করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর পুরুষের তুলনায় নারীর জটিলতা দেড় থেকে চার গুণ বেশি। অপরদিকে, যারা করোনাতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের জটিলতা হাসপাতালে যাদের ভর্তি হতে হয়নি তাদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি। সেইসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকিতে থাকতে হয়েছে।
মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যৌথভাবে ‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনারে এক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য জানায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসের ফলো-আপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়ায় প্রকাশিত হয়। এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা যেখানে দেখা যায়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ওই সেমিনারে ‘লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন ফর ফিজিশিয়ানস’ শীর্ষক একটি নির্দেশিকাও উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি পরিচালিত হয় ইউএসএআইডির অর্থায়নে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী, যারা করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তাদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন বা পা ফুলে যাওয়া) এবং স্নায়বিক (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিম ঝিম করা ও ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে আবার পৃথক; পুরুষের তুলনায় নারীদের এই জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার গুণ বেশি। আবার যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের আইসিইউ দরকার হয়েছিল তাদের, যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি তাদের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তারা জানান, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার দুইটি করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জনকে নিয়ে এই গবেষণা করা হয়। তাদের করোনা পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। এসব নারীদের স্নায়বিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তাদের গত দুই বছর ধরে ফলো-আপে রাখা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করোনা রোগী সুস্থ হওয়ার পর এবং নিয়মিত ওষুধ খাবার পরও তাদের রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা ছিল যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি। তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের ইনসুলিন প্রয়োজন হয়েছিল বেশি।
এটি শঙ্কার বিষয় মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১ হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নতুন করে কিডনি জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। তবে এখানে স্বস্তির যে তাদের জটিলতাগুলো কমানো গেছে।
তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্ণতার মতো কিছু বিষয় করোনা থেকে সেরে ওঠার ৫ মাস পরও সেভাবে কমানো যায়নি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা থেকে সেরে ওঠাদের প্রয়োজনীয় ফলো-আপ এবং চিকিৎসা নিতে হবে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের হৃদরোগ জটিলতার জন্য নিয়মিত ফলো-আপে থাকতে হবে।
আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ এটি দেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের জন্য লং কোভিড চিকিৎসায় ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অভাবে সহজে নির্ণয় করা যায় না এমন কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর তাই প্রস্তাবিত গাইডলাইন চিকিৎসকদের সর্বাধিক সাফল্যের সঙ্গে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করবে।’
আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘করোনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এটি প্রমাণিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ যৌথভাবে আরও নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম।
ইউএসএআইডির হেলথ এক্সপার্ট ডা. সামিনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কী ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং তার ব্যাপ্তি কেমন ছিল সেটা অজানা ছিল। কিন্তু এই গবেষণা সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৭ মে সকাল ৮টা থেকে ২৮ মে সকাল ৮টা) ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭ জন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৫৮ জন আর ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নয়জন।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২০৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ১৮০ জন, আর অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ২৯ জন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৭৭১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু না হলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এত মৃত্যু ও রোগী এর আগে দেখা যায়নি।
এদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, দেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, কারণ এ সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকা মহানগরীর পর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে। কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত বছরের মতো চলতি বছরেও বছরের প্রথম মাসে রোগীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তাতে কক্সবাজার জেলা হতে চলেছে ডেঙ্গুর হটস্পট। আর কক্সবাজারে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা কঠিন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের কালচার আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না। আর কক্সবাজারে বাংলাদেশিদের মধ্যে ডেঙ্গুতে শনাক্ত হয়েছেন ৪২৬ জন। অর্থাৎ কক্সবাজারে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঢাকার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, কারণ এ সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৭০৪ জন। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনকার তথ্যে অর্ন্তভুক্ত হয় না। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত বা মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়, সেখানেও রোহিঙ্গাদের তথ্য থাকে না। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাজমুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাদের তথ্য আমরা একসঙ্গে আনি না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব করি।
অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ । সেইসঙ্গে কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ছড়ানো এই সংখ্যাটাও উপেক্ষা করার মত নয়।
নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ওয়াসার পানি সঠিক ব্যবস্থাপনায় ধরে রাখা গেলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানি সরবরাহের ব্যবস্থা খুব কম। ফলে তারা বিভিন্ন গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ এবং অনেক সময় পানি খোলা পাত্রে রেখে দেয়। এ ছাড়া তাদের সচেতনতার বিষয়টি আরও কম। যার কারণে সেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি।
‘ঢাকায় জনগোষ্ঠী বেশি হলেও সেখানে জায়গা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জায়গা কম মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ৬৬ জনের দেহে জ্বরটি শনাক্ত হয়েছে’, যোগ করেন নাজমুল ইসলাম।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি বেশি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সেটি বলা এই মুহূর্তে কঠিন। রোগীদের তথ্য যাচাই করে তারপর বলা যাবে। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।
মৌসুমের আগেই ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণে ইতোমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংবাদ সম্মেলনে ফের তার পুনরাবৃত্তি হয়। ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জনঘনত্বের মত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে।
সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়। এরই মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে যেটুকু হয়েছে, তা অন্যান্য সময়ে হয়নি।
সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমের সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এরই মাঝে সিটি করপোরেশনগুলোকে জানিয়েছি, খুব দ্রুত যদি মশার স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা তাদের ম্যাপিং করে জানিয়ে দেই, কোথায় বেশি ছড়াচ্ছে।
‘তাদের জায়গা থেকে আরেকটু বেশি অ্যাক্টিভ হতে হবে। যেহেতু আমরা জানিয়ে দিচ্ছি, কোথায় কী হচ্ছে, তাই তাদের উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, লার্ভা ধ্বংসসহ তারা যেসব ব্যবস্থা নেন, সেগুলোর মাধ্যমে যেন আমরা ভেক্টরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি’, বলেন আহমেদুল কবির।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কাজী তারিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ২০০০ সালে এটা বাংলাদেশে আসার পর মাঝে পরিস্থিতি ভালো গেছে, কোভিডের আগের বছর আমরা একটা বড় সংক্রমণ দেখেছি, গত বছর দেখলাম, আর এবার আমরা অনুমান করছি, এবারও হয়তো এমন কিছু একটা হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছাড়া মে মাসে এখন পর্যন্ত ৭৬৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।
রোগী জটিলতার ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে। ঠিক ব্রাজিলের মতই। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেই আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি। অথচ এটি সেভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া।
ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, জানুয়ারি মাসের পর থেকে আমাদের অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার ডাবল পরিমাণ ডেঙ্গু কেইস চলে আসে। তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেল যখন তখন বৃষ্টিপাত, বাতাসের গতি কত ছিল তা দেখে কিন্তু অনুমান করা হয়েছে, প্রাক-মৌসুমেই ডেঙ্গু কেইস বেশি হবে।
সরকারি হাসপাতালে ১০০, বেসরকারিতে ৫০০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। আর সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে ১০০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দিয়েছি। এ গাইডলাইন অনুযায়ীই সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালে শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীদের হিসাবের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যাপারে ‘অগ্রগতি হয়েছে’ বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ডা. আহমেদুল কবির বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে করণীয় কী হবে, সে বিষয়ে প্রতিটি হাসপাতালকে নির্দেশনা দেয়া আছে। রোগী বাড়লে অতিরিক্ত আবাসিক চিকিৎসক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে, যেন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত না হয়।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকার কোন অংশে রোগী বেশি জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেশিরভাগ হাসপাতাল দক্ষিণে, উত্তর থেকে যদি কোনো রোগী দক্ষিণের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন, তাহলে সঠিক উপাত্ত নিয়ে আসা কঠিন। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করবো। কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে আপনাদের জানানো হবে।
প্লাটিলেটের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি দরকার ফ্লুইড
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ডেঙ্গুর একটি ভুল ধারণা নিয়ে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ডেঙ্গু হলেই আমরা প্লাটিলেটের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। কিন্তু ডেঙ্গু আসলে প্লাটিলেট ডিজঅর্ডার নয়, এক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে প্লাজমা লিকেজ। এককথায় বলতে গেলে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেটের কোনো ভূমিকা নেই। প্লাটিলেটের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি দরকার ফ্লুইড।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ডেঙ্গুতে শট হতে পারে, ডেঙ্গুতে হেমারেজ হতে পারে। এমনকি অর্গান ইনভলমেন্টও হতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অর্গানকে ইনভলব করে ফেলে। এটি হলো সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়। এই অবস্থায় আসা রোগীদের বাঁচানো অনেক কঠিন।
মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (প্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। জ্বর হলে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় চার-পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে যায়। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজে থেকেই এ তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যাতে করে ক্ষতিকর ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।
জ্বর হলে দেহের তাপমাত্রা এবং বাইরের তাপমাত্রার একটা পার্থক্য তৈরি হয়। বাইরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা মানবদেহের তাপমাত্রার অনুপাতে কম মনে হয়। স্বভাবতই শরীর এবং বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা ফিরে আসতে চায় সাম্যাবস্থায়। আমরা জানি, যে বস্তু তাপ হারায় বা বর্জন করে সেটি আস্তে আস্তে শীতল হতে থাকে এবং এ কারণেই শীত অনুভূত হয় আমাদের।
স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা, হাসপাতালগুলোতে ভোগান্তি এবং অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কারণে দেশে এখনো ৫০ শতাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। এ মায়েরা গর্ভধারণকালে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পান না। ফলে আশানুরূপ হারে কমছে না মা ও নবজাতক মৃত্যুর হার।
অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শতভাগ সন্তান প্রসব হাসপাতালে না হলে মাতৃমৃত্যু কমবে না। এই বাস্তবতায় আজ ২৮ মে পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গর্ভকালে চারবার সেবা গ্রহণ করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কোনো নারীর প্রাণহানি ঘটলে তা মাতৃমৃত্যু বলে বিবেচিত হয়। গর্ভধারণজনিত জটিলতার কারণে, প্রসবকালে এবং প্রসব-পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে প্রাণহানি ঘটলে তা মাতৃমৃত্যু। এক লাখ গর্ভধারণে নারী মৃত্যুর সংখ্যাকে মাতৃমৃত্যুর হার হিসেবে ধরা হয়।
একজন নারীকে সন্তান গর্ভধারণের আগে থেকে প্রসব পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হয়। এ সময় জটিলতা তৈরির শঙ্কা বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই মাতৃত্বকালীন সেবা আটবার দেয়ার পরামর্শ দিলেও বাংলাদেশে সেটি চারবার করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক নারী এই চারবারের সেবাও গ্রহণ করছেন না। যার কারণে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর চিকিৎসকদের মতে, নারীদের জীবনের দাম, মতামতের দাম কম। শুধু কম নয়, নারীদের মতামতের গুরুত্ব নেই, নেয়াই হয় না মতামত। যার কারণে যখন তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন সেটা অনেক বেশি দেরি হয়ে যায়।
এদিকে, দেশে জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী, দেশে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বাড়ছে। প্রায় ১০ লাখ শিশুর জন্ম হচ্ছে এই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আর তার বেশির ভাগই হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। এ জন্য বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতি ১০০ গর্ভধারণে ১০ থেকে ১৫ জন মায়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং প্রসবকালে জটিলতা হতে পারে। আর এ সময় মা ও সন্তানের জীবন রক্ষায় প্রসবের সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়। তখন এটি জীবনরক্ষার জন্যই করা হয়। কিন্তু সেটা যদি ১৫ শতাংশের বেশি হয় তাহলে তা অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৩৬ লাখ শিশুর জন্ম হয়, তার মধ্যে ১৬ লাখের মতো শিশুর জন্ম হয় অস্ত্রোপচারে। এর মধ্যে আবার ১০ লাখ ৮০ হাজার শিশুর জন্ম অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে হচ্ছে। আর এই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের বেশিই হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যত শিশুর জন্ম হয় তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বাকিদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে ১৪ শতাংশ আর ২ শতাংশ হচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালেই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে কমপক্ষে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। ফলে হাসপাতালগুলোতে সন্তান জন্মদানে আগ্রহ হারাচ্ছেন মায়েরা। আর হাসপাতালে যান না বলে তাদের গর্ভকালীন চেকআপও হয় না ঠিকমতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম হচ্ছে একজন মাকে সন্তান প্রসবের আগে চারবার নিয়মমাফিক চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রসবপূর্ব সেবার প্রথম ধাপে যত মা সেবা নেন, তার তুলনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে সেবা নেয়ার হার অনেক কমে আসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ২০২২ সালে উপজেলা থেকে নগর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের তুলনায় চতুর্থবার সেবা নেয়ার হার ছিল ৬৪ শতাংশ কম। আর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের তুলনায় চতুর্থবার পর্যন্ত নারীদের সেবা নেয়ার হার ছিল ৬০ শতাংশেরও কম।
ওজিএসবি সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি বেগম বলেন, সন্তান ধারণের পর থেকে নিয়মিতভাবে চারবার প্রসবপূর্ব সেবা নেয়ার নিয়ম হলেও সেটা পালন করা হচ্ছে না। যদি এটা হয়, তাহলে মা ও শিশু প্রসবকালীন জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (মাতৃস্বাস্থ্য) আজিজুল আলিম জানান, সমস্যা না হলে দেশে নারীদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা যেকোনো রোগেই কম। আর সন্তান ধারণ করলে তাকে আরও পরিবারের অনুমতির ওপর নির্ভর করতে হয়। নারীরা এখনো মনে করেন, শুধু সন্তান জন্মদানের সময় হাসপাতালে গেলেই হবে।
চারবার সেবা নেয়ার কথা বলা হলেও তার গুরুত্ব কম। তবে এখন সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে তা হলে, সন্তান প্রসবের পরই মাতৃমৃত্যু কমে আসবে।
বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই মৃত্যুতে দায়ী ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন শক্তিশালী করতে আইনটির সংশোধনী সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং পাস করার দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষে জানানো হয়, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীটি আসন্ন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে পাস করে চূড়ান্ত করা হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা দূর হবে।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও শাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে আসন্ন সংসদ অধিবেশনেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন এবং পাস করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের অ্যান্টি-টোব্যাকো সেলের সদস্য সচিব ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেনসহ অন্যরা।
এডিস মশার প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ মে সকাল ৮টা থেকে ২৭ মে সকাল ৮টা) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৩ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে সাত জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন ২০২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতালে রয়েছেন ১৭৬ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭০৪ জন, তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ১১৯ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ জন।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এত মৃত্যু ও রোগী এর আগে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, তাতে একদিকে যেমন এ জ্বর ভয়ংকর হয়েছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহরকে ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে পুরো দেশজুড়ে।
এদিকে, বর্ষাকাল শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন, এখন আর বর্ষাকাল, বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর সর্ম্পক নেই। কারণ এখন এডিস মশার লার্ভা জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবনে, ওয়াসার মিটার বক্সসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু এখন পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।
নিম্নগতি ছিল সংক্রমণের, দৈনিক শনাক্তের হার ছিল এক শতাংশেরও নিচে। কিন্তু ফের করোনাভাইরাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দিনকে দিন রোগী বাড়াছে, বাড়ছে শনাক্তের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছয় শতাংশ ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ মে সকাল ৮টা থেকে ২৭ মে সকাল ৮টা) করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬১ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় সরকারি হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৮ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে গত ৬০ দিন ধরে করোনায় মৃত্যুহীন রয়েছে দেশ।
এর আগে সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর। সে হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জনের।
অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৯৩৩টি, আর এ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে ৯২৯টি নমুনা। তাতে করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬১ জন। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল ২৮ জন, তার আগের দিন ( ২৫ মে) শনাক্ত ছিল ৬৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তার আগের দিন ছিল ৪ দশমিক ৩১। এর আগের দিন (২৫ মে) ছিল ৫ দশমিক ২৫, তারও আগের দিন ২৪ মে ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস আগেও শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে।
দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৬১ জন শনাক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ৫৭ জনই মহানগরসহ ঢাকা জেলার। বাকি চারজন সিলেটের।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে দেশে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হন। আর ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়। যা দেশে মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ।
ফুসফুসে বা বুকে পানি জমার কথা প্রায় সময়ই শোনা যায়। প্রকৃতপক্ষে ফুসফুসের পাতলা আবরণী বা প্লুরাল পর্দা, যা ফুসফুসকে ধরে রাখে, তাতেই মূলত পানি জমা হয়। এ রোগকে প্লুরাল ইফিউশন বা ফুসফুসে পানি জমা বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। ফুসফুসের পানি কখনোই হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সাধারণত ফুসফুসের যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ক্যান্সার- এসব রোগে ফুসফুসে পানি জমে। এর বাইরেও বিভিন্ন বাত রোগ, হরমোনজনিত সমস্যা, হৃদরোগের কারণে, কিডনি বিকল হলে, অপুষ্টিজনিত কারণে এবং কোনো কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন বেরিয়ে গেলেও ফুসফুসে পানি জমা হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হলে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। কোনো কোনো রোগে একটিতে, আবার কোনো কোনো রোগে ফুসফুসের দুই প্লুরায় পানি জমতে পারে। সাধারণত লিভার বা কিডনিজাতীয় রোগের কারণে দুই ফুসফুসে পানি জমে থাকে। কাজেই কোনোভাবেই একে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
সাধারণ উপসর্গ হিসেবে খাওয়ায় অরুচি, শরীর দুর্বল, শরীরের ওজন কমে যেতে পার। অনেক ক্ষেত্রে বিকেলের দিকে জ্বর বা সারা দিনই জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব থাকবে। ফুসফুসজনিত উপসর্গ হিসেবে কফ, কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, বুকের ব্যথা বা ভারী অনুভূত হওয়া, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ ছাড়াই আসতে পারে, যা কখনো কখনো বুকের এক্স-রে করেই বোঝা যায়।
নিউমোনিয়া হলে জ্বর খুব বেশি তথা ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হবে। জ্বরের তীব্রতা বেড়ে গেলে শরীরে কাঁপুনি হবে, শিশুদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে, রোগী প্রলাপ বকতে পারে, জ্বরের কারণে অনেকের বমি পর্যন্ত হতে পারে। খাবার খেতে অরুচি, মাথা ভার, মাথাব্যথা ও সমস্ত শরীর ব্যথা করতে পারে। এসব লক্ষণ অনেক সময় স্বল্প থেকে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে বুকের এক্স-রে করালে ফুসফুসে জমা পানি অথবা ইফুশান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে পানির পরিমাণ খুব কম হলে, অর্থাৎ ফুসফুসে অল্প পরিমাণ পানি জমলে আলট্রাসনোগ্রাম বা সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া, ফুসফুস থেকে পানি বের করে এনে নানা রকম পরীক্ষা করে দেখা হয়। অনেক সময় এ রোগে বায়োপসি করারও প্রয়োজন হতে পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য রুটিন পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা নির্ভর করবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের ওপর ভিত্তি করে। যেমন খুশি তেমন করে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু ফুসফুসের রোগ খুব জটিল হতে পারে। অতিরিক্ত পানি জমে গেলে রোগীকে স্বস্তি দেয়ার জন্য পানি বের করে নেয়া হয়। বারবার পানি জমলে অনেক সময় বিশেষ পদ্ধতি, যেমন- প্লুরোডেসিস, টিউব থোরাকোস্টোমি করা হয়। পানির কারণে, ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়। পানি জমা হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় ও সমাধান না করলে নানা জটিলতা হতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, চিকিৎসা নিন, ভালো থাকুন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
২০২০ সাল। বিশ্বকে এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে সে বছর করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। করোনা টেস্টে পজিটিভ-নেগেটিভ, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, লকডাউন, হাসপাতালে বেড না পাওয়া, আইসিইউর জন্য হাহাকার-এসব কিছু নিয়ে মানুষের ভয়ংকর সব নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষ আরও এক ভয়ংকর খবরের মুখোমুখি হয়।
সে বছরের নভেম্বরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তার আগে হাসপাতালের মর্গে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের পাঁচটি মরদেহ আসে। সেগুলো ছিল আত্মহত্যা। কিন্তু লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে না ছিল আঘাতের চিহ্ন, না ছিল ধর্ষণের আলামত। অথচ সিআইডির ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসকের পাঠানো প্রতিটি মরদেহের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াবে (এইচভিএস)’ পাওয়া যায় একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি। সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো এইচভিএসেও পাওয়া যায় একই ব্যক্তির শুক্রাণুর উপস্থিতি।
সাধারণত ময়নাতদন্তের জন্য রাতে কোনো মরদেহ মর্গে গেলে ময়নাতদন্ত হয় তার পরদিন। সিআইডির ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তদন্তে নামে তারা। কর্মকর্তারা এ সময় জানতে পারেন পরের দিনের জন্য যখন লাশঘরে মরদেহ রাখা হয়, তখন সে লাশঘরের নিরাপত্তায় পাহারায় থাকতেন ডোমের সহযোগী মুন্না ভক্ত। নিরাপত্তায় থাকা ২০ বছরের এই মুন্নাই রাতেরবেলায় মর্গে মরদেহের সঙ্গে যৌনসংসর্গে যেতেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ডোম যতন কুমারের ভাগনে মুন্না। এই সুবাদেই হাসপাতালের বেতনভুক্ত কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও মর্গের চাবি তার কাছে থাকত। তিনি মরদেহ গ্রহণ করতেন, রাতে পাহারায় থাকতেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতেন। গ্রেপ্তারের পর মুন্না জবানবন্দিতে সবকিছু স্বীকার করেন। মুন্না এখনো কারাগারে আছেন। তার মামলা বিচারাধীন বলে দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা চৌধুরী।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ঘটনাটিই এ ধরনের একমাত্র ঘটনা নয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ২০২২ সালে একই ঘটনা ঘটে। হাসপাতালটির মর্গে দুই কিশোরীর মরদেহে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়, নমুনা পরীক্ষায় একই পুরুষের বীর্য পাওয়া যায়। তার আগেও একই মর্গে আরও নারীর নমুনা পরীক্ষায় একই পুরুষের বীর্য পাওয়া যায়। তদন্তে জানা যায়, এসব ঘটনায় জড়িত মর্গের অস্থায়ী পাহারাদার সেলিম।
সিআইডি জানিয়েছে, মরদেহগুলো লাশকাটা ঘরে আসার পর সেগুলোর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেছিলেন মো. সেলিম। সেলিম বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিকৃত যৌনাচারকে বলা হয় নেক্রোফিলিয়া। এই অসুখে আক্রান্তদের বলা হয় নেক্রোফাইল। নেক্রোফাইলরা মৃতদেহের সঙ্গে যৌন আচরণ করে একধরনের বিকৃত আনন্দ লাভ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ১২২ জন নেক্রোফাইল ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ‘কোনো বাধা আসবে না এবং প্রত্যাখ্যান করবে না- এমন সঙ্গী পাওয়ার ইচ্ছা থেকে তারা মরদেহের সঙ্গে যৌন সংশ্রব করে থাকে।’
ইংরেজি নেক্রোফিলিয়া শব্দটি গ্রিক শব্দ নেক্রো এবং ফিলিয়া থেকে এসেছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, এর মধ্যে নেক্রোস শব্দের অর্থ ‘ডেড’ আর ফিলিয়া শব্দের অর্থ ‘এট্রাকশন’। অর্থ্যাৎ মৃত দেহের প্রতি আসক্তি থেকেই ভয়ংকর এই চাহিদা তৈরি হয়। সাধারণত মর্গে, কবরে বা যে কোনো সমাধিতে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে নেক্রোফিলিকদের সংখ্যা বেশি। তবে এর বাইরেও নেক্রোফিলিকরা রয়েছে, এরা প্রয়োজনে মরদেহ চুরিও করে থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নেক্রোফিলিকদের মধ্যেও প্রকারভেদ রয়েছে। তাদের মধ্যে একধরনের আছেন যারা মৃতদেহের সঙ্গে যৌনকামনা কল্পনা করলেও বাস্তবে করে না- একে বলা হয় নেক্রোফিলিয়া ফ্যান্টাসি। আরেক ধরন নেক্রোফিলিক মৃতদেহ খুঁজে বের করে, দরকার হলে তারা মর্গ, কবর বা সমাধিস্থল থেকে চুরিও করে। আরেক ধরন রয়েছে যারা খুন করে হলেও মৃতদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা পূরণ করে।
দেশে নেক্রোফিলিয়ার তথ্য নতুন হলেও এর ইতিহাস পুরোনো।
গ্রিসের অত্যাচারী রাজা পেরিঅ্যান্ডার স্ত্রীর মৃতদেহ লুকিয়ে মমি বানিয়ে রেখেছিলেন, তবে সেটা ভালোবেসে নয়, বরং বছরের পর বছর বিকৃত যৌন কামনার জন্য। ইতিহাস বলছে, বছরের পর বছর ধরে মমির সঙ্গে এ কাজ করেছেন রাজা হ্যারোড, রাজা ওয়াল্ডিমার এবং রাজা চার্লম্যাগের মতো মানুষ।
২০১৩ সালে সৌদি আরবের আল এরাবিয়া নিউজের এক খবরে বলা হয়, ফেয়ারওয়েল ইন্টারকোর্স আইন নিয়ে মিশরীয় নারীরা বিক্ষোভ করে। এই আইনে বলা হয়েছে, কোনো নারীর মৃত্যু হলে তার স্বামী মৃতদেহের সঙ্গে মৃত্যুর ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত শেষ সহবাস করে নিতে পারবেন। আর এই আইনের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভে নেমেছিল মিশরীয় নারীরা।
সম্প্রতি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমস জানিয়েছে, পাকিস্তানে নেক্রোফিলিয়া বেড়েছে। যার কারণে বাবা-মা মেয়েদের কবরে পাহারা দিচ্ছে, তালা দিচ্ছে। নারীদের কবরে তালা লাগানোর ঘটনা সেখানে বেশ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এদের দেখে কিছুতেই বোঝা যাবে না, কতটা বিকৃত মানসিকতার এরা।’
মূলত এটা একধরনের মানসিক বিকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানত যারা ছোটবেলায় নানা ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হয়, অবহেলা-অনাদরে বড় হয়, বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতরে দিয়ে যায়- তারাই এ ধরনের বিকৃতিতে ভোগে। আবার বিভিন্ন সময়ে মরদেহের কাছাকাছি যারা থাকে, তারাও এই বিকৃতিতে ভোগে।’
তিনি বলেন, ‘পুরো দেশের মর্গ পুরোপুরি অরক্ষিত। অথচ যেকোনো উপায়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা উচিত। অথচ এর খুবই করুণ অবস্থা।’
বিশ্বের কোথাও ডোম দিয়ে ময়নাতদন্ত হয় না জানিয়ে অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো অশিক্ষিত, প্রশিক্ষণহীন ডোম দিয়ে ময়নাতদন্ত হচ্ছে। অথচ ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত মর্চুয়ারি অ্যাসিসটেন্ট দিয়ে। কিন্তু দেশে এ রকম আইনও নেই। কোনো আইনে কারা ময়নাতদন্তে অংশ নিতে পারে- সে নিয়ে কিছু বলা নাই। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া নিয়ম দিয়েই এখনো চলছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ময়নাতদন্ত। এই নিয়মকে আপডেট কিংবা সংস্কার কিছুই হয়নি।’
যোগাযোগকর্মী শাহানা হুদা রঞ্জনা দৈনিক বাংলাকে বলেন, দুর্বল আত্মবিশ্বাস, নানা ধরনের ক্ষতি, প্রত্যাখ্যান, আত্মবিশ্বাসের অভাব এই মানসিক অবস্থার জন্য দায়ী। বিষয়টি এত ভয়ংকর হলেও এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অথচ এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, সচেতনতা বাড়ানো উচিত। আমরা আসলে বিষয়টি জানিই না, চিন্তা ভাবনায়ও ছিল না। অথচ কী ভয়ংকর বিষয়।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা একধরনের সেক্চুয়াল পারভারসন। নেক্রোফিলিয়া শুধুমাত্র কারও ভেতরে নেক্রোফিলিয়া হিসেবে থাকে না। এটা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, সাইকোসিস, মুড ডিজঅর্ডার-এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের নেক্রোফিলিক হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সেই সঙ্গে যারা বিশেষ বিশেষ ধরনের মাদকে আসক্ত- তাদের মধ্যে নেক্রোফিলিক থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘নেক্রোফিলিকরা মৃতদেহের সঙ্গে যৌনসংসর্গটাকেই স্বাভাবিক মনে করে।’
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নেক্রোফিলিয়াতে আক্রান্তরা খুব সহজে চিকিৎসকের কাছে আসে না, যখন কেবলমাত্র ধরা পড়ে তখনই সেটা প্রকাশ পায় বা চিকিৎসকের কাছে আসে। তাই হিডেন নেক্রোফিলিয়াতে আক্রান্ত কত মানুষ রয়েছে, সেটাও অমাদের অজানা।’
বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৫ মে সকাল ৮টা থেকে ২৬ মে সকাল ৮টা) এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চারজন। এরা সবাই ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে তথ্য জানানো হয়।
অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১৭৮ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১৪৮ এবং অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন রোগী।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এক হাজার ৬২৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৭৮ জন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৩ জন মারা গেছেন। তবে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৩৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৮৮ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ৫৪৫ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিষণ্নতা একটি অসুখ। একজন বিষণ্ন মানুষ কি প্রেমে পড়তে পারে? বা ভালোবাসতে পারে? সম্পর্কে জড়াতে পারে? পারে। আর সব মানুষের মতো তারও মন আছে, অনুভূতি আছে। ভালোবাসাও আছে এবং তা হতেই পারে।
কিন্তু ভালোবাসতে পারুক বা না পারুক, তা যতটা জানা জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি এটা বোঝা যে, ঠিক কী ব্যাপারটা এখানে ঘটে এবং কত মাত্রায় ঘটে। কারণ এই ব্যাপারটা বুঝতে পারলেই আপনি তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বিষণ্নতায় আক্রান্ত একজন মানুষের এরকম পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। বিষণ্নতার তীব্রতার পরিমাণ ও ধরনের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। মনে করুন কারও অল্প অল্প সমস্যা আছে, সে কোনো একটা সম্পর্কে জড়ালে সেখানে সেই সম্পর্ক টিকাতে কষ্ট অল্প অল্প হবে।
কিন্তু যদি বিষণ্নতার তীব্রতা অনেক বেশি থাকে তখন?
Anhedonia বলে একটা ব্যাপার আছে, যেখানে একজন ব্যক্তির পূর্বের প্ৰিয় কাজগুলো পরে আর করতে ভালো লাগে না। মনে করুন আগে তার গান গাইতে ভালো লাগত, এখন লাগে না।
এখন ধরুন একজন মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না, কোনো কিছুতে আগ্রহ নেই, আগে যে কাজগুলো করতে ভালো লাগত, তাও কখনো কখনো ভালো লাগে না- এমন একটা মানুষের কোনোভাবে অন্য একজন মানুষকে ভালো লেগে গেল, সে কোনোভাবে একজন মানুষকে ভালোবেসে ফেলল। তখন কী হতে পারে?
কিন্তু এই বিষয়টি অপর মানুষটির জন্যও কি স্বাস্থ্যকর?
মরুভূমিকে বাগান বানাতে যে পরিমাণ পানি দরকার, তা সব মানুষের দেয়ার ক্ষমতা থাকে না। থাকা উচিত না। কারণ একা একজন মানুষের পক্ষে একটা মরুভূমিকে একা একা বালতি বালতি পানি এনে বাগান করা সম্ভব না। মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা সীমাহীন না। কারও পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু হওয়া যতই আকর্ষণীয় মনে হোক, এটি একটি বিশাল দায়িত্বের কাজ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বোঝা স্বরূপ।
কাজেই বিষণ্নতায় আক্রান্ত কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে ভেবে নিন। একই সঙ্গে কারও যদি বিষণ্নতা থাকে, তার নিজেরও কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে এটা ভেবে নেয়া উচিত।
সম্পর্কের সব দিন সমান যায় না। ভালো-খারাপ মিলিয়ে জীবন। কিন্তু আপনার সঙ্গী যদি অলরেডি এই অসুখে ভোগে, তাহলে অন্য কোনো মানুষের যেটুকু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে, তার অর্থাৎ আপনার সঙ্গীর তেমন নাও থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে উল্টোও হতে পারে, কিছুতেই কিছু যায় আসে না, এমনও হতে পারে।
কারও পুরো পৃথিবী হয়তো আপনাকে নিয়ে ছিল। সে হয়তো ভালো লাগার একটু জায়গা আপনার মধ্যে পেত। কিন্তু এটা হওয়া ঠিক না, সমস্যা হলো বিষণ্নতায় আক্রান্ত মানুষেরা এটা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা যদি তাদের ইচ্ছামতোই নিজেদের খুশি রাখতে পারত, এই অসুখ থেকেও তো বের হয়ে আসতে পারত, তাই না?
আপনার আশপাশে যারা সত্যিই বিষণ্নতায় আক্রান্ত, তাদের সাহায্য করুন। তাদের জীবনকে একটু সহজ করতে এগিয়ে আসুন। এমন কোনো মানুষের একমাত্র ভালো লাগার জায়গা যদি আপনি হয়ে থাকেন, এটা আপনার জন্যও এবং তার জন্যও একটা বিপজ্জনক অবস্থা। কিন্তু আপনার একটু যত্ন, একটু চেষ্টা ওই মানুষটিকে ভালো থাকতে সাহায্য করতে পারে। কাজেই ভাবুন। ভেবে কাজ করুন।
আর যারা ইতিমধ্যে বিষণ্নতায় ভুগছেন, খুব সাবধানে থাকবেন এসব ব্যাপারে, নিজেই যেখানে নিজের বোঝা বইতে কষ্ট পাচ্ছেন, আরেকজন মানুষকে নিজের সঙ্গে জড়াবার আগে সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন। ভাবতে সমস্যা হলে আমার সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। চেম্বারের ব্যাপারে সবাই তো জানেন।
লেখক: ডা. নাজিয়া হক অনি (এমবিবিএস, এমপিএইচ) ন্যাশনাল মাস্টার ট্রেইনার, মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড বাংলাদেশ
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। অথচ এখনো বর্ষাকাল শুরু হয়নি, শুরু হয়নি এডিস মশার প্রজননকাল। তাই আসছে বর্ষায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আর এই সতর্কবার্তার মধ্যেই অধিদপ্তর জানিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৪১ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছে ১১ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে ১৭৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে আছে ১৪৮ জন আর অন্যান্য বিভাগে আছে ৩০ জন।
অধিদপ্তর জানাচ্ছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৬২০ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু না হলেও এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হবার পর থেকে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এত মৃত্যু ও এত রোগী এর আগে দেশে আর হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরণ বদলেছে, তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়েছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ ডেঙ্গু শহরকে ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে পুরো দেশজুড়ে। এদিকে, বর্ষাকাল শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপদজনক অবস্থার বিষয়ে তারা বলছেন এখন আর বর্ষাকাল, বৃষ্টি এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর সর্ম্পক নেই। কারণ এখন এডিস মশার লার্ভা জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবনে, ওয়াসার মিটার বক্সেসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু এখন কেবল বর্ষাকালীন নয়, বরং সারা বছরের; কেবল ঢাকা কেন্দ্রিক নয়; পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।
দেশে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের তথ্য বলছে, সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২৪ মে সকাল ৮টা থেকে ২৫ মে সকাল ৮টা) নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬৮ জন। তবে এ সময়ে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু নেই।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে এক হাজার ২৯৪টি আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ২৯৬টি। নমুনা পরীক্ষায় ৬৮ জন শনাক্ত হয়েছে, যা কিনা গত সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর ৬৯ জন রোগী শনাক্ত হবার তথ্য জানিয়েছিল। এরপর থেকে শনাক্ত রোগী সংখ্যা ছিল এক অংকের ঘরে। তবে চলতি মে মাস থেকে রোগী সংখ্যা এবং শনাক্তের হার ফের বাড়তে শুরু করেছে। অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, আগের দিন ছিল ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস আগেও শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে।
তবে রোগী সংখ্যা বাড়লেও গত ৫৮ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনায় শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন আর এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৬ জন। করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ লাখ ছয় হাজার ১৫৭ জন।
অধিদপ্তর জানাচ্ছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪০ শতাংশ আর মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে দেশে একদিনে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই রেকর্ড সংখ্যা ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর ২০২১ সালের পাঁচ ও ১০ আগস্ট একদিনে ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়। যা দেশে মহামারিতে একদিনে সর্বোচ্চ।