রোববার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

মায়ের দুধ পায় না অর্ধেক শিশু, পরিবার ঝুঁকছে ফর্মুলায়

আপডেটেড
১৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৯
মুসলিমা জাহান
প্রকাশিত
মুসলিমা জাহান
প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৭

রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাতটি কক্ষে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ১৮৪ নম্বর কক্ষে পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে ‘ডাক্তার দেখিয়ে’ বের হন সাদ্দাম হোসাইন ও রোমানা আক্তার দম্পতি। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে আরেকটি রঙিন স্টিকার দিয়েছেন; যাতে একটি কোম্পানির বয়সভেদে ফর্মুলা দুধের (কৌটাজাত গুঁড়া দুধ) নামের পাশে টিক চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনাটি এ বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারির। শিশুটির বাবা সাদ্দাম হোসাইন জানান, মেয়ের ওজন কম, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন। শিশুটির মা বলেন, ‘বুকে দুধ আছে, ডাক্তার বলছে বাবুর ওজন কম, কৌটার দুধ খাওয়ালে ভালো হবে।’

দেশে শিশুদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। সরকারি অনুদানপুষ্ট স্বায়ত্তশাসিত এই হাসপাতালটির সেই কক্ষে ওই দিন রোগী দেখেন দুজন চিকিৎসক। তাদের একজন আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদা মাহিনূর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিই না। তবে কর্মজীবী মা অথবা কোনো মা বেশি পীড়াপীড়ি করলে শুরুতে বুকের দুধের জন্য কাউন্সেলিং করি, না মানলে বাধ্য হয়ে ফর্মুলা দুধ দিতে হয়।’

বিদেশি একটি ফর্মুলা দুধের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধির নির্ধারিত কর্ম-এলাকা এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর। গত পাঁচ বছর ধরে তার প্রাত্যহিক কাজ দুপুর ১২টার পর হাসপাতালটির চিকিৎসকদের ‘সালাম দেয়া’ এবং নার্সসহ অন্য স্টাফদের সঙ্গে ‘হাসি মুখে’ কুশল বিনিময়। তাদের জন্য নানান উপঢৌকনের ব্যবস্থাও করেন তিনি। প্রতিনিধির কাজের ফলাফল হিসেবে হাসপাতাল এলাকায় গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির ফর্মুলা দুধের বিক্রি অন্তত ছয়গুণ বেড়েছে বলে জানান এই প্রতিনিধি।

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী জন্মরে প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়। অথচ নগর স্বাস্থ্য জরপি বলছে, ২০২১ সালে শহর এলাকায় এ হার ৫২ শতাংশের কম।

শিশুর বিকাশের জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই।

নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের তথ্য ও জরিপ বলছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি। কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার কমছে। বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে।

নিজস্ব অনুসন্ধান এবং জরিপেও ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ। ‘বাচ্চা শুকনা’ বলে আত্মীয়স্বজনের চাপেও দিতে হয়। কোনো কোনো মা অবশ্য ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবে দেন। অনলাইন প্রচারেও বাড়ছে ফর্মুলা দুধের ব্যবহার।

কর্মস্থলে ফিরতে হবে বলে দুই মাস বয়সে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো শুরু করেন রুবানা আহমেদ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এই কর্মকর্তার কথা, ‘আগেভাগে অভ্যাস না করালে হুট করে ফর্মুলা খাবে না।’ মেয়ে প্রথম ছয় মাসে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় ভুগেছে। আবার টাঙ্গাইলের মধুপুরের গৃহিণী চায়না আক্তার বলেন, ‘তোলা (গুঁড়া দুধ) খাওয়ালে শিশুর শরীর বাড়ে, তাই জন্মের পরেই দিয়েছি। বাচ্চা মোটাসোটা না হলে শ্বশুরবাড়িতে কথা শুনতে হতো।’ ইউটিউব চ্যানেলে চিকিৎসকদের ভিডিও দেখে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকে ফর্মুলা দিচ্ছেন বলে জানান সাভারের মোহাম্মদ রনি।

জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশু কী খেয়েছে, এ সময়ে শিশুর রোগে ভোগা, ফর্মুলা দুধের পরামর্শ কার কাছ থেকে এসেছেসহ সাতটি প্রশ্ন রেখে ৭০ জন মায়ের মধ্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি জরিপ চালানো হয়েছে। সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে সরাসরি, অনলাইন, মুঠোফোনে। গ্রাম ও শহরের এই মায়েরা বিভিন্ন বয়সের, নানান পেশার।

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। নিপোর্টের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।

বুকের দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ আসা, ফর্মুলা দুধের বিপণনব্যবস্থার প্রভাব, কর্মজীবী নারীদের ছুটির ঘাটতি, স্বজনদের চাপ, অনলাইনে প্রচার, জনসমাগমস্থলে/পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণে মূলত মায়েরা ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।

চিকিৎসকরা দিচ্ছেন ফর্মুলরা পরামর্শ

সকাল ৯টার পর থেকেই ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের ১১, ১২ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদক হাসপাতালটির বহির্বিভাগের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। এ সময় দেখা যায়, সন্তানকে কোলে নিয়ে বাবা অথবা মা হন্তদন্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত কক্ষে ছুটছেন। কেউ বের হন স্বস্তি নিয়ে, কেউ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে। তারা বের হলেই ঘিরে ধরেন ওষুধ কিংবা ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দেখেন চিকিৎসক তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কি না, ফর্মুলা দিয়েছেন কি না। ছবি তোলেন।

এ সময় দেখা যায়, ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে চিকিৎসকরা আলাদাভাবে একটা রঙিন স্টিকার দেন। এতে বয়স অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পাশে টিক চিহ্ন দেয়া থাকে। ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ জন বাবা-মায়ের কাছে এমন স্টিকার দেখা যায়। তারা জানান, চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন। এতে সন্তানদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কামরাঙ্গীরচর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন নুরুন নাহার। তিনি বলেন, প্রতিবার ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসক এই দুধ খাওয়াতে বলেছেন।

চিকিৎসকদের সরবরাহ করা ফর্মুলা দুধের বেশ কিছু স্টিকারের ছবি তুলেছেন এই প্রতিবেদক। এতে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ১৮৪ ও ১৮৫ নম্বর কক্ষ থেকেই এই স্টিকার এসেছে। এই দুটি কক্ষের টেবিলের ওপরওে প্রকাশ্যেই এই স্টিকার রাখা ছিল। হাসপাতালের নথি বলছে, প্রতিটি কক্ষে দুজন করে চিকিৎসক ছিলেন। তারা সবাই হাসপাতালটির আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

বহির্বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর-উজ-জামান বলেন, রোগীর ডায়রিয়া হলে বা আগে থেকে ফর্মুলা দুধ খেলে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেয়া হয়। কিনতে যাতে ভুল না হয়, সে কারণে ব্যবস্থাপত্রে না লিখে স্টিকারে টিক দেয়া হয়। তবে এর বিনিময়ে দুধ কোম্পানির কাছ থেকে কোনো উপহার বা আর্থিক লাভ নেননি বলে জানান তিনি।

এই হাসপাতালসহ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় কাজ করেন- এমন তিনজন ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রতিনিধির (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক নতুন কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ফর্মুলা দুধ লেখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই চিকিৎসককে তার কোম্পানি থেকে স্টিকার সরবরাহ করা হয়। অনেক চিকিৎসক আলাদা কাগজেও লিখে দেন। তবে বেশির ভাগ সময় এ পরামর্শ থাকে মৌখিক।

কেন তার কোম্পানির দুধ এই চিকিৎসকরা লিখছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে ১২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করি। খাওয়ার পানি, কলমসহ টুকটাক উপহারও দিতে হয়।’ এর বাইরে নিয়মিত মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। আয়োজন করতে হয় বৈজ্ঞানিক সেমিনারের। সেখানে চিকিৎসকদের আলোচক হিসেবে রাখতে হয়, দিতে হয় সম্মানী।

ফর্মুলা দুধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখতে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি নমুনা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ আছে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও।

ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের যৌথভাবে করা ‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক জরিপ বলছে, মা হয়েছেন এমন ৯৮ শতাংশ নারীর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর। কিন্তু সঠিক পরামর্শের অভাবে তারা পারেননি। প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেয়ার ৬০ শতাংশ পরামর্শ দেন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবাদাতারা।

বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ৮ হাজার ৫০০ মা-বাবা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে জরপিটি করা হয়। জরিপের প্রকাশকাল ২০২২।

হাসপাতালে জন্ম নেয়ারা ফর্মুলা পায় বেশি

নিজস্ব জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ মা ছয় মাসের আগেই শিশুকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছেন। সরকারি জরিপেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তথ্য বলছে, ঘরে জন্ম নেয়া শিশুদের তুলনায় হাসপাতালে জন্ম নেয়া শিশুরা ফর্মুলা দুধ পায় ২০ শতাংশ বেশি।

স্কুলশিক্ষক সুমি আক্তার সন্তান জন্ম দেন মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে। শিশু জন্মের পর কান্নাকাটি করলে চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে বলেন। বাসায় ফিরে চেষ্টা করলেও শিশু আর মায়ের দুধ মুখে নেয়নি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে শিশু জন্মদানের পর চিকিৎসক ও সেবিকাদের মাধ্যমে একই ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন মা রোকেয়া রহমান। তবে এসব পরামর্শ ছিল মৌখিক।

শিশু ও গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশু জন্মের প্রথম তিন দিনে মায়ের বুকে খুব কম পরিমাণে (শাল) দুধ আসে, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ২ চা-চামচ। এই দুধকে অপর্যাপ্ত মনে করেন মাসহ স্বজনরা। এ সময়ে পেটব্যথা, গরমসহ নানা কারণে কান্নাকাটি করে শিশুরা। সিজারের মাধ্যমে সন্তান হলে প্রথম দিন অনেক সময় দুধ নামে না। তখন অনেক অভিভাবক ফর্মুলা দুধ দিয়ে দেন। আবার অনেক চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ কোম্পানির প্রলোভনের ফাঁদে আটকে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দেন। হাসপাতালে বিনা মূল্যে দুধের নমুনাও পান মায়েরা।

হাসপাতাল বা বাড়িতে ডেলিভারির সঙ্গে বুকের দুধ পানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের গর্ভবতী, প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ছাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, সি-সেকশন হলে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে দুধ নামতে কিছুটা দেরি হতে পারে। এ সময় ধৈর্য ধরে সঠিক পজিশনে নিয়ে শিশুকে বারবার খাওয়াতে হবে। এতে দ্রুত অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে শিশু দুধ পাবে। শিশু কান্না করলেই ক্ষুধা লাগছে, এ ধারণাও দূর করা জরুরি।

বাধ্য হন কর্মজীবী মায়েরা

গর্ভকালীন অবস্থায় অসুস্থ থাকায় সন্তান জন্মদানের বেশ আগেই ছুটি নিতে হয়েছিল সরকারি কর্মকর্তা সোহানা ইসলামকে। চাকরিতে যোগদান করতে ছেলেকে তিন মাস বয়স থেকেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। এ নিয়ে তার অনেক আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘অনেকবার মনে হয়েছে সন্তানকে পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করছি। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে ফর্মুলা দুধ বেছে নিয়েছি।’ একটি স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফরিন শাহনাজও আড়াই মাস বয়স থেকে মেয়েকে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বারবার ডায়রিয়া হচ্ছিল, গ্যাসের সমস্যায় ভুগেছে। তবুও ফর্মুলা চালিয়ে গিয়েছি।’ রাত জাগলে সকালে ঠিকভাবে অফিস করতে পারবেন না বলে রাতে ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন ব্যাংকার রুমানা সরকার। একই ধরনের কথা বলেন আর কয়েকজন মা।

নিজস্ব জরিপে অংশগ্রহণকারী যেসব মা ছয় মাসের আগেই ফর্মুলা দুধ দিয়েছেন, তাদের ৮০ শতাংশ কর্মজীবী। ফর্মুলা দেয়ার পর নানা ধরনের রোগে ভোগার হারও এসব শিশুর বেশি। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার তাড়া থেকে দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেয়া শুরু করেন বলে জানান মায়েরা। সরকারি জরিপও বলছে, শিশু জন্মের প্রথম মাসে যেখানে ৮৫ শতাংশ মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, শিশুর তিন-চার মাসে সেই হার হয়ে যায় ৪০ শতাংশ। সরকারিভাবে মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটি দুবার ছয় মাস করে ভোগ করতে পারেন। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারিভাবে এই ছুটি চার মাস।

মায়েরা আরও বলছেন, এর পাশাপাশি শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যে যত্ন ও খাবার দরকার, সে ব্যবস্থা নেই অনেক চাকরিজীবী মায়ের। তবে কোনো কোনো মা ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবেও দেন। কর্মস্থলে এবং পাবলিক প্লেসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকার কারণেও অনেক মা শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেন।

অনলাইন ফর্মুলা দুধের প্রচার

মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ফর্মুলা দুধের প্রচার জোরেশোরে এখন চলছে অনলাইনে। ফর্মুলা দুধ কোম্পানির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। চিকিৎসকরাও ইউটিউবে ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করেন। মায়েদের বিভিন্ন গ্রুপে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়। এমন গুণগান শুনে অনেক মা-ই ফর্মুলা দুধ দেন। এমন একজন মা হচ্ছেন তাসলিমা আক্তার। তিনি ছেলের বয়স দুই মাস পার হতেই ফর্মুলা দুধ দেন। দুধ শুরু করার কয়েক দিনের মাথায় হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তাসলিমা বলেন, ‘মনে হয়েছে ছেলের ওজন কম। গুঁড়া দুধ খাওয়ালে ছেলের স্বাস্থ্য ভালো হবে। গ্রুপে পোস্ট করে সবার পরামর্শ নিয়ে দুধ দিয়েছি।’ এ রকম দুটি গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেল ঘেঁটে দেখা যায়, তারা ফর্মুলা দুধসহ শিশুখাদ্য বিক্রি করেন। বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ফর্মুলা দুধের গুণগান করা হয়।

মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের এমন একটি সংস্থার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ (নাম না প্রকাশের শর্তে) বলেন, প্রকাশ্য বা অনলাইনে ফর্মুলা দুধের প্রচার নিষিদ্ধ কিন্তু চলছে। শাস্তিযোগ্য এসব ফৌজদারি অপরাধ প্রকাশ্যেই ঘটছে। পর্যবেক্ষণ নেই। শাস্তি হয় না বলেই দিন দিন ফর্মুলা দুধের আগ্রাসন বাড়ছে বলে মন্তব্য এই জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদের।

করণীয় কী

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড) মাহবুব আরেফীন রেজানুর বলেন, ‘ফর্মুলা দুধের আধিপত্য কমাতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান আইনটি সম্পর্কে অংশীদারদের সচেতনতার কাজ জোরেশোরে চলছে। লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে কোনো চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ দিচ্ছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এখন পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একদল চিকিৎসকের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় বলেন, গুঁড়া দুধ কোম্পানি অবাধে প্রচার করছে, মায়েরা প্রভাবিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আইন লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮ জন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৪ জন।

বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।


দাঁতের মজ্জা থেকে উদ্ভাবিত স্টেম সেলে মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) ‘ডেন্টাল পাল্প টিস্যু : রিজেনারেটিভ মেডিসিনের নতুন আশা’ শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ইউনিভার্সিটির এ ব্লক অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা’র সভাপতিত্বে ও ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদের (মামুন) সঞ্চালনায় সেমিনারে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে জানানো হয়, দাঁতের মধ্যকার মজ্জা থেকে উদ্ভাবিত স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চিকিৎসা করার সুযোগ রয়েছে। লিভার, কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু প্রতিস্থাপনে এই চিকিৎসাপদ্ধতি কার্যকর। স্নায়ু রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কার্ডিও ভাসকুলারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাতেও স্টেম সেল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে পারলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

সেমিনারে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ক্লিনিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন এবং রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া এফসিপিএস ট্রেনি ডা. সিদ্দিকুল্লাহ, ‘ডেন্টাল পাল্প স্টেম সেলের জীববৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা’ এবং রেসিডেন্ট ডা. কামরুল ইসলাম, ‘ডেন্টাল পাল্প টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহজ পদক্ষেপ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এসময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির কনজারভেটিভ ডেনটিসট্রি এন্ড এন্ডোডনটিকস বিভাগে স্টেম সেল প্রয়োগের মাধ্যমে দাঁতের আঘাতজনিত ও বিভিন্ন রোগের ফলে মরে যাওয়া দাঁতের মজ্জা পুনরুজ্জীবিত করার কাজ সফলভাবে চলছে। রেসিডেন্টগণসহ উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। বিএমইউ’র অন্যান্য বিভাগে দাঁতের মজ্জা থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রয়োগের উদ্দেশ্যে একটি স্টেম সেল ব্যাংক চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই স্টেম সেল ব্যাংকিং সেবাকে বিএমইউ’র এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেন্ট্রাল রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, স্টেম সেল থেরাপি যে একটি সফল চিকিৎসা পদ্ধতি তার প্রমাণ কিংস কলেজ অব লন্ডনের গবেষক দলের উদ্ভাবনী পদ্ধতি। যারা এক যুগ ধরে গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন প্রাপ্ত বয়স্কদের পড়ে যাওয়া দাঁতের ফাঁকা স্থানে নতুন করে দাঁত গজানো সম্ভব।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান প্রশাসন রোগীদের সুবিধার্থে সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করতে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিএমইউ’তে স্টেম সেল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা বা স্টেম সেল ব্যাংকিং সেবাকে পুরো মাত্রায় চালুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩১ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এসময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী।

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২ হাজার ৩৪৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ হাজার ১৭৬ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মারা গেছেন ৫৭৫ জন।


সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘সংযোগ’ প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান

প্রথম মা-বাবা হতে যাওয়া দম্পতির স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বিনিময়
প্রথম মা-বাবা হতে যাওয়া দম্পতির স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বিনিময়
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রথমবারের মতো মা-বাবা হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন, এমন দম্পতিদের জন্য প্রয়োজন প্রসবোত্তর যত্নের এবং প্রসবোত্তর পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। প্রথমবারের মা-বাবাদের প্রসবপরবর্তী সেবার হার ও মান বৃদ্ধি করা এবং প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ‘সংযোগ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।

গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে সেভ দ্য চিলড্রেনের আয়োজনে প্রকল্প সমাপনী অনুষ্ঠানে সংযোগ প্রকল্পের লক্ষ্য, কার্যক্রম ও নানা সাফল্য তুলে ধরা হয়। নতুন মা-বাবা হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন, এমন দম্পতির স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এই প্রকল্প তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সংযোগ প্রকল্পের এই সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসি এবং এএইচ প্রোগ্রামের লাইন ডাইরেক্টর ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম বিভাগের পরিচালক মো. তসলিম উদ্দিন খান, পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর, প্ল্যানিং ইউনিট, সাবিনা পারভীন, পরিচালক, অর্থ, মোঃ এনামুল হক, পরিচালক, অ্যাডমিন, ডিজিএফপি, মীর সাজেদুর রহমান, পরিচালক, এমসিএইচ-সার্ভিসেস ডা. মো. সুলতান আহমেদ প্রমূখ। এই আয়োজনের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ, এনডিসি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারী ইউনিটের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

আয়োজনের বিশেষ অতিথি সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত বলেন, “সংযোগ মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই পরিবর্তন এনেছে। সহজ পদক্ষেপ যেমন প্রথমবারের মতো বাবা-মায়ের জন্য আমন্ত্রণপত্র এবং প্রসবের আগে কাউন্সেলিংয়ের এর বিরাট প্রভাব রয়েছে।” প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ, এনডিসি বলেন, “সংযোগ প্রকল্প থেকে উদ্ভাবনী ধারণা, যেমন পিডিসিসি এবং প্রথমবারের মতো মায়েদের জন্য আমন্ত্রণপত্র দেখে আমি খুবই আনন্দিত। প্রকল্পের গবেষণাটিকে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি কাউন্সেলিংয়ের উন্নয়ন, কম বয়সে মাতৃত্বের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং মাঠকর্মীদের অনুপ্রাণিত করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারী ইউনিটের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “আমাদের দেশে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এখনও একটি গুরুতর সমস্যা, এবং সংযোগ প্রকল্প এটি মোকাবেলায় আমাদের শক্তিশালী অভিজ্ঞতা দিয়েছে।” পাশাপাশি এই উদ্যোগকে তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

সংযোগ প্রকল্প পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে "জিরো হোম ডেলিভারী" ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে যার মাধ্যমে প্রকল্পটি তার কর্ম এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব নিশ্চিতে কাজ করেছে এবং বাড়িতে প্রসব না করানোর তাগিদ দিয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের এই প্রকল্পের আরেকটি বড় সাফল্য হলো, পিএনসি প্রি-ডিসচার্জ কাউন্সেলিং চেকলিস্ট যা সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে ব্যবহারের মাধ্যমে প্রসব পরবর্তী সেবার মান বৃদ্ধি করা। সেভ দ্য চিলড্রেন ও রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টারের (রিক) সহযোগিতায় প্রকল্পটির নেতৃত্বে ছিল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। নোয়াখালী ও মাদারীপুর জেলার মোট ৮টি উপজেলায় ২০১৯ সাল থেকে কাজ করেছে সংযোগ প্রকল্প।


শিশুদের পেটের চর্বি কমাতে কী করবেন?

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

মেড ভুরি নিয়ে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন থাকেন না এমননিটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিণত বয়সের সচেতন সবাই এটি নিয়ন্ত্রণে বেশ চেষ্টা করেন—নিয়ন্ত্রণ করেন খাদ্যাভাস, করেন নানারকম ব্যায়াম বা শরীরচর্চা।

তবে এটি যে শুধুমাত্র পরিণতদের জন্য জরুরি, তা কিন্তু নয়—শিশুদের জন্যও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিশুদের পেটের চর্বি কমাতেও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। শিশুদের খাদ্যাভাস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কীভাবে শরীরচর্চা করে চর্বি কমানো যায় আজ সে বিষয়ে গবেষকদের মতামত তুলে ধরব।

অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা বলছেন, শিশুদের পেটের অতিরিক্ত মেদ কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো একটি মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চ বা ব্যায়াম হলো এই মিশ্র পদ্ধতি।

শনিবার (১২ এপ্রিল) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের সমন্বয় শিশুর স্থূলতা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৮ হাজার ১০০ জনের বেশি শিশুর ওপর পরিচালিত ৩৪টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

চার্লস স্টার্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, পেট এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর চারপাশে জমা হওয়া চর্বি সাধারণ স্থূলতার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী।

জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, কোমরের আকার কমাতে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস, শুধুমাত্র ব্যায়াম, সম্পূরক বা ওষুধের মতো স্বতন্ত্র কৌশলগুলোতে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখা যায়নি।

গবেষণায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে সফল কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং সপ্তাহে ১৫০ মিনিট পর্যন্ত শারীরিক ব্যায়াম বা কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী শৈশবকালীন স্থূলতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে আনুমানিক ৯ কোটি ৪০ লাখ মেয়ে এবং ৬ কোটি ৫০ লাখ ছেলেকে প্রভাবিত করেছিল। তাই এই সংখ্যানুপাতিক ফলাফল জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।

গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, উদ্ভুত এই সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকার, স্কুল এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর এমন উদ্যোগ নিলে এর ফলাফলগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অপুষ্টি দূরীকরণ এবং অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হ্রাস করার বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলোকে পূরণে সহায়তা করবে।


আবারও ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কা

১ দিনে ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১০
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছরই এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সংক্রমিত সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মার্চ থেকে তা কমে আসে, অন্তত আগের বছরের তুলনায়। তবে গত বছর আগস্ট থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণের সংখ্যা।

অন্যদিকে চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে। যাদের মধ্যে ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ জন, আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬ জন রোগী।

এদিকে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। গত বছর প্রথম ৯ মাসে ১৬৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু গত সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ৮০ জন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ।

এ বছরও ডেঙ্গু সংক্রমণের সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শুরু না হতেই চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় এ আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুরোপুরি বৃষ্টি শুরু হলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে আশঙ্কা তাদের। তাই এখুনি ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যত পদক্ষেপই পারবে এ থেকে পরিত্রাণ মিলাতে।

ডেঙ্গু মূলত বর্ষাকালের রোগ। ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ে আগস্ট মাসে। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে সেই চিত্রের কিছুটা পরিবর্তন হয়। এখন ডেঙ্গু রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে হচ্ছে। ২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় অক্টোবর মাসে। এবারও এ মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কার কারণ আগের মাসগুলোর অস্বাভাবিক বৃষ্টি।


টানা ছুটিতে কীভাবে চলছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো

আপডেটেড ১ এপ্রিল, ২০২৫ ২২:৪৩
unb

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিন ছুটিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও ব্যাংক বন্ধ থাকলেও হাসপাতাল বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। ঈদের সময় হাসপাতালগুলোতে রোগীরা আদৌ কাঙ্ক্ষিত সেবা পান কিনা এবং কোন প্রক্রিয়ায় এ সেবা দেওয়া হয়—সেসব নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল জাগে।

ঈদের ছুটিতে সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত রোগী আছে। যদিও ছুটির এ সময়ে অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকদের পদচারণা কম; তবে রোগীদের ভাষ্যমতে, মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের খোঁজ খবর রাখছেন; আছেন নার্সরাও।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন প্রায় ৫০০’র মতো রোগী আছে হাসপাতালটিতে। এদের মধ্যে অনেকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দেওয়া হয়নি ছাড়পত্র। ঈদের সময় জ্যেষ্ঠ ডাক্তাররা আসবেন কিনা বা এই সময়ে কতটুকু চিকিৎসাবা পাবেন—এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ রোগীদের কপালে।

কিডনিতে পাথর নিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সোহরাওয়ার্দীতে ভর্তি আছেন হবিগঞ্জ জেলার আহাদ মিয়া (৬০)।

পেশায় দিনমজুর আহাদ বলেন, ‘ডাক্তার কিডনি ওয়াশ করছে। তবে এখনও কিছু পাথর আছে। ডাক্তারই বলছে ঈদ এখানে করতে। এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি হয় নাই। ঈদের এ কয়দিনের ছুটিতে ডাক্তার রেগুলার আসছে। দেখি সামনের দিনগুলাতে কী হয়!’

বরগুনা থেকে মূত্রথলিতে টিউমার নিয়ে ২০ দিন ধরে হাসপাতালে আছেন সফেদ হাওলাদার (৭২)। এবারের ঈদ তাকে হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছে। চিকিৎসকরা আগামী ৫ এপ্রিল ঈদের ছুটির মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সফেদের মেয়ে পারভীন আক্তার (৪০)।

তিনি বলেন, ‘ঈদের এ কয়দিনের ছুটিতেও ভালো সেবা পাচ্ছি। তবে বড় ডাক্তার না থাকায় ঈদের পর অপারেশন হবে। আগের থেকে আব্বার অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো।’

ঈদের সময় ডাক্তার-নার্স কম থাকা নিয়ে হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স সাধনা হালদার বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের থেকে ঈদের ছুটির এ সময়ে হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কম থাকে। তবে এটা ভাবার কারণ নেই যে, হাসপাতাল নার্স-ডাক্তারশূন্য থাকবে। যেকোনো রোগীর জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার মজুত থাকেন। ঈদের নামাজের সময় বা দুপুরের দিকে অন্য ধর্মাবলম্বী ডাক্তার-নার্সরা ডিউটি করেন। এতে করে সংকটময় কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না।’

হাসপাতালটির আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি গোমেজ বলেন, ‘ঈদের আগে অনেকেই নিজ থেকে রিলিজ চায়। তবে সিরিয়াস রোগীদের রিলিজ দেওয়ার সুযোগ নেই। ওষুধ দেওয়া, ড্রেসিং করানো, ইনজেকশন পুশের মতো কাজ রোগী বাসায় নিজে করতে পারবে না, আবার এর জন্য তার সিনিয়র ডাক্তারদেরও প্রয়োজন নেই। হাসপাতালে থাকলে প্রাথমিক সেবাগুলো নার্স ও মেডিকেল অফিসারই নিশ্চিত করতে পারেন।’

রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ঘুরেও দেখা যায় একই দৃশ্য। ঈদের ছুটিতে জরুরি বিভাগে ডাক্তারদের তোড়জোড় থাকলেও ভর্তি থাকা রোগীদের ওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারদের আনাগোনা অনেকটাই কম।

হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৫) বলেন, ‘ডাক্তারদের সেবায় কোনো গাফলতি নেই। কিন্তু শুনছি ঈদে বড় ডাক্তাররা আসবেন না। তাদের দেখলে মনে জোর পাই। তারা না আসলে একটু ভয় ভয় লাগে।’

গোপালগঞ্জ থেকে আসা আরেক রোগীর আত্মীয় মিশকাত (২৮) বলেন, ‘ছুটির মধ্যে সেবা পাচ্ছি, কিন্তু যা পাচ্ছি সেটি আসলে আশানূরূপ নয়। তবে শুনেছি যেকোনো প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতালে সেবা ভালো হয়।’

জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমার্জেন্সি ওটি (জরুরি অস্ত্রোপচারকক্ষ) ও ল্যাব সার্বক্ষণিক চালু রাখতে দেশের হাসপাতালগুলোকে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে ছুটি নির্ধারণ করা হবে।

ঈদের তিন দিন বন্ধ সরকারি হাসপাতালের আউটডোর সেবা। এ ব্যাপারে ছুটি শুরুর আগে কথা হয় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও পরদিন আউটডোর সেবা বন্ধ থাকবে। তবে এর মানেই এই না রোগী আসলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আউটডোরে রোগী আসলে তাদের জরুরি বিভাগের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হয়। রোস্টার অনুযায়ী জরুরি বিভাগ চলে।’

‘চেষ্টা থাকে ঈদের দিনটা অন্য ধর্মাবলম্বী ডাক্তারদের দিয়ে জরুরি বিভাগ চালানোর। তবে ঈদের ছুটি হোক বা অন্যকিছু, রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে মিস ম্যানেজমেন্ট (অব্যবস্থাপনা) এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কর্তৃপক্ষের।’

তবে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার মান ভালো দাবি করা হলেও ঈদের দিন প্রাইভেট হাসপাতালে ল্যাব কার্যক্রম প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়—এমন অভিযোগ এসেছে রোগীদের কাছ থেকে।

ভুক্তভোগী এমন একজন রোগী সাব্বির হোসেন (৩৭) বলেন, ‘এক বছর আগে ঈদের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ি। সকালে ডাক্তারের পরমার্শ অনুযায়ী ইমার্জেন্সি টেস্টের জন্য কম করে হলেও পাঁচ-ছয়টা হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে। পরে আরেক ডাক্তার আত্মীয়ের মাধ্যমে তদবির করে টেস্ট করানো গেছে।’

প্রাইভেট হাসপাতালে ঈদের আগে রোগীদের একরকম জোরপূর্বক রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়, সিনিয়র ডাক্তাররা আসেন না, নার্সদের সেবা পাওয়া যায় না—এমন সব অভিযোগের ব্যাপারে রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. খান রাওয়াত বলেন, ‘ঈদের আগে রোগীরা নিজেরাই বাসায় ফেরার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। অনেক সময় ডাক্তারের সাজেশন না মেনেই তারা বাসায় ফিরতে চান। তাদের মনের অবস্থাটাও আমরা বুঝি। কে না চায় নিজ পরিবারের সঙ্গে শান্তিমতো ঈদ করতে! তাই আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে ঈদের আগে খুব সিরিয়াস কিছু না হলে যেসব রোগী রিলিজ চাইছেন, তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, ঈদের দিনে ডাক্তার-নার্স ছাড়া হাসপাতালগুলো বিরানভূমিতে পরিণত হয়। আসলে মোটেও এমন কিছু নয়। নামাজের পর, আবার দুপুরের পর সিনিয়র ডাক্তারা হাসপাতালে এসে ঘুরে যান; রোগীদের খোঁজখবর নেন। সিরিয়াস কিছু হলে মেডিকেল অফিসাররা যখন তখন তাদের (সিনিয়র ডাক্তার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই এটা ভাবার কারণ নেই যে, ঈদ বা ছুটি বলে রোগীদের চিকিৎসাসেবার বিন্দুমাত্র গাফলতি হয়।’

এদিকে, ঈদের দিন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য বিশেষ অ্যাপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকালে রোগীদের সেমাই খাওয়ানো হয়েছে; সঙ্গে ছিল পাউরুটি, কলা, দুধ, ডিম ও বিস্কুট। দুপুরে পোলাওয়ের সঙ্গে মুরগির রোস্ট, রেজালা, ডিম কোরমা ও কোক দেওয়া হয়। অনেক হাসপাতালে রোগীদের খাওয়া শেষে আপেল কিংবা কমলাও দেওয়া হয়। আর রাতে নিয়মানুযায়ী থাকে ভাত, ডাল ও সবজি।

তবে আপ্যায়ন যেমনই হোক, হাসপাতালে ঈদ কাটানো একেবারেই কাম্য নয় রোগীদের। আর বাধ্য হয়ে যদি হাসপাতালে থাকতেই হয়, তাহলে পূর্ণাঙ্গ সেবার প্রত্যাশা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের।


ঈদে খোলা ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব বিভাগ খোলা রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা, হেড ইনজুরি, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল্যুর, রেসপাইরেটরি ফেইল্যুর (তীব্র শ্বাসকষ্ট), অপারেশন-পরবর্তী জটিলতা, সিজার-পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা, জরুরি ডায়ালাইসিস, অপরিপক্ব শিশুর সর্বাধুনিক ব্যবস্থাপনাসহ সব জটিল ও মুমূর্ষু রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালের সিসিইউ, সিআইসিইউ, আইসিইউসহ আন্তঃবিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
সেইসঙ্গে হৃদরোগ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা এবং শিশুরোগ ও নবজাতকের বহি:বিভাগসহ সার্বক্ষণিক চালু থাকবে জরুরি বিভাগ। জরুরী প্রয়োজনে অথবা ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য ফোন করুন ১০৬৬৭ অথবা ০১৮৪১৪৮০০০০।


বিশ্বে চতুর্থ দূষিত শহর ঢাকা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৯ মার্চ, ২০২৫ ১৬:৫৭
unb

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। নগরীর এই বাতাসকে বাসিন্দাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টার ২০ মিনিটে ১৫৮ একিউআই স্কোর নিয়ে শহরটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে আবারও বাড়িয়ে তুলেছে।

নেপালের কাঠমান্ডু, থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই এবং মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন যথাক্রমে ১৯৪, ১৮১ এবং ১৭১ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ’মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ’সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ’অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ’খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এছাড়া ৩০১ এর বেশি হলে ’বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো-বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।


২৯ মার্চ ও ২ এপ্রিল খোলা থাকবে বিএমইউ বহির্বিভাগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

পবিত্র ঈদ উল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। রোগীদের সুবিধার্থে শনিবার (২৯ মার্চ) ও বুধবার (২ এপ্রিল) খোলা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগ।

এ দুদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে।
হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবে ক্দর উপলক্ষে শুক্রবার (২৮ মার্চ) এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল শুক্রবার বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে ২৯ মার্চ শনিবার থেকে ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।
এদিকে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


পাঁচ দফা দাবিতে খুমেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

পাঁচ দফা দাবি নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে রোগীদের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।

আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) সভাপতি ডা. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছে, যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি আত্মঘাতী। আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যখাতের বিপ্লব সাধনের জন্য পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি।’

এছাড়া আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান আইডিএ সভাপতি ডা. আরাফাত হোসেন।

পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো—

১. ‘এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না’—বিএমডিসির এই আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে ও বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সালে হাসিনা সরকার ম্যাটসদেরকে বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া শুরু করেছে, তাদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

২. উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি ড্রাগ লিস্টের বাইরে ড্রাগ প্রেসকিবেল করতে পারবে না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।

৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে—

ক. দ্রুত ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে সকল শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে পূর্বের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে।

খ. প্রতিবছর ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

গ. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।

৪. সকল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। এরইমধ্যে এসএসসি পাশ করা (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের স্যাকমো পদবি রহিত করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।


পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ সরকারের

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে শূন্য পদ পূরণে ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের এ অধিবেশন হয়।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ডিসিরা নানান রকমের প্রশ্ন করেছেন। বিশেষ করে হাসপাতাল সংক্রান্ত সমস্যা, মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত সমস্যা, নানান সমস্যার কথা বলেছেন। সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমরা জানি। আমরা চেষ্টাও করছি সেগুলো এড্রেস করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধমূলক কিছু করা উচিত। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক হচ্ছে, এর কারণগুলো কি, এগুলোর জন্য আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কি করতে পারি? ছোট ছোট বাচ্চারা এখন ই-সিগারেটের অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগটা নেই।’

‘আইনের প্রয়োগটা দিয়ে যারা দুষ্টামি করছে, তাদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়, তাও আমরা তাদের বলার চেষ্টা করেছি,’ বলেন নুরজাহান বেগম।

বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘তাদের (ডিসি) দিক থেকে যেসব ইনপুট এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কিছু জায়গায় অসঙ্গতি যেমন- জনবলের অভাব রয়েছে। অবকাঠামো তৈরি হয়ে আছে, সেগুলো ফাংশনাল করা যাচ্ছে না। এই সমস্যাগুলোর কথা তারা বলেছেন। কোথাও ৫০০ শয্যার জায়গায় এক হাজার ২০০ রোগী থাকছে। কোথাও কোথাও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এগুলো প্রতিষ্ঠা করার চাহিদা রয়েছে বা এগুলো কার্যকর করার জন্য বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বেআইনি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে ওনারা (ডিসি) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যেন আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামোর পাশে থাকেন, সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। সেটা মোটা দাগে এই স্বাস্থ্যের যে জনবল কাঠামো, সেটা নিয়ে আরও ভালো স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব। আমরা তাদের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছি।’

‘স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা একটি রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী রূপান্তরের মৌলিক উপাদান। আমরা আশা করব জেলা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসন রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী রূপান্তরে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

বিশেষ সরকারী বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিনে স্পষ্ট দেখেছি যে, এন্ট্রি পদে প্রায় ৫ হাজারের বেশি পদে চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ পদ এবং অন্যান্য আধুনিক হাসপাতালগুলোতে আমাদের পদের প্রয়োজনীয়তা আছে। পদ সৃষ্টি এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার পদ সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইউনিয়নেও যেমন পদের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি মেডিকেল কলেজেও রয়েছে।’

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে চেষ্টা করছি আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনে যদি এই উদ্যোগটি সফল হয়; অল্প দিনে বিশেষ বন্দোবস্তে যদি আমরা নতুন পদে জনবল নিয়োগ করতে পারি; তখন এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হবে।’

‘শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন সর্বোচ্চ অ্যাফোর্ড দিচ্ছে। চিহ্নিত করে শূন্য পদ পূরণে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভব সেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে, যেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সম্ভব সেগুলো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই শূন্য পদপূরণ আমাদের একটি অগ্রাধিকার। যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের সৃজন করা প্রয়োজন, অন্যান্য ক্ষেত্রে শূন্য পদপূরণ অগ্রাধিকার।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, আহতদের চিকিৎসা নিয়ে যেটুকু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, আমরা মনে করি ১২-১৪ হাজার আহতের তুলনায় সে সংখ্যাটা আসলে খুবই কম। অসন্তোষের মাত্রা কোনোভাবেই এক শতাংশও না।

ওষুধের ভেজাল রোধ করে মান রক্ষায় সব জেলায় মিনি ল্যাব সম্প্রসারণ করতে হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছি। আমরা কখনোই টাকার দিকে তাকাইনি। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের চিকিৎসা করার জন্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তারদেরও এনেছি।’

তিনি বলেন, আমরা তাদের ট্রমাটা ওইভাবে এড্রেস করতে পারছি না। এটা (চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ) আস্তে আস্তে কমে যাবে, আমরা তাদের সমন্বিতভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টাও করছি। আমরা তাদের পুনর্বাসন করলে আর অসন্তোষ থাকবে না।


দেশে একমাত্র এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী সানজিদা আক্তার মারা গেছেন। মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তারা বলেন, ‘এইচএমপিভির একটা কেসই আমরা এ বছর পেয়েছি। এই রোগী গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মারা যান। শুধু এইচএমপিভির কারণে মারা গেছেন, তা মনে হচ্ছে না।’

‘এর সঙ্গে আরও একটি অর্গানিজম পেয়েছি। এ ছাড়া তার অনেকগুলো জটিলতা ছিল। শুধু এইচএমপিভি ভাইরাসের কারণে তিনি মারা গেছেন এমনটি বলা যাবে না। এইচএমপিভি ভাইরাসে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

এ বিষয়ে দুপুর সোয়া ১ টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফ করবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

গত রোববার (১২ জানুয়ারি) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ভাইরাসটিতে একজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় বলে জানা গেছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘এইচএমপিভি নামক ভাইরাসটিতে প্রতিবছরই দু-চারজন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন।’

চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং বলেন, শীত মৌসুমে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।


banner close