ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা এখন কম-বেশি সবাই করেন। গৃহিণী থেকে শুরু করে কর্মজীবী নারী সবাই মোটামুটি সচেতন এ বিষয়ে। অনেকে নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করার পাশাপাশি ব্যায়াম কিংবা শারীরিক কসরত করছেন ফিট থাকার জন্য। ওজন কমানোর তরিকায় ফাস্টিং, উপোস থাকা বা না খেয়ে থাকার একটি বিষয় প্রচলিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি বেশ ভালো হাতিয়ার। তবে অনেকেই কেবল ভেবে থাকেন একবেলা বা দুবেলা উপোস করলেই বুঝি ওজন কমানো গেল। ফলে না খেয়ে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলেন তারা। কিন্তু যদি সঠিক উপায়ে ফাস্টিং না করা হয়, তাহলে হিতে বিপরীতই ঘটে। ওজন কমার বদলে বেড়ে যায়। অন্যদিকে নানা রকম শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বর্তমান সময়ে অনেকেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকেন, বাকি সময়টায় অবশ্য কোনো বিধিনিষেধ নেই, যা খুশি খাওয়া যায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারা দিন ফল খেয়েও থাকা যায়।
উপোস যেমনই হোক না কেন যদি এতে আপনার অম্বলের সমস্যা হয়, কিংবা দুর্বলতা কাজ করে তাহলে বুঝতে হবে যে, এ ধরনের উপোস আপনার জন্য নয়। অন্যদিকে অনেকেই ফাস্টিং করার সময়ে পানিও পান করেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি পান না করলে শরীর দ্রুতই আর্দ্রতা হারায়। শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে দুর্বলতা, মাথাব্যথাসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই পানি পানের ব্যাপারে কথা বলে নিতে পারেন আপনার ডায়েটিশিয়ানকে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যারা করেন তারা ভালো পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই শুরু করুন। অন্যদের দেখে দেখে অনুসরণ করা একদমই উচিত হবে না। মনে রাখবেন একেক মানুষের শরীর একেক রকম। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সব সময় কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন। যার মধ্যে রয়েছে- রাতের খাবার ৮টার মধ্যে সেরে ফেলার অভ্যাস। অন্যদিকে পর দিন সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার আগে আর সলিড কিছু খাবেন না। কেবল পানি পান করতে পারেন। এতে ফাস্টিং হয়ে যাবে।
মনে রাখবেন, উপোস করার আগে বা পরে আপনি কী খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে শরীর কেমন থাকবে। তাই হালকা তেল-মসলায় রান্না করা খাবার, ফল বা ছানার ওপর আস্থা রাখুন। ওজন কিন্তু কেবল উপোস করলে বা কম খেয়ে থাকলেই কমবে না। আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মও। ব্যায়াম করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবেই ভালো থাকবেন।
ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটার একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে সত্তরের দশকের প্রথম দিকে একটি বিশেষ শর্ত জুড়ে দেয়া হলো ‘নারীরা আবেদন করার প্রয়োজন নেই!’ কিন্তু নারী হয়েও তিনি আবেদন তো করলেনই, সেই সঙ্গে তৎকালীন চেয়ারম্যান জে আর ডি টাটাকে লিখে জানতে চাইলেন এই লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণ। পোস্টকার্ডে এও লেখেন- এই নিয়োগ প্রক্রিয়া লিঙ্গ পক্ষপাতের প্রমাণ। লিঙ্গ-বৈষম্যের এই শক্তিশালী অভিযোগ ও সাহসী পদক্ষেপের কারণে তাকে ডাকা হলো একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে।
অবিলম্বে ভারতে প্রথম মহিলা প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাকে। এভাবেই টাটার ইতিহাসে যুক্ত হন প্রথম নারী প্রকৌশলী সুধা মূর্তি। কিন্তু যাত্রা সহজ ছিল না মোটেও। ক্লাসে ৫৯৯ জন ছেলে আর একজনই মেয়ে। সে সময়ে মেয়েরা তেমন কেউ পড়েননি প্রকৌশলবিদ্যায়। সুধা জোর করে ভর্তি হন কর্নাটকের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। তিনি সে শহরের প্রথম ছাত্রী। কলেজের প্রিন্সিপ্যাল সুধাকে ডেকে বলেছিলেন, তিনটি শর্ত মানতে হবে- প্রতিদিন শাড়ি পরে আসতে হবে, কলেজ ক্যান্টিনে ছেলেদের ভিড়, ওদিকে যাওয়া যাবে না এবং কোনো ছেলের সঙ্গে ক্লাসে কথা বলা যাবে না। তিনি অক্ষরে অক্ষরে তিনটিই মেনে চলতেন। কিন্তু কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে তিন নম্বর শর্তটি আর মানতে পারলেন না। কারণ ছেলেরা তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ফিরল এবং এসে কথা বলল। সেই ছয় শ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন সুধা।
বিপত্তি ছিল আরও। সেখানে পড়ানো হবে ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজিতে ততোটা দক্ষতা নেই বলে মা-কে জানান আশঙ্কার কথা। মা এর উত্তরে জানান- স্রোতকে এড়িয়ে না গিয়ে স্রোতে টিকে থাকার চেষ্টাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যস, আর পিছিয়ে যাননি। ফলাফল ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হন স্বর্ণপদকজয়ী। কম্পিউটার সায়েন্সে এমই করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে। সেখানেও প্রথম হন। আবারও স্বর্ণপদক পান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে।
১৯৮১ সালে স্বামী নারায়ণ মূর্তির চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্তেও তিনি সাহস দেন। দেন আর্থিক ভরসাও। পারিবারিকভাবে ব্যবসার কোনো ইতিহাস না থাকলেও প্রযুক্তি ও প্রকৌশল সংস্থা ইনফোসিস তৈরিতে স্বামীর পাশে ছিলেন পুরোদমে। বহুজাতিক এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ তিনটি সবচেয়ে মূল্যবান আইটি পরিষেবা ব্র্যান্ডের একটি এবং বিশ্বের শীর্ষ ১৫০টি মূল্যবান ব্র্যান্ডের মধ্যে করে নিয়েছেন নিজের জায়গা। বর্তমানে তিন লাখের বেশি কর্মী কাজ করে ‘ইনফোসিস’-এ। নারায়ণ মূর্তি মালিক ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ডের। প্রচুর অর্থসম্পদ থাকার পরেও সুধা মূর্তি ২৩ বছরে কোনো শাড়ি না কিনে, কিনেন বই। সাধারণ থাকাটাই যেন তার পরা সবচেয়ে দামি অলংকার।
একটি পাখা পেলে তুমি কী করতে- এমন প্রশ্নের জবাবে একদিন দাদাকে বলেন, লাইব্রেরিতে গিয়ে সব বই পড়ে আসব। বই পড়ার তার এই নেশা ঠেকেছে ‘প্রতিটি স্কুলের জন্য একটি গ্রন্থাগার’- এই দৃষ্টিভঙ্গিতে। তারই সৌজন্যে স্কুলগুলোতে স্থাপিত হয়েছে ৭০ হাজার লাইব্রেরি। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জনস্বাস্থ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং তৃণমূল পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন- এমন অনেক সমাজসেবায় যুক্ত এই মানবহিতৈষী নারী।
লিখেছেন অনেক বই। কথা বলেন অনুপ্রেরণার। পেয়েছেন খ্যাতি, সম্মান, ভালোবাসা। এ বছরই পেয়েছেন ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ। দৃঢ়তা, সাহস, আত্মবিশ্বাস আর সাদামাটা জীবন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে তার জীবন্ত উদাহরণ হয়ে এই নারী আজ এবং আগামীর নারীদের জন্য সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অবিচল নিদর্শন হয়ে।
বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার প্রতিযোগিতামূলক। সবাই যেন ছুটছে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য। কঠিন এ রাস্তায় কেউ হারে, কেউ জেতে। নারীর জন্য এ পথটুকু আরও একটু বেশিই কঠিন যেন। তবে কিছু বিষয় রপ্ত করে নিতে পারলে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকা সম্ভব অনেকটাই। কিছু গুণাবলি তাই এখন থেকেই অনুসরণ করুন, আয়ত্ত করুন। জেনে নিন তেমন কয়েকটি বিষয়-
বন্ধুতা প্রযুক্তির সঙ্গে
বর্তমান বিশ্ব পুরোটাই প্রযুক্তিনির্ভর। অদূর ভবিষ্যতে এ নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে বৈকি কমবে না। বলা চলে, ভবিষ্যৎ দনিয়া অটোমেটেড হয়ে যাবে, প্রযুক্তির বদল ঘটবে, নিত্যনতুন প্রযুক্তির প্রয়োগও হবে। সে সব প্রযুক্তি যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়ত্ত করে নিতে না পারেন চাকরির বাজারে পিছিয়ে থাকবেন অন্যদের তুলনায়। কাজেই প্রযুক্তির সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব না থাকে, এখন থেকেই তা করার সময় এসেছে।
মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা
যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া বেশ ভালো গুণ বটে। কর্মক্ষেত্রে এ গুণ আরও অনেকটা এগিয়ে রাখবে যে কাউকে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তা সামাল দিয়ে সম্পন্ন করার ক্ষমতা আপনাকে অন্যদের তুলনায় আলাদা করে তুলবে। যেকোনো পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেয়া এবং তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার অভ্যাস না থাকলে এখনই রপ্ত করে নিন।
নতুন দক্ষতা অর্জন করুন
নিজের কাজটুকুই ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে এখন আর বিশ্ব আটকে নেই। মাল্টিটাস্কারদের জয়জয়কার এখন সর্বত্রই। তাই নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নতুন নতুন দক্ষতা যোগ করুন, যা শুধু আপনাকে কাজের ক্ষেত্রে অনন্য করেই তুলবে না সঙ্গে সঙ্গে আপনার আত্মবিশ্বাসের পাল্লাও ভারী করবে।
সৃজনশীলতায় মনোযোগী হোন
প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতেও মানুষের বিকল্প কিছু হবে না। অন্তত সৃজনশীলতায় যন্ত্র মানুষকে হারাতে পারবে না। তাই ভবিষ্যৎ যতই প্রযুক্তিনির্ভর হোক, মনে রাখতে হবে যন্ত্র কখনো মানুষকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। সৃজনশীলতা, নতুন অভিনব চিন্তাভাবনা কখনোই আবেদন হারাবে না। নতুনভাবে কাজ করা, নতুন পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনায় নতুনত্ব আনা এ সবই আপনাকে এগিয়ে রাখবে। তাই নিজের সৃজনশীলতার প্রতি আরও একটু বেশি মনোযোগী হোন। এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে আপনি এগিয়ে থাকবেন অনেকখানি।
নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা
পুরো বিশ্ব এখন নারীর ক্ষমতায়নে, নারী নেতৃত্বে বিশ্বাসী। এ চিন্তাধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে থাকুন আপনিও। কর্মক্ষেত্রে দলগত কাজে চেষ্টা করুন নেতৃত্ব গ্রহণ করার। অন্য কেউ পিছিয়ে পড়লেও এগিয়ে আসুন সমস্যার সমাধানে। শুধু নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলি ক্যারিয়ার সমসৃণ করে তুলবে।
কাগজে-কলমে নাম কুলসুম বেগম, ডাকনাম কুসুম। গায়ের রঙের জন্য বাবা-মা স্নেহ করে ডাকতেন লালবড়ু। জন্ম ফরিদপুর শহরের পাশে দয়ারামপুর গ্রামে। ১৯৩৩ সালে ১২ বছর বয়সে শহরের ব্যবসায়ী কফিলউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর আসেন শহরে। ত্রিকালদর্শী এই মানুষটি দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ আর ইতিহাসের নানা উত্থান-পতন দেখেছেন। দীর্ঘ জীবনে তার ৮ সন্তান, আর তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য সংখ্যা ১৮ জন। ১৯৯২ সালে জীবনসঙ্গীর মৃত্যুর পর থেকে এগিয়ে চলেছেন জীবনের স্রোতে। কালের স্রোতে আশপাশের চেনা মুখগুলো ঝরে গেছে। সমসাময়িক বন্ধু কিংবা স্বজন সবাই এখন ছবি, ইতিহাস।
গল্পের আড্ডায় বসলেই ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের স্মৃতি মনে করিয়ে দেন সবাইকে। কিশোরী বয়স তখন। আশপাশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে খাদ্যাভাবে। রিলিফের খাবারের হাহাকার চারদিকে। রোগে আর শোকে বাংলার মানুষের বেঁচে থাকা দেখেছেন। শিল্পাচার্য জয়নুলের বিখ্যাত সেই দুর্ভিক্ষের ছবির কথা মনে হয় তখন। সে সময় সরাইখানা খোলা হয়েছিল ফরিদপুর শহরের বায়তুল আমান এলাকায়। সেই সময়কার ইতিহাসের সাক্ষী এই শতবর্ষী নারী। স্বামীর বড় ব্যবসা আর পরিবারের দায়িত্বের অনেক কিছুই ছিল তার ওপরে। সাংসারিক ব্যস্ততায় সময় কাটাবার জন্য শুনতেন রেডিও। তখন প্রচারিত মধুমালা নাটকের গল্প এখনো বলেন নাতি-নাতনিদের। ফরিদপুরের অরোরা টকিজ (এখন ছায়াবানী) সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছেন। মনে করতে পারেন সাগরিকা সিনেমার কথা। বরাবরই শৌখিন এই মানুষটি নকশি কাঁথা সেলাইয়ের বাইরেও কুরুশকাটার কাজ, পাখা আর শীতল পাটি কিনে তাতে ফুল তোলার কাজ করতে ভালোবাসতেন। এখনো সাহস করে চেষ্টা করেন পাটিতে উল দিয়ে নকশা করতে।
বিয়েতে পরেছিলেন সাদা রঙের মালা শাড়ি। সোনালি জরির সেই শাড়ি কালে কালে বিলীন হয়ে গেলেও পুরোনো স্মৃতি উঁকি দেয় মনে। এপি কোম্পানির ত্রিফলা নারকেল তেল, কসকো সাবান ছিল নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। সাজতেন আলতা আর সুরমায়। ব্যবহার করতেন আতর। মিষ্টি খেতে বরাবরই ভীষণ পছন্দ কুসুমের। কথায় কথায় জানান, পহেলা বৈশাখে বাড়িতে মিষ্টি আনা হতো টিনের জার ভরে। প্রতিযোগিতা করে মিষ্টি খেতেন পরিবারের সবাই। তখন আট-দশটি রসগোল্লা খেতে পারলেও এখন পারেন না অতটা। পিঠা-পায়েশ পছন্দ আগের মতোই। ছেলেমেয়েরা সব সময় চেষ্টা করেন এগুলো তৈরি করে তাকে খুশি রাখতে।
শত বছরেও মলিন হননি এই মানুষটি। তার কারণ মনন আর জীবনযাপনে তিনি জরাগ্রস্ত নন। এমন ঝলমলে থাকার রহস্য তার জীবনীশক্তি আর পরিপাটি থাকার ইচ্ছে। খাদ্য তালিকায় আছে শাকসবজি আর মাছের প্রাধান্য। স্বভাবতই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়েছেন বার্ধক্যজনিত কারণে কিন্তু ডায়াবেটিস বা কোনো জটিল রোগ নেই তার। ফলে খাওয়াদাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
এই বয়সেও চমৎকার শায়ের বলেন তিনি। সাবলীল অসংখ্য প্রবাদবাক্য মুখস্থ তার। গুনগুন করে গানও করেন যখন একা থাকেন। হঠাৎ হঠাৎ অতীতের স্মৃতিচারণা করেন। সেখানে থাকে তার ১১ টাকার শাড়ি, চার টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার, সময়ে-অসময়ে বন্যা, গুটিবসন্ত, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের গল্প।
উত্তরসূরিদের জীবনপ্রবাহে ব্যস্ততা বাড়লেও তিনি একা নন। একাকিত্ব কেমন- এই মানুষটিকে বুঝতে দেন না তারা। কনিষ্ঠ সন্তান নাসিমা আহমেদ সাধারণত প্রতি শীতে মাকে নিজের কাছে আনার চেষ্টা করেন। যোগাড়যন্ত্র করে বসিয়ে দেন পিঠা বানাতে। বিকেলে বসেন চায়ের কাপ হাতে। মেয়ের ধারণা, মা এতে খুশি হন। অনুভব করেন তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি বয়সের ভারে। প্রয়োজনের তাগিদে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে আজ মৌলিক পরিবার হয়েছে। এটাকে নেতিবাচক হিসেবে ভাবেন না তিনি। পৃথিবীর ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ। সে ব্যস্ততার ভিড়ে পরিবারের তরুণ সদস্যরা হয়তো এই প্রবীণ মানুষগুলোর মনের খোঁজ রাখছি না। কুসুমদের রঙিন জীবনের গল্পে আমরা হারানো বাংলাকে দেখতে পাই।
নারী দিবস- বিশ্বব্যাপী যুগান্তকারী এক আলোড়ন। সহস্রাব্দের পিছিয়ে পড়া নারীকে এগিয়ে দিতে অকৃত্রিম আহ্বান। উঠোনের গণ্ডি পেরিয়ে নদী, সমতল এবং আকাশপথেও দীপ্ত বিচরণ করছে নারী।
১৯৫৩ সালের ২৯ মে অ্যাডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শুরু করেছিলেন যেই হিমালয় যাত্রা, এরপর অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন। বাংলাদেশেও অনেকেই আছেন যারা ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের পর্বত আরোহণে অদম্য।
গেল ১০ মার্চ বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বনামধন্য নারী পর্বতারোহীরা। নারী হিসেবে পর্বতারোহণের সাফল্য, প্রতিবন্ধকতা এবং নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন প্রথম বাংলাদেশি নারী এভারেস্ট আরোহণকারী নিশাত মজুমদার এবং হিমালয়ের ৬ হাজার ৩৩২ মিটার উঁচু ডোলমা খাং পর্বতচূড়া আরোহণকারী পর্বতারোহী শায়লা বীথি।
পর্বতারোহণে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটা দেখেন?
নিশাত: পর্বতারোহণ পুরোটাই তরুণদের দখলে। তরুণদের নিয়ে সরকার, রাষ্ট্র ও সমাজ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে। অথচ এদের মধ্যেই আছে উদ্দীপনা। দুঃসাহসিক মানসিকতা। এটি অন্বেষণ করতে না পারলে তখন তারা মাদক, জঙ্গিবাদ কিংবা ধূমপানে জড়িয়ে পড়ে। তারুণ্যের এই বিশাল স্রোতকে যদি দেখানো হয় প্রকৃতির এসব রূপ, তরুণদের অনেক সমস্যাই তখন কমে যাবে।
শায়লা: মানুষ এখন এ বিষয়ে অনেক জানছে, আগ্রহী হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় এ পরিবর্তন সম্ভাবনার কথাই বলছে।
পর্বতারোহণে সীমাবদ্ধতা কী কী বলে মনে করেন?
নিশাত: এই ছেলেমেয়েরা যারা স্বপ্ন দেখে, এই কাজগুলো করতে ভালোবাসে বা চ্যালেঞ্জ নিতে চায়, তাদের পেছনে সহযোগিতা নেই। আমাদের, বড়দের, সমাজের, রাষ্ট্রের উচিত তাদের ওপর ছায়া হয়ে থাকা। যাতে তারা অভিভাবকহীন হয়ে না পড়ে। প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতাও।
শায়লা: পারিবারিক এবং সামাজিক বাধা তো আছেই। রক ক্লাইম্বিং এবং মাউন্টেইনিংয়ের জন্য পাশের দেশ যেমন-নেপাল ও ভারতের তুলনায় রয়েছে সুযোগের অভাব, সরঞ্জাম ও স্থানস্বল্পতা।
পেশা হিসেবে অন্য কাজ করছেন, নেশায় পর্বতারোহী, কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
নিশাত: আমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করি জীবনধারণের খরচ জোগাতে। সেটি আমার পেশা আর পর্বত আমার নেশা। তবে পর্বত আরোহণকারী এই পরিচয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
শায়লা: রুটিরুজির জন্য কাজ করি। পর্বতারোহণে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আর্থিক সহযোগিতা থাকে না। নিজের টাকা দিয়েই অনেক অভিযানে যেতে হয়। সেটিও আসে পেশা থেকে।
পর্বতারোহণে নিজের সবচেয়ে ভালোলাগার এবং দুঃখের মুহূর্ত যদি বলেন-
নিশাত: এভারেস্ট আরোহণের পর দেশে ফেরার দিনটি সবচেয়ে স্মরণীয়।
আর কষ্টের মুহূর্ত বলতে ২০০৯ সালে একটি অভিযানে ইন্সট্রাক্টরকে হারিয়েছি। পর্বতারোহণে যেকেউ, যেকোনো সময়, যেকোনো কিছুর সম্মুখীন হতে পারেন- কিন্তু নিজের চোখের সামনে একটি মানুষকে দেখছিলাম যিনি মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন কিন্তু কিছুই করার নেই। সেই স্মৃতিটা আসলে আমি ভুলতে পারি না।
শায়লা: পাহাড় কিংবা পর্বতে গেলেই বছরের বাকি দিনগুলোর আনন্দের যে রসদ তৈরি হয় এটা ভালো লাগার। ২০১৮ সালে ৭ হাজার মিটারের একটি পর্বত আরোহণে গিয়ে বরফের ফাটলে পড়ে যাই। টিমের সহযোগিতায় সেবার ফিরে আসতে পারি।
ডোলমা খাং আরোহণের পর শায়লা বিথী
যারা পর্বতারোহণ করতে চায় তারা কীভাবে শুরু করবে?
নিশাত: আমার মনে হয়, প্রয়োজন নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করা। আসলেই আমি পাহাড়ে যেতে চাই কিনা। আমি পারব কি না সেটাই শুধু একটু দেখতে চাইলে প্রয়োজন পাহাড়ের উচ্চতায় ট্রেকিং। সেখানে ভালো করলে এবং নিজের যদি মনে হয় আমাকে পাহাড় অভিগমন করতে দিচ্ছে, গ্রহণ করছে তখন আমি মনে করি ট্রেনিং গ্রহণ করা উচিত। কারণ ক্লাইম্বিংয়ের একটি একাডেমিক প্রসেস আছে। ট্রেনিং শেষ করার পর ধীরে ধীরে পাহাড়ের সঙ্গে সখ্য তৈরি করা।
শায়লা: পর্বত আরোহণে আগ্রহী হলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। লক্ষ্যে থাকতে হবে। পরিবার থেকে প্রাথমিক বাধা আসে তখন পরিবারকেও ভালোভাবে বোঝাতে হবে।
শারীরিক সক্ষমতা কী রকম প্রয়োজন?
নিশাত: পর্বত আসলে এমন একটি জায়গা। শারীরিক এবং মানসিক শক্তি দুটোই প্রয়োজন এবং একটি সময় দুটোর সমন্বয়ও প্রয়োজন। দুটোই খুবই জরুরি সেখানে।
শায়লা: যেহেতু পর্বতারোহণে শুধু পায়ে হাঁটতে হয়। সে জন্য শারীরিকভাবে পুরোপুরি ফিট থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনোভাবেই অভিযান সম্পন্ন করা যায় না। পর্বতারোহণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক এবং মানসিক স্থিরতা এবং শতভাগ সুস্থতা।
নারীদের এ ক্ষেত্রে বাধা কেমন?
নিশাত: নারীদের যেকোনো জায়গায় সাপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। নারীরা যেহেতু পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। নারীদের ওই সাপোর্টটা অবশ্যই দেয়া উচিত। না হয় জার্নিটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
শায়লা: বিষয়টি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন এবং নারীদের কাছে আরও নতুন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার। প্রথম বাধা থাকে পারিবারিক। পরিবার থেকে বাধা না থাকলেও আসে সামাজিক এক ধরনের বাধা। সামাজিকভাবে নারীদের এখনো ওই অর্থে সুযোগটা দেয়া হচ্ছে না। আর্থিক অসচ্ছলতাও বড় বাধা।
নারীদের জন্য পর্বত কতটা নিরাপদ?
নিশাত: পাহাড় তো নারী-পুরুষ বোঝে না। পাহাড় বোঝে একজন মানুষ। যার সঙ্গে তার একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হবে। তবে আমাদের নারী-পুরুষের যে সমস্যা তৈরি হয় সেটা সামাজিক কারণে। এই সামাজিক কারণটা একেক দেশে একেক রকম। নিজেদের নিরাপত্তা বুঝেই নারীরা সব জায়গায় যাবে। তবে হিমালয় খুবই নারীবান্ধব একটি জায়গা। আমি মনে করি সেখানে নারীরা খুব নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ট্রেকিং করতে পারে।
শায়লা: নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। হিমালয়ে ট্রেইলগুলো ভীষণ রকম নিরাপদ। ঢাকার রাস্তার তুলনায়ও সেখানে নিশ্চিন্ত মনে হাঁটা যায়।
নারী যারা পর্বতারোহণে যেতে আগ্রহী তারা কী করতে পারেন?
নিশাত: এটি বেশ ব্যয়বহুল স্পোর্টস বলে আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। এ ছাড়া সামাজিক সমস্যা থাকে। বাধা থাকে। বাধাকে ভেবে নিতে হবে আমার জন্য হয়তো ভালো। আমাকে শক্তিশালী করে তুলতে।
শায়লা: নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। ফোকাস রাখতে হবে এবং একদিন না একদিন পর্বতারোহণ হয়েই যাবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ- তানজিনা আলম
ক্লাস, অফিস কিংবা প্রতিদিন ঘর থেকে বেরোতে হচ্ছে কাজে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ কিংবা নিত্যদিনের নানা কাজ সামলে খুব কম সময়ই থাকে। ফলে নিজেকে সময় দেয়া আর যেন হয়েই ওঠে না। এমন অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অচিরেই মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যাবে। বিরক্তি, কাজের প্রতি অনীহা, প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতেই থাকবে। তাই নিজের জন্য সময় রাখা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা থেকেই নিজের জন্য বের করতে হবে নিজস্ব সময়।
প্রিয় গান শোনা, বই পড়া, সিনেমা দেখা, গল্প করা, সেলফ কেয়ার, ছবি আঁকা, নাচা, গান করার মতো অভ্যাসগুলোকে ঝালাই করা, সৌন্দর্য চর্চা, প্রিয় মানুষের সঙ্গে গল্প করা, পরিবারের সঙ্গে কিছু মুহূর্ত কাটানো কিংবা যেকোনো কিছুই হতে পারে, যা আপনার মনকে প্রশান্তি এনে দেয়। নিজের জন্য সারা দিনে অনেকটুকু সময় না পেলেও অন্তত আধা ঘণ্টা সময় তো বের করাই যায়। যে সময়টা একান্তই নিজের।
নিজের জন্য নিশ্বাস নিতে হবে
প্রাত্যাহিক কাজগুলো সেরে হয়তো সে সময় পাওয়া কঠিন। তবে প্রতিদিনের কাজগুলো যদি একটা রুটিনে বা ছকে এঁকে ফেলেন এবং সে রুটিন অনুয়ায়ী সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন তবে খুব একটা সমস্যা তৈরি হবে না নিজস্ব সময় বের করতে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই পারে, সে জন্য হয়তো ছাড় বিবেচনা করা যায়। তবে দিন শেষে একদম নিজের জন্য নিশ্বাস নিতে ভুলে গেলে চলবে না একদমই।
অভ্যাসের লাগাম ধরুন
বাড়ি ফিরে ব্যাগ রেখে মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে যাওয়ার অভ্যাস অনেক সময় নষ্ট করে ফেলে। তাই প্রাত্যাহিক কাজগুলোর কথা মাথায় রেখে এ অভ্যাসকে বিদায় জানান। বরং সব কাজ শেষে এক কাপ চা হাতে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন কিছু সময়ের জন্য।
ইতিবাচক চিন্তা প্রশান্তি আনে
কর্মব্যস্ত সারা দিন শেষে মনকে প্রশান্তি দিতে কত কিছুই তো করি। কিন্তু এসব কিছুই বৃথা হয়ে যায় যদি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি না করা যায়। চেষ্টা করুন সব পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক থাকতে। নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে যান যতটা সম্ভব। নিজের জন্য বরাদ্দ সময়টি তখনই সুখকর হয়ে উঠবে যখন নিজের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে পারবেন।
শিল্পীর রং-তুলিতে নারীর গল্প ফুটে উঠেছে বহুবার। কখনো নারীর সাফল্য, কখনোবা নারীর দুঃখগাথা কিংবা একদমই সাধারণ কোনো গল্পে নারী। ঠিক তেমনভাবেই একুশে পদকজয়ী চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমার মনোমুগ্ধকর ডিজাইনের মাধ্যমে তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য চার শ্রেণির নারীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, যা মূলত প্রদর্শিত হয়েছে গত পহেলা মার্চ ফার্নিচার ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ইশোর বারিধারার ফ্ল্যাগশিপ স্টোরে। উল্লেখ্য, চার নারী সিরিজ নিয়ে কনক চাঁপা চাকমার সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করছে ইশো।
চার নারী সিরিজ নামের এই বিশেষ, কুশন কভার সেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে চার ধরনের নারীর গল্প: নেতৃস্থানীয় আধুনিক কর্মজীবী নারী, গৃহিণী, গার্মেন্ট কর্মী এবং নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী নারী।
বলে রাখা ভালো, স্বনামধন্য ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট কনক চাঁপা চাকমা তার চিত্রকর্মে বাংলাদেশি নারী ও নৃতাত্ত্বিক আদিবাসীদের জীবনকে চিত্রিত করার জন্য বিখ্যাত। ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। এ বছর বাংলাদেশের এই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই একমাত্র চিত্রশিল্পী। সাংস্কৃতিক পরিচয়, ঐতিহ্য ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো তার চিত্রকর্মের মধ্যে গভীরভাবে ফুটে ওঠে। এসব চিত্রকর্মের অনেকগুলোতে তার শেকড়, আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর চিত্রও উঠে আসে। চিত্রশিল্পে কনক চাঁপা চাকমার অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছে।
ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ হিসেবে কুশন দুর্দান্ত বটে। আর এ অনুষঙ্গের মাধ্যমে যদি চমৎকার কোনো বার্তাও প্রচার করা যায়, তাহলে মন্দ কি! চার নারী সিরিজ প্রসঙ্গে ইশোর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়ানা হোসেন বলেন, ‘চার নারী সিরিজ একটি লিমিটেড এডিশন লাইফস্টাইল কালেকশন। বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরেন এমন চার শ্রেণির নারীর চিত্রায়ণের মাধ্যমে একে জীবন্ত করে তুলেছেন কনক চাঁপা চাকমা। এমন একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই কালেকশনের মাধ্যমে সবাই তার চিত্রকর্ম উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।’
নারীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ২০২২ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করেছিল শান্তিবাড়ি। শুরু থেকেই নারী উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ইট-পাথরের এই শহরে নারীদের জন্য যেন এক টুকরো বসন্ত বয়ে এনেছে শান্তিবাড়ি। নারীরাও একটু শান্তি আর জীবনের নানা সমস্যার সমাধানে পাড়ি জমাচ্ছেন শান্তিবাড়িতে। রাজধানীর লালমাটিয়ার অনিন্দ্য সুন্দর এক পরিবেশে এর অবস্থান।
শারমিন শামস, সুমী শাহাবুদ্দিন, কিশোর জাবীন, নাহিদ শামস, অপরাজিতা গোস্বামী ও অনির্বাণ ভৌমিক- এই ছয়জন মিলে গড়ে তুলেছিলেন শান্তিবাড়ি। এ ব্যাপারে শান্তিবাড়ির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শারমিন শামস জানান, ‘নারীদের জন্য এই শহরে একটু নিরিবিলি পরিবেশে শান্তিতে বসার জায়গা সীমিত। অনেকেই মনের কথা বলে হালকা হতে চায়। কিন্তু কে শুনবে তাদের কথা? শান্তিবাড়ি। কোনোরকম জাজমেন্টাল মনোভাব ছাড়া নারীর পাশে দাঁড়াতেই শান্তিবাড়ির আয়োজন করেছি আমরা।’
আইনি পরামর্শ থেকে শুরু করে যেকোনো পারিবারিক সালিশ, দেনমোহর, যৌতুক, তালাক-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করছে শান্তিবাড়ি। পাশাপাশি নারীদের ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং থেকে শুরু করে শান্তিবাড়ির রয়েছে নিজস্ব মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। সম্পত্তির ঝামেলা, সাইবার বুলিংসহ প্রায় সব সমস্যাই সমাধান করছে শান্তিবাড়ি। নারীরা তাদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে চলে যেতে পারেন সেখানে। এ প্রসঙ্গে শ্রেষ্ঠ জয়িতা জয়ী নারী অধিকার কর্মী আয়শা মুক্তি জানান, ‘এই সমাজ ভীষণরকম জাজমেন্টাল। নারীর প্রসঙ্গ এলে কথাই নেই। নারীরা শান্তিতে কোথাও বসবে, দু’কথা বলবে এরকম জায়গার ভীষণ অভাব। বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনে শান্তিবাড়ির কার্যক্রম খেয়াল করছি। নারীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। আমি এখনো যাইনি সেখানে, তবে শিগগিরই যাবার ইচ্ছা আছে। কয়েক দিন আগে মানসিক অবসাদে ভোগা একজন নারী তার সমস্যার কথা বলছিলেন আমাকে। একজন মনোবিশারদের কাছে পরামর্শ নিতে মোটা অঙ্কের টাকা লাগে, এটা সবাই জানেন। কিন্তু শান্তিবাড়িতে এটি খুবই সুলভ। সেই নারীকে শান্তিবাড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমি। মানসিক চাপ এবং অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে সে। শান্তিবাড়ির এরকম আয়োজন খুবই প্রশংসনীয়।’
চিত্রকর্ম প্রদর্শনী থেকে শুরু করে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করেছে শান্তিবাড়ি। নারীরা দ্বিধাহীনভাবে যাচ্ছেন শান্তিবাড়িতে। দুদণ্ড শান্তিতে কথা বলছেন। কেউ কাউন্সিলিং সেশন নিচ্ছেন, কেউবা বই পড়ার পাশাপাশি খাচ্ছেন চা। নারীবান্ধব এই সংগঠনটি সাধারণ নারীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। তারা ভালোবাসায় গ্রহণ করছেন শান্তিবাড়িকে। নারীর পাশে শান্তিবাড়ি দাঁড়াচ্ছে পরিবারের মতোই। নারীদের কাছে গ্রীষ্মের কাঠফাটা দুপুরে বর্ষার এক পশলা বৃষ্টি হয়ে উঠছে শান্তিবাড়ি।
ব্যস্ত জীবন থেকে মাঝেমধ্যে রেহাই পেতে প্রকৃতির কাছে বেড়াতে তো আমরা কমবেশি সবাই যাই। বেড়াতে গিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠি। কিন্তু যে জায়গায় যাই সে জায়গার ইতিহাস কিংবা সে স্থানের ঠিক কবে কার হাত ধরে জন্ম তা জানার আগ্রহ কি কখনো জন্মায় মনে? কিন্তু স্রোতে গা ভাসায় না সবাই। কেউ কেউ বেছে নেয় অন্য পথ। ঠিক যেমন এলিজা বিনতে এলাহী তার ভ্রমণের আগ্রহ শুরু স্কুলবাস থেকেই। স্কুল ছুটির পর যখন বাসটি ঢাকা শহর ঘুরে তার বাড়িতে নিয়ে যেত তখন তিনি লক্ষ্য করতেন ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিগলি ও মানুষদের। ভ্রমণ মানেই যখন জানতেন না, তখন থেকে তার আগ্রহ যেকোনো কিছুর ইতিহাসের। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরেছেন দেশের নানা প্রান্তে। বড় হতে হতে ভ্রমণ যেন তার নেশাতে রূপান্তরিত হয়েছে। শুধু আনন্দ ও সময় কাটানোর জন্য না, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের খোঁজে দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। ‘ঐতিহ্য পর্যটক’ হয়ে গেছে তার নতুন পরিচয়।
১৯৯৯ সালে নেপাল ভ্রমণ দিয়ে শুরু। এরপর দেশ-বিদেশের কতশত স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। নেপাল ভ্রমণে যাওয়ার পরেই তার মাথায় প্রথম হেরিটেজ টুরিজমের কথাটি আসে। বিদেশ ভ্রমণের সময় তিনি লক্ষ্য করেন তারা তাদের দেশের ইতিহাসকে বিশ্বের সামনে চমৎকার করে তুলে ধরে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান অবহেলিতভাবে পড়ে আছে। এ প্রসঙ্গে এলিজা বিনতে এলাহী বলেন, আমাদের দেশের হাজার বছরের ইতিহাস আছে, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আছে, ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা সঠিকভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারছি না, যার ফলে অনেক তথ্যই অজানা রয়েছে যাচ্ছে। এই তথ্য সংগ্রহ করার জন্যই এলিজা ছুটছেন দিন-রাত।
‘কোয়েস্ট: অ্যা হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’ দিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অনুসন্ধান যাত্রা হয় এলিজার। ২০১৬ সালের ১৭ মে রাজধানী ঢাকার বলধা গার্ডেন থেকে শুরু হয় এ যাত্রা। ঐতিহ্য অনুসন্ধান করার বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে তিনি জানান, ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে পড়তে গিয়ে গ্রিক ও ইজিপ্টশিয়ান সভ্যতা ও স্থাপনা সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি। এরপর তিনি নেদারল্যান্ডসের দি হেগ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসে কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে বাংলাদেশের হেরিটেজ ট্যুরিজমের ওপর গবেষণা করেছেন। ‘বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিকাশে হেরিটেজ ট্যুরিজমের গুরুত্ব’ ছিল তার গবেষণার বিষয়বস্তু।
কেবল ঐতিহ্যের অনুসন্ধানই নয়, সেই সঙ্গে এলিজা বিনতে এলাহি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পর্যটনকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের পর্যটন কিছুটা অবহেলিত। আর এই কাজের জন্য তিনি তরুণদের আগ্রহী করতে চেষ্টা করছেন। তার মতে, বাংলাদেশের এসব ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে পারলে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়ানো সম্ভব। এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। সবার প্রচেষ্টায় এটিকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় তার জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব তিনি তা করে যাচ্ছেন।
নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখেছেন এলিজা। এশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি তথ্যবহুল প্রকাশনা ‘এলিজা’স ট্রাভেল ডায়েরি’ ও ‘এলিজা’স ট্রাভেল ডায়েরি-২’ প্রকাশিত হয়। ভ্রমণ করতে গিয়ে তার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে মোগল আমলের সাতটা হাম্মামখানা আর বৌদ্ধবিহারগুলো। সবাই শুধু জানে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা ময়নামতির কথা। তবে তিনি ১৬-১৭টা বৌদ্ধবিহার খুঁজে পেয়েছেন যার মধ্যে শুধু কুমিল্লা জেলাতেই পেয়েছেন পাঁচটা। যেসব নিদর্শনের কথা কেউই জানত না। এ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনার বিষয়ে বিদেশিদের ভীষণ আগ্রহ আছে, তাই তাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা ও থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প শক্তিশালী হবে।
একজন নারী হিসেবে একা ভ্রমণে বের হওয়াতে কেমন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমেই পরিবার থেকে তাকে শুনতে হয়েছে- এসব করে কী লাভ! যেহেতু তিনি সম্পূর্ণ নিজ খরচে ভ্রমণ করেন সে ক্ষেত্রেও সবাই কিছুটা আপত্তি করেছেন। ভ্রমণের নেশার কারণে তিনি চাকরিও ছেড়ে দেন তা নিয়েও বহুজনের বহু কথা তাকে শুনতে হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হতে হয় একটা বিষয়ের তা হলো- যদি তিনি কাউকে পরিচয় দেন এই বলে যে, তিনি একজন ট্রাভেলার তখন অপর পক্ষ উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হতে পারেন না যেন। কেননা, আবার উল্টো প্রশ্ন করেন, শুধু ট্রাভেলার? এর পাশাপাশি কী করেন? ব্যাপারটা এলিজাকে বরাবর খুব কষ্ট দেয়।
কিন্তু ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি তেমন উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে পারেননি। যেই জায়গায়ই গিয়েছেন সবাই তাকে খুব সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন ও তার কাজে সহযোগিতা করেছেন। তিনি কোনো স্থানে যাবার আগে সেই স্থানের ব্যাপারে অনেক পড়াশোনা করে যান যা তার কাজকে অনেকটা সহজ করে দেয়।
এলিজা বিনতে এলাহীর প্রথম ও শেষ প্রেম ভ্রমণ। মৃত্যু পর্যন্ত ভ্রমণ করে যেতে চান ও নতুন প্রজন্মকে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী করতে চান। তিনি বলেন, সবাই এখন ভ্রমণ বলতেই শুধু বোঝে সেন্ট মার্টিন যাওয়া। কিন্তু একটা স্থানে যখন মানুষের এত চাপ বাড়ে তখন ধীরে ধীরে একসময় সেই স্থান আর বসবাসের উপযুক্ত থাকে না, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই এক জায়গার ওপর এত চাপ সৃষ্টি না করে সব স্থানে ঘুরে দেখতে হবে। দেখার মতো চোখ থাকলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে দেশের বাইরে যাবার দরকার হয় না। আমাদের দেশের প্রতিটি কোনায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বাড়ির ছোট সন্তানদের বলার অভ্যাস করতে হবে ‘চল আমরা ইতিহাস জেনে আসি’ কারণ ইতিহাস জানলেই ভবিষ্যৎকে সুন্দর করা সম্ভব। এলিজা বিনতে এলাহি বলেন, ‘ভ্রমণ আমার শিক্ষা, ভ্রমণ আমাকে যা শিখিয়েছে কোনো পাঠ্যবই আমাকে তা শিখাতে পারেনি।’ ভ্রমণ করে বুঝছি আমি মানুষ হিসেবে কত ক্ষুদ্র, কত কিছু জানার যে এখনো বাকি আছে তা বুঝতে পেরেছি। এলিজা বিনতে এলাহির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে তিনি ভ্রমণ করে এবং দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে পৌঁছে সেসব স্থানের ঐতিহ্যকে খুঁজে বেড়াতে চান। বাংলাদেশের এসব ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করা সম্ভব।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হওয়া খুব সাধারণ সমস্যার একটি। পুরুষের তুলনায় নারীর দেহে এর ঘাটতি লক্ষণীয়। বিশেষ করে মাসিক বা ঋতুস্রাব চলাকালীন ঘাটতি দেখা দেয় বেশি। মাথা ঘোরানো, শরীর দুর্বল লাগা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, এমনকি শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, সবকিছুই মূলত শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলেই ঘটে। হিমোগ্লোবিন যেহেতু ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করে। তাই শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। সব মিলে বলা যায় ঋতুস্রাব চলাকালীন কিংবা আয়রনের ঘাটতি দূর করতে নারীর খাদ্য তালিকায় সব সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখা আবশ্যক। আয়রনের ভালো উৎস এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নিন-
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছকে ধরা হয় আয়রনের চমৎকার উৎস। তাই শরীরে আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে অবশ্যই সামুদ্রিক মাছ খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। টুনা, ম্যাকরেল এবং সার্ডিন-জাতীয় মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা চোখের, চুলের এবং শরীরে আয়রনের সমস্যা দূর করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।
পালং শাক
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। কম ক্যালরিযুক্ত এই পুষ্টিকর সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরকে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে মজুদ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখকে ভালো রাখে, চুলের বৃদ্ধিকে উন্নত করে এবং ইনফ্লামেশন কম করে। আপনার খাদ্য তালিকায় পালং শাকের ব্যবহার অনস্বীকার্য। বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন- পাস্তা, স্যালাড এবং অন্যান্য রান্নায় পালং শাকের ব্যবহার শরীরকে সুস্থ রাখতে ও আপনার রান্নার স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে।
বীজজাতীয় সবজি
বীজজাতীয় সবজি যেমন- মটরশুঁটি, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন ও ডালে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়ামও থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। মটরশুঁটিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পুরোপুরি সক্ষম। এ ছাড়া আয়রনের ঘাটতি মেটাতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারেরও জুড়ি মেলা ভার।
ব্রকলি
ব্রকলি সব বয়সের মানুষের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার, যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন সি, ফোলেট, ফাইবার এবং ভিটামিন কে। শিশুদের ব্রকলির স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। তা ছাড়া যেকোনো মিক্সড সবজি, নুডলস, পাস্তা কিংবা অন্যান্য খাবারেও ব্রকলি যোগ করতে পারেন, যা স্বাদে এবং গুণে শরীরের জন্য অতুলনীয়।
বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মিলিয়ন নারীর পিরিয়ড হয়। একজন মেয়ের পিরিয়ড শুরু এবং শেষের গড় বয়স হচ্ছে ১২ থেকে ৫১ বছর। আর প্রতিমাসে একজন কিশোরী বা নারীর পিরিয়ড চলাকালীন সময় ২ থেকে ৭ দিন। এ কয়দিনই তাকে বিভিন্ন ধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়। যদি একজন নারী প্রায় ৩৯ বছর এই স্বাভাবিক ও নিয়মিত শারীরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেন, তাকে তার পুরো জীবনে প্রায় ৪৬৮ বার এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। ভিন্নভাবে বললে, একজন নারী তার পুরো জীবনে প্রায় ৩ হাজার দিন বা জীবনের ৮ বছর এই মাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন।
(তথ্যসূত্র: বিশ্বব্যাংক)
পিরিয়ডের সবচেয়ে ভীতিকর অংশ পিরিয়ড ক্র্যাম্প। কারও ক্ষেত্রে বেশি, আবার কারোর ক্ষেত্রে তা সহনীয় ব্যথার গণ্ডিতে থাকে। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধামান্দ্যের কারণও হয় এটি। আর যোগ ব্যায়ামের একাধিক সুবিধার মধ্যে একটি হলো পিরিয়ড ক্র্যাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই।
আংশুকা পারওয়ানি (আলিয়া ভাট এবং কারিনা কাপুরের মতো বলিউড সেলিব্রেটিদের যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিত) বলেন, ‘যখন আমরা পিরিয়ডের সময়ে থাকি, তখন আমরা অনেকেই কম্বল মুড়ি দিয়ে কুঁকড়ে থাকি এবং আরাম চাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ব্যায়াম কখনো কখনো বিশেষভাবে সেই ক্র্যাম্প এবং ব্যথা মোকাবিলার জন্য সর্বোত্তম ওষুধ।’
তিনি জানান, পিরিয়ড চলাকালীন কোনো ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপকেও যেহেতু একটি কাজের মতো মনে হয়- তবুও অন্তত ব্যথার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কিছু যোগাসনের রুটিন গ্রহণ করা উচিত। ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের আগে এই আসনগুলো অনুশীলন দেবে উপশম আর স্বস্তি। এ জন্য কার্যকরী কিছু যোগাসনের কথা বলেন তিনি-
বাউন্ড অ্যাঙ্গেল পোজ বা প্রজাপতি আসন বা বদ্ধ কোণাসন:
এই আসনে পিঠ, নিতম্ব, থাই ও উদরের অংশের পেশির প্রসারণ হয়। এতে সেসব অংশের পেশি মজবুত হয়। তা ছাড়া পেলভিক ও নিতম্বের অংশে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সিটেড ফরওয়ার্ড পোজ বা উপবিষ্ট কোণাসন:
আধুনিক যোগব্যায়ামের এই আসনটি উরুর পেশিকে প্রসারিত করে। সায়াটিকা (কোমর ব্যথা পায়ের দিকে চলে গেলে তাকে সায়াটিকা বলে) এবং আর্থ্রাইটিস (অস্থিসন্ধির প্রদাহ, যা এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিকে আক্রান্ত করে) অবস্থাও উন্নতি করে। কারণ এটি ট্রাঙ্ক, হ্যামস্ট্রিং, নিতম্ব এবং কুঁচকি প্রসারিত করে। আর শক্ত পেশিগুলোকে প্রসারিত করে আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট ব্যথা উপশম করে।
মালা আসন বা স্কোয়াট:
এই আসন কোমর ও পায়ের পেশিকে শক্তসমর্থ করে। পিঠের পেছনের ব্যথা কমায়।
লেগস আপ ইন দ্য ওয়াল বা ভিপরিতা কারানি: পিঠের নিচের ব্যথা উপশম করতে এবং পায়ের ক্র্যাম্প থেকে শরীরকে স্বস্তি দিতে সাহায্য করে।
রিক্লাইন্ড বাটারফ্লাই পোজ বা সুপ্ত বদ্ধ কোণাসন: পিঠের নিচের অংশ, নিতম্ব এবং উরুকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। হাত ও পায়ের ধমনি, শিরা, স্নায়ু ও পেশিকেও সক্রিয় রাখে। উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং পায়ের গঠন দৃঢ় ও সুগঠিত হয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার হিংগারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া। স্কুলে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলাকালীন একদিন হঠাৎ সে অস্বস্তি বোধ করা শুরু করে , কেননা তার মনে হচ্ছিল হঠাৎ তার পরিহিত কাপড় ভিজে যাচ্ছে। খানিকটা লজ্জা এবং ভয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে পারুল ক্লাসরুমেই বসে থাকে তখন। পরীক্ষা শেষে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে এক শিক্ষিকা এসে জানতে চাইলে সাদিয়া তার সমস্যার কথা জানায়।
শিক্ষিকা অবস্থা বুঝে সাদিয়াকে কোমরে ওড়না জড়িয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বাড়ি ফেরার পর মা ও বাবাকে জানালে ‘মাসিক শুরু হওয়া মেয়ের এখন বিয়ের প্রয়োজন পড়ালেখার চেয়ে বেশি’- এই যুক্তি দেখিয়ে তারা স্কুলে আর না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেন। অবশ্য সাদিয়ার কাছেও মাসিক বা ঋতুস্রাব চলাকালীন স্কুলে না যাওয়াটাই শ্রেয় মনে হয়। কেননা, হঠাৎ হঠাৎ এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্কুলে লজ্জায় পড়তে হয়, কাপড় পাওয়া যায় না, তা ছাড়া কাউকে বলতে লজ্জা লাগে, অন্যরা হাসাহাসি করবে, শিক্ষকদের বলাটাও সংকোচের বিষয় যেন।
এমন চিত্র কেবল গাইবান্ধার সাদুল্যাহপুরের সাদিয়ার একার গল্প নয়, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মেয়েই এমন পরিস্থিতির শিকার। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এ পরিস্থিতির কারণে ক্লাস এইটের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয় অধিকাংশকে, যার ফলে বাড়ে বাল্য বিবাহের সংখ্যা।
মাসিক বা ঋতুস্রাব এখনো ট্যাবু বা নিষিদ্ধ বিষয়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। এমনকি আধুনিক ঢাকা শহরের অধিকাংশ ফার্মেসিতে এখনো কাগজে মুড়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ এটি যে খানিকটা লজ্জাকর, নিষিদ্ধ কিংবা লুকিয়ে রাখার ব্যাপার এটাই যেন প্রচার করছে। অথচ নারীর প্রতি মাসেই ঋতুস্রাব হবে, এটি হয় বলেই মানব শিশু জন্ম নেয়ার মতো বিরাট কর্মযজ্ঞ চলমান। মানব সভ্যতা পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার সঙ্গে এটি সরাসরি সম্পৃক্ত।
এ ছাড়া ঋতুস্রাব বা মাসিক সম্পর্কে সঠিক ধারণা কিংবা জ্ঞান না থাকাও ট্যাবু তৈরির পেছনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। সামাজিকভাবে নারীর শারীরবৃত্তীয় এ প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি এখনো।
উল্লেখ্য, স্যানিটারি ন্যাপকিন শব্দটির সঙ্গে পরিচিত বাংলাদেশের মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ। মাসিক চলাকালীন নারীর শরীর এবং এ-সম্পর্কীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এতে অসাবধানতা, অস্বাভাবিক কোনো উপায়ে এটিকে আটকানো কিংবা অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহারের ফলে জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ইনফেকশন ও শারীরিক নানা ক্ষতি থেকে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। অথচ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ৬৯ শতাংশ নারী মাসিক চলাকালীন অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করেন।
২০১৮ সালে ‘গ্রিন বাংলাদেশ’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধার সাদুল্যাহপুরের ২০টি স্কুলের ওপর জরিপ করে। যেখানে দেখা যায়, ওই উপজেলার ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়, বা পুরোপুরিই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে উঠে আসে শুধু পিরিয়ডকালীন জটিলতা এবং অস্বস্তি। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ঋতুস্রাব চলাকালীন নানারকম জটিলতা।
২০১৯ সালে গ্রিন বাংলাদেশ ৬টি স্কুলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ওমেন হাইজেন ফ্রেন্ডলি টয়লেট প্রকল্প’ চালু করে। এই প্রকল্পের আওতায় স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঋতুস্রাব সচেতনতাবিষয়ক সেমিনার ইত্যাদি করার পাশাপাশি ৪টি স্কুলে সম্পূর্ণ ঋতুস্রাববান্ধব টয়লেট প্রতিস্থাপন করে। এই টয়লেটে ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হলে ফ্রি প্যাড, ডাম্পিং সল্যুশন বা ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার জন্য আধুনিক ময়লার পাত্র ও টয়লেট ব্যবহারের পর পরিচ্ছন্নতার জন্য নানা ব্যবস্থাসহ পরিবেশবান্ধব টয়লেট তৈরি করে দেয় গ্রিন বাংলাদেশ। তাদের দেয়া পাইলট প্রকল্পের ফলাফলের তথ্য অনুযায়ী এ প্রকল্পের আওতাধীন ৮টি স্কুলে মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার সংখ্যা ৬০ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে মাত্র ৩ বছরে। আগামীতে কেবল এ সমস্যায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কমে যাবে বলেই আশাবাদী গ্রিন বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টরা।
নিয়মিত ঋতুস্রাব নারীদেহের সুস্থতার কথাই বলে। নিয়মিত শারীরবৃত্তিক এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নারীর শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা জড়িত। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন সর্বত্রই।
ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে নারী বরাবরই লাজুক। এ উপমহাদেশে নারীর ভালোবাসা জানান দেয়াটাকে অনেক ক্ষেত্রে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হিসেবে দেখা হয়। ফলে মনে মনে ভালোবাসা পুষে রাখলেও অনেক নারীই তা প্রকাশ করেন না। এ জন্য ভালোবাসা নারীর কাছে যাতনাময় ঠেকে। অন্যদিকে কেউ কেউ একদমই বিপরীতমুখী। ভালোবাসা প্রকাশে তারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না।
প্রেমিক, পরিবার, স্বামী, সন্তান, বাবা-মা কিংবা কোনো বন্ধুর জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারা নিঃসন্দেহে চমৎকার অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা নিজের ঝুলিতে পুরতে নিজেকে প্রকাশ করুন প্রিয়জনের কাছে। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন তাদের মাঝে। ভালোবাসি ছোট্ট এ শব্দ উচ্চারণ করার আগে মনে উঁকি দেয় কতশত ভাবনা। কে কী ভাববে, কেউ মন্দ বলে যদি কিংবা এটা বলারইবা কী আছে এমন অযথা সংকোচ ঘিরে ধরে। এমন সংকোচ চোখ বন্ধ করে ঝেড়ে ফেলুন। প্রিয়জনকে, ভালোবাসার মানুষকে নিঃসংকোচে বলুন ভালোবাসি। দেখবেন ছোট্ট এ শব্দেই ঘটে যাবে মিরাকল, যা হয়তো আপনি কল্পনাই করেননি।
এ উপমহাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে অপারগ থাকেন সন্তানরা। বাবা-মায়ের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটে। সন্তান যেমন সংকোচে মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারছে না ভালোবাসি, তেমনি মাও অদৃশ্য সংকোচে সন্তানকে বলতে পারেন না ‘ভালোবাসি’। সন্তানের প্রতি বাবা-মা কিংবা বাবা-মায়ের প্রতি সন্তান ভালোবাসার সব রকম উদাহরণই তৈরি করেন। কেবল ভালোবাসি বলাটাই হয়ে ওঠে না। নানাভাবে নানা কাজের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটালেও কখনো মৌখিক ভালোবাসার প্রকাশ সম্পর্ককে আরও কিছুটা মসৃণ করে তোলে। তাই চেষ্টা করুন ভালোবাসি বলার অভ্যাস গড়ে তোলার।
তবে এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই যে কেবল মৌখিকভাবে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সম্ভব। বরং ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে ভালোবাসাময় যেকোনো বাক্য, আবেগ-অনুভূতিও সমান ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমনটা বলা যায়, দ্য নোটবুক চলচ্চিত্রের একটা দৃশ্যে নোয়াহ ভীষণ আবেগ নিয়ে অ্যালিকে বলতে থাকেন- আমি পুরোপুরিভাবে তোমাকে চাই, সব সময়ের জন্য। এখানে নোয়াহ কী প্রবলভাবে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ভালোবাসি শব্দটি না বলেই। তাই বলা যায়, ভালোবাসা প্রকাশের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িয়ে আছে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আবেগ, অনুভূতির মতো বিষয়গুলোও। আবেগহীন ভালোবাসি শুনতে যেমন বেমানান তেমনি প্রচণ্ড আবেগ পুষে রেখে যথাযথ শব্দ যোগ না করতে পারাও অর্থহীন।
সাংসারিক নানা ঝামেলায় সঙ্গীকে হয়তো ভালোবাসা বোঝানো হয়ে ওঠে না। একসময় যাকে না পেলে জীবন মলিন হবে বলে ভাবতেন এখন হয়তো তাকে দেয়ার মতোই সময় মিলছে না। অথচ এটা সম্ভব নিজেরা খানিকটা বোঝাপড়া করে নিলেই। অফিস শেষে বাড়ি ফিরে একান্ত কিছু সময় রাখতে পারেন নিজেদের জন্য। খুব বেশি কিছু না হয়তো, দুই কাপ চা হাতে, বারান্দায় অল্প কিছু সময় গল্প করে কাটালেও কিন্তু মন্দ না। যদি দুজনই কর্মজীবী হন, সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যার নাস্তা একসঙ্গে করার চেষ্টা করুন। নিজেদের সারা দিনের গল্পগুলো করুন। ভালো লাগা, খারাপ লাগা ভাগাভাগি করে নিন। ব্যস, জীবন সুন্দর করে তুলতে আর কী চাই!