একুশ শতকে মানবসভ্যতার প্রধানতম শত্রুদের একটির নাম ক্যানসার। এই মরণব্যাধির প্রতিরোধ ও চিকিৎসা এখন স্বাস্থ্য খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারের রোগীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লাখ ক্যানসারের রোগী রয়েছেন। প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং দেড় লাখ রোগী প্রাণ হারান। সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যানসার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মূল কারণ। ক্যানসার সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য জেনে নিন-
ক্যানসার কী?
ক্যানসার এক ধরনের অসংক্রামক ব্যাধি। এতে আক্রান্ত রোগীর শরীরে অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটে থাকে। আমাদের শরীরে কোষ বিভাজনের উদ্দেশ্য হলো মাতৃকোষ থেকে নতুন কোষ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত হয়। শরীরে একদিকে যেমন কোষ বিভাজনের ব্যবস্থা রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে সেই কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখারও বন্দোবস্ত। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিলে শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন হতে থাকে। তখন শরীরে নানা ধরনের যে প্রতিক্রিয়া ও শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়; সেটিই ক্যানসার বা কর্কট রোগ।
ক্যানসার কি কোনো একক রোগ?
অনেকেই ক্যানসার বলতে বিশেষ একটি রোগ মনে করলেও এটি কোনো একক রোগ নয়, বরং সমষ্টিগত রোগের একক সাধারণ নাম। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষে ক্যানসার হতে পারে। একেক রকম ক্যানসারের ধরন, কারণ ও উপসর্গ একেক রকমের হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি, চিকিৎসা, রোগের ভয়াবহতা ও পরিণতিও ভিন্ন ভিন্ন।
বাংলাদেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস, প্রস্টেট, মুখগহ্বর, মলাশয়সংক্রান্ত বা কলোরেক্টাল, পাকস্থলী ও লিভার ক্যানসারের হার বেশি। আর নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখ, স্তন, মুখগহ্বর ও থাইরয়েডের ক্যানসার বেশি হয়ে থাকে। ক্যানসারের ভয়াবহতা নির্ভর করে এর ধরন এবং কতটুকু ছড়িয়েছে তার ওপর।
ক্যানসার কেন হয়?
ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু বিষয়কে ক্যানসারের সম্ভাব্য কারণ বা ফ্যাক্টর বলে ধরে নেয়া হয়। এগুলোকে ক্যানসারের উদ্দীপকও বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসারের উদ্দীপককে বলে কারসিনোজেন। এসবের মধ্যে রয়েছে রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও অতিবেগুণি রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেট রে। আরও আছে কৃত্রিম রং, কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, বেনজিনজাতীয় রাসায়নিক উপাদান, এসবেসটস, কীটনাশক, বায়ুদূষণ, আফ্লাটক্সিন ইত্যাদি। কিছু জীবাণু যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, হার্পিস ভাইরাস, এইচআইভি, এইচ পাইলরি ইত্যাদিও ক্যানসারের জন্য দায়ী। পাশাপাশি তামাক, অ্যালকোহল, ভেজাল খাবার ও খাবারের প্রিজারভেটিভ এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, অস্বাস্থ্যকর ও ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার (যেমন ফাস্টফুড) থেকেও ক্যানসার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক পরিশ্রমবিমুখ জীবনযাপনকেও ক্যানসারের জন্য দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।
লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ কী কী?
যেহেতু ক্যানসার কোনো একক রোগ নয় তাই এর লক্ষণও বিভিন্ন ক্যানসারভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সামষ্টিকভাবে কিছু লক্ষণকে ক্যানসারের সাধারণ বিপদসংকেত হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সেগুলো হলো-
কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই হঠাৎ শরীরের ওজন কমতে শুরু করা, রক্তস্বল্পতা ও ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক দুর্বলতা। মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া। যেমন- কিছুদিন ডায়রিয়া, আবার কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্য। বেশ কিছুদিন ধরে (দুই সপ্তাহের বেশি) জ্বর হয়েছে, কিন্তু সেটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসায় সারছে না। খুসখুসে কাশি হয়েছে অথচ পুরোপুরি সারছে না। শরীরের কোথাও কোনো পিণ্ড বা চাকার উপস্থিতি অনুভব হচ্ছে। ভাঙা কণ্ঠস্বর যা কোনো চিকিৎসায় ঠিক হচ্ছে না। শরীরের একাধিক স্থানে তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন। শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওপরের লক্ষণগুলো সতর্কসংকেত মাত্র। তবে এসব লক্ষণ থাকলেই ক্যানসার- এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
প্রতিরোধের উপায়
ক্যানসার প্রতিরোধে কিছু অভ্যাস রপ্ত করে নিতে হবে। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রম ও পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যাবশ্যক। নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত যৌন অভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল ও বিভিন্ন ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। অধিক ক্যালরি, ফ্যাটযুক্ত খাবার, ধূমপান, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়ম অনুযায়ী ক্যানসার স্ক্রিনিং এবং হেপাটাইটিসের টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে। সময়মতো এবং বিপদসংকেত দেখামাত্র দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
চিকিৎসায় যত বাধা
ক্যানসার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় বাধা হলো সঠিক সময়ে রোগটি নির্ণয় না হওয়া। ক্যানসার যদি বেশি ছড়িয়ে পড়ে, চিকিৎসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। চিকিৎসা সম্পর্কে অহেতুক ভীতি ও সচেতনতার অভাবও একটি বড় সমস্যা।
ক্যানসারের চিকিৎসা মূলত সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। প্রায় সব ধরনের ক্যানসারেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই চিকিৎসাগুলো দেয়া হয়। কখনো একটি, কখনো একাধিক চিকিৎসা পালা করে চলে। তবে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা করতে হয়। এসব চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি। আর চিকিৎসার খরচও সাধারণ চিকিৎসার চেয়ে বেশি। চিকিৎসার এই উচ্চব্যয় ছাড়াও অপচিকিৎসার দৌরাত্ম্য ক্যানসারের রোগীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যানসার পুরোপুরি সারে না, এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- শুরুতেই যদি ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় রোগটি সেরে যায়।
আমরা করব জয়
বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ মারা যান নানা ধরনের ক্যানসারে। প্রতিরোধব্যবস্থা না নিলে এটি দ্বিগুণ হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। প্রতিবছর বিশ্বে ক্যানসারে যত মানুষ মারা যান তার এক-তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পৃথিবীতে তামাক না থাকলে ৭১ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার এবং ২২ শতাংশ অন্যান্য ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। তাই প্রতিরোধই হওয়া উচিত ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রধান পদক্ষেপ।
সঙ্গে ক্যানসারের চিকিৎসায় মনোবল ধরে রাখা খুব জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বলে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাই ক্যানসার রোগীকে মানসিক সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। প্রতিরোধ ও শুরুতেই ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।
রাষ্ট্র, সংস্থা ও ব্যক্তির উদ্যোগই পারে ক্যানসারের চিকিৎসাসেবার বৈষম্য দূর করতে। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে বিশ্ব ক্যানসার সম্মেলনে দিনটিকে বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে নানা আয়োজনে। এ বছর ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য: ক্যানসার পরিচর্যায় বৈষম্য দূর করি। ২০২২ সাল থেকে তিন বছরের জন্য এই প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২৭৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সঙ্গে এই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন এবং রংপুর বিভাগে ৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত একদিনে সারাদেশে ৩০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৯ হাজার ৬৩৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২০ হাজার ৯৮০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় ও পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন সতর্ক করা হয়েছে।
তবে স্থূলতা, মদ্যপান ও হেপাটাইটিসের মতো প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকিগুলোর বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিলে অনেক ক্ষেত্রেই এ রোগ এড়ানো সম্ভব।
প্যারিস থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লিভার ক্যান্সারে প্রতি বছর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৭০ হাজার হলেও ২০৫০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ লাখ ২০ হাজারে। রোগটির অবস্থান এখন ক্যান্সারের মধ্যে ষষ্ঠ।
তবে মৃত্যু হারের দিক থেকে এটি তৃতীয়। গবেষণা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই ক্যান্সারে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণ যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার ক্যান্সারের প্রতি পাঁচটি রোগীর মধ্যে তিনজনই চাইলেই এই রোগ থেকে বাঁচতে পারেন। মূল ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস এবং ‘এমএএসএলডি’ (মেটাবলিক ডিসফাংশন অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়াটোটিক লিভার ডিজিজ) নামের এক রোগ। এই রোগে ওজন বাড়ার কারণে লিভারে চর্বি জমা হয়। পূর্বে এটিকে ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ নামে ডাকা হতো।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে (২৮ জুলাই) প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সালেও হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে থাকবে। জন্মের পরপর টিকা দেওয়া হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর হলেও সাব-সাহারা আফ্রিকাসহ অনেক নিম্নআয়ের দেশে এখনও টিকাদানের হার খুবই কম।
গবেষকদের আশঙ্কা, টিকাদানের হার না বাড়লে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস বি-তে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
অন্যদিকে, ২০৫০ সাল নাগাদ লিভার ক্যান্সারের ২১ শতাংশ কারণ হবে মদ্যপান, যা ২০২২ সালের তুলনায় দুই শতাংশের বেশি। এছাড়া, ওজন বাড়ার কারণে লিভারে জমে থাকা চর্বি থেকে সৃষ্ট ক্যান্সারের হার বেড়ে ১১ শতাংশে পৌঁছাবে। যা এখনকার চেয়ে দুই শতাংশ বেশি।
গবেষণাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে এখনই লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা স্থূলতা বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ায় এ বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
'সারা পৃথিবীতে ৩০ কোটির বেশি মানুষ 'হেপাটাইটিস বি ও সি‘তে আক্রান্ত। পৃথিবীতে ১৩ লাখ মানুষ প্রতিবছর 'হেপাটাইটিস বি'তে মারা যাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি। আগে বাংলাদেশের প্রতি ১২ জনে একজন আক্রান্ত ছিলেন। বর্তমানে তা কিছুটা কমেছে। তবে ৯০ শতাংশ 'হেপাটাইটিস বি' রোগী ব্যক্তি জানেন না তিনি আক্রান্ত। চিকিৎসা হাতের নাগালে। অনেকে সঠিকভাবে স্ক্রিনিং করছেন না। আবার সচেতনতার অভাবে কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন না। সমাজে কুসংস্কার থাকায় মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। এই কুসংস্কার ভেঙে দিতে হবে।'
সোমবার (২৮ জুলাই) কুমিল্লায় বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কুমিল্লা লিভার ক্লাব ও রোটারি ক্লাব অব লালমাইয়ের আয়োজনে কুমিল্লা লিভার ক্লাবে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা ও স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এর আগে একটি র্যালি নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
কুমিল্লা লিভার ক্লাবের সহ-সভাপতি লুৎফুর বারী চৌধুরী হিরুর সঞ্চালনায় ও সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইজাজুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী রোটারিয়ান দিলনাঁশি মহসিন, রোটারিয়ান ডা. তৃপ্তিশ চন্দ্র ঘোষ, রোটারি ক্লাব অব লালমাইয়ের সভাপতি এনামুল হক জুয়েল, রোটারিয়ান জাকির হোসেন, সাংবাদিক খায়রুল আহসান মানিক, রোটারিয়ান শফিকুল ইসলাম শামিম প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৪ জন রোগী।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ৬০ জন।
বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৪ জন।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪০ জন। ঢাকা বাদে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৪ জন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৮ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী এবং ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এ বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে একজনের। আর সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩১৯ জন রোগী।
বুধবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯০ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২২৯ জন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৮ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কারো মৃত্যু হয়নি।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। বুধবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন। পাশাপাশি মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত, দেশে ২০ লাখ ৫২ হাজার ২৫৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর সারা দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২৭ জনে ঠেকেছে।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ শনিবার (১৯ জুলাই) বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ডিএসসিসি অঞ্চল-৬ এর ৭৪ নং ও ৭৫ নং ওয়ার্ডে (নন্দীপাড়া-নাসিরাবাদ এলাকা) পরিচালিত এ অভিযানে কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া এঁর উপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থানা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ছয় শতাধিক কর্মী এবং স্থানীয় জনগণ এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে ড্রেন, নর্দমা ও ফুটপাতের ময়লা পরিষ্কার ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিডি ক্লিন সদস্যদের অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, "আমরা যদি নিজ আঙিনা পরিষ্কার রাখি, যত্রতত্র ময়লা না ফেলি তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কাজ সহজ হয়ে যায়।" জনগণের অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নগর ও দেশ গড়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, " আমরা সম্মানিত নাগরিকদের দুয়ারে দুয়ারে এসেছি স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে ।" তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনগণ অংশগ্রহণ করলেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সফল হবে। এছাড়া নবগঠিত ওয়ার্ড সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গৃহীত হবে বলে প্রশাসক জানান।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা দিনে দিনে বাড়ছে। রবিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় একজন ও চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৩০ জন রোগী।
সোমবার (১৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে বিভাগটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮৬ জন। বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩০ জন।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭১ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৫৯ জন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৫ হাজার ২১০ জন। এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কারো মৃত্যু হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পাশাপাশি মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৫২ হাজার ২২০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর সারা দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২৪ জনে ঠেকেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন রোগী।
শুক্রবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ৬০ জন।
বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫ জন। ঢাকা বাদে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১৩ জন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী এবং ৫৯ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ।
দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে এই রোগে এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৭ জন।
এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় গত ৭ জুন। সেদিন ৪৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ডেঙ্গু নিয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলছে, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন ঢাকায়; আরেকজন চট্টগ্রাম বিভাগের।
মশাবাহিত এ রোগে চলতি মাসে মৃত্যু হলো ১২ জনের। ১৯ জনের প্রাণ গেছে আগের মাসে। এছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন ও মে মাসে ৩ জন ডেঙ্গুতে মারা যান। ফেব্রুয়ারি মাসে কারো মৃত্যুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৃষ্টি মৌসুমগুলোতে ভারী বর্ষণের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয় বন্যা। আর বন্যা মানেই নানা ধরণের কীট-পতঙ্গের পাশাপাশি শুরু হয় সাপের উপদ্রব। এমনকি এই চিত্র কেবল গ্রামেরই নয়, শহরাঞ্চলগুলোরও একই অবস্থা। এছাড়া যারা বর্ষার সময় বনে বা পাহাড়ে ঘুরতে যান তাদেরও প্রায় সময় সাপের কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে দেশ জুড়ে সাপে কাটার ঘটনা আশঙ্কাজনক মাত্রায় রয়েছে। সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার হলো- সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। তাই চলুন, সাপে কামড়ালে কি করণীয় এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
সাপে কাটলে কি করা উচিত
সাপে কাটা ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণরক্ষার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:
- সাপে কামড়ানো ব্যক্তি প্রায় ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে এই মানসিক অবস্থা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় দূর করে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে। বিশেষত নির্বিষ সাপের দংশনে মৃত্যু হয় না। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এগুলো অধিকাংশ সময় শিকারের শরীরে পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।
- ব্যক্তির আক্রান্ত অঙ্গকে অবশ্যই স্থির করে রাখতে হবে। খুব বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। হাঁটাচলা বা অধিক ঝাঁকুনির সম্মুখীন না করে স্থির ভাবে আধশোয়া অবস্থায় রাখা উত্তম।
- ক্ষতস্থানে একটু চাপ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ বেধে দিতে হবে। এই প্রাথমিক চিকিৎসাটি প্রেসার ইমোবিলাইজেশন নামে পরিচিত। ব্যান্ডেজের বদলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রোগী শ্বাস না নিলে অবিলম্বে তার মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান দিয়ে ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে হাল্কা ভাবে মুছে নিতে হবে।
পড়নে অলঙ্কার বা ঘড়ি কিংবা তাগা, তাবিজ থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। নতুনবা এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
সাপে কামড়ালে যে ভুলগুলো করা উচিত নয়
- সাপে কাটা ব্যক্তিকে ওঝার কাছে নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।
- আক্রান্ত অঙ্গে কোনও ধরণের ভেষজ ওষুধ, উদ্ভিদের বীজ, লালা, গোবর, কাদা, বা পাথর লাগানো যাবে না।
- অনেকেই মনে করে থাকেন যে, আক্রান্ত স্থানে মুখ দিয়ে টেনে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সাপের বিষ আসলে লসিকা ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, যা এই পদ্ধতিতে বের করা অসম্ভব। এছাড়া আক্রান্ত স্থানে যিনি মুখ দিচ্ছেন, তার জন্যও বিষয়টি ক্ষতিকর।
- কামড়ানোর স্থানে অনেকে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে বাঁধেন। কিন্তু এমনটি একদমি উচিত নয়। বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কামড়ানোর স্থান থেকে কিছুটা ওপরের দিকে শক্ত করে বাঁধা হয়। মূলত এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এতে বরং উল্টো রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সঠিক রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন বা নেক্রোসিস-এর উপক্রম হতে পারে।
- দংশনের স্থানে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেওয়া যাবে না। বিষ বের করার জন্য অনেকে এমনটি করেন। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- ব্যথা দূর করতে মোটেই অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
- কোনও ধরণের রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দেওয়া ঠিক নয়।
- অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার বা ঢোক গিলতে কিংবা কথা বলতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি নাসিক কণ্ঠস্বর, বমি, বা অতিরিক্ত লালা নিঃসরণের মত ঘটনা ঘটে। এগুলোর প্রতিকার হিসেবে তাকে কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা হয়। এই কাজটি একদমি অনুচিত।
শেষাংশ
সাপে কাটা ব্যক্তিকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে এই করণীয়গুলো যথেষ্ট কার্যকর। সাপের বিষ বের করার বা দংশনের ব্যথা উপশমে বিভিন্ন ভুল ধারণাগুলো সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এগুলো পরিহার করে ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আক্রান্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া না করা এবং অতিরিক্ত চাপ প্রশমনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে দংশিত স্থান জীবাণুমুক্ত করা একটি উৎকৃষ্ট উপায়। সর্বপরি, চিকিৎসা সংক্রান্ত এই প্রাথমিক জ্ঞান যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার আত্মবিঃশ্বাস যোগায়।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের পুনর্বাসনে নতুন যুগের সূচনা করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থাপিত দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সীমিত পরিসরে পাইলট প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।
চীনের কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটি উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে মিলবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন সেবা। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের সরকার এই প্রকল্পে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের রোবটিক যন্ত্রপাতি অনুদান দিয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে এই সেন্টারটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে ওঠবে।
এই সেন্টারে রয়েছে মোট ৬২টি রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক। এসব রোবটের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব।
বিএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেন্টারটি চালুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে চীনের ৭ সদস্যের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করলে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেন্টারটি পুরোদমে চালু করা হবে।
এই রোবটিক সেন্টার যেসব রোগীরা স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুবিক বৈকল্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, নার্ভ ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা বা শরীরের অঙ্গের দুর্বলতাসহ জটিল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাদের উপকারে আসবে।
বিশেষ করে জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন এবং এখনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই সেন্টারে বিনা মূল্যে রোবটিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।
সেন্টারটি শুধু বিশেষ উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পরিকল্পিত নীতিমালার আলোকে সাধারণ রোগীদের জন্যও ধাপে ধাপে সেবা উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে চেষ্টা থাকবে চিকিৎসার ব্যয় রোগীদের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে রাখার।
এই সেন্টার চালু হলে বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পুনর্বাসন চিকিৎসায় এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে ওঠবে।