শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২

মায়ের দুধ পায় না অর্ধেক শিশু, পরিবার ঝুঁকছে ফর্মুলায়

আপডেটেড
১৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৯
মুসলিমা জাহান
প্রকাশিত
মুসলিমা জাহান
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৭

রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাতটি কক্ষে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ১৮৪ নম্বর কক্ষে পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে ‘ডাক্তার দেখিয়ে’ বের হন সাদ্দাম হোসাইন ও রোমানা আক্তার দম্পতি। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে আরেকটি রঙিন স্টিকার দিয়েছেন; যাতে একটি কোম্পানির বয়সভেদে ফর্মুলা দুধের (কৌটাজাত গুঁড়া দুধ) নামের পাশে টিক চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনাটি এ বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারির। শিশুটির বাবা সাদ্দাম হোসাইন জানান, মেয়ের ওজন কম, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন। শিশুটির মা বলেন, ‘বুকে দুধ আছে, ডাক্তার বলছে বাবুর ওজন কম, কৌটার দুধ খাওয়ালে ভালো হবে।’

দেশে শিশুদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। সরকারি অনুদানপুষ্ট স্বায়ত্তশাসিত এই হাসপাতালটির সেই কক্ষে ওই দিন রোগী দেখেন দুজন চিকিৎসক। তাদের একজন আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদা মাহিনূর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিই না। তবে কর্মজীবী মা অথবা কোনো মা বেশি পীড়াপীড়ি করলে শুরুতে বুকের দুধের জন্য কাউন্সেলিং করি, না মানলে বাধ্য হয়ে ফর্মুলা দুধ দিতে হয়।’

বিদেশি একটি ফর্মুলা দুধের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধির নির্ধারিত কর্ম-এলাকা এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর। গত পাঁচ বছর ধরে তার প্রাত্যহিক কাজ দুপুর ১২টার পর হাসপাতালটির চিকিৎসকদের ‘সালাম দেয়া’ এবং নার্সসহ অন্য স্টাফদের সঙ্গে ‘হাসি মুখে’ কুশল বিনিময়। তাদের জন্য নানান উপঢৌকনের ব্যবস্থাও করেন তিনি। প্রতিনিধির কাজের ফলাফল হিসেবে হাসপাতাল এলাকায় গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির ফর্মুলা দুধের বিক্রি অন্তত ছয়গুণ বেড়েছে বলে জানান এই প্রতিনিধি।

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী জন্মরে প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়। অথচ নগর স্বাস্থ্য জরপি বলছে, ২০২১ সালে শহর এলাকায় এ হার ৫২ শতাংশের কম।

শিশুর বিকাশের জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই।

নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের তথ্য ও জরিপ বলছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি। কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার কমছে। বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে।

নিজস্ব অনুসন্ধান এবং জরিপেও ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ। ‘বাচ্চা শুকনা’ বলে আত্মীয়স্বজনের চাপেও দিতে হয়। কোনো কোনো মা অবশ্য ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবে দেন। অনলাইন প্রচারেও বাড়ছে ফর্মুলা দুধের ব্যবহার।

কর্মস্থলে ফিরতে হবে বলে দুই মাস বয়সে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো শুরু করেন রুবানা আহমেদ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এই কর্মকর্তার কথা, ‘আগেভাগে অভ্যাস না করালে হুট করে ফর্মুলা খাবে না।’ মেয়ে প্রথম ছয় মাসে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় ভুগেছে। আবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের গৃহিণী চায়না আক্তার বলেন, ‘তোলা (গুঁড়া দুধ) খাওয়ালে শিশুর শরীর বাড়ে, তাই জন্মের পরেই দিয়েছি। বাচ্চা মোটাসোটা না হলে শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হতো।’ ইউটিউব চ্যানেলে চিকিৎসকদের ভিডিও দেখে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকে ফর্মুলা দিচ্ছেন বলে জানান সাভারের মোহাম্মদ রনি।

জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশু কী খেয়েছে, এ সময়ে শিশুর রোগে ভোগা, ফর্মুলা দুধের পরামর্শ কার কাছ থেকে এসেছেসহ সাতটি প্রশ্ন রেখে ৭০ জন মায়ের মধ্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে সরাসরি, অনলাইন, মুঠোফোনে। গ্রাম ও শহরের এই মায়েরা বিভিন্ন বয়সের, নানান পেশার।

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। নিপোর্টের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।

বুকের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ আসা, ফর্মুলা দুধের বিপণনব্যবস্থার প্রভাব, কর্মজীবী নারীদের ছুটির ঘাটতি, স্বজনদের চাপ, অনলাইনে প্রচার, জনসমাগমস্থলে/পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণে মূলত মায়েরা ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।

চিকিৎসকরা দিচ্ছেন ফর্মুলরা পরামর্শ

সকাল ৯টার পর থেকেই ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের ১১, ১২ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদক হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। এ সময় দেখা যায়, সন্তানকে কোলে নিয়ে বাবা অথবা মা হন্তদন্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত কক্ষে ছুটছেন। কেউ বের হন স্বস্তি নিয়ে, কেউ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে। তারা বের হলেই ঘিরে ধরেন ওষুধ কিংবা ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দেখেন চিকিৎসক তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কি না, ফর্মুলা দিয়েছেন কি না। ছবি তোলেন।

এ সময় দেখা যায়, ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে চিকিৎসকরা আলাদাভাবে একটা রঙিন স্টিকার দেন। এতে বয়স অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পাশে টিক চিহ্ন দেয়া থাকে। ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ জন বাবা-মায়ের কাছে এমন স্টিকার দেখা যায়। তারা জানান, চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন। এতে সন্তানদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কামরাঙ্গীরচর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন নুরুন নাহার। তিনি বলেন, প্রতিবার ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন।

চিকিৎসকদের সরবরাহ করা ফর্মুলা দুধের বেশ কিছু স্টিকারের ছবি তুলেছেন এই প্রতিবেদক। এতে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ১৮৪ ও ১৮৫ নম্বর কক্ষ থেকেই এই স্টিকার এসেছে। এই দুটি কক্ষের টেবিলের ওপরওে প্রকাশ্যেই এই স্টিকার রাখা ছিল। হাসপাতালের নথি বলছে, প্রতিটি কক্ষে দুজন করে চিকিৎসক ছিলেন। তারা সবাই হাসপাতালটির আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

বহির্বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর-উজ-জামান বলেন, রোগীর ডায়রিয়া হলে বা আগে থেকে ফর্মুলা দুধ খেলে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেয়া হয়। কিনতে যাতে ভুল না হয়, সে কারণে ব্যবস্থাপত্রে না লিখে স্টিকারে টিক দেয়া হয়। তবে এর বিনিময়ে দুধ কোম্পানির কাছ থেকে কোনো উপহার বা আর্থিক লাভ নেননি বলে জানান তিনি।

এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় কাজ করেন- এমন তিনজন ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধির (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক নতুন কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ফর্মুলা দুধ লেখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই চিকিৎসককে তার কোম্পানি থেকে স্টিকার সরবরাহ করা হয়। অনেক চিকিৎসক আলাদা কাগজেও লিখে দেন। তবে বেশির ভাগ সময় এ পরামর্শ থাকে মৌখিক।

কেন তার কোম্পানির দুধ এই চিকিৎসকরা লিখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে ১২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করি। খাওয়ার পানি, কলমসহ টুকটাক উপহারও দিতে হয়।’ এর বাইরে নিয়মিত মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। আয়োজন করতে হয় বৈজ্ঞানিক সেমিনারের। সেখানে চিকিৎসকদের আলোচক হিসেবে রাখতে হয়, দিতে হয় সম্মানী।

ফর্মুলা দুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখতে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি নমুনা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ আছে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।

ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের যৌথভাবে করা ‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক জরিপ বলছে, মা হয়েছেন এমন ৯৮ শতাংশ নারীর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর। কিন্তু সঠিক পরামর্শের অভাবে তারা পারেননি। প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেয়ার ৬০ শতাংশ পরামর্শ দেন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাদাতারা।

বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ৮ হাজার ৫০০ মা-বাবা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জরপিটি করা হয়। জরিপের প্রকাশকাল ২০২২।

হাসপাতালে জন্ম নেয়ারা ফর্মুলা পায় বেশি

নিজস্ব জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ মা ছয় মাসের আগেই শিশুকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছেন। সরকারি জরিপেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তথ্য বলছে, ঘরে জন্ম নেয়া শিশুদের তুলনায় হাসপাতালে জন্ম নেয়া শিশুরা ফর্মুলা দুধ পায় ২০ শতাংশ বেশি।

স্কুলশিক্ষক সুমি আক্তার সন্তান জন্ম দেন মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে। শিশু জন্মের পর কান্নাকাটি করলে চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে বলেন। বাসায় ফিরে চেষ্টা করলেও শিশু আর মায়ের দুধ মুখে নেয়নি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শিশু জন্মদানের পর চিকিৎসক ও সেবিকাদের মাধ্যমে একই ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন মা রোকেয়া রহমান। তবে এসব পরামর্শ ছিল মৌখিক।

শিশু ও গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশু জন্মের প্রথম তিন দিনে মায়ের বুকে খুব কম পরিমাণে (শাল) দুধ আসে, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ২ চা-চামচ। এই দুধকে অপর্যাপ্ত মনে করেন মাসহ স্বজনরা। এ সময়ে পেটব্যথা, গরমসহ নানা কারণে কান্নাকাটি করে শিশুরা। সিজারের মাধ্যমে সন্তান হলে প্রথম দিন অনেক সময় দুধ নামে না। তখন অনেক অভিভাবক ফর্মুলা দুধ দিয়ে দেন। আবার অনেক চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রলোভনের ফাঁদে আটকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেন। হাসপাতালে বিনা মূল্যে দুধের নমুনাও পান মায়েরা।

হাসপাতাল বা বাড়িতে ডেলিভারির সঙ্গে বুকের দুধ পানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের গর্ভবতী, প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ছাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, সি-সেকশন হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে দুধ নামতে কিছুটা দেরি হতে পারে। এ সময় ধৈর্য ধরে সঠিক পজিশনে নিয়ে শিশুকে বারবার খাওয়াতে হবে। এতে দ্রুত অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে শিশু দুধ পাবে। শিশু কান্না করলেই ক্ষুধা লাগছে, এ ধারণাও দূর করা জরুরি।

বাধ্য হন কর্মজীবী মায়েরা

গর্ভকালীন অবস্থায় অসুস্থ থাকায় সন্তান জন্মদানের বেশ আগেই ছুটি নিতে হয়েছিল সরকারি কর্মকর্তা সোহানা ইসলামকে। চাকরিতে যোগদান করতে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এ নিয়ে তার অনেক আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘অনেকবার মনে হয়েছে সন্তানকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করছি। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে ফর্মুলা দুধ বেছে নিয়েছি।’ একটি স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফরিন শাহনাজও আড়াই মাস বয়স থেকে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বারবার ডায়রিয়া হচ্ছিল, গ্যাসের সমস্যায় ভুগেছে। তবুও ফর্মুলা চালিয়ে গিয়েছি।’ রাত জাগলে সকালে ঠিকভাবে অফিস করতে পারবেন না বলে রাতে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন ব্যাংকার রুমানা সরকার। একই ধরনের কথা বলেন আর কয়েকজন মা।

নিজস্ব জরিপে অংশগ্রহণকারী যেসব মা ছয় মাসের আগেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন, তাদের ৮০ শতাংশ কর্মজীবী। ফর্মুলা দেয়ার পর নানা ধরনের রোগে ভোগার হারও এসব শিশুর বেশি। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার তাড়া থেকে দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেয়া শুরু করেন বলে জানান মায়েরা। সরকারি জরিপও বলছে, শিশু জন্মের প্রথম মাসে যেখানে ৮৫ শতাংশ মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, শিশুর তিন-চার মাসে সেই হার হয়ে যায় ৪০ শতাংশ। সরকারিভাবে মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটি দুবার ছয় মাস করে ভোগ করতে পারেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে এই ছুটি চার মাস।

মায়েরা আরও বলছেন, এর পাশাপাশি শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যে যত্ন ও খাবার দরকার, সে ব্যবস্থা নেই অনেক চাকরিজীবী মায়ের। তবে কোনো কোনো মা ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবেও দেন। কর্মস্থলে এবং পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণেও অনেক মা শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেন।

অনলাইন ফর্মুলা দুধের প্রচার

মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ফর্মুলা দুধের প্রচার জোরেশোরে এখন চলছে অনলাইনে। ফর্মুলা দুধ কোম্পানির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। চিকিৎসকরাও ইউটিউবে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করেন। মায়েদের বিভিন্ন গ্রুপে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়। এমন গুণগান শুনে অনেক মা-ই ফর্মুলা দুধ দেন। এমন একজন মা হচ্ছেন তাসলিমা আক্তার। তিনি ছেলের বয়স দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেন। দুধ শুরু করার কয়েক দিনের মাথায় হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তাসলিমা বলেন, ‘মনে হয়েছে ছেলের ওজন কম। গুঁড়া দুধ খাওয়ালে ছেলের স্বাস্থ্য ভালো হবে। গ্রুপে পোস্ট করে সবার পরামর্শ নিয়ে দুধ দিয়েছি।’ এ রকম দুটি গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেল ঘেঁটে দেখা যায়, তারা ফর্মুলা দুধসহ শিশুখাদ্য বিক্রি করেন। বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়।

মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের এমন একটি সংস্থার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ (নাম না প্রকাশের শর্তে) বলেন, প্রকাশ্য বা অনলাইনে ফর্মুলা দুধের প্রচার নিষিদ্ধ কিন্তু চলছে। শাস্তিযোগ্য এসব ফৌজদারি অপরাধ প্রকাশ্যেই ঘটছে। পর্যবেক্ষণ নেই। শাস্তি হয় না বলেই দিন দিন ফর্মুলা দুধের আগ্রাসন বাড়ছে বলে মন্তব্য এই জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদের।

করণীয় কী

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড) মাহবুব আরেফীন রেজানুর বলেন, ‘ফর্মুলা দুধের আধিপত্য কমাতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান আইনটি সম্পর্কে অংশীদারদের সচেতনতার কাজ জোরেশোরে চলছে। লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে কোনো চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ দিচ্ছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এখন পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একদল চিকিৎসকের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় বলেন, গুঁড়া দুধ কোম্পানি অবাধে প্রচার করছে, মায়েরা প্রভাবিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আইন লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


সাপে কাটলে কি করবেন? কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা অতীব জরুরি?

আপডেটেড ১০ জুলাই, ২০২৫ ১৩:৩৯
ইউএনবি

বৃষ্টি মৌসুমগুলোতে ভারী বর্ষণের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয় বন্যা। আর বন্যা মানেই নানা ধরণের কীট-পতঙ্গের পাশাপাশি শুরু হয় সাপের উপদ্রব। এমনকি এই চিত্র কেবল গ্রামেরই নয়, শহরাঞ্চলগুলোরও একই অবস্থা। এছাড়া যারা বর্ষার সময় বনে বা পাহাড়ে ঘুরতে যান তাদেরও প্রায় সময় সাপের কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে দেশ জুড়ে সাপে কাটার ঘটনা আশঙ্কাজনক মাত্রায় রয়েছে। সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার হলো- সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। তাই চলুন, সাপে কামড়ালে কি করণীয় এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।

সাপে কাটলে কি করা উচিত

সাপে কাটা ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণরক্ষার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:

- সাপে কামড়ানো ব্যক্তি প্রায় ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে এই মানসিক অবস্থা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় দূর করে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে। বিশেষত নির্বিষ সাপের দংশনে মৃত্যু হয় না। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এগুলো অধিকাংশ সময় শিকারের শরীরে পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।

- ব্যক্তির আক্রান্ত অঙ্গকে অবশ্যই স্থির করে রাখতে হবে। খুব বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। হাঁটাচলা বা অধিক ঝাঁকুনির সম্মুখীন না করে স্থির ভাবে আধশোয়া অবস্থায় রাখা উত্তম।

- ক্ষতস্থানে একটু চাপ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ বেধে দিতে হবে। এই প্রাথমিক চিকিৎসাটি প্রেসার ইমোবিলাইজেশন নামে পরিচিত। ব্যান্ডেজের বদলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।

- রোগী শ্বাস না নিলে অবিলম্বে তার মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

- আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান দিয়ে ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে হাল্কা ভাবে মুছে নিতে হবে।
পড়নে অলঙ্কার বা ঘড়ি কিংবা তাগা, তাবিজ থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। নতুনবা এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর।

সাপে কামড়ালে যে ভুলগুলো করা উচিত নয়

- সাপে কাটা ব্যক্তিকে ওঝার কাছে নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।

- আক্রান্ত অঙ্গে কোনও ধরণের ভেষজ ওষুধ, উদ্ভিদের বীজ, লালা, গোবর, কাদা, বা পাথর লাগানো যাবে না।

- অনেকেই মনে করে থাকেন যে, আক্রান্ত স্থানে মুখ দিয়ে টেনে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সাপের বিষ আসলে লসিকা ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, যা এই পদ্ধতিতে বের করা অসম্ভব। এছাড়া আক্রান্ত স্থানে যিনি মুখ দিচ্ছেন, তার জন্যও বিষয়টি ক্ষতিকর।

- কামড়ানোর স্থানে অনেকে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে বাঁধেন। কিন্তু এমনটি একদমি উচিত নয়। বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কামড়ানোর স্থান থেকে কিছুটা ওপরের দিকে শক্ত করে বাঁধা হয়। মূলত এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এতে বরং উল্টো রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সঠিক রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন বা নেক্রোসিস-এর উপক্রম হতে পারে।

- দংশনের স্থানে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেওয়া যাবে না। বিষ বের করার জন্য অনেকে এমনটি করেন। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সরণাপন্ন হওয়া উচিত।

- ব্যথা দূর করতে মোটেই অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

- কোনও ধরণের রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দেওয়া ঠিক নয়।

- অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার বা ঢোক গিলতে কিংবা কথা বলতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি নাসিক কণ্ঠস্বর, বমি, বা অতিরিক্ত লালা নিঃসরণের মত ঘটনা ঘটে। এগুলোর প্রতিকার হিসেবে তাকে কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা হয়। এই কাজটি একদমি অনুচিত।

শেষাংশ

সাপে কাটা ব্যক্তিকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে এই করণীয়গুলো যথেষ্ট কার্যকর। সাপের বিষ বের করার বা দংশনের ব্যথা উপশমে বিভিন্ন ভুল ধারণাগুলো সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এগুলো পরিহার করে ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আক্রান্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া না করা এবং অতিরিক্ত চাপ প্রশমনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে দংশিত স্থান জীবাণুমুক্ত করা একটি উৎকৃষ্ট উপায়। সর্বপরি, চিকিৎসা সংক্রান্ত এই প্রাথমিক জ্ঞান যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার আত্মবিঃশ্বাস যোগায়।


বিএমইউতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট দেবে ফিজিওথেরাপি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের পুনর্বাসনে নতুন যুগের সূচনা করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থাপিত দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সীমিত পরিসরে পাইলট প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।

চীনের কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটি উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে মিলবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন সেবা। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের সরকার এই প্রকল্পে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের রোবটিক যন্ত্রপাতি অনুদান দিয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে এই সেন্টারটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে ওঠবে।

এই সেন্টারে রয়েছে মোট ৬২টি রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক। এসব রোবটের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব।

বিএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেন্টারটি চালুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে চীনের ৭ সদস্যের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করলে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেন্টারটি পুরোদমে চালু করা হবে।

এই রোবটিক সেন্টার যেসব রোগীরা স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুবিক বৈকল্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, নার্ভ ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা বা শরীরের অঙ্গের দুর্বলতাসহ জটিল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাদের উপকারে আসবে।

বিশেষ করে জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন এবং এখনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই সেন্টারে বিনা মূল্যে রোবটিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।

সেন্টারটি শুধু বিশেষ উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পরিকল্পিত নীতিমালার আলোকে সাধারণ রোগীদের জন্যও ধাপে ধাপে সেবা উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে চেষ্টা থাকবে চিকিৎসার ব্যয় রোগীদের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে রাখার।

এই সেন্টার চালু হলে বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পুনর্বাসন চিকিৎসায় এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে ওঠবে।


দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জন করোনায় আক্রান্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর সারা দেশে এই সময়ের মধ্যে ১১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।

রবিবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। সোমবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পাশাপাশি মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৪৩ জন।

এ পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১৮৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর সারা দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২৩ জনে ঠেকেছে।


ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯২ জন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে এই রোগে এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, এই সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন। চলতি বছরে একদিনে এটিই সর্বোচ্চসংখ্যক হাসপাতালে ভর্তি।

এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় গত ২৪ জুন। সেদিন ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ডেঙ্গু নিয়ে।

চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৭৬৩ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলছে, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন বরিশালের; আরেকজন খুলনার।

মশাবাহিত এ রোগে চলতি মাসে মৃত্যু হলে ছয়জনের। ১৯ জনের প্রাণ গেছে আগের মাসে। এছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন জন, এপ্রিলে সাত জন ও মে মাসে তিনজন ডেঙ্গুতে মারা যান। ফেব্রুয়ারি মাসে কারো মৃত্যুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।


স্বাস্থ্যখাতে ফ্যাসিস্ট আমলে সুবিধাভোগীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন : ডা. রফিক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে ফ্যাসিস্ট আমলে সুবিধাভোগীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন।’

আজ শনিবার ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত কামরাঙ্গীরচর থানা যুবদলের আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই মো.সেন্টুকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে (আইসিইউ) দেখতে গিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

এ সময় তিনি সেন্টুর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি রোগীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর হতে চললেও বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যারা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, পতিত স্বৈরশাসকের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন, জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা করতে দেয়নি এবং জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকদের নানাভাবে নিপীড়ন করেছেন তারা আজও এই বৈষম্যহীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যপদগুলোতে বহাল তবিয়তে আসীন।’

ডা. আরও রফিক অভিযোগ করে বলেন, জাতীয়তাবাদী ঘরানার চিকিৎসকগণ এখনো তাদের কাঙ্ক্ষিত পদায়ন পাননি কিংবা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বরং হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। এইসব ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় হাজারও শহীদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এই অবমাননা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-এসকল দোসরদের দ্রুত অপসারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং বঞ্চিতদের যথাযথ মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস আ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বক্ষব্যাধি, লেপ্রসি ও ক্যান্সার শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জিয়াউল করিম, সদ্য বিলুপ্ত ড্যাবের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার লিয়াকত হোসেন বিদ্যুৎ, সহ-দপ্তর সম্পাদক ও বক্ষব্যাধি শাখার সহসভাপতি আশরাফুল আলম খান, ডা. জাকারিয়া মাহমুদ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন, ডা. সায়েম ফায়েজি, পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. রইস উদ্দিন, ডা. সৈয়দা নুরে জান্নাতসহ বক্ষব্যাধি, ক্যান্সার ও গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

পরে জাতীয় বক্ষব্যাধি, ক্যান্সার ও গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।


২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০৪

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

প্রতিদিনই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৪ জন রোগী।

শুক্রবার (৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ১০১ জন।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ২০৪ জন।

নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৭ জন। ঢাকা বাদে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৪৭ জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ হাজার ৬৬০ জন। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এবং ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ।


ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বরিশালে একজনের মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বরিশালে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। মশাবাহিত রোগটিতে এই বিভাগে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। এই সময়ে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৫৮ জন রোগী।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ১৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ জন। ঢাকা বাদে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৮০ জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ হাজার ৪৫৬ জন। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ।


যৌথ চেষ্টায় ডেঙ্গু মহামারিকে জয় করবে বাংলাদেশ: চীন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সরকার, সমাজিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ চেষ্টায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছে চীন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. লিউ ইউইন বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, প্রতিটি ডেঙ্গু রোগী সর্বোত্তম চিকিৎসা পাবে এবং দ্রুত সেরে উঠবে।’

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় চীন বাংলাদেশের জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধ সামগ্রী হস্তান্তর করে। চীনা সরকার বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ পাওয়ার পরপরই ‘দ্রুত পদক্ষেপ’ নেয় বলেও জানান ড. লিউ।

তিনি বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৭৮৯ বক্স (১৯ হাজার ৭০০ ইউনিট) ডেঙ্গু র‌্যাপিড টেস্ট কিট সংগ্রহ করেছি। এ সহায়তা শুধু মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে নয়, বরং দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতিফলনও।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমাদের বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতার এটি আরেকটি বাস্তব উদাহরণ।’

চীনা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, ডেঙ্গু এখন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিস্তৃত জলাধার থাকায় এখানে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আরও বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাংলাদেশের সরকার যে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন কীটনাশক ব্যবস্থাপনা, নজরদারি ব্যবস্থা উন্নয়ন, জনসচেতনতা বাড়ানো—তা আমরা আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি।’

চীন বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং আরও বেশি মানুষের উপকারে স্বাস্থ্যসেবায় পারস্পরিক বিনিময় ও অংশীদারিত্ব জোরদার করবে বলেও জানান ড. লিউ।

এ সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর উপস্থিত ছিলেন।


ডেঙ্গু: রাজধানীতে আরও একজনের মৃত্যু, সারাদেশে আক্রান্ত ৪১৬

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪১৬ জন রোগী।

বুধবার (২ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরাবরের মতো বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ১৬৫ জন।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৪১৬ জন।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৪ জন। ঢাকা বাদে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩২২ জন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১১ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ।


বাংলাদেশকে ডেঙ্গু প্রতিরোধী উপকরণ দিচ্ছে চীন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে ডেঙ্গু প্রতিরোধী উপকরণ দিচ্ছে চীন সরকার।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে এসব উপকরণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে (ডিজিএইচএস) অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. লিউ ইউইন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বর্ষা শুরু হওয়ার পর দেশে ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জুন মাসে মশাবাহিত এই রোগে ১৯ জনের মৃত্যু এবং ৫ হাজার ৯৫১ জন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এ ছাড়া মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত ও ৩ জনের মৃত্যু হয়।


আরো ১৩ জনের করোনা শনাক্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।


ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

একদিনে রেকর্ড ৪২৯ জন শনাক্ত, চলতি বছর ১০ হাজার ছাড়াল
ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।

এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অঞ্চলভেদে নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগীর তালিকা:

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।


দেশে আরও ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।

রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।

সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।


banner close