বাড়ির সবাই মিলে ছুটির দিনে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছেন। কিন্তু ভাবনায় ছেদ পড়ল হয়তো তখনই যখন পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের কথা উঠে এল। ওরা আনন্দ পাবে তো? এমন প্রশ্ন মনে আসাই স্বাভাবিক। তাই জেনে নিন শিশুদের নিয়ে ছুটির দিনটাকে আরও খানিকটা রঙিন করে নিতে ঢাকার আশপাশে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন:
বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক
একটু শান্তিময় স্থান খুঁজে হয়রান হন অনেকেই। ছুটির দিনে বন্ধু, পরিজন, পরিবারের সবার সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে একটু আড্ডা-গল্প করে কাটানো, সেই সঙ্গে সঙ্গে থাকা শিশুরাও যাতে ছোটাছুটি করে, খেলাধুলায় মেতে থাকতে পারে, এমন একটা স্থান এবং দিনই তো সবার চাওয়া। এমন পরিবেশ কোথায় পাওয়া যাবে বলে ভাবছেন যারা, তারা কিন্তু ছুটির দিনটা কাটাতে যেতে পারেন ঢাকার বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। এখানের সবুজ ছায়ায় বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে এলে মন ভালো হবে যে কারও। কিংবা শানবাঁধানো নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতেও পারেন। শিশুদের জন্য এখানে বেশ কিছু রাইডও রয়েছে। ফলে সবুজ শ্যামল একটা স্থানে যদি শিশুদের সঙ্গে নিয়ে সময় কাটাতে চান, তাহলে এই ইকোপার্ক ভালো সমাধান নিঃসন্দেহে। রাজধানীর শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। সবুজ বৃক্ষরাজি আর বুড়িগঙ্গা নদী মিলে পার্কটিকে করে তুলেছে নয়নাভিরাম।
ফ্যান্টাসি কিংডম
বর্তমান সময়ের ঢাকাবাসীর কাছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম। এই থিমপার্কে নানা রকম রাইডের পাশাপাশি নিয়মিতই থাকে কনসার্ট, নাচ প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। তা ছাড়া বাম্পার বোট, বাম্পার কার, ইজিডিজি, জুজু ট্রেন, রোলার কোস্টার, ম্যাজিক কার্পেট, প্যাডল বোট। আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ড তো থাকছেই। আপনার ছোট্ট সোনামণিকে ছুটির দিনটিতে খুশি করতে এর চেয়ে বেশি আর কিইবা প্রয়োজন।
নন্দন পার্ক
সাভারের নবীনগরের নন্দন পার্কে নানা রকম রাইড আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আছে খুদে চিড়িয়াখানাও। শিশুদের আনন্দ দিতে এখানে যেন নানা রকম পসরা সাজানো হয়েছে। তাই ছুটির দিনটিকে রাঙিয়ে তুলতে শিশুদের নিয়ে এই পার্কে যেতেই পারেন। নন্দন পার্ক প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। যেকোনো সরকারি ছুটির দিনেও সকাল ১০টা থেকে খোলা থাকে।
যমুনা ফিউচার পার্ক
ঢাকার মধ্যেই যারা বিনোদনের স্থান খুঁজছেন শিশুদের জন্য, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান যমুনা ফিউচার পার্ক। শহরের ভেতরেই এই পার্কের অবস্থান হওয়ায় হাতে খুব একটা বেশি সময় নিয়ে না বেরোলেও চলবে। যমুনা ফিউচার পার্কে রয়েছে নানা রকম মজার রাইড, সিনেপ্লেক্স। তাই খুব দূরে কোথাও না যেতে পারলেও ছোট্ট সোনামণিকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকেই।
জুন-জুলাই মাস এলেই গণমাধ্যমে জাতীয় বাজেট নিয়ে হইচই দেখা যায়। রাষ্ট্রীয় জীবনের মতোই নিজের জীবনে কিন্তু বাজেট বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সংসার যারা শুরু করবেন কিংবা শুরু করেছেন তাদের বাজেট পরিকল্পনা প্রথম থেকেই তৈরি করা প্রয়োজন। ব্যক্তিজীবনে বাজেটের নানান প্রেক্ষিত নিয়ে লিখছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের অডিওলোজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাংগুয়েজ প্যাথোলজি পাইজারের সিনিয়র প্রভাষক ফাতিমা আলম মেঘলা।
আর্থিক বিষয় মানেই কিন্তু পরিকল্পনা
সংসার মানেই কিন্তু পরিকল্পনা। নানা পরিকল্পনার মধ্যে আর্থিক পরিকল্পনা একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। সংসার শুরুর আগে থেকেই আর্থিক বিষয়গুলোকে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে। সংসার বা সম্পর্কের বিন্দু যদি প্রেম-ভালোবাসা হয়, সমন্বিত আর্থিক পরিকল্পনা তার একটি শাখা বলা যায়। সুন্দর সম্পর্ক ও পরিবার তৈরিতে পরিকল্পিতভাবে আর্থিক বিষয়টিকে সাজিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
শুরু করুন প্রথম থেকেই
সংসার বা সম্পর্ক শুরুর প্রথম থেকেই বাজেট পরিকল্পনায় মনোযোগ দিন। নিজের আয় বুঝে ব্যয় করার গুরুত্ব আমরা দর্শন থেকে শিখেছি। পরিবারের জন্য কীভাবে কী ব্যয় করবেন, তা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলা যায়। পরিবারের আয়-উপার্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। ভালোবাসা থাকলেই শুধু হবে না, মাস শেষে যেন ভালো বাসায় থাকার অর্থ জোগাড় হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আয় বুঝে ভাগ করুন
নিজেদের সংসারকে গতিশীল করতে প্রথমেই আয়-উপার্জনের বিষয়টিকে বুঝে নিন। কার কেমন আয়, কোন খাতে কেমন ব্যয় সেগুলো ভাগ করে ফেলুন। মাসের বেতনের অঙ্ক সেই অনুপাতে ভাগ করুন। চলাফেরা-যাতায়াত, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কেমন খরচ করবেন তা খেয়াল রাখুন।
২-২-২ নিয়ম মেনে চলুন
অনেক মনোবিদ সংসারে গতিশীলতা রাখতে আর্থিক বিষয়ে ২-২-২ নিয়ম অনুসরণের পরামর্শ দেন। ২ সপ্তাহ পরপর সঙ্গীকে নিয়ে বাড়ির আশপাশেই কোথাও থেকে ঘুরে আসুন, সময় কাটান। দুজনের পছন্দের খাবার খেতে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন। ২ মাস পরপর নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করুন। দেখা করতে না পারলে বাড়িতে দাওয়াত করুন। নিজের সামাজিক ক্ষেত্রে সচেতন উপস্থিতি তৈরি করুন। প্রতি ২ বছর পরপর দূরে কোথাও বা ভিন্ন কোনো দেশে দুজনে ঘুরে আসার পরিকল্পনা রাখুন। যখনই পরিকল্পনা করবেন তখন থেকেই আর্থিক পরিকল্পনাগুলো কাগজে-কলমে লিখে রাখুন।
সপ্তাহের খরচ হিসাব করুন
নতুন সংসার সাজানোর প্রথম থেকেই সপ্তাহের বাজারের বিষয়টি মাথায় রাখুন। নিত্যদিনের খরচ চালানোর বিষয়টি বুঝতে হবে। একবারে মাসের বাজার করতে পারেন, আবার সাপ্তাহিকভাবেও বাজার করতে পারেন।
দাম্পত্য সম্পর্কে পরস্পরের ভালো রাখার দিকটি গুরুত্ব পায়। সামনে কোনো উৎসব বা সামাজিক কোনো আয়োজন থাকলে সেই বিষয়টিকেও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।
মাসের হিসাব করুন সাবলীলভাবে
প্রেমের পরে সংসার, সেই সংসার চালাতে কিন্তু অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেদের পরিবারের মাসিক আর্থিক বিষয়গুলো দাম্পত্যসঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করুন। নিজে থেকে পরিকল্পনা করার চেয়ে, সঙ্গীর পরামর্শে দুজনে এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। পরিবারের জন্য বিশেষ কোনো কেনাকাটা, সেটা ফ্রিজ হোক কিংবা গাড়ি, তার জন্য টাকা জমানোর বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন। আপনার আয় যদি ১০০ টাকা হয়, তা হলে পরিবারের জন্য ৪০ টাকা ব্যয় করুন সংসারের মাসিক খরচের জন্য।
সঞ্চয়কে গুরুত্ব দিন
পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সব সময় সঞ্চয়ের বিষয়টিকে মাথায় রাখুন। একসঙ্গে অনেক টাকা সঞ্চয় না করে প্রতি মাসে একটু একটু করে সঞ্চয়ের অভ্যাস করুন। সঞ্চয়ের অর্থ নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবারের কোনো বিষয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। আপনার আয় যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে মাসে ১০ টাকা সঞ্চয়ে গুরুত্ব দিন। এই অর্থ পারতপক্ষে কখনই ব্যবহার বা খরচ করবেন না। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়গুলোর জন্য এই অর্থ ব্যবহার করবেন।
বিপদ-আপদের কথা মাথায় রাখুন
পরিবারের আর্থিক বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার সময় অসুস্থতা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ-আপদের কথা মাথায় রাখুন। ১০০ টাকা আয়-উপার্জন থাকলে, অন্তত ১০ টাকা রাখুন বিপদ-আপদের কথা বিবেচনা করে। নিজের অসুস্থতা, পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের অসুস্থতার কথা মাথায় রাখুন।
নির্দিষ্ট খরচের কথা বিবেচনা করুন
সংসারে বাসাভাড়া, ইন্টারনেট বিল, যাতায়াতের মতো কিছু বিষয় থাকে, যার জন্য নির্ধারিত খরচ হবেই। এসবের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। ১০০ টাকা যদি আয় হয়, তাহলে ৩০ টাকা এই খাতে বরাদ্দ করুন।
জীবনের জন্য খরচ করতে হবে
সংসারে আমরা সব সময় পরিবারের জন্যই যেন সব করে যাই। নিজের জন্য কিংবা নিজের দাম্পত্যসঙ্গীর জন্য খরচের কথা অনেকটা এড়িয়ে যাই। ১০০ টাকা আয়-উপার্জন হলে অন্তত ১০ টাকা রাখুন নিজেদের বিনোদন কিংবা নতুন কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য।
শরীর ও মনের নানা সমস্যার সমাধান টানতে চিকিৎসকরা মেডিটেশন বা ধ্যান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, একদম নিজের জন্য, নিজের সঙ্গে থাকা এবং নিজেকে সময় দেয়ার চমৎকার উপায় হচ্ছে ধ্যান বা মেডিটেশন। বেশ কিছু পদ্ধতিতে মেডিটেশন করা সম্ভব। মানসিক শান্তি ও আত্মিক স্থিরতাও থাকা প্রয়োজন রয়েছে ধ্যান চালিয়ে নেয়ার জন্য। মেডিটেশনের জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া ভালো। জেনে নিন সেসব-
একদম নিরিবিলি স্থানে মেডিটেশনে বসার কথা বলা হয়ে থাকে। কেননা, যেখানে-সেখানে যখন-তখন মেডিটেশন করলে আসলে ততটা লাভ পাওয়া যায় না। তাই বাড়ির যে জায়গাটি সবচেয়ে নিরিবিলি, সেখানে বসে মেডিটেশন করা ভালো।
মেডিটেশনের আসলে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে প্রথম প্রথম মনোযোগ ধরে রাখতে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিন। ধীরে ধীরে এটি বাড়তে পারে। যেহেতু এ পন্থায় মানসিক শান্তি লাভ করা যায়, তাই সময়ের হিসাবটা সম্পূর্ণই নিজের ওপর নির্ভর করে।
শ্বাস গ্রহণের সময় আপনার নিশ্বাসের গতি লক্ষ করুন যখন এটি ভেতরে যায় এবং এটি বের হয়। খেয়াল রাখুন, এ গতি যাতে ধীর হয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিটেশনের সময় মানসিক স্থিতি এমন হবে, যাতে মন অন্য কোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে। শরীর, সাম্প্রতিক অবস্থা, সব ছাড়িয়ে মনকে ছড়িয়ে যেতে দিতে হবে।
মেডিটেশন শেষ হলে খুব দ্রুত ওঠার প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে একটি অবস্থা থেকে মনকে সরিয়ে নিয়ে তবে মেডিটেশন ছেড়ে ওঠা উচিত। এতে মানসিক প্রশান্তি স্থায়ী হয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
১৯৮০ সালের দিকে জাপানে শিনরিন-ইয়োকু বা ফরেস্ট বাথিং বলে একটি প্রত্যয় যুক্ত হয়। শিনরিন-ইয়োকু হলো প্রকৃতিস্নানের মাধ্যমে মানসিক চাপের প্রাকৃতিক প্রতিকার নেয়া। প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের যত্নে মানুষকে উৎসাহিত করতেও এই প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। সহজভাবে স্নান যেমন শরীরকে চাঙা করে তোলে, তেমনি কায়মনোবাক্যে প্রকৃতিস্নান (প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন, ধারণ, প্রকৃতিতে অংশগ্রহণ ও সময় কাটানো) জীবনের জন্যও চনমনে ভাব আনে। এ জন্য সব সময় ঘন গাছপালার মাঝেই থাকতে হবে এমনটা নয়। বরং রাস্তায় হাঁটাচলার সময় মনেপ্রাণে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকাও শিনরিন-ইয়োকু বা ফরেস্ট বাথিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তখন সব ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে হয়।
প্রযুক্তি আর সময়ের সঙ্গে জীবন যখন চলছে রকেটগতিতে, তখন প্রায়ই নিজেদের ক্লান্ত মনে হয়, টানা পরিশ্রম পরিণত হয় অবসাদে। জীবনের গতিতে থেকেও মনে হয় প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। সবুজ প্রকৃতি, মাটির ঘ্রাণের আকুলতা, প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের শব্দ, পাখির গান বা আকাশের তারা দেখা সচরাচর আর হয়ে ওঠে না। জীবন এবং কাজের আচ্ছন্নতায় নিজের জন্য এক দিন ছুটি নেয়ার সময়টাও হয় না। তবুও কিছুটা শিথিলতা এবং প্রশান্তির জন্য কার্যকর প্রকৃতিস্নান।
এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পার্সপেক্টিভস জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, গাছপালা আছে এমন এলাকায় বসবাসকারী নারীদের মধ্যে সব কারণেই মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ শতাংশ কম থাকে (যারা তুলনামূলক কম সবুজে থাকেন তাদের তুলনায়)।
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত অন্য সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ রক্তচাপের প্রায় ১০ শতাংশ লোক যদি প্রতি সপ্তাহে গাছপালা সন্নিবিষ্ট পার্কে ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ব্যয় করেন, তবে তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো লেখক ড্যানিয়েল শানাহান বলেছেন, ‘যারা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটায়, তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ে সাশ্রয়ও হয় অবিশ্বাস্য।’
প্রকৃতিস্নানের ভূমিকা আসলেও কম নয়। কার্যকরী ক্ষেত্রগুলো হলো:
চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমায়
বাইরের পরিষ্কার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় ব্যয় করা স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল উৎপাদন কমিয়ে মানসিক চাপ হ্রাস করতে পারে। প্রকৃতির দৃশ্যাবলি, শব্দ আর ঘ্রাণ- উদ্বেগ এবং মেজাজ হ্রাস করে মন ও দেহের ওপর প্রশান্ত এবং শিথিল প্রভাব রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে
গাছপালা থেকে নির্গত জৈব পদার্থ ফাইটোনসাইড পাওয়া যায় গাছের আশপাশে শ্বাস নিলে। এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শুধু তা-ই নয়, অনাক্রম্যতার এই বৃদ্ধি দীর্ঘ সময়ের জন্য সক্রিয় থেকে স্বাস্থ্য-সমস্যা এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
টাইম ম্যাগাজিনের ২০১০ সালের একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়, অন্তত পরপর দুই দিন গাছপালার মধ্য দিয়ে যারা দীর্ঘ সময় হাঁটাহাঁটি করেছেন তাদের শরীরের প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ ৫0 শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ৫৬ শতাংশ হারে। এর ঠিক পরের মাসেও এই কর্মক্ষমতার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি থাকে।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
প্রকৃতিস্নান এবং প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো সাধারণভাবে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। যেহেতু এটি মন এবং শরীরের ওপর প্রশান্তির প্রভাব ফেলে, পরবর্তী সময়ে এটি রক্তচাপ এবং নাড়ির স্পন্দনকেও স্বাভাবিক করে তোলে, যা দীর্ঘ মেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকেই উন্নত করে বলা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে
গবেষণায় বলে, প্রকৃতির শান্ত প্রভাবের সঙ্গে নিজেকে সমর্পণ করা মানুষদের মনোযোগ, স্মৃতি ও সৃজনশীলতায় আসে পরিবর্তন। অর্থাৎ তীক্ষ্ণ মনোযোগ, উৎপাদনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কর্মশক্তি পূর্ণ করে তোলে
শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে পরিষ্কার বাতাস এবং শান্ত পরিবেশ। গাছের তাজা বাতাসে শ্বাস নেয়া, ফুলের সুবাস নেয়া, প্রকৃতির শব্দে ডুবে থাকা ইত্যাদি চাপ প্রশমিত করে, অলসতা কমায়।
গভীর ঘুম ত্বরান্বিত করে
সাধারণত ঘুম আসতে যতটুকু সময় লাগে, শান্ত পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক কোলাহলে প্রকৃতিতে কিছুটা সময় কাটালে সেই সময় কমে যায় আর ঘুমও ভালো হয়।
অচেনা আগন্তুক
১৯৭০ সাল। কলোরাডোর স্প্রিং শহরের ওয়ার মেমোরিয়াল পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্সের দুই এয়ারম্যান জেমস ডেভিস আর অ্যালেন হিউজ। হাতে ক্যামেরা। সন্ধ্যা নেমেছে, আকাশে রক্তিম চাঁদ। হিউজ চাঁদের ছবি তুলতে শুরু করলেন।
তখন হঠাৎ এক ভবঘুরে টাইপের লোকের আবির্ভাব। উষ্কুখুষ্কু চেহারা, মলিন ময়লা কাপড়, চোখে একরাশ হতাশা। ডেভিস একটু আগে দেখেছেন লোকটাকে পার্কের মনুমেন্টের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে। তারা ভেবেছিলেন লোকটা হয়তো ভিক্ষুক, এসেছে ডলার চাইতে। কিন্তু সেই লোক ডলার বা নিজের বর্তমান অবস্থার কথা কিছুই বললেন না। তার বদলে শোনালেন আশ্চর্য এক গল্প।
লোকটা জানালেন যুদ্ধের সময়- মানে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নৌবাহিনীতে ছিলেন। সেখানে তিনি এক অদ্ভুত আচরণের শিকার হয়েছিলেন, তারপর তাকে মাথা খারাপের ধুয়া তুলে অনেক দূরে নির্বাসন দেয়া হয়। কিন্তু লোকটা দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, তিনি পাগল নন, তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে। আর মাথায় যদি কিছু গোলমাল হয়েও থাকে তাহলে সেই অভিশপ্ত এক্সপেরিমেন্টের প্রভাবেই হয়েছে। তবে নিজেকে পাগল বলতে একদমই নারাজ সেই লোক।
কে তিনি?
ডেভিসকে একটা আইডি কার্ড দেখান লোকটা, নৌবাহিনীর আইডি। ডেভিস তখন উৎসাহী হন, জানতে চান কী ধরনের এক্সপেরিমেন্টের কথা লোকটা বলছে, সেটার পরিণতিই বা কী হয়েছিল।
লোকটা তখন সেই আশ্চর্য এক্সপেরিমেন্টের কথা শোনালেন, এক্সপেরিমেন্টে আস্ত একটা জাহাজকে অদৃশ্য করা হয়েছিল, সেখানকার নাবিকদেরসহ।
কীভাবে? জানতে চাইলেন ডেভিস। লোকাটা জানান, ভয়ানক এক চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এতটাই শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র নাবিকরা সেটার প্রভাব সহ্য করতে পারেননি। মস্তিস্কবৈকল্য দেখা দেয় তাদের। কেউ কেউ কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা পড়েন, বাকিরা বেঁচে থাকলেও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি।
কীভাবে এই পরীক্ষা করা হলো, বিস্তারিত জানতে চান ডেভিস। ওটা ছিল একটা বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ধূম্রজাল। জাহাজকে ঘিরে সেই বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। ফলে সেই চুম্বক ক্ষেত্রের ভেতর থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই কিছুক্ষণের জন্য হলেও জাহাজটা গায়েব হয়ে যায়।
কিন্তু এটা আমাদের জন্য মারাত্মক পরিণাম ডেকে এনেছিল, ব্যাখ্যা করেন আগন্তুক। কেউ একটা জিনিস দুটো করে দেখতে লাগল, কেউ কেউ বিনা কারণে হেসে গড়িয়ে পড়ছিল, কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করল, জানাল, কিছুক্ষণের জন্য চলে গিয়েছিল ভিন্ন এক জগতে, সেখানে নাকি সাক্ষাৎ হয়েছিল আজব সব প্রাণীর সঙ্গে। কেউ কেউ নাকি মারাও পড়েছিল সঙ্গে সঙ্গে, তবে এ ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে পারেননি আগুন্তুক। তবে যারা বেঁচেছিল তাদের পেনশন দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হলো। তবে তার আগে কিছুদিন জনবিচ্ছিন্ন করে রাখা হলো তাদের। সে সময় কর্তৃপক্ষ তাদের বলে, আসলেই তোমাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে, জাহাজ অদৃশ্য হওয়ার ব্যাপার নিয়ে যা বলছ, তা কখনোই ঘটেনি। এসব আর বলো না। এমনকি তাদের নাকি শপথও করিয়ে নেয়া হয়েছিল, এ ব্যাপারে যাতে মুখ না খোলে।
লোকটা বলে, জানি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না আপনারা, অন্যরাও করবে না। কারণ, নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা এভাবেই সাজিয়েছে। আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কেউ যদি এ গল্প নিয়ে খোঁজখবর করে, কর্তৃপক্ষ সহজেই তাদের বোঝাতে পারবে, একদল পাগলের কথা বিশ্বাস করে গল্প বানাচ্ছে, মানসিক অসুস্থতার জন্য যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে!
এরপর লোকটা প্রসঙ্গ পাল্টান, সাধারণ কথাবার্তা বলতে শুরু করে। হিউজ অবশ্য এই কথপোকথনের পুরোটা শোনেনিন, ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল বলে। তবে সারমর্মটুকু ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু লোকটার কথা বিশ্বাস করবে না অবিশ্বাস করবে, তা নিয়ে দোলচালে ছিল দুজনই।
কিছুক্ষণ পরে লোকটা বিদায় নেন। ডেভিস আর হিউজও চলে আসেন বিমান ঘাঁটিতে। পরবর্তী কয়েক মাস দুই এয়ারম্যান বারবার নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
এর কিছুদিনের মধ্যে ডেভিসকে বিমানবাহিনী থেকে ছাঁটাই করা হলো, হিউজকে বদলি করিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো অন্য কোথাও।
জানুয়ারি ১৯৭৮ সাল। ডেভিসের হাতে এল একটা বই। চার্ল বেলরিজের ‘দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’। সে বইয়ের একটা অধ্যায়ে ছিল ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের বর্ণনা। ডেভিস চমকে ওঠেন, এটা তো আট বছর আগে ওয়ার মেমরিয়াল পার্কের ভবঘুরে আগন্তুকের গল্পের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। আগন্তুক ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট নামটা ব্যবহার করেননি। কিন্তু জাহাজ উধাওয়ের ঘটানা ফিলাডেলফিয়ায় ঘটেছিল, সেটা বলেছিলেন, সে কথা স্পষ্ট মনে আছে ডেভিসের।
‘দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ বইয়ে বলা হয়েছে, চুম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে জাহাজ উধাও করা হয়েছিল ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টে, ভবঘুরে লোকটাও একই কথা বলেছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে কষ্ট হলো না ডেভিসের।
ডেভিস ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলেন। তারপর এলেন এক সিদ্ধান্তে, একটা চিঠি লিখে পাঠালেন চার্লস বেরলিজের উদ্দেশে। ঠিকাো জানা নেই, তাই চিঠিটা পাঠালেন ‘দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ বইয়ের প্রকাশকের ঠিকানায়। বিস্তারিত জানালেন সে দিনের ঘটনা। আর বললেন হিউজের কথাও। ভবঘুরে লোকটার কথার প্রমাণ দিতে পারবে হিউজ। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি জানেন না হিউজ ঠিক কোথায় আছে।
পরে চার্লস বেরলিজের সঙ্গে একটা বই লেখেন উইলিয়াম মুর, নাম ‘দ্য ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট : প্রজেক্ট ইনভিজিবলিটি’। সেই মুর পড়েছিলেন ডেভিসের চিঠিটা। তার কেবল এক সপ্তাহ লাগে ডেভিসের সেই বন্ধু হিউজকে খুঁজে বের করতে। তার কাছ থেকেই মুর জানতে পারলেন, ডেভিস যা বলেছে, সব সত্যি। এরপর মুরকে আর দুইয়ে দুইয়ে চার করতে অসুবিধা হয়নি। কার কার্লোস অ্যালেন্ড নামে এক লোক ইতিমধ্যে একটা শোরগোল ফেলে দিয়েছেন এ ঘটনাটা নিয়ে। তিনি দাবি করেছিলেন, ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টটা তিনি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। সে ঘটনা কাউকে বলতে সাহস করেননি। শেষমেশ লেখক ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ মরিস জেসাপকে চিঠি লিখে তিনি ঘটনার কথা জানান। সঙ্গে দেন কিছু বৈজ্ঞানিক পরামর্শও। মূলত, জেসাপ আর আলেন্ডের কারণেই ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট তুমুল আলোড়ন তোলে রহস্যপ্রেমী মানুষের মনে।
চলবে...
বিয়ে বাড়িতে খাবার শেষে পাতে উঠে কমলা রঙা মিষ্টি জর্দা। কেউ কেউ তো অপেক্ষাই করে থাকেন এই জর্দা পাতে উঠবে বলে। সে জর্দা পোলাও যদি রান্না করা যায় বাড়িতেই তাহলে তো মন্দ হয় না। শাহী জর্দার রেসিপি দিয়েছেন রোকসানা আক্তার সুমি।
উপকরণ:
রন্ধন প্রণালি
প্রথমে ৫ কাপ পানিতে গোটা গরম মসলা নুন ও জর্দার রং দিয়ে পানি ফুটে উঠলে ভিজিয়ে রাখা চালটাকে ঘড়ি ধরে সাড়ে সাত মিনিট সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চাল থেকে গরম মসলাগুলো তুলে ফেলতে হবে। প্যানে অর্ধেক টা ঘি দিয়ে ড্রাই ফ্রুটস ভেজে তুলে নিতে হবে। এরপর চিনি, অরেঞ্জ জুস, হাফ কাপ পানি ও লেবুর রস দিয়ে চিনি গলে বলক এলে রাইস দিয়ে নেড়ে কেওড়া জল দিয়ে ২০ মিনিট দমে দিতে হবে মিডিয়াম লো ফ্লেমে। ২০ মিনিট পর মাওয়া ও বাকি ঘি দিয়ে হালকা হাতে নেড়ে আরও ১০ মিনিট দমে দিয়ে রাখতে হবে। নামানোর আগে অর্ধেক ড্রাই ফ্রুটস ও মোরব্বা মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। ছড়ানো সারভিং ডিশে ঢেলে ওপর থেকে বাকি ড্রাই ফ্রুটস মোরব্বা বেবি সুইট ও মাওয়া দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার শাহী জর্দা।
আগুনঝরানো রোদের সঙ্গে পেরে ওঠাই কঠিন যেন। তবে তাই বলে সব কাজকর্ম বন্ধ রেখে ঘর থেকে না বেরোনোরও তো উপায় নেই। তাই রোদকে টেক্কা দিতে নিজেকেই নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। অন্যথায় শরীর জলশূন্য হয়ে পড়তে পারে, ত্বকের সৌন্দর্য ম্লান হতে পারে এমনকি হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। জেনে নিন এ গরমে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে যা করবেন-
বাইরে বেরোনোর আগে দেখে নিন
দিনের বেলা যখনই বাইরে বেরোচ্ছেন বারবার দেখে নিন সঙ্গে ছাতা, পানির বোতল, সানগ্লাস নিয়েছেন কি না। এই তিনটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগেই রাখুন। প্রতিদিন বেরোনোর আগে পানির বোতল পরিপূর্ণ করে নিন।
কিছুক্ষণ পরপরই মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন
বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে যেমন ভালোভাবে হাত-পা ধোবেন, তেমনি মুখেও বারবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। ঘরে থাকার সময়ও কিছুক্ষণ পরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। তবে প্রতিবার মুখ ধোয়ার সময় ফেসওয়াশ ব্যবহার করার দরকার নেই।
বিকল্প হিসেবে ফেসিয়াল মিস্ট
বারবার মুখে পানি দিতে ইচ্ছে না করলে ব্যবহার করতে পারেন ফেস মিস্ট। কখনো কখনো পানি দিয়ে মুখ না ধুয়ে ফেসিয়াল মিস্ট স্প্রে করে নিন মুখে। এতে ত্বক থাকবে তরতাজা।
সানস্ক্রিন মাস্ট হ্যাভ
দিনের বেলা যখনই বের হবেন নারী-পুরুষ উভয়ই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে সঙ্গে ছোট একটা বোতলে সানস্ক্রিন ক্রিম রাখুন। ঘণ্টা দুই বা তিন পরপর পুনরায় ব্যবহার করুন।
ক্রিম, ময়শ্চারাইজার ফ্রিজে রাখুন
ময়শ্চারাইজার, ক্রিম, বডি লোশনের মতো ত্বক পরিচর্যার সামগ্রী ফ্রিজে রাখার দুটো উপকারিতা আছে। এক, ফ্রিজে রাখলে এসব জিনিসের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়, চট করে নষ্ট হয় না, আর দুই ত্বক ঠান্ডা থাকে।
ত্বক শীতল রাখার কৌশল
ত্বক ঠান্ডা রাখতে চাইলে আস্থা রাখুন শসায়। গরমে ত্বক জ্বালা করলে শসার মাস্ক নিমেষে স্নিগ্ধতা জোগাবে। শসা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। তারপর থেঁতো করে রস বের করুন। তুলোয় করে এই রস নিয়ে মুখে মাখুন। পুরো শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন। এতে ত্বক শীতল তো থাকবেই, ত্বকের আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। এ ছাড়া মুখে বরফও ঘসতে পারেন। এতে ত্বক শীতল থাকবে আবার অতিরিক্ত তেলও দূর হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান
সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পানি, স্যালাইনসহ নানা রকম তরল সারাক্ষণই পান করুন। এতে শরীর শীতল থাকবে, হিটস্ট্রোকের আশঙ্কাও কমবে।
গরমের তীব্রতা যেন বাড়ছেই দিনকে দিন। সূর্যের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরোতে হচ্ছে কমবেশি সবাইকে। ফলে যথাসম্ভব সুরক্ষার পরেও ত্বক পুড়ছে রোদে, ধুলোবালি আর ঘামে ব্রণ, দাগ তো তৈরি হচ্ছেই। ত্বকের যত্নে তাই আরও একটু বেশি নজর দিন। এদিকে আবার চলছে ফলের মাস। নানা রকম ফলে বাজার সয়লাব। মুখ মিষ্টি করে দেয়া ফলগুলো শরীরের নানা চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে এসব মিষ্টি পাকা ফল কিন্তু ত্বকের যত্নেও ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিতই। এতে এমন আবহাওয়ায়ও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব প্রাকৃতিকভাবেই। জেনে নিন পাকা ফলে ত্বকের যত্নের বিষয়াদি-
এক টুকরো আম
ফলের মাসকে যেন অলংকৃত করে রেখেছে ফলের রাজা আম একাই। এ ফলে ভিটামিন সি, এ, ই এবং বি৬ পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। তাই এ সময়টাতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় আমকে জায়গা না দিলে বোকামিই হবে। শরীরের জন্য তো ভালো বটেই। সেই সঙ্গে জেনে নিন আমের ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনও বাড়াতে সাহায্য করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। ত্বকের ভেতরের টক্সিন বের করে দেয়। ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষাও দেয়। সঠিক পরিমাণে কোলাজেন উৎপাদন হলে ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকে। কোলাজেনের ঘাটতি হলেই ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হতে থাকে। জেল্লাও হারিয়ে যায়। তাই প্রতিদিন আম খেতে পারেন ত্বকের সৌন্দর্যের জন্যই।
শুধু খাদ্যতালিকাতেই নয়, পাকা আম রাখতে পারেন সৌন্দর্যচর্চার উপকরণ হিসেবেও। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন আমের ফেসপ্যাক। আম টুকরো করে কেটে নিয়ে তা ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এর মধ্যে সামান্য পরিমাণে গোলাপ জল মিশিয়ে সে মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট পর্যন্ত। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ ফেসপ্যাকটি পোড়াভাব দূর করে ত্বককে করে তুলবে চকচকে।
পুষ্টিভরা পাকা পেঁপে
পেঁপেতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বক ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফল পেঁপে তাই ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই ত্বক ভালো রাখতে কয়েক টুকরা পাকা পেঁপে খেতে পারেন নিয়মিতই। টুকরো করে কাটা পেঁপে, পেঁপের জুস কিংবা পেঁপে দিয়ে তৈরি স্মুদি রাখতে পারেন বিকেলের নাস্তায়। এতে শরীরও ঠাণ্ডা থাকবে আবার ত্বকও ভালো থাকবে।
অন্যদিকে পেঁপেকে কাজে লাগাতে পারেন রূপচর্চাতেও। ন্যাচারাল ব্লিচিউপাদান রয়েছে পেঁপেতে। ফলে গায়ের রঙ উজ্জ্বল করতে পেঁপের জুড়িমেলা ভার। এক টুকরো পেঁপে চটকে নিন, আধা কাপ মতো পরিমাণ হবে। তাতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ পুরো মুখে, গলায়, হাতে মেখে আধা ঘণ্টা রাখুন, তার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেঁপের তৈরি এই ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
পেঁপেতে রয়েছে আলফা হাইড্রক্সিল অ্যাসিড, যা মুখে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এমনকি ত্বকের ধারেকাছেই ঘেঁষতে দেয় না বলিরেখাকে। পাশাপাশি পেঁপের ভিটামিন ই আর সি ত্বক তরতাজা করে তোলে। পাকা পেঁপে আধা কাপ পরিমাণ চটকে তাতে এক টেবিলচামচ দুধ আর অল্প মধু মিশিয়ে মুখে গলায় লাগিয়ে নিন। মিনিট বিশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাক ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে চিরসবুজ।
একটা কলায় ষোলকলা
কলার পুষ্টিগুণের কথা বলে শেষ করা কঠিন। চুল, ত্বক ভেতর থেকে বাইরে সর্বত্রই সুন্দর রাখতে বারোমাসি এ ফলের তুলনা নেই। কিন্তু অনেকেই একটু বেশি পাকা কলা খেতে চান না। অগত্যা ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কলা বেশি পেকে গেলে ফেলে না দিয়ে তা দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। ফ্রিজের কোণে একটা কলা পেকে নরম হয়ে গেছে? কলাটি ফেলে না দিয়ে ভালোভাবে চটকে তার সঙ্গে মেশান এক টেবিলচামচ মধু। দুই ফোঁটা লেবুর রস যোগ করুন। মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কোমলতা আর উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এ প্যাকের জুড়িমেলা ভার।
হুটহাট চলে এল বেশ কিছু মেহমান। একসঙ্গে এত লোক বসার জায়গা হচ্ছে না, চটজলদি কয়েকটি টুল বা জলচৌকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে দিন ঘরের কিছু জায়গায়, ব্যাস সমাধান।
শোবার ঘর, খাবার ঘর, চা-পানের স্থান, ছাদ নয়তো ঝুল বারান্দা এমনকি করপোরেট অফিসের ঝা চকচকে অন্দরে অনায়াসে দারুণ মানিয়ে যায় টুল, মোড়া বা জলচৌকি। চৌকো, লম্বাটে বা গোল অনায়াসে যেকোনো আকৃতির টুল মানিয়ে যায় যেকোনো স্থানে। বাঁশ, বেত, দড়ি দিয়ে মোড়ানো, কাঠ, নাইলন, চামড়া, ফোম, স্টিল, লোহা ও প্লাস্টিকের টুল স্থান করে নিয়েছে আধুনিক অন্দর। তবে গাছ আছে এমন জায়গায় প্লাস্টিকের টুল বেমানান। আবার কিছু মোড়া পাওয়া যায় যেগুলো ভাঁজযোগ্য। তাই অনেকটা জায়গা দখল করে রাখে না। ফুল, পাতা, লতাপাতা, ফোমের ওপর বাহারি হাতের কাজের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নেয়া বা এক রঙা রেক্সিনে বা মখমল কাপড়ে মোড়ানো টুল বেশ অন্য রকম লুক এনে দেয় ঘরের। টুলের বসার জায়গাটায় ফোম লাগিয়ে নেয়া যেতে পারে আরামের জন্য।
আবার দড়ি দিয়ে নানান নকশার বুননে তৈরি বাঁশ বা কাঠের টুলে নানা মাপের ও আকৃতির কুশন বা পাশবালিশ রাখলেও দেখাবে নজরকাড়া। চাইলে বাসায় থাকা পুরোনো কাঠের টুলে রং করিয়ে নিয়ে ইচ্ছামতো নকশা এঁকে নিলেও ভালো দেখাবে। শুধু একা বসার জন্য নয়, ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নেয়া যাবে একাধিক ব্যক্তি বসতে পারেন, এমন জলচৌকিও। টেবিল রানানোর মতো করে বানিয়ে বা কিনে নেয়া যাবে কুশিকাটা বা কাপড়ের কভার।
টুলের ওপর ল্যাম্পশেড, কৃত্রিম ছোট ঝরনা, বাগান থেকে তুলে আনা তাজা ফুল, ইন্ডোর প্ল্যান্ট বা নানান রঙে রঙিন মোমবাতি রাখলে পুরো ঘরের নজর কাড়বে টুল। যেখানে টুল রাখা তার কাছাকাছি পারিবারিক ছবি বা বিভিন্ন ছবি বাঁধাই করা থাকলে ভালো লাগবে। ঝুলন্ত গাছ থাকলে দেখাবে স্নিগ্ধ সতেজ অন্দর। আবার বন্ধুদের চায়ের আড্ডায় পরিবেশন করা যায় কয়েক মগ চা বা কফি। আবার টুলে বসে কোলে কুশন রেখে আড্ডায় মেতে ওঠাও মন্দ নয়!
শোভন সাহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল হলেও জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনাতে। খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনার মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘সাধারণত ব্যাংকের রেজাল্ট হয় রোলের সিরিয়াল অনুযায়ী। আমার রোল শেষ দিকে হওয়ায় রেজাল্ট পাওয়ার পর আমি নিচের দিকে রোল খুঁজতে থাকি। সেখানে দেখি ৭১-এর পর ৯০-এর ঘরের রোল। আমারটা শুরু ৮৯ দিয়ে। দুই-চারটা হার্টবিট মিস করে ফেললাম! মনকে সান্ত্বনা দিলাম, ঈশ্বর আমার জন্য যা বরাদ্দ রেখেছেন, তাই পাব। এর পরই চোখ যায় যে, রেজাল্ট মেধাক্রম অনুযায়ী হয়েছে। তারপর প্রথম থেকে দেখা শুরু করি। পঞ্চম লাইনে নিজেকে আবিষ্কার করার পর মনে হয়েছে আসলেই তো! কয়েকবার নিজের রোলনম্বর মিলালাম, দেখলাম ঠিক আছে। সরকারি চাকরি পাওয়ার অনুভূতিটা আগেই পেয়েছিলাম। তবে এবার একটা বাড়তি ভালো লাগা কাজ করেছে।’
স্বপ্ন দেখা শুরুর পথচলা
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৯ সালে পাস করার আগেই একটা ফ্যাক্টরিতে জয়েন করি। পরিবারের মতামত এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে ১১ দিনের মাথায় মার্চেন্ডাইজারের চাকরি ছেড়ে দেই সরকারি চাকরির আশায়। কিছুদিন বাদেই বুঝতে পারি আমার জন্য ব্যাংক জব পাওয়াটা তুলনামূলক সহজ। তখন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখা শুরু হয়।
চাকরি পাওয়ার পেছনের গল্প
এর মধ্যে আমার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে চাকরি হয়। এখানে জয়েন হওয়ার কিছুদিন পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। যেহেতু অপরিচিত উপজেলায় পোস্টিং, সেহেতু এডির জন্য নতুনভাবে কোনো প্রস্তুতি আর নিতে পারিনি। আমি রিলাক্স মুডে পড়াশোনা করেছি। তবে যখন যেই সাবজেক্ট পড়েছি, সেটার খুঁটিনাটি পড়েছি। গভীর জ্ঞান আহরণ করলে কোথাও না কোথাও কাজে লাগবেই, এটা আমি বিশ্বাস করি। রেগুলার একটা বাংলা পত্রিকা পড়তাম। বলা যেতে পারে, এই পত্রিকা পড়াই আমার ব্যাংক জবের একমাত্র প্রিপারেশন। এক্সামের পর মনে হয়েছিল, প্রিলি টিকব। রেজাল্টের পর আশানুরূপ ফল পেলাম এবং লিখিত পরীক্ষার আগে হাতে থাকা অল্প কয়েক দিনে আমার নিজে হাতে লেখা অঙ্ক এবং বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক সাধারণ জ্ঞান নোট খাতাগুলোতে একটু চোখ বোলালাম। রিটেন এক্সামের পর পরিচিত অনেক বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হলো, যাদের লেখার সাইজ এবং ধরন শুনে খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল, আমার মাত্র ৩ পেজ ফোকাস রাইটিং ওদের ৫-৭ পেজ লেখার সামনে টিকবে না। যদিও মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে, আমি সব প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখে এসেছি।
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দেখে অনেক খুশি হলাম এবং হিসাব করলাম প্রতি ৩ জনে ১ জন সফল হবে। শেষ সময়ে ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জানার মাধ্যমে নিজেকে কনফিডেন্ট করলাম এবং নার্ভাসনেস কাটাতে মনে মনে বলতাম, God is the best planner.
যাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি
অবশ্যই বাবা-মা এবং দাদাভাই থেকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট পেয়েছি। ‘ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও বেকার বসে আছি’ এই চাপ থেকে আমার পরিবার আমাকে সব সময় রক্ষা করেছে। তাদের বিশ্বাস ছিল আমি এক দিন না এক দিন পারবই। এ ছাড়া কাছের অল্প কিছু আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীকে সব সময় পাশে পেয়েছি।
অ্যাপ্লাই করেও এডমিট ওঠাইনি
২০২০ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এডির পদে সার্কুলার দিয়েছিল। তখন অ্যাপ্লাই করেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার এডমিট কার্ড তুলিনি। একে তো আমি সরকারি চাকরির লাইনে নতুন। জানতাম না যে ব্যাংকের এডমিট কার্ড আগে দেয়া হয় এবং সেটা না তুলতে পারলে আর পরে সুযোগ নেই। তার ওপর করোনার শুরুর সময়ে জীবন বাঁচে কি না সেটা নিয়েই টেনশন ছিল। চাকরিবিষয়ক কোনো খোঁজখবর যে তখনো আসা সম্ভব, তা মাথাতেও আসেনি। এই আফসোসটা ছিল অনেক। আবার এখন নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় যে, প্রথমবারেই সফল হয়েছি।
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারটা একান্তই ব্যক্তিগত। বিভিন্ন অনলাইন চাকরি বা পড়াশোনার গ্রুপ এবং অনলাইন পত্রিকা থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আপডেটেড রেখেছি নিজেকে। এমনকি নিজের প্রস্তুতি মোটামুটি সম্পন্ন হওয়ার পর, ২০২১ সালের শেষ দিকে অনলাইনে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আমি অনেককে পড়িয়েছি।
চাকরিতে নতুনরা যা করবে-
নতুনদের জন্য পরামর্শ হলো, ব্যাংকের প্রিলি এবং রিটেন প্রস্তুতি একই সঙ্গে নিতে হয়। কারণ দুই এক্সামের মাঝে সময় থাকে প্রায় ১৪-২১ দিন। যে তথ্যই নেন না কেন, সঠিকভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে নিবেন। রেগুলার পত্রিকা পড়বেন এবং নিয়মিত যেকোনো বিষয়ে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের প্র্যাকটিস করবেন। চাকরিতে অবশ্যই টাইম ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর দিবেন। এবারের সহকারী পরিচালক (এডি) এক্সামের মেইন চ্যালেঞ্জ ছিল এটাই। আর ধৈর্যহারা হবেন না। হাল ছাড়বেন না। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখবেন। মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করবেন। জীবন উপভোগ করবেন। নিশ্চয়ই ভালো প্রতিদান পাবেন। ভাইভার ক্ষেত্রে নিজেকে স্মার্ট, কনফিডেন্ট এবং আপডেটেড রাখতে হবে। তা ছাড়া নিজের সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নিজের চারপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
লেখক: সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক (সুপারিশপ্রাপ্ত)
অনুলিখন : আনিসুল ইসলাম নাঈম
অভিনন্দন জানাই আমাদের টিমকে (টিম পলিমিক) এত বড় একটি কৃতিত্ব অর্জন করার জন্য। আর কৃতজ্ঞতা জানাই স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মুটকোর্ট সোসাইটিকে, যার মাধ্যমে এত সুন্দর অর্জনটা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। মুট নিয়ে আমার গত ১২ বছরের শিক্ষাজীবনে কখনোই ধারণা ছিল না। যদিও তেমন ইচ্ছে ছিল না মুটে যাওয়ার, কারণ ইংরেজিতে দুর্বলতা ছিল আমার। সংকোচ ছিল, যদি ইংরেজিতে কথা বলতে না পারি, হীনম্মন্যতার স্বীকার হতে হবে। কিন্তু সেই সংকোচ কিছুটা দূর হলো একটা খবর শোনার পর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুটকোর্ট প্রতিযোগিতা ‘ফিলিপ সি. জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট (মুটকোর্ট হলো একটি কাল্পনিক মামলায় আইনের ছাত্রদের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি স্থাপন করা। সাধারণত একটি টিমে তিনজন থাকে (২ জন মুটার, ১ জন রিসার্চার)। একাধিক বিচারক এবং একজন বেঞ্চ অফিসার থাকেন। মুটের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একজন আইনের ছাত্রের গবেষণা এবং উপস্থাপন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।) কম্পিটিশন-২০২৩’ বাংলাদেশ বাছাই পর্বে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল পর্বে অংশগ্রহণ করে। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক খবর ছিল। এই ঘটনার পরে নিজের মধ্যে থেকে কিছুটা সংকোচ দূর হয়েছিল। চিন্তা করে দেখলাম, সবাই তো আর ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পড়ে আসে না, তাহলে কি বাংলা মিডিয়ামের স্টুডেন্টরা কিছুই বলতে পারে না! পারে, যদি লেগে থাকে তার সুচিন্তায় এবং চেষ্টায়।
টিম তৈরি
যোগ দিলাম সপ্তম মুটকোর্ট কম্পিটিশনে। এখন পালা টিম মেম্বার সিলেকশনের। কী করব? কার সঙ্গে টিম বানাব? সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। আমাদের টিমের নাম হলো ‘পলিমিক’। টিম মেম্বারদের সম্মতিতেই নামটা দেয়া হয়েছিল। টিমের দ্বিতীয় সদস্য ছিল দিবা (ওরালিস্ট)। সেও নার্ভাস ছিল এই মুট প্রতিযোগিতা নিয়ে। অবশ্য তার ইংরেজি-দক্ষতা খুব ভালো ছিল। আসলে নতুন কিছু নিয়ে কাজ করতে শুরুতে সবারই একটু নার্ভাসনেস কাজ করে। দিবার অনেক নার্ভাসনেস ছিল, কিন্তু সে প্রতিযোগিতায় পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে কনফিডেন্টলি কথা বলতে পেরেছিল। আমাদের টিমের তৃতীয় মেম্বার ছিল আকিব (রিসার্চার)। সে অনেক পরিশ্রমী এবং ডেডিকেটেড একজন মানুষ। আকিব আমাদের মেমোরিয়াল বানানোর সময় অনেক রাত ঠিকমতো ঘুমায়নি। আকিবেরও মুট নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না, টিম তৈরি হওয়ায় একটু একটু করে ধারণা পেয়েছিল। আকিবের সবচেয়ে ভালো দিক হলো সে একটানা কাজ করতে পারে।
মেমোরিয়াল
আমাদের যে ফ্যাক্ট দেয়া হয়েছিল, সেটা ছিল মাত্র দুই পৃষ্ঠার। কিন্তু এতে অনেক ইনফরমেশন ছিল। আমরা প্রথমে ফ্যাক্টকে এতটা গুরুত্ব দেইনি। মাত্র চার দিনে মেমোরিয়াল বানানো হয়েছিল। মেমোরিয়াল কীভাবে বানাব বা বানাতে হয় সেটা নিয়ে তেমন অভিজ্ঞতা আমাদের টিম মেম্বার কারোর ছিল না। কিন্তু মুট ক্লাবের সিনিয়রদের সহযোগিতায় আমরা মেমোরিয়াল বানাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
প্রতিযোগিতার সময়
আমাদের তিনজনের প্রথম অংশগ্রহণ। তিনজনের মধ্যে ভয় কাজ করছিল। আমি আর দিবা যেহেতু ওরালিস্ট ছিলাম, সেহেতু আমাদের ভয় ছিল- সাবমিশন ভালোভাবে দিতে পারব কি না বা জাজের প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারব কি না! প্রতিটি টিমের আলাদা চারটি টিমের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিল। প্রথম রাউন্ড শেষে আমাদের টিমের মেম্বাররা এটাই আলোচনা করছিলাম যে, সেমিফাইনালে যাই বা না যাই এতটুকু পর্যন্ত ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যাই হোক, আমাদের টিম সেমিফাইনালে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। সেমিফাইনাল ছিল পরের দিন ২৭ মে। ওইদিন প্রতিযোগিতার শুরুতে আমাদের তেমন ভয় কাজ করেনি। কিন্তু সেমিফাইনালে অংশগ্রহণ করে বুঝেছিলাম যে আমাদের রিসার্চ এবং জ্ঞানের পরিধি আরও বাড়ানো উচিত ছিল। সেমিফাইনাল শেষ হওয়ার পরে আমরা সংকোচে ছিলাম যে, আমরা কি আসলেই ফাইনালে যেতে পারব? কারণ, সেমিফাইনালে আমাদের দুপক্ষই ভালো পারফরম্যান্স করেছিল। আমাদের জানানো হলো, আমরা ফাইনালে যেতে পেরেছি। তখন আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে ভয়ও বাড়ছিল। ফাইনালে তো আরও অনেক নতুন প্রশ্ন করবে, কীভাবে জবাব দেব বা নতুন জাজের সামনে কীভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলব- সেটাই ভয়ের কারণ, সাবমিশন ঠিকমতো দিতে পারব কি না। সেমিফাইনালে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল,যেগুলো ফাইনালের আগে সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নেয়াটা কঠিন ছিল। কারণ, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল হওয়ার ব্যবধান ছিল ১ ঘণ্টা। আনন্দের বিষয়, ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ টিম ছিল আমাদের ব্যাচমেট। আমরা নিজেদের তখন সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম এটা বলে, ব্যাচমেটের কাছে হারলে তো সমস্যা নেই। আর কাপ তো আমাদের ব্যাচের এক টিমই নেবে ৷
যাই হোক, সাবমিশন দিলাম আমি এবং দিবা। আমাদের বিপক্ষ টিমও সাবমিশন দিল। এখন রেজাল্ট দেয়ার সময়। মনে অনেক ভয় কাজ করছে আবার নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা এটা বলে দিতে লাগলাম যে, জিতলে তো আমাদের ব্যাচের টিমই জিতবে, সমস্যা নেই। রেজাল্ট পাবলিশড হলো। নাম উচ্চারিত হলো ‘পলিমিক’ টিম। তখন অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই।
এই মুটের প্রতিযোগিতায় আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, কীভাবে জাজের সঙ্গে কোর্ট রুমে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে একটা বিষয় চিন্তা করতে হয় এবং আরও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মুটকোর্ট সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি নাওয়াজ শরীফ ভাই ও হেড অব মুট আনিকা তাবাস্সুম আপুকে।
বেস্ট মুটার
মুটার হিসেবে এই সপ্তম ইন্টার ব্যাচ দিয়েই আমার জার্নি শুরু হয়েছে। আমি অনেক নার্ভাস এবং একই সঙ্গে এক্সাইটেডও ছিলাম। আমি ভাবিনি আমি ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত যেতে পারব এবং বেস্ট মুটার হিসেবে মনোনীত হব! আমি কেবল শিখছি, আমার আরও অনেক শেখার বাকি এবং আমি চাই আমার এই সফলতা যেন আমায় ‘ফিলিপ সি. জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশন’ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
বেস্ট রিসার্চার
সাম্প্রতিক সময়ে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মুটকোর্ট সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত সপ্তম আন্তব্যাচ মুটকোর্ট প্রতিযোগিতায় বেস্ট রিসার্চারের পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দ ও গর্ব অনুভব করছি। পুরস্কারটি কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক। আমি আমার টিম মেম্বার (আছিয়া, আঁখি) এবং অর্গানাইজেশনের দায়িত্ব পালনকারীদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতার কারণেই এটি অর্জন সহজ হয়েছে।
‘Utilise the time properly, be curious & be hardworker’ আমি সর্বদা এই উদ্ধৃতিটি মেনে চলার চেষ্টা করেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। সর্বদা নতুন কিছু শিখতে আগ্রহ প্রকাশ আর কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা আমাকে বেস্ট রিসার্চার হতে এগিয়ে রেখেছে। প্রকৃত অর্থে রিসার্চের অভিজ্ঞতা প্রথম হওয়ায় শুরুতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় ‘ল’ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়েছে। কখনো মনে হয়েছে এই আর্টিকেল/সেকশন অ্যাপ্লিকেবল আবার কখনো মনে হয়েছে অ্যাপ্লিকেবল নয়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন আর্টিকেল/রিসার্চ পেপার বারবার পড়া এবং টিমমেটদের সঙ্গে আলোচনার ফলে এই দ্বিধার অবসান ঘটেছে। রেফারেন্সের জন্য কেস খুঁজে পেতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মাঝে মাঝে ডিএলআরে কেস খুঁজতে গিয়ে সমুদ্রে সাঁতার কেটে পাড় খোঁজার মতোই অনুভূত হয়েছে। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মুটকোর্ট সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি নাওয়াজ শরীফ ভাই, হেড অব মুট আনিকা তাবাস্সুম আপু অনলাইনে প্রশ্ন-উত্তর সেশনের মাধ্যমে আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কঠোর অধ্যবসায় ও সঠিক দিকনির্দেশনার মাধমেই এ কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
লেখক: প্রভাষক, আইন বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
পুরান ঢাকার শ্রীশ দাস লেনের হলুদ রঙের দোতলা ১ নম্বর বাড়িটি। এই বাড়িটিতে ৫০-৬০ দশকে জমে উঠত কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের আড্ডার পসরা; চলত শিল্প ও সাহিত্যের চর্চাও। রাজনীতি চর্চাও কম হতো না। সেখানে যেমন বঙ্গবন্ধু আসতেন, তেমনি আসতেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, আসাদ চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান আর বেলাল চৌধুরীরা। এখানে বসে যারা আড্ডা জমাতেন, তাদের বলা হতো ‘বিউটিয়ান’। আজ কোথায় সেই বিউটিয়ানরা? এখন সবাই আসে ছবি তুলতে, কয়েক মিনিটের জন্য প্রদর্শন করতে। এখন সেই দিন আর নেই, নেই অতীত সেই ঐতিহ্যও। অভিজাতরাও তেমন আসেন না, হয় না সেই সাহিত্য ও শিল্পচর্চা আর রাজনীতি নিয়ে গরম গরম কথার জমজমাট আড্ডা। বিউটি বোর্ডিংয়ে আসতেন কবি শহীদ কাদরী। কাদরীর পদচারণে বেড়ে যায় কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিদের আনাগোনা। বেড়ে যায় শিল্প ও সাহিত্যের চর্চাও। কবি-সাহিত্যিকরা ছুটে আসার আরেকটি কারণও ছিল। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে হওয়ার কারণে। শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘মনে পড়ে একদা যেতাম প্রত্যহ দুবেলা বাংলাবাজারের শীর্ণ গলির ভেতরে সেই বিউটি বোর্ডিংয়ে পরস্পর মুখ দেখার আশায় আমরা কজন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে বসে সভা করতেন, দিকনির্দেশনা দিতেন। এখানে বসেই আব্দুল জব্বার খান প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশের’ পাণ্ডুলিপি রচনা করেন। শামসুর রাহমানের নিজস্ব একটি টেবিল ছিল, যেখানে বসে তিনি কবিতা লিখতেন, এই টেবিল কেউ ব্যবহার করত না। তার প্রথম কবিতাও এখান থেকেই ছাপা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বিউটি বোর্ডিংকে শ্মশানে পরিণত করে। ২০০৫ সাল থেকে প্রণীত হয় বিউটি বোর্ডিং সম্মাননা। প্রতি বছর এক বা একাধিক ব্যক্তি এই সম্মাননায় ভূষিত হন।
যেভাবে যাবেন
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত বিউটি বোর্ডিং। দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে যেকোনো লঞ্চে সদরঘাট নেমে, ২০-৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় কিংবা ৫-১০ মিনিট হেঁটে চলে আসা যাবে বিউটি বোর্ডিংয়ে। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সদরঘাটগামী বাসে এসে নামতে হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বাহাদুরশাহ পার্ক বা ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে। সেখান থেকে হেঁটে ১০ মিনিটের পথ বিউটি বোর্ডিং।
জেনে রাখুন
সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে বিউটি বোর্ডিং। এখানে রয়েছে ২৭টি ঘর, যার ১৭টি একজনের, ১০টি দুজনের থাকার মতো। ঠিক ১১টায় বন্ধ হয়ে যায় প্রধান ফটক। এখানে যারা রাত যাপন করবেন, তাদের পরবর্তী দিন বেলা ১টার মধ্যেই কক্ষ ত্যাগ করতে হবে। না হলে গুনতে হবে পরবর্তী দিনের ভাড়া। এখানে সমাজবিরোধী ও রাজনৈতিক আলাপ সম্পূর্ণ নিষেধ। বিউটি বোর্ডিংয়ের দোতলায় যেতে হলে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে। থাকা যাবে যতক্ষণ ইচ্ছা।
যেসব খাবার পাওয়া যাবে
প্রতিদিন ২৫ রকমের খাবার পাওয়া যায়। ভাত, ডাল, সবজি, ডিম, মাছ, মাংস সবই আছে এখানে। মাছের মধ্যে ইলিশ, বোয়াল, পাবদা নিয়মিত পাওয়া যায়। মাংসের মধ্যে মুরগি ও খাসি। এ ছাড়া ভর্তা, বড়া, মুড়িঘণ্ট, চাটনি আর দইও আছে। এখানে ১৫ টাকায় মিলবে দুধ চা।
ছুটির দিন মানে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে ভ্রমণের দিন। ঠিক তেমনি এক ছুটির দিনে আমরা ৫ বন্ধু মিলে চলে গেলাম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অতি পরিচিত একটি ঝরনাতে। ঝরনার নাম নাপিত্তাছড়া ঝরনা। নাম শুনলে হয়তো একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে এই অদ্ভুত নামের ঝরনাটিতে পাবেন চমৎকার ট্রাকিং আর প্রকৃতি দেখার সুযোগ। নাপিত্তাছড়া ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম বন্ধুরা মিলে। এই ভ্রমণে সঙ্গী হতে বোয়ালখালী থেকে দুই বন্ধু এবং একজন বড় ভাই এসেছেন। আর চট্টগ্রামে আমরা দুই বন্ধু তো আছিই। সর্বমোট ৫ জনের এই গ্রুপটি সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের এ কে খান থেকে রওনা দিলাম মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারি হাটের উদ্দেশে। চট্টগ্রাম নগরীর এ কে খান থেকে ঢাকা-কুমিল্লাগামী বাসে উঠে নয়দুয়ারি বাজার বা হাট বললেই নামিয়ে দেবে। জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা করে নেবে।
যা-ই হোক বাসে উঠলাম, প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছলাম নির্দিষ্ট স্থানে। অর্থাৎ নয়দুয়ারি হাটে। গাড়ি থেকে নেমে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ঝরনা দেখতে যাওয়ার রাস্তা কোনটি। চাইলে ওই গ্রাম থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন, ৪০০-৫০০ টাকার মতো নেবে ৪-৫ ঘণ্টার জন্য। আমরাও একজন গাইড নিলাম। ভদ্রলোকের নাম আব্দুল করিম। আমরা করিম ভাই বলেই ডাকছি তাকে।
এরপর পাহাড়ি অরণ্যে ঝিরিপথ বরাবর চলা শুরু করলাম করিম ভাইয়ের পেছন পেছন। করিম ভাই বলেন, এখানে মোট ৪টি ঝরনা আছে- টিপরাখুম ঝরনা, কুপিটাকুম ঝরনা, মিঠাছড়ি ঝরনা ও বান্দরখুম ঝরনা। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ এবং প্রচণ্ড গরম আমাদের কিছুটা ক্লান্ত করেছে। তবে যত যাচ্ছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পাথর আর পানি তো আছেই। সঙ্গে আছে বিশাল বিশাল পাহাড়ের খাদ। ভয়ংকর কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। রাস্তা বলতে এটা সহজ রাস্তা নয়। কখনো বড় বড় পাথর পাড়ি দিতে হবে, কখনো ছোট ছোট পানির গর্ত পাড়ি দিতে হবে, আবার কখনো উঠতে হবে পাহাড়ে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে এই পথে যাওয়ার সময়। তবে ঝরনায় যাওয়ার এই রাস্তাটির প্রতিটি অংশই অদ্ভুত সুন্দর। এভাবেই আমাদের গাইড করিম ভাই আমাদের নিয়ে চলে এলেন ঝরনার কাছে। ঝরনা চারটি বেশি দূরে নয়। আমরা প্রথম ঝরনাটির সামনে চলে এলাম। তবে এই টিপরাখুম ঝরনার পানি ততটা স্বচ্ছ নয়। কিন্তু বাকি ঝরনাগুলোর চেয়ে এই ঝরনাটি সবার আগে। তাই অনেকে ক্লান্ত হয়ে এখান থেকেই ফিরে যায়। এর প্রায় ১০-২০ মিনিট যাওয়ার পর দ্বিতীয় ঝরনা কুপিকাটাকুম পেয়ে যাবেন। অনেক সুন্দর একটি ঝরনা। ঝরনায় পানির পরিমাণও ভালো। ঝরনাটির সামনের পানির অংশটি কিছুটা গভীর। তাই একেবারে ঝরনার সামনে যেতে হলে আপনাকে সাঁতার কেটে যেতে হবে। সেই সঙ্গে ঝরনার পানি বেশ ঠাণ্ডা। সূর্যের এই তাপের মাঝেও একটুখানি প্রশান্তি পাওয়া যায় এই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে। পানিগুলো পানও করা যায়।
যা-ই হোক, ঝরনার পানি পান করলাম, ছবি তুললাম, নাশতা করলাম এবং হালকা বিশ্রাম নিলাম। এরপর তৃতীয় ঝরনা মিঠাছড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। মিঠাছড়ি ঝরনায় যাওয়ার সময় ছোট একটি পাহাড়ের প্রায় খাড়া একটি ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। এটা বেশ ভয়ংকর। তাই যাদের ট্রাকিং করার অভিজ্ঞতা কম, তাদের এ সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হয়। ঝরনাটি বেশ কাছেই। ২০ মিনিটের মধ্যেই মিঠাছড়ি ঝরনায় পৌঁছে যাবেন। ঝরনাটির উচ্চতা বেশ। ওপর থেকে পানি পড়ার সময় অর্ধেকটা অংশ পার হওয়ার পর দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে পানি পড়ে। নিজের চোখে না দেখলে দৃশ্যটি সত্যি বলে বোঝানোর মতো নয়। বিশেষ করে বর্ষার সময় এই ঝরনাটি খুব সুন্দর দেখায়।
মিঠাছড়ি ঝরনায় কিছুক্ষণ থাকার পর সর্বশেষ ঝরনা বান্দরকুম বা বান্দরিছড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু কললাম। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ঝিরি পথ বরাবর হাঁটার পর ঝরনাটি পেয়ে যাই। এই ঝরনাটিও বেশ সুন্দর। বাকি তিনটি ঝরনার চেয়ে এই ঝরনাটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। ঝরনায় যাওয়ার ঝিরি পথটা অনেক সুন্দর। তেমন কোনো ভয়ংকর রাস্তাও ছিল না। তবে এই ঝরনাগুলো দেখতে বর্ষার সময় আসাটাই সবচেয়ে ভালো সময়, তাহলে ঝরনার সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
দীর্ঘ সময় ঝরনার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করলাম। এবার ফেরার পালা। রওনা দিলাম গাইড করিম ভাইয়ের পেছন পেছন। ৪-৫ ঘণ্টা বললেও আরও বেশি সময় লেগেছে আমাদের। প্রায় সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। আর বেশি সময় থাকা যাবে না।
গাইড নেয়ার সুবিধাটা উপলব্ধি করলাম আমরা শেষ সময়ে। যেদিক দিয়ে এসেছিলাম, সেদিক দিয়ে সবাই যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন ফিরে যাচ্ছি, তখন ভিন্ন পথ দিয়ে যাচ্ছি। এই ভিন্ন পথে যাওয়ার কারণটা হচ্ছে সহজ রাস্তা। আর এই সহজ রাস্তাটা গাইড থাকার কারণেই চেনা। ঝরনার পাশেই পাহাড়ে বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। এরপর অল্প হেঁটেই পাহাড় দিয়ে শুধু নামলেই চলবে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নেমে গেলাম। তখনই বুঝলাম গাইড কেন প্রয়োজন। গাইড না থাকলে এমন সহজ পথ আছে কেউ জানত না। তবে পাহাড় বেয়ে উঠা যেমন কষ্ট, নামাও তেমন কষ্ট। এটা নাপিত্তাছড়া ঝরনা ভ্রমণে না এলে বুঝতে পারতাম না।
পুরো ভ্রমণের সার্থকতা খুঁজতে চাইলে প্রথমেই বলতে হবে ট্রাকিংয়ের কথা। বড় বড় পাথর আর পাহাড়ের গহিনে যাওয়াটা সহজ বিষয় না। এ ছাড়া পরিবেশ-প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার স্বাদ তো পাবেনই। তবে ঝরনার কাছাকাছি চলে এলে দূর হয়ে যাবে আপনার সব ক্লান্তি। নিজের চোখে জলপ্রপাত দেখার এই অপূর্ব অনুভূতি একমাত্র যিনি দেখেন তিনিই জানেন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে নয়দুয়ারি বাজারে নেমে যেতে হবে। ট্রেনে করে এলেও সীতাকুণ্ডে নেমে নয়দুয়ারি বাজার আসা যায়। চট্টগ্রামের এ কে খান থেকে নয়াদুয়ারি বাজার আসতে পারবেন বাসযোগে।
কোথায় থাকবেন?
এই ভ্রমণ এক দিনের। তাই থাকার দরকার পড়বে না, তবুও নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মিরসরাই বা সীতাকুণ্ডে হোটেল পাবেন। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে।
খাবেন কোথায়?
ট্রেইলে যাওয়ার পথে একটা ছোট হোটেল আছে, সেখানে যাওয়ার আগে কী খাবেন তার অর্ডার দিয়ে যেতে হবে। তাহলে রান্না করে রাখবে, ফিরে এসে খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন। এ ছাড়া ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে ভালো মানের রেস্তরাঁ রয়েছে।
গ্রাম বনে এখনো শিয়ালই রাজা। তবে টলমল করছে তাদের রাজত্ব। স্রেফ বুদ্ধির জোরেই এত বড় প্রাণী আজও টিকে আছে বাংলার মাঠে। কিন্তু আর কদিন? দশ কি বিশ বছর পরে বাংলার মাঠে শিয়াল আর দেখা যাবে কি না সন্দেহ। তবে শিয়াল টিকবে কি টিকবে না, সে তর্কে এখন যাব না। আজ বরং একটা গল্প বলি।
ছোটকালে নানার মুখে শিয়ালদের নানা কীর্তি-কাহিনি শুনেছি। এখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ডিসকভারির কল্যাণে সেসব গল্পের বাস্তব রূপ দেখতে পাই।
নানাদের গ্রামটি এখনো জঙ্গলে ঠাসা। ব্রিটিশ আমলে গহিন অরণ্য ছিল। মেছো বাঘ, গেছো বাঘ, ভালুক, ভাম, বন্য বরাহদের আস্তানা ছিল বনজুড়ে। এক দিন নানা মাঠে গিয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন। দুটি শিয়াল আক্রমণ করেছে একটি মা বন্য শূকরকে। শূকরটি তার তিন-চারটি ছানা নিয়ে আস্তানায় শুয়ে ছিল। শিয়ালের টার্গেট ধাড়ি নয়, ছানা। একটি শিয়াল সন্তর্পণে এগিয়ে যায় শূকরের নাক বরাবর। মা শূকর বুঝে ফেলে শিয়ালের মতলব। সে কিছুতেই আস্তানা ছেড়ে নড়ে না। তখন শিয়াল আরও এগিয়ে যায়। একেবারে ধাড়ির কোল থেকে বাচ্চা ছিনিয়ে নেয়ার উপক্রম! তখন বাধ্য হয়ে মা শূকর শিয়ালটিকে তাড়া করে। এই সুযোগ অন্য শিয়ালটি একটু আড়ালে ছিল। সে বেরিয়ে এসেই একটি শূকর ছানা নিয়ে পালায়।
শুকরটা আস্তানা ছেড়ে বেশি দূর যায় না। শিয়ালকে কিছু দূর তাড়িয়ে দিয়ে আসে। ফিরে দেখে আরেকটি শিয়াল তার ছানা নিয়ে পালাচ্ছে। ‘শূকরের গো’ বলে কথা! প্রাণপণে সে তখন এই শিয়ালটিকে ধাওয়া করে। ততক্ষণে আগে ধাওয়া খাওয়া শিয়ালটি ফিরে এসে আরেকটা ছানা নিয়ে পালায়।
নানার মুখে শুনেছি শিয়ালগুলো এভাবে সবকটি শূকরছানা দুই দিনের মধ্যেই গায়েব করে দেয়।
এক দিন এ ধরনের একটি দৃশ্য দেখে গল্পটি মনে পড়ে গেল। সেবার বাড়ি গিয়েছিলাম ছুটিতে। ক্যাননের নতুন একটা ক্যামেরা কিনেছি। ট্রাইপডও নিয়ে নিলাম একটি। কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় জুম করে ছবি তুলতে গেলে ট্রাইপড ছাড়া চলেই না। এবার শুধু গাছগাছালির জন্য বাড়ি যাচ্ছি না। পাখির ছবি তোলারও ইচ্ছা আছে। শিয়ালের ছবি তোলার ইচ্ছেটাও ঘুরপাক খচ্ছিল। বর্ষাকাল হলে তবুও সম্ভাবনা ছিল কিছুটা। কিন্তু বসন্তে অসম্ভব ব্যাপার। এখন শিয়াল কমে গেছে। দেখা পাওয়াই দুর্লভ ব্যাপার। যদিও সন্ধেবেলায় মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু দূর থেকে কম আলোতে ছবি নেয়া এই ক্যামেরায় একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু এভাবে শিয়ালের ছবি পেয়ে যাব, ভাবিনি! সঙ্গে ছিল আমার ছোট ভাই শাহেদ।
ইছামতীর পাড়ে বড় বাগানটায় এসে শাহেদ চেঁচিয়ে উঠল, ‘ভাইয়া শিয়াল!’
দ্রুত কাঁধ থেকে ট্রাইপড নামাতে নামাতে একটি শিয়াল ধীরপায়ে জঙ্গলের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল। আসলে শিয়াল দুটি এসেছিল ছাগল কবজা করতে। একপাল ছাগল চরছিল বাগানটির পাশেই একটা ঘেসো জমিতে। রাখাল গিয়েছিল শ্যালো মেশিনে পানি খেতে। এই ফাঁকে শিয়াল দুটি আক্রমণ করে। কিন্তু টের পেয়ে যায় রাখাল। তার হাতে বাঁশের লাঠি। হৈ হৈ করে তেড়ে আসে। কিন্তু শিয়াল দুটির ভাব দেখে মনে হলো, রাখালকে পরোয়া করছে না। লাঠি হাতে তেড়ে আসতে দেখে শিয়াল দুটি এগোয়। তবে দুটি দুই দিকে। একটা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ঝোপের আড়ালে। কিন্তু আরেকটার কোনো তাড়া আছে বলে মনে হলো না। কিছুটা এগোচ্ছে আর থামছে। ঘুরে দেখে নিচ্ছে ছাগলগুলোর অবস্থা। হঠাৎ আমাদের দেখে দুঃসাহসটা আর দেখাতে পারল না। কারণ, উত্তর দিকে রাখাল, দক্ষিণে আমরা। শিয়াল কিছুতেই ছাগল নিয়ে পালাতে পারত না। কিন্তু শিয়ালটি যদি আমার মনের কথা জানতে পারত, তাহলে দুজন মিলে শূকরছানা ধরার মতো করে একটি ছাগল ঠিকই কবজা করত। আমি চাচ্ছিলাম শিয়াল ছাগল ধরে নিয়ে যাক। মানুষ বন-জঙ্গল উজাড় করে বন্য প্রাণীদের অধিকার ধূলিসাৎ করেছে। এখন ওরা যাবে কোথায়, খাবে কী? তাই মানুষের পোষা প্রাণীতে ওদের ভাগ ন্যায্য বলে আমি মনে করি।
কিন্তু শিয়ালটি সে ঝুঁকিতে গেল না। সঙ্গীটি না পালালে কী করত জানি না। সেও ধীরে, খুব ধীরে একরাশ হতাশা নিয়ে বাঁশবনের ভেতরে ভাট-আশশ্যাওড়ার জঙ্গলে হারিয়ে গেল। তবে যাওয়ার আগে আমাকে দিয়ে গেল মহামূল্যবান একটা ছবি।