বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

‘আন্ধারমানিক পত্রিকা মানুষের কল্যাণে টিকে থাকুক’

আপডেটেড
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৫০
নাজমুস সাকিব
প্রকাশিত
নাজমুস সাকিব
প্রকাশিত : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৩৪

নিদারুণ কষ্টে দিন চলে তার। তারপরও চেষ্টার কমতি নেই মানুষের কল্যাণে কাজ করার। তার গ্রামের শিক্ষার মান উন্নত হোক, এমন স্বপ্নেই বাঁচেন হাসান পারভেজ। সবাই লিখতে-পড়তে শিখুক- এমন চাওয়া যেন তার আজন্ম। তাই নিজের মতো চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। হাতে লিখে পত্রিকা বের করছেন। গ্রামের সব ছোট ছোট ঘটনা তুলে ধরেন তার সম্পাদিত কমিউনিটি পত্রিকা আন্ধারমানিকের মাধ্যমে। তাকে নিয়ে লিখেছেন নাজমুস সাকিব

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েই অভাবের কারণে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়তে হয় হাসান পারভেজকে।

১৯৯৬ সালে ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। অর্থ নেই, যার কারণে দেয়া হয়নি পরীক্ষা। শিক্ষা নিয়ে কথা বলতেই কেমন যেন মন খারাপ করে থাকেন তিনি। পরীক্ষা না দেয়ার সে কষ্ট আজও ভুলতে পারছেন না। প্রবল আগ্রহ নিয়ে ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন হাসান পারভেজ।

মনের অজান্তেই লেখালেখি করেন গ্রামের পরিবেশ, শিক্ষা, কৃষিসহ ইতিবাচক বিষয় নিয়ে। যদিও ২০০৫ সালে পেয়েছিলেন একটা সংস্থার কাছ থেকে কবি উপাধি। এতে উপহাসের পাত্র হলেন হাসান পারভেজ, বিভিন্ন জায়গায় দিতেন তার লেখা প্রকাশ করার জন্য, কিন্তু প্রকাশিত হয়নি কোথাও।

উপকূলীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টুর সঙ্গে আন্ধারমানিক নদীর তীরে দেখা হয় হাসান পারভেজের সঙ্গে। কথা হয় উপকূল নিয়ে, হাসান পারভেজের লেখা মানুষের গল্প এবং কবিতা দেখেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। পরামর্শ দেন নিজ গ্রামে একটি কমিউনিটি পত্রিকা প্রকাশের। রফিকুল ইসলাম মন্টুর পরামর্শে হাসান পারভেজের বাড়ির পাশের নদী আন্ধারমানিকের নাম অনুসারে ১ মে ২০১৯ সালে নামকরণ ও প্রথম প্রকাশিত হয় কমিউনিটি পত্রিকা আন্ধারমানিক।

শুরুতে গ্রামের মানুষ হাসাহাসি করত হাসান পারভেজকে নিয়ে। নানা কটূক্তিও সহ্য করতে হয়েছে তাকে। উপকূলীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু হাসান পারভেজকে সাহস দিয়ে বলেন, গ্রামের বিভিন্ন ইতিবাচক লেখা নিয়ে কাজ করতে, এতে মানুষ সমর্থন করবে।

হাসান পারভেজ কাজ শুরু করলেন। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা, সম্ভাবনা, সফলতা এবং শিক্ষা বিষয়ে লেখা শুরু করলেন। একপর্যায়ে সমর্থনও পাওয়া শুরু করলেন গ্রামের মানুষের। আন্ধারমানিক কমিউনিটি পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন হাসান পারভেজের মতোই দিনমজুররা, যারা অল্প পড়ালেখা জানেন। একজন প্রতিবন্ধীসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে গ্রামে ১২ জন রিপোর্টার আছেন আন্ধারমানিক পত্রিকায়।

আন্ধারমানিক কমিউনিটি পত্রিকার মাধ্যমে ভাগ্যের দুয়ার খুলেছে গ্রামের অনেকেরই, পেয়েছে গৃহহীন তার বাসস্থান এবং কৃষকের সাফল্য দেখে আগ্রহী হন গ্রামবাসী। এভাবে পাঠকপ্রিয়তা বাড়তে থাকে হাসান পারভেজের আন্ধারমানিক কমিউনিটি পত্রিকার।

পত্রিকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে শিরোনামগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে লিখলেও প্রতিটি গল্প কিন্তু হাতেই লিখেন হাসান পারভেজ। এবং ফটোকপি করে বিলি করেন গ্রামে। আর পত্রিকার কাজে তাকে সাহায্য করেন তার স্ত্রী শাহানা। অর্থসংকট এবং সময়ের অভাবে নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে প্রতি মাসে একবার প্রকাশিত হয়। তার পত্রিকার মাধ্যমে অনেকের জীবন বদলালেও বদলায় না দিনমজুর হাসান পারভেজের জীবন। তার দিন চলে অভাবেই।

আশার কথা হচ্ছে, হাসান পারভেজের গল্পে জীবন পরিবর্তন হয় শিশু রুবিনা ও তার ভারসাম্যহীন শিকলবন্দি মায়ের। সরকারিভাবে রুবিনা পায় ঘর। তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অনেকে। রুবিনা ও তার ভারসাম্যহীন মায়ের খবর নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে যায়। এ খবরের সূত্র ধরেই হাসান পারভেজকে খুঁজে বের করে ‘ইত্যাদি’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। এতে হাসান পারভেজকে নিয়ে আসার পর সহজ হয়ে যায় তার পথ চলা। ইত্যাদি ম্যাগাজিন হাসান পারভেজকে দুই লাখ টাকা উপহার দেয় এবং এর কিছু অর্থ দিয়ে হাসান পারভেজ ডিগ্রিতে পড়াশোনা শুরু করেন।

বিভিন্ন স্থান থেকে হাসান পারভেজের কাছে ফোন আসতে থাকে। অনেকে সহযোগিতাও দিতে চান। কিন্তু হাসান পারভেজ নিজের জন্য কিছু নিতে নারাজ। তবে তিনি কিছু অর্থ সংগ্রহ করেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য। হাসান পারভেজ প্রায় আড়াই লাখ টাকার সহযোগিতা করেছেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষের মাঝে ঈদে শাড়ি-লুঙ্গি ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন এবং গৃহহীন পাঁচজনকে নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছেন।

সবার জন্য যিনি করে যাচ্ছেন অক্লান্তভাবে, তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম আন্ধারমানিক কমিউনিটি পত্রিকা নিয়ে কী ধরনের স্বপ্ন দেখেন? জিজ্ঞেস করতেই থমকে গেলেন তিনি। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমি একদিন থাকব না। কিন্তু আমি চাই আমার এ পত্রিকা যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্যাণে থাকুক।’


হাঁটতে এসে বন্ধুত্ব…

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাহিন আশরাফ

সকালের হালকা মিঠে রোদ এসে উঁকি দিচ্ছে পার্কের সারি সারি গাছের ফাঁক গলিয়ে। এ রোদ অনেকের জীবনে আরও একটা নতুন দিন, ভীষণ প্রাপ্তি হয়েই ধরা দেয়। প্রতিটা দিন নিজের মতো করে বাঁচাই যেন লক্ষ্য তাদের। ঢাকার রমনা পার্কে রোজ সকালে হাঁটতে আসেন নানা বয়সীরা। তবে এর মধ্যে প্রবীণই বেশি। বেশির ভাগের বয়সই হয়তো পঞ্চাশের কোঠা পেরিয়েছে। অবসরকালীন সময় কাটাচ্ছেন নানাবিধ রোগ-শোক নিয়েই। কারও হার্টের সমস্যা, কারও হাইপ্রেশার আবার কারওবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। ফলে ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন রোজ নিয়ম করে এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে, তাই তো খানিকটা সুস্থ থাকার জন্য কাকডাকা ভোরে এসে পড়েন রমনাতে।

রোগকে বিদায় জানাতে হাঁটতে আসা সমবয়সী কিংবা কাছাকাছি বয়সী মানুষ রোজ জড়ো হয়ে হাঁটেন, একসঙ্গে ঘাসে বসে মেডিটেশন করেন। রোজ সকালে একজন আরেকজনের জন্য অপেক্ষাও করেন। প্রতিদিন সকালে দেখা হওয়ার ফলে তাদের মধ্যেও হয়েছে এক অদৃশ্য ভালোবাসার সম্পর্ক। ভোরে রমনায় এসে তাই এই অপেক্ষা একে অপরের জন্য। কোনো দিন কেউ হাঁটতে না এলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন এমনকি খোঁজ নিতে বাড়ি অবধি চলে যান। অদৃশ্য এক সুতায় যেন তারা বাঁধা, এ সুতাকে প্রবীণবেলার বন্ধুত্ব বলেও অভিহিত করা যায়।

নিয়মিত রমনা পার্কে হাঁটতে আসা এমনই একজন জামাল হোসেন। রিটায়ার্ড ব্যাংক কর্মকর্তা। স্ত্রী মারা গেছেন প্রায় বছরখানেক। একমাত্র মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর সংসার করছেন। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার। প্রায় দুই বছর ধরে রমনা পার্কে নিয়ম করে হাঁটছেন। নিয়মমাফিক এই হাঁটার সুবাদে অনেক বন্ধু পেয়েছেন এই রমনাতেই। জামাল হোসেন বলেন, ভালোই যায় সকালটা। এরপরে তো সারা দিন একা একাই থাকি! বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর থেকে সকালের অপেক্ষাতেই থাকি, কখন সকাল হবে আর বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে হাঁটব। তার কাছে ভালোবাসা মানে কি জানতে চাইলে মলিন হেসে বলেন, ‘একটা সময় সন্তানদের ভালোবাসার কাছে সব ভালোবাসাই হার মেনে যেত, এখন তারা যে-যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। এখন আর আগের মতো একসঙ্গে সময় কাটানো হয়ে ওঠে না, তাই তো এখন যেখানে যাই সেখানে যাকেই পাই তাদের সঙ্গেই মিশে যাই।’

মজার বিষয় হচ্ছে একসঙ্গে হাঁটা দিয়ে সম্পর্ক শুরু হলেও শুধু এ কাজেই থেমে নেই তাদের সখ্যতা। একসঙ্গে জড়ো হয়ে তারা মাঝেমধ্যে পিকনিক করেন, হাসি, আড্ডা গল্পে কেটে যায় সে দিন। কখনোবা একসঙ্গে নাস্তা করেন সকালবেলায় কিংবা নিজেরা চা-চক্রের আয়োজন করেন। তাদের মতে, এ বয়সে তাদের ঘিরে থাকা একাকিত্বের খানিকটা হলেও ঘুচে যায় এ সময়গুলোতে। মনের সব কথা একে অপরকে বলে কিছুটা হালকাও হন।

সবাই সবার খোঁজখবর তো রাখেনই, কখনো কখনো কারও হঠাৎ অনুপস্থিতিতে বিচলিতও হয়ে পড়েন অন্যরা।

কয়েক দিন আগেই নিয়মিত রমনা পার্কে হাঁটতে আসা প্রবীণ দলের একজনের কাছে শোনা হয় হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের আরও একটি গল্প। এ দলের একজন ষাটোর্ধ্ব রশিদ সাহেব, ডেংগুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, পার্কের সবাই মিলে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। সবাইকে দেখে অসুস্থতাও যেন কিছু সময়ের জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন হাঁটতে আসার মাধ্যমেই সবার মাঝে বেশ আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সবাই যেন ঘুম থেকে উঠেই একে অপরকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তারা সবাই পার্কে হাঁটাহাঁটি করা ছাড়াও পারিবারিকভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত। প্রায় সময় একজনের বাসায় আরেকজনকে আমন্ত্রণ জানান। পরিবারের সবাই তাদের সঙ্গে খোশগল্পে মজে যান। এ ছাড়া তারা সবাই কাছাকাছি এলাকায় থাকেন। যার ফলে চলার পথে, রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, বাজারে না চাইতেই দেখা হয়ে যায়।

রক্তের বাইরে এই গড়ে ওঠা সম্পর্ক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রুনা ইসলাম বলেন, ‘জীবনের এই সময়টায় এসে তারা আর রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন না বরং রক্তের সম্পর্ক থেকে তারা কিছুটা দূরেই সরে যান। তখন তারা আশপাশে খুঁজে বেড়ান শুধু একটু কথা বলার মানুষ। যাদের সঙ্গে তারা একটু কথা বলতে পারেন তাদেরই তারা কাছের মানুষ মনে করেন। তাদের সঙ্গেই তৈরি হয়ে যায় ভালোবাসার সম্পর্ক। এই বয়সটায় এসে তারা শুধু একাকিত্ব কাটাতে সঙ্গী খুঁজে বেড়ান, এরচেয়ে বেশি তাদের আর কোনো চাওয়ার থাকে না।’


অবেলায়ও ভালোবাসা প্রকাশ পায় নাচে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তানজিনা আলম

প্রণয়কে যদি উদ্দীপনা ও প্রেম সম্পর্কিত রহস্যময় অনুভূতি মনে করা হয়, তাহলে নাচকে ধরা হয় সেই অনুভূতির প্রভাবক। সহজ করে বললে, ভালোবাসলেই কখনো কখনো উড়তে ইচ্ছে করে, প্রিয়তম বা প্রেয়সীর সঙ্গে নাচতেও ইচ্ছে করে। আর কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বেলিসারিও বেটানকুর-ও একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নাচ হলো নির্বাক কথোপকথন।

বয়স হয়েছে বলেই ভালোবাসা কমে না, থামেও না, বরং ভালোবাসার ধরনটা কিছুটা পাল্টে যায়। শুধু তা-ই নয়, বেশির ভাগ দম্পতিই মূলত পাঁচটি (প্রতিজ্ঞা রক্ষা, সেবা, উপহার বিনিময়, সুন্দর মুহূর্ত এবং ঘনিষ্ঠতা) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তবে দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে নিয়মিত নাচ-ই যাদের ভালোবাসার মাধ্যম তারা হলেন মার্ক ও কনি ফিশার দম্পতি। তাদের মতে, উপরের পাঁচটি প্রকাশভঙ্গির পর ষষ্ঠ উপায় হলো নাচ। সিনসিনাটির এই দম্পতি ১৯৯৩ সাল থেকে একসঙ্গে নাচ করছেন। শিশুকাল থেকেই কনি ব্যালে, ট্যাপ ও জ্যাজসহ সে সময়ই বাচ্চারা যত রকম নাচ পারা সম্ভব সবগুলোতেই অভ্যস্ত ছিলেন। অন্যদিকে মার্কের বাবা-মাও ভালো নাচতেন বলে ছোটবেলা থেকে তারও আগ্রহ ছিল এসবে, তবে তিনি অভ্যস্ত হন আরও পরে।
যখন তাদের বাচ্চারা বড় হয়ে ওঠে এবং বাচ্চাদের দেখাশোনার প্রয়োজন কমে আসে, তখনই এই দম্পতি নাচের ব্যাপারে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং নাচ শিখতে যেতে থাকেন। টেক্সাস এবং লুইজিয়ানায় বসবাসকালীন নাচ শেখেন তারা। কারণ, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই নাচ ভালোবাসেন। এ দম্পতি বাছাই করে একবারে শুধু একটি নির্দিষ্ট নাচ-ই অনুশীলন করতেন। ধীরে ধীরে তাদের পারদর্শিতায় যোগ হয় শাশা, ওয়াল্টস, সুইংসহ বিভিন্ন প্রকার নাচ। একটা সময় আসে যখন নাচ হয়ে ওঠে এই দম্পতির জীবনের অংশ। গত ত্রিশ বছর ধরে সপ্তাহে অন্তত একদিন তারা নেচেছেন- কখনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো নাচের ক্লাসে, কখনো বা একান্তেই নিজেদের ঘরে। নাচ যেন তাদের নেশা। তারা মনে করেন, নাচ হলো শরীর এবং মনকে একসঙ্গে ব্যবহার করা- যা অন্য সাধারণ ব্যায়ামের থেকে ভিন্ন বরং বেশি আনন্দদায়ক।

বাসায় নাচের আয়োজন করলে এই দম্পতি তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি কমিয়ে দেন। কারণ নাচের কারণে শরীরের তাপমাত্রা এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। মার্ক মনে করেন, তখন শহরের বাকি লোকদের চেয়েও বেশি আনন্দ করতে পারেন তারা। এ সময় সাধারণত দশজনের একটি করে দল হয় - যারা এক থেকে দেড় ঘণ্টা নাচেন এবং এই দম্পতি তাদের নতুন কিছু শেখান।

এ বছর ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষেও বিনা মূল্যেই সহজ পাঁচটি মুদ্রায় শেখাবেন বিশেষ নাচ। তারা আশা করেন, মৃদু সংগীতের তালে শুধু সামনে-পেছনে দুলতে থাকার চেয়েও বেশি কিছু শিখতে আগ্রহীরা ১ ঘণ্টার মধ্যেই এই মুদ্রাগুলো আয়ত্ত করতে পারবেন।অনভিজ্ঞ হলেও অংশগ্রহণকারীরা যা শিখবেন তা সারা জীবন কাজে লাগাতে পারবেন।

কিন্তু শর্ত একটাই, এই সুযোগ কেবল যুগলদের জন্য। বয়স যাদের আচ্ছন্ন করতে চাইছে এই আয়োজন তাদের জন্য। যারা ভুলে গেছেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারীর মতো বিশেষ দিনের বিশেষ আয়োজন করতে। কিংবা সেসব স্ত্রীদের জন্যে যারা এদিনে অন্তত এমন কিছু চান, যা প্রাণের সঞ্চার করবে এই অবেলায়ও।

সূত্র: কোডি এন্টারপ্রাইজ


মা-বাবার ভালোবাসার চার দশক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিশাত আনজুম লোপা

প্রেমের শুরু

আশির দশকের একটা গল্প। নাটোরের গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলসের টাইপিস্ট ছিলেন রমজান আলী মিয়া। তার পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে। দ্বিতীয় কন্যার নাম রোকসানা মোর্ত্তজা, ডাকনাম লিলি। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় লিলির সঙ্গে দেখা হয় গোলাম মোর্ত্তজার। সবার কাছে তার ডাকনাম বাবু। স্কুলের গেটে দেখার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেম। কিন্তু লিলি কি আর সহজে হ্যাঁ বলেন? মাধ্যমিক পরীক্ষা মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেন লিলি। কচিকাঁচার আসর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ বেতারে গানও করেছেন লিলি। লিলির কৈশোরে প্রাঞ্জলতা ছিল পড়াশোনা আর সাংস্কৃতিক নানান আয়োজনকে ঘিরেই। মিষ্টি চেহারা ও চটপটে ভাবের জন্য লিলিকে প্রথম দেখাতে পছন্দ করেন বাবু। বাবুর কাজ আর সাধারণ আট-দশজন বাঙালি কিশোরের মতোই। লিলির মনোযোগ আকর্ষণের নানান প্রচেষ্টায় ছিল সারাক্ষণ। দীর্ঘ চার বছর মনোযোগ আকর্ষণের পরে সম্মতি, তারপর ১৯৮১ সালে লিলি-বাবুর বিয়ে।

বিয়ের পর

আট-দশ বাঙালি পরিবারের মতো লিলি-বাবুর সংসার শুরু হয়। আশির দশকের মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মতো দিনযাপন করেন তারা। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নানান কাজ শুরু করেন। লিলি শুরু করেন নার্সারি। নিজেদের নার্সারির জন্য জীবনসঙ্গী বাবুকে নিয়ে যেতেন নানান নার্সারিতে। আর বাবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দুজনেই পাশাপাশি থেকে পরিবার ও নিজেদের সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে হাজির হই আমরা তিনভাই বোন। আমি নিশাত আনজুম লোপা, আমার বড় বোন সিলভিয়া পারভীন লেনি ও ভাই মোতাহার মোসলেম জর্জ। বাবা-মায়ের আগ্রহের কারণেই আমরা ভাইবোনরা এখন কেউ বিদেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি, কেউ উদ্যোক্তা আবার কেউ দেশেই আইনপেশায় কর্মরত আছি।

একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া

আমার মা লিলি সব সময়ই নতুন কিছু শেখার জন্য আগ্রহী। বাবার চেয়ে যেহেতু মা স্মার্ট, তাই বাবাও সঙ্গে শেখার সুযোগ নিয়েছেন। আর দশজন বাঙালি দম্পতির মতো মান-অভিমানের অনেক ঘটনা আছে তাদের জীবনে। খুব সহজে তর্কাতর্কি যেমন হয়, আবার দেখা যায় চলতি পথে দাঁড়িয়ে দুজনে সেলফি তুলছেন। ঈদের সময় দেখা যায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে তিন-চার শ মানুষের দুপুরে দাওয়াত থাকে, মায়ের ব্যস্ততার পেছনে বাবাকে সব সময় ছায়া হিসেবে দেখা যায়। আমার মা রাজনীতির সঙ্গে এখন যুক্ত। নারী হিসেবে বাংলাদেশে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রাজনীতি করার চ্যালেঞ্জ অনেক। একদিকে সংসার, আবার অন্যদিকে রাজনীতি: সমন্বয় করা ভীষণ কঠিন। নিজের সংসারে এখন তৃতীয় প্রজন্মের নাতি-নাতনিদের যেমন সময় দেন, তেমনি নিজের গ্রামের বাড়ির আত্মীয়স্বজনদের দেখভালের বিষয়েও সব সময় গুরুত্ব দেন মা। আমার মাকে এই সমন্বয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন আমার বাবা। বাবা ও মায়ের সমন্বয়ে তাদের এই সংসারের বয়স এ বছরের জানুয়ারিতে ৪২ বছরে পা রেখেছে। রাজনীতিবিদ মায়ের যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, বাবার পছন্দের রান্না করতে তার কোনো আলসেমি নেই। আবার যে দেশেই ঘুরতে যাক না কেন, মা বাবার পছন্দ ঘড়ি কিনে আনতে কখনোই ভোলেননি। চার দশক পেরোলেও এখনো যেন ভালোবাসার রেশ কাটেনি। আজও মনে হয় দুজন কিশোর-কিশোরী সদ্য কলেজ পেরিয়ে কোথাও ঘুরছেন, ছবি তুলছেন, মাথায় ফুল গুঁজে দিচ্ছেন। জীবন-সংসারে ভালোবাসার সমীকরণে সমন্বয় করতে করতে এগিয়ে চলছেন দুজনেই।

লেখক: আইন কর্মকর্তা, স্থানীয় একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান


তাদের কথা শুনছি তো…

আপডেটেড ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০৯:০৫
বেলা অবেলা ডেস্ক

চমৎকারভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা গুণ তো বটেই, এটিকে শিল্প বললেও ভুল হবে না। এ গুণ বা শিল্প যাই বলি না কেন, তখনই বিকশিত হয় যখন আমরা দক্ষতার সঙ্গে শোনার অভ্যাসও গড়ে তুলি। কেননা শোনার অভ্যাসের সঙ্গে অর্থপূর্ণ কথা বুনতে শেখার অভ্যাসও জড়িয়ে আছে। আর তাই তো শোনার অভ্যাস গড়তে পারলে যোগাযোগেও পারদর্শিতা অর্জন সম্ভব। বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখার পেছনে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে তাদের কথা শোনার অভ্যাস।

এক দিন রাখুন তাদের জন্য

চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়- এ কথার সত্যতা যেমন রয়েছে, তেমনি যুক্তিও আছে। মা-বাবার সঙ্গে বিষয়টাও অনেকটাই এমন। একই বাসায় থেকেও অনেক সময়ই এমন হয়ে যায় যে একসঙ্গে খাওয়া কিংবা গল্প করা হয়ে ওঠে না। নানা রকম ব্যস্ততার কারণে এমনটা হয়ে যায়। এর ফলে তৈরি হয় দূরত্ব। মা-বাবা মনে করেন, আমরা তাদের কথা শুনছি না বা শুনতে চাচ্ছি না। সারা সপ্তাহ মা-বাবার কথা শোনার কিংবা তাদের সঙ্গে গল্প করার সুযোগ না হলেও ছুটির দিনে তাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন, রাতের খাবার রান্না করতে পারেন একসঙ্গে। কিংবা একান্তই ঘরোয়া আয়োজনে চা পান করতে করতে গল্প করুন। তাদের কথা শুনুন। ব্যস সব অভিমান ধুয়ে-মুছে যাবে।

মনোযোগ দিতে হবে

মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় কিংবা গল্প করার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার অর্থ হলো পুরোটা সময় তাদেরই দেয়া। এ সময় টেলিভিশন বন্ধ রাখুন, বই পড়া বন্ধ করুন এবং ফোনটি দূরে রাখুন। তারা কথা বলার সময় তাদের দিকে চোখ রেখে তাদের গুরুত্ব দেখান। বই পড়তে পড়তে কিংবা ফোন স্ক্রল করতে করতে তাদের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে তারা ভাববেন, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনছে তাদের কথা।

শারীরিক ভাষাজ্ঞান

কখনো একটু হাসুন, কখনোবা মাথা নেড়ে, চোখে চোখ রেখে কথা শুনুন। তাদের চোখের ভাষা পড়তে চেষ্টা করুন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে চমৎকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে অপরপক্ষ গুরুত্বও টের পায়। তাই আপনি কথা শুনছেন- এটা তাদের বোঝান বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমেও।


ব্যায়ামের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে…

আপডেটেড ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৫০
তানজিনা আলম

অনেকেই নতুন বছরে বেশি ব্যায়াম করার সংকল্প করেছেন। এর মধ্যে বয়স্করাও বাদ যাননি। হয়তো নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করার প্রথম সপ্তাহে শুরুও করেন, কিন্তু কিছুদিন পরই পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যান। হাঁটার জন্য জুতা পরার চেয়েও টেলিভিশন হয়ে ওঠে প্রলুব্ধকর। আর দায় এড়াতে, আজ খুব ঠাণ্ডা বা খুব গরম, একদমই সময় নেই বা ইচ্ছা করছে না- এমন সব অকাট্য অজুহাত তো আছেই।

এভাবে শুয়ে-বসে থাকার জীবনধারা দীর্ঘজীবন এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আবার জিজ্ঞেস করলে এদের অনেকেই বলবেন, এতে জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও তাদের মাথাব্যথা নেই। ফলে একাধিক জটিল ও স্থায়ী রোগ- স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং আরও অনেক রোগ বাসা বাঁধে। ডাক্তার আর পথ্যের খরচ জীবনযাপন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। এটি অবশ্য কেউই চান না। কিন্তু এসব প্রতিরোধের জন্য চাই অনুপ্রেরণা। চলুন জেনে নিই নিজের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে কী করা যেতে পারে-

প্রয়োজন প্রচেষ্টার

ব্যায়ামে ধারাবাহিকতা রাখতে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চার করতে হবে। পছন্দ না হলেও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধসহ অন্যান্য অঙ্গকেও রক্ষার জন্য এতটুকু করতে হবে। কারণ ব্যায়াম মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরের বাকি অংশকেও রক্ষা করে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে বাঁচতেও এর বিকল্প নেই।

কাজে লাগানো যায় ইউটিউব

ইউটিউবে বয়স্ক ব্যক্তিদের বাড়িতেই করার মতো সহায়ক ভিডিওগুলো দেখতে উৎসাহিত করতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং ইউটিউবের মাধ্যমে বয়স্কদের ব্যায়ামে উৎসাহিত করতে রেখেছে ‘গো ফর লাইফ’ প্রোগ্রাম। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিডিও-নির্দেশিত প্রোগ্রামগুলো দিয়েই দুর্দান্ত সূচনা হতে পারে।

অভিভাবক বার্ধক্যে থাকলে কাছের মানুষের একটু সমর্থন আর উৎসাহ ব্যায়ামে অনিচ্ছুকদের জন্য ভীষণ সহায়ক। বয়স্ক মা-বাবার সঙ্গে ভিডিও দেখা, তদানুসারে চর্চার রুটিন করে ফেলা- এসবই এগিয়ে দেবে অনেকটা। হাঁটতে বা দাঁড়াতে অক্ষম হলে চেয়ারে বসেও ব্যায়াম করা যায়।

করণীয়
*ব্যায়াম করতে প্রচেষ্টা লাগে, এটা ঠিক কিন্তু অসম্ভব নয়। স্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা দূরে রাখতে এবং পরিকল্পিত বার্ধক্যের জন্য এই প্রচেষ্টা ভালো।
*একা ব্যায়াম না করে কারও সঙ্গে ব্যায়াম করা আরও ফলপ্রসূ। কারণ আগ্রহ ধরে রাখা যায়।
*ব্যায়ামের কিছু নির্দিষ্ট জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় হাঁটার জুতা, ঢিলেঢালা প্যান্ট, শার্ট কিংবা জ্যাকেটও খুব ব্যয়বহুল নয়, কিন্তু কার্যকরী।
* ইউটিউবে ব্যায়ামের ভিডিওগুলো দেখে কী করতে হবে তা নিশ্চিত না হলে ১০-১৫ মিনিটের জন্য বাড়িতেই ওয়ার্কআউট করার চেষ্টা করুন।
*অন্য কোনো কিছু ভালো না লাগলে- শুধু হাঁটুন। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে, সিঁড়িতে ওঠানামা করা, শপিংমলে হাঁটা বা হালকা ডাম্বেলের মতো সরঞ্জামসহ বা ছাড়াই যেকোনো ব্যায়াম করুন।

পরিশেষে এটি মাথায় রাখুন, নিয়মিত ব্যায়াম মেজাজ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের পথে এগিয়ে নেবে।


পরিবারে প্রবীণ সদস্যের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

আপডেটেড ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৫০
রবিউল কমল

যেকোনো দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ থাকেন প্রবীণ। তবে, প্রবীণদের কখনোই পরিবার বা সমাজের বোঝা ভাবা উচিত নয়। বরং তারা একটি পরিবারের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা পরিবার ও সমাজের অনেক কিছুতেই অবদান রাখতে পারেন। তাই প্রবীণ সদস্যকে বোঝা না ভেবে তার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তার অবদানকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সাধারণত পরিবারের একজন প্রবীণ সদস্য নানাভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। কখনো শিক্ষক, কখনো পরামর্শদাতা, বন্ধু কিংবা গাইড হিসেবে তারা একটি পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্বব্যাপী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রজন্মের বিচিত্র মনোভাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠানের পুরনো কর্মচারী, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। পুরোনোদের মতামত ও তরুণদের মতামত মিলিয়ে কাজ করছে তারা। যদিও আমরা প্রায়ই বৈচিত্র্যকে শুধু সাংস্কৃতিক পরিভাষায় চিন্তা করি। তবে বিভিন্ন প্রজন্মের যে কাজের ভিন্নতা বা দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে, তার মূল্যায়নে কিন্তু ভালো ফল পাওয়া যায়। একইভাবে আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি এবং বয়স্ক আত্মীয়দের জ্ঞান বিভিন্ন সময়ের বিবর্তনকে বুঝতে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া আমাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ভাবতে কিংবা তুলনা করতে সহায়তা করে।

সমাজের প্রতিচ্ছবি

শিশুরা ধীরে ধীরে তরুণ হয়ে ওঠে। তরুণ বয়স সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তাদের বয়স্ক আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহিত করা উচিত। কারণ প্রবীণ মানুষগুলো বিভিন্ন মূল্যবোধের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাদের সমাজ নিয়ে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা আছে। বয়স্করা তাদের এসব অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। আর দাদা-দাদি বা বয়স্ক আত্মীয়ের সঙ্গে সময় কাটালে নিজস্ব মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। কারণ, পরিবারের প্রবীণ সদস্যটি আমাদের কাছে একটি সমাজের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রতিচ্ছবি।

যত্নশীল

২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় দাদা-দাদিরা প্রতি সপ্তাহে আনুমানিক ৫৮ ঘণ্টা পরিবারের ছোট সদস্যের যত্নে ব্যয় করেছেন। আর এটি তাদের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিন্ত থাকতে সহায়তা করেছে। একই সঙ্গে তারা নাতি-নাতনির জন্য বাড়িতে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন এবং শিশুদের যত্নের বিষয়টিও সহজ করেছেন। তাই আপনার শিশুকে দাদা-দাদির সঙ্গে মিশতে দিন। তাহলে আপনার প্যারেন্টিংও সহজ হয়ে যাবে, সন্তানকে সামলানোর চাপ কমবে। এতে নিশ্চিন্তে অফিসসহ যেকোনো কাজে মনোযোগী হতে পারবেন। তা ছাড়া পরিবারের প্রবীণ সদস্যটির ছোটদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য অনেক সময় থাকে এবং তারা এটি পছন্দ করেন। আর এতে আপনার সন্তানের সময়গুলোও মজার হবে।

টিপস অ্যান্ড ট্রিকস

প্যারেন্টিং এমন একটি দক্ষতা, যা আমরা চাকরি থেকে শিখতে পারি না কিংবা কখনোই পুরোপুরি আয়ত্ত করি না। অন্যদিকে প্রতিবছর শিশুর মধ্যে নতুন পরিবর্তন আসে, কারণ প্রতিটি শিশু আলাদা। আবার এমন কোনো বই নেই, যা আপনাকে প্যারেন্টিংয়ের যাবতীয় সবকিছু শিখিয়ে দিতে পারে। তাই আপনি দাদা-দাদি, খালা, চাচা, বড় চাচাতো ভাই বা পারিবারিক বন্ধুদের কাছ থেকে টিপস ও পরামর্শ নিতে পারেন। তারা আপনাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারবেন। এসব বিষয়ে তাদের আছে বিস্তর অভিজ্ঞতা। আপনি কীভাবে আরও ভালো অভিভাবক হয়ে উঠতে পারবেন, তার একমাত্র সমাধান কিন্তু এই প্রবীণরাই।

অনুপ্রেরণার উৎস

আমাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্নভাবে লড়াই করেছেন এবং কঠিন সময় পার করে এসেছেন। তাই তারা পরিবারের তরুণ সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের প্রতীক‚ লতার গল্প বা দীর্ঘ সময় ধরে জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প তরুণদের পরিশ্রমী হতে সহায়তা করে। তরুণদের উপলব্ধি করতে শেখায়, জীবনে কঠিন সময় আসবে। আর এটাই জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু, কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছাড়া যাবে না। বরং শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। আবার পরিবারের একজন বয়স্ক সদস্য প্রায়ই পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতে পারেন। যা তরুণদের অনুসরণ করতে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে পারে। অনেক সময় বাবা-মা-সন্তানের সম্পর্ক চ্যালেঞ্জিং হয়। তখন একজন দাদা-দাদি নিঃশর্ত ভালোবাসার বিমূর্ত প্রতীক হতে পারেন।

খুব বৃদ্ধ ভাববেন না

পরিবারের প্রবীণ সদস্যকে কখনোই খুব বৃদ্ধ ভাববেন না। বরং আপনার উচিত তাকে সামাজিকভাবে সক্রিয় রাখার এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুযোগ দেয়া। মানুষের সঙ্গে কথা বলা, ইন্টারঅ্যাক্ট করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। এতে প্রবীণদের জ্ঞানশক্তি হ্রাস প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়, যা তাদের জন্য খুবই ইতিবাচক একটি দিক। আবার ব্যায়াম এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। তাই তাদের সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ দিন। তাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে, দোকানে আড্ডা দিতে, সম্মিলিত ব্যায়ামে অংশ নিতে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বা বাইরে ঘুরতে সহায়তা করুন।

পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা একটি পরিবারের জ্ঞানের উৎস, শান্ত, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রতীক। তারা তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক। এই প্রবীণরা শিশু ও তরুণদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত।


সুঅভ্যাসে সুন্দর দিন

দুধ, চিনি দেয়া চায়ের বদলে সবুজ চা বা গ্রিন টি, অর্গানিক টি পান করতে পারেন।
আপডেটেড ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৬:০১
বেলা অবেলা ডেস্ক

সুস্বাস্থ্যের জন্য কত কিছুই তো করতে হয়। কিছু সুঅভ্যাস রপ্ত করে নিতে পারলে বার্ধক্যেও থাকা যাবে সুস্থ ও সুন্দর। কিছু প্রাত্যহিক কাজে পরিবর্তন আনুন এখনই, রপ্ত করুন সুঅভ্যাস।

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর এবং ওঠার চেষ্টা করুন।
  • সকালে হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। এতে প্রাত্যহিক ব্যায়াম যেমন হবে, তেমনি সকালের বিশুদ্ধ বাতাসের সংস্পর্শে থাকা হবে কিছুক্ষণ, যা শরীর ও মন দুইয়ের জন্যই ভালো। এ ছাড়া বলা হয়ে থাকে, বয়স্কদের শরীরে ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। এ ঘাটতি দূর করতে সকালের নরম রোদের বিকল্প কিছু নেই। তাই সকালের হাঁটা স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
  • ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানি পান করার অভ্যাস গড়তে পারেন। সঙ্গে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • দিনে কয়েক কাপ চা বা কফি পানের অভ্যাস থাকলে সেটা কমিয়ে নিয়ে আসুন। দুধ, চিনি দেয়া চায়ের বদলে সবুজ চা বা গ্রিন টি, অর্গানিক টি পান করতে পারেন।
  • নিয়মিত ডাক্তার দেখানো, রেগুলার চেকআপ করানো উচিত বয়স বাড়লেই। এ বিষয়ে একদম হেলা করা উচিত নয়।


প্রাণবন্ত ৯০ বছর!

স্ত্রীর সঙ্গে জর্জ ডাইড্রিচ।
আপডেটেড ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৬:০০
ফাহ্‌মিদা তাপসী

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, পায়ে গলান দৌড়ানোর জুতাজোড়া এবং বেরিয়ে পড়েন তার নিত্যকার অভিযানে। প্রতিদিন মোটামুটি একই রুটিন তার। বলছিলাম ৯০ বছর বয়সী আমেরিকান ব্যক্তি জর্জ ডাইড্রিচের কথা। প্রতিবেশীরা কমবেশি সবাই জানেন প্রাণবন্ত এ বৃদ্ধের কথা। এমনকি তার প্রাত্যহিক রুটিন সম্পর্কেও মোটামুটি সবাই অবগত। অবশ্য এর কারণ হচ্ছে, ডাইড্রিচ প্রতিদিনই একই সময়ে, একই রাস্তায় দৌড়ে বেড়ান।

সাড়ে ৭টার দিকে কোনো প্রবীণ ব্যক্তি ক্রিস্টাল লেকের বার্লিনা অ্যাভিনিউর পশ্চিম দিকে গলফ কোর্স রোডের দিকে এগিয়ে গেলে সবাই চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারেন তিনিই ডাইড্রিচ। অবশ্য এরপর বার্লিনা অ্যাভিনিউ থেকে বাম দিকে মোড় নিয়ে দৌড়াতেই থাকেন। সেখান থেকে অ্যাকম্যান রোডে এক মাইল দৌড়ান, তারপর ঘুরেফিরে বাড়ি ফিরে যান।

তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ডাইড্রিচ যখন বার্লিনা ও ম্যাকহেনরি অ্যাভিনিউর সংযোগস্থলে পৌঁছান, তখন তিনি দুই হাত দিয়ে আকাশের দিকে একটি চুম্বন করেন, তারপর তার তর্জনী দিয়ে বাতাসে একটি হৃদয়ের আকৃতি আঁকেন।

অনেকেই জিজ্ঞেস করেছিলেন তাকে, কেন তিনি এমনটা করেন প্রতিদিন। তার উত্তর ছিল এমন- আমি ধর্মে বিশ্বাসী লোক। ধর্মীয় বিশ্বাসে কিছু করা খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়টাও তেমন। আমি একদমই নিজের মতো করে প্রভুকে ধন্যবাদ জানাই। আমি তখন বলতে থাকি- ধন্যবাদ, প্রভু। আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটা আমি সব সময়ই করি, এমনকি যখনই কোনো ওয়ার্কআউট বা রেস শেষ করি, আমি সব সময় ধন্যবাদ জানাই।

এই তো কদিন আগেই ডাইড্রিচ তার ৯০তম বয়সে পা রেখেছেন। এমন বয়সে অন্যরা যখন চারপাশ নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, এমনকি সবকিছু নিয়েই বিরক্ত হয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন, নিভৃত যাপন করেন, ঠিক সে বয়সে ডাইড্রিচ প্রতিটা দিন, প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করে যাচ্ছেন। এমনকি প্রতিদিন তিন মাইল দৌড়ানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে উতরে যাচ্ছেন।

ডাইড্রিচের জীবনে কি প্রতিটা দিনই তবে সমান? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই। অনেকেই কখনো কখনো এ প্রবীণকে বলেও বসেন- বাইরে যখন তুষারপাত হয় সেদিনও কি তুমি দৌড়াতে বেরিয়ে পড়ো? এমন প্রশ্নগুলোর উত্তরে ডাইড্রিচ জানান- ২০২২ সালের শীতলতম দিনে, ক্রিসমাসের ঠিক আগে, তাপমাত্রা মাইনাসে নেমে এসেছিল অনেকটুকু। শীতলতম সে দিনটিতেও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে ঠিকই বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি।

এ বয়সে এসে নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস করেছেন ডাইড্রিচ এমনটা কিন্তু না। বরং তিনি সব সময়ই নিজের প্রতি ভীষণ যত্নশীল। চেষ্টা করে গেছেন প্রাণবন্ত জীবনযাপন করার। অনেক মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এ প্রবীণ যদিও আজকাল নিজের প্রতি খানিকটা হতাশ, এখন আর আগের মতো দৌড়াতে পারেন না বলে। তার ভাষ্যমতে, আমি সত্যিই ধীর হয়ে গেছি, আমি তবু আশাবাদী অন্তত জগিং করতে পারব, হয়তো ধীরগতিতে জগিং করতে পারি। যদি আমাকে একটা সময় জগিং থামিয়ে দিতে হয়, তখন আমি হাঁটব। তবু থেমে যাব না।

এতটা বছর ধরে নিয়মিত দৌড়াচ্ছেন, অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণীয় চরিত্র তিনি। অন্যের কাছে অনুপ্রেরণা হওয়াটা অনেক বড় পাওয়া মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ডাইড্রিচ বলেন, এমন খুব কমই হয়েছে যে কোন একটা সপ্তাহে কেউ আসেনি আমার কাছে কিংবা কেউ বলেনি যে ‘আমি আপনাকে বছরের পর বছর ধরে দেখেছি। আমি সব সময় আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।’ অপরিচিতদের কাছ থেকে শোনা এমন মন্তব্য সত্যিকার অর্থে আমাকেও অনুপ্রাণিত করে। কখনো কখনো কেউ এসে আমার সঙ্গে সেলফিও তুলতে চান।

যারা নিয়মিত দৌড়ান, কমবেশি সবাই ডাইড্রিচকে চেনেন। সবার চোখেই তিনি প্রসংশার পাত্র। দৌড়াতে দৌড়াতে কেউবা থামেন কথা বলার জন্য, এগিয়ে আসেন ৯০ বছর বয়সী ব্যক্তির কাছে। শোনেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি সবাইকেই সময় দেন, কথা বলেন মন খুলে। যেন এ বয়সে এটাই তার প্রাপ্তি।

সূত্র: ডেইলি হেরাল্ড


বয়স্কদের মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখার সৃজনশীল কৌশল

বিভিন্ন ধরনের গেমস ও ধাঁধার সমাধান বয়স্ক ব্যক্তিদের মানসিক দক্ষতাকে বাড়াতে সহায়তা করে। এগুলো বয়স্কদের মস্তিষ্ককে নানাভাবে উদ্দীপিত করে।
আপডেটেড ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৫:৫৯
রবিউল কমল

বয়স বাড়লে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। তবে কিছু উপায় আছে, যেগুলো অনুশীলন করলে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি কমার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। একই সঙ্গে তাদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে সহায়তা করে। এ জন্য প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে তাদের প্রিয় কার্ড গেমস, ধাঁধা বা শখ। যেগুলো অনুশীলন করলে তাদের মানসিক দক্ষতা বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।

মানসিক ব্যায়াম

আগেই বলেছি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। এমনকি বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তি দেখানোর সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। যাদের মস্তিষ্কবিষয়ক কোনো রোগ নেই তাদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। আর যাদের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। শরীরকে ফিট রাখতে যেমন শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন, তেমনি মস্তিষ্ককেও ঠিক রাখতে মানসিক ব্যায়ামের প্রয়োজন। মানসিক ব্যায়াম মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে চিন্তার প্রসার, যুক্তি দক্ষতা, স্মৃতিশক্তিতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মানসিক দক্ষতা কী?

মানসিক দক্ষতা হলো একজন ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা, যা ৫টি ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া সব তথ্য প্রক্রিয়ার কাজ করে। একজন মানুষের জন্য এই দক্ষতা খুবই প্রয়োজন। যেমন- চিন্তা, বলা, পড়া এবং শেখা। মানসিক দক্ষতা কমে যাওয়া বয়স্ক ব্যক্তির জীবনযাত্রাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। একই সঙ্গে প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।

বয়স্কদের মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর উপায়

বয়স্কদের মানসিক দক্ষতা ধরে রাখতে ও উন্নত করতে সহায়তা করার অনেক উপায় আছে। এর মধ্যে প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপ, ধাঁধা, কারুশিল্প এবং বিভিন্ন গেমস অন্তর্ভুক্ত।

অর্থবহ কথোপকথন

মানসিক দক্ষতা ধরে রাখতে বয়স্কদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অর্থপূর্ণ কথোপকথন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায়ই মানুষ সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে সরে যান। ফলে তারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্যদের কাছে বলার সুযোগ কম পান। তাই কোনো পরিস্থিতি বা ঘটনা নিয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। সুতরাং, তাদের সঙ্গে কথোপকথন বাড়াতে হবে। তবে অবশ্যই তা অর্থপূর্ণ হতে হবে। অকারণে তাদের বিরক্ত করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

শখ এবং কারুশিল্প

একটি নতুন শখ বা কোনো কারুশিল্প শেখা বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সক্রিয় এবং সজাগ রাখার দুর্দান্ত উপায়। এগুলো চোখের ও হাতের সমন্বয়ের পাশাপাশি মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। যদি কারও আর্থ্রাইটিসের মতো শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকে তাহলে কোনো কারুশিল্প বা শখকে এমনভাবে অনুশীলন করান যেন তারা উপভোগ করেন।

জলরঙে ছবি আঁকা

জলরঙের ছবি আঁকতে অনেকেই পছন্দ করেন। বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে এটি কার্যকর উপায়। তাদের ইচ্ছামতো আঁকতে দিন। তাহলে নিজের আঁকা নিজেই উপভোগ করবেন। এটি কেবল তাদের শারীরিক সমন্বয়ে সহায়তা করবে না, তাদের আবেগগুলোকে স্ব-প্রতিফলিত করতে উৎসাহিত করবে।

গান শোনা ও মেডিটেশন

বয়স্কদের জন্য গানের একটি তালিকা তৈরি করুন। সেখানে তাদের পছন্দের গানগুলো রাখুন। এগুলো তাদের ইতিবাচক স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গান শোনা মানসিক দক্ষতা ও মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। এই গানগুলো তাদের মেডিটেশনের সময় বাজাতে পারেন। গান বাজানো শেষে তার মেডিটেশনে সহায়তা করুন। প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিন।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে হাঁটা

যদি শারীরিকভাবে হাঁটতে কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে বয়স্কদের প্রকৃতির কাছে নিয়ে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে হাঁটুন। এটি একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে নিজেদের এবং আশপাশের মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া প্রকৃতির সান্নিধ্য তার মনকেও প্রফুল্ল রাখবে। হাঁটার সময় যেসব গাছ, উদ্ভিদ, প্রাণী সম্পর্কে জানতে চান। এতে তার মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হবে। হাঁটার সময় তাদের অনুভূতি নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন- হাঁটতে কেমন লাগছে, বাইরে থাকার অনুভূতি কেমন, প্রকৃতিকে কেমন লাগছে ইত্যাদি।

গেমস ও ধাঁধা

বিভিন্ন ধরনের গেমস ও ধাঁধার সমাধান বয়স্ক ব্যক্তিদের মানসিক দক্ষতাকে বাড়াতে সহায়তা করে। এগুলো বয়স্কদের মস্তিষ্ককে নানাভাবে উদ্দীপিত করে। অনেক ওয়েবসাইট শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা প্রবীণদের জন্য গেমস এবং ধাঁধা সরবরাহ করে। সেখান থেকে আপনি পছন্দমতো গেমস বা ধাঁধা সংগ্রহ করতে পারেন।

মোজাইক টাইলস ধাঁধা

প্রায় ১০০টি মোজাইক টাইলস টুকরো করুন। তারপর এগুলো ব্যবহার করে তাদের পছন্দমতো কোনো প্রতিলিপি তৈরি করতে বলুন। তা হতে পারে ফটোগ্রাফ, ম্যাগাজিনের ছবি বা অন্য যেকোনো কিছু। এই ধাঁধাটি ক্রমবর্ধমানভাবে চালিয়ে যান। তাহলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, মনোনিবেশ করার ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বাড়বে। টাইলসের টুকরোগুলো সিরামিক পাত্র, প্লেট বা সাধারণ প্লাইউডে লাগাতে পারেন।

প্যাস্টেল স্কেচ

বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে ও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে প্যাস্টেল স্কেচ দারুণ উপকারী। তাদের কিছু আঁকতে বলুন। তবে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তাহলে তারা কোনো কিছু আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। বড় আকারের পেস্টেল কেনা যায়, আর এগুলো ধরাও সহজ। আঁকা শেষ হলে তা ফ্রেমবন্দি করুন এবং দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তাতে তারাও আনন্দিত হবেন।

ফটোগ্রাফি হান্ট

বয়স্কদের জন্য কোনো ব্যক্তি, স্থান বা বস্তুর ছবি তোলার আয়োজন করতে পারেন। ক্যামেরা নিয়ে ইনডোর বা আউটডোর ফটোশুটের ব্যবস্থা করুন। এ জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্টাইলে ছবি তোলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে তাদের মনোনিবেশের ক্ষমতা বাড়বে।

আরও কিছু

বয়স্কদের মস্তিষ্ক সক্রিয় ও মনকে সজাগ রাখতে এবং তাদের সক্রিয়ভাবে রাখতে সহায়তা করে এমন সৃজনশীল কাজ খুঁজে বের করুন। তারপর তাদের সেগুলো অনুশীলন করান। তবে এগুলো অবশ্যই তাদের বয়সের উপযুক্ত হতে হবে। কারণ বয়স্ক হলেও তাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।


ভালো ঘুমের জন্য মোজা পরিধান করুন

ঘুমানোর সময় মোজা পরলে পায়ের রক্ত চলাচল ভালো হয়। ছবি: সংগৃহিত
আপডেটেড ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৪৩
মুনিরা পৌষি

মাঘের শীতে বাঘও কাবু, প্রচলিত কথা এটি। সময় পরিক্রমায় এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাঘ কাবু হওয়ার মতো শীত এখন আর মাঘ মাসে পাওয়া যায় না। তবে ঘরের বাইরে যে একদমই ঠাণ্ডা নেই এমনটাও নয়। বিশেষ করে রাতে ঠাণ্ডা বাড়তেই থাকে যেন। শীতের এ সময়টাতে বাড়ির প্রবীণ এবং শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। শীত থেকে রক্ষা পেতে এবং নিজেকে উষ্ণ এবং আরামদায়ক রাখতে রাতে ঘুমানোর সময় পায়ে মোজা পরিধান করে ঘুমান অনেকেই। কিন্তু এটা কি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই বাসা বাঁধে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমানোর সময় মোজা পরা পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং ভালো ঘুমের জন্যও সহায়ক। কারণ, ঠাণ্ডা পা রক্তনালিগুলোকে সংকুচিত করে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে কম সঞ্চালন করে। তবে এর মানে এই নয় যে মোজা না পরা খারাপ। বরং মোজা পরার কারণে আপনি কেমন বোধ করছেন তার ওপর নির্ভর করে পুরো বিষয়। বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে রাতে মোজা পরে ঘুমানোর, যেমন-

  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোজা পরার প্রধান সুবিধা হলো এটি শরীরকে গরম রাখে,বিশেষ করে শীতকালে।
  • পা শুষ্ক হওয়া বা ত্বকের শুষ্কতা থেকেও রক্ষা করে।
  • ঘুমানোর সময় মোজা পরলে পায়ের রক্ত চলাচল ভালো হয়।
  • গোড়ালি ফেটে যাওয়ার সমস্যা দূর করে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, শীতল পরিবেশে ঘুমের সময় মোজা ব্যবহার করলে পায়ের উষ্ণতা ঘুমের মানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তবে সব রকম পরিস্থিতিতে মোজা পরিধান করে ঘুমানো ভালো নাও হতে পারে। বিশেষ করে খুব আঁটসাঁট মোজা পরলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে। এতে স্কিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে যদি ব্যবহৃত মোজাগুলো নাইলনের মতো সিন্থেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের পায়ের সংক্রমণ রোধ করতে বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক ও নরম ফাইবার দিয়ে তৈরি মোজা বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে মোজার সঠিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত না করার ফলে বিরূপ পরিণতি হতে পারে। এ ছাড়া গরম আবহাওয়ায় মোজা পরা এড়িয়ে চলা উচিত, এতে পায়ে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।


পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে সম্পূরকই ভরসা

ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন হয় সম্পূরক বা সাপ্লিমেন্টের। ছবি: সংগৃহিত
আপডেটেড ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৪২
তানজিনা আলম

বয়স ৫০-এর কোটা পার হলেই বিভিন্ন পরিবর্তনের সম্মুখীন হন মানুষ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বলিরেখা, দুর্বল শ্রবণশক্তি, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা এবং পাকা চুল মনে করিয়ে দেয় আগত বার্ধক্য। সেই সঙ্গে দেখা যায় অপ্রত্যাশিত পুষ্টির ঘাটতি। আবার ধীর বিপাক এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যের জন্য দৈনিক পুষ্টির এই চাহিদা পুরোপুরি পূরণ হয় না। ফলে প্রায়ই ভিটামিন এবং খনিজ ঘাটতি হয়। ন্যাশনাল অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, ৫০ বছরের বেশি বয়সী দুজন নারীর মধ্যে একজন এবং পুরুষদের চারজনে একজন দুর্বল হাড়ের সমস্যায় ভোগেন। অত্যাবশ্যক ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন হয় সম্পূরক বা সাপ্লিমেন্টের। কোন ধরনের সাপ্লিমেন্ট সচরাচর গ্রহণ করা যেতে পারে একটা নির্দিষ্ট বয়স পর তা জেনে নিন-

ভিটামিন বি বা কোবালামিন

ভিটামিন বি আটটি জটিল ভিটামিন নিয়ে গঠিত। বি ভিটামিন শরীরের প্রায় প্রতিটি কাজেই অংশ নেয়। তবে বয়স ৫০ এবং ৬০ এরপর এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্নায়ুর স্বাস্থ্য, দৈহিক শক্তি, লোহিত রক্তকণিকা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত বলে এর ঘাটতির ফলে আসে ক্লান্তি, স্নায়বিক সমস্যা, রক্ত স্বল্পতা এবং এমনকি পরিচালিত করে ডিমেনশিয়ার দিকেও।

ভিটামিন ডি
বয়সের সঙ্গে হাড় দুর্বল হয় এবং ফ্র্যাকচারেরেআশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন ডি প্রধানত সূর্যের আলো থেকেই পাওয়া যায় এবং ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়। এটি সুস্থ হাড়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ক্যালসিয়াম প্রক্রিয়াকরণেও সাহায্য করে। আর ভিটামিন ডি সম্পূরক হিসেবে পেতে প্রতিদিন রোদের সংস্পর্শে আসাই যথেষ্ট।

ক্যালসিয়াম
ভিটামিন ডি-ও অকার্যকর হতে পারে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে। হাড় এবং দাঁতের জন্য ক্যালশিয়ামের উপযোগিতা অনেক। দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে তাই এর সম্পূরকও প্রয়োজন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তথ্যমতে,
১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের শরীরে প্রতিদিন প্রয়োজন ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম। বয়স ৫১ থেকে ৭০ এর মধ্যে হলে এই প্রয়োজনীয়তা কিছুটা বেড়ে ১২০০ মিলিগ্রাম হয়। এ ছাড়া ৭০-এর বেশি বয়সীদেরও এই পরিমাণ ক্যালশিয়াম প্রয়োজন।

ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের শত শত কাজে ভূমিকা পালন করে। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং প্রদাহের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে এটি।


ফরাজী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনজুরুল আহসান সুজন জানান, মেনোপজের পর পঞ্চাশোর্ধ নারীদের হাড় দুর্বল থাকে। তাই ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডির প্রয়োজন হয়। পুরুষরাও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এগুলো গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস থাকলেও ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করা যায়। তবে এগুলো অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত যাতে না হয়, তাই আগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।


মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তনকে জানুন

ব্যায়াম ইয়োগার পাশাপাশি সকালে হাঁটার অভ্যাস মেজাজ ফুরফুরে রাখে। ছবি: সুদীপ্ত সালাম
আপডেটেড ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৯:৪৩
বেলা অবেলা ডেস্ক

এই ফুরফুরে মেজাজ তো এখনই মেজাজ তুঙ্গে, বয়স বাড়লে এমনটাই নাকি স্বাভাবিক। মেজাজের এমন হুটহাট পরিবর্তনকে দুই শব্দে মুড সুইং হিসেবে প্রকাশ করা হয়। একটা বয়সের পর মেজাজের এমন পরিবর্তনকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই ধরা হয়। নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয় মেনোপজের পরপরই এ সমস্যা প্রবল আকারে দেখা দেয়। বাড়ির বয়স্কদের এরূপ আচরণে সবার যেমন মন খারাপ হয়, তেমনি তাদের নিজেদেরও এ নিয়ে অস্বস্তির শেষ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুড সুইং বা মেজাজের এমন হুটহাট পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো মানসিক অসুস্থতা থেকেও এমনটা হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রথমেই জেনে নিতে হবে কী কী কারণে এমনটা হতে পারে। তাহলেই সতর্ক থাকা যাবে অনেকটাই। জেনে নিন মুড সুইংয়ের কারণগুলো-

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ

প্রাত্যাহিক নানা ঝামেলা এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যার কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, যা মেজাজ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে ধরা হয়। শুধু যে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনাই মেজাজ বদলে দেয় এমনটি কিন্তু নয়। বরং অনেক সময় ভালো খবর, খারাপ খবর দুই মিলেই একটি মিশ্র মনোভাবের তৈরি করে, যা মেজাজের উত্থান-পতনের জন্য দায়ী। আর এ সমস্যায় বেশি পড়তে হয় সংবেদনশীল মানুষের। এমনকি ঘুমের স্বল্পতার কারণেও এ সমস্যায় পড়তে হয় কাউকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, তাই বয়স্কদের মাঝে মুড সুইংয়ের প্রবণতাও বেশি থাকে।

বাইপোলার ডিজঅর্ডার

একই সঙ্গে উচ্ছ্বাস এবং বিষণ্নতা মিলে যে মানসিক অবস্থার তৈরি করে সেটিকে বলা হয় বাইপোলার ডিজঅর্ডার। এ সমস্যায় জর্জরিতদের মুড সুইং দীর্ঘস্থায়ী হয় সাধারণত। বলা হয়ে থাকে, বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয় বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি। জীবনের একটা ধাপে এসে আকাঙ্ক্ষিত ছুটি ধরা দিলেও কর্মহীন, অফুরন্ত সময় যেন সাংঘর্ষিক মনে হয়। আবার পারিবারিক সময় কাটানোর সুযোগ আসে যেমন তেমনি প্রতি মুহূর্ত নিজেকে অকেজো ভাবার প্রবণতাও বাড়তে থাকে। সব মিলে একটা কিছু ভালো হচ্ছে ভেবে একদিকে যেমন স্বস্তির হাসি হাসেন অন্যদিকে সেটিই যেন মনপীড়ার কারণ হয়ে ওঠে। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত প্রবীণদের তাই বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। অন্তত কেউ একজন বুঝুক তাকে এমনটি চাওয়া তাদের থাকেই।

হরমোনের পরিবর্তন

বয়স বাড়ছে মানেই হরমোনের পরিবর্তন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়াটাও সময়সাপেক্ষ। মানিয়ে নেয়ার জন্য যে সময়টুকু প্রয়োজন, এর মধ্যেই ঘটে বিপত্তি। তখনই মেজাজের উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া নারীর মেনোপজের সময় শুরু হলে মুড সুইং হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা যেন।

সমাধান টানবেন যেভাবে

এমন হুটহাট মেজাজ রং বদলাতে থাকলে পরিবার, প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। সব সময় কেউ হয়তো বুঝে নিতে পারে না, কী করা উচিত। তাই সমস্যার সমাধান নিজেকেই টানতে হয়। অবসর সময়ে নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। সম্পর্কোন্নয়নের জন্য প্রিয়জনের সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটাতে পারেন। এতে অপর পক্ষের মনে জমে থাকা কালো মেঘ কেটে যাবে। হয়তো কখনো মেজাজের লাগাম ধরে না রাখতে পেরে কারও সঙ্গে বাজে আচরণ করে ফেলেছেন। মানসিক স্থিরতা এলে তাকে বুঝিয়ে বলুন বিষয়টি। তিনি ছোট হোন কিংবা বড়, তার কাছে ক্ষমা চাইতেও ভুলবেন না। এতে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্যায়াম, ইয়োগা, মর্নিং ওয়াক বা সকাল বেলা হাঁটার অভ্যাস, বইপড়া, ভালো সময় কাটানো ইত্যাদি মুড সুইংকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর যখনই মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না, তখনই এক গ্লাস পানি পান করুন। দেখবেন তৎক্ষণাৎ মেজাজ সামলে উঠবেন।


banner close