেরুন্নেছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলেও নানা জটিলতায় করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে স্নাতক ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কপিরাইটার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে বাংলা বিভাগে যোগদান, পরে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হিসেবে আমৃত্যু (মৃত্যু: ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮) কর্মরত ছিলেন। নাটক রচনা শুরু করেছিলেন ছাত্রাবস্থায়। টেলিভিশন নাটক, মঞ্চনাটক, চিত্রনাট্যকার, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ ও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার নাটকগুলো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত।
সেলিম আল দীন সাহিত্য চেতনার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো তিনি উপনিবেশ বিযুক্তিকরণের পথে হেঁটেছেন। ব্রিটিশ উপনিবেশ এ জাতিকে করেছিল শিকড়চ্যুত। উপনিবেশের ইতিহাস দেখিয়েছিল বাংলা নাটক শুরু হয়েছে ইউরোপীয় প্রেষণায়- লেবেদেফের মধ্য দিয়ে। তিনি এ ভ্রান্ত ইতিহাসের বিপরীতে ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলা নাটক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান ছিল। উপনিবেশের আকস্মিক সৃষ্ট নয়। তা ছিল নানা নামে, নানা রূপ-রীতিতে এ ভূখণ্ডের মানুষের শিল্পতৃষ্ণা নিবৃত্ত করেছে। প্রাচীন ভরতমুণির নাট্যশাস্ত্রেও এ বাংলা ভূখণ্ডে নাট্যচর্চার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। চর্যাপদের মধ্যে ‘নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী বুদ্ধ নাটকও বিষমা হই।’ প্রভৃতি গীতির মধ্য দিয়ে এ বাংলা নাটকের তথ্যই সুস্পষ্ট করে।
তিনি একে একে বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের পরম্পরার ধারায় এ সময় বসে নির্মাণ করলেন হাজার বছরের জীবন সংস্কৃতির সৌধ। যে সৌধ যেন ছুঁয়ে দাঁড়াল বিশ্ব-আকাশ। ‘শকুন্তলা’, ‘চাকা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘ধাবমান’, ‘বনপাংশুল’, ‘নিমজ্জন’ প্রভৃতি নাটক উপনিবেশের মিথ্যা বড়াইকে অগ্রাহ্য করে হাজার বছরের বহমানতায় বিধৃত করল বাংলার নিজস্ব রীতি। প্রাচীন কথাসরিৎসাগরের মতো কখনো লম্বক, তরঙ্গ; কখনো পাঁচালির মতো পদ, বোলাম, নাচাড়ি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী রচনা আঙ্গিকের ধারাকে অনুসরণ করলেন।
সেলিম আল দীন দেখলেন আমরা আমাদের শিল্পকে মূল্যায়ন করি ইউরোপীয় চোখ বা দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। তাই গভীর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরলেন বাংলার নিজস্ব নন্দনতত্ত্বের মাপকাঠিগুলো। হাজার বছরের সাহিত্য-শিল্পরীতি বিশ্লেষণ করে দেখালেন বাঙালির সাহিত্য-শিল্প নন্দনতাত্ত্বিক দিক থেকে দ্বৈতাদ্বৈতবাদী। শ্রীচৈতন্য দেবের ‘অচিন্ত্যদ্বৈতবাদ’ চেতনার নিরিখে এ তাত্ত্বিক ভিত্তি তুলে ধরেন। বাংলা পরিবেশনা শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য হলো একের মধ্যে বহুত্বের অবস্থান। একই আঙ্গিকের শিল্পের মধ্যে বহুবিধ আঙ্গিকের শিল্পের সমন্বয়। একের মধ্যে বহুর অবস্থান। উপনিবেশকালে আমাদের সাহিত্যে পাশ্চাত্যের ধাঁচে সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পের আলাদা আলাদা বিভাজন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস এসব বিভাজনকে এটা তিনি অগ্রাহ্য করলেন। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের সব শিল্পমাধ্যমের অপূর্ব সমন্বয়কে তুলে ধরলেন। শূন্যপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, ইউসুফ জোলেখা, পদ্মাবতী, মহুয়া নানা সাহিত্যশিল্প কর্ম এক অদ্বৈত সমন্বিত শৃঙ্খলায় একীভূত। সেলিম আল দীন তার রচনায় দেখালেন বিদ্যাসাগর যে কলোনিয়াল শৃঙ্খলগুলো বাংলা গদ্যে করে গেছেন সেগুলো বাঙালিমাত্রই উচিত এই মুহূর্তে বর্জন করা। বাংলা ভাষার রীতি এবং প্রকৃতিতে এগুলো প্রয়োজন নেই। বাংলায় যতি, অর্ধযতি, পূর্ণযতিই যথেষ্ট, যা হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।
উপনিবেশের নাট্যরচনা কৌশলের অঙ্ক বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি উপনিবেশের চিহ্নগুলো বয়ে বেড়ানো অনর্থক বলে মনে করলেন। সে প্রেক্ষিতে নিজের রচনাগুলোর আঙ্গিক ভাবনায় বাঙলার মধ্যযুগের বিদ্যমান গদ্য-পদ্য অঙ্গ বিভাজনহীন সাহিত্য-শিল্পাঙ্গিকের উদ্ভাসন ঘটালেন। নিজের রচনাগুলোকে বললেন- নব্যপাঁচালি, কথানাট্য, বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির ইত্যাদি। বিশ্বপাঠে ফ্রান্স ফ্যানন, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গা, হোমি কে বাবা, গায়ত্রি স্পিভাকের মতো সেলিম আল দীনের সাহিত্যে জাতীয় সংস্কৃতির আদর্শই বড় হয়ে দাঁড়াল। উত্তর-উপনিবেশ তাত্ত্বিকের মতো বিতর্কে অনুপ্রবেশ না করে সেলিম আল দীন নিরবচ্ছিন্নভাবে উপনিবেশের দুটো বছরের মধ্যখণ্ডন না থাকলে বাংলা সাহিত্য শিল্পের রূপরেখা কেমন হতো তারই নিরীক্ষার পথে এগোলেন। ইউরোপের মালার্মের প্রতীকবাদিতা বা ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিকবাদিতা কিংবা মার্কসীয় ঐতিহ্যহীনতা তত্ত্বের ভিন্নপথে জাতীয় ভূজীবনের দিকে তাকালেন।
সেলিম আল দীনকে শুধু নাট্যকার পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। তিনি মূলত একটি বৃহত্তর প্রপঞ্চ। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় সৃষ্টির অনিবার্য এক শিক্ষা। কীভাবে উপনিবেশের মিথ্যাচারের ফাঁদ থেকে বের হয়ে হাজার বছরের গৌরবান্বিত সংস্কৃতির আলোয় নিজেকে পুনর্নির্মাণ করা যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। সেলিম আল দীনের একেকটি রচনা পাঠ মানে কাহিনির আস্বাদন নয়। ইতিহাস-সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা জাগরণের নতুন এক দীক্ষা। সেলিম আল দীন বলতেন, ‘ত্রিশের কবিরা যখন পাশ্চাত্যের ক্ষয়িষ্ণু জীবনচেতনা ও শিল্পরীতি আঁকড়ে ধরে বাংলা কবিতার মূলে নতুন কালের প্রসাধন মাখছেন, ঠিক সে সময় স্পেনের মাদ্রিদে একই পারে বসে লোরকা, নেরুদা, মেগুয়েল, হার্নান্ডেজ আঞ্চলিক গন্ধমাখা সাহিত্য রচনায় ব্রতী।’ সেলিম আল দীন চাইতেন, বাঙালি জাতি নিজের পায়ে দাঁড়াক। ধার করা ইটে জাতির আত্মবিশ্বাসের দালান তৈরি বন্ধ হোক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকে আত্মস্থ করে নিজস্বতার পথেই বৈশ্বিক। তেমনি উপনিবেশের উন্মাতাল সময়েও মধুসূদন দত্তকে নিজস্ব পথে হাঁটতে দেখা যায়। সেলিম আল দীন চাইতেন শিল্প-সাহিত্য নিজস্ব ভূমি ও ভূগোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোক।
অনেকেই আন্তর্জাতিকতা নিয়ে সেলিম আল দীনকে কটাক্ষ করতেন। অতীতকে ধরে আছে বলে পশ্চাৎপদ ভাবতেন। তাদের জবাবে তিনি বলতেন, ‘কোনো শিল্পেরই আন্তর্জাতিক ফর্ম হয় না। কারণ শিল্প দেশ-কাল, ধর্ম-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ভূগোলের ওপর দাঁড়ানো। লাতিন আমেরিকান শিল্পরীতি আমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। বৈশ্বিক হয়ে উঠতে পারে, তবে কাজ দেশ-কাজ ভূগোলের আশ্রয়ে সমূলিত।’
তিনি বিশ্বাস করতেন অন্যের অনুকরণ করে নয়, ঐতিহ্যের ধারায় বিশ্বনন্দনে হাঁটাতেই আত্মমর্যাদা। সেলিম আল দীনের সাহিত্যকর্মগুলো মূলত একটা শিক্ষা। যার পঠন-পাঠন, ধ্যান-অনুধাবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কীভাবে সাহিত্য-শিল্পে আত্মপরিচয় অর্জন করতে পারে তার শিক্ষা দেবে। সেলিম আল দীনের সাহিত্য-চেতনা এক কথায় হাজার বছরের বহমান সাহিত্যভাবনার জাগরিত চেতনা।
ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের শরীরে নানা প্রভাব পড়ে। এখন আবহাওয়ার পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। এই বৃষ্টি তো এই রোদ। এ সময় শিশুদের শরীরে আক্রমণ করে বসতে পারে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া। তা থেকে সাধারণ ঠাণ্ডা বা জ্বর হতে পারে। এরকম হলে ভয় না পেয়ে কী করণীয় সেটা আগে জানতে হবে।
নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জিয়াউল কবির বলেন, এই সময় হাঁচি ও কাশি হতে পারে। সঙ্গে অল্প জ্বর থাকতে পারে। এ সময় ভয় না পেয়ে সাধারণ সর্দি কাশিতে যা করণীয় সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
• আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুকে গরম রাখতে হবে। তবে বেশি ভারী কাপড় না পরানো ভালো। এতে শিশু ঘেমে ঠাণ্ডা বেশি লেগে যেতে পারে।
• সর্দি বা কাশি থাকলে শিশুকে গরম পানির সঙ্গে লেবু ও চিনি, লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে ৫-৬ চা-চামচ করে দিনে ৪-৫ বার খাওয়ালে আরামবোধ হবে।
• অনেক সময় সর্দি হয়ে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সাধারণ স্যালাইন (খাওয়ার স্যালাইন) ড্রপারের সাহায্যে শিশুর দুই নাকের ছিদ্রে একফোটা করে দিনে দুই থেকে তিন বার দিলে ভালো। পাশাপাশি কটনবাড দিয়ে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
• দেশের শিশুরা সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিত্সা না করালে নিউমোনিয়া মারাত্মক রুপ নিতে পারে। তাই শিশুর এ রোগের লক্ষণ দেখা দেবার সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ভালো।
• এ সময় শিশুকে কুসুম গরম পানিতে গোসল করালে উপকার পাওয়া যায়। গোসলের আগে অলিভঅয়েল ব্যবহার করা উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে শিশুর হাত-পায়ে লাগাতে পারেন। এতে শীতে ত্বক ভালো থাকবে।
• এই আবহাওয়ায় শিশুদের খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, ঋতু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। সেই সাথে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস ইনফেকশন থেকে জ্বর হতে পারে। তাই বাইরের ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে।
• বেশি বেশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লেগে যায়। আর ছয় মাসের কম বসসী শিশুদের মায়ের দুধের বিকল্প নেই।
• শিশুর অভিভাবককে অবশ্যই আবহাওয়ার পরিবর্তন বুঝতে হবে। শিশুকে সরাসরি ফ্যানের নিচে রাখা যাবে না। যেকোনো সমস্যা গুরুতর মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মডেল : ইনহা,ছবি : দৈনিক বাংলা
টেলিগ্রামের অনেক বট সম্পর্কে আমরা জানি না। তাই টেলিগ্রামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বট সম্পর্কে অবগত করতে এই লেখাটি। এখানে বটগুলোর সরাসরি ইউজার নেম দেয়া হয়েছে। কারণ একই নামে অনেক বট আছে।
@TGStat_Bot: টেলিগ্রামে অনেকের চ্যানেল থাকে। চ্যানেলের গ্রাফ দেখতে এই বট ব্যবহার করতে পারেন।
@cricbuzz_bot: টেলিগ্রামে খেলার খবর পেতে এই বট ব্যবহার করতে পারেন। এখানে খেলার কমেন্ট্রিসহ স্কোর দেয়া হয়।
@utuberabot: এই বট ব্যবহার করে ইউটিউবের সাম্প্রতিক ট্রেন্ডে থাকা ভিডিও সহজেই পেয়ে যাবেন। প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা করে তথ্য দিতে পারে এই বটটি।
@ChannelInlineBot: আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইনলাইন পোস্ট দিতে ব্যবহার করতে পারবেন এই বট। পোস্টের নিছে সরাসরি লিংক এড করা যাবে।
@LivegramBot: লাইভগ্রাম বটটি দিয়ে আপনার নিজস্ব বট তৈরি করতে পারবেন। তবে ইউজারদের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে হবে আলাদা আলাদা করে।
@sticker2GIFBot: স্টিকার থেকে gif তৈরি করতে পারবেন এই বটের সাহায্যে। গিফ্টগুলো টেলিগ্রামে সেভও করতে পারবেন।
@Stickers: টেলিগ্রামের অফিশিয়াল স্টিকার বট এটি। এই বটের সাহায্যে আপনি টেলিগ্রামে স্টিকার যুক্ত করতে পারবেন এবং তা ব্যবহার করতে পারবেন ম্যাসেজে।
@QuizBot: টেলিগ্রামে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বট কুইজ বট। শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক এই বট। বটটির সাহায্য সময়সীমাসহ কুইজ তৈরি করতে পারবেন। গ্রুপ এবং ম্যাসেজে কুইজ টেস্ট দেয়া যাবে। তা ছাড়া এখানে লিডারবোর্ড সুবিধা ও আছে।
@cloud_upload_bot: এই বটটি ক্লাউডভিত্তিক বট। এখানে ফাইল, ছবি, ভিডিও আপলোড করে লিংকের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। যাদের টেলিগ্রাম নেই তাদের সঙ্গেও শেয়ার করা যাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহার দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলেও আগামী বছরের শেষে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সংস্থাটির।
অ্যানালাইটিক ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট এমন কথাই বলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাট জিপিটি চালাতে প্রতিদিন কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে সংস্থার। শুধু চ্যাটজিপিটি সেবা দিতেই ওপেনএআই সংস্থা প্রতিদিন খরচ করছে ৭ লাখ ডলার, যা প্রায় ৮ কোটি টাকার সমান।
জিপিটি ৩.৫ এবং জিপিটি ৪ এই দুই সংস্করণকে মনিটাইজ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে লাভের মুখ দেখেনি। উল্টো প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে সংস্থাটির।
আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ কোটি কমেছে, যা মোট ব্যবহারকারীর ১২ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওপেনএআই সংস্থার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত চ্যাটজিপিটি মেসেজিং পরিষেবাটি চালু হয়। ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায় তারা। তবে দ্রুত কাজ করা এই অ্যাপ এখন কিছুটা হলেও বিপদে। যাত্রার শুরুর দিকে অসংখ্য ব্যবহারকারী এতে আগ্রহ দেখালেও বিগত কয়েক মাসে এই সংখ্যা ক্রমশ নিম্নমুখী। ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপুল ব্যয়ে নাজেহাল ওপেনএআই সংস্থাটি।
অ্যানালাইটিকস ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বলছে, টেকনোলজির এই প্রতিযোগিতার বাজারে অসংখ্য ওপেন সোর্স এলএলএম মডেল রয়েছে। যেগুলো বিনা মূল্যে নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। যেমন, মাইক্রোসফটের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি মেটার লিয়ামা-২ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যও বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছে। চ্যাটজিপিটির সেবা বিনা মূল্য নয়। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ফলে ওপেনএআইয়ের ব্যবহারকারীরাও অন্য বিকল্প দেখে সুবিধামতো বেছে নিচ্ছেন।
প্রতিবেদন বলছে, ওপেনএআই এখনো ব্যবসা থেকে লাভ করতে পারেনি। বরং মে মাসে ৫৪ কোটি ডলার ক্ষতি হয় সংস্থাটির। তবে আশা ছাড়েনি সংস্থাটি। তাদের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, চলতি বছর তারা ২০ কোটি ডলার লাভ করবে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের শেষে লাভের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা রাখলেও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন ওপেনএআই।
তথ্য সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস