সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জয়ন্তী আজ (২৫ মে)। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ নজরুল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। ১৯৭৬ সালে বিদ্রোহী কবির কাব্যময় জীবনের অবসান ঘটে। দীর্ঘদিন চেতনাহীন নির্বাক থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় থমকে যায় বাংলাদেশের জাতীয় কবির জীবন। তবে দৈহিক মৃত্যু হলেও সৃষ্টির আলোয় আজও তিনি অমর হয়ে আছেন। নিজের ক্ষুরধার লেখনী দিয়ে চিরস্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে।
নজরুল ছিলেন সব্যসাচী লেখক। গল্প, কবিতা, উপন্যাস কিংবা সংগীত-সাহিত্য, শিল্পের সব শাখায় নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ‘প্রেমিক’ নজরুলের লেখনীতে একদিকে উঠে এসেছে প্রেমের সঞ্জীবনী বাণী। অন্যদিকে এসেছে দ্রোহের গান। শুধু প্রেম আর দ্রোহ-ই নয়, পীড়িতের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির কথাও বারবার এসেছে নজরুলের লেখনীতে। তাই শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় আজও তিনি ‘উন্নত মম শীর’।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম ফটোগ্রাফির প্রাণপুরুষ মনজুর আলম বেগ। শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা তাকে ‘আলোকচিত্রাচার্য’ খেতাবে ভূষিত করেছেন। যদিও বহু বছর তিনি বুদ্ধিজীবী ও সরকারি মহলে ছিলেন অনালোচিত। জীবদ্দশায় তাকে আমরা সম্মানিত করতে পারিনি। তিনি ১৯৯৮ সনে মৃত্যুবরণ করেন, এর প্রায় এক দশক পর তাকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর একুশে পদকে সম্মান জানায় (২০০৭)। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথাও অনুচ্চারিত। স্বাধীনতাসংগ্রামে তিনি এক হাতে ছবি তুলেছেন, অন্য হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন। আলবদর-আলশামসদের করা বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তার নামও ছিল বলে জানিয়েছেন ‘আলোকচিত্রাচার্য মনজুর আলম বেগ ও সমকালীন আলোকচিত্রের বিবর্তন’ গ্রন্থের লেখক জাহাঙ্গীর সেলিম।
আনকোরা দেশে মনজুর আলম বেগ জোরেশোরে ফটোগ্রাফি আন্দোলন শুরু করেন। একদিকে গড়ে উঠছে নতুন দেশ, অন্যদিকে এর বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি মজবুত করার কাজে লেগে পড়েছেন মনজুর আলম বেগসহ অনেকে। তবে মনজুর আলম বেগ তার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনামলেই। ১৯৬০ সনে ঢাকায় ‘বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফী’ নামের ফটোগ্রাফির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ফটোগ্রাফিকে বিদ্যায়তনিক (একাডেমিক) রূপ দিতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। পাকিস্তান আমলে তিনি একাধিক ফটোগ্রাফি কোর্স সম্পন্ন করেন। তারপর যান লন্ডনে। সেখানেও তিনি হাতে-কলেম ফটোগ্রাফি শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি আবার যুক্তরাজ্যে যান এবং ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা করেন। তিনি লন্ডনে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, সে প্রস্তাব গ্রহণ না করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ফটোগ্রাফি জ্ঞান দিয়ে তোমার দেশের আমি কোনো উপকার করতে পারব না। কিন্তু এ জ্ঞান আমার দেশের জন্য উপকারে আসবে। আমি এখানে টাকা উপার্জন করতে পারব। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করাই আমার কাছে বড়।’ (আলোকচিত্রাচার্য মনজুর আলম বেগ ও সমকালীন আলোকচিত্রের বিবর্তন, লেখক: জাহাঙ্গীর সেলিম)। এ কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তিনি যা করেছেন, সবটাই দেশের জন্য। দেশের ফটোগ্রাফি শিক্ষার বিকাশে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। বিদেশে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মনজুর আলম বেগ ‘বুকের মাঝে বিশ্বলোকের সাড়া’ পেলেন। সেই বার্তা তিনি পৌঁছে দিতে চাইলেন নবগঠিত দেশের আলোকচিত্রীদের কাছে।
তবে তিনি জানতেন, ফটোগ্রাফি শিক্ষা বিকাশে হাতে-কলমে শিক্ষা, আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি ফটোগ্রাফির সাহিত্যিক ডিসকোর্সও জরুরি। ষাটের দশকের শেষ দিক থেকে তিনি বাংলায় ফটোগ্রাফি নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭৩ সনের এপ্রিলে তার উদ্যোগে ‘বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফী’ থেকে বের হতে শুরু করে ফটোগ্রাফিবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘ক্যামেরা’। বাংলা একাডেমির ‘বিজ্ঞান গ্রন্থপঞ্জি’ থেকে জানা যায়, ক্যামেরার প্রথম সংখ্যাটি বের হয় ১৩৭৯ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (এপ্রিল, ১৯৭৩)। ঢাকার ধানমন্ডির ‘বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফী’ থেকে প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শামসুল আলম পান্না। ৩৬ পৃষ্ঠার এই কাগজটির দাম ছিল দুই টাকা। শামসুল হক সম্পাদিত ‘বাংলা সাময়িক-পত্র (১৯৭২-১৯৮১)’ গ্রন্থ বলছে, এটি একটি ‘অনুশীলনমূলক আলোকচিত্রণ সাময়িকী’। এর সম্পাদক শামসুল আলম পান্না, সহযোগী সম্পাদক আবু বাকার এবং প্রকাশক মনজুর আলম (বেগ)। পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাতায় যা লেখা ছিল তার কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো। এই লেখাটি থেকে সহজেই ‘ক্যামেরা’র প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করা যায়:
“ফটোগ্রাফী বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম; কিন্তু এই ব্যতিক্রমের প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার প্রদানে প্রকাশক অকুণ্ঠচিত্ত। আসল কথা, ফটোগ্রাফী তথা আলোকচিত্রণ নামক এই সর্বজনীন দৃশ্য-ভাষাকে সব রকম প্রচ্ছন্ন ধারণা এবং সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিয়ে আধুনিক জীবনে সফল ব্যবহার এবং প্রয়োগের পথ প্রস্তুতির প্রথম পদক্ষেপ এটা। হাঁটিহাঁটি পা-পাও বলা চলে। আলোকচিত্রণের মৌলিক ধারণা এবং এর ব্যাপক ভূমিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায়োগিক এবং ব্যবহারিক কলাকৌশল সম্বন্ধে শিক্ষামূলক আলোচনা ও অনুশীলন চর্চা ‘ক্যামেরা’র মুখ্য উদ্দেশ্য। এ রকম একটা সাময়িকীর অভাববোধ বাংলাদেশের সৌখিন ও পেশাদার আলোকচিত্রণ শিল্পীদের কাছে অনেকদিন ধরেই।” আরও আশা করা হয়, ‘ক্যামেরা’ বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফীর মুখপত্রের ভূমিকাও নিয়মিতভাবে পালন করবে।
‘ক্যামেরা’র আগে পূর্ববঙ্গ থেকে ফটোগ্রাফিবিষয়ক আর কোনো বাংলা সাময়িকী বের হতো বলে আমাদের জানা নেই। ১৯৭৮ সনের ডিসেম্বর থেকে ‘বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র (বিপিএস) নিউজ লেটার বের হতে শুরু করে, ১৯৯২ সনে যার নাম হয় ‘ফটোগ্রাফি’। এর সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন মনজুর আলম বেগ। ১৯৮৩ সনে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে অতনু পাল সম্পাদিত ফটোগ্রাফিবিষয়ক মাসিক ফোটোগ্রাফি পত্রিকা। ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, এটিই ‘বাংলায় প্রথম ও একমাত্র মাসিক পত্রিকা’। কিন্তু এক দশক আগেই তো ‘ক্যামেরা’র প্রথম সংখ্যা বেরিয়ে গেছে! তবে বাংলা ভাষার প্রথম ফটোগ্রাফি পত্রিকা কোনটি তা নির্ধারণ করতে আরও গবেষণা জরুরি।
যা হোক, অর্থের অভাবে ‘ক্যামেরা’কে এগিয়ে নেয়া যায়নি। প্রথমে ত্রৈমাসিক হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে এটিকে মাসিক করার ইচ্ছে ছিল প্রকাশক মনজুর আলম বেগের। কিন্তু ওই একটি সংখ্যাতেই থেমে যায় সাময়িকীটি। প্রথম সংখ্যায় মনজুর আলম বেগের একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়, ‘ফটোগ্রাফির ভূমিকা এবং বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা’। আরও ছিল ‘আলোকচিত্রণ: (আলোকচিত্রণের ইতিহাস) ধারাবাহিক রচনা’, ‘বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফী’, ‘ঘরে বসে যন্ত্রছাড়া ফটোস্ট্যাট করার সহজ পদ্ধতি’, ‘প্রশ্নোত্তরে আলোকচিত্রণ জ্ঞান’, ‘আপনার জিজ্ঞাসা’, ‘ফরমুলা’, ‘আলোকচিত্রী পরিচিতি (গোলাম কাশেম)’, ‘স্টুডিও পরিচিতি (শাপলা স্টুডিও)’ ইত্যাদি শিরোনামের ফটোগ্রাফিবিষয়ক রচনা। স্বল্পায়ুর হলেও ‘ক্যামেরা’ ছিল বাংলাদেশে আধুনিক ফটোগ্রাফি আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ‘ক্যামেরা’ পরবর্তী অনেক উদ্যোগের অনুপ্রেরণা হতে পেরেছিল।
বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়,
সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক সে হয়।
বল দেখি এ জগতে সুখী বলি কারে,
সতত আরোগী যেই, সুখী বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ বলি কারে,
হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে, ধীর বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে মূর্খ বলি কারে,
নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে,
পরের যে ভালো করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে,
নিজ বোধ আছে যার জ্ঞানী বলি তারে।
*গত ৬ মার্চ ছিল বিখ্যাত কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২১১তম জন্মবার্ষিকী। সাত ভাই চম্পার পক্ষ থেকে এই কবির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের প্রথম অভিজ্ঞতামূলক একটি বই ‘টেররিজম ইন বাংলাদেশ: দ্য প্রসেস অব র্যাডিক্যালাইজেশন অ্যান্ড ইয়ুথ ভালনারেবিলিটিজ’ যা এবারের একুশে বইমেলায় ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি যৌথভাবে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ও পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম।
বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ টাকা। বাংলাদেশভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের প্রথম অভিজ্ঞতামূলক এই বইটিতে মৌলবাদের প্রক্রিয়া, মতাদর্শ এবং তরুণদের দুর্বলতা, যা সহিংসতার দিকে পরিচালিত করে, তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রচিত হয়েছে।
বইটিতে লেখকদ্বয় গুণগত গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এটি প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী, তাদের পরিবার, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে।
জিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্বে থাকা এই অধ্যাপক ‘শ্রম সম্পর্ক, সামাজিক আন্দোলন, নগর সমাজবিজ্ঞান, গবেষণা পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ’ নিয়ে কাজ করে আসছেন।
এদিকে বইটির আরেক লেখক বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বর্তমানে বিশেষ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০১৬ সাল থেকে তিনি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
মাসব্যাপী চললেও ২১ ফেব্রুয়ারিতে এসেই যেন পূর্ণতা পায় অমর একুশে বইমেলা। এই দিনে বইমেলায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন অনেকেই। তবে অন্যান্য দিনেও নিজেদের ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে তরুণরা হাজির হন মেলায়। নানা স্টল ঘুরে খুঁজে ফেরেন পছন্দের বই। শুধুই কি বই পড়া? বই লিখতেও আগ্রহী এখন অনেকে। আর প্রকাশকরাও এবার বাড়তি উৎসাহ নিয়ে প্রকাশ করেছেন তরুণ লেখকদের বই।
আগামী প্রজন্মের কাছে সাহিত্যের উত্তরাধিকার তুলে দিতে, নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে তরুণ সাহিত্যিকদের উঠে আসা জরুরি। এ বইমেলায় তারই প্রতিফলন দেখা গেল।
সামাজিক উপন্যাসের পাশাপাশি থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞান কিংবা কবিতার মতো বহুমাত্রিক বিষয়ে লিখছেন তরুণ লেখকরা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির আড়ালে যেমন উঠে আসছে গল্প, তেমনি থ্রিলারের আড়ালে সামাজিক ও রাজনৈতিক অসংগতিও তুলে আনছেন অনেক তরুণ লেখক।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা এমনই এক উপন্যাস ‘জলতরঙ্গ’। হাসান ইনামের লেখা এই বইটিতে উঠে এসেছে রাজনৈতিক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কীভাবে শক্তিশালী হচ্ছে একটি গোপন চক্র। যারা উড়িয়ে দিতে চায় একটা গোটা শহর। সঙ্গে রয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক এক দর্শন। গত বছর প্যারাসাইকোলজিক্যাল উপন্যাস ‘ঢাকায় ফাগুন’ লেখার পর বেশ সাড়া পেয়েছিলেন হাসান ইনাম।
প্রকাশিত হয়েছে জুবায়ের ইবনে কামালের প্রথম বই ‘বেঁচে থাকার গুজব’। শুরুতে একটি অবসাদগ্রস্ত তরুণীর গল্প মনে হলেও ক্রমেই গল্প অন্যদিকে মোড় নেয়। নির্বাচনের আগে আগে সরকারদলীয় নেতা খুন হওয়ার পাশাপাশি ১০ বছর আগের অপরাধ, সবকিছু মিলিয়ে ধোঁয়াটে এক রহস্যের ডাক। ক্রাউন সাইজের এ বইটিতে অপরাধবিষয়ক একটি জমজমাট থ্রিলার লেখা হয়েছে। ‘বেঁচে থাকার গুজব,’ ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশ করেছে বাতিঘর প্রকাশনী।
রাজনৈতিক কিংবা থ্রিলার জনরার পাশাপাশি কবিতার বইতেও রয়েছে তরুণদের উপস্থিতি। শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘আলোবতীর কালো খাতা’ নামের একক কবিতার বইটি লিখেছেন মুহাম্মদ বিন এমরান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ বিন এমরানের এটিই প্রথম বই। নিজের বই সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘শৈশব থেকে বয়ে আসা কবিতার চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে এসে বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা লেখা তথা লেখালেখিটা আসলে ব্যক্তির অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের সঙ্গে এ যাত্রাটা একটু অসম। তবে বহুমুখী চিন্তার পরিবেশ থাকায় প্রজন্মের পাঠকদের কবিতাবোধ ও চাহিদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সহজ। জীবনের দুঃখ-সুখের নানাবিধ আবরণে রঙিন কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আলোবতীর কালো খাতা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জাওয়াদ লিখেছেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘নীল পৃথিবীর তরে’। জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটিতে উঠে এসেছে অদ্ভুত এক মহাকাশযানের কথা। নিছক কল্পবিজ্ঞানের মোড়কের ভেতর যে গল্প বলেছে মানুষের কথা, পারস্পরিক সম্পর্কের কথা, স্বপ্নের কথা, তীব্র আনন্দ আর প্রবল দুঃখবোধের কথা। যেখানে ছজন মহাকাশচারী ভাসছেন নিঃসীম অন্ধকারে। সঙ্গে আছে দশম পর্যায়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার- অ্যাবাকাস। বিজ্ঞান আর কল্পনাকে ছুঁয়ে এই গল্প হয়ে উঠেছে আমাদের এই নীল গ্রহের গল্প, মানুষের গল্প। আমার-আপনার গল্প- কোথাও না কোথাও!
এসবের বাইরে আইন ও আদালতকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে একটি কোর্টরুম ড্রামা ঘরানার বই লিখেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের শিক্ষার্থী সামসুল ইসলাম রুমি। ‘কাঠগড়া’ নামের বইটিতে মূলত উঠে এসেছে এই শহরের বুকে চাপা পড়ে যাওয়া এক অপরাধের গল্প। এই গল্পে সম্ভবত প্রথমবারের মতো আদালতের কার্যক্রম প্রকটভাবে উঠে এসেছে, উঠে এসেছে সর্বস্ব হারানো কিছু অভাগা মানুষের কথা। বইটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর প্রকাশনী।
আফসার ব্রাদার্স, অন্বেষা, তাম্রলিপি, ছায়াবীথি, প্রথমার প্যাভিলিয়ন ও স্টলেও তরুণ লেখকদের বই পাওয়া গেল।
জুরাইন থেকে বইমেলায় ঘুরতে আসা তরুণী আসিফা ইসলাম তরুণ লেখকদের সম্পর্কে বলেন, ‘আমি বই পড়তে ভালোবাসি, ক্ল্যাসিক বই প্রচুর পড়েছি, বর্তমানে তরুণ লেখকদের বই পড়তেও ভালো লাগছে। বিশেষ করে মালিহা ইসলাম, সালমান হক, কিশোর পাশা ইমন ও কিঙ্কর আহসানের বই পড়ে খুবই মজা পাই। এবার ঠিক করেছি, তরুণদের অন্তত ২০টি বই কিনব।’
আসিফার মতো বহু তরুণের হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যের উত্তরাধিকার পৌঁছে যাবে পাঠকের হাতে, যারা ভাষাকে, স্বাধীনতাকে, একুশকে ধারণ করবে মনে-প্রাণে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছাতিমগাছগুলো আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠেছে। বাতাসে পাগল করা সুবাস। আর বইমেলায় অসংখ্য পাঠকের ভিড়। ছোটরা-বড়রা দলবেঁধে, কিংবা একাকী তরুণরা এসেছেন বইয়ের গন্ধ নিতে, নেড়েচেড়ে পরখ করতে, পছন্দ হলে বগলদাবা করতে। বইমেলার কাঁচা পথের রাঙা ধুলা তাদের পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাওয়ায় ভেসে ভেসে পাঠকের নাসারন্ধ্রে আঘাত করছে, এই নৈরাজ্যের সঙ্গে ছাতিমের রেণু পেরে উঠবে কেন! তবু এ ধুলার ইতিবাচকতা কম নয়। করোনায় নাভিশ্বাস ওঠা ঘরবন্দি জীবনে মানুষ যেটা পারেনি, এই বইমেলায় তাদের দলবেঁধে আগমন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ারই ইঙ্গিত করে।
একুশের বইমেলা এখন মধ্যগগনে। ফেব্রুয়ারির তারিখগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাঠকের ভিড়। শুক্রবার ছুটির দিনে সেই ভিড় সপ্তমে চড়েছে। বইমেলার সব প্রান্তে পাঠকের ছিল সুষম বণ্টন। শিশু চত্বর শিশুদের পদধ্বনীতে মুখর। সিসিমপুরের প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে সময়টা ভালোই কাটছে ছোটদের। হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর সিকুদের সঙ্গে খেলে, আনন্দ করে স্টলগুলোতে ঘুরেছে বই কেনার জন্য। গল্প, ছড়া, কমিকের পাশাপাশি জন্তু-জানোয়ারদের বইয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ কম নয়।
উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে বইমেলায় এসেছে আরিয়া জাহান আরশি। ছয় বছর বয়সী এই ক্ষুদে পাঠকের হাতে বেশ কিছু বই। কী বই কিনেছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘ডাইনোসর আমার ভীষণ পছন্দ। তাই ডাইনোসরের বই কিনেছি। আর ‘জাঙ্গল বুক’, সুকুমার রায়ের ছড়া, ‘ফেল্টুস চড় খাবি’, আর দুটো কমিকের বই কিনেছি।’
বইমেলার মূল ফটক থেকে সামনে হাঁটলেই প্যাভিলিয়ন আর স্টলের জমজমাট আয়োজন। এবার বইমেলার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো প্যাভিলিয়ন আর স্টলগুলোর সুষম বণ্টন। এ নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে স্টলমালিকদের ক্ষোভ ছিল।
এ ব্যাপারে ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা আফসার ব্রাদার্সের কর্ণধার আবরার আবীর বলেন, এ বছর বইমেলার প্যাভিলিয়ন আর স্টলের সুষম বণ্টন হয়েছে। ফলে পাঠক দুই ক্যাটাগরির স্টলেই ঘুরে ঘুরে বই কিনছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক স্টলমালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত চার-পাঁচ বছরে প্যাভিলিয়নের মালিকরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে প্যাভিলিয়নগুলো বইমেলার একটা কর্ণারে পর পর সাজাতেন। এতে শুধু প্যাভিলিয়ন কর্নারেই পাঠকের ভিড় থাকত, স্টলগুলোতে ভিড় থাকত না বললেই চলে।
এ বিষয়ে অবশ্য দ্বিমত পোষণ করলেন বেশির ভাগ প্যাভিলিয়নের মালিক। বিশ্বসাহিত্য ভবনের প্রকাশক কর্ণধার তফাজ্জল হোসেন জানালেন, বইমেলায় প্রভাব খাটোনোর তথ্যটা পুরোটাই ভিত্তিহীন। স্টল ও প্যাভিলিয়নবিন্যাস করে বাংলা একাডেমি। সেটা করা হয় লটারির মাধ্যমে। এখানে প্রকাশকদের কোনো হাত নেই। করোনার কারণে গত দুই বছর প্যাভিলিয়নেও তেমন বেচাকেনা হয়নি।
বইমেলায় নবীন-প্রবীণ সব ধরনের লেখকের বই-ই বিক্রি হচ্ছে। এমনকি বিক্রি হচ্ছে কবিতার বইও। সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় কবি পিয়াস মজিদের তিনটি বই এসেছে এই বইমেলায়। ‘ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি’ ও ‘মারবেল ফলের মওসুম’ এসেছে ঐতিহ্য থেকে, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে ‘এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’।
কবিতার বই কি তুলনামূলক কম বিক্রি হয়? এই প্রশ্নের জবাবে তরুণ এই কবি বলেন, ‘আমি সেটা মনে করি না। কবিতার মান আর ভাষা এই দুটো ঠিকঠাক হলে, বই বিক্রি না হওয়ার কারণ নেই। তবে তরুণ কবিদের বেশির ভাগই নিজেকে প্রস্তুত না করেই বই বের করে ফেলেন। সুতরাং, ওই সব পাঠক ছুঁয়ে দেখবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।’
বইমেলায় নন ফিকশন বইয়ের কাটতি বেশ ভালোই। বিশেষ করে ইতিহাস ও স্মৃতিকথার বইগুলো। এই বইমেলায় জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘লেখকসঙ্গ স্মৃতি ও আনন্দ’ বইটি বেশ সাড়া ফেলেছে। বিখ্যাত লেখকদের সঙ্গে কাটানো মজার সময়গুলো তুলে এনেছেন আনিসুল হক এই বইয়ে।
এ ছাড়া মহিউদ্দীন আহমেদের রাজনৈতিক ইতিহাসের বইগুলো পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে। চট্টগ্রাম বাতিঘর, প্রথমা ও কথা প্রকাশের স্টলগুলোতে নন ফিকশন ভক্ত-পাঠকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে বেশি।
চলছে অমর একুশে বইমেলা। শত শত স্টল, লোকজনের জমাট ভিড়, ভেঁপু বাজিয়ে শিশুদের উল্লাস। স্টলে থরে থরে সাজানো বই। ফুলের সুবাসের সঙ্গে নতুন বইয়ের গন্ধ মিলে এক অন্য রকম অনুভূতি! ছোটরা ছবি দেখে দেখে বই কেনে-কার্টুন, কমিকস, ছড়া-কবিতা, রূপকথার গল্প। কিশোরদের প্রিয় রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। বড়রা উপন্যাস, ইতিহাস প্রবন্ধের খটোমটো বইগুলো বেশি পছন্দ করেন। মোটকথা কাউকেই নিরাশ করে না বইমেলা। বই কেনা এক রকম সুখ, উপহার পাওয়ার সুখ আরেক রকম, সবচেয়ে বেশি সুখ নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে নিতে তার ভেতর ডুবে যাওয়া। বই কীভাবে এলো মানবসভ্যতায়?
বইমেলার ধারণাটা খুব বেশি পুরোনো নয়। তবে বইয়ের ইতিহাস বহু পুরোনো। সেই মিসরীয় সভ্যতার যুগে। সেখানে প্যাপিরাস নামে এক ধরনের গাছ জন্মাত। প্যাপিরাসের বাকল ছেঁচে কাগজের মতো একটা জিনিস তৈরি করত মিসরীয়রা। হায়ারোগ্লিফিকস চিত্রলিপিতে লিখে রাখত সেকালের ইতিহাস। মিসরের বিখ্যাত পিরামিড আর কবরস্থানগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শত শত প্যাপিরাসের স্ক্রল। সেগুলোই আসলে মানবসভ্যতার প্রথম বই ছিল।
পুস্তকশিল্পে সত্যিকারের প্রাণ আসে কাগজ আবিষ্কারের পর। সে গল্পও কিন্তু আজকালের নয়। খ্রিষ্টের জন্মের ২০০ বছর আগে চীনারা কাগজ আবিষ্কার করে। কিন্তু সে খবর জানত না বাইরের পৃথিবী। ১৫০০ বছর আগে আরবের একদল ব্যবসায়ী চীন থেকে কাগজ ছড়িয়ে দেন সারা বিশ্বে। এরপরই বদলে যায় লেখালেখির গল্প। প্রথম দিকে হাতে লিখে বই বানানো হতো। পরে ছাপা বইয়ের উদ্ভব। সেটাও চীনে, নবম খ্রিষ্টাব্দে। কাঠ খোদাই করে অক্ষর তৈরি করা হয়। সেই অক্ষরের ওপর কালির ছাপ দিয়ে লেখা হয় বইটি। লম্বায় ছয় ফুট আর এক ফুট প্রস্থের সেই বইটির নাম ছিল ‘হীরক সূত্র’। বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থ। বইটিতে পৃষ্ঠা ছিল মাত্র দুটি। কাঠ খোদাই করে তৈরি করা অক্ষরকে বলে ব্লক লেটার। বহু বছর পর্যন্ত ছাপাখানায় এই ব্লক লেটার পদ্ধতিই ব্যবহৃত হতো। দ্বাদশ শতাব্দীতে চীনেই শুরু এর ব্যবহার। তারপর সেটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে।
ব্লক লেটারে আধুনিকতা আনেন জার্মানির জোহান গুটেনবার্গ। গুটেনবার্গ ছিলেন দরিদ্র ঘরের সন্তান। লেখাপড়াও বেশি করেননি। অল্প বয়সেই জুয়েলারির দোকানে কাজ নেন। সোনা-রুপার অলংকার তৈরি করতে হতো তাকে। ধাতু গলিয়ে তাতে নকশা করার নানা উপায় শিখেছিলেন তিনি। সেই কাজ করতে গিয়েই মনে আসে ধাতব অক্ষর তৈরির কথা। যেই ভাবা সেই কাজ। ধাতু গলিয়ে তৈরি করে ফেলেন ব্লক লেটার। তারপর ভাবেন, এই ব্লক লেটার ছাপাখানায় ব্যবহার করলে কেমন হয়? গুটেনবার্গের সেই ভাবনাতেই বদলে যায় মুদ্রণশিল্পের ইতিহাস। কাঠের বদলে দ্রুতই ধাতুর তৈরি ব্লক লেটার ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপে। অক্ষরগুলো ধাতুর হলেও গুটেনবার্গের ছাপার যন্ত্রটি ছিল কাঠের তৈরি। ১৫ শতাব্দীতে তার ছাপাখানাতেই প্রথমবারের মতো বাইবেল ছাপা হয়। বইয়ের প্রচ্ছদেও ভিন্নমাত্রা আনেন মুদ্রণশিল্পের এই পথিকৃৎ। এক রঙের সঙ্গে আরেক রং মিশিয়ে আবিষ্কার করেন রঙিন ছবি ছাপার পদ্ধতি। আজ যে তোমরা রঙিন কমিকস বই পড়তে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাও, এর জন্য কিন্তু গুটেনবার্গের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
গুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কার করার পর ইউরোপের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে ছাপাখানা। আমরাও পাই বিখ্যাত সব বই। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে বাজছে যুদ্ধের দামামা। বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী জোহান কেপলার তার বিখ্যাত বই রুদলফিন টেবিল ছাপানোর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন জার্মানির এই শহর থেকে সেই শহরে। সব জায়গায় মারকাটারি সেনাদের উৎপাত। অবশেষে উলম নামের ছোট্ট এক শহরে ছাপা হয় প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বইটি।
কানাডাপ্রবাসী লেখক বায়াজিদ গালিবের লেখা ‘বাসর রাতের বিড়াল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে ‘ভাষাচিত্র’।
শুক্রবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। ১২০ পৃষ্ঠার এই বইটি পাওয়া যাবে মেলায় ভাষাচিত্রের ৩২নং প্যাভিলিয়নে।
বই সম্পর্কে বায়াজিদ গালিব বলেন, ‘‘এই বইতে পাঁচটি রম্য গল্প আছে। তার মধ্যে একটি গল্পের নাম ‘বাসর রাতের বিড়াল।’ আমাদের দেশে মধ্যযুগ থেকে চলে আসছে মেয়েদের কীভাবে বউ হিসেবে বশ বা অনুগত করা যায়। এটি নিয়েই রম্য গল্পটি লেখা। বইতে জাপান ভ্রমণের একটি রম্য গল্প আছে। প্রেমের গল্পও আছে একটি। গল্পটির নাম চারুলতা। চারুলতা খুব চঞ্চল এবং সংগ্রামী। তার প্রেমকাহিনি নিয়ে গল্প।’’
মোড়ক উন্মোচন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আসহাদুজ্জামান বলেন, ‘এই বইয়ের লেখক কানাডাপ্রবাসী। তিনি কানাডা এবং জাপানের সংস্কৃতি এখানে তুলে ধরেছেন। ভ্রমণকাহিনি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পাই। আশা করি এই বইটি পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।’
বাংলা একাডেমির পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘বইটি আমি পড়েছি। এখানে অনেক গল্প আছে। এই বইটি অন্য ধারার লেখা। এখানে জাপানের সংস্কৃতিসহ আরও অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ময়নামতি বলেন, ‘জাপান ও লন্ডনে থাকার অভিজ্ঞতা তিনি (বায়াজিদ গালিব) এই বইতে লিখেছেন। দেখিয়েছেন কীভাবে মেয়েরা ঘরে নানারকম বাধা আর প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে পারেন এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। আমি বইটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।’
শত শত নতুন বই, নতুন লেখকের ভিড়ে এখনো উজ্জ্বল সেই রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র আর হুমায়ূন আহমেদ। মুগ্ধ পাঠক এখনো বইমেলায় খুঁজে ফেরেন এদের সৃষ্টি।
তাই বলে নতুন লেখকের বই বিক্রি হচ্ছে না, তাও নয়। বইমেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানালেন, যাদের লেখার সঙ্গে ইতিমধ্যেই পরিচয় ঘটে গেছে, তাদের বই সংগ্রহ করাটাই ঝুঁকিহীন মনে হয় তাদের কাছে। বই পড়ে অন্তত হতাশ হতে হবে না।
অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী কাদের হাজি বলেন, গল্পের বইয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ, কবিতার মধ্যে রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার বই আর জীবনী গ্রন্থের মধ্যে চেঙ্গিস খানের বই বিক্রি হচ্ছে। আর শিশুদের বই তো আছেই। নতুন বইয়ের তেমন পাঠক নেই।
কাদের হাজি বলেন, তবে এসব ক্যাটাগরির থেকে কবিতার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর মেয়েদের আগ্রহ বেশি প্রেমের কবিতার প্রতি। তারা প্রেমের কবিতার বই বেশি কিনছে।
সময় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সুপন্ত চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে সায়েন্স ফিকশন বই বেশি চলছে।’
কথা হয় বইমেলায় আসা বেশ কিছু কলেজ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানান, জাফর ইকবাল স্যারের ‘প্রলয়’, ‘আমি পরামানব’, ‘ইকারাস’ বইগুলো কিনেছেন তারা। অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, বিশেষ করে ‘নবনী’, ‘তিথীর নীল তোয়ালে’, আর ‘আজ চিত্রার বিয়ে’ বইটি কিনেছেন।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শামিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে থ্রিলার টাইপের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস। তার মধ্যে তৌহিদুর রহমান স্যারের ‘স্বপ্নস্নানের ফেরেশতা’ উপন্যাসটি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবারের বইমেলায় এ বইটি বেশি হিট করেছে। আর হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বই এখনো ক্রেতাদের প্রথম টার্গেট।’
তিনি বলেন, মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে আছে তৌহিদুর রহমান স্যারের উপন্যাস। ওনার প্রতিটি উপন্যাস রোমান্টিক টাইপের। আর এসবই মেয়েরা বেশি কিনছে। আর পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা হুমায়ূন আহমেদ আর অ্যাডভেঞ্চার বই বেশি কিনছেন।
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে প্রবন্ধ আর গবেষণামূলক বইগুলো বেশি বিক্রি হয়। হরিশঙ্কর জলদাসের ‘কর্ণ’, রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর সিরাজুল ইসলাম স্যারের যে প্রবন্ধগুলো আছে, সেগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। মূলত প্রবন্ধই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
এ ছাড়া অনুবাদগ্রন্থ আর থ্রিলার বইয়ের কাটতিও বেশ ভালো। এ বছর বিজ্ঞানভিত্তিক বই আর গাণিতিক বইয়ের চাহিদা বেড়েছে বলে জানালেন প্রকাশকরা। অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে লায়লা ফেরদৌসের ‘কাইজেন’ বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর শিশুদের বই হলো মেলার প্রধান আকর্ষণ। রিয়াজ আহমেদের শিশুদের বইগুলো ভালো চলছে।
বর্তমানে বইমেলার পরিসর অনেক বড় হলেও শুরুতে এমন ছিল না। সময়টা ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা শুরু করেন অদ্ভুত এক কাণ্ড। চট বিছিয়ে বাংলা একাডেমির আমতলায় বসে পড়েন কিছু বই নিয়ে।
যুদ্ধের সময় চিত্তরঞ্জন সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন কলকাতায়। সেই উত্তাল সময়ে কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের ভিড়। তারা লিখছেন, যুদ্ধের কথা, পাকসেনাদের বর্বরতার কথা জানাচ্ছেন- কেউবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, কেউবা নিজের লেখালেখির মাধ্যমে। চিত্তরঞ্জন তখন গাঁটের পয়সা খরচ করে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বই ছাপাচ্ছেন। ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ পরিষদের আড়ালে সেগুলোর প্রকাশক মুক্তধারা প্রকাশনী, চিত্তরঞ্জন যার কর্ণধার। যুদ্ধের পর দেশ যখন স্বাধীন হয়, সেই বইগুলো নিয়ে দেশে ফিরে আসেন চিত্তরঞ্জন। কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই নিয়ে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে বসে পড়েন তিনি। আমতলায় চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন।
পরের বছরগুলোতে চিত্তরঞ্জন সাহার দেখাদেখি অনুপ্রাণিত হতে থাকেন আরও কিছু প্রকাশক। ফেব্রুয়ারিতে তারাও চট বিছিয়ে বসে পড়েন বাংলা একাডেমির ঘাসের উঠোনে। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকীর আগ্রহে বাংলা একাডেমিও যুক্ত হয়। পাশাপাশি ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সমিতিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। এই ছিল বইমেলার আদি ইতিহাস।
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা শুরু হয়েছে ১৯৮৩ সালে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে কাজী মনজুরে মওলা আয়োজন করেছিলেন এই মেলা। কিন্তু সে বছর এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে চলা আন্দোলনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর ট্রাক তুলে দেয়া হয়। এই ঘটনায় দুইজন ছাত্র নিহত হয়। ফলে সে বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে আবারও সাড়ম্বরে সূচনা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার। ৩২ বইয়ের ক্ষুদ্র সেই মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও চলছে মহাসমারোহে।
পুরো বিশ্বে দীর্ঘসময় ধরে চলা বইমেলাগুলোর অন্যতম আমাদের অমর একুশে বইমেলা। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী লেখক-কবিদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে বইমেলা প্রাঙ্গণ। হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা, অভিজিৎ রায়েরা প্রয়াত হলেও তাদের বইয়ের আলোয় এখনো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলছে বইমেলা।
বাংলাবাজারের বইয়ের জৌলুস দিন দিন বড়ই বাড়বাড়ন্ত। ছোট ছোট গলি, থরে থরে সাজানো বইয়ের স্তূপ। প্রত্যেক বইপ্রেমীর কাছে বাংলাবাজার যেন বইয়ের এক স্বর্গ। পাশাপাশি বহুতল মার্কেটে গড়ে উঠেছে বইয়ের দোকান। সেখানকার আকাশও ছেয়ে গেছে বইয়ে। বইয়ের সঙ্গে বাংলাবাজারের এই সম্পর্ক হুট করেই গড়ে ওঠেনি। এর ইতিহাস সুপ্রাচীন।
১৬১০ সালে মোগল সুবেদার ইসলাম খাঁ বাংলার রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ঢাকাকে। পরবর্তীকালে ১৮৬০ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাঙ্গালা যন্ত্র বা ছাপাখানা। এরপর ১৮৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে কলকাতার বটতলার পুঁথির আদলে বাংলা বাজারের পার্শ্ববর্তী চকবাজারে গড়ে উঠেছিল কেতাবপট্টি। বাংলাবাজার গড়ে ওঠার সঙ্গে এই ঘটনাগুলোর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। গবেষক সৈয়দ আবুল মনসুরের মতে, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পরপর একটি-দুটি করে বইয়ের দোকান গড়ে ওঠে এখানে। তৎকালীন সময়ে ছাপাখানাগুলো ছিল বাবুবাজারে আর বাংলাবাজার ছিল বিক্রয়কেন্দ্র। আবার ১৮৬০ সালে হরিশ্চন্দ্র মিত্র সম্পাদিত ‘কবিতাকুসুমাবলি’ নামে জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকাও বিক্রি হতো বাংলাবাজারে। এ ছাড়া উনিশ শতকের শুরুতে চকবাজার, পাটুয়াটুলী, মোগলটুলীসহ কয়েক জায়গায় গড়ে উঠেছিল ধর্মীয় বইপত্রের দোকান। পরবর্তী সময়ে তাদের অনেকেই দোকান স্থানান্তর করেছিলেন বাংলাবাজারে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে জমজমাট হতে শুরু করে বাংলাবাজার। লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশকরাও ভিড়তে শুরু করেন এদিকে। আবার ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাংলাবাজারের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। প্রথমদিকে অবিভক্ত ভারতের প্রকাশনা জগৎ মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক হলেও দেশভাগের পর পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। প্রথমদিকে নরওরোজ কিতাবিস্তান, স্টুডেন্ট ওয়েজ, গ্রেট ইস্ট লাইব্রেরি, খোশরোজ কেতাব মহল, হার্ডান এন্ড কোম্পানি, পুঁথিপত্রের মতো প্রকাশনীগুলো বাংলাবাজারমুখী হয়ে যায়। পাশাপাশি কলকাতা থেকে এপারে এসে দোকান খুলল মল্লিক ব্রাদার্স। এভাবেই বাংলাবাজার হয়ে ওঠেছে বইয়ের স্বর্গ।
বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায় বলে বিব্রত হয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। বিজ্ঞাপনে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় বটে, কিন্তু কখনো কখনো স্বপ্নালু আবেশও তৈরি পারে পড়ুয়াদের মনে, সেটা যদি হয় বইয়ের বিজ্ঞাপন।
কনকনে শীতের বুড়ি সদ্য যখন বিদায় নেয়, আড়মোড়া ভেঙে যখন গাছেরা জাগে, শিমুল-পলাশের ডালে ডালে আগুনের আভা দেখা দেয়, ভ্রমরের গুঞ্জরন বসন্ত বাতাসে ভাসে, বাংলা একাডেমি কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাসগুলো ঢেকে যায় পাঠকের পদধূলিতে, জাতীয় দৈনিকের মুখ তখন আক্ষরিক অর্থেই ঢেকে যায় বইয়ের বিজ্ঞাপনে। অনলাইনের এই যুগে বইয়ের বিজ্ঞাপনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক আর ইউটিউব। কিন্তু আজ থেকে দুই শ বছর আগে, হুগলির শ্রীরামপুরের মিশনারির বাইরে, কলকাতার কলুটোলা কিংবা শোভাবাজারের বটতলাকে ঘিরে আমজনতার মনের খোরাক মেটাতে যে বইয়ের দুনিয়া গড়ে ওঠে, বঙ্কিমচন্দ্রের যেগুলো ‘রুচিহীন’, ‘অশ্লীল’ বলে ভর্ৎসনা করছেন, বিদ্যাসাগর আবার সেই বইগুলোকেই ‘ভারতীয় সংস্কৃতির চিরকালীন উপাদান’ বলে বঙ্কিমের বিরোধিতায় বিকল্প সুর চড়িয়েছেন, বটতলাকেন্দ্রিক সেই হাটুরে সস্তা বইয়ের জন্যও বিজ্ঞাপনের দরকার পড়েছিল। আর সেই বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যম হিসেবে সত্যিকারার্থে কোনো মিডিয়ার আবির্ভাব হয়নি, ‘সমাচার দর্পন’-এর মতো সদ্যোজাত কিছু পত্রিকা ছিল কিংবা সাময়িকী- সেগুলোতেও বইয়ের বিজ্ঞাপন দেয়া হতো, তবে সে সংখ্যা নগণ্য।
কইয়ের তেলে কই ভাজতেই প্রকাশকদের ভরসা ছিল ষোলআনা। অর্থাৎ একই মলাটের ভেতরেই থাকতে আরেক বইয়ের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য যখন সর্বাধিক গ্রাহকের কাছে নিজের পণ্যের কথা প্রচার করা, তাই পঞ্জিকাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনী মাধ্যম। আদি রসাত্মক, হিতোপদেশ, ধর্মকাহিনির বইয়ের চেয়েও পঞ্জিকার কাটতি ছিল বেশি। হাটে, ঘাটে, পথে, প্রান্তরে, বিজন পল্লিতেও পৌঁছে যেত বটতলায় প্রকাশিত পঞ্জিকা। তাই রসিয়ে রংচং মাখিয়ে তথাকথিত সস্তা ভাষাতেই পঞ্জিকার পেছনের পাতায় প্রচারিত হতো প্রকাশকদের চোখে জমজমাট বিজ্ঞাপন।
বিখ্যাত গবেষক, নন ফিকশন লেখক শ্রীপান্থ তার ‘বটতলা’ নামের বইটিতে লিখেছেন, ‘বটতলার প্রকাশিত পঞ্জিকার আরও একটি বৈশিষ্ট্য আমাদের নজরে পড়ে। সেটি হচ্ছে বইয়ের বিজ্ঞাপন। নতুন বাংলা বইয়ের সংবাদ সমাচার দর্পণের কাল থেকে কিছু কিছু কাগজে ছাপা হতো। কোনো কোনো সাময়িকপত্রে বইয়ের বিজ্ঞাপনও দেখা যায়। যেমন ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘এডুকেশন গেজেট’। কিন্তু পঞ্জিকার বইয়ের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এসবের তুলনাই চলে না। বটতলার প্রকাশকরা পাতার পর পাতা জুড়ে প্রকাশ করতেন নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন। কখনো কখনো সচিত্র বিজ্ঞাপন পর্যন্ত।’
বিজ্ঞাপন ছাপা হতো পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। বিজ্ঞাপনের ভাষাটাই তাই গুরুত্বপূর্ণ, ভাষা চটকদার বা আকর্ষণীয় করতে যত রকম চেষ্টা, তার সবই করতেন লেখক-প্রকাশকরা। চলিত গদ্যের পাশাপাশি হাটুরে পদ্য কিংবা পুঁথির ভাষায় লেখা হতো বিজ্ঞাপন। ‘গঙ্গাভক্তি তরঙ্গিনী’ বইয়ের নামপত্রে লেখা বিজ্ঞাপনের ভাষা ছিল এমন : ‘চিৎপুর রোড আছে সর্বলোকে জানে। দুই শত ছয়চল্লিশ নম্বর ভবনে॥ /তার সঙ্গে বিদ্যারত্ন যন্ত্র পরিষ্কার। গোলাম তিতুর যার পেশী জমাদ্দার॥ /সেই প্রেশে এই পুঁথি সংশোধন দ্বারে। মুদ্রাঙ্কিত হৈল পুনঃ উত্তম অক্ষরে॥ /আবশ্যক হবে যার আসিবে হেথায়। লয়ে যাবে ভক্তিভাবে মজিবে মজা।’
বিজ্ঞাপনে বইয়ের ছবি বা প্রচ্ছদপট ছাপার চল কিছুদিন পরে শুরু হয়েছে। শুধু বিজ্ঞাপন কেন, খোদ বইয়ের প্রচ্ছদেও কিংবা ভেতরে ছবি ব্যবহারের চল শুরু হতে কয়েক বছর লেগে গেছে। বইয়ের নিজের মুখই হারিয়ে যেত বিজ্ঞাপনের আড়ালে। ‘দুর্গেশন্দিনী’ কিংবা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের মতো এক দুই কিংবা তিন চার শব্দে বইয়ের নাম দেয়ার চল তখনি শুরু হয়েছিল, তেমনি অনেক বইয়ে নামের বদলে প্রচ্ছদপটে থাকত ‘নামপত্রের’ আড়ালে বিজ্ঞাপন। পঞ্জিকায় বিজ্ঞাপনের ভাষাটা যেমন, এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। তখনকার বেশির ভাগ জনপ্রিয় কেচ্ছাই ছাপা হতো ধারাবাহিকভাবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক ফর্মা এক সপ্তাহ, পক্ষ কিংবা মাসে। জনপ্রিয় কাহিনিগুলো তাই চলত কয়েক মাস বা বছর। তাই বইয়ের প্রতিটা খণ্ডের পেছনে থাকত পরবর্তী খণ্ডের বিজ্ঞাপন।
বটতলার বিজ্ঞাপনের বড় একটা মাধ্যম ছিল ফেরিওয়ালা। কলকাতা কিংবা ঢাকা, তখনো কোনো বইয়ের দোকান গড়ে ওঠেনি। ফুটপাতের হকার আর ফেরিওয়ালারা- শুধু কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে ঢাকা শহরে অলিতে-গলিতে যেমন তিন শ টাকার পণ্য এক শ টাকায় বিকোচ্ছে দেদারসে- সেকালে ফেরিওয়ালারা তেমনি তুলনামূলক কম দামে বই ফেরি করে বেড়াত। বিংশ শতব্দী যদি বইয়ের বিকিকিনি দোকানকেন্দ্রিক হয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর বটতলার যুগে ঠিক এই কাজটিই করত ফেরিওয়ালারা। বাঁশের ঝুড়িতে বই বোঝাই করে, হেঁকে হেঁকে বই ফেরি করে বেড়াতেন। কখনো-কখনো জিরিয়ে নেয়ার জন্য ‘একটু ছায়াতলে থমকে দাঁড়ায়’ ফেরিওয়ালা, তখন চারপাশে লোক ঝুটে যেত, গোল হয়ে ঘিরে ধরত ফেরিওয়ালাকে। তখন বইয়ের প্রকাশকের প্রচারের স্বার্থে আর নিজের বিক্রিবাট্টা বাড়াতে কাহিনির চুম্বক অংশ কখনো গল্পের ছলে, কখনো পুঁথিপাঠের মতো করে গেয়ে শোনাতেন ফেরিওয়ালা। তাকে ঘিরে লোক বাড়ে, লোকে বই নেড়েচেড়ে দেখে, পছন্দ হলে কেনে। সে যুগে এই ফেরিওয়ালারাই ছিল বটতলার বইয়ের শোরুম, প্রচারক এবং বড় বিজ্ঞাপনও বটে। এসব বিজ্ঞাপনের যে জোর ছিল, বইয়ের কাটতি দেখেই বোঝা যায়। প্রকাশকরা নাকি মাসে ৫০০ টাকা আয় করতেন। আর ফেরিওয়ালাদের আয় ২০০ টাকার মতো। দুই শ বছর আগে যখন একজন লেখাপড়া জানা চাকুরে মাসে ৫০ টাকা মাইনে পেলে বর্তে যান, সেখানে একজন প্রকাশকের ৫০০ টাকা আয় কিংবা ফেরিওয়ালার ২০০ টাকার অঙ্কটা মোটাসোটা না বলে উপায় আছে?
ফেরিওয়ালাদের প্রসঙ্গে শ্রীপান্থ রেভারেন্ড লঙের উদ্ধৃতি সহকারে বলেছেন, ‘শুধু কলকাতা আর কাছাকাছি এলাকায় বটতলার ফেরিওয়ালারা বই নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন গ্রামে-গঞ্জে। হাটে-বাজারে, মেলায় পসরা সাজিয়ে বসতেন তারা। এভাবে বছরে আট-নয় মাস সরস্বতীর সেবা করে যে যার গ্রামে ফিরে চাষবাসের দিকে নজর দিতেন। লঙ বলেছেন, ‘এরা বাংলা বইয়ের সেরা বিজ্ঞাপন। পাঠকরা জীবন্ত একজন প্রতিনিধিকে দেখতে পান এমন একজন, যিনি বইটি দেখাতে পারেন। বটতলা অতএব শুধু বই প্রকাশ নয়, প্রচারেও সমান উৎসাহী।’
বিজ্ঞাপনের আরও এক কার্যকরী পদ্ধতি ছিল। বইয়ের বিজ্ঞাপনের হ্যান্ডবিল ছেপে বিলি করতেন লেখক-প্রকাশকেরা। বইয়ের আখ্যানপত্রে, কিংবা পেছনের পাতায় কিংবা পঞ্জিকাতে যে ভাষাতে, যে ঢঙে ছাপানো হতো, একই ছিরি-ছাঁদে হ্যান্ডবিলের বিজ্ঞাপন বিলি হতো। সুকুমার সেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বইয়ে জানিয়েছেন জানিয়েছেন, 'এক ব্যক্তি আসিয়া তাঁহাদের হাতে কতকগুলো রাঙ্গা ছাপানো কাগজ দিয়া যায়। তাঁহারা পাঠ করিয়া দেখেন—নূতন পুস্তক, নূতন পুস্তক, সংসার-সহচরী মূল্য ৩ টাকা, পৌষ মাস মধ্যে লইলে তৎসহ উপহার দেওয়া যাইবে।'
বিজ্ঞাপনের আরেকটা জনপ্রিয় ধারা ছিল বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। লেখকদের মধ্যে সদ্ভাব ছিল বেশ, ঢাকার চকবাজারের কেতাবপট্টি থেকে যেসব বই বের হতো, সে বইয়ের বেশকিছুতে দেখা যায় এক লেখক আরেক লেখকের বন্দনা করছেন। সরসরি বইয়ের বিজ্ঞাপন হয়তো এ নয়, কিন্ত লেখককে বিজ্ঞাপিত করার মধ্যে তাঁর বইয়ের কাটতি বাড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য কৌশল। চকবাজারের কেতাবপট্টি নামের বইটিতে মোহাম্মদ আবদুল কায়উম, জনৈক কবি শেখ ঘিনুর বন্ধুপ্রীতির উদাহরণ দিয়েছেন :
'আর এক দোস্ত মুন্সি জহিরুদ্দিন নামেতে।
কি কব তারিফ তার রচনার বাতে।।
শুনিলে রচনা তার দেলে হয় খোশ।
যত শুনি তত খুশি বাড়ে খাসে জোশ।।'
তবে বই-ই সবসময় বিজ্ঞাপনের পণ্য হতো তা নয়, কখনো কখনো বই হয়ে উঠত অন্য পন্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যম। ব্রিটিশ সরকার রীতিমতো অশ্লীলতা বিরোধি আইন পাশ করে বটতালার সাহিত্যের নিজস্ব ঢঙে যখন সেন্সরের কাঁচি চালাতে চাইছে, বঙ্কিমের মতো কুলীন লেখকরা তাতে সাই দিচ্ছেন, বিদ্যাসাগরেরা যখন সরকারের এই নীতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন, তখন স্বদেশী ভাবধারার বেশকিছু শীল্পউদ্যোক্তা এগিয়ে আসেন বটতলার লেখক প্রকাশকদের পাশে। কুন্তুলীন কেশ তেল এদের মধ্যে অগ্রগণ্য। বটতলায় লেখকদের উৎসাহিত করতে তারা চালু করে সাহিত্য পুরস্কার। তবে শুধু লেখার মান যাচাই করে এই পুরস্কার দেওয়া হতো না। শর্ত ছিল, যিনি যত ভালোভাবে কুন্তুলীন কেশ তেলকে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন কাহিনির ভেতর, তিনিই পাবেন এই পুরস্কার। বিখ্যাত সাহিত্য গবেষক সুকুমার সেন তাঁর ক্রাইম কাহিনির কালক্রান্তি বইয়ে জানাচ্ছেন, ‘১৩০৩ সালের কথা। তখন স্বদেশী হাওয়া দেশে সবে বইতে শুরু করেছে। স্বদেশী কেশতৈল কুন্তলীন ও এসেন্স প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা হেমেন্দ্রমোহন বসু এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছিলেন দুটি উদ্দেশ্যে। এক, নবীন গল্প লেখকদের সাহিত্য সৃষ্টিতে উৎসাহ দেওয়া আর দুই, স্বদেশী দ্রব্যকে শিক্ষিত সমাজে বিজ্ঞাপিত করা। বছর বছর কয়েকটি পুরস্কার দেওয়া হত শ্রেষ্ঠ গল্প লেখকদের, যাঁরা তাদের গল্পের মধ্যে সুকৌশলে কুন্তলীন তৈল ও দেলখোস এসেন্সের নাম ঢুকিয়ে দিতে পারবেন।'
‘মুখের কথা একলা হয়ে গলির কোণে পড়ে থাকে’ বলেই বিজ্ঞাপনের দরকার হয়। বইয়ের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি। সমাজের বইবিমুখ শিক্ষিত অংশটাকে বিনোদনের জন্যও যদি বই পড়ানোরে চেষ্টা করা যায়, তো ক্ষতি কী? আর সেটা চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। এ কথা বুঝেছিলেন বলেই দুই শতাব্দী আগের কলকাতার বটতলা কিংবা ঢাকার চকবাজার কেন্দ্রীক প্রকশকেরা বইয়ের মুখোশ বিজ্ঞাপনে ঝোলানোর সেকেলে পদ্ধতি আবিষ্কার করে নিয়েছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন ৮ লেখক ও কবি। ২০২১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য সম্মাননাটি দিল সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন গল্পকার ইলিয়াস ফারুকী, প্রাবন্ধিক মামুন রশীদ, শিশুসাহিত্যিক ইমরুল ইউসুফ, কথাসাহিত্যিক রাহিতুল ইসলাম ও কবি খান মুহাম্মদ রুমেল। শিশুসাহিত্যিক মাহমুদউল্লাহ, কবি মিনার মনসুর ও কথাসাহিত্যিক দীলতাজ রহমান পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা।
রাজধানীর বাংলামটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ২৭ জানুয়ারি এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে লেখকদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং পুরস্কারের চলতি আসরের পৃষ্ঠপোষক ওয়েবম্যাগ ‘কাব্যশীলন’ সম্পাদক কবি ফারুক মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. মাসুদ পথিক, এসবিএসপি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফখরুল হাসান, প্রেসিডিয়াম কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী তারেক হাসান ও কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসনে আরা জেমী।
তথ্যপ্রযুক্তি আর ডিজিটাল বাংলার মানুষের সংগ্রাম ও উন্নয়নের গল্প লিখে এবার সাহিত্য পুরস্কারটি পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক রাহিতুল ইসলাম। প্রথমা থেকে প্রকাশিত ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’ বইয়ে একটি মেয়ের জীবনসংগ্রামের কথা উঠে এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে সাহিত্য রচনা করে এবারই প্রথম কোনো তরুণ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
কল সেন্টারের অপরাজিতা উপন্যাস সম্পর্কে রাহিতুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মানুষের গল্প লিখি, আর আমার লেখা বই যদি মানুষের উপকারে আসে তখনই আমি মনে করব আমার লেখা সফল হয়েছে।’
বাংলা সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য গত ছয় বছর ধরে কবি-লেখকদের পুরস্কৃত করে আসছে সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ।
একই অনুষ্ঠানে এসবিএসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ছায়েদুল ইসলাম গ্রন্থ স্মারক পেয়েছেন কবি ও গল্পকার সালমা সুলতানা, কবি শব্দনীল, গল্পকার শফিক নহোর, সমাজসেবক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, কবি আহমেদ ইউসুফ, লেখক রফিক মজিদ, রম্য গল্পকার মেহবুবা হক রুমা, শিশুসাহিত্যিক মিজানুর রহমান মিথুন ও আবৃত্তিশিল্পী সাফিয়া খন্দকার রেখা।