প্রতি বছরের মতো এই বছর ২৪ মার্চ পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালের এই দিনে বিজ্ঞানী রবার্ট কচ যুগান্তকারী যক্ষ্মার জীবাণু মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন। এই দিনটি স্মরণ রেখে প্রাণঘাতী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পালন করতে যাচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে – ‘হ্যাঁ! আমরা টিবি শেষ করতে পারি!’
এখন পর্যন্ত ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে যক্ষ্মা বিশ্বের দশটি মৃত্যুজনিত কারণের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল টিউবারকুলোসিস রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২১ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তার ভেতর প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
কী এই যক্ষ্মা রোগ
যক্ষ্মা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগ। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে এই রোগ হলেও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ রক্ত প্রবাহের সঙ্গে মিশে ফুসফুসসহ শরীরে অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। মস্তিষ্ক, হাড়, হাড়ের সংযোগ, লসিকাগ্রন্থি, পরিপাকতন্ত্র, মূত্র ও প্রজননতন্ত্র, ত্বক ইত্যাদি স্থানে যক্ষ্মারোগ হতে পারে। শুরুর দিকে সঠিক চিকিৎসা না করালে যক্ষ্মার ফলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
যক্ষ্মা যেভাবে ছড়াতে পারে
শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। কোনো রোগীর কাশি, হাঁচি, থুতু ও বড় মুখ খুলে কথা বলার ফলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে যক্ষ্মা। এতে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর লালা, মিউকাস, থুতু মিশে থাকে। আবার সংক্রমিত পানি ও খাবার থেকেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কাজেই যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
যক্ষ্মার কারণ
যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, এ ছাড়া শরীরের কোনো অংশ ট্রান্সপ্লান্টের পর যেসব ওষুধ খাওয়া হয়, তার কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে এবং ক্যানসার আক্রান্তদের যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস এবং অধিক ধূমপান, মাদকাসক্তি ও মদপান যক্ষ্মার আরেকটি কারণ।
লক্ষণ
৩ সপ্তাহের বেশি কাশি, বিশেষত কফযুক্ত কাশি। এই কাশিতে রক্তও উঠে আসতে পারে।
ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তি ও রাতের দিকে মাঝেমধ্যে ঘামসহ হালকা জ্বর হতে পারে।
এ ছাড়া শরীরের যে স্থানে যক্ষ্মা হয়েছে তার লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।
একসময় মনে করা হতো যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। সময়ের সঙ্গে যক্ষ্মা রোগের এখন যুগান্তকারী অনেক চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। নিয়মিত ওষুধ সেবনে যক্ষ্মা ভালো হয়। কাজেই অযথা ভয় বা আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সঠিক সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। বিশেষত ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা প্রতিরোধ এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সমাজের সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। সবার মিলিত প্রয়াসই পারে যক্ষ্মা পরিস্থিতি উত্তরণের।
লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
মঙ্গলবার বেলা ২টা ৭ মিনিট। রাজধানীর পরীবাগ এলাকা। রাস্তার দুই ধারে চায়ের দোকান, ভাতের দোকান। হঠাৎ করেই চায়ের দোকানের সামনে থামানো একটি রিকশা থেকে চালক পড়ে গেলেন নিচে, অচেতন। তাকে ধরাধরি করে সেখানে শুইয়ে ফেলা হলো, মাথায় পানি ঢালা হলো অনেকক্ষণ, এরপর চোখ খুলে তিনি পানি খেতে চাইলেন। ধরে উঠিয়ে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হলো এবং তার দিকে একটি টেবিল ফ্যান তাক করে দেয়া হলে তিনি খানিটকটা সুস্থবোধ করেন। তবে তখনো কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না। আশপাশের রিকশাচালকরা বললেন, এই গরমে রিকশা চালানো অত্যন্ত কষ্টকর, কিন্তু পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের না হয়ে উপায় থাকে না।
গরমের কারণে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটলেও দিন কয়েক আগে টাঙ্গাইলে স্কুলে ফুটবল খেলার কারণে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু সবার টনক নাড়িয়ে দেয়। গত ২৯ মে টাঙ্গাইলের সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বিমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে খেলা শুরু হয় বেলা ২টায়। প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যে খেলতে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণির রিয়া আক্তার মাঠে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
রিয়ার এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, হঠাৎ করেই রিয়া মাঠের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মাটিতে শুয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার মাথায় পানি ঢাললেও জ্ঞান ফেরেনি। এরপর টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এর আগেও হিটস্ট্রোকের আরও একটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে সাড়া ফেলে। গত ১১ মে পুরান ঢাকার জজকোর্টে শফিউল আলম ওরফে আলাউদ্দিন নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয় হিটস্ট্রোকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে এখন। কেন হিটস্ট্রোক হচ্ছে- প্রশ্নে তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে শরীরের যে তাপমাত্রা থাকে, সেটা বেড়ে যায় রোদে গেলে। আর অত্যধিক তাপমাত্রায় শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। সাধারণত মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু অনেক সময় ধরে রোদে থাকলে সেটা ১০৪ ডিগ্রি পার হয়ে গেলেই হিটস্ট্রোক হতে পারে। আর এর ফলে মানুষ অনেক সময় জ্ঞান হারান, মৃত্যুও হয় অনেকের।
তারা বলছেন, হিটস্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। সময় এসেছে এখন একে আলোচনায় আনার, এ নিয়ে চিকিৎসকদের জন্য পৃথক গাইডলাইন করার। যেমনটা করোনা, ডেঙ্গুর মতো পৃথক গাইডলাইন অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ জানিয়ে তারা বলেন, বমি, দুর্বলতা এবং অবসাদ, মাথা ঝিমঝিম, চোখে ঝাপসা দেখা এবং এ সময় খিঁচুনি হতে পারে। সেই সঙ্গে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, বেশির ভাগ মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমীন দৈনিক বাংলাকে বলেন, হিটস্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এ নিয়ে এখন পৃথকভাবে চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন করা দরকার।
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেমন গরমে চলাফেরা, পোশাক, পানি খাওয়ার মতো অনেক পরামর্শ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ঢোলা এবং সুতি কাপড়ের পোশাক পরা, সাদা রং হলে ভালো, কারণ সাদা রং তাপ শোষণ করে, দিনের বেলায় কালো রং এড়িয়ে চলতে হবে। সঙ্গে ছাতা, পানির বোতল নিতে হবে। ছাউনি এবং গাছের ছায়ায় থাকতে হবে।
তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার ধুম। কিন্তু এটা করা যাবে না, এমনকি ফ্রিজের একেবারে ঠাণ্ডা পানিও নয়। ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা একেবারে স্বাভাবিক পানি খেতে হবে। আর অনেক বেশি ঘাম হলে স্যালাইন খেতে পারে, কিন্তু সব সময় স্যালাইনও খাওয়া যাবে না। দিনে-রাতে একাধিকবার গোসল করতে হবে।
আর যারা কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের কাজের মাঝে নিশ্চয়ই ‘ব্রেক’ দিতে হবে, একনাগাড়ে কাজ করা যাবে না বলেন অধ্যাপক রোবেদ আমীন।
তবে কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে, একেবারেই সময় নষ্ট করা চলবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি।
এর আগে এমন তাপমাত্রা মানুষ দেখেনি মন্তব্য করে অধ্যাপক রোবেদ আমীন বলেন, দেশে এটা নতুন সমস্যা, একে এখন স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে দেখতে হবে। তবে এ নিয়ে স্পেসিফিক কোনো গাইডলাইন নেই, সেটা করতে হবে।
এদিকে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, কারও হিটস্ট্রোক হয়েছে মনে হলেই তাকে দ্রুত গাছের ছায়ায় অথবা ঠাণ্ডা জায়গায় নিতে হবে, গায়ে পানি ঢালতে হবে। তাতেও জ্ঞান ফিরে না এলে একদম সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সন্ধানী বাংলাদেশ। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধানী বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন থেকে তরুণ চিকিৎসকরা তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় এবং ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানান।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া সংশোধনীটি আসন্ন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে পাশ করে চূড়ান্ত করা হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে।
ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং সন্ধানী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করে।
সেগুলো হলো আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডক্টিস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জাকির হোসেন খান (৫১) নামে এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ‘দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গ্রীন লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অনৈতিক রিং বাণিজ্য এবং অপচিকিৎসার দায়ে’ দায়িত্বরত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, ডা. শেখর কুমার মন্ডল ও ডা. রাশেদুল হাসান কনকের শাস্তি চেয়েছে ওই রোগীর পরিবার।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে জাকিরের পরিবার। এ সময় ওই তিন চিকিৎসকের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
স্বজনদের দাবি, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই জাকিরের হার্টে রিং বসানো হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় গত ১৬ মার্চ রোগীর মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জাকির হোসেনের স্ত্রী নুরুন নাহার। তিনি বলেন, ‘গত ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির। ভর্তির পরেই ইসিজি করা হয়। সকালের ইসিজি রিপোর্টেই তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক সেটি ধরতে পারেননি।’
জাকিরের স্ত্রী আরও বলেন, “একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাষ্ট্রোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে তিনি রোগীর ডায়াবেটিক ও বুকের ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞক দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে ‘রোগী ঘণ্টা দেড়েক-এর বেশি বাঁচবে না’ বলে জানান। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন।”
আবার গ্রীন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে নুরুন নাহার বলেন, ‘আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদেরকে এক প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে বা আমাদের মতামত না নিয়ে তাকে রিং পরানো হয়।’
ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার অভিযোগ করে নুরুন নাহার বলেন, ‘রোগীকে রিং পরানোর পরে হাসপাতালে পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ডায়াবেটিক রোগী জানার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সারারাত ইনসুলিন না দিয়ে ফেলে রাখে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি না থাকা থাকায় তাকে ডায়ালাইসিস করানো হয়নি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে গত ১৬ মার্চ রোগী মারা যান।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে নিহতের পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জাকির হোসেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সঙ্গে বমি ভাব এবং বুকের ব্যথা পিঠের দিকেও হচ্ছে বলে জানান। এসময় তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়, রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। কিন্তু ইসিজিতে সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন না থাকায় তার আরেক পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে পর্যবেক্ষণে থাকার জন্য ভর্তির কথা বলেন। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও অন্যান্য লক্ষণ কমে যাওয়ায় তিনি প্রথমে ভর্তি হতে চাননি, পরে তিনি রাজি হন এবং পরে আরেক দফায় তার পরীক্ষা হয়।’
‘কেবিনে আসার পর তাকে আমি দেখতে যাই সাড়ে ৯টার পর। সেসময় জাকির জানান তিনি ভাল বোধ করছেন, বুকের ব্যথা কমে গিয়েছে এবং তার বাসা কাছে হওয়াতে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে জানান। সমস্যা হলে তিনি ফের আসবেন বলেও জানান।’
ডা. কনক বলেন, ‘জাকির হোসেনকে হার্টের সমস্যা হলে ইসিজিতে পরিবর্তন আসতে সময় লাগে জানিয়ে বলা হয়, আরেক দফায় ইসিজি হবে সাড়ে ৩টায়। সেসময়ের মধ্যে তাকে ইকোকার্ডিগ্রাম করার জন্য বলা হয়। কিন্তু সকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে তিনি কোনো পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। এরপর সাড়ে ১২টার ভেতরে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক এলে তিনি আর হাসপাতালে থাকতে রাজি হননি, বাসায় চলে যেতে চাচ্ছিলেন এবং আর কোনো পরীক্ষাও করাতে অনুমতি দেননি। উনি ভালো বোধ করায় চলমান চিকিৎসা দিয়েই ‘ডিসর্চাজ অন রিকোয়েস্ট’ দেয়া হয় এবং কোনো সমস্যা হলে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলা হয়।’
‘কিন্তু জাকির হোসেন ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ না হওয়াতে পরের ঘটনা সর্ম্পকে আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি সে গ্রীন লাইফে আবার ভর্তি এবং ভর্তি পরবর্তী জটিলতার বিষয়েও আমি কিছু জানি না। আর এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ও ফাইল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।’
বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচিকে বেগবান করার লক্ষ্যে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়নের সময় বাড়িয়েছে টিকা ব্যবস্থাপনায় বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি)।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সফররত গ্যাভি মিশন তাদের অর্থায়ন অব্যাহত রাখার কথা জানায়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর চেয়ারম্যান ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি, টিকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা, স্থানীয়ভাবে টিকা প্রস্তুতকরণ, দেশের স্বাস্থ্য বিভাগে লোকবল সংকট নিরসন, তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি, এবং জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় অবিলম্বে তামাক আইন সংশোধনের বিষয়গুলো উঠে আসে।
সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, টিকাদানে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তবে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানের পক্ষে দেশ।
২০৩০ সাল পর্যন্ত তহবিল অব্যাহত রাখার জন্য গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার নিলগান আয়দোগান ২০০১ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এ বছরই শুরু হতে যাচ্ছে এইচপিভি টিকা কার্যক্রম যা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখবে। বাংলাদেশে টিসিভি এবং জেই টিকাও চালু করা হবে।
টিকা ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্যাভি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণের অন্যতম প্রধান দাতাসংস্থা।
২০০১ সাল থেকে গ্যাভি বাংলাদেশে শিশু টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে আসছে। বাংলাদেশের টিকাদান কার্যক্রমে গ্যাভির অর্থায়ন ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর অনুরোধে তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৬ জন। তাদের নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ শ ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালে ৮৯ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাতজন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪১৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৫৩ হাসপাতালে রয়েছে ৩৫২ জন আর অন্যান্য বিভাগের ভর্তি রয়েছে ৬১ জন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৫৭৩ জন আর হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ১৪৩ জন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭ জন।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৫১ জন আর মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দু’জনের। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ও হার আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এ রোগে মৃত্যু সংবাদ এল।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তিন হাজার ৬৫টি। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১৯৭ জন। আগের দিন (সোমবার) শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের দিন ছিল ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন দুজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল অধিদপ্তর।
গত বছরের ২৪ অক্টোবর ২০৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এর পর গত সাড়ে সাত মাস দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই শয়ের নিচেই ছিল।
কম-বেশি রোগী শনাক্ত হলেও করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকদিন পর্যন্ত মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। প্রায় ৬৬ দিন পর এ বছরের ২ জুন এক দিনে দুজনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। এর আগে সর্বশেষ ২৮ মার্চে একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শনাক্ত হওয়া ১৯৭ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৯১১ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৫১ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪২ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠলেন ২০ লাখ ছয় হাজার ৪৩৭ জন।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দেশে এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বধারায় গত ২৭ মে প্রথম শনাক্তের হার ৬ শতাংশ ছাড়ায়। সংক্রমণের নিম্নগতিতে কয়েকমাস আগেও শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যার মৃত্যু হয়েছে তিনি একজন নারী। তার বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের ভেতরে। তিনি খুলনা বিভাগের একটি সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৯৭ জন শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে রয়েছেন ১৮৪ জন আর ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১৮৭ জন। বাকিদের মধ্যে জামালপুরে একজন, চট্টগ্রামে তিনজন, কক্সবাজারে চারজন এবং সিলেট জেলায় শনাক্ত হয়েছে দুইজন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম চারদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫৫ জন। আর মারা গেছেন চারজন। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০১ জন। যা আগের দিন ছিল ৯৭ জন। ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৯২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৩৬ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৫৬ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ জন আর তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৬৮ জন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৫২১ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের আর বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১০৮ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২১ জন, মৃত্যু হয়েছে চারজেরন আর ভর্তি রয়েছে ৫৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তার আগের দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে, কমেছে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার। একদিনে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। যা আগের দিন ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ২৮৭টি। পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭৫ জন। আগের দিন (রোববার) ৬৮ জন শনাক্ত হবার কথা জানিয়েছিল অধিপ্তর। আর এই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আগের দিন যা ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এই সময়ে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দুজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর। সেটা ছিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৫ দিন পর মৃত্যু। তার আগে গত ২৮ মার্চে একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ৭৫ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে শনাক্ত হলো ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৪ জন আর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ২৯ হাজার ৪৫০ জনের। করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ লাখ ছয় হাজার ৩৯৫ জন।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে এখন পর্যন্ত করোনাতে রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তারা দুজনই নারী এবং তাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা দুজনই রাজধানীর বাসিন্দা।
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বেড়েই চলেছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা) করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৯০টি, এতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জন। তাদের নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনাতে শনাক্ত হলেন ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৯ জন। দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ এর নিচে থাকছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তা আবার একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে।
সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৮ জন। করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৬ জন। নতুন এই ২৬ জনকে নিয়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেন মোট ২০ লাখ ৬ হাজার ৩৫৭ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, আগের দিন ছিল ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া ৬৮ জনের মধ্যে ৬৫ জন ঢাকার বাসিন্দা। আর ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেটের রয়েছেন একজন করে। তবে এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
পলিথিন প্রজনন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, বন্ধ্যাত্ব ও ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ওভেনপ্রুফ প্লাস্টিক কনটেইনারে খাবার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা মিশে যায়। যার ফলে মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। সেই ব্যাকটেরিয়া থেকে ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে।
রোববার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে। আগামী ৫ জুন (সোমবার) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘পলথিনি নিষিদ্ধ আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে বলা হয়, পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় মাটিতে সূর্যের আলো, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা দেয়, মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে, উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। পলিথিন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ার আগে ১ হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী অবস্থায় থাকতে পারে এবং নদী, সমুদ্রে জমা হয়। আর এ অবস্থাতেও দেশে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন। অন্যদিকে কাপড়ের মতো দেখতে এক ধরনের রঙিন পলিথিন টিস্যু (চায়না টিস্যু নামে পরিচিত) ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্য, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ ইত্যাদি বিকল্প থাকা সত্ত্বেও আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন, বাজারজাত ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকায় অবস্থিত। ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০০২ সালের ৯নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৬ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সব বা যে কোনো প্রকার পলিথিন শপিংব্যাগ, বা এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজিক উদ্দেশে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে পারলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’ জানিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত বিকল্পের অভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিকল্পের অজুহাত দিচ্ছে। কিন্তু নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের সংগ্রাম আরও বেগবান করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রতিদিনই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সংবাদ সম্মেলনে পলিথিন ব্যবহাররোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে— পলিথিন নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, পলিথিন শপিং ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা ইত্যাদি সহজলভ্য করা এবং এগুলো ব্যবহারে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করা, বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানীকৃত পলিপ্রোপাইলিন পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া, টিস্যু ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করারও সুপারিশ করা হয়।
বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে সেটা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নবনির্মিত আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদ মালেক বলেন, নতুন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যসেবার যে পরিধি বেড়েছে, সে অনুযায়ী বরাদ্দ আরও কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। কারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বেড়েছে, বাজেট আরেকটু বেশি হলে উপকার হতো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হলেও মিষ্টির দাম কমানো হয়েছে। মিষ্টিতে ভ্যাট দেয়া হয়নি বলে বেশি করে মিষ্টি খেয়ে ডায়াবেটিস বানানো (আক্রান্ত হওয়া) যাবে না। অপরদিকে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, যাতে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল গণি মোল্লাহসহ অন্যরা।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫৪ ডেঙ্গু রোগী। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৮৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৩৩৮ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছেন ৪৯ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৭৬ জন আর বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৯৭৩ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনসহ এ বছর মৃত্যু হলো ১৬ জনের। মারা যাওয়া তিনজন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজধানীর এই হাসপাতালেই ভর্তি ৪৮৭ জন। যা অন্য হাসপাতালের চেয়ে সর্বাধিক। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৮ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৫৩ জন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪০ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বাকি ৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
এদিকে, ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইনের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত তরল খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যাথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, শাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্যে মশারী ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পরানো, বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী সারাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় জ্বর হলেই দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয় না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সহযোগী অধ্যাপক, রিকনস্ট্রাক্টিভ ও হ্যান্ড সার্জন ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ডা. ফারুকী পঙ্গু হাসপাতালের হ্যান্ড অ্যান্ড মাইক্রো সার্জারি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। চিকিৎসাসেবায় বহু জটিল অস্ত্রোপচারে তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রামে লোহাগাড়ায় আসামির দায়ের কোপে বিচ্ছিন্ন পুলিশ কনস্টেবল জনি খানের (২৮) কবজি জোড়া লাগিয়ে আলোচনায় আসেন ডা. ফারুকী।
এই চিকিৎসকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোনায়েম হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম এক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।