মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

স্টোনহেঞ্জ রহস্য : পর্ব ১

স্টোনহঞ্জে সুর্যাস্ত। ছবি : জন নেইল
আপডেটেড
৭ মে, ২০২৩ ১৭:৪৮
প্রকাশিত
প্রকাশিত : ৭ মে, ২০২৩ ১৬:০৫
  • রহস্যের ব্যবচ্ছেদ

স্টোনহেঞ্জ দাঁড়িয়ে আছে উইল্টারশায়ারের এক ঘেসোভূমিতে। যখন মেসোপটেমীয়রা চাকা আবিষ্কার করল, তখনো নাকি পাথরগুলো ওখানেই ছিল। যখন মিসরীয়রা পিরামিড বানাল, তখনো ওগুলো ঠায় দাঁড়িয়েছিল, ভারতীয়রা যখন সংখ্যা আবিষ্কারের পরে শূন্য আবিষ্কার করল, ইংল্যান্ডের বুকে তখনো ওগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। তারপর কত কী তৈরি হলো, কলোসিয়াম হলো, তাজমহল হলো, পিসার মিনার তৈরি হলো, তারও কয়েক হাজার বছর আগে অশোক বিশাল এক স্তম্ভ পুঁতলেন, তখনো ওই আলগা পাথরগুলো দাঁড়িয়েছিল। এরপর সিয়ার্স টাওয়ার হলো, টুইন টাওয়ার হলো, বুর্জখলিফা হলো, তবুও পাথরগুলো দাঁড়িয়ে রইল। সময়ের পালাবদল, বৈরী আবহাওয়ায় ওগুলো মলিন হলো বটে, কিন্তু নুয়ে পড়ল না। কী এমন ক্যারিশমা, হাজার হাজার বছর ধরে বিশাল সব পাথর দুই পায়ে মাথায় স্বগোত্রীয় বোঝা নিয়েও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। কারা ওদের ওভাবে দাঁড় করিয়েছিল, কীভাবেই বা করিয়েছিল? তবে কি ওগুলো মানুষের তৈরি নয়। ভিনগ্রহী এলিয়েনরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ওগুলো ওভাবে দাঁড় করিয়েছিল? নাকি কোনো জাদুকর?

২.

প্রায় দশ হাজার বছর আগে স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তবে এক দিনে তৈরি হয়নি এই বিশাল স্থাপত্যকর্ম। সেটা আসলে সম্ভবও নয়। একেকটা পিরামিড কিংবা হালের তাজমহল তৈরি করতেও যেখানে কয়েক দশক সময় লেগে যায়, সেখানে অতি প্রাচীন এই পাথুরে স্তম্ভ তৈরি করতেও নিশ্চয়ই অনেক সময় লেগেছিল। আর্কিওলজিস্টরাও সেটাই মনে করেন। তারা হিসাব কষে দেখেছেন, প্রায় দেড় হাজার বছর লেগেছিল এই পাথুরে স্তম্ভ তৈরি করতে। অর্থাৎ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ এই একটা জিনিস তৈরির পেছনে শ্রম দিয়েছিল। তাজমহল বা পিরামিড তৈরির পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিল, রাজা-বাদশাহরা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য। কিন্তু স্টোনহেঞ্জে তো তেমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তা হলে কীসের মোহে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই জিনিস তৈরি করে গেছে প্রাচীনকালের মানুষরা। এর উত্তরে অনেক অনেক তত্ত্ব দিয়েছে- অদ্ভুত আর বৈজ্ঞানিক দুই ধরনেরই। তা নিয়েই আলোচনা করা হবে এ লেখায়।

বিশাল সব পাথর

মোটামুটি ১০০ পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই পাথর। সবচেয়ে বড়গুলোর ওজন প্রায় ৩০ টন। সবচেয়ে ছোটগুলোর ১৫। এত বিশাল সব পাথর কীভাবে স্থাপন করা হলো, কীভাবেই বা সেগুলো বয়ে আনা হলো, সেটা একটা বিস্ময়ই। কারণ চাকা নেই সেই যুগে, গাড়ি নেই, পাথর কাটার যন্ত্র নেই, তারপরও কীভাবে তৈরি হলো? এই স্টোনহেঞ্জ এখনো প্রহেলিকাই হয়ে আছে আর্কিওলজিস্টদের কাছে।

আগে মানুষ স্টোনহেঞ্জ দেখেই শুধু বিস্মিত হতো। কিন্তু এর বাইরেও যে আরও কিছু থাকতে পারে, তা ছিল ধারণার বাইরে। অষ্টাদশ শতকে এক ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ জন অব্রে স্টোনহেঞ্জে খননকাজ চালাতে গিয়েছিলেন দলবল নিয়ে। সে সময় তিনি স্টোনহেঞ্জকে ঘিরে থাকা একটা পরিখা খুঁজে পান। এখানে যে পরিখা থাকতে পারে, অব্রের আগের গবেষকরা সেটা বুঝতেই পারেননি। কারণ, পরিখাটা ভরাট করা ছিল। এই এক পরীক্ষাই স্টোনহেঞ্জের নির্মাণ ইতিহাস অনেকখানিই বদলে দেয়। এসব বড় বড় পরিখা তৈরির কাজে সবচেয়ে বড় কারণ পাথর বহন। মিসরের পিরামিডেও দেখেছিলাম, বড় বড় সব পিরামিডের চারপাশে পরিখা ছিল। চাকার গাড়ি তখন তৈরি হয়নি, তাই দূর থেকে পাথর টেনে আনা কষ্টকর। তারচেয়ে কষ্টকর নির্মাণস্থলে সেগুলো নড়ন-চড়ন করা। পরিখা থাকলে ভালো হয়। পরিখার পানিতে ভাসিয়ে পাথর স্থপনার একপাশ থেকে আরেক পাশে সহজেই সরিয়ে নেয়া যায়।

পানিতে পাথর কীভাবে ভাসে, তার জবাব আমরা পিরামিড চ্যাপ্টারেই দিয়েছি। এখানে সংক্ষেপে বলি, বিশাল বিশাল সব ভেলা তৈরি করে তার ওপর পাথর বসিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যেত। সুতরাং অব্রের পরিখা আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।

কারসার

শুধু পরিখা নয়, এরও আগে এখানে অন্য কিছু তৈরি হয়েছিল। ১৭২৩ সাল। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ উইলিয়াম স্টাকলি স্টোনহেঞ্জের উত্তর দিকে একটা আয়তাকার ট্রাক আবিষ্কার করেন। তিন কলোমিটার লম্বা আর ৩৩০-৪৫০ ফুট চওড়া সেই ট্রাকটা। স্টাকলি অনুমান করেন, বর্তমান ব্রিটেন তখন রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তাই এই ট্রাকগুলো ছিল একটা রোমান রেসিং ট্রাক। ঘোড়া বা অন্য প্রাণীর রেসিং ট্রাক নয়, সেটা ছিল রথের মতো মানুষে টানা একটা গাড়ির ট্রাক। কিন্তু স্টাকলির হিসাবের সঙ্গে সময়ের হিসাব মেলে না। স্টাকলি যখন গবেষণা করেন, তখন কার্বন ডেটিং সিসটেম ছিল না। তেজস্ক্রিয় কার্বনের সাহায্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের হিসাব একদম দিনক্ষণ মিলিয়ে করা যায়। রোমানরা ব্রিটেনে এসেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২০৮-২১১ সালের দিকে। আধুনিক হিসাব বলছে আয়তকার এই ট্রাক তৈরি হয়েছিল এর অন্তত এক হাজার বছর আগে। এই ট্রাক আর যা-ই হোক, সেটা রথ রেসিংয়ের জন্য তৈরি হয়নি।

তাহলে কী জন্য তৈরি হয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।

রোমান সভ্যতা চাকার ব্যবহার জানত। ঘোড়ার সাহায্যে টানা হতো রোমান রথ। সেই রথ চাকায় ভর দিয়ে চলত, সেটি নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। যদি স্টাকলির অনুমান সত্যিই হতো, তাহলে স্টোনহেঞ্জ তৈরি নিয়ে এখনো এত রহস্য-বিস্ময় থাকত না। চাকার ব্যবহার যারা জানে, অনেক বড় বড় পাথর টানার জন্য অনেক বড় গাড়ি চাইলেই তৈরি করতে পারত তারা। কিন্তু স্টাকলির অনুমান যেহেতু ভুল, স্টোনহেঞ্জ নিয়ে ধোঁয়াশা তাই এখনো রয়েছে।

 ছবি সূত্র: https://cdn.britannica.com/50/62650-050-48297E80/Diagram-Stonehenge-c-1550-bce.jpg
স্টোনহেঞ্জের ডায়াগ্রাম

অব্রে হোল

সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রত্নতত্ত্ববিদ জন অব্রে আবিষ্কার করেন বেশ কিছু গর্ত। একটি দুটি নয়, ৫৬টি গর্ত। গর্তগুলো একটা বৃত্তের মতো করে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি গর্তের ব্যাস ৩ ফুটের মতো। এই গর্তগুলো ব্লুস্টোন আর কাঠের টুকরা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল বলে মনে করতেন অব্রে। এগুলো এখন অব্রেহোল নামে পরিচিত। অব্রেহোলে ব্লুস্টোন আদৌ ব্যবহার করা হয়েছিল কি না তা নিশ্চিত নন এখনকার বিজ্ঞানীরা। স্টোনহেঞ্জের আশপাশে ব্লুস্টোনের কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। তবে ২৫০ কিলোমিটার দূরে প্রেসেলি পাহাড়ে ব্লুস্টোন পাওয়া যায়। ব্লুস্টোনের বিশেষত্ব হলো- এগুলো ভিজে অবস্থায় নীলাভ রং ধারণ করে। তাই এর এমন নাম। তবে অব্রেহোলগুলো আসলেই ব্লুস্টোন দিয়ে ভরাট করা ছিল কি না, এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। বিজ্ঞানীরা বরং মনে করছেন, এগুলো সাধারণ পাথর দিয়েই ভরাট করা ছিল। এই অব্রেহোলগুলোর চারপাশেই ছিল সেই পরিখা। পরিখাটাকে একটা বৃত্ত হিসেবে ধরলে এর ব্যাস মোটামুটি ৩৬০ ফুট। গভীরতা ছিল ছয় ফুটের মতো। তবে বৃত্তের মতো হলেও একটানা বৃত্ত নয়। পরিখা ডিঙিয়ে ভেতরে যাওয়ার ঝক্কি তো অনেক। তাই দরকার প্রবেশ পথ। উত্তর-পূর্ব কোণে এবং দক্ষিণ দিকে দুটি জায়গায় পরীক্ষা দুটিকে বিচ্ছিন্ন করেছিল দুটি বাঁধ। আসলে এই জায়গা দুটি খোঁড়াই হয়নি। পরিখা আর এর ঢালু কিনারাকে বলা হয় হেঞ্জ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেন এর নাম স্টোনহেঞ্জ।

এগুলো তৈরির পর বহুদিন স্টোনহেঞ্জে নতুন করে নির্মাণকাজ চলেনি। এর প্রায় দেড়-দুই শ বছর পর আবার কিছু কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩০টি নতুন গর্ত তৈরি করা হয় পরিখার কাছাকাছি। এগুলোতে মৃতদেহ দাহ করা হতো। অর্থাৎ এ সময়টাতে স্টোনহেঞ্জ এলাকা সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সে সময় স্টোনহেঞ্জের কেন্দ্রের দিকে কাঠ দিয়ে ছাউনির মতো কিছু একটা বানানো হয়। পরিখার প্রবেশপথেও বসানো হয় খাড়া কাঠের তক্তা। কিন্তু এগুলো কেন বসানো হয়েছিল, তার উত্তর মেলেনি।

চলবে...

দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল


সুস্থ দাঁত,সুন্দর হাসি

মডেল : নিঝুম রুবিনা
আপডেটেড ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৯:৩৩
ডা. আরমান আরেফিন

আমাদের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। মুখের ভেতরে যদি নিয়মিত যত্ন না নেয়া হয় তা হলে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন- মাড়িতে ব্যথা, দাঁত ক্ষয়, দাঁতে পাথর জমা, মুখের ক্যানসার, দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। তাই দাঁতের সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্রাশ করা এবং ডেন্টিস্টের কাছে দাঁত চেকআপ করানোর পাশাপাশি ঠিক করতে হবে খাদ্যের তালিকাও। কারণ সব ধরনের খাবার দাঁতের জন্য উপকারী নয়। কিছু খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে, আবার কিছু খাবারে চিনি বেশি থাকে যার কারণে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। তাই এই খাবারগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি।

দাঁত ভালো রাখে যে খাবারগুলো

দাঁত ভালো রাখতে বেশকিছু খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন-

ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস যুক্ত লো-ফ্যাট চিজ, দুধ, দই, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি।

প্রোটিনযুক্ত খাবার ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারগুলো দাঁতের এনামেলের সুরক্ষা করে।

ফলমূল ও শাক-সবজিতে আছে পানি ও ফাইবার, যা মুখের লালা বা স্যালাইভা উৎপাদনে সাহায্য করে।

এনামেলের ক্ষয় হওয়া, দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা ধুয়ে যাওয়া এবং মুখে স্যালাইভা প্রোডাকশন প্রমোট করতে হেল্প করে পানি। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

দাঁতের ক্ষতি যে সব খাবারে

দাঁত সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব খাবারই দাঁতের জন্য ভালো নয়।

# কোমল পানীয়: কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এই চিনি শুধু শরীরের জন্যই নয়, দাঁতের জন্যও সমানভাবে ক্ষতিকর। বাজারে ডায়েট কোক নামে কিছু ড্রিংকস আছে। অনেকেই চিনি নেই ভেবে সেগুলো পান করেন। কিন্তু এই ড্রিংকসগুলোতে চিনির পরিবর্তে এর সাবস্টিটিউট ফসফোরিক ও সাইট্রিক এসিড থাকে। এই উপাদানগুলো দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। তাই দাঁতের সুস্থতায় যে কোনো ধরনের কোমল পানীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

# স্টার্চি ফুড : অনেকের বাড়িতেই সকালে নাশতার টেবিলে পাউরুটি থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে পাউরুটি খাওয়া দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। শুধু পাউরুটিই নয়- স্টার্চ আছে এমন যে কোনো খাবার, পাস্তা, আলু, ভাত সবই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই এই খাবারগুলো মিষ্টি না ভেবে রেগুলার ডায়েটে অ্যাড করেন। এই ভুলটাই আমরা করি। স্টার্চি ফুড দাঁতে স্টিকি হয়ে থাকে এবং এগুলো ব্যাকটেরিয়ার খুব ভালো সোর্স। ধীরে ধীরে এই ব্যাকটেরিয়াই দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। তাই স্টার্চি ফুড যখনই খাবেন, অবশ্যই পরিমাণমতো খাবেন এবং খাওয়া শেষে দাঁত ব্রাশ করবেন। আর দাঁত সুস্থ রাখতে হলে এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমাতে হবে।

# চকলেট ও স্টিকি ফুড : বাচ্চাদের কাছে ক্যান্ডি ও চকলেট মানেই পছন্দের একটি খাবার। শুধু বাচ্চারাই নয়, বড়দের অনেকের কাছেও চকলেট বেশ প্রিয়। এই চকলেট ও ক্যান্ডিতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে দাঁতে দেখা দিতে পারে ক্যাভিটি। ফলাফল, দিনে দিনে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া। চকলেট খাওয়া শেষে সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ বা কুলি করে ফেললে এই রিস্ক কিছুটা কমে যায়। কিন্তু ক্যান্ডি দাঁতের সঙ্গে স্টিকি হয়ে থাকে বলে সেটাই ক্ষতি করে বেশি। এ ছাড়া আরও কিছু স্টিকি ফুড যেমন- পিনাট বাটার, পটেটো চিপস দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে।

# অ্যালকোহল : অ্যালকোহল পান করার কারণে মুখ শুকিয়ে যায়। মুখ শুষ্ক থাকা মানে লালার পরিমাণ কমে যাওয়া। অথচ দাঁত ভালো রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লালা দাঁতে খাবার লেগে থাকতে দেয় না এবং খাবারের কণাকে ধুয়ে ফেলে। এমনকি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অন্যান্য প্রাথমিক লক্ষণগুলোকেও সারিয়ে তুলতে হেল্প করে লালা। তাই মুখ সব সময় হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ওরাল হাইড্রেশন সলিউশনও ব্যবহার করা জরুরি।

# কফি : মুখের ভেতরের স্যালাইভা প্রোডাকশনকে কমিয়ে দেয় কফি। আর স্যালাইভার অভাবে মুখের ভেতর শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া কফি ব্যাকটেরিয়া গ্রো করতে হেল্প করে, সেই সঙ্গে কমে যায় দাঁতের এনামেল। ধীরে ধীরে দাঁতে তৈরি হয় ক্যাভিটি, সেনসিভিটি এবং শুরু হয় দাঁতের ক্ষয়।

সচেতনতা এবং কিছু কথা

সুন্দর দাঁত ও সুন্দর হাসি আমরা সবাই চাই। আর তাই দাঁতের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি এড়িয়ে চলুন ক্ষতিকর খাবার। মুখ বা দাঁতের কোনো সমস্যাই অবহেলা করবেন না। সমস্যা যতই ছোট হোক না কেন সেটা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।

লেখক : দন্ত বিশেষজ্ঞ,ম্যান্ডি ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল


নিজের মতো করে গিফট বক্স তৈরির সুবিধা আনলো কিউরেটো

আপডেটেড ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:২২
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

উপহার দেওয়ার আনন্দকে দ্বিগুণ করতে নতুন কনসেপ্ট নিয়ে হাজির হয়েছে অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম কিউরেটো। পারসোনালাইজড গিফট বক্সের মাধ্যমে কিউরেটো সাধারণ মুহূর্তগুলোকে অসাধারণ স্মৃতিতে পরিণত করবে। কিউরেটেড উপহারের শিল্পকে চমৎকারভাবে চিন্তাশীল জীবনধারার সাথে মিলিয়েছে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ও আধুনিক গিফটিং প্ল্যাটফর্ম কিউরেটো। শুধু অনুষ্ঠানের সময়কালের বাইরেও এই উপহারের রেশ রয়ে যাবে দীর্ঘদিন।

বিভিন্ন উৎসব কিংবা বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে কিউরেটো’র পারসোনালাইজড গিফট বক্স তৈরি করে নেয়া যাবে। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বিশেষ কোনো দিবস, বিয়ে, কর্পোরেট কোনো অনুষ্ঠানে কিউরেটোর এসব গিফট বক্স তৈরি করে নেয়া যাবে। এমনকি প্রিয়জনের বিভিন্ন পছন্দের ভিত্তিতেও তৈরি করে নেয়া যাবে এই গিফট বক্স। যেমন কেউ যদি চা পছন্দ করেন, তার জন্য বিভিন্ন ধরনের চায়ের সংগ্রহ। কফি পছন্দ করলে কফি এমনকি কেউ যদি পাস্তা পছন্দ করেন তার জন্য পাস্তা ও পাস্তার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজানো যাবে গিফট বক্সটি।

কিউরেটো প্ল্যাটফর্মটিতে সব সময়ের জন্য রয়েছে, পার্টির জন্য ‘হাউজ ওয়ার্মিং’ কালেকশন, ‘পিংক আওয়ার’ সেট। ভালো কফি পছন্দ করেন এমন মানুষের জন্য আছে ‘কফি কনোইজার’ ও ‘কফি লাভার’স ডিলাইট’ নামে দুটি কালেকশন। চা-প্রেমীদের জন্য আছে ‘চা অ্যান্ড টা’ ও ‘টি টাইম ব্লিস’ কালেকশন দুটি। ‘টেস্ট অফ ইতালি’ ও ‘পাস্তা নাইট’ সিলেকশন দিচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ। ‘চকলেট ফন্ডি ফান’ কালেকশনে পাবেন বিভিন্ন ধরনের চকোলেট। যারা হাতে-কলমে কিছু করতে চান, তাদের জন্য থাকছে ‘ডিওয়াইআই পপসিকল কিট।’

এছাড়া করপোরেট ক্ষেত্রে কাস্টমাইজড উপহার দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে কিউরেটোতে। এতে সহকর্মীদের পছন্দ জেনে আপনার অনুভূতি কিউরেটেড উপহারের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবেন।
যেভাবে পাবেন কিউরেটোর কাস্টমাইজড গিফট বক্স

এই গিফট বক্স তৈরি করে নিতে আপনাকে যেতে কিউরেটোর www.curato.com.bd ওয়েবসাইটে। সেখানে গিয়ে আপনার পছন্দ কিংবা দিবস অনুযায়ী কী কী দিয়ে বক্স সাজাতে চান সেগুলো সিলেক্ট করবেন। এমনকি সেখানে আগে থেকে তৈরি করা কিছু গিফট বক্সও থাকে। চাইলে সেগুলোও নিতে পারবেন।
দাম

গিফট বক্সে কী কী নিতে চান সেগুলোর দাম ওয়েবসাইট থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। এমনকি আপনি কত টাকা থেকে কত টাকার মধ্যে বক্স তৈরি করে নিতে চান সেটিও সেখান থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন।


বাংলাদেশের সাহিত্যের সম্ভাবনা

আপডেটেড ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:১২
সেলিনা হোসেন

কোনো সাহিত্যের সম্ভাবনা অন্তর্নিহিত থাকে তার ভাষার মধ্যে। আর ভাষার প্রাণ সজীব থাকে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে। কিন্তু কোনো ভাষাকে বিস্তার লাভের জন্য বেশি প্রয়োজন সেই ভাষার অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রসঙ্গত বাংলা সাহিত্যের অর্থনৈতিক বাজার খুব ছোট কিন্তু এই ভাষার জনগোষ্ঠী বিশাল। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে এর অবস্থান সপ্তম। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বাংলায় কথা বলেন ২২ কোটির বেশি মানুষ। এই ছোট অর্থনৈতিক বাজারে লেখক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সহযোগীরা খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ জীবনযাপন করতে পারেন না। এই বিষয়টি বাংলা সাহিত্য সম্ভাবনার অন্যতম অন্তরায়। তবে বিশ্বাস করি, এই অন্তরায় আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাটিয়ে উঠবে।

বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছরের পুরোনো। চর্যাপদ আমাদের ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলা সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপে বিবর্তিত হয়। বাংলা ভাষালিপি ও ভাষার ব্যবহার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের ভাষা আন্দোলন বাংলাকে নতুন জীবন দান করেছে। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাও ভাষা বিস্তারে বড় সাফল্য এসেছে। সেই সঙ্গে ভাষাশহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করাও আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র কি সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষায় প্রচলিত হয় কিংবা সমাজের উচ্চবিত্তরা তাদের সন্তানদের কোন ভাষা শিক্ষায় বড় করেন। আমাদের উচ্চ আদালত কোন ভাষা দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের নাগরিক তৈরি না করে শুধু বিশ্বনাগরিক তৈরি করা করা কি ঠিক? এটিই এখন বড় প্রশ্ন?

বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকের (গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স) তালিকায় বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ। আমরা জানি জ্ঞানই জীবনপ্রদীপ। জ্ঞান দ্বারাই লিখিত ও পঠিত হয় সাহিত্য। এ কারণে আমাদের জনসংখ্যা বেশি হলেও পাঠক সংখ্য কম। কিন্তু পাঠক সংখ্যা কম হলেও অন্যান্য ভাষার তুলানায় লেখক সংখ্যা কম নয়। বেশি বেশি লেখক সংখ্যার যেমন ভালো দিকও আছে তেমন মন্দ দিকও আছে। মন্দ দিক হলো প্রচুর পরিমাণ মানহীন বই প্রকাশিত হলে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে সাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই এই দিকটি এখন নতুন প্রজন্মকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ কী? এ প্রশ্ন কেবল সাহিত্যিক কিংবা পাঠকদের নয়, অধিকাংশ বাংলাভাষীর। কারণ, স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি শ্রেণি, বড় পরিসরে ইংরেজিতেই কথা বলে। তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি কিংবা সাহিত্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাতে করে দেশীয় সংস্কৃতির সংকট তৈরি হচ্ছে। একজন মানুষ একাধিক ভাষা শিখতে পারে এটা দোষের নয় বরং বিরাট গুণ বলা যেতে পারে, কিন্তু অন্য শিখতে গিয়ে যেন মাতৃভাষার অবজ্ঞা না হয় সেদিকেও খেয়াল করতে হবে। খেয়াল করতে হবে যেমন ব্যক্তিকে সেই সঙ্গে রাষ্ট্রকেও।

অনেক বাঙালি আছেন যারা ইংরেজিতে লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন বাঙালি তরুণী মেঘা মজুমদার। তার ‘আ বার্নিং’ নামের ৩২০ পাতার প্রথম উপন্যাসের প্রশংসা ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বা ‘দ্য নিউ ইয়র্কার-এর পাতায় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। বলা যেতে পারে দুই দশক আগে এমনই এক বাঙালি মেয়ে ঝুম্পা লাহিড়ীর গল্প সংকলন ‘ইন্টারপ্রেটর অব ম্যালাডিজ’-এর কথা। সেটাও ছিল লেখকের প্রথম বই। আর প্রকাশ মাত্রই সেই বই নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল পশ্চিমা দুনিয়ায়।

তাহমিমা আনামের অ্যা গোল্ডেন এজ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। এ ছাড়া তাহমিমা আনাম ‘দ্য গুড মুসলিম’ গ্রন্থের রচয়িতা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান ২০১৪ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো’ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে গ্রন্থটি সাহিত্যে জেমস ট্যাইট ব্ল্যাক প্রাইজ অর্জন করে। প্রথম বইয়ের জন্যই জিয়া হায়দার সমুজ্জ্বল প্রশংসা এবং অভিনন্দন লাভ করে, ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’-এর ভাষায় যা ‘আশ্চর্যজনকভাবে অর্জিত’। ২০০৩ সালে মনিকা আলীর ব্রিক লেন ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য ছোট তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ফায়েজা হাসানাতের প্রথম ছোটগল্প সংকলন দ্য বার্ড ক্যাচার অ্যান্ড আদার স্টোরিজ-এ লিঙ্গ আকাঙ্ক্ষা, পারিবারিক ভালোবাসা এবং পরিচয় ও পরিবার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। শাজিয়া ওমরের ‘লাইক অ্যা ডায়মন্ড ইন দ্য স্কাই’ গ্রন্থে ঢাকার মাদকাসক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নেশাচ্ছন্ন ও ধোঁয়াশাময় জীবন পরিস্ফূটিত হয়েছে। রাশিদ আসকারী ইংরেজি ভাষায় গল্প লেখার মতো যথেষ্ট শৈল্পিক মেধার প্রদর্শন দেখিয়েছেন। তার ছোটগল্পের সংকলন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান অ্যান্ড আদার স্টোরিস (২০১১) ফরাসি ও হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কাজী আনিস আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন মাই হ্যান্ডস’ বইটিও ইতোমধ্যে দারুণ সারা ফেলেছে। এভাবে অনেকের নাম বলা যেতে পারে যেমন, সাজিয়া ওমর, ফারাহ গজনবি, মাহমুদ রহমান, মারিয়া চৌধুরী, মুনিজ মজনুর, সাদ হোসেন, শর্বরী আহমেদ, শ্রাবন্তী নার্মিন আলি, জাভেদ জাহাঙ্গীর, আইমদী হোসেন, নুজহাত মান্নান, রুমানা সিদ্দিক, রুবানা হক, লীমান সোবহান, আজফার হোসেন, আদিব খান, নিয়াজ জামানসহ অনেক সাহিত্যিকের। এই বিষয়টি দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের লেখার বিষয়বস্তু জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে, শুধু ভাষার মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত দুঃখবোধে মাতৃভাষা ছেড়ে আবার ফিরে এসেছেন। অথচ তার অমর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ এখন পেঙ্গুইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত হয়েছে। কবিগুরু তার গীতাঞ্জলির অনুবাদ তো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এনে দিয়েছেন বিরল সম্মান। নীরদ সি চৌধুরী ইংরেজিতে আত্মজীবনী লিখেছেন।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা ও চর্চা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

সবচেয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ থেকে শুরু করে লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সোভিয়েত আমলে রুশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের ব্যাপক অংশের অনুবাদ হয়েছে।

সাম্প্রতিক এ ধারা অব্যাহত থাকায় গবেষকরা মনে করছেন, ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষার পর বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বের আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি এ ভাষার প্রসার ও চর্চা বেড়ে চলেছে।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বারের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য পৃথিবীর সব দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার নাম বাংলাদেশ। তাই নতুন প্রজন্মকে আশা হারালে চলবে না, বরং সমস্যা চিহ্নিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।


সেলিম আল দীনের সাহিত্যকর্মগুলো মূলত একটা শিক্ষা

আপডেটেড ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৩:১২
আবু সাঈদ তুলু

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য-সংস্কৃতির জাগরণমূলক আন্দোলনে সেলিম আল দীনের ভূমিকা অপরিসীম। যেহেতু বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র, অতএব জাতিগত আত্মপরিচয় জরুরি। আর আত্মপরিচয় সৃষ্টিতে সেলিম আল দীনের কর্মগুলো পথের দিশারি। সেলিম আল দীন নাট্যকার হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও সাহিত্যের নানা শাখাতেই তার ছিল স্বচ্ছন্দ বিচরণ। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস রচনা করলেও নাটককেই তিনি বেশি আঁকড়ে ছিলেন। তার নাট্য-সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা মূলত এগিয়েছে উপনিবেশের জ্ঞানতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে বাঙালির হাজার বছরের জারিত রসের পরম্পরার আদর্শে।

কবিতায় রেঁবো-বোদলেয়ার দ্বারা বুদ্ধদেব, নাটকে প্রসিনিয়াম ধারা, উপন্যাসে ওয়াল্টার স্কট প্রভাবে বঙ্কিমের আদর্শ যে আধুনিকতার সূচনা করেছিল তা ছদ্মবেশে অনেকাংশেই গ্রাস করেছিল আমাদের অতীত। ইউরোপীয় জ্ঞানতত্ত্বের প্রভাব মাথার ওপর দোর্দণ্ড মার্তণ্ডের মতো হয়ে উঠছিল। ধীরে ধীরে দুশ বছরে বাংলা সাহিত্য হয়ে উঠেছিল ইউরোপীয় সাহিত্যের অনুকৃতি বা অন্ধ অনুকরণ। আধুনিকতার ধুয়া তুলে অনেকে ইউরোপীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুশাসন পালনেই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। বাঙালির সহস্র বছরের ধারাবাহিকতায় উৎপন্ন আমাদের নিজস্ব শিল্পরীতির সঙ্গে তা চিরবিচ্ছেদের পালা রচনা করল। সেলিম আল দীন বলতেন, ‘আধুনিকতার অর্থ আমার কাছে সর্বগ্রাহিতা ও সৃষ্টিশীল নির্বাচন।’ বোধের বিচরণ, মানবিক প্রকাশ ও উঁচুতর কল্পনা। ইউরোপীয় আঙ্গিকের অন্ধ অনুকরণ নয়। সে প্রেক্ষিতে সেলিম আল ঐতিহ্যের পথ বেয়ে পাঁচালি, কথকতা, মঙ্গলপালাকে ধরে আধুনিকতার পথে হেঁটেছেন।

সেলিম আল দীনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে একদিকে গবেষণা, শিক্ষকতা ও নাট্য, সাহিত্য রচনা নিয়ে সারাক্ষণ নিমগ্ন থাকতেন। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজীর সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা- মফিজ উদ্দিন আহমেদ। মাতা- ফিরোজা খাতুন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। সেলিম আল দীন তার শিল্পীনাম; সার্টিফিকেটের নাম মু. মঈনুদ্দিন। স্ত্রী বেগমজাদী মেহেরুন্নেছা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হলেও নানা জটিলতায় করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে স্নাতক ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কপিরাইটার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে বাংলা বিভাগে যোগদান, পরে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হিসেবে আমৃত্যু (মৃত্যু: ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮) কর্মরত ছিলেন। নাটক রচনা শুরু করেছিলেন ছাত্রাবস্থায়। টেলিভিশন নাটক, মঞ্চনাটক, চিত্রনাট্যকার, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ ও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার নাটকগুলো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত।

সেলিম আল দীন সাহিত্য চেতনার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো তিনি উপনিবেশ বিযুক্তিকরণের পথে হেঁটেছেন। ব্রিটিশ উপনিবেশ এ জাতিকে করেছিল শিকড়চ্যুত। উপনিবেশের ইতিহাস দেখিয়েছিল বাংলা নাটক শুরু হয়েছে ইউরোপীয় প্রেষণায়- লেবেদেফের মধ্য দিয়ে। তিনি এ ভ্রান্ত ইতিহাসের বিপরীতে ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলা নাটক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান ছিল। উপনিবেশের আকস্মিক সৃষ্ট নয়। তা ছিল নানা নামে, নানা রূপ-রীতিতে এ ভূখণ্ডের মানুষের শিল্পতৃষ্ণা নিবৃত্ত করেছে। প্রাচীন ভরতমুণির নাট্যশাস্ত্রেও এ বাংলা ভূখণ্ডে নাট্যচর্চার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। চর্যাপদের মধ্যে ‘নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী বুদ্ধ নাটকও বিষমা হই।’ প্রভৃতি গীতির মধ্য দিয়ে এ বাংলা নাটকের তথ্যই সুস্পষ্ট করে।

তিনি একে একে বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের পরম্পরার ধারায় এ সময় বসে নির্মাণ করলেন হাজার বছরের জীবন সংস্কৃতির সৌধ। যে সৌধ যেন ছুঁয়ে দাঁড়াল বিশ্ব-আকাশ। ‘শকুন্তলা’, ‘চাকা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘ধাবমান’, ‘বনপাংশুল’, ‘নিমজ্জন’ প্রভৃতি নাটক উপনিবেশের মিথ্যা বড়াইকে অগ্রাহ্য করে হাজার বছরের বহমানতায় বিধৃত করল বাংলার নিজস্ব রীতি। প্রাচীন কথাসরিৎসাগরের মতো কখনো লম্বক, তরঙ্গ; কখনো পাঁচালির মতো পদ, বোলাম, নাচাড়ি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী রচনা আঙ্গিকের ধারাকে অনুসরণ করলেন।

সেলিম আল দীন দেখলেন আমরা আমাদের শিল্পকে মূল্যায়ন করি ইউরোপীয় চোখ বা দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। তাই গভীর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরলেন বাংলার নিজস্ব নন্দনতত্ত্বের মাপকাঠিগুলো। হাজার বছরের সাহিত্য-শিল্পরীতি বিশ্লেষণ করে দেখালেন বাঙালির সাহিত্য-শিল্প নন্দনতাত্ত্বিক দিক থেকে দ্বৈতাদ্বৈতবাদী। শ্রীচৈতন্য দেবের ‘অচিন্ত্যদ্বৈতবাদ’ চেতনার নিরিখে এ তাত্ত্বিক ভিত্তি তুলে ধরেন। বাংলা পরিবেশনা শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য হলো একের মধ্যে বহুত্বের অবস্থান। একই আঙ্গিকের শিল্পের মধ্যে বহুবিধ আঙ্গিকের শিল্পের সমন্বয়। একের মধ্যে বহুর অবস্থান। উপনিবেশকালে আমাদের সাহিত্যে পাশ্চাত্যের ধাঁচে সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পের আলাদা আলাদা বিভাজন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস এসব বিভাজনকে এটা তিনি অগ্রাহ্য করলেন। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের সব শিল্পমাধ্যমের অপূর্ব সমন্বয়কে তুলে ধরলেন। শূন্যপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, ইউসুফ জোলেখা, পদ্মাবতী, মহুয়া নানা সাহিত্যশিল্প কর্ম এক অদ্বৈত সমন্বিত শৃঙ্খলায় একীভূত। সেলিম আল দীন তার রচনায় দেখালেন বিদ্যাসাগর যে কলোনিয়াল শৃঙ্খলগুলো বাংলা গদ্যে করে গেছেন সেগুলো বাঙালিমাত্রই উচিত এই মুহূর্তে বর্জন করা। বাংলা ভাষার রীতি এবং প্রকৃতিতে এগুলো প্রয়োজন নেই। বাংলায় যতি, অর্ধযতি, পূর্ণযতিই যথেষ্ট, যা হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।

উপনিবেশের নাট্যরচনা কৌশলের অঙ্ক বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি উপনিবেশের চিহ্নগুলো বয়ে বেড়ানো অনর্থক বলে মনে করলেন। সে প্রেক্ষিতে নিজের রচনাগুলোর আঙ্গিক ভাবনায় বাঙলার মধ্যযুগের বিদ্যমান গদ্য-পদ্য অঙ্গ বিভাজনহীন সাহিত্য-শিল্পাঙ্গিকের উদ্ভাসন ঘটালেন। নিজের রচনাগুলোকে বললেন- নব্যপাঁচালি, কথানাট্য, বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির ইত্যাদি। বিশ্বপাঠে ফ্রান্স ফ্যানন, নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গা, হোমি কে বাবা, গায়ত্রি স্পিভাকের মতো সেলিম আল দীনের সাহিত্যে জাতীয় সংস্কৃতির আদর্শই বড় হয়ে দাঁড়াল। উত্তর-উপনিবেশ তাত্ত্বিকের মতো বিতর্কে অনুপ্রবেশ না করে সেলিম আল দীন নিরবচ্ছিন্নভাবে উপনিবেশের দুটো বছরের মধ্যখণ্ডন না থাকলে বাংলা সাহিত্য শিল্পের রূপরেখা কেমন হতো তারই নিরীক্ষার পথে এগোলেন। ইউরোপের মালার্মের প্রতীকবাদিতা বা ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিকবাদিতা কিংবা মার্কসীয় ঐতিহ্যহীনতা তত্ত্বের ভিন্নপথে জাতীয় ভূজীবনের দিকে তাকালেন।

সেলিম আল দীনকে শুধু নাট্যকার পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। তিনি মূলত একটি বৃহত্তর প্রপঞ্চ। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় সৃষ্টির অনিবার্য এক শিক্ষা। কীভাবে উপনিবেশের মিথ্যাচারের ফাঁদ থেকে বের হয়ে হাজার বছরের গৌরবান্বিত সংস্কৃতির আলোয় নিজেকে পুনর্নির্মাণ করা যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। সেলিম আল দীনের একেকটি রচনা পাঠ মানে কাহিনির আস্বাদন নয়। ইতিহাস-সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা জাগরণের নতুন এক দীক্ষা। সেলিম আল দীন বলতেন, ‘ত্রিশের কবিরা যখন পাশ্চাত্যের ক্ষয়িষ্ণু জীবনচেতনা ও শিল্পরীতি আঁকড়ে ধরে বাংলা কবিতার মূলে নতুন কালের প্রসাধন মাখছেন, ঠিক সে সময় স্পেনের মাদ্রিদে একই পারে বসে লোরকা, নেরুদা, মেগুয়েল, হার্নান্ডেজ আঞ্চলিক গন্ধমাখা সাহিত্য রচনায় ব্রতী।’ সেলিম আল দীন চাইতেন, বাঙালি জাতি নিজের পায়ে দাঁড়াক। ধার করা ইটে জাতির আত্মবিশ্বাসের দালান তৈরি বন্ধ হোক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকে আত্মস্থ করে নিজস্বতার পথেই বৈশ্বিক। তেমনি উপনিবেশের উন্মাতাল সময়েও মধুসূদন দত্তকে নিজস্ব পথে হাঁটতে দেখা যায়। সেলিম আল দীন চাইতেন শিল্প-সাহিত্য নিজস্ব ভূমি ও ভূগোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোক।

অনেকেই আন্তর্জাতিকতা নিয়ে সেলিম আল দীনকে কটাক্ষ করতেন। অতীতকে ধরে আছে বলে পশ্চাৎপদ ভাবতেন। তাদের জবাবে তিনি বলতেন, ‘কোনো শিল্পেরই আন্তর্জাতিক ফর্ম হয় না। কারণ শিল্প দেশ-কাল, ধর্ম-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ভূগোলের ওপর দাঁড়ানো। লাতিন আমেরিকান শিল্পরীতি আমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। বৈশ্বিক হয়ে উঠতে পারে, তবে কাজ দেশ-কাজ ভূগোলের আশ্রয়ে সমূলিত।’

তিনি বিশ্বাস করতেন অন্যের অনুকরণ করে নয়, ঐতিহ্যের ধারায় বিশ্বনন্দনে হাঁটাতেই আত্মমর্যাদা। সেলিম আল দীনের সাহিত্যকর্মগুলো মূলত একটা শিক্ষা। যার পঠন-পাঠন, ধ্যান-অনুধাবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কীভাবে সাহিত্য-শিল্পে আত্মপরিচয় অর্জন করতে পারে তার শিক্ষা দেবে। সেলিম আল দীনের সাহিত্য-চেতনা এক কথায় হাজার বছরের বহমান সাহিত্যভাবনার জাগরিত চেতনা।


ঋতু পরিবর্তনে শিশুর ঠাণ্ডা জ্বর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এমি জান্নাত

ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের শরীরে নানা প্রভাব পড়ে। এখন আবহাওয়ার পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। এই বৃষ্টি তো এই রোদ। এ সময় শিশুদের শরীরে আক্রমণ করে বসতে পারে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া। তা থেকে সাধারণ ঠাণ্ডা বা জ্বর হতে পারে। এরকম হলে ভয় না পেয়ে কী করণীয় সেটা আগে জানতে হবে।

নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জিয়াউল কবির বলেন, এই সময় হাঁচি ও কাশি হতে পারে। সঙ্গে অল্প জ্বর থাকতে পারে। এ সময় ভয় না পেয়ে সাধারণ সর্দি কাশিতে যা করণীয় সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

• আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুকে গরম রাখতে হবে। তবে বেশি ভারী কাপড় না পরানো ভালো। এতে শিশু ঘেমে ঠাণ্ডা বেশি লেগে যেতে পারে।

• সর্দি বা কাশি থাকলে শিশুকে গরম পানির সঙ্গে লেবু ও চিনি, লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে ৫-৬ চা-চামচ করে দিনে ৪-৫ বার খাওয়ালে আরামবোধ হবে।

• অনেক সময় সর্দি হয়ে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সাধারণ স্যালাইন (খাওয়ার স্যালাইন) ড্রপারের সাহায্যে শিশুর দুই নাকের ছিদ্রে একফোটা করে দিনে দুই থেকে তিন বার দিলে ভালো। পাশাপাশি কটনবাড দিয়ে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

• দেশের শিশুরা সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিত্‍সা না করালে নিউমোনিয়া মারাত্মক রুপ নিতে পারে। তাই শিশুর এ রোগের লক্ষণ দেখা দেবার সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ভালো।

• এ সময় শিশুকে কুসুম গরম পানিতে গোসল করালে উপকার পাওয়া যায়। গোসলের আগে অলিভঅয়েল ব্যবহার করা উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে শিশুর হাত-পায়ে লাগাতে পারেন। এতে শীতে ত্বক ভালো থাকবে।

• এই আবহাওয়ায় শিশুদের খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, ঋতু পরিবর্তনের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। সেই সাথে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস ইনফেকশন থেকে জ্বর হতে পারে। তাই বাইরের ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে।

• বেশি বেশি পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লেগে যায়। আর ছয় মাসের কম বসসী শিশুদের মায়ের দুধের বিকল্প নেই।

• শিশুর অভিভাবককে অবশ্যই আবহাওয়ার পরিবর্তন বুঝতে হবে। শিশুকে সরাসরি ফ্যানের নিচে রাখা যাবে না। যেকোনো সমস্যা গুরুতর মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মডেল : ইনহা,ছবি : দৈনিক বাংলা


টেলিগ্রাম বট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টি এইচ মাহির

টেলিগ্রামের অনেক বট সম্পর্কে আমরা জানি না। তাই টেলিগ্রামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বট সম্পর্কে অবগত করতে এই লেখাটি। এখানে বটগুলোর সরাসরি ইউজার নেম দেয়া হয়েছে। কারণ এক‌ই নামে অনেক বট আছে।

@TGStat_Bot: টেলিগ্রামে অনেকের চ্যানেল থাকে। চ্যানেলের গ্রাফ দেখতে এই বট ব্যবহার করতে পারেন।
@cricbuzz_bot: টেলিগ্রামে খেলার খবর পেতে এই বট ব্যবহার করতে পারেন। এখানে খেলার কমেন্ট্রিসহ স্কোর দেয়া হয়।
@utuberabot: এই বট ব্যবহার করে ইউটিউবের সাম্প্রতিক ট্রেন্ডে থাকা ভিডিও সহজেই পেয়ে যাবেন। প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা করে তথ্য দিতে পারে এই বটটি।
@ChannelInlineBot: আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইনলাইন পোস্ট দিতে ব্যবহার করতে পারবেন এই বট। পোস্টের নিছে সরাসরি লিংক এড করা যাবে।
@LivegramBot: লাইভগ্রাম বটটি দিয়ে আপনার নিজস্ব বট তৈরি করতে পারবেন। তবে ইউজারদের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে হবে আলাদা আলাদা করে।
@sticker2GIFBot: স্টিকার থেকে gif তৈরি করতে পারবেন এই বটের সাহায্যে। গিফ্টগুলো টেলিগ্রামে সেভ‌ও করতে পারবেন।
@Stickers: টেলিগ্রামের অফিশিয়াল স্টিকার বট এটি। এই বটের সাহায্যে আপনি টেলিগ্রামে স্টিকার যুক্ত করতে পারবেন এবং তা ব্যবহার করতে পারবেন ম্যাসেজে।
@QuizBot: টেলিগ্রামে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বট কুইজ বট। শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক এই বট। বটটির সাহায্য সময়সীমাসহ কুইজ তৈরি করতে পারবেন। গ্রুপ এবং ম্যাসেজে কুইজ টেস্ট দেয়া যাবে। তা ছাড়া এখানে লিডারবোর্ড সুবিধা ও আছে।
@cloud_upload_bot: এই বটটি ক্লাউডভিত্তিক বট। এখানে ফাইল, ছবি, ভিডিও আপলোড করে লিংকের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। যাদের টেলিগ্রাম নেই তাদের সঙ্গেও শেয়ার করা যাবে।


ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে  ওপেনএআই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সরকার হাসান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহার দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলেও আগামী বছরের শেষে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সংস্থাটির।

অ্যানালাইটিক ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট এমন কথাই বলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাট জিপিটি চালাতে প্রতিদিন কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে সংস্থার। শুধু চ্যাটজিপিটি সেবা দিতেই ওপেনএআই সংস্থা প্রতিদিন খরচ করছে ৭ লাখ ডলার, যা প্রায় ৮ কোটি টাকার সমান।

জিপিটি ৩.৫ এবং জিপিটি ৪ এই দুই সংস্করণকে মনিটাইজ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে লাভের মুখ দেখেনি। উল্টো প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে সংস্থাটির।

আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ কোটি কমেছে, যা মোট ব্যবহারকারীর ১২ শতাংশ।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওপেনএআই সংস্থার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত চ্যাটজিপিটি মেসেজিং পরিষেবাটি চালু হয়। ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায় তারা। তবে দ্রুত কাজ করা এই অ্যাপ এখন কিছুটা হলেও বিপদে। যাত্রার শুরুর দিকে অসংখ্য ব্যবহারকারী এতে আগ্রহ দেখালেও বিগত কয়েক মাসে এই সংখ্যা ক্রমশ নিম্নমুখী। ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপুল ব্যয়ে নাজেহাল ওপেনএআই সংস্থাটি।

অ্যানালাইটিকস ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বলছে, টেকনোলজির এই প্রতিযোগিতার বাজারে অসংখ্য ওপেন সোর্স এলএলএম মডেল রয়েছে। যেগুলো বিনা মূল্যে নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। যেমন, মাইক্রোসফটের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি মেটার লিয়ামা-২ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যও বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছে। চ্যাটজিপিটির সেবা বিনা মূল্য নয়। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ফলে ওপেনএআইয়ের ব্যবহারকারীরাও অন্য বিকল্প দেখে সুবিধামতো বেছে নিচ্ছেন।

প্রতিবেদন বলছে, ওপেনএআই এখনো ব্যবসা থেকে লাভ করতে পারেনি। বরং মে মাসে ৫৪ কোটি ডলার ক্ষতি হয় সংস্থাটির। তবে আশা ছাড়েনি সংস্থাটি। তাদের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, চলতি বছর তারা ২০ কোটি ডলার লাভ করবে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের শেষে লাভের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা রাখলেও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন ওপেনএআই।

তথ্য সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস


সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন ইপশিতা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেখাতে মেকআপের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটা অনেক সময়ই জরুরি হয়ে যায়। বিভিন্ন উৎসব, পার্টি বা বিয়েতে নতুন করে সাজতে দেখা যায় সবাইকে। তবে সময়, বয়স এবং উৎসবের ধরন বুঝে মেকআপ সবাই করতে পারেন না। যারা অভিজ্ঞ এবং মেকআপ নিয়েই যাদের কাজ, তারাই কেবল আপনাকে সুন্দর ও সুশ্রী হিসেবে দেখাতে পারেন। এবং সেটা সম্ভব হয় অনিন্দ্য সুন্দর মেকআপের ফলে।

আর এই কাজটি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করেন ফারজানা রহমান। যাকে সবাই চেনেন ইপশিতা নামে। তবে এক দিনে তিনি সবার প্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেননি। দিনে দিনে তিনি রপ্ত করেছেন এবং ভরিয়েছেন মেকআপ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি।

আন্তর্জাতিকভাবে মেকআপ এবং ত্বকের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফারজানা রহমান ইপশিতা। নারীদের সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার পেছনে তার মেকআপের হাত রয়েছে। কারণ, অসংখ্য তারকা অভিনেত্রী ও শিল্পী তার কাছে নিয়মিত মেকআপ নিয়ে থাকেন।

ফারজানা রহমান ইপশিতার পরিচয় দেয়ার আগে তার স্বপ্ন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন বড় মেকআপ আর্টিস্ট হতে চেয়েছিলেন এবং এটাই ছিল তার স্বপ্ন। আর এ কারণেই তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে মেকআপের ওপর দেশ-বিদেশ থেকে নানা ধরনের ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে তার আগে ২০১৫ সালে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ গ্র্যাডি বোস্টন থেকে মেকআপ আর্টিস্ট্রিতে ডিপ্লোমা করেছেন। এরপর তিনি লন্ডন থেকে এশিয়ান ব্রাইডাল মেকআপ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট মারিও ডেডিভানোভিকের কাছ থেকে মাস্টার ক্লাস সম্পন্ন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এসব ট্রেনিং ও কোর্সের মাধ্যমে জেনেছি কীভাবে একজন নারীকে সব সময় সুন্দরী ও আকর্ষণীয় দেখায়। এটাই আমার কাজের ও সফলতার বড় বিষয়।’

ব্যাংকার বাবা ও রাজনীতিবিদ মায়ের সুসন্তান ইপশিতা মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল বিউটি ইন্ডাস্ট্রি (আইবিএ) থেকে সেরা আন্তর্জাতিক মেকআপ শিল্পীর পুরস্কার জিতেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের টেলিভিশন রিপোর্টার ইউনিটি থেকে ২৭তম টিভি পুরস্কারে ২০২১ সালের সেরা মেকআপ শিল্পী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া দেশের মিরর ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সেরা মেকআপ বিশেষজ্ঞের পুরস্কার জিতেছেন।

নতুন মেকাপ আর্টিস্ট তৈরিতে ইপশিতা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার প্রয়োজন হলে আমি তাদের সাহায্য করি। আমি সবাইকে অনুপ্রাণিত করি। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। আমি মেকআপ এবং ত্বকের ওপর প্রফেশনাল ওয়ার্কশপের আয়োজন করি এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেই।’

তিনি সবশেষ স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, ‘এখন আমার লক্ষ্য হলো মেকওভারের ওপর একটি স্কুল খোলা। যেখানে আমরা আন্তর্জাতিক একাডেমির মতো প্রশিক্ষণ দিতে পারব। যাতে করে মেয়েরা স্বাবলম্বী হিসেবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন।’


চাঁদের মাটিতে পদচিহ্ন আঁকল ভারত

আপডেটেড ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ২৩:৪৫

ইতিহাসের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে সফলভাবে নভোযান অবতারণ করাল ভারত। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৬ টা ৩৪ মিনিটে ভারতীয় চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। চাঁদের দক্ষিণমেরু জয়ী প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাল ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন আর চিন এই গৌরবের অংশিদার ছিল। এই তালিকায় এখন যুক্ত হলো ভারত।

২৩ আগস্ট ২০২৩। বিকেল ৬টা। ভারতীয় তো বটেই গোটা বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানপ্রেমীরা ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলে ঢুঁ মারতে শুরু করেন। চাঁদ অভিযানের রুদ্ধশ্বাস ত্রিশ মিনিট প্রত্যক্ষ করার জন্য। শঙ্কা ছিল, দ্বিধাও ছিল। কারণ এর আগে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান তীরে গিয়ে তরি ডুবিয়েছিল। চাঁদের মাটি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে থাকতেই বিধ্বস্ত হয় চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার। তাছাড়া দুইদিন আগে রাশিয়ার লুনার ২৫-এর করুণ পরিণতি দেখে শংকাটা আর বড় আওয়াজে বাজতে শুরু করেছিল ভারতীয়দের মনে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ইসরোর বিজ্ঞানীদের আর দূরে বসে অনালাইনে উপস্থিত ভারতের প্রধানন্ত্রীর শঙ্কিত চেহারাই বলে দিচ্ছিল, দোলচালে আছেন তাঁরাও। তবে গতবারের ভুল থেকে বিজ্ঞানীরা শিক্ষা নিয়েছিলেন বলেই কিনা, এবার কয়েকদিন ধরেই সফলতার মন্ত্র আওড়াচ্ছিল ভারতীয় মিডিয়া। সত্যিই সত্যিই তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল বিক্রমের কৃত্রিম পা চাঁদের মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে।

খুব কম বাজেটে ভারত মহাকাশে অভিযান চালাচ্ছে গত একদশক ধরেই। চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রনযান ১, মঙ্গলের কক্ষপথে মঙ্গলযান ১ অরবিটার দুটি ঘুরে ঘুরে এখনো ভারতীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সামর্থ্যের জয়পতাকা ওড়াচ্ছে। কিন্তু ভারতের স্বপ্ন ছিল চাঁদের বুকে ল্যান্ডার অবতারণ করানো। মঙ্গলবার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।

ভারত তাঁদের মহাকাশযান তৈরি করে নিজেদের ল্যাবরেটরিতেই, ব্যবহার করে নিজেদের স্পেস স্টেশন। ৭৬ বছর আগে সদ্য স্বাধীন হওয়া হতদরিদ্র দেশটা তখন হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি একদিন তারা চাঁদে নভোযান পাঠাবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৬টা ১৫ মিনিট থেকেই শুরু হয় অবতরণের সবচেয়ে কঠিন সময়টা। অবশ্য বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের ৩০ কিলোমিটার কক্ষপথে অবস্থান করছিল। শেষ ২০ মিনিটে ছিল আসল পরীক্ষা। চাঁদে বায়মণ্ডল নেই, তাই মঙ্গলে বা পৃথিবীতে যত সহজে একটা নভোযানকে অবতারণ করানো সম্ভব, চাঁদে সেটা সম্ভব নয়। বায়ুমণ্ডল নেই বলে মাটি স্পর্শ করার আগমুহূর্তে প্যারাস্যুটের সহায্যে অবতরণের কোনো সুযোগ নেই। তাই খুব ধীরে ধীরে ল্যান্ডারের গতি কমাতে হয়।

এদিন দেখা গেল, চাঁদের মাটি থেকে ৭.৪ কিলোমিটার দূরে থাকতে প্রায় স্থির হয়ে গেল বিক্রম। কারণ চাঁদের দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় চার লাখ কিলোমিটার। এত দূর থেকে চাইলেই ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না পৃথিবী থেকে। তাই শেষ মুহূর্তে গিয়ে ওই ব্রেক। তখন আসলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দেখে নিচ্ছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। অবতরণ স্থান, সেখান কোন জায়গাটা বেশি সমতল, ইত্যাদি। তারপর ধীরে সুস্থে বিক্রমকে আবার চালাতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। শেষ আট শ মিটারে গিয়ে বিক্রম সবচেয়ে সাবধানী ছিল, খুব ধীরে নামো হচ্ছিল তখন সেটাকে। তারপর ১৫০ মিটার ও ৫০ মিটারে গিয়ে আরও দুবার ছোট ছোট ব্রেক নেয় বিক্রম। তারপর আসে সেই কাংখিত মুহূর্ত। বিক্রম অবতরণ করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

বিক্রম যখন চাঁদে অবতরণ করছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে অবস্থান করছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখান থেকেই তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। বিক্রম চাঁদের মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ১৪০ কোটি ভারতীয়কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘দূরের চাঁদমামা এখন ট্যুরের হবে’।

বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করা প্রথম দেশ হতে চেয়েছিল। কিন্তু সে পথে বাগড়া দেয় রাশিয়া। গত ১১ আগস্ট তারা লুনার ২৫ মিশন চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপন করে। তাঁদেরও লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ মেরু। কিন্তু তারা মাত্র দশদিনেই চাঁদের মাটি স্পর্শ করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষমূহুর্তে গিয়ে চাঁদের মাটি থেকে অনেকটা দূরেই বিধ্বস্ত হয় লুনার ২৫-এর ল্যান্ডার। তাই ভারতের কপালেই উঠল চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের প্রথম খেতাব। লক্ষ্য এখন পরবর্তী গবেষণা।


ল্যাপলাসের দৈত্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসী বিজ্ঞানী পিয়েরে সায়মন ল্যাপলাস হাজির হাজির করালেরন এক ডেমন বা দৈত্যকে। যিনি ভবিষ্যতের সকল ঘটনা পাই টু পাই বলে দেবেন। ভবিষ্যদ্বাণী করবেন গোটা মহাবিশ্বের প্রতিটা কোণে আগামীতে ঘটবে এমন সকল ঘটনার। ল্যাপলাস জানতেন মহাপুরুষের পক্ষেও সম্ভব নয়। পদার্থবিজ্ঞানে সেই ডেমন ল্যাপলাসের দৈত্য নামে অমর হয়ে গেছে।

তো কী কাজ এই দৈত্যের?

অতিমানবিক এক কাজ করতে হবে সেই দৈত্যের। তবেই আমরা পাব ভবিষ্যতের সকল রূপরেখা। এজন্য দৈত্যকে খাটতে হবে, জানতে গোটা ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস। প্রায় ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন আগেই বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছি। আদুরে বাংলা নামে যেটাকে আমরা বলি মহাবিস্ফোরণ। সেই মহাবিস্ফোরণের সাথে সাথে জন্ম হয়েছিল সময়ের। জন্ম হয়েছিল স্থানের। মোটা কথা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে জনপ্রিয় টার্ম স্পেসটাইম বা স্থানকালের শুরুটাই হয়েছিল মহাবিস্ফোরেণর সাথেই সাথেই। এরপরে প্রথম তিনমিনিটেই প্রচণ্ড গতিতে প্রসারিত হয়েছে স্থানকাল তথা মহাবিশ্ব। বিস্ফোরণের শক্তি থেকে তৈরি হয়েছে বস্তকণা আর আলো। এরপর কালের বিবর্তনে আরো প্রসারিত হয়েছে মহাবিশ্ব। প্রসারণের সাথে সাথে তৈরি হয়ে গ্যালাক্সি, গ্রহ-নক্ষত্র, উপগ্রহ-বামনগ্রহ, বামনগ্রহ, ধূমকেতু আরো কত কী!

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যায় প্রায় ১০ হাজার কোটি। একেকটা গ্যালাক্সিতে আবার কয়েক হাজার কোটি নক্ষত্র থাকে। গোটা মহাবিশ্বে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদির সংখ্যা বের করা শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি গ্রহে, প্রতিটা উপগ্রহে, প্রতিটা নক্ষত্রে প্রতি মুহূর্তে কত ঘটনা ঘটছে। সামান্য একটা ব্যাকেটিরায় দেহেই ঘটছে কত ঘটনা। মানুষের কথা বাদই দিন। চলছে পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রন আর নিউক্লিয়নদের মধ্যেও কত কত অ্যাকশন-রি অ্যাকশন। শুধু পৃথিবীর মাত্র এক মুহূর্তের ঘটনার হিসাব কি কষা সম্ভব?

সম্ভব নয়। পৃথিবীর পাঁচ শ কোটি বছরের হিসাব রাখা আরও কঠিন। সেখানে গোটা মহাবিশ্বের ১৩.৮ বিলিয়ন বছরে প্রতিটা গ্যালাক্সিতে, নক্ষত্রে, গ্রহে, মহাজাগতিক বস্তুতে, প্রতিটা পরমাণুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার হিসাব রাখবে কে?

মহাপুরুষই হোক আর দৈত্যই হোক, তার পক্ষে এত হিসাব রাখা সম্ভব?

ল্যাপল্যাস বলেছিলেন, তার সেই দৈত্যের পক্ষে সম্ভব মহাবিশ্বের জীবনের ইতিহাসে যত ঘটনা ঘটেছে, সব ঘটনার হিসাব তার নখদর্পনে থাকবে। সত্যিই যদি এমন কোনো দৈত্য থাকে বা তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই দৈত্যের পক্ষে সম্ভব মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তার সকল ঘটনার জবাব দেওয়ার।

পদার্থবিজ্ঞান অনেক কিছুরই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। যেমন আপনার হাতে একটা কলম আছে, সেটা আপনি ছেড়ে দিলেন হাত থেকে। তখন আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন সেটা মেঝেতে পড়বে। তেমনি চাঁদে নভোযান পাঠিয়ে আপনি বলতে পারবেন কখন কবে সেটি চাঁদের মাটিতে ল্যান্ড করে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা অবশ্য ঘটে। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছানোর আগেই হয়তো বিধ্বস্ত হতে পারে। সেটা পদার্থবিদ্যার ব্যার্থতা নয়। ব্যার্থতা বিজ্ঞানীদের। হয়তো মহাকাশ যানের ত্রুটি ছিল, সেটা তাঁরা ধরতে পারেননি। তাঁরা পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত মহাশূন্যের প্রতিবন্ধকতাগুলোর হিসাব বের করতে পারেননি। মোটকথা হিসাবে ভুল ছিল। আর হিসাবে ভুল থাকলে ল্যাপলাসের দৈত্যেরও ক্ষমতা নেই ঠিকঠাক মতো ভবিষ্যৎ গণনা করার।

ল্যাপলাসের সময় মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের কথা জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ‘সময়’ তো সবকালেই ছিল। তাই ছিল অতীতের হিসাবও। ল্যাপল্যাস বলেছিলেন, সেই অতীতের সব ঘটনার কথা। সে অতীত যত লম্বাই হোক না কেন। এখন দেখা যাক, ল্যাপলাসের দৈত্যের পক্ষে আসলেই সম্ভব কিনা।

ল্যাপলাসের দৈত্যকে মানুষ বা প্রাণীই হতে হবে তার কোনো মানে নেই। সেটা যন্ত্র হলেও চলবে। হতে পারে সেটা সুপার কম্পিউটার। কিন্তু সেই সুপার কম্পিউটারই কি অতীতের সব হিসাব কষে রাখতে পারে?

পারে না। কারণ, তাপগতিবিদ্যার সূত্র। আরো নিশ্চিত করে বললে শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি।

শক্তির সংরক্ষণশীতা নীতি, যেটাকে আবার কার্নোর ইঞ্জিন তত্ত্ব থেকে বলা যায়, দুনিয়ায় এমন কোনো যন্ত্র তৈরি সম্ভব নয় যে শতভাগ দক্ষতায় কাজ করতে পারে।

সুতরাং এটা নিশ্চিত যত চেষ্টাই করা হোক, এমন কোনো যন্ত্র বা দৈত্য তৈরি করা সম্ভব নয় যে মহাবিশ্বের অতীতের সব ঘটনার হিসাব রাখবে। আবার যত হিসাব কষবে সেগুলোরও শতভাগকে সে আউটপুট হিসেবে বের করতে পারবে না। অর্থাৎ সব ঘটনার হিসাব থেকে সবগুলোর হিসাবকেই ভভিষ্যদ্বাণীতে রূপান্তরিত করেেত পারবে না। কিছু তথ্য হারিয়ে যাবে তার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। তাই ল্যাপলাসের দৈত্য তৈরি করা কখনোই সম্ভব হবে না, অন্তত আমাদের মহাবিশ্বে পদার্থবিদ্যার যে নীতি রয়েছে, সে অনুযায়ী এমন দৈত্যের জন্ম হবে না কখনো।


বিল্টুর টাইম মেশিন

আপডেটেড ২২ আগস্ট, ২০২৩ ১৮:৪৮

সাত সকালে বিল্টুর হাতে একটা যন্ত্র ধরিয়ে দিলেন ফজলু চাচা। বললেন, ‘নাও তোমার টাইম মেশিন?’

‘টাইম মেশিন!’ বড্ড অবাক হয় বিল্টু। এ যন্ত্র আজ পর্যন্ত কেউই বানাতে পারেননি। ফজলু চাচা বানিয়ে ফেললেন। অবশ্য ফজলু চাচাকে দুনিয়ার সেরা বিজ্ঞানী মনে করে বিল্টু। তার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু এটা যদি সত্যি সত্যি টাইম মেশিন হয়, এর দাম তো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার! নাহ, বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়নও নয়, অমূল্য। এত দামি জিনিস চাচা ওকে দিয়ে দিলেন। বিল্টু চাচা গিয়ে বলল ওকথা৷ চাচা হেসে বললেন, ‘যে জিনিস অমূল্য, কেউ কি সেটা কিনতে পারবে? আর না-ই যদি বিক্রি হলো, ওটা দিয়ে আমার কী লাভ! আমি বরং আরেকটা বানিয়ে নেব।’

কিছুতেই বিস্ময় যাচ্ছে না বিল্টুর। তারমানে, চাচা চাইলেই আরেকটা বানিয়ে নিতে পারেন! এখন থেকে ওটা ওর!

কাকা ওকে দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে চালাতে হবে যন্ত্রটা। দেখতে একটা খেলনা গাড়ির মতো। চাকাও আছে আবার পাখাও আছে। চাইলেই ওড়া যাবে, মাটিতেও চালানো যাবে, চাচা জানালেন। বিল্টু কিছুটা হতাশ হলো। বইয়ে পড়ছে, কেউ টাইম মেশিনে চড়ে যন্ত্রাটা চালু করলেই যন্ত্রসহ মানুষটা উধাও হয়ে যায়। চাচার যন্ত্রটা তাহলে তেমন নয়, সামনে পেছনে চলে। এই যন্ত্র কীভাবে টাইম ট্রাভেল করাবে কে জানে।

‘ওসব ভূঁয়া!’ চাচা বলেন। বিল্টু বুঝতে পারেন না, তাই চাচা ভেঙে বলেন, ‘তুমি যেটা ভাবছ ওটা ভূঁয়া, ওসন গাঁজাখুরি সায়েন্স ফিকশন বই আর সিনেমাতেই সম্ভব। বাস্তবের টাইম মেশিন এমনই।’

বিল্টুর কেমন যেন অস্বস্তি হলো। কিন্তু কিছু বলল না।

চাচার পাগলামির খতা সবাই জানে। তাই বিল্টু গাড়িটা লুকিয়ে রাখল বাড়ির পেছনের ঝোপের ভেতর। রাতে বের করবে।

রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, বিল্টু তখন চুপিচুপি গাড়িটা বের করে রাস্তায় নামে। গ্রামের রাস্তা, একদম ফাঁকা থাকে এসময়। বিল্টু গাড়িতে উঠে বসে। এ গাড়ি চালানো খুব সহজ, অন্তত চাচার কথা যদি সত্যি হয়। শুধু সুইচ চেপে দিলেই হলো। অবশ্য ডিসপ্লেতে গাড়ির স্পিড ঠিক করে দিতে অথবা দিন তারিখ হয়। অর্থাৎ কবে কোন তারিখে কোথায় উপস্থিত হবে বিল্টু, সেটা লিখে দিলেই গাড়ি ইচ্ছেমতো চলতে শুরু করে।

বিল্ট গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। একেবারে আলোর বেগে চালিয়ে। এত গতি! তার আগে হেডলাইট জ্বালিয়ে নেয়। গাড়িটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চলে। তাই অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার কোনো আশংকা নেই।

গাড়ি চলতে শুরু করে। কীন্তু একী, কিছুই যে দেখতে পাচ্ছে না! হ্যাঁ, গতির কারণে সবকিছু ঝাপসা দেখাতে পারে, কিন্তু পুরো অন্ধকার কী করে হয়? হেডলাইট জ্বালিয়েছে, তবু কিছু দেখা যাচ্ছে না কেন?

তখনই গাড়ির ইন্টারকমে খনখনে আওয়াজ শুনতে পায়, ‘বুদ্ধু কোথাকার!’ ফজলু চাচার গলা।

‘আরে গাড়ি চলছে আলোর গতিতে, হেডলাইটের আলোও চলছে আলোর গতিতে। তাই আলো সামনের কোনো বস্তুতে গিয়ে যখন পড়ছে, ঠিক একই সময়ে তুমিও সেই জায়গা অতিক্রম করছ। সেজন্য প্রতিফলিত আলো তোমার চোখে এসে পড়ছেই না। তাই দেখবে কী করে?’


ল্যান্ডার আর পাথরের ছায়া কেন সমান্তরাল হলো না?

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

মানুষ কি চাঁদে গিয়েছিল? ছবি, ভিডিওসহ অসংখ্য অকাট্য প্রমাণ আছে। তবুও একদল মানুষ মাঝে মাঝে প্রশ্ন তোলে, কনস্পাইরেসি থিওরি কপচায়। কিছু ব্যাপ্যারে তাদের খটকা আছে, কিছু প্রশ্ন আছে। সে সব প্রশ্নের একে একে ব্যাখ্যা হাজির করব আমরা দৈনিক বাংলায়। আজ ’ল্যান্ডার আর পাথরের ছবি সমান্তরাল না হওয়ার’- এ সংশয়ের ব্যাখ্যা।

Caption

চন্দ্রপৃষ্ঠের একটা ছবি আছে। ওপরের ছবিটা দেখুন। ওটাতে দেখা যায় ইগল মুনল্যান্ডার আ চন্দ্রপৃষ্ঠের কিছু ছায়া একই সমান্তরলে পড়েনি। কেন? একই উৎস থেকে আলো এলে, সবগুলো বস্তুর ছায়া একই দিকে পড়ার কথা, সেটা কেন হলো না? এ প্রশ্ন ছিল সন্দেহবাদীদের।

যৌক্তিক প্রশ্ন। কিন্তু অব্যাখত নয়।

একই উৎস থেকে আলো এলে, সেখান থেকে সবগুলো বস্তুর ছায়া কেমন হবে তা নির্ভর করে ছায়া যেখানে পড়ছে, সেই পৃষ্ঠের ওপরও। পুরো পৃষ্ঠ যদি সমতল আর মসৃণ হয়, তাহলে ছায়া পড়বে সমান্তরালে। কিন্তু পৃষ্ঠ যদি সমতল না হয়, তাহেলে আর সমান্তরালে পড়বে না। ছবি বিকৃত হয়ে যাবে, ফলে সমতলের ছায়ার সঙ্গে তৈরি হবে বিশৃঙ্খল কৌনিক ব্যবধান। ছবিতে ল্যান্ডারের ছায়া যেখানে পড়েছে, একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখবেন সেখানে চাঁদের পৃষ্ঠ মসৃণ নয়। বরং একটা এবড়ো-খেবড়ো খাদ দেখা যাচ্ছে। সেই খাদের ওপর পড়েছে বলেই সামনের পাথরের ছায়ার সমান্তরলে ল্যান্ডারের ছায়া পড়েনি।


ডেঙ্গু সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে নাটোরের তরুণরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আনিসুর রহমান

চলতি বছর এডিস মশার প্রভাবে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মারণঘাতী এই সংক্রামক ব্যাধি ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট এতটা কমতে শুরু করে যে রক্ত দিয়েও তাকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। শুধু রাজধানী শহর ঢাকা নয়, এখন সারা দেশে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমাদের সবার আগে প্রয়োজন সচেতন হওয়া। তাই ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন’- এই স্লোগানে নাটোর জেলায় জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

বৃষ্টির পানি উপেক্ষা করে মাসব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নাটোরে মশা প্রতিরোধক স্প্রে ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কলেজ পড়ুয়া তরুণরা। স্প্রে মেশিনে পরিমাণমতো পানি ও কীটনাশক মিশিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে পানি জমে থাকা অপরিষ্কার স্থান গুলোতে স্প্রে করছে তারা। দোকানী ও পথচারীদের ডেঙ্গু বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতার বার্তা ও লিফলেট পৌঁছে দিচ্ছেন।

স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে তাদেরকে নিয়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছেন আশেপাশের সাধারণ মানুষদের ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিতে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেকেই এগিয়ে আসছেন এসব কাজে।

১৩আগস্ট নাটোর পৌর এলাকার ঝাউতলা বস্তিতে ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম চালায় তারা। এ সময় তারা জমে থাকা, আবদ্ধ পাত্রে থাকা (মশার প্রজনন হতে পারে) পানি পরিষ্কার কার্যক্রম ও মশা নিধন কীটনাশক স্প্রে করে। জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে

আবাসস্থলের আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে বস্তাবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের কার্যক্রমকে বস্তিবাসী সাধুবাদ জানান এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সহায়তা করেন।

উক্ত কর্মসূচির উদ্যোক্তা ও এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান শেখ রিফাদ মাহমুদ জানান, নাটোর জেলাজুড়ে প্রায় দশ হাজার মানুষকে ডেঙ্গু জ্বর বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে মাসব্যাপী কাজ করছেন তারা। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মাঝে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও এডিস মশার প্রজননস্থল নিধনে বাড়ি, বাড়ির আঙিনা এবং আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক বার্তা সাধারণ মানুষের মাঝে পোঁছে দিচ্ছেন।

বিশেষ করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল,আশ্রয়ন প্রকল্প, বস্তি এলাকার মানুষদের মাঝে ডেঙ্গু সচেতনতা তৈরি ও তাদের এই রোগের সংক্রমণ থেকে প্রতিকারের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

এসআরআই ফাউন্ডেশন সদস্য গোলাম রাব্বানী, আকাশ কাইফ, ফারহান রিহাম, নাহিদ আহমেদ সহ অন্যান্য সদস্যরা উক্ত কার্যক্রমসমূহ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।


banner close