সরকারি চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১২ জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হবে। কার্যক্রমের আওতায় দ্বিতীয় শিফটে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা। সপ্তাহে দুইদিন এই সেবা দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এই পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে 'ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস' বিষয়ে বিস্তারিত জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩০ মার্চ থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করবো। চিকিৎসকরা প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস এখানে করবেন সরকারি হাসপাতালে। প্রথমে আমরা কয়েকটি জেলা হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু করবো।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘আমরা দেখবো, সেখানে কেমন কার্যক্রম চলছে। সেখানে যদি কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, আমরা সেটা সংশোধন করে পর্যায়ক্রমে ৫০০টি উপজেলা এবং ৬৪ জেলায় তা বাস্তবায়ন করবো। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে চেম্বার করবেন। সপ্তাহে দুই দিন আপাতত এই কার্যক্রম চলবে। তাদের এই সেবা দেয়ার জন্য সম্মানি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সম্মানির একটি অংশ চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং আরেকটি অংশ হাসপাতাল পাবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে দেশের ১২ জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বৃহস্পতিবার।
হাসপাতালগুলো হচ্ছে— ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল, রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলা সদর হাসপাতাল, খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতাল, রাজশাহীর নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হাসপাতাল, কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতাল, বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা সদর হাসপাতাল, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল।
এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
চট্টগ্রামের নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বান্দরবান লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
খুলনার যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রাজশাহীর নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রাজশাহী পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নীলফামারীর ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বরিশাল বিভাগের বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এদিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আওতায় রোগী দেখার ফি নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে অধ্যাপক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এরমধ্যে ৪০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন, সেবার সহায়তাকারী পাবেন ৫০ টাকা এবং হাসপাতাল পাবে ৫০ টাকা।
এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা, যার ৩০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা, যার ২০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। এমবিবিএস বা বিডিএস বা সমমনা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, এরমধ্যে ১৫০ টাকা চিকিৎসক পাবেন।
এছাড়া লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগে ছোট সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ফি ৮০০ টাকা এবং সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম চারদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫৫ জন। আর মারা গেছেন চারজন। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০১ জন। যা আগের দিন ছিল ৯৭ জন। ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৯২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩৩৬ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৫৬ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ জন আর তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৬৮ জন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৫২১ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের আর বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১০৮ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২১ জন, মৃত্যু হয়েছে চারজেরন আর ভর্তি রয়েছে ৫৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তার আগের দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে, কমেছে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার। একদিনে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। যা আগের দিন ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ২৮৭টি। পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭৫ জন। আগের দিন (রোববার) ৬৮ জন শনাক্ত হবার কথা জানিয়েছিল অধিপ্তর। আর এই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আগের দিন যা ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এই সময়ে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দুজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর। সেটা ছিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৫ দিন পর মৃত্যু। তার আগে গত ২৮ মার্চে একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ৭৫ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে শনাক্ত হলো ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৪ জন আর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ২৯ হাজার ৪৫০ জনের। করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ লাখ ছয় হাজার ৩৯৫ জন।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে এখন পর্যন্ত করোনাতে রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তারা দুজনই নারী এবং তাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা দুজনই রাজধানীর বাসিন্দা।
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বেড়েই চলেছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা) করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৯০টি, এতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জন। তাদের নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনাতে শনাক্ত হলেন ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৯ জন। দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ এর নিচে থাকছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তা আবার একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে।
সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৮ জন। করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৬ জন। নতুন এই ২৬ জনকে নিয়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেন মোট ২০ লাখ ৬ হাজার ৩৫৭ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, আগের দিন ছিল ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া ৬৮ জনের মধ্যে ৬৫ জন ঢাকার বাসিন্দা। আর ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেটের রয়েছেন একজন করে। তবে এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
পলিথিন প্রজনন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, বন্ধ্যাত্ব ও ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ওভেনপ্রুফ প্লাস্টিক কনটেইনারে খাবার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা মিশে যায়। যার ফলে মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। সেই ব্যাকটেরিয়া থেকে ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে।
রোববার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে। আগামী ৫ জুন (সোমবার) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘পলথিনি নিষিদ্ধ আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে বলা হয়, পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় মাটিতে সূর্যের আলো, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা দেয়, মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে, উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। পলিথিন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়ার আগে ১ হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী অবস্থায় থাকতে পারে এবং নদী, সমুদ্রে জমা হয়। আর এ অবস্থাতেও দেশে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন। অন্যদিকে কাপড়ের মতো দেখতে এক ধরনের রঙিন পলিথিন টিস্যু (চায়না টিস্যু নামে পরিচিত) ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্য, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ ইত্যাদি বিকল্প থাকা সত্ত্বেও আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন, বাজারজাত ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকায় অবস্থিত। ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০০২ সালের ৯নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৬ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সব বা যে কোনো প্রকার পলিথিন শপিংব্যাগ, বা এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজিক উদ্দেশে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে পারলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’ জানিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত বিকল্পের অভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিকল্পের অজুহাত দিচ্ছে। কিন্তু নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের সংগ্রাম আরও বেগবান করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রতিদিনই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সংবাদ সম্মেলনে পলিথিন ব্যবহাররোধে কিছু সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে— পলিথিন নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, পলিথিন শপিং ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা ইত্যাদি সহজলভ্য করা এবং এগুলো ব্যবহারে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করা, বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানীকৃত পলিপ্রোপাইলিন পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া, টিস্যু ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করারও সুপারিশ করা হয়।
বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে সেটা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নবনির্মিত আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদ মালেক বলেন, নতুন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যসেবার যে পরিধি বেড়েছে, সে অনুযায়ী বরাদ্দ আরও কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। কারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বেড়েছে, বাজেট আরেকটু বেশি হলে উপকার হতো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হলেও মিষ্টির দাম কমানো হয়েছে। মিষ্টিতে ভ্যাট দেয়া হয়নি বলে বেশি করে মিষ্টি খেয়ে ডায়াবেটিস বানানো (আক্রান্ত হওয়া) যাবে না। অপরদিকে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, যাতে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল গণি মোল্লাহসহ অন্যরা।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫৪ ডেঙ্গু রোগী। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৮৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৩৩৮ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছেন ৪৯ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৭৬ জন আর বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৯৭৩ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনসহ এ বছর মৃত্যু হলো ১৬ জনের। মারা যাওয়া তিনজন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজধানীর এই হাসপাতালেই ভর্তি ৪৮৭ জন। যা অন্য হাসপাতালের চেয়ে সর্বাধিক। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৮ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৫৩ জন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪০ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বাকি ৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
এদিকে, ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইনের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত তরল খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যাথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, শাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্যে মশারী ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পরানো, বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী সারাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় জ্বর হলেই দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয় না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সহযোগী অধ্যাপক, রিকনস্ট্রাক্টিভ ও হ্যান্ড সার্জন ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ডা. ফারুকী পঙ্গু হাসপাতালের হ্যান্ড অ্যান্ড মাইক্রো সার্জারি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। চিকিৎসাসেবায় বহু জটিল অস্ত্রোপচারে তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রামে লোহাগাড়ায় আসামির দায়ের কোপে বিচ্ছিন্ন পুলিশ কনস্টেবল জনি খানের (২৮) কবজি জোড়া লাগিয়ে আলোচনায় আসেন ডা. ফারুকী।
এই চিকিৎসকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটি। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোনায়েম হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম এক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ব্যাকটেরিয়া শরীরের ভেতর এবং বাইরে সর্বত্র রয়েছে। তবে শরীরে যত না মন্দ জীবাণু, এর চেয়ে কম নয় ভালো জীবাণু। আমাদের শরীরে আছে শত শত কোটি ব্যাকটেরিয়া, এর মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন ভালো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যাদের আবার রয়েছে অনেক উপপ্রজাতি।
এরা কেবল ভালো তা-ই নয়, আমাদের বেঁচে থাকার জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। এই যে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মানুষের পরস্পরের নির্ভর হয়ে বাঁচা। একে বলা হয় মিউচালিয়াজম বা পারস্পরিক মঙ্গলজনক অবস্থান। তারা উভয়ই একত্রে বাস করে সুবিধা পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি গন্ডারের ওপর ছোট পাখি বসে থাকাকে বলে অক্সপেকার পাখি। এই পাখি গন্ডারের শরীরের পোকা আর পরজীবী ঠুকরে ঠুকরে খায়। পাখির লাভ হলো সে খাদ্য পাচ্ছে, আর গন্ডারের লাভ তার পিঠে পোকা আর পরজীবী কমছে।
যে হিতকর ব্যাকটেরিয়ার কথা আজ বলা হচ্ছে, এরা প্রাথমিকভাবে পরিপাকতন্ত্রে থাকে। এদের নাম প্রোবায়োটিকস।
প্রোবায়োটিক আসলে কী?
প্রোবায়োটিক হলো জীবিত। ক্ষুদ্রান্ত্র আর বৃহদান্ত্রে এদের কাজ হলো খাদ্য থেকে এনার্জি শুষে নেয়া। অর্থাৎ কিছু পুষ্টি উপকরণ দেয়া আর বর্জ্য বের করে দেয়া।
প্রোবায়োটিক গ্রহণ করলে এদের অধিকাংশ কাজ শেষ করে অন্ত্রের শেষ ভাগে কলোন বা মলান্ত্রে। সেই সঙ্গে আমাদের পরিপাক নলে রয়েছে মাইক্রোবায়ম। এটি হচ্ছে এক রকমের ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র। এতে আছে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস আর আরকিয়া নামে এক ধরনের এককোষী অণুজীব। এরা আমাদের বাঁচার জন্য প্রয়োজন। কারণ দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের পরিপাকতন্ত্র খাদ্য থেকে সব রকমের পুষ্টি উপকরণ শোষণ করতে পারে না।
বর্তমানে ঘরে ঘরে ক্রনিক রোগে আক্রান্ত মানুষ। মৃত্যুও বেশি এসব রোগে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা, মানসিক অসুখ, বিষণ্ণতার কারণ হিসেবে মাইক্রোবায়মের অনিয়ম লক্ষ করা গেছে।
তাই মাইক্রোবায়ম সমস্যা আগে এসেছে, নাকি অসুখ আগে এসেছে- এ এক বিতর্ক বহুদিনের। কারণ পাচকতন্ত্র আর মন মগজ- এ দুটির মধ্যে সম্পর্ক কৌতূহল উদ্দীপক। অন্ত্রে আছে যে ব্যাকটেরিয়া এরা নিয়ন্ত্রণ করে মনের বিষণ্ণতা আর আবেগ, মেজাজ ও ক্ষুধা। তাই এখন আমাদের দরকার অন্ত্রের মাইক্রোবায়মকে সুস্থ রাখা। আর সুস্থ রাখতে হলে নজর দিতে হবে খাদ্যতালিকার দিকে।
যেসব খাবার এই মাইক্রোবায়মের জন্য পুষ্টিকর, তার মধ্যে রয়েছে আশসমৃদ্ধ খাবার। এই খাবারকে বলা হয় প্রি-বায়োটিক খাবার। অন্যদিকে রিফাইন্ড শর্করা, যেমন সাদা চাল, ময়দা, চিনি, কৃত্রিম মিষ্টি- এসব খাবার হচ্ছে প্রোবায়োটিকের শত্রু। সঙ্গে অনিদ্রাও এই তালিকায় রয়েছে। সঙ্গে যোগ হয় স্ট্রেস। এসব কিছু মিলিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে মাইক্রোবায়ম। খারাপ জীবাণু বাড়ে আর ভালো জীবাণু কমে। প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট সাদা চোখে নিরাপদ হলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হলে প্রতিদিন এই সাপ্লিমেন্ট নেয়া উচিত নয়।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জ্বর হলেই দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয় না।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত ‘চেঞ্জিং প্যাটার্ন অফ ডেঙ্গু সিনড্রম’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার নিধন, ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালার প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম। সেমিনার শেষে কেবিন ব্লকের সাধারণ জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নার উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ ছিল জ্বর, কাশি, র্যাশ হওয়া, মাথা ব্যাথা হওয়া। কিন্তু ২০২১ সালের পর ডেঙ্গুর উপসর্গ পরিবর্তন হয়। তখন ডেঙ্গুতে নতুন উপসর্গ পেটে ব্যাথা পাতলা পায়খানায় পরিবর্তন হয়। এটি এখনো চলমান রয়েছে। সেখানে আরও বলা হয় ২০২২ সালে সর্বমোট আক্রান্ত হন ৬১ হাজার ৭৬৩ জন এবং ২৮১ জন মারা যান, যা অতীতের তুলনায় সর্বাধিক। ২০২৩ সালে ২ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭৯৩ জন এবং মারা যান ১৩ জন। ২০২৩ সালে জানুয়ারিতে ৫৫৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন ও মে মাসে ৭৮৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকবেন। এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যাথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যাথা, শাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্যে মশারি ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পরানো, বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সাধারণ জনগণের সচেতন হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি গান আছে, ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, সাদা সাদা ফোটা দেখে এডিস মশা চেনা যায়। এই মশা চিনতে হবে। এই মশাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী। নতুন বিল্ডিং তৈরি করার সময়, উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় এবং বৃষ্টির পরে ছাদে পানি জমে থাকে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দায়ীদের জরিমানা করা যেতে পারে। বাড়ির পেছন পরিষ্কার রাখতে হবে। খালি পাত্র থাকলে তা উল্টো করে রাখতে হবে যাতে করে পাত্রের ভেতরে পানি জমে না যায়। শরীরে ফুল হাতার শার্ট ও পায়ে মোজার ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা জানতে জ্বর হলে শুরুতেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করে নিতে হবে এবং জ্বর হলেই এ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ফলমূলসহ পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ডেঙ্গু প্রথমবার হলে মৃত্যু হার কম কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার হলে মৃত্যুহার বেশি। যারা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জ্বর হলে প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাড়তি টেস্ট এবং বার বার টেস্ট না দেয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্লাটিলেট কমে গেলেই রক্ত দিতে এ হবে এই ধারণা ভুল। আবার রক্ত দেয়া যাবেই না এটাও ঠিক না। রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত রোগীকে কি কি চিকিৎসা দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও কোভিডে একই ধরনের উপসর্গ অর্থ্যাৎ জ্বর, সর্দি, কাশির লক্ষণ দেখা যায়। তাই জ্বর হলে দুটোর জন্যই পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীও অনেক পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করাতে হবে। শরুতে রোগ চিহ্নিত না হলে রোগীর অবস্থার অবনিত হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিঞা, অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল চৌধুরী, বিএসএমএমইউর ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসারসহ অন্যরা।
জীবন আসলে কতটা অনিশ্চিত হতে পারে, তা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা বলতে পারেন। ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটোই সম্ভব। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বের বিষয় জড়িত। ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে রাষ্ট্রের উদ্যোগ বাড়ানো উচিত।
শনিবার বিকেলে ক্যান্সার সার্ভাইবার দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ক্যান্সার কমিউনিটি, বাংলাদেশ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সর্বমোট ১০জন ক্যান্সার সার্ভাইবারকে সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন— উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষিক ড. রুবিনা হক, আইনজীবী ও ক্যান্সার সংগঠক দেবাহুতি চক্রবর্তী, গৃহিনী ও ক্যান্সার সংগঠক তাহমিনা গাফফার, চিকিৎসক মো. সালেহ উদ্দিন মাহমুদ তুষার, ব্যবসায়ী খুজিস্তা নূর ই নাহারিন মুন্নি, অনুবাদক ও লেখক অদিতি ফাল্গুনী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক রফিকুল আনোয়ার রাসেল, শিক্ষক ড. জেসমিন পারভিন সীমা, সরকারি চাকরিজীবী ও ক্যান্সার সংগঠক নূর-এ-শাফী আহনাফ এবং ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড নিউট্রিশনিস্ট আনিকা তাহিসীন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যারা ক্যান্সার রোগ থেকে সার্ভাইব করেছেন, তারা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। আপনাদের কষ্ট অন্যদের বোঝানো যাবে না। আগে একসময় এই রোগে মৃত্যু অবধারিত ভাবা হতো। সেটা এখন কমেছে। তবে এখনও ব্যয়বহুল রয়ে গেছে। ৩২ বছর আগে আমার স্ত্রী এই রোগে মৃত্যুবরণ করছেন। তবে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা এতদিনে অনেক উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী’র সময় চিকিৎসাব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে ছিলো। ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পরদিনই পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু চার সপ্তাহ পর অপারেশনের সিরিয়াল পেয়েছিলাম। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যেমন কেয়ার দরকার; ঠিক তেমনই কমিউনিটিটাও দরকার। কেবল পরিবার নয়; পুরো সমাজ যেন এই বিষয়টি জানে, সে দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগটা বাড়বে।’
বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রতিকৃত অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ জীবন যাপন করি। উপভোগ করতে পারি না। ক্যান্সার কেয়ার কমিউনিটির মতো যারা এভাবে কাজ করে জীবনকে উদযাপন করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা কেউই তো বিশাল কিছু করতে পারি না। ছোটো কাজগুলো মন দিয়ে, প্যাশন দিয়ে করতে পারছি কি না- সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্যান্সার হলো শ দুয়েক রোগের সমাহার। সবগুলোকে মিলিয়ে নাম দেয়া হয়েছে ক্যান্সার। এর মধ্যে কিছু আছে অল্প চিকিৎসা পেলেই ভালো হয়ে যায়, কিছু আছে পাঁচ বছরে, কিছু আছে প্রথাগত চিকিৎসায় ভালো হয় না। আমরা অদ্ভুত এক অন্ধকার জায়গায় বসবাস করি। আমরা আরোগ্য লাভের কথা বলি। কিন্তু আরোগ্য হয় না, সে ব্যাপারে বলি না। আমার মতো অধ্যাপকরাও এখনও অসত্য-অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করি—‘আর কিছু করার নেই, বাড়ি নিয়ে যান’। এটি করার কোনো নৈতিক, ধর্মীয়, আইনগত কোনো অধিকার নেই। এ সময় তিনি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কথা না বলার আহ্বান জানান।
মেডিকেল সায়েন্সকে সোশ্যাল সায়েন্সের সঙ্গে মিলিয়ে মানবিকতাকে রক্ষা করতে বলেন অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
ক্যান্সার কেয়ার কমিউনিটি বাংলাদেশের উপদেষ্টা অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসিকিন বলেন, জীবন আসলে কতটা অনিশ্চিত হতে পারে, তার প্রমাণ এখানে উপস্থিত যোদ্ধারা। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আমরা এখনও মানুষ আক্রান্ত হবে, চিকিৎসা নিতে আসবে— এইপর্যায়ে আছি! কিন্তু পৃথিবী অনেকদূর চলে গেছে। ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়ার সেবা থেকে শুরু হয় ক্যান্সার সেবা। শুধু আক্রান্ত হলেই যে চিকিৎসা দেয়া হবে— এভাবে চলে না। সবার আগে দরকার ‘প্যাশেন্টস ভয়েস’ দরকার। সবার আগে ক্যান্সার কন্ট্রোল স্ট্র্যাটেজি হোক। একটি অ্যাকশন প্ল্যান।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ১৪১ জন। চলতি বছর একদিনে এত রোগী এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২ জুন সকাল ৮টা থেকে ৩ জুন সকাল ৮টা) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে ১৪১ জন। গত ১ জুন একদিনে ১১২ জন রোগী ভর্তির তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর।
রেকর্ড সংখ্যাক রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি। ঢাকার ভেতরে ভর্তি হয়েছেন ১২৮ জন আর ঢাকার বাইরে ১৩ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৯৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৩৪৫ জন আর ঢাকার বাইরে ৫২ জন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ২৭৯ জন আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৮৬৯ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান দুজন। গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন আর চলতি মাসের প্রথম দুইদিনে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫৭ জন।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশে। সে বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে শুরু হয় করোনা, কমে আসে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪০৫ জন। তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন। এ ছাড়া ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট ৬২ হাজার। মারা যান ২৮১ জন।
দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির ধারাবাহিকতায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার ফের ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে এ সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (২ জুন সকাল ৮টা থেকে ৩ জুন সকাল ৮টা) করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৬৪টি। আর তাতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৫ জন। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি, তবে আগের দিন (২ জুন) দুইজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই মৃত্যু হয় টানা ৬৫ দিন পর। এর আগে গত ২৮ মার্চে একজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮ জন। তাদের নিয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেন মোট ২০ লাখ ছয় হাজার ৩৩১ জন। আর এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে শনাক্ত হলেন ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭১ জন।
সরকারি হিসাব বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪৮ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশকি ৪৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৬৫ জন শনাক্ত হয়েছে তারা সবাই ঢাকা মহানগরের।
করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের’ তাণ্ডবে দেশে গত বছরের ২৮ জুলাই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হন। আর ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়।
দেশে দুই মাস পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৮৯ জন। শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। মৃত দুজন ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এর আগে গত ২৮ মার্চ সর্বশেষ করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ৬ হাজার ৩১৩ জন। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০৯টি এবং মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৫১৫টি।