কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে থাকতে নিতে হয় ডায়ালাইসিস। কিন্তু গবেষণা জানাচ্ছে, যেসব কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস নিতে হয়, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের ৫০ শতাংশের মৃত্যু সম্ভাবনা থাকে। আবার করোনায় আক্রান্ত ক্রনিক কিডনি ডিজিজের ( সিকেডি) রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চাইতে ১০ গুণ বেশি। আবার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অর্থ্যাৎ কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এমন রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি ৫০ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনার দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব নিয়ে ‘মাল্টিটিউড অব ইস্যুস ইন কোভিড: রেনাল, কার্ডিয়াক অ্যান্ড মেটাবোলিক ইনফ্লুয়েন্স’ ও ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে ‘কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ’এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে।
গবেষণায় পাওয়া গেছে, করোনা টিকার কার্যকারিতা কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে এমন রোগীদের অনেক কম। করোনার টিকা নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগম ঘটাতে পারে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিএসএমএমইউর অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর একটি প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাাচাার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গবেষণার তথ্য জানিয়ে বলেন, করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় ভুগছেন। অপরদিকে, করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মাঝে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার যারা করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ চিকিৎসক এবং ৩৪ শতাংশ নার্স লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল চিকিৎসকদের গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ। অন্যদিকে কোভিড নিউমোনিয়া, একটি সংক্রামক রোগ। কোভিড হলে এই দুই ধরণের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটির মাধ্যমে অন্যটি প্রভাবিত হয়।
তাই কোভিড নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। অপর দিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কোভিড জটিলতাও বেশী হয়।
আরেক গবেষণায় কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, সকল কোভিড আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশের ডায়াবেটিস আছে এবং তাদের ১৫ শতাংশের চিকিৎসাধীন থাকার প্রয়োজন হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যাদের ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোভিডের টিকা নেবে, কিন্তু অবশ্যই টিকা গ্রহণের সময় রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। তবেই টিকা নেয়ার পর একজন ব্যক্তি কোভিড থেকে সুরক্ষা পাবে।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়েও রোগীরা আসছেন। তাদেরকে পোস্ট কোভিড বা লং কোভিড সিন্ড্রোম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে কোভিড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড জটিলতা প্রতিরোধ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
মানুষের উপকারে আসবে এমন প্রকল্প গ্রহণ ও হাসপাতাল তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের উপকারে আসবে এমন প্রকল্প, হাসপাতাল তৈরির কাজই আমি করব। একটা দরিদ্র মানুষ রংপুর থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য ঢাকা আসবে সেটা তো হয় না। আমি এমন প্রকল্প নিয়েই কাজ করব যেটা আমি শেষ করতে পারব। সেটা এখন থেকেই করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সদ্ব্যবহার করতে পারলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কর্তৃক আয়োজিত ‘বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য অভিঘাতের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা যদি আমি নিশ্চিত করতে না পারি, ঢাকায় বসে যতই লেকচার দিই কোনো লাভ হবে না। গ্রামাঞ্চলে এবং প্রান্তিকপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করাটাকে আমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
অ্যান্টিবায়োটিকের পর্যাপ্ত ব্যবহার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সামান্য সর্দি জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেসিস্টেন্ট ভয়ানক একটা জিনিস। এ প্রসঙ্গে আমি বলব ডিজি ড্রাগকে আরও শক্ত হতে হবে। ফার্মেসিতে গিয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশন সিস্টেম যদি চালু করা যায় তাহলে যথাযথ মনিটরিং করা সম্ভবপর হবে, ওষুধের যথেচ্ছ এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমি মন্ত্রী হবার মেয়াদ মাত্র ছয় মাস। এ ছয় মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে আমি অন্তত সাতটি সভা করেছি। আমি যেভাবেই হোক এটা মহান জাতীয় সংসদে নিয়ে যাব। কারণ রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটা আমার দায়িত্ব।’
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ পারিবারিক আয় ব্যয় জরিপের ২০২২ (এইচআইইএস) ভিত্তিতে তার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
কোনো ক্লিনিকে অনিয়ম পেলে সেই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিটিস্ক্যানসহ বেশ কিছু মেশিন নষ্ট রয়েছে। সেগুলো আমরা দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা করব। আমি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আমি চাই না, দিনাজপুরের কোনো রোগী ঢাকায় যাক। দিনাজপুরে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা থাকেন না কেন, বা কোন সমস্যা, সেটা আমি দেখব। আমার একটিই নির্দেশ, যখন যেখানে যেই চিকিৎসককে বদলি করা হবে, তাকে সেখানে থাকতে হবে। আমরা কারো সঙ্গে অন্যায় আচরণ করব না। এর জন্য কোনো ছাড় নেই।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন, আঞ্চলিক ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রী-এমপিরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো বিদেশ যাচ্ছেন না। তিনি তার চক্ষু তো বাংলাদেশেই পরীক্ষা করিয়েছেন। এভাবে যদি আমাদের সংসদ সদস্য (এমপি) এবং মন্ত্রীরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাহলে দেশের চিকিৎসাসেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তো জোর করে কাউকে বিদেশ পাঠাচ্ছি না। কেউ যদি তার বাবা বা স্ত্রীকে নিজের পয়সা দিয়ে বিদেশমুখী করে তাহলে সেখানে তো আমার করার কিছুই নেই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। মানুষ যেন আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করার ভরসা পায়। তারা যেন মনে করে এদেশেও চিকিৎসা আছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তো বিদেশ থেকেও রোগী আসছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই আমরা কাজ করে আসছি। রোগী এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতেই এ আইনটি করা হচ্ছে। শুধু চিকিৎসকদের সুরক্ষা নয়, বরং রোগীরাও যেনো সঠিক সেবা পায় এবং চিকিৎসায় অবহেলা না হয়; এসব নিয়েই এ আইন করা হচ্ছে। এটা এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে। আমি মনে করি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটা নিয়ে কয়েকটি মিটিংও আমি করেছি। আমি চেষ্টা করব, যত দ্রুত সম্ভব এটাকে সংসদে নিয়ে যেতে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সব চিকিৎসক ডেঙ্গু চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন। ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের একটা গাইডলাইন আছে; সেটাও তারা জানেন। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)-সহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখানে আমার পূর্ণ নির্দেশ দেওয়া আছে, যেন কোনোভাবেই স্যালাইনের ঘাটতি না হয়। ওপরওয়ালা মাফ করুন, আমরা কেউই চাই না ডেঙ্গুতে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। যদি হয়েই যায়, তাহলে আমরা মনে করি ওপরওয়ালার ইচ্ছায় সেটা সামলাতে পারবো।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর ১৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়টা তাহলে কীভাবে হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমন্বয়টা করতে আমরা কয়েকটি মিটিং করেছি। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং দুই মেয়রের সঙ্গেও কথা বলেছি। মিটিং করে দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার—এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা দিয়েই কাজটা করতে হবে।
বগুড়া জেলা শহরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হওয়া দুজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এনে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- চন্দন কুমার দেব (৬৪) ও রঞ্জন চন্দ্র পাল (৪৮)।
তাদের দুজনকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ সোমবার (৮ জুলাই) সকালে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় তিনি আহতদের খোঁজ খবর নেন, স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আহমেদুর রহমান সবুজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত চন্দন কুমার দেব ও রঞ্জন চন্দ্র পালের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চন্দনের শরীরের ২৫ ও রঞ্জনের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনের মাথায় আঘাত রয়েছে। বর্তমানে দুজনকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসেছিলেন। দুই রোগীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। তাদের স্বজনদেরও সঙ্গেও কথা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শহরের সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় রথযাত্রা বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৩০ জন। তাদের মধ্যে দুজন চন্দন ও রঞ্জন। হাসপাতালে অবস্থানরত চন্দনের ছেলে পরাগ দেব জানান, সদর উপজেলার দত্তবাড়ি এলাকায় তাদের বাড়ি। তার বাবা ইসকনের অনুসারী, তাই রথযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি তার বাবার খোঁজ নিয়েছিলেন। জানতে পারেন চন্দন আহত হয়ে শহীদ জিয়া মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সেখানে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বাবাকে নিয়ে ঢাকা এসেছেন পরাগ।
রঞ্জন চন্দ্র পালের মেয়ে রাখি পাল জানান, তার বাবা রথযাত্রার পেছনে ছিলেন। মা ও ছোট দুই বোন ছিলেন সামনে। রথের ওপরের অংশ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে সংস্পর্শ হলে রথ ধরে থাকা তার বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো দেশেই চিকিৎসা নেন। আপনারা মাননীয় সংসদ সদস্যরা যার যার এলাকার স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি নিয়মিত চেকআপ করান, চিকিৎসা নেন, তাহলে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যাবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাবে না।’
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগী যেন উপযুক্ত চিকিৎসা পায় সেটি দেখা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমনি ডাক্তাররাও যেন চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পান, সেটি দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা আমার। একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা (নারী) ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তার জন্য আমি কাজ করছি।’
চিকিৎসকদের যেখানে পদায়ন করা হবে, সেখানে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যার যেখানে পোস্টিং, সেখানেই তাকে চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায়, তাকে বলবেন চাকরি ছেড়ে দিতে। সুতরাং যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চান, এটি দুঃখজনক। সবাই যদি ঢাকায় যেতে চান তাহলে চট্টগ্রাম চলবে কেমন করে?’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালে অভিযান নিয়ে মন্ত্রীর ব্যাখ্যা
দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি, ঢাকায় দুই দিনের বেশি থাকব না। সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখব। সাংবাদিক ভাইয়েরা লেখেন, আমি না কি অভিযান চালাই। আমি অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। অভিযান তো হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, আসামিদের বিরুদ্ধে। আমি কার বিরুদ্ধে অভিযান চালাব? প্রত্যেকটা রোগী সুচিকিৎসা পাচ্ছে কি না, ডাক্তাররা কীভাবে কাজ করছে, তারা সুরক্ষিত আছে কি না সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই।’
হাসপাতালে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে মন্ত্রীর অনুশোচনা
হাসপাতালে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে তথ্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল চট্টগ্রামে এসে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটা হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে তাহলে তারা রোগীকে কী সেবা দেবে? প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে, আমি তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদের সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন নষ্ট, সিটি স্ক্যান নষ্ট- এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য যা যা করা দরকার, আমি করব।’
‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি অনেক কষ্টে সময় বের করিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে।’
মতবিনিময়ের আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমেক হাসপাতালের ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ এবং কাজ শুরুর জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।
শিগগিরই শুরু হচ্ছে বার্ন ইউনিটের কাজ
সভায় বার্ন ইউনিট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটি যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে, আর কোনো সমস্যা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন, তিনি দেশে ফিরলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজটা করানোর ইচ্ছে আছে আমার। এ মাসেই কিংবা যত দ্রুত সম্ভব এটা করানোর চেষ্টা করব। চীনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে তারা ভবন নির্মাণের কাজটা শেষ করবে। জনবল-যন্ত্রপাতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি যেভাবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এক দিনে পুরোপুরি চালু করতে পেরেছিলাম, এক্ষেত্রেও আমার টার্গেট সেটিই।’
অভিযোগের সত্যতা পেলেন না মন্ত্রী
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যান হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে তিনি নিজের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দৃশ্যত সেগুলোর প্রমাণ পাননি।
মন্ত্রী আসার খবরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যায়। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। যদিও এর আগে রোগী ও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয়রা দাবি করেন, হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত সেবাও মেলে না।
পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওভারঅল এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমি খুশি মোটামুটি। ১০১টা নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। আমার মনে হয় এটা একটা ভালো উদাহরণ। এ উদাহরণ যদি সারা দেশে করতে পারি, তাহলে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভালো উন্নতি হবে।’
‘এখন থেকে আমি পুরো দেশ ঘুরব। মন্ত্রী হিসেবে তো আমার কিছু কাজ আছে, যখনই ফাঁক পাব, আমি বেরিয়ে পড়ব। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়, তাহলে ঢাকা শহরে ভিড় হবে না, চট্টগ্রাম শহরেও ভিড় হবে না। এখানে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) দেখলাম এত রোগীর মধ্যে মাত্র ছয়জন ডাক্তার। আমি এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এ হাসপাতালকে এক শ শয্যায় উন্নীত করার চেষ্টা করব।’
‘আমার টার্গেট সবকিছু দেখা, শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয়, সরকারি হাসপাতালও দেখা। আমি মন্ত্রী, আমার কাজ হচ্ছে সারা দেশের মানুষের জন্য। সরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব, বেসরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব। মানুষ যেন ভালো চিকিৎসা পায়, সেজন্য আমি মাঠে নেমেছি। এ কার্যক্রম আমি চালিয়ে যাব। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা- সবখানে আমি যাব।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপন করা হচ্ছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। আগামী দুই মাসের মধ্যে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। চীনের অর্থায়নে নির্মিত হতে যাওয়া বিশেষায়িত ইউনিটটির চলতি মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার (৬ জুলাই) প্রস্তাবিত হাসপাতালের গোয়াছিবাগান এলাকা পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। প্রকল্পটি নিয়ে কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী এই মাসেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন। সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এ ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা।
ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি। দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ একটি প্রতিশ্রুতি যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট শিশু যাদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে ‘ভিশন ২০৪১’ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে।”
ঢাকার মহাখালীতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আইসিডিডিআর,বি সাসাকাওয়া অডিটরিয়ামে আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ কর্মসূচি’ শীর্ষক সেমিনারে ডা. সামন্ত লাল সেন এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিডিডিআর,বি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত এমন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা দেশের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আইসিডিডিআর,বি গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার, আইসিডিডিআরবি,র চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইউনিট এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে একত্রিত হয়ে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
একই সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুধবার (৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীকে বলছিলাম, আমি শুধু সোমবার আর মঙ্গলবার ঢাকা থাকব আর বাকি কয়দিন সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিদর্শন করব। আমি যদি উপজেলা, জেলা কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতাল এগুলোকে উন্নত করতে পারি, আমার রোগীর ওখানে যথাযথ চিকিৎসা হয় তাহলে ঢাকা শহরে রোগীদের ভিড় হবে না। সাধারণ মানুষের যাতে উপকার হয় সে লক্ষে কাজ করতে হবে। আইসিডিডিআর,বি তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তারা প্রশংসনীয়ভাবে গ্রামেগঞ্জে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিশুদের বিকাশ, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও সুন্দর করে আমরা যদি তাদেরকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা এগিয়ে যাব।’
আইসিডিডিআরবি,র প্রধান নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ।
ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি)- এর সিএসও কনস্টিওন্সি স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। গত ১ জুন ২০২৪ থেকে আগামি দুই বছরের জন্য তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা 'স্বাস্থ্য বাতায়নের' প্রধান নির্বাহী।
গত ২৪ মার্চ কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক সভায় GAVI Civil Society Organization (CSO) Steering Committee তাদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে। GAVI CSO Steering Committee বাংলাদেশের ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই প্রথম। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিস লিজা বেরি। এই সভায় GAVI CSO Steering Committee-র সদস্যরা, জেনেভা থেকে আগত GAVI সেক্রেটারিয়েট দল উপস্থিত ছিলেন।
এই সভার মূল লক্ষ্য ছিল, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করণের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে জোরদার করা, গ্যাভির ভবিষ্যত কর্মকৌশল ৬.০ সম্পর্কিত আপডেট, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনদের জন্য তহবিল প্রাপ্তির পদ্ধতি এবং প্রতিটি দেশে টিকাদান কর্মসূচি প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণ।
ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে আসছেন। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ, কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, তামাক নিয়ন্ত্রণে পলিসি অ্যাডভোকেসি এবং করোনা প্রতিরোধসহ টেলিহেলথ সেবা বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি নীতিনির্ধারণী, কর্মসূচি বাবস্থাপনা ও মাঠপর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও সিএসওদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি)’র সিএসও কমিটির চেয়ার হিসেবে তার এ নিয়োগ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি জনস্বাস্থ্য এবং টিকা উন্নয়নে অবদান রাখবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ওষুধের গুণগতমান নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধের অব্যাহত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। মন্ত্রী আজ বুধবার সকালে নগরীর পাঁচ তারকা এক হোটেলে সাউথ ইস্ট এশিয়া রেগুলেটরি নেটওয়ার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রেগুলেটরি নেটওয়ার্ক (এসইএআরএন) হচ্ছে ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জাতীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
অনুষ্ঠানে ডা. সামন্ত লাল সেন আরো বলেন, সাউথ ইস্ট এশিয়া রেগুলেটরি নেটওয়ার্কের সমাবেশে বক্তব্য দেয়াটা আমার জন্য সম্মানের। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর এই সমাবেশ আমাদেরকে একত্রিত করে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং আমাদের অঞ্চলে ওষুধের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করার জন্য একটি মূল্যবান সুযোগ এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন ‘আমরা সবাই জানি, ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং গুণগতমান নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। এই প্রচেষ্টায় যে সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হই, তার মধ্যে রয়েছে নি¤œমানের এবং ভেজাল ওষুধের অব্যাহত ঝুঁকি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সাউথ ইস্ট এশিয়া রেগুলেটরি নেটওয়ার্কে কাজ করার মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পারি। এই জন্য আমরা আমাদের যৌথ দক্ষতা, সম্পদ এবং সর্বোত্তম অনুশীলনকে কাজে লাগাতে পারি। তথ্য আদান-প্রদান, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. আহমেদুল কবীর বক্তৃতা করেন।
এতে সদস্য দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুরের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সব সরকারি হাসপাতালের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেবা দেওয়া এবং সরকারি হাসপাতালে সবকিছু বিনামূল্যেই হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। শনিবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট কর্তৃক আয়োজিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) সেবা উদ্বোধনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমার মনে হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিতে সমন্বয়ের দরকার। আমরা যদি একই লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন দিক থেকে কাজ করি তাহলে ফলাফল ভালো হয় না।’ ‘আপনারা প্রান্তিক পর্যায়ে জনগোষ্ঠীকে সেবা দেন। এক্ষেত্রে আপনারা যদি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় করে কার কি লাগবে এটার ভিত্তিতে কাজ করেন। সেটা অধিকতর ফলপ্রসূ হবে বলে আমার বিশ্বাস’- যোগ করে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসএসকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারি হাসপাতাল যেসব সুযোগ-সুবিধা নাই সেগুলো পূরণ করা। এক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে আলাপ আলোচনা করে আয়ুষ্মান ভারতের আদলে এ কর্মসূচিকে তিনি এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি উদ্বোধনসহ সর্বমোট আটটি থানা উপজেলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসএসকে সেবা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র পরিবার বিনামূল্যে ১১০টি রোগের চিকিৎসাসহ সামাজিক বিমার আওতায় আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ, ইনডোর বিভাগ, আউটডোর বিভাগ, এনসিডিসি কর্নারসহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালের ডাক্তার, রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘আশা করি স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন এই দপ্তর ও সংস্থাগুলো আস্থা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করবে। আমার তদারকি ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- কথা কম, কাজ বেশি।’
সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোর সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। চিকিৎসায় কোনো ধরনের অবহেলা সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন আটটি প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পাঁচটি দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে নিজ নিজ বিভাগের সচিবরা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরকারী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আটটি প্রতিষ্ঠানের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, ন্যাশনাল ইলেক্ট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউএন্ডটিসি), ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেইন্যান্স অর্গানাইজেশন (টেমো)।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান চুক্তি সই করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নার্সিং ও মিডওয়াফারি অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি নিয়ে অনুষ্ঠিত পৃথক এ দুটি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান।
২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা দূর করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, জ্ঞান, কৌশল এবং সম্মিলিত ইচ্ছাকে এক সঙ্গে কাজে লাগিয়ে এই লক্ষ্যকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব।
আজ রোববার সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ফোরামের যক্ষ্মার অবসান ঘটাতে ‘মাল্টিসেক্টরাল এবং মাল্টিস্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা এবং জবাবদিহিতার অগ্রগতি’ শীর্ষক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. সায়মা ওয়াজেদ ভিডিও বার্তায় যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে বক্তব্য দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যক্ষ্মা এমন একটা ব্যাধি যা শুধু আমাদের দেশ নয়, বৃহত্তরভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করছে। যক্ষ্মা যা আমরা টিবি হিসেবে জানি দীর্ঘকাল ধরে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের লড়াইয়ে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এই রোগের প্রভাব দূরদূরান্তে পৌঁছায়, বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটি ৬ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে টিবি বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতারা যক্ষ্মা প্রতিরোধের বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা এগিয়ে নিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যক্ষ্মা রোগ দূরীকরণে মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্যসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর টি. কাসিভা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা প্রমুখ।
রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন। আজ শনিবার সকালে সারা দেশের সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ দেশের সমগ্র স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ রাখার পাশাপাশি কোনও অবস্থাতেই যেন অ্যান্টিভেনমের স্টক খালি না থাকে, সেই নির্দেশনাও দেন। এসময় তিনি দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে সর্পদংশন ও রাসেলস ভাইপার নিয়ে কথা বলেন এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি জনগণকে বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের যে অ্যান্টিভেনম সেটা আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আমি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি কোনও অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি থাকা যাবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সর্পদংশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
ডা. সামন্ত লাল সেন এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য প্রচার প্রচারণার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সর্পদংশনের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি। রোগীকে হাসপাতালে আনতে যাতে দেরি না হয় সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভায় সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিজ নিজ এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দেন।
সভায় স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ডা. রুবেদ আমিনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।