বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

ঘুমের মধ্যেও হতে পারে হার্ট অ্যাটাক

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড
১২ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫০
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
প্রকাশিত
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

সাধারণ ধারণা হার্ট অ্যাটাক হয় খুব ভোরে। তবে হার্ট অ্যাটাক যে ঘুমের মধ্যেও হতে পারে তাও জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি নতুন এবং ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে হার্ট অ্যাটাক বেড়ে গেছে তরুণদের মধ্যে।

সাধারণত যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, হার্ট অ্যাটাকের পারিবারিক ইতিহাস আছে এবং কিছুটা মোটা, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি।

কীভাবে হয় হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হলো হৃৎপিণ্ডে রক্তের জোগান দেয়া করোনারি ধমনির ভেতরে প্লাক বা চর্বি জমা। এটা একসময় ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়, আর রক্তের জমাট পিণ্ডের কারণে ধমনির পথে রক্ত চলাচল কমে বা বন্ধ হয়। একেই বলা হয় হার্ট অ্যাটাক।

ঘুমের মধ্যে কেন?

আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের সব পেশি শিথিল হয়, এমনকি গলা আর ঘাড়ের পেশিও। ঘাড়ে পেশির বাহুল্য থাকলে চাপ ফেলে বায়ু পথের ওপর। আর তখনই একে ধসিয়ে দেয়। বায়ু পথ ধসে গেলে বাতাস যে পথ দিয়ে ফুসফুসে যাবে, তা সরু হয়ে যায়। তাই বাতাসের চলাচল অবাধ না হওয়ায় একে কষ্ট করে ধাবিত হতে হয়। তখন ভীষণ নাক ডাকে আর ঘুমের সময় সাময়িক শ্বাস রোধ হয়। প্রতি রাতে এমনটি কয়েকশবারও হতে পারে। আর তাই শরীরকে প্রতি রাতে অনবরত অক্সিজেন ঘাটতির ঝক্কি পোহাতে হয়।

ঘুমের সময় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হলো ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ ডিসপিনিয়া’। সাধারণত রাতে ঘুমের সময় রক্তচাপ নেমে যায়। কিন্তু স্লিপ ডিসপিনিয়া থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতিবার অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রক্তচাপ বাড়ে আর এড্রিনালিন হরমোনের উত্থান হয়। এতে হার্টের ওপর খুব চাপ পড়ে। কারণ রক্তের চাপ স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে হৃৎপিণ্ডকে কঠোর শ্রম দিতে হয়। আর এই উচ্চ রক্তচাপের পরিণতিতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটে।

ঘুমের অনিয়মিত সূচিও হার্ট অ্যাটাকের একটি কারণ। দুই-এক দিন ঘুম কম হতে পারে, কিন্তু অনবরত নির্ঘুম, অনিদ্রা এসব ভালো নয় হার্টের জন্য। তাই স্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল, ভালো ডায়েট ও পর্যাপ্ত ঘুম খুব দরকার।

আছে কিছু পরামর্শ

অনিদ্রার জন্য ডিপ ব্রিদিং, ইয়োগা, হাত-পা ছোড়া, মেডিটেশন অত্যন্ত উপকারী। সঙ্গে রয়েছে নিয়মিত শরীরচর্চা, নিজেকে সচল রাখা, নিয়মিত নিদ্রা সূচি, ঘুমের বৈকল্য থাকলে চিকিৎসা ও নিয়মিত রোদ পোহানো লাগবে। এ ছাড়া অ্যালকোহল, চর্বি ও চিনিজাতীয় খাবার পরিহার এবং চা-কফি পান কমিয়ে দিতে হবে। আর এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি বিষয় হলো দুশ্চিন্তা কমানো।

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।


সরকারি চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস শুরু ৩০ মার্চ

সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ মার্চ, ২০২৩ ১৭:০৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস আগামী ৩০ মার্চ থেকে শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, সরকারি চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস আগামী ৩০ মার্চ থেকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন: সেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা, বাড়তে পারে বৈষম্যও

প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলা হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হবে। কার্যক্রমের আওতায় বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা দেবেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, চিকিৎসকরা সপ্তাহে দুইদিন করে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আওতায় রোগী দেখবেন।

প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আওতায় রোগী দেখাতে অধ্যাপককে ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপককে ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপককে ৩০০ টাকা এবং অন্য চিকিৎসককে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।

এসব ফি থেকে অধ্যাপকরা ৪০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৩০০ টাকা সহকারী অধ্যাপক ২০০ টাকা এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা ১৫০ টাকা করে পাবেন। বাকি টাকা সার্ভিস চার্জ বাবদ কাটা হবে এবং চিকিৎসকদের সহায়তাকরীরা পাবেন।


যক্ষ্মা ভালো হয়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ডা. মো. নাজমুল হাসনাইন নওশাদ

প্রতি বছরের মতো এই বছর ২৪ মার্চ পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালের এই দিনে বিজ্ঞানী রবার্ট কচ যুগান্তকারী যক্ষ্মার জীবাণু মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন। এই দিনটি স্মরণ রেখে প্রাণঘাতী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পালন করতে যাচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে – ‘হ্যাঁ! আমরা টিবি শেষ করতে পারি!’

এখন পর্যন্ত ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে যক্ষ্মা বিশ্বের দশটি মৃত্যুজনিত কারণের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল টিউবারকুলোসিস রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২১ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তার ভেতর প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

কী এই যক্ষ্মা রোগ

যক্ষ্মা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগ। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে এই রোগ হলেও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ রক্ত প্রবাহের সঙ্গে মিশে ফুসফুসসহ শরীরে অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। মস্তিষ্ক, হাড়, হাড়ের সংযোগ, লসিকাগ্রন্থি, পরিপাকতন্ত্র, মূত্র ও প্রজননতন্ত্র, ত্বক ইত্যাদি স্থানে যক্ষ্মারোগ হতে পারে। শুরুর দিকে সঠিক চিকিৎসা না করালে যক্ষ্মার ফলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

যক্ষ্মা যেভাবে ছড়াতে পারে

শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। কোনো রোগীর কাশি, হাঁচি, থুতু ও বড় মুখ খুলে কথা বলার ফলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে যক্ষ্মা। এতে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর লালা, মিউকাস, থুতু মিশে থাকে। আবার সংক্রমিত পানি ও খাবার থেকেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কাজেই যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যক্ষ্মার কারণ

যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, এ ছাড়া শরীরের কোনো অংশ ট্রান্সপ্লান্টের পর যেসব ওষুধ খাওয়া হয়, তার কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে এবং ক্যানসার আক্রান্তদের যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস এবং অধিক ধূমপান, মাদকাসক্তি ও মদপান যক্ষ্মার আরেকটি কারণ।

লক্ষণ

৩ সপ্তাহের বেশি কাশি, বিশেষত কফযুক্ত কাশি। এই কাশিতে রক্তও উঠে আসতে পারে।

ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তি ও রাতের দিকে মাঝেমধ্যে ঘামসহ হালকা জ্বর হতে পারে।

এ ছাড়া শরীরের যে স্থানে যক্ষ্মা হয়েছে তার লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।

একসময় মনে করা হতো যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। সময়ের সঙ্গে যক্ষ্মা রোগের এখন যুগান্তকারী অনেক চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। নিয়মিত ওষুধ সেবনে যক্ষ্মা ভালো হয়। কাজেই অযথা ভয় বা আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সঠিক সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। বিশেষত ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা প্রতিরোধ এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সমাজের সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সবার মিলিত প্রয়াসই পারে যক্ষ্মা পরিস্থিতি উত্তরণের।

লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।


যক্ষ্মা নির্মূলে প্রধান বাধা রোগী শনাক্ত

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ২৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০২
জাকিয়া আহমেদ

বিশ্বের যে ৮ থেকে ১০ দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যক্ষ্মায় প্রতি ১২ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। সে হিসাবে দিনে মৃত্যু হচ্ছে ১০০ জনের। অথচ যক্ষ্মার চিকিৎসা রয়েছে দেশে। সরকার বিনা মূল্যে যক্ষ্মার ওষুধ দিচ্ছে। তার পরও এত মৃত্যুর নেপথ্য কারণ হলো, যক্ষ্মা নিয়ে মানুষের অসচেতনতা এবং রোগী শনাক্ত না হওয়া।

গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪২ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতি লাখে ২২১ জন নতুন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয় এবং প্রতি লাখে ২৪ জন মৃত্যুবরণ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-এল এবং এএসপি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখ যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ৪৫ জনের মৃত্যু হতো, সেখানে ২০২১ সালে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।

তবে এ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২১ সালে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজারের। অর্থাৎ প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মায় একজনের মৃত্যু হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুবাহিত এই রোগটি সাধারণত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশি আক্রমণ করে। সেই সঙ্গে দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি।

তাদের বক্তব্য, দেশে যক্ষ্মা নির্মূলে এখনো কিছু সংকট আর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। আবার দেশে এমন কিছু ‘হার্ড টু রিচ’ এলাকা রয়েছে, যেখানে এখনো স্বাস্থ্যসেবা ঠিকমতো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এসব কারণে রোগী শনাক্ত একটি কঠিন বিষয়। যার কারণে এখনো দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, একজন যক্ষ্মারোগী থেকে কমপক্ষে ছয়জনে রোগটি ছড়াতে পারে। তাই কোথাও একজন যক্ষ্মারোগী পাওয়া গেলে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত কমপক্ষে ছয়জনকেই পরীক্ষা করাতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ‘দেশ থেকে টিবি নির্মূল করতে চাই’ মন্তব্য করে বলেন, কিন্তু দিনকে দিন এর জটিলতা বাড়ছে। বিশেষ করে হাড়, অন্ত্র, জরায়ু এবং অস্ত্রোপচারস্থলে যক্ষ্মার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে বেশি, যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচারসংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই কিছুদিন আগেও যক্ষ্মা কেবল বড়দের রোগ হিসেবে চিহ্নিত হতো। ধারণা করা হতো শিশুরা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় না। কিন্তু শিশুরাও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পরিবারের বড়দের কাছ থেকেই এতে সংক্রমিত হচ্ছে।

যক্ষ্মা নির্মূলে কিছু ক্ষেত্রে এগোলেও শতভাগ রোগী শনাক্ত করতে না পারায় বাংলাদেশ এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশে ৭০ শতাংশ যক্ষ্মারোগী রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বেশ সফল হলেও কিছু ক্ষেত্রে এখনো কাজ করতে হবে।

যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, যক্ষ্মা একেবারে নির্মূল না করতে পারার পেছনে রোগী শনাক্ত না করতে পারা অন্যতম কারণ। কারণ, যক্ষ্মা হলে মানুষ তাকে প্রকাশ করতে চায় না। এর পেছনে রয়েছে কুসংস্কার এবং সামাজিক স্টিগমা।

একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে সমাজে একঘরে করার উদাহরণও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে যক্ষ্মার লক্ষণ থাকলেও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে রোগটি লুকিয়ে রাখে। এ কারণে রোগটি শতভাগ নির্মূল করা যাচ্ছে না।

যক্ষ্মা রোগ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী সংস্থা ইউএসএআইডি। ইউএসএআইডির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. সামিনা চৌধুরী। তিনি ১৮ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে সঠিক সময়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা নিতে পেরেছিলেন তিনি। সে কথা জানিয়ে ড. সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘আমার রোগটি সঠিক সময়ে শনাক্ত হয়েছিল বলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছি। এ জন্য রোগটি শনাক্তে জোর দিতে হবে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিন্তু একে নির্মূল করতে হবে।’

দেশে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক কাজ হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ মানুষ সচেতন যেমন নয়, তেমিন রোগীও ঠিকমতো শনাক্ত হচ্ছে না বলে দৈনিক বাংলাকে বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘সব রোগীকে স্ক্রিনিং বা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না দেশে। দেশের অনেক এলাকায় আমরা ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারছি না। আর রোগী শনাক্ত না করতে পারার কারণে তাদের চিকিৎসাও সম্ভব হচ্ছে না।’

ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কিছু সংকট রয়েছে, রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ। অনেক উপজেলায় যন্ত্রপাতি নেই, যন্ত্রপাতি খারাপ রয়েছে, এমনও আছে। সেসব জায়গায় যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছি আমরা। এসব সীমাবদ্ধতা যদি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করা অসম্ভব হবে না।’


রোজা রেখেও পরীক্ষা করা যাবে ডায়াবেটিস

আপডেটেড ২৩ মার্চ, ২০২৩ ১৯:০৩
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রেখেও রক্তের সুগার পরিমাপ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে প্রমাণিত এবং মুসলিম ধর্ম অনুসারে সেটা স্বীকৃতিও বলে জানিয়েছেন অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্টরা।

বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে ‘রমজানে ডায়বেটিস ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্বিক সহযোগিতায় ডিএমসি’র অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগ ও শিক্ষক সমিতি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চিকিৎসকদের নির্দেশনামূলক এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, এ বিষয়ে দেশের কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব ও মিশরের কায়রোতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইসলামী চিন্তাবিদদের মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তারা এর স্বপক্ষে ধর্মীয় যুক্তিগুলো উপস্থাপনের মাধ্যমে বলেছেন রক্তে সুগারের পরিমাণ পরিমাপ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধর্মীয় বাধা নেই। কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমসির অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্টরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, ডিএমসির অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম সাইফউদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা দেবেশ চন্দ্র তালুকদারসহ অন্যরা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রোজা রাখতে ডায়বেটিস রোগীদের কোনো বাধা নেই। রোজা রাখার কারণে যে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা হয় কিংবা যে ফাস্টিং হয়, তাতে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে এ ক্ষেত্রে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরিমাপ করার বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন চিকিৎসকরা।

গর্ভবতী নারীদের জন্য রমজানের নির্দেশনামূলক তথ্য জানিয়ে তারা বলেন, রোজা রেখে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় না খেয়ে থাকার কারণে ফিটাসের বা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে রোজা না রাখার পরামর্শ থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসকদের পরামর্শের মাধ্যমে এবং শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তারা। এ ক্ষেত্রে আধুনিক ইনসুলিন ব্যবহারের মাধ্যমে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন তারা।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, দেশের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ডিএমসির এন্ডোক্রাইনোলজিস্টরা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে দেশের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত হারে বেড়ে চলছে বলে চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণরূপে প্রদান করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

দেশের প্রায় দেড় কোটি বা প্রতি ১৫ জনের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশই জানে না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

বিষয়:

বাংলাদেশ এখন করোনামুক্ত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২২ মার্চ, ২০২৩ ২০:৩২
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বাংলাদেশ এখন করোনামুক্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবেও পরিচিত হয়ে বলে দাবি করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাংলাদেশ সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন করোনামুক্ত। টিকা প্রদান কার্যক্রমেও দেশের সফলতা রয়েছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে।’

বর্তমানে এখন আর করোনাতে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যাও কম।’

দেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষে তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে অসংক্রামক রোগ ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনির মতো রোগ বাড়ছে। এরজন্য দেশের আট বিভাগে ৮টি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে খরচ হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়াও রাজধানী ঢাকা ছাড়া বাকি ৭ বিভাগে বার্ন ইউনিট করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন চারজন। তাদের নিয়ে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলেন ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮২ জন। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। ফলে এ নিয়ে দেশে টানা ৩৭ দিন করোনায় মৃত্যুহীন।

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তর একজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৪৫ জন।

অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ০ দশমিক ২৭ শতাংশ আর এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে দেশে একদিনে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই রেকর্ড সংখ্যা ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর ২০২১ সালের পাঁচ ও ১০ আগস্ট একদিনে ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর আসে। যা কিনা দেশে মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।


‘প্রতিদিন যক্ষ্মায় ১০০ মানুষের মৃত্যু’

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ২২ মার্চ, ২০২৩ ১৯:২১
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ১০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি সচেতনতার অভাব এবং ট্যাবুকে (সামাজিক বেড়াজাল) দায়ী করেছেন।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আগামী ২৪ মার্চ বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা দিবস পালন করা হবে। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘ইয়েস, উই ক্যান এন্ড টিবি।’ বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে, ‘হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি।’

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ইউএসএআইডির অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি)।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘যক্ষ্মার ওষুধ এখন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। দেশের প্রায় উপজেলা, জেলা হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এবং ওষুধসহ সবকিছু বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও সচেতনতা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণের অভাবে প্রতিদিন দেশে প্রায় ১০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। আগে মনে করা হতো শিশুদের টিবি হয় না, কিন্তু এখন অনেক শিশুও এতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আগে ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’র বদলে এখন আমরা বলতে পারি, যক্ষ্মাকেও জয় করা যায়। তার জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী শনাক্ত করে তার চিকিৎসা শুরু করা।”

বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: দৈনিক বাংলা

বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষের শরীরে টিবি বা যক্ষ্মা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যক্ষ্মায় বছরে ১৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার প্রায় ৮০ শতাংশ আর সুস্থতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। তবে এখনো প্রায় ২০ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে থাকছে এবং তারা চিকিৎসার আওতায় আসছে না।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্বে আট থেকে দশ দেশের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী। সেই তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো বাংলাদেশও রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে ২০০২ সালে যেখানে প্রতি লাখে ৫৪ জনের মৃত্যু হতো সেখানে এখন মৃত্যু হচ্ছে ২৪ জনের। প্রতি বছর দেশে ২ লাখ ৯০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়, আর বছরে মারা যায় ৪০ হাজার।’

তবে সরকারের একার পক্ষে এই সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে মন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সবাই এগিয়ে এলে যক্ষ্মা নির্মূল আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই সম্ভব হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, ইউএসআইডির ইনফেকশাস ডিজিজ টিম লিডার ডা. শামীমা চৌধুরী, জাতীয় টিবি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকারসহ অন্যরা।


অবিলম্বে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগের দাবি

বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

স্থগিত করা ২০১৩ ও ২০২০ সালের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবিলম্বে শেষ করার দাবি জানিয়েছে বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএমটিএ)।

সোমবার অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধি সভায় বক্তারা বলেন, ২০০৮ সালের পর মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ না হওয়ায় রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে নিয়োগ না হওয়ার কারণে বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

এ পরিস্থিতির জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, ব্যর্থতা ও উদাসীনতাকে দায়ী করেন সংশ্লিস্টরা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ব্যতিক্রম কেবল মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বেলায়।

২০১৩ সালে স্থগিত করা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না থাকার পরও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট বলেও জানান বক্তারা। তারা বলছেন, ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। এরপর নানা অনিয়মের কারণে সে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। সম্প্রতি ওইসব পদে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করার দাবি জানিয়ে বিপিএসএমটিএর সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগের বারের মতো অনিয়ম হলে তা প্রতিহত করা হবে।

দেশের হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ঘাটতি ছিল। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আবার সামনে আসে। করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবরেটরি বাড়ানোর ফলে সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের দাবি জোরালো হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন।

সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৯ জুন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ৮৮৯টি, মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের ১৬৫০টি, কার্ডিওগ্রাফার পদে ১৫০টিসহ মোট ২৬৮৯টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তদর। পরে লিখিত পরীক্ষায় ২৩ হাজার ৫২২ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণের মধ্যে থেকে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় পরের বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেই নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ২৮০০ পদের সেই নিয়োগ বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ২০ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনার আলোকে ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নতুন এক অফিস নির্দেশনায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও কার্ডিওগ্রাফার পদে চলমান জনবল নিয়োগের কার্যক্রম বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অফিস আদেশে বলা হয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। এর আগে যারা আবেদন করেছেন, তাদের নতুনভাবে আবেদনের প্রয়োজন নেই। তারা নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পরে সে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।


করোনার পরের জটিলতা পুরুষের চেয়ে নারীর ৪ গুণ বেশি

মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২১ মার্চ, ২০২৩ ১৯:০১
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর ‍পুরুষের তুলনায় নারীর জটিলতা দেড় থেকে চার গুণ বেশি। অপরদিকে, যারা করোনাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের জটিলতা হাসপাতালে যাদের ভর্তি হতে হয়নি তাদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। সেইসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকিতে থাকতে হয়েছে।

মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যৌথভাবে ‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনারে এক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য জানায়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসের ফলো-আপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়ায় প্রকাশিত হয়। এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা যেখানে দেখা যায়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ওই সেমিনারে ‘লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন ফর ফিজিশিয়ানস’ শীর্ষক একটি নির্দেশিকাও উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি পরিচালিত হয় ইউএসএআইডির অর্থায়নে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী, যারা করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তাদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন বা পা ফুলে যাওয়া) এবং স্নায়বিক (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিম ঝিম করা ও ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে আবার পৃথক; পুরুষের তুলনায় নারীদের এই জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার গুণ বেশি। আবার যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের আইসিইউ দরকার হয়েছিল তাদের, যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি তাদের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

তারা জানান, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার দুইটি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জনকে নিয়ে এই গবেষণা করা হয়। তাদের করোনা পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। এসব নারীদের স্নায়বিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তাদের গত দুই বছর ধরে ফলো-আপে রাখা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করোনা রোগী সুস্থ হওয়ার পর এবং নিয়মিত ওষুধ খাবার পরও তাদের রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা ছিল যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি। তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের ইনসুলিন প্রয়োজন হয়েছিল বেশি।

এটি শঙ্কার বিষয় মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১ হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নতুন করে কিডনি জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। তবে এখানে স্বস্তির যে তাদের জটিলতাগুলো কমানো গেছে।

তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্ণতার মতো কিছু বিষয় করোনা থেকে সেরে ওঠার ৫ মাস পরও সেভাবে কমানো যায়নি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা থেকে সেরে ওঠাদের প্রয়োজনীয় ফলো-আপ এবং চিকিৎসা নিতে হবে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের হৃদরোগ জটিলতার জন্য নিয়মিত ফলো-আপে থাকতে হবে।

আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ এটি দেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের জন্য লং কোভিড চিকিৎসায় ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অভাবে সহজে নির্ণয় করা যায় না এমন কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর তাই প্রস্তাবিত গাইডলাইন চিকিৎসকদের সর্বাধিক সাফল্যের সঙ্গে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করবে।’

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘করোনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এটি প্রমাণিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ যৌথভাবে আরও নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম।

ইউএসএআইডির হেলথ এক্সপার্ট ডা. সামিনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কী ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং তার ব্যাপ্তি কেমন ছিল সেটা অজানা ছিল। কিন্তু এই গবেষণা সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।’


লবণাক্ত পানি বাড়াচ্ছে রক্তচাপ-কিডনি রোগ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। লবণাক্ত পানি স্থানীয়দের স্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এসব পানি পান করায় বাড়ছে রক্তচাপ, কিডনি রোগ ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে অসংক্রামক রোগ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি) যৌথ সমন্বয়ে সম্প্রতি গবেষণাকেন্দ্র উদ্বোধন হয়। এই গবেষণা কেন্দ্র অসংক্রামক রোগের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় বৈশ্বিক পরিবেশগত পরিবর্তনের হুমকির দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নীতিনির্ধারণ-সংক্রান্ত গবেষণা, গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে।

সেন্টারটি যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ভারতের দ্য জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথসহ শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, ইন্দোনেশিয়ার ব্রাউইজায়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বির যৌথ সহযোগিতায় স্থাপিত হয়। বাংলাদেশে আইসিডিডিআর,বির ড. আলিয়া নাহিদের তত্ত্বাবধানে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারটি পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) সেন্টারটির পরিচালনায় সহায়তা করবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ, যুক্তরাজ্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।

সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এসব প্রভাবের মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ বৃদ্ধি, কিডনি রোগ এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের হার বৃদ্ধি।

এই গবেষণা সেন্টারটি সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার ক্ষতি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ মোকাবিলায় সাশ্রয়ী, টেকসই সমাধান বের করা ও পরীক্ষা করার জন্য কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রতিটি বিভাগে একটি করে আধুনিক হাসপাতাল করার কথা বলেন। তিনি বলেন, এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টার গবেষণার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় নীতিনির্ধারণ সহায়ক তথ্য ও প্রমাণ সরকারের কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে লাগবে।

অনুষ্ঠানে ড. আলিয়া নাহিদ গ্রামীণ বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘কোবরা-বিপিএস কৌশল’ নামের একটি মাল্টি-কম্পোনেন্ট ইন্টারভেনশন মডেল উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।


অবহেলিত রোগ লিম্ফইডিমা

আপডেটেড ২০ মার্চ, ২০২৩ ১০:১৩
ডা. রুবাইয়াত রহমান

আমাদের শরীরের জলীয় অংশকে পুরো শরীরে সমানভাবে প্রবাহিত করতে ‘লিম্ফনোড’ বলে কিছু ক্ষুদ্রাকার অঙ্গ আছে, যা অতিরিক্ত পানিকে শোষণ করতে সহায়তা করে। এই ক্ষুদ্রকায় লিম্ফনোডগুলো শরীরের ভেতরে থেকে এই অতিরিক্ত পানিকে কোনো স্থানে জমাট না বাঁধতে সহায়তা করে। অর্থাৎ পুরো বাহ্যিক শরীরে পানির সুষম বণ্টন।

লিম্ফইডিমা কেন হয়?
১. চিকিৎসা-পরবর্তী কারণে অথবা ক্যানসার ছড়িয়ে গেলে (উদাহরণ: স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় আক্রান্ত লিম্ফনোড সরিয়ে ফেলতে হয়, এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ক্যানসার লিম্ফনোডে ছাড়িয়ে পরলে অথবা ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশনের কারণে।)
২. এক প্রকার পরজীবী দ্বারা গোদ রোগ বা ফাইলেরিয়াসিস এক প্রকার পরজীবী ঘটিত রোগ। এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের সংক্রামক রোগ যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দেখা যায়।
৩. নিরাময় অযোগ্য কোনো রোগে লিম্ফনোড কাজ করা বন্ধ করে দিলে লিম্ফইডিমা রোগ দেখা দেয়।

লক্ষণ
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ (হাত বা পা) ব্যথা ও ভারী হয়ে যাওয়া, স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা হওয়া, চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে ইনফেকশন তৈরি হওয়া, চামড়া শক্ত, মোটা ও আঁটসাঁট হয়ে যাওয়া, চামড়াতে পানি জমে অবাঞ্ছিত ভাঁজের তৈরি হওয়া, চামড়ার ভেতর থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়া।

এটি একটি নিরাময় অযোগ্য রোগ অর্থাৎ এর কোনো ধরনের চিকিৎসা নেই। তবে আছে প্রতিকার ও পরিচর্যা, যা এই রোগের লক্ষণগুলোকে কমিয়ে আনতে পারে আর জীবনকে স্বাভাবিক ও উপভোগ্য করতে পারে।

আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি কথা বলে, তা হলো ‘আর কিছু করার নাই বাড়ি নিয়ে যান।’ কিন্তু এই কথা শুনতে আমরা প্রস্তুত নই। পৃথিবীজুড়ে প্রতি ১ লাখ নারীর মাঝে একজন ও ৪ লাখ পুরুষের মাঝে একজনের এই রোগ হয়। কিন্তু যার হয় তার জন্য কিন্তু ১০০ ভাগ ভোগান্তি। কিন্তু একটু সচেতনতা আমাদের এই ভোগান্তি থেকে ভালো রাখতে পারে। স্তন ক্যানসারের অপারেশনের পরে বা উপরিউল্লিখিত কারণে যদি সঠিক পরিচর্যা, ব্যায়াম ও বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাপন করতে পারা যায়, এই কষ্ট ও ভোগান্তি অনেক কমে যেতে পারে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছে সব বিভাগগুলোর ব্যর্থতার ওপর। তাই সবাই যখন বলে আর কিছু করার নেই, তখন আমরা বলি ‘পাশে আছি’। বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোগান্তি ও কষ্ট কমানো সম্ভব। গত ২০০৭ সাল থেকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগ এমন ভোগান্তিতে থাকা মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই বিভাগে প্রতি সোমবার লিম্ফইডিমায় আক্রান্ত রোগীদের এককালীন ৩০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা শহরে যারা হাসপাতালে আসতে পারেন না তাদের বাসায় গিয়ে এই সেবা দেয়া হয়।

চিকিৎসা বিষয়ে যোগাযোগের ঠিকানা: প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, ই-ব্লক, ৪র্থ তলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (৫১১ নং রুম, মেডিসিন আউট ডোর)

লেখক: পিএইচডি ফেলো (প্যালিয়েটিভ কেয়ার, ব্রাইটন সাসেক্স মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউকে)


মায়ের দুধ পায় না অর্ধেক শিশু, পরিবার ঝুঁকছে ফর্মুলায়

আপডেটেড ১৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৯
মুসলিমা জাহান

রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাতটি কক্ষে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ১৮৪ নম্বর কক্ষে পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে ‘ডাক্তার দেখিয়ে’ বের হন সাদ্দাম হোসাইন ও রোমানা আক্তার দম্পতি। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে আরেকটি রঙিন স্টিকার দিয়েছেন; যাতে একটি কোম্পানির বয়সভেদে ফর্মুলা দুধের (কৌটাজাত গুঁড়া দুধ) নামের পাশে টিক চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনাটি এ বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারির। শিশুটির বাবা সাদ্দাম হোসাইন জানান, মেয়ের ওজন কম, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন। শিশুটির মা বলেন, ‘বুকে দুধ আছে, ডাক্তার বলছে বাবুর ওজন কম, কৌটার দুধ খাওয়ালে ভালো হবে।’

দেশে শিশুদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। সরকারি অনুদানপুষ্ট স্বায়ত্তশাসিত এই হাসপাতালটির সেই কক্ষে ওই দিন রোগী দেখেন দুজন চিকিৎসক। তাদের একজন আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদা মাহিনূর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিই না। তবে কর্মজীবী মা অথবা কোনো মা বেশি পীড়াপীড়ি করলে শুরুতে বুকের দুধের জন্য কাউন্সেলিং করি, না মানলে বাধ্য হয়ে ফর্মুলা দুধ দিতে হয়।’

বিদেশি একটি ফর্মুলা দুধের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধির নির্ধারিত কর্ম-এলাকা এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর। গত পাঁচ বছর ধরে তার প্রাত্যহিক কাজ দুপুর ১২টার পর হাসপাতালটির চিকিৎসকদের ‘সালাম দেয়া’ এবং নার্সসহ অন্য স্টাফদের সঙ্গে ‘হাসি মুখে’ কুশল বিনিময়। তাদের জন্য নানান উপঢৌকনের ব্যবস্থাও করেন তিনি। প্রতিনিধির কাজের ফলাফল হিসেবে হাসপাতাল এলাকায় গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির ফর্মুলা দুধের বিক্রি অন্তত ছয়গুণ বেড়েছে বলে জানান এই প্রতিনিধি।

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী জন্মরে প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়। অথচ নগর স্বাস্থ্য জরপি বলছে, ২০২১ সালে শহর এলাকায় এ হার ৫২ শতাংশের কম।

শিশুর বিকাশের জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই।

নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের তথ্য ও জরিপ বলছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি। কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার কমছে। বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে।

নিজস্ব অনুসন্ধান এবং জরিপেও ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ। ‘বাচ্চা শুকনা’ বলে আত্মীয়স্বজনের চাপেও দিতে হয়। কোনো কোনো মা অবশ্য ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবে দেন। অনলাইন প্রচারেও বাড়ছে ফর্মুলা দুধের ব্যবহার।

কর্মস্থলে ফিরতে হবে বলে দুই মাস বয়সে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো শুরু করেন রুবানা আহমেদ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এই কর্মকর্তার কথা, ‘আগেভাগে অভ্যাস না করালে হুট করে ফর্মুলা খাবে না।’ মেয়ে প্রথম ছয় মাসে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় ভুগেছে। আবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের গৃহিণী চায়না আক্তার বলেন, ‘তোলা (গুঁড়া দুধ) খাওয়ালে শিশুর শরীর বাড়ে, তাই জন্মের পরেই দিয়েছি। বাচ্চা মোটাসোটা না হলে শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হতো।’ ইউটিউব চ্যানেলে চিকিৎসকদের ভিডিও দেখে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকে ফর্মুলা দিচ্ছেন বলে জানান সাভারের মোহাম্মদ রনি।

জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশু কী খেয়েছে, এ সময়ে শিশুর রোগে ভোগা, ফর্মুলা দুধের পরামর্শ কার কাছ থেকে এসেছেসহ সাতটি প্রশ্ন রেখে ৭০ জন মায়ের মধ্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে সরাসরি, অনলাইন, মুঠোফোনে। গ্রাম ও শহরের এই মায়েরা বিভিন্ন বয়সের, নানান পেশার।

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। নিপোর্টের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।

বুকের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ আসা, ফর্মুলা দুধের বিপণনব্যবস্থার প্রভাব, কর্মজীবী নারীদের ছুটির ঘাটতি, স্বজনদের চাপ, অনলাইনে প্রচার, জনসমাগমস্থলে/পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণে মূলত মায়েরা ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।

চিকিৎসকরা দিচ্ছেন ফর্মুলরা পরামর্শ

সকাল ৯টার পর থেকেই ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের ১১, ১২ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদক হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। এ সময় দেখা যায়, সন্তানকে কোলে নিয়ে বাবা অথবা মা হন্তদন্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত কক্ষে ছুটছেন। কেউ বের হন স্বস্তি নিয়ে, কেউ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে। তারা বের হলেই ঘিরে ধরেন ওষুধ কিংবা ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দেখেন চিকিৎসক তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কি না, ফর্মুলা দিয়েছেন কি না। ছবি তোলেন।

এ সময় দেখা যায়, ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে চিকিৎসকরা আলাদাভাবে একটা রঙিন স্টিকার দেন। এতে বয়স অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পাশে টিক চিহ্ন দেয়া থাকে। ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ জন বাবা-মায়ের কাছে এমন স্টিকার দেখা যায়। তারা জানান, চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন। এতে সন্তানদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কামরাঙ্গীরচর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন নুরুন নাহার। তিনি বলেন, প্রতিবার ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন।

চিকিৎসকদের সরবরাহ করা ফর্মুলা দুধের বেশ কিছু স্টিকারের ছবি তুলেছেন এই প্রতিবেদক। এতে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ১৮৪ ও ১৮৫ নম্বর কক্ষ থেকেই এই স্টিকার এসেছে। এই দুটি কক্ষের টেবিলের ওপরওে প্রকাশ্যেই এই স্টিকার রাখা ছিল। হাসপাতালের নথি বলছে, প্রতিটি কক্ষে দুজন করে চিকিৎসক ছিলেন। তারা সবাই হাসপাতালটির আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

বহির্বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর-উজ-জামান বলেন, রোগীর ডায়রিয়া হলে বা আগে থেকে ফর্মুলা দুধ খেলে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেয়া হয়। কিনতে যাতে ভুল না হয়, সে কারণে ব্যবস্থাপত্রে না লিখে স্টিকারে টিক দেয়া হয়। তবে এর বিনিময়ে দুধ কোম্পানির কাছ থেকে কোনো উপহার বা আর্থিক লাভ নেননি বলে জানান তিনি।

এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় কাজ করেন- এমন তিনজন ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধির (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক নতুন কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ফর্মুলা দুধ লেখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই চিকিৎসককে তার কোম্পানি থেকে স্টিকার সরবরাহ করা হয়। অনেক চিকিৎসক আলাদা কাগজেও লিখে দেন। তবে বেশির ভাগ সময় এ পরামর্শ থাকে মৌখিক।

কেন তার কোম্পানির দুধ এই চিকিৎসকরা লিখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে ১২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করি। খাওয়ার পানি, কলমসহ টুকটাক উপহারও দিতে হয়।’ এর বাইরে নিয়মিত মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। আয়োজন করতে হয় বৈজ্ঞানিক সেমিনারের। সেখানে চিকিৎসকদের আলোচক হিসেবে রাখতে হয়, দিতে হয় সম্মানী।

ফর্মুলা দুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখতে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি নমুনা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ আছে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।

ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের যৌথভাবে করা ‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক জরিপ বলছে, মা হয়েছেন এমন ৯৮ শতাংশ নারীর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর। কিন্তু সঠিক পরামর্শের অভাবে তারা পারেননি। প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেয়ার ৬০ শতাংশ পরামর্শ দেন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাদাতারা।

বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ৮ হাজার ৫০০ মা-বাবা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জরপিটি করা হয়। জরিপের প্রকাশকাল ২০২২।

হাসপাতালে জন্ম নেয়ারা ফর্মুলা পায় বেশি

নিজস্ব জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ মা ছয় মাসের আগেই শিশুকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছেন। সরকারি জরিপেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তথ্য বলছে, ঘরে জন্ম নেয়া শিশুদের তুলনায় হাসপাতালে জন্ম নেয়া শিশুরা ফর্মুলা দুধ পায় ২০ শতাংশ বেশি।

স্কুলশিক্ষক সুমি আক্তার সন্তান জন্ম দেন মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে। শিশু জন্মের পর কান্নাকাটি করলে চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে বলেন। বাসায় ফিরে চেষ্টা করলেও শিশু আর মায়ের দুধ মুখে নেয়নি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শিশু জন্মদানের পর চিকিৎসক ও সেবিকাদের মাধ্যমে একই ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন মা রোকেয়া রহমান। তবে এসব পরামর্শ ছিল মৌখিক।

শিশু ও গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশু জন্মের প্রথম তিন দিনে মায়ের বুকে খুব কম পরিমাণে (শাল) দুধ আসে, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ২ চা-চামচ। এই দুধকে অপর্যাপ্ত মনে করেন মাসহ স্বজনরা। এ সময়ে পেটব্যথা, গরমসহ নানা কারণে কান্নাকাটি করে শিশুরা। সিজারের মাধ্যমে সন্তান হলে প্রথম দিন অনেক সময় দুধ নামে না। তখন অনেক অভিভাবক ফর্মুলা দুধ দিয়ে দেন। আবার অনেক চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রলোভনের ফাঁদে আটকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেন। হাসপাতালে বিনা মূল্যে দুধের নমুনাও পান মায়েরা।

হাসপাতাল বা বাড়িতে ডেলিভারির সঙ্গে বুকের দুধ পানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের গর্ভবতী, প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ছাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, সি-সেকশন হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে দুধ নামতে কিছুটা দেরি হতে পারে। এ সময় ধৈর্য ধরে সঠিক পজিশনে নিয়ে শিশুকে বারবার খাওয়াতে হবে। এতে দ্রুত অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে শিশু দুধ পাবে। শিশু কান্না করলেই ক্ষুধা লাগছে, এ ধারণাও দূর করা জরুরি।

বাধ্য হন কর্মজীবী মায়েরা

গর্ভকালীন অবস্থায় অসুস্থ থাকায় সন্তান জন্মদানের বেশ আগেই ছুটি নিতে হয়েছিল সরকারি কর্মকর্তা সোহানা ইসলামকে। চাকরিতে যোগদান করতে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এ নিয়ে তার অনেক আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘অনেকবার মনে হয়েছে সন্তানকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করছি। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে ফর্মুলা দুধ বেছে নিয়েছি।’ একটি স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফরিন শাহনাজও আড়াই মাস বয়স থেকে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বারবার ডায়রিয়া হচ্ছিল, গ্যাসের সমস্যায় ভুগেছে। তবুও ফর্মুলা চালিয়ে গিয়েছি।’ রাত জাগলে সকালে ঠিকভাবে অফিস করতে পারবেন না বলে রাতে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন ব্যাংকার রুমানা সরকার। একই ধরনের কথা বলেন আর কয়েকজন মা।

নিজস্ব জরিপে অংশগ্রহণকারী যেসব মা ছয় মাসের আগেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন, তাদের ৮০ শতাংশ কর্মজীবী। ফর্মুলা দেয়ার পর নানা ধরনের রোগে ভোগার হারও এসব শিশুর বেশি। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার তাড়া থেকে দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেয়া শুরু করেন বলে জানান মায়েরা। সরকারি জরিপও বলছে, শিশু জন্মের প্রথম মাসে যেখানে ৮৫ শতাংশ মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, শিশুর তিন-চার মাসে সেই হার হয়ে যায় ৪০ শতাংশ। সরকারিভাবে মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটি দুবার ছয় মাস করে ভোগ করতে পারেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে এই ছুটি চার মাস।

মায়েরা আরও বলছেন, এর পাশাপাশি শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যে যত্ন ও খাবার দরকার, সে ব্যবস্থা নেই অনেক চাকরিজীবী মায়ের। তবে কোনো কোনো মা ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবেও দেন। কর্মস্থলে এবং পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণেও অনেক মা শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেন।

অনলাইন ফর্মুলা দুধের প্রচার

মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ফর্মুলা দুধের প্রচার জোরেশোরে এখন চলছে অনলাইনে। ফর্মুলা দুধ কোম্পানির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। চিকিৎসকরাও ইউটিউবে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করেন। মায়েদের বিভিন্ন গ্রুপে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়। এমন গুণগান শুনে অনেক মা-ই ফর্মুলা দুধ দেন। এমন একজন মা হচ্ছেন তাসলিমা আক্তার। তিনি ছেলের বয়স দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেন। দুধ শুরু করার কয়েক দিনের মাথায় হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তাসলিমা বলেন, ‘মনে হয়েছে ছেলের ওজন কম। গুঁড়া দুধ খাওয়ালে ছেলের স্বাস্থ্য ভালো হবে। গ্রুপে পোস্ট করে সবার পরামর্শ নিয়ে দুধ দিয়েছি।’ এ রকম দুটি গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেল ঘেঁটে দেখা যায়, তারা ফর্মুলা দুধসহ শিশুখাদ্য বিক্রি করেন। বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়।

মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের এমন একটি সংস্থার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ (নাম না প্রকাশের শর্তে) বলেন, প্রকাশ্য বা অনলাইনে ফর্মুলা দুধের প্রচার নিষিদ্ধ কিন্তু চলছে। শাস্তিযোগ্য এসব ফৌজদারি অপরাধ প্রকাশ্যেই ঘটছে। পর্যবেক্ষণ নেই। শাস্তি হয় না বলেই দিন দিন ফর্মুলা দুধের আগ্রাসন বাড়ছে বলে মন্তব্য এই জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদের।

করণীয় কী

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড) মাহবুব আরেফীন রেজানুর বলেন, ‘ফর্মুলা দুধের আধিপত্য কমাতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান আইনটি সম্পর্কে অংশীদারদের সচেতনতার কাজ জোরেশোরে চলছে। লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে কোনো চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ দিচ্ছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এখন পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একদল চিকিৎসকের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় বলেন, গুঁড়া দুধ কোম্পানি অবাধে প্রচার করছে, মায়েরা প্রভাবিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আইন লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


ছায়া দেয়া লোকগুলোর বেশি মৃত্যু-ভোগান্তি

আপডেটেড ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০৪
জাকিয়া আহমেদ

করোনার নিম্নমুখী সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও। টানা ৩১ দিন ধরে করোনায় মৃত্যুহীন রয়েছে দেশ। এদিকে করোনা মহামারি নিয়ে খুশির খবর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই করোনা মহামারি শেষ হওয়ার খবর দিতে পারবেন তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন এমন একটা খবর দিল, তখন গত তিন বছরে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে দেশের ২৯ হাজার ৪৪৫ জন নাগরিকের প্রাণ গেছে। শূন্য থেকে ১০০ বছর বা তারও ঊর্ধ্বের বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী মোট মৃত্যু ১৬ হাজার ৪২১ জন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, যাদের বয়স ৬০ বছর থেকে ১০০ বা তদূর্ধ্ব।

পরিবারের ছায়া হয়ে থাকা বা নতুনদের পথ দেখানোর দায়িত্ব যাদের, সেই জনগোষ্ঠীর এত বড়সংখ্যক সদস্যকে হারিয়ে ছায়াশূন্য হয়েছে বহু পরিবার। বাংলাদেশে মোট মৃত্যু ৫৬ শতাংশের বয়সই ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে।

মৃতদের মধ্যে ১০ হাজার ৩৩৬ জনের বয়স ৪১ বছর থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বাকি তিন হাজারে বয়স শূন্য থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

সরকারি হিসাবে দেশে করোনায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫৪ জন।

বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনের উহানে। ফেব্রুয়ারি শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং যাদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ৬০-এর ওপর।

করোনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এটিই এখন পর্যন্ত এই রোগে শেষ মৃত্যু। সেদিন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনায় মৃত্যু হলো ২৯ হাজার ৪৪৫ জনের।

১৬ মার্চ অধিদপ্তর জানায়, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দেশে রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ আর মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

ডেল্টার তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি
মহামারিকালে করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে দেশে এক দিনে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই রেকর্ডসংখ্যক ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হন। আর ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট এক দিনে ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া; যা কি না দেশে মহামারীতে এক দিনে সর্বোচ্চ।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনায় আক্রান্ত ২৯ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৭৮৯ জন আর নারী ১০ হাজার ৬৫৬ জন আর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১২ হাজার ৯৪৪ জনের।

বয়সভিত্তিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এ বয়সে মারা গেছেন ৯ হাজার ৯৯ জন। এ ছাড়া শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৯১ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২০৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৬৯৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪৯ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ হাজার ৮৮৭ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ হাজার ১৫৯ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৭৪৫ জন, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ৩৮০ জন আর ১০০ বছরের ঊর্ধ্বে মারা গেছেন ৩৮ জন।

দেশে মারা যাওয়াদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২৪ হাজার ৯৭৪ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৫৩ জন, বাড়িতে ৭৮৩ জন আর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে ৩৫ জনকে। তবে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা আগে থেকেই অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তাদের মৃত্যু বেশি।

যারা হাসপাতালে মারা গেছেন তারাই তালিকায়
মহামারির শুরু থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ কেবল হাসপাতালে মৃত্যু হলেই সেটি করোনায় মৃত্যু বলে জানাত, বাড়িতে কিংবা হাসপাতালে আনার পথে কারও মৃত্যু হলে সেটি অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হতো না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় সরকারি হিসাবে যে মৃত্যুর তথ্য দেয়া হয় তারচেয়ে ‍প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিদপ্তরের তালিকাতেই রাখা হয়নি। একই কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থাটি গত বছর ( ২০২২) জানায়, মহামারি শুরুর পর থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় ১ কোটি ৪৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া এই হিসাব মহামারির প্রথম দুই বছরে করোনায় যত মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তারচেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। সংস্থাটির গবেষকদের বিশ্বাস, অনেক দেশই করোনায় মৃত্যুর হিসাব ঠিকঠাকভাবে রাখেনি। তাই উঠে আসেনি।

শুরুতে প্রস্তুতি থাকলে মৃত্যু কমত
দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায়, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় করোনায় শনাক্ত এবং মৃত্যু কম হয়েছে। তবে যত মৃত্যু হয়েছে সেটিও কমানো যেত যদি বাংলাদেশের প্রস্তুতি থাকত। মূলত প্রস্তুতিহীন স্বাস্থ্য বিভাগের কারণে ২৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

মহামারিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র একাধিকবার জানিয়েছে, অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি করোনায় মৃত্যু কমানোর উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু আদতে এ নিয়ে কার্যকর বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বিশ্লেষণ করা হয়নি মৃত্যুর ঘটনাও।

করোনায় শূন্য মৃত্যু লক্ষ্যমাত্রা রেখে কাজ করার দরকার মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় কেন এবং ঠিক কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যু হচ্ছে তার পর্যালোচনা দরকার ছিল। তাতে অন্তত কিছু মৃত্যু কমানো সম্ভব হতো বা হবে। সঙ্গে দরকার ছিল মৃত্যু কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ।

অথচ সরকারের একাধিক খামখেয়ালিপূর্ণ সিদ্ধান্ত, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতিহীনতায় এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকার পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে অপারগ ছিল। হাসপাতালগুলোতে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বেশির ভাগ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিল না, ছিল না আইসিইউ। এমনকি করোনাকালে দেশের ৬৪ জেলায় আইসিইউ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আইসিইউ তিন বছর পরও হয়নি।

সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাধিকবার দ্বিমত পোষণ করে সুপারিশ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু সে সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার। যার কারণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে বাংলাদেশেও শনাক্ত এবং মৃত্যু বাড়ে সে সময়।

সে সময় ডেল্টার দাপটের কারণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। কিন্তু ঈদুল আজহার কারণে সে লকডাউন শিথিল করা হয়। আর তাতেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হয় মানুষ। প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাসে, লঞ্চে কিংবা ফেরিতে গাদাগাদি করে গ্রামে গিয়েছে ঈদ উদযাপন করতে। আবার ঈদের পরের কয়েক দিনে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই একভাবে ঢাকায় ফিরেছে মানুষ।

সে সময়ই পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলেছেন, শিথিলতার এ নির্দেশনায় তাদের ‘সায়’ ছিল অধিদপ্তর যেখানে বারবার ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলছে, সেখানে সংক্রমণের ‘পিক টাইম’-এ এ ধরনের ঘোষণা দেশকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে। এরপর লকডাউনের ভেতরে সরকার পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়। এতে করে কমিটির আশঙ্কাকে সত্যি করে দেশে ঈদের পর থেকে দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর একের পর এক রেকর্ড দেখতে হয় বাংলাদেশকে। আর এতে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা তালিকায় বিশ্বে যেসব দেশে দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, সেই তালিকায় অষ্টম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি করোনায় মৃত্যু কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে জানিয়ে বলেছিল, করোনায় শূন্য মৃত্যুর টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিবেদন দেয়া হয়, যেখানে এ-সংক্রান্ত দিকনির্দেশনাও ছিল।

সেই কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সে নির্দেশনা কিংবা প্রস্তাবনা অনুযায়ী কাজ হয়নি।’

‘সংক্রমণের তখনকার তীব্রতা এবং যেভাবে ছড়াচ্ছিল, তখন সেসব প্রস্তাবনা খুব উল্লেখযোগ্য ছিল।’

তিনি বলেন, তখনকার সময়ে যেসব অপ্রতুলতা ছিল, যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তার জন্য অবশ্যই মৃত্যু বেশি হয়েছে…আইসিইউ ছিল না, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ছিল না, উপজেলা তো দূরে থাক, বিভাগীয় শহরের হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিল না। অথচ তখন সেগুলো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বা একেবারেই না থাকার কারণে মৃত্যু বেশি হয়েছে।

এই না থাকার মধ্যেও তখন যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দিকে সরকার বেশি নজর দিত তাহলেও মৃত্যু কমানো সম্ভব হতো, বলেন আবু জামিল ফয়সাল।

মৃত্যু কমানো যেত কি না প্রশ্নে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, সে সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুতিহীনভাবে সময় ক্ষেপণ করেছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করেনি, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বাড়াতে পারেনি, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে এখনো আইসিইউ নেই। যখন জটিল রোগীদের আইসিইউ দরকার হতো, তখন তাদের ঢাকায় পাঠানো হতো। ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছিল না।

এসব কারণে যখন চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হচ্ছে, তখন তাকে বাঁচানো যায়নি- বলেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাকালে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীদের মৃত্যু বেশি দেখতাম। কারণ তারা নিজ এলাকায় চিকিৎসা পেতেন না, চিকিৎসাব্যবস্থাই ছিল না। পুরো হাসপাতাল-ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ছিল। এসব কারণে মৃত্যু হয়েছে বেশি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন, উদ্যোগের অভাব ছিল, ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ছিল, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। যার কারণে সংক্রমণ বেড়েছে এবং সংক্রমণ বাড়ার কারণে মৃত্যু বেড়েছে।


ব্র্যাক হেলথকেয়ার সেন্টারের যাত্রা শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

যাত্রা শুরু করল ‘ব্র্যাক হেলথকেয়ার সেন্টার’। আন্তরিক পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এখানে একই ছাদের নিচে মিলবে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ও অত্যাবশ্যক সেবা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস, ডেন্টাল কেয়ার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মডেল ফার্মেসি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় প্রথম হেলথকেয়ার সেন্টারটি উদ্বোধন করেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তামারা আবেদ বলেন, ‘ভবিষ্যতে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে এরকম আরও ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে যা হয়ে উঠবে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই আস্থাভাজন।’

তিনি বলেন, ‘ব্র্যাক হেলথকেয়ার এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ যার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে রোগীর প্রাপ্য সেবাটুকু নিশ্চিত করা। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশব্যাপী এমন কতগুলো আউটপেশেন্ট ক্লিনিক গড়ে তোলা যা স্বাস্থ্যসেবার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে উঠবে।’

শুক্রবার থেকেই প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মিরপুরে বেগম রোকেয়া সরণির কাজীপাড়ায় ‘ব্র্যাক হেলথকেয়ার সেন্টার’ স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য খোলা থাকবে। এখানে ব্র্যাক সেন্টারের হটলাইন নম্বরে কল করে আগে থেকে অ্যাপয়েনমেন্ট নেয়ারও ব্যবস্থা থাকবে।

ব্র্যাক থেকে জানানো হয়, ঢাকায় আরও কয়েকটি সেন্টার চালুর পাশাপাশি দেশের অন্য অঞ্চলেও শাখা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ব্র্যাকের। এ সেবা সর্ম্পকে ব্রাকের ওয়েসবসাইটেও তথ্য পাওয়া যাবে।


banner close