রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাতটি কক্ষে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ১৮৪ নম্বর কক্ষে পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে ‘ডাক্তার দেখিয়ে’ বের হন সাদ্দাম হোসাইন ও রোমানা আক্তার দম্পতি। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে আরেকটি রঙিন স্টিকার দিয়েছেন; যাতে একটি কোম্পানির বয়সভেদে ফর্মুলা দুধের (কৌটাজাত গুঁড়া দুধ) নামের পাশে টিক চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনাটি এ বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারির। শিশুটির বাবা সাদ্দাম হোসাইন জানান, মেয়ের ওজন কম, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন। শিশুটির মা বলেন, ‘বুকে দুধ আছে, ডাক্তার বলছে বাবুর ওজন কম, কৌটার দুধ খাওয়ালে ভালো হবে।’
দেশে শিশুদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। সরকারি অনুদানপুষ্ট স্বায়ত্তশাসিত এই হাসপাতালটির সেই কক্ষে ওই দিন রোগী দেখেন দুজন চিকিৎসক। তাদের একজন আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদা মাহিনূর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিই না। তবে কর্মজীবী মা অথবা কোনো মা বেশি পীড়াপীড়ি করলে শুরুতে বুকের দুধের জন্য কাউন্সেলিং করি, না মানলে বাধ্য হয়ে ফর্মুলা দুধ দিতে হয়।’
বিদেশি একটি ফর্মুলা দুধের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধির নির্ধারিত কর্ম-এলাকা এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর। গত পাঁচ বছর ধরে তার প্রাত্যহিক কাজ দুপুর ১২টার পর হাসপাতালটির চিকিৎসকদের ‘সালাম দেয়া’ এবং নার্সসহ অন্য স্টাফদের সঙ্গে ‘হাসি মুখে’ কুশল বিনিময়। তাদের জন্য নানান উপঢৌকনের ব্যবস্থাও করেন তিনি। প্রতিনিধির কাজের ফলাফল হিসেবে হাসপাতাল এলাকায় গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির ফর্মুলা দুধের বিক্রি অন্তত ছয়গুণ বেড়েছে বলে জানান এই প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী জন্মরে প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়। অথচ নগর স্বাস্থ্য জরপি বলছে, ২০২১ সালে শহর এলাকায় এ হার ৫২ শতাংশের কম।
শিশুর বিকাশের জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই।
নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের তথ্য ও জরিপ বলছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি। কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার কমছে। বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে।
নিজস্ব অনুসন্ধান এবং জরিপেও ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ। ‘বাচ্চা শুকনা’ বলে আত্মীয়স্বজনের চাপেও দিতে হয়। কোনো কোনো মা অবশ্য ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবে দেন। অনলাইন প্রচারেও বাড়ছে ফর্মুলা দুধের ব্যবহার।
কর্মস্থলে ফিরতে হবে বলে দুই মাস বয়সে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো শুরু করেন রুবানা আহমেদ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এই কর্মকর্তার কথা, ‘আগেভাগে অভ্যাস না করালে হুট করে ফর্মুলা খাবে না।’ মেয়ে প্রথম ছয় মাসে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় ভুগেছে। আবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের গৃহিণী চায়না আক্তার বলেন, ‘তোলা (গুঁড়া দুধ) খাওয়ালে শিশুর শরীর বাড়ে, তাই জন্মের পরেই দিয়েছি। বাচ্চা মোটাসোটা না হলে শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হতো।’ ইউটিউব চ্যানেলে চিকিৎসকদের ভিডিও দেখে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকে ফর্মুলা দিচ্ছেন বলে জানান সাভারের মোহাম্মদ রনি।
জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশু কী খেয়েছে, এ সময়ে শিশুর রোগে ভোগা, ফর্মুলা দুধের পরামর্শ কার কাছ থেকে এসেছেসহ সাতটি প্রশ্ন রেখে ৭০ জন মায়ের মধ্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে সরাসরি, অনলাইন, মুঠোফোনে। গ্রাম ও শহরের এই মায়েরা বিভিন্ন বয়সের, নানান পেশার।
সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। নিপোর্টের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।
বুকের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ আসা, ফর্মুলা দুধের বিপণনব্যবস্থার প্রভাব, কর্মজীবী নারীদের ছুটির ঘাটতি, স্বজনদের চাপ, অনলাইনে প্রচার, জনসমাগমস্থলে/পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণে মূলত মায়েরা ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।
চিকিৎসকরা দিচ্ছেন ফর্মুলরা পরামর্শ
সকাল ৯টার পর থেকেই ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের ১১, ১২ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদক হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। এ সময় দেখা যায়, সন্তানকে কোলে নিয়ে বাবা অথবা মা হন্তদন্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত কক্ষে ছুটছেন। কেউ বের হন স্বস্তি নিয়ে, কেউ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে। তারা বের হলেই ঘিরে ধরেন ওষুধ কিংবা ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দেখেন চিকিৎসক তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কি না, ফর্মুলা দিয়েছেন কি না। ছবি তোলেন।
এ সময় দেখা যায়, ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে চিকিৎসকরা আলাদাভাবে একটা রঙিন স্টিকার দেন। এতে বয়স অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পাশে টিক চিহ্ন দেয়া থাকে। ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ জন বাবা-মায়ের কাছে এমন স্টিকার দেখা যায়। তারা জানান, চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন। এতে সন্তানদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কামরাঙ্গীরচর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন নুরুন নাহার। তিনি বলেন, প্রতিবার ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন।
চিকিৎসকদের সরবরাহ করা ফর্মুলা দুধের বেশ কিছু স্টিকারের ছবি তুলেছেন এই প্রতিবেদক। এতে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ১৮৪ ও ১৮৫ নম্বর কক্ষ থেকেই এই স্টিকার এসেছে। এই দুটি কক্ষের টেবিলের ওপরওে প্রকাশ্যেই এই স্টিকার রাখা ছিল। হাসপাতালের নথি বলছে, প্রতিটি কক্ষে দুজন করে চিকিৎসক ছিলেন। তারা সবাই হাসপাতালটির আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
বহির্বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর-উজ-জামান বলেন, রোগীর ডায়রিয়া হলে বা আগে থেকে ফর্মুলা দুধ খেলে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেয়া হয়। কিনতে যাতে ভুল না হয়, সে কারণে ব্যবস্থাপত্রে না লিখে স্টিকারে টিক দেয়া হয়। তবে এর বিনিময়ে দুধ কোম্পানির কাছ থেকে কোনো উপহার বা আর্থিক লাভ নেননি বলে জানান তিনি।
এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় কাজ করেন- এমন তিনজন ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধির (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক নতুন কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ফর্মুলা দুধ লেখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই চিকিৎসককে তার কোম্পানি থেকে স্টিকার সরবরাহ করা হয়। অনেক চিকিৎসক আলাদা কাগজেও লিখে দেন। তবে বেশির ভাগ সময় এ পরামর্শ থাকে মৌখিক।
কেন তার কোম্পানির দুধ এই চিকিৎসকরা লিখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে ১২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করি। খাওয়ার পানি, কলমসহ টুকটাক উপহারও দিতে হয়।’ এর বাইরে নিয়মিত মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। আয়োজন করতে হয় বৈজ্ঞানিক সেমিনারের। সেখানে চিকিৎসকদের আলোচক হিসেবে রাখতে হয়, দিতে হয় সম্মানী।
ফর্মুলা দুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখতে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি নমুনা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ আছে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।
ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের যৌথভাবে করা ‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক জরিপ বলছে, মা হয়েছেন এমন ৯৮ শতাংশ নারীর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর। কিন্তু সঠিক পরামর্শের অভাবে তারা পারেননি। প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেয়ার ৬০ শতাংশ পরামর্শ দেন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাদাতারা।
বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ৮ হাজার ৫০০ মা-বাবা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জরপিটি করা হয়। জরিপের প্রকাশকাল ২০২২।
হাসপাতালে জন্ম নেয়ারা ফর্মুলা পায় বেশি
নিজস্ব জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ মা ছয় মাসের আগেই শিশুকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছেন। সরকারি জরিপেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তথ্য বলছে, ঘরে জন্ম নেয়া শিশুদের তুলনায় হাসপাতালে জন্ম নেয়া শিশুরা ফর্মুলা দুধ পায় ২০ শতাংশ বেশি।
স্কুলশিক্ষক সুমি আক্তার সন্তান জন্ম দেন মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে। শিশু জন্মের পর কান্নাকাটি করলে চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে বলেন। বাসায় ফিরে চেষ্টা করলেও শিশু আর মায়ের দুধ মুখে নেয়নি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শিশু জন্মদানের পর চিকিৎসক ও সেবিকাদের মাধ্যমে একই ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন মা রোকেয়া রহমান। তবে এসব পরামর্শ ছিল মৌখিক।
শিশু ও গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশু জন্মের প্রথম তিন দিনে মায়ের বুকে খুব কম পরিমাণে (শাল) দুধ আসে, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ২ চা-চামচ। এই দুধকে অপর্যাপ্ত মনে করেন মাসহ স্বজনরা। এ সময়ে পেটব্যথা, গরমসহ নানা কারণে কান্নাকাটি করে শিশুরা। সিজারের মাধ্যমে সন্তান হলে প্রথম দিন অনেক সময় দুধ নামে না। তখন অনেক অভিভাবক ফর্মুলা দুধ দিয়ে দেন। আবার অনেক চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রলোভনের ফাঁদে আটকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেন। হাসপাতালে বিনা মূল্যে দুধের নমুনাও পান মায়েরা।
হাসপাতাল বা বাড়িতে ডেলিভারির সঙ্গে বুকের দুধ পানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের গর্ভবতী, প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ছাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, সি-সেকশন হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে দুধ নামতে কিছুটা দেরি হতে পারে। এ সময় ধৈর্য ধরে সঠিক পজিশনে নিয়ে শিশুকে বারবার খাওয়াতে হবে। এতে দ্রুত অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে শিশু দুধ পাবে। শিশু কান্না করলেই ক্ষুধা লাগছে, এ ধারণাও দূর করা জরুরি।
বাধ্য হন কর্মজীবী মায়েরা
গর্ভকালীন অবস্থায় অসুস্থ থাকায় সন্তান জন্মদানের বেশ আগেই ছুটি নিতে হয়েছিল সরকারি কর্মকর্তা সোহানা ইসলামকে। চাকরিতে যোগদান করতে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এ নিয়ে তার অনেক আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘অনেকবার মনে হয়েছে সন্তানকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করছি। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে ফর্মুলা দুধ বেছে নিয়েছি।’ একটি স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফরিন শাহনাজও আড়াই মাস বয়স থেকে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বারবার ডায়রিয়া হচ্ছিল, গ্যাসের সমস্যায় ভুগেছে। তবুও ফর্মুলা চালিয়ে গিয়েছি।’ রাত জাগলে সকালে ঠিকভাবে অফিস করতে পারবেন না বলে রাতে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন ব্যাংকার রুমানা সরকার। একই ধরনের কথা বলেন আর কয়েকজন মা।
নিজস্ব জরিপে অংশগ্রহণকারী যেসব মা ছয় মাসের আগেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন, তাদের ৮০ শতাংশ কর্মজীবী। ফর্মুলা দেয়ার পর নানা ধরনের রোগে ভোগার হারও এসব শিশুর বেশি। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার তাড়া থেকে দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেয়া শুরু করেন বলে জানান মায়েরা। সরকারি জরিপও বলছে, শিশু জন্মের প্রথম মাসে যেখানে ৮৫ শতাংশ মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, শিশুর তিন-চার মাসে সেই হার হয়ে যায় ৪০ শতাংশ। সরকারিভাবে মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটি দুবার ছয় মাস করে ভোগ করতে পারেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে এই ছুটি চার মাস।
মায়েরা আরও বলছেন, এর পাশাপাশি শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যে যত্ন ও খাবার দরকার, সে ব্যবস্থা নেই অনেক চাকরিজীবী মায়ের। তবে কোনো কোনো মা ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবেও দেন। কর্মস্থলে এবং পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণেও অনেক মা শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেন।
অনলাইন ফর্মুলা দুধের প্রচার
মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ফর্মুলা দুধের প্রচার জোরেশোরে এখন চলছে অনলাইনে। ফর্মুলা দুধ কোম্পানির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। চিকিৎসকরাও ইউটিউবে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করেন। মায়েদের বিভিন্ন গ্রুপে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়। এমন গুণগান শুনে অনেক মা-ই ফর্মুলা দুধ দেন। এমন একজন মা হচ্ছেন তাসলিমা আক্তার। তিনি ছেলের বয়স দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেন। দুধ শুরু করার কয়েক দিনের মাথায় হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তাসলিমা বলেন, ‘মনে হয়েছে ছেলের ওজন কম। গুঁড়া দুধ খাওয়ালে ছেলের স্বাস্থ্য ভালো হবে। গ্রুপে পোস্ট করে সবার পরামর্শ নিয়ে দুধ দিয়েছি।’ এ রকম দুটি গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেল ঘেঁটে দেখা যায়, তারা ফর্মুলা দুধসহ শিশুখাদ্য বিক্রি করেন। বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়।
মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের এমন একটি সংস্থার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ (নাম না প্রকাশের শর্তে) বলেন, প্রকাশ্য বা অনলাইনে ফর্মুলা দুধের প্রচার নিষিদ্ধ কিন্তু চলছে। শাস্তিযোগ্য এসব ফৌজদারি অপরাধ প্রকাশ্যেই ঘটছে। পর্যবেক্ষণ নেই। শাস্তি হয় না বলেই দিন দিন ফর্মুলা দুধের আগ্রাসন বাড়ছে বলে মন্তব্য এই জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদের।
করণীয় কী
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড) মাহবুব আরেফীন রেজানুর বলেন, ‘ফর্মুলা দুধের আধিপত্য কমাতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান আইনটি সম্পর্কে অংশীদারদের সচেতনতার কাজ জোরেশোরে চলছে। লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে কোনো চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ দিচ্ছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এখন পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একদল চিকিৎসকের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় বলেন, গুঁড়া দুধ কোম্পানি অবাধে প্রচার করছে, মায়েরা প্রভাবিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আইন লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মুত্যৃর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু যেনো ভয়বহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে ঊর্ধ্বগতির আক্রান্তের হারের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯২ জন।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল বিভাগে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ৩৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
রবিবার (২২ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৫ জনে এবং মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জনে।
২৪ ঘণ্টায় ৬২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নীতকরণের লক্ষ্যে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইবি শিক্ষার্থী তানভীর মাহমুদ মন্ডলের প্রতিনিধিত্বে এই দাবিসমূহ জানানো হয়েছে।
২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি রয়ে গেছে। একটি উন্নত, মানবিক ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবহন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপরিহার্য। উপস্থাপিত চার দফা দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের স্থায়ী সংস্কারের লক্ষ্যে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভার আয়োজন করা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা উন্নতিকরণ এবং কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সিট সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পরিবহন পুল থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন অপসারণ এবং চালক ও সহকারীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা এবং পরিবহন সংকট নিরসনে জরুরিভিত্তিতে নতুন যানবাহন সংযোজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর মন্ডল জানান, ‘স্মারকলিপি দিয়েছি। উল্লেখ করা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাজীবন উপভোগ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনাগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ উপস্থাপন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা খুবই যৌক্তিক কিছু দাবি উত্থাপন করেছে৷ কয়েকদিন আগেও আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এর আগেও এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৫২ জন।
শনিবার (২১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটিতে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৫২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৯০ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
সাম্প্রতিক সময়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেড়ে চলেছে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সরকারের দেওয়া হিসাবে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এই সময়ে সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫১ জন। তবে এই সময়ের মধ্যে কারো মৃত্যু হয়নি।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে আক্রান্তের দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৮৬ জন।
শুক্রবার (২০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮ জন। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
এই সময়ের মধ্যে মোট ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ শতাধিকের বেশি।
জানা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে।
বিশেষ করে বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। বরগুনা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদেরও চাপ বেড়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে রোগীর বেড ও জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম দুসপ্তাহেই প্রায় ৫০০ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই শহর এলাকার বাসিন্দা হলেও গ্রামীণ অঞ্চলেও আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকা বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে প্রতিদিন যে হারে রোগী আসছে, তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বেড সংকট, স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’
তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের মশার কামড়ে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হাসপাতাল চত্বরেও মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছি। এবং হাসপাতালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের সেচ্ছাসেবকরা জনসচেতনা মূলক মাইকিং ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে না পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও মশক নিধনে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তবে বরগুনা পৌরসভার অনেক নাগরিক অভিযোগ করছেন, পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। অনেক এলাকায় এখনো মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন ঘরের আশপাশের জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, ড্রাম, কনটেইনার, এসি ট্রে ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া দিনে ও রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার ও মশা নিধনের স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২৮ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি।
বুধবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ।
এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন সাতজন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০৬ জনের।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৫০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। হাসপাতালের পুরাতন ভবনে এই ওয়ার্ডটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সেবা দিতে প্রস্তুত হবে বলে আশা করছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।
এর আগে মেয়র শাহাদাতের নেতৃত্বে এক সভার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালও করোনা রোগীদের সেবায় বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গতকাল মঙ্গলবার পরিদর্শনকালে মেয়র হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান এবং সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। এরপর মেয়র মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২০২৫ (২০ তম ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষের এম.বি.বি.এস কোর্সের অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এস, এম, মোরশেদ হোসাইন, ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল। মান্নান রানা, ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোঃ সান্না উল্লাহ, ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার জনাব তারিকুল ইসলাম তানভীর, ইঞ্জিঃ মো. জাবেদ আবছার চৌধুরী এবং ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কলেজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ.এস.এম. মোস্তাক আহমেদ, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক এবং পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. এ.কে.এম. আশরাফুল করিম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফেজ-১ এর কো-অর্ডিনেটর (ভারপ্রাপ্ত) এবং বায়েকেমিষ্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জেসমীন আবেদীন, ফেইজ-২ এর কো-অর্ডিনেটর এবং ফার্মাকোলজি ও থেরাপিউটিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রোজিনা হক, ফেইজ-৩ এর কো-অর্ডিনেটর (নতুন কারিকুলাম) ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোঃ জালাল উদ্দিন এবং ফেজ-৪ এর কো-অর্ডিনেটর এবং নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। অত্র মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া মেডিকেল কলেজের ইতিহাস, অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা, শিক্ষার্থীদের পেশাগত পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের পরিচিতি এবং ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এম.বি.বি.এস কোর্স কারিকুলাম-২০২১ এর উপর সংক্ষিপ্তভাবে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য তুলে ধরেন। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে পারফরমেন্স বিবেচনা করে ‘বেস্ট ডাক্তার’ হিসাবে নির্বাচিত ডা. অরুনিমা বড়ুয়াকে ‘এস এন্ড এফ করিম ট্রাস্ট’ এর পক্ষ থেকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন যে, বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির কার্যক্রম শীর্ষে রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের আওয়তায় ‘চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার হাসপাতাল এবং রিচার্স সেন্টার’ রয়েছে, যা এক অনন্য উদ্যোগ।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় সম্মিলিতভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে করোনার নতুন অ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার কমানো এবং প্রতিরোধের উপরেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচতে সবার সচেতনতা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি মানবিক চিকিৎসক হওয়ার জন্য তিনি ভর্তিকৃত নতুন শিক্ষার্থীদের পরামর্শ প্রদান করেন।
অত্র মেডিকেল কলেজ এর বায়েকিমিস্ট্র বিভাগের প্রভাষক ডা. জেরিন তাসনিম এবং এনাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. সাদ উল্লাহ চৌধুরীর প্রাণবন্ধ উপস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ প্রতিষ্ঠানের প্রি-ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল বিভাগ সমূহের অধ্যাপকসহ বিভাগীয় প্রধানরা।